মজার প্রেম

মজার প্রেম – আমার প্রেম ও মায়ের স্টার জলসা

মজার প্রেম – আমার প্রেম ও মায়ের স্টার জলসা: ক্রাশ পাত্তা না দেওয়ায় বিষ খেয়ে এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। নাবিলাকে কয়েকবার প্রপোজ করার পরও সে কিছুতেই রাজি হয়নাই। এবার তো সরাসরি বলেই দিলো যে, আমার গাঁয়ের রঙ কালো, তাই সে নাকি আমাকে পছন্দ করেনা। রাগের ঠেলায় এক বোতল চিকা মারার বিষ খাইছি যাতে না মারা যাই আর কি!

আমার পাগলামি

হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি মা-বাবা সহ আত্নীয়স্বজন অনেকেই আমাকে দেখতে এসেছে। বন্ধুরা আমার জন্য আনা আপেল কমলা খেতে খেতে মোবাইল টিপতেছে। তা দেখে এখন আমার কচু গাছের সাথে ফাঁসি দিয়ে উগান্ডা চলে যেতে ইচ্ছা হইতাছে।

মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে জিজ্ঞেস করলো – এমন কাজ করলি কেন বাবু? কি এমন হইছিল যে তোর বিষ খাইতে হইব। বাইক চাইছিলি তাই তো? তুই সুস্থ হয়ে নে তারপরেই আমি তোকে আমার গহনা বিক্রির টাকা দিয়ে বাইক কিনে দিবো, তবুও আর কখনো এমন পাগলামি করিস না। কথাটা বলেই মা হাউ মাউ করে কান্না শুরু করে দিলো।

বাসায় এনে মা-বাবা ছোট বোন সহ আত্নীয়স্বজন সকলেই জিজ্ঞেস করতেছে কেনো আমি বিষ খেলাম?

আমিঃ সবার কথার উত্তর দিতে ৩২ টা দাঁত বের করে বললাম – বিষ খেলে নাকি ফর্সা হওয়া যায়, তাই আমি বিষ খেয়েছি!

সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

মাঃ আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো – তোকে এই কথা কে বলেছে?

আমিঃ কেন তুমিই না সেদিন রাতে ভাত খেতে খেতে বললা জি বাংলা সিরিয়ালের শ্যামা নাকি আগে কালো ছিল, পরে যখন বিষ খেয়ে সুস্থ হলো তখন নাকি আগের থেকে অনেক ফর্সা আর স্মার্ট হইছে। তাই তো আমি কালো থেকে ফর্সা হওয়ার জন্যই বিষ খেলাম।

আমার কথা শুনে আত্নীয়দের কয়েকজন মহিলা হেঁসে ফেললো। আমি কিছু না বুঝে আমিও তাদের হাঁসির সাথে দাঁত মিলালাম।

মা আর আমি

মাঃ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো – আরে ওইটা সিরিয়ালে হইছে বাস্তবে এমন হয় নাকি বোকা? আর তুই এত ফর্সা হওয়ার চিন্তায় পড়ছিস কেন?

আমিঃ আমাদের ক্লাসের নাবিলাকে কয়েকবার প্রপোজ করছি কিন্তু আমি কালো বলে সে আমাকে একসেপ্ট করেনি। তাই তো তোমার সিরিয়ালের বুদ্ধি শুনে বিষ খেলাম। যাতে করে গায়ের রঙ চকলেট কালার থেকে ময়দা কালার হয়।

এবার মা আমার কথা শুনে রেগে গিয়ে বলল –
মাঃ কিহ, তুই একটা মেয়ের জন্য বিষ খেয়েছিস? আরে ভালো করে পড়ালেখা কর ওরকম কত মেয়ে আসবে, সাথে মেয়ের চৌদ্দগুষ্ঠীসহ তোর পায়ের কাছে চলে আসবে। আর ভুলেও এমন পাগলামি করিস না, বাবা।

কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে বললাম –

মাঃ তুমি তো জানো মা আমার লেখাপড়া করতে ভাল্লাগেনা।

মাঃ পড়ালেখা না করলে করবি কি তাইলে? তর বাপের কি গাদি গাদি টাকা পয়সা আছে যে বসে বসে খাবি।

আমিঃ একটা বুদ্ধি আছে।

মাঃ কি বুদ্ধি?

আমিঃ পড়ালেখা না করে বিয়ে করুম। তাইলে বউ আমারে কামাই কইরা খাওয়াইব।

মাঃ কি, কি কইলি তুই?

আমিঃ আরে হ্যাঁ! আমি ঠিকই কইছি। তুমি না কইছিলা স্টার জলসার জবা কাজের লোক থেকে মালিকের ছেলেকে বিয়ে করে উকিল হয়ে গেছে?

মাঃ হ, হইছে তাই কি?

আমিঃ তাহলে আমাদের বাড়িতেও একজন কাজের লোক রাখো। তার সাথে আমি প্রেম করে তারে বিয়ে করবো। তারপর সে উকিল হয়ে যাবে আর আমি সহ আমাদের পুরো পরিবার তার টাকায় বসে বসে খেতে পারবে। আর হ্যাঁ, কাজের লোক যখন আনবে একটু সুন্দরী দেখে আইনো। শত হলেও সে কিছুদিন পর তোমার পুত্রবধূ হবে।

মায়ের সিরিয়ালের বারোটা বাজালাম

আম্মু সহ আত্নীয়স্বজন সবাই আমার এমন কান্ড দেখে হা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মহিলাদের কেও কেও আবার কানাঘুষা করতেছে।

এমন সময় টিভিতে “Channel 420” এর খবরে শুনতে পেলাম কেও একজন তার গার্লফ্রেন্ড এর গাঁয়ে বোম ফিট করে রেখে দিয়ে চলে গেছে। এমন খবর শুনে টিভির সাউন্ডটা আরেকটু বাড়িয়ে দিলাম যাতে সবাই শুনতে পায়।

বেচারা প্রেমিকের সাহস আছে বটে। আজকালকার প্রেমিকাদের এমনি হাল করা উচিত। যদিও মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দরী। কিন্তু এত সুন্দরী মেয়ের গাঁয়ে প্রেমিক বেচারা বোম ফিট করে দিলো কেন?

মনে মনে ভাবলাম বারোভাতারি হবে হয়তো? তাই আর মেয়েটির প্রতি বেশি মায়া হলো না। ওমনি শুনতে পেলাম মেয়েটির গাঁয়ে থেকে বোম সরিয়ে দিলে নগদ ৫০ লক্ষ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেছে মেয়েটির বাবা। অথচ তিনি নিজেও মেয়ের ধারে কাছে যেতে পারছেন না ভয়ে।

টিভি থেকে চোখ সরিয়ে দেখি সবাই আমাকে দেখা বাদ দিয়ে মনোযোগ দিয়ে খবর দেখতাছে।

এই সুযোগে আমি রুমে গিয়ে লুঙ্গী গেঞ্জি সাথে টাই পড়ে ইং করে বের হয়ে আসতেই সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

আমি কাউকে পাত্তা না দিয়ে আম্মাকে গিয়ে বললাম – আম্মাজান একটা বড় কেঁচি দেও দেখি।

আম্মা অবাক হয়ে বললো – কি, কেঁচি দিয়ে তুই কি করবি? আর তুই এগুলা কি পরেছিস?

আমিঃ যা পড়ার পরেছি। এখন কেঁচি দেও তো কথা না বলে?

মাঃ কেঁচি দিয়ে কি করবি?

আমার প্রেম বনাম সিরিয়াল

আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম- কেনো বোম কাটবো। তার জন্যই তো এমন জামা কাপড় পড়ে নায়ক হিরো আলম সেজে এসেছি। যাতে করে মেয়েটির আমার উপর ক্রাশিত হয়ে আমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যায়। আর আমিও রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাই।

মাঃ কি বলছিস তুই? আমি তো তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছি না?

আমিঃ আরে খবরে দেখলে না মেয়েটির গাঁয়ে তার প্রেমিক বোম ফিট করে দিয়েছে। এখন যে মেয়েটির গাঁয়ে থেকে বোম খুলতে পারবে তাকে মেয়েটির বাবা ৫০ লক্ষ টাকা পুরুষ্কার দিবে। তাই তো তোমার কাছে কেঁচি চাইলাম। যাতে করে বোমটা কেটে ৫০ লক্ষ টাকা পাই। আর যদি কোনো রকমে মেয়েটিকে পটাতে পারি তাহলে তো কেল্লাফতে। আমি রাতারাতিই বড়লোক হয়ে যাব।

আম্মা বিরক্ত হয়ে বললো – কেঁচি দিয়ে বোম কাটে তোকে কে বলেছে শুনি?

আমিঃ এমা তুমিই না সেদিন বললে যে স্টার জলসার জবা কেঁচি দিয়ে বোম কেটেছে! তাই আমিও কাটবো। জবা মেয়ে হয়ে বোম কাটতে পারলে আমি ছেলে হয়ে পারবো না কেন? এখন বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি কেঁচিটা দেও দেখি। দেরি হয়ে গেলে অন্য কেও কেটে ফেলবে। আর আমার পড়ালেখা না করে ৫০ লক্ষ টাকা ইনকাম করাটাও মিস হয়ে যাবে। প্র্চুর মিস গো আম্মা, প্রচুর মিস…

আম্মা আর আমার বোধোদয়

আমার কথা শেষ হতে না হতেই আম্মা চিকৎকার দিয়ে বলে উঠলো –

মাঃ এমন করিস না বাবা। এসব ভারতীয় সিরিয়ালে যতসব আজগুবি জিনিস দেখায়। ওগুলা বিশ্বাস করতে নেই। একবার বিষ খেয়ে মরার হাত থেকে বেঁচে আইছস, আবার মরতে যাইস না।

আমিঃ কিহ! এসব সিরিয়াল যদি আজগুবি হয়, তাহলে তুমি এগুলা দেখো কেন?

মাঃ এই যে আজকে তোর সামনে, সকলের সামনে দাঁড়াইয়া কইতাছি আর জীবনেও এসব সিরিয়াল দেখা তো দূরের কথা এসবের নামও মুখে নিবো না। তবুও তুই সিরিয়ালের আজগুবি বিষয় নিয়ে পাগলামি করিস না।

বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফায় বসে রিমোট নিয়ে চ্যানেল পাল্টে “Ten Sports”এ দিলাম। মনে মনে ভাবলাম, যাক বিষ খেয়ে ফর্সা না হতে পারলেও তার চেয়ে বড় উপকার হইছে। এখন তাও শান্তি মতন খেলা দেখতে পারবো। আর সাথে বাইক টাও ফ্রি। মন খারাপ হলো নাবিলাকে ভেবে। যাক, বেচারি আমার মতন একজন ব্রিলিয়ান্ট প্রেমিক মিস করল। পরে দেখা যাবে, থার্ডক্লাশ টাইপের কারও সাথে প্রেম করবে।

খুশির ঠেলায় এখন বসে বসে “সাউথ আফ্রিকা বনাম অস্ট্রেলিয়া” ক্রিকেট ম্যাচ দেখতেছি।

এখন আর কেও কানের কাচে শ্যামা দে, জবা দে বলে ঘ্যানঘ্যান করে না।

মনে মনে বললাম-

বিশ্বে অসম্ভব যা কিছু ভাইরাল।
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার ভারতীয় সিরিয়াল।

আরো পড়ুন: আদর্শ ছেলে – মায়ের প্রতি ছেলের ভালবাসা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *