Abegi Valobashar Golpo

সে কি ফিরে আসবে? – Abegi Valobashar Golpo

প্রথম পর্ব: অবনীর সাথে আমার পরিচয় টা হয়েছিলো খুবই অন্যরকম ভাবে।
আমি রিক্সায় বসে বসে রিক্সাওয়ালার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। রিক্সাওয়ালা মামা একটা দোকানে গেছে কিছু কেনার জন্য। আমি রিক্সায় আশেপাশে তাকাচ্ছিলাম। এমন সময় কোথ থেকে একটা মেয়ে এসে বললো, এই রিক্সা, ধানমন্ডি যাবেন?
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে হা করে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটি আবারো বলল, যাবেন না? ভাড়া কত নিবেন?
আমার হাসি ও রাগ দুটাই একসাথে পেয়ে গেলো। বললাম, আমাকে দেখে আপনার রিক্সাওয়ালা মনে হয়?

  • না মনে হওয়ার কি আছে?
  • আমার মত একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে আপনার রিক্সাওয়ালা মনে হয়?
  • আজকালকার দিনে রিক্সাওয়ালারাও হ্যান্ডসাম হয়।তাছাড়া আপনার চেহারা এমন আহামরি কিছু নয় যে রিক্সাওয়ালা ভাবা যাবেনা।
    আমি এবার বেশ রেগে গেলাম।ভারি বজ্জাত মেয়ে তো! আমাকে রিক্সাওয়ালা বলা হচ্ছে? আবার মুখের উপর তর্ক ও করে? দেখাচ্ছি মজা।

বললাম, এখন যদি আমি আপনাকে দুই টাকা হাতে ধরিয়ে দেই আপনার কেমন লাগবে?

  • আজব তো। আমাকে আপনার ভিখিরি মনে হয়?
  • না মনে হওয়ার কিছু নেই। আজকালকার দিনে ভিখিরি রাও যথেষ্ট স্টাইলিশ। আর আপনার চেহারা এমন আহামরি কিছু নয় যে ভিখিরি ভাবা যাবেনা।
    কথাটা শুনে মেয়েটা খুবই রেগে গেলো। রাগে গজগজ করতে করতে গটগট করে হেটে চলে গেলো। আমার বেশ মজা লাগলো ব্যাপার টায়। বসে থেকে মেয়েটার চলে যাওয়া দেখলাম। হ্যা,সেই মেয়েটিই ছিলো অবনী!

এরপর আবারো দেখা হলো এরকম অদ্ভুত ভাবেই।
আমি পার্কের বেঞ্চিতে বসে বাদাম খাচ্ছিলাম। পাশেই ছোট্ট বাদাম ওয়ালা ছেলেটি বসে আমার সাথে গল্প করছিলো। একসময় বলল, ভাইয়া আপ্নে একটু দেইখেন তো আমি একটু আসতেছি।
বলেই হেটে কোথায় যেন গেলো। খুব সম্ভবত প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেছে। ছেলেটি আমার পরিচিত। ওর বাবা মা কেউই নেই বলে ওর জন্য খুবই মায়া হয়। একদিন ওকে কিছু বই কিনে দিয়েছি, আর স্কুলেও ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। বলে দিয়েছি যেন সপ্তাহে তিন দিন হলেও স্কুলে যায়। কিন্তু ও আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রায় প্রতিদিন ই স্কুলে যায়। আর বিকেলবেলা করে পার্কে বাদাম বিক্রি করে। তাই মাঝেমাঝে আমি ওকে কিছু করে টাকা দেই যাতে পড়াশোনা বা হাত খরচ চালিয়ে নিতে পারে।

তো আমি বাদাম গুলো পাহারা দিচ্ছি। এমন সময় একটা মেয়ে এসে বলল, ভাই দশ টাকার বাদাম দিন তো।
মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি সেদিনের মেয়েটি অর্থাৎ আজকের অবনী! মেয়েটা অনবরত মোবাইল টিপে যাচ্ছে। এতক্ষণে বুঝলাম আসল কাহিনী। সেদিনও ওকে দেখেছি এভাবে মোবাইল টিপতে টিপতে এসে রিক্সায় উঠতে যাচ্ছিলো। এটাই আসল সমস্যা। আজকালকার দিনের ছেলেমেয়েরা ভালো করে কারো দিকে তাকায় ও না। সারাক্ষণ মোবাইল এর দিকের চোখ আর মনোযোগ। এ কারণেই রিক্সাওয়ালা আর বাদাম ওয়ালার সাথে একটা চাকুরী জিবীর পার্থক্য ও বুঝেনা!

বললাম, আমাকে দেখে কোন এঙ্গেল থেকে আপনার বাদাম ওয়ালা মনে হলো?
মেয়েটা চোখ তুলে তাকালো।তারপর অবাক হয়ে বললো, আপনি!

  • হ্যা আমি। বাদাম ওয়ালা মনে হয়?
  • বাদাম নিয়ে বসে থাকলে কি বাদাম ওয়ালা না ভেবে নাপিত ভাববো?
  • সবসময় মোবাইল এর স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে তো ডোলান্ড ট্রাম্পকেও ডিপজল মনে হবে।
  • দেখুন,অযথা তর্ক করবেন না। মোবাইল আমার নিজের, আর চোখও আমার নিজের। কাজেই মোবাইল এর দিকে কতক্ষণ কিভাবে চেয়ে থাকবো সেটা একান্তই আমার ব্যাপার।
  • একদিন বুঝবেন ম্যাডাম। আর সেদিন মনে পড়বে এই গরীবের কথা। কথায় আছে,গরীবের কথা বাসি হলেও ফলে।
    মেয়েটা মুখটা বাঁকা করে হেটে হেটে চলে গেলো।
    এই ছিলো আমাদের দ্বিতীয় বার দেখা। এরপর অনেক দিন আর দেখা হয়নি। তাই তৃতীয় বার যেদিন দেখা হয়ে গেলো সেদিন আমি ওকে চিনতেই পারিনি। ভূলেই গিয়েছিলাম কবে ওর সাথে দেখা হয়েছিলো! এমনি তেই আমি একটু মনভোলা ছেলে।

আমি কফিশপে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম আর কফি খাচ্ছিলাম। হঠাৎ ও এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, থ্যাংকস।
আমি অনেক টা অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। মেয়েটাকে বেশ চেনা চেনা লাগে কিন্তু কোথায় দেখেছি সেটা ঠিক মনে পড়ছে না।
বললাম, কি জন্য থ্যাংকস?

  • সেদিন আপনি যে কথাটা বলেছিলেন তার জন্য।
  • কি বলেছিলাম?
  • মনে নেই আপনার? আমাকে চিনতে পারেন নি।
  • একচুয়েলি আমি আপনাকে ঠিক চিনতে পারছি না। কোথায় দেখেছিলাম বলুন তো?

আমার বন্ধুরা হা করে চেয়ে আছে মেয়েটার দিকে। এত সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে আমি এভাবে ভাব নিয়ে কথা বলছি সেটা ওরা ঠিক হজম করতে পারছে না।
মেয়েটি বলল, আরে আপনার মনে নেই? আপনার সাথে আমার ফার্স্ট দেখা হয়েছিলো রিক্সায়।

  • রিক্সায় মানে! আমি কোনো দিন ও কোনো মেয়ের সাথে রিক্সায় করে ঘুরিনি।
  • আরে বাবা আমি ঘুরার কথা বলিনি। আমি বলছি যে আমাদের ফার্স্ট মিট হয় রিক্সায়। আপনি রিক্সায় বসেছিলেন আর আমি আপনাকে রিক্সাওয়ালা ভেবেছিলাম।
  • ওহ হ্যা, এইবার মনে পড়েছে। এরপর একদিন বাদামওয়ালা ভেবেছিলেন তাইনা?

মেয়েটি লজ্জা পেয়ে হেসে বলল, হ্যা ঠিক তাই। সেদিন আপনি একটা কথা বলেছিলেন সেটা সত্যি সত্যি মিলে গেছে।

  • কি বলেছিলাম বলুন তো?
  • আপনার কি সত্যিই মনে নেই? নাকি ভান করছেন বলুন তো?
  • আসলে একটা জিনিস খুব দ্রুত ভুলে যাওয়ার অভ্যাস আমার আছে। তাই আর কি এমন হয়।
    মেয়েটি হেসে বলল, আচ্ছা আচ্ছা।
    আমার বন্ধু রিওন ওকে বলল, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন।

রিওন ওর চেয়ার ছেড়ে দিয়ে উঠে গিয়ে অন্য টেবিলের চেয়ার টেনে এনে বসলো। আর মেয়েটি রিওনের চেয়ারে বসতে বসতে বললো, আপনি সেদিন বলেছিলেন মোবাইল টেপার ব্যাপারে। আপনার কথায় খুব রেগে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার দুদিন পরেই আমি ফোন টিপতে টিপতে হাটতে গিয়ে একটা এক্সিডেন্ট করে ফেলি। হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকতে হয়েছিল ১৫ দিন। তারপর বাসায় ও ওরকম অনেক দিন বেডে শুয়ে ছিলাম। টানা দেড় মাস রেস্টে থাকতে হয়েছিলো। সেই সময় টাতে প্রত্যেক দিন আপনার কথা মনে পড়েছিলো।আপনি বলেছিলেন অলওয়েজ মোবাইল এর দিকে তাকিয়ে থাকলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও ডিপজল মনে হবে।

বাট আমি রেগে বলেছিলাম, আমার মোবাইল আমার চোখ। কতক্ষণ এর দিকে তাকিয়ে থাকবো সেটা আমার ব্যাপার। সত্যিই সেদিন আপনি ই ঠিক ছিলেন।আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছিলাম ঠিক অসুস্থ হয়ে বেডে থাকার সময়।
আমি অবাক হয়ে মেয়েটির কথা শুনছিলাম। ওর এমন কৃতজ্ঞতা দেখে বেশ ভালো লেগে গেলো ওকে।কত সুন্দর মেয়েটি! আমার বন্ধুরাও ওর কথা শুনছে অবাক হয়ে।
মেয়েটি বলল, আপনার কথাটা সবসময় ই মনে থাকবে। আসি..

আমি শুধু অবাক হয়ে মেয়েটিকে দেখলাম। ও তখন ই চলে গিয়েছিলো সেদিন। কিন্তু আমার মনে দিয়ে গিয়েছিলো একটা নতুন ঝড়ের আভাস। সেটা বুঝতে পেরেছিলাম রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়। সারারাত ঘুম হয়নি আর। বারবার মেয়েটির চেহারা আর হাসি চোখের সামনে ভাসছিলো। বুঝে গিয়েছিলাম মনের ঘন্টা বেজে গেছে। কিন্তু যার সম্পর্কে কিছুই জানিনা, তাকে কোথায় পাবো আমি? কোথায় গিয়ে খুঁজবো?

এই হচ্ছে আমার অবনী। এক্সিডেন্ট এর পর সেই ভাবওয়ালী আর অহংকারী মেয়েটা কত সুন্দর আর সরল হয়ে গিয়েছিলো। সেইসাথে আমাকে বাধ্য করেছিলো একবার গভীর ভাবে প্রেমে পড়তে।
পড়েও ছিলাম প্রেমে। সে অনেক কাহিনী। কত কষ্ট আর প্রচেষ্টার পর যে অবনীর সাথে আমার আবারো দেখা হলো সেটা ছিলো একটা অকল্পনীয় ব্যাপার!

ওকে অনেক খুঁজেছি আমি। সেই রাস্তায়, সেই পার্কে আর কফিশপেও। কিন্তু কোথাও পাইনি। ধানমন্ডি গিয়েও কত খুঁজেছি তবুও পাইনি। একটা সপ্তাহ শুধু খুজেই মরেছি। লাভ কিছুই হয়নি।
এক সপ্তাহ পরে হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। পরপর তিনবার যখন দেখা হয়েছিলো আবার হতেও পারে। কিংবা নাও হতে পারে। আমার ভাগ্যে থাকলে হবে। না থাকলে হবেনা। আশা ছেড়ে দিয়ে বসেছিলাম।
তারপর একদিন হঠাৎ…

২য় পর্ব

রাত্রিবেলা বাসায় ফিরছিলাম।
টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছিলো। আমি ছাতা মাথায় দিয়ে দ্রুত হেটে হেটে বাসায় ফিরছি। হঠাৎ রাস্তার পাশেই একটা বাসার সামনে একটি মেয়েকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখলাম।
কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে গেলাম সেখানেই। যদিও বৃষ্টির তোড় বেড়ে যাচ্ছিল, তবুও দূর থেকে ভেসে আসা আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম সেই মেয়েটি যাকে আমি এতদিন ধরে পাগলের মত খুঁজেছি অর্থাৎ অবনী!
আমি ছাতা মাথায় দিয়েই সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম স্ট্যাচুর মত। বেশ কিছুক্ষণ ওকে ভিজতে দেখলাম। ও নেচে নেচে গান গাইছিল, দুহাত দুদিকে মেলে আকাশের দিয়ে চেয়ে ছিল, তখন বৃষ্টির ফোটা টুপ করে ঝরে পড়ছিলো ওর বুকে,গালে,ঠোটে, গলায়… আহা! এত সুন্দর দৃশ্য বোধহয় কখনো দেখিনি আমি!

এই দৃশ্য দেখে আরো একবার ওর প্রেমে পড়লাম। হা করে চেয়ে রইলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর মেয়েটি আমার দিকে তাকালো। তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো আমার কাছে। একদম কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেলো।
আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম, আপনি এখানে!

  • সেই প্রশ্ন তো আমার ও। আপনি এখানে?
  • আমিতো রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আপনি এই রাত্রিবেলা রাস্তার পাশে বৃষ্টিতে ভিজছেন কেন?
  • বারে! রাস্তার পাশের বাড়িটা আমার হলে আমিতো তার সামনে ভিজতেই পারি। পারিনা?
    আমি রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম।
    বললাম, এটা আপনার বাড়ি?
  • জি,আমার বাড়ি।
  • সত্যি আপনার বাড়ি?
  • আপনাকে মিথ্যে কেন বলবো বলুন তো? এটা সত্যিই আমার বাড়ি। আমি এখানেই থাকি।
    আমি বেশ অবাক হয়ে গিয়েছি। এই মেয়েটাকে কত শত জায়গায় খুঁজেছি অথচ আমার বাসার একটা বাড়ি পরেই কিনা তার বাড়ি! আমি জানতাম ই না। পাশাপাশি, কত কাছাকাছি থেকেও জানিনা এখানেই সে থাকে! আর আমি কিনা খুঁজে এসেছি সেই ধানমন্ডি থেকে!
    মেয়েটি বলল, কি ভাবছেন?
  • আপনি এ বাসায় কতদিন থেকে আছেন?
  • এইতো তিন মাস হলো উঠেছি। কেন?
  • ওহ, সে কারণেই বোধহয় দেখিনি। আমিতো পাশের একটা বাড়ি পরেই থাকি।
  • সত্যি!
    অবনী আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। ওর আনন্দের কারণ বুঝতে পারলাম না।তবে কি সেও আমাকে একইভাবে খুঁজেছে? হয়ত বা। এটা হওয়াটাও খুব অস্বাভাবিক নয়। আমিও ওকে সেই এক সপ্তাহ পাগলের মত খুঁজেও কোথাও পাইনি, আর শেষে কিনা পেলাম নিজের ই বাসার কাছে!

আমি আর কি বলবো বুঝতে পারলাম না। হা করে চেয়ে রইলাম অনেক্ষণ। কি জিজ্ঞেস করা উচিৎ বা কিভাবে কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। অবনী ই আগে জিজ্ঞেস করলো, ওই ত্রয়ী কুঞ্জ নামের বাসাটা আপনাদের?

  • হ্যা,ওটাই আমাদের।
  • নিজেদের বাসা? নাকি ভাড়া থাকেন?
  • আমাদের নিজের ই।
  • ত্রয়ী কার নাম?

আমি একটু হেসে বললাম, আমার একমাত্র বোন,ত্রয়ী। বাবা আর আমার চোখের মণি। তাই ওর নামেই বাসার নাম দিয়ে দিয়েছি।
মেয়েটি একটু হাসলো। তারপর বলল,আচ্ছা তবে যাই। আবার দেখা হবে, একই এলাকায় থাকি যখন।
এরপর আর কিইবা বলার থাকে।আমিও কিছুই বলতে পারলাম না। চুপচাপ চলে আসলাম। কিছুদুর এগিয়ে এসে আবারো পিছনে ফিরে গিয়ে ওর বাসার সামনে দাঁড়ালাম। অবনী এখনো বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বললো, আপনি যান নি? আবার ফিরে এলেন যে?
আমি আমতা আমতা করে বললাম, একটা কথা বলতে ভুলে গেছি।

  • কি কথা বলুন?
  • আসলে, আপনি তো অনেক সময় ধরে ভিজলেন। যদি জ্বর এসে যায়? ভালোভাবে মাথাটা মুছে নিবেন।
    মেয়েটি লাজুক ভঙ্গীতে হাসলো। তারপর হেসে বললো, আচ্ছা।
    আমি আবারো কিছু না বলে এগিয়ে আসতে লাগলাম। ও পিছন দিক থেকে ডাক দিলো। আমি পিছন ফিরে বললাম, বলুন।
  • আপনার নামটা যেন কি?
  • স্নিগ্ধ। আর আপনার?
  • অবনী।
    এরপর আর কথা হলোনা। শুধু চোখে চোখে তাকানো আর অনুভব করা হলো। সেইসাথে লাজুক ভঙ্গীতে হাসা। অবনী বাসার ভিতরে চলে গেলো আর আমি বারবার ওর বাসার দিকে তাকাতে তাকাতে বাসায় ফিরে আসলাম।

এই ছিলো, অবনীর সাথে আমার পরিচয়ের গল্প।
বাসায় আসার পর থেকেই শুয়ে শুয়ে ছটফট করছি। এমনি তেই গত এক সপ্তাহ ওকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়েছি। আজ বৃষ্টিতে স্নান করতে দেখে আরো বেশি করে প্রেমে পড়ে গেলাম। এখন কিভাবে ওকে বলবো সেটাই ভেবে পাচ্ছিনা।এই যন্ত্রণা নিয়ে তো থাকাও যাবেনা।
বাইরে খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। আমার মনেও ঝড় বয়ে চলেছে। কিছুতেই ওকে মুহুর্তের জন্যও ভুলে থাকতে পারছিনা। সেদিন কফিশপে এসে থ্যাংকস না বললেই তো হতো। ওটা বলেই প্রেমে পড়িয়ে দিয়ে গেলো। পাগলী মেয়েটা!

সারারাত ছটফট করেই কাটালাম। সকাল হতেই উঠে বেড়িয়ে আসলাম বাইরে। ওর বাসার সামনে এসে উঁকিঝুঁকি মারতে লাগলাম। গত রাতের ব্যাপার টা মনে পড়ছে। কি যে মিষ্টি লাগছিলো ওকে! কিন্তু ওকে পাবো কোথায় এখন? কোনটা ওর ঘর আর কোনটা ওর ঘরের জানালা তাও তো জানিনা।
এমন সময় অবনীও বেড়িয়ে এসে আমাকে দেখে হাসলো। কিন্তু আমি হাসতে পারলাম না। আমার মোটেও হাসি আসছে না। সারারাত ঘুমাতে দেয়নি মেয়েটা। কি যে অস্থিরতায় ছিলাম! এখন ওকে ভালবাসি বলা উচিৎ। আমি সারারাত ছটফট করেছি ওর জন্য। তাই আর এক মুহুর্তও দেড়ি না করেই গিয়ে ওকে সোজা বলে দিয়েছি, আই লাভ ইউ।

অবনী অনেক্ষণ কথা বলতে পারল না। দেখলাম ওর চোখ ছলছল করছে। আমি ওর চোখের দিকে তাকাতেই এক ছুটে বাসার ভিতরে চলে গেলো। আমি চেয়ে রইলাম ওর বাসার দিকে।বাড়ির সব জানালায় ওর মুখটা খুঁজতে লাগলাম।
অবনীকে দেখা যাচ্ছেনা কোথাও। কেন যে ওভাবে চলে গেলো মেয়েটা। এখন তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কিন্তু ওকে ভালবাসার কথাটা জানাতে পেরেছি এটাই অনেক। ওর উত্তর টাও আস্তে আস্তে জানা যাবে।
আমি জানি অবনী কোথাও থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখছে।কিন্তু ওকে কোথাও দেখতে পেলাম না। অনেক্ষণ পর রোদ উঠে গেলে বাসায় ফিরে এলাম।

নাস্তা করে আবারো গেলাম ওর বাসার সামনে। অফিসে যাবো এখন। সারাদিন হয়ত আর দেখা হবেনা। তবুও তীর্থের কাকের মত অধীর আগ্রহে চেয়ে রইলাম ওর বাসার দিকে। লোকজন দেখলে খারাপ ভাব্বে তাই বেশিক্ষণ দাঁড়ানো ও গেলো না। হতাশ হয়ে অফিসে চলে গেলাম।

অফিসে পুরোটা সময় ছটফট করে কাটালাম। ওই মেয়েটাকে মনের কথা জানিয়েও কিছুই হলোনা।কিভাবে যে আবারো দেখা হবে তাও বুঝতে পারছিনা।
বাসায় ফেরার সময় ওর গেটের সামনে মিনিট পাঁচেকের জন্য দাঁড়ালাম। একটু কাছেই একটা ছোট্ট চায়ের দোকান ছিলো। সেখানে বেঞ্চিতে বসে চা খেলাম পরপর তিন কাপ।
এমন সময় একটা ছোট্ট ছেলে এসে একটা চিরকু ধরিয়ে দিলো হাতে। ওতে লেখা, “কাল ভোরে বাসার সামনে আসবেন”
চিরকুট টা দেখে একবার তাকালাম ওর বাসার দিকে। একটা জানালায় উকি দিলো অবনী। দেখেই অনেক প্রশান্তি লাগলো!
খুশিমনে বাড়ি ফিরে এলাম।

বারবার চিরকুট টা দেখতে লাগলাম।
বেশ গোছালো হাতের লেখা। সুন্দর আর স্পষ্ট! কাগজ টা নাকের কাছে নিয়ে তার ঘ্রাণ শুকলাম অনেক্ষণ! এটা আমার অবনীর হাতের লেখা! কি যে আনন্দ হচ্ছে তা বলার মত নয়।কিন্তু অবনীর চোখে পানি এসে গেছিলো কেন? ঠিক কি কারণে ও কেঁদেছিল? সেটা বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে।

ফেসবুকে ঢুকে অনেক ঘুরাঘুরি করলাম। বাংলা ইংলিশ উভয় নাম দিয়েই সার্চ দিয়েও অবনীর ছবি দেয়া আইডি খুঁজে পেলাম না। বেশ অস্থির ফিল করছি। রাতটা যে কিভাবে কাটবে বুঝতে পারছি না।
থাকতে না পেরে উঠেই পড়লাম বিছানা ছেড়ে। একবার ওর বাসার দিকে যাবো। একটা বার যদি ওকে দেখতে পাই এক পলকের জন্য,তাতেও শান্তিতে অন্তত রাতটা ঘুমাতে পারবো।

ওর বাসার সামনে এসে কিছুক্ষণ দাড়ানোর পরই জানালায় অবনীর মুখ দেখা গেলো। এক পলক দেখেই শান্তি লাগলো ভিতরে। আর দেখা যাচ্ছেনা, জানালা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু অবাক হয়ে খেয়াল করলাম গেট খুলে বেড়িয়ে এসেছে অবনী!

পর্ব ৩

অবনী বেড়িয়ে এসে ইশারায় আমাকে ডাকলো। আমি একটু এগিয়ে গেলাম ওর কাছে।
ও আমাকে গেটের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে গেট লাগিয়ে দিলো।
আমি অবাক হয়ে বললাম, দরজা আটকালেন যে?

  • রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলবেন নাকি?
  • তাও ঠিক।
  • এবার বলুন তো এত রাতে আমার বাসার সামনে কি করছেন?
  • বুঝতেই তো পারছেন কি করছি।
  • কিছুই তো করছেন না, শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছেন আমাদের বাসার দিকে।
  • সেটাই করছি। এক পলক দেখার জন্য।
  • কাকে?
  • কাকে মনে হচ্ছে? আপনার বাবাকে দেখতে এসেছি।
    অবনী মুখ টিপে হেসে বলল, আমার বাবাকে দেখেছেন? খুব রাগী কিন্তু।
  • তাই নাকি! আমার তো সেটা মনে হচ্ছে না। রাগী বাবার মেয়ে এত রাতে একটা ছেলের সাথে বাসার সামনে কথা বলছে। বাবা দেখে ফেললে তো মেয়েটার ই সমস্যা হবে।
  • উহু, বাবা বাসায় নেই। একটা জরুরি কাজে চিটাগাং গেছে।
  • ওহ আচ্ছা, তাইতো বলি মেয়ের এত সাহস হলো কি করে?

অবনী আবারো হাসলো। তারপর বলল, আসলে দুদিন ধরে বাসায় আমি একাই আছি। ভাইয়া ভাবিও আছে কিন্তু ওদের কি আমার দিকে খেয়াল রাখার সময় আছে? ওরা তো নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত।
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, আচ্ছা বেশ। এবার আমার উত্তর টা দিন তো।
অবনী লজ্জা পেয়ে বলল, কিসের উত্তর?

  • আকাশ থেকে পড়লেন মনে হচ্ছে? আমার উত্তর চাই, বলে দিন চলে যাচ্ছি।
    অবনী লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না বেচারা কি চাচ্ছে। তবুও বললাম, বলুন বলুন। বললেই চলে যাই।
  • যদি না বলি?
  • সারারাত দারিয়ে থাকব এখানে ব্যস।
    অবনী হেসে বলল, কাল উত্তর দিবো। এখন যান।
  • জান বললেন?
  • উহহু না, জান বলে ডাকিনি, যেতে বলেছি।
  • আচ্ছা চলে যাচ্ছি,কাল কখন দেখা হবে?
  • জানিনা।
    কথাটা বলেই অবনী এসে গেট খুলে দিয়ে বলল,চলে যান তো এখন।
  • আচ্ছা বাবা যাচ্ছি। সকালে আসবো, সাড়ে ছয়টায়।
    অবনী আর কিছুই বলল না। আমি বের হয়ে বাসার দিকে হাটতে আরম্ভ করলাম। এখন মনটা বেশ ভালো লাগছে। ওর মাঝে কি যে আছে আমার জানা নাই। তবে আমার সব সুখ বোধহয় ওই হাসিমুখেই নিহিত।

রাতটা অনেক ভালো ঘুম হলো।
সকালে উঠেই ফ্রেশ হয়ে হাটতে হাটতে ওর বাসার সামনে আসলাম। কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করার পর অবনী বেড়িয়ে এলো। এরপর দুজনেই একসাথে হাটতে লাগলাম।
কাছেই একটা পার্ক আছে। লোকজন ব্যায়াম করছে,হাটাহাটি করছে। সকালবেলার এই সতেজ পরিবেশে আমরাও হাটাহাটি করছি। যদিও আমার মনোযোগ পুরোটাই অবনীর দিকে।
অবনী বলল, আচ্ছা আপনি কবে থেকে আমার প্রেমে পড়েছেন বলুন তো?

  • সেদিন রেস্টুরেন্ট এ দেখার পর। জানেন এরপর আপনাকে কত খুঁজেছি?
  • সত্যি!
  • হ্যা, সেই কফিশপে, সেই রাস্তায়, পার্কে, ধানমন্ডিতে। কোথায় খুঁজি নি তাই বলুন। অথচ শেষে এসে পেলাম কিনা আমার ই বাড়ির উঠোনে।
    অবনী হেসে উঠলো। আমি একবার ওর হাসির দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, এবার উত্তর টা দিয়ে দিন মহারাণী।
    অবনী বলল, এত সহজেই?
  • তাহলে?
  • যে প্রেম গুলা খুব তাড়াতাড়ি হয়,সেটা তাড়াতাড়ি ই ভাঙে।
  • তাহলে? কতদিন সময় লাগবে প্রেম হতে?
  • অন্তত দুই তিন বছর।
  • কিহ!
  • হা হা, মজা করলাম। এতদিন লাগবে না। তবে আপনাকে কিছু স্টেপ পার হতে হবে।
  • মানে! কিসের স্টেপ?

অবনী একটু ভেবে বলল, প্রেম করে দুদিন পর ছেড়ে যাবেন কিনা সেটা কিভাবে বুঝবো? যদি বিয়ে না করেন? আমাকে আগলে রাখতে পারবেন কিনা এসব তো যাচাই করতে হবে।
আমি অবাক হয়ে বললাম, এসব কিভাবে যাচাই করবেন শুনি?

  • সেটাই তো পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় পাশ করে গেলেই আমি আপনার।
  • সত্যি তো?
  • একদম সত্যি। এবার বলুন কি করবেন?

আমি নির্দ্বিধায় বললাম, ওকে। বলুন আপনার কি কি শর্ত আছে?
অবনী একটু চুপ থেকে বলল, নাম্বার টা নিয়ে যান। ফোনে কথা হবে।আগে ফোনে কথা বলার স্টেপ টা পার করি।
আমি হা করে চেয়ে রইলাম ওর দিকে। আগে ফোনে কথা বলার স্টেপ পার করবে, তারপর আবার কি করতে হবে? এ কেমন মেয়েরে বাবাহ!
অবনী বলল, আমরা আজ থেকে ঠিক ঠিক এক সপ্তাহ ফোনে কথা বলবো। বুঝেছেন?

  • মানে! এক সপ্তাহ পর আর বলবেন না?
  • আহা! আগে পুরোটা শুনুন।
  • আচ্ছা বলুন।
    অবনী বলল, আই এক সপ্তাহ আমি যখন আপনাকে ডাকবো তখনই আমার কাছে ছুটে চলে আসতে হবে। ফোনে কথা হবে,একে অপরকে চিনবো জানবো, কাছাকাছি থাকবো। রোজ দেখাও হবে আর মাঝেমাঝে কফি খেতেও যাবো। তবে শুধুমাত্র এই একটা সপ্তাহ।
  • তারপর?
  • এই মাসে বাকি আর আট দিন। সাত দিন কথা হবে,একদিন বোনাস কথা হবে। এরপর টানা এক মাস আমাদের কোনো যোগাযোগ থাকবে না।
    আমি আঁৎকে উঠে বললাম, মানে!

অবনী বলল,মানেটা খুব সহজ। এক মাস আমাদের কোনোরকম যোগাযোগ থাকবে না। এই এক মাসে আপনি যদি আমাকে সত্যিকার ভাবে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা আরো বাড়বে। আর যদি আপনার ভালোবাসা মিথ্যা হয়ে থাকে,এই এক মাসে আপনি আমায় ভুলে যাবেন, মায়া কমে যাবে। আপনার যদি মনে হয় ভালবাসা বেড়েছে,তাহলে আপনি এক মাস পরে ঠিক পরের মাসের ১ তারিখে আমি যেখানে থাকতে বলবো, সেখানে থাকবেন। আর যদি আপনার মনেহয় ভালোবাসা কমেছে, একসাথে থাকা সম্ভব না। তাহলে আপনার আসার দরকার নেই।
আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম ওর দিকে। এত কঠিন পরীক্ষা। এমনি তেই এই এক সপ্তাহ ঘুমাতে পারিনি আমি। এরপর এক সপ্তাহ ফোনে কথা হলে তো আরো থাকতে পারবো না। তারপর এক মাস কথা না বলে কিভাবে থাকবো? এ তো অসম্ভব।

অবনী বলল,অসম্ভব হলে এখনি বাদ দিন। আমাকে ভূলে যান।

  • না, পারবো না আমি।
  • শুনুন,এক মাসে আপনার ভালোবাসা উধাও হয়ে যাবে। কারণ ছেলেরা অত ওয়েট করতে পারেনা। আর যদি ভালোবাসা বাড়ে, তবে বুঝবেন আপনি আমাকে সত্যিই ভালবাসেন। আর সেদিন থেকে আমাদের ভালোবাসা বা প্রেমের সম্পর্ক শুরু হবে।

অবনীর কথায় যুক্তি আছে। মানতেই হলো। আর ওকে পাওয়ার জন্য একটা মাস অপেক্ষা করতেই পারবো আমি।যত কষ্টই হোক,অপেক্ষা করবো।
অবনীকে বললাম, ঠিক আছে। আমি রাজী এই শর্ত মানতে।

  • ওকে, খুশি হলাম শুনে। আমি যার সাথে সারাজীবন কাটাবো সে কেমন কন্ট্রোল করতে পারে নিজেকে, দেখতে হবেনা? যাকে তাকে তো আর জীবন সাথী বানানো যায়না। আপনার প্রেম কতটা খাটি তাই দেখি।
  • ওকে, আমি রাজী।
  • তাহলে ফোন নাম্বার টা দিয়ে যান।
  • 0178…

এরপর বাসায় চলে আসলাম। আমি বারবার হা করে দেখছিলাম ওকে। এই মেয়েটা এত কঠিন! সত্যিই খুব কঠিন। দয়ামায়া অনেক কম ওর মাঝে। এটাই ভালো, বেশি ইমোশনাল হয়ে পড়াটা কাজের কথা নয়।
এখন থেকেই নিজেকে শক্ত করে নিতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে মনটাকে শান্ত করার চেষ্টা করছি।এমন সময় ফোন বেজে উঠলো।

পর্ব ৪

ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল।
রিসিভ করতেই একটা মিষ্টি কণ্ঠ ভেসে আসলো, খেয়েছেন?

  • হ্যা খেয়েছি। তুমি?
  • আমিও.. কি করছেন?
  • আপনার কথাই ভাবছিলাম।
  • কি ভাবছিলেন?
  • আপনি একসময় খুব বদরাগী আর খিটখিটে স্বভাবের ছিলেন।

অবনী লজ্জা পেয়ে বলল, সত্যিই তাই। আজকের আমি’র পিছনে কিন্তু আপনার ই অবদান সবচেয়ে বেশি।

  • তাই নাকি!
  • হুম। আচ্ছা ফোন রাখি। কথা বলবো না আপনার সাথে।
  • সেকি! কেন বলবেন না? আমি আবার কি করলাম বাবা?
    অবনী একটু অভিমানী গলায় বলল, আমি বুঝি আপনার খালাম্মা লাগি?
  • মানে!
  • আমাকে এত আপনি আপনি করছেন কেন? তুমি বলা যায়না?
  • ওরে বাবাহ! তাই জন্য একেবারে খালাম্মা? আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে ঠিকাছে। যান এখন থেকে তুমি বলবো।
  • বাব্বাহ! জান বলে দিলেন?

আমি শব্দ করে হেসে উঠলাম। অবনী বলল,আপনার হাসির শব্দটা খুবই সুন্দর।

  • ছেলেদের হাসির শব্দও সুন্দর হয় নাকি?
  • হয়না আবার? সুন্দর বুঝি শুধুই মেয়েদের জন্য? ছেলেরাও সুন্দর হয়। আর মেয়েরা হয় তো সুন্দরী।
  • হা হা, বেশ মজা করে কথা বলতে পারো তুমি।

অবনী মুখটা কেমন শব্দ করে বলল, আপনি ও পারেন।

  • আমি কি তোমার চাচা লাগি?
  • ছিঃ এসব কি বলছেন?
  • একটু আগে তুমিই বলেছিলে এভাবে? বুঝলে তো কেমন লাগে? খারাপ লাগে শুনতে বুঝলা?
    অবনী লজ্জা পেয়ে বলল, আচ্ছা বাবা ঠিকাছে।
  • আবার বাবা বলাও হচ্ছে?
    অবনী হেসে ফেললো। আমার ও হাসি পেয়ে গেলো ওর কথা শুনে। মেয়েটাও খুব মিষ্টি করে হাসে! শুধু ওর হাসির শব্দই শুনতে ইচ্ছে করে! ইচ্ছে করে শুনি আর শুনি,আর মুগ্ধ হয়ে ওকে ভালবাসি!

আরো কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলার পর ফোন রেখে দিলাম। অবনী ভার্সিটিতে যাবে আর আমিও অফিসে যাবো। যাওয়ার পথে একসাথে কিছুদূর যাওয়া যাবে।
গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে রেডি হচ্ছিলাম। মা এসে বলল, কি রে বাবা।এত ফুর্তি কিসের?

  • কিছুনা মা, এমনি ই।
  • মেয়েটা কে রে?
  • কোন মেয়েটা?
  • যার প্রেমে পড়েছিস। এতক্ষণ বেশ লাজুক লাজুক কথা বলছিলি। আবার গুনগুন করে গানও গাইছিস!
    আমি লজ্জা পেয়ে এগিয়ে এসে আম্মুকে জরিয়ে ধরে বললাম, আম্মু তুমিও না। আমার কথা লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছিলে তাইনা?
  • নারে বাবা শুনিনি। মনে হচ্ছিলো তুই কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছিস। মেয়ের সাথে কথা বললেই গলার স্বর চেঞ্জ হয়ে যায়।
  • কই, আমার তো হয়না।
  • সবার বেলায় হবেনা, শুধু স্পেশাল একজনের বেলায় হবে। সেজন্যই তো বললাম মেয়েটা কে?
    আমি হেসে বললাম , ওর নাম অবনী গো।
  • তাই! বাসা কোথায় ওর?
  • আমাদের বাসার একটা বাড়ি পরেই। রিয়াদের বাসার সাথেই যে বাড়িটা।
  • ওহ আচ্ছা, ভাড়া থাকে তাইনা?
  • হুম আম্মু।
  • মেয়েটা দেখতে কেমন?
  • তোমার মত গো, ঠিক তোমার মত।
  • হুম,একদিন নিয়ে আয় বাসায়।
  • আম্মু,এখনো প্রেম হয়নি। মাত্র তো প্রপোজ করলাম।চেষ্টায় লেগে আছি গো।
  • হয়ে যাবে টেনশন নিস না।আমার রাজপুত্রের মত ছেলেকে কেউ অপছন্দ করবে না।
    আমি আম্মুকে জরিয়ে ধরলাম শক্ত করে। আম্মু আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, যা বাবা অফিসে যা। সাবধানে যাবি।
  • আচ্ছা মা। তুমি নিজের দিকে খেয়াল রেখো।
    এরপর আম্মু দাড়িয়েই রইলো আমার ঘরে। আমি হাসিমুখে বেড়িয়ে আসলাম। মনটা অনেক খুশি খুশি লাগছে। অবনীকে পাওয়ার জন্য যেকোনো কঠিন যুদ্ধ করতেও আমি রাজী আছি।সেভাবেই প্রস্তুত করছি নিজেকে।

বাসার বাইরে বেড়িয়ে আসতেই দেখি অবনী একটা রিক্সায় করে এদিকে আসছে। আমাকে দেখে রিক্সা দাড় করিয়ে রিক্সায় তুলে নিলো।আমি উঠে ওর পাশে বসতে বসতে বললাম – এটা আমাদের প্রথম রিক্সা ভ্রমণ!

  • হ্যা, এরপর আর দুইবার রিক্সা ভ্রমণ হবে।
  • মানে! তারপর আর হবেনা?
  • কাল আর পরশু দিন হবে। এরপর আব্বু চলে আসবে,তখন আর বাসার সামনে রিক্সায় উঠতে পারবো না। তাছাড়া শর্ত ভূলে গেলে কিন্তু চলবে না।
  • ওকে ম্যাম। আমি সব কঠিন শর্তও মানতে প্রস্তত।
  • দেখা যাবে।আর যদি একমাস পরে আমাকে ভূলে যান তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।
  • যার জন্য করি চুরি..
  • থাক আর বলতে হবেনা। দেখা যাবে কত বাহাদুরি। শুদু নামের ভালোবাসা নাকি কামের ভালোবাসা বুঝা যাবে।
  • কামের ও ভালোবাসা। কাম ছাড়া প্রেম হয় নাকি?
    অবনী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো একেবারে। মুখটা নিচু করে বলল, পাজি একটা।
  • হুম, এখন তো আমাকে তুমি করে বলতে পারো। নাকি তাও বলা যায়না হুম?
  • যায়, আগে একটা আইসক্রিম খাওয়াতে হবে।
  • সে তো অবশ্যই খাওয়াবো ম্যাম।অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে। ফিরে এসে খাওয়াই?
  • অফিস শেষ কখন?
  • সন্ধ্যায়। আমি সন্ধ্যায় নিয়ে আসি আইসক্রিম?
  • না, রাতে আসবেন।
    আমি মুখ টিপে হেসে দুষ্টমি করে বললাম, রাতে আসবো? শিওর?
  • যাও তো দুষ্টুটা।
  • রিক্সা থেকে লাফ দিয়ে মরে যাই?
  • রিক্সা থেকে লাফ দিলে কেউ মরেনা।

আমি লাফানোর চেষ্টা করতেই অবনী হাত টেনে ধরে বলল, এত পাজি কেন আপনি? চুপচাপ বসে থাকুন তো। খুব দুষ্টু একটা ছেলে।

  • আমাদের দুষ্টু দুষ্টু বাচ্চাও হবে কিন্তু।
  • আবারো? যাও তো পাজিটা তুমি নেমে যাও।
    আমি হাসলাম শব্দ করে। রিক্সাওয়ালা মামাও দেখি মুখ টিপে হাসছে। বললাম, মামা দাঁড়ান এখানে।

অবনীর মুখটা শুকিয়ে গেলো। ও বলল, রাগ করে সত্যিই নেমে যাচ্ছেন?

  • আরে নাহ। এখানেই আমার অফিস।
  • আচ্ছা, সাবধানে থাকবেন কেমন?
  • তুমিও, টেক কেয়ার।
    অবনী রিক্সায় করেই চলে গেলো আমার মনে নতুন প্রেমের জোয়ার বইতে আরম্ভ করেছে। কি যে ভালো লাগা আর সুখ সুখ অনুভূতি! পাশে বসে টুকটাক খুনসুটি, অভিমান, হাসাহাসি আর ভালবাসা বাসি। আজীবনের জন্য আমার হয়ে যাওনা অবনী! বুকে আগলে রাখবো তোমায়।

অফিস শেষ করে বেড়িয়ে পড়লাম। দিনের বেলা অবনীর সাথে দুইবার কথা হয়ে ফোনে। আমি স্বভাবতই একটু দুষ্টুমি করে ফেলি। অবনী ক্ষেপে যায় প্রচুর। আর ওকে ক্ষেপাতেও বেশ লাগে আমার!
বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দিলাম একটা। ঘুম ভেঙে গেলো ফোনের রিংটোনের শব্দে।
ঘুমের মধ্যেই রিসিভ করে বললাম, হ্যালো..

  • কি ব্যাপার মিস্টার স্নিগ্ধ?
  • উম, ঘুমাচ্ছি। গুড মর্নিং।
  • এখন মর্নিং আপনার কাছে?
  • তাহলে? কয়টা বাজে?
  • সারে নয়টা।

আমি চমকে উঠে বললাম, সারে নয়টা! সর্বনাশ! আমার অফিস?
অবনী হাসতে হাসতে বলল, আরে বাবা এখন রাত সাড়ে নয়টা।
আমার ও হাসি পেলো। আমি তো সন্ধ্যাতেই অফিস থেকে এসে নাস্তা করে ঘুমিয়েছি। অথচ ভেবেছি এখন সকাল!
বললাম, কি করছো?

  • জানো স্নিগ্ধ, তোমার ঘুম জড়ানো ভয়েস টা খুব মিষ্টি লাগছে শুনতে।
  • তাই নাকি?
  • হ্যা, খুব ভালো লাগছে আমার।
  • তাহলে এখন থেকে রোজ অফিস থেকে বাসায় এসেই ঘুমাবো আর তুমি রাতে ফোন দিয়ে জাগিয়ে দিয়ে আমার ঘুম জড়ানো ভয়েস টা শুনবা।কেমন?
  • আচ্ছা ঠিকাছে। এখন উঠুন তো। রাতের খাবার খেয়ে নিন।তারপর..
  • তারপর কি?
  • তারপর আমার আইসক্রিম নিয়ে আমাদের বাসার সামনে চলে আসুন। তাড়াতাড়ি,
    আমি খুশিতে গদগদ হয়ে গেলাম।এখন আবারো অবনীর সাথে দেখা হবে! উফফ ভাবতেই পাচ্ছিনা!

পর্ব ৫

আমি আইসক্রিম কিনে নিয়ে অবনীর বাসার সামনে চলে আসলাম।
অবনী ফোন দিয়ে বলল, গেট খোলাই আছে ভিতরে এসে নীচতলার বারান্দার এক কোনায় চলে যান। আমি আসছি।
আমি তাই করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবনী চলে আসলো। ওকে দেখে মিষ্টি হেসে বললাম, কেমন আছো?

  • মনে হচ্ছে প্রথম দেখলা আমায়?
  • না মানে এখন কেমন আছো জিজ্ঞেস করছি আর কি।
  • বেশ ভালো আছি। কই আমার আইসক্রিম দিন দেখি।
    আমি আইসক্রিম এগিয়ে দিলাম। অবনী আইসক্রিম নিয়েই খেতে আরম্ভ করে দিলো। কিছুদূর খাওয়ার পর আমাকে বলল, খাবেন?
  • নাহ। খাবো না। তুমিই খাও।
  • বেশ মজা খেতে।একবার খেয়ে দেখুন।
  • না, তুমিই খাও।
  • ওকে, খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়াবো না।
    অবনী একাই আইসক্রিম খেয়ে যাচ্ছে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখছি। বেশ সুন্দর করে আইসক্রিম খায় মেয়েটা। খাওয়া শেষ করে বলল, থ্যাঙ্ক য়ু।
  • আমাকে থ্যাংকস বলার দরকার নেই।
  • কেন?
  • আপনজনদের কখনো থ্যাংকস বলতে হয়না।
  • আচ্ছা। বললাম না তাহলে। ফিরিয়ে দিন আমার থ্যাংকস।

আমি হাসলাম।অবনী একটু এগিয়ে এসে বলল, দেখি তোমার চোখ গুলো কেমন? একটু কাছ থেকে দেখি।
আমি তাকালাম। ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,ভালো আছে। চলবে..

  • হা হা হা, চলবে?
  • খুব চলবে। তোমার চোখ দেখে আমার কি মনেহয় জানো?
  • কি?
  • এই চোখে সমুদ্র আছে।
  • হা হা হা। তাই নাকি?
  • হ্যা। হারিয়ে যেতে, তলিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
  • তাহলে হারাও না।
  • হারাতে হলে আরো কাছে আসতে হবে যে।

আমার শরীর শিউরে উঠলো। বললাম, আসো কাছে। আরো অনেক কাছে।
অবনী লজ্জা পেয়ে একটু পিছিয়ে গিয়ে বলল,এত তাড়াতাড়ি অত কাছে চলে যাবো? ভূল হয়ে যাবেনা?

  • না যাবেনা। দুজন দুজনের হয়েই গেছি সেই তিন মাস আগে। অযথা নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখে কি লাভ?

অবনী একটু এগিয়ে এসে আমার পায়ের উপর পা তুলে দাঁড়াল। তারপর দুহাত তুলে দিলো আমার গলার পিছনে।আমি অবাক হয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। অবনী আস্তে আস্তে আমার মুখের কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো। আমার বুকের ভিতর ধুকপুকুনি বাড়ছে।আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছি,তলিয়ে যাচ্ছি আস্তে আস্তে। অবনীর মুখটা আমার মুখের একদম কাছে। আমি আর স্থির থাকতে পারছিনা। পুরো শরীর কাঁপছে আমার। ঠোট কাঁপছে, বুক দুরুদুরু কাঁপছে। অবনী আরো এগিয়ে এসে একদম কাছে চলে এলো। একটু হলেই আমি ওর ঠোট ছুতে পারবো। এমন সময় অবনী আমাকে ছেড়ে একটা দৌড় দিলো।
আমি লজ্জা পেয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর চলে যাওয়ার দিকে।

অবনী রুমে গিয়েই আমাকে ফোন দিয়ে বলল,বাসায় চলে যাও।

  • অবনী! আমার হাত পা কাঁপছে। এত কাছে এসেও ধরা দিলেনা কেন?
  • আমার ভয় ভয় করছে। খুব লজ্জা করছে।
    বলেই ফোন কেটে দিলো। আমিও ফোন রেখে দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।

সারারাত ভাল ঘুম হলো আমার। সকাল বেলা ঘুম ভাঙল অবনীর ফোন পেয়ে।
ও বলল,তোমার ঘুম জড়ানো কন্ঠটা খুব মিষ্টি।

  • উম,
  • ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি।
  • খাও না। বাধা দিয়েছে কে?
  • উহু, সময় আসেনি এখনো।
  • উম তাহলে শুনেই যাও।
  • শুনছি তো। তুমি ওঠো ঘুম থেকে, ফ্রেশ হও।
  • কয়টা বাজে?
  • অনেক বেলা হয়েছে। অফিসে বের হয়ে ফোন দিও।আমিও রেডি হয়ে নিচ্ছি।
  • ওকে।
    এরপর রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম অফিসের জন্য। অবনীর বাসার সামনে এসে ওকে রিক্সায় তুলে নিলাম।অবনী রিক্সায় উঠে বলল, সেকি! তুমি এইটা কি কালার শার্ট পড়েছ?
  • কেন?
  • একদম ই মানায় নি।নেক্সট টাইম থেকে এইটা পড়বা না।
  • ওকে, শার্ট কিনে দিও দুইটা।
  • ভালো কথা বলেছো। আজ সন্ধ্যায় অফিস শেষে আমাকে ফোন দিও। আমিও বের হব, তোমাকে নিয়ে শপিং এ যাবো।
  • আরে আমি ফাজলামি করে বললাম তো।
  • উহু, বেশি বুঝো না। আজ তোমাকে দুইটা শার্ট কিনে দিবো।
    অবনী কে বুঝানো দায় হলো। যতই বুঝাতে যাই, ততই রেগে যায়।তাই বুঝানো বন্ধ করে দিলাম।
    ওকে ভার্সিটি তে রেখে অফিসে চলে এলাম।

অফিস শেষ করে অবনীকে নিয়ে শপিং এ আসলাম। সারাদিনে দুবার কথা হয়েছে তাও অল্প অল্প করে। অনেক্ষণ পর দেখতে পেয়ে বেশ ভালো লাগলো। অবনী আমাকে ওর পছন্দের দুটা শার্ট কিনে দিলো। আমিও ওকে ওর পছন্দের একটা টপস,একটা শার্ট আর একটা ওড়না কিনে দিলাম।
কেনাকাটা শেষ করে কফিশপে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম। অবনী কে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়েছি।
বাসায় এসেই ঘুমাতে হলো। রাতে ঘুমাতে লেট হয়ে যায় তাই এখন একটু ঘুমিয়ে নেয়া দরকার।
ঘুম ভাঙল অবনীর ফোন পেয়ে।

রিসিভ করে বললাম, হ্যালো।

  • তোমার ঘুমকাতুরে গলাটা শোনার জন্যই ফোন দিলাম।
  • উম জানি। কয়টা বাজে গো?
  • এইতো রাত দশটা। উঠে ডিনার করে নাও।
  • তুমি খেয়েছো?
  • হ্যা খেয়েছি। এবার উঠে খেয়ে এসে আমাকে ফোন দাও তো।
    আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে এসে ওকে ফোন দিলাম।অবনী বলল, একবার আসবা?
  • তুমি বলেছো আমি না গিয়ে কি থাকতে পারি? এক্ষুনি আসছি।

ফোনে কথা বলতে বলতেই ওর বাসার সামনে চলে এলাম।অবনী বলল কালকের সেই জায়গাটায় চলে যেতে। আমি তাই করলাম। বারান্দায় গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম।.
অবনী এসে বলল, আসতে খুব কষ্ট হলো তাইনা?

  • আরে না। কষ্ট হবে কেন?
  • এত রাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে এখানে নিয়ে এলাম।
  • ব্যাপার না।
  • তুমি এলে আমার খুব ভালো লাগে।
  • আমার ও আসতে খুব ভালো লাগে।
  • তাই! পরশুদিন আব্বু চলে আসবে। আর এতরাতে দেখা হবেনা।
  • দেখা হবে। কথা হবেনা। তুমি শুধু একবার জানালায় মাথা বের করে তাকাবা।তাহলেই হবে।আমি রাস্তা থেকে তোমাকে দেখে যাবো।
  • ওকে। এখন তো দেখা হলো, এবার যাও।
  • আর কিছুক্ষণ থাকিনা?
  • ভাইয়া যদি এসে যায়? ও এখনো জেগে আছে।
  • আচ্ছা তাহলে যাচ্ছি। টেক কেয়ার।

আমি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অবনী পিছন থেকে ডাক দিলো। আমি পিছন ফিরে তাকালাম।
অবনী কোনো কথা না বলেই ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না। ওকে জরিয়ে ধরতে গিয়েও ধরলাম না।একটু পরে আমিও দুহাতে ধরে ফেললাম ওকে।
এভাবে চলে গেলো অনেকটা সময়। অবনী আমাকে ছেড়ে দিয়ে লাজুক ভাবে তাকালো।তারপর এক ছুটে চলে গেলো ভেতরে।আমি কিছু না বলে আস্তে আস্তে বেড়িয়ে এলাম বাসা থেকে।

অবনী আমার বুকে মাথা রাখার পর থেকে যতটা শান্তি লাগছে, ততটা অস্থির লাগছে। কেন লাগছে বুঝতে পারছি না।ইচ্ছে করছে আরো একবার ওকে জড়িয়ে ধরি।
আমি বাসায় এসে ওকে কল দিলাম,
ও রিসিভ করে চুপ করে আছে।
বললাম, অবনী..

  • হুম…
  • কি করছো?
  • শুয়ে আছি।
  • আর?
  • ভাবছি।
  • কি ভাবছো অবনী?
  • তোমার বুকে অনেক শান্তি!
    আমি অবাক হয়ে বললাম, সত্যিই অবনী। তোমাকে বুকে নিয়েও আমি খুবই শান্তি পেয়েছি।
  • আরেকবার ধরবেন?
  • কিভাবে? কখন?
  • থাক,
    কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারলাম অবনী লজ্জা পাচ্ছে। ও গুড নাইট বলে ফোন রেখে দিলো। আমার ইচ্ছে করল এক্ষুনী ছুটে চলে যাই ওর কাছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *