নারী প্রতিবাদ

নারী প্রতিবাদ – জেগে ওঠো নারী করো প্রতিবাদ | নারী নির্যাতন

নারী প্রতিবাদ – জেগে ওঠো নারী করো প্রতিবাদ | নারী নির্যাতন: নারী মা, নারী বোন আবার এই নারী স্ত্রী। যে নারী ছাড়া কোন পুরুষের জীবন কল্পনাই করা যায় না, সেই নারী আজ সমাজের প্রতি পদেপদে অবহেলিত। নারীকে তার অধিকার সংগ্রাম আর প্রতিবাদ করে নিতে হয়। কিন্তু কেন এই বৈষম্য! আজ আপনাদের আমাদের আশেপাশের এমন কিছু কমন ঘটনা বলব। এই ঘটনার প্রতিবাদ করা উচিত কিনা তা আপনারাই বলবেন।

নারী প্রতিবাদ -১

আমি যখন ভার্সিটিতে পড়ি তখন ক্লাস টেনে পড়ুয়া একটা মেয়েকে টিউশনি করাতাম, নাম ছিলো মারিয়া। ৪-৫ দিন পড়ানোর পর বুঝতে পেরেছিলাম যে, মেয়েটার মাঝে যথেষ্ট ব্রিলিয়েন্সি আছে। কিন্তু কোনো একটা কারণে মেয়েটা পড়ায় তেমন মনোযোগ দিতে পারছে না। আমি মেয়েটাকে অনেকবার বলেছিলাম –

“তুমি কি জান, তোমার মত আমারও একটা ছোট বোন আছে। আমি জানতে না চাইলেও সে তার সব সমস্যার কথা আমার কাছে শেয়ার করে। ওর মত তোমারও যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আমায় বলতে পারো।”

কিন্তু মেয়েটা সব সময় আমার কথা এড়িয়ে যেতো। আমি ধরেই নিয়েছিলাম হয়তো প্রেমঘটিত কোনো সমস্যা। তাই শেয়ার করতে চাইছে না।

একদিন মারিয়ার বাসায় পড়াতে গিয়ে দেখি বাসা ভর্তি মেহমান। মারিয়ার মামা মামী এসেছে। মারিয়ার মা বললো, আজ পড়াতে হবে না। আমি যখন চলে যাচ্ছিলাম তখন মারিয়া বলেছিলো –

ভাইয়া একটু দাঁড়ান।
কিছুক্ষণ পর মারিয়া একটা হলুদ খাম আমার হাতে দিয়ে বলেছিলো,

ভাইয়া, আপনার এই মাসের বেতনটা।

মেসে এসে খাম খুলে যখন টাকা বের করতে যাই তখন দেখি টাকার সাথে একটা চিঠি। চিঠিতে লেখা ছিলো,

প্রিয় ভাইয়া,
কথাটা কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না? অনেকবার ভেবেছি আপনাকে বলবো কিন্তু কেন জানিনা বলতে পারি নি। তাই আজ বাধ্য হয়ে চিঠিতে বলছি। ছোটবেলা থেকেই আমার বড় মামা আমায় খুব আদর করে। আমায় মা মা বলে ডাকে আর দামী দামী সব জিনিস গিফট করে। যখন ক্লাস সেভেনে উঠি তখন থেকেই আসলে বুঝতে পারি মামা যখন আমায় জড়িয়ে ধরে তখন ইচ্ছাকৃত ভাবেই আমার স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন। আমি ক্লাস টেনে উঠার পরেও উনি আমাকে হুট করেই জড়িয়ে ধরে চুমু খান আর সেই চুমুটাও খুব আপত্তিকর। আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি বাবা মাকে বিষয়টা বলতে কিন্তু বলার সাহস পাই নি। কারণ বাবা মার চোখে বড়মামা ফেরেশতার মত। বড় মামা গতকাল বাসায় এসেছে। আমি যত উনার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি উনি ততই মা মা বলে আমার কাছে আসেন। আমি এখন কি করবো ভাইয়া?

চিঠিটা পড়ার মত কয়েকমিনিটের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে একটা পুরুষ একটা মেয়েকে মা ডেকে সম্বোধন করে নর পশুর মত এমন একটা কাজ করতে পারে?

পরের দিন যখন মারিয়াকে পড়াতে গেলাম তখন মারিয়া আমার চোখের দিকে তাকাতে পারছিলো না। আমি মারিয়াকে বলেছিলাম,

মারিয়া, তোমারও একটা ছোট বোন আছে। তোমায় যেমন তোমার মামা আদরের বাহানা করে এমন করে। তোমার বোন যখন বড় হবে তার সাথেও তোমার মামা ঠিক এমন কাজটাই করবে। আর এর জন্য একদিন তুমি নিজেই নিজেকে দোষারোপ করবে। তাই কি হবে না হবে এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে তুমি প্রতিবাদ করো। নেক্সট টাইম তোমার মামা এমন করলে তুমি উনাকে সরাসরি বলো।

সেদিন রাতেই মারিয়া আমায় ফোন দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো,
“ভাইয়া জানেন, আমি আজ প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। বরং বাবা-মা আমায় ভুল বুঝলো। এমনকি মা আমার গায়েও হাত তুলেছে!”

পরের দিন সকালে আমি মারিয়াদের বাসায় গিয়ে ওর মার হাতে মারিয়ার চিঠিটা দিয়ে বলেছিলাম,

আন্টি, মারিয়া এখন ছোট নেই। ও এখন বুঝতে পারে কোনটা ভালো স্পর্শ আর কোনটা খারাপ। একটা মেয়ে কখন অসহায় হয়ে পড়ে জানেন? যখন একটা মেয়ে তার নিজের মাকেও তার সমস্যাটার কথা বলতে পারে না।

আমি কথাগুলো বলে যখন বাসা থেকে বের হয়ে আসি তার কিছুক্ষণ পরেই আন্টি আমায় ফোন দিয়ে বলে আমি যেন কাল থেকে মারিয়াকে পড়াতে না যাই। আমিও তখন কিছু বলতে পারি নি। তখন শুধু একটা কথায় বারবার মাথায় আসছিলো আর সেটা হলো, মাঝে মাঝে একটা মেয়ে কতটাই না অসহায় হয়ে যায়?

নারী প্রতিবাদ -২

একটা দোকানে কম্পিউটার চালানো শিখতাম। দোকানদারটা মধ্যবয়সী লোক। প্রতিদিন বিকাল ৪ টার দিকে বোরখা পড়া একটা মেয়ে দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতো। আর ঐ মেয়েকে দেখেই উনি চিৎকার করে ‘শরীফের একটা বোরখা পড়া মেয়ে পাগল করেছে’ এই গানটা গাইতেন। পর্দা করলে মেয়েরা অনেক বাজে কথা শুনা থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু কিছু জানোয়ার আছে ওরা পর্দা করা মেয়েদেরকেও ছাড়ে না। একবার খেয়াল করলাম দোকানে একটা বোরখা পড়া মেয়ে এসেছে। আর দোকানদার মেয়েটাকে এটা ওটা সমানে কিনে দিচ্ছে। মেয়েটা যখন চলে যাবে তখন আমি পিছন থেকে গাইতে লাগলাম, একটা বোরখা পড়া মেয়ে পাগল করেছে। আমার গান শুনে লোকটা দৌঁড়ে এসে আমায় একটা থাপ্পড় মারলো।

আমি অবাক হয়ে বললাম-

আপনি আমায় থাপ্পড় মারলেন কেন? আপনিও তো বোরখা পরা মেয়ে দেখলে এইভাবে গান গান। কই আমি তো আপনাকে থাপ্পড় মারি নি। আজ যে আমায় থাপ্পড় মেরেছেন সেটা মনে রাখবেন। কারণ আজকের পর আপনাকে যদি কোনো মেয়েকে দেখে ঐ রকমভাবে গান গাইতে দেখি তাহলে এই থাপ্পড়টা আপনাকে ফিরিয়ে দিবো।

এরপর আর কখনো দেখিনি ঐ দোকানদারকে বোরখা পরা মেয়ে দেখে গান গাইতে। বরং ঐ মেয়েটাকে দেখে এখন মাথা নিচু করে রাখে।

নারীর প্রতিবাদ -৩

আমার স্ত্রী লিলিমার অফিসের নিচে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি । হয়তো কোনো মিটিং চলছে। তাই ওর আসতে দেরী হচ্ছে। তাই পাশের দোকানে গিয়ে একটা সিগারেট কিনলাম। সিগারেটে যখনি আগুন ধরাবো তখনি লিলিমা নিচে নামলো।

আমি সিগারেটটা ফেলে দিয়ে ওর কাছে গিয়ে বললাম,

কি ব্যাপার? তোমাকে দেখতে বাংলা সিনেমার ডায়নী রিনা খানের মত লাগছে কেন?

লিলিমা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

পিয়াল, আমি চাকরিটা ছেড়ে দিবো। প্রতিদিন বসের খারাপ নজর গুলো আর আপত্তিকর কমেন্টগুলো আমি আর নিতে পারছি না।

আমি মুচকি হেসে লিলিমাকে বললাম,

হেরে যাবে?
লিলিমা অবাক হয়ে বললো, মানে?

আমি লিলিমার হাতটা ধরে বললাম,

তোমার মনে আছে। তোমার সাথে প্রেম করার সময় ভুলে একবার তোমার ঠোঁটে কিস করে ফেলেছিলাম। তুমি তখন আমার নাক বরাবর ঘুষি মেরেছিলে। সেদিন কিন্তু তুমি আমার অন্যায় কাজটা মেনে নাও নি। তাহলে আজ কেন মেনে নিয়ে হেরে যাবে?

লিলিমা কতক্ষণ চুপ থেকে তারপর আমার হাতটা শক্তকরে চেপে ধরে বললো,

চলো এক জায়গায় যাবো। লিলিমা কলিংবেল বাজাতেই এক ভদ্রলোক দরজা খুললো। লিলিমাকে দেখেই ভদ্রলোক অবাক হয়ে বললো,

আরে তুমি এইখানে?
লিলিমা মুচকি হেসে ভদ্রলোককে বললো,

আসলাম, এমনিতেই। ভদ্রলোক আমাদের ভিতরে আসতে বললেন। ভিতরে ঢুকে লিলিমা ভদ্রলোককে বললো,

স্যার ভাবীকে একটু ডাকেন। উনার সাথে পরিচিত হই।

ভদ্রলোকের স্ত্রী আসতেই লিলিমা ভদ্রলোকের স্ত্রীকে বললো,

ভাবী, আপনার স্বামী আজ সকালে আমার গলার নিচে তাকিয়ে বলেছে আমার গলার নিচের তিলটা নাকি খুব সুন্দর! তাই আমিও আমার স্বামীকে নিয়ে এসেছি আপনার গলার নিচে কোনো তিল আছে কি না সেটা খুঁজে বের করার জন্য।

লিলিমার কথা শুনে ভদ্র মহিলা চমকে গেলো আর ভদ্রলোক চোরের মত মাথা নিচু করে রইলো। লিলিমা তখন ভদ্রলোককে বললো,

স্যার, নেক্সট টাইম আমাকে বাজে কোনো কমেন্ট করলে আমি আমার স্বামীকে নিয়ে আপনার বাসায় আসবো। আর আপনার চোখের সামনে আপনার স্ত্রীকেও আমার স্বামী ঠিক একইভাবে কমেন্ট করবে, যেটা আপনি আমায় করেছিলেন।

ভদ্রলোকের বাসা থেকে বের হয়ে আমি রিকশা খুঁজতে লাগলাম। এমন সময় লিলিমা আমার হাতটা ধরে বললো,

পিয়াল, চলো না আজ হেঁটে বাসায় যাই।

কালো পিচঢালা পথের পাশে হলুদ সোডিয়ামের বাতিগুলো জ্বলে উঠেছে। লিলিমা এক হাতে আমায় শক্ত করে ধরে রেখেছে, আর আরেক হাতে ধরে রেখেছে আইসক্রিম। আমরা বাসার দিকে হেঁটে যাচ্ছি।

একটা মেয়েকে কখনো করুণা না করে একটু সাপোর্ট দিন। বিশ্বাস করেন, মেয়েটা ঠিকই সব সমস্যার সমাধান করবে, ওর আপন নারী শক্তি দিয়ে।

হয়তো এমন একটা দিন আসবে যেদিন সমাজের প্রতিটা পুরুষ নারীদের জৈবিক চাহিদা মেটানোর বস্তু কিংবা সন্তান উৎপাদনকারী যন্ত্র মনে না করে মানুষ হিসাবে সম্মান করবে।

আরো পড়ুন: শাশুড়ি নির্যাতন – শাশুড়িকে উচিত শিক্ষা দেয়া

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *