এই জীবনে তুমি আমার – valobasar golpo 2018
এই জীবনে তুমি আমার – valobasar golpo 2018: রুজদার টিউশনির পর বাসায় ফিরছিল। সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে। চারদিকেও জনগনের আনাগোনা কমে আসছে। রুজদা ধীর পায়ে এগিয়ে চলেছে।
সূচনা পর্ব
~ “এক রাতের জন্য আমার বাড়িতে এসো। যা চাইবে তার দ্বিগুন পাবে। “পৈচাশিক এক হাসি দিয়ে।
কথাটা শুনার সাথে সাথে রুজদার গাঁয়ে কাটা দিয়ে উঠে। বুকের ভিতর একরাশ ভয় কাজ করতে শুরু করে। সে কিছুটা সাহস জগিয়ে বলে,
রুজদাঃ এইসব কি বলছেন আপনি? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
~ “আমার কথার অর্থ খুবই সহজ। এক রাতের জন্য আমায় খুশি করো। আই প্রমিস এরপর যা চাইবে তাই পাবে। “চেয়ার থেকে কিছুটা এগিয়ে এসে।
রুজদা ভয়ে এক কদম পিছিয়ে যায়। চোখে তার এক রাশ ঘৃণা। লোকটিকে সে সামনে আসতে দেখে কিছুটা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠে।
রুজদাঃ এক পাও এগুবেন না। লজ্জা করছে না নিজের মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে এমন কুপ্রস্তাব দিতে। ছিঃ
লোকটি সেখানেই থেমে এক বিশ্রি হাসি দিয়ে।
~ “এইখানে ছিঃ এর কি আছে। এখনকার জমানাতে একটা জব পেতে একটু আদটু কম্প্রোমাইজ করতেই হয়। “
রুজদাঃ নিজের মেয়েকেও বুঝি এইরকম কম্প্রোমাইজ করা শিখান? সে কিছু চাইলেও বুঝি তাকে এইসব কম্প্রোমাইজ করতে বলেন?
~ “এই মেয়ে বুঝতে পারছো কার সামনে কি বলছো তুমি!”কিছুটা রেগে
রুজদাঃ হ্যাঁ জানি আমি কার সামনে কি বলছি!আমি একজন দালালের সামনে দাড়িয়ে কথা বলছি। যে কিনা চাকরি দেওয়ার নামে মেয়েদেরকে কম্প্রোমাইজ নামক দেহ ব্যবসা করতে বলে।
~ “একে দেহ ব্যবসা না বসকে খুশি করা বলে। বসকে খুশি রাখলে এখন সবই পাওয়া যায় বুঝলে। “
রুজদা এইবার নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না। সে সেই লোকটির কাছে গিয়ে তার গাকে স্বজরে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দিল। তারপর চেঁচিয়ে বললো।
রুজদাঃ আমি এইখানে নিজে যোগ্যতায় চাকরি পেতে এসেছি বসকে খুশি করে নয়। আপনি ভাবলেনও কি করে যে আমি আপনার এইরকম প্রস্তাবে রাজি হবো?
নিজেকে কিভাবেন হ্যাঁ! একটা অফিসের মালিক হয়ে গেছেন বলে যা ইচ্ছা তা করবেন?
আপনার মেয়ে বয়সী আমি। নিজের বিবেকে কি একবারও বাধলো এইসব বলতে আমায়? ছিঃ
লোকটি এইসব শুনার পর রাগে ফুসতে থাকে।
~ “এত কিসের দেমাক তোর? আজ তোর এই দেমাক আমি ভাংবোই। আমাকে কথা শুনানো আমাকে! “
এই বলে সে রুজদার দিকে তেরে আসতেই রুজদা ল্যাং মেরে তাকে ফালিয়ে দেয় আর এক মিনিটও দেরি না করে নিজের ব্যাগ আর ফাইলটি নিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
সন্ধ্যা নেমে গিয়ে রাতের অধীর অন্ধকারে পা দিয়েছে। আকাশটাও আজ কেমন যেন মেঘলা। চারদিকেও এক থম থম পরিবেশ। কিন্তু এতে কোন ভাববন্তর নেই রুজদার। সে রাস্তার পাশ দিয়ে একমনেই হেটেই চলেছে। রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আলো এসে পড়ছে তার মুখে। সেই আলোয় তার মুখ বার বার চিক চিক করছে। করবেই বা ন সে যে কাদছে। চোখ দিয়ে পরছে অজস্র পানির ধারা। সে চেয়েও এই চোখের পানি থামাতে পারছে না। কিছুক্ষন আগের ঘটনাই তার চোখের সামনে বার বার ভাসছে। সে গিয়েছিল সেখানে একটা জবের ইন্টারভিউ দিতে কিন্তু তাকে যে এইসব এর সম্মুখীন হতে হবে কে জানতো।
রুজদা যতই নিজেকে শক্ত দেখাক না কেন ভিতরে তার বয়ে চলেছে এক অসীম ঝড়। আজকের ঘটনা সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। তখন যদি সে নিজেকে শক্ত না করতো তাহলে কি হতে পারতো তা ভেবেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে।
এমন সময় হুট করে তার ফোনের রিংটোন বেজে উঠে। সে কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে রিজা ফোন করেছে। রুজদা কোন মতে নিজের কান্না থামিয়ে গলাটা একটু ঝেড়ে নেয়। তারপর নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে ফোন তুলে। ফোন তুলার সাথে সাথে একটির মেয়ের কন্ঠ কানে ভেসে আসে।
রিজাঃ আপু তুমি কোথায়?
রুজদাঃ এইতো আসছি। কিছু কি লাগবে?
রিজাঃ হ্যাঁ। আম্মুর রাতের ঔষধ শেষ হয়ে গিয়েছে। সেটা আনতে হবে। আর হ্যাঁ ডাল আর লবণ শেষ হয়ে গিয়েছে। সেইগুলাও আনতে হবে।
রুজদাঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আমি নিয়ে আসবো নে। তুই চিন্তা করিস না।
রিজাঃ আপু তোমার গলা এমন লাগছে কেন? কিছু কি হয়েছে?
রিজার কথায় রুজদা কিছু হকচকিয়ে যায়। নিজেকে কিছুটা সংযুক্ত রেখে মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে বলে।
রুজদাঃ আরেহ ধুর কিছু হয়নি। সিজন চেঞ্জ হচ্ছে তহ তাই গলাটা একটু বসে গেছে। আদা চা খেলে ঠিক হয়ে যাবে। তুই যা মার কাছে গিয়ে বস আমি আসছি।
এই বলে রুজদা তারাতারি ফোনটা রেখে দেয়। তা না হলে তার বোন যে তার বুক ফাটা আর্তনাদ শুনে নিবে। রুজদা রাস্তার পাশে একটু বসে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। কিছুক্ষন পর নিজেকে কিছুটা শান্ত করে ব্যাগ থেকে এক বোতল পানি বের করে। নিজের চোখে মুখে পানি দিয়ে যে বাকি অবশিষ্ট পানি রয়ে যায় তা সে খেয়ে নেয়।
ব্যাগ হাতরে টাকা খুঁজতে থাকে। সে দেখে তার কাছে ৩০০ টাকা আছে। মার ঔষধ হয়তো ১৫০ টাকা নিবে। বাকি টাকা দিয়ে সে আধা কেজি ডাল আর আধা কেজি লবণ নিয়ে নিবে নে।
রুজদা আবার হাটা শুরু করলো। কিছু দূর যেতেই দেখে কিছু বখাটে ছেলে রাস্তার এক কোনে আড্ডা দিচ্ছে। রাস্তাটা বেশ নিরবই। সন্ধ্যার পর এই রাস্তায় তেমন লোক দেখা যায় না।
তাই রুজদা সেই দিকে এত খেয়াল না করে দ্রুত পা চালিয়ে যেতে নেয়। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পায় সেই ছেলেগুলো তাকে নিয়েই কিছু বাজে মন্তব্য করছে। কিন্তু রুজদা তা কানে না নিয়ে দ্রুত পা চালাতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
হঠাৎ রুজদা খেয়াল করে যে সেই বখাটে ছেলে গুলিও তার পিছু নিয়েছে। রুজদা এইবার ভয় পেতে শুরু করে। সে আরও দ্রুত পা চালিয়ে যেতে শুরু করে। সে যত দ্রুত সম্ভব পা চালানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তার মনে হচ্ছে পা গুলো যেন চলছেই না। সে দ্রুত পা চালাচ্ছে আর মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়েই চলেছে।
এইদিকে ছেলেগুলোও তাদের পা দ্রুত চালাতে শুরু করেছে। রুজদা খেয়াল করলো সে বাজারের রাস্তায় এসে পরেছে৷ আর ১০ হাত দূরেই বাজার। তাই এবার রুজদা এক দৌড় দেয়। ছেলে গুলো কিছু বুঝার আগেই রুজদা বাজারে ঢুকে যায়। বাজারের বেশখানিকটা ভিতরে গিয়ে থেমে যায়। তারপর পিছে ঘুরে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করে ছেলে গুলো কই। রুজদা দেখে ছেলেগুলো ফিরত যাচ্ছে। রুজদা এইবার বুকে হাত দিয়ে জোরে এক শ্বাস নেয়। মনে মনে আল্লাহকে লাখ শুকরিয়া প্রদান করে।
রুজদা বাজারের ভিতরের একটা ফার্মেসি থেকে মায়ের ঔষধ কিনে নেয়। তারপর ডাল আর লবণও কিনে নেয়।
কিনা কাটা শেষে সে রওনা হয় বাসার উদ্দেশ্যে। বাসায় সামনে আসতেই রুজদার পা থমকে যায়। মনের মধ্যে এক অজানা ভয় কাজ করা শুরু করে দেয়। কেন না তার সামনে
পর্ব ২
রুজদা বাজারের ভিতরের একটা ফার্মেসি থেকে মায়ের ঔষধ কিনে নেয়। তারপর ডাল আর লবণও কিনে নেয়।
কিনা কাটা শেষে সে রওনা হয় বাসার উদ্দেশ্যে। বাসায় সামনে আসতেই রুজদার পা থমকে যায়। বুকটা তার ধুক করে উঠে। এক অজানা কষ্ট ওকে ঘিরে ধরে। তার সামনে দাড়িয়ে আছে আজওয়ান।
আজওয়ানের এইখানের আসার একটাই কারণ আর তা হলো রুজদা। আজওয়ান হচ্ছে রুজদার প্রাক্তন। প্রায় ৬ মাস আগেই রুজদার তাদের রিলেশনটি ভেংগে ফেলে। কেন! তা না হয় পরেই জানাবো।
কিন্তু আজওয়ান রুজদারকে ছাড়তে নারাজ। সে প্রতিদিন এইভাবেই রুজদার বাসার সামনে এসে দাড়িয়ে থাকে। আর রুজদারকে মানোর চেষ্টা করে। কিন্তু রুজদার তহ মানতে নারাজ।
রুজদা আজওয়ানকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সংযত রেখে ওর পাশ কাটিয়ে যেতে নেয়। পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় আজওয়ান ওর সামনে এসে দাড়ায়।
আজওয়ানঃ কোথায় গিয়েছিলে? এত রাত হলো যে!
রুজদাঃ তা আপনার যেনে কাজ নেই। বলেই পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে আজওয়ান আবার ওর সামনে এসে দাড়ায়।
আজওয়ানঃ তেড়া কথা আমি একদম পছন্দ করি না তা তুমি জানো। কোথায় গিয়েছিলে সোজা সোজি বলো!
রুজদাঃ বববাজারে।
আজওয়ানঃ তা বাজার করেছ?
রুজদা কিছু না বলে মাথা হেলায়। যার অর্থ “হ্যাঁ “। আজওয়ান আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুজদা পাশ কাটিয়ে বাসার ভিতরে চলে যায়। আজওয়ানের একটু রাগ হলেও রুজদার ভিতু চেহারার কথা মনে করতেই ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি ফুটে উঠে। সে তহ জানে রুজদার ওর সামনে ঠিক কতটা ভীতু। সেই শুরু থেকে রুজদার আজওয়ানকে ভয় পায়। কিন্তু কে জানে ৬ মাস আগে তার মধ্যে এত সাহস কিভাবে আসে যে ও একবারে ব্রেকাপে চলে যায়। সেইদিন চেয়েও আজওয়ান রুজদারকে থামাতে পারি নি কিন্তু সে কখনোই তাকে দূরে যেতে দেয় নি।
এইসব ভেবেই আজওয়ান দীর্ঘ এক শ্বাস নেয়।
বাসায় এসে জিনিসপত্র গুলো রেখে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায় সে। ঝরনার পানি ছেড়ে দিয়ে তার নিচে বসে পড়ে সে। নিজের পরনের হিজাব টেনে খুলে ফেলে৷ আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করে। তার ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কানতে কিন্তু সে পারছে না। কেন না তার বোন শুনলে সমস্যা।
রুজদার নিজের মুখ চেপে ধরে কেঁদেই চলেছে। তার কান্নার যেন শেষ নেই। হঠাৎ পা টা জ্বালা করে উঠে। রুজদার সেইদিকে তাকিয়ে দেখে পায়ের একটি নখ কিছুটা উবড়ে গেছে। সেখানে অনেকখানি রক্তও লেগে আছে। রুজদার বুঝতে দেরি নেই যে তখন দৌড়ানোর সময় সে এই আঘাতটি পায়। আবার ঘাড়েও হাল্কা জ্বালা করছে। । হিজাব টেনে খুলার সময় হয়তো পিনের আঁচড় লেগেছে।
~ “কেন আমার সাথেই এমন হয় আল্লাহ! কেন! কি দোষ করেছিলাম আমি বলো। আমার ভাগ্যে এত কষ্ট কেন লিখেছো তুমি। আর কত সহ্য করতে হবে আমায়! আমি যে পারছি না। প্রতিদিন এইসব নরপশুদের সাথে লড়তে লড়তে আমি হয়রান। আমি যে আর পারছি না। । “
বলে আমার অজোরে কাদতে থাকে।
প্রায় ৩০ মিনিট পর রুজদার বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে এসে মার রুমে যায় একবার মাকে দেখতে। নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে খাটে। রুজদা তার মায়ের পাশে বসে কিছুক্ষণ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর চলে যায় রিজার রুমে। রিজা মন লাগিয়ে পড়ছে। রুজদার স্মিত হেসে চলে যায় রান্না করতে।
এইবার আসি পরিচয়ে। রুজদা নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবা,মা আর দুই বোন এই নিয়েই ছিল তাদের পরিবার। তেমন অভাব বন্টন ছিল না তাদের। বেশ ভালোই ছিল তারা। বাবার বেশ আদরের মেয়ে ছিল রুজদার। কিন্তু সব যেন উলোট পালোট হয়ে যায় সেই একবছর আগেই। হুট করে রুজদার বাবা স্টোক করে বসেন আর পারি জমান অন্য এক দেশে। রুজদার মা এই শোক মেনে নিতে পারে নি। সেও প্রায় তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর ঠিক হলেও একদম চুপ হয়ে যায়। কথা বলা ছেড়ে দেন।
রুজদার বাবা যাওয়ার পর পরিবারের সকল দায় ভার এসে পড়ে রুজদার উপর। রুজদার তখন অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তখন ২-৩ টা টিউশনিও করতো সে। সেই টাকা দিয়েই সে তার পড়ারখরচ চালাতো। কিন্তু তা পরবর্তীতে নিজের পরিবারের জন্য ব্যয় করা শুরু করে। ইতি টানে নিজের পড়ালেখার।
আজওয়ানের সাথে তার পরিচয় ভারসিটি লাইফেই। তাদের রিলেশন ছিল ২ বছরের। দুইজনের মধ্যে ভালবাসা ছিল অফুরন্ত। রুজদার যখন অনার্সের তৃতীয় বর্ষের তখন আজওয়ানের পড়ালেখা প্রায় শেষ। জবের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছিল। জব হলেই সেই রুজদার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতো। সেই আজওয়ান জব পেয়ে যায় আর এই খুশির খবর জানাতেই রুজদারকে ডাকা। কিন্তু কিছু বার আগেই রুজদার তার সাথে সম্পর্ক শেষ করে যায়। রুজদার সেইদিন তাদের মাঝে সব শেষ করে চলে আসে।
রুজদার তাদের সম্পর্ক ভাঙ্গার একটাই কারন আর তা হলো তার পরিবার। রুজদা ভালো করেই জানে সে বাদে তার মা আর তার বোনকে দেখার কেউ নেই। তাদের দায়ভার এখন তার উপর। তাই রুজদার নিজের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে বেছে নেয় নিজের পরিবারের সুখ। আজওয়ানকে সে এই সম্পর্কে কিছুই জানাই নেই। তা না হলে আজওয়ান তার পরিবারের ভার নিজের কাধে নিয়ে নিবে যা রুজদার চায় না।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে রুজদা শুয়ে আছে। ঘুম নেই তার চোখে। চোখ বন্ধ করতেই তার চোখের সামনে আজওয়ানের করুন চেহারাটি ভেসে উঠছে। না চাইতেও বার বার মন তার কাছে ছুটে যাওয়ার জন্য বেকুল হয়ে আছে। কিন্তু সে যে পরিবার নামক শিকলে বেঁধে আছে। যা সে চাইলেও ছুঁড়াতে পারবে না। রুজদার বুক কষ্টে ফেটে যাচ্ছে কিন্তু সে তা কাউকে উপলব্ধি করতে দিচ্ছে না। সে ভাবছে আদো কি এই কষ্টের শেষ আছে নাকি নেই। দেখতে দেখতে কেটে গেল আরও একটি রাত নির্ঘুমে।
সেইদিন,
রুজদার টিউশনির পর বাসায় ফিরছিল। সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে। চারদিকেও জনগনের আনাগোনা কমে আসছে। রুজদা ধীর পায়ে এগিয়ে চলেছে। বেশ কিছু দূর যেতেই হঠাৎ হাতে টান অনুভব করে। । কিছু বুঝার আগেই কেউ তার মুখ চেপে ধরে আর
অন্তিম পর্ব
সেইদিন,
রুজদার টিউশনির পর বাসায় ফিরছিল। সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে। চারদিকেও জনগনের আনাগোনা কমে আসছে। রুজদা ধীর পায়ে এগিয়ে চলেছে। বেশ কিছু দূর যেতেই হঠাৎ হাতে টান অনুভব করে। । কিছু বুঝার আগেই কেউ তার মুখ চেপে ধরে আর পিছের গলিতে নিয়ে যায়। গলিটা বেশ নিরব। গলির ভিতরে গিয়ে রুজদারকে ছেড়ে দেয়। রুজদার ছাড়া পেয়ে পিছে ঘুরতেই আজওয়ানকে দেখতে পায়। আজওয়ানকে দেখে সে খানিকটা স্বস্তি পেলেও পরক্ষনে ওর করা কাজের কথা মাথায় আসতেই মাথায় আগুন ধরে যায় রুজদার। সে তেড়ে এসে বলে।
রুজদাঃ এইসব কোন ধরনের অসভ্যতা! আমাকে এইখানে কেন এনেছ?
আজওয়ানঃ বিয়ে করতে। শান্ত দৃষ্টিতে।
রুজদাঃ মানে! কি বলছো এইসব!
আজওয়ানঃ যা বলছি তা একদম ঠিক। আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না রুজ। অনেক চেষ্টা করেছি তোমার থেকে দূরে থাকার কিন্তু পারি নি আর না পারবো। তাই আমি এখন ডিসিশন নিয়েছি যে তোমায় একবারের জন্য নিজের করে নিব ব্যাস!
রুজদারঃ পাগলের মত কথা বল না। আমি তোমায় বিয়ে করতে পারবো না।
আজওয়ানঃ কারন?
রুজদারঃ তা আমি তোমায় বলতে বাধ্য নই। এই বলে হাটা ধরলে আজওয়ান বলে উঠে।
আজওয়ানঃ কারণটা হচ্ছে তোমার পরিবার। নিজের পরিবারের দায়ভার নিতে তুমি আমায় বার বার ফিরিয়ে দিচ্ছো তাই তহ।
রুজদার পিছে ঘুরে এক স্মিত হাসি দিয়ে বলে।
রুজদারঃ হ্যাঁ ঠিক তাই। আর কারণ যেহেতু জেনেই গিয়েছ তাহলে আর লুকিয়ে লাভ নেই। আমার পরিবারকে আমারই দেখতে হবে। তাদের আমি বাদে কেউ নেই। আর আমি তার বোঝা অন্যের কাধে দিতে চাই না।
আজওয়ানঃ তারা মোটেও বোঝা নয়। তারা তোমার দ্বায়িত্ব আর আমি সেইটারই ভাগ নিতে চাই। তুমি ভালো করেই জানো আমি অনাথ। বাবা মার কাউরো ভালবাসা পায়নি আমি। পরিবার কি তা বুঝি না। সেখানে যদি আমি তোমার দ্বারা একটা পরিবার পাই তাহলে খারাপ কোথায়/? আমি যে তোমার পরিবারকে আমার আপন করতে চাই। নিজের পরিবার করতে চাই তাদের। দেখ আমার জবও হয়ে গেছে। আমরা মিলে ঠিক ভালো মতই থাকতে পারবো। কোন প্রবলেম হবে না রুজ।
রুজদারঃ এইগুলা কথার কথা আজওয়ান। সময়ের সাথে তখন তোমার কাছে তারা বোঝাই হয়ে দাড়াবে। তার উপর এই সমাজ এইটা কখনো ভালো চোখে দেখে না যে স্বামীর ঘরে তার বউয়ের পরিবার থাকে।
আজওয়ানঃ এই চিনলে আমাকে! যেখানে আমি আজ পর্যন্ত সমাজের কথা কখনো ভাবি এই নি সেখানে তুমি আমায় বলছো এই কথা। তুমি ভালো করেই জানো এই সমাজে কে কি বললো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। Then Why! আর রইলো বোঝা। পরিবার কখনো বোঝা হয় না। আর যে পরিবারের মর্ম বুঝে তার জন্য তহ নাই এই।
রুজদারঃ তুমি যত যাই বল আমার পক্ষে বিয়ে করা পসিবেল না।
আজওয়ানঃ ভেবে বলছো তহ।
রুজদারঃ হ্যাঁ।
আজওয়ানঃ তাহলে তাই হোক। যখন তুমি আমায় আপনই মানবে না তখন এই জীবন রেখে কি লাভ?
এই বলে পোকেট থেকে একটা ব্লেড বের করলো। রুজদা তা দেখে ভয় পেয়ে যায়। রুজদার ভালো করেই জানে আজওয়ান ওর জন্য ঠিক কতটা পাগল। তাকে না পেলে যে সে নিজেকে শেষ করতে দ্বিমত প্রকাশ করবে না।
রুজদারঃ আজওয়ান কি করছো এইসব। দেখ ভালো হচ্ছে না বলছি।
আজওয়ানঃ তুমি আমায় আজই বিয়ে করবে কিনা বল?
রুজদারঃ দেখ আগে বারতে নিলে
আজওয়ানঃ আগে এগুবে না তা না নিজেকে শেষ করে দিব। হ্যাঁ কি না বল!
রুজদারঃ দেখ
আজওয়ানঃ হ্যাঁ কি না! ব্লেডটা একদম হাতের কাছে নিয়ে।
রুজদাঃ হ্যাঁ।
রুজদার মুখের “হ্যাঁ”শুনার সাথে সাথেই মুখে হাসি ফুটে উঠে।
আজওয়ানঃ রুজ রুজ
রুজদা রান্নাঘর থেকে হাত মুচতে মুচতে এসে বলে।
রুজদাঃ কি হয়েছে এমন চেচাচ্ছো কেন?
আজওয়ানঃ মার ঔষধ শেষ তুমি আমায় আগে বলো নি কেন? আমি এখন না দেখলেই জানতামই না।
রুজদাঃ আরেহ বাবা! আগে আমার কথা তহ শুনো। এই ঔষধ এর আরও একটা প্যাকেট আছে। ভেবেছিলাম শেষ হলে নামাবো।
আজওয়ানঃ অহহ আচ্ছা। আব রিজার কলেজ ফি দেওয়া হয়েছিল তহ। সব কিছু চেক করেছিলে?
রুজদাঃ আরেহ বাবা হ্যাঁ।
আজওয়ানঃ আব
রুজদাঃ মার প্রেশার আর ডাইবিটিস মেপেছি সব ঠিক আছে, বাজার কালকেই করা হয়েছে, রিজির বইও কিনা হয়ে গেছে, আমিও নিজের মেডেসিন নিয়ে নিয়েছি৷ আর কিছু!
আজওয়ানঃ না।
রুজদাঃ আমার না অনেক সময় সন্দেহ হয়। এরা কি আমার মা আর বোন নাকি তোমার! আমার চেয়ে তুমিই এদের চিন্তা বেশি করো।
আজওয়ানঃ হুহ!
রুজদাঃ আহা আমার জামাই বুঝি রাগ করেছে।
আজওয়ানঃ তোমার জামাই কে আমি চিনি না। মুখ ফুলিয়ে।
রুজদা সামনে এসে আজওয়ানের গাল দুটো টেনে বলে।
রুজদাঃ রাগ করলে তুমি বান্দর লাগে।
আজওয়ান রুজদার কোমর জরিয়ে ধরে ওকে কাছে টেনে নেয়। তারপর বলে,
আজওয়ানঃ আমি বান্দর তাই না!
রুজদাঃ এই কি করছো ছাড়!
আজওয়ানঃ ছাড়বো না। বান্দর যখন বলেছ তখন বান্দর গিরি না দেখে আর যেতে দিচ্ছি না।
এই বলে রুজদার গালে টুপ করে চুমু দিয়ে বসে। রুজদা লজ্জায় আজওয়ানের বুকে মুখ লুকায়। আজওয়ান ওকে জরিয়ে ধরে থাকে।
আজওয়ানঃ রুজ একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
রুজদাঃ করো!
আজওয়ানঃ তুমি কি সেইদিনের জন্য আমার উপর এখনো রেগে আছো! দেখ আমি যা করেছিলাম শুধু তোমায় পেতে।
রুজদাঃ আমি জানি তুমি তা কেন করেছ। আর সত্যি বলতে কি আমি একদম রেগে নেই। যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে। তুমি যদি সেইদিন আমায় তোমাকে বিয়ে করতে বাধ্য না করতে তাহলে হয়তো এত সুন্দর সংসার পেতাম না। আর না পেতাম তোমাকে। আমি ভাবতেও পারি নি তুমি আমার পরিবারকে একদম নিজের পরিবার বানিয়ে ফেলবে। তাদের এত সম্মান দিবে আর তাদের নিজের থেকেও বেশি ভালবাসবে। আমি অনেক বেশি খুশি তোমায় নিজের জীবনে পেয়ে।
আজওয়ানঃ উহুম। আমি খুশি তোমায় পেয়ে। তুমি আমার জীবন পুরিপূর্ন করেছ। আমাকে এক পরিবার দিয়েছ। যা এখন আমার নিজের। আর তুমি! #এইজীবনেতুমি_আমার আর আমারই থাকবে। বুঝলে।
রুজদাঃ হুম। আই লাভ ইউ
আজওয়ানঃ আই লাভ ইউ টু রুজ
বলে আরও শক্ত করে নিজের বাহুদরে রুজদারকে আগলে নেয়।
লেখা – আছফিয়া ইসলাম জান্নাত
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “এই জীবনে তুমি আমার – valobasar golpo 2018” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ। )
আরো পড়ূন – উনি তো আমারই – valobasar golpo 2020