লেডি বাইকার (১ম খণ্ড) – একজন বাইকারের গল্প: কিছু সময়ের মধ্যেই কল্প এসে যায়। কল্পকে দেখেই প্রিয়র ঘুমে ঢুলুমুলু চোখটা বড়বড় হয়ে যায়। পুরা গোলাপি রানী লাগছে কল্পকে। গোলাপি কামিজ গোলাপি চুরিদা গোলাপি ওড়না।
পর্ব ১
একটা খালি ক্লাস রুমে দাড়িয়ে আছি। শুধু দাড়িয়ে নেই। পুরো থ মেরে দাড়িয়ে। ভার্সিটিতে যার ভয়ে সবাই একশো হাত দূরে থাকার চেষ্টা করে আজ তাকেই কেউ এইভাবে ঘায়েল করলো। হাউ। সাহস এর প্রশ্ন তোলায় বোকামি। শুধু সাহস না বরং সাংঘাতিক সাহস। যে সে মেয়ের দ্বারা এ কাজ অসম্ভব আর আমার সাথে তো প্রশ্নই আসে না তাহলে কে সে।
কিছুক্ষন আগে….
আজ ভার্সিটিতে নবীন বরন উৎসব। আসতে লেট হওয়ায় জলদি জলদি সিড়ি দিয়ে উঠে পাচ তলায় যাচ্ছিলাম। পাচ তলায় হল রুম যেখানে নবীন বরন উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। হঠাৎই চার তলায় উঠতেই হাতে টান পড়ে। তারাহুরার ভিতর এমন কিছুতে মাথাটা ফাকা লাগছে।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ আমার চোখে একটা কাপড় বেধে দেয়। আমি কিছু বলার আগেই সে এমন কিছু করলো জাস্ট ভাবনার বাইরে। কিন্তু মেয়েটা আমার এতো কাছে যে কিছু করবো সেটাও বলতে পারছি না। মেয়েটার করা কাজে মেজাজ এবার সপ্তমে। চোখ থেকে কাপড়টা খুলে সামনে তাকিয়ে দেখি পুরো রুমটায় ফাকা। এমনকি রুমের আশেপাশেও কেউ নাই। গলায় হাত বুলাই বুলাইতে মেয়েটার সাহসটা বিশ্লেষন করছিলাম। কতোটা সাহস আর বেহায়া হলে একটা মেয়ে একটা ছেলেকে চুমু দিতে পারে তাও এমন ভাবে।
‘হঠাৎ ফোন টোনে ধ্যান ভাঙে আমার কোনো মেয়ে আমাকে স্পর্শ করছে ভেবেই রাগে গা রি রি করছে। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে~
~ আরে প্রিয় কই তুই। অনুষ্ঠান শুরু প্রিন্সিপাল খুজছে তোকে। আজ ও লেট তোর। আছিস কই বল তো।
~ রাখ চলে এসেছি।
ফোনটা কেটেই নিজেকে স্বাভাবিক করে হল রুমের উদ্দেশ্য হাটা শুরু করলাম,
হল রুমে গিয়ে সামনে আয়ানের পাশের চেয়ারটায় গিয়ে বসে পড়লাম। প্রিন্সিপাল বক্তিতা দিচ্ছেন।
~ কি রে এতো লেট হলো কেনো। (ফিসফিসিয়ে)
~ তোর বউ রে নিয়ে বাসরে ছিলাম বুঝোস নাই তাই লেট হইছে। (রেগে)
~ আরে আস্তে। এতো রেগে আছিস কেন। ফোনেও কন্ঠটা গম্ভীর লাগলো।
~ আয়ান
~ ওকে ওকে সরি সরি। পরে বলিস।
~ নিশাত আয়রা কাম। (সামনে ডেকে)
~ আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই।
(সবাই জোড়ে উত্তর দেয়)
~ তোমরা অনেকেই নিশাত কে চিনো আবার অনেকেই চিনো না। বেশির ভাগই চিনো কজ ভার্সিটি নেত্রিকে চিনতে ভুল হওয়ার কথা না। শুধু নেত্রিই না ভার্সিটি টপার।
‘প্রিয় মেয়েটিকে দেখে ভাবতেছে ~মেয়েটি যথেষ্ট স্মার্ট। সুন্দরি। মাশাআল্লাহ কিন্তু কথা এমন একটা সাদা সিদা থ্রি~পিস পরা মেয়ে এতো নম্র সে কি ভাবে নেত্রি হয়। তার দ্বারা টপার হওয়া সম্ভব কিন্তু নেত্রি।
কলা পাতা কালার এন্ড ব্লু মিক্সড থ্রি~পিস। ওড়নাটা এক পার্ট করে নেওয়া সিথি কেটে দু পাশ থেকে স্ট্রেট করা চুল গুলা দু পাশে দেওয়া কানে ছোট কানের দুল এক হাতে লেডিস ওয়াস আর এক হাতে চিকন চেইন টাইপ ব্রেসলেট। ঠোটে ডিপ রেড লিপিস্টিক চিকন লম্বা নাক পাতলা ঠোট। ফর্সা শরীর। যে কারো হার্টবিট অফ করার জন্য এনাফ।
এতোকিছুর মাঝেও মেয়েটার মুখে নেত্রি ভাবটা প্রিয় ঠিক পাচ্ছে না।
~ প্রিয় কাম এখানে আসো (প্রিন্সিপালের ডাকে ঘোর কাটে)
মিট, নিশাত আয়রা তোমার আগে এই ছিলো ভার্সিটি পলিটিক্যাল লিডার ভার্সিটি টপার ও এন্ড নিশাত মিট। প্রিয় মাহবুব, তোমার পরে প্রিয়ই এখন ভার্সিটি লিডার এন্ড টপার।
~ হাই আই আম নিশাত আয়রা (প্রিয়র দিকে হাত বাড়িয়ে মুখে মিষ্টি হাসি টেনে)
~ হ্যালো আই আম প্রিয় মাহবুব।
তো হ্যালো এভরিওয়ান কথায় আসি। নিশাতের বাবার ট্রান্সফার হওয়ায় ওদের চলে যেতে হয়েছিলো তাই এতোদিন ও ছিলো না এখানে ভর্তি বাতিল করতে চেয়েছিলো কিন্তু যাগ্গে সে অনেক কথা এখন কথা ও আবার চলে এসেছে এখান থেকে স্টাডি কম্পিলিট করবে আই মিন লাস্ট ইয়ারটা আর এখন থেকে নিয়মিত এবং ওর দায়িত্ব গুলো আমি ওকে বুঝিয়ে দিতে চায়। ওরে নিয়ে আমার ভিষন গর্ব হয় কারন আজকাল কার মেয়ে ছেলে প্রেম পিরিতে যেই ভাবে টাইম নষ্ট করছে কিন্তু নিশাত একদম অন্য। পড়াশোনা এবং নিজ দায়িত্বে সে অলওয়েজ এক্টিভ, অতি অল্প সময়ে এবং অল্প বয়সে অনেক কিছু অর্জন করেছে।
ও কাল থেকেই ভার্সিটি জয়েন করবে।
এতোখন তো বললাম নিশাতের কথা। এখন বলি প্রিয়র কথা। অবশ্য ওকে নিয়ে আমার নতুন করে কিছু বলার নাই সেম টাইপ ওফ নিশাত। আমি তো মাঝে মাঝে ভেবেই পায় না দুজনের এতো মিল কিভাবে। নিশাতের মতো করেই দায়িত্ব গুলো পালন করে চলছে প্রিয়, আর নিশাত ঠিক যে ভাবে র’্যাগ মুক্ত রেখেছিলে যেটার জন্য আমাদের ভার্সিটির বেশ সুনাম ও ছিলো প্রিয় সেটা ধরে রাখছে।
এখন থেকে দায়িত্ব গুলো দুজনেরই।
এরপর সব স্যার রাও একে একে বক্তিতা দেন। নাচ গান, তারপর সবাই কে ফুল দিয়ে বরন করে নেওয়া হয়।
অবশেষে নবীন বরন উৎসব শেষে সবাই চলে যায়।
বাসায় এসে প্রিয় সকালের ঘটনাটা খুব ভালোভাবে ভাবতে থাকে। কোনো মেয়ে ওর গলায় চুমু দিছে এটা যেনো ও মানতেই পারছে না। যেখানে ও এখনো কোনো রিলেশনে গেলো না সেখানে অন্য একটা আননোন কেউ ওরে টাচ করলো।
আজ সারাদিন ব্যস্ত থাকায় বেডে গা দিতেই ঘুমে তলিয়ে গেলো প্রিয়।
পরদিন।
~ হ্যালো
~ বল
~ কই তুই
~ ক্যাম্পাসে এখন আবার কই থাকবো,
~ কিহহ তুই ক্যাম্পাসে থাকলে আমি কোথায়।
~ আয়ান প্লিজ মজা করিস না। আমি ক্যাম্পাস লাইব্রেরিতে। আর রিকোয়েস্ট তোর কাছে এখন এখানে আসিস না।
আয়ান কোনো কথা না বলে ফোন কেটে লাইব্রেরির উদ্দেশ্য পা বাড়ায়
~ কি হইছে তোর বল তে। ভার্সিটি এসে ক্লাস বাদ দিয়ে এখানে বসে আছিস। কাল থেকে তোর মন খারাপ হয়েছে কি বলতো আমারে।
(চেয়ার টেনে প্রিয়র পাশে বসতে বসতে)
~ কিছু না। (মাথা নিচু করে ফোন টিপতে টিপতে)
~ তাহলে এমন করে আছিস কেনো। বল না।
~ তোকে না আসতে নিষেধ করলাম।
~ আজ থেকে ওই নিশাত নামের মেয়েটা ক্লাস শুরু করবে (কথা ঘুরিয়ে)
~ তো
~ হুয়াট তো ইয়ার। তোকে তো এখন থেকে আর বেশি জোড় দিয়ে পড়তে হবে। মেয়েটা যদি তোকে টপকে যায়।
~ ওকে যা এই দায়িত্বটা তোকে দিলাম। এবার টপার তুই হয়ে দেখা। (মাথা তুলে আয়ানের দিকে তাকিয়ে)
~ ত্যারা কোথাকার। থাক তুই আমি ক্লাসে গেলাম। ইচ্ছা হইলে আয় নইতো পড়ে থাক এখানে।
আয়ান চলে গেলে প্রিয় ও সাথে সাথে ওর পিছু পিছু ক্লাসে যায়।
পর্ব ২
ক্লাসে।
ওই আয়ান
~ হুম
~ এই মেয়ে কি আমাদের ডিপার্টমেন্ট।
~ দেখতেই তো পাচ্ছিস আবার জিগাস ক্যা। (বিরক্তি নিয়ে)
~
‘ক্লাস শেষ হওয়ার মিনিট পাচেক আগে স্যার কে বলে মেয়েটা বেড়িয়ে গেলো। আমি আর আয়ান ক্লাস শেষ করে লাইব্রেরিতে গিয়ে বসলাম। আমি বুক সেল্ফ থেকে বই নিতে উঠছি আর আয়ানের খুদা লাগায় ও খাইতে গেলো। বুক সেল্ফ থেকে বই নেওয়ার সময় হঠাৎ কেও এসে আমার চোখ ধরলো আমি হাত দিয়ে ছাড়ানোর সময় সে আমার হাত ধরে হাতের ভিতর একটা চিরকুট দিলো, আমি বুঝতে চেষ্টা করছি এটা মেয়ে নাকি ছেলে। লাইব্রেরি তাই কোনো সিন্ক্রেট করতেও পারছি না। লোকটা আমার গলার কাছে গিয়ে মুখ নেয় যার দরুন তার নিশ্বাস স্পষ্ট আমার গলায় পাচ্ছি। সে আবার আমার গলায় গভীর একটা চুমু দিতেই আমি চিৎকার করতেই লাইব্রেরি ম্যাম
~ কিপ সাইলেন্ট
প্রিয় রাগে গজগজ করতে করতে ভর্সিটির পেছন সাইডে চলে গেলো।
~ ভাই ডেকেছিলেন। (প্রিয়র কিছু চ্যালা প্যালা)
~ কাল প্রতি ক্লাসে যাবো।
~ মানে কেনো ভাই।
~ নিউ স্টুডেন্টদের সাথে পরিচিত হতে আবার কেনো।
~ ওহ ওকে ভাই,
~ ঠিক আছে যা তুই। আয়ান ক্যান্টিনে আছে একটু পাঠিয়ে দে।
~ জ্বি ভাই।
~ কি রে এইভাবে পায়চারি করছিস ক্যান।
~
~ এভাবে দেখস ক্যা।
~ আমার না তোকে সন্দেহ হচ্ছে। কারন আমার সাথে যখনই এমন হয় তখন তুই থাকিস না আমার সাথে।
~ তোর সাথে কি হয় আমার অনুপস্থিতিতে (ভ্রু কুচকে)
নবীন বরন থেকে আজকের সব ঘটনা খুলে বলে আয়ান কে।
~
~ হাসতেছস ক্যা
~ প্রিয় রিয়েলি। ভাই কোনো মেয়ে তোরে কিস ও মাই গড। জাস্ট বিনোদন বিলিভ মি
~ দূর হ এখান থেকে এমনিতেই মেজাজ গরম তুই রাগাস না আর।
~ ওকে ওকে তোর হাতে কি ওটা।
আয়ানের কথায় প্রিয়র খেয়াল আসে লোকটা ওর হাতে চিরকুট দিয়ে গেছে
এতো হাইপার হচ্ছো কেন এখনও তে কিছুই করিনি জাস্ট কিস তাও নেক এ। কি করবো বলো তো তোমার সবকিছু কেমন যেনো মাদকতায় ঘেরা। নেশা লেগে যায় আমার আর গলার ওই তিলটা যেটা আমার মনে দাগ কেটে গেছে ওটা ছুতে না পারলে যে আমার দিনই কাটবে না।
চিরকুট টা পড়েই প্রিয় ছুড়ে ফেলে দেয়।
~ ওহ কোথাকার কে। সামনে আসার সাহস নাই চোখ ধরে চুমু খেতে আসে। ঘৃনায় ইচ্ছা করছে গলার তিলটায় উঠায় ফেলি। কেটে ফেলতে ইচ্ছা করছে ওই জায়গা টুকু
~ রিলেক্স প্রিয়। এতো রাগছিস কে,
~ রাগবো না।? তোর সাথে এমন হলে তুই কি করতি। ইউ নো না। আই লাভ। কল্প
~ আমি তো চেপে ধরে ঠোটে চুমু দিতাম। ভাই ওরে তুই পাবি বলে কি তোর মনে হয়। আজ দুবছরে যোগাযোগই করতে পারলি না।
~
~ হ্যালো প্রিয়।
মেয়েলি কন্ঠ পেয়ে প্রিয়। আয়ান সেদিকে তাকায়।
~ হাই আমি আয়ান প্রিয়র
~ বেস্ট ফ্রেন্ড তাই তো (মুচকি হেসে)
~ হ্যা। তোমার নামটা কি জানি।
~ নিশাত আয়রা।
~ অনেক মিষ্টি নাম। তবে অনেক বড় একটু শর্টকাট করা যায় না।
~ সবাই নিশু বলে ডাকে (হেসে দিয়ে)
~ ওহ ওকে নিশু তা কেমন আছো।
~ আলহামদুলিল্লাহ। তো ক্যাম্পাস ক্রাস। কথা বলতেছো না যে।
(ক্যাম্পাস ক্রাশ কথাটা শুনে প্রিয় নিশাত এর দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়)
একচুয়ালি সবার মুখে তাদের ক্রাশের কথা শুনতে শুনতে অস্থির। পরে জানতে পারি সেটা আর কেউ না তুমিই।
(, প্রিয় কিছু না বলে ঘুরে দাড়ায়)
~ উনি কি মেয়েদের সাথে কথা বলে না। গফ এর নিষেধ বোধই তাই না।
~ নাহ তেমন ন
~ আপনি একটু বেশি কথা বলেন মিস নিশাত।
~ আই আম সরি। (মাথা নিচু করে)
~ প্রিয় তোর রাগ তুই অন্য কাউকে কেনো দেখাচ্ছিস।
~ সরি। থাক তোরা আমি বাসায় যাচ্ছি।
~ নিশু কিছু মনে করো না আসলে রেগে ছিলো তো একটু তাই
~ হুম বুঝছি সমস্যা নাই। চলুন বাসায় যাবা না।
~ হুম চলো।
পর্ব ৩
হ্যালো প্রিয়।
~ হুম বল
~ কি রে কই তুই।
~ ভার্সিটির সামনে। তুই কই।
~ আরে মামা জলদি আই। ভার্সিটিতে মারামারি শুরু হয়ে গেছে।
~ মানে। কে কাদের কি দিয়ে কি। কই বল আমি আসতেছি।
~ ক্যান্টিনে, জলদি আয়।
এই যে মিস্টার প্রিয় মাহমুদ। আপনি থাকতেও ভার্সিটিতে মেয়েদের নিশ্চয়তা এতো কম। হাউ।
~ কি হয়েছে। কি করেছে ও।
~ ও কি করেছে সেটা ওরে জিগ্যেস করুন। আর এই যে তোরে বলতেছি। এবার ফাস্ট টাইম তাই বেচে গেলি নেক্সট টাইম হিসাব করে কদম ফেলবি।
ছেলেটা কে থ্রেট দিয়ে প্রিয়র পাশ কাটিয়ে হনহন করে বেড়িয়ে যায় নিশাত।
~ আয়ান কি হয়েছে কি করেছে ও।
~ একটা মেয়েরে ডিস্টার্ব করছে নাকি। মেয়েটা আবার নিশাত রে কম্পলেইন জাইনাছে।
~ নাম কি তোর। কোন ইয়ার কোন সাবজেক্ট।
~ অরুন। সেকেন্ড ইয়ার। ম্যানেজমেন্ট।
~ বাহ ভালো তো। বাট কাজটা কি ঠিক করলি। তোর সাহসে আমি অবাক। আমার ক্যাম্পাসে থেকে এমন সাহস দেখানো ঠিক হইলো না তোর। আয়ান যে মেয়েটার সাথে বেয়াদপি করছে মেয়েটাকে ডাক।
~ হুম।
~প্রিয় এই যে মেয়েটা।
~ নাম কি তোমার।
~ জুথি (মাথা নিচু করে)
~ কোন ইয়ার। কোন সাবজেক্ট
~ সেকেন্ড ইয়ার, ম্যানেজমেন্ট।
~ ওহ দুইটাই সেম। তা অরুন কি করেছে তোমার সাথে।
~ মাল বলে বিভিন্ন খারাপ কথা বলছিলো।
~ অরুন ঠিক বলছে ও।
~ (অরুন মাথা নিচু করে আছে)
~ ছি ভাই। এতো কষ্ট করে পড়াশোনা করে কি করবি বল তো, মেয়েদেরকে রেসপেক্ট করা মতো ম্যানার্স টুকু নাই।
~ সরি ভাই আর হবে না।
~ মাপ চা জুথির কাছে।
~ সরি জুথি। এবার কার মতো মাপ করে দাও আর হবে না।
~ হুম।
~ আচ্ছা অরুন যা তুই। আর হ্যা নেক্সট টাইম এই ভুল করার কথা চিন্তাও করিস না তাহলে এই ভার্সিটিতে তোকে আর পাবি না।
~ জ্বি ভাই,
~ জুথি তুমিও যাও। ও হ্যা শুনো ভদ্রভাবে ভদ্র পোশাকে থাকলে আমার মনে হয়না ছেলেরা ওতো সাহস পাবে, কথা বড় ভাই হিসেবে নিও। নেক্সট টাইম এমন ড্রেসআপ আর আশা করবো না। আসতে পারো।
,
,
ভাই আপনি আসলেও জিনিয়াস।
~ কেনো রে তোর এটা মনে হলো।
~ নিশাত আপু তো মেরে টেরে এক কাহিনি। আপনি কথা বলেই সব মিটগুট করে ফেললেন।
~ সব সময় চিল্লা পাল্লা মারামারি করেই কি সব সমাধান হয়। অর্নব তোর ক্লাস নাই যা ক্লাসে যা।
~ আচ্ছা ভাই।
~ আয়ান আজ রাতে যাইতে হবে।
~ মামা প্লিজ না। তুই জানিস আমি রাত জাগতে পারি না প্লিজ আমি যাবো না।
~ আজ কতোদিন পর ওকে দেখবো আর তুই কি শুরু করেছিস। কোনো কথা আমি শুনতে চায় না যাবো মানে যাবো ব্যাস।
~ একটা সামান্য মেয়ের এর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিস তুই। আশে পাশে একটু তাকা।
~ কল্পকে তোর সামান্য মেয়ে লাগে। কেমনে বলিস। জাতির ক্রাশ সে আর তোর ভাবি। রেসপেক্ট দে।
~ নিশাত কিন্তু জোশ দেখতে দোস্ত, তুই বললে আমি একটা চান্স নিতে পারি কিন্তু।
~ জুতা দেখছিস পায়ে। মানুষ হ।
~
~ কিছু অর্ডার দে। খেয়ে আসিনি খুদা লাগছে প্রচুর।
~ হুম।
প্রিয় কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে ~
প্রিয় ফোন টিপছিলো কারো কথায় সামনে তাকায়
~ জ্বি বলুন।
~ এখানে বাইরে কোনো কফি হাউসে গিয়ে বসি।
~ সরি। যা বলার এখানেই বলুন।
~ ওকে। আয়ান কই (চেয়ার টেনে বসে)
~ খাবার অর্ডার দিতে গেছে।
~ ওহ। তুমি কি একটু কম কথা বলো।?
~ প্রয়োজন ছাড়া কথা বলার কোনো দরকার আমি দেখি না।
~ হুম। একচুয়ালি সরি বলতে এসেছিলাম তখন কার জন্য। প্লিজ সরি। ক্ষমা করবেন। মাথা ঠিক ছিলো না রাগের মাথায় একটু বেশিই
~ ইটস ওকে বাট মাইন ইট সব কিছুর সমাধান মাথা গরম করে হয় না।
~ আমি রাগটা কন্ট্রোল করতে পারি না।
~ শিখে নিন তাহলে অনেক কিছু জয় করতে পারবেন।
~ হুম রাগ কন্ট্রোলের কিছু টিপস দিয়েন তো।
প্রিয় ভাইয়া প্রিয় ভাইয়া।
(প্রিয় কিছু বলার আগেই কোথা থেকে একটা মেয়ে ছুটে আসে)
~ আরে তিশু আস্তে। হাপিয়ে গেছো এই নাও পানি খাও। (পানি এগিয়ে দিয়ে)
~ এই আপুটি কে প্রিয় ভাইয়া।
~ ও নিশাত আমাদের ডিপার্টমেন্টে নতুন।
~ ওহ হ্যালো আপু। কেমন আছো।
~ আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি কেমন আছো। (হেসে)
~ আমিও খুব ভালো আছি। তুমি অনেক কিউট দেখতে। অনেক না অনেক না অনননননননননননেক, (গাল টিপে দিয়ে)
~ তাই। তুমিও কিন্তু অনেক মিষ্টি।
~ মিষ্টি আর কই আয়ান ভাইয়া তো পাত্তায় দেয় না
~ ইশশশ তুমি কি আয়ান কে পছন্দ করো।
~ হুম জানো। আজ এক বছর পাচ মাস আট দিন ওর পিছে ঘুরছি কোনো পাত্তায় নেই। প্রিয় ভাইয়া তুমি সত্যি করে বলো তো ওর কি গফ আছে।
~ আরেহহ না তিশু। তুমি লেগে থাকো পটে যাবো।
~ ভাইয়া তুমি আগে শুনো তোমার জন্য গুড নিউজ।
~ কি গুড নিউজ তিশু।
~ এই মেয়ে এই তুমি এখানে কেনো যাও ক্লাসে যাও।
~ আয়ান এসেই ধমকাচ্ছিস কেনো মেয়েটা কে। তিশা লাভিং ইউ।
~ প্রিয়
~ রাগ করলে হবে সিরিয়াস ব্রো।
~ আরে আয়ান এতো কিউট একটা মেয়ে তোমারে পছন্দ করে আর তুমি পাত্তায় দিচ্ছো না।
~ নিশু তুমিও। এই মেয়ে এই গেলে না তুমি। পুরো ভার্সিটিতে আমার গফ সেজে আছে। মামা ওর জন্য আজ ও আমি সিঙ্গেল।
~ আচ্ছা বাদ দে। তিশু কি বলতে এসছিলে বলো।
~ ভাইয়া আমি কাল কল্প আপু কে দেখেছি।
~ কি কোথায় (উত্তেজিত হয়ে) সত্যি বলছো তুমি।
~ হ্যা ভাইয়া। হাইওয়ে তে। বাইকসহ কিছু গ্রুপ মিলে সম্ভবত রেসে ছিলো।
~ কল্প কে।
~ আমাদের প্রিয়র ক্রাশ গো নিশু।
~ ক্রাশ?
~ হ্যা। যার জন্য অল ভার্সিটির মেয়েরা পাগল সে কিনা পাগল আরেক জনের জন্য। যে কিনা ওরে চিনেই না।
~ তাই নাকি প্রিয়। তা কন্টাক্ট করার চেষ্টা করো নি ক্রাশের সাথে।
~ মজা নেওয়া একদম পছন্দ না আমার।
কথাটা শেষ করেই ক্যান্টিন থেকে চলে যায় প্রিয়, তিশা ও ভাইয়া ভাইয়া বলে পিছে ছুটতে থাকে।
পর্ব ৪
রাত এগারোটা বেজে পনেরো মিনিট।
~ প্রিয় দুই ঘন্টা এখানে এসে বসে আছি। ঘুম পাচ্ছে আমার ইয়ার। কল্প আসবে না বাসায় ফিরে চল।
~ আমার বিশ্বাস ও আসবে। তিশা বলেছে ও প্রায়ই আসে এখানে।
~ ওই মেয়ে বললো আর তুই বিশ্বাস করলি। আজব আর মানলাম সে প্রায়ই আসে তার মানে কিন্তু এই না যে আজ ও আসবে। তুই এসছিস তোর ক্রাশের জন্য সাথে আমাকে কেনো টেনেছিস বল তো ভালো লাগে না অসহ্য। শান্তি মতে ঘুমাবো একটু তার ও যো নাই।
~ আয়ান সামনে দেখ
~ 😱😲😲😱কল্প।
~ বলেছিলাম নাহ আসবে।
~ মামা চলে গেলো চলে গেলো বাইক ঘুরা।
~ রিলেক্স আয়ান ও লো স্পিডে আছে। সমস্যা নাই।
~ কিন্তু ও তো অলওয়েজ ফুল স্পিডে থাকে।
প্রিয় জানি না বলে বাইক ঘুরিয়ে কল্পর পিছু নেই। কিছুদুর গিয়েই কল্পর বাইক থেমে যায়। আজ কল্পকে একা দেখে প্রিয় একটু অবাক হলে এটা ওর জন্য লাকি চান্স ভেবে নেই। ঠিক কল্পর বাইকের পিছে গিয়েই থেমে যায় প্রিয় আয়ান। প্রিয়দের দাড়াতে দেখেই কল্প এগিয়ে এসে ইশারায় ওদের জিগ্যেস করে ওর পিছে কি চাই।
: কল্প আপু আপনার সাথে একটু কথা ছিলো।
‘কল্প আবার ইশারায় জিগ্যেস করে ওরা কারা।
: আপু আমরা আপনার অনেক বড় ফ্যান আমার ফ্রেন্ড আপনাকে পছন্দ করে (প্রিয়কে দেখিয়ে)
‘আয়ানের কথায় কল্প হেসে ইশারায় পাগল বলে আবার বাইক নিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষন পর ওরা আর কল্পের টিকিটিও পায় না’
: মামা কি হলো এটা। মেয়েটা তো তোকে পাগল বলে চলে গেলো।
: ও আজ একা কেনো আসলো এর আগে তো ওকে কখনো একা দেখিনি।
‘ওদের চোখে আলো পড়তেই ওরা চোখ বন্ধ করে নেই। আস্তে আস্তে চোখ খুলে একদল বাইকার দেখতে পায় ওদের পাশ দিয়ে শাাা করে চলে যায়। ওরা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে এটা তো কল্পর টিম। আর প্রথম বাইকারটা কল্পই।
: দোস্ত ওরা আমাদের দেখে হাসলো মানে আমাদের অপমান করলো। এই কি দেখেছিস এই মেয়ের মধ্যে তুই বলতো। তোর জন্য আজ কিছু মেয়ে আমাদের অপমান করলো ভাবতে পারছিস তুই, মেয়ের কি অভাব নাকি। সামান্য বাইক চালাতে পারে বলে কি মনে করে নিজেদের। ওর পিছু ছাড় দরকার পড়লে আমি তোরে মেয়ে খুজে তাকে বাইক চালানো শিখিয়ে দিবোনে মামা।
: আমার কল্পকেই চায়।
: যা খুশি কর কিন্তু নেক্সট টাইম আমাকে আর টানবি না এর মধ্যে।
‘প্রিয় আর কথা না বলে বাইক স্ট্রাট দেয়। ফুল স্পিড দিয়ে বাইক চালাতে শুরু করতেই আয়ান চিল্লিয়ে উঠে।
: আরে আরে প্রিয় এক্সিডেন্ট হবে আস্তে আস্তে মামা। প্লিজ থামা ভয় করছে আমার এতো জোড়ে কেনো চালাচ্ছিস থামা প্লিজ। আমার ভবিষৎ মামা চান্দের মতো চকচক করছে প্লিজ থামা আমার এতো শীঘ্রই মরার শখ নাই আমার বউ অকালেই বিধবা হবে রে আমার বাচ্চা গুলোও বাপ হারা হবে হায় হায় আমার কিছু হলে মামা ওই বেচারি তিশা ও শেষ। ওরে থামা রে।
‘আয়ানের কথায় প্রিয় হাসে মাত্র স্পিডের কোনো পরিবর্তন হয় না। ফুল স্পীডেই চলতে চলতে এক সময় কল্পদের কে ছাড়িয়ে যায় এটা দেখে আয়ান এবার জোরে হেসে উঠে। কিছুদুর গিয়েই থেমে যায় ওরা। কল্পদের গ্রুপ থেকে একটা মেয়ে
: হেই হিরো কেচ
‘মেয়েটা প্রিয়র দিকে কিছু একটা ছুড়ে দিলে প্রিয় কেচ করে নেই’
: আই লাইক ইউ হ্যান্ডসাম।
‘তারপর হাসতে হাসতে ওরা চলে’
: মামা কি দিলো ওটা।
: সেন্টার ফ্রুট।
: হাউ ফকিন্নি মেয়ে ছেলে। একটা সামান্য সেন্টার ফ্রুট দিয়ে কই। হেই হিরো কেচ। যত্তোসব। চল তো বাইক ঘুরা। তোর মতো হিরো সামান্য এইসব মেয়েদের পিছনে পরে আছিস। আমি নিজেই তোকে দেখে ক্রাশ খায় মেয়ে হলে এতোদিন বিয়ে করে নিতাম।
: খুব বাজে বকিস আয়ান।
: তোর চুলের সিক্রেটটা কিন্তু আমায় আজও বললি না। এতো সিল্কি ওহ তোর চুলের প্রেমে পাগল আমি।
: তোর সমস্যা আছে নাকি আয়ান।
: এভাবে বলতে পারলি তুই আমারে,
: আজ আমার বাসায় চল।
: ইম্পসিবল। তোর মা আমারে দেখলেই খেয়ে ফেলবে। তার ছেলে মেয়েদের পিছনে ছুটে বেড়ায় আবার তিনি সব দোষ আমায় দেয়।
: মেয়েদের মানে (ভ্রু কুচকে)
: মা মামানে মেয়ে মেয়ে। ওই যে কল্প অনলি একজন।
‘প্রিয় আর কিছু না বলে আয়ানকে নামিয়ে বাসায় চলে যায়’
পর্ব ৫
ভার্সিটিতে
প্রিয়
~ জ্বি।
~ প্রিন্সিপাল আমাকে আর তোমায় ডাকছে।
~ কেনো
~ জানি না। পিয়ন কাকু বলে গেলো যায়তে,
~ হুম চলুন।
~ এই এই থামুন।
~ কেনো।
~ তুমি আমায় আপনি আপনি করো কেনো। আমাকে দেখে কি বয়স্ক লাগে নাকি (ভ্রু কুচকে)
~ তা কেনো।
~ তাহলে আপনি করে কেনো বলেন। নাম তো আছে আমার। নাম ধরে ডাকবা এন্ড তুমি বলবা।
~ সেম ইয়ার তো তাহলে তুই বলি। (হালকা হেসে)
~ অসম্ভব না না। তুমি জাস্ট তুমি কোনো তুই টুই না।
~ চলুন লেট হচ্ছে।
‘প্রিয় হালকা হেসে পাশ কেটে চলে যায়। নিশাত মুখ ফুলিয়ে পিছু পিছু আসে।
: আসবো স্যার (প্রিন্সিপালের রুমের সামনে এসে)
: আরে হ্যা প্রিয় আসো আসো।
: জ্বি স্যার কেমন আছেন।
: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো। পড়াশোনা কেমন চলছে।
: ভালো স্যার। (প্রিয়)
: স্যার ডেকেছিল (নিশাত কথা শেষ করার আগেই স্যার থামিয়ে বলা শুরু করে)
: নিশু প্রিয়। আমি চাচ্ছিলাম ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা ট্যুরে যায়তে। তোমরা কি বলো।
: জ্বি স্যার গেলে তো খুব ভালো হয়। প্রতিবারই যাওয়া হয় এবার ও যাবো সমস্যা নাই বরং পোলাপান জানলে খুশিতে লাফাবে।
: স্যার কোথায় যাবো আমরা। (নিশাত)
: বান্দরবান আমার ইচ্ছা। তবে তোমাদের ও মত চাই।
: স্যার স্যার স্যার সাজেক ভ্যালি। (নিশাত)
: নীলাচাল, ডিম পাহার। সাজেক ভ্যালি আরও অনেক জায়গা ঘুরবো তবে গিয়ে সাজেক ভ্যালিতেই উঠবো।
: স্যার কইদিনের ট্যুর।
: ছয়দিন ঘুরে সেদিন রাতেই ফিরবো।
: ওকে স্যার আমরা কবে যাচ্ছি।
: কাল নাইটে যাবো। তোমরা আজ সব ঠিকঠাক করো রেডি হও।
: স্যার এতো জলদি (প্রিয়)
: স্যার স্যার কোনো সমস্যা নাই আমরা কালই যাবো।
: ওকে। তবে তোমাদের জুনিয়র কিছুও যাবে। আর প্রিয় জুনিয়র পনেরো জন মতো আর তোমাদের ও তো পনেরো বিশ জন এক বাচে হবে তো।
: জ্বি স্যার হয়ে যাবে। আমি আর আয়ান স্যার বাইকে যাবো। বাচে জার্নি করতে আমার একটু সমস্যা হয়।
: এতোটা পথ বাইকে যাবা।
: সমস্যা নাই স্যার।
: নিশু ও তো বাদ তাহলে তোমরা বাসে না থাকলে কেমনে হয়।
: স্যার আমাদের ব্যাচ তো থাকছে প্রবলেম হবে না আশা করি। আর স্যার নিশাত থাকছে না মানে।
: ওর ও বাস জার্নি তে সমস্যা। আচ্ছা তাহলে তোমদের আজ ছুটি সবাইকে বলে দাও সব কিছু গোছায়ে রেডি হতে কাল ভার্সিটির সামনে থেকে বের হবো সবাই এক সাথে।
: ওকে স্যার আসছি।
: হুম
‘পরদিন সন্ধ্যায় সকলে একত্র হয় ভার্সিটির সামনে। সকল স্টুডেন্ট টিচাররা সবাই যে যার মতো বসে যায়, প্রিয় আয়ান বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে বাস ছাড়লে তবেই ওরা ছুটবে। এখানে সবাই উপস্থিত থাকলেও নিশাত নাই। নিশাত কে না দেখে প্রিয় প্রিন্সিপাল কে জিগাইলে স্যার বলে চলে আসবে। রাত নয়টায় বাস ছাড়ে। বাস ছাড়ার কিছুক্ষন পর প্রিয় ও বাইক স্ট্রাট দেয়।,
এই লুকে যে কোনো মেয়ে ঘায়েল হতে বাধ্য প্রিয়। লেদার ব্লাক কোট। হোয়াইট টি~শার্ট। হ্যান্ড গ্লাভস। আর ওই সিল্কি চুল গুলো আর তোমার ওই নেক তিলটা আমাকে যে নেশা ধরায়। তুমি কি বুঝো প্রিয়, আচ্ছা তুমি ঠোটে কি দাও। মেয়েদের মতো ওমন গোলাপি কেনো তোমার ঠোটটা। আচ্ছা তুমি এতো কেনো ফর্সা একটু শ্যামবর্ন হইলেও তো চলতো আর এতো এতিথিউড কেনো তোমার হ্যা। মেয়েদেরকে আরো পাগল করার জন্য? এতোটা কিউট না হলেও তো পারতে। তোমার মতোই তোমার বাইকটাতেও আমি ফিদা প্রিয়।
মাঝ রাতের দিকে হালকা চোখে ঘুমের আভাস পায় প্রিয়। কিন্তু বাইক চালানো সময় এই ঘুমের আভাস খুবই সাংঘাতিক।
: এই আয়ান।
: বল ভাই প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।
: আমারো। এর আগে একবার এসেছিলাম না তখন একটা ধাবায় আমরা কিছুক্ষন রেস্ট নিয়েছিলাম মনে আছে তোর।
: হ্যা তো কি।
: ওই ধাবায় গিয়ে এক কাপ কফি খেলে কিন্তু ব্যাপক উপকার হয়। আর বাস তো এখনো আমাদের অনেক পিছে।
: কিন্তু ধাবাটা এখনো এক কিলো দূরে এখানে থেকে আর এতো রাতে কি খোলা থাকবে।
: ওটা সারারাত খোলা তাকে মদন। ভুলে গেছিস তুই।
: তুই আমারে যা তা বলস ক্যা। এতো স্মার্ট একটা ছেলে আমি। না জানি কতো মেয়ের ক্রাশ।
: 😂যদি কখনো কেউ ক্রাশ খায় সেদিনই না জানতে পারবি কতো জন। তবে তিশা মেয়েটা যে কি দেখে পাগল হইছে এইটায় আমি বুঝিনা রে আয়ান।
: ভাব তাইলে। কিছু তো আছেই
: কিছু নাই। অনেক কিছু আছে। তোর ভাগ্যে দেখেছিস।
: হ এতো বড় ভাগ্যে বলেই তো তোরে বন্ধু হিসাবে পাইছি এটাই বলবি তো।
: অফকোর্স আয়ান এটা কিন্তু তোরে মানতে হবে।
: থাম থাম ওই যে ধাবাটা।
‘প্রিয় বাইক থামিয়ে দুজন ধাবায় ঢুকে কফি খেয়ে একটু বসে বাইকের কাছে আসতেই একদল বাইকার ওদের পাশ থেকে খুব জোরে চলে যায় আর অনেক চিৎকার করে।
: মামা মামা মামা ওটা তো কল্পর গ্রুপ। মানে ওরা এখানে। তার মানে পিছে এতোক্ষন ওরাই ছিলো।
: কল্প এখানে কিভাবে। ওরা রাতে বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ঠিক কিন্তু এখন এখানে।
‘একটু দূরে যেতেই কল্পরা থেমে গিয়ে একটা মেয়ে প্রিয়দের উদ্দেশ্য বলে ~হেই বয়েজ কাম কম্পিটিশন উইথ আস~কথাটা বলেই কল্পরা জোরে হাসতে থাকে’
: প্রিয় ওরা আমাদের কে চ্যালেন্জ জানাচ্ছে।
: ওকে এগ্রি, শুরু করা যাক। (মিষ্টি হেসে)
‘প্রিয়র কথাটা শুনে মেয়ে গুলো চুপ হয়ে যায়। সব মেয়ে গুলোই হেলমেট পরিহিতা তাই প্রিয় কাউকেই চিনে না শুধু কল্পকে আর কল্পর বাইকটা পরিচিত। এমন নয় প্রিয় কল্পকে দেখেছে। কল্প যে আজ ও অদেখা তার’মেয়ে গুলো ভাবেনি প্রিয় রাজি হবে।
: কি হলো চলুন শুরু করা যাক।
‘প্রিয়র কথায় ওরা সবাই এক লাইন দিয়ে দাড়িয়ে বাইক স্ট্রাট দেয়।
: প্রিয় ফুল স্পিড দে কল্প তো এগিয়ে গেলো।
: রিলেক্স আয়ান। (বাকা হেসে)
‘প্রিয় কথাটা বলেই বাইকের স্পিড বাড়িয়ে কল্পর পাশাপাশি গিয়ে কল্পকে উদ্দেশ্য করে বলে ~ কল্প’আই লাভ ইউ’আই লাভ ইউ এ লট’ (চিৎকার করে)
প্রিয়র কথায় কল্প থেমে যায় কমতে থাকে ওর বাইকের স্পিড। পিছু থেকে ওর ফ্রেন্ডরা চিৎকার করে কল্পকে যেতে বলে কিন্তু কল্প তো প্রিয়র মুখে ভালোবাসার কথা শুনে জমে গেছে। বুঝতে পারছে না ও এটা কি প্রিয় হঠাৎ বললো তাই এমন হচ্ছে ওর নাকি কোনো ভালোবাসার অনুভুতিতে আটকে গেলো ও। প্রিয় আয়ান হাসতে হাসতে চলে যায়। কল্প এখনো দাড়িয়ে আছে। ওর ফ্রেন্ডরাও এসে দাড়িয়ে যায় ওর কাছে।
: কল্প কি হলো ওরা তো চলে গেলো তুই কেনো দাড়িয়ে গেলি।
: আই লাভ ইউ।
: পাগল হলি কি বকতেছিস (ধাক্কা দিয়ে)
: কি কি। কি হয়েছে।
: তোর কি ভুতে পাইছে। ইমেজটাই খারাপ করে দিলি ওদের কাছে।
‘কল্প আর কিছু না বলে মন খারাপ করে আবার ছুটতে শুরু করে সে তো জানেও না কেনো সে থেমে গেলো।
পর্ব ৬
হোটেলে পৌছে সবাই ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু খেয়ে রুমে চলে যায় রেস্ট নিতে। সব কিছু আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখছিলেন স্যার তাই পৌছে কোনো সমস্যা হয়নি। এক এক রুমে কয়েকজন করে। তবে মেয়ে ছেলে আলাদা। আয়ান। প্রিয়। আর একটা ছোটো ভাই অর্নব। প্রিয়র লেজ বললে চলে। প্রিয়কে প্রচুর ভালোবাসে। সবসময় নিজের কাজের টাইমটুকু বাদে প্রিয়র সাথে থাকারই চেষ্টা করে। এরা তিনজন একসাথে। আর নিশাত নিজের জন্য আলাদা রুম নিছে, কারো সাথে শেয়ারে থাকার অভ্যেস না থাকার দরুনই সে একা।
সকাল দশটায় সবাই কোনো রকম কিছু খেয়ে ঘুরতে বের হয়। সবাই এত্তো খুশি বলার বাইরে। সাজেক এসছে বলে কথা। জায়গাটায় সপ্নের মতো। এখানে যে আকাশ ছোয়া অনুভুতি মিশ্রিত। প্রিন্সিপাল ওনার ওয়াইফ আর ওনাদের দুই বাচ্চাও এসছে। ওনার বাচ্চাদের আর ওয়াইফের খুশিতেই যেনো ওনি খুশিতে গদোগদো। সবাই ব্যাস্ত সবুজের সাথে সাথে পিক তুলতে। আনন্দটা হইতো প্রকাশ করার মতো না।
: এই প্রিয় আয়ান আসো পিকচার তুলবো।
: হ্যা অবশ্যই। চল রে প্রিয়
: আমার অতো শখ করতেছে না।
~হুর শালা এখানে এসেও ঢং করিস না চল তো।
‘প্রিয়কে এক রকম টেনেই নিয়ে যায় আয়ান। নিশাতের তো খুশির অন্ত নেই। মেয়েটা হইতো একটু বেশিই প্রকৃতি প্রেমী। প্রিয়র সাথে খুব ঘেষে ঘেষে পিকচার তুলছে নিশাত। প্রিয়র অসস্তি লাগলেও কিছু বলতে পারছে না পাশেই অনেক লোকজন।
: আয়ান তোরা পিক তোল আমি একটু ওই সাইডে যাচ্ছি
‘কথাটা বলেই প্রিয় একটু দূরে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে। নিশাত নিজের মতো সবটা অনুভব করছে। প্রকৃতির মাঝে নিজেক বিলিয়ে দেওয়ার প্রকট চেষ্টা তার। নিশাত হাত দুইটা মেলে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে সবুজের দিকে মুখ করে। পিছন থেকে প্রিয় নিশাতের এমন কিছু পিকচার কেপ্চার করে নেই নিশাতের অজান্তেই। পিকচার গুলোই চোখ বুলাচ্ছে প্রিয়।
: আর ইউ নো নিশাত। তোমার থেকে দূরে থাকার এক মাত্র কারন কল্প। আই লাইক কল্প। আর তুমি কেমন একটা মায়া। তোমার কাছাকাছি থাকলে তোমার চোখ দুইটা মায়া ছড়ায় যেই মায়ায় আমি ধরা দিতে চায় না তাই তো এতো দূরে থাকার চেষ্টা। তোমার এটিটিউডে কেনো যেনো মনে হয় আমি এই এটিটিউডে অনেক আগে থেকে পরিচিত। তোমার শরীরের স্মেলটা ভীষন পরিচিত লাগে আমার। কে তুমি নিশাত? তুমি কি নিশাত যেটায় সবাই পরিচিত নাকি অন্য কেউ। এতো কাছাকাছি কেনো আসো আমার। অপমান করলেও কেনো গায়ে মাখাও না। এখন যেই তোমাকে দেখছি পরী থেকে কোনো অংশে কম নও কিন্তু। লাল জামাটায় তোমাকে লাল পরী লাগছে।
কথা গুলো মনে মনে ভেবে নিজেই নিজেকে গালি দিতে থাকে প্রিয়।
~ ছি প্রিয় ইউ লাভ কল্প আর এখন এই মেয়েকে নিয়ে ছি ছি তোর কি চরিত্রে সমস্যা আছে নাকি প্রিয় ছি। আই শেম অন ইউ প্রিয় শেম অন ইউ।
কথা গুলো বলতে বলতেই পাশে তিশা এসে দাড়ায়।
~ ও প্রিয় ভাইয়া প্রিয় ভাইয়া প্লিজ একটু আয়ান ভাইয়া কে বলো না আমার সাথে পিক উঠায়তে।
~ এই মেয়ে এক চড় লাগাবো। আমাকে কি তোমার বাপের সম্পত্তি লাগে যে তুমি বললেই আমি তোমার সাথে পিক উঠাবো।
~ বাপের সম্পত্তি কেনো লাগবে তুমি তো আমার সম্পত্তি শুধু।
~ ও আল্লাহ গো রশি ফেলাও এই একটুস খানি মেয়ে বলে কি।
~ আজ বিয়ে হইলে কাল হালি হালি বাচ্চার মা হইবো আর এগুলা কি বলো তুমি আয়ান ভাইয়া।
~ প্রিয় এই মেয়েকে যেতে বল এখুনি এখান থেকে নইতো আমি কি করবো আমি কিন্তু নিজেও জানি না।
‘প্রিয় ওদের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠে’
~ তিশু তুমি যাও এখন ও পরে তোমার সাথে পিক তুলবে শিওর।
~ একটা পিকই তো কি এমন হতো তুললে। এমন ভাব ধরছে যেনো আমি সালমান খানের সাথে পিক তুলতে এসেছি। সালমান খানের সাথে পিক তুলতে গেলেও হইতো আমায় রিফিউজ করতো না বরং উনার এতোদিনের সিঙ্গেল নামটা হইতো এবার ঘুছতো। (যেতে যেতে)
~ কি আইটেম আল্লাহ আমার পিছে লাগায়ছে। পিছে পুরো আগুন লাগিয়ে ছাড়বে।
~ পিছে লাগবে কিনা জানি না তবে হৃদয়ে লাগতে বেশিক্ষন নাই (হাসতে হাসতে)
~ প্রিয়। এমন আইটেম আমি চাই না। আমি তোর মতো শান্ত ছেলেকেই আমার বশে আনতে পারি না আর এই মেয়েকে তো আমি সাত জন্মেই বশ করা তো দূর আমার একটা শব্দ ও মানবে না।
~ সে তোমার কথা শুনতে বাধ্য যখন সে তোমাতে মাতাল।
‘কথাটা শুনেই দুজন পিছনে তাকিয়ে দেখে নিশাত’
~ মানে বুঝলাম না নিশু।
~ মেয়েটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে আয়ান বুঝছো। আর যখন দেখবা তুমি কারো কেয়ারিং আবদারে তার প্রতি বিরক্ত হচ্ছো তখন বুঝে নিবা সে ছাড়া তোমাকে বেশি ভালো কেউ না বাসতে পারবে না রাখতে পারবে।
~ নিশু তুমিও ধুর ভাল্লাগে না।
‘কথাটা বলেই আয়ান চলে যায়’
~ এতোটা কিউট না হইলেও পারতা। আর এতো সেজেছো কেন মেয়েদের পাগল করার জন্য। জুনিয়ার বোন গুলো চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে
‘প্রিয়র পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় নিশাত কথা গুলো বলতে বলতে যায়’প্রিয় ও ভাবেই দাড়িয়ে নিশাতের কথার সারমর্ম খুজতে ব্যস্ত।
হ্যালো এভরিওয়ান। সবাই আছো এখানে।
(প্রিন্সিপালের কথায় সবাই সায় জানায়।)
আর বাকি স্যাররা কোথায়।
~ স্যাররা সবাই একটু ওই সাইডে গেছে (নিশাত)
~ ওকে একজন গিয়ে ওনাদের ডেকে আনো। আমরা এখন ওয়াটারফল দেখতে যাবো। ওকে গাইস।
~ ওকে স্যার (সবাই খুব উৎফলিত হয়ে)
সবাই ওয়াটারফল দেখতে এসছে। ভীষন মজা করে ভিজছে সবাই। দূরে দাড়িয়ে দেখছে নিশাত
~ আরে নিশু তুমি যাবে না। চলো চলো সবাই কতো মজা করছে দেখছো।
~ হুম আয়ান চলো।
‘নিশু ও নামে পানিতে ভিজছে আর আয়ানের সাথে পানি ছিটাছিটি করছে দূর থেকে একজন নিশাতের দুষ্টিমি ভরা সময়টা কেপ্চার করে নেয়। প্রিয় দাড়িয়ে সবার পিকচার তুলছিলো হঠাৎ কিছু মেয়ে এসে প্রিয়কে পানিতে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে সবাই ওর দিকে পানি ছিটায়। প্রিয় মেয়ে গুলোকে চিন্তে পারছে না। কেউই ওর ভার্সিটির না। প্রিয় রেগে মেগে উঠে চলে যায়। সবাই ওইখানটায় অনেক সময় কাটিয়ে হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে লান্স করে রেস্ট করতে নেয়। প্রিয়কে ওখানে না পেয়ে আয়ান কল করলে প্রিয় রুমে চলে এসছে জানায়। কি হয়েছে জিগায়লে প্রিয় কিছু হয়নি বলেই কাটিয়ে দেয়’
পর্ব ৭
লান্স সেরে একটু রেস্ট নিয়ে সবাই বের হয়। ডিম পাহাড়েরউদ্দেশ্য।
মেঘের রাজ্যে ডিম পাহাড়।
ডিম পাহাড়ে যে যার মতো ঘুরতে ব্যস্ত।
আয়ান। প্রিয়। অর্নব। অর্নবের গফ অনু। তিশা। নিশাত। এরা একসাথে দল বেধে ঘুরছে।
~ ভাইরে এখানে যদি একটা ঘর বেধে থাকতে পারতাম।
~ কে নিষেধ করছে।
~ হ্যা তো আয়ান তুমি কিন্তু এখানে একটা ঘর বাধলে খারাপ হয় না আমরা ও তাহলে তোমাদের বাসায় আাসার নামে বেশ ঘুরে যেতে পারবো।
~ ওহ মজা মজা আয়ান ভাইয়া। আমি রাজি তাহলে আমরা এখানেই সেটেল হয়ে আর না ফিরি।
~ আজব। জাস্ট প্রকৃতি দেখে একটা ফিলিংস শেয়ার করলাম আর তোরা। আর এই ছেড়ি তুমি কিসের রাজি হ্যা। আর তুমি আমাদের সাথে কেনো এসছো। এই প্রিয় এইসব বাচ্চা পোলাপান কেনো এনেছিস বল তো।
~ তিশা কিন্তু মোটেও বাচ্চা না আয়ান।
~ নিশু প্লিজ।
~ ওকে ওকে বাদ দাও। ওই পাহাড়ে উঠে আমি কিছু পিক উঠাবো চলো প্লিজ। এই অর্নব অনু তোমরা আসো এতো পিছে কেন।
~ আরে ছাড়ো ওদের। গফ বফ ঘুরতে আইছে একটা ব্যাপার আছে না।
~ হুম হুম ঠিক বলছো। আজ সিঙ্গেল বলে এসব বোঝার বয়স হইলো না গো। এই প্রিয় তুমি না বাইক আনছো।
~ হুম
~ তাহলে আজ রাতে বাইকে ঘুরবো প্লিজ প্লিজ।
~ আর ইউ ম্যাড (বাকা চোখে তাকিয়ে)
~ এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন। আর এমন বলতেছো কেন হ্যা। বাইকেই তো উঠতে চাইছি অন্য কোথাও তো না।
~ হোয়াট মিন্স অন্য কোথাও। আর আমার বাইকে কোনো মেয়ে উঠায় না আর তুমি আমার বাইকে উঠতে পারবা না ফুল স্পিডে চালায়।
প্রিয়র কথায় নিশাত ছোট্ট করে হাসি দেয় কিছু বলে না।
~ প্রিয়। নিশু কিন্তু ঠিক বলছে। রাতে বাইক ট্যুরটা কিন্তু জোস হয়।
~ বাদ দে তো চল।
,
,
তিশা এবার আয়ান কে ধরে বেধে বেশ কিছু পিক তুলেছে একসাথে। তিশার কিছু সিঙ্গেল পিক উঠায় দিচ্ছে আয়ান।
~ আকাশটা যেনো সবুজের কোনে লুকায়িত। সবুজের শেষ প্রান্তটা মেঘেদের দখলে। শেষ প্রান্তে মেঘ সবুজের গভীর মিশ্রন। কোনো কবি এটা দেখলে নিশ্চয় কতো সতো সুন্দর সু ভাষায় কবিতা লিখে ফেলতো, আচ্ছা শেষ প্রান্তে গেলে কি মেঘেদেরকে ছোয়া যাবে? এখানকার বাতাসটাতেও যেনো এক অদ্ভুত অনুভুতির সৃষ্টি করে। নিশ্বাসে যেনো সবুজের ভালোবাসা পাওয়া যায়। সত্যিই কিন্তু এখানে থেকে যেতে পারলে বেশ হতো। এই স্নিগ্ধতার মাঝে ছোট্ট একটা কুটির। তার মাঝে এক জোড়া ভালোবাসা। ইশশশশশ। কতো সুন্দর এ ভুবন অথচ আমরা এই জীবনে অতিষ্ট।
~ প্রকৃতিটাকে ফিল করছেন ?
(এতো সেতো ভাবনার মাঝেই পিছে কারো কথায় ধ্যান ভাঙে নিশাতের)
~ ওহ তুমি।
~ হুম। প্রকৃতিকে ফিল করছেন?
~ তেমনই। আসলে সবুজ প্রকৃতিটা আমার জন্য নেশার মতো। দেখলে মাথা ঠিক থাকে না। স্তব্ধ এই পরিবেশটা জেনো একটা জান্নাত।
বাতাসেরাও গায়ে সুখ মাখিয়ে যায়। আয়ান কিন্তু ঠিকই বলছে। ছোট্ট একটা কুটির বানিয়ে কিন্তু থেকে গেলে মন্দ হতো না।
~একটা জায়গায় নিয়ে যাবো যাবেন?
~ কোথায়
~ চলুন। সারপ্রাইজ।
~ ওকে চলো। আচ্ছা তুমি আমায় আপনি কেনো বলো। তুমি বলতে পারো না। আপনিটা কেমন জানি শোনায়
~ সমস্যা নাই একটা বললেই হলো।
~ না হলো না। তুমিই বলবা। আপনিতে ওতো সতো সম্মান আমার চায় না।
~ চেষ্টা করবো।
~ চেষ্টার শেষে জেনো তুমিটায় শুনতে পায়।
~ শিওর বলতে পারছি না।
~ ওরা তো ওখানে থেকে গেলো আমরা কোথায় যাচ্ছি।
~ বলে দিলে সারপ্রাইজ কেমনে হয়।
~ এই ওয়েট ওয়েট। তুমি আমায় কোথাও নিয়ে গিয়ে মারার প্লান করছো না তো,
~ সারপ্রাইজ তো তাই শিওর বলতে পারছি না।
~ আমি জানি এতো খারাপ ও নও তুমি।
~ এতো মানে বলতে। তার মানে কি একটু একটু খারাপ।
~ তা একটু বটে।
~ হইতো।
~ আচ্ছা আমরা তো ফ্রেন্ড হইতে পারি তাই না।
~ চেষ্টা করা যায়।
~ এতো বাকা করে কেনো কথা বলো তুমি প্রিয়।
~ থামো।
~ কেনো কি হলো। চলে এসছি।
~ চোখ বন্ধ করো।
~ এই এই একদম না। তুমি সত্যিই আমায় মারার প্লান করো নি তো। প্লিজ প্রিয় আর যায় করো ধাক্কা টাক্কা মেরে দিয়ো না। এখনো জীবনের সবটায় বাকি। একটা প্রেম হবে বিয়ে হবে বাচ্চা হবে নাতি পুতি হবে।
~ স্টপ। এতো বাচাল কেনো। মারবো না জাস্ট চোখটা অফ করো।
প্রিয়র ধমকে চোখটা বন্ধ করে নেয় নিশাত। তারপর আস্তে আস্তে প্রিয়র কথা মতো আগাতে থাকে।
~ স্টপ স্টপ। এবার চোখ খুলো।
নিশাত আস্তে আস্তে চোখটা খুলে অবাকের সপ্তমে। খুশিতে জেনো এবার কেদেই দেয়।
~ কেমন লাগলো সারপ্রাইজটা।
~ জাস্ট অছাম প্রিয়। আমি ভাবতেও পারিনি এমন কিছু।
নিশাত খুশিতে লাফাতে থাকে। চারপাশে সবুজে ঘেরা। রাস্তার পাশে একটা উচু পাহাড়ের উপর ছোট্ট একটা কুটির। নিশাত দৌড়ে পাহাড়ের উপরে কুটিরটার কাছে যায়। প্রিয় ও নিশাতের পিছু পিছু যায়। খুশিতে নিশাত প্রিয়কে জড়িয়ে ধরে।
~ থেংক ইউ থেংক ইউ। থেংক ইউ সো মাচ প্রিয়। সারপ্রাইজটা কত্তো দারুন ছিলো তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না। থেংক ইউ সো মাচ।
~ হুম কি করছেন ছাড়ুন।
~ ওহ সরি সরি। একচুয়ালি খুশিতে সরি প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।
~ ইটস ওকে।
~ দিস ইজ আমেজিং।
~ চলুন ফেরা যাক ওরা খুজবে আবার।
~ আরে কি বলছো এখনি যাবো মানে কি একটু থাকি না প্লিজ।
~ ওকে বাট একটুই বেশি না।
~ ওকে ওকে।
নিশাত সবটা ঘুরে ঘুরে দেখছে আর প্রিয় নিশাতকে দেখছে।
~ এই সামান্য জিনিষে এতো খুশি, কেমন বাচ্চাদের মতো করছে। মেয়েরা হয়তো তাদের পছন্দের জিনিষ গুলা পাইলে একটু বাচ্চা টাইপই হয়ে যায়।
পর্ব ৮
রাতে নয়টা।
হোটেলের সাইডে সুইমিং পুলে বসে আমরা কিছু ফ্রেন্ড আড্ডা দিচ্ছিলাম। আর বাকিরা যে যার মতো আছে আশে পাশেই,
আড্ডার মাঝেই শুরু করলাম প্রিয়কে খোচানো।
~ প্রিয় চলো না প্লিজ।
~ কোথায়।
~ আরে তখন বললাম না রাতে বাইকে ঘুরবো। ভুলে গেছো তুমি।
~ পাগল হইছেন মাথা ঠিক আছে আপনার। অচেনা জায়গা কোনো কিছুর ঠিক নাই এতো রাতে বাইকে ঘুরবো তাও আবার আপনাকে নিয়ে। হাউ ফানি।
~ আয়ান প্লিজ চলো।
~ প্রিয় চলনা ভাই মজা হবে।
~ বাইক একটা লাফাইতেছিস দুইজন কেনো। আর তোদের এতো শখ তো তোরা দুজনই যা।
~ কি বলো প্রিয় ভাইয়া। আয়ান ভাইয়া আমারে দিয়ে বিকালে ডিম পাহারে অনেক গুলো পিক উঠায় নিছে ওনার আর শর্ত ছিলো সেটার বদলে আজ আমি যতোক্ষন বলবো ততক্ষন উনি আমার সাথে গল্প করবে। আর তার মানে উনি আজ কোথাও যাবে না।
~ এই মেয়ে তুমি তো দেখি প্রচুর বাচাল। এতো কথা কে বলতে বলছে তোমায়। একটু ভালো পিক তুলছিলা তাই ঢপ দিয়া আরো কিছু তুলে নিছি। আমি বলেছি মানেই তোমার কথা শুনবো এতো বোকা তুমি।
~ মিথ্যাবাদি। চিটার। বাটপার কোথাকার। শোনায় লাগবে আমার কথা,
~ ছি ছি খোদা কি মেয়ের মুখের ভাষা। এই তুমি কি অশিক্ষিত। ভার্সিটিতে কি করো তোমার তো এখনও কেজি তে পড়ার কথা। আমি যে তোমার সিনিয়র আর সিনিয়রদের যে রেসপেক্ট করতে হয় শেখোনি। আর শুনবো না তোমার কথা কি করবে তুমি।
~ সত্যিই শুনবে না।
~ না শুনবো না।
~ ঠিক আছে।
”কথা বলা মাত্রই তিশা উঠে এসে আয়ানের হাত ধরে জোড়ে একটা কামড় দিয়েই দৌড়।
~ ও আল্লাহ গো। এ কি চিজ। আজ ধরতে পারলে তুই শেষ তিশুর বাচ্চা। (কথাটা বলে আয়ান ও ছুট লাগায় তিশার পিছে)
~ ঝাাা ওরা তো চলে গেলো। দুইটা জেনো টম এন্ড জেরি। সব সময় লেগে থাকে। প্রিয় চলো না আমরা যায় প্লিজ প্রিয়।
~ অসম্ভব।
~ প্লিজ প্রিয় এজ এ ফ্রেন্ড।
~ ফ্রেন্ড নয়তো কি গফ লাগেন আপনি আমার।
~ সেভাবে বলেছি নাকি। এমন কেন চলো না।
~ যাবো না মানে যাবো না।
কথাটা বলে উঠতে নিলেই প্রিয়র ফোনে একটা মেসেজ আসে। মেসেজটা দেখেই প্রিয় থমকে যায়। কল্প তাকে মেসেজ দিছে। কেমনে সম্ভব।
~ কি হলো চলে যাচ্ছিলা যাও। দাড়িয়ে গেলা কেন।
~ আমায় এক জায়গায় যেতে হবে।
~ কোথায়।
~ বাইক নিয়া ঘুরতে।
~ 😱😲
~ কি হলো।
~ তুমি সত্যিই আমায় নিয়া যাবা। চলো চলো আমি তো ভাবতেই পারছি না।
~ আপনাকে নিয়া যাবো কখন বললাম।
~ তো একা তুমি কেমনে যাবা। প্রথমত রাত তারপর আবার একা। আমি তোমার ফ্রেন্ড হয়ে কেমনে একা ছাড়ি বলো তো। আয়ান ও নাই। এর থেকে আমিই যায় চলো।
~ আমি কি ফ্রেন্ড বলে মেনেছি এখনো
~ মানামানির কি আছে হ্যা। ফ্রেন্ড তো ফ্রেন্ড।
চলো তো চলো।
~ বুঝতেছেন না কেনো আপনাকে নিতে পারবো না আপনি গেলে সমস্যা কল্প অন্য কিছু ভাবতে পারে।
~ কল্প? তোমার সেই ক্রাশ।
~ হুম
~ 😳তোমার ক্রাশ এখানেও চলে এসছে বাহ বাহ। আর এতো ভাবা ভাবির কি আছে। উই আর জাস্ট ফ্রেন্ড। কিছু ভাববে না চলো তো।
~ তবুও আপনাকে আমার বাইকে উঠাবো না 😤এরপর প্যাচাল করলে কিন্তু মাইর শুরু করবানে,
~ আমি না গেলে তুমিও যেতে পারবে না। আমাকে না নিলে আমি প্রিন্সিপালের কাছে বিচার দিবো তোমার নামে। আর বলবো এতো রাতে মেয়ে ছেলে নিয়ে
~ ছিঃ। কি টাইপ কথা বার্তা এগুলো।
~ এখন নিয়া যাবা কিনা বলো।
~ প্যাচাল যত্তসব।
প্রিয় রেগে চলে যায় নিশাত ত্রিশ পাটি দাত বের করে পিছু পিছু যায়)
: এইবার ধরেছি তোমায়। এখন কই পালাবে কে বাচাবে বলো।
: আমি তো চাই ই আমাকে ধরো।
~ কি বেহায়া মেয়ে। লাজ লজ্জা নামক যেই জিনিসটা থাকে তা কি তোমার মধ্য বিন্দু পরিমান ও নাই।
~ আছে তো প্রচুর। কিন্তু তোমার সামনে লাগে না 😇
আয়ান তিশা কে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে তিশার এক হাত দেওয়ালে চেপে আর এক হাত তিশার পেছনে মুড়িয়ে ধরে। দুজনই দুজনার চোখে তাকিয়ে আছে।
~ হাতে লাগছে।
~ লাগার জন্যই তো ধরেছি।
~ নিশ্বাস আটকে আসছে,
~ মরে গেলে তো আমি বেচে যাবো। বাট কথা আমি তো তোমার নাক বা মুখ চেপে ধরিনি। তাহলে নিশ্বাস আটকাচ্ছে কিভাবে।
~ জানি না। ছাড়ুন না।
~ তুমিই তো চাও আমি তোমাকে ধরি। এখন তো ধরেছি ভালো লাগছে না (দুষ্টু হেসে)
আয়ান একটা হাত তিশার কপালে নিয়ে আস্তে আস্তে কিছু চুল কানের পাশে গুজতে নেয়। তিশা অজানা কারনে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নেয়। তিশা হঠাৎ চিৎকার করে উঠে।
~ কি রে চিল্লাইতেছিস কেনো। কিছুই তো করিনি।
~ আহ আহ আয়ান ভাইয়া ছাড়ো প্লিজ কানে লাগছে।
~ তুই কি ভেবছিস। আমি তোরে আদর করতে নিছি। (কানের কাছে মুখ নিয়ে) এইসব আজে বাজে চিন্তা ঘুরে নাকি খালি তোর মাথায়। তুই তো খুব একটা সুবিধার না।
~ ছাড়ো ভাইয়া লাগতেছে।
~ নেক্সট টাইম আর আমার সাথে লাগতে আসবি না মাইন্ড ইট।
আয়ান হাত আর কান ছাড়তেই তিশা জোড়ে নিশ্বাস নেয় ব্যাথায় চোখে পানি চলে আসছে। ছাড়া পেয়ে হাত কান ডলতে ডলতে সেখান থেকে বড় বড় পা ফেলে চলে যায় আর মনের ভিতর আয়ানের জন্য হাজার হাজার গালির বন্যা বইতেছে।
পর্ব ৯
প্রিয় নিশাত বাইকে করে একটা পাহাড়ের উপর দাড়িয়ে আছে কল্পর দেওয়া ঠিকানায়। দুজন বাইকে এসছে ঠিকই কিন্তু নিশাতকে প্রিয়র থেকে এক হাত দূরে বসিয়েছে এমনকি প্রিয় কে ধরতেও নিষেধ, নিশাত খুব ইনজয় করেছে। ফাকা রাস্তায় কেউ নাই মাঝে মাঝে রাস্তার দু ধারে রং বেরঙের আলো পড়ছে। নিশাত প্রিয়র পিছনে বসে দু হাত মেলে অনুভব করেছে সময়টা।
কি হলো তোমার কল্প আসবে কখন।
~ জানি না।
~ আচ্ছা তুমি শিওর তো ওটা কল্পর টেক্সট না মানে হতেও তো পারে কেউ মজা করেছে তোমার পরিচিত বা কেউ তোমাকে মারার জন্য ফেক মেসেজ দিয়ে এখানে ডেকে এনেছে।
~”নিশাতের এমন আজগুবি কথা শুনে প্রিয় কিছুটা রেগে গেলেও নিশাতের পুরো কথা ফেলে দেওয়ার মতো না। হ্যা হতেও তো পারে কেউ ওর দুর্বলতা নিয়ে মজা করেছে। ও তো কল্পর নাম্বার ও জানে না ~”
~ এইসব ফাউ কথা বাদে অন্য কিছু বলুন কল্প ঠিক আসবে।
~ আরে প্রিয় কেনো কাউকে নিজের দূর্বলতা বানাচ্ছো বলো তো আমি যতোদূর জানি তাতে তুমি কল্পকে না ভালোভাবে জানো আর না ওকে দেখছো কখনো। তাহলে। কে না কে মেসেজ দিলো কল্প সেজে আর তুমিও নাচতে নাচতে চলে এলে। আই থিংক ওটা প্রান্ঙ্ক মেসেজ ছিলো।
~আচ্ছা পজেটিভ কি কিছু ভাবতে পারেন না। এসে ধরে নেগেটিভটাই ভাবছেন। বিরক্ত লাগলে চলে যান নইতো চুপ থাকুন।
~ ওকে আমি চুপ করছি তুমি ওই নাম্বারে কল দিয়ে দেখো তো
~”নিশাতের কথাটা প্রিয়র পছন্দ হলো। ওর তো মনেই ছিলো বিষয়টা। প্রিয় ডায়াল করে নাম্বারটা ~”
~কি হলো রিসিভ করে না
~ অফ আসছে 😒
~ দেখছো আমি বললাম না ওটা প্রান্ঙ্ক মেসেজ। ইউ সো ফুল প্রিয়।
~অতিরিক্ত বলছেন না।
~ ওকে আমি অফ যাচ্ছি। তবে কল্প হোক যেই হোক মেসেজটা যে দিছে তাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। লুক প্রিয়। জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর আই থিংক কেউ কাউকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এটা সাজিয়েছে। সামনে একটা কুড়ে টাইপ ও দেখা যাচ্ছে চলো আর একটু সামনে যায়।
~ এখান থেকে এক পাও কোথাও যাবো না।
~ প্লিজ প্রিয় চলো না চলো না প্লিজ 🙏🏻
~”নিশাতের এমন ইনোসেন্ট ফেস আর রিকোয়েস্টে আর না করতে পারেনি প্রিয় হেটে চলেছে সামনের দিকে। একটু যায়তেই। দুজনের পা টাই থমকে যায়।
~ ওয়াও দিস আমেজিং।
আনমনেই কথাটা মুখ থেকে বের হয়ে যায় প্রিয়র।
দু সাইডে বিভিন্ন লাইটিং। সামনে একটা ছোট্ট কুটির সেটা আবার খড়ের তৈরি। বিভিন্ন কালারের লাইট দিয়ে পুরো কুটিরটা যেনো মোড়ানো। কুটিরটাও ব্লু আর পিঙ্ক কালার দিয়ে রং করা। কুটিরটার কিছুটা পিছেই পাহাড়ের শেষ সীমানা। আর তার চারদিকে গাছ পালায় ঘেরা। ঘনো সবুজের ওপর গোল চাদটার এক টুকরো আলোই পুরো সবুজকে মাখিয়ে যাচ্ছে
যেনো। চোখ ধাধানো পরিবেশটায় দুজনেই গভীর ভাবে চোখ বুলিয়ে নিয়ে দুজনই দুজনের দিকে তাকায়।
~ এমন জায়গায় এমন কিছু সত্যিই আনএক্সপেক্টেড।
~ তোমার কল্প আবার করেনি তো এসব।
~ এতোক্ষনে আপনার এই একটা কথায় আমার পছন্দ হলো। ভুল কিন্তু বলেননি হতেও পারে।
~ কচু হতে পারে। ও মেয়ের তো আশার নামই নাই
~ আচ্ছা এমন তো নই যে ও আপনাকে দেখে রেগে সামনে আসছে না।
~ হতেও পারে
~ কেনো হবে। ফার্স্ট টাইম ও আমার সাথে দেখা করতে চাইছে তো আমার সাথে কে আছে না আছে এটা জানার জন্য হলেও তো আমার সামনে আসবে আর তাছাড়া ইউ আর মাই ক্লাসমেট গফ হইলে নিশ্চয় নাচতে নাচতে তাকে সাথে আনতাম না এতোটুকু কমনসেন্স আর বিশ্বাসটা তো থাকা উচিৎ,
~ ঠিক ঠিক একদম ঠিক 🙃 আরে প্রিয় ওসব ছাড়ো আই আম শিওর ওটা প্রান্ঙ্ক মেসেজ। যায় হোক চলো কুটিরটায় বসে আর একটু অপেক্ষা করি।
~ হুম।
দুজনই গিয়ে কুটিরের দরজার সামনে রাখা দুটো মোড়া পাতা আছে সেটায় গিয়ে বসে।
~ প্রিয় আমার খুব ইচ্ছা করছে কুটিরের ভেতরটায় যাওয়ার। অদ্ভুত রকম ভাবে সাজানো। এইভাবেও এখনকার যুগে কেউ কাউকে সারপ্রাইজ দেই। উফ কি ভালোবাসা। আমরা কিন্তু সকালে এই সাইডে একবার এসছিলাম কিন্তু এমনটা তো ছিলো না তারমানে এটা কেউ কাউকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই করছে শিওর। তুমি যেই কুড়েটার কাছে তখন নিয়ে গেছিলা ওটার থেকে এটা বেশি দারুন। চলোনা যায় ভেতরে।
~ আরে না। কে না কে কার জন্য সাজিয়েছে আমরা কেনো ঢুকবো। এখানেই বসুন।
~ আরে না কি চলুন তো এখানে আমি তুমি ছাড়া আর কেও নাই। যে যার জন্য করে করুক আমরা দেখলে সমস্যা কি। এমনও হতে পারে সারপ্রাইজটা দেওয়া হয়ে গেছে। আমি যাচ্ছি ভেতরে তুমি গেলে আসো।
~কথাটা বলেই নিশাত ভেতরে ঢুকে যায়। প্রিয় ও পিছু পিছু যায়। নিশাত দরজা ঠেলে ভেতরে পা রাখতেই থ। পুরো রুমে গোলাপের পাপড়ি ছিটানো সামনে খড়ের দেওয়ালটাআই লাভ ইউ মাই লেডিলিখে লাইটিং করা। নিশাত মুখে হাত দিয়ে অবাক হয়ে ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখতে থাকে। তারপর সামনে ঘুরতেই ওর কাছে নিজেকেই ড্রাংক লাগে। ভাবতে থাকে হইতো ঘুমাচ্ছি নইতো নেশা করেছি না হলে এতোসব আদেও সম্ভব। সামনে প্রিয় এক হাটু ভেঙে বসে নিশাতের দিকে একটা ফুল ধরে নিশাত তাকালেই বলতে থাকে।
~ আই লাভ ইউ কল্প। উইল ইউ মেরি মি।
নিশাত আরে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রিয়র মুখে কল্প নাম শুনে
~ নেশা করেছো নাকি প্রিয়। একটু আগেও না ঠিক ছিলা হঠাৎ কি হলো। আমাকে তুমি কল্প কেনো বলছো।
~ কল্প নিশাত তো একই তাই তো একটা বললেই হলো। উইল ইউ মেরি মি নিশাত।
~ পি পি প্রিয়। আর ইউ কিডিং রাইট।
~ আরে তোমার ভয়েস কাপছে কেনো। ভুল কি বললাম। দেখো হাটু ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। প্লিজ আন্সার মি নিশু।
নিশাত ঠায় দাড়িয়ে আছে। মুখে ভয়ার্তের ছাপ। আস্তে আস্তে নিশাত কাপা কাপা হাত প্রিয়র এগিয়ে ধরা গোলাপটার দিকে নিতেই। প্রিয় ঝট করে হাত নামিয়ে উঠে দাড়িয়ে হো হো করে হেসে উঠে।
নিশাত প্রিয়র হাসি দেখে কিছুটা সস্তির নিশ্বাস নিয়ে রাগী দৃষ্টি ফেলে প্রিয়র দিকে
~ এপ্রিল ফুল। (কথাটা বলে আবার হাসতে থাকে প্রিয়)
~ এই ভাবে পাগল বানাইলা।
আমি তো ভুলেই গেছিলাম এটা। (মুখ ফুলিয়ে)
~ তো আপনি কি সত্যি ভাবছিলেন নাকি। (হাসি থামিয়ে এক ভ্রু উচিয়ে)
~ পরিস্থিতিই তো তেমন করেছিলে,
~ পরিবেশটা এমন দেখে দুষ্টু বুদ্ধিটা মাথা নাড়া দিয়ে উঠলো।
~ শয়তান ছেলে।
~ চলুন এখন অনেক রাত হইছে হয়তো ওটা প্রান্ঙ্ক মেসেজ নইতো কল্প আসবে না। এখন আর এখানে থাকা ঠিক হবে না চলুন।
~ হুম।
দুজনেই সেখান থেকে বেড়িয়ে এগিয়ে যায় প্রিয়র বাইকের দিকে।
প্রিয় বাইকে উঠে স্টার্ট দিতে নিশাত ও উঠে বসে বাইকে। প্রিয়র করা একটু আগের ঘটনাটায় নিশাতের মাথায় ঘুরছে। সবকিছুর মধ্যে কোথাও একটা অন্য রকম অনুভুতিরা উকি দিচ্ছে। কিছুদূর যেতেই নিশাত প্রিয়র পিঠে মাথা ঠেকিয়ে দু হাত দিয়ে সামনে প্রিার বুকে রাখে।
~ প্রিয় ততক্ষনাৎ চিল্লিয়ে বলে। আরে কি করছেন ছাড়ুন। হাউ ডেয়ার ইউ। এভাবে ধরার সাহস কি করে হয় তোমার।
কিন্তু এতে নিশাতের কোনো ধ্যান ও সেই ভাবেই আছে ঘুমুঘুমু কন্ঠে আস্তে করে বলে
~ প্লিজ আমার প্রচুর ঘুম চলুন। না ধরলে পড়ে যাবো।
¬নিশাতের ঘুম কন্ঠে এমন কথা শুনে প্রিয় আর কিছু বলতে পারে না। বিরক্ত মাখা মুখ করেই জোড়ে বাইক চালাতে থাকে
হোটেলে পৌছে নিশাতকে ওর রুমে শুইয়ে দিয়ে প্রিয় ও রুমে চলে যায়।
পর্ব ১০
সকাল দশটা।
প্রিয় নিশাতের রুমটার সামনে দাড়িয়ে আছে।
সবাই নাস্তা করার জন্য এক হইছে নিচে। কিন্তু নিশাতকে অনুপস্থিত দেখে প্রিন্সিপাল প্রিয়কে দেখতে পাঠায়। প্রিয় ইনিয়ে বিনিয়ে না আসতে চাইলেও আসতে হইছে।
প্রিয় বুকে ফু দিয়ে রুমের দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকে। ফু দেওয়ার কারন ও অবশ্য আছে। কারন প্রিয় কাল রাতে নিশাতকে রুমে দিয়ে যাওয়ার আগে নিশাতের রুমের দরজা বাইরে থেকে দিয়ে যায়। প্রিয়র ধারনা নিশাত সে কারনেই হইতো বের হইতে পারেনি।
প্রিয় রুমে ঢুকে অবাক। নিশাত এখনও বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।
~ রাতে তো না খেয়ে ঘুমায়ছে সেই মেয়ে এখনও ঘুমায় কেমনে। আমার তো পেটে ছুচো দৌড়াচ্ছে। এই নিশাত। নিশাত
~ হু
~ হু কি উঠেন খেতে হবে। প্রিন্সিপাল ডাকতেছে নিচে।
~ প্রিয় কই।
~ ভালো মেয়ে তো আমার সাথে কথা বলছে আবার ঘুমের মধ্যে আমাকেই ডাকছে। 😒
(মনে মনে) আরে আমিই তো প্রিয়। আপনি আবার কাকে খুজছেন।
~ আম্মু,
নিশাতের কন্ঠ আর ওর কথা বার্তা অদ্ভুত লাগছে প্রিয়র। অস্বাভাবিক। প্রিয় তিশাকে কল করে রুমে ডাকে। তিশা আসলে প্রিয় ওকে তিশার শরীরটা দেখতে বলে সব ঠিক আছে কিনা।
~ প্রিয় ভাইয়া নিশু আপুর তো জ্বর আইছে। গা পুরে যায়তেছে জ্বরে।
~ এইটায় ভাবতেছিলাম। খেয়েছো তুমি।
~ না তো।
~ আচ্ছা একটু ওয়েট করো। তুমি বরং একটা কাজ করো। একটা ছোট কাপড় ভিজিয়ে একটু জল পট্টি দাও আমি ঔষুধ নিয়ে আসি।
~ আচ্ছা।
তিশা জল পট্টি দিতে থাকে আর প্রিয় নিচে চলে যায়।
কিছুক্ষন পর
সবাই নিশাতের জ্বরের কথা শুনে এসছে নিশাত কে দেখতে। কিন্তু রুমে যে এতোগুলো মানুষ সেটা বোঝার মতো চেতনা নিশাতের নেই এখন। নিশাতের এমন অবস্থা দেখে সবাই ঠিক করে আজ আর ঘুরবে না। প্রিন্সিপাল আশেপাশেই যে যার মতো ঘুরতে বলে।
~ স্যার এখানে এতো ভিড় জমিয়ে লাভ নাই। আমি খাবার আর ঔষুধ আনছি। খেলে ঠিক হয়ে যাবে।
প্রিয় সবাই কে পাঠিয়ে দেয়। তিশা আয়ান থেকে যায় প্রিয়র সাথে।
~ তোরা গিয়ে খেয়ে নে আমি আছি এখানে। তিশু ও না খেয়ে আছে।
~ তুই ও তো খাসনি।
~ তিশু খেয়ে এসে নিশুর পাশে বসলে আমি যাবানে। এভাবে তো আর ওকে একা রাখা যায় না।
~ হুম প্রিয় ভাইয়া ঠিক বলছে। চলো আয়ান ভাইয়া।
তিশা আর আয়ান চলে গেলে প্রিয় দরজাটা হালকা ভিরিয়ে দেয়। তারপর খাবার প্লেটটা বেড সাইড টেবিলে রেখে। একটা কাপড় ভিজিয়ে নিশাতের মুখটা হালকা করে মুছিয়ে দিয়ে কাপড়টা আর একবার ভিজিয়ে সেটা নিশাতের কপালে রাখে।
~ নিশু এই নিশু।
~ হু।
~ হালকা উঠে অল্প করে খাবারটা খেয়ে ঔষুধ খেয়ে নিন নইতো জ্বর যাবে না।
~ হু
~ আরে হু হু না করে উঠেন প্লিজ।
নিশাতের আর কোনো নড়চড় না পেয়ে প্রিয়ই নিশাতের হাত দুটো ধরে আস্তে করে টেনে উঠিয়ে বসিয়ে খাটের সাথে লাগিয়ে পিছে একটা বালিশ দিয়ে বসায়। তবু ও যেনো পড়ে যাচ্ছে হেলে হেলে। প্রিয় উপায় না পেয়ে নিশাতের পাশে গিয়ে বসে ওর কাধে নিশাতের মাথাটা রেখে একটু একটু করে খাইয়ে দিতে থাকে। অল্প একটু খাওয়ার পর নিশাত আর মুখ খুলতে চায় না।
~ আরে নিশাত আর একটু খেয়ে নেন এতোটুকু খেলে তো হবে না।
প্রিয় আবার নিশাতের মুখে খাবার নিলে নিশাত মুখ কুচকে নেয়। প্রিয় খাবারটা টেবিলে রেখে। কপাল থেকে কাপড়টা নিয়ে আবার ভিজিয়ে কপালে দেয়। তারপর ঔষুধটা খাইয়ে দেয়। প্রিয় উঠতে নেয়। কিন্তু নিশাত অচেতনেই প্রিয়র হাতটা পেচিয়ে নেই। প্রিয় যতো উঠার চেষ্টা করে নিশাত ততই প্রিয়কে চেপে ধরে।
~ আরে ছাড়ুন। এভাবে ধরলে আমি উঠবো কেমনে।
~ আম্মু থাকো এখানে প্লিজ (লো ভয়েসে।)
~ ভারি জ্বালাতন তো। এই মেয়ে আমাকে ওর মা ভাবতেছে। এতো জ্বরই বা আসলো কি ভাবে। রাতেই তো ঠিক ছিলো। তাহলে কি রাতের ওই ঠান্ডা আবহাওয়াতেই
প্রিয় এসব ভাবতে ভাবতে নিশাতের পাশে বসেই খাটে মাথা এলিয়ে দেয়। নিশাত ও প্রিয় কাধে মাথা রেখে প্রিয়র হাত পেচিঁয়ে পরম সুখে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু প্রিয় ভাবতেছে অন্য কিছু। নিশাতের শরীরের স্মেলটা খুব পরিচিত লাগছে প্রিয়র। ভাবতে ভাবতে একসময় প্রিয়ও নিশাতের সাথেই ঘুমিয়ে পড়ে, তিশা এসে নিশাত প্রিয়কে এভাবে দেখে আর রুমে ঢুকে না বাহির থেকে দরজা হালকা করে দেখেই আবার দরজা ভিড়িয়ে চলে যায়।
দুপুরের দিকে ঘুম ভাঙে নিশাতের।
ঘুমটা হালকা হতেই অন্য রকম লাগতে থাকে নিজেকে। মাথাটা ভার হয়ে আছে। শরীরটা কেমন অবশ অবশ লাগছে। মুখে তেতো ভাব। হালকা করে চোখটা খুলে আশে পাশে ভালো ভাবে দেখতে থাকে। ওর পাশে প্রিয়কে দেখেই চোখ ছানাবড়া। হঠাৎ কাউকে এইভাবে পাশে দেখে একটা চিৎকার করে উঠে নিশাত। নিশাতের চিৎকারে ঘুম হালকা হয়ে যায় প্রিয়র। চোখ খুলে দেখে নিশাত ঘুম থেকে উঠে চিৎকার করছে।
~ এই এই কি হয়ছে চিৎকার করছেন কেনো। ভুতে পাইছে নাকি😒
~ আপনি মানে তুমি এখানে কেন। 😕
~ সেবা করতেছিলাম।
~ সেবা
~ হুম। এখন কেমন লাগছে।
~ অসস্তি লাগছে। মাথাটা খুব ভার হয়ে আছে।
~ জ্বর আসলো কেমনে।
~ জানি না তো।
~ ঘুরতে এসেও জ্বর টর লাগিয়ে অস্থির। আপনার জন্য আজ কেউ ঘুরতে যায়তে পারেনি। এখন কি উঠতে পারবেন?
~ হুম।
~ তাহলে একটু উঠে ফ্রেশ হয়ে নিন, আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।
নিশাত উঠতে নিলেই মাথা ঘুরে উঠায় আবার বসে পড়ে। নিশাতের এমন অবস্থা দেখে প্রিয় তিশা কে ডেকে নিশাত কে ফ্রেশ হতে হেল্প করতে বলে যায়। তারপর প্রিয় নিজের রুমে গিয়ে গোসল সেরে একবারে লান্চ করে নিশাতের জন্য খাবার নিয়ে যায়। প্রিয় রুমে যেতেই তিশা বেড়িয়ে আসে। প্রিয় নিশাতকে খাবার দিলে নিশাত অল্প খেয়ে খাবারটা রেখে ঔষুধ খেয়ে নেই।
~ খাবার নষ্ট করা শয়তানের কাজ
~ মুখে কিছু ভালো লাগছে না গো। খুব খারাপ লাগতেছে।
~ একটু রেস্ট নিন। ঔষুধ খায়ছেন ঠিক হয়ে যাবে।
~ এতোক্ষন ও ঘুমাচ্ছিলাম। তুমি বসো না আমার পাশে।
প্রিয় কিছু বলার আগেই আয়ান রুমে ঢুকে।
~ এখন কেমন লাগছে নিশু।
~ 😖জঘন্য
~ কেমনে জ্বর আসলো বলো তো রাতেও ঠিক ছিলো ঠান্ডা বাদেই হঠাৎ জ্বর।
~ হুম। বসো না তোমরা গল্প করো।
~ বসতেছি তুমি শুয়ে পড়ো।
~ শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠ ব্যাথা হয়ে গেছে
~ আচ্ছা তাহলে বসেই থাকো। খেয়েছো তুমি।
~ হ্যা খেলাম।
এক কথায় দু কথায় গল্প শুরু করে আয়ান। প্রিয় সোফায় বসে ফোন টিপে। কিছুক্ষনে তিশা আসলে সবাই মিলে ঘুরতে গিয়ে তোলা পিক গুলা দেখছে আর আয়ান তিশা কে পিন্চ করছে। প্রিয় সোফায় ফোন টিপতে টিপতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। বিকাল পর্যন্ত সবাই আড্ডা দেয় এর মাঝেই ওরা লক্ষ্য করে প্রিয় সোফায় ঘুমিয়ে গেছে। আয়ান ডাকতে গেলে নিশাত নিষেধ করে।
আয়ান তিশা চলে গেলে। নিশাত দরজা চাপিয়ে সোফার কাছে গিয়ে প্রিয়র মুখে আলতো করে হাত রেখে স্লাইড করতে থাকে। তারপর কিছু ভেবে মুচকি হেসে প্রিয়র গলার কাছে মুখটা এগিয়ে নিয়ে খুব আস্তে করে ঠোটটা ছুয়য়ে দেয়। প্রিয় হালকা নড়ে উঠতে নিশাত নিংশব্দে হেসে উঠে আসে। কফি অর্ডার দিয়ে বেলকনি তে গিয়ে আকাশ দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মনে উকি দেয় হাজারো অনুভুতিরা। নিজেকে খুব সুখি ব্যক্তি মনে হচ্ছে নিশাতের এখন। কারনটা তার অজানা। মনের সুখটায় যে বড় সুখ সবকিছুতে কারনটায় বা কেনো থাকতে হবে মনটা শান্ত থাকলেই তো হবে।
পর্ব ১১
যেই মেয়েটাকে সহ্যই করতে পারো না তার পাশে থেকে তাকে সেবা করার কারনটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। এখন এটা নিশ্চয় বলবে না যে আমার জায়গায় অন্য মেয়ে থাকলেও তুমি এটা করতা কজ আই নো।
তুমি কোনো মেয়ের আশে পাশে ও ঘেষো না হোক হাজার অসুস্থ। তাহলে আমার ক্ষেত্রের কারনটা জানতে পারি কি ~~
[ঘুম ভেঙে নিজেকে নিশাতের রুমে দেখে একটু অবাক হইলেও পরক্ষনেই মনে পরে বিকালে সে এখানে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দরজা খুলে বের হবার আগ মুহুর্তেই পেছন থেকে কথা গুলো শুনে থেমে যায় প্রিয় ]
জানার এতো আগ্রহ ~
~ আগ্রহ না থাকাটায় অস্বাভাবিক বরং থাকা টায় স্বাভাবিক।
~ রাইট। এখন শরীর কেমন।
~ আমি কিন্তু কিছু জিগ্যেস করেছি।
~ আমিও তো কিছু জানতে চেয়েছি। আই থিংক আপনার থেকে আমার প্রশ্নটা বেশি ইম্পরটেন্ট। সো ফাস্ট ~সে ইউ।
~ নাও আই আম অল রাইট
~ ওকে। এখন আসি আপনার প্রশ্নে। আপনাকে সেবা করায় আপনি অবাক তাই তো তাও আবার সেটা আমি। যেই ছেলে কিনা কোনো মেয়ের আশ পাশও ঘেষে না সে কিনা আপনাকে সেবা ভেরি কিউরিয়াস ম্যাটার। নাও আসি আন্সারে। ~ কারনবিহীন আমি কিছু করি না। আর আপনার ক্ষেত্রে বেশ বড় সড় কারন জুড়ে আছে, আর হ্যা আপনার শরীরের স্মেলটা বেশ পরিচিত লাগলো। (বাকা হেসে) কি পারফিউম ইউস করেন,
~ হুয়াট।
~ স্বাভাবিক কোয়েশ্চেন করলাম এমন বিস্মিত হওয়ার কি আছে।
~ আমার শরীরের স্মেল তুমি পাইলে কিভাবে।
~ বাহ রে। সকালে দুজন এতো কাছাকাছি ছিলাম সেখানে শরীরের স্মেল পাওয়া আর এমন কি বিষয়। (দুষ্টু হাসি ঠোটে)
~ তোমার বিহেভটা অন্য সময় এর থেকে অস্বাভাবিক লাগছে প্রিয়।
প্রিয় এবার হো হো করে হেসে উঠে।
~ পাগল নাকি আপনি। মজা করছিলাম। যায় হোক ডিনার হইছে?
~ উহু।
~ তো করে আসুন। ঔষুধ রইছে তো।
~ অর্ডার করে দিয়েছি। খাবার দিয়ে যাবে রুমে। তোমারটাও এখানে অর্ডার দিয়ে দিয়েছি।
~ আমারটা এখানে কেনো
~ সবার ডিনার কম্পিলিট। তাই ভাবলাম দুজন এখানেই।
~ ওকে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
~ প্রিয় চলে গেলে নিশাত ভাবতে থাকে। ওর কেনো জেনো প্রিয়র আচরনটা স্বাভাবিক লাগছে না। যে ছেলে ঠিক ভাবে কথা বলে না সে কিনা এক কথায় এখানে খায়তে রাজি হয়ে গেলো। স্ট্রেন্জ 😒
নিশাত সোফায় খাবার রেডি করে বসে ছিলো, কিছুক্ষন পর তিশার প্রবেশ রুমে,
~ আরে আপু তুমি এখনো খাও নাই কেনো।
~ প্রিয় আসলে এক সাথে খাবো। তুমি ডিনার করছো।?
~ হ্যা। আমি তো মুভি দেখতেছিলাম বাট প্রিয় ভাইয়া ডেকে বললো তোমার শরীর তো স্বাভাবিক না রাতের ব্যাপার কি হয় না হয় তাই আমাকে তোমার সাথেই থাকতে বললো। আর প্রিয় ভাইয়া আর আয়ান ভাইয়া তো নিচে গেলো খায়তে।
~ প্রিয় নিচে গেলো মানে (অবাক হয়ে)
~ হ্যা গো আমি একটা মুভি দেখছিলাম আর তখনই ডাক দিলো তারপর আমি আসলে ওনারা নিচে খায়তে যাবে বললো। আমি বরং মুভিটা শেষ করি। তুমি ততোক্ষনে খাওয়া শেষ করো,
~ হুম।
~ বেশ ছোটো খাটো একটা ধাক্কা খেলো প্রিয়র আচরনে। এখানে খাইতেই যখন প্রবলেম তো সেটা বলে গেলেই তো পারতো, অযথায় ~ নিশাত ভাবনা বাদ দিয়ে অল্প একটু খেয়ে ঔষুধ নিয়ে খাবার গুলো নিচে পাঠিয়ে দেয়। তিশা তখনো মুভি দেখছে তাই নিশাত বেলকনি তে গিয়ে বাসায় কল দেয় কথা বলার জন্য। কথা শেষ করে রুমে এসে দেখে তিশা ঘুমিয়ে গেছে। আর মুভি চলতেই আছে। নিশাত মুচকি হেসে মুভিটা অফ করে তিশার গায়ে কম্বলটা ভালোভাবে মেলে দিয়ে কাউকে কল করে। রুম থেকে বের হয়ে যায়। নেশা ধরেছে তার এখন সে ছুটবে প্রচুর ছুটবে তার নেশার পিছে,
সকালে প্রিয় আসে নিশাতের রুমে। ডেকে কোনো সারা না পেয়ে কল লাগায় তিশার ফোনে। দু বারের বার কল রিসিভ করে তিশা। ঘুম ঘুম কন্ঠে হ্যালো বলার আগেই কারো উত্তেজিত কন্ঠে ফ্রেশ ভাবেই ঘুমটা ভেঙে যায় তিশার।
~ প্রিয় ভাইয়া।
~ দরজা খুলো। কখন থেকে ডাকতেছি।
তিশা কল কেটে টাইম দেখে বেশ অবাক হয় মাত্র ছয়টা বাজে এতো সকালে প্রিয়কে এখানে মোটেও আশা করেনি। আশে পাশে দেখতে থাকে কিন্তু নিশাত কে দেখতে না পেয়ে কিছুটা আতংক নিয়েই এগিয়ে যায় দরজার দিকে। দরজা খুলতে নিলেই দেখে দরজা টা বাইরে থেকে লক।
~ প্রিয় ভাইয়া দরজা তো ওপাশ থেকে লক করা।
কথাটা শুনে প্রিয় ভালোভাবে দেখে দরজা খুলে।
~ তোমরা ভিতরে তাহলে দরজা বাইরে থেকে লক কেমনে হয়। আমি তো খেয়ালই করিনি এসে।
~ নিশু আপু তো রুমে নাই হয়তো বাইরে গেছে। প্লিজ ভাইয়া ঘুমেতে দাও। (ঘুম কন্ঠে এটুকু বলেই আবার বেডে গা এলিয়ে দেয় তিশা)
~ এতো সকালে ও বাইরে কই গেছে। ওর তো শরীর ভালো না।
~ এতো সকালে তুমি আসতে পারলে ও কেনো যায়তে পারবে না। এটা আপুর অনেক পছন্দের জায়গা। আশেপাশেই আছে হয়তো। (ঘুমের ভেতর থেকেই বললো তিশা)
~ হুম।
প্রিয় বের হতে নিলেই কফি হাতে রুমে ঢুকতে নেয় নিশাত। ব্লু গ্যাবাডিন। ব্লাক রেড চেকের লং হাতার টি~শার্ট গলাই রেড স্কার্ফ স্টাইল করে নেওয়া। চুল গুলো ছাড়ানে ওপর থেকে স্ট্রেট নিচ থেকে কোকড়ানো। এক হাতে ব্রেসলেট অন্য হাতে ঘড়ি। ডান হাত কফি মগ ধরে আছে আর বাম হাতে ফোন। প্রিয় রীতিমত শকড।
~ আরে প্রিয় তুমি। এতো সকালে আমার রুমের সামনে।
~ না মানে। দেখতে এসছিলাম এখন শরীর কেমন।
~ এতো খোজ নেবার প্রয়োজন নাই। আমি ঠিক আছি (হেসে)
হাসির অর্থটা প্রিয় বুঝতে পারলো না। তবে এটা স্বাভাবিক হাসি ছিলো না।
~ এই মেয়ে যতোবারই সামনে আসে ততোবারই এক রকম শকড লাগে। পুরাই আগুন। (মনে মনে)
~ আজ আমরা চিম্বুক হিল যাচ্ছি। বলছে না প্রিন্সিপাল।
~ হুম কল দিছিলো রাতে।
~ আই আম সো এক্সাইটেড প্রিয়। উহহহ। রুমে চলো বাইরে কেনো।
প্রিয় কিছু না বলে নিশাতের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। নিশাত ও রুমে ঢুকে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে।
~ উহহহ একদিন রুমে কাটিয়ে নিশ্বাস আটকে আসছিলো রাতে না বেড়োলে তো মরেই যেতাম।
মনে মনে কথাটা ভাবতে ভাবতেই কফি রেখে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় নিশাত। লং একটা শাওয়ার নিবে এখন।
সকালে সবাই নাস্তা করে বের হয় চিম্বুক পাহাড়ের উদ্দেশ্য। সবাই ভীষন এক্সাইটেড।
পাহাড়ের রানী চিম্বুক।
উচু উচু পাহাড়ের আকাঁ বাকা রাস্তা। রাস্তার দু পাশে সবুজ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। যতোদূর চোখ যায় শুধুই সবুজ। মেঘেরা জেনো মুড়ে আছে পাহাড়টাকে। দেখলে মনে হচ্ছে এই বুঝি মেঘ ছোয়া যাবে। রাস্তা দিয়ে দু একটা চাকমা কে দেখা যাচ্ছে পিঠে ঝাপি নিয়ে যেতে। নিশাত সব কিছু কে ক্যামেরা বন্দী করছে। বেশ কিছু চাকমার সঙ্গে ছবি উঠায়ছে সে। আয়ান তিশা প্রিন্সিপাল এমনকি ভার্সিটির অনেক জুনিয়র ক্লাসমেট সবার সাথেই পিক নিয়েছে। আজ জেনো সবার মুখে হাসিটা এটে দেওয়া হইছে। এতো এতো খুশি সবাই। তিশা আয়ানের খুনশুটির শেষ নেই।
~ এখানে সবাই ইন্জয় করছে তুমি ছাড়া কারন কি। ভালো লাগেনি এটা। 😒
~ অসাধারন লেগেছে।
~ তাহলে এমন পিছে পিছে কেনো তুমি। কথা নাই কোনো। বুঝি না তোমায় আমি। এতো চুপচাপ কেনো তুমি বলো তো।
~ তেমন কিছু না।
~ উহহহ তোমার বউ দু দিনও না বাসর রাতেই পালাবে চলো তো।
নিশাত প্রিয়র হাত টেনে একটা পাহাড়ের ওপর নিয়ে যায়। পাহাড়টা অনেক উচু। পাহাড়ের শেষ প্রান্তে গিয়ে দাড়ায় নিশাত এখনো প্রিয়র হাত ধরে আছে। দুজনেই দাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। মেঘেরা ছেয়ে গেছে ওদের। হাতটা ছেড়ে আবেশে চোখ বুজে নেই নিশাত।
হঠাৎই নিশাতের চোখে কারো হাতের স্পর্শ পায়। হাতটা সরাতেই নিলেই বাধা দেয় কেউ। কারো গরম নিশ্বাস নিশাতের খুব কাছে অনুভব করে।
~ কে। প্রিয়
লোকটা কোনো উত্তর না দিয়ে নিশাতের গলার কাছে মুখ আনতেই নিশাত চিৎকার করে উঠে। কিন্তু চোখ মেলে ও কাউকেই দেখতে পায় না
~ অদ্ভুত। এখানে তো কেউ নেই। প্রিয়ই বা কই।
পর্ব ১২
মেঘ পরী,
ইয়েস দিস ইজ পারফেক্ট নেম ফর ইউ।
ঠিক একটা মেঘ পরী লাগছে তোমাকে এখন। সাদা মেঘের মাঝে উড়ন্ত একটা মেঘ পরী। এই নামটা নেওয়ার জন্যই বুঝি আজ এই সাদা রং এর ড্রেসটা শরীরে জড়িয়েছো, ফর্সা শরীরে সাদা জামাটা পুরো মিশে গেছে আর চুলের রংটা ও সাদার ওপর ফুটন্ত। ব্রাউন কালার। পাপড়ি ভরা চোখ দুটো ওহহ এতো কেনো মায়া লাগায়।
চিকন পাতলা ঠোট জোড়াটা যে খুব করে টানে। তোমার এই ওভারলোডেড সৌন্দর্যে যে কেউ অন্ধ হতে বাধ্য। এতোদিন তো বেশ খেললে আমার সাথে এবার না হয় দান পাল্টানো যাক মেঘ পরী কি বলো
[দূর থেকে নিশাতকে দেখেই কেউ কথা গুলো বলে হাসতে থাকে ]
~ এই নিশু আপু তুমি এতো উচু পাহাড়ে একা কি করছো
~ এখানে তো প্রিয় ও ছিলো বাট ওকে খুজে পাচ্ছি না তিশু।
~ কি বলতেছো এসব, প্রিয় ভাইয়া তো ওই সাইডে আয়ান ভাইয়ার সাথে পিক উঠাচ্ছে।
~ প্রিয় আয়ানের সাথে [অবাক হয়ে ]
~ সে তো প্রথম থেকেই। আমি তো হঠাৎ ওপরে তাকিয়ে দেখলাম তুমি এখানে তাই এলাম।
~ ওহ
~ এমন লাগছে কেনো আপু তোমার। ঠিক আছো তুমি শরীর খারাপ করছে না তো।
~ এতো উত্তেজিত হয়ো না। আমি ঠিক আছি। তুমি এখানে পিক উঠাও কিছু দারুন পিক উঠছে (হেসে দিয়ে)
~ আমিও তো ওই জন্য এলাম। কিছু পিক উঠায় দাও আপু প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
~ ওকে। আমার ক্যামেরা দিয়ে তুলে দিচ্ছি।
~ ওয়েট ওয়েট আপু আমি আয়ান ভাইয়া আর প্রিয় ভাইয়া রে ডেকে আনি।
~ হুম।
~ আজ যেটা হলো সেটা কি শুধুই আমার ভ্রোম ছিলো। আমি কি কল্পনাই প্রিয়কে এখানে আনলাম। কি আশ্চর্য ব্যাপার। এমন তাজ্জব ঘটনা এর আগে আমার সাথে কখনো ঘটেনি~
~ ওয়াও জাস্ট অছাম। আচ্ছা এখানে আসার প্লানিংটা আপনার ছিলো নাকি স্যারের।
[ভাবনার গভীরে ডুবে ছিলো নিশাত। পেছন থেকে কারো কথায় চমকে উঠে ]
~ তুমি এখানে কখন আসলে আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।
~ আরে রিলেক্স আপনার মতো সাহসী মেয়ে এসব ছোট ছোট বিষয়ে ভয় পেলে চলে নাকি।, তবে যায় বলুন জায়গাটা জোশ ভীষন পছন্দ হইছে আমার।
~ আমার ও অনেক পছন্দের জায়গা এটা।
~ আপু আপু আমার আর আয়ান ভাইয়ার একটা কাপেল পিক উঠায় দাও।
~ এই মেয়ে আমাকে কি তোমার দাস পাইছে নাকি যে তোমার কথায় আমাকে উঠতে বসতে হবে। তুমি বলবা আর আমি নাচতে নাচতে রাজি হয়ে যাবো তাই না যত্তসব। একটু খানি মেয়ে মুখ টিপলে দুধ বের হয় আইছে কাপল পিক উঠায়তে।
~ আমি মোটেও একটু খানি মেয়ে না আর না আমার মুখ টিপলে দুধ বের হয়। (মুখ ফুলিয়ে)
~ ভাইরে ভাই কি মেয়ে রে কথায় কথায় তর্ক লাগায়। এর তো বিয়া হয়বো না রে আর হয়লেও টিকবো না দেখস।
~ টিকাটিকির ব্যাপার পরে। আগে তোমার বাসায় তো রাজি করাও বিয়ের জন্য।
~ দেখেছিস প্রিয় দেখেছিস। ওর কথা শুনলেই আমার গা জ্বলে ইচ্ছা করে একটা আছার দিই।
~ এখনো কি জ্বলছে আয়ান ভাইয়া যদি বলো তো মলম লাগিয়ে দিই।
~ ইইইই 😖😖অসহ্য বিরক্তিকর একটা মেয়ে।
আয়ান রেগে চলে গেলেই তিশা ও পিছে পিছে যায়। নিশাত আর প্রিয় ওদের কান্ড দেখে হো হো করে হেসে উঠে।
সারাদিন সবাই ঘুরে প্রায় সন্ধ্যা ধরতে ধরতে হোটেলে ফিরছে। যে যার মতো রুমে গিয়ে চলে যায় ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নেওয়ার জন্য। সারাদিন ঘুরায় সবাই ভীষন ক্লান্ত তবে জায়গা আর দিনটা ছিলো অসম্ভব সুন্দর।
নিশাত রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হইতেই কেউ তার চোখ আটকে ধরে। আকম্মিক ঘটনায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ নিজের মুখটা নিশাতের গলার কাছে নিতেই নিশাত ছটফট শুরু করে দেয়। লোকটাকে ছাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাই নিশাত কিন্তু কোনো ভাবেই ছাড়াতে পারে না লোকটা এক হাতে ওর চোখ আর এক হাত দিয়ে ওর হাত দুটো ধরে রাখে।
নিশাত অনেক ছোটাছুটির পরও ছাড়াতে না পেরে কান্না করে দেয়। তখন ও লোকটার প্রতিটা নিশ্বাসের গরম ভাব পড়ছে ওর গলায়, চুলের ভাজে। নিশাতের কান্নার বেগ বাড়তেই হঠাৎই নিশ্বাসের শব্দটা কেমন নিংশব্দে মিলিয়ে যায়। নিশাতের হাত ছাড়া পেয়ে চোখটা খুলতেই ও আরো এক রকম চমকে যায় কারন সবটা আগের মতোই স্বাভাবিক পুরো রুমে ও ছাড়া আর কেউই নাই।
কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় নিশাত। ভাবতে থাকে এটা কি শুধু ওর ভ্রোম নাকি সত্যিই কেউ আসছে ওর কাছাকাছি। ওর ভাবনার মাঝেই রুমে কেউ নক করে।
~ কে?
~ ম্যাম আপনার কফি।
~ ওহ থ্যাংক্স। (দরজা খুলে কফি হাতে নিয়ে)
কফি নিয়ে রুমে এসে মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বসে পড়ে বেডে।
~ পাগল লাগছে নিজেকে। কি শুরু হলো আমার সাথে এসব।
কথার মাঝে এক হাত বেডে রাখতেই হাতের নিচে খসখসে কিছু অনুভুত হয়। সেদিকে তাকিয়ে দেখে একটা চিরকুট যেখানে লেখা
~তোমার শরীরের স্মেলটা পাগল করে আমায়~
চিরকুটটা পড়ে থ বনে বসে থাকে নিশাত।
পর্ব ১৩
বেলকনি তে বসে গিটারে টুং টাং শব্দ তুলে গান ধরেছে নিশাত। এটা তার হবির মধ্যে একটা। যখনই মন খারাপ থাকে তখনই গিটারে সুর তুলে গান করে। গানের মধ্যেই কয়েকবার দরজায় টোকা পড়ে। লাস্ট টোকায় শুনতে পায় নিশাত। রুমে এসে বেডে গিটার রেখে দরজা খুলতে যায়।
~ তুমি হঠাৎ আমার রুমে। কোনো দরকার।
~ গান করছিলো কে।
~ কোথায়।
~ আপনার রুমের সামনে থেকে যাচ্ছিলাম তখন তো আপনার রুমেই শুনতে পেলাম কেউ গিটারে সুর তুলে গান করছে।
~ ভিতরে আসো।
নিশাত দরজা থেকে সড়ে ভিতরে যায়।
~ আপনি গান গায়তে পারেন? (বেডে গিটার দেখে)
~ টুকটাক।
~ ভয়েস সুন্দর শুনছিলাম বাইরে থেকে। তা হঠাৎ রুমে একা বসে গান করার কারন জানতে পারি। আমাদের ডাকলেও পারতেন সবাই আড্ডা দেওয়া যেতো।
~ তেমন কিছু না আসলে মুড সুইং করেছিলো তাই একটু গিটার নিয়ে টুং টাং করছিলাম। আয়ান তিশা কি করছে, ?
~ ওদের যা কাজ। ঝগড়া
~ আয়ান টাও পারে। তবে এটা কিন্তু একটা লক্ষন বুঝলা প্রিয়।
~ লক্ষন?
~ হুম এটা প্রেমের অগ্রিম লক্ষন
~ খুব জানেন দেখছি। প্রেমের কয়টা ক্লাস পার করছেন।
~ ওই সৌভাগ্য হয়ে উঠলো কই।
~ আপনার মতো মেয়ে এখনো সিঙ্গেল মানা দুষ্কর।
~ দুষ্কর হইলেও সত্যি। ছোট থেকেই নিজের শখ সপ্ন পূরনের দিকটা নিয়ে খুব তোড় জোড় ছিলো আমার। আগে নিজের ইচ্ছা সপ্ন গুলো পূরন হবে তারপর অন্য কিছু লক্ষটাই এমন ছিলো। সাথে ছিলো পড়াশোনা। এতো কিছুর ভেতর থেকে স্কুল কলেজ পাড়, ভার্সিটি উঠে তো আলাদা উদ্যেগ। পলিটিক্সে যুক্ত হওয়ার পর তো আর চান্সই হইলো না। তবে প্রেম করিনি ঠিকই কিন্তু কোথাও একটা গিয়ে বেধে গেছি গো প্রিয়।
~ মানে। বুঝলাম নাহ।
~ প্রেম করিনি কিন্তু প্রেমে পড়েছি।
~ কে সে ভাগ্যবান।
~ ভাগ্যবান বলছো।
~ আপনার মতো স্মার্ট। ইন্টিলিজেন্ট। জিনিয়াস একটা মেয়ে পাওয়া তো ভাগ্যই। তার ওপর আবার পলিটিক্যাল লিডার।
~ হাহাহা মজা নিচ্ছো।
~ আরে নাহ আই আম সিরিয়াস। আচ্ছা চলুন একটা গান শোনান।
~ যদি আপনি সাথ দেন তো।
~ ভেড়ার মতো গলায় গান মানায় নাকি আপনিই গান করুন আমি শুনি।
~ তুমি যে কলেজের টপ স্টুডেন্ট + টপ সংঙ্গীত শিল্পী এটা কিন্তু আমার অজানা নই।
~ তাই অনেক জানেন দেখছি আমার সম্পর্কে।
~ আই নো অল অফ ইউ,
~ ও মাই গড। তাই নাকি। তা কি কি জানেন বলুন তো।
~ সবই তো জানি। আর এটা ও জানি তুমি রাতে কল্পর সাথে দেখা করতে যাও।
~ অনেক জেনে ফেলেছেন। এইসব নিউজ পান কই।
~ তুমিই না বললা পলিটিক্যাল লিডার। তার কাছে তো এইসব নিতান্তই ক্ষুদ্র বিষয়,
~ রাইট।
~ তা তোমার কল্পর কি খবর একটু বলো। কতদূর এগোলে।
~ সব জানেন আর এটুকু জানেন না।
~ উহু জানি না তুমি বলো
~ দেখা হয়নি এখানে এসে আর।
~ ইশশ খুবই মর্মান্তিক ব্যাপার। তা তোমার কল্প জানে যে তুমি তার জন্য এতো উতালা হয়ে থাকো।
~ বাড়িয়ে বলছেন না।
~ একটুও না।
হঠাৎ দরজায়।
~ নিশু ডাকছিলা।
~ আরে আয়ান তিশা। আসো। হ্যা মেসেজ দিলাম তো।
~ কি রে প্রিয় তুই এখানে (রুমে ঢুকে অবাক হয়ে)
~ বাইরে থেকে যাচ্ছিলাম ভিতরে গানের আওয়াজ পেয়েই এসছি ভিতরে।
~ নিশু তুমি গান ও পারো নাকি।
~ একটু আধটু।
~ নিশাত আপু তোমার ফ্রেন্ডটা একটা জংলী জানো। দেখো আমার চুল ছিড়ে কি করছে।
~ 😱 আয়ান তুমি ওর চুল ছিড়ছো কেন।
~ জালাবে কেন তা আমায়।
~ তাই বলে তুমি ওর চুল ছিড়বা।
~ টেনে দিয়েছি। ছিড়লাম কখন। কি মিথ্যা বলে দেখছো।
~ আয়ান ভাইয়া তুমি কিন্তু ইনডিরেক্টলি আমায় মিথ্যুক বলছো। 😒
~ আমি কি তোকে ভয় পায় নাকি যে ইনডিরেক্টলি বলবো। ডিরেক্টলি বলছি তুই একটা মিথ্যুক।
~ আয়ান ভাইয়া একদম তুই তুকারি করবা না কিন্তু।
~ হুররর ছেড়ি আইছে আমার গুরুজন। যা ভাগ।
~ নিজেই তো টানতে টানতে নিয়ে এলে আবার ভং ধরছো কি জন্য
~ তোর মতো মেয়েরে কে টেনে আনছে আমি। ও আল্লাহ গো আমার কি কুত্তায় কামড় দিছে নাকি যে আমি তোরে টানতে টানতে আনবো। তোর তো চরিত্রগত সমস্যা আছে রে সব সময় একটা ছেলের আগে পিছে ঘুর ঘুর করিস লজ্জা লাগে না তোর।
~ আয়ান ভাইয়য়য়য়য়য়য়াাাা 😤 একদম চরিত্র নিয়া কথা বলবা না খুন করে ফেলবো কিন্তু।
~ তোর দিয়া ভরসা নাই রে ডায়নি তুই খুন কেনো জীবন্ত মানুষের রক্ত চুষেও তাকে পরাপারে পাঠাতে পারিস। আবার ওই রুপ দিয়ে তো যাকে তাকে ঝলসেও দিতে পারিস। ডায়নি একটা।
~ প্রিয় ভাইয়া কিছু বলবা তুমি (দাতে দাত পিষে)
প্রিয় নিশাত অবাক হয়ে চেয়ে আছে ওদের দিকে।
~ আয়ান আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না তুই একটা ভার্সিটির স্টুডেন্ট। (অবাক হয়ে)
~ তোমাদের দুজনের দ্বারাই জটিল প্রেম সম্ভব।
~ এদের দেখেও আপনি এ কথা কেমনে বলেন দুটোই তেল পানি।
~ হইছে হইছে। আমি যে জন্য ডেকেছি আমি তোমাদের
~ শুনছি। আগে বলো ওই পেত্নি রে কেনো ডাকছো।
~ আমি পেত্নি হইলে তুমি রাক্ষস।
~ স্টপপপপ।
নিশাতের চিল্লানিতে সবাই থেমে যায়।
~ আমরা এখন বাইক নিয়া ঘুরতে যাবো সবাই
~ ওওওওওওও কি মজা।
~ হুউউউ আইছে মজা। তোমারে কে নিচ্ছে এতো লাফাইতেছো।
~ আপু আমারে নিবা না (ঠোট উল্টে)
~ আরে নিবো না মানে ওর কথা কি শুনো তুমি। আমরা চারজনই যাবো।
~ বাইক একটা চারজন কেমনে যাবো।
~ বাইক একটা ম্যানেজ করছি আমি, ওটা ম্যাটার নাহ, আমি আয়ান আর তুমি তিশা কেমন।
~ প্রিয় ভাইয়া প্লিজ আমাকে আয়ান ভাইয়ার সাথে দাও প্লিজ প্লিজ প্লিজ (ফিসফিসিয়ে)
~ কিন্তু
~ প্লিজ (ইনোসেন্ট লুক এনে)
~ তোরা কি ফিসফিস করছিস
~ সবকিছু তোমায় কেন বলবো।
~ এই চলো চলো বের হই।
বাইকে বসছে সবাই। প্রিয় নিশাত। আয়ান তিশা।
~ আপনাকে বাইকে নেওয়ার কোনো ইচ্ছায় ছিলো না নেহাত তিশু আয়ানের সাথে থাকবে রিকোয়েস্ট করলো তাই।
~ আমি জানতাম তিশু আয়ানের সাথে থাকার জন্যই বায়না করবে আর আমি নিজে থেকে বললে তো নিতা না তাই প্রথমে আমিই আয়ানের সাথে যাবো বলেছিলাম,
প্রিয় অবাকের সপ্তমে। নিশাতের কথা শুনে অবাক হয়ে পেছনে নিশাতের দিকে তাকায়।
~ যাওয়া যাক
পর্ব ১৪
ঘুরতে আসা দিনগুলো কেটে যায় সপ্নের মতো। অতি মধুর ও ছিলো সময়টা। এই সবুজের মাঝে যে কেউই নিজ ইচ্ছায় বিলীন হয়ে যেতে রাজী। দেখতে দেখতে ফেরার দিন চলে এসেছে। নিশাত প্রিয়র সম্পর্কটা হয়তো এবার বন্ধুত্ব নামক নামটা দেওয়ায় যায় খুব না হলেও কিছুটা খাতির হয়েছে দুজনের। আর আয়ান তিশা ওটা তো তেল জল। তেল জল যেমন এক হয় না এদের অবস্থা ও তেমন এদের মধ্যে তো কিছু হবে বলে মনে হয় না একটু গরম তেলে এক ফোটা পানিতেই চটপট শুরু হয়ে যায় সেখানে প্রেম কিভাবে সম্ভব কিন্তু নিশাতের ধারনা এদের মধ্যেই গভীর প্রেম সম্ভব।
প্রিয় বুঝে উঠতে পারে না নিশাতের এরুপ ধারনার কারন কি কারন প্রিয় ও মনে করে ওদের মধ্যে আর যায় হোক প্রেম ইম্পসিবেল,
কিছুদিন যাবৎ দেখা হচ্ছে না কল্পর সাথে। প্রিয়র মনটা এবার একটু বেশিই উতলা হয়ে উঠেছে তার কল্প পরীটার জন্য। বেশ ছটফটে ভাব উপলব্ধি করা যাচ্ছে প্রিয়র মাঝে, কালই সবাই বাসায় ফিরেছে। আজ ফ্রাইডে হওয়ায় সবার এক্সট্রা একদিন রেস্টের সময় ও পাইছে।
রাত বারোটা বেজে পাঁচ মিনিট ~
~ আয়ান
~ কে (ঘুমের ঘোরে)
~ তোর জোম
~ এতো রাতে কি চাই।
~ তোকে চাই।
~ সরি মাই ডিয়ার কলার। আপনি যাকে কল করেছেন তিনি এখন ঘুমে ব্যস্ত দয়া করে সকাল দশটার পর কল করবেন ধন্যবাদ
নিজের কথা শেষ করেই কল কেটে দেয় আয়ান। প্রিয় ততক্ষনাৎ ফোনটা হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হবার সময়ই তহমিনা মাহমুদ এর বাধা
~ এই যে মহারাজা। এতো তড়ি ঘড়ি করে এই রাত দুপুরে কই যাচ্ছেন আপনি।
~ মা বের হবার সময়ই কি তোমার বাধা দিতে হবে। কাজ আছে তাই যাচ্ছি।
~ কি মহা কার্য সিদ্ধি করতে যাচ্ছেন আপনি এই রাত বিরাতে আমি কি জানি না। এই তুই যে মেন্টালি সিক তুই জানস। এই রাত বেড়াতে তুই ওই কল্প না কে তার সাথে কি তোর আমি তো বুঝি না। তাও যদি ওই মেয়ে জানতো তুই তাকে পছন্দ করিস তা না দেখা নাই শুনা নাই রাত বেড়াতে ছুটে যায় অজানা মাইয়ার পিছে। এইসব কিছুর মুলে ওই আয়ান ছোকরা। আমার ভোলাভালা ছেলেটা রে পুরো নষ্ট করে দিছে।
~ মা তুমি পাচাঁলি পড়তে থাকো আমি আসছি। তোমার এই পাচাঁলির প্রতি পৃষ্ঠার প্রতিটা শব্দ আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।
~ তুই এক পাও বাড়ি থেকে বের হইলে এখন তোর পা ভেঙে গুড়ো করে দিবো কিন্তু আমি প্রিয়। ভালো একটা মাইয়া দেখে প্রেম করতে পারস নাই। বাইকার না কিসের কি ওইসব 420 মেয়ে ছেলেকে আমার বাড়ির বউ আমি করবো না প্রিয় এই বলে দিলাম।
~ আসছি দরজা লক করো।
~ হায় আল্লাহ এ কি ছেলে জন্ম দিছি আমি। আমার একটা অক্ষর ও শুনে না। মুখের ওপর কথা বলে চলে গেলো। আজ ফের তুই। তোর একদিন কি আমার একদিন।
বাইক নিয়ে আয়ানের বাসার নিচে দাড়িয়ে আয়ানকে লাগাতার কল দিচ্ছে প্রিয় কিন্তু বার বারই একই টোন ভেসে আসছে নট রিসিবল বলে।
প্রিয় হতাশ হয়ে বাইক থেকে নেমে দাড়ায়। বাসার আশপাশ ঘুরতে ঘুরতে প্রিয়র নজর যায় আয়ানের রুমের জানালায়।
প্রিয় বাঁকা হেসে হাতে একটা খোয়া উঠায় নেই। খোয়াটা সোজা আয়ানের জানালায় ছুঁড়ে মারে। জানালা খোলা থাকায় ওটা অনায়াসেই রুমে প্রবেশ করে এবং শুধু রুমেই না বরং সেটা গিয়ে সোজা আয়ানের পিঠে লাগে।
খোয়াটা সাইজে বড় এবং অনেক দূর থেকে ছুড়ায় আয়ানের পিঠে লাগতেই আয়ান চট করে বসে পড়ে।
~ কে কে কি কি (ভয় পেয়ে)
কথাটা বলেই রুমের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয় আয়ান।
~ কই কেউ তো নেই
তখনই আস্তে আস্তে আয়ানের পিঠে ব্যাথা অনুভুত হওয়ার দরুন পিঠ কুচকে সেখান হাত নেওয়ার আগেই ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিতেই আয়ানের চোখ চরক গাছ। তখন প্রিয়র কল কেটেই ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিলো সে এর মধ্যে বায়ান্নোটা কল। মেসেজ চেক করে দেখে প্রিয়র মেসেজ।
~ পাঁচ মিনিটে নিচে চাই নইতো
বাকিটা আর লেখা লাগেনি কারন বাকিটা আয়ান জানে। একবার তো প্রিয় এমন সময় এসে সে কি কান্ড আয়ান কে কল দিয়ে না পাওয়ায় মেইন গেট টপকিয়ে বাসায় ঢুকে এক নাগাড়ে আধা ঘন্টা যাবৎ বেল বাজিয়ে পুরো বাসার লোক এক জায়গায় করে ফেলেছিলো সে কি কান্ড।
পাঁচ মিনিট পর।
~ আমি কি মরেও শান্তি পাবো না। কোন কুক্ষনে তোর সাথে যে আমার দেখা হয়েছিলো জীবনটা শেষ করে দিলি আমার। এই জীবনে আর একটা রাতেও কি শান্তির ঘুম ঘুমাতে দিবি না। প্লিজ তোর পায়ে পড়ি প্রিয় আমাকে ছেড়ে দে প্লিজ। আমার ঘাট হয়ে গেছে আমি কখনো আর তোর সামনে আসবো না প্লিজ আমাকে রেহায় দে [বাইকে উঠে বসতে বসতে রাগী রাগী ফেস করে ]
~ বড্ড অপ্রয়োজনীয় কথা খরচ করিস তুই আয়ান।
~ আয়ান আর কথা বাড়ায় না কারন সে জানে তার এই কথা গুলো প্রিয়র কাছে অপ্রয়োজনীয়। প্রিয় বাইক স্টার্ট দিতেই আয়ান প্রিয়কে ধরেই ওর পিঠে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে যায়। ওরা হাইওয়ে এসে থামে। প্রিয় বাইক থামিয়ে আয়ান কে ডাকে। প্রিয় বাইক থেকে নেমে দাড়ায় আর আয়ান বাইকে বসেই ঝিমাতে থাকে।
~একটা বেজে পচিঁশ মিনিট আর পাঁচ মিনিট বাকি,
কথাটা বলেই প্রিয় রাস্তার এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। ঠিক এসময়টায় কল্পকে এখানে পাওয়া যায় আর প্রতি ফ্রাইডে তো মাস্ট। প্রিয় জানেও না আজ ওর জন্য কতো বড় সারপ্রাইজ ওয়েট করছে। অবশ্য জানবে কিভাবে। সারপ্রাইজ দেওয়ার মালিক তো তাকে জানায়ই নি যে তার জন্য সারপ্রাইজ আছে। বাইকের শব্দ পাওয়ায় প্রিয় আয়ান পিছনে চোখ নিতেই আজ একটা বড় সড় ধাক্কা পেলো।
ওরেন্জ কালারের লেদার জ্যাকেট পড়া সামনের চেইন খোলা। ভিতরে হুয়াইট টি~শার্ট। নেভি ব্লু কালারের জিন্স প্যান্ট। নেভি ব্লু হ্যান্ড গ্লাভস। ব্লাক এন্ড পার্পেল মিক্সড কালারের বাইক।
~ মামা পুরাই আগুন। 🔥🔥
আয়ান কথাটা বলতেই প্রিয় বাঁকা চোখে তাকাতেই ~
~ না মানে ওটাই তো সেই বিখ্যাত বাইকার কল্প। অনেক সুন্দর লাগছে তাই বলছিলাম আর কি (শুকনো ঢোক গিলে)
~ এতোদিনে প্রতিটা বার ক্রাশ খেয়েছি যতোবার এই নারীটার রুপ সামনে এসেছে কিন্তু আজ সেটা প্রেমে ফেলিয়ে দিলো। এই লুকটা তো ঘায়েল করলো আমায়। (মনেমনে)
তীব্র গতিতে কল্প প্রিয়দের সামনে থেকে যেতেই একদলা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগে ওদের গায়ে। প্রিয়র দৃষ্টি এখনো কল্প নামক নারীর দিকে স্থির আজ যেনো সে চোখ ফিরাতেই পারছে না। যে বাইকারকে দেখে ক্রাশ খেয়েছিলো আজ তারই প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে প্রিয়। কিছুদূর যেতেই থেমে যায় কল্পর বাইক তীব্র বেগে আবারও এসে থামে একদম প্রিয়র সামনে। প্রিয়র হার্টবিটের লাফালাফি জেনো ক্রমগত বাড়তেই আছে এই বুঝি বের হয়ে যাবে।
কল্প এসে বাইক থামিয়ে বাইকে বসেই প্রিয়র দিকে হ্যান্ডশেকের হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রিয় হাত বাড়িয়েও বাড়াতে পারছে না তার হাত জেনো আজ স্তব্ধিত থাকার নিয়ত করেছে। প্রিয় বহু কষ্টে হাত মেলায় কল্পর সাথে। কল্পর হ্যান্ডগ্লাভস পরিহিতা থাকায় তেমন কোনো অনুভুত হয়নি প্রিয়র। কল্প প্রিয়র দিকে তাকিয়ে তার বাইকে ওঠার জন্য ইশারা করলে প্রিয় কিছু একটা ভেবে উঠে বসে বাইকে। প্রিয় বাইকে উঠতেই কল্প একটা পানির বোতল ছুড়ে দেয় আয়ানের দিকে।
পুরো ঘটনাটা আয়ান থ বনে দেখতে থাকে। আয়ান আরো অবাক হয় এটা ভেবে যে প্রিয় ওরে একা রেখেই কল্পর বাইকে উঠে যায়। আয়ান বোতলটা নিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটায়ে বাইকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেয়। পানিটা পেয়ে ভালোই হয়ছে চোখে ঘুম ছিলো সেটা কেটেছে আয়ানের নইতো বাইক চালাতে সমস্যা হতো বাট কল্প কি ভেবে ওকে পানি দিলো এটাই ওর মগজে ডুকছে না।
কিছুদূর যেতেই কল্প বাইক থামিয়ে ফোন বের করে ইয়ার ফোন লাগিয়ে গান চালিয়ে একটা প্রিয়র কানে দেয় একটা ও নেয় এই সব কিছুই জেনো প্রিয়র মাথার ওপর দিয়ে যায় ওর কাছে পুরোটায় সপ্ন লাগে কিন্তু এটা সপ্ন হলেও রাজী প্রিয়। এই সপ্নের মাঝেই ও ডুবে থাকতে চায়। প্রিয় আলগা ভাবেই বসে আছে এটা দেখে কল্প হালকা হেসে ব্রেক দিতেই প্রিয়র এক হাত কল্পর কোমড় আর এক হাত কল্পর কাধে চলে যায়। প্রিয় কোমড় থেকে হাত সরিয়ে সরি বলতে গেলেই কল্প এক হাত দিয়ে কোমড় থেকে প্রিয়র হাত সরাতে বাধা দেয়। প্রিয় সেভাবে বসেই কল্পর দেওয়া গান আর সময়টাকে ফিল করে। ও কল্পর সাথে এক বাইকে এটা সত্যিই প্রিয়র বোধগম্য হচ্ছে না।
রাত তিনটা বেজে পনেরো মিনিট
এখনো ছুটে চেলেছে তারা। দুজনের মাঝে পিন পতন নিরবতা বাইক আর বাতাসের শা শা শব্দ ছাড়া আর কোনো কথা নেই তাদের মাঝে। দুজন দুজনার কাছে আছে এটাই হয়তো ফিল করছে তারা। অজানা গন্তেব্য ছুটে চেলেছে তারা। এই নিস্তব্ধতা জেনো তাদের ভালোবাসা কে বরন করছে। কি একটা অনুভুতি তাই না অচেনা অজানা তবুও ভালোবাসাটা হয়ে যায়
~না বলা ভালোবাসা গুলোয় সব থেকে বেস্ট হয়। সেখানে থাকে অনেক চাওয়া পাওয়া অনেক আবদারের সমারোহ কিন্তু সবই থাকে না বলার ভেতর। দুজন সবটাই বুঝে নেয় তাদের ভেতর থাকা ভালোবাসার অনুভুতি দিয়ে। ~ যেখানে ভালোবাসাটাই না বলার ভেতর থাকে সেখানে তো ছাড়াছাড়ির প্রশ্নই আসে না ~থাকুক না এমন না বলা ভালোবাসাগুলো যেখানে কেউ ছাড়াছাড়ির প্রশ্নে আসবে না। ~
বাইক এসে প্রিয়র বাসার নিচে থামতেই বেশ অবাক হয় প্রিয়। তার ধারনামতে কল্পর জানার কথা না প্রিয়র বাসার ঠিকানা। প্রিয় বাইক থেকে নামতেই কল্প প্রিয়র হাত ধরে নেয় প্রিয় কল্পর দিকে তাকাতেই কল্প মুচকি হেসে হাত উঠিয়ে বায় দেয় প্রিয় ও বায় দিলে কল্প বাইক ঘুড়িয়ে চলে যায়। আজ এতোটা সময়েও কল্পর মুখ দেখা হওয়া উঠলো না। সময়টা এতো দ্রুত কেনো শেষ হলো ভাবতে ভাবতেই বাসার ভিতর পা বাড়ায় প্রিয়।
,
,
পরদিন আয়ান প্রিয়কে প্রিয়র বাসার নিচে থেকে ড্রপ করে ভার্সিটির উদ্দেশ্য। প্রিয়র বাইক আয়ানের কাছে থাকায় আয়ানই ড্রপ করে প্রিয়কে। প্রিয়র মনটা আজ অসম্ভব ভালো আয়ানের কালো হয়ে থাকা মুখটাও জেনো আজ প্রিয়কে আধারে নিতে পারছে না। প্রিয়র এতো ফুরফুরা মেজাজ দেখে আয়ানের রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। এটা দেখেই প্রিয়র আরো ভালো লাগছে।
আজ ক্লাসেও কোনো কথা বলেনি আয়ান প্রিয়র সাথে শুধু প্রিয় নই কারো সাথেই কোনো কথা বলেনি আয়ান। আয়ানের কি হয়েছে জিগ্যেস করায় নিশাতের দিকে চেয়ে মুচকি হাসছে মাত্র প্রিয়। এদের ভাব গতি নিশাতের এক রকম মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
ক্যান্টিনে বসে আছে চারজন। প্রিয় তিশা আয়ান নিশাত কিন্তু কারো মুখে কোনো কথা নাই সবাই সবার মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে কিন্তু প্রিয় সে তো জেনো চাঁদ হাতে পাওয়া খুশি তার মনের সুখে কোক খাইতে ব্যস্ত সে।
নিশাত আস্তে করে আয়ানকে প্রশ্ন করলো কি হয়ছে। আর আয়ান জেনো এই একটা কথার অপেক্ষাতেই ছিলো। ইচ্ছামতো ধুয়ে দিলো প্রিয়কে কিন্তু প্রিয়র এতেও কোনো হেলদোল নেই ও কোকের বোতলের মুখে এক চোখ নিয়ে দেখতে ব্যস্ত আর কোক বাকি আছে নাকি।
~ আয়ান রিলেক্স এতো হাইপার হচ্ছো কেনো। কি হইছে বলো আমাদের।
~ তুই বন্ধু শালা। আমার তো মনে হয় আমার জীবনের সব থেকে বড় শত্রু তুই। কাল ও ভাবে আমায় একা ফেলে চলে গেলি কেমনে একবার পিছে ফিরেও তাকালি না। আজকের পর জেনো তোরে আমার বাড়ির ত্রি~সীমানায় ও না দেখি প্রিয়। আর আজ থেকে যদি আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাইছোস তাহলে তোরে আমি খুন করে ফেলাবো বলে দিলাম।
কথা শেষ করেই উঠে চলে যায় আয়ান। প্রিয় এখনো কুল কারন এটা ওর কাছে নতুন না। কল্পর সাথে দেখা করতে গেলেই সেদিন ওর ঘুম নষ্ট হবে আর কাল তো একটু বেশিই হয়ছে তাই আয়ানের এই ব্যবহারে প্রিয় অভ্যেস্ত।
~ এই প্রিয় কি হইছে বলবা তোমাদের কিছুই বুঝলাম না আয়ানের এমন ব্যবহার অথচ তুমি কুল।
~ আরে নিশু আপু তুমি তো এদের সাথে নতুন তাই জানো না এমন মাঝে মাঝেই হয় কাল ও বোধয় প্রিয় ভাইয়া আয়ান ভাইয়া কে ঘুম ভাঙিয়ে ভাবি মনির সাথে দেখা করতে গেছিলো তাই আয়ান ভাইয়া রেগে আছে কিছুক্ষন পরই ঠিক হয়ে যাবে তুমি টেনশন নিয়ো না
কথা শেষ করেই মুচকি হেসে উঠে যায় তিশা।
~ ভাবি~মনি টা আবার কে।
~ কল্প
~ ওহ কাল গেছিলা বুঝি দেখা করতে
~ হুম
কথাটা শুনেই কেনো জেনো নিশাতের মুখে অন্ধকার নেমে আসে। তারপরও নিশাত প্রিয়কে প্রশ্ন করে ~
আর তোমার এতো খুশির কারন কি। সেটাও কি কল্প।
নিশাতের প্রশ্ন শুনে প্রিয় রাতে কল্পর সাথে কাটানো সময়টার কথাটা বললেই নিশাতের হাব ভাব কেমন জেনো অন্য রকম লাগে যেটা চোখ এড়ায়নি প্রিয়র ও।
~ আর ইউ ওকে নিশাত।
~ ইয়াহ
~কথাটা বলে আচমকায় উঠে চলে যায় নিশাত। পিছে থেকে প্রিয় কয়েকবার ডাকলেও আর সাড়া দেয়নি নিশাত ~
~ হঠাৎ আবার এই মেয়ের হলো কি
পর্ব ১৫
আজ দুদিন হলো নিশাত ক্লাস মিস দিয়া নিজেকে বাড়ি বন্দি করে রেখেছে। কারনটা সবারই অজানা। আয়েশা আনা। রাদিন আহমেদ (নিশাতের মা~বাবা) তারাও নিশাতের রুমের দৌড়গোড়ায় সারাক্ষনের ঘুরাঘুরিতেও কোনো কাজ হয়নি কারনটা অজানায় রয়ে গেছে তাদের।
অনেক ডাকাডাকি জিগ্যেসা বাদের পরও তারা জানতে পারেনি কেনো তাদের মেয়ে নিজেকে বাড়ি বন্দি করেছে। খাওয়ার সময় বাদে ঘর থেকে বের হয় না নিশাত আর বিকাল হলে ছাদে রাত নামতে নামতে আবার ঘরে ফিরে। আয়েশা আনা মেয়ের কান্ড দেখে অবাক কারন তার মেয়ের এরুপ সে প্রথম দেখছে। নিশাত নিজেকে বাড়ীতে আটকে রেখেছে ভাবতেই তিনি চরম অবাক। যে মেয়ে কিছু সময় বাড়িতে থাকলেই দম বন্ধ লাগে বলে চিললায় আর সে
বিকাল পাঁচটা বেজে দশ মিনিট ছাদে কানে ইয়ারফোন গুজে আকাশপানে মুখ করে চোখ বন্ধ করে দোলনায় বসে আছে নিশাত। হঠাৎ ই পিঠে অন্য রকম ছোয়া পেয়ে চোখ মেলে পিছে দেখে নিশাত ~
~ তুমি।
~ হু সরি টাচ করার জন্য। পেছন থেকে ডেকেছি কয়েকবার শুনো নাই তাই টাচ করেছি।
~ না বলেই যে সে টাচ করে যাচ্ছে তুমি আর এমন কি (আনমনে)
~ ঠিক বুঝলাম না।
~ না কিছু না বলছি। অবশেষে তুমিতে আসলে তাহলে।
~ ফ্রেন্ড মেনেছি যেহেতু সেহেতু আপনি আগ্গে টা আর মানাচ্ছে না।
~ গুড তবে আমি সারপ্রাইজড। তুমি এখানে আমার বাসায় হঠাৎ
~ অনুতপ্তর তারনায়। ফোন অফ কেন। আর আজ দুদিন ভার্সিটি যাচ্ছো না ইম্পরটেন্ট ক্লাস মিস করলা। সেদিন কি এমন হলো আমার সামনে থেকে অমন ভাবে চলে এলে তারপর থেকে উধাও তাই চলে এলাম বাসায়। সমস্যা আছে নাকি,
~ উহু। বসো না।
~ বসলাম। এবার বলো কি হইছে।
~ কিছু না এমনিতেই গো। কাল থেকে যাবানে।
~ কাল একটা এক্সাম ছিলো জানো।
~ হু
~ জেনে মিস দিলা। ওটা কতোটা ইম্পরটেন্ট ছিলো জানো তো।
~ বাদ দাও ওসব। তুমি বসো আমি কফি নিয়ে আসি।
যেতে হবে না আমিই নিয়ে এসছি কফি।
(নিশাত উঠতে নিলেই আয়েশা আনা। কফি হাতে ছাদে উঠতে উঠতে বলে)
~ প্রিয় তুমি তাই তো। (কফি বাড়িয়ে দিয়ে মুচকি হেসে)
~ জ্বি আন্টি। (কফি নিতে নিতে)
~ ঠিক আছে তোমরা কথা বলো আমি আসছি।
আয়েশা আনা চলে যান।
~ বললে না সমস্যা কি
প্রিয়র এমন নরম স্বর শুনে নিশাতের চোখে পানি চলে এসেছে। হুট করেই সে কান্না করে দেয় যেটা আজ ক’দিন মনের ভিতর চেপে রেখেছিলো এখন আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কাদতে কাদতে হিচকি তুলে ফেলছ।
~ আরে এই নিশু কাদছো কেন। রিলেক্স রিলেক্স। (প্রিয় কথার মাঝে এক হাত দিয়ে কাছে টেনে নেয়। নিশাত ও যেনো দুঃখ বিলাসের জায়গা পেয়ে গেলো। প্রিয়র কাধে মাথা রেখে হিচকি তুলে কাদতেছে আর প্রিয় নিশাতের মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করতে ব্যস্ত।)
~ আরে কি হইছে বলবা তো।
~ সেদিন তোমার সামনে থেকে এসে একটা ক্লাসের সামনে দিয়ে যেতেই হঠাৎ কেউ হাত টেনে চোখ ধরে রুমে নিয়ে অনেক কাছে চলে আসে এর আগেই কয়েকবার এমন (কথাটা শেষ না করেই আবার কান্না জুড়ে দেয়)
~ সে কি আগে বলোনি কেন তুমি এসব। 😳 আর তোমার সাথে এমন করছে এতো সাহস তার মানতেই হবে। বাট কে সে।
~ পাইলে তো ওরে চাটনিই বানাতাম। ছোটলোকের বাচ্চাটারে।
~ এভাবে গাল দিয়ো না খারাপ লাগে তো। বেশি খারাপ তো করেনি
~ এতোকিছু রেও তোমার কম লাগছে। 😬
~ শান্ত শান্ত এতো রেগো না। বাট তার কিন্তু সাহসের বাহবা না দিলই নয়। কি বলো 🤪
~ প্রিয়
~ ওকে ওকে। এখন কথা হইলো। একজনের সাথে খারাপটা তখনই হয় যখন সে অন্য জনের খারাপ করে। তোমার বিষয়টা তাহ
~ তার মানে কি বলতে চাচ্ছো তুমি আমি খারাপ করেছি কারো।
~ না মানে সেটা তো বলতে চায়নি বাট এমনই তো হয় তাই বললাম।
~ আমি তো শুধু তোম (কথাটা বলতেই থেমে যায় নিশাত ভয়ে দাত দিয়ে জিব চেপে ধরে)
~ তোম বলেই থেমে গেলে যে। (সন্দিহান চোখে)
~ না মা মানে কফি তো ঠান্ডা হয়ে গেলো প্রিয় কফিটা খাও।
~ আগে তোমার কথা শেষ করো।
~ আরে কিছু না (বলে দোলনা ছেড়ে উঠতে নিলেই হাত ধরে নেয় প্রিয়)
~ কি হলো হাত ধরলে যে।
~ উঠছো কেনো বসো মিস নিশাত আইরা
(প্রিয়র মুখে নিজের পুরো নাম শুনে চমকে যায় নিশাত কারন আজ প্রথম প্রিয় তার পুরো নাম উচ্চারন করেছে। প্রিয়র চোখ মুখের ভাষা ও এখন অন্য রকম লাগছে)
~ তোমার সাথে ঠিক যা যা হয়েছে লোকটা তোমার কাছে ঠিক যেভাবে এসছে ঠিক সেভাবেই তুমি আমার কাছে আসতে নিশাত। (প্রিয়র কথাটা নিশাত ঠিক হজম করতে পারলো না ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়র দিকে। অবশেষ কিনা ধরা পরেই গেলো শেষ রক্ষা কি হলো না তাহলে কি এতো কষ্টে গড়ে তোলা বন্ধুত্বটা এখনই শেষ হয়ে যাবে) ঠিক এতোটাই কাছে আসতে যতোটা কাছে তোমার কাছে কেউ এসছে। নিজের ওপর খুব ঘৃনা লাগছে না। অসস্তি হচ্ছে না খুব বিরক্ত ও লাগছে।
একটা অজানা অচেনা লোক তোমার এতো কাছে ভাবতেই শরীর রি রি করছে না। ইচ্ছা করছে না লোকটাকে কাছে পাইলে খুন করে ফেলতাম। ঠিক এমন অনুভুতিই আমার হতো নিশাত। অসস্তি। বিরক্তি। নিজের ওপর ঘৃনা। মানসিক যন্ত্রনা গ্রাস করে ফেলছিলো আমায়। অনিচ্ছাকৃত কেউ কাছে আসা কতোটা বিরক্ত বুঝছো তো। ইচ্ছা করতো গলার কাছের চামড়াটা উঠায় ফেলতে। যখন মনে অন্য কেউ আর শরীরে অন্য কারো ছোয়া তখন মানসিক যন্ত্রনা কতোটা তীব্র হয় ধারনা আছে তোমার। এবার বলো তো কেনো করছো এমন।
~ যেদিন নবীন বরন অনুষ্ঠান হলো ভার্সিটি তার ঠিক দুদিন আগে আমি একবার ক্যাম্পাসে গেছিলাম কাজে, গিয়েই এক রকম ধাক্কা খায়। সাথে চোখটা ও আটকে যায় সামনে তোমাকে দেখে। লাইফের ফার্স্ট লাভ। মনে দাগ কেটে গেছিলো। আর তোমার গলার নিচের লাল তিলটা ছিলো নেশাময় তোমায় যখন একটু কাছ থেকে দেখেছিলাম তখন চোখে পড়েছিলো ওটা আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি নবীন বরনের দিন তারপর লাইব্রেরি যতোবারই সুযোগ পেয়েছি তোমার কাছে গেছি। কেনো যেনো ওই তিলটা ছুতে না পারলে মনের ছটফটানি কমতো না খুব অস্থির লাগতো। বুঝতে পারলাম ভালোবাসার অনুভুতিটা।
~ কিন্তু তোমার জানা উচিৎ ছিলো আই লাভ সামওয়ান ইল্জ। এখন বলো তোমার কেমন লাগছে। আমাকে ভালোবাসার পরও অন্য কেউ কাছে আসায়।
~ হুম (মাথা নিচু করে) সরি
~ তোমার কাছে যাওয়া লোকটা আমিই ছিলাম 😒 (নরম স্বরে)
~ কিহহহ😮
~ হু তোমাকে বোঝানোর জন্যই এসব কিছু বাট আমি কিন্তু তোমার চোখ হাত ছাড়া কোথাও টাচ করিনি তুমি তো অনেক বেশি আগায় ছিলা। ঘটনাটা ঘটার পর যখন তোমার সাথে স্যার পরিচয় করালো তখন থেকেই কেনো জানি মনে একটা ঘটকা লাগতো কারন ঘটনাটা তুমি এসছো সেদিনই হলো আর তোমার সম্পর্কে স্যার যেমন বললো এতে তুমি ছাড়া এমন কিছু কারো সাহস হবে না
কারন কোনো মেয়ে আজ ও আমার কাছে ঘেষতে পারে না দেখলেই ভয়তে একশো হাত মেপে দূরে থাকে আর সেখানে কিন্তু আমি শিওর ছিলাম না প্রথম দিনই তুমি এমন করবা এটা ভাবাটাই বোকামি মনে হয়ছিলো তারপর ও আবার যখন সেম কাহিনি হলো তখন পুরো সন্দেহ তোমার ওপর। কারন তুমি এসেই এমন সব হচ্ছে বাট আমার হাতে কোনো প্রমান নাই আর প্রমান বাদে কিছু প্রমান করার সাদ্ধিও নায়। সন্দেহ আরো বাড়লো ক্লাসে তোমার হ্যান্ড রাইটিং দেখে। পুরো না মিললেও টাইপ একই রকম তারপর ও ডিপ প্রমান দরকার ছিলো আমার আর সেটা পেলাম তোমার অসুস্ততার দিন।
যখন তোমার কপালে জল পট্টি দিচ্ছিলাম তখনই তোমার শরীরের স্মেলটা কেমন জেনো পরিচিত লাগছিলো দেন তোমাকে খাইয়ে যখন তোমার পাশে বসলাম আর তুমি আমাকে তোমার মা ভেবে আমার হাত ধরে কাধে হেলান দিয়ে শুয়েছিলে ঘুমের ঘোরে তখনই তোমার শরীরের স্মেলটা ডিপ ভাবে পেয়েছিলাম যেটা আমি আমার কাছে আসা অদৃশ্য মেয়েটার থেকে পেতাম। আর আমি তখনই শিওর হলাম ওটা তুমিই আর তাই এতোকিছু তাছাড়া তুমি অলওয়েজ পারফিউম ইউজ করে সামনে আসতা। আর তাই যেদিন আমরা চিম্বুক হিলে গেলাম আর তুমি আমাকে পাহাড়ের ওপর নিয়ে গেছিলা ওসব কিছুই তোমার ভ্রোম না সবই সত্যি ছিলো।
নিশাত অবাক হয়ে এতক্ষন শুধু প্রিয়র কথা গিলছে ভাবতেই পারছে না যে প্রিয় এতো ক্লেভার।
~ এভাবে হা করো না মাছি ঢুকে যাবে।
প্রিয়র কথায় সম্মতি ফিরে পায় নিশাত।
~ নিশু তুমি যা করছো সেটা ভুল তাই তোমার ভুলটা ধরিয়ে দেবার জন্যই আমার এসব করা।
আমরা মানব জাতী আমাদের পাওয়ার আকাঙ্খা সর্বোচ্চ। যেটা একবার আমাদের মনে ধরে যায় নিজের শেষ সার্থদ্বারা তা হাসিল করার চেষ্টায় থাকি তা কোনো নিকৃষ্টতম কাজ দ্বারা হলেও। আর ভালোবাসা এটার জন্য তো মানুষ জান নিতেও পারে আবার দিতেও পারে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়তই আমরা এমন নিউজ শুনে থাকি অমুক প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সুইসাইড করছে অমুক ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে আমি কিন্তু বাস্তবমুখী। বাস্তবতা যে দিকে আমার গতিবেগ ও সেদিকে। জোরপূর্বক আটকে রাখার চেষ্টাটা বড়ই বিরল আমার।
আমি বলি কি তুমি চাইলে আমরা বন্ধুত্ব পূর্ন সম্পর্ক কিন্তু রাখতে পারি আগের সব ভুলে।
~ যদি কল্প চলে যেতে চাই তাহলে কি ওকেও আটকাবা না।
~ উহু
~ তাহলে কেমন ভালোবাসো।
~ ও যতোটা কল্পনায় রাখবে তার চেয়ে সর্বোচ্চ ভালোবাসা আমি ওকে উজার করে দিবো কিন্তু তারপরেও যদি ও যেতে চায় তাহলে সেটা আমার নয় ওর ব্যর্থতা ও আমার ভালোবাসার মূল্য না দিতে পারার ব্যর্থতা সেক্ষেত্রে ও যেটা চাইবে আমি সেটাই মেনে নিবো কিন্তু ও যদি ভালোবেসে আমার সাথে থেকে আমার মাথায় উঠেও নাচে তাহলে কখনই ওকে আছার দিবো না বরং ভালোবেসে মাথা থেকে বুকে আনিয়ে নিবো।
~ গুড গুড। পছন্দ হলো তোমার কথা গুলো।
~ আমি আরো একটা বিষয়ে সন্দিহান নিশু।
~ এই। কল্প’নিচে তোর বাবা ডাকছে প্রিয়র সাথে পরিচিত হবে
পেছন থেকে কারো মুখে কল্প নাম শুনতেই তড়িৎ গতিতে সেদিকে তাকায় প্রিয়। নিশাত আয়শার দিকে তাকাতেই আয়শা দাত দিয়ে জিব কাটে।
প্রিয় স্বাভাবিক ভাবেই বাকা হেসে তাকায় নিশাতের দিকে নিশাত চোরের মতো প্রিয়র দিকে তাকাতেই ওদের চোখাচোখি হয়ে যায়।
~ আমরা আসছি আন্টি (মুচকি হেসে)
আয়শা আনা ঝট করেই সিড়ি দিয়ে নেমে চলে যায় জেনো এতোক্ষন কেউ তার দমটা আটকে রেখেছিলো। আয়শা যেতেই প্রিয় ঠোটে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে নিশাতের দিকে তাকায়। আস্তে আস্তে নিশাতের দিকে আগাতে থাকলে নিশাত পিছিয়ে যায় একসময় ছাদের সাথের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় নিশাতের।
~ কি হলো পিছাও 😊
~
~ ওয়ার্ল্ড ফেমাস লেডি বাইকার মিস। কল্প। (বাকা হেসে) মাই ওয়ান এন্ড অনলি ক্রাশ এন্ড লাভ। ইশশশশ এতো জলদি ধরা খেয়ে গেলে
~ 🥺😭
~ তুমি ভালো অভিনেত্রি হতে পারো ভালো কি চমৎকার অভিনেত্রি। আমি তো তোমার নাটকে শিহরিত বাইকার। কল্প
~ নিচে যায় বাবা ডাকছে। 😢
~ তোমার মা দেখলাম আমার নাম শুনেই অনেক খুশি কাহিনি কি বলো তো জামাই হিসাবে কি পছন্দ হয়ে গেলো নাকি। (এক হাত দিয়ে দেওয়ালে আটকে)
~ আসলে
~ হুম বলো আসলে
[ নিশাত আর কিছু বলতে পারে না কেদে দেয় ]
~ এই মেয়ে কাদছো কেন আমি কি কিছু করেছি নাকি
~ তো এভাবে জেরা করছো কেন (নাক টানতে টানতে) আমি কি খুনি
~ না তুমি তো চোর
~ আমি কি চুরি করেছি তোমার
~ মন। এখন বলো এতো কাহিনি কেনো।
~ তো। যাকে তাকে মন দিয়া দিবো নাকি। যাকে ভালোবাসবো যার সাথে থাকবো তাকে ভালোভাবে বুঝেও তো নিতে হবে তার কাছে আমি কি আর আমার কাছে সে কি। সাময়িক অাবেগ নাকি সত্যিই ভালোবাসা। তাই তোমাকেও পরীক্ষা করলাম আর নিজেকেও সময় দিলাম বোঝার।
~ কোনো তুলনা নাই তোমার অভিনয়ের🤗বাহ বাহ ভেরি চতুর
~ অফকোর্স আই আম। মা ভুলটা না করলে আর আমি স্বীকার না করলে তো আর ধরতে পারতা না মা টা না পরো জ্বল করে দিলো আমার প্লান।
~
~ হাসো কেন আমি কি জোকার যে জোকস বলতেছি আর তুমি হাসতেছো
~ তোমার কি মনে হয় তুমি এতো চালাক হয়ে কোনো বোকার প্রেমে পড়ছো। যে তার সাথে এতোদিন নাটক করবা আর সে বুঝতে পারবা না। যেখানে একটা অজানা মেয়ে আমার কাছে আসায় এতো ঘৃনা লাগলো সেখানে আমি এমনিই নিশাতের কাছে যাবো ইউ সো ফুল কল্প।
~ সুনামই তো করছিলা আবার দূর্নাম কেনো।
~
~ কবে থেকে জানতে পারছো?
~ আগে চলো শশুর মশাইয়ের সাথে আলাপ সারি।
~ শয়তান
পর্ব ১৬
কল্প প্রিয় নিচে আসলে রাদিন আহমেদ এর সাথে পরিচিত হয় প্রিয়। কল্পর বাবা মা দুজনের আচরনই ভীষন বন্ধুত্ব সুলভ। রাদিন আহমেদের অনেক পছন্দ হয়েছে প্রিয় কে অবশ্য ওনারা আগে থেকেই জানতো প্রিয়র সম্পর্কে। কল্প বলেছিলো ওনাদের। কল্প বাবা মায়ের এক সন্তান হওয়ায় কল্পর কাছে ওনারায় সব ইভেন কল্প তো ফ্রেন্ড থেকেও অনেক বেশি ক্লোজ ওনাদের সাথে। প্রিয় সন্ধ্যায় আসতে চাইলে রাদিন আহমেদ প্রিয়কে রাতের ডিনারের জন্য জোর করায় থাকতে হয়ে প্রিয় কে।
~ তোমার বাবা মা তো এনারা।
~ এটা কোন ধরনের কথা প্রিয় 😒
~ না মানে এতো ফ্রি। বিয়ের আগেই তো জামাই আদরের ত্রুটি রাখছে।
~ বিয়ের আগে জামাই আদর কই পাইতেছো এখনও তো প্রেমই হইলো না। আমি কি প্রেমে রাজি হয়েছি নাকি।
~ মানে 😟
~ মানে আমি কি তোমাকে বলেছি। প্রিয় আমি তোমাকে ভালোবাসি
~ ভালোবাসার কথা বেশি বললে সস্তা হয়ে যায়। তুমি না বললেও আমি বুঝে নিতে পারি
~ হুহহহ বেশি বুঝে যায়তেছো। আর আমার বাবা মা আর পাঁচ দশটা বাবা মায়ের মতো না উনারা ডিফারেন্ট ওনাদের চিন্তা ভাবনা ডিপারেন্ট।
ওনারা আমার জন্য স্পেশাল আর ওনারা ও মনে করেন আমি ওনাদের জন্য স্পেশাল। বাবা মা ছোট থেকে আমাকে পুরো স্বাধীনতা দিয়েছে আর আমার সাথে এতোটায় মিশছে যে আমাকে আর অন্য ফ্রেন্ডের প্রয়োজন পড়ে নি। আমার বাবা মনে করেন একটা সন্তান তখনি বে পথে যায় যখন সে তার বাবা মা থেকে দূরে সরে যায়। বাবা মা থেকে অন্য কিছু কে বড় মনে করে অন্য কিছু কে বাবা মা থেকে বেশি প্রিয়রিটি দেয় তাহলে সে সব সন্তান সহজেই বদলে যায় একটা সময় তারা একাকিত্ব হয়ে যায়। বাবার মতে একটা সন্তানের জন্য সব থেকে জরুরি তার পরিবার। বাচ্চাটা জন্ম নেবার পর সে তার সামনে যেটা দেখবে সেটা থেকেই শিক্ষা নিবে।
আর বাবা মা যদি ফ্রেন্ড হয় তাহলে সে সন্তান কখনো খারাপ পথে যেতে পারে না কারন তারা যায় করুক বাবা মাকে শেয়ার করবে তাদের থেকে পরামর্শ নিবে আর যখন কোনো সিদ্ধান্ত সে একা নিবে প্রাথমিক অবস্থায় সেটা ভুল হওয়ার সম্ভবনায় বেশি আর ফ্রেন্ডদের থেকে মত নিলে তারাও সেটাই বলবে যেটা সে চাই তাই বাবা মা আমাকে সন্তান বেশি ফ্রেন্ডলি। ছোট থেকে আমার ইচ্ছা মতো বড় তো হয়েছি তবে সেটা ছিলো বাবার দেখানো পথে আমার সব ইচ্ছায় পূরন করার চেষ্টা করার পুরো স্বাধীনতা বাবা দিয়েছিলো ইচ্ছা আমার হলেও রাস্তাটা ছিলো বাবার সিদ্ধান্ত তাই আমার মনে হয় না আমি আজ ও একটা ভুল বা কারো সাথে খারাপ করেছি।
তোমাকে ভালো লাগার প্রথম অনুভুতিটা আমি ফার্স্ট এসে মায়ের সাথে শেয়ার করি। ইভেন তোমার সাথে ঘটা সবই বাবা মা জানে শুধু
~ শুধু
~ তিলে লিপ লাগানো টুকু বাদে হাজার হোক বাবা মা তো লজ্জার একটা ব্যাপার আছে
~ ওহ তোমার লজ্জা ও আছে
~
~ না না তেমন কিছু না তো। বলতেছিলাম সত্যিই ভালোবাসো না
~ উহু বাসি না সাজো
~ কি সাজো বাসি বলছে
~ এতো বুদ্ধি নাই তোমার অযথা মাথা ঘামায় ও না
~ হুহহ আইছে বড় বুদ্ধিমান।
~ তুমি জানো আমার বাবা মায়ের রিলেশন করে বিয়ে।
~ তাই নাকি। এজন্যই দুজনের কেমিস্ট্রি এতো ভালো।
~ হাহাহাহা কেমিস্ট্রি।
~ হাসছো যে।
~ এমনিতেই। চলো
~ এখন কই।
~ ঘুরতে
~ আঙ্কেল কি ভাবনেন। বলবে তার জামাই বড্ড বেপরোয়া। কথা শুনে না।
~ আগে শশুরের মেয়ে তো রাজি হোক তারপর না হয় শশুরকে মানাইও 🙂
~ রানী তো রাজিই।
~ হ্যা কিন্তু বলি নাই এখনো।
~ না ও তো বলোনি। মেঘ পরী। আর তার থেকে বড় কথা তুমি হ্যা না বললেও চলবে। আমি বুঝে নিবো
~ হু
~ চলো যায়। ডেট টা সেরেই আসি। 🤗
~ ডেট
~ হ চলো। আজ আয়ান কে একটা সারপ্রাইজ দিই।
আয়ান বাইক নিয়া দাড়িয়ে আছে তিশার বাসার নিচে। কিছুক্ষন আগে প্রিয়র ফোন ইমারজেন্সি হাইওয়ে পৌছাতে তাও সাথে তিশা কে নিয়ে। আয়ান কল দেয় তিশা কে।
~ এই যে প্যাচা রানী। একটু নিচে নেমে উদ্ধার করেন তো আমায়।
~ আয়ান ভাইয়া এখন কেনো সমস্যা হয়ছে নাকি।
~ হ আমার তোরে নিয়া ঘুরার ব্যারাম পাইছে ছেমড়ি নাম নিচে।
~ কিসব ভাষায় কথা বলো। কথা শুনে মনে তো হয় না তুমি কোনো ভার্সিটির স্টুডেন্ট। এখন যায়তে পারবো না হোস্টেল থেকে সন্ধ্যার পর বের হওয়া নিষেধ।
~ ভাব নিচ্ছে জেনো ওনার জন্য আমি হুমড়ি খেয়ে মরছি। তোর প্রিয় ভাই তোকে ডাকছে আমি ম্যাম রে কল করে দিচ্ছি দুই মিনিটে রেডি হয়ে আয়। এক সেকেন্ড লেট হইলেও থাবারায়ে দাত ফেলে দিবো।
~ আধা ঘন্টার নিচে আসতে পারবো না। নিতে হলে ওয়েট করো আর নেক্সট টাইম আমারে তুই তুকারি করবা না কেমন বিশ্রী শোনায়।
কথা শেষ করেই কল কেটে দেয় তিশা। আয়ান রাগে নিজের চুল ছিড়তে পারলপ বাচে। প্রিয় আর তিশা কে গাল দিতে দিতে হোস্টেল ম্যাম রে কল দেয় আয়ান।
বিশ মিন পর~
~ চলো আয়ান ভাইয়া।
~ বাব্বাহ এতো ফাস্ট দশ মিনিট আগেই চলে এসছো (দাতে দাত পিষে)
~ এখন কি লেট হচ্ছে না তোমার।
~ দ্বারা বিশ মিনিট উশুল করবো না।
~ মানে [ভয় পেয়ে ]
~ কি কি বলছিলা। আসতে পারবা না। অপেক্ষা করতে হবে নিতে হলে তুই তুকারি করা যাবে না কেনো রে তুই কি আমার বউ লাগিস নাকি গফ লাগিস যে তোরে আমায় আদর করে ডাকা লাগবে। (চুলের পেছনে হাত দিয়ে টেনে কাছে এনে)
~ লাগছে আয়ান ভাইয়া। তুমি একা পেয়ে আমারে অত্যাচার করছো লজ্জা লাগে না।
~ তোর লজ্জা লাগে না সিনিয়র কাউকে বিশ মিনিট অপেক্ষা করাতে। [তিশাকে নিজের সাথে মিশিয়ে]
~ আমি ইচ্ছা করে লেট করায়ছি নাকি রেডি হতে তো টাইম লাগে আর চুল ছাড়ো না লাগছে
আয়ান কিছু বলার আগেই আয়ানের ফোনে কল আসায় ছেড়ে দেয় তিশা কে। প্রিয় কল দিছে দেখে বাইকে উঠে তিশা কে নিয়েই বাইক স্ট্রাট দেয়, তিশা পেছনে বসে আয়ান কে দুহাতে জড়িয়ে ধরে আয়ান কিছু বলতে নিলে বলে ওর বাইকে ওঠার অভ্যাস নাই পড়ে যাবে আয়ান ও আর কিছু বলে না।
ওরা হাইওয়ে পৌছে একটু অবাক হয় প্রিয়র সাথে বাইকে কল্পকে দেখে। ওরা প্রিয়দের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
~ প্রিয় আজ আমাকে বাদেই তুই কল্পর সাথে দেখা করতে চলে এলি উল্টো তোরা এক হয়ে আমাদের ডেকেছিস। আর এই পিচ্চি রে কেনো আনতে বলেছিস তুই জানিস ও আমাকে বিশ মিনিট অপেক্ষা করিয়েছে।
~ চিল। এতো উত্তেজিত হলে তো খুব জলদি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবা তুমি আয়ান। [মাথা থেকে হেলমেট খুলতে খুলতে কল্প বলে]
~ নিশু তুমিইইই😮😮😯😱[কল্পর বেশে নিশু কে দেখে চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম]
~ এভাবে চিৎকার করছো কেন আয়ান ভাইয়া এবার তো নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক হবে
~ এই প্রিয় এটা তো হেলমেট খোলার আগে কল্প ছিলো হেলমেট খুলে নিশু কেমনে হয়ে গেলো 😳
~ উনিই কল্প আয়ান ভাইয়া। নিশাত আইরা কল্প। এটাই ওনার ফুল নেম আর উনিই ওয়ার্ল্ড ফেমাস লেডি বাইকার কল্প। উনিই প্রিয় ভাইয়ার ক্রাশ। লাভ ইত্যাদি।
~ এই মেয়ে কিসব বলতেছো হ্যা আমারে কি পাগল লাগে তোমার। নাকি তুমি পাবনা ফেরত এই ব্যাপারে কিন্তু আমার একশো পার্সেন্ট সন্দেহ আছে [ভ্রু কুচকে সন্দিহান চোখে তিশার চুল টেনে]
~ এই কথায় কথায় চুল টানতেছো কেনো তুমি আমার এটা কি তোমার বউ এর সম্পত্তি নাকি যে তাতে তোমার অধিকার ভেবে হাত দিচ্ছো।
~ হুহ বয়েই গেছো তোমার মতো পাগল রে আমার বউ করতে। প্রিয় রে একটু শুদ্ধি পানি দে তো হাতটা অপবিত্র হয়ে গেছো যার তার চুলে হাত দিয়ে। ওয়াকক থু কি গন্ধ
~ প্রিয় ভাইয়াাাা
~ হাহাহাহা যেই আর পারে না তখনই প্রিয় ভাইয়াাা। বাচ্চা মানুষ আসে লাগতে।
~ এই আয়ান থাম তো সব সময় ওর সাথে ওমন কেন করিস। আর তিশু তুমি কেমনে চিনো নিশুই কল্প?
~ দি তুমি জিজু রে আমার পরিচয় দিবা না বলো তো এটা কেমন কথা। যায় হোক আমিই বলতেছি আমি তোমার শালিকা গো প্রিয় ভাইয়া। আমি কল্প দি। উই আর কাজিন সিস্টার
~ মানে 😯তুমি এতোদিন সব জানতা।
~ অফকোর্স (ভাব নিয়া)
~ হুয়াট এ ড্রামাবাজ ফ্যামিলি খুদা। তোমরা এখানে কেন ডিরেক্টররা বোধই জানে না তোমাদের ব্যাপারে।
~ প্রিয়য়
~ না না এমনিই মজা করলাম।
~ প্রিয় বিশ্বাস কর দোস্ত আমি আজ সত্যিই কিছু খায় নাই সিরিয়াস বলতেছি কিন্তু এখানে যা হচ্ছে সব আমার মাথার ওপর দিয়ে কি সব বলতেছে এরা। সবই নেশার পরবর্তি ফিলিংস এর মতো উল্টে যাচ্ছে আমার। কিন্তু সত্যিই আমি খায়নি কিছু বিশ্বাস কর। নিশু কল্প কেমনে আমরা হয়তো কল্পকে দেখিনি কিন্তু দু বছর ধরে চিনি ওকে কিন্তু নিশু ও তো
~ ওরা ঠিকই বলছে আয়ান
~ ও ওরা ঠিক বলছে না। কিন্তু কেমনে
~ সে পরে বলবোনি। এখন চল আজ সবাই মিলে ঘুরবো।
~ এই ঘুর্নিঝড় রেও নিবি
~ আয়ান। তিশু ও যাবে এবং তোর সাথেই।
~ এই মেয়ে তোমার বোন বাইকার আর তুমি কি হ্যা। ঢেরশ। কোনো গুন নাই।
~ তুমি আবার আমার গুন নিয়ে বিশ্লষন কবে শুরু করলা আয়ান ভাইয়া যায় হোক নামো তো বাইক থেকে।
~ কি জন্য
~ নামতে বলছি নামো।
আয়ান নামলে তিশা বাইকে বসে পিছনে আয়ান কে বসতে ইশারা করে।
~ এই মেয়ে আমার এখনো পুরো যৌবন বাকি এতো সহজে মরবো না আমি। তোমার মরতে ইচ্ছা করলে তুমি মরো।
তিশা মুচকি হেসে বাইক স্ট্রাট দেয় আয়ান হা করে তাকিয়ে থাকলে কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই তিশা উধাও। কিছু সময় বাদে অনেক দূর থেকে একদলা আলো চোখে পড়ে ওদের তখনই আলো ভেদ করে তিশু কে দেখা যায় ~ এ তো পুরাই আগুন।
তিশা হাওয়ার মতো উড়ে আয়ানের সামনে আসতে আয়ান বাতাসের ঝাপটায় চোখ বন্ধ করে নেয়।
~ এই যে মিস্টার। আই আম লেডি বাইকার উর্মি। দি এর পরে সেকেন্ড মেয়েটায় আমি। এটা আমার শখ বাদ দি এর মতো নেশাময় না।
~ বাহ বা বাহ বা। বউ শালিকা দুই ই বাইকার।
আয়ান এখনো থ বনে চেয়ে আছে আয়ানের দিকে।
~ এই যে ঝগড়ুটে এবার তো ভরসা আছে যাওয়া যাক এবার (মুচকি হেসে)
আয়ান জেনো আজ নেশায় করছে এমনই লাগছে ওর এখনো ওর সামনে সবটায় ধোয়াশা। বিনা বাক্য ব্যায়ে ও তিশার পিছে উঠে বসে। তারপর সবাই একসাথে ছুটে। আজ আবারো ভালোবাসার অনুভুতি নিবে ওরা তবে এবার চেনা ঘ্রানে। আজ কল্প পিছে বসে প্রিয়কে ধরে আছে।
দিনটা আজ ও সপ্নের মতো। অনেক দূর গিয়ে একটা আইসক্রিম দোকান দেখে ওরা বাইক থামিয়ে সেখানে নেমে আইসক্রিম খেতে খেতে অনেকক্ষন আড্ডা দেয় কিন্তু আয়ান এখনো শকড। স্বাভাবিক হইতে হয়তো ওর একটু টাইম লাগবে। আইসক্রিম শেষ করে আবারো চলতে থাকে ওরা তবে এবার কল্প বাইক চালাচ্ছে প্রিয় পেছনে। প্রিয় দুহাত কল্পের কাধ ধরে আছে।
~ এমন দিন এমন সুখময় সময় হাজারো বছর কাটাতে চাই তোমার সাথে। মেঘপরী[কল্পর কানে ফিসফিসিয়ে ]
উত্তরে মুচকি হাসে কল্প ~
প্রিয় কল্পর কাধে মুখ রেখে হারাতে থাকে তার কল্প রানীর সপ্নে। এ যে অনেক সাধনার ফল ভালোবাসার মানুষকে পাশে পাওয়ার।
সেদিনের মতো বাসায় ফিরে যায় ওরা। কল্পর বাসার নিচে আসতে,
~ তিশু মা তোকেও আজ আসতে বলেছে। রাত ও হয়ছে। কাল ক্লাস ও ওফ। এখন আর যেতে হবে না হোস্টেল চলে আয়। প্রিয় সাবধানে যেও।
~ হুম বাই।
তিশা কল্প বাসায় ঢুকলে। প্রিয় আয়ান চলে যায় বাসায়।
পর্ব ১৭
সকাল সাতটা
ঘুমিয়ে আছে প্রিয়। ঘুমের মধ্যেই বেশ কিছু সময় ধরে কোনো একটা কিছুর ছোয়া পাচ্ছে প্রিয়। কিন্তু নয়ন খুলে তা দেখার মতো বোকামি প্রিয় করবে না আজ ভার্সিটি অফ অনেকটা সময় ধরে ঘুমানার প্লান আজ তার। তবে শেষ রক্ষা হবে বলে মনে হইতেছে।
প্রিয়র গলায় ছোয়া টা ডিপ হয়তেই বেশ বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে নেয় প্রিয় তবুও চোখ খোলার নাম নাই। হঠাৎ কামড় লাগায়ই আর পারলো না চোখ আটকে রাখতপ চট করে উঠে বসতে নিলে মুখের কাছে ভারী কিছুর অনুভবে সেটাকে এক ধাক্কায় ফেলে উঠে বসে প্রিয়। ধাক্কা দিয়ে ফালায়তেই একটা শব্দ পায় প্রিয়।
~ আহহ মা গো
~ তুমি কি এখন প্রিয়ময় হয়ে গেছো। সম্পূর্ন প্রিয়র অস্তিত্বে বিরাজ করছো নাকি। যে সকাল সকালই কল্প নামক ভ্রোমে ধরলো আমায়। [ভ্রু কুচকে]
~ কি বলতেছো যা তা। উহহহ দেখো তো কতো লাগলো এভাবে কেউ ধাক্কা দেয়।
~ তুমি কি সত্যিই আমার রুমে নাকি আমি কল্পনায় আছি।
কল্প এসে প্রিয়র কাছে দাড়িয়ে জোড়ে চিমটি দেয় প্রিয়র হাতে।
~ আআআআআ
~ এবার বিশ্বাস হইছে যে তুমি কল্পনা না বাস্তবে আছো।
~ এই মেয়ে তুমি এখানে কি করছো এতো সকালে কেউ দেখেনি তো। কিভাবে আসলা।
[ লাফ দিয়ে উঠে]
প্রিয়র কথা শেষ হতেই দরজা ঠেলে তিশা আয়ান ঢুকে।
~ কি গো প্রিয় ভাইয়া ছুটির দিনে কেমন ঘুম হলো [মজা করে]
~ [ভ্রু কুচকে] তোমরা সবাই এখানে। এতো সকালে
~ তাহলে চলে যায় এমন ভাবে বলতেছো যেনো তোমার বাসায় আসা নিষেধ বা আসলে এপোয়েনমেন্ট লেটার লাগবে।
~ তেমন কখন বললাম। তোমরা বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
~ যা ভাই আমি ঘুমায় একটু। আমার ঘুমের সাথে তোদের শত্রুতা কি সেইটায় বুঝলাম না। কল্প নামক উড়ো চিঠি যেদিন থেকে পাইছোস তুই আমার ঘুম হারাম সেদিন থেকে। [বিছানায় শুইতে শুইতে ]
আয়ানের কথায় কল্প বালিশ ছুড়ে মারে ও কে।
~ আহ তিশা তোমার ক্রাশরে মারতেছে তোমার ও ব্যাথা লাগা উচিৎ।
~ কেন ওটা কি আমার শরীর নাকি যে আমি ব্যাথা পাবো। তা ছাড়া ও ক্রাশ মানে এটাই যে। যেটা তোমার আয়ত্তের বাইরে শুধু দেখতেই পারবাতাই ওইসব ক্রাশ ট্রাশ বাদ। ওরকম ক্রাশ আমার পিছে কতো পড়ে একটু তাকালেই সব কাত আমার আবার মানুষের প্রতি দরদ বেশি তাই কাউকে আঘাত করতে চাই না বলেই আর ব্যাক সাইডে তাকানো হয় না।
~ ওহহ।
~ তুমি ও কি কষ্ট পাইলে আয়ান ভাইয়া।
~ তোর মতো পেত্নি রে দেইখা ছ্যা। সর দূরে যা গায়ে গন্ধ তোর।
~ দিইইই তোমরা কেনো কিছু বলো না সব সময় আয়ান ভাইয়া এইসব বলে আমার।
~ ও কি বলবে। আমাদের মাঝে তুমি ওদের কেনো টানো। নিজে ঝগড়া লাগাইতে এসে নিজেই কান্দে।
~ বয়েই গেছে তোমার সাথে ঝগড়া লাগাইতে।
~ কি রে প্রিয় উঠলো [দরজা ঠেলে প্রিয়র মা রুমে ঢুকে ] এই এই, এই ছোকরা তুই আমার ছেলের বিছানায় শুয়েছিস ওঠ ওঠ আমার ছেলের বিছানা থেকে। কই না কই থেকে আসছে আমার ছেলেকে বিগড়েছে এখন তার বিছানাও নোংরা করছে।
ওনাকে তেড়ে আসতে দেখে বেড থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ে আয়ান।
~ আমি কি জঙ্গল থেকে বা নোংরা থেকে লাফালাফি করে এসছি নাকি যে নোংরা হবে আর দেখো আন্টি তোমার ছেলে রে আমি বিগড়ায়নি বরং তোমার ছেলে আমাকে বিগড়ে দিয়েছে আমার ঘুম হারাম করেছে।
~ ও মা গো 😱, আন্টি দেখছো কোনো ভদ্রতা নাই এ ছেলের ভিতর। বড়দের মুখে উঠে কেমন করে। আর আন্টি আয়ান ভাইয়ায় প্রিয় ভাইয়াকে নষ্ট করছে তুমি জানো কলেজে সব মেয়েদের টিজ করে আয়ান ভাইয়া। (শয়তানি হাসি দিয়ে)
~ 😲😲😳😳😳😱😱এ কি ডেন্জারাস মেয়ে। ও আন্টি বিশ্বাস করো আমি মাছুম আমার কোনো দোষ নাই আর মেয়ে। নাউজুবিল্লাহ আমি তো কোনো মেয়ের ধারেও যায় না এ সব বানায় বলছে 🥺🥺
~ তবে রে। তুই এখন ও কে মিথ্যা বাদি বানাচ্ছিস। ও মিথ্যাবাদি হলে তুই কি ধোয়া তুলসি পাতা। দাড়া আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।
ঝাড়ু নিয়ে আয়ানের পিছনে ছোটার সময়ই প্রিয় বের হয়।
~ ও মা তুমি কি আয়ান কে দেখলে বাচ্চা হয়ে যাও। শুধু শুধু ওর পিছে কেনো লাগো বলো তো।
~ দেখছো তো নিশাত তিশা। আমার ছেলেটাকে কেমন নষ্ট করছে। ওর জন্য আমার ছেলে আমার সাথে কেমন ব্যবহারটা করে 😫
~😐😐😐এরা মানুষ নাকি এলিয়েন কি ড্রামাবাজ, আল্লাহ আমি কি ক্ষতি করছি এদের এই তিশা আর আন্টি খালি আমার পিছে লাগে যেনো এদের পাকা ধানে মই দিছি আমি[মনে মনে ভাবে আয়ান ]
~ মা কি শুরু করলা যাও নাস্তা দাও টেবিলে সবার। বাবা কি হাটতে গেছে নাকি আছে বাসায়।?
~ গেছে চলে আসবে কিছুক্ষনে। যাচ্ছি আমি তোরা আয় তবে ওই ছোকড়ার জন্য কোনো নাস্তা জুটবে না এ বাড়ি এই আমি বলে দিলাম নিশাত তুমি আমার সাথে আসো মা।
~ প্রিয় থাক আমি যায় রে। এ বাড়ি আমার কোনো সম্মান নেই রে কি দুচ্ছাই করছে একটা বাচ্চা রে। মাছুম বাচ্চা রে 🥺
~ ওরে নাটক যা না যা। তোরে না কইছিলাম আমার বাড়ি আসবি না আর তোর তো প্রিয়র সাথেও মিশতে নিষেধ করছিলাম তাও শুনোস না কি বেহায়া রে বাবা এর আবার সম্মান ও চায়।
~ কি জটিল অপমান। এখানে আর থাকবো না আমি প্রিয় তুই আর কল ও দিবি না আমায় তোর সাথে সম্পর্ক শেষ। ভালো থাকিস (ঢং করে)
~ তোর ওই ঢং কতো দেখলাম রে আয়ান।
~ আন্টি থাক একদিন ভিক্ষারি ভেবে ভোজন করিয়ে দেও 😄
~ তিশার বাচ্চা
~ আমার এখনো বিয়েই হইলো না তুমি আমার বাচ্চা ও পয়দা দিয়া দিলা। তা কেমনে দিলা আয়ান ভাইয়া বলো দেখি।
~ তিশু এতো কথা বলিস কেনো। আয়ান তুমি থাকো। আন্টি চলো।
~ হুম আসো।
কল্প আর তহমিনা মাহমুদ চলে যায়। কিছুক্ষন পর প্রিয়র বাবা আসলে সবাই একসাথে নাস্তা করতে বসে। নাস্তার টেবিলে প্রিয়র বাবা নিশাত তিশা সম্পর্কে টুকটাক কথা বলেন। নাস্তা শেষে প্রিয় আয়ান তিশা নিশাত। প্রিয়র রুমে যেতে নিলেই তহমিনা মাহমুদ বাধা দেন সবাই কে যেতে দেয় কিন্তু নিশাত কে আটকে নেয়। প্রিয় কি হইছে জিগ্যেস করলে। তোর বাবার সাথে তো ভালো করে পরিচয় করানো হয় নাই নিশাত তাই পরিচয় করিয়ে আনি। কথাটা বলে হেসে দিয়ে তহমিনা মাহমুদ নিশাত কে নিয়ে যায়। নিশাত ও মুচকি হেসে চলে যায় ওনার সাথে।
~ এই প্রিয়র বাবা এই দেখো। কাকে এনেছি।
(উনি বাগানে বসে পেপার পড়ছিলেন তখনই তহমিনার আগমন)
~ ওহ নিশাত মা যে আসো। বসো
~ জি আঙ্কেল।
~ ভারি মিষ্টি মেয়ে গো নিশাত। জানো নাস্তায় আমার কতো হেল্প করছে। এমন একটা মিষ্টি মেয়েই তো আমি চাচ্ছিলাম।
••তহমিনা মাহমুদের কথা বলতে শেষের আগেই রায়হান মাহমুদ বুঝে গেছেন এই মেয়েকে তার ছেলের জন্য বেশ মনে ধরেছে। তাই উনি কথা ঘুরানোর জন্য বলেন~
~ নিশাত স্টাডি কেমন চলছে।
~ আলহামদুলিল্লাহ আঙ্কেল ভালো চলছে।
~ মাঝে মাঝেই এসো আমাদের বাসায় কেমন (হেসে দিয়ে) ভালো লাগবে আমাদের।
~ আসবেনা মানে অবশ্যই আসবে।
~ হুম তুমি একটু চা টা দাওতো।
~ আঙ্কেল আমি অনেক ভালো চা করি আপনি চাইলে আমি করে আনি (মুচকি হেসে)
~ না মা তোমার আর কষ্ট করতে হবে না।
~ কষ্ট নাই আঙ্কেল আপনি বসুন আমি চট করে তৈরি করে আনছি বেশি টাইম লাগবে না। আন্টি তুমি কিচেনে আমাকে জিনিষ গুলো একটু দেখিয়ে দাও এসে।
~ হ্যা হ্যা চলো চলো।
কল্প মুচকি হেসে উঠে গেলে তহমিনা রায়হানকে উদ্দেশ্য করে বলেন~
~ দেখছো প্রিয়র বাবা এতো লক্ষি মেয়ে প্রিয়র জন্য একদম পার্ফেক্ট। কথা বার্তা। আচার আচরন এতো ভালো। আর তাছাড়া আমার মনে হয় ওই উড়নচন্ডি মেয়ে থেকে কেউ ফিরাতে পারলে এই মেয়েই পারবে।
~ তহমিনা ও শুধুই প্রিয়র ফ্রেন্ড মাঝ খানে তুমি মেয়েটাকে বোকার মতো এমন কিছু বলোনা যাতে করে তোমার জন্য ওদের ভিতর বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট হয়। আর কারো সম্পর্কে না জেনে বাজে মন্তব্য করা বাদ দাও বাইক চালানো মেয়েটার প্যাশন হয়তো এটা নিয়া বাজে মন্তব্য করার অধিকার তোমার নাই। আর বাইক চালাইলেই কেউ খারাপ হয়ে যায় না। সারাজীবন যে কাটাবে সেই তার জীবন সঙ্গী বেচে নিতে পারবে তোমার ওতো ভাবা লাগবে না।
~কথাটা বলেই আবার পেপার নিয়ে মুখ ঢেকে নেয় রায়হান মাহমুদ। তহমিনা ওনার কথা শুনে মুখ বাকিয়ে গট গট করে চলে যায় কিচেনে।
~ দোস্ত আন্টির হলোটা কি কল্পর নিয়ে এতো টানাটানি। পছন্দ হয়ে গেছে মনে হয়। তোর তো পথ ক্লিয়ার হয়ে গেলো😒
~ এমন ভাবে বলছো জেনো তোমার পথে কেউ কাটা দিয়া রাখছে আয়ান ভাইয়া।
~ প্রিয় এই মেয়েরে নিষেধ কর আমার সাথে কথা বলতে। সব কথায় ফোড়ন কাটা যত্তসব।
~ যাব্বাবা এমন কি বললাম আমি। হুহহ ওনার সাথে কথা না বললে জেনো আমি দম আটকে মরে যাবো
~ তোমাদের কি সব সময় ঝগড়া পায়। সময় নাই অসময় নাই খালি ঝগড়া। (এক প্রকার বিরক্ত মাখানো মুখেই বলে প্রিয়)
কল্প কিচেনে চা করছে পাশেই তহমিনা মাহমুদ দাড়িয়ে ~
~ নিশাত তুমি আর প্রিয় খুব ভালো ফ্রেন্ড তাই না।
~ তেমনই আর কি। (মুচকি হেসে)
~ প্রিয়র সাথে কিন্তু তোমাকে খুব মানায়। আমি তো প্রিয়র জন্য এমনই একটা মেয়ে চাই কিন্তু প্রিয় সে পড়ে আছে কোন বাইকার না ফাইকারের পিছনে। বলো তো মা এসবের কোনো মানে হয়। চিনা নাই জানা নাই আর ওসব মেয়েরা হয় উৎশৃঙ্খল। এতে বুঝায় ও কানেই তুলে না। না জানি কি পাইছে তার ভিতর।
(কথাগুলো শুনেই থ হয়ে যায় কল্প। ও জানে কথা গুলো যার উদ্দেশ্য বলা হচ্ছে সেটা ওই, তবে ওর বাইক চালানো নিয়ে তহমিনা এতোটা খারাপ মন্তব্য পুষে রেখেছে। নিজের সামনেই নিজের বেইজ্জতি হজম করতে কষ্ট হলেও চুপ রইলো কল্প)
আমি বলি কি মা তুমি তো ওর ভালো বন্ধু তুমি একটু ওরে বোঝাও না এইসব মেয়েদের পিছন ছাড়তে। তোমাকে পছন্দ করলেও কোনো কথাই ছিলো না। চোখের সামনে এতো ভালো মেয়ে থাকতে ও ওই মেয়েরে যে কি দেখছে। ওইসব মেয়ে ছেলে কি সংসারের হালচাল বুঝে উড়নচন্ডী হয় ওমন টাইপের মেয়েরা এই ছেলে যে কেন বুঝে না। কিন্তু নিশাত মা আমার তোমাকে ভারী পছন্দ হয়েছে ভারী লক্ষিমন্ত্র মেয়ে তুমি (থুতনিতে হাত বুলিয়ে চুমু দিয়ে)
~ জ্বি আন্টি আপনি বরং চা টা আঙ্কেল কে দিয়ে দিন আমার একটা জরুরি কাজ রইছে ভুলেই গেছিলাম ইমারজেন্সি যায়তে হবে।
[মুচকি হেসে]
~ সে কি কথা এখনই চলে যাবে,
~ আবার আসবো আন্টি [হেসে]
~ ঠিক আছে। তবে থাকলে আমার ভালো লাগতো তোমার যেহেতু কাজ যায়তেই হবে কিন্তু আবার আসবে কিন্তু।
কল্প কিচেন থেকে প্রিয়র রুমে যায় নিজের পার্সটা নিতে।
~ প্রিয় যেতে হবে আমার একটা কাজ পড়ে গেছে পরে দেখা করে নিবো। তিশু সাবধানে হোস্টেল পৌছে যাস গিয়ে কল দিয়ে জানাস।
কারো কোনো কথা বলার আগেই বেড়িয়ে পরে কল্প। হয়তো তহমিনার বলা কথা গুলো এখানে তার হজম হচ্ছে না তাই এই মুহুর্ত স্থান ত্যাগ করায় শ্রেয় মনে হইছে তার।
~ এমন কি কাজ পড়লে হুট করেই। কিছু না বলেই চলে গেলো।
~ কি জানি আসার আগে তো দি বললো আজ একদম ফ্রি তাই তো এখানে আসলো তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে আর আড্ডা দিতে।
প্রিয় আয়ান তিশা কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে। আয়ান তিশা চলে যায়। তারপর প্রিয় অনেক বার কল করে কল্প কে বাট বার বারই নট রিসিবল আসছে। সারাটা দিন কেটে যায় তবুও কল্পর কোনো হদিশ মিললো না প্রিয় এক প্রকার অস্থির হয়ে উঠেছে। এটা হলো প্রেমের সফলতার প্রথম স্টেপ।
যখন আমরা প্রিয়জন টাকে পেয়ে যায় তখন থেকেই শুরু হয় ছটফটানি মিনিটে মিনিটে সেকেন্ডে সেকেন্ডে তার সকল তথ্য আমাদের চায় অথচ দুদিন আগেও সে অপরিচিত ছিলো যেখানে কবে কখন কতদিন পর দেখা হবে তার কোনো শিওরিটি নাই তবে তখনকার অপেক্ষার ভিতর থাকে এক অজানা অনুভুতি অন্যরকম ভালো লাগা।
আজ না হোক কাল দেখা হবে ভেবেই হৃদয়ে প্রশান্তির হাওয়া বইতো। তখনও ছটফটানি থাকে তবে সেটা এক প্রকার ভালোলাগার ও সৃষ্টি করতো আর এখন যেটা সেটা মাত্রই এক অসহনীয় অস্থিরতার সৃষ্টি করে। প্রিয়র দিনটা ও তেমন এক প্রকার অস্থির ছটফটানির ভেতর কেটে যায়। কিন্তু প্রিয় এখনও বুঝতে পারছে না কল্প ইচ্ছাকৃত এমন করছে নাকি সত্যিই কোনো সমস্যা।
পর্ব ১৮
রাতটা একবারেই বিশ্রী ভাবে কাটে প্রিয়র। চাইতেও ঘুম নামাতে পারেনি দুচোখে। গিটার নিয়ে বেলকনিতে বসে সুর ওঠাতে চাইলেও পারে না এতো অস্থির জেনো আগে কখনো লাগেনি ওর। ভোর রাতে একটু চোখ জোড়ায় ঘুমের দেখা পেয়েছিলো প্রিয়।
ভোর রাতের আবহাওয়াটা এতোই সুন্দর থাকে ওই সময়টা অলওয়েজ বিন্দাস একটা ঘুম হয় বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা একটা পরিবেশ। ভোর রাতে ঘুমের দরুন সকালে উঠতে লেট হয় প্রিয়র। সকাল নয়টা পচিঁশে আয়ানের কলে ঘুম ভাঙে ওর। তখনই উঠে কোনো রকম রেডি হয়ে বেশ হন্তদন্ত হয়েই বেড়িয়ে পড়ে প্রিয়।
ক্লাসে ঢুকে কল্পর কাছাকাছি যেতেই ক্লাসে স্যার চলে আসায় আর কথা বলতে পারে না। স্যার ক্লাস শেষে বের হতেই প্রিয় কল্পর কাছে গেলে কল্প প্রিয়র পাশ কেটে বেড়িয়ে যায় ক্লাসরুম থেকে।
প্রিয় ব্যস্ত হয়ে পড়ে কল্পর খোজে।
~ কি রে প্রিয় কি হইছে এভাবে সব জায়গায় কি খুজে বেড়াচ্ছিস চোখ মুখ এমন লাগছে কেনো তোর। এতো অস্থির হতে তো তোকে আগে দেখিনি সিরিয়াস কিছু কি হইছে।
~ কল্পকে দেখেছিস।?
~। একটু আগে লাইব্রেরির দিকে যেতে দেখলাম, কেনো কি হইছে।
প্রিয় কিছু না বলেই লাইব্রেরির উদ্দেশ্য চলে যায়।
~ এর যে কি হয় হঠাৎ হঠাৎ, (আয়ান)
প্রিয় লাইব্রেরি গিয়ে দেখে কল্প বসে আছে এক হাতে জুস আর সামনে বই রেখে। প্রিয় গিয়েই কল্পর মুখ চেপে বুক সেল্ফের পাশে নিয়ে আসে। হঠাৎ এমন কিছুতে একটু ভয় পেয়ে গেলেও প্রিয় কে দেখে নিজেকে শান্ত করে নেয় কল্প।
~ কি সমস্যা,
কল্প চুপ।
~ কি হলো কথা বলছো না কেনো।
, প্রিয়র চোখে বেশ অস্থিরতার আভাস পাচ্ছে কল্প। প্রিয়র এমন রুপটা কল্পর সামনে আজ প্রথম। তবুও কল্প চোখে রাগি ভাব এনে প্রিয়র হাত কামড় দিতেই মুখ থেকে হাত সরিয়ে। আহকরে উঠে প্রিয়।
~ মুখে হাত দিয়ে রাখলে মানুষ কথা কিভাবে বলে। আর এভাবে এখানে আনার মানে কি। পাওয়ার আছে সেই পাওয়ার দেখাতে চাচ্ছো।
~ কিছু দেখাতে চাচ্ছি না শুধু জানতে চাইছি সমস্যা কি।
প্রিয়র চোখ এখন শান্ত।
~ আমার কেনো সমস্যা হবে। আমার তো কোনো সমস্যা নাই।
~ কাল বাসা থেকে ওই ভাবে চলে আসার পর থেকে আর একবার ও কন্টাক্ট করো নাই। কল দিলে নট রিসিবল। সামনে গেলে এভোয়েড করছো। কিন্তু কেনো। কি করেছি আমি
~ এখন কি আমার সব পার্সোনাল বিষয় নিয়াও তোমাকে জবাব দিহিতা করতে হবে।
~ সেটা কখন বললাম আমি। আমি তো শুধু এটুকুই জানতে চেয়েছি এভোয়েড করার কারন কি এখানে জবাব দিহির প্রশ্ন কোথা থেকে আশে।
~ তোমাকে কিছু বলতে চায় না ইভেন তোমার সাথে কথায় বলতে চায় না। সো বিরক্ত না করলেই খুশি হবো।
কথাটা বলেই প্রিয়কে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কল্প চলে যায় লাইব্রেরি থেকে
প্রিয় কিছুক্ষন থেমে সেও কল্পর পিছু পিছু বাইরে আসে কিন্তু কল্পকে আর পায় না হয়তো চলে গেছে। দিনটা জেনো কয়েকটা বছর মনে হচ্ছে প্রিয়র। অনেকবার কল করেছে কল্পকে বাট কল্পর কোনো খোজ নাই।
সন্ধ্যায় চা হাতে নিয়ে ছাদের কর্নার ঘেষে দাড়িয়ে আছে কল্প। চায়ের সাথে এমন ঠান্ডা পরিবেশ ভীষন পছন্দ কল্পর। মন ভালো রাখার এক রকম ঔষুধ ও বলা চলে। মাত্রই এসেছে ছাদে চার পাশে চোখ ঘুরিয়ে বাসার সামনের রাস্তায় চোখ যেতে থেমে যায় কল্পর চোখ।
কেউ একটা স্থির স্নিগ্ধ চোখে চেয়ে আছে তার দিকে। বাসার সামনে থাকা আলোয় স্পষ্ট দেখতে পায় এলোমেলো চুল অশান্ত চোখ ক্লান্তি ছেয়ে যাওয়া মুখ খানা, দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে নেমে আসে কল্প। চা টা রেখে বাসার বাইরে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা ছেলেটার কাছে যায়।
~ এখানে কি চাই। (ছেলেটার সামনা সামনি দাড়িয়ে)
~ তোমাকে চাই।
~ ঢং করতে এসছো। নিষেধ করেছিলাম বিরক্ত না করতে তারপর ও বাসার সামনে চলে এসছো।
‘ছেলেটা চুপ। এক নজরে চেয়ে আছে তার সামনে থাকা মানবের দিকে। এটা কি শুধুই মানব উহু অসাধারন মানব। কোনো একটা প্রেমিকের বর্ননায় হয়তো তার প্রেমিকা অসাধারন কিছুই।
~ এই ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো। কিছু বলতেছি আমি তোমায়।
~ এমন করার কারন টায় জানতে চেয়েছি আমি কল্প।
~ বলেছিলা না তুমি বাস্তবমুখি তাহলে এখন এমন পাগলামো করছো কেনো। আমি চাইছি না যেটা সম্ভব না সেটা নিয়ে আগাতে।
~ মানে।
~ মানেটা খুব সহজ প্রিয়। তোমার মা আমাকে পছন্দ করেন না। উনি নিশাত কে পছন্দ করেন কিন্তু কল্পকে না ওনার ধারনা কল্প মেয়েটা 420। উড়নচন্ডি মেয়ে ও মেয়ের দ্বারা সংসার সম্ভব না। কিন্তু আন্টি জানেই না নিশাত কল্প আলাদা কেউ না।
~ এইগুলো কি মা তোমাকে বলেছে
~ কে কি বলেছে সেটা ম্যাটার না। তুমিও খুব ভালো করে জানো তোমার মা কল্পকে পছন্দ করেন না। তাই আমি চাই না একটা সম্পর্কে স্থায়ী হওয়ার আগেই ভেঙে যাক সেটা।
~ তুমি শুধু মাত্র মায়ের কথায় আমাকে কষ্ট দিচ্ছো। আই ডোন্ট নো মা তোমাকে কি বলেছে বা তোমাদের মাঝে কি কথা হয়েছে বাট আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো না কল্প। সরি আই কান্ট।
~ কিন্তু আমি চাই না
~ কল্প প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্টান্ড। তুমি শুধু মায়ের কথাটা শুনবে আমাকে বুঝবে না। আর আমি কি করবো কার সাথে থাকবো এটা একান্তই আমার ব্যাপার।
~ পারবে আমার জন্য পরিবার কে ছাড়তে
~ কল্প।
~ এই প্লিজ প্লিজ। এইভাবে কিছু ঘটার আগেই আমাকে অপরাধীর কঠগরায় দাড় করিয়ো না। আমি জাস্ট বোঝাতে চাইলাম। তোমার মা আমাকে কখনই মানবে না এক সময় আমার জন্য তোমার পরিবারের সাথে সম্পর্কটা ও নষ্ট হয়ে যাবে যেটা আমি চায় না। সো প্লিজ যেটা হবার না সেটা নিয়ে না আগানই আমার ভাবনায় বেস্ট।
~ আমি কিছুই না তোমার জন্য।
~ অনেক কিছু তবে বাইক চালানোটা আমার শখ প্রিয় বাইক আমার নেশা কোনো কিছুর বিনিময়ে আমি বাইক ছাড়তে পারবো না।
~ আসছি আমি। নেক্সট টাইম কল দিলে রিসিভ করা চায়।
কথাটা বলে আর এক মুহুর্তও অপেক্ষা করে না প্রিয় বাইক নিয়ে চলে যায়।
জানো তো প্রিয় খুব ইচ্ছা করছিলো ওই ক্লান্তি ভরা মুখটা একটু ছুয়ে দিতে। অগোছালো চুল গুলো একটু গুছিয়ে দিতে। অশান্ত চোখ দুইটা ছুয়ে একটু শান্ত করে দিতে। কিন্তু ওই যে চায়লেই কি সব ইচ্ছা পূরন হয়।
মনে মনে কথা গুলো ভেবে বাসায় ঢুকে যায় কল্প কিছুক্ষন রেস্ট করবে আজ যে তার বাইক রাইড আছে। তার প্রিয়কে তো আজ জানানোয় হলো না আজ সে বাইক রাইড পার্টিসিপেট করবে অন্য একটা গ্রুপের সাথে।
পর্ব ১৯
হাইওয়ে তে এক সারি দিয়ে দাড়িয়ে আছে পাঁচ জন। তার মধ্যে একজন কল্প আর বাকি চারজন অন্য এক টিমের। কল্পর টিম থেকে ও দুজন থাকার কথা ছিলো কিন্তু সেখানে কল্পর বিমত থাকায় কল্প একায় পার্টিসিপেট করছে। এখানে থাকা সকলেই উচ্চ নামি দামি রাইডার।
তবে কল্পর ফেমাসিটি সর্বাধিক। কিছুক্ষনের মধ্যেই বাইক রাইড শুরু হবে সবার প্রিপারেশনের মধ্যে টাইম ও গোনা শুরু করে তিন বলতেই সবাই ছুটবে তবে তিন বলার আগেই সবাই একটু চমকিত হয় কারন রাইড শুরু হওয়ার মুহুর্তেই হঠাৎ প্রিয়র আগমন শুধু আগমন না প্রিয় এসে একবারে কল্পর বাইকের পিছে বসে পড়ে।
~ এ কি তুমি এখানে কি করছো। আর বাইকের পিছে উঠলা কেনো। (অবাক হয়ে)
~ আরে তিন বলে দিছে ওরা সবাই ছুটে গেছে চলো চলো।
কল্প সামনে তাকিয়ে দেখে তার সাথে থাকা চারটি বাইকই চলে গেছে অনেকদূর। কল্প ও আর কথা বাড়ায় না মৃদু হাসে কজ এখানে এদের সাথে ওকে জিততেই হবে। প্রিয় কল্পর দু কাধ ধরে বসে আর কল্প বাইকের ফুল স্পিড দিয়ে রাইড শুরু করে। পিছনে সকলের চিৎকার শোনা যাচ্ছে যারা কল্পর টিমের। বাকি টিমের লোকজনের শোরগোল বেশি হইচই বেশি শোনা যাচ্ছে কারন ওদের টিম অনেক এগিয়ে গেছি এদের সাথে আলাদা একটা বাইকে দুজন ছিলো যারা রাইড রেকর্ড করছিলো।
কিছুক্ষনেই ওরা সবার চোখের আড়াল হয়ে যায়। কিন্তু বিপরীত পক্ষ ভীষন অবাক হয় কল্পর টিমকে দেখে কারো চোখে মুখে কোনো হারার ভয় বা আতংক দেখতে পায় না তারা কল্পর টিমকে অনেক ভাবে পিন্চ ও করে এবং চ্যালেন্জ করে যে ওরাই জিতবে। যেহেতু কল্প সবার পিছনে পড়ে গেছিলো আর ওদের টিমের মেইন যে রিয়ান সে ও বিখ্যাত রাইডার হওয়ায় ওরা নিশ্চিত ওরাই জিতবে। কল্পর সম্পর্কে শোনার পরই ওরা এই রাইড এর জন্য কল্পকে পার্সোনালি চ্যালেন্জ করেছিলো।
ঠিক পয়ত্রিশ মিনিট পর সবার ব্যাকসাইডে বাইকের শব্দে সকলে উৎসুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পিছে তাকালে একদলা আলোর মধ্যে কল্পর বাইকটা স্পষ্ট হয়। ততক্ষনাৎ কল্পর টিমের হইচই পড়ে যায়। কল্পর নাম ধরে চিৎকার করতে থাকে। কল্পর বাইক আর রিয়ানের বাইকের গ্যাপ ঠিক দু তিন সেকেন্ড এর। কল্প এসে থামতেই রিয়ান থামে। সবাই কল্পকে নিয়ে মাতামাতি করার মাঝেই তিশা রিয়ানের উদ্দেশ্য বলে ~
~ মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়া পাপ নই বরং ভাগ্যের ব্যাপার। আপনাদের ধারনা ছিলো ফেমাস লেডি বাইকার কল্প হলেও আপনার সাথে পারবে না তাই না বাট নাও উই উইন।
রিয়ান বাইক থেকে নেমে এসে মুগ্ধ নয়নে কল্পর দিকে দৃষ্টি রেখে কল্পর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে হ্যান্ডশেকের হাত বাড়ায়। তখন ও কল্প বাইকে বসে আর প্রিয় কল্পর পিছনে রিয়ানকে হাত বাড়াতে দেখে কল্প হাত বাড়াতে নিলে প্রিয় দুম করে নিজের হাত মিলিয়ে দেয় রিয়ানের সাথে। হঠাৎ ঘটনায় হতবাক রিয়ান কল্প দুজনেই।
~ হ্যালো আই আ’ম প্রিয়
~ হাই। আই আ’ম রিয়ান
~ ইয়াহহ নাইস টু মিট ইউ।
~ আপনাকে ঠিক চিনলাম না
~ কল্পর হাজবেন্ড [দাত বের করে হেসে]
কথাটা শুনে অবাকের সপ্তমে কল্প। ওর কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না প্রিয় এমন কথা বলছে তাও মিথ্যা কিন্তু কেনো। রিয়ান ও বেশ বিড়ম্বনায় পড়ে গেছে। কল্পকে তার বেশ মনে ধরেছিলো কিন্তু প্রিয়র কথাটাও কেমন জেনো লাগলো বিশ্বাস করা মতো মনে হলো না। এক রকম বিড়ম্বনা কাটিয়ে কল্পর দিকে তাকিয়ে ঠোটে হালকা হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো।
~ তো মিস লেডি বাইকার কল্প। ভালো লাগলো আপনার সাথে বাইক রাইডে। অন্নেক ভালো রাইডার আপনি প্রথমে যখন শুনেছিলাম এটা মানতে না পাড়লেও এখন প্রমানিত তাই মানতে বাধ্য। দেখা হবে আবার কোনো এক রাইড এ। ভালো থাকবেন এন্ড বেস্ট অফ লাক আসছি।
~ ধন্যবাদ।
রিয়ান চলে যেতেই বৈশাখের প্রখর রৌদ্রের ন্যায় মেজাজ করে আগুন ধরানো চোখে প্রিয়র দিকে তাকিয়ে দাত কটমট করে বলতে থাকে ~
~ এসবের মানে কি প্রিয়। খুব বেশি বাড়াবাড়ি করতেছো কিন্তু তুমি।
প্রিয় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়া খুব নরমাল ভাবেই কল্পর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে তিশা কে ডাকে ~
~ তিশু
~ বলো প্রিয় ভাইয়া।
~ শালী সাহেবা এখন আর হোস্টেল যেতে হবে না আজ রাত আমার শশুর বাড়িতে থেকে যেও আর হ্যা এখনই চলে যাও আমরা আসছি পিছে
~ আচ্ছা,
তিশা চলে যায়।
~ এই আমরা পরে যায় মানে। আমি তোমার সাথে কোথাও যাবো না আর না তুমি আমার সাথে যাবে। নামো নামো বাইক থেকে।
~ আজ একটু বাইক আনি নাই বলে এইভাবে এতো রাতে একা নামিয়ে দিবা (ইনোসেন্ট ফেস করে।) তোমার মায়া লাগবে না একটুও।
~ না লাগবে না। তুমি নামবে বাইক থেকে
প্রিয় কোনো উত্তর না দিয়ে কল্পকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বসিয়ে কল্পর হেলমেট খুলে নিজে পড়ে নিয়ে বাইক স্ট্রাট দেয়।
~ এই এই খুব খারাপ হবে কিন্তু থামাও বলছি। খুব রাগ লাগছে কিন্তু প্রিয়।
প্রিয় কোনো কথা বাদে মুচকি হেসে ব্রেক কষতেই কল্প প্রিয়র গলা আকড়ে ধরে।
~ এবার চুপচাপ এভাবে ধরে বসে থাকো। মেঘপরীএকটু ও লাফালাফি করছো তো ফেলে দিবো কিন্তু।
কল্প ও হঠাৎ করে থেমে যায়। একনজরেই খুটিয়ে খুটিয়ে প্রিয়কে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু ঝামেলা বাধায় হেলমেট টা। এটার জন্যই সে প্রিয়র মুখ খানা ভালো ভাবে দেখতে পাচ্ছে না। ভাবতে ভাবতেই প্রিয়র মাথা থেকে হেলমেট টা খুলতে নেয়।
~ কি ব্যাপার হেলমেট খুলছো কেন।
~ হুশশশ
কল্পর কন্ঠস্বরটা কেমন পরিবর্তন লাগে প্রিয়র কাছে। এই স্বরে কোনো রাগ নেই তবে অভিমানে লুকানো ভালোবাসার ঘ্রান পায় প্রিয়। কল্প হেলমেটটা খুলে হাতে নেয় আর এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে প্রিয়র মুখে।
~ আচ্ছা সবসময় তো শুনেছি মেয়েরাই মায়াবতী হয় তবে আমার কাছে তার উল্টোটা কেনো লাগে। এই মুখে যে গভীর মায়া লুকানো। আর চোখ দুইটায় বা এতো মায়া জড়ানো কেনো। তাকালেই ডুবে যেতে ইচ্ছা করে ওই মায়ার গভীরে। এই ছেলেটায় জেনো পুরা মায়ার গোডাউন। তবুও কিভাবে পারছি ওর সাথে খারাপ আচরন করতে। তবে এটাও তো ঠিক ওর মা আমাকে পছন্দ করে না আর ভবিষৎে এটা নিয়েই ব্যাঘাত ঘটবে সম্পর্কে।
কি প্রয়োজন এমন অনিশ্চিত সম্পর্কের তবুও যে কঠিন এই মায়াময় পুরুষটা থেকে দূরে থাকা। নিজের অদেখায় যে পুরুষ একটা নারীকে চোখ বন্ধ করে ভালোবাসতে পারে শুধু তার একটা গুন সেই পুরুষকে অন্ধ চোখেও বিশ্বাস করা যায়। তবু ও একটা কিন্তু রয়ে যায়। দুজন চাইলেই একটা সম্পর্কে জড়ানো যায় ঠিকই কিন্তু সেই সম্পর্ককেই একটা সুন্দর ভবিষৎ এর জন্য দুইটা পরিবারের ও প্রয়োজন হয়ে থাকে। এই ছেলেটাকে এড়িয়ে যাবো কিভাবে যেখানে নিজেই এই ছেলের মায়ায় জড়িত ঠিক দুইটা বছর আগেই।
কল্পকে এভাবে তার মুখে চেয়ে ভাবনার অতলে ডুবতে দেখে ~
~ কি গো। মেঘপরীএভাবে চোখ দিয়ে চেয়ে কি দেখো হুম। আই নো আই আ’ম কিউট
~ বিশ্রী একটা চেহারা (মুখ শিটকিয়ে)
~ নিজের হবু বর রে কেউ এভাবে বলে
~ কি বর হাজবেন্ড করছো তুমি।
~ ওগো এতো রেগো না তোমার রাগেও ভালোবাসা পায় তখন আমার ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়।
~ যত্তসব ফালতু কথা।
~ ..
~ প্রিয়
~ হুম
~ আন্টি কখনো আমায় মেনে নিবে না। শুধু শুধু কেনো আগাবে এমন অনিশ্চিত সম্পর্কের দিকে,
~ আন্টি কি হ্যা শাশুড়ি মা বলো।
~ প্রিয় আই আ’ম সিরিয়াস
~ আমিও তো সিরিয়াস। কে মানলো না মানলো তাতে কি যায় আসে। ভালো তো আমাকেই বাসো আর থাকবে তো আমার সাথে না কি।
~ আমার শশুড় শাশুড়ি হাজবেন্ড মিলায়ে পুরা গোছানো সংসারই চায়।
~ এতোদিন কি পরীক্ষা করলে বলো তো। এইটুকু চিনলা না। ভালোবাসার আগে ভরসা আর বিশ্বাস এই দুইটা আগে জরুরি। ভরসা টা রাখো সব হবে। আপাতত ভবিষৎ নিয়ে না ভেবে প্রেজেন্ট নিয়া ভাবে আর হবু বর টাকে অনেক অনেক ভালোবাসো
~ ফালতু একটা (হেসে দিয়ে)
~ তবুও তোমার,
~ হুম
কথার মাঝেই কল্পর চুলে ঢাকা মুখ থেকে একা হাত দিয়ে চুল গুলো সরিয়ে কানের পিছে গুজে দেয় প্রিয়। মুগ্ধ নয়নে প্রিয়কে দেখে যাচ্ছে কল্প।
~ সব সময় এমন থাকবে তো প্রিয় নাকি অন্যদের মতো একটা সময় তুমিও বদলে যাবে
~ মেঘপরীর প্রিয় এখন যেমন আছে মেঘপরীর কাছে সারাজীবনই এমন থাকবে শুধু ভালোবাসা আর বিশ্বাস রেখে হাতটা ধরে পাশে থেকো। প্রিয়র সকল ভালোবাসা মেঘপরীর দুয়ারে এনে দিবে।
~ সারাজীবন এই পাগলের ভালোবাসায় নিজেকে মুড়িয়ে রাখতে চায়।
ওদের কথার মাঝেই প্রিয় বাইক থামিয়ে দেয়।
~ চলে এসেছি। মেঘপরী।
~ ওহ খেয়ালই করিনি। (নামতে নামতে) একটু ও যেতে ইচ্ছা করছে না থেমে কেনো গেলো না সময়টা (মনে মনে)
~ শুনো। একদম কোনো কিছু নিয়ে টেনশন করবা না। সামনেই ফাইনাল এক্সাম খুব বেশি দেরি নেই। পুরো সময়টা এখন পড়াশোনায় দিবে ওকে। (মুখের কোনে হাত বুলাতে বুলাতে)
~ হুম
~ কল দিলে রিসিভ করবা সাথে সাথে। লেট হইলেই একটা করে শাস্তি।
~ মামা বাড়ির আবদার নাকি।
~ এখন সব তোমার হবু বরের আবদারে চলবে বুঝছো।
~ এখন যাবে কিসে।
~ কেনো তোমার বাইক নিয়া।
~ আমি যদি না দিই
~ তোমার হবু বরটা এতো রাতে একা হেটে যাবে এটা কি তোমার ভাল্লাগবে
~ ইমাশোনালি ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করছো, শুধু মাত্র অনেক রাত হইছে তাই আমার সব থেকে প্রিয় জিনিসটা তোমারে দিলাম ওর গায়ে যেনো একটা টোকা ও না লাগে। সাবধানে চালাবে।
~ তোমার জান টা কে তোমার থেকেও বেশি কেয়ার করবো ওকে। রুমে যাবা ফ্রেশ হবা দেন ডিনার সেরে ঘুমাবা।
~ পৌছে কল দিবা। টাটা
~ টাটা (মুচকি হেসে)
লেখা – আদিবা
চলবে
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “লেডি বাইকার – একজন বাইকারের গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – লেডি বাইকার (শেষ খণ্ড) – একজন বাইকারের গল্প