New Valobasar Golpo

নীল পদ্মাবতী (৮ পর্বের গল্প) – New Valobasar Golpo

পর্বঃ ০১: গাড়ি থেকে নেমে মাত্র দাঁড়িয়েছি, কোথ থেকে একটা মেয়ে এসে বললো, ‘এক্সকিউজ মি স্যার, আমি আপনাদেরকে রিসিভ করতে এসেছি। ওয়েলকাম স্যার।’
মেয়েটার কথা বলার ভঙ্গি আর স্পষ্ট উচ্চারণ শুনে আমি হা করে তাকিয়ে আছি! আমাকে রিসিভ করার জন্য মামাতো ভাই নিয়নের আসার কথা। এই মেয়েটাকে তো আমি চিনিনা। তার উপর এসে স্যার স্যার বলে সম্বোধন করছে! অদ্ভুত ব্যাপার।
আমি অবাক হয়ে বললাম, আপনি কে!

মেয়েটা মিষ্টি করে হাসলো। সেই হাসি দেখেই যেকোনো ছেলের মাথা ঘুরে যাবার কথা। মাথায় হাত দিয়ে দেখি, নাহ আমার মাথা ঠিকই আছে, ঘুরছে না। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়েই রইলাম আমি।
মেয়েটা বললো, আমি রাশা আলম। আপনি আমাকে রাশা নামেই ডাকতে পারেন স্যার। আপনাকে রিসিভ করার জন্য আমাকে পাঠানো হয়েছে।
আমার চক্ষু চড়কগাছ। আমি কি এমন ভি.আই.পি হয়ে গেলাম যে আমাকে রিসিভ করার জন্য এরকম সুন্দরী মেয়েকে পাঠানো হবে। তাছাড়া রাশা নামে আমার কোনো কাজিন নেই। এই মেয়েটা তাহলে কে?
অবাক চোখে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আমাকেই রিসিভ করতে এসেছেন?

  • জ্বি স্যার আপনাকেই।
  • আর ইউ শিওর?
  • আমি আপনাকে রিসিভ করার জন্য এতদূর থেকে এসেছি। আমি শিওর হবো না তো আপনি হবেন স্যার?
  • আমি কে বলুন তো?

মেয়েটা হাসতে হাসতে বললো, আপনি নীলাভ স্যার না?

  • জ্বি আমি নীলাভ। কিন্তু স্যার হলাম কবে?
  • আপনি মজাও করতে পারেন! স্যার, কথা না বাড়িয়ে আসুন। সবাই অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
  • কোথায় যাবো?
  • আমাদের বাসায়।
  • বাসাটা কোথায়?
  • আপনি ভুলে গেছেন?
    আমি আমতা আমতা করে বললাম, না মানে জায়গার নামটা যেন কি?
  • বুড়িচং।

আমি অবাক হলেও একটা হাফ ছাড়লাম। আমি বুড়িচং ই যাবো আর আমার নাম নীলাভ ও। তারমানে মেয়েটা আমাকেই রিসিভ করতে এসেছে। কিন্তু আমাকে স্যার বলার কারণ বুঝতে পারছি না। যাইহোক, নিশ্চয় এটা আমার মামাতো ভাইবোন দের কারসাজি। আমাকে সম্মান প্রদর্শন করে ভড়কে দেয়ার প্লান করেছে। ফোনেও চার্জ শেষ হয়ে গেছে তাই নিয়নকে ফোন দিতে পারছি না।
আমার বন্ধু রাফি বললো, দোস্ত কি এত ভাবছিস বলতো? চল যাই?

আমি এখনো কনফিউজড। মেয়েটার কোথাও ভূল হচ্ছে কিনা কে জানে। কিন্তু সে আমার নাম জানার কথা নয়। ভাগ্যে যা আছে হবে। এখন যাওয়া যাক।
মেয়েটার সাথে গাড়িতে উঠে পড়লাম আমরা দুইবন্ধু। রাফি নির্ঘাত সুন্দরি রাশা ম্যাডামের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। নয়তো এভাবে হ্যাংলার মত বারংবার তাকাতো না। আমি রাফিকে চিমটি দিয়ে বারবার হুশ করিয়ে দিচ্ছি। নয়তো বেচারা তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে চিৎপটাং হয়ে যাবে ঠিক নেই।
রাশা বললো, স্যার আপনাদের আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?

  • জ্বি না।
    রাফি আগ বাড়িয়ে বললো, অসুবিধা হয়নি। আর হলেও আপনাকে দেখার পর সব ভুলে গেছি।
    মেয়েটা আমার দিকে তাকালো অবাক হয়ে। আমি মুখ কাচুমাচু করে বললাম, ফান করছে। ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।
    বলেই রাফির পায়ে জোরে একটা চিমটি বসিয়ে দিলাম। রাফি চিৎকার করে উঠলো। আমি বললাম, চেচাচ্ছিস কেন?
  • মশা কামড়াচ্ছে তাই।

রাশা ব্যস্ত হয়ে বলল, গাড়িতে মশা? ডেঙ্গু হবে তো। ড্রাইভার আপনি স্প্রে করেননি?
ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে স্প্রে করলো। রাফি বলল, এই মশা এরোসলে মরবে না।
রাশা অবাক হয়ে বলল, তাহলে? কয়েলের ব্যবস্থা করবো?

  • এই মশা কয়েলেও মরবে না।
  • এমা! বলেন কি! তাহলে ব্যাটের ব্যবস্থা করবো?
  • ব্যাট হলে গায়ের জোরে একটা মেরে মাথা ফাটিয়ে দিতাম।

রাশা শব্দ করে হেসে উঠলো। হাসুক, মহারাণী জোকস না বুঝলে তো হাসবেই। যদি বুঝতো রাফি কোন মশার কথা বলেছে তাহলে হাসি উধাও হয়ে মুখে ফুলচন্দন পড়তো।
রাশা বললো- বাবা কতদিন ধরে আপনাদের কথা বলছিলো। মা তো কাল থেকেই খাবার দাবার বানিয়ে বসে আছে। স্যার, বাবা আপনাকে অনেক ভালোবাসেন।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। কাম সেরেছে তো! কার বাবা? কে বাবা? আমাকে ভালোবাসার মত ছেলে তো আমি নই। আমি নিতান্তই ভ্যাবাগঙ্গারাম টাইপের একটা বাউণ্ডুলে ছেলে। বাপের হোটেলে খাই আর ঘুরে বেড়াই। আমাকে কেন ভালোবাসবে? তাও আবার এরকম সুন্দরীর বাবা।
রাফি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তোর কপাল খুলেছে। কে রে দোস্ত? জামাই আদর কেন করছে তোকে?

  • আই ডোন্ট নো এনিথিং।
  • ঢপ মারছিস? আগে তো আমাকে কিছুই বলিস নি।
    আমি মনেমনে হাসলাম। আমি নিজেও জানিনা এই মেয়ে কে? হতে পারে আমার মামা মামীর আত্মীয়। আমি বেড়াতে এসেছি আমার মামা বাড়িতে। এখানে কোনো অচেনা সুন্দরি মেয়ে রিসিভ করে এলে আমার জানার কথা নয় তার বাবা কে?
    রাশা একটা দোকানের সামনে গাড়ি স্লো করতে বলে আমার দিকে তাকালো। বিনয়ের সাথে জিজ্ঞেস করলো, কিছু খাবেন স্যার?
  • নাহ। আমি কিছু খেতে চাচ্ছি না।
    রাশা রাফির দিকে তাকিয়ে বললো, স্যার আপনি কিছু খাবেন?
    রাফি হ্যাংলার মত বললো, জ্বি খাবো।
  • কি খাবেন স্যার?
  • যা খাওয়াবেন।
  • বলুন না কি খাবেন?
  • বলুন না কি খাওয়াবেন?
  • স্যার আমার কাছে খাওয়ানোর মত কিছু নেই। আমি দোকান থেকে এনে দিচ্ছি, বলুন?
  • আসলেই কি কিছু নেই?রাফির ফাজলামির ধরণ দেখে আমি গায়ের জোরে ওর পায়ের উপর পাড়া দিলাম। রাফি আবারো চেঁচিয়ে উঠলো। রাশা জিজ্ঞেস করলো, কি সমস্যা স্যার?
  • আবারো মশা কামড়াচ্ছে।
    আমি রাশাকে বললাম, আমরা কিছু খাবো না। আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি বাসায় নিয়ে চলুন।
  • কিছু খান না স্যার?

আমি বিরক্ত হয়ে রাফিকে বললাম, তুই কিছু খেলে খেয়ে নে।
রাফি টপ করে লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে খেতে চলে গেলো। রাশাও গেছে ওর সাথে। রাফি দোকানে গিয়ে কিছু কেনার বদলে রাশার গায়ে ঢলে ঢলে পড়ছিল। আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি। উফফ ছেলেটাও যা ফাজিল। এই বন্ধুকে নিয়ে কোথাও গেলেও বিপদ, আবার না নিয়েও থাকতে পারিনা। হাজার হলেও ছোটবেলা থেকেই আমার প্রাণের বন্ধু।

ওরা ফিরে আসার পর গাড়ি স্টার্ট দেয়া হলো। দ্রুত গাড়ি টেনে কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি দাঁড়ালো। আমি অবাক হয়ে তাকালাম বাড়িটার দিকে। গত দশ বছর নানা বাড়িতে আসিনি। নতুন বাড়ি করেছে সেটাও দেখিনি। কাজেই বাড়ির তফাৎ বোঝার সাধ্য আমার হলোনা।

অবাক হলাম তখন যখন দেখলাম একজন অচেনা লোক নীলাভ স্যার বলে এগিয়ে এলেন। কাহিনী দেখেই বুঝতে পারলাম কুছ তো গড়বড় হ্যায়! যা সন্দেহ করেছিলাম ঠিক তাই। মেয়েটা ভূলবশত অন্য কাউকে তুলে নিয়ে এসেছে আই মিন আমাকেই তুলে নিয়ে এসেছে। এবার আবার মামাবাড়ির রাস্তা ধরতে হবে। তার আগে ওনাদের ভূলটা ভাঙিয়ে দিতে হবে।
কথা বলতে যাবো এমন সময় হঠাৎ…

দক্ষিণা হাওয়া শিরশির করে গায়ে এসে লাগলো। আচমকা হৃদপিন্ড লাফিয়ে উঠলো। সামনে তাকিয়ে দেখি নীল শাড়িতে এক অপ্সরী বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। আমার নাম নীলাভ হওয়ার অজুহাতে এত বছর ধরে সে নীলাকে খুঁজে বেরিয়েছি সে এখন আমার সম্মুখে! এই একটা মেয়ের জন্য দূর বহুদূর থেকে নীল পদ্ম তুলে এনে তার হাতে তুলে দেয়া যায়! আমি মুগ্ধ!
রাফি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো, দোস্ত।

আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম। তারপরও বারবার তাকাচ্ছিলাম সেই নীলাঞ্জনার দিকে।
নীলাঞ্জনা আনমনে বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কোনোদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।
আমি ওনাদের ভূল ভাঙাতে ভুলে গেলাম। ভূল টুল যা হবার হয়েছে, আমার নীলাঞ্জনার দেখা তো পেলাম। আগে ওর সাথে কথা বলতে হবে। বাড়িটা যারই হোক, আগে তো বাড়িতে প্রবেশ করি।
লোকটি আমার সাথে হ্যান্ডশেক করে আমাকে ভেতরে নিয়ে এলেন। এসি রুমে বসে শীতল হওয়ার চেয়ে মেয়েটাকে আরেক পলক দেখাটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় মনেহচ্ছে। সেই নীলাঞ্জনাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠলাম আমি।

পর্ব ২

নীলপরীকে আরেকবার দেখার জন্য ব্যকুল হয়ে আছি। রাশা’র মা ঠাণ্ডা শরবত নিয়ে এসে সামনে রাখলেন। রাফি তখন থেকেই রাশা ও রাশার বাবার সাথে গল্প করে চলেছে। ইতিমধ্যেই বেশ ভাবও জমিয়ে ফেলেছে। আমি শুধু চাতক পাখির মত চেয়ে আছি। মাঝেমাঝে আমার চোখ দুটো নীলাঞ্জনার বারান্দা খুঁজছে।
রাশা নিজেই জিজ্ঞেস করল, স্যার কিছু খুঁজছেন?

  • হ্যা।
  • কি খুঁজছেন স্যার? বলুন আমি এনে দেই?
  • এনে দিলে তো ভালোই হয়।
  • কি জিনিস সেটা?
    আমার হুশ ফিরে এল। কি সব উলটা পালটা বলে যাচ্ছিলাম কে জানে। আমি তড়িঘড়ি করে বললাম, না না খুজছি না কিছু।
  • এখনি যে বললেন কিছু খুঁজছেন?

আমি কিছু ভেবে না পেয়ে বললাম, ওয়াশরুম খুজছিলাম। ফ্রেশ হতে হবে তো।

  • ওহ আচ্ছা। এতে লজ্জা পাবার কিছু নেই স্যার। আসুন আমার সাথে। আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।
    রাফি উঠে বলল- আমিও যাবো।

রাশা হেসে রাফির দিকে তাকালো। মুচকি হাসির সাথে বলল- আসুন না।
রাশার কথায় একটা আলগা টান আছে। টেনে টেনে ভাব নিয়ে কথা বলে। রাশার মেকাপ আর চেহারাতেও একটা ভাব মেশানো রয়েছে। সাজগোজ খুব পছন্দ করে সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। জামাকাপড় ও নেহাত কম ছোট নয়। অন্যদিকে সেই নীল পরির মাঝে কোনো আলগা ঢং, ভাব কিচ্ছু নেই। চেহারায় কোনো আলগা সজ্জা নেই, জামাকাপড়ের তো কথাই নেই। একেবারে নীলপরি নীলাঞ্জনা।
আমাকে গম্ভীর হয়ে ভাবতে দেখে রাশা বলল- স্যার এনি প্রবলেম?

  • হ্যা প্রবলেম।
    রাশা কৌতুহলী হয়ে তাকালো। আমি মুচকি হেসে বললাম, প্রবলেমটা হচ্ছে আমাকে স্যার স্যার বলা বন্ধ করুন। শুনতে খারাপ লাগছে আমার।
  • ওকে স্যার।
  • আবার?
    হেসে উঠলো রাশা। এমন সময় হঠাৎ আমার নীলপরি এসে সামনে দাঁড়াল। আমি কিছুক্ষণের জন্য খেই হারিয়ে গেলাম। দূর হতে ছোট্ট গোলাপের কলি মনে হয়েছিলো। এখন দেখে একেবারে ফুটন্ত গোলাপ মনে হচ্ছে। একটা মেয়ে এত স্নিগ্ধ কিভাবে হয়? কিভাবে হতে পারে!

রাশা মেয়েটাকে বললো, আপু উনি হচ্ছেন নীলাভ স্যার। আব্বু এই কয়েকদিন যার কথা বলেছিলো।
পরিচয় করিয়ে দেবার সুবাদে কথা হবে এই ভেবে আমার আনন্দ হচ্ছিল। আমি মুগ্ধ হয়ে নীলপরির দিকে তাকালাম। কিন্তু তার মাঝে কোনো ভাবান্তর লক্ষ করলাম না। চোখ দুটো একবার পলক ফেলে বলল, ওহ আচ্ছা। এমনকি আমার দিকে চেয়ে একবার হাসলোও না। আমি তো পুরোপুরি অবাক!
রাশা বলল, স্যারকে হাই বলো?

নীলপরি জোর করে হাসার চেষ্টা করে আমার দিকে তাকালো। সেই চোখের পানে তাকিয়ে জগতের সমস্তকিছু ভুলে যাবো আমি। এত মায়াবী চোখ, ঘন ঘন চোখের পাপড়ি। কি অপূর্ব সুন্দর!
নীলপরি হেঁটে পাশের একটা রুমে চলে গেল। আমি ওর দরজার দিকে বারবার তাকাতে তাকাতে ওয়াশরুমে যাচ্ছিলাম। রাশা আমাকে ওয়াশরুমের সামনে নিয়ে এসে দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো। রাফি রাশার পিছুপিছু কথা বলতে বলতে গেল। আমি এটুকু নিশ্চিত যে রাফি মেয়েটার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছে। তারমানে কয়েক মিনিট তো লাগবেই।
আমি তাড়াতাড়ি নীলপরির রুম লক্ষ করে চলে এলাম। রুমের দরজায় পর্দা টানানো। দরজার সামনে থেকে বললাম, এক্সকিউজ মি।
খুব দ্রুত নীলপরি এসে পর্দা সরিয়ে বলল, বলুন।

  • না মানে ওয়াশরুম কোনদিকে?
  • আপনি তো ওয়াশরুম থেকেই এলেন তাইনা?
    আমি ধরা পরা চোরের মত মুখ কাচুমাচু করে আমতা আমতা করতে লাগলাম। মেয়েটা বলল, আর কিছু বলবেন?
  • বলতে তো অনেক কিছুই চাই। কিন্তু সব গুলিয়ে ফেলছি।
  • মানে!
  • আপনার নামটা জানতে পারি?
  • রাহা।
  • রাহা! আপনার মতই আপনার নামটা অনেক মিষ্টি।
  • না। আমার নামের মতই আমি অনেক রুড আর রাগী।
  • রাগী! একদমই মনে হয়না।
  • কিন্তু আপনাকে দেখে মনেহয়।
  • কি মনেহয়?
  • এইযে কথা বলার ধান্ধা খুঁজছেন।

আমি আরেকবার ধরা পড়ে লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেললাম। হাসবো না কাঁদবো? আমার যে কি করা উচিৎ নিজেও বুঝতে পারছি না। মেয়েটা যেমন সুন্দর ঠিক তেমনি ট্যালেন্ট। কিভাবে যে চোখ মুখ দেখেই বুঝে ফেললো।
রাহা বলল- কিন্তু এভাবে আমার বোন রাশাকে বাগে আনতে পারবেন, আমাকে নয়। কিছু বলার না থাকলে চলে যেতে পারেন। আর যে কয়দিন থাকবেন, দয়া করে আমার রুমে আসবেন না।
যদিও এই বাড়ির অতিথি আমি নই। আমি এসেছি আমার মামাবাড়িতে। তারপরও রাহার কথা শুনে আমার ইগোতে লাগলো। মেজাজ গরম হওয়ার মত কথা। মেয়েটার ভাব আছে বলতে হবে। অবশ্য সুন্দরী মেয়েদের একটু আধটু ভাব থাকা দরকার। একেবারে রাশার মত ঢলে পড়া স্বভাবের হলে তো আমি নীলাভ তাকে প্রথম দেখেই ক্রাশ খেতাম না। চেহারাতেও ব্যক্তিত্বের ছাপ ফুটে ওঠে।
রাহা বলল- এক্সকিউজ মি?

আমি মুচকি হাসার চেষ্টা করে বললাম – ওকে। আসছি তাহলে। আমার মুখ আর আপনাকে দেখতে হবে না।

  • দেখতে হবে না? আর ইউ শিওর? আপনি নাকি এক সপ্তাহের মত আমাদের বাসায় থাকবেন?
  • এভাবে বলার পর অন্তত সেই বাসায় থাকার অভিরুচি আমার হবে না।

রাহা হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি হনহন করে হেঁটে বসার ঘরে চলে এলাম। জায়গামত কোপ বসিয়েছি। রাহা ম্যাডাম এখন চিন্তায় পরে গেছেন। উনি আর আমাকে এই বাড়িতে দেখবেন না। ভাববেন আমি তার উপর রাগ করেই চলে গেছি। সত্যি বলতে আমি তো এই বাড়ির গেস্ট নই। আমি আমার মামাবাড়িতেই যাবো।সোজা এসে সোফায় বসলাম। রাফি ও রাশাকে এখনো দেখা যাচ্ছে না। আমি রাশার বাবাকে বললাম, আমার কোথায় একটা খটকা লাগছে। আপনার বাসায় আমার আসার কথা তো?
লোকটি কৌতুহলী হয়ে আমার দিকে তাকালো- জ্বি। আমার বাসাতেই তো আসার কথা। কেন বলুন তো? কিসের খটকা লাগছে?
আমি সত্যিটা লুকিয়ে রেখে ভাব ধরে বললাম, আপনার একটা ছোট্ট মেয়ে আছে না?

  • না তো। আমার তো এই দুটোই মেয়ে, রাহা আর রাশা।
  • আপনার পুঁচকে মেয়েটা এত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলো?
  • আমার মেয়ে কোথায় পেলেন স্যার?
    আমি মনেমনে হেসে মুখে বললাম, আপনার ছেলের নাম তো রাহুল। সে কোথায়?
  • আমার কোনো ছেলে নেই স্যার।
  • কি বলেন! আপনি তো আমার সন্দেহ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
    লোকটি কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করল- কিসের সন্দেহ স্যার?
  • আপনি আদৌ মিস্টার পারভেজ কিনা?

ওনার কপালের ভাঁজ আরো তীব্র হলো। অবাক হয়ে বললেন, পারভেজ কেন হবো? আমাকে অন্য কারো সাথে গুলিয়ে ফেলছেন হয়ত। আমার নাম মুজতবা। মুজতবা আলম।
আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম, মুজতবা আলম! আমার তো মনেহচ্ছে আপনারই কোথাও ভুল হচ্ছে। আমার তো মিস্টার পারভেজের বাসায় যাওয়ার কথা।

  • আমার কোথায় ভুল হবে? আমি তো আপনাকে ফোনে বলেছিলাম আমার মেয়ে রাশাকে পাঠাবো রিসিভ করার জন্য।
  • সিরিয়াসলি! আমাকে তো পারভেজ সাহেব এভাবে বলেননি। এজন্য ই প্রথমে রাশাকে দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে রিসিভ করার জন্য একজন ছেলের আসার কথা।
    মুজতবা আলমের চেহারায় চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে। আমার কি যে মজা লাগছে। জায়গামত প্যাঁচ লেগে গেছে। যেহেতু রাশা সরাসরি আমাকেই জিজ্ঞেস করেছে আর আমিও জানতাম না আমাকে রিসিভ করার জন্য রাশার আসার কথা। তাই অবুঝের মত চলে এসেছি। এখন কিছু একটা বলে তো এখান থেকে বিদায় হতে হবে।
    মুজতবা আলম অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছেন। আরেকটু হা করে থাকলে মুখে মশা ঢুকে ডেংগী ফিভার হয়ে যাবে।

বললাম – হা বন্ধ করুন। মশা পেটে গেলে সেখানে ঘর বানিয়ে চাষাবাদ করবে। মশার সংখ্যা বাড়তে দেয়া যাবে না।
মুজতবা আলম হা বন্ধ করে তাকিয়ে রইলেন। আমি বললাম, আমি মুজতবা আলম নামে কাউকে চিনিও না।

  • আপনার নাম নীলাভ খান না?
  • আমার নাম নীলাভ কিন্তু খান না। আমি নীলাভ ইয়াসির নীল।

মুজতবা আলমের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। উনি হা করে বললেন – তাহলে! ভূল করে আমার মেয়েটা আপনাকে নিয়ে এসেছে।

  • এতক্ষণে সত্যিকার ঘটনা বেরিয়ে এলো। আমারও বুড়িচং আসার কথা। রাশা ম্যাডাম এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি নীলাভ স্যার? আমি আপনাকে রিসিভ করতে এসেছি। আমি ভাবলাম সত্যিই হয়ত আমাকে রিসিভ করতে এসেছে। আমি তো এতকিছু ভাবিও নি।
    মুজতবা আলম হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, সরি ভাই। ভুল হয়ে গেছে।
  • ইটস ওকে। আমাকে ভাই বললে আপনার পাপ হবে।
  • কেন?

আমি হেসে বললাম, যাইহোক। আমি তাহলে আসি, আমার জরুরি মিটিং আছে।

  • জ্বি আচ্ছা। আমাকেও যেতে হবে। আসল নীলাভ স্যারকে আনতে।
  • আমি কিন্তু নকল নই।

মুজতবা আলম হেসে উঠলেন। হাসতে হাসতে বললেন, আপনি অনেক মজার লোক মশাই। আপনাকে আমার ভালো লেগেছে।

  • জামাই করবেন নাকি?
  • হা হা হা। আপনি এত মজার। ভুল করে হলেও পরিচয় হয়ে ভালোই হলো। যোগাযোগ থাকুক। আবার আসবেন কিন্তু।
  • অবশ্যই। আমাকে তো আসতেই হবে (বিড়বিড় করে বললাম)
    মুজতবা সাহেব বললেন, কিছু বললেন?
  • না কিছু না। আজ আসি তাহলে?
    মুজতবা সাহেবের থেকে বিদায় নিয়ে আমি চলে আসলাম। নীলপরি এতক্ষণ নিশ্চয় আমাকে মিস করছে। আর ভাব্বে আমি সত্যিই ওর কথায় চলে গেছি। তাদের নীলাভ আসার পর আবার আমাকে বেশি বেশি মিস করবে। হা হা হা!

পর্ব ৩

মামাবাড়িতে আসার পথেই নিয়নের সাথে দেখা হয়ে গেলো। রাফি বারবার রাশার কথা বলছিলো। আর আক্ষেপ করছিল রাশার ফোন নাম্বারটা নিতে পারলো না বলে। আমি শুধু ওর কাণ্ড দেখছি আর হাসছি।
নিয়নকে ব্যাপারটা খুলে বলামাত্র তিনজনে মিলে হাসির রোল পরে গেলো। এত হাসাহাসির মধ্যেও নীলপরি রাহার কথা কিছুতেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারলাম না। সারাক্ষণ রাহাকেই মনে পরে যাচ্ছে। আমি আবার যাবো ওই বাড়িতে। রাহার টানে আমাকে যেতেই হবে।

নিয়ন আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল- কি রে? এত উদাস কেন? মন বুঝি সেই রাশা ম্যাডামকে দিয়ে এসেছিস?
আমি হেসে বললাম, মন দিয়ে এসেছি। কিন্তু রাশা ম্যাডামকে নয়- রাহা ম্যাডাম কে।
রাফি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, দোস্ত তুই সিরিয়াস! সত্যি সত্যি তুই রাশার বড় বোনের প্রেমে পড়েছিস?

  • আমি তো প্রেমে পরিনি রে, প্রেম ই আমার উপর পড়েছে।
  • সিরিয়াসলি দোস্ত?
  • হ্যা সিরিয়াস।
  • তাহলে তো আমাদেরকে আবার যেতে হবে। ওই মেয়ের সাথে যোগাযোগ করবি কিভাবে?
    আমি হাসতে হাসতে বললাম, বাড়ি তো বেশি দূরে না। আমি আবার যাবো। ওই মেয়েকেই আমার চাই। ওই নীলপরির পায়ে এনে দিবো একশো একটা নীল পদ্ম।
    রাফি অবাক হয়ে বলল, তুই সত্যিই গেলি! অবশ্য এই সুযোগে আমারও ওই রাশার সাথে দেখা হয়ে যাবে। দুই বন্ধু দুই বোনকে লাইন মারবো।
  • কি বলিস? শেষ পর্যন্ত ওই মেয়েটার?
  • আমি না রে। আমি শিওর রাশাই আমার উপরে ক্রাশড।
  • সত্যি!

আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম। আমার আনন্দ দেখে রাফি বলল, এভাবে লাফাচ্ছিস কেন? যেন ও তোকে পছন্দ করেছে?

  • লাফানোর কারণ আছে বন্ধু। তুই যদি রাশাকে বাগে আনতে পারিস তাহলে রাশার হাত ধরে ওর বোনকে আমি পটিয়ে ফেলবো।
    রাফি ব্যঙ্গ করে বলল- একটা মেয়েকে পটাতে কি লাগে? আমাকে দেখে শেখ বুঝলি? দেখলি না কত দ্রুত মেয়েটাকে পটিয়ে ফেললাম?
    আমি হেসে বললাম, নীলপরি নীলাঞ্জনা এত সহজ না মামা। আমি যাকে পছন্দ করেছি, সে এত সহজে কারো প্রেমে পরার মত না। কঠিন পাথরের মত মেয়ে।
  • আমরা সবাই মিলে পাথরে ফুল ফোটাবো ভাবিস না। তবে আজকে দারুণ মজার একটা ঘটনা ঘটলো কি বলিস? মেয়েটা বারবার আমাদেরকে স্যার স্যার বলে ডাকছিলো। হা হা হা..
    তিনজনে মিলে আরেক তরফা হেসে নিলাম। হাসতে হাসতে পৌঁছে গেলাম মামাবাড়িতে। মামা মামী সবাই ছুটে এলেন আমাদেরকে দেখে। নানুর বয়স হলেও এখনো এই বাড়িতে একটা উৎসব উৎসব ভাব থাকে। বাড়িতে অনেক মানুষজন। যদিও সবাই শহরমুখী হয়েছে তারপরও বাড়িতে আমেজ কমেনি।

বড় মামী লেবুর শরবত করে এনেছেন। শরবত খেয়ে আমি তৃপ্তির সাথে বললাম, মামীকা শরবতকা জবাব নেহি।
আমার কথা শুনে সবাই হো হো করে হাসতে আরম্ভ করলো।
মেজো মামী বললেন, বড় হলেও নীলাভ আগের মতই দুষ্টু আছে।
আমি সাথে সাথেই বললাম, আগের মত কি মামি? আমি আগের চেয়ে আরো বেশি দুষ্টু হইছি।

সবাই আবার হেসে উঠলো। হাসি আনন্দে এত বছর পর আমাকে বরণ করে নিলো। মামাতো বোনদের কাউকে এখনো দেখতে পেলাম না। শুনলাম কেউ স্কুলে গেছে আর কেউ কলেজে। আমি গোসল সেরে মামা মামীদের সাথে খাবার খেতে বসলাম। খেয়ে উঠেই দিলাম একটা ঘুম।

ঘুম ভাংলো এক কাজিনের শয়তানির চোটে। মামাতো বোন রায়না হুট করে এসে আমার কানে সুড়সুড়ি দিচ্ছিলো। তেলাপোকা ভেবে ভয়েই লাফিয়ে উঠেছি ঘুম থেকে। উঠে দেখি রায়না অনেক বড় হয়ে গেছে। ওর সাথে আড্ডা দিলাম কিছুক্ষণ। তারপর রেডি হয়ে বাইরে বের হলাম।ইতিমধ্যেই বিকেল হয়ে এসেছে। রাফি কোথায় আছে খোঁজার চেষ্টাও করলাম না। একাই বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম নীলপরির বাসার সামনে। মামাবাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। স্থানীয় এক লোককে মুজতবা আলমের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে কিছু তথ্য নিলাম। লোক হিসেবে অনেক ভালো কিন্তু পাগলাটে।

বড় মেয়েটার প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ। নিজের প্রেয়সীর প্রশংসা শুনতে ভালোই লাগছিল আবার এটাও মনে হচ্ছিল যে বাইরের লোকজন কেন আমার বউয়ের প্রশংসা করবে? আমার বউয়ের প্রশংসা শুধু আমি করবো হুহ।
বাড়ির সামনে উঁকিঝুঁকি মারলাম কিছুক্ষণ। হঠাৎ সুন্দরী রাহার মুখ ভেসে উঠলো বারান্দায়। আমাকে দেখে বিদ্যুৎ শক খাওয়ার মত চমকে উঠলো। আমি সাথে সাথেই লুকিয়ে পড়লাম গাছের আড়ালে। আড়াল থেকে দেখলাম রাহা আমাকে খুঁজছে। ভাবছে হয়ত মনের ভূল। রাহা অন্যদিকে ঘুরলে আবারো আড়াল থেকে ঘুরে সামনে এসে দাঁড়ালাম। রাহা অবাক হয়ে তাকালো। দুইবার চোখ ঘষাও দিলো। সেই সুযোগে আমি কেটে পড়লাম। আমি জানি রাহা এখন আমাকে শুধু মিস না, মিসের থেকেও বেশি কিছু থাকলে সেটাই করবে। আর মনেমনে ভাব্বে আমার প্রেমে পড়েছে কিনা। হা হা হা..

আজকের মত আর জ্বালালাম না। তাড়াতাড়ি মামাবাড়িতে চলে এলাম। সবার সাথে আড্ডা দিতে দিতে রাত অনেক হয়ে গেলো। ডিনার শেষ করে গেলাম ঘুমাতে।
শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছি এমন সময় দেখি একটা মেয়ের আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। আইডি নাম ও ছবি দেখে নিশ্চিত হলাম এটা রাশা। রাশা তো রাফির প্রেমে পড়েছে তাহলে আমাকে কেন রিকুয়েস্ট দিবে?
আমি রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করতেই মেসেজ আসলো, Hi.
আমি হেসে রিপ্লাই দিলাম, আরেহহ আপনি!

  • sorry ajke amar vul er jonno apnake kosto korte holo…

আমি হেসে মশলা মিশিয়ে একটা এসএমএস দিলাম। একটা মেসেজেই কাজ হলো। রাশা বেশ খুশি হয়েছে। খুশিতে ডিগবাজি খাচ্ছে নিশ্চয়। রাশার সাথে চ্যাটিং করলাম অনেক রাত পর্যন্ত। আমি চ্যাটিং করলাম আমার স্বার্থে। যাতে করে রাহার সম্পর্কে কিছু তথ্য নিতে পারি। কিন্তু ফল হলো উলটা। কথাবার্তা বলতে বলতে মনে হলো রাশা নিজেই আমার উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। শেষ পর্যন্ত কি যে হবে…
রাত বাড়লে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন সকালে ফ্রেশ হয়ে ভোরের আলোয় বের হলাম রাহাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাসার সামনে এসে হাঁটাহাটি করতে লাগলাম। মনেমনে চাইছিলাম যেন রাহার সাথে একবার দেখা হয়ে যায়।
হলো ও তাই। কিছুদূর আসার পর দেখি রাহা আসছে। আমি ওকে না দেখার ভান করে হেঁটে যেতে লাগলাম। রাহা আমাকে দেখে ডাক দিলো, এক্সকিউজ মি।
এবার আমি না শোনার ভান করলাম। রাহা আবার ডাকলে পিছন ফিরে অবাক হওয়ার ভান করে বললাম, আপনি!

  • আমাদের বাড়ির কাছে আমি থাকবো না তো আপনি থাকবেন?
  • হ্যা। কারণ আমি যেখানে এসেছি সেটাও কাছেই।
  • ওহ আচ্ছা। কালকে আপনি অত ভাব নিলেন কেন? আপনি তো আমাদের বাড়িতে আসেন ই নি। তাহলে এত ভাব নেয়ার কি দরকার ছিলো শুনি?
  • ভাব আর কই নিলাম? আমি তো আগে কখনো আসিনি। ভেবেছিলাম যে বাড়িতে আসার কথা এটা সেটাই।
    রাহা মুখ কাচুমাচু করে বলল- এক্সট্রিমলি সরি।
  • ইটস ওকে। তবে ভাবটা কিন্তু গতকাল আপনি ই নিয়েছিলেন।
  • আপনি কি কাল বিকেলে এদিকে এসেছিলেন?
  • না তো। আমি পুরোটা বিকেল টানা ঘুমিয়ে রাতে একটা মিটিং শেষ করে ঘুমিয়ে গেছি।
  • ডিনার করেননি?
  • হ্যা ডিনার করেই ঘুমিয়েছি।

বলেই মনেমনে হাসলাম। আমার ভীষণ মজা লাগছে। যদিও এত আর্ট করে মিথ্যে বলার অভ্যেস নেই। তারপরও..
রাহা বললো, যাইহোক, আমার ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত। আমি তাহলে আসি।
রাহা হনহন করে হেঁটে চলে গেলো। আমি মনেমনে খুশি হয়ে উঠলাম। ধীরেধীরে বড়শিতে আটকা তো পড়তেই হবে রাহা ম্যাডাম। তবে ওর জন্য আমাকে পদ্ম জোগাড় করতেই হবে। নীল শাড়িতে পদ্মাবতী, কি যে মায়াবী লাগবে ওকে!

পর্ব ৪

নীলপরি নীলাঞ্জনার চিন্তায় আমার চোখের ঘুম উধাও হয়ে গেলো। সারাদিন ছটফট করে কাটানোর পরেও রাতে ঘুমাতেই পারলাম না। মনে মনে ফন্দি ফিকির আঁটছি কিভাবে ওকে বড়শিতে ফেলা যায়। রাশার সাথে খাতির করেও তেমন একটা ফল হলো না। কি যে করি..
পরেরদিন পরিপাটি হয়ে চলে এলাম মুজতবা আলমের বাড়িতে। বেচারা আমাকে দেখেই অবাক হয়ে বললেন – আরে নীলাভ ভাই যে!
লজ্জায় আমার মাথা কাটা যায়। শ্বশুর যদি ভাই বলে ডাকে কি বিশ্রী ব্যাপার হয়ে যায় না?

ওনাকে বুকে জাপটে ধরে বললাম – আপনাকে দেখতে এলাম মশাই৷ আপনার সাথে পরিচয় হয়ে এত খুশি হইছি যে বাসায় থাকতেই পারলাম না। মনে হলো আপনার সাথে দেখা না করে থাকা যাবে না। যে কয়দিন আছি একটু আধটু দেখা সাক্ষাৎ হলে খারাপ তো হয় না।
একটা বাক্যেই মুজতবা আলম পটে গেলেন সেটা ওনার মুখের হাসি দেখেই নিশ্চিত হলাম। আমাকে বুকের সাথে জাপটে ধরে বললেয়- আহারে ভাই আমার।

আমার মেজাজ গেলো চড়ে। শ্বশুর মশাই কি বুঝতে পারছেন না ওনার বয়স আমার চেয়ে তিনগুণের সমান। অযথা ভাই ভাই বলে সম্বোধন করছেন! কিভাবে এটা কাটানো যায় সেই বুদ্ধি আটতে লাগলাম।
বললাম, আপনি দেখতে একেবারে আমার এক চাচার মত। আপনাকে দেখলে আমার চাচার কথাই মনে পড়ে। দূর্ভাগ্য চাচা এখন নেই।
মুজতবা আলমের বোধহয় মন গলে গেলো। করুণ চেহারায় আমার দিকে চেয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন – মন খারাপ কোরো না বাবা। আমি তোমার চাচার মত কি বলো? আমাকে নিজের আপন চাচাই ভেবো তুমি। আমি রাগ করবো না?
আমি আবেগে আপ্লুত হওয়ার ভান করে বললাম – সত্যি চাচা!

  • হ্যা বাবা সত্যি।
    আমার খুশি আর দেখে কে। ফাইনালি বাবাতে নেমে এসেছেন তো। আপাতত এটুকুই এনাফ। বাকিটুকু আমি ধীরেধীরে সামলে আনবো৷
    উনি আমাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে আসতে আসতে বললেন – তোমার বাসা কোথায় বাবা?
  • জ্বি আংকেল ঢাকায়।
  • আংকেল বইলো না বাবা। চাচা বলে ডেকো। চাচা ডাকের মধ্যে একটা আপন আপন ব্যাপার আছে। কিন্তু আংকেল ডাকলে নিজেকে দোকানদার দোকানদার লাগে।
    আমার হাসি পেলেও চেপে গেলাম। আংকেল ডাক শুনলে যদি দোকানদার মনেহয় তাহলে তো চাচা ডাক শুনলে রিক্সাওয়ালা মনে হবার কথা। ফিক করে হেসে ফেলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলাম। চাচা বললেন, কয় ভাই বোন তোমরা?
  • আমি আর আমার একটা ছোট বোন।
  • আমাদের পরিচয় অনেক অদ্ভুত ভাবে হয়েছে তাই না?
    কথা বলতে বলতে চাচাকে হাত করে ফেলার চেষ্টা করছি। খুব বেশি কষ্ট করতে হলোনা। উনি খুব দ্রুত আমার দলে চলে আসবেন মনে হচ্ছে। বসার ঘরে বসে কথা বলতে বলতেও আমার চোখ বারবার নীলপরি নীলাঞ্জনাকে খুঁজছিল। মেয়েটা কি আমাদের কথার শব্দও শুনতে পায়না নাকি? আসে না কেন একবারও?
    মনটা উদগ্রীব হয়ে মেয়েটার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমিও গভীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছি৷ কতক্ষণ কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। আড্ডা দিতে দিতে সন্ধ্যা নেমে এলো। সন্ধ্যে নামার পরে হঠাৎ রাহাকে বাসায় ফিরতে দেখলাম। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে আজকেও পড়নে নীল শাড়ি। হালকা সাজুগুজুও করেছে। নিশ্চয় কোনো প্রোগ্রাম থেকে ফিরলো।রাহা আমাকে দেখে চমকে তাকিয়ে আছে। আমি ভদ্রতার সাথে বললাম – আসসালামু আলাইকুম।

রাহা ভ্রু কুচকালো। চাচা ওকে বললো- ছেলেটা কত বিনয়ী দেখেছিস? দেখা হতেই সালাম দিলো।
রাহা জবাব দিলো না৷ বাবার মত এত সহজে এই মেয়ে পটবে না সেটা আমি জানি। ও মুখ কঠিন করে চেয়ে আছে। আমি আর একবারও ওর দিকে তাকালাম না। প্রথম দিনের মত ভাব নেয়ার চেষ্টা করলাম।
মুজতবা আলম বললেন – মেয়েটা কখনো দেরি করে বাসায় আসে না। আজকে একটা বন্ধুর জন্মদিনে গিয়েছিলো।
আমার মেজাজ গরম হয়ে গেলো। বান্ধবী বললে কিছু মনে করতাম না। বন্ধু কেন? তাও আবার নীল শাড়ি পড়ে। নীল শাড়িতে তো রাহাকে ভয়ংকর সুন্দর দেখায়। টেনশন বেড়ে যেতে লাগলো আমার।
রাহা বললো- বাবা আমি রুমে যাচ্ছি।

আমার সামনে দিয়ে রুমে চলে গেলো রাহা। একবার ফিরেও তাকালো না। আমি মনেমনে ভাবছি কিভাবে কি করবো…
আকাশে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। জানালার পর্দা দুলে উঠলো। মনেহয় কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি আসবে। কাছাকাছি কোথাও বাজও পড়লো৷ হুট করে এভাবে আকাশের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে আমি বুঝতে পারিনি৷ ব্যস্ত হয়ে বললাম – আমি তাহলে আজকের মত আসি চাচা?

মুজতবা আলম হন্তদন্ত হয়ে বললেন – পাগল নাকি তুমি? আকাশের অবস্থা দেখেছো? কাছেই কোথাও বাজ পড়লো৷ এরমধ্যে তোমাকে যেতে দিবো?

  • জোরে বৃষ্টি শুরু হলে এখনই আর থামবে না মনেহচ্ছে। আমাকে তারাতাড়ি বাসায় যেতে হবে চাচা।
  • বাসায় তো অবশ্যই যাবে। আগে আকাশের অবস্থা ভালো হোক তারপর।
  • কিন্তু এখনই তো এই ঝড় বৃষ্টি থামবে না। দেখছেন না কি এলোমেলো বাতাস বইছে।
  • না থামলে না থামবে। তাহলে যেতে হবে না।

আমি লাফিয়ে উঠে বললাম – কিহ! যেতে হবে না মানে। এখানে থাকা সম্ভব নাকি?
চাচা বললেন – কেন সম্ভব না? তুমি তো আমার ছেলের মতই। আর তাছাড়া আমাদের বাসায় এক্সট্রা রুমও আছে। তোমার কোনো অসুবিধা হবেনা।
আমি জানি অসুবিধা হবেনা। বরং আমার সুবিধাই হবে। তবুও একটু ভাব নিচ্ছিলাম। মুখ করুণ করে বললাম, না না চাচা। এটা হয় না। দোয়া করুন যেন তারাতাড়ি ঝড় বাদলা থেমে যায়।
উনি হেসে বললেন – আরে বোকা ছেলে তুমি অযথা দুশ্চিন্তা করছো। বাসায় বউ রেখে আসছো নাকি? হা হা হা।

আমি মনেমনে বললাম – বউ তো এখানে রেখে গেছি। না গেলেই তো আমার ভালো হয়৷
অতঃপর মনেমনে চাইছিলাম যেন সারারাত মুষল ধারে বৃষ্টিটা চলতেই থাকে। তাহলে আর আমাকে চলে যাওয়ার চিন্তা করতে হবে না। রাহাকে একবার দুবার তো অবশ্যই দেখতে পাবো। প্রথম অবস্থায় এই দেখাটাই অনেক মূল্যবান। এটাও অনেক প্রভাব ফেলবে আমাদের মাঝে।

আমার মনের ইচ্ছা হয়তো পূর্ণ হতে চলেছে। বৃষ্টি চলতেই লাগলো। বরং আরো জোরে শো শো শব্দে বৃষ্টি হতে লাগলো। বাতাসের ঝাপটায় পর্দাগুলো উড়ছিল। রাহা ছুটে এলো জানালার পর্দা লাগাতে।
রাহা জানালার পর্দা টেনে জানালা লাগানোর সময় ওর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম আমি৷ মুখে বিদ্যুৎ চমকানোর আলো পড়ছিল। অন্যরকম দেখাচ্ছিল রাহাকে৷ আমি উদগ্রীব হয়ে উঠলাম একাকী বসে এর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকার জন্য৷ কিন্তু জানিনা কবে সেই সুযোগ আমার হবে!

বৃষ্টি থামলোই না। চাচার অনুরোধে রাতের খাবার ওনাদের সাথেই খেতে বসলাম। খেতে বসে টেবিলে রাহা আমার মুখোমুখি বসলো৷ হয়তো ইচ্ছে করে বসেনি, কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে। খেতে খেতে হঠাৎ আমার পায়ের সাথে কারো পা লেগে গেলো। আমি চমকে সামনের দিকে তাকালাম। রাহার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। রাহার চোখেমুখে উৎকন্ঠা। ভয় ভয় চাহনি৷ একইসাথে চাহনিতে কিসের যেন মায়া, অনুরোধ। আমি বেশ বুঝলাম রাহার পায়ের সাথেই আমার পা লেগে গেছে। ইটস ওকে এরকম একটা ভাব করে পা সরিয়ে নিলাম। রাহা মাথা নিচু করলো।

খাওয়ার সময় মুজতবা আলম তার ছেলেবেলার গল্প শোনালেন। সবাই খুব হাসছিলো। চাচী খুব যত্ন নিয়ে আমাকে খাবার খাওয়ালেন। মাছের বড় মাথাটা আমার পাতে তুলে দিলেন দেখে খুব অবাক হলাম অবশ্য। আমি ওনার পরিবারের কেউ না, তাহলে মাছের মাথা কেন আমাকে দিচ্ছেন! ওনারা অনেক সরল মনের মানুষ। আর ওনাদেরকে মিথ্যে বলে ঠকাবো না এই সিদ্ধান্ত নিলাম।

খাওয়া শেষ করে অনেক রাত পর্যন্ত চাচার সাথে বসে আড্ডা দিলাম। এরমধ্যে দুবার রাহা বসার ঘর থেকে ঘুরে গেছে। যেন দেখে যেতে চায় আমি এখনও আছি কিনা। রাশা অবশ্য অনেক্ষণ ওর বাবার পাশে বসেই আমাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।
বৃষ্টির তোড় এখনো থামেনি৷ বড় মামাকে ফোন দিয়ে বলেছি বন্ধুর বাসায় থাকবো। যদিও সময়টা খারাপ কাটছে না। মুজতবা আলম আর চাচী দুজনই বন্ধুসুলভ আচরণ করছেন।

রাত বাড়লে চাচা আমাকে গেস্ট রুমে এনে ঘুমাতে বললেন। আমি ওনাকে বিদায় দিয়ে দরজা আটকিয়ে দিয়ে বিছানায় এসে বসলাম। রাহার রুম আমার রুমের পাশেই৷ কিন্তু আমি কোনো অভদ্রতা করবো না। রাহা যেন আমাকে বিশ্বস্ত ছেলে মত বিশ্বাস করতে পারে। কখনো যেন খারাপ না ভাবে৷

বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি৷ পছন্দের মানুষকে পাশের রুমে রেখে কিছুতেই ঘুম আসছে না৷ এমন সময় আমার দরজায় কেউ শব্দ করলো৷ আমি চমকে উঠলাম আমার দরজায় আবার কে এত রাতে!
মনে প্রশ্ন নিয়ে এসে দরজা খুলে দিলাম৷ অন্ধকারে বোঝা যাচ্ছে না কে এসেছে। সে আমার ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। আমি অবাক হয়ে ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে দেখি রাশা! একি! এই মেয়ে এত রাতে আমার রুমে কেন?

পর্ব ৫

রাশা এত রাতে আমার রুমে কেন! আমি তো অবাক!
রাশা ফিসফিস করে বলল- বিছানায় যান।
আমি অপ্রকৃতস্থের মত বিছানায় এসে বসলাম। হা করে তাকিয়ে রইলাম কি ঘটতে চলেছে জানার জন্য। রুমও পুরোপুরি অন্ধকার। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেছি আমি। যদি চাচা এ ঘরে আবার আসেন! কি একটা কেলেংকারী হয়ে যাবে।

হঠাৎ আমার হাতের উপর কোমল একটা হাতের স্পর্শ পেলাম। আমি শিউরে উঠলাম৷ বুঝতে পারলাম এটা রাশার হাত। মেয়েদের হাত এত কোমল হয় আমার জানা ছিলো না। সেই কোমল হাত আমার হাতের আঙুলের ফাকে আঙুল ঢুকিয়ে দিলো। এরপর হেচকা টান দিয়ে আমাকে কাছে টানল।
আমি আরো ভয়েই জড়োসড়ো। রাশা আমার হাত নিয়ে ওর পেটে রেখে আলতো চাপ দিচ্ছিল। আমি ওর পেটের কোমল স্পর্শ হাত দিয়ে অনুভব করে শিহরিত হয়ে উঠলাম। মেয়েদের শরীর এত সফট হয়! জানতাম না তো। আমার শুধু গায়ের লোম দাড়িয়ে যাচ্ছে।

রাশা আমাকে টেনে নিলো নিজের বুকের উপর। তারপর ও শুয়ে পড়লো৷ আমাকে ওর বুকের উপর টেনে নিয়ে বলল- তুমি এত হট কেন! সোওও কিউট। দেখলেই আদর করতে মন চায়।
আমার গা শিরশির করছে। এই বয়সে এখনো কারো ছোয়া পাইনি আমি। কিংবা নিজেও কাউকে কখনো টাচ করিনি। আজকেই প্রথম কেউ আমাকে কাছে টেনে নিলো বলে আমার ভেতর একটা অন্যরকম কিছু কাজ করছে। কেমন কেমন লাগতেছে। মনে হচ্ছে সবকিছু স্বপ্নে ঘটে যাচ্ছে।

রাশা আমার নিজের উপর টেনে নিয়ে দুহাতে আমার গাল স্পর্শ করে আমার মুখ নিজের দিকে টানছে। এমন সময় বাজ পড়ার শব্দ হলো।
আমার হুশ ফিরে এলো৷ ছি ছি এটা রাশা কি করছে। আমাকে জোর করে নিজের কাছে টানছে কেন! আমি তো খারাপ হয়ে যেতে পারিনা। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করলে রাহাকে ঠকানো হবে। আমি তো রাহাকে ভালোবাসি। আর রাহাকেই চাই৷ আমি রাহাকে সারাজীবনের মত পাওয়ার স্বপ্ন দেখছি যেন ওকে বিয়ে করতে পারি৷ কিন্তু রাশা যদি কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। এই মেয়ে এসব কি করছে! আমাকে ঘোরের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল এখনই।
তারাতারি উঠে দাড়ালাম। রাশাকে এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বললাম – তুমিহ! এত রাতে আমার ঘরে কেন এসেছো?

রাশা আবার আমাকে জাপটে ধরে কাছে টানতে টানতে বলল- জানোনা কেন টানছি? আর ইউ বোকা ছেলে? হা হা হা। কাছে আসো না…
আমি রাশাকে আবার ঝটকা দিয়ে ফেলে দিলাম। এটা কিছুতেই হতে পারে না, কোনোভাবেই না।
রাশা আবার আমাকে জোর পূর্বক কাছে টানার চেষ্টা করলো। আমি রেগে বললাম – এসব কি করছো?

রাশা বলল- কাম অন নীলাভ। তোমাকে আমার অনেক ভালো লাগে। আই এম ইন লাভ উইথ ইউ। প্রথম দেখেই আমি তোমার প্রেমে পড়েছি সেটা বোঝোনি? তোমাকে কাছে পেয়েও দূরে থাকবো এটা কি করে হয় বলো?
আমি অবাক হলাম। সেই সাথে আতংকিত ও৷ রাশা আমাকে টানতে টানতে বলল- এসো তো৷ এত সংকোচ কেন? আমরা একে অপরকে ভালোবাসবো, সোহাগ করবো৷ দূরে থাকছো কেন?আমার পুরো শরীরে তখন বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে। এটা কিছুতেই হতে পারেনা। এই মেয়ের নিশ্চয় কোনো সমস্যা আছে। দেখে ভেবেছিলাম মেয়েটা অন্তত রাহার মত ভালো হবে না কিন্তু এতটা নিচে নামতে পারে সেটা আমার জানা ছিলো না। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম রাশার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার৷ কিন্তু রাশা রীতিমতো আমার কোলে উঠে বসলো৷ দুইহাতে আমার মুখ ধরে জোর পূর্বক চুমু খাওয়ার চেষ্টা করলো৷ একইসাথে নিজের জামাকাপড় খুলে ফেলছিলো আর আমার হাত নিজের শরীরে বুলিয়ে আমাকে উত্তেজিত করে তুলছিলো৷

শেষ পর্যন্ত গতি না দেখে বললাম, আচ্ছা আমিই করতেছি। একটু সময় দাও।
রাশা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল, উম বেবি। ইউ আর সো কিউট। কাম অন বেবি, কাম অন।
রাশা সম্ভবত নেশা টেশা কিছু করেছে। এভাবে কথা বলছে কেন! আমি বললাম, তোমার মুখ কই?
রাশা আমার হাত টেনে নিয়ে নিজের মুখের উপর ছোঁয়ালো। আমি গায়ের জোরে কষে একটা থাপ্পড় লাগালাম রাশার গালে। থাপ্পড় খেয়ে অনেক্ষণ কোনো শব্দ নেই রাশার।
আমি নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছি। রাশা রাগে ফুসতে ফুসতে বলল- হাও ডেয়ার ইউ? তুমি আমার গায়ে হাত তুললে?

  • হাত তো তুমিই তুলে দিচ্ছিলে। আমি সেটা শুধরে দিলাম।
    রাশা রেগে আগুন হয়ে বলল- ইউ আর…
    এরপর রাশা কাছে এসে দুহাতে আমার গলা চেপে ধরলো। বলল- আই কিল ইউ..

আমি দুহাতে ওকে ছাড়িয়ে আবার একটা থাপ্পড় লাগালাম। আমার ভীষণ রাগ উঠে গেছে। রাগে গজরাতে গজরাতে বললাম – এক্ষুণি যদি ঘর থেকে বেরিয়ে না যাও তাহলে তোমার বাবাকে গিয়ে সব বলে দেবো। বলবো আপনার মেয়ে একটা বেহায়া, নোংরা, নির্লজ্জ। একটা ছেলেকে জোর করে নিজের শরীর দিয়ে দিতে মাঝরাতে ঘরে ঢোকে।
রাশা রেগে বলল, আমিই বাবাকে বলবো তুমি আমাকে মুখ চেপে ধরে নিয়ে এসেছো। বাবা তোমাকে চেনে না, সে আমার কথাই বিশ্বাস করবে।
আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। সাংঘাতিক মেয়ে তো এটা।

আমি বললাম – বেশি কোনোকিছুই ভালো না বেয়াদব মেয়ে। নিজের লিমিটের মধ্যেই থাকো। নয়তো খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।

  • তুমি আমাকে চড় মারার কে?
    আমি চেঁচিয়ে বললাম, তুমি আমাকে স্পর্শ করার কে? এম আই ইয়োর লাভার? বয়ফ্রেন্ড? হাজব্যান্ড? আমি তোমার কেউ না৷ নির্লজ্জের মত আমার ঘরে ঢুকে আবার আমাকেই শাসাচ্ছো? তোমার নোংরামি আমি থামাতে পারছিলাম না সেজন্য চড় মেরেছি। ওকে?

রাশা আর কথা বাড়াল না৷ ফোস করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আমারও খুব রাগ উঠছে। মুজতবা আলমকে এখনই সব বলে দিবো। ওই মেয়ে বলে দিলে হিতের বিপরীত হবে। তার আগেই আমি বলে দিবো৷
ফোনেত টর্চ জ্বালিয়ে রুম থেকে বের হলাম। বের হয়ে এসেই দেখি দরজার সামনে রাহা দাড়িয়ে। ওর মুখোমুখি পড়ে আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।
রাহা নিজেই আগে শুরু করলো- থ্যাংকস। আপনাদের কথাগুলো আমি শুনে ফেলেছি। রাশাকে থাপ্পড় মেরে একটা উচিত কাজ করেছেন আপনি।

  • অন্য যেকোনো মেয়ে হলেও এটা আমি মানতে পারতাম না।
  • সব পুরুষ তো আপনার মত হবেনা। সুযোগ পেলে বাঘের মত লাফিয়ে পড়বে।
  • কে কিরকম আমি জানিনা। আমি ওরকম কখনোই হতে পারবো না।
  • ফোনের টর্চটা নেভান তারপর কথা বলি৷ বাবা দেখলে অন্যকিছু ভাব্বে।
  • আপনার বাবার কাছেই যাচ্ছি ঘটনাটা বলার জন্য।

রাহা আমার হাত টেনে ধরে বলল- না প্লিন। ভুলেও এই কাজ করবেন না।

  • যদি রাশা বলে দেয়?
  • রাশা কিছু বলবে না। আর বললেও আমি সত্যিটা সাক্ষী দেবো। কিন্তু আপনি প্লিজ বাবার কাছে যাবেন না। বাবার বয়স হয়েছে। সে আপনার কথা শুনলে নির্ঘাত হার্ট এটাক করবে৷ একজন বাবার কাছে এরচেয়ে অসম্মানের কিছু হতে পারেনা।
    আমি রাহার দিকে তাকালাম। সত্যিই তো। এভাবে তো ভেবে দেখিনি।
    রাহা বলল- রুমে আসুন। রুমে গিয়ে কথা বলি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *