অদ্ভুত প্রেমানুভূতি – দুই প্রেমিকের এক নাইকা: আরুশি বুঝতে পারল ভুলটা ওরই। এভাবে দুটি পুরুষের জীবনে একটি নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এটা ওর অন্যায়। তবে ও কখনো এমনটা চাইনি ৷ ভালোবাসা গুলো বুঝি এমনই হয়! এমন বেদনাময়।
পর্ব ১
আজ আমার বিয়ে হল আর এখন বাসর ঘরে বসে আছি, তবে যার সঙ্গে বিয়েটা হচ্ছে সে আমার শত্রু পক্ষ ৷ শত্রু পক্ষের সঙ্গে কিভাবে জমিয়ে বাসরটা সারা যায় সেই কথাই ভাবছি এতক্ষণ ধরে ৷ মনে মনে হাজারো ফন্দি এঁটেছি যে তাকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায়।
সবাই বলে বাসররাতে নাকি মেয়েরা একহাত ঘোমটা টেনে লজ্জা নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে তাই আমাকেও সবাই তেমনি ভাবে বসিয়ে রেখে গেছে আর আমিও চুপচাপ তেমনটা ভাবেই বসে রয়েছি, খুবই ভদ্র ভাবে, দেখে কেউ কখনো বলবেনা যে কি করে মানুষটাকে শায়েস্তা করা যায় এতক্ষণ ধরে সেই শয়তানি বুদ্ধি গুলো মনে মনে আটছি।
যার সঙ্গে আমার বিয়ে হল তার নাম হলো আসাদ সাঈদ ৷ ঢাকার টপ বিজনেসম্যান আর তার সঙ্গে নানান মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সঙ্গে তিনি যুক্ত, আর আমাকেই বা কম ভাবছেন কেন? আমি হলাম আরুশি রহমান ওনার কম্পিটিটর বিজনেস এ।
তবে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে কেন বিয়ে করেছি সেই কাহিনী টা পরে বোলবো ৷ এখন আসি বাসর রাতে।
সকলের মতো আমিও একহাত ঘোমটা টেনে বসে আছি আর তখনই ঘরে প্রবেশ করলেন আমার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বামী ৷
অন্যান্য মেয়ে হলে তাদের মনে হয়তো এতক্ষণে একরাশ ভয় তৈরি হতো যে এরপর কিভাবে কি কিন্তু আমার মনে এখন লাড্ডু ফুটছে তার কারণ উনার লাইফটা যদি আমি তেজপাতা না করে দিয়েছি তো আমার নাম ও আরুশি নয়।
আরূশিকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে আসাদ একটা শয়তানি হাসি দিল যার অর্থ হলো ওর হাত থেকে আজকে আরুশিকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা।
আসাদ ধীরে ধীরে আরূশির কাছে গেল, আরুশির কাছে যেতেই আরুশী বিছানা থেকে নেমে আসাদের পায়ে সালাম করল।
আসাদ আরুশিকে ধরে তুলল, তুলে আরুশির কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।
আসাদঃ আজ তুমি শেষ আরুশি রহমান৷ আসাদ সাঈদের বউ হয়ে কেমন লাগছে এখন? ওয়েলকাম টু দা ডেভিল কিংডম ৷
আসাদ ভেবেছিল আরুশি হয়তো তেজ দেখিয়ে এক্ষুনি ওকে ধাক্কা মারবে, কিন্তু আসাদকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে আরুশি আসাদের বুকে মাথা রাখল রেখে দাঁত বের করে হাসছে আরুশি ৷
আরূশির কাজকর্মে আসাদ তো অবাক এর চূড়ান্ত পর্যায়ে, তার কারণ এতদিন ধরে আরুশির সাথে ওর যতবার ঝামেলা হয়েছে ততবার দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়েছে আর সেখানে নিজের শত্রুকে বিয়ে করে বাসর রাতে এভাবে জড়িয়ে ধরবে আসাদ সেটা ভাবেনি।
আসাদ এসমস্ত ভাবছে হঠাৎই ওর মনে হলো ওর দমটা যেন আটকে আসছে তার কারণ আরুশি শক্ত করে আসাদকে জড়িয়ে ধরেছে, আর এতটাই জোরে যে আসাদের দমবন্ধ হয়ে আসছে আর আসাটাই স্বাভাবিক।
আসাদ আরুশিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
আসাদঃ এই মেয়ে ছাড়ো, কি করছো কি?
আরুশি আসাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বলল: এরকম বলবেন না স্বামী আমার লজ্জা লাগে, আর আপনিও যখন আমাকে জড়িয়ে ধরলেন তার বেলা!
আসাদ যেন এবার আকাশ থেকে পড়ল কারণ ও যে আরুশিকে চেনে সেই আরুশির থেকেই এই আরুশি স সম্পূর্ণ আলাদা, যার মধ্যে নেই কোনো তেজ নেই, নেই কোন জেদ, কেমন একটা বাচ্চা মনোভাব রয়েছে ওর মধ্যে ৷ কিন্তু আরূশির এই রূপটা আসাদ দেখতে চায় না ৷ তাই আরুশিকে আসাদ ধাক্কা মারলো।
আসাদঃ বের হয়ে যাও আমার রুম থেকে৷
আরুশিঃ এই কে থাকতে চাই আপনার সাথে? আমি আমি কেন আমার আত্তাও থাকবেনা আপনার সাথে।
আসাদ এবার শয়তানি হাসি দিয়ে বলল : এইতো চলে এলে নিজের আসল রূপে ৷ আসলে কি বলতো সমান সমান না হলে ঠিক যুদ্ধ টা জমে না।
আরুশি সঙ্গে সঙ্গে আসাদ এর কাছে গিয়ে আসাদের ঠোটে ঠোট বসিয়ে দিল।
আসাদের চোখগুলো যেন বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা কারণ আরুশির হঠাৎ করে আবার নিজের ক্যারেক্টার চেঞ্জ করে নেবে সেটা আসাদ ভাবেনি।
আসাদ যেন অন্যরকম একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে যেখান থেকে ওকে বার করে আনাটা খুবই কঠিন।
আসাদ সবকিছু ভুলে গিয়ে আরুশিকে কোলে তুলে নিল, নিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল।
আরুশির এবার জান যায় যায় অবস্থা কারণ ও ঠিক করেছিল আসাদকে জালিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাবে কিন্তু এখন যে আসাদ সত্যি সত্যিই বাসর করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে
আরুশি ভাবছে এটা কি আসাদের নতুন কোন চাল নাকি অন্যকিছু কিছুই বুঝতে পারছে না তবে যতক্ষণ কিছু বুঝে উঠল ততক্ষণে আসাদ ওকে নিয়ে ডুবে গেছে ভালোবাসার সাগরে।
সকালবেলা আরূশির ঘুম ভাঙতেই ও নিজেকে আসাদের রুমে আবিষ্কার করল, তার পর মনে পড়ল যে কালকে কি কি হয়েছে।
এই মুহূর্তে আসাদকে সামনে পেলে হয়ত আরূশী ওকে খুন করে দিত এই রকম অবস্থা।
পরমুহূর্তে আরুশি শুনতে পেল বাথরুম থেকে গুনগুন করে গানের আওয়াজ ভেসে আসছে ৷ ওর আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আসাদ শাওয়ার নিচ্ছে৷
আরুশি যেই আসাদকে গণধোলাই দেওয়ার জন্য বিছানা থেকে নামতে যাবে তখন নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল তার কারণ গায়ে কোনো পোশাক নেই কেবলমাত্র ব্ল্যাঙ্কেট টা কোন রকম ভাবে জড়ানো।
আরুশি সেখান থেকে না পারছে উঠতে আয না পারছে কিছু করতে ৷ তারপরে অনেকটা সাহস নিয়ে যেই লাগেজের দিকে এগোতে লাগলো জামা কাপড় নেওয়ার জন্য তখনই আসাদ বেরিয়ে আসল শাওয়ার নিয়ে।
আসাদ বেরিয়ে এসে এমন একটা ভাব করলো যেন ও কিছুই জানে না আর কিছুই হয়নি।
আরুশি ভেবেই নিয়েছে আসাদকে শায়েস্তা করতে হলে একমাত্র বাড়িতেই ওর সুযোগ তাছাড়া ওর নিজের রূপটাও তো তার আসাদকে দেখাতে হবে যে আরুশি কোনো রকম কোনো চেঞ্জ হয়নি ৷ না হলে আরুশিকে আসাদকে দুর্বল ভেবে ওকে সহজে হারানোর চেষ্টা করবে আর সেটা আরূশি কখনোই হতে দেবে না।
আরূশি এবার সুরেলা কন্ঠে বলে উঠল: স্বামীর আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন?
আরুশির এরকম সুরেলা কন্ঠে শুনে আসাদ আরুশির দিকে আড়চোখে দেখে বলল :আমাকে কিছু বললেন মিস আরুশি রহমান ৷
আরুশিঃ আপনি ছাড়া কি এখানে আর কে আছে স্বামী?
বারবার আরুশির বলার স্বামী স্বামী ওয়ার্ডটা আসাদকে যেন কাঁটার মতো বিঁধছে তাই রেগে গিয়ে আরূশির কাছে গেল গিয়ে বলল :কি বারবার স্বামী স্বামী বলছ? আর আমি তোমার স্বামী না ওকে ৷আমি তোমার শত্রু আর কিছুই না।
আরুশিঃ তাহলে কালকে রাত্রে আপনি ওই কাজ গুলো করলেন কোন অধিকারে?
আরুশির কথায় আসাদ ভরকে গেল।
আরুশিঃ তাহলে আপনি বলতে চাইছেন যে আপনি আমার স্বামীর না তাইতো?
আসাদঃ না আমি তোমার স্বামী না ৷
আরূশিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আমি নিচে গিয়ে সবাইকে বলে দেব।
আসাদ চোখ বাঁকা করে আরুশিকে বলল: কি বলবে?
আরশিঃ এটাই বলব যে আপনি আমার স্বামী না হওয়ার শর্ত আপনি আমার সাথে খারাপ কাজ করেছেন ৷ বলে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরূমে চলে গেল ৷
আসাদ জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো : এই মেয়ে তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি যে তুমি সবাইকে এরকম বলবে।
আরূশিঃ আপনার কিছু করার সময় মনে ছিল না! বলে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিল।
আরুশি শাড়ি পড়ে বেরিয়ে এলো আর আসাদ তখন সবে পারফিউমটা দিচ্ছিল।
হঠাৎ ওর চোখ পরল আরূশির দিকে, দেখেই চমকে উঠল তার কারণ এতদিনে ও আরুশিকে কেবল শার্টে, জিন্সে, স্কার্ট এসব পরতে দেখেছে ৷ আরুশিকে শাড়ি পরা অবস্থায় কোনদিন ও দেখেনি তাই আরূশিকে দেখে যেন আসাদ চোখ ফেরাতে পারছেনা ৷ আরুশি নিত্যান্তই সুন্দরী তবে শাড়িতে আরো বেশী রূপের প্রকাশ পেয়েছে।
আরুশী এবার গলা খাঁকরে বলতে লাগলো :কি চোখ ফেরাতে পারছেন না বুঝী স্বামী? আমাকে কি খুব সুন্দর লাগছে।
আসাদ এ বার আরুশির থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল ৷
আসাদঃ স্টুপিড কোথাকার, বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আরূশিতো হেসে হেসে শেষ কারণ আসাদের রাগি ফেসটা ওকে দারুণভাবে সুট করে।
আরুশী ঘরের মধ্যে বসে আছে কারণ যতক্ষণ না ওকে কেউ ডাকছে ততক্ষণ ও নিচে নামতে পারছে না৷ নতুন বউ বলে কথা, তবে ওর অপেক্ষা ভাঙিয়ে একটা মেয়ে এলো ঘরের মধ্যে।
তোহাঃ ভাবি চলো সবাই তোমাকে ডাকছে নিচে খেতে ৷ আর আমার আহাম্মক ভাইটাকে দেখেছ তো কেমন, তোমাকে না নিয়ে চলে গেল।
তোহার কথা শুনে আরুশি বেশ ভালই বুঝতে পারল যে ওটা হল আসাদের বোন।
আরূশী মুচকি হেসে তোহাকে বললো : তাহলে তুমিই কি আমার সেই ননদিনী?
তোহাঃ হ্যাঁ (হেসে)৷
আরুশিঃ আচ্ছা চলো তারপরে দুজনে জমিয়ে গল্প করবো ওকে।
তোহা আরুশিকে জড়িয়ে ধরে : ওকে ভাবি ৷
এরপর ওরা চলে গেল ব্রেকফাস্ট করতে।
পর্ব ২
সবাই নিচে ব্রেকফাস্ট এর জন্য বসে আছে ৷ তখন তোহা আরূশিকে নিয়ে গেল সকলের সামনে ৷ আরুশি নিয়ে আসাদের পাশের চেয়ারে বসাল তোহা ৷
আরুশি এমন একটা হাবভাব করছে যেন ও খুবই লজ্জা পাচ্ছে, কিন্তু আসলে তেমনটা নয় ৷ ওর মন এখন একটাই বুদ্ধি আটছে যে কিভাবে আসাদকে সকলের সামনে বিরক্ত করা যায়, ওকে বকা খাওয়ানো যায়।
আসাদ মনে মনে ভাবছে: কি দরকার ছিল এই মেয়েকে বিয়ে করার ৷ মেয়েটা আমাকে কিস করল ভাবা যায়! অফিসে যেমন দেখায় এখানে একেবারে অন্য রকম দেখাচ্ছে৷দুটো কোম্পানি পার্টনারশিপ যদি না একসাথে হতো তাহলে এই মেয়ে কখনোই বিয়ে করতাম না আমি ৷ বিয়ে তো করেছি মেয়েটা কে শায়েস্তা করার জন্য, সকলের সামনে আমাকে অপমান করা না! এবার আমি যা করব টের পাবে ৷
সকলে খাচ্ছে আর এটা ওটা গল্প করছে তার মধ্যে আরুশি চুপচাপ হয়ে রয়েছে কোন কথাই বলছেন না৷ ওকে দেখে কেউ বলবেই না যে এই মেয়েটা আসাদকে কালকে রাত্রে এমন নাকানি চোবানি খাওয়ালো।
আসাদ মনে মনে : কেন যে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এই মেয়েটাকে বিয়ে করলাম আল্লাই জানে!
আরুশি মনে মনে : আপনার জীবন যদি তেনাতেনা না করে দিয়েছি তো আমার নাম ও আরুশি নয়।
সকলে খাচ্ছে হঠাৎ আরোশী ওর পায়ের নখ দিয়ে আসাদের পায়ে একটা জোরে আচর দিল।
আসাদঃ আহহ!
আসাদের মা: কিরে বাবা কি হলো?
আসাদ তখন পাশ ফিরে দেখল যে আরোশী মুখ টিপে হাসছে, তখন ওর আর বুঝতে বাকি রইলো না যে কাজটা কে করেছে ৷
আসাদঃ কিছুনা মা, আমার পায়ে কিছু একটা বাধল বলে মনে হল।
আসাদের মাঃওহ!
আসাদ মনে মনে ভাবছে: একবার রুমে চলো, তোমাকে একবার পাই তারপর দেখাচ্ছি মজা।
এখন কেমন লাগছে মিষ্টার আসাদ সাঈদ? (আরশি মনে মনে)
আসাদ খেয়ে ঘরে চলে গেল।
আসাদ আগে আগেই গেছে কারণ ওর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আরুশির উপরে।
আরুশি বুঝতে পারল যে আসাদ কিছু একটা করতে চলেছে সেই জন্যে আগে আগে ঘরে চলে গেছে কিন্তু ও আসাদকে ভয় পায় না ৷
আরুশির খাওয়া শেষ হলে আসাদের মা আরুশিকে নিজের ঘরে ডাকলেন।
আসাদের মাঃ বস মা।
মুখে এক ঝলক হাসি নিয়ে আরুশি আসাদের মায়ের পাশে বসলো।
আসাদেরর মা : আমার তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে৷ আসাদের জন্য আমি ঠিক যেমন মেয়েটা চেয়েছিলাম তেমনিই ৷
আরোশী লজ্জায় মাথা নীচু করলো।
আসাদের মা আর পাশে থাকা ডায়মন্ড এর নেকলেসটা আরুশির হাতে তুলে দিলেন আর তার সঙ্গে দিলেন ওর বিয়ের সমস্ত জিনিস যেগুলো আজকে বৌভাত এর জন্য ওকে পড়তে হবে।
আরশি সেগুলো নিল।
আসাদের মা কিছুটা কিন্তু কিন্তু করে আরুশিকে বললেন।
- তোমাকে আমি একটা কথা বলব মা?
- হে আন্টি অবশ্যই বলুন, আপনি তো আমার মায়ের মত ৷
আসাদেরর মা আরুশিকে বকা দিলো যেই আরুশি ওনাকে মামনি বলল তখন ৷ - আন্টি কিরে, আমাকে মামনি বল৷ তুইনা এক্ষুনি বললি আমাকে যে আমি তোর মায়ের মত ৷
- সারি মামনি আর ভুল হবেনা ৷
- আসলে আমি যে কথাটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা হলো,
আমি জানি যে আসাদ ভালোবেসে বা পছন্দ করে তোকে বিয়েটা করেনি।
কথাটা শুনে আরূশী না চমকালেও অনেকটা অবাক হল কারণ উনি যা বলছেন একদম সত্য কথা বলছেন সেটা আরোশী খুব ভাল করেই জানে, তবে উনি কি ভাবে কথাটা বললেন সেটা এখনো আরুশি বুঝতে পারছে না।
আরুশিঃ মানে আপনি এসব কি বলছেন মামনি আমি কিছুই বূঝতে পারছি না ৷
আসাদের মাঃআমি যা বলছি ঠিকই বলছি রে মা, কারণ আমার ছেলেটা তোকে ভালবাসে না সে যে অন্য একজনকে ভালবাসে।
আরুশি মনে মনে: উনি আর ভালবাসা দুটো বিপরীত শব্দ ৷ মানে ওনার মতো মানুষ ভালবাসতে জানে অবাক লাগলো শুনে।
আরুশি এবার কিছুটা একটা আদর্শ স্ত্রীর মতো অভিনয় শুরু করলো :কিন্তু মামনি মনি উনি যে আমাকে বিয়ে।
সব বলব মামনি তোকে।
আসাদের মা ধীরে ধীরে আরুশিকে সমস্ত টা বলে দিলেন।
আসাদের মাঃআমি জানি একমাত্র তুই পারবি আমার ছেলেটাকে আবার আগের মতো করে দিতে, একমাএ ভালোবাসার দ্বারায় একমাত্র সম্ভব। আর আমি তোর চোখে ওর জন্য সেই ভালোবাসা অনুভব করেছি, পারলে একমাত্র তুই পারবি।
আপনা আপনিই আরুশির হাত নিজের চোখে চলে গেল ৷ চোখটা একটু ডলা দিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগল :আমার চোখে ভালোবাসা তাও আবার উনার জন্য এটা কি করে সম্ভব! অবিশ্বাস্যকর ৷(মনে মনে)
আরুশির খুব হাসি পাচ্ছে আসাদের মায়ের কথাটা শুনে কিন্তু ওকে হাসলে চলবে না ৷ওকে এখন অভিনয় করতে হবে।
আরোশী : তা মামনি উনি এরকম কেন করেন।
সেই ঘটনার পর থেকে আমার ছেলেটা ঠিক সময় বাড়িতে ফেরে না, মাঝে মাঝে ড্রিংক করে বাড়ি ফেরে, অনেক সময় বাড়ি থেকে কোন অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়, অনেকবার বার এ চলে যায়, ওর বন্ধুরা বাড়িতে এসে দিয়ে যায় ৷ বাড়ির কারোর সাথে পরিবারের ঠিকঠাক কথা বলে না, কখনো কখনো বাড়িও আসেনা ৷ আগে তো তোহার জন্য অফিস শেষে চকলেট, আইসক্রিম আবার কখনো গিফটও নিয়ে আসত কিন্তু এখন তো তোহার সাথে ঠিক করে কথাও বলে না আমার ছেলেটা সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেছে। .
কিন্তু হঠাৎ যেদিন ও বলল যে ও তোকে বিয়ে করতে চাই আমি খুব অবাক হয়েছিলাম ওর কথা শুনে ৷ আমি ওর সাথে সম্মতি প্রকাশ করলাম তার কারণ ওর ফাঁকা জীবনটা পরিপূর্ণ করার জন্য কেউ একজন আসবে যে ওকে বুঝবে, ওকে ভালবাসবে, ওকে ভালো রাখবে ৷ তাই আমি আর কোনোরকম না করলাম না। না করলেও ও শুনত না। প্রচন্ড রকম জেদি ও ৷
আরোশী মাথা নিচু করে আছে এখন কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না ৷ ও ভেবেছিল অন্যরকম ভাবে সবকিছু সামলাবে কিন্তু এখন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে সব।
হঠাৎই আসাদের মা আরুশির হাতটা ধরে বলতে লাগলেন : তুই আমাকে কথা দে মা তুই আমার ছেলেটাকে পরিবর্তন করে দিবি, আবার আগের মতো করে পাল্টে দিবি, ৷ আমাকে কথা দে, আমি জানি তুই পারবি ৷
আরোশী এখন পড়েছে মহা বিপদে তার কারণ ও আসাদকে পছন্দই করে না, সেখানে কিভাবে আসাদের জীবনে থেকে আসাদ কে পরিবর্তন করবে ও?
আসাদের মায়ের অনেক জোরাজুরিতে আরুশির খুব মায়া হলো তাই ও আর না করতে পারল না ৷ ও ঠিক করল কঠিন নরম যা কিছু হওয়া প্রয়োজন হয় ওকে হতেই হবে, আসাদকে পরিবর্তন করবে, তবে নিজের ক্যারেক্টর ও কখনোই চেঞ্জ করবে না।
আসাদ অনেকক্ষণ ধরে ঘরের মধ্যে অপেক্ষা করছে, কিন্তু আরুশি এখনো আসছে না ৷ওর প্ল্যান সব রেডি, কিন্তু যাকে শায়েস্তা করবে সেই মানুষটাকেই পাচ্ছে না।
আসাদ উঠে দাড়ালো দেখার জন্য যে আরূশী আসছে কি? তখন ও দেখল যে আরুশি আসছে৷ ও তো সেই লেভেলের খুশি কারণ এক্ষুনি যখন আরুশি স্লিপ করে ফ্লোরে পড়ে যাবে তখন মজা নেবেন আসাদ, এটা হলো ওর পায়ে পা দেওয়ার শাস্তি।
আরুশি রুমের সামনে আসতেই দেখল আসাদ দাত বের করে হাসছে ৷ ও জানে যে আসাদ তোকে শায়েস্তা করার জন্য নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করবে কিন্তু কি করেছে সেটা এখনো আরুশি বুঝে উঠতে পারছে না৷ আর এই মুহূর্তে ঘরে ঢুকে যাওয়াটাও রিসক, তাই ও এসে বাইরে দাঁড়িয়ে পড়ল।
আরুশি কে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে আসাদ বলল: কি হলো দাঁড়িয়ে আছে কোন? ভিতরে কি আসবেনা? নাকি ভয় পাচ্ছ, আমার সাথে চ্যালেঞ্জে যদি হেরে যাও!
হার আর আমি কখনোই না।
তাহলে আসছ না কেন? আমার ভয়ে?
কোথায় কোথায় আরুশি খেয়াল করলো যে মেঝেটা কেমন চকচক করছে, এর উপর দিয়ে হাঁটলে ও যে নির্ঘাত পড়বে সেটা ও ঠিক বুঝতে পারছে, তাই ও ভাবল ও একা কেন পড়বে, আসাদ কেউ ওর সাথে নিয়ে পড়বে ৷
তাই ও বলল : তবে আমি চাইছি আপনি আমার হাত ধরে ঘরের মধ্যে নিয়ে যান।
আরূশির প্রপোজালটা আসাদের কিছুতেই পছন্দ হল না কারণ আরূশি যদি কোনভাবে আসাদকে ফেলে দেয় তখন!
কি হলো হাতটা ধরুন নাকি এখানেই কোন গণ্ডগোল আছে ৷ যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে আমি ঢুকছি না ঘরে।
আসাদ এবার কিছু না বলে আরূশির দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিল ৷ আরোশী হাত ধরে যেই ঘরের দিকে এগুলো পা স্লিপ করে পড়ে গেল মেঝেতে, আর তার সঙ্গে আসাদকে নিয়ে পড়ল৷
আরুশে নিচে পড়েছে আর আসাদ ওর পাশেই পড়েছে, আসাদের থেকে আরুশির লেগেছে বেশী।
আসাদের লেগেছে তবে ও পড়ে গিয়েও খুশি কারণ আরুশি বেশি ব্যথা পেয়েছে।
আসাদ খুব হাসছে হঠাৎ ওর চোখ পড়ল আরুশির দিকে ৷ ওর দিকে তাকাতেই আসাদ দেখল যে কোনরকম কোন শব্দ না করলেও আরোশীর চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে, হয়তো খুব বেশি ব্যথা পেয়েছে।
আসাদের একটু খারাপ লাগলো, তবুও এতে ওর কোনো যায় আসে না ৷ তাই মানবিকতার খাতিরে আরুশিকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল, দিয়ে কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আরুসিঃ দেখবি তোর কোনদিনও ভালো হবে না, তোর দশদিন পেটখারাপ থাকবে, মোটা ফুটবল হয়ে যাবি, আরো যা আছে সব হবি তুই৷
আমি পড়ে গেছি কোথায় একটু মলম দেবে, দিয়ে বলবে কিনা এইটা লাগও, তা না, উনি চলে গেলেন৷ হার্টলেস কোথাকার ৷তবে আমিও দেখে নেবো, আমারও একদিন সময় আসবে।
কিছুক্ষণ পর আরুশি দেখল তোহা হাতে করে মলম নিয়ে এসেছে।
ভাবি শুনলাম তুমি পড়ে গেছে তাই ভাই আমাকে পাঠালো মলমটা দেওয়ার জন্য।
আমার খুব ব্যথা লাগছে, এখন মনে হচ্ছে কোমর টাই পুরো ভেঙে গেছে।
তা তুমি কি করে পড়লে?
আরুশি তোহার সামনে আর কিছু বলল না যে আশাদ ইচ্ছে করে ওকে ফেলে দিয়েছে ৷ এটা ওর আর আসাদের নিজেদের মধ্যে ব্যাপারে, তাই এই সমস্ত কথা বাইরের কারোর কাছে জানাতে চাই না ৷
আর বোলো না, আসতে গিয়ে হোচট খেয়ে পড়ে গেছি,
আচ্ছা মলমটা লাগাও দেখো ঠিক হয়ে যাবে ৷
হমম৷
মলমটা লাগিয়ে আরুশি ঘুমিয়ে পড়ল তার কারণ ওর কোমরে খুব ব্যথা হয়েছে।
যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন দেখল ঘড়িতে সাড়ে বারোটা বাজে, রাতে রিসেপশন তাই পার্লার থেকে লোক বিকাল বেলা আসবে।
হঠাৎ রুমের মধ্যে আশাদ এল, ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে বাইরে থেকে এসেছে ৷ তবে আরুশির জানার কোন ইচ্ছা নেই যে ও কোথা থেকে আসছে।
অশাদ আরুশির সামনে গিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে ওর সামনাসামনি বসলো।
আসাদের কান্ড দেখে আরশির ভ্রু কুঁচকে তাকাল তারপর বলল: আমার কোমরে ব্যথা বলে আমাকে দেখতে এসেছেন স্বামী?
আসাদ একটা পেপার নিয়ে আরুশির সামনে ধরল৷ কিন্তু আরুশি অবাক হলো না তার কারণ ও জানে আসাদ এরকমই কিছু করতে চলেছে।
আসাদঃ এই নাও এটা হল একটা কন্ট্রাক্ট পেপার তোমার আর আমার বিয়ের, যেখানে বলা আছে তুমি আর আমি ছয় মাস পর্যন্ত স্বামী- স্ত্রী৷ তার আগে না তুমি আমাকে ছাড়তে পারবে না আমি তোমাকে ৷ ছয় মাস পরে তোমার আর আমার মধ্যে কোনো সম্পর্কই থাকবে না আর এই ছয় মাসে তোমার কোম্পানির সঙ্গে আমার কোম্পানি একসাথে মিলে সমস্ত ডিল সাইন করবে, সমস্ত প্রজেক্ট এ পার্টিসিপেট করবে৷ কোম্পানির 55% পার্সেন্ট লাভ হবে আমার কোম্পানি হার 45% তোমার কোম্পানির।
ডিলিটা দেখে আরুশি বেশ খুশী হলো তার কারণ আসাদকে বদলানোর জন্য এই ছয় মাসই ওর কাছে যথেষ্ট ৷ তবে আসাদের সঙ্গে সংসারটা ও কখনোই করতে চাইনি ৷ আর রইল কোম্পানির কথা, আসাদের কোম্পানির থেকে আরুশির কোম্পানি বিজনেসের ক্ষেত্রে সফলতা অনেকটাই বেশি ৷ তাই ফাইভ পার্সেন্ট লাভ যদি কম হয় তাতেও ওর কোন কিছু যায় আসবে না কারণ আসাদের থেকে অনেক বেশি আছে ওর৷
আরুশি কে শায়েস্তা করার জন্য আর নিজের কোম্পানি কে কিভাবে আরও ভালোভাবে এসটেবলিশ করা যায় সে জন্য ই আসাদ বিয়ে টা করেছে আর আরুশি সেটা জানত।
আরোশী কোন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ সাইন করে দিল।
আরশিঃএবার আমাকে কলে করে একটু ওয়াশরুমে দিয়ে আসুন স্বামী।
আসাদঃ হাসসস! তোমার নিজের কি পা নেই নাকি ম যে যেতে পারো না, আমি কেন নিয়ে যাব?
আরোশী :আসলে আমার ইমিডিয়েট দরকার আছে ওয়াশরূমে ৷ আপনি নিয়ে যাবেন নাকি আমি বিছানায়।
আসাদঃ থাক আর বলতে হবে না, বলে আসাদ আরুশিকে কলে তূলে নিল, নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল।
আরুশি শক্ত করে আসাদের গলাটা জড়িয়ে ধরেছে।
আরুশিকে আসাদ কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে আর সেই সুযোগে আরুশি আসাদের গালে একটা ছোট্ট করে কিস করে দিলে ওকে বিরক্ত করার জন্য ৷
আসাদঃ অভদ্র মেয়ে৷
আরুশিঃ আপনার বউ৷
পর্ব ৩
বিকাল চারটে।
আরোশী দুপুরে লাঞ্চ করে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিল আর আসাদ ল্যাপটপে বসে তখন কিছু কাজ করছিল৷ দুজনের মধ্যে আর কোন কথা হয়নি।
বিকালে ঘুম ভাঙলো তোহার ডাকে।
তোহাঃ ভাবি পার্লারের লোকেরা চলে এসেছে, তোমাকে এখন রেডি হতে হবে ৷তোমার শরীরটা কি খুব খারাপ লাগছে?
আসলে আরুশির শরীরটা সত্যিই খারাপ লাগছে৷ দুপুরবেলা বেশ জ্বর জ্বর লাগছিল তবে এখন জ্বর না থাকলেও পরে যে জ্বর আসতে পারে সেটা আরোশী বেশ ভালই বুঝতে পারছে।
আরুশিঃ না না, আমার শরীর খারাপ লাগছে না৷ আচ্ছা তুমি দশ মিনিট পরে ওদেরকে আসতে বল আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নিই।
তোহা চলে যেতেই আরুশি ওয়াশ রুমে চলে গেল। যাওয়ার সময় আসাদকে কোথাও দেখতে পেল না তবে এই ব্যাপার নিয়ে আর বেশি মাথা ঘামাল না ও।
পার্লারের লোকরা আরুশিকে সাজিয়ে দিলো ৷ আসাদরা সপরিবারে কমিউনিটি সেন্টারে গেল যেখানে ওদের বৌভাত এর আয়োজন করা হয়েছে।
আসাদ সবাইকে জানালো যে ও কিছুক্ষণ পরে যাবে তার জন্য ও সকলের সাথে গেল না।
আসলে আজকের দিনে ওর শামিল হওয়ার কোন ইচ্ছাই নেই কিন্তু ওর মা এর কসম দেওয়ার কারনে ওকে যেতেই হবে ৷ নিজের পরিবারকে বড্ড ভালোবাসে ও, পরিবারের লোকের দুঃখের কারণ ও কখনই হতে চাইবেনা ৷
সন্ধ্যা সাতটা।
আরুশির পরিবারের সকলেই এসেছে।
ওর কাজিন রা ওকে ঘিরে রয়েছে, আসাদকে নিয়ে নানান ধরনের কথা বলছে যাতে আরুশি একেবারেই ইন্টারেস্টেড নই ৷ ওর চোখে এখন গেটের দিকে, যে কখন তার বেস্ট ফ্রেন্ড সাদাফ আসবে।
আসলে ওর বেস্টফ্রেন্ড হলো সাদাফ ৷ সেই ছোটবেলা থেকে দুজনে একসঙ্গে পড়াশোনা করে আসছে, দুজনে একসঙ্গে ইউকে থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে এসেছে, মোটামুটি বলতে গেলে আরুশির ছোট থেকে বড় হওয়া সমস্তটাই হয়েছে সাদাফের সঙ্গে।
সাদাফ আরুশিকে খুব পছন্দ করে কিন্তু আরূশির জেদ আর রাগের ভয় থেকেই সাদাফ কখনো ওকে বলে উঠতে পারেনি ৷ আরুশি যে সাদাফকে পছন্দ করে না ঠিক তেমনটা নয়, পছন্দ করে তবে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড হিসাবে।
আসাদ অনেকক্ষণ আগেই চলে এসেছে, ওকে আরূশির পাশে বসানো হয়েছে ৷ আরুশির দিকে কেবলমাত্র একটি বার তাকিয়ে ছিলো তারপর থেকে তাকানোর সাহস হয়নি ওর তার কারণ ও একজনকে ভালোবাসে তাই আর অন্য কারোর মায়ায় জড়াতে চায় না ৷ হয়তো তার ভালোবাসার মানুষটি আজ তার সাথে নেই তবে তার জায়গাটাও ও কাউকে দিতে চায় না ৷ ও মনে করে যে ওর মনে দ্বিতীয় কোনো নারীর জন্য ভালোবাসার স্থানটুকু না হয় অপূর্ণই থাকুক।
তবে আরুশি একটিবারের জন্যও আসাদের দিকে তাকাইনি।
হঠাৎ শাদাভ একটা ফুলের তোড়া নিয়ে আরুশির সামনে এসে দাড়ালো।
সাদাভ আসতেই আসাদ সাদাফের দিকে একবার তাকালো তারপর যখনই চোখ সরিয়ে নিতে যাবে তখনই দেখলো আরুশি সাদাফকে জড়িয়ে ধরেছে৷ একটু হলেও অবাক হল আসাদ কারণ ও যতদূর জানি যে আরুশি কোন রিলেশনশিপে ছিল না, তাহলে কি আরুশি কাউকে ভালোবাসা? তাহলে কি এই ছেলেটাকে ভালোবাসে?
আসাদ মনে মনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল :ও ভাবতে লাগলো : ভালোবাসলেই আমার কি? জাস্ট 6 মাস আমরা স্বামী- স্ত্রী তারপরে ও নিজের মতো আমি আমার মতো ৷ তবে ছয় মাসে তো ওয়াইফ হয়ে আছো আমার, আর এই 6 মাসে তোমার লাইফ যদি আমি হেল না করেছি তো আমার নাম আসাদ সাঈদ নয়।
সাঈদ ওদের থেকে চোখ সরিয়ে নিল, তারপর stage থেকে নিচে নেমে গেল।
বিয়ের কনে বিয়ের স্টেজে অন্য কোন একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছে এই ব্যাপারটা দেখে সবাই অবাক ৷ ছেলে পক্ষের লোকের মধ্যে নানা কানাঘুষা চলছে তবে আরূশির বাড়ির লোকের আচরণ খুবই স্বাভাবিক কারণ আরুশি আর সাদাফের সম্পর্কটা ঠিক কেমন সেই কথা সকলেই জানে তাই কেউ কিছু মনে করেনি ৷ তবে সকলের সামনে এভাবে জড়িয়ে ধরা অবশ্যই তা দৃষ্টিকটু।
সাদাফ আরুশির কানে ফিসফিস করে বলল।
এখন তো ছাড়, সকলে দেখছে তো নাকি? আর তোর বর দেখ জেলাস হয়ে এখান থেকে চলে গেছে।
আসাদের কথা শুনতে আরূশি আরো বেশি রেগে গিয়ে সাদাফ কে ছেড়ে দিল।
আরুশিঃ জেলাসি না ছাই৷ আর উনি জেলাস হল কি না হল তাতে আমার দেখার দরকার নেই, তবে তুই কালকে আমার বিয়েতে আসলি না কেন? আমি কিন্তু খুব রাগ করেছি।
সাদাফ: আই এম রিয়েলি সরি আমি আসতে চাইছিলাম কিন্তু জরূরি কাজ পড়ে গেছিল ৷
নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ের থেকে বড় কাজ বুঝি হতে পারে।
সাদাফ একটা মুচকি হাসল যে হাসির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে হাজারো কষ্ট যা বুঝার ক্ষমতা হয়তো আরুশির নেই ৷
সাদাফ: সে সব কথা বাদ দে, বল সব কেমন চলছে?
আরুশি সাদাফকে এক কোনে টেনে নিয়ে গিয়ে বলল:
আমাদের বিয়েটা যে স্বাভাবিক বিয়ে না সেটা তো তুই খুব ভাল করেই জানিস ৷
জানিস আজকে আমাকে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করিয়ে নিয়েছেন উনি যেখানে লেখা আছে আমি লিগালি তার ছয় মাসের বউ তার পরে উনার আর আমার ডিভোর্স হয়ে যাবে।
কথাটা শুনে শাদাফ স্বস্তি পেল এবং তার সঙ্গে কিছুটা অবাকও হল কারণ হতেই পারে উনি ভালোবেসে বিয়ে করেন নি তা বলে ছয় মাসের জন্য?
আরোশী সাদাফকে ডাক দিয়ে : এই তুই এত কি ভাবছিস? আমি কিছু বললাম আর কিছু বললি নাতো।
সাদাফ :এরপর আবার উনি উনার কথার খেলাপ করবেন না তো?
আরূশি: তোর কি মনে হয় আমি কি ওনার সাথে থাকতে চাই? না তো! তাহলে?
শাদাফ ঠিক করে নিল যে একবার আরুশির ডিভোর্স হয়ে গেলে আর কোনভাবে আরুশিকে হারাতে দেবেনা।
রাত সাড়ে নটা।
লোকজন আস্তে আস্তে কমে যেতে লাগলো, সকলে ডিনার করে বাড়ি চলে যাচ্ছেন ৷সাদাফ অনেকক্ষণ আগেই চলে গেছে।
আরূশি চুপচাপ বসে আছে stage এ তবে ওর পাশের জায়গাটা ফাঁকা কারণ আসাদ সেই তখন চলে গেল তারপরে আসাদকে আর দেখিনি আরুশি।
আরোশী বসে আছে আর তখনই আসাদের মা এলো আরুশির কাছে।
আসাদের মাঃ মামনি আসাদ কে কোথাও দেখছি নাতো! তুই কোথাও দেখেছিস কি?
নাতো মামনি, উনি সেই অনেকক্ষণ আগে চলে গেছেন তারপর থেকে আমিও দেখিনি ওনাকে৷
তোকে কিছু বলে যায়নি?
নাতো আমাকে কিছু বলে যায়নি!
এবার আসাদের মা আরূশির সামনে ঢুক্রে কেঁদে উঠলেন।
আরোশী হতবাক হয়ে গেল।
মামনি প্লিজ কেদোনা ৷
তোকে বলেছিলাম না মামনি আমার ছেলেটা সম্পূর্ণ চেঞ্জ হয়ে গেছে, ও আজো কোথাও না কোথাও চলে গেছে ৷ আমার ছেলেটা কি আর কখনো ভাল হবে না! বলে কেঁদে ফেললেন।
আরশির এই মুহূর্তে আসাদের মায়ের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে ৷আর কিছু পারুক আর না পারুক কারো চোখের জল আর সহ্য করতে পারে না আরুশি, এটা যেন ওর কাছে খুবই যন্ত্রণাদায়ক ৷ ওর নিজের মা নেই, ছোটবেলা থেকে নিজের বাবার কাছে মানুষ হয়েছে ৷ মায়ের ভালোবাসাটা কি সেটাও জানেনা ও ৷ আসাদের মাকে নিজের মায়ের মত ভালবাসবে ও৷ আসাদ এর মাকে পেয়ে নিজের একটা মা খুঁজে পেয়েছে আরুশি তবে সেটা কতদিনের জন্য ও ঠিক জানে না কিন্তু আসাদের মাকে মায়ের মতই ভালবাসতে চাই ৷
আররূশি আসাদের মাকে জড়িয়ে ধরলেন।
মামনি আপনি প্লিজ কাঁদবেন না, দেখুন উনি আসুক আমি উনার সাথে কথা বলবো।
আমার ছেলেটাকে তুই আগের মত করে দেনা মা! (কাঁদতে কাঁদতে। )
আমি ওনাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনবো কথা দিলাম।
রাত একটা বাজে, আরোশী এখনও ঘুমায়নি, আসাদের এর জন্য অপেক্ষা করছে।
আসাদের মা যখন প্রথম দিন ওকে সমস্ত কথা বলেছিল তখন ব্যাপারটা এত গুরুত্ব দিয়ে না দেখলেও এখন ওকে ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নিতে হবে সেটা আজকের ঘটনা থেকে ও বুঝতে পারল ৷ আর কিছু করুক আর না করুক মিথ্যে ভালোবাসা দিয়ে হলেও ওকে আসাদকে পরিবর্তন করতে হবে।
হঠাৎ দরজায় নক পড়তেই আরুশি দরজা খুলে দিল, বুঝতে পারল যে আসাদ এসেছে।
দরজা খুলতেই আরুশি কিছু বলতে যাবে তার আগে আসাদ আরুশিকে বলল : সরেযাও সামনে থেকে৷
আরুশির আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আসাদ ড্রিঙ্ক করে এসেছে, তবে নিজের ঘোরে আছে, ঠিক ভাবে দাঁড়াতে পারছে, কথা বলতে পারছে তবে এটা খুবই বাজে অভ্যাস।
আসাদ ঘরে ঢুকতেই আরূঝি বলল: আপনি কি এটা ড্রিঙ্ক করেছেন?
আসাদ জুতো খুলতে খুলতে: হ্যাঁ করেছি, তোমার কোন সমস্যা?
- আমার সমস্যা আছে, আমি চাই না আমার স্বামী ড্রিঙ্ক করুক, এতে আমার খারাপ লাগবে ৷
আসাদ আর সহ্য করতে না পেরে আরশিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। - বারবার কি স্বামী স্বামী করো হ্যাঁ? তোমাকে আমি আমার স্ত্রী বলে মানি না, নিজেকে কি আমার বউ ভাবতে শুরু করেছে নাকি? মনে রেখো তুমি আর আমি হলাম এনিমি আর দুজন এনিমি কখনো স্বামী- স্ত্রী সুলভ আচরণ করতে পারে না ৷ তাই তুমিও আশা করি এরকম ব্যবহার থেকে দূরে থাকবে। অন্য সময় হলে আরুশি হয়ত আসাদকে থাপ্পর মেরে দিত তার কারণ একে আসাদ মদ খেয়েছে তার উপরে আবার নিজের খারাপ কাজের জন্য গলাবাজি করছে৷ আরূশি আর কিছু করুক অন্যায় সহ্য করতে পারে না, তাও চুপ করে আছে আসাদের মায়ের কথা ভেবে ৷ উনার বলা কথাগুলো বারবার ওর কানে এসে বাজছে, যে করেই হোক ওকে আসাদকে পরিবর্তন করতেই হবে। আসাদের মা এর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য ৷
আপনি প্লিজ সরে দাঁড়ান, আমার এই মদের গন্ধ আর সহ্য হচ্ছে না। আসাদ আর কিছু বলার অপেক্ষা রাখল না, আরূসির ঠোঁটজোড়া দখল করে নিল।
আরুসি পারছেনা ওকে ছাড়াতে তবু চেষ্টা করেই চলেছে ৷
একটা মেয়ে যতই সাহসী হোক কিন্তু কখনো একটা পুরুষের সঙ্গে গায়ের জোরে পেরে উঠবে না, আর আরুশিও ঠিক তেমনি ব্যর্থ হয়েছে।
অনেকক্ষণ পর আসাদ আরুশিকে ছেড়ে দিল ৷ও আর নিজের মধ্যে নেই, একই ড্রিঙ্ক করেছে তার উপরে আরূশি নামক একটা জ্বলন্ত নেশা দুটোই এখন ওর উপরে কাজ করছে। নিজের না চাওয়া সত্ত্বেও আসাদ আরুশের উপরে জোর খাটালো, তবে ভালোবেসে নয় নিজের হিংস্রতা থেকে।
সকালবেলা আসাদের আগে আরূশির ঘুম ভেঙে গেলে ৷ একে তো অনেক দেরী করে ঘুমিয়েছি আর তারপর সারারাত ঘুম না হওয়ার কারণে চোখ দুটো খুব জ্বালা করছে।
আসাদের দিকে তাকালো ও, তাকাতেই দেখলো আসাদ পাশ ফিরে শুয়ে আছে ৷ওকে দেখতে সম্পূর্ণ নিষ্পাপ লাগছে, একটা মায়াবী চেহারা, চুলগুলো কপালে এসে আছড়ে পড়ছে, গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো যেন খুবই সুন্দর মানিয়েছে ওর মুখের সঙ্গে।
আরুশি বুঝতে পারলো যে অনেক দেরি হয়ে গেছে, আর কিছুক্ষণ পরেই আসাদের ঘুম ভেঙে যাবে আর ওর একমাত্র লক্ষ্য হল আসাদ এর কাছাকাছি থেকে আসাদকে পরিবর্তন করা ৷ আর ও যতই আসাদের সামনে আসাদের প্রতি ঘৃণা দেখাবে ততই আসাদের মনে আরুশির প্রতি ক্ষোভ জমবে আর তখন আসাদকে পরিবর্তন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে তাই ও আসাদকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরল না চাওয়া সত্ত্বেও ৷
পর্দা ভেদ করে কিছুটা সূর্যের আলো আসাদের মুখের ওপরে পড়তেই দেখলে আরুশি ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে ৷ মুহূর্তের মধ্যে শরীরের মধ্যে যেন কারেণ্টের গতিতে শিহরন বয়ে গেল, এমন কিছু অনুভব করল।
আরূশি কে ছাড়িয়ে আসাদ বিছানা থেকে নেমে গেল,
আসাদ চেঁচিয়ে : এই মেয়ে তুমি আমার সাথে ঘুমিয়েছো কেন?
আসাদের চেঁচামেচিতে আরুশির ঘুম ভেঙ্গে গেল, বুঝতে পারল যে ওর প্ল্যান কাজ করছে।
আরসি উঠে আসাদের কাছে দাঁড়িয়ে : আমি আপনার স্ত্রী তা আপনার বুকে ঘুমাবো না তো কোথায় ঘুমাবো?
আসাদঃ আর কতবার বলবো তোমাকে যে এই স্ত্রীর অধিকারটা তুমি আমার কাছ এ দেখাবে না! আর আমরা তো এনিমি ছিলাম, হঠাৎ তোমার মধ্যে কনসা আতমা চলে এলো যে আমার প্রতি এত ভালোবাসা উতলে পড়ছে তোমার।
আরোশী আসাদের গালে একটা কিস করে বলল : আমি আপনার স্ত্রী, আর আপনার ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার কেবল আমার, আপনার বুকে ঘুমানোর অধিকার ও আমার, তাই এগুলোর সাথে এখন থেকে পরিচিত হয়ে থাকুন ৷( বলে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল৷)
আসাদ সোফায় বসে মাথা দুটো হাত দিয়ে চেপে ধরে: মহা জ্বালায় পরেছি এই মেয়েকে নিয়ে ৷কোন ভাবে এই 6 মাস তাড়াতাড়ি কাটলে বাঁচি।
শাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে আছে আরুশি আর শওয়ারের জলে প্রত্যেক বিন্দুর সাথে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে সমস্ত ক্লান্তি ৷ সব ক্লান্তি দূর করে শুরু করবে এক নতুন কিছুর ৷
পর্ব ৪
আসাদ আর আরূশির দুজনেই রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
অন্য সময় হলে আরূশি হয়তো জিনস আর শার্ট পড়ে অফিসে যেত কিন্তু সদ্য বিবাহিত হওয়ার কারণে জিন্স আর শার্ট পরে নি, শাড়িই পরেছে।
ওরা দুজনে রেডি হয়ে টেবিলে খেতে বসলে আসাদের মা আরুশিকে জিজ্ঞাসা করল।
- মামনি তুই কি কোথাও যাচ্ছিস?
- আরূশী মুচকি হেসে: আমিতো অফিসে যাচ্ছি মামনি৷
- সেকিরে! নতুন বউ অফিসে যাচ্ছিস এটা কিন্তু ঠিক না, বড্ড বেমানান।
এই দুই দিনের মধ্যে আরোশী আসাদের মা আর ওর বাবার সাথে বেশ ভালোই ভাব জমিয়ে নিয়েছে, এখন ওর সঙ্গে আসাদের মায়ের সম্পর্কটাও এমন হয়ে গেছে যে আরোশী কি করতে যাবে সেটা সামান্য ইশারাতেই আসাদের মা বুঝতে পারে।
আরোশী একবার আসাদের দিকে তাকাল, আসাদ মন দিয়ে ব্রেকফাস্ট করছে আর এমন একটা ভাব করছে যেন ওরা কি কথা বলছে ওর কোন কিছুই কানে যাচ্ছেনা ৷ ও যেন অন্য একটা জগত এর মধ্যে আছে।
- আমি না গেলে অফিসের মালিক কে সামলাবে কে শুনি?
আসাদের মায়ের দিকে চোখ মেরে।
আসাদের মায়ের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আরুশি কি বুঝাতে চাইছে, তাই উনি ও আরুশির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বললো,
তাইতো আমিতো ভুলেই গেছিলাম তোকে তো অফিসের সাথে অফিসের মালিককেও সামলাতে হবে৷
আসাদ এই মুহূর্তে প্রচণ্ড রেগে গেল ওদের কথোপকথন শুনে ৷ ও এখন বেশ ভালই বুঝতে পারছে যে এই দুদিনের মধ্যে আরোশি ওর মায়ের সঙ্গে প্রচণ্ড ভাব জমিয়ে ফেলেছে, এখন দুজনে প্ল্যান করে সমস্ত কিছু করছে।
- আমার খাওয়া হয়ে গেছে বলে ব্লেজার হাতে নিয়ে হন হন করে বেরিয়ে গেল।
- তুই না খেয়ে চলে যাচ্ছিস কেন? কিছুই তো খেলিনা, আরুশিকে নিয়ে যা দুজন তো একই জায়গায় যাচ্ছিস ৷
- আমার গাড়িতে ওর জন্য কোন জায়গা নেই বলে বেরিয়ে গেল।
আরুশি ও খাবার ছেড়ে উঠে পরল। - আমি যাই মামনি বলে আসাদের পিছনে ছুটল।
আসাদ গাড়ি রিস্টার্ট দিতে যাবে তখনই আরুশি গাড়ির দরজা খুলে আসাদের পাশে বসে গেল। - এই তুমি আমার গাড়িতে আসলে কেন, নামো গাড়ি থেকে।
- আমি নামবো না আপনার কোন সমস্যা?
- এই তুমি নামক মেয়েটা আমার যত সমস্যা, নামো৷
- আমি নামবো না, আপনি দেখি আমাকে কি করে নামান গাড়ি থেকে ৷ নামাতে হলে আমাকে কোলে করে নামান, তখন আমি আপনার গলা জড়িয়ে আপনার ঠোঁটে ছোট্ট করে একটা কিস দিয়ে দেবো তখন দেখবেন কেমন লাগে!
- অসভ্য মেয়ে একটা ৷ বলে আসাদ আর কিছু না বলে গাড়ি চালাতে শুরু করলো কারণ ও জানে আরোশী সেটা বলেছে মানে ওটা করেই ছাড়বে ৷ আর কিছু হোক না হোক আরুশিকে সে কিছুতেই নিজের কাছে আসতে দেবে না ৷
আরুশি মুচকি মুচকি হাসলো। অফিসে ঢুকতেই আসাদ ওর রুমে গেল, গিয়ে দেখল ওর চেয়ারের পাশে আর একটা চেয়ার রাখা।
অফিসের একটা স্টাফকে ডেকে আসাদ জিজ্ঞাসা করল-
এখানে দুটো চেয়ার কেন? আমার তো কখনো দুটো চেয়ার এর প্রয়োজন হয়নি তাহলে এসব কেন? আরোশী কেবিন এর মধ্যে: ঢুকে প্রয়োজন হয়নি তবে এখন থেকে প্রয়োজন হবে কারণ আমি এখন থেকে আপনার পাশে বসে কাজ করব ৷
কিন্তু আমি তোমার সাথে কাজ করব না, এই আপনি এক্ষুনি চেয়ারটা এখান থেকে নিয়ে যান তো ৷
না আপনি কোথাও নিয়ে যাবেন না, এটা এখানেই থাকবে আর আমি এখানে বসবো বলে অফিসের লোকটাকে রূম থেকে বার করে দিল ৷
সব সময় আমার মজা ভালো লাগেনা, আমি আর তুমি কোনদিনও একই রুমে একই সাথে বসবো না৷ এখানে তুমি থাকবে না হয় আমি ৷
তাহলে কোম্পানির ডিলে শুধু আপনারই নাম থাকবে আমার নয়, এবার আপনি বলুন আপনি কি করবেন?
আসাদ কিছু বলল না কারণ এগ্রিমেন্ট সেভাবেই করা যে আরুশি চাইলেই কোম্পানি কে আলাদা করে নিতে পারে তাই বাধ্য হয়ে আসাদ আরুশির পাসেই বসলো। আসাদ এখান কাজ করছে কিন্তু আরূশি ওর পাশে বসে কাজ করছে ৷ কাজে অত্যন্ত মনোযোগ তার ৷ তাহলেও এই মুহূর্তে ওর খুবই বিরক্তি লাগছে কাজ করতে তাই মুডটাকে ভালো করার জন্য ঠিক করল যে আসাদকে জ্বালাবে ৷ যেই ভাবা সেই কাজ। .
আরোশী হুট করে চেয়ার থেকে নেমে আসাদের কোলে গিয়ে বসে পরলো।
এই মেয়ে তুমি আমার কোলে উঠে যাও কেন বারবার, নামো ৷ না আমি আপনার কোল থেকে নামব না, আপনি আমাকে একটা কিস দেবেন তার পর নামব ৷
একটা থাপ্পড় দিয়ে সব কটা দাঁত ফেলে দেবো, নামো বলছি ৷ না হলে কিন্তু আমি ফেলে দেবো ৷
আমি জানি আপনি আমাকে ফেলবেন না তাই আমাকে এসব ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, তাড়াতাড়ি যা বলেছি তা করুন তো, আমার আবার বেশি অপেক্ষা করতে ভালো লাগেনা ৷
শেষবারের মত জিজ্ঞাসা করছি তুমি কোল থেকে নামবে কি? না আমি নামব না ৷
আরূশি কোনোভাবেই নামছে না দেখে অসাদ আরুশিকে কোলে তুলে নিয়ে ফেলে দিল।
অনেক উপর থেকে ফেলে দেওয়ার কারনে আরুশির বেশ ভালোই লেগেছে আর তার ওপরে রয়েছে কালকের পড়ে যাওয়াই সেই ব্যথা ৷ সবকিছু মিলিয়ে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা পর্যন্ত পাচ্ছে না ৷ নিজের কষ্টটাকে চেপে রাখতে না পেরে চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল, তবে আসাদের দেখার আগেই মুছে ফেলল, কোন মুহূর্তে নিজেকে অন্যের সামনে দুর্বল প্রমাণ করতে চায় না এতে ওর জেতার আবশ্যিকতা সেটাও কমে যায় ৷ এটা ও বেশ ভালোই জানে।
আসাদ ভেবেছিল আরুশিকে আসতে করে কোল থেকে নামিয়ে দিবে কিন্তু এতো জোরে যে আরুশি পড়ে যাবে সেটা ভাবি নি ৷ তবে আরুশির লাইফটা হেল করার জন্য ওর প্রয়াস সফল।
আরুশি অনেক কষ্ট করে উঠে দাঁড়ালো।
আরূশি ভেবেছিলো ফেলে দেওয়ার পর হয়তো আসাদ ওকে ধরে তুলবে কিন্তু তাও করেনি, অবশ্য ওর কাছ থেকে এসমস্ত আশা করাই বেকার।
আরুশি নিশ্চুপ ভাবে কাজ করছে আর আসাদের পাশে বসে আছে ৷ এদিকে ব্যথাটাও আরও বেড়ে চলেছে আর হয়তো পাচ্ছে না নিজের আবেগটাকে কন্ট্রোল করে রাখতে ৷ এক্ষুনি হয়তো কেঁদে ফেলবে, সেই জন্য আসাদকে কিছু না বলো ওর পাশ থেকে উঠে গেল বেরিয়ে গেল অফিস থেকে। .
আরোশী হঠাৎ করে কিছু না বলে উঠে যাওয়ায় আসাদ অবাক হলো কিন্তু ওর কোনো যায় আসে না।
বিকেল চারটে রেস্টুরেন্টের জ্বর নিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে আরুশি, আর ওর সামনে বসে আছে সাদাফ।
সাদাফঃ তোর কি খুব শরীর খারাপ লাগছে? আর বেশ অনেকক্ষণ ধরে দেখছি মাথা নিচু করে বসে আছিস, কফি ছাড়া কিছু খেলিনা, আমাকে বল কি সমস্যা।
আরুশি মাথা দুলিয়ে বলল: না কোন সমস্যা নয় এমনি ভাল লাগছে না।
সাদাফ আরুশির হাতে হাত রাখতেই।
আমার থেকেও আজকাল সব কিছু লুকাচ্ছিস এটা তোর কাছ থেকে আশা করিনি ৷
তুই রাগ করছিস কেন? আসলে কোমরে খুব ব্যথা সেই জন্যই ৷
কি করে হলো কোমরে ব্যথা? কালকে তো তুই ভালোই ছিলি ৷
কালকে ভালো ছিলাম না, কালকেও ব্যথা ছিল তবে সবার সামনে ভালো থাকার অভিনয় টা চালিয়ে গিয়েছিলাম ৷
ব্যাথাটা কমে ছিল তবে আজকে আবার বেড়ে গেল কেন? ওষুধ বা পেইনকিলার নিসনি?
নিয়েছিলাম বাট আজকে অফিসে উনার কলে বষাতে উনি আমাকে কল থেকে ফেলে দিয়েছেন খুব জোরে তাই ব্যথাটা যেন আরো বেড়ে গেছে।
তুই ওই লোকটার জন্য আর কত কিছু করবি কেন বলতে? তুই আমার কাছে কেন চলে আসিস না কেন?
আরুশি অবাক হলো সাদাফ এর কথা শুনে তারপর বলল : তোর কাছে ফিরে আসবে মানে ঠিক বুঝলাম না!
সাদাফের মনে পড়ে গেল যে ও তো এখন আরুশিকে ওর ভালবাসার কথা জানায় নি তাই কথা ঘুরানোর জন্য বলল : আমি বলতে চাইছি যে তুই ওনাকে ছেড়ে তো চলে আসতে পারিস আঙ্কেলের কাছে৷
না কখনোই না, ছ’মাস চ্যালেঞ্জ ৷আমার কাছে অনেক সময় আছে ৷ উনাকে আমি পাল্টাবো, আর এই ছয় মাসে তবে আমি বাপির কাছে ফিরে যাবো।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে আয় তুই, আমি চাইনা তূই ওনার কাছে বেশি দিন থাকিস, না জানি কখন তোর কী ক্ষতি করে দেয়।
ওরা দুজন কথা বলছে, আরোশী সাদাফ এর সামনে নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করছে ঠিকই কিন্তু গা টা বেশ গরম গরম হয়ে আসছে, জ্বর জ্বর লাগছে৷
বেশিক্ষণ যে ওর পক্ষে বসে থাকা সম্ভব হবে না সেটা ও ভালই বুঝতে পারছে। .
আমার না আর বসে থাকতে ভালো লাগছে না, অনেকক্ষণই হল আমি না এখন উঠি ৷
আচ্ছা শোন আমি তোকে ড্রপ করে দিচ্ছি৷
তার ঠিক দরকার হবে না, তুই বাড়ি চলে যা ৷
একটাও বেশি কথা নয়, আমি তোকে দিয়ে আসব এটাই ফাইনাল ৷
আরোশী আর না করতে পারল না কারন না বললে সাদাফ খুব রাগ করবে সেটা ও খুব ভাল করেই জানে তাই ও বলল আচ্ছা চল ৷
কিছুদূর হেঁটে যেতেই আরূশির মাথাটা ঘুরে গেল, তবে পড়ে যাওয়ার আগেই শাদাফ ধরে ফেলল, কিন্তু ততক্ষণে আরোশী জ্ঞান হারিয়েছে।
সন্ধে সাড়ে ছটা,
আসাদের বাড়ির ড্রইং রুমে সোফায় বসে আছে সবাই, সবার মুখে চিন্তা শুধুমাত্র আসাদ ছাড়া ৷
মেয়েটা যে কোথায় গেল জানিনা, তার ওপরে সকালে কিছু খাইনি, দুপুরে লাঞ্চ করেছে কি তাও জানিনা৷
মেয়েটা দুপুরে লাঞ্চ করেছে?
আমি কি করে জানব লাঞ্চ করেছে কি করেনি?
বাহ ভালো উত্তর দিলি নিজের বউ নিজেই জানিস না তুই কি আমার স্বামী!
আর কিছু বলতে যাবে তখনি দরজায় বেল বেজে উঠল ৷
পর্ব ৫
সাদাফ আরুশিকে কোলে করে নিয়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তখনই আসাদের মা গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন ৷
আরুশিকে এভাবে সাদাফ এর কোলে কেউ আশা করেনি তবে ওর যে জ্ঞান নেই সেটা সকলেই দেখতে পাচ্ছে তাই সাদাফ এর ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে আরুশিকে নিয়ে সকলে ব্যস্ত হয়ে গেল।
সাদাফ আরূশিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে তখন আসাদের মা সাদাফকে বলে উঠলো তুমি ওকে কোথায় পেলে বাবা?
আসলে ও এতক্ষণ আমার সঙ্গে ছিল, আমরা কফি সপে ছিলাম সেখানে বেশ অনেকক্ষণ ধরে মাথা নীচু করে ছিল, বলল কোমরে প্রচন্ড ব্যথা আর আজকেও নাকি আরেকবার পড়ে গেছে( আসাদের দিকে তাকিয়ে)
তাই ব্যথাটা আরো বেড়েছে, সেরকমই কিছু বলল আমাকে, তারপরে বাড়ি আসার সময় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল তাই আমি ওকে সরাসরি বাড়িতে না এনে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলাম ৷ doctor আঙ্কেল কিছু ওষুধ দিয়েছেন সেগুলো গাড়িতে রয়েছে আপনারা কেউ একটু প্লিজ ওগুলো আনবেন! আর ওকে এক্ষুনি শোয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে ৷ ওর বেডরুমে টা কোথায় একটু বলে দেবেন?
আসাদের মাঃ চলো আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি, মেয়েটার শরীর খারাপ তাও মেয়েটা আমাদের কে বলল না ৷
আন্টি ও খুব চাপা স্বভাবের, ওর প্রবলেম গুলো কাউকে বলে না আপনি একটু ওর দিকে ভালো করে যত্ন রাখবেন, আমার মনে হয় না এই বাড়িতেওর খেয়াল রাখার মতো আপনি ছাড়া আর কেউ আছে আসাদ কে উদ্দেশ্য করে ৷ কারণ সবাই কষ্ট দিতে ব্যস্ত।
আসাদের মা হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন তবুও একটা বাইরের লোকের সামনে পারিবারিক সমস্যা গুলোকে উনি তুলে ধরতে চাইছেন না তাই আর কথা না বাড়িয়ে আরুশিকে আসাদের ঘরে নিয়ে গেল।
আসাদ একটিবারের জন্যও বলল না যে ও আরুশিকে নিয়ে যাবে।
আরুশি কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর সমস্ত ওষুধগুলো আসাদের মায়ের হাতে ধরিয়ে দিল সাদাফ৷
আন্টি আপনি প্লিজ আর খেয়াল রাখবেন কোনরকম অবহেলা করবেন না ৷ ছোটবেলা থেকে মায়ের ভালোবাসা পায়নি তাই ও আপনাকেই নিজের মায়ের মত দেখে।
আসাদের মা চোখের জল মুছে: তুমি চিন্তা করো না বাবা আর তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই রকম কঠিন সময় পাশে থাকার জন্য।
তখনই রুমের মধ্যে আসাদ ঢুকলো ৷
আসাদকে এক পলক দেখে নিয়ে সাদাফ আসাদের মাকে বলল : আন্টি আমি তাহলে আজকে আসি আবার অন্য দিন দেখা হবে ৷
ঠিক আছে বাবা ৷
সাদাফ চলে যেতে আসাদের মা আসাদকে বলতে শুরু করল।
দেখ আজকে তোর জন্যই মেয়েটার এই অবস্থা ৷তুই ওকে ফেলে দিয়েছিস না হলে ওর কোমরের ব্যথা টা যেখানে প্রায় ঠিকই হয়ে যাচ্ছিল কি করে আবার সেই ব্যথা বেড়ে যায়? আর কেমন স্বামী তুই যে নিজের বউয়ের খেয়াল রাখতে পারিস না, একটা অন্য পরপুরুষ তোর বেডরুমে ঢুকে যায় ৷ তুই কি পারতিস না ওকে নিয়ে আসতে ঘরে।
আমি মানছি তোর মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে তা বলে এতটা অমানবিক হয়ে যাবি সেটা আমি কখনোই ভাবিনি’ ৷ বলে উনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷
অসাদ আঙুল গুলো মুঠিবদ্ধ করে নিলো ৷ এই মুহূর্তে আরূশির ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে কারণ ও যদি অফিসে আসাদের কোলে না উঠত তাহলে আসাদ ওকে ফেলে দিত না, আর ওর মায়ের থেকে এত কথা শুনতে হতো, আর না সাদাফ তার বেড রুমে প্রবেশ করতে পারত।
আসাদ এবার আরশির কাছে গেলে গিয়ে ঘুমন্ত আরুশিকে ঝাকিয়ে ওকে ঘুম থেকে তুলে দিল৷
আরুশি ভাঙ্গা কন্ঠে :আপনি কিছু বলবেন?
আসাদ আরশির দুই বাহূ চেপে ধরে: সব তোমার জন্য হয়েছে ৷ না তুমি আমার কোলে বসতে না আমি তোমাকে ফেলে দিতাম না তোমার জ্বর হত না আমাকে এত কথা শুনতে হতো।
আরূশির চোখের কোনে জল জমে এল, ও বলতে লাগল : আপনার মা আপনাকে বকেছে বলে আপনি আমাকে এত কথা শুনেছেন?
আসাদের বুকের ভিতর ধক করে উঠল কথাটা শুনে কারণ ওর আম্মু ওকে বকেছে সেটার জন্য ওর খারাপ লাগেনি, ওর খারাপ লাগলো যে অন্য একজন ওর বেডরুমে এসে নিজেকে মহান প্রমাণিত করে চলে গেল।
আমার বোঝা উচিত ছিল যে সকল মেয়েদের চরিত্র ভালো হয়না ঠিক তোমার মত ৷ এখন না জানে ওই ছেলেটার সাথে আর কি কি করেছে!
কিন্তু ততক্ষণে আরুশি আবার জ্ঞান হারিয়েছে ৷ আসাদের মুখ থেকে তার চরিত্রের খারাপ তকমা হয়তো তাকে শুনতে হলো না এই যাত্রায় বেঁচে গেল ৷ যদি ওর চরিত্র নিয়ে এমন খারাপ কথা কখনো শুনতে তাহলে হয়তো কখনো আসাদের সঙ্গে থাকত না কারণ মেয়েদের চরিত্রটা তার নিজের কাছে অনেক সম্মানের।
আরুশির মুখটা অনেকটা মায়াবী লাগছে না চাইতেও আসাদ আরশির কপালে হাত দিয়ে দেখল যে জ্বর আছে কিনা ৷
গা টা এখনো গরম তারমানে জ্বর ছাড়ে নি তাই আসাদ দেরি না করে ওর মাথায় জলপট্টি দিতে শুরু করলো।
রাত বারোটা,
আরশির দেখভাল করার জন্য আসাদ আরুশির পাশেই ঘুমিয়েছে যদি ওর কোন দরকার পড়ে কিন্তু হঠাৎ ওর বুকের উপর বেশ ভার ভার অনুভব করল কিন্তু তার উৎস কি তা দেখার জন্য যখন চোখ খুলে দেখল তখন দেখল আরুশি তার বুকের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে ৷
আরুশির জ্বর বলে আসাদ আর কিছু বলল না তাই আরূশি কে আবার নিজের জায়গায় শুইয়ে দিল৷
আরোশী ঘুমঘুম কন্ঠ বলে উঠল : আমাকে আপনি সরিয়ে দিলেন কেন সামী? আপনি আমাকে একটু ভালোবাসে না কেন?
এই মেয়ে তুমি জেগে আছো এখনো? আর তোমার জন্য আমার ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে, এখন বলছ তোমাকে আমি কেন ভালোবাসি না! মজা হচ্ছে এত রাতে৷
আরুশি এবার উঠে পড়ল, উঠে আসাদের পাঞ্জাবির কলার ধরে বলতে লাগলো: আপনি আমাকে কেন ভালোবাসেন না বলুন ৷ আমি কি এতটাই খারাপ যে আমাকে ভালোবাসা যায় না।
জামার কলার ছড়, আর এত রাত্রে আমি কোন সিন ক্রিয়েট করতে চাই না ঘুমিয়ে পড়ো।
কেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন না, আমাকে জানতেই হবে আপনি বলুন ৷
দেখো ভালই ভালই বলছি ঘুমিয়ে পড়ো না হলে কিন্তু ভালো হবে না ৷
আসাদ দেখল যে আরুশির গায়ে হালকা হালকা জ্বর আছে অর্থাৎ আরোশী যে জ্বরের ঘোরে এ সমস্ত বলছে তাও বেশ বুঝতে পারল তাই আর রাগ করলোনা, ও নিজেও সমস্যাটা আরুশি কে বলে দিতে চায় তাহলে ওর আর অনুশোচনা হবে না ৷ এটা মনে হবে না যে আরুশিকে জানায়নি ও সমস্ত কিছু।
আসাদ আর কিছু না বলে আরুশিকে কোলে তুলে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল সেখানে থাকা মাদুর পেতে রেলিঙে হেলান দিয়ে আরুশিকে পাশে নিয়ে বলতে লাগলো।
আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে আমি একজনকে খুব ভালবাসতাম তার নাম হলো রুশা ৷ কিন্তু রুশা আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি, সবসময় আমার সঙ্গে ভালোবাসার নাটক করেছে, প্রতারণা করেছে আমার সঙ্গে ৷
সবে আমি কলেজ শেষ করে অফিসে জয়েন করেছি হঠাৎ একদিন অফিসে জব এর জন্য আসল রূশা, তারপরের দিন যত যায় শুরু হতে লাগল আমার ওর প্রতি ভালো লাগা তারপর তা ভালবাসায় পরিনত হয়, মনের কথা জানায় ওকে ৷
হঠাৎ একদিন আমাদের বিয়ের কথা জানায় রূশা, আর আমি যেহেতু ওকে ভালবাসতাম তাই আমার তাতে কোন সমস্যা ছিল না আমিও রাজি হয়ে যায় ৷ কিন্তু বিয়ের দিন আমার বাড়ি থেকে যত গয়না ওকে পাঠানো হয়েছিল তার সঙ্গে যা সমস্ত কিছু জিনিস সব নিয়ে ও ওর আমেরিকায় থাকা বয়ফ্রেন্ডের কাছে পালিয়ে যায়৷ তারপর থেকে শুরু হয় আমার এই পরিবর্তন, কোন কিছুতেই আমার মন নেই ৷ ভালোবাসা জিনিসটাকে ঘৃণা করি, আজও আমি ওকেই ভালোবাসি আর সারা জীবন বেঁসে যাব ৷
সকালবেলা,
আরুশিরর এখন আর জ্বর নেই ৷ তাই আজকে অফিসে যেতে সমস্যা নেই।
আসাদের ঘুম ভাঙতেই দেখল আরুশি হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে ওর চুলগুলো শুকাচ্ছে, সবে গোসল করে এলো আরুশি ৷
এই হেয়ার ড্রায়ার জিনিসটা বড্ড বিচ্ছিরি লাগে আসাদের ৷ও মনে করে এতে গোসল করার পরে যে সৌন্দর্যটা থাকে মেয়েদের তা নষ্ট হয়ে যায় ৷ তাই না পেরে আরুশিকে বলল :
কখনো আর হাতে হেয়ার ড্রায়ার দেখলে আমি এটা ফেলে দিয়ে আসব বলে ওয়াস রুমে ঢুকে গেল।
আসাদের কথা শুনে আরুশি মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।
অফিসে এসেছে দুজনে, আজকে ওদের একটা বড় ডিল সাইন করার আছে।
কোম্পানির মালিকদের সামনে বসে আছে আরুশি আর আসাদ ৷ তবে আজকে কোন শাড়িতে নয় ফর্মাল গেটাপে নিজেকে রেডি করেছে আরোশী ৷কোনভাবেই কেউ থেকে যেন চোখ সরাতে পারছে না এমন। .
আসাদঃ I wait to invest 400 crore.
আরুশিঃBut i want to invest 600 crore.
আসাদঃ I think it is too high.
আরুশি ততক্ষণে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে দিয়েছে শুধু আসাদ এর সাইন করা বাকি ৷
আসাদ দেখল আরোশী কন্ট্রাক্টে সাইন করে দিয়েছে, তাই রেগে গিয়ে আস্তে আস্তে ফিসফিস করে আরুশির কাণে কানে বলল: তুমি আমাকে না বলে সিগনেচার করলে কেন?
আরোশী :বেশি কথা না বাড়িয়ে সাইন করুন৷
আসাদঃ আমি এটা ক্যানসেল করতে চাই৷
আরুশিঃ তা এখন আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়, তাই বেশি আর কথা না বাড়িয়ে নিন সাইন করুন না হলে কাজটা আপনার জন্য ভালো হবে না ৷
আসাদের এই মুহূর্তে আরুশের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তবুও আরুশির কথা শুনে ও সাইন করে দিল ৷
সকলে চলে যেতেই আরুশিকে ঝেঁকেমেকে ধরলো আশাদ ৷
তুমি আমাকে না বলে কি করে সাইন করে দিলে ৷
শুনুন মিস্টার আসাদ, আই থিঙ্ক বিজনেসটা আমি আপনার থেকে বেশ ভালোই বুঝি তাই ট্রাস্ট মি কোন লোকসান হবে না, আর যদি হয় তো তার দায়ভার আমার, আই উইল পে ফর দ্যাট, ডোন্ট ওয়ারী ৷
আসাদঃ আচ্ছা দেখা যাক, যদি কোম্পানির কোন ক্ষতি হয় তো তুমি শেষ আরুশি রহমান৷ তোমাকে আমি ছাড়বো না।
পর্ব ৬
দুইদিন পর,
আরূশির কোমরের ব্যাথা টা এখনো কমেনি বরং যেন আরও বেড়ে গেছে, বুঝতে পারছে না যে আসলে কোমরের হাড়ে চিড় ধরেছে নাকি আরো কিছু ৷ কারণ কোন মেডিকেল চেকআপ ও করেনি, শরীরটাও খুব একটা ভালো লাগছে না ৷ এদিকে অফিসের চাপ তার ওপর আসাদের সমস্ত পাগলামো টর্চার ওকে সহ্য করতে হয় ৷ যতই চেষ্টা করছে সমস্ত কিছু ভালোবাসা দিয়ে ঠিক করার কোনো কিছুই যেন ঠিক হচ্ছে না৷ শরীরটা আর কোন ভাবেই পেরে উঠছে না।
সবে অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছে আসাদ আর আর আরোশী ৷ প্রথম প্রথম দুজনে আলাদা আলাদা গেলেও এখন বাড়ির লোকের জোরাজুরিতে দুজনকে একসাথেই যেতে হয়।
আরোশী সবে ফ্রেশ হয়ে সোফাতে একটু বসেছে, সেখানে বসে যেন কোনভাবে শান্তি পাচ্ছেনা তাই না পেরে গেল একটু ছাদে গিয়ে ফ্রেশ হাওয়া খেয়ে আসবে তাই ৷ যদিও জানে ছাদের সিঁড়ি বেয়ে গেলে কোমরে ব্যথা আরো বাড়বে ৷ বন্ধ ঘরের মধ্যে যেন জীবনটা থেমে গেছে ৷ না পেরে ছাদের দিকে গেল।
আসাদ ঘরে এসে দেখল আরোশী ঘরে নেই যদিওবা ও জানার ইচ্ছা নেই যে আরোশী কোথায় ৷ মেয়েটার থেকে যত দূরে দূরে পারুক ও থাকতে চাই তার কারণ এভাবে যদি সবসময় আরুশির সাথে থাকে তাহলে নির্ঘাত কোন না কোন একদিন মেয়েটার মায়ায় জড়িয়ে যাবে ৷ আর ও নতুন করে কোনো মেয়ের ছলনাযর শিকার হতে চায় না।
অনেকক্ষণ ধরে আসছেনা দেখে ব্যাপারটা নিয়ে একটু আস1দ নড়েচড়ে বসল ৷
প্রথমে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখল আরুশি সেখানে আছে কি? না পেয়ে ছাদের দিকে গেল কারণ আসার সময় ও দেখেছে ওর মায়ের ড্রয়িংরুমে একা।
আরুশি দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে তার কারণ এই বাড়িতে আসাদের মা ছাড়া ওর দেখার মত কেউ নেই যে ওকে ঠিকমত কেয়ার করবে ৷ আসাদের থেকে এসমস্ত কোন কিছুই আশা করে না ও কারণ ও জানে আসাদের থেকে এগুলো আশা করা বেকার৷ আজ নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে আরুশির ৷
মায়ের ভালোবাসার কমতি অনুভূতি করছে আজ ৷ এই প্রথম এতদিন ওর বাবার ভালোবাসা পেয়ে কখনো এমন অনুভূতি টা হয়নি এখনো মনে হচ্ছে ওর মা যদি বেঁচে থাকতো তাহলে কোনদিন হয়ত ওকেকে কষ্ট পেতে দিতো না ৷ মায়ের ভালোবাসা সত্যিই আলাদা যেটা সকলে পায় না আবার যারা পায় অনেক সময় তারা ও তার সম্মান দিতে জানে না।
নীরবে কাঁদতে কাঁদতে আর না পেরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো, হাটু গেড়ে বসে পড়ল ছাদের মেঝেতে৷ কোমরের ব্যথা, আর একটু জ্বর জ্বর লাগছে ওর৷
আসাদের মা কে কখনো এই সমস্ত কিছু বুঝতে দেইনি ও। .
হঠাৎ কারোর পায়ের শব্দে আরোশী চোখটা মুছে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো, উল্টো দিকে বাইরের দিকে ফিরে তাকাল ৷ নিজের কষ্ট কাউকে দেখাতে চায় না ও ৷
মেয়েদেরকে চেনা বড় কঠিন, কষ্টের সময়েও নিজের মুখে হাসি টুকু ধরে রাখতে তারা জানে, এটাই হয়তো তাদের সবথেকে বড় ক্ষমতা।
আসাদ দেখল আরোশী পিছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর কান্নার কোন শব্দ না হলেও আরশির শরীরটা যে কাপছে তা দেখে আসাদ বুঝতে পারছে, হয়তো কান্না থামালেও কাঁপাটা এখনো থামেনি।
বেশ গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞাসা করল :এত রাতে কি করছো এখানে?
কন্ঠ টাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে :এমনি এলাম৷
আসাদ কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছিল তখন ওর সমস্ত ভাবনাকে চুরমার করে দিয়ে আরুশির ফোনে সাদাফের ফোন এলো, ফোনটা আসতেই আসাদের চোখে পড়ল তখন ও ভাবল হয়তো সাদাফ এর সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে বলে আরুশি কাদছে৷
আসাদ রেগে গিয়ে বলল : প্রেমিকের সঙ্গে ঝামেলা করে এখন ঢং কর এখানে কাঁদছ, ভারি নির্লজ্জ মেয়ে তুমি ৷ আসলে তুমি কেন! আমার এখন তো মনে হচ্ছে পৃথিবীর সকল মেয়েই তোমার মত ৷ এতই যখন ছেলেটাকে ভালোবাসো তাহলে চলে যাও আমার জীবন থেকে, আমিও মুক্তি পাই।
আসাদের দিকে ঘুরে :6 মাস কিন্তু এখনো হয়নি, সবে তো আজ দশ দিন বলে সেখান থেকে চলে গেল কারণ আসাদের কথা গুলো বড্ড গায়ে লাগছিল ওর৷ নিজেকে নিয়ে একটা নোংরা বিষয় বানানো কেউ কখনোই পছন্দ করবে না, তেমনি আরোশি ও নয়। .
পরের দিন সকাল বেলা।
সেদিন রাত্রে আরুশির আসাদের উপর প্রচন্ড রাগ হয়ে গিয়েছিলে আর আসাদ এর ও পাল্টা রাগ করার কারণে অন্য ঘরে ঘুমিয়েছিলে, তাই রাত্রে দুজন দুজনের অবস্থাটা কেউ জানতে পারেনি ৷
সকালে আসাদ যখন ওর রুমে আসলো দেখল আরুশি একটা প্লাজো আর একটা অফ শোল্ডার টপ এর উপর কোট পড়েছে, আর লাগেজ প্য1ক করছে৷
আসাদ ভাবল আরোশী হয়তো কালকের ঘটনার জন্য চলে যাচ্ছে।
আসাদের একটু খারাপ লাগছে তার কারণ কথাগুলো আসলে ও না জেনে শুনেই বলেছে সেই কারণে হয়তো৷
কোথায় যাচ্ছ তুমি লাগেজ প্য1ক করে?
আমার বাড়ি যাচ্ছি৷
কেন? (বাঁকা চোখে দেখে)
ইচ্ছা হল তাই৷
কালকের কথা তাহলে বেশ ভালোই গায়ে লেগেছে!
শুধু আমি একা না, আপনিও যাচ্ছেন আমার সঙ্গে৷
তোমার মাথা খারাপ যে আমি তোমার কথা শুনবো আর তোমার সাথে নাচতে নাচতে তোমার বাড়িতে চলে যাব।
তা নয় তো কী? আমি যেমন আপনার কথা শুনি তখন আপনার ও আমার কথা শোনা উচিত।
কখনোই না! তুমি যা বলবে আমি কখনোই তা শুনবো না, আর যাচ্ছো চলে যাও ৷
আপনার লাগেজটা গাড়িতে রয়েছে, তাই চলে আসবেন তাড়াতাড়া, বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ওর লাগেজ নিয়ে ৷
এই মেয়েকে আচ্ছা করে পিটালে তবে আমার শান্তি হয় ৷
পর্ব ৭
বাধ্য হয়েই আসাদকে আসতে হয়েছে, তবে আরূশির কথায় নয় ওর মায়ের কথাই এসেছে ৷
আজ দুদিন হল আসাদ আরুশির বাড়িতে রয়েছে৷
আরুশির নানান ধরনের টর্চার ওকে সহ্য করতে হয়েছে, হয়তো এতদিন ওর সাথে যা যা টর্চার করেছে তার.ই শোধ নিচ্ছে আরুশি ৷
আজকাল তো কোন কিছু খেতেই ওর ভয় ভয় লাগে, এই বূঝি আবার কিছু মিশিয়ে দেয় খাবারে ৷
আগের দিন ওয়াশরুমে শ্যাম্পু দিয়ে দিয়েছিল আর আসাদ ঢুকতে গেলেই পড়ে গেলে ৷ তা দেখে আরুশি হাসতে হাসতে শেষ ৷ আসাদকে ইতিমধ্যে খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে গেছে আরুশি ৷ যাবে কি যাবে না বুঝতে পারছে না, এখানে কোন কিছু করতেও পারছেনা ৷ ঠিক করল বাড়ি গিয়ে আরুশিকে দেখে নেবে।
আরুশিঃ আপনাকে কখন থেকে ডাকছি আপনি খেতে আসছেন না কেন? খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো, আর বাপি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে৷
আমার খিদে নেই৷
খিদে নেই মানে? আলবাদ খিদে আছে, আপনার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ৷চলুন খাবেন ৷
আমার পেটের অবস্থা খুব খারাপ ৷
আপনাকে আমি যখন বলেছি আপনি যাবেন তো যাবেন ৷ বলে আসাদের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।
খাবার টেবিলে বসে আছে আসাদ সামনে অনেক রকমের খাবার সাজানো কিন্তু কোনটা দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছে না ৷ও বুঝতে পেরেছে যে খাবারে কোন গন্ডগোল তো অবশ্যই আছে।
আরুশির বাবা : বাবা তুমি খাচ্ছ না কেন? খেয়ে দেখো ভালোই হয়েছে আরুশি মা নিজের রান্না করেছে৷ মামনির হাতের রান্না একবার খেয়েছি বেশ ভালই রান্না করে, তুমিও খেয়ে দেখো ভালো লাগবে৷
(আরূশির দিকে তাকিয়ে) খাব?
অবশ্যই ৷
আসাদ খেতে শুরু করল প্রথমে একটা বাটিতে হাত দিতেই তার রান্নাটা খেয়ে বেশ ভালই লাগলো কোন খারাপ নেই রান্নাই ৷ ভয়ে ভয়ে দ্বিতীয়বার খেয়ে দেখলে খাবার প্রচন্ড তেতো মুখে দেওয়ার মতো নয়৷ কোনরকমে খেতে পারছে না আসাদ ৷ অপরদিকে আরূশির বাবা বারবার বলেছেন খাওয়ার জন্য তার জন্য নাও করতে পারছেন না ৷ নানান খাবারে নানান ধরনের টেস্ট পাচ্ছে আসাদ ৷ এমন খাবার খাওয়ার সৌভাগ্য যেন আর কোনদিন না হয় ওর, আর এ ধরনের খাবার খেতে ও চায় না ওর জীবনে।
শেষের খাবারটা মুখে দিতেই ওখানে আর বসে থাকা হয় তোর পক্ষে সম্ভব না, খাবারটা এতই ঝাল যে ওর কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে, এরকম অবস্থায় কোনো রকম খাবারটা খেয়ে ঘরে চলে গেল ৷ ওয়াশরুমে গিয়ে বারবার চোখেমুখে জল দিয়ে কুলকুচি করতে লাগলো কিন্তু কোনভাবেই যেন ঝালটা কমছে না ৷
আরোশী মজা নেওয়ার জন্য রুমে গিয়ে দেখল আসাদের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে প্রচন্ড রেগে যে আছে সেটা আরুশি ওকে দেখে বেশ ভালই বুঝতে পারছে ৷ কিন্তু ও তো এটাই চেয়েছিল আসাদকে জব্দ করার ৷
তোমাকে আমি দেখে নেব একবার শুধু বাড়িতে চলো, আর তুমি আমার খাবারে ঝাল কেন মিশালে?
ওখানে অনেক ধরনের খাবারই তো ছিল, আপনি ঝালটা খেলে আমার কি করার! আর আমি তো ঠিকঠাকই রান্না করেছি ৷
একদম বাজে কথা বলবে না আজ তোমার জন্য বলে আরূশিকে চেপে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট দুটো মিশিয়ে দিল, কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলে ৷ ঝাল এখন অনেকটাই কম লাগছে।
আজকে আরুশি আর আসাদ বাড়িতে যাচ্ছে ৷ আসাদ বেশ খুশি কিন্তু আরুশি কোন ভাবেই খুশি না কারণ ও জানে গেলে আসাদ নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করে ওকে জব্দ করবে তাই ওর যেন যেতে মন চাইছে না কিন্তু কিছু করার নেই যেতে তো ওকে হবেই।
আসাদ গাড়ি চালাচ্ছে আর আরুশি জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে ৷
তা ম্যাডাম ভালো লাগছে তো এখন?
একদম চুপ করুন আপনার জন্য আমাকে এত তাড়াতাড়ি চলে আসতে হলো একদম ফালতু কথা বলবেন না ৷
বাড়ি চলো ম্যাডাম সব ভালো লাগবে ৷
আরুশি বাড়ি আসতেই আসাদের মা খুশি হলেই কারণ আজকে অনেকদিন পর আরুশি বাড়ি এসেছে ৷ আসাদ এর মধ্যে এক দুবার বাড়ি আসলেও আরুশির জন্য ওকে থাকতে হয়েছে বেশিরভাগ সময়৷ সেই কদিন আরুশি আসাদকে জ্বালিয়ে মেরেছে।
সকাল সকালই ওরা বাড়ি এসেছে, যাতে বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে অফিসে যেতে পারে৷
আসাদ রেডি হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে, আরুশি ওয়াশরুমে যদিও প্রথমে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আসাদ যেতে দেয়নি।
আরোশী যেই ওয়াশরুমে ঢুকলো আশাদ তখন দরজা বন্ধ করে দিল, ততক্ষণে আরুশির সমস্ত শরীর জলে ভিজে গেছে।
ওয়াশ রুমে ঢুকে আরুশির মনে পড়লো যে ও ড্রেস আনতে ভুলে গেছে, তাই ও আসাদকে হেল্প এর জন্য বললে বাইরে থেকে কোন সারা শব্দ পেল না ৷
আসাদ দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে গেছে, আর যাওয়ার সময় ওর মাকে বলে গেছে যে আরুশি অনেকক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেছে তাই সে ক্ষেত্রে আসাদের মা ও আর আসাদের ঘরে গেলেন না একবারও ৷
আরে এদিকে দরজা খুলতে না পারায় আরুশিকে ওয়াশরূমেই থাকতে হচ্ছে, এভাবে অনেক্ষণ ধরে থাকলে যে জ্বর জ্বর কাশি হবে সেটা ও খুব ভাল করেই জানে, কিন্তু চেঁচালেও ওর গলার শব্দ কারো কান অবধি যাবে না সেটাও ও জানে ৷
পর্ব ৮
এমনিতেই ক’দিন ধরে আরূশির শরীরটা ভালো যাচ্ছে না তার ওপরে আসাদ বাইরে থেকে দরজা দিয়ে চলে গেছে ৷ এখন হেলপ্লেস আরুশি ৷ আসাদ যা করেছে তার আগে নিশ্চয়ই ভালোভাবে ব্যবস্থা করেছে যাতে আরুশি সেখান থেকে বের না হতে পারে সে ধারণাটুকু ওর মাথায় চলে এসেছে ৷ অনেকক্ষণ ধরে মনের ভিতর রাগটা চেপে ধরল ওর আসাদের প্রতি কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ? একঘন্টা! দুঘন্টা!
সময় কেটেই চলেছে তবে ওর কেউ খোঁজ নিতে আসছে না আর না দরজাটা খুলছে।
ভিজে জামা কাপড় পরে থাকায় জলটা আস্তে আস্তে ওর শরীরটা সম্পূর্ণরূপে শুষে নিয়েছে, শরীরের তাপমাত্রাও ধীরে ধীরে কমছে, নিজেকে ক্লান্ত মনে হচ্ছে ওর ৷ ওয়াশ রুমের ফ্লোরে বসে রয়েছে ও, মাথার চুলগুলোও ইতিমধ্যে শুকিয়ে গেছে, গলাটাও বেশ ধরে আসছে, খিদেও পেয়েছে খুব ৷
হঠাৎ করে কানে ফোনের রিংটোনের টুংটাং আওয়াজ ভেসে আসতেই আরোশী এবার নড়েচড়ে উঠলো, তাড়াতাড়ি করে যেই ফোন টা আনার জন্য উঠতে গেল তখনই মনে পড়লো যে দরজাটা বাইরে থেকে লক করা, এতটাও শক্তিশালী ও নয় যে দরজাটা চাইলেই মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে দেবে ৷
ফোনটা বাজতে বাজতে কিছুক্ষণ পর আবার থেমে গেল, তারপর আবার ফোনটা বেজে উঠলো ৷
চেয়েও পারছে না ফোনটা আনতে, আসাদের ওপর এই মুহূর্তে প্রচন্ডরকম রাগ হচ্ছে ওর, এবার না পেরে কেদেই ফেলল আরুশি ৷ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আওয়াজটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে ৷
- “আমাকে ভালোবাসে না সেটা ঠিক আছে তবে এভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এভাবে আটকে রাখা টা একদমই ঠিক না ৷”
আরুশি কেঁদেই চলেছে, আর একটা সময়ে ও জ্ঞান হারালো ৷
কত সময় যে ও ওয়াশরুমে পড়ে ছিল তা ওর মনে নেই ৷
তারপর যখন আরুশির জ্ঞান ফিরে এলো তখন নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করতেই হুড়মুড় করে উঠে পড়ল ৷ ওতো এখানে ছিল না তাহলে কি করে সব কি হলো? এদিক ওদিক তাকিয়ে আসাদ কে চোখে পড়ল ওর ৷ আসাদকে দেখতেই পুরনো সব কথা মনে পড়ে গেল, আজ আসাদ ওকে আটকে না রাখলে হয়তো এমনটা হতো না। .
চোখ থেকে আপনা আপনিই নোনা জল গুলো গড়িয়ে পড়ল অজান্তেই, হয়তো খুব কষ্ট পেয়েছে ও ৷ শাস্তিটা অন্যভাবেও দেয়া যেত, এভাবে নয়।
সামান্য ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠতেই সেখানে আর এক মুহুর্ত দাড়ালোনা আরুশি, তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে দৌড়ে চলে গেল ছাদে।
চারিদিক অন্ধকার, শীতের আগমনে বেশ কুয়াশাও জমেছে চারিদিকে, ঠান্ডায় সারা শরীরের লোম শিউরে উঠেছে, আকাশে আজকে কোন তারা নেই যে তাদের উজ্জ্বলতায় আরু নিজেকে দেখতে পাবে ৷ তাহলে এটাই কি ওর কান্না করার মত পরিবেশ? এখানেই কি মন খুলে কাঁদতে পারবে, সমস্ত দুঃখ জানাতে পারবে এই মধ্যরাতকে।?
যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে বসেই হাউমাউ করে কাঁদছে ও ৷ কি কারণে এখনো ও আসাদের কাছে পড়ে আছে যেখানে সাদাফ ওর জন্য পাগল প্রায়, সাদাফ কোনদিনও মুখে প্রকাশ না করলেও বারবার ওর কাজকর্মে বুঝিয়ে দেয় আরূকে।
আসাদের প্রতি ওর কোন অনুভূতি আছে না নেই সেটাও নিজেও কখনো বুঝতে পারে না আরূশি, হয়তোবা নেই এই বলে নিজেকে বারবার সান্তনা দেয় এভাবেই ৷
মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া ওর শরীর ছুঁয়ে যেতেই বারবার কেঁপে উঠছে আরুশি।
রকিং চেয়ারে বসে দুলছে সাদাফ, চোখের ঘুমটাও আজ উড়ে গেছে প্রিয় মানুষের চিন্তায় ৷ সেই সন্ধ্যে বেলা থেকে আরুশিকে ফোন করার চেষ্টা করছে ও, প্রথমবার ফোনটা গেলেও দ্বিতীয়বার থেকে বারবার বিজি বলছে, এরকম তো কখনো হওয়ার কথা নয় ৷ হুট করেআরুশির শ্বশুরবাড়িতেও যাওয়া যায় না তাই বাড়িতে বসেই আরূশির কলের অপেক্ষা করছে ও ৷
হাতে থাকা ফোনটা অন করে অন্য একটা নাম্বার থেকে আরুশিকে মেসেজ পাঠাতেই মুহূর্তের মধ্যে তা পৌঁছে গেল তবে বিপরীতে থাকা মানুষটার কাছেই মেসেজটা পৌঁছেছে কি সেটা সাদাফের কাছে অজানা ৷
ঘড়ির কাঁটা দুটোর ঘরে, থেকে থেকে টং টং করে দুইবার বেল বাজতেই আসাদের ঘুমটা ভেঙে গেল, ঘুমটা ভেঙে যেতেই বিছানার দিকে নজর গেল ওর ৷ আরুশিকে কোথাও দেখতে পেল না ৷ আসাদের হঠাৎ মনে পড়ল যে আরূশির প্রচন্ড জ্বর ছিল, জ্বর অবস্থায় মেয়েটা কোথায় গেছে সেটা আসাদ জানেনা, এতক্ষণ ধরে আরু ঘুমাচ্ছিল বলে ওউ চোখের পাতা দুটো একটু এক করেছিল, তবে এখন ওকে দেখতে না পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ওকে খোঁজার জন্য ৷
বাড়ির প্রত্যেকটা গেস্টরুমে খুঁজেছে সেখানে পায়নি, তারপরে মাথায় আসলো হয়তো বাড়ি থেকে চলে গেছে, তবুও এত রাত্রে হয়তো যাবে না কথাটা মাথায় আসতেই গুরুত্ব দেয়নি আসাদ কথাটার তাই তাড়াতাড়ি করে বাড়ির গেটের কাছে গেল, সেখানে গিয়ে দেখল দারোয়ান বসে বসে ঝিমোচ্ছে ৷ তার কাছে খোঁজ নিলে উনি জানালেন যে উনি আরুশিকে আজকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখেননি, তবুও যেন কথাটা বিশ্বাস হলো না আসাদের ৷
বাড়ির ভিতরে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই ছাদে যাওয়ার সিঁড়িটার দরজা খোলা দেখে আসাদের আর বুঝতে বাকি রইল না যে হয়তো ছাদেই আছে আরুশি, তাই আর এক মুহূর্তও দেরি না করে ছাদে গিয়ে দেখল ছাদের মাঝখানে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর মাঝে মাঝে শিউরে উঠে আরুশি ৷
আরুশিকে এখন এই অবস্থায় এখানে দেখে মেজাজটাই ওর এখন গরম হয়ে গেল, তারপর নিজেকে কোনরকম সংযত করে নিয়ে ওর কাছে গেল ৷
- “কি করছো তুমি এখানে এত রাতে? “
আসাদের গলার আওয়াজ পেয়ে আরুশি সামনে তাকিয়ে দেখল আসাদ দাঁড়িয়ে রয়েছে,
তাড়াতাড়ি করে উঠে পিছনদিকে ঘুরে সিড়ি দিয়ে নিচের দিকে যেতে গেলেই আসাদ ওর হাতটা ধরে নিল ৷
দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
- ” আমি কিছু জিজ্ঞাসা করেছি তোমায়, এত রাতে তুমি এখানে কি করছ? “
আরুষি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে তবে আসাদ খুব শক্ত করে হাতটা ধরে থাকার জন্য ছাড়াতে পারছে না, উল্টে ওর হাতে আরো আঘাত লাগছে বেশি ৷
- “সবকিছু কি এখন থেকে আপনাকে বলে করতে হবে? “
- “আমি যদি চাই তাহলে হবে, আমাকেই বলে করতে হবে সব ৷”
আরুশি ঝটকা মেরে হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলল, - ” কোন প্রয়োজন নেই। আমি মনে করি আপনার সাথে আমার কোন দরকার থাকতে পারে না তাই যেচে অধিকার ফলাতে আসবেন না, আর আমার এরকম সুসম্পর্ক আপনার সাথে নেই ৷”
বলে চলে যেতে গেলেই আসাদ ওর হাত ধরে ওর কাছে টেনে নিল আরুশিকে ৷ আরুশি এখন আসাদের সাথে মিশে গেছে প্রায়।
আশাদ ধীর কন্ঠে বলল, - “তুমি এখন অসুস্থ জ্বরের ঘোরে অনেক কিছুই বলছ, তা ছাড়া অন্য সময় তুমি নিজে অধিকার ফলাও আর সামান্য কিছু সময়ের জন্য আমি অধিকার ফলালেই দোষ! “
” সামান্য সময় “কথাটা শুনতেই আরো মেজাজটা গরম হয়ে গেল, রেগে গিয়ে আসাদের গলায় জোরে একটা কামড় বসালো আরুশি ৷
আরোশী কামড়ে দিয়েও আসাদের থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলো না, উল্টে আসাদ আগের থেকেও আরো শক্ত করে ধরে রেখেছে ওকে ৷
- “যতই তুমি কামড়ে দাও, আর রক্তারক্তি করো আমি ছাড়ছি না ৷”
বলেই আসাদ আরুশিকে কোলে তুলে নিল ৷
আরুশি তো অবাক, এরপর আবার আসাদের থেকে এরকম ব্যবহার পেয়ে ওর ভাবনা বেড়ে গেল ৷ তাহলে এর পিছনেও নতুন করে কি আবার উদ্দেশ্য আছে কোন?
আরুশিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আসাদ টেবিলের উপর থেকে খাবারটা নিয়ে আসলো।
হঠাৎ দেখল আরুশির ফোনটা জ্বলে উঠলো, ফোনে মেসেজ এসেছে ৷ আরুশি ফোনটা হাতে ধরতেই আসাদ ফট করে ফোনটা কেড়ে নিল নিয়ে ওর পকেটে রেখে দিল ৷
- “এটা কোন ধরণের অভদ্রতামি, আমার ফোনটা নিলেন কেন? “
- “অনেক কাজ বাকি আছে তারপরে ফোন দেব, আগে কাজগুলো সেরে নিই ৷ খাবারটা খেয়ে নাও তাড়াতাড়ি ৷”
- “আমি খাব না আপনি আমার ফোনটা দিন ৷”
- “না খেলে আমিও ফোনটা দেবনা, আর তুমি তো জানো আমি যা বলি তাই করি ৷”
আরোশী চুপচাপ বসে আছে দেখে আসাদ বলল,
- “খাবার টা কি আমাকেই খাইয়ে দিতে হবে নাকি আপনি নিজে খাবেন? “
আরুশি আসাদের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করে দিল৷
আরুশির খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আসাদ ওকে ঘুমাতে বললেই আরুশি বললো,
- “আমার ফোনটা দিন, আমার কল করার আছে ৷”
- “এত রাত্রে তুমি আবার কাকে কল করবে? “
- “আমার বয়ফ্রেন্ডকে কোন সমস্যা! “
কথাটা শুনে আসাদ ধমক দিল,
- ” আর এক মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ো না হয় এক আছাড়ে ফোনটা গুড়ো গুড়ো করে দেব ৷”
আসাদের ধমক আর ফোন ভেঙে দেওয়ার কথা শুনে আরুশি চুপচাপ করে গুটিগুটি হয়ে শুয়ে পরলো ৷ আসাদ ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল ৷
ফোনের প্রত্যেকটা মেসেজ আসাদ পড়ছে আর মাথার ভেতর যেন আগুন জ্বলছে, তবে কিছুক্ষণ পরে আগুনটা নিভে গেল যখন একটা একটা করে প্রত্যেকটা মেসেজ ডিলিট করে দিল ৷ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো ৷
অন্তিম পর্ব
আসাদ ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে সাদাফের করা সমস্ত মেসেজ ডিলিট করে দিল যাতে তা প্রথম বার ওর কাছে পৌঁছালেও দ্বিতীয়বার আর আরুশির কাছে না পৌঁছায়৷
আরোশী বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারলো না একেই শরীরটা ভাল নেই তার ওপরে একটু দুর্বল দুর্বল ফিল করছে তাই বিছানায় শরীরটাকে এলিয়ে দিতেই আর কয়েক সেকেন্ড চোখটা বন্ধ করতেই সারা রাতের ঘুম যেন ওর ওপরে ভর করল তাই ফোন টার কথা দ্বিতীয়বার আর ভাবেনি।
সারারাত সাদাফ নির্ঘুম কাটিয়েছি কেবলমাত্র আরুশির কথা ভেবে, অপেক্ষা করেছে আরুশির এসএমএসের একটা রিপ্লাই এর জন্য ৷ নির্জনতার মাঝেও ও নির্ঘুম ও তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল তা হয়তো জানে কেবল ঘরের রকিং চেয়ার আর চার দেয়ালে বন্দী সেই ঘরটা ৷ কেউ কথা রাখেনি তার।
সিদ্ধান্ত নিলো কালকে সকালে আরূশির সঙ্গে দেখা করবে ও।
মেসেজগুলো ডিলিট করে আসাদ ভাবল কালকে ও আরুশিকে জানাবে যে ও আরূশি কে ভালোবাসতে শুরু করেছে আর ওর সঙ্গে সারাটা জীবন কাটাতে চাই।
আসলে আসাদ যতই অস্বীকার করুক তবুও এই কদিনে আরুশির সংস্পর্শে এসে আরূশির প্রতি সামান্য কিছুটা হলেও দুর্বল হয়ে পড়েছিল তবে যখন আরুশির বাড়িতে গেল তখন আরুশিকে নিজের অত্যন্ত কাছে থেকে দেখেছে আর নিজের সঙ্গে মেলানো চেষ্টা করেছে বারবার ৷ আরূশির থেকে বুঝেছে যে কারো জন্য কখনো কারো জীবন থেমে থাকে না কখনো।
আসাদ জানে যে আরুশির সঙ্গে ও চুক্তির বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ তবুও তাদের সম্পর্কের মধ্যে ওর ভালোবাসাটা না থাকলেও আরূশির ভালোবাসা তো আছে সেই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে ও এক রাশ ভরসার হাত আরূশির দিকে বাড়াতে চেয়েছে।
আরূশির বাবা আসাদের হাত ধরে যখন কেঁদেছিলেন তখন আসাদের বুকের ভিতর টা যেন সম্পূর্ণ উথালপাতাল হয়ে গিয়েছিল ৷ যখন জানলো যে ছোটবেলা থেকে মায়ের ভালোবাসার অভাব নিয়ে বড় হয়েছে তখন আসাদ আর ফেরাতে পারেনি নিজেকে আরুশিকে ভালোবাসতে ৷
ওদের বিয়ে হয়েছে প্রায় একমাস হলো তবে এতদিন অব্দি আসাদ নিজে থেকে কখনো ওর কেয়ার টা দেখায় নি ৷ আজকে সকালে অফিসে যাওয়ার আগে দরজাটা যখন বন্ধ করে দিয়েছিল তখন ভেবেছিল একরাশ ক্লান্তি নিয়ে যখন অফিস থেকে বাড়ি ফিরবে তারপর যখন ওয়াশরুমের দরজা খুলবে আরুশি হয়তো রাগ করে দুটো থাপ্পর মারবে আর তখন আদর করে ভালোবাসা দুটি হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দেবে কিন্তু তেমনটা আর হলো না ৷
হঠাৎ যখন অফিসে ওদের দুজনের করার বড়ো ডিলটা সাকসেসফুল হয় তখন আসাদের আরুশির কথা মনে পড়তেই মনে হলো যে ওকে আটকে এসেছে ওয়াশরুমে ৷ আরুশির শরীরটা এমনিতেই খারাপ আর তার ওপরে শরীর সম্পূর্ণ ভেজা তাই তাড়াতাড়ি দেরি না করে অফিস থেকে বেরিয়ে এল তারপর দেখল যে অজ্ঞান হয়ে ওখানেই পড়ে রয়েছে আরুশি ৷ কতটা সময় যে আরোশী অজ্ঞান হয়েছিল সেটা আসাদই জানে ৷
আসাদ প্রতিটা সময় ওর পাশে থেকেছে আর সারাটা সময় ওর হাত দুটো ধরে ছিল।
আসাদ কাল থেকে নতুন একটা দিন শুরু করতে চায় আর সেইসাথে সাদাফ নামের তৃতীয় ব্যক্তিকে ওদের জীবন থেকে সরাতে চাই, ৷ চাইলেও হয়তো কখনো তা সম্ভব নয়।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেছে আরুশি, আজকে বেশ ভালো লাগছে ৷ আজকে আর অফিসে যাবে না, সাদাফ এর সঙ্গে দেখা করতে যাবে ৷
- ” কাল থেকে তো সাদাফ একবারও আমাকে ফোন করল না, ওর কি আর আমাকে মনে নেই, আমাকে ভুলে গেছে এই কদিনে! খুব একটা যোগাযোগও করেনি বা কল ও করে নি ৷ আমারও ভুল, আমারই ওকে কল করা উচিত ছিল ৷”
(এই কদিনের ব্যস্ততায় আরুশির আর সাদাফকে ফোন করা হয়ে ওঠেনি ৷ প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে কোন যোগাযোগ নেই, এমন টা খুব কমই আছে যেদিন ওর সাদাফের সঙ্গে কথা হয়নি। )
আসাদ অফিসে চলে গেছে অনেকক্ষণ ৷ আরূশির উঠতে দেরি হয়ে গেছে আজ৷ ওর ভেবে অবাক লাগল যে আসাদ ওকে ডেকে তুললো না, অন্যদিন হলে হয়তো এক বালতি জল ওর মুখে ঢেলে দিত কিন্তু আজকে তার ব্যতিক্রম তার কারণটা আরু বুঝতে পারল না।
ঘড়িতে প্রায় 11:30,
একটা লাল রংয়ের শাড়ি তার সঙ্গে লাল রঙের কাঁচের চুড়ি করেছে যেগুলো সাদাফ ওকে কিনে দিয়েছিল তা পরেছৈ ৷ সাদাব কে ও খুব ভালভাবেই চেনে, আর তার সঙ্গে ওর পছন্দ গুলোও ৷ এতদিনের রাগ- অভিমান যা আছে তা সাদাফের পছন্দের জিনিসগুলো দিয়ে আরোশী ওর রাগ ভাঙাতে পারবে তা ও খুব ভালোই জানে, তাই সাদাফের পছন্দের জিনিস পরেছে সব।
ওয়ারড্রব থেকে পার্সটা বার করতে যাবে তখনই বার হাতে একটা সাদা রঙের খাম আর তার সঙ্গে একটা গোলাপ ফুল রয়েছে দেখে হাত দিয়ে সেটা নিয়ে আরুশি বিছানার উপর বসল ৷ দেখল একটা চিঠি আর গোলাপ ফুল ৷ ফুলটা সতেজ তার থেকে অতি সুন্দর ঘ্রান আসছে ৷ আরুশি ফুলটা পাশে রেখৈ চিঠিটা খুলল,
ডিয়ার সোনা বউ,
আমি তোমার সেই ডেভিল হাসবেন্ড যার কারণে তুমি কালকে এত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে, বিশ্বাস করো আমি চাইনি তুমি অসুস্থ হয়ে পরো, আমি তো সব সময় চেয়েছি তুমি যাতে ভালো থাকো ৷ আমার জন্য তুমি যদি কষ্ট পেয়ে থাকো তাহলে আমি সত্যিই দুঃখিত ৷ তবে পুরনো সব অতীত আমি আর না মনে করে সবকিছুর শুভারাম্ভ ঘটাতে চাইছি, এখন আর কোন ছয় মাসের বৈবাহিক সম্পর্ক নয় সারা জীবনের জন্য তোমার সঙ্গে আমি থাকতে চাই,
নিজের করে রাখতে চাই তোমাকে, নিজের সমস্ত ভালবাসাটাকে তোমার কাছে উজাড় করে দিতে চাই, আমি জানি কথাটা হয়তো তোমরা শুনে বিশ্বাস হচ্ছে না তবে এটা সত্যি ৷ সন্ধ্যা বেলা বাসায় ফিরব তাই একটা নীল রঙের শাড়ি রাখা আছে আমার ওয়াড্রপ এর মাঝে, ওটা পরে সুন্দরভাবে সেজে থেকো, তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
চিঠিটা হাতে নিয়ে আরোশী থর থর করে কাঁপছে৷ এদিকে কি হয়ে গেল আর কেনইবা হলো কিভাবে হলো তা কোন কিছুই জানে না ও ৷ হঠাৎ এভাবে এতটা পরিবর্তন একটা মানুষের মধ্যে কিভাবে হতে পারে ও বুঝতে পারছে না ৷ চিঠিটা পড়ে ও আনন্দিত হবে না খুশি হবে সেটা ও নিজেই জানে না, কিন্তু আসাদের যেমন ওর প্রতি অনুভূতি আছে আরুশির তো তেমন অনুভূতিটা নেই তাহলে আরূশি এখন কি করবে?
ঝিলের ধারে দাঁড়িয়ে আছে সাদাফ আর আরুশি ৷ দুপুরের খা খা রোদে সারা শরীরের রক্ত গুলো যেন আরো উষ্ণ হয়ে বয়ে যাচ্ছে ৷ সম্পূর্ণ শরীরটা যেন নেতিয়ে পরেছে, চারিদিকে নির্জনতার মাঝেও কোন অস্তিত্ব প্রকাশ পাচ্ছে না।
আজ বহুদিন পর আরুশি সাদাফকে দেখছে, আজ যেন এক অন্য এক সাদাফকে দেখছে ও, যাকে আরুশি চেনেনা ৷
চুল গুলো উস্কখুস্ক, গায়ে ঢিলা- ঢালা একটা শার্ট, মুখে দাড়ি গুলোও বেশ বড় হয়েছে, সম্পূর্ণ উস্কোখুস্কো লাগছে দেখতে ৷ এতোটুকু সময়ের মধ্যে একটা মানুষকে এতটা পরিবর্তন সম্ভব?
সাদাফকে যা বলতে এসেছে আরুশি সেটা শোনার জন্য সাদাফ যেমন প্রস্তুত নয় তেমনি আরু নিজেও। আসাদের সঙ্গে মিথ্যে সম্পর্কে নিজেকে আবদ্ধ করেও আসাদের প্রতি কোন অনুভূতি তৌরি হয়নি ওর ৷
আরুশি ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় সাদাফকে কিছু বলতে গেলেই সাদাফ বলতে শুরু করল,
- “এভাবে আর কত! আর কত পরীক্ষা নেবে আল্লাহ আমার ভালোবাসার! কাউকে ভালবাসলে কি সারাজীবন শুধু কষ্টই পেয়ে যেতে হয়, তাহলে এটা শুধুই কি একতরফা ভালোবাসা! জানিনা হয়তোবা তাই।
কাল থেকে অনেক বার কল করেছিলাম ধরিস নি, হয়ত এতটাই বিরক্তিকর মানুষ হয়ে গেছি আমি যে নাম্বারটা ব্ল্যাক লিস্টে ফেলতে হয়েছে তোকে যাতে করে কলটা তুই অব্দি পৌঁছতে না পারে ৷ তারপর অন্য নাম্বার থেকে মোবাইলে এস এম এস পাঠালাম রিপ্লাই দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলি না ৷ মানুষ পরিবর্তনশীল সেটা এতদিন কেবল শুনেছি তবে তা যে বাস্তবে হবে তা যে স্বচক্ষে প্রমাণ পাব সেটা ভাবি নি, হয়তো আমি তোদের দুজনের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে তোকে ভালোবেসে গেছি, তবে এটুকু কখনো ভাবি নি যে দূরে থেকেও এতটা ভালোবাসে ফেলবো তোকে ৷ তোকে আর ফিরে পাবো না হয়তো কিন্তু চিন্তা নেই আমি তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে কখনোই ফিরে যাবো না, আমি চাই তুই সুখে থাকিস ভালো থাক ৷ দ্বিতীয়বার তোদের মাঝে আসবেনা। “
কথাটা বলে সাদাফ এগিয়ে গিয়ে ঝিল পাড়ের দিকে, বসে গেল সেখানেই ৷ সাদাফ তাকিয়ে আছে জলের দিকে, আজ সূর্য টা হয়তো তাড়াতাড়ি অস্ত যাবে ৷ তারও বুঝি আজ মন খারাপ!
আজ আরুশির সাদাফকে অনেক কিছু বলার ছিলো তবে তা হয়তো আর হয়ে উঠবে না ৷
আরুশি বুঝতে পারল ভুলটা ওরই। এভাবে দুটি পুরুষের জীবনে একটি নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এটা ওর অন্যায়। তবে ও কখনো এমনটা চাইনি ৷ ভালোবাসা গুলো বুঝি এমনই হয়! এমন বেদনাময়।
আজ আরুশির সাদাফকে অনেক কিছুই বলার ছিল হয়তো ও নিজেও সাদাফকে খুব বেশী চাই তবে চাইলেই কি আর সব কিছু সব সময় পাওয়া সম্ভব? থেকে যায় কিছু হাতছানি।
চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে আরুশির৷
সাদাফের দেওয়া কাচের চুড়ি থেকে একটা কাচের চুড়ি খুলে সেই বসার জাইগার ওপর রেখে দিলো যেখানটায় দুজনের বহুবার সাক্ষাৎ হয়েছে এমনকি আজও দেখা করতে এসেছে যেখানে ৷ আর চুড়িগুলো না হয় সাদাফের স্মৃতি হয়েই থাক ৷
একবার সাদাফের দিকে চেয়ে দ্বিতীয়বার আর ফিরে চাইলো না আরুশি সেদিকে ৷ চলে গেল এক নাম না জানা কোন এক পথে যেখানে নেই কোন ত্রিকোণ প্রেম আর নেই কোন সম্পর্কের দায়বদ্ধতার জটিলতা ৷ হয়তো আর ফিরে পাবোনা কাউকে, কখন নিজের প্রিয় মানুষটাকে বলা হবে না যে ভালোবাসি, দেখাতে পারবে না তার প্রতি ভালোবাসা।
এমন গন্তব্যের দিকে পা বাড়ালো আরোশী যা হয়তো শীতের ধোঁয়াশার মাঝে এক সাদা কালোর আবছা স্মৃতি ৷
লেখা – সুরাইয়া আয়াত
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “অদ্ভুত প্রেমানুভূতি – দুই প্রেমিকের এক নাইকা” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)