পর্ব ০১: ছেলের সাথে নতুন বেনারসি পড়া ঘোমটা টানা এক মেয়েকে দেখে অবাক হয়ে গেলেন মা। নিঃসন্দেহে এটা ছেলের বিয়ে করা বউ। সদ্য বিয়ে করে এনেছে। কিন্তু স্বাক্ষরের মত ছেলে বাবা মাকে না জানিয়ে বিয়ে করতে পারে না। সবকিছু কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে মায়ের কাছে।
মা কাছে এসে ছেলের মুখের দিকে তাকালেন। স্বাক্ষর নতমুখে মেঝের দিকে চেয়ে আছে। ওর চোখেমুখে অন্যরকম একটা ব্যাপার কাজ করছে। নতুন বিয়ে করার পর যেমন আলো, ভয়, লজ্জা সবকিছু একসাথে কাজ করে অনেকটা সেরকমই। মা অবাক হয়ে অনেক্ষণ কথা বলতে পারলেন না।
স্বাক্ষর নিজেই আগে কথা বললো, আম্মু। ও নিরা। আমি তোমাদেরকে না জানিয়ে…
বাকিটুকু আর বলতে হলোনা। মা বুঝে গেছেন কাহিনি কি। ছেলে যে বিয়ে করে বউ নিয়ে বাসায় ফিরেছে সেটা না বোঝার মত কারণ নেই। দেখেই বুঝে গেছেন আসল ঘটনা কি?
মা কথাবার্তা না বলে অনেক্ষণ ছেলের দিকে ঝিম মেরে তাকিয়ে রইলেন। সাহস কত বড়! জন্ম দিয়ে কোলেপিঠে করে মানুষ করলো বাবা মা। আর আজকে কোথাকার কোন মেয়ে বিয়ে করে আবার বাসায় এনে বলছে, তোমাদেরকে না জানিয়েই… কষ্ট করে ছেলেপুলে মানুষ করার উপহার হয়ত এটাই।
স্বাক্ষর বললো, আম্মু নিরার মুখ দেখবে না?
মা কিছু না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তারপর নিজের রুমে গিয়ে প্রবেশ করলেন। এদিকে নিরা চুপচাপ চেয়ে আছে মেঝের দিকে। ওর বুকটা ভয়েই শুকিয়ে গেছে।
স্বাক্ষরের সাথে সম্পর্কটা বেশ কয়েক মাসের। প্রথম আলাপ হয় ফেসবুকেই। এরপর ফোনালাপ, দেখা, একসাথে কিছু সময় কাটানো। তারপর হঠাৎ ই প্রেমটা হয়ে যায়। কেউ কি তখনও জানতো এরপরের জীবনে কত ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে?
স্বাক্ষরের কথায় ভাবনায় ছেদ পড়লো নিরার। স্বাক্ষর বললো, নিরা। তুমি চিন্তা কোরোনা। আমি দেখি মা কি বলে। তবে মায়ের মুখ দেখে বুঝতে পারছি সে অনেক কষ্ট পেয়েছে।
নিরার বলতে ইচ্ছে করলো, আমার জন্য তোমার মা অনেক কষ্ট পেলেন। আমাকে মাফ করে দিও। কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হলোনা। মেয়েটা বোধহয় পাথর হয়ে গেছে। বেশি কষ্টে মানুষ পাথর হয়ে যায়।
স্বাক্ষর নিরাকে দাড় করিয়ে রেখে মায়ের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো। দরজা খোলাই আছে। ও ডেকে বললো, মা গো। ও মা, কোথায় গেলে?
মায়ের কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। স্বাক্ষর কি বলবে বুঝতে না পেরে আবারও ডাকলো- মা গো। কোথায় গেলে তুমি?
এবারও মায়ের কোনো সাড়া নেই। স্বাক্ষর নিজের মত বলে গেলো, মা নিরাকে কি রুমে নিয়ে যাবো? ওর মুখটা দেখলেও না। ওকে রুমে নিয়ে যাই মা?
মা কোনো কথা না বলে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলেন। ছেলের মুখের উপর কোনো মা এভাবে দরজা লাগিয়ে দিতে পারে জানা নেই স্বাক্ষরের। কিন্তু একা একা বিয়ে করে ফেলাটাও অনেক বড় অপরাধ হয়ে গেছে। মা তো অনেক ভালোবাসে ওকে। বাবা মা কত আশা নিয়ে আছেন ছেলেটাকে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট বানাবেন। ছেলে বিয়ে করে এনে সমস্ত আশাই মাটি করে দিয়েছে। স্বাক্ষর ভয়ে আর কথা বাড়ালো না। মায়ের অনুমতি ছাড়া নিরাকে বসতেও বলতে পারছে না। কতবড় বিপদ পার করে আসতে হয়েছে সেটা তো মা জানেনা।স্বাক্ষর চুপচাপ বসার ঘরে চলে এলো। নিরা আগের মত একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। স্বাক্ষর এসে পাশে দাঁড়িয়ে বললো, সরি নিরা। বোধহয় আমাদেরকে অনেক ঝড় ঝাপটা সামলাতে হবে।
নিরা কোনো কথা বললো না। সে চুপচাপ।
স্বাক্ষর বললো, মা দরজা লাগিয়ে দিয়েছেন মুখের উপর।
স্বাক্ষরের পাঞ্জাবির হাতা খামচে ধরলো নিরা। স্বাক্ষর নিরার হাত চেপে ধরে ওকে স্বান্তনা দিলো। এখন অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। বাবা আসার পর একটা না একটা কিছু হবেই। হয় বরণ করে নেবেন, নয়তো বের হয়ে যেতে হবে বাড়ি ছেড়ে।
নিরার হাত ধরে ওকে স্বান্তনা দিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো স্বাক্ষর। তারপর শেষ আরেকবার চেষ্টা করতে মায়ের দরজায় গিয়ে ডাকলো, মা গো। আমি কোনো অন্যায় করিনি। একটা ঝামেলায় পড়ে বিয়ে করতে হয়েছে। আমাকে বিশ্বাস করো তুমি। দরজাটা খোলো না প্লিজ, নিরা এখনো দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা অনেক টায়ার্ড, দুদিন ধরে না খেয়ে আছে। ওর কথা একটু যদি…
দরজা খুলে গেলো। মা ভয়ংকর চেহারায় তাকিয়ে আছেন। যত রেগেই থাকুন না কেন, দরজা খুলেছেন তো। স্বাক্ষর মায়ের পায়ের কাছে বসে বললো, মা প্লিজ নিরার মুখটা দেখো। তোমার পছন্দ হবে।
মা কথা না বলে চটাং করে বসার ঘরে চলে গেলেন। নিরার ঘোমটা তুলে তাকালেন ছেলের বউয়ের দিকে। মেয়েটা দেখতে খারাপ না, বেশ সুশ্রী। মা কিছু না বলে সেখান থেকে চলে এলেন রান্নাঘরে। নিরা ঠায় দাড়িয়েই রইলো। স্বাক্ষর বসার ঘরে গিয়ে নিরার পাশে দাড়িয়ে পড়েছে। মা নাস্তা হাতে এনে টেবিলের উপর শব্দ করে রাখলেন। তারপর বললেন, খেয়ে নিতে বল তোর বউকে।স্বাক্ষর কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। নিরা দুদিন কিছু খায়নি। ও যেহেতু এখন স্বাক্ষরের স্ত্রী, কাজেই ওর ব্যাপারে সমস্ত চিন্তা ভাবনা স্বাক্ষরকেই করতে হবে। স্বাক্ষর নিরাকে ধরে এনে নাস্তার টেবিলে বসালো। বললো, আগে খেয়ে নাও।
নিরা কিছু বললো না। এই অবস্থায় খাওয়ার মত রুচি বা ইচ্ছে কোনোটাই ওর নেই। তার উপর বিয়ের সাজে এভাবে কতক্ষণ ই বা থাকা যায়?
নিরাকে রুমে ঢুকতে বলতেও পারছে না স্বাক্ষর। নাস্তা খেতে বলার পর আরেকবার মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। নিরাকে রুমে নিয়ে যাবে কিনা সেটা জিজ্ঞেস করার জন্য। কিন্তু মায়ের দরজায় এসে দেখলো মা ফ্যানের সাথে শাড়ি বাঁধছেন। মুহুর্তেই পুরো দুনিয়া কেঁপে উঠলো স্বাক্ষরের। চিৎকার করে ছুটে গিয়ে মাকে টেনে নামালো বিছানা থেকে।
দ্বিতীয় পর্ব
ছেলে না জানিয়ে বিয়ে করেছে বলে কোনো মা কি সুইসাইড করতে পারে? বড় ধরণের ধাক্কা খেয়ে গেলো নিরা। উনি তাহলে কখনোই এ বিয়ে মেনে নেবেন না। এটা নিশ্চিত একেবারে।
নিরা মাথা নিচু করে বসে আছে। স্বাক্ষর মায়ের মাথাটা কোলের উপর নিয়ে বসে আছে। মাকে বারবার করে বুঝিয়ে বলছে যেন ওকে ভূল না বোঝে। মা কোনো কথা বলছেন না। ওনার হাইপারটেনশন বেড়ে গেছে। সবদিক দেখে দুশ্চিন্তা বাড়ছে নিরার।
স্বাক্ষরের বাবা এসে গেছেন। উনি ছেলের সদ্য বিয়ে করা বউকে দেখে তেমন অবাক হননি। ছেলে বড় হয়েছে, কাউকে ভালো লেগেছে, বিয়ে করেছে, ব্যস। এটা নিয়ে এত মাতামাতির কারণ নেই। যদিও উনি কষ্ট পেয়েছেন এরকম একটা কাজ করায়। তবুও চুপচাপ আছেন। স্বাক্ষর মায়ের সেবা করছে মন দিয়ে। নিরার কথা ভেবে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর।
স্বাক্ষরের বাবা বাসায় ফিরে আগে স্ত্রীর পাশে বসলেন। স্বাক্ষর মায়ের মাথাটা কোলে নিয়ে বসে আছে। নিরা ওদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে মাথা নিচু করে মেঝের দিকে চেয়ে আছে। সবাই চুপচাপ।
স্বাক্ষরের বাবা আগে কথা বললেন। স্ত্রীর হাতটা ধরে বললেন, উঠে বসো। কি হয়েছে তোমার? ছেলে যেটাতে ভালো থাকবে সেটাই করেছে। তুমি এত পাগলামি করছো কেন?
উনি স্বামীর দিকে একবার তাকালেন। শরীরটা আগের চেয়ে আরো খারাপ হয়ে গেছে মনেহচ্ছে। নিরা কিছুতেই বুঝতে পারছে না এটা নিয়ে উনি এত রেগে গেলেন কেন?
স্বাক্ষর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো, তুমি আমাকে ভূল বুঝিও না গো মা। নিরা অনেক ভালো একটা মেয়ে। আমরা একসাথে অনেক ভালো থাকবো তুমি দেখো।
মা ছেলের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে স্বামীকে বললেন, ঠিক আছে। তুমি যা বলবা।
উনি বালিশে মুখ গুঁজে দিলেন। স্বাক্ষর নিরার মুখের দিকে তাকালো। নিরার মনেহচ্ছে শ্বাশুরি মা একটু বেশি বেশি করছেন। তবে মা তো, হয়তো কষ্টটা বেশি পেয়েছেন সেটা ভেবে নিজেকে সামলে নিলো নিরা।
স্বাক্ষরের বাবা বললেন, মেয়েটা তো দেখতে ভালোই। স্বাক্ষর যদি মনে করে সে ভালো থাকবে, আমরা আর আপত্তি কেন করবো বলো? ছেলের জন্য সারাজীবন অনেক কষ্ট করে এসেছি। এখন এই ইচ্ছেটা পূরণ করি?
স্বাক্ষর মাথা নিচু করে ফেললো লজ্জায়। নিরাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে ও। গত দুদিন আগে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হয়েছে মেয়েটা। বাধ্য হয়ে বিয়ে করতে হয়েছে স্বাক্ষরকে। এই পরিস্থিতিতে নিরাকে ফেলে আসাটা কাপুরুষোচিত কাজ হয়ে যেতো। কিন্তু এখন কি করবে ও? মা যে অনেক কষ্ট পাচ্ছেন।
মা বললেন, ঘরে যা স্বাক্ষর। বউ নিয়ে যা।
আর কিছু বললেন না উনি। নিরা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। জীবনটা অনেক কঠিন, ওর জীবনটা আরো বেশি কঠিন। জীবনের প্রত্যেকটা ধাপ ধীরেধীরে কঠিনে রূপান্তরিত হয়েছে।
স্বাক্ষর নিরাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। নিরার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। মেয়েটার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। স্বাক্ষর দুহাতে ওর মুখটা ধরে বললো, টেনশন করছো নিরা? আম্মু আমাকে একটু বেশি ভালোবাসে সেজন্য এখন মেনে নিতে পারছে না। সব ঠিক হয়ে যাবে তুমি দেখো।
নিরা কোনো কথা না বলে স্বাক্ষরের বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেললো। নিজেকে খুব তুচ্ছ আর অপরাধী মনে হচ্ছে ওর। ওর জন্যই আজকে স্বাক্ষরকে এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
রাত্রিবেলা নিরা ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমেই বসে আছে। একবারও বাইরে আসেনি। এদিকে স্বাক্ষর বারবার মায়ের শরীরের যত্ন নেয়ার জন্য ছুটে যাচ্ছে মায়ের ঘরে। ওনার শরীরের অবস্থা এখন মোটামুটি ভালো।
রাতে খাবার টেবিলে স্বাক্ষর, ছোটবোন সামান্তা, বাবা আর নিরা কে নিয়ে খেতে বসলো ওরা। মা খাবার টেবিলে আসেননি। আজকে বাসায় রান্নাটাও উনি করেননি। নিরাকেই স্বাক্ষরের সাহায্যে রান্না করতে হয়েছে।
স্বাক্ষর মাকে খাবার দিয়ে আসলো রুমে। তুলে খাওয়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু উনি গ্রহণ করলেন না। বরং হাত ধুয়ে এসে খেতে বসলেন। স্বাক্ষর নিজেকে স্বান্তনা দিলো এই বলে যে, সব ঠিক হয়ে যাবে। নিশ্চয়ই সব ঠিক হয়ে যাবে।
খাবার শেষ করার পর রুমে এলো স্বাক্ষর ও নিরা। বাড়িটা সুনসান, চুপচাপ। নিরাকে টুকটাক বিভিন্ন জিনিস বুঝিয়ে বলছে স্বাক্ষর। নিরা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। স্বাক্ষরের প্রথম উপদেশ ছিলো, মাকে বুঝিয়ে দিতে হবে মেয়েটা স্বাক্ষরের জন্য পারফেক্ট। ধীরেধীরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
সকালবেলা সবাই ঘুম থেকে ওঠার আগেই নিরা উঠে পড়ল। ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো। তারপর এলো রান্না ঘরে। কোনোকিছু ওকে দেখিয়ে দিতে হয়নি। নিজ জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে কাজগুলো করার চেষ্টা করলো। পরোটা বানালো, ওমলেট করলো, সব থালাবাসন মেজে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিলো। নাস্তার টেবিলে সব খাবার সাজিয়ে রেখে রুমে এলো। স্বাক্ষরের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বড্ড মায়া লাগলো ওর। মাথার কাছে বসে স্বাক্ষরের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। স্বাক্ষর চোখ মেললো কিছুক্ষণ পরে। নিরাকে স্নিগ্ধ অবস্থায় দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করল। জিজ্ঞেস করলো, এত সকালে উঠেছো?
- সব কাজ শেষ করেছি স্বাক্ষর।
স্বাক্ষর বললো, তুমি যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটা কথা বলি? বাথরুমে দেখো বালতিতে আম্মুর ভেজা কাপড় আছে। আব্বুর ও থাকতে পারে। তুমি কি ওগুলো একটু ধুয়ে দিবা? তাহলে মা অবাক হয়ে যেতো।
নিরা হেসে বললো, সেটা কি আমি বাকি রেখেছি ভেবেছো? আমি মায়ের সমস্ত কাপড় চোপর ধুয়ে শুকাতেও দিয়ে এসেছি।
স্বাক্ষর অবাক হয়ে বললো, সত্যি! আম্মুর মনটা গলাতেই হবে কিন্তু। তুমি পারবে নিরা, তুমি ই পারবে। - কি?
- পুত্রবধূ হয়ে উঠতে।
৩য় পর্ব
শ্বাশুড়ি মা ঘুম থেকে উঠে দেখলেন নতুন বউ ঘর ঝাড়মোছ করে আবার নাস্তাও রেডি করে ফেলেছে। ওনার আশ্চর্যের সীমা রইলো না। মেয়েটা এত ঝটপটে হলো কিভাবে? উনি ভ্রু কুচকে চিন্তা করলেন কিছুক্ষণ।
স্বাক্ষর গোসল শেষ করে এসে দেখলো নিরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। খুব আনমনা হয়ে তাকিয়ে আছে। ও এসে বউয়ের পাশে বসলো। নিরার হাতটা টেনে নিয়ে বললো, এখনো আপসেট হয়ে বসে আছো? বলছি তো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে নিরা।
নিরা মুখ তুলে তাকালো। সংসারের প্রধান একজন মানুষ ওরকম রেগে আছেন, কিভাবে ঠিক হবে সবকিছু? প্রশ্নটা করতে গিয়েও করলো না। চুপচাপ বাইরে তাকিয়ে রইলো।
স্বাক্ষর জিজ্ঞেস করলো, তোমার খারাপ লাগেনি নিরা?
- কি জন্য?
- এইযে আমার মায়ের এতগুলো কাপড় চোপড় ধুয়ে দিলা। সাধারণত অন্যকেউ এসব কাজ করতে চাইবে না। আর আমি তখন ওভাবে বলেছি, অন্যকেউ হলে তো সাংঘাতিক রেগে যেত। বলতো, আমাকে চাকরানী পেয়েছো?
নিরা একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললো, কাপড় ধুয়ে দেয়াটা কি শুধু কাজের মেয়ের কাজ? নিজের মা মনে করে ধুয়ে দিয়েছি। - সবাই তো অন্যের মাকে নিজের মা ভাবতে পারেনা নিরা।
- আমি পারতে চাই। মাকে হারিয়ে ফেলেছি অনেক আগেই। সবসময় স্বপ্ন দেখতাম আমার শ্বাশুড়ি মাকে নিজের মায়ের মতই দেখবো। শুধু ওনার মনোরঞ্জনের জন্য নয়। আমি চাই উনি আমার মা হয়ে থাকুন।
স্বাক্ষর সন্তুষ্ট হয়ে বললো, হুম ঠিক বলেছো। কিন্তু মা কি তোমাকে বুঝবেন? আমি মাকে যতদুর চিনি, একবার রেগে গেলে সহজে গলতে চান না। - ভালোবাসা দিয়ে কঠিন জিনিসও গলানো সম্ভব স্বাক্ষর। আমি তো ওনাকে গলানোর জন্য কাজ করিনি, করতে হবে বলে করেছি। এ বাড়ির কাজগুলো করাটা এখন আমার দায়িত্ব। আমি দায়িত্ব বুঝি, নিজের কাজ নিজে করলে নিজেরও ভালো লাগে আর কাজের মেয়ের কাজ আমার পছন্দ না।
স্বাক্ষর হেসে বললো, এসব গুণের জন্যই তো তোমাকে হারাতে পারিনি নিরা। আমি জানি তুমি সবার থেকে আলাদা। তোমাকে আমার ঘরে নিয়ে এলে ঘরটা আলোকিত করে থাকবে। আর হারিয়ে ফেলাটা অনেক বড় ভূল হতো আমার জন্য।
নিরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, শুধু শুধু আমার জন্য তোমার স্বপ্ন পূরণ হলোনা স্বাক্ষর। তোমার বাবা মা চেয়েছিলেন তুমি তাদের স্বপ্ন পূরণ করো। মা অনেক কষ্ট পেয়েছে স্বাক্ষর।
স্বাক্ষর মাথা ঝাকালো। মা কষ্ট পেয়েছেন ঠিক আছে, কিন্তু এতটা রেগে যাওয়াটা বোধহয় উচিত হয়নি। রাগের কোনো কারণ আছে কি?
স্বাক্ষরের মা গাল ফুলিয়ে ঘরে পায়চারি করছেন। নতুন ছেলের বউ অনেক কাজ করেছে। মেয়েটা নিজের কাজ নিজে করতে ভালোবাসে সেজন্য করেছে। কিন্তু শ্বাশুড়ি ভাবলেন, মন গলানোর জন্য লোক দেখানোর জন্য কাজ করছে মেয়েটা। সাংঘাতিক রকমের টাউট আছে বলতে হবে। মনেমনে খুশি হওয়ার পরিবর্তে পুত্রবধূর প্রতি আরো ভয়ানক রেগে গেলেন উনি।
স্বাক্ষরের ছোট বোন সামান্তার কলেজের সময় হয়ে এসেছে। ও নাস্তার টেবিলে এসে মাকে ডাকতে আরম্ভ করলো। মুহুর্তের মধ্যেই নিরা ছুটে এসে বললো, নাস্তা রেডি করে রেখেছি। তুমি খেয়ে নাও। আমি বেড়ে দিচ্ছি।
সামান্তা মুখটা ছোট করে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে টেবিলের দিকে তাকালো। ভাবিকে ভালোই লাগছে ওর। দেখতে বেশ সুন্দরী, কাজে কর্মেও অনেক চনমনে। তবুও কোনো কথাবার্তা ছাড়াই প্রেমের বিয়ে তো, একটু ক্ষোভ নিয়ে আছে সামান্তা। একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে টেবিলে গিয়ে বসলো।
নিরা এসে নাস্তা এগিয়ে দিলো সামান্তার দিকে। গ্লাসে পানি ঢেলে দিয়ে বললো, খাও।
এমন সময় শ্বাশুড়ি মা এসে বললেন, এত লোক দেখানো কাজকর্ম করা লাগবে না। বাসায় উঠতে বলেছি, উঠেছো। থাকো, ছেলের সাথে সংসার করো। নিজের সংসার নিজে গুছাও। এত লোক দেখানো কাজকর্ম করতে হবেনা।
নিরা মৃদু স্বরে বললো, আমি বাসাতেও এসব কাজ করতাম। আমার অভ্যেস আছে।
- বাসায় কি তোমার বাপ মা নিজেদের নোংরা কাপড় চোপড় ও তোমাকে দিয়ে ধোয়াতেন নাকি?
কথাটা বুকে এসে ধাক্কা লাগলো নিরা’র। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, না। বাবা মা কখনো নোংরা হয়না। তাদের কাপড় তারাই ধুতেন কিন্তু মাঝেমাঝে আমি ধুয়ে দিলে মা খুশি হতেন। নোংরামির কথা আমি ভাবিনি কখনও। ছোটবেলায় আমার পায়খানা প্রস্রাব কোলে নিয়েই মাকে ভাত খেতে হতো। তিনি তো কখনো বাচ্চাকে নোংরা ভাবেননি। আমি কেন ভাববো? মাঝেমাঝে মাকে খুশি করার জন্য করতেই পারি।
শ্বাশুড়ি মা মুখটা বিকৃত করে বললেন, বেশি শিক্ষিত মেয়ে আনলে এই এক সমস্যা। কথায় কথায় জ্ঞান দিতে আরম্ভ করে।
নিরা থমকে গেলো। জ্ঞান কখন দিলো বুঝতে পারলো না। তবে এটুকু বুঝতে পেরেছে যে ওর কথা বলাটা বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। এখন থেকে চুপচাপ থাকতে হবে। ভাবতে ভাবতে চুপ করে থাকার চেষ্টা করল।
শ্বাশুড়ি বললেন, আমার কাপড় চোপড় আমিই ধুয়ে দিবো। কখনো হাত লাগাতে হবেনা। বাসার কোনো কাজ করারও দরকার নাই। কাজের মেয়ে রাখা আছে।
নিরা বলতে চাইলো আমি নিজেত কাজ নিজে করতে ভালোবাসি। কাজের মেয়ের চেয়ে নিজের মত কাজ করাতে ওর আনন্দ বেশি হয়। কিন্তু বলতে পারলো না। চুপ করে রইলো।
শ্বাশুড়ি মা টেবিলে বসে গেল নাস্তার জন্য। বসার পর নাস্তা খেতেও আরম্ভ করে দিলেন। নিরাকে একবার খেতেও বললেন না। নিরা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। দরজায় কে যেন বেল বাজাচ্ছে দেখে ছুটে গেলো দরজা খুলতে।
দরজা খুলে দেখলো একজন মহিলা এসেছে। নিরার দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে উনি বললেন, তুমিই স্বাক্ষরের বউ? ভালোই তো লম্বা। স্বাক্ষরের পছন্দ আছে।
নিরা সালাম দিয়ে বললো, ভেতরে আসুন।
- না থাক। পরে আসবো। কাজে যাচ্ছি।
মহিলাটি আর দাড়ালেন না। দ্রুত বেড়িয়ে গেলেন সেখান থেকে। নিরা দরজা লাগিয়ে দিয়ে খাবার টেবিলের পাশে দাড়ালো এসে।
শ্বাশুরি মা বললেন, হুট করে দরজা খুলতে চলে গেছো কেন? যে কেউ আসলে দরজা খুলবা না। আমি খুলে দিবো। আর এত দৌড়াদৌড়ি ভালোনা। নতুন বউ, নতুন বউয়ের মতই থাকো। অবশ্য তোমরা তো আর নিজেকে বউ মনে করোনা। তোমরা প্রেম করে বিয়ে করছো, শ্বশুরবাড়িতে এসেই কর্তৃত্ব ফলানো আরম্ভ করবা। দুদিন পর শ্বশুর শ্বাশুড়িকেই চিনবা না।
নিরা কিছু বলতে গিয়েও চুপ রইলো। বললেই দোশ হয়ে যাবে। মেয়েদের আবার প্রতি পদে পদে দোষ।নিরা তাকিয়ে দেখলো জগে পানি শেষ। ও জগটা নিয়ে ভর্তি করে পানি এনে রাখলো। শ্বাশুড়ি রেগে বললেন, আমরা ফুটানো পানি খাই। একবার বলছি এত দৌড়াদৌড়ি ভালোনা। লোক দেখানোর জন্য এত কাজ করা লাগবে না। যদি ভেবে থাকো এভাবে ছুটাছুটি করে কাজ করলেই আমার মন জয় করবা তাহলে ভূল ভাবছো। যাক ওসব। বিয়া করছো, সংসার করো। কিছুই করতে বলবো না। ছেলেরে নিয়া সারাক্ষণ শুইয়া থাকো গিয়া।
নিরা থ হয়ে গেলো একেবারে। এ কেমন কথাবার্তা! ও তো আপন মনে করেই এসব করেছে। নিজের বাড়ির কাজ নিজেকেই তো করতে হবে। তাছাড়া মাকে কাজে সাহায্য করাটা তো অন্যায় নয়। উনি অযথা এভাবে রেগে গেলেন কেন? মাথা নিচু করে নিজের ঘরে চলে গেল নিরা।
স্বাক্ষর ওকে দেখে বললো, মন খারাপ কেন? মা কিছু বলেছে?
নিরা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বললো, না। বললেও স্বাভাবিকভাবে নিয়েছি। মায়ের তো রাগ করাটাই স্বাভাবিক তাইনা?
স্বাক্ষর এসে নিরার মুখটা দুহাতে ধরে বললো, আমার পাগলীটা রে। এত ভালো কেন তুমি? সবসময় দেখি মেয়েরা শুধু শ্বাশুড়ির নামে উলটা পালটা বলে। আর তুমি লুকিয়ে যাচ্ছো?
নিরা স্বাক্ষরের চোখে চোখ রেখে বললো, আমাকে তুলনা করোনা স্বাক্ষর। আমি আমার মত। আর এসব নিয়ে কিছু বোলো না। মা যাই বলুক, আশাকরি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
স্বাক্ষর নিরার থুতনিতে হাত দিয়ে বললো, ইস আমার লক্ষী বউটা রে। আজীবন এমন ই থাকিস।
- স্বাক্ষর, আমার টেনশন হচ্ছে তোমার জন্য।
- কেন?
- তোমার ক্যারিয়ারের বারোটা বাজিয়ে দিলাম আমি।
- এত টেনশন কোরো না। কপালে যা ছিলো, হয়েছে। যা হয় ভালোর জন্যই হয়। দেখা যাক সামনে কি আছে। এখন দুশ্চিন্তা করতে চাচ্ছি না। মায়ের শরীর কি ভালো?
নিরা মাথা ঝাকিয়ে বললো, শরীর ভালোই মনে হলো। গলায় যা তেজ! জানিনা কতদিন এভাবে সহ্য করতে হবে আমাকে…
পর্ব ৪
শ্বাশুড়ি মা কিছুতেই ছেলের বউয়ের উপর খুশি হতে পারছেন না। ওনার কাছে সবকিছু কেই মনেহচ্ছে মনোরঞ্জনের চেষ্টা করা। মনোরঞ্জনের চেষ্টা করে লাভ কি? মেয়েটাকে তো জোর করে মনে বসাতে পারবেন না। উনি চেয়েছিলেন ছেলে বড় হয়ে ওনার স্বপ্ন পূরণ করবে। মানুষের মত মানুষ হবে, সুন্দর মত চাকরিতে জয়েন করবে। এলাকাবাসীর কাছে ওনাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। তারপর নিজেরা পছন্দ করে হোক কিংবা ছেলের পছন্দের কোনো মেয়েকেই নাহয় বউ করে আনা যেতো। বিয়ের এত তাড়া কেন? ছেলে জন্ম দিয়ে মানুষ করা কি কারণেই?
মায়ের রেগে থাকাটা স্বাভাবিক। তার উপর এক বাবার এক ছেলে, অতি আদরে মানুষ করা হয়েছে তাকে। কখনো কোনো আবদার বাবা মা অপূর্ণ রাখেনি। সেই ছেলে কেন এরকম করবে? আজকে বাবা মা কি তাহলে শিক্ষা দিতে পারেননি? মায়ের চেয়ে একটা অপরিচিত মেয়ের ইচ্ছাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল? এসবই স্বাক্ষরের মায়ের অভিমানের কারণ। প্রতিটা মা ই চায় তার সন্তান বড় হোক, মানুষ হোক। তারপর দেখেশুনে বিয়ে করবে। তিনিও কোনোকিছু ভাবতে পারছেন না।
স্বাক্ষর মাকে সবকিছু খুলে বলতে চেয়েও সুযোগ পাচ্ছে না। মা তো সময় ই দিচ্ছে না। যখনই ও মায়ের কাছে যাচ্ছে, মা তাড়িয়ে দিচ্ছে। রাগ দেখিয়ে চলে যেতে বলছে সেখান থেকে। স্বাক্ষর বুঝে উঠতে পারছে না কিভাবে মাকে খুলে বলবে সবকিছু। ওর দৃঢ় বিশ্বাস মাকে সবকিছু বুঝিয়ে বললে তিনি বুঝবেন।
নিরা স্বাক্ষরকে বললো, আমার তো জামাকাপড় কিছুই নেই। মায়ের শাড়িটা আপাতত পড়ে আছি। কিন্তু এটা পড়ে কতক্ষণ ই বা থাকবো? আমিতো শাড়ি পড়ে কাজও করতে পারিনা। তাছাড়া আরো একটা শাড়ি আমার দরকার স্বাক্ষর।
স্বাক্ষর একটু ভেবে বললো, হুম। তোমার জন্য কি তাহলে টপস কিনে আনবো?
- না। এখানে আমি টপস পড়তে চাইনা। তুমি পারলে কামিজ নিয়ে এসো।
- কামিজ কি রেডিমেড পাওয়া যাবে?
- হ্যা যাবে। তোমার কাছে টাকা আছে তো স্বাক্ষর?
করুণ দৃষ্টিতে স্বাক্ষরের দিকে তাকালো নিরা। স্বামীর কাছে চাইলেই তো হবেনা। তার হাতে টাকা পয়সা আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। তার উপর স্বাক্ষর এখন বেকার। পুরোপুরি বাবার উপর নির্ভরশীল ও। এখন ওর কাছে কিছু চাওয়াটা নিজের কাছেই লজ্জাজনক লাগছে।
নিরার মুখের দিকে তাকিয়ে স্বাক্ষর বললো, এতকিছু ভাবতে হবেনা তো। তুমি সবকিছু নিয়েই বেশি টেনশন করো।
- তাহলে কি করব বলো? তোমার হাত খালি আর আমি যদি বায়না ধরি, সেটা তো বিবেকহীন কাজকর্ম হয়ে যাবে।
স্বাক্ষর বললো, ওরে বউ রে। থাক এতকিছুর নিয়ে তোমাকে টেনশন করতে হবে না। তুমি বলো কিরকম ড্রেস আনবো? টাকা আমার কাছে আছে।
নিরার আরো কয়েকটা জিনিস খুব প্রয়োজন। সেসবের নাম শুনে বেরিয়ে গেলো স্বাক্ষর। নিরা চুপচাপ বসে রইলো বিছানার উপর।
বাড়ির আশেপাশের বাড়ির মানুষজন আসছে নিরাকে দেখতে। নতুন বউ দেখার কৌতুহল সবার মাঝেই। শ্বাশুড়ি মা নিজে দরজা খুলে দিয়েছেন। কয়েকজন মহিলা আসছে, দেখে দু একটা মন্তব্য করেই চলে যাচ্ছে।
সবাই চলে যাওয়ার পর শ্বাশুড়ি মা নিরাকে বললেন, সবাই আড়ালে কত কিছু বলে জানো?
নিরা মুখ তুলে তাকালো। শ্বাশুড়ি মা বললেন, কতজন কত কথা বলছে সেগুলো তো তোমার কানে আসেনা। অনেকেই বলছে, ছেলেটাকে দেখে ভালোই মনে হয়েছিলো। কত নম্র ভদ্র। তলে তলে এতকিছু করে বেড়ায়। এভাবে একা একা বিয়ে করে ফেললো।
নিরা কোনো উত্তর খুজে পেলো না। এটাই তো স্বাভাবিক। স্বাক্ষরের ব্যবহারে যেকেউ ওকে ভালো, নম্র ছেলে বলবে। সে যে এমন করে দুম করেই বিয়ে করে আনবে সেটা তো ভাবাই যায়না। কিন্তু উপায় যে ছিলো না। একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নিরা।
শ্বাশুড়ি মা আবারও বললেন, আমার ছেলেটার মাথায় কিসের ভূত ঢুকিয়েছিলে তুমি ই জানো। চাইছিলা তো একটা সংসার তাইনা? এখন সংসার করো। নাকি আমি থাকলে সমস্যা হবে? আমি থাকাতে সমস্যা হইলে বইলো। আমি চলে যাবো বাড়ি ছেলে। তুমি একাই সংসার কইরো।
মায়ের কথায় বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো নিরার। বুকটা চিনচিন করছে কষ্টে। একজন মা এভাবে বলতে পারেন!
ও মৃদু স্বরে বললো- মা আমাকে এমন মেয়ে ভাববেন না। আমি আপনার মেয়ের মত।
- হুম। আমার মেয়ে তোমার মত এতটা বেহায়া হবেনা। জোর করে বিয়ে করার মত সাহস ওর হবেনা।
নিরা চুপ করে গেলো। ও তো স্বাক্ষরকে জোর করে বিয়ে করেনি। পরিস্থিতি বাধ্য করেছে বিয়ে করতে। বিয়ের ঘটনাটা মাকে বলা দরকার কিন্তু উনি তো শোনার প্রয়োজন মনে করছেন না। সুযোগ ও দিচ্ছেন না।
নিরা বললো, মা আপনি আমার কথা সবটা শুনুন। আমাদের বিয়েটা কিভাবে হয়েছিলো আপনার জানা উচিত। - উচিত অনুচিত শেখাতে আইসো না। বিয়ে হয়েই গেছে এখন ওসব শুইনা কি করবো? ইচ্ছা নাই শোনার। তুমি সংসার করো।
- মা, এভাবে বলবেন না।
- কি বলবো তোমার কাছে শিখতে হবে আমার?
নিরা আর কথা বাড়ালো না। একটা অশান্তি থেকে বাঁচতে বিয়েটা করতে হয়েছে। এখানে তো আবার অন্যরকম অশান্তি হবে। মা সারাক্ষণ কথা শুনিয়েই যাচ্ছেন। কিভাবে মাকে বোঝানো সম্ভব জানেনা নিরা।স্বাক্ষর নিরার জন্য দুটো থ্রি পিছ কিনে নিয়ে এসেছে। নিরার আরো টুকটাক যা যা দরকার সবই নিয়ে এসেছে। ও বাসায় ঢোকার সময় মা নিজেই দরজা খুলে দিয়েছেন। উনি দেখেছেন স্বাক্ষরের হাতে শপিং ব্যাগ। ব্যাগ দেখেই ভ্রু কুঁচকে গেছে ওনার। স্বাক্ষর কিছু বলতে গিয়েও বললো না। শুধু বললো, নিরার জন্য দুটো জামা আনলাম মা।
মা কিছু না বলে সরে গেলেন দরজা থেকে। স্বাক্ষরও কিছু বললো না আর। সোজা চলে এলো নিজের রুমে। নিরাকে ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বাথরুমে চলে গেল।
নিরা ব্যাগ খুলে জামাকাপড় বের করে হাসলো। ছেলেটার পছন্দ আছে বলতে হবে। দারুণ সব জিনিস এনেছে পছন্দ করে। জামা দুটোও সুন্দর। নিরা জামাটা হাতে নিয়ে আয়নার সামনে ধরে নিজেকে দেখতে লাগলো কেমন লাগছে।
স্বাক্ষর বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে নিরাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোমাকে মানাবে দারুণ।
- তোমার পছন্দ ভালো।
- নিরা, তোমাকে খুব মায়াবতী লাগছে।
- কি যে বলো না। তোমার চোখ সবসময়ই আমাকে সুন্দর দেখে।
- তুমি সুন্দর বলেই সুন্দর দেখে নিরা। নয়তো সুন্দর দেখতো না বুঝেছো?
স্বাক্ষর নিরার কাঁধের উপর মাথা রেখে গালের সাথে নিরার গালটা ঘষছিলো। নিরা চোখ বুঝে একহাতে স্বাক্ষরের মাথাটা চেপে ধরেছে। দরজা খানিকটা ফাক করা ছিলো। কিন্তু এই ঘটনা চোখ এড়ালো না মায়ের। উনি স্বাক্ষরের ঘরের সামনে দিয়ে পাশের ঘরে যাচ্ছিলেন। দৃশ্যটা দেখেই ভয়ানক রাগ উঠে গেলো। ছেলে বিয়ে করে এনেই বাসায় রং তামাশা শুরু করে দিয়েছে। বাবা মায়ের স্বপ্নের কোনো মূল্য নেই এদের কাছে? তারচেয়ে একটা মেয়ের সাথে ঢলাঢলি, প্রেম পিরিতি বেশি দামী হয়ে গেলো? রাগে নিজের ঘরে এসে স্বামীকে কল দিলেন উনি। এভাবে বাসায় চলতে থাকলে তো ওনার রাগ হবে। নতুন বিয়ে করে ওরা তো আদর সোহাগ করবে ই। কিন্তু সেটা নজরে আসলে রাগ উঠে যাবে ওনার। কেন রাগ উঠবে সেটা উনি নিজেও জানেন না। তবে এসব রং তামাশা এই বাড়িতে থেকে অন্তত হবেনা।
৫ম পর্ব
নিরার শ্বাশুড়ি সোজাসাপটা স্বামীকে বলে দিলেন, এ বাড়িতে ওরা এভাবে থাকলে আমার সহ্য হবেনা।
এ কেমন কথা! অবাক হয়ে স্ত্রীকে বললেন তিনি। ছেলের বিয়ের শোকে মাথাটা বোধহয় খারাপ হয়ে গেছে।
উনি বুঝিয়ে বললেন, নতুন বিয়ে হয়েছে। তুমি নিজের মত থাকবা, ওদের দিকে তাকাও কেন?।
উত্তরে ওনার স্ত্রী আরো রেগে বললেন, একা একা বিয়ে করে আবার ঢং.. এত ঢং দেখতে পারবো না আমি। আমার রাগ লাগে।
- হা হা। তুমি পাগল হয়ে গেছো স্বাক্ষরের মা। ছেলেকে আমরা বিয়ে দিলে বউয়ের সাথে বোঝাপড়া হতেই সময় লেগে যেতো অনেক। সে নিজে প্রেম করে বিয়ে করেছে, এসব কথা বললে তোমার অন্যায় হবে বুঝলা?
স্বাক্ষরের মা আরো রেগে গেলেন। এই লোককে কিছু বলে কোনো লাভ হবেনা সেটা বোঝাই যাচ্ছে। এবার বরং অন্য কোনো উপায় বের করতে হবে। ওই মেয়েকেই মুখে মুখে দুটো কথা শুনিয়ে দিতে হবে। তাহলেই উচিত শিক্ষা?
স্ত্রীর মুখের ভংগী দেখে স্বাক্ষরের বাবা বললেন, তুমি এত ক্ষেপছো কেন বলোতো? মেয়েটার মধ্যে খারাপ কি পেলে?
- আমি নূরজাহানের মেয়ের সাথে স্বাক্ষরের বিয়ে দেবো ভেবে রেখেছিলাম। মেয়েটাকে আমার খুবই ভালো লাগে। সংসারে এসে আমার মনমতো চলাফেরা করত, অমন মেয়ে আজকাল পাবা না।
- ও তাহলে এই ব্যাপার। নিজের বোনের মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দেবে বলে আজকে অন্য একটা মেয়েকে অসহ্য লাগছে? তোমার ছেলেরও তো পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে তাইনা?
উনি বললেন, থাকতে পারে। কিন্তু নিজের পা না দাঁড়িয়েই?
স্বামী স্ত্রীতে তর্ক হয়েই যেতে লাগলো। এদিকে স্বাক্ষর ও নিরা ভবিষ্যতের সুখস্বপ্নে বিভোর।
সামান্তা কলেজ থেকে এসে উপুড় হয়ে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। ব্যাপারটা দৃষ্টি এড়ায়নি নিরার৷ কৌতুহল চেপে রেখে সামান্তার রুমে ঢুকলো ও। চুপিচুপি এসে ওর বিছানার পাশে দাঁড়ালো। সামান্তা নিরার উপস্থিতি টের পায়নি।
নিরা মৃদু স্বরে বললো, বোন..
সামান্তার কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। বরং আরো স্থির হয়ে গেলো ও।
নিরা আবারও ডাকলো, বোন একটু কথা বলবে আমার সাথে?
সামান্তা চোখ মুছে সামান্য একটু মাথাটা উঁচু করে নিরাকে দেখলো। তারপর বললো, বলুন।
- আমাকে আপনি বলতে হবেনা। তুমি করেই বলো।
সামান্তা কোনো উত্তর দিলো না। নিরা ওর আরো কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আমাকে কি আপন ভাবতে পারো?
এতক্ষণে মুখ তুলে তাকালো সামান্তা। চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা কোনোকিছু নিয়ে খুব বড় ডিপ্রেশনে পড়ে গেছে। নিরা আবারও মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে তোমার বলা যাবে? যদি আপন ভাবো তাহলে বলে ফেলো না হয়।
সামান্তা কিছু বললো না। নিরা খুব সন্তর্পণে সামান্তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। মাথায় হাত রেখে আলতো করে বুলিয়ে দিতে দিতে বললো, যদি আপন ভাবতে পারো তাহলে বলতে পারো। আমি তোমার কোনো ক্ষতি চাইবো না।
সামান্তা মুখ তুলে তাকালো। জড়িয়ে ধরলো নিরাকে। এত কষ্টের মুহুর্তে কাউকে পাশে দরকার ছিলো খুব। কান্না থামানোর চেষ্টা করেও পারলো না, বরং কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো।
নিরা ওকে বাঁধা দিলো না। মেয়েটা নিশ্চয়ই কোনো কিছু নিয়ে খুব কষ্ট পাচ্ছে। কাদুক, কাঁদলে ভেতরটা হালকা হবে।
কিছুক্ষণ কান্নার পর কান্না থামিয়ে সামান্তা বললো, তোমাকে একটা কথা শেয়ার করি? কাউকে বলবে না তো?
নিরা মাথাটা দুদিক্র ঝাকিয়ে বললো, না। কাউকে বলবো না। তুমি বলো।
- আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ভাবি। খুব কষ্ট হচ্ছে।
- কেন? সেটা বলবা তো। কি জন্য কষ্ট পাচ্ছো বলো?
সামান্তা আরো অনেক্ষণ কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে গেলে আস্তে আস্তে বললো, আমি একজনকে খুব ভালোবাসতাম। এখনো বাসি। আমাদের সম্পর্কটা অনেক ভালো আর গভীর ছিলো। ওর কথামত বাসায় মিথ্যে বলে আমি ট্যুরে গিয়েছিলাম ওর সাথে। বাড়িতে বলেছিলাম বান্ধবীর বাসায় যাবো। ট্যুরে গিয়ে…
নিরা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ট্যুরে গিয়ে কি?
- আমরা একসাথে একরুমে ছিলাম। গার্ল ফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড একসাথে থাকলে কি হতে পারে জানোই তো।
মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো নিরা। তীক্ষ্ণ চোখে সামান্তার দিকে তাকিয়ে বললো, তারপর? - সেদিন রাতে আমাদের মধ্যে অনেককিছুই ঘটে যায়। পরের দিনটাও ও আমাকে সারাদিন বের হতে দেয়নি। পুরোটা সময় দুজনে শুধু.. একজন আরেকজনের সাথে লেপ্টে বসে ছিলাম। কি সুখের মুহুর্ত ছিলো। আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে দিয়েছিলাম ওকে। কিন্তু ট্যুর থেকে আসার মাত্র কয়েকদিন হয়ে গেছে, ও এখন বলছে আমাকে ও ভালোবাসতে পারছে না। আমার মধ্যে নাকি অনেক সমস্যা।
অবাক হয়ে সামান্তার দিকে তাকালো নিরা। এত সুন্দর মেয়েটাকে কেউ এভাবে ঠকাতে পারে!
ও বললো, কি বলছো এসব? আর কি বলেছে ও? - আমাকে নাকি ওর পাশে মানায় না। এতদিন চলাফেরা করে ও এটাই বুঝলো। আমার সাথে আজীবন থাকতে পারবে না ও।
নিরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সামান্তার বয়স বেশি না। এত দ্রুত যদি এরকম সমস্যায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলে, তাহলে বাকি জীবনটা তো বিষিয়ে যাবে মেয়েটার।
সামান্তা বলল, ভাবি। আমি অনেক কিছু বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ও কিছুতেই মানছে না। ও আমাকে ছেড়েই দিলো ভাবি।
নিরা সামান্তাকে স্বান্তনা দিয়ে বললো, কিন্তু এরকম একটা মানুষের সাথে থাকার চেয়ে না থাকাই তো ভালো রে বোন। কেন কষ্ট পাচ্ছো ওর জন্য? - তাহলে কি কষ্ট পাবো না? এতদিনের রিলেশয়,আমার এত স্বপ্ন ওর জন্য…
- মানুষটা তোমাকে সম্মানই করেনা, ভালো বাসেনা। তাকে নিয়ে কেন স্বপ্ন দেখলে?
- এটা কি আগে বোঝা যায় ভাবি? মানুষটা বদলে না যাওয়া পর্যন্ত বোঝা যায় না।
নিরা বললো, ও বদলায়নি রে বোন। আগের মতই আছে। আসলে তোমার সাথেই করেছে ভালোমানুষের অভিনয়।
সামান্তা কাদতে কাদতে জড়িয়ে ধরে রইলো নিরাকে।
নিরা বললো, এখন আর কেঁদো না। শক্ত হও। নিজের মনকে বুঝাও৷ ওকে কি কোনোভাবে ভূলে যেতে পারবা না?
- পারবো না ভাবি। আমি ওকে প্রচন্ড ভালোবাসি।
- ওর সাথে কথা বললে কি কোনো লাভ হবে?
- কে কথা বলবে?
- যদি আমি বলি?
সামান্তা অবাক হয়ে তাকালো নিরার দিকে। নিরা মেয়েটা যথেষ্ট ভালো একটা মেয়ে, আর অনেক স্মার্ট ও। ভরসা করাই যায়৷ তাছাড়া এই মুহুর্তে সামান্তার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে। এখন যে যা বলবে, সেটাই করবে ও। তবুও ওই ছেলেটাকে ওর চাই ই।
নিরা বললো, তুমি ছোট মানুষ। অনেক কিছুই এখনো বোঝো না।সামান্তা ভাবির দিকে তাকালো একবার।
নিরা বললো, শুধু ভালোবাসি বললেই এর কর্তব্য ফুরায় না বোন। তোমার ভাইয়া আমাকে বিয়ে করে এনেছে এই কর্তব্য বোধের জন্যই। ওই ছেলে তোমাকে ভালোবাসে কিনা সন্দেহ। আমার তো মনেহয় সে তোমাকে ব্যাবহার করেছে।
কান্না বেড়ে গেলো সামান্তার। নিরা বললো, এই বয়সে মেয়েরা অনেক ভূল করে। তুমিও ভূল করে ফেলেছো সামান্তা। অনেক বড় ভূল করে ফেলেছো। প্রথমত, যে সে ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে। আর দ্বিতীয়ত, শারীরিক সম্পর্ক গড়ে।
সামান্তা কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমি তো এতকিছু বুঝিনি ভাবি। আমি ওকে ই আমার পুরো পৃথিবী ভেবে ফেলেছিলাম।
- কাউকে নিজের পুরো পৃথিবী ভাবতে নেই। যদি তোমার পৃথিবীর একটা অংশ হতো, তাহলে ও চলে গেলে সে অংশকে ছাড়াই ভালো থাকতে। কিন্তু ও তোমার পুরো পৃথিবিটাই নিয়ে গেছে। এখন কিভাবে বাঁঁচবে?
সামান্তা চোখ মুছে বললো, আমি এখন কি করতে পারি তুমি বলো? ওকে ভোলাটা যে খুব কষ্টকর। - আগে ওর সম্পর্কে আমাকে বিস্তারিত বলো। সবটা শুনে ছেলেটা কেমন হতে পারে সেটা কল্পনা করে নেই। তারপর প্রয়োজনে ওর সাথে সরাসরি গিয়ে কথা বলবো।
একটু স্বান্তনা পেল সামান্তা। বললো, আচ্ছা। কি জানতে চাও বলো?
সামান্তার মুখ থেকে অনেক কিছু জেনে নিলো নিরা। এরপর সেই ছেলেটার সাথে একবার দেখা করার প্রয়োজন অনুভব করলো। সামান্তা রাগ করে ফোন থেকে সব ছবি ডিলিট করেছে বলে ছেলেটাকে দেখতে পারলো না নিরা। বললো, একেবারে সামনা সামনি দেখা করবে। যা বলার, বুঝিয়ে বলবে। এতে কাজ হতে পারে কিছুটা। স্বাক্ষর এখন বাইরে, এদিকে শ্বাশুড়ি মা কিভাবে ব্যাপারটা নেবেন সেটা জানেনা নিরা। তবুও সাহস করে একবার বের হয়েই পড়লো বাড়ি থেকে।
ঠিকানা অনুযায়ী সে জায়গায় পৌঁছে যা দেখলো তাতে দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় নিরা’র। এই ছেলেটাই কুকুরের মত পিছে লেগেছিলো ওর। এত বেশি দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছিলো যে বাধ্য হয়েই নিরাকে বিয়ে করে নিজের হেফাযতে নিয়ে গেছে স্বাক্ষর। সেই ছেলেটা ই আবার সামান্তার মত ফুটফুটে মেয়েটাকে ঠকিয়ে…
নিরা আর ভাবতে পারলো না। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। এই ছেলেটাই তো ধর্ষণের জন্য ওকে আটকে রেখে….
আর ভাবতে পারলো না নিরা। শরীরটা ঘুলিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা বহু আগে থেকেই নিরার পিছনে লেগেছিলো। প্রত্যেকবার স্বাক্ষর ওকে থ্রেড দিয়েছে, লড়াই করেছে ওই ছেলের সাথে। ফাইনালি ছেলেটা সামান্তার ক্ষতি করেছে। ও জানে নিরার কিছু করতে পারবে না তাই সামান্তাকেই…. সামান্তা তো এতকিছু বোঝেনি, অভিনয় দেখে প্রেমে পড়ে গেছে। মেয়েটার সাথে এত বড় দূর্ঘটনা। একটা ভূলের জন্য জীবনটা শেষ হয়ে যায় আমাদের। মাথায় হাত দিয়ে রাস্তায় বসে পড়লো নিরা। স্বাক্ষর জানলে একটা খুনোখুনি হয়ে যাবে। আর কিছু ভাবতে পারছে নাও।