বয়সটা তখন ১৫ ছিল (১ম খণ্ড) – Obuj diner golpo

বয়সটা তখন ১৫ ছিল (১ম খণ্ড) – Obuj diner golpo: আমি অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। চোখ যেন এখনই অক্ষি কোটর থেকে বের হয়ে আসবে আসবে অবস্থা। কোন মতে আটকে রাখা হয়েছে তাকে। আরিয়ান ও অবাক হয়েছে তবে সেটা প্রকাশ করে নি সে। আসলেই তো কি প্রকাশ করবে?


সূচনা পর্ব

আমি দেখছিলাম তাকে। আড়চোখে না, সরাসরি। সে স্কুল ড্রেসের উপর লাল হুডি পরে ছিল। চোখে চশমা, পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কারো সাথে কথা বলছিল না ছেলেটা। এক নজর তাকাতেই চোখ আটকে যায়। আবার নিজের উপর কয়েকটা ঝাড়ি মনে মনে দিয়েই চোখ নামিয়ে ফেলি সাথে সাথেই। তবে আবার তার দিকে তাকাই। কারণ কেউ বুঝতেই পারবে না যে আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। স্বয়ং সে নিজেও না। তাই বিনা দ্বিধায় চেয়ে আছি।

আমি অদ্রিতা রাহমান। আর যে ঘটনাটি আমি বলতে শুরু করলাম সেটি আমার পুরনো একটি ঘটনা। তখন আমি ক্লাস টেনে উঠেছিলাম মাত্র। এটা সবার কাছে সাধারণ হলেও আমার কাছে অসাধারণ। মনে দাগ কেটে নেওয়ার মতো একটি ঘটনা।

তখন আমি নতুন নতুন ক্লাস টেনে উঠেছিলাম। আমার বয়স তখন সালের দিক দিয়ে হিসাব করলে ১৬ বছর, তবে মাসের দিক থেকে হিসাব করলে বয়সটা তখন ১৫ ছিল। ১৬ হতে বহু দেরি, ১০ মাসের মতো। তারপর ১৬ হত। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত হল জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী আমার তখন ১৪ বছর বয়স ছিল। মূলত বড় হয়ে যদি একবার চাক্রির চান্স মিস করি তাহলে যেন আবার দিতে পারি সেই ভেবেই আমার পিতা মহোদয় বার্থ সার্টিফিকেটে আমার জন্ম সাল দু বছর বাড়িয়ে দেন। ক্লাস নাইন শেষ করে টেনে উঠার প্রথম দিকটা বেশ ঢিলে ভাবেই যায়। পড়ার চাপ থাকে না অতটা।

বলা যায় থাকলেও আমরা সেটা নিই না। তবে আমাদের স্কুলে এই সময় একটা অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতার নোটিশ আসে। এতে প্রথম দিক থেকেই খাপছাড়া ভাব ছিল আমার। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের ম্যাম আর আমার বান্ধবীরা জোর করে আমার নাম তাতে দিয়ে দেয়। এটা নিউ ইয়ার উপলক্ষ্যে আমার বান্ধবীদের পক্ষ থেকে আমাকে দেওয়া বাঁশ গিফট ছিল। এতে পরে অবশ্য সিলেকশন টেস্ট ও দিতে হত, তবে এর নাম শুনেই অনেকে চলে গিয়েছিল বলে সেটার দরকার পড়ে নি।

ঠিক সময় মতো আম্মুর সাথে পৌঁছে যাই কলেজের সামনে। অলিম্পিয়াড এর পরীক্ষা এই কলেজেই হবে। কলেজের সামনে রাস্তা আর তার সামনে আবাসিক এলাকা। আমি কলেজের সামনে রাস্তার অপর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিছু দুরেই আম্মু ছিল। হঠাৎ অন্য ক্লাসমেট দের কথা কানে আসে। তারা কথা বলছিল ওই ছেলেটিকে নিয়ে। খুব ইচ্ছা জাগল একবার তাকে দেখার। কিন্তু কি করি? দেখাটা কি ঠিক হবে?

শেষে মনের সাথে মস্তিষ্কের যুদ্ধে আমি মনকে সায় দিলাম। একবার তাকালাম সামনে। সে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। রাস্তার ওপারে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম। সত্যি সুদর্শন ছিল ছেলেটি। তবে একদম চুপচাপ। যেন সে মানুষ না, স্কুল ড্রেস পরা একটা ম্যানিকুইন। একটা পুতুল। পরে জানতে পেরেছিলাম আসলে ওর চেনা জানা কেউ আসে নি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। আর অন্য যেই ছেলেরা আমাদের স্কুল থেকে এসেছিল তারা অন্য শাখার অথবা ক্লাস নাইনের। তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু তাই বলে কারো সাথে কথা বলবে না? অন্তত স্যার ম্যাম দের সাথে তো দু-একটা কথা বলতে পারতো।

পাশে বান্ধবীদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম ছেলেটি আমাদের স্কুলেরই। তবে ও ইংরেজি ভার্শনের আর আমি বাংলা মিডিয়ামের। ছেলেটি আমাদের সাথে একই ক্লাস এ পড়ে। কিন্তু আমি বলতে গেলে কাউকেই ঠিক মতো চিনি না। যারা চিনে তাদের কাছ থেকেই পাওয়া।

বলে না, কাউকে দেখে মনে দমকা হাওয়া বয়ে যায়। আমাকেও ছুঁয়ে গিয়েছিল, এক পশলা ভালোলাগার ঠাণ্ডা হাওয়া। মনে সফটেড মিউজিক বাজছিল যেন। কিন্তু কোন ছেলের দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকা ঠিক না। বিশেষ করে যেখানে স্বয়ং জন্মদাতা মা পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। কয়েক সেকেন্ড পর নিজেই চোখ নামিয়ে নিলাম। কিন্তু মনটা বলল আবার তাকাতে।

~ একবার তাকালে কিছু হবে না অদ্রি, তাকিয়ে দেখ না? দেখ মানে ওকে তো তুই আর কখনো দেখতে পারবি না। কারণ তোদের প্রভাতী শাখায় ক্লাস আর ওদের দিবা শাখায়। তাছাড়া তোদের স্কুল বিল্ডিং ও আলাদা তাই আজ দেখে নে। কিচ্ছু হবে না আমি বলছি।

মনের এমন কথায় বেশ অবাক হলাম আমি। হ্যাঁ, বিদেশি নায়কদের দেখে ক্রাশ খাওয়া অভ্যাস থাকলেও এমন কথা কখনো মাথায় আসে নি। যে কাউকে দেখার জন্য মন এতো কথা বলছে। কিন্তু এদিকে মস্তিষ্কে চলছে অন্য কথা,
~ নিজের অদ্ভুত মার্কা চিন্তা বন্ধ রাখ। আর ভাব যে ওটা তোর ভাই অদ্রি।
~ ওই ব্রেইন বেটা চুপ কর। যে ক্রাশ খেতে যাচ্ছে তাকে ভাই বানাচ্ছিস।
~ তো কি করব?

~ ওরে ওকে যান প্রাণ বানা, ভাই না।
~ শোন মন, ক্রাশ মানে বাঁশ বুঝলি? এটাকে যান প্রাণ বানানো যায় না।
~ তোর বাঁশের ছাতার মাথা। তুই প্রাচীন কালের ২ জি আইডিয়া নিয়ে পড়ে থাক। শোন অদ্রি দেখে নে আজ। আর দেখা হবে না তো কি হয়েছে? ক্রাশ তো জাতীয় খাবার। এটা টেস্ট করলে কোন সমস্যা নেই। আমার 5G আইদিয়ার জোরে বলছি। আমার কথা মেনে দেখ।

কিন্তু এতসব কিছু থেকে ব্রেইনই আমাকে আইডিয়া দিল ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকার। হঠাৎ মাথায় আসলো, ছেলেটা তো যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, ওর পিছনেই কলেজ। তাই আবার তাকালাম। কেউ বুঝতে পারল না যে আমি কোণ দিকে তাকিয়ে আছি। সবাই ভাববে আমি কলেজের দিকে তাকিয়ে।

কিছুক্ষণ পর মিস আসতেই আমাদের সব স্টুডেন্ট দের নিয়ে ভেতরে গেলেন। তার অপেক্ষায়ই ছিলাম এতক্ষণ। তারপর আর দেখা হল না ওর সাথে।

হ্যাঁ, তবে ওকে দেখেছিলাম ওকে। যখন পরীক্ষার ফল দিল। ও সব স্কুলের মধ্যে ১ম হয়েছে। পরের পরীক্ষা হবে কার্জন হলে। কিন্তু আমি ওদের মধ্যে চান্স পাই নি। অবশ্য এতে আমারই দোষ বেশি। আমি একে এতোটা গুরুত্ব দিয়ে না দেখেছি, না পড়েছি। যদি জানটা এখানে এসে কাউকে দেখতে পারব তাহলে সেজন্য হলেও একটু ভালো করে পড়তাম। হুহ। তবে আমার আরেক বান্ধবী চান্স পেয়েছিল টপ ২০ তে।

তারপর আর তাকে দেখিনি।

কার্জন হলে পরীক্ষার পর আমি আমার ওই বান্ধবীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কতকটা কৌশলে। কেমন হয়েছে পরীক্ষা? চান্স পেয়েছে কি না? ও নিজেই বলল যে আমাদের স্কুল থেকে ওই ছেলেটা চান্স পেয়েছে আর ফার্স্ট হয়েছে পুরো ঢাকা শহরে। ওর নাম মাইশা। মাইশা চান্স পায় নি। তবে কার্জন হলে ও ওই ছেলেটার পাশে বসেছিল পরীক্ষার সময়। শুনতেই ওর প্রতি ভালোলাগার পর যে অনুভূতিটি আমার মধ্যে আসলো সেটা হয়তো জেলাসি। প্রচণ্ড বকেছিলাম মনে মনে-
~ কি দরকার ছিল একটা মেয়ের পাশে বসার? বাংলাদেশে কি ছেলের আকাল পড়ছিল?
নিজের অনুভুতিতে নিজেই অবাক হয়েছিলাম। কি ছিল এটা?

আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে মাইশা আবার নিজের অন্য বান্ধবীদের সাথে কথা বলা শুরু করে। বিষয়টা কি? ওই ইংলিশ ভার্শনের ছেলেটা। ওরা ছেলেটার নাম ও বলেছিল। নাম আরিয়ান। তবে আমি পাত্তা দেয় নি। যার সাথে আর দেখাই হবে না তার নাম শুনে কি লাভ? ও কি আর আমাকে চেনে? নাকি আমার সাথে আর ওর কথা হবে? কথা তো দুরের কথা, দেখাও হওয়া সম্ভব না। সো নাম জেনে আরেক ঝামেলা বাড়ানো। এমনিই ক্রাশ খেয়ে বসে আছি। এমনিই ভাবনা চিন্তা ভালোলাগা এমনকি জেলাসি র জায়গা নিয়ে বসে আছে ছেলেটা। ধুর।

তারপর আমাদের দেখা হয়েছিল ট্যুরে। আর শুধু দেখাই না, কথাও হয়েছিল। পরের মাস, ফেব্রুয়ারিতে আমরা একে অপরকে দেখেছিলাম, কথা বলেছিলাম। বেশ অদ্ভুত ছিল সে দিন টা। সত্যিই অদ্ভুত।

সেই সম্পর্কে পরবর্তী পর্বে জানাই। আজকের জন্য বিদায়।


পর্ব ২

মূলত দশম শ্রেনির সব ছাত্রীদের অনুরোধেই শিক্ষকরা ভেবে দেখতেন যে আমাদেরকে সফরে যাওয়ার অনুমতি দিবে কি না। কিন্তু এরপর অন্য শাখার ছাত্রীরাও একই ইচ্ছা পোষণ করল। আর এক পর্যায়ে ছেলেরাও যেতে চাইল। তাই শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। সাথে কিছু শিক্ষক শিক্ষিকাও থাকবেন আমাদের দেখে রাখার জন্য। সব ব্যবস্থা করা হল। তবে একটা ধামাকা রাখল আমাদের জন্য।

আমরা ভেবেই নিয়েছিলাম যে আমাদের সাথে আমাদের বান্ধবীরাও যাবে। আমরা তাদের সাথে মজা করব, ঘুরে বেড়াব। কিন্তু সেটা আর হতে দিল না। প্রথম সিদ্ধান্ত এমন নেওয়া হয়েছিল যে ছেলেদের একটা বাস আর মেয়েদের একটা বাস যাবে। আরে ভাগে ভাগে তাদের ট্যুরে নিয়ে যাওয়া হবে। আর দ্বিতীয়ত বলা হয়েছিল কে কবে যাবে সেটা ঠিক করা হবে লটারির মাধ্যমে।

এতে অবশ্য সমস্যা টা আমারই হয়েছিল। যেদিন ট্যুর সেদিন বাসে উঠে দেখি কাউকে ঠিকমতো চিনি না। পড়লাম এক ঝামেলায়। তাহলে কি আমার ট্যুর পুরো পান্তা ভাত হয়ে যাবে? অবশ্য যদি শুধু ঘোরাঘুরির দিকে নজর দিই তাহলে এমন মনে হয় না। তাও এতো মানুষের ভিড়ে একা একা থাকলে নিজেকে এলিয়েন মনে হবে। আমাদের একই শ্রেণি থেকে সবাই গেলেও স্কুল টা বেশ বড়।

তাই ক্লাস ১০ এ হিসাব করলে কমপক্ষে ৫০০ স্টুডেন্ট পাওয়া যাবে, ছেলে মেয়ে সহ। এদের মধ্যে সবাইকে চেনা খুব কঠিন কাজ। তাছাড়া আমি সবার মতো বেশি মিশুক না। আর গত বছরই নতুন ভর্তি হয়েছি। এতে সবাইকে চিনতে আমার মতত মেয়ের জন্য বেশ সময় সাধ্য ব্যাপার।

বাসে উঠে একটা সিটে বসে পড়লাম। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার পরিচিত একটি মেয়ে উঠল। নাম রুপন্তি। খুব মিষ্টি মেয়েটা। চোখে বরাবরের মতো কালো মোটা প্রেমের চশমা। চুলগুলো উঁচু করে ঝুটি করা। আর মুখে মিষ্টি হাসি। ও আমার সিট পার করেই ওর অন্য বান্ধবীদের সাথেই যাচ্ছিল কিন্তু আমার ডাকে পিছনে ফিরে তাকাল আমার দিকে।
~ রুপন্তি?

~ ওহ অদ্রিতা, কেমন আছো?
~ আলহামদুলিল্লাহ্‌, আছি ভালো তুমি কেমন আছো?
~ আমিও। একা বসে আছো কেন?
~ আমার চেনা পরিচিত কেউ নেই এখানে তাই। এই লটারিটা আমাকে পুরো ট্যুরে অনাথ করে দিল।
~ যাহ্‌ বলেছ। অবশ্য আমাদের এইটা হওয়ার কথাও ছিল না। তোমাদের সেকশনের মেয়েরাই তো প্রথমে এপ্লিকেশন পাঠিয়েছিল, যাতে পিকনিক টা না হলেও একটা ট্যুরের আয়োজন করে। আর তারপর এক এক করে বাকি শাখার মেয়েরা এমনকি ছেলেরাও আবেদন করেছিল।
~ এখন মনে হচ্ছে না করলেই পারতাম। আমার আইডিয়ায় যে শেষ পর্যায়ে আমাকে সঙ্গিহীন বানিয়ে দিবে সেটা কি আর জানতাম নাকি?

~ ট্যুরের আইডিয়া তোমার ছিল।
~ দুর্ভাগ্যবশত হ্যাঁ, আমার ছিল।
~ তো এখন কি করবে?
~ আমি তোমার পাশে বসি?
~ সিউর। আমি ধন্য হবো। কিন্তু তোমার ফ্রেন্ড রা?
~ ওরা তো নিজেদের মতো উপভোগ করবে। সমস্যা নেই।
~ অনেক অনেক ধন্যবাদ। নাই মামার থেকে একটা ব্র্যান্ড নিউ মামা বেশি ভালো।
~ আমাকে ব্র্যান্ড নিউ বললে তুমি?
~ নাহ নাহ, ওটা তো কথার কথা। তুমি বসে পড়।
~ কিন্তু আমি জানালার পাশে বসব।

~ ওকে আমার কোন সমস্যা নেই। বসে পড়। এখনি মনে হয় গাড়ি চলা শুরু করবে।
বসে পড়ে রুপন্তি। আমি শুধু জানা দিয়ে বাইরের দিকে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোন কথা বলছিলাম না। কি বলব। পাশে বেস্ট ফ্রেন্ড থাকলে হয়তো গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসতাম। কিন্তু সেও নেই। তাই চুপচাপ কিছুক্ষণ জানালার দিক দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থেকে আমার ফোন বের করে সেদিকে মন দিলাম। ফোনটা মুলত আব্বুর, আজকের জন্য ধার দিয়েছে। আমি আব্বুকে কল করে জানিয়ে দিলাম যে বাসে উঠে পড়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যে ছেড়ে দিবে। আর কথা বলতে বলতে বাস চলাও শুরু করল। বিপত্তি ঘটল এয়ারপোর্ট পার করে এসে।

আমরা একটা রিসোর্টে যাবো বলে ঠিক করেছিলাম। পি এস সি সি রিসোর্ট। ইউতুব এ দেখে ভালোই লেগেছিল। কিন্তু কে জানতো ওটা ইডিট করা?

রাস্তায় এয়ারপোর্ট পড়ে। বাস চলতে চলতে হঠাৎ থেমে গেল। প্রথমে এমনটা শোনা গিয়েছিল যে ড্রাইভার ফোনে ফ্লেক্সি করবেন, কিংবা কে জানি একটু কোথায় যাবেন। সকলের কানে কানে এই কথাই চলছিল। একান অকান হতে আমার কানেও পৌঁছে। কিন্তু যখন অনেকক্ষণ হয়ে গেল তখন অবাক হলাম।

কি হল এটা? বাসে ড্রাইভার ও নেই। বের হয়ে গেল তখন। স্যার রাও নেই। শুধু আমরা আর ম্যামরা বসে আছেন। উঠে দাঁড়িয়ে রুপন্তিকে পার করে জানালা দিয়ে নিচে আশেপাশে তাকালাম। যা ভেবেছিলাম ঠিকই। চাকা পাঞ্চার হয়ে গিয়েছে। তারপর আবার ফোনে মন দিলাম। এমন সময় আমাদের গাইড টিচার বলে গেলেন যে চাকা পাঞ্চার হয়েছে, একটুর মধ্যে ছেড়ে দিবেন বাস। কাইকে যেন না বলে চিন্তা বাড়ানো হয়। এমন সময় বাসে অবস্থানরত এক মেয়ের মা ফোন করল। আর সে গড়গড় করে বলে দিল যে বাস এর চাকার বেহাল দশা। অ্যান্টি পড়ে গেলেন চিন্তায়। মনে হয় না এর পর থেকে আর কোন সফরে ওকে যেতে দিবেন।

কিছুক্ষণ পর আবার গাড়ি চলতে শুরু করল। কিন্তু মিনিট পাচেক চলতে না চলতেই থেমে গেল। আমি তখন কানে এয়ারফোন লাগিয়ে জ্ঞান শুনছিলাম। যেহেতু জানালার পাশের সিটে বসি নি, তাই বাইরের দৃশ্য উপভোগ করার সুবিধা নেই। তাই গান শুনতে শুনতে নিজের মাথাকে এলিয়ে দিয়েছিলাম সিটে। চোখ বন্ধ করেছিলাম। প্রথম দিক থেকে ৩ নং সিটে বসে ছিলাম। হঠাৎ শুনলাম পিছনের যেই সিটগুলো ফাঁকা ছিল সেখানে কয়েকজন ছেলে এসে বসবে। কিন্তু তারা কারা সেটা দেখার কোন ইচ্ছে নেই। তবে অন্যদের কথা থেকে যা বুজতে পারলাম, তার সারাংশ এই যে, ছেলেদের বাস খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাই আলাদা আরেকটা বাস এসেছিল। কিন্তু সেটা আগেরটার থেকে ছোট হওয়ায় সবাইকে তুলতে পারে নি। আমাদের বাস এর টিচারের সাথে কথা বলে এখানে তোলার ব্যবস্থা করা হয়।

কিন্ত সমস্যা সেখানে না, সমস্যা হল কানে আরেকটা যে কথা ভেসে আসলো সেগুলো পুরনো বলেই মনে হল।
~ ইশ দেখ ছেলেটা কি কিউট!
~ হ্যাঁ রে,
~ আমি তো ক্রাশ খাইছি।
আমার মনে হল এই ধরণের কথা আমি আগেও শুনেছি। তবে কোথায়, সেটা মনে করতে ইচ্ছা করছে না। কানে ওসব শব্দ এলেও সেদিকে মন নেই। এদিকে মন আবার দুমুখি কথা বলা শুরু করল।
একবার মনে হচ্ছে
~ চোখ খুলে দেখ।
তো আরেকবার মনে হচ্ছে চোখ খুললেই তো দেখতে পারব না।
~ কেন?
~ কারণ চোখ খুলে মাথা তুলে ঘাড় ঘুরিয়ে তারপর একেবারের পিছনের সিটে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হবে।
~ তো?
~ তো মানে? অনেক কাজ, এতো কাজ করার দরকার নাই।
~ এইটুকু কাজকে তোর এতো কাজ মনে হচ্ছে?
~ এতে মনে না হওয়ার কি হল।
~ কেনই বা মনে হবে না? যখন ম্যাথ নিয়ে বস, এতো এতো ম্যাথ করো তখন তোমার কষ্ট কোথায় পালায়?
~ তখন আমার কষ্ট ভ্যানিস হয়ে যায়,।
এবার আমার প্রথম মন আমাকে বলল,
~ দেখ সবাই কত কিছু বলছে, আর তুই দেখবি না অদ্রি? এটা কি করে হয়। চোখ খোল অদ্রি। দেখ তোর তো মনে হচ্ছে এই কথা তুই আগে শুনেছিস? তাই না?
এর উত্তরে আমি চোখের পাতা নারাতে যাবো তার আগেই অরেক মন বলে উঠল,
~ একদম চোখ খুল্বি না। এখন শক্তি সঞ্চয় করে রাখ পড়ে সব দেখা যাবে। আর বাস থেকে নামার সময় তো দেখতেই পাবি।
এতে করে আবার মনের ২ অংশের ঝগড়া লেগে গেল। এমন সময় মনের নিরপেক্ষ অংশ এসে যেন আমার কানে বলে গেল,
~ ওরা ঝগড়া করছে করুক তুমি গান শোনো।

আমিও আর চোখ খোলার চেষ্টা করলাম না। কানে তখনও বেজে চলেছে,
বেখেয়ালি মে ভি তেরা হি খেয়াল আয়ে
কিউ বিছাড়না হ্যায় জারুরি ইয়ে সাওয়াল আয়ে
তেরি নাজদিকিও কি খুশি বেহিসাব থি
হিসসে মে ফাসলে ভি তেরা বেমিসাল আয়ে।


পর্ব ৩

সেখানে পৌঁছে যেটা দেখলাম সেটা দেখার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখলেও নিজের মনকে মানাতে পারি নি। রিসোর্টটা ইউটিউব এ যেমন দেখেছিলাম, তেমন তবে সম্পূর্ণ না। দেখে মনে হল সেটাকে অর্ধেক বানিয়ে রেখে দিয়েছে তখনের জন্য। সেটা পুরোপুরি তৈরি হতে আরও সময়। লাগবে। তবে রিসোর্টটা তে কি কি দেখব সেটাই ভাবছিলাম। শুরুতেই একটা মোটা রাস্তা, সেটা ধরে এগোলে রাস্তার দুই পাশে পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর দৈর্ঘ্য কিংবা গভীরতা আঁচ করতে পারি নি আমি। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছিল।
তবে রিসোর্ট গুলোর যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রকাশ করে, সেগুলোকে নিতান্তই কৃত্রিম মনে হয় যেন। একেবারে মেপে মেপে সব কিছু। রোজ পরিচর্যা করে হয় ঠিকই, তবে স্বাধীনভাবে বাড়তে দেওয়া হয় না।

আরও সামনে প্রবেশ করলে বিশাল মাঠ। তার মধ্যে মাঝখানে রাস্তা। রাস্তার এদিকে বেশ দূরে দূরে সিঁড়ি করে মাঝে লেখা। আর ও পাশে প্রথম দিকে খেলার জন্য মাঠ, আর শেষের দিকে সুইমিং পুল। এর মাঝে কটেজগুলো ও বাইরে থেকে দৃষ্টিনন্দন ছিল। তবে তাতে আমাদের জায়গা হয় নি। মানুষ আগে থেকেই দখল করে নিয়েছিল। এছাড়া বড় যেই কটেজ ছিল সেটার নিরমান কাজ চলছে। অন্যদিকে ঘুরে বেড়ানোর জায়গা আছে। ছবি তোলার ব্যাপারে আমি বেশ বাজে। নিজের ছবি তোলার থেকে অন্যদের বা প্রকৃতির ছবি তোলাই হয় বেশি আমার। আমি এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। সাথে ছিল রুপন্তি। মেয়েটা বেশ ভালো। এই প্রথম ওর সাথে আমার এতোটা সময় কাটানো হল। কটেজ গুলোতে গিয়ে ছবি তোলা, কিংবা পুকুর পাড়ে হাত ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া। মেয়েটা খুব ভয়ে ছিল অবশ্য। কারণ পুকুরের উপর পাড়ের সাথে বাঁশ দিয়ে একটু খানি জায়গা বানানো ছিল। যেখানে দাঁড়ানো যায়। উপরে ছাউনি। বাঁশের উপর পা রাখতেই নড়বড়ে শব্দ করে উঠছিল। সে ভয়ে ছিল যে ওটা যদি ভেঙে যায়। পরে আমি একবার ঘুরে এসে দেখালাম। তাও সে রাজি ছিল না। পরে ওর হাত ধরে সেখানে গিয়েছিলাম। বলতে গেলে ওখানে ঘোরার মতো বেশি জায়গা না থাকলেও যা আছে তাতে এতাকেও অন্তরভুক্ত করা চলে।

মাঠের মাঝ বরাবর যে রাস্তা তার কোণা দিয়ে ইট দিয়ে বাঁধানো। দেখতেই মনে পড়ে গেল শ্যামলীর ফুটপাথের কথা। ওই কোণায় বাঁধানো ইটের উপর দিয়ে এক পা এক পা করে কত হেঁটেছি। মনে পড়তেই ইচ্ছাটা কে দমিয়ে রাখতে পারলাম না। তবে ছোট কালের মতো এবারও পড়ে যাচ্ছিলাম। পাশে রুপন্তি আমাকে ধরে ফেলে। ও নিচ দিয়েই হাঁটছিল।
এছাড়া পুকুর পাড়ে সিঁড়ি ছিল। সেটার শেষ সিঁড়িটায় দাঁড়ানোর পর ইচ্ছা ছিল পানিতে পা ভিজাব। তবে সাহস করে উঠতে পারি নি। কারণ সাতার জানতাম না। এছাড়া অনেকটা সময় সেখানে কাটানোর পর বুঝতে পারি যে আশেপাশে রুপন্তি নেই। হয়তো অন্য কোথাও ঘুরছে। এবার ওকে খুঁজতে বের হলাম।

খুঁজতে খুঁজতে খেলার মাঠে এসে দেখলাম ও আর আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে আর কথা বলছে। তবে সরাসরি দেখি নি। ও পিছন ঘুরে ছিল। আমি হাঁটতে হাঁটতে ওর কাছে যেতে যেতে বলি,
~ রুপন্তি কোথায় হারিয়ে গেলে?
~ ওহ তুমি এখানে। ও আমার ফ্রেন্ড। ওর সাথে দেখা হল হঠাৎ তাই কথা বলছিলাম।
আমি তখনও রুপন্তির এই ও ফ্রেন্ড কে দেখি নি। কিন্তু যখন ও ঘুরে দাঁড়ালো আমি অবাক হলাম। এটা তো অলিম্পিয়াডের ছেলেটা। ও এখানে কি করছে?
রুপন্তি আমার ভাবনার মাঝেই আবার বলে উঠল,
~ জানো, আজ যারা আমাদের বাসে এসে পিছনের সিটে বসেছিল, তাদের মধ্যে ও ও ছিল।
এবার আমার বেশ রাগ হচ্ছে।

খালি ও ও করে যাচ্ছে। মানেটা কি? এই ও এর নাম নাই নাকি? নাম বললে কি হয় মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড রুপন্তি।
তবু সৌজন্যতার খাতিরে আমিও বলে উঠলাম,
~ ওও ও ও ও ও
একটু টেনেই বললাম। এর থেকে আর বেশি ভালো উপায় পেলাম না নিজের রাগ কে সংবরণ করার।

এখন আমার নিজের মনের প্রতি প্রচণ্ড অভিমান হচ্ছে। রুপন্তির এই ও নামক ছেলেটা আমাদের বাসে উঠেছিল। কিন্তু আমি মনের ঝগড়া শুনে আর পিছনে তাকাই নি। কেন তাকালাম না? ইশ্‌ একটু হলেই দেখতে পারতাম।

আচ্ছা এই ও এর নাম কি? সেদিন তো মাইশারা গল্প করছিল। আমিই পাত্তা দেই নি। আমি কি জানতাম না কি যে আমাদের আবার দেখা হবে? ধুর হুর।
আমার ভাবনায় ছেদ ঘটল ও এর কথায়।
~ হ্যালো।
মুখে এক চওড়া হাসি রেখে আমিও জবাব দিলাম,
~ হাই।

রুপন্তি আমাকে এবার একটা ভালো কথা বলতে যাচ্ছিল। সেটা হল ওর নাম।
~ ওর নাম হল আ
~ স্টুডেন্টস সবাই মাঠের মাঝে চলে এসো। তোমাদের জন্য যেই খেলার আয়োজন করা হয়েছে, সেগুলো তে অংশগ্রহণ করতে মাঠে চলে এসো সবাই। জলদি এসো, ফাস্ট ফাস্ট।
মাইকে ঝংকার তুলে বলে উঠলেন এক স্যার। শুনে ও চলে গেল খেলতে। আমি এখন বেশ করে চাচ্ছিলাম মাইক টা যেন নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু
শকুনের দোয়ায় গরু মরে না
এই টাইপ কথাবার্তা সত্য করে তা থেকে গড়গড় করে আওয়াজ বের হচ্ছে।

আমার ইচ্ছা পোষণ করার আগে যা একটু সমস্যা হচ্ছিল। এবার সেটাও ঠিক হয়ে গেল। একেবারে কাঁচের মতো স্বচ্ছ, ক্রিস্টাল ক্লিয়ার।
রুপন্তির এই ও ফ্রেন্ডের নাম যে আরিয়ান, সেটা আমার আজও জানা হল না।
~ কি হল তোমার অদ্রিতা? কোথায় হারিয়ে গেলে ? খেলা শুরু হয়ে যাচ্ছে। দেখতে যাবে না ?
~ হ্যাঁ চল, যাই। গিয়ে খেলা দেখে আসি।

দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে কথা গুলো বলে উঠলাম আমি। এতে রুপন্তি মেয়েটাও বেশ অবাক হল। সেটা আর বলতে? কিন্তু তাতে আমার কি? মেয়েটা নাম বলল না কেন? ও চলে গিয়েছে তো গিয়েছে। তাতে কি? আমাকে নামটা তো বলতে পারতো। কিন্তু না বলেই আমার সম্মতি পেয়ে কি সুন্দর চলে গেল। কি সমস্যা নামে?

খেলা শেষে আমি, রুপন্তি আর আরিয়ান এক সাথে ঘুরে বেড়ালাম বাকি সময়। কিন্তু না আমি আরিয়ানের নাম জানি, আর না বেচারা টা আমার নাম জানে। নিজেদের কে এলিয়েন মনে হচ্ছে। তবু প্রকাশ করছি না। আপাতত এতো কষ্ট করে একটা জায়গায় ঘুরতে আসলাম, সেটা দেখতেই ব্যস্ত। তনু মনের মধ্যে খুত খুঁত করছে যে কি নাম, রহিম করিম কিছু একটা হোক, কিন্তু নাম কি ? আচ্ছা ও আমাকে নিয়ে এই একই লাইন ভাবছে না তো?

রহিমা জরিনা মর্জিনা কিছু একটা হোক, কিন্তু নাম কি ?
হায় হায়, যদি কোন দিন জানতে পারি না যে আমার নামের জায়গায় এসব ভেবেছেন, তো আপনাকে ছুঁড়ে একেবারে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দিব। মাইন্ড ইট।
সারাদিন ঘুরে একসাথে নিরিবিলি জায়গায় বসে ছিলাম। সুইমিং পুল এ, পানিতে পা ভিজিয়ে। দুটো একটা বানর দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে এখানে সামনে এসে বসেছিল।
বানরের কথা মনে পরলেই ছোটকালের কথা মনে পড়ে যায়। মুলত ছোটকালে একটা কথা মনে ভীষণ ভাবে দাগ কেটেছিল।

বানরের কথা না শুনলে, ওর সামনে চুপচাপ না থাকলে, বানর না কি ঠাটিয়ে চোর।
কয়টা মারে জানি না। কিন্তু থাপ্পড় মারে। জানতেই অজানা ভয় আমাকে গ্রাস করেছে। যদি ওর থাপ্পড় মারার নেক্সট টার্গেট আমি হই। ওর থাপ্পড়ের ক্লায়েন্ট হতে চাই না।
পানিতে পা ভিজিয়ে নিরবতা পালন করছি। কিন্তু আসলে সেটা নয়। নিরব পরিবেশে চুপচাপ থাকতে ভালো লাগছে। আমার পাশে রুপন্তি আর রুপন্তির পাশে আরিয়ান। সময়টা বিকাল। এখন সবাই অন্যদিকে আছে। কিছুক্ষণ আগেও এখানে পানি ময়লা ছিল।

সবাই একসাথে এখানে নেমেছিল। ছেলে মেয়ে একসাথে না। আলাদা। টিচারদের কড়া নজর ছিল এক্ষেত্রে। তবে পরে সেই দূষিত পানি বদলানো হয়েছে। এখন সেখানে বসে থেকে ভালো লাগছে। হঠায় আমার মনে পড়ল ফেরার কথা। ওদের বলতেই ওরা বলল যে ভুলেই গিয়েছিল। মনে করাতেই ৩ জনে মিলে দৌড়। দৌড়ে গিয়ে দেখি বাস হাওয়া। কি হল তাহলে?
সারাংশঃ আমাদের ৩ জনকে ছেড়ে সবাই চলে গিয়েছে।

পর্ব ৪

এদিকে রুপন্তি মাঠে বসে হাত পা ছুঁড়ে কান্না করা শুরু করে দিয়েছে। কি করবে আজ তাহলে। এখানেই থাকতে হবে? বাসায় কি ফিরতে পারবে না? তাও ওরা ওদের বাসা থেকে কত দূরে এসেছে। কি করবে। এমন তো না যে হেঁটে হেঁটে পৌঁছে যেতে পারবে।

আরিয়ান ওকে শান্ত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। তখন আমি বলে উঠেছিলাম,
~ শুনুন।

আরিয়ান আমার দিকে তাকাল। রুপন্তি তখনও কান্না করায় ব্যস্ত।
~ আমাকে বলছেন?
শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল সে। এখন মনের মধ্যে টাকডুম টাকডুম বাংলাদেশের ঢোল বাজলেও এর কণ্ঠের উপর ক্রাশ খাওয়া যাবে না। বাসে উঠি আগে তারপর না হয় ক্রাশ খাব।
~ হুম আপনাকেই বলছি। আপনার ফোনে চার্জ আছে?
~ হ্যাঁ আছে।
~ তাহলে আপনি গাইড টিচার কে কল করেন।
~ কিন্তু নাম্বার?

~ ট্যুরে এসেছেন কিন্তু নাম্বার সাথে করে আনেন নি?
~ না আসলে
~ আসলে নকলে করা লাগবে না। আপনি দায়াল করুন আমি বলছি।
তারপর আমি ওকে নাম্বার বললাম আর ও ফোন লাগাল। ততক্ষনে আমি গিয়ে এই রিসোর্টের দায়িত্বে যিনি আছেন তাকে ডেকে আনলাম।

এসেই ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
~ কথা হয়েছে?
~ হ্যাঁ।
~ কি বললেন?
~ বললেন বেশি দূর যায় নি বাস। আমরা রিকশায় করে ওই পর্যন্ত যেতে পারব। ততক্ষণ বাস আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে।
আরিয়ান ওদেরকে বলল ২ টা রিকশার ব্যবস্থা করে দিতে। এদিকে আমি রুপন্তি কে তুলে দাঁড় করালাম।

কিছুক্ষণের মধ্যে লোকটি ২ টা রিকশা নিয়ে এলেন। প্রথমটাতে রুপন্তি উঠতেই ওই রিকশা ওয়ালা তার রিকশা টেনে নিয়ে গেল ঠিকানার উদ্দেশ্যে। আমি আর আরিয়ান কোন উপায় না দেখে ওই রিকশায় উঠে বসলাম।

জানি না ওর মনে কি চলেছে? কিন্তু আমার পঞ্চদশী দুরন্ত মন ছুটে চলেছে তো কখনো উড়ে চলেছে। তাকে থামানোর সাধ্য হয়তো আমার নেই।

২ পাশে পানি আর পানি। যেন কোণ নদীর অংশ এটা। এছাড়া গাছ গাছালি তো রয়েছেই। পরিবেশটা ঠাণ্ডা। ব্যাগ থেকে চাদর বের করে গায়ে জড়িয়ে নিলাম। আশেপাশে দেখছিলাম। সূর্য ডুবছে। আজকের মতো এই জায়গাকে বিদায় জানিয়ে চলেছে পৃথিবীর অপর প্রান্তকে উত্তাপ এবং আলোর ব্যবস্থা করে দিতে।

চুপচাপ পরিবেশে ভালো লাগছিল না বলে কথা বলতে শুরু করলাম।
~ আপনি যে বলেছিলেন স্কুল বাস বেশি দূর যেত এ পারে নি। কেন? ততক্ষনে তো এই জায়গা পার করে যাওয়ার কথা ছিল।
আমার কোথায় হয়তো ওর ধ্যান ভাঙল। আমার দিকে না তাকিয়েই বলতে থাকল,
~ আসলে স্কুল বাসে কি একটা প্রবলেম হয়েছে। তাই না কি বাস থামিয়ে রেখেছিল।
~ কি প্রবলেম?
~ জানি না।
~ ওহ।

বলে আবার চুপ করে রইলাম। তবে এবার আর অপর পাশে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকালাম না। চুপ করে পরিবেশ উপভোগ করতে থাকলাম।

একপাশে আকাশ কমলা রং ধারন করেছে তো তার বিপরীত পাশে আকাস অন্ধকার হতে শুরু করেছে। তবে পুরো পুরি অন্ধকার হয় নি। রিকশা চলেছে আপন গতিতে। চার পাশে বাতাসের বেগ যেন আজ একটু বেশিই। হাত মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে তীব্র ভাবে। যেন আমাকে আক্রমণ করছে বাতাস। তবে কোন শত্রুতা ছাড়াই।

ভাবতেই হাসি চলে এলো মুখে। পাশে বসে থাকা আরিয়ান কি করছে সেদিকে আমার কোন খেয়াল নেই। কারণ এই জায়গায় আর আসার সুযোগ পাবো কি না জানি না। তাই শেষ বারের মতো যদি জায়গা টা কে একটু অনুভব করার চেষ্টা করি তাতে ক্ষতি কি?

কিছুক্ষণের মাঝে পৌঁছে গেলাম বাসে কাছে। দেখলাম ওখানে রুপন্তি রিকশা থেকে নামছে। ওকে দেখতেই মন খুশি হয়ে গেল। কারণ রিকশা ওয়ালা যে ভাবে রিকশা টেনে নিয়ে গিয়ে ছিল, ভয়ে ছিলাম যদি অন্য কোথাও নিয়ে চলে যায়। তখন কি হবে। তবে বাঁশের কাছে এসে ওকে দেখতেই মন ভালো হয়ে গেল।

আমাদের গাইড স্যার বাস থেকে নেমে এসে জিজ্ঞেস করতে থাকলেন কোন সমস্যা হয়েছে কি না? আরও কেউ আছে কি না? এসব। সব প্রশ্নের পার্ট চুকিয়ে রুপন্তি আগে বাসে উঠে পড়ল। তারপর আরিয়ান উঠল। আর শেষে বাসে উঠলাম আমি। উঠে আমার চক্ষু চড়ক গাছ। কারণ বাসে শুধু একটা সিট ই ফাঁকা ছিল। সেটা হল আরিয়ানের পাশের সিট। অবশ্য এখন ছেলেদের অবস্থান ও বদলিয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম রিসোর্টে পৌঁছে নতুন বাস ডাকা হবে।

তবে সেটা আর করা হয় নি। তাই আগে যেই ছেলে গুলো আমাদের সাথে গিয়েছিল তারা ৫ জন আবার আমাদের সাথেই যাবে। তবে মেয়েরা আগে উঠে পিছনের সিট দখল করে নেয় আর স্যার কে অনুরোধ করে যেন ওরা পিছনের সিটে বসতে পারে। তাছাড়া তখন আমরা ৩ জন ছিলাম না। তাই স্যার ৪ জন ছেলে কে সামনের সারিতে বসিয়ে দেন। পরে ফোন না দিলে হয় তো থামতেন না আমাদের জন্য। আরিয়ান জানালার পাশের সিটে ছিল। তাই আমি ওর পাশে বসে পড়লাম। পিছনে ফিরে রুপন্তির দিকে ইশারা করলাম।

~ আমাকে ছেড়ে ওখানে বসলে যে?
ও নিজেও আমাকে ইশারায় জবাব দিল। আর ওর জবাব থেকে যা বুঝলাম সেটা হল,
~ আমি ছেলেদের সাথে বসতে চাচ্ছি না। প্লিজ ম্যানেজ করে নাও।
তারপর এমন এক কিউট ফেস করল যে আমি গলে গেলাম।

বাসের পিছনের সিটে বসার ঘটনা টা শেয়ার করি।

সাধারণত পিকনিক বা ট্যুর বা শিক্ষা সফর জেখানেই যাওয়া হোক না কেন, এর একটি অনবদ্য অংশ হল রাস্তায়। রাস্তায় সবাই মজা করতে করতে যায়। বাসে উঠার পর গান ছেড়ে দেওয়া হলে বা অন্যরা গান গাওয়া শুরু করলে তাদের সিট ফাঁকা হয়ে যায় এক প্রকার। কেউ বসে থাকে না। সবাই সিট থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে আর বিশেষ করে বাঁশের পিছনের দিকে ভিড় জমায়। একসাথে নাচতে নাচতে গান গাইতে গাইতে শেষ গন্তব্য পর্যন্ত যায়। সামনের দিকে গাইড স্যার বা ম্যাম বসে থাকেন তাই তাদের সামনে কেউই নেচে নিজের ইজ্জতের ১২ টা বাজাতে ইচ্ছুক নয়। আর পুরো রাস্তা স্ট্যাচুর মতো বসে থেকে জার্নি মাটি করতেও রাজি নয়। তাই পিছনে জড়ো হয়ে নিজেদের মতো আনন্দ করতে থাকে।

বাসে আসার পর জানতে পারলাম যে বাস কেন অনেকক্ষণ থেমে ছিল। বাস চলা শুরু হওয়ার পর যখন নাম ডাকা শুরু করল এই দেখতে যে সবাই বাসে আছে কি না। তখন একটা মেয়েকে কয়েকবার ডাকার পরও পাওয়া গেল না। তখন স্যার খুঁজে দেখলেন যে সে এই বাসে নেই। তখন অনে বাসের স্যার কে কল করা হল। উনিও বললেন যে উনার বাসে সবাই ছেলে কোন মেয়ে নেই।

তারপর মেয়েটার নিজস্ব নাম্বারে ফোন দিয়ে জানতে পেরেছিলেন যে তার বাবা এসে তাকে নিয়ে গেছেন। তার বাবা মায়ের সাথে কথা বলে আশ্বস্ত হন। এই করতে গিয়ে অনেক সময় কেটে যায়। এর মাঝেই আরিয়ান ফোন করেছিল আর তখন বাসটা থেমেই ছিল তাই আমরা কোন সমস্যা ছাড়াই বাসে উঠতে পেরেছি। কিন্তু কথা হল কখনো ঘুরতে গেলে যায় তত্ত্বাবধানে আপনি ওখানে যাচ্ছেন, তাকে না জানিয়ে অন্য কোথাও যাবেন না। এতে শুধু সবার চিন্তাই বাড়ে।

আরিয়ান নিজ থেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করে উঠল,
~ শুনুন।
আমি চমকে উঠলাম। এই ও আমার সাথে কথা বলছে। আমি বিস্ময় নিয়েই জবাব দিলাম,
~ হ্যাঁ বলুন। কোন সমস্যা?

~ না, আসলে
~ আবার আসলে নকলে করছেন? যা বলার ফটাফট বলে ফেলুন।
~ আসলে তখন আপনি আমাকে ফোন দিতে বললেন, কিন্তু আপনার কাছেই তো নাম্বার ছিল। আপনিই ফোন দিতে পারতেন।
~ কিন্তু আমার কাছে নাম্বার ছিল, কিন্তু চার্জ ছিল না। আর নাম্বার এর স্ক্রিনশট নিয়ে সেটা অয়াল পেপারে সেভ করা ছিল বলে বেশি খুঁজে ফোনের চার্জ নষ্ট হয় নি। এছাড়া আমারও তো আমার অভিভাবক কে জানানো লাগত। তাই আপনার কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। এতে আপনার কোন সমস্যা হয় নি তো?
~ না না হয় নি।
~ থ্যাংকইউ।
~ মেনশন নট।

কানে এয়ার ফোন গুজতে গিয়ে নিলাম না। ফোনের চার্জ সত্যিই অনেক দ্রুত শেষ হয়ে যায়। আপাতত শেষ করা যাবে না। ব্যাগে ফোন ঢুকিয়ে মিনি রেকর্ডারটা বের করলাম। ওটা তে কতগুলো রেকর্ডিং ছিল। মুলত গল্প। সেটা শুনতে থাকলাম এয়ার ফোন লাগিয়ে। হঠাৎ কানে রুপন্তির আওয়াজ ভেসে আসলো। সেদিকে তাকাতেই রুপন্তি আমাকে ইশারা করল তার কাছে যেতে।

আমি তার কাছে গেলাম। রুপন্তি আমাকে আবার ওই ঘটনা শোনাতে শুরু করল যে কি জন্য বাস থেমে ছিল অনেকক্ষণ। কিন্তু তখন কোন কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। তাই চুপচাপ ওর কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকলাম। তারপর শেষে মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে নিজের সিটের কাছে ফেরত আসলাম।

বসতে যাব যাব, এমন সময় ড্রাইভার ডানে বাস ঘুরাল। যার দরুন আমি পড়লাম সোজা আরিয়ানের কোলের উপর বসে। আর আরিয়ান ও আমার মাথার পিছনে ওর বাম হাত দিয়ে ধরল যাতে জানালার সাথে মাথা লেগে আমি ব্যথা না পাই।

পর্ব ৫

বসতে যাব যাব, এমন সময় ড্রাইভার ডানে বাস ঘুরাল। যার দরুন আমি পড়লাম সোজা আরিয়ানের কোলের উপর বসে। আর আরিয়ান ও আমার মাথার পিছনে ওর বাম হাত দিয়ে ধরল যাতে জানালার সাথে মাথা লেগে আমি ব্যথা না পাই।

আমি অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। চোখ যেন এখনই অক্ষি কোটর থেকে বের হয়ে আসবে আসবে অবস্থা। কোন মতে আটকে রাখা হয়েছে তাকে। আরিয়ান ও অবাক হয়েছে তবে সেটা প্রকাশ করে নি সে। আসলেই তো কি প্রকাশ করবে? এমন পরিস্থিতিতে কখনো পড়ে নি তো। তাই এমন সময় কি প্রকাশ করা উচিত, কোণ অনুভূতি এই সময়ের জন্য মানান সই ভাবতে হয়তো সে ব্যস্ত।

আমি এবার এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতে যাবো, তার আগেই বাস বামে মোড় নিল। আর এতে আমরা দুজনেই ডান দিকে হেলে পড়লাম। ফল স্বরুপ আমার ঠোঁট ওর গাল ছুঁয়ে গেল।

এবার আরিয়ানের দেখার মতো অবস্থা হয়েছিল। ওর চোখ ও মার্বেল হয়ে গিয়েছিল। বেচারা অতি পরিমানে শক খেয়েছে। আমি কোন মতে সেখান থেকে উঠতে যেতেই মাথায় ব্যাথা পেলাম বাঁশের জানালার সাথে। সাথে সাথে আরিয়ান আমার হাত ধরে বসিয়ে দিল। কেন বসাল সে হয়তো নিজেও জানে না। তাই ওর মুখ অনুভূতি শূন্য। আমি আর কথা না বাড়িয়ে সরি বলে ধীরে ধীরে উঠে পড়লাম আর পাশের সিটে বসলাম।

আরিয়ান নিজেকে স্বাভাবিক করতে কানে এয়ার ফোন গুঁজে দিল। আমিও চোখ বন্ধ করে নিলাম।

পথিমধ্যে পড়লাম এক বিপদে। বাস ড্রাইভারে প্রচণ্ড জ্বর। তিনি চালাতে পারবেন না। আবার বাস কন্ডাক্টর যে ছিল যে মাতাল। তাকে দিয়েও বাস চালানো যাবে না। কারণ সে একে তো ড্রাঙ্ক তার উপর বাচ্চা। একে বারেই কম বয়সী। তাই স্যার রা মালিক পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বাস ড্রাইভারের ব্যবস্থা করলেন। এতে বেশ সময় লেগে গেল। আবার বাসে বসে থাকা শোন স্টুডেন্ট দের ফোনে কল এর পর কল এসেই যাচ্ছে। বাকি যে বাস টা ছিল সেটা পৌঁছে গিয়েছে কিন্তু আমাদের টা কেন পৌছায় নি। স্যার এর ফোন তো অনেকে ওয়েটিং এ পাচ্ছে। এতে চিন্তা আরও বেড়ে চলে ছিল।

আমার বাড়ির সামনের মেই রোডে পৌঁছানোর পূর্ব মুহূর্তে আমি আব্বুর সাথে গাইড স্যার এর কথা বলিয়ে দিলাম। তারপর রুপন্তি কে বিদায় জানিয়ে নেমে পড়লাম। নামতেই সামনে যেই রিকশা পেলাম তাতে উঠে পড়লাম। গন্তব্য বাসা। আম্মু আব্বু এমনিই দেরি হওয়ায় চিন্তা করছে। বাসায় পৌঁছে খেলাম আম্মুর বকা। আর কখনো কোন ট্যুরে যেতে দেবেন না। এমন ভয়ানক হুমকি ও দিলেন। এছাড়া পরীক্ষার রেজাল্টের পর দেখে নেবেন – এমন মারাত্মক বকাও খেতে হল আমায়।

তারপর তার সাথে বহুদিন দেখা হয় নি।

মার্চ মাসে আবার আমাদের দেখা হয়। এবার আমার বেশ অবাক লাগে। ছেলেটা কি প্রতি মাসে এক বার করে আমার কাছে হাজিরা দিয়ে যায়? কে জানে? ওকে জিজ্ঞেস করলেও হয় তো উত্তর পাওয়া যাবে না। তবে মূল কথা য় আসি। কিভাবে দেখা হয়েছিল।

ক্লাস ক্যাপ্টেন যেদিন ক্লাসে আসে না, সেই দিন আমার জন্য ভীষণ ভালো যায়। মুলত ক্লাস ক্যাপ্টেন হওয়ার অদম্য ইচ্ছা থাকলেও আমার আম্মু ক্লাস টিচার কে ব্যক্তিগত ভাবে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যেন আমাকে এই পদে চাকরি একদম ই না দেওয়া হয়। তাই এই পদ আমি পেতে পেতে পাই নি। মুলত পড়া লেখা থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে এই পদ – এমন ধারণা থাকায় আমাকে কখনই এই কাজ করতে দেয় নি।

তবে আগের স্কুলে আমাকেই এই কাজ ৩ বছর ধরে করতে হয়েছে। আর সেই সময় আম্মু আমাদের সাথে থাকত না বলে মানা করার কেউ ছিল না। আর না ছিল কেউ উৎসাহ করার। তাই বিনা সমস্যায় এই কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। তবে তার আগের বছর থেকে আমরা পুরো পরিবার একসাথে থাকা শুরু করি। তাই আম্মুকে সব বিষয়ে জানালে উনি উনার সিদ্ধান্ত জানান, এবং সেই অনুযায়ী আমি চলার চেষ্টা করতাম।

আগে আম্মু আমাদের সাথে থাকতেন না কারণ উনি দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। আর গত বছর থেকে থাকেন কারণ গত বছর তার পড়া শেষ হয়েছে। আমার আম্মু কে দেখলে আমি এই উক্তির খুব ভালো উদাহরন পাই,
পড়াশোনার কোন বয়স থাকে না
তো যেই দিন ক্লাস ক্যাপ্টেন অনুপস্থিত থাকেন সেদিন আমি সেই দায়িত্ব পালন করি। নিজ থেকেই। মুলত এই দায়িত্ব অনেক দৌড় থাকে বলে আমার বেশ ভালো লাগে। খাতা নিয়ে টিচার্স রুমে যাওয়া, টিচারকে ডেকে আনা সহ নানা কাজ। বলতে গেলে সে দিন দৌড় এর উপর থাকতে হয়। এই একটা দিন আমার বেশ ভালো লাগে।

সেদিনও ক্লাস ক্যাপ্টেন অনুপস্থিত ছিল। তাই খাতার বোঝা নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে আমি না থাকলেও করে ছিলাম। টিচার্স রুমে খাতা জমা দিয়ে ফেরত আসার সময় আরিয়ানের দিকে নজর পড়ে। কিছু একটা খুজ ছিল। আমি একজন পরিচিত মেয়েকে ডেকে ওর কাছে যেতে বলি যদি কোন হেল্প লাগে সেজন্য। সেও রাজি হয়ে যায়। আমি চুপি চুপি ক্লাস রুমে চলে আসি। চুপি চুপি আসার কারণ আমি সেই দিনের ঘটনা ভাবছিলাম। তাই তো বাস থেকে আসার সময় বাই বলা হয় নি। তবে ও ঘুমাচ্ছিল আর ঠাণ্ডা বাতাসে হালকা কাঁপছিল দেখে আমি নিজের চাদর টা ওর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে এসেছিলাম।

আমি ক্লাস এ আসতেই আবার একজন বলে উঠল টিচার্স রুমে গিয়ে ম্যাম কে ডেকে আনতে। কি একটা সমস্যা হয়েছে। আমি আবার বের হয়ে গেলাম সে দিকে। গিয়ে রাস্তায় দেখি আমি যে দিকে যাচ্ছি, আরিয়ান ও সে দিকেই যাচ্ছে। বুঝতে পারলাম, আমরা দুজনেই টিচার্স রুমের দিকে যাচ্ছিলাম। তবে ও সামনে আমি ওর পিছনে। ও গিয়ে কোন ম্যাম কে ডাকবে বুঝছিল না। শুধু কাউকে জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করছিল যে পদার্থবিজ্ঞান ম্যামের সাথে কথা বলবে।

কিন্তু খালা কে জিজ্ঞেস করায় বুঝতে পারে নি খালা যে কার কথা জিজ্ঞেস করছেন। কলেজের সব স্টাফ দের বেশির ভাগ স্যার ম্যাম কে নাম ধরে জানে, সাবজেক্ট ধরে না। তাই বুহতে পারে নি। তার উপর উনার তারা ছিল বলে চলে গিয়েছিলেন। আমি অকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলাম আর আমাদের ক্লাস টিচারকে ডেকে নিলাম। এর ফাকে ফিজিক্স ম্যাম কেও ডেকে বললাম যে ৩ নং বিল্ডিং থেকে ইংলিশ ভার্শনের ক্লাস ১০ এর একটি ছেলে তার সাথে দেখা করতে এসেছে।

ম্যাম চলে গেলেন তার কাছে। আমিও মিস কে নিয়ে তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ফিজিক্স ম্যাম আমাকে থামিয়ে বললেন,
~ এই ছেলেটার কথা বলছিলে?
~ ইয়েস মিস
~ ওকে
~ তাহলে আমি যাই মিস?
~ হুম যাও।

এর মধ্যে আরিয়ান আমাকে দেখে ফেলল। আমি কোণ দিকে যাই এবার? ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম, ক্লাসে যেতে হবে। চলে গেলাম ক্লাস এ। ওর সাথে কথা না বলেই। যেতে যেতে একবার পিছনে মুড়ে দেখে নিলাম ওকে আর চোখে। কিন্তু চোখে চোখ পড়তেই সরিয়ে নিয়ে দৌড় দিলাম।

বিল্ডিং এর নাম্বারের ব্যাপারে আসি। আমাদের স্কুল বেসরকারি। অনেক স্টুডেন্ট হওয়ায় একটা বিল্ডিং এ ধরে না। এর সূচনা ঘটেছিল ভাড়া করা বিল্ডিং থেকে। সেই হিসেবে গুনলে এই স্কুলের ৬ টা বিল্ডিং আছে একই জায়গায়। সব স্টুডেন্ট এর জন্য। এর মধ্যে ৫ টা বিল্ডিং রাস্তার ওপারে। আর ৬ নং এবং নতুন বিল্ডিং রাস্তার এপারে। রাস্তার ওপারে থাকা ৫ টা বিল্ডিং ই ভাড়া করা। একটা সময় পর ওগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে। যার মধ্যে ৪ নং বিল্ডিং টা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেখানকার স্টুডেন্টদের আসল বিল্ডিং এ আনা হয়েছে যেটা নির্মাণাধীন।

এই হিসাবে আমার স্কুল রাস্তার এপারে। আর আরিয়ানের স্কুল বিল্ডিং রাস্তার ওপারে। রাস্তা পার করে ও আমাদের বিল্ডিং এ এসেছিল ফিজিক্স মিস এর সাথে দেখা করতে।

এই ঘটনা প্রায় ই ঘটে থাকে। টিচারদের সাথে দরকার পড়লে এই বিল্ডিং থেকে ওই বিল্ডিং এ যেতে হয়। স্টুডেন্ট টিচার উভয় কেই।

এর বেশ কিছু দিন পর আমাদের দেখা হয় আমার বেশ প্রিয় একটি জায়গায়।

পর্ব ০৬

এর বেশ কিছু দিন পর আমাদের দেখা হয় আমার বেশ প্রিয় একটি জায়গায়। ফুচকা স্টল।

ঢাকা শহরের বেশ নজর কারা দৃশ্যের মধ্যেই পড়ে ফুচকার ঝাল মুড়ির দোকান গুলো। এসব দোকানে মানুষের ভিড় দেখা যায়। স্কুল কলেজের সামনে এদের এক আলাদা পরিচিতি থাকে। বাচ্চা থেকে বড় সবাই চিনে এদের। নিজের স্কুলের সামনে কে কে ফুচকা বা ঝাল মুড়ি নিয়ে বসে সেটা সবাই চিনে। মেয়েরা তো যেন দশ হাত দূরে থেকে দেখলেও বলতে পারবে যে এটা আমাদের ঝাল মুড়ি মামা।

আর স্কুল এর টিফিন টাইম এ তো এদের কাছে যাওয়ার জায়গা পাওয়া যায় না। বিশেষ করে মেয়েদের ভিড় থাকে। তবে এই স্কুল এ ছেলে দের ভিড়ও কম নয়। আমি আগেই বলেছিলাম যে মেয়েদের ক্লাস প্রভাতী শাখায় হয় আর ছেলেদের দিবা শাখা। তাহলে আরিয়ানের সাথে আমার কিভাবে দেখা হল।

আমাদের স্কুল এর ক্লাস শেষ হওয়ার পরও আমরা স্কুলেই থাকি। সবাই না। যারা যারা কোচিং করে। শহরের বেসরকারি স্কুল গুলোতে এই প্রথা চালু আছে। আমি অবশ্যা আগে জানতাম না। কিন্তু ক্লাস নাইন এ এখানে আসার পর জেনেছি। স্কুল নির্ধারিত সময়ে শেষ করার পর স্কুলের টিচার রাই ক্লাস রুম গুলোতে কোচিং করান। এর জন্য আলাদা থাকে সব কিছু। ক্লাস রুম নির্দিষ্ট শিক্ষকের জন্য বরাদ্দ থাকে। তাকে পারিশ্রমিকে বিনিময়ে কোচিং করে থাকে শিক্ষার্থীরা। মুলত ক্লাস শেষে হয় বলে বাচ্চারা ক্লাস কোচিং একেবারে শেষ করে ঘরে ঢোকে সাধারণত। এই জন্য অভিভাবক রাও এই ক্ষেত্রে উৎসাহিত করে থাকেন তাদের বাচ্চা দের। এ দিক থেকে সুবিধা একটা হল আলাদা করে প্রাইভেটে পড়ানো লাগে না।

তবে যাদের চিন্তা ভাবনা এর থেকেও বেশি, মানে চিন্তা আলট্রা ম্যাক্স প্রো তাদের কথা আলাদা। তারা নিজেদের বাচ্চাদের ক্লাস করায়, স্কুল শেষে কোচিং করায়, এছাড়া বাইরে কোচিং এ পড়ান, আর তারপর বাসায় এসে হোম টিউটরের কাছে পড়ান। এর পর যদি তাও নিশ্চিন্ত না হন তাহলে বড় ভাই বোন দের কাছে পড়ান, শেষে নিজেও সেই পড়া ধরেন। এজন্য এসব স্টুডেন্ট দের যা অবস্থা হয় তার ব্যাখ্যা নাই বা করলাম।

আমার বাসা থেকে মুলত স্কুল বেশ খানিকটা দুরেই। এর ধারণা যদি করতে বলা হয় তাহলে বলব বাসে গেলে ১০ মিনিট, রিক্সায় ৩০ মিনিট, আর হেঁটে গেলে পাক্কা ১ ঘণ্টা সময় নিবেই। তাই আব্বু আম্মু অজথা এতো ভাগ দৌড় না করিয়ে শেষে ওই স্কুলের কোচিং এই ভর্তি করিয়ে দেন। তাছাড়া আমাদের বাসার কাছে তেমন কোচিং সেন্টার ছিল না, আর না ছিল পড়ানোর জন্য প্রাইভেট টিউটর। তাই এই ব্যবস্থা।

সেই সুবাদে স্কুল ছুটির পরও এখানে থেকে যাই। হালকা বিরতির পর স্যার ম্যাম রা তাদের ক্লাস শুরু করেন। এই বিরতির মধ্যে রেস্ট কয়জন নেয়, সেটা আমার জানা নেই। কারণ এই সময়টায় সবাই মিলে ঘুরে বেড়ায়। তারপর যখন ক্লাস শুরু হয় তখন ক্লান্তির চোটে ক্লাস মাটি হয়।

আমিও তাদের মধ্যেই একজন। ক্লাস শেষ হতেই আমরা ৫ তোলা থেকে সোজা নিচে নেমে যাই। তবে এখানে নতুন বিল্ডিং এ আসার পর আমাদের যদি বাইরে থেকে কিছু কেনা লাগে সেজন্য আমাদের বাইরে বের হতে হবে। আর এজন্য ম্যাম দের অনুমতি নিতে হয়, সেটা কাগজে লিখিয়ে সাইন করালেই সেটা দারোয়ান এর হাতে ধরাব, তারপর আমাদের বাইরে যেতে দেয়। সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে আমি আরেকজনকে সাথে নিয়ে স্কুল গেট পার করে হেঁটে সোজা ফুচকা ওয়ালা মামার কাছে গিয়ে অর্ডার দিই। অবশ্য আমার জন্য না। আমি বলতে গেলে ফ্রেন্ড দের পক্ষ থেকে লিস্ট আর টাকা নিয়ে নেমেছিলাম। ওদের জিনিস কিনে আবার ৫ তলায় উঠে ওদের ফেরত দিব। এতে করে স্কুলের বাইরে পা রাখা হবে এই জন্যই বাইরে যাওয়া। ওদের খাবার কেনা তো শুধু বাহানা।

অর্ডার দিয়ে সামনে তাকিয়ে সেই পরিচিত মুখ খানা দেখতে পাই। সাথে সাথে চোখ নিচে নামাই। আবার ভাবি,
~ আমি তাকালে কি আর ও বুঝতে পারবে? একদম ই না।
তাই আবার তাকাই। কিন্তু হয়তো আরিয়ান বুঝতে পেরেছিল। তাই হাত নেড়ে ইশারা করে হাই দেখাল। আমি পাশে তাকালাম। আমার বান্ধবী পাশের ঝালমুড়ি মামার কাছে অর্ডার দিতে ব্যস্ত। তাই আমিও হালকা হেসে হাত নাড়ালাম। ও হয়তো তারপর কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু আমি শুনতে পাই নি। সামনেই রাস্তা আর তার অপর পারে আরিয়ান। এই রাস্তা টা শাখা রাস্তা হলেও ডান পাশে মূলসড়ক। তাই শব্দ টা একটু না, অনেক বেশি। সেও হয়তো কোন কাজেই বের হয়েছে আমি। ওর কথা গুলো বোঝার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় মনে হয় কম সক্রিয় হয়ে পড়ে ছিল। তাই আর বুঝতে পারলাম না।

তবে যাই হোক, আমার মনে তখন জিৎ গাঙ্গুলির ওই গান টা বাজছিল।
চোখে চোখে এত কথা
মুখে কেন বলো না,
এত আশা তবু ভাষা
মন কেন পেলো না,
একি খেলা বলো না
কেন কর তুমি বলো
ছলনা বলোনা, বলোনা।।

তবে এই ছলনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না যেন। আমি সবার খাবারের প্যাকেট হাতে নিজে আমার ওই বান্ধবির সাথে চলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পরিচিত আওয়াজে থেমে গেলাম। পিছনে ফিরে দেখলাম আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর কাছে যেতে গেলে মনে পড়ল আমার সাথে আরও একজন আছে। আরিয়ানের দিকে ইশারায় ১ মিনিট অপেক্ষা করতে বলে ওর কাছে গেলাম।

~ এখানে এখনো দাঁড়িয়ে ছোঁ কেন ? চলো, দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
~ আমি না একটা জিনিস কিনতে ভুলে গিয়েছি।
~ ওকে আমি দাঁড়িয়ে আছি, তুমি কিনে আনো।
~ থাক তোমার দাঁড়িয়ে থাকা লাগবে না, আমি কিনে আনছি। এমনিই দেরি হয়ে গিয়েছে। বেশি দেরি হলে ২ জন মিলে গেলে মিস বেশি বকবে, তুমি যাও আমি আসছি, দেরি করব না।
~ ওকে আমি যাচ্ছি। তুমি কিন্তু তাড়াতাড়ি এসো।
~ হ্যাঁ আমি আসছি।

ওকে কোন মতে পাঠালাম। ওকে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে দেখে আমি আরিয়ানের কাছে গিয়েছিলাম। তারপর সালাম দিয়ে কথা শুরু করলাম। ও নিজেও সালামের জবাব দিল। তারপর,
~ আপনি এখানে?
~ হ্যাঁ।
~ হঠাৎ ডাক দিলেন যে?
~ আপনার হাতে এতো খাবার?
~ এটা আসলে আমার না, আমার ফ্রেন্ড দের জন্য। ওরা কিনতে পাঠিয়েছে। আর কিছু বলবেন?
~ আসলে
~ জ্বি আসলে?
~ আসলে সেদিন বাসে বা বা।

~ সেদিন বাসে যদি একটু জলদি বলতেন তো ভালো হত, আমার কোচিং শুরু হয়ে যাবে।
~ আসলে সেদিন বাসে আপনি মনে হয় আপনার চাদর ফেলে চলে গিয়েছিলেন।
~ ওহ সেদিন আমি বাসে আমার চাদর
~ কি হল থেমে গেলেন যে?
~ কিছু না। হ্যাঁ তো?
~ তো ওটা আপনাকে ফেরত দেওয়া হয় নি।
~ সমস্যা নেই। আপনার ফেরত দেওয়া লাগবে না। আমি তাহলে যাই?
~ ওকে। বাই।

~ বাই।
বলেই আমি ভোঁ দৌড়। আমাকে আর পায় কে? একটুর জন্য ফাঁস করে দিতাম যে আমি ইচ্ছা করে ওকে দিয়ে এসেছিলাম। উফ্‌ বাঁচা গেল। কিন্তু ভালোই হল যে ও বুঝতে পারে নি যে আমি ওটা ওকে ইচ্ছা করেই দিয়ে এসেছিলাম।

এরপর প্রায়ই আমাদের দেখা হত। এর কারণ হল স্কুল কর্তৃক আয়োজিত বিজ্ঞান মেলা। সেটা হতে এখনো দেরি আছে তবে যারা যারা অংশ গ্রহন করবে তাদের আশা যাওয়া চলছেই আমাদের স্কুলের ৬ নং বিল্ডিং এ। এই বিল্ডিং এ আয়োজন করা হয় না। বেশির ভাগ অনুষ্ঠান বা এরকম ক্ষেত্রে সেটা ৩ নং বিল্ডিং এই আয়োজিত হত। তবে এ বছর নিজস্ব ভবনে আয়োজন করা হচ্ছে। তাই মেলা কোথায় হবে, কখন হবে, কোণ শিক্ষক বা শিক্ষিকার সাথে কথা বলা লাগবে এসবের জন্য স্কুলের নিজস্ব ভবনে আসতে হত। আর কলেজ বিভাগের শিক্ষকরা ৫ তলায় বসতেন। তাই তাদের সাথে কেউ দেখা করতে আসলে আমদের সাথেও দেখা হয়ে যেত।

তবে আমার সাথে আরিয়ানের বেশি দেখা হওয়ার আরেকটা কারণ হল ও যেই ম্যামের কাছ থেকে ইন্সট্রাকশন নেয় তার কাছে আমি ফিজিক্স কোচিং করি। তাই ও যতবার মিসের সাথে দেখা করতে আসতো, ততবার আমার সাথে দেখা হত। তার উপর ওদের ক্লাস হত দুপুরের দিকে। টিফিন টাইম এও যদি দেখা করতে আসতো, সেই অনুযায়ী তখন আমি কছিং করতাম। সহজে বলা যায়,

আরিয়ানের টিফিন টাইম = আমার কোচিং টাইম।

তাই দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

লেখা – সাদিয়া সৃষ্টি

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “বয়সটা তখন ১৫ ছিল (১ম খণ্ড) – Obuj diner golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – বয়সটা তখন ১৫ ছিল (শেষ খণ্ড) – abegi diner golpo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *