পর্ব ৫
বিকেলে খুব পরিপাটি হয়ে বর্ষার সাথে দেখা করতে চলে এলাম।
ও এখনো আসেনি। আমার বুকটা দুরুদুরু কাঁপছে। জানিনা এটা ঠিক হচ্ছে কিনা। প্রেম সবার জীবনেই আসে, সবাই প্রেমে পড়ে। সেটা যেকারো সাথেই হতে পারে। তবুও মনটা কেমন কেমন করছে।
একটু বাদেই বর্ষাকে দেখতে পেলাম। অবাক হয়ে দেখলাম ও শাড়ি পড়ে এসেছে! আমার বিস্ময়ের সীমা রইলো না। এই মেয়েটা হঠাৎ যেন অনেক বড় হয়ে গেছে! ছোট্ট মেয়েটাকেও শাড়িতে কত অপূর্ব দেখাচ্ছে!
বর্ষা এসে আমার পাশে বসে পড়লো। আমি অনেক্ষণ তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। কিভাবে যেন চোখ চলে যাচ্ছে। আকাশী রঙের শাড়ি, গোলাপি ব্লাউজ, কপালে কালো টিপ! কি অপূর্ব ই না লাগছে ওকে!
বর্ষা বলল,এভাবে কি দেখছেন?
- তুমি না অনেক বড় হয়ে গেছো।
- আমি কি আগে খুব ছোট ছিলাম?
- না,তবে ছিলে অনেক ছোট।
- আহারে! তাহলে আপনি এই ছোট মানুষ টার প্রেমে কেন পড়লেন?
- কে পড়েছে? আমি?
- তাহলে কি আমি?
- হয়তবা।
- হয়তবা আপনি ও….
এরপর আমার হাসি পেলো। মুচকি হাসলাম। বর্ষা আসলেই অনেক বড় হয়ে গেছে। বড়দের মত করে কথা বলছে। কিন্তু আমি বড়দের মত করে কথা বলতে পারিনা। জানিনা কিভাবে প্রেমের সূচনা হয়,কিভাবে কি বলতে হয়। এদিক থেকে বর্ষা আমার টিচার।
বর্ষা বলল, এখানে কেন এসেছেন?
- তুমি আসতে বলেছো বলে।
- আমি কেন বলেছি?
- সেটা তোমার জানার কথা।
- উফফ আপনি না… অসহ্য একটা।
- তবুও আসতে বলেছ। তাইনা?
- আপনার মত মানুষের প্রেমে পড়াই ভূল হয়েছে।
- কে পড়েছে? তুমি নাকি?
- না,আমার মাথা।
- তাহলে কি উপায়? মাথাটা কেটে ফেলবে?
বর্ষা প্রচণ্ড রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি এমন কেন? একটু রোমান্টিক হতে পারেন না? আমি বুঝেছি। আমি দূরে চলে গেলে আপনি রোমান্টিক হবেন। - দূরে বলতে? গ্রামের বাড়ি যাবে?
- এবার কিন্তু বেশী বেশী হয়ে যাচ্ছে।
- কি হয়ে যাচ্ছে?
- আপনি কি কিছুই বুঝেন না?
- যা যা বুঝার তা তা তো ঠিকই বুঝেছি।
- আপনি আসলে…. আপনার সাথে কেউ থাকতে পারবে না।কেউনা…
- আমার সাথে আমার মা,বাবা,ভাই,বোন,দাদি সবাই থাকে..
বর্ষা রেগে উঠে দাঁড়াল। প্রচণ্ড রাগ ওর চোখে মুখে। রেগে উঠে হাঁটতে শুরু করলো। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। বর্ষা চলে গেলো অনেক দূর হেঁটে হেঁটে… মুহুর্তেই আড়াল হয়ে গেলো..
আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।
অনেক্ষণ কোনো কিছু বুঝতে পারলাম না। মনটা খুব খারাপ লাগছে, বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। এটা কি হলো! বর্ষা এভাবে চলে গেলো! আমি কি আসলেই খুব আনরোমান্টিক? খুবই বোরিং একটা মানুষ? হয়ত সেটাই। নয়ত বর্ষা এভাবে চলে যেতো না আমাকে ছেড়ে। কি যে একটা মুর্খামি করলাম আজ! সবসময় আমি একটা বোকা হাদারাম। আমাকে দিয়ে কিচ্ছুই হবেনা,কিচ্ছুনা।
উঠে দাঁড়ালাম। ভালো লাগছে না। হেঁটে হেঁটে বাইরে চলে আসলাম। আজকের মত এমন অপমানিত কখনোই হইনি বোধহয়। অবশ্য এটা বর্ষার জন্যও অনেক অপমানের ছিলো। ও আমার কাছ থেকে যা আশা করে, তা যদি না পায় ওর তো খারাপ লাগবেই। তবুও অনেক বার বলেছে এভাবে। কিন্তু আমি কখনোই ওর মত হতে পারিনি। হয়ত পারবো ও না! তাহলে কি বর্ষা ছেড়ে চলে যাবে আমাকে? জীবনের প্রথম ভালোলাগা এভাবে…
ধেৎ, ভালোই লাগেনা। নিজের প্রতি প্রচণ্ড রাগ নিয়েই বাসায় চলে এলাম। বর্ষাকে ফোন দেয়ার ও সাহস পাচ্ছিনা। ফোন দিয়ে বলবো ই বা কি? আমার আবার ফোন দিলে বলার মত কিছুই খুঁজে পাইনা। তাহলে ফোন না দেয়াই ভালো হবে।
এসব ভেবে আনমনা হয়ে পড়ে রইলাম অনেক্ষণ। আজ রাতে ঘুমও এলোনা। বর্ষা ফোন ও দিলোনা!
ভোরবেলা ঘুম এলো একটু। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে বাইরে এসে দাঁত ব্রাশ করলাম। মনটা এখনো অনেক খারাপ। কি করা উচিৎ ভাবছি!
সারাদিন খুব মন খারাপ করে থাকলাম। এক বন্ধু আমাকে পরামর্শ দিলো, তাহসানের নাটক দ্যাখ।
- দেখলে কি আমি তাহসানের মত হয়ে যাবো?
- না,কিছুটা উন্নতি হবে। প্রেমের নাটক দ্যাখ বেশী বেশী। কাজে দিবে।
বুদ্ধিটা নেহাত খারাপ নয়। কিছু প্রেমের নাটক ডাউনলোড করে নিলাম। তারপর বাসায় ফিরে দুটা নাটক দেখেও ফেললাম।
সন্ধ্যায় পড়াতে গেলাম।
বর্ষা আমাকে দেখেও না দেখার ভান করলো। ওর আম্মু গিয়ে বলল, তোর টিচার এসেছে।
শোনার পর বর্ষা টিভি বন্ধ করে দিয়ে এসে নিজের রুমে বসলো। আমার দিকে একবার তাকালো ও না। আমি ও কিছু বললাম না। এখন কিছু বলা যাবেনা। কাজে করে দেখাতে হবে আজ।
বর্ষার মুখটা মলিন। ও বই খুলে বইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি বইটা টেনে নিয়ে একটা পড়া বের করে দিয়ে বললাম, এটা দেখো। বুঝিয়ে দেই।
- লাগবে না।
বইটা টেনে নিলো বর্ষা। আমি আরো একবার চেষ্টা করলাম কিন্তু ও পড়তে চাইছে না। মনটা অনেক খারাপ করে আছে। একইসাথে রেগেও আছে খুব। এভাবে অনেক্ষণ কেটে যাওয়ার পর আমি কয়েকটা অংক চিহ্নিত করে দিয়ে বললাম, এগুলা করে দাও।
বর্ষা অংক করতে লাগলো। নিচু হয়ে অংক করার সময় ওর মুখের উপর কিছু চুল পড়লো এসে। আজ একটা নাটকে এরকম সিন দেখেছি। নায়িকার মুখের উপর চুল পড়ার পর নায়ক সেটা হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। সেটা প্রয়োগ করবো কিনা ভাবছি। ভাবতে ভাবতে সত্যিই আস্তে করে একটু এগিয়ে গিয়ে ওর মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে দিলাম। বর্ষা চোখ বন্ধ করে ফেললো। যাক, নাটকের আইডিয়া কাজে লেগেছে। বন্ধুর বুদ্ধি সার্থক। এবার কিছু প্রেমের গল্প ও পড়তে হবে মনেহচ্ছে।
বর্ষা অনেক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকার পর চোখ খুললো। আমার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। ও লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো। আমি বেশ বুঝতে পারছি ও অনেক অবাক হয়ে গেছে!
পর্ব ৬
বর্ষার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
আমি আস্তে করে ওর পায়ের উপর পা রাখলাম। মেয়েটা শিউরে উঠলো। সেইসাথে ওর মুখের লাল আভাও গাড় হয়ে উঠলো। কিছুতেই আর ওর রাগ থাকবে না আমি জানি।
কিন্তু একি আমি এতটা রোমান্টিক কিভাবে হলাম বুঝতে পারছি না। নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছি নিজের রোমান্টিকতা দেখে! বর্ষা আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করলো।
আমি আলতো করে ওর হাতটা ধরে আমার হাতের মুঠোয় ওর হাত নিলাম। তারপর বললাম, বর্ষা…
- হুম
- সরি বর্ষা..
বর্ষার চোখ ছলছল করে উঠলো। আমি আলতো করে ওর হাতে হাত বুলাতে বুলাতে বললাম, আমি সরি আসলে বুঝতে পারিনি তুমি এতটা কষ্ট পাবা।
বর্ষা বারবার শিহরিত হচ্ছে। ও বলল, কিন্তু এটা কি ঠিক হইছিল? আপনি বলুন।
- উহু,আমাকে আর আপনি বলবানা। তুমি করে বলবা।
বর্ষার বিস্ময়ের সীমা নেই আর। কিভাবে এটা সম্ভব হলো? শ্রাবণ তো অনেক আনরোমান্টিক ছিল। তাহলে কিভাবে একদিনেই এই পরিবর্তন? সত্যি ই মানুষ আঘাত পেলে বুঝতে শেখে। তার আগে কিছু শেখেনা।
বর্ষা একটু মুখ তুলে তাকিয়ে বলল,আপনি কিন্তু অনেক রোমান্টিক হয়ে গেছেন। - হয়ত বা।
- কিভাবে সম্ভব হলো শুনি? ছ্যাকা খেয়ে?
- হ্যা,আসলে সারারাত ঘুম হয়নি। আমি শুধু ভেবেছি আমার সমস্যাটা কোথায়? আমার কোন দোষের কারণে তুমি এত কষ্ট পাচ্ছো? আমি কি চাইলেই তোমাকে একটু খুশি করতে পারিনা?
বর্ষার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। আমি পানি দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। ওর চোখ মুছে দিলাম হাত দিয়ে। বর্ষা আমার হাতটা নিজের গালের সাথে চেপে ধরে ফেললো। আমি হাসলাম। এভাবে কেটে গেলো অনেকটা সময়। বর্ষা হাত সরাচ্ছে না। ওর গাল অনেক সফট! আমি মুগ্ধ!
আমি বললাম, আচ্ছা বর্ষা একটা কথা বলবা? - হ্যা বলুন।
- তোমার গাল এত নরম কেন?
বর্ষা লজ্জা পেয়ে বলল,কি যে বলেন না! - হ্যা, আসলেই অনেক নরল। ছুঁয়ে দেখেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে!
বর্ষা একেবারে লজ্জায় লাল নীল হতে লাগলো। ও মাথা তুলতেই পারছে না। আমি কি বলবো না বুঝতে পারলাম না। বর্ষা সত্যিই দেখতে অনেক সুন্দর। আমি এতদিন খেয়াল করিনি সেটা। আজ বোধহয় ওর প্রেমে পড়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারছি। - আপনি খুব দুষ্টু হয়ে গেছেন কিন্তু।
- বারে, হাবা হলেও দোশ আবার দুষ্টু হলেও দোষ?
- উহু,আমার লজ্জা লাগছে।
- একটু লজ্জা লাগুক না। ক্ষতি কি তাতে? মেয়েদের লজ্জা না পেলে মানায় না। লজ্জা পেতে দেখলে এতবেশি মায়াবী লাগে যা বলে বুঝানো সম্ভব না।
- তাই বুঝি!
- হ্যা..
- আপনি খুব রোমান্টিক হয়ে গেছেন তো।
- হ্যা,
-বুঝেছি আপনি এতদিন ঢং করতেন। আমাকে বোঝার জন্য আমার সাথে ফাজলামি করতেন তাইনা? - আরে না না। আমি একদম ঢং করিনি। বিশ্বাস করো তুমি।
- আর মিথ্যে বলতে হবেনা। আমি বুঝে গেছি আপনি এতদিন ঢং করতেন।
- আরে না…
- হয়েছে,এবার বলুন তো শাড়িতে আমাকে কেমন লাগছিলো?
- অসম্ভব সুন্দর লাগছিল বর্ষা। মনে হচ্ছিল হঠাৎ করেই তুমি খুব বড় হয়ে গেছ। বর্ষা আমাকে যাদু টোনা করেছ নাকি তুমি?
- কই না তো। যাদু টোনা কেন করবো? আপনার কি তাই মনেহচ্ছে?
- কেন যেন মনেহচ্ছে। গত বারো বছর ধরে আমি টিউশনি করাই। কোনোদিনো কোনো ছাত্রীর সাথে এমন সম্পর্ক তো দূরে থাক এভাবে কথাই বলার সাহস পাইনি। আর ভার্সিটি লাইফেও কক্ষণো প্রেম করিনি আমি। কারো প্রেমে পড়িও নি।
বর্ষা শব্দ করে হেসে উঠলো। তারপর বলল,ঢপ মারছেন নাকি? এত বছরেও আপনি প্রেমে পড়েন নি কারো? - না রে পাগলি।
- আমার ও না?
আমি চমকে তাকালাম বর্ষার দিকে। হ্যা, ওর প্রেমে তো আমি পড়েছি। কতবার পড়েছি তা নিজেও জানিনা।এই প্রেমকে অবহেলা বা তুচ্ছ করার সাধ্যও আমার নেই। আমি অজান্তেই ওর প্রেমে পড়েছি। নয়ত গত রাতে এত কষ্ট আমার হতোনা।
বর্ষা বলল,এই যে স্যার। শুধু প্রেম করলে কি হবে? পড়ান আমাকে।
আমি চমকে উঠলাম। বর্ষা হা হা করে হাসতে লাগলো। অনেক্ষণ হাসার পর আমাকে ভ্রু নাচিয়ে বলল, ভয় পেয়েছেন?
- একটু তো পেয়েছি ই।
- হু,পড়ান এখন। আর কাল কি ফ্রি আছেন আপনি?
- হ্যা আছি তো। কেন?
- আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন এক জায়গায়?
- হ্যা যাবো।
- কোথায় যাবো জিজ্ঞাস করলেন না?
- কোথায়?
- আপনার মাথায়।
বলেই আবারো হাসি শুরু করে দিলো। আমি বোকার মত চেয়ে রইলাম। ও অনেক্ষণ হাসার পর আমার দিকে তাকিয়ে আবারো ভ্রু নাচাল।আমি বললাম, হাসছো কেন?
- প্রেমে পড়লে মানুষ খুব হাসে।তাই হাসি।
- তাই নাকি? প্রেমে পড়লে মানুষ খুব হাসে? আমি কেন হাসছি না?
- কাতুকুতু দেই?
কথাটা বলেই বর্ষা হাসিতে ঢলে পড়লো। আমি চিন্তা করতে লাগলাম এই মেয়েটা এত হাসে কেন! সারাক্ষণ শুধু হাসি আর হাসি। অথচ আজ যখন আসলাম, তখন মুখটা পেচার মত করে রেখেছিলো।
বর্ষাকে কিছুক্ষণ অংক বুঝিয়ে দিলাম। এর ফাকে কখন যে ওর হাতটা ধরে ফেলেছিলাম নিজেও টের পাইনি। ওর হাত নিয়ে খেলছিলাম, আঙুলের ফাকে আঙুল রাখছিলাম। কিভাবে যেন হয়ে গেছে সব! আমি জানি না। আর রাতারাতি এরকম রোমান্টিক ভাবনা কোথ থেকে এলো তাও জানিনা। বোধহয় প্রেমে পড়ার ফলে। প্রেম এত টানে কেন মানুষ কে! প্রেমে পড়লে সবাই কেমন যেন হয়ে যায়! সবকিছু ভুলে যায়,মান সম্মানের ভয়টাও থাকেনা। প্রেম স্বর্গ হতে এসে আরেক সুখ স্বর্গের রচনা করে দেয়!!
আমি বললাম, বর্ষা কাল কখন আসতে বলো?
- ফোনে জানাবো। আপনি নতুন শার্ট টাই পড়ে আসবেন।
- তুমি কিন্তু সেদিনের শাড়ি টাই পড়বা ওকে?
- আচ্ছা ঠিকাছে পড়বো। আপনার কি পছন্দ হয়েছে শার্ট টা?
- খুব পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা বর্ষা, তোমার কাছে কি কোনো রোমান্টিক উপন্যাস আছে?
বর্ষা হেসে বলল,পড়বেন? - হ্যা। আছে? থাকলে দিও তো।
- আছে, আছে। দাঁড়ান এনে দিচ্ছি।
বর্ষা উঠে গিয়ে একটা বই এনে আমাকে দিলো। আমি সেটা দেখে টেবিলের উপর রেখে দিলাম। আন্টি এসে ঘরে ঢুকলেন এমন সময়। আমি ওনাকে সালাম দিলাম।
আন্টি বললেন, বর্ষা পড়াশুনা কেমন করে বাবা?
- খুবই ভালো। আমার তো ওকে ই টিচার মনেহয়। বোধহয় আমিই ওর কাছে পড়তে এসেছি এরকম লাগে।
আন্টি হেসে বললেন, মেয়েটাকে ভালো করে পড়াও বাবা।
আমি মনেমনে বললাম, সে তো আমাকে পড়ায় ভালো মত। প্রেমে পড়ায় রোজ রোজ। কিন্তু মুখে বললাম, অবশ্যই আন্টি। আমার চেষ্টা থাকবে সবসময়। আপনি দুয়া করবেন।
আন্টি আরো দু একটা কথা বলে চলে গেলেন। বর্ষা বলল,টিচার মানুষ কে কত সম্মান করে সবাই! বাবাহ! আর আমি তার সাথে ভালোবাসার কথা বলি! বলতে বলতে বর্ষা উঠে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আসলো। তারপর এগিয়ে এসে দুহাতে আমার গলা পেঁচিয়ে ধরলো। সেরেছে রে, এবার আবার কি যে করবে! ছাত্রী তো বড়ই বিপদজনক!
পর্ব ৭
আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো। বর্ষার চোখে চোখ রেখে নিজেই কোনো এক অতল সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছি!
বর্ষা আমার গলা পেঁচিয়ে ধরে বলল, “আমাকে কি ভালোবাসা যায়না?”
- “ভা ভা ভাল বাসি তো।”
- “তোতলাচ্ছেন কেন?”
- “এভাবে ধরেছো তাই।”
- “তোতত তোত তোতলাচ্ছি কই?”
- “এইতো তোতলাচ্ছেন। এটাও তোতলাতে তোতলাতে বললেন।”
- “আসলে আমি খেই হারিয়ে ফেলেছি। তোমাকে দেখে তোমার আচরণ দেখে অবাক বিস্ময়ে বাক্য হারিয়ে ফেলেছি। শব্দ হারিয়ে ফেলেছি। ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।”
-“আর কিছু হারান নি?” - “কিজানি। হারানোর মত আর কি আছে আমার?”
- “হৃদয়, মন। হারান নি?”
- “হারিয়েছি তো। আমি সবই হারিয়েছি তোমাতে।”
বর্ষা হেসে বলল, “একটু ধরুন না আমাকে।” - “মা মা মা মানে!”
- “আবারো তোতলাচ্ছেন? আমাকে ধরুন। জরাই ধরুন।”
- “উউউউ কেন?”
- “আমাকে ভালোবাসেন তো অন্য মেয়েকে জরাই ধরবেন?” ধরুন বলছি, ধরুন।”
আমি বর্ষাকে জড়িয়ে ধরলাম। দুহাতে শক্ত করে ধরে ওকে বুকের কাছে টেনে নিলাম। আহ! কি যে শান্তি লাগছে! ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। কেমন যেন বুকটা ছটফট করছে। ছটফটানি বাড়ছে। ধুকপুকানি বাড়ছে। আজ এ কি হচ্ছে আমার! বর্ষা এ কোন খেলায় মেতেছে আমায় নিয়ে!
বর্ষা বলল, আহ! কি শান্তি লাগছে। তোমার ও লাগছে? - হ্যা লাগছে। খুউউউউব শান্তি লাগছে।
- এভাবেই আমাকে সবসময় বুকে ধরে রাখবেন তো?
- আমরা কোনো নিয়ম অমান্য করে একে অপরকে ভালোবেসেছি তাইনা বর্ষা?
- জানিনা।।ভালবাসা কোনো নিয়ম মেনে হয়না। ভালবাসা তো ভালবাসা ই।
অনেক্ষণ এভাবে দুজন ঘোরের মধ্যে রইলাম। বর্ষা আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, আমার তো তোমাকে ছেড়ে দিতেই ইচ্ছে করছে না। তোমাকে তো যেতেই হবে।
- হ্যা যাবো তো। আমিতো তোমার ই আছি,থাকবো। তুমি আমাকে বদলে দিয়েছ বর্ষা।
- হ্যা হয়ত বা। এখন যাও তবে। কাল কিন্তু দেখা হচ্ছে।
- আচ্ছা। পড়াশুনা করো ভালো ভাবে।
- আর তুমি সাবধানে যেও প্লিজ। তুমি তো আত্মভোলা মানুষ।
- আচ্ছা বর্ষা। আসি তাহলে।
আমি বেড়িয়ে আসলাম। বর্ষা বাড়ির বেলকুনি থেকে আমার দিকে চেয়ে আমাকে বিদায় দিলো। আমি ওকে হাসিমুখে বিদায় দিয়ে চলে এলাম।
বাসায় ফেরার পর ও ফোন দিলো আমাকে। রিসিভ করে বললাম, হ্যালো।
- বাসায়?
- হ্যা।
- পথে অসুবিধা হয়নি তো?
- না গো।
- খেয়েছো?
- এখন খাবো। তুমি?
- তুমি খাও তারপর।
- আচ্ছা। আগের আমলের নারীদের মত বলছ যে! বেশ ভালো।
বর্ষা হাসল। আমি বুঝতে পারছি গভীর প্রেমে মেতেছি দুজনে! আমি ভাত খেয়ে এসে কিছু নাটক দেখতে বসলাম। সব রোমান্টিক নাটক। মিজানুর রহমান আরিয়ানের নাটক গুলা দারুণ মিষ্টি প্রেমের! দেখতে দেখতে মনেহচ্ছিল আমিও এমন বর্ষার প্রেমিক হয়ে গেছি। শিখে গেছি অনেক কিছু। প্রেমের স্পর্শ মানুষ কে কতকিছু ই যে শেখায়!
রাতে অনেক্ষণ কথা বললাম ফোনে। তারপর দুজনে ঘুমাতে গেলাম। যদিও ফোন রাখতে ইচ্ছে করছিল না। তবুও রাখতে হলো। বেশী রাত জাগলে মেয়েটার শরীর খারাপ করবে আবার।
সকালে আবারো বর্ষার ফোন পেয়ে ঘুম ভাংলো। আমি ধরে হ্যালো বলতেই ও বলল, এইযে জনাব।
- হ্যা বলো প্রিয়তমা।
- ইস! কি আদরের ডাক! আমি আপনার ছাত্রী।
- সালাম দেবে কি ছাত্রীর মা?
- ভূলে গেছিলাম।
- মাফ করা হবেনা। এর জন্য জরিমানা হবে।
- আচ্ছা হোক জরিমানা। আপনি এবার উঠুন তো। আজ যে আপনার ম্যাডামের সাথে দেখা করার কথা সেটা কি ভুলে গেছেন?
- উম, উঠবো এখনি।
- উঠুন উঠুন তাড়াতাড়ি। নাস্তা করে রেডি হয়ে আসুন। ম্যাডাম রেডি হয়ে বসে আছেন।
- আচ্ছা ম্যাম। তাড়াতাড়ি আসছি।
ফোন রেখে রেডি হলাম। মনটা অনেক ফুরফুরে। প্রেমে পড়লে সবার ই মন ফুরফুরে হয়ে যায়। ভালো লাগে জগতের সবকিছু ই। রঙিন লাগে সবই।
বের হয়ে বর্ষার জন্য অপেক্ষা করছি রাস্তায়। কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম সে রিক্সায় করে আসছে। রিক্সা এসে আমার সামেন দাঁড়াল। আমি উঠে পড়লাম রিক্সায়। বর্ষা শাড়ি পড়েছে। একবার ভাল করে তাকালাম ওর দিকে। দারুণ মায়াবতী লাগছে! আমার বউয়ের মতন! ইস!
বর্ষা চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে। আমি বললাম, এই বর্ষা..
- হুম
- এত সুন্দর লাগছে কেন তোমাকে?
- সেজেছি বলে। সাজুগুজু করলে সবাইকেই সুন্দর লাগে।
- তোমাকে একটু বেশী সুন্দর লাগছে গো।
- আমাকে যে আপনি ভালোবাসেন তাই।
- আচ্ছা, আমরা এখন যাচ্ছি কোথায়?
- দিয়াবাড়ি।
- ওহ, তোমার চোখ এত মায়াবী কেন?
- আপনি তাকাবেন বলে।
- আচ্ছা আচ্ছা। দারুণ করে উত্তর দিচ্ছো তো। সবই আমার জন্য। তাহলে তোমার জন্য কি?
- আপনি।
আমি হেসে বললাম, বেশ তো। আমরা এখন প্রেমের কোন স্তরে আছি? - সূচনা স্তরে।
- আহা! লাইফে প্রথমবার প্রেমে পড়েছি তাও আবার ছাত্রীর। ছাত্রী আমায় প্রেম শেখাচ্ছে!
- এই একটা কাজেই ছাত্রী রা পটু। স্যার রা পড়া শেখায়, ছাত্রী রা স্যারদের প্রেম শেখায়।
- এটা ঠিক বলেছো।
- ছাত্রীরা স্যারের উপর অত্যধিক মাত্রায় ক্রাশ খায়। আর ছেলেরা কাদের উপর বেশী ক্রাশ খায় জানেন?
- না তো। কার উপর?
- কচি কচি বাচ্চা মেয়েদের উপর।
- হা হা হা। আমিও বোধহয় খাইছি।
- এখনো খাচ্ছেন। হাবুডুবু খাচ্ছেন এক্কেবারে।
- আর তুমি?
- আমি প্রেম গিলে খাচ্ছি। হজম করতে পারছিনা। তাই আপনাকে হাবুডুবু খাওয়াচ্ছি।
আমি হেসে উঠলাম শব্দ করে। বর্ষা দারুণ করে কথা বলে তো! ইস! কি মিষ্টি মেয়েটা!
বর্ষা আমার হাত টা ওর কোলের উপর তুলে নিয়ে আমার হাত ধরে রইলো। ভালোবাসার কথা বলতে বলতে আমরা দিয়াবাড়ি পৌছে গেলাম।
পর্ব ৮
দিয়াবাড়ি পৌছে রিক্সা থেকে নেমে দুজনে আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলাম।
বর্ষা আমার পাশেই হাটছে। কেউ কোনো কথা বলছি না। শুধু নিরবে হাটছি। হাটতে হাটতে একটা সময় ওর হাত আলতো করে আমার হাত স্পর্শ করলো। আমিও আলতো করে ওর হাত স্পর্শ করে ফেললাম। এরপর আস্তে আস্তে ওর হাত ধরে এগোতে লাগলাম। আমার আঙুল ওর আঙুল মিশে গেলো। আমি ওর আঙুলের ফাঁকে আঙুল রেখে ধরে হাটছি।
বর্ষার হাত খুবই কোমল। আজ যেন আররো নরম হয়ে উঠেছে। ধরে রাখতে খুবই ভালো লাগছে। আমি ধরে ধরে হাটতে হাটতে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম।
বর্ষা আমাকে বলল, আচ্ছা তুমি কখনো প্রেমে পড়ো নি তাইনা?
- না, তুমি পড়েছ?
- হ্যা পড়েছি। তোমার।
- সে তো আমিও পড়েছি। আর কারো প্রেমে পড়ো নি?
- হ্যা পড়েছিলাম।
- আজ সেসব কথা থাক। আমরা শুধু আজ দুজন দুজনার।
কিছুদূর এগিয়ে আসার পর বর্ষা বসতে চাইলো। আমি ওকে নিয়ে বসে পড়লাম। ফুরফুরে বাতাস এসে আমাদের যেন ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। সুখের সাগরে ভাসতে ভাসতে আমরা প্রেমের রাজ্যে হারাচ্ছি। এ রাজ্য যে কত সুখের শুধু প্রেমিক রাই জানে!
বর্ষা বলল, আমাকে একটা শাড়ি কিনে দিবা?
- শিওর। তুমি চাইছো আমি দিবো না?
- হ্যা দিবা। একটা জলপাই রঙের শাড়ি কিনে দিবা।
- আর?
- একটা ব্লাউজ, একটা টিপ।
- চুড়ি নিবা না?
- চুড়িও নিবো। লাজুক নূপুর চুড়ি।
- সেটা আবার কেমন চুড়ি?
- ওইতো যে চুড়ি গুলো খুব মায়াবী নজরকাড়া, লাজুক আবার নূপুরের মত নিক্কণ সেগুলা। কিনে দিবা?
- আচ্ছা মিষ্টি মেয়েটা। দিবো কিনে।
-এবার আমাকে প্রপোজ করো।
আমি অবাক হয়ে বললাম, প্রপোজ কিভাবে করে? - জানো না? প্রপোজ কিভাবে করে শিখিয়ে দিতে হবে?
- হ্যা বাবু। কিভাবে প্রপোজ করে আমাকে শেখাও না।
বর্ষা উঠে দাঁড়াল। আমাকে দাড়াতে বলল। আমি দাঁড়ানো মাত্র বর্ষা আমার সামনে বসে পড়ল। তারপর হাটুগেরে বসে আমার দিকে একটা কাশফুল এগিয়ে দিয়ে বলল, তোমাকে ছাড়া এ জীবন অপূর্ণ আমার। আমাকে ভালোবেসে পূর্ণ করে দাও। আমি তোমাকে অনেক বেশী ভালোবাসি। আই লাভ ইউ।
আমি হেসে বললাম, বাহ! সুন্দর বলেছো।
- কেউ আই লাভ ইউ বললে লাভিউ টু বলতে হয়। এটা কি বললা তুমি?
- আচ্ছা আই লাভ ইউ টু।
- উহু এভাবে নয়। আমার মত করে আমাকে প্রপোজ করো।
- এভাবেই করতে হবে? আমার তো লজ্জা করছে বর্ষা।
- আমি মেয়ে হয়ে বললাম আমার লজ্জা করলো না আর আপনার করছে?
- হ্যা করছে গো।
বর্ষা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,জানিনা কিচ্ছু। আপনি আমাকে এখন প্রপোজ করবেন। নয়ত সেদিনের মত রেগে চলে যাবো বলে দিলাম।
আমি বললাম, প্লিজ একাজ করোনা। আমি প্রপোজ করতেছি।
বর্ষা আমার সামনে দাঁড়ালো। আমি একটা কাশফুল ছিড়ে এনে ওর সামনে বসে পড়লাম হাটু গেরে। তারপর কাশফুল টা ওর সামনে এগিয়ে দিয়ে বললাম, এ জীবন টা তোমাকে ছাড়া অপূর্ণ। আমাকে ভালোবেসে পূর্ণ করে দাও বর্ষা। আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ সো মাচ বর্ষা…
বর্ষা হেসে ফুলটা হাতে নিলো। তারপর লাজুক ভাবে হাসতেই লাগলো।হাসতে হাসতে আমার হাত ধরে আমাকে টেনে দাড় করালো। তারপর আচমকা আমার বুকে এসে লুটিয়ে পড়লো। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, আই লাভ ইউ টু শ্রাবণ।
কথাটা যেন সুরের মত আমার কানে এসে বাজলো। আমি হারিয়ে যেতে লাগলাম অচেনা এক ভালোলাগার আবেশে। জড়িয়ে ধরলাম ওকে শক্ত করে। অনেক্ষণ ধরে রইলাম এভাবে। বর্ষা আমাকে ধরে বলল, তোমার বুকে এত শান্তি কেন শ্রাবণ?
- জানিনা রে পাগলী। খুব শান্তি তাইনা?
- হ্যা, অনেক শান্তি লাগছে। সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করতেছে। আজীবন আমাকে এভাবে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখবি তো?
- হ্যা রে পাগলী রাখবো। তোকে ছেরে কোথায় যাবো বল?
- এত সুখ কক্ষনো লাগেনি আমার। তুমি আগে বড্ড আনরোমান্টিক ছিলা শ্রাবণ।
- হ্যা। এখন কি রোমান্টিক হয়ে গেছি?
- হুম গেছো। অনেক রোমান্টিক হয়ে গেছ।তোমার স্পর্শ ও রোমান্টিক হয়ে গেছে শ্রাবণ। একটু ভালোবেসে স্পর্শ করবা আমাকে?
- ভালোবেসে স্পর্শ করেই তো আছি। আরো কিভাবে করবো?
- জানো না? একটু আলতো করে ছুঁয়ে দাও আমায়।
- কিভাবে ছোঁবো বলো?
- সেটাও বলে দিতে হবে? তুমি কি কিচ্ছু বোঝোনা শ্রাবণ?
আমি এবার আর অবুঝের মত থাকতে পারলাম না। আস্তে করে বর্ষার মুখটা দুহাতে তুলে ধরে ওর কপালে চুমু একে দিলাম মিষ্টি করে। চুমুর স্পর্শে পাগল হয়ে গেলো বর্ষা। চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। আমি ওর হাত ধরে আঙুল গুলো ছুঁয়ে দিয়ে বললাম, এবার বসি?
বর্ষা আমাকে নিয়ে বসে পড়লো। বসার পর আমার কাধে মাথা রাখলো। আমি ওকে ধরে থাকলাম শক্ত করে। বর্ষা কেমন যেন আনমনা হয়ে গেছে। চোখ মুখ লজ্জায় লাল আভা ধারণ করেছে। দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করছে, ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। কত মায়াবী একটা মুখ বর্ষার!
বর্ষা বলল, তোমার চাকরী হয়েছে?
- কথা চলছে। হয়ে যাবে আশা করি।
- তারপর কি তুমি বিয়ে করবা?
- বিয়ে তো করবো ই। বয়স অনেক হলো,বিয়ে করতে হবেনা?
- কাকে বিয়ে করবা তুমি?
- কাকে আবার? আমার বৃষ্টিরানী বর্ষাকে।
- ইস! ভালোবাসা আর বিয়ে এত তাড়াতাড়ি? একটু প্রেম করবো না?
- করবো তো বটেই। তোমার যখন ইচ্ছে হবে, তখন বিয়ে করব।
- আমার যদি আরো ৫ বছর পর বিয়ে দেয়? ততদিন কি তুমি ওয়েট করবা আমার জন্য? তোমার বয়স অনেক হয়েছে। বিয়ে তো দিয়েই দেবে তোমাকে।
- ধুর পাগলী। আমার বাসায় আমি যা বলি তাই হয়। তুমি যদি একটু তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাও তাহলে ভালো হবে। তাড়াতাড়ি বাসায় তোমার কথা জানাবো। কিন্তু আমি ভাবছি তোমার বাসায় আমাদের মেনে নিবে কিনা?
বর্ষা বলল,সেটা আমিও ভাবছি। প্রথমত তুমি আমার টিচার, আমার বয়স কম। আর আর্থিক ব্যাপার টাও তো আছে। আব্বু আম্মু খুব করে চাইবে অনেক ধনী ঘরে আমার বিয়ে দিতে। - সে চাইতেই পারে। তুমি শুধু আমাকে ভালবেসে যেও বর্ষা। তুমি ভালবাসলেই আমার আর কিচ্ছু চাইনা। আমি অনেক ভালো থাকবো। আমি তোমার জন্য সবই করতে পারবো।
বর্ষা আমার কাধে মাথা রাখলো। অনেক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইলো। আমার গলা জড়িয়ে ধরে রইলো বেশ খানিকটা সময়। আমি ওর পিঠে হাত রেখে ওকে ধরে রইলাম।
বর্ষা বলল, প্রেমের নাম বেদনা কেন বলা হয় শ্রাবণ?
- জানিনা তো। তবে প্রেমে পড়লে নাকি কষ্ট পেতে হয়?
- হ্যা পেতে হয়। তুমি কি আমাকে কষ্ট দিবা?
- আমি বেচে থাকতে দিবো না রে পাগলী। কখনোই দিবো না। তুইও দিস না আমাকে।
- দিবো না স্যার। ছাত্রী কি স্যারকে কষ্ট দিতে পারে?
আমি হাসলাম শব্দ করে। ছাত্রী রা স্যারকে প্রেমে পটায় আর কষ্ট দিতে পারেনা? সবই পারে। ছাত্রী রা খুবই সাংঘাতিক হয়। ভয়াবহ সাংঘাতিক টাইপের একটা জিনিসের নাম ছাত্রী!
বর্ষা আমাকে জোরে চেপে ধরে বলল, স্যারের সাথে প্রেম করলে মজা লাগে অবশ্য।
- কি মজা?
- এইযে কেমন কেমন লাগে। স্যার প্রেমে পড়লে স্বামী স্বামী ভাব চলে আসে স্যারের মধ্যে।
- তাই নাকি? আমার মধ্যেও এসেছে?
- তা বটে। আসবে না আবার?
- অরিজিনাল স্বামী হয়ে যাব এবার। স্বামীর অধিকার কবে দিবা?
- সে তো দিয়েই দিয়েছি স্যার
আমি হেসে বললাম, পাগলী একটা মেয়ে। পরশু তোমাকে নিয়ে শাড়ি কিনতে যাবো। আচ্ছা? - সত্যি! খুব মজা হবে গো। আমার শাড়ি খুব ভালোলাগে।
বর্ষা আমার হাত চেপে ধরে বসে রইলো শান্ত হয়ে। চেয়ে রইলো আকাশের দিকে। বেশ খানিক্ষণ পর আমাকে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
শেষ পর্ব – ৯
বর্ষার আলিঙ্গনে নিজেকে ধন্য মনেহচ্ছে। এভাবেই যাক না কেটে হাজার টা বছর। তবুও আফসোস হবেনা বোধহয়। এ জীবন বর্ষাকে নিবেদন করতে পারলেও আমার সুখ!
আমি চোখ বন্ধ করে জড়িয়ে ধরে আছি বর্ষাকে। বর্ষা আস্তে আস্তে আমাকে ছেড়ে দিলো। অনেক্ষণ চেয়ে রইলো আমার দিকে। চোখে মুখে লাল লজ্জার আভা! মায়াবতীর রূপের ছটায় কাশফুলে রাও লজ্জা পাচ্ছে যেন। আর হাজারো সাদা কাশফুলের মাঝে আমার বর্ষা নামক মায়াবতী টির রূপ যেন প্রস্ফুটিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আমি বললাম, এই যে ম্যাডাম।
বর্ষা চকিতে মুখ তুলে তাকালো- হুম বলো।
- এত লজ্জা পাবার কি আছে শুনি?
- কেন? লজ্জা নারীর ভূষণ না?
- সেজন্য বুঝি আপনি লজ্জায় একেবারে লজ্জাবতী লতিকা হয়ে যাচ্ছেন?
- হ্যক যাচ্ছি তো। এত সুখ কখনো পাইনি আমি।
আমি হেসে বর্ষাকে একটু কাছে টেনে নিয়ে ওর নাকটা টেনে ধরে বললাম, আচ্ছা মহারানী। এদিকে যে দুপুর পেড়িয়ে বিকেল হয়ে যাচ্ছে। আপনার খিদে পায়নি? লাঞ্চ করবেন না? - আর কিছুক্ষণ বসি না? একটু পরে যাই?
- আচ্ছা। এখন কি আমরা লাঞ্চে যাবো? নাকি সোজা বাসায় চলে যাবা?
বর্ষা একটু ভেবে বলল, একসাথে লাঞ্চ করবো। কখনো তো আমরা একসাথে খাওয়াদাওয়া করতে পারিনি। তুমি কিন্তু আমায় তুলে খাওয়াবা। - আমি! আমি কি তোমাকে খাওয়াতে পারব? এমনি তেই আমি তুলে খাওয়াতে পারিনা। তার উপর রেস্টুরেন্ট এ অত লোকজনের সামনে! উফফ বাবা আমি লজ্জায় মরে যাবো। পারবো না সে কাজ।
বর্ষা রেগে বলল, লজ্জা মেয়েদের ভূষণ, ছেলেদের নয় হুম। - হুম আচ্ছা। আমি তো লোকজনের সামনে গেলে পুরো মেয়েই হয়ে যাই।
বর্ষা কথাটা শুনে হাসিটে ফেটে পড়লো। খিলখিল করে হাসতে লাগলো অনেক্ষণ ধরে। হাসতে হাসতে বলল, তুমি না বড্ড দুষ্টু। - কোনো দুষ্টুমি ই তো করলাম না। কিভাবে দুষ্টু হলাম শুনি?
- বারে! আরো কি দুষ্টমি বাকি রেখেছো শুনি?
আমি আচমকা বর্ষার কোমরে হাত দিয়ে ওকে কাছে টেনে নিলাম। বর্ষা আমার বুকের উপর এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে রইলো। গভীর সুখের আবেশে ভেসে চলেছি আমরা দুজন।
এভাবে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর উঠে পড়লাম। রিক্সা নিয়ে সোজা রেস্টুরেন্ট এ চলে এলাম দুজনে। বর্ষা খাবার অর্ডার করলো। আমি চেয়ে চেয়ে দেখছি। রেস্টুরেন্ট এ এসে মেয়েটা দারুণ চঞ্চল হয়ে গেছে! মুখে কথার খই ফুটছে যেন!
খাবার চলে আসার পর বর্ষা আমাকে বলল, খাইয়ে দাও আমায়।
- উহু, লজ্জা করছে বর্ষা।
- তুমি আসলেই মেয়েলি টাইপের ছেলে।
আমি হেসে বাধ্য হয়ে ওকে খাবার তুলে খাওয়ালাম। খাওয়াতে গিয়ে অনেকটা খাবার পড়ে গেলো। তবুও বর্ষার আনন্দ আর দেখে কে? বাচ্চা মেয়েদের মতন হেসে হেসে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে খাবার খাচ্ছে। এই মেয়েটাকে কবে যে নিজের ঘরের বউ করে তুলতে পারবো! কবে যে আপন করে পাবো কে জানে! আর যে দেরী করতে তড় সইছে না আমার!
বর্ষাও আমাকে তুলে খাওয়ালো। তারপর লাজুক লাজুক স্বরে বলল, তুমি না খুব কিউট।
- এ কথাটা তো আমার তোমাকে বলার কথা।
- না, সত্যিই তুমি খুব কিউট! দেখলেই গাল টেনে দিতে ইচ্ছে করে।
- আমার ও তো তাই ইচ্ছে করে।
এরপর অনেক্ষণ কেউ কোনো কথা না বলে শুধু হাসলাম। বর্ষা শব্দ করে হাসছে। ওর হাসি দেখে সবাই হা করে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে! বর্ষার অন্যদিকে মন নেই।।ও শুধু আমাকে দেখছে আর খাচ্ছে। আমাকে মাঝেমাঝে খাইয়েও দিচ্ছে।
হঠাৎ এমন সময় একজন লোক এসে আমাদের টেবিলের পাশে দাঁড়ালেন। বর্ষার মুখ শুকিয়ে গেলো। বোধহয় বর্ষাকে চেনেন উনি। নয়ত বর্ষার মুখ এমন শুকনো হয়ে গেলো কেন?
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটি চলে গেলেন। বর্ষা ভয় ভয় চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম, কি হলো বর্ষা?
- ওই লোকটা আমার আব্বু।
- কিহ!
আমি লাফিয়ে উঠলাম। ভয়ে আমার ও গলা শুকিয়ে গেলো। প্রথম দিনেই এভাবে ধরা পড়ে যাব ভাবিনি। না জানি এরপর কি আছে কপালে! কি যে হবে আমাদের আর আমাদের সম্পর্কের!
বর্ষা বলল, আব্বু খুব রাগী শ্রাবণ। না জানি কি হবে এরপর! বাসায় আজ কুরুক্ষেত্র হয়ে যাবে গো।
- এত টেনশন করোনা। বাসায় যাও, দেখো ওনারা কি বলেন? আর আমিতো আছি ই। কোনো ঝামেলা হলে আমাকে ডাকবা। তারপর সরাসরি কথা বলবো ওনাদের সাথে। এরপর যা হবার হবে।।
- আচ্ছা শ্রাবণ। তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?
- না যাবো না।
- আব্বু যাই বলুক তুমি প্লিজ ভয় পেওনা। আমাকে আগলে রেখো, আমার পাশে থেকো প্লিজ।
- আচ্ছা থাকবো। যদি আমাদের সম্পর্ক মেনে না নেন?
- আমি বুঝিয়ে বলবো আম্মুকে। আম্মু তোমাকে অনেক পছন্দ করেন। তারপর ও মেনে না নিলে আমি পালিয়ে যাবো তোমার কাছে শ্রাবণ।
বর্ষার কথা শুনে কান্না পেলো আমার।।মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি কি ওর ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারব? জানিনা এরপর কি হবে?
বর্ষাকে নিয়ে বেড়িয়ে এলাম। ও বাসায় চলে গেলো। আমি নিজের বাসায় চলে আসলাম। সবকিছু নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। বর্ষার বাসায় কেমন রিয়েকশন হবে সেটা নিয়ে ভাবছি। আমি বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছি।এমন সময় বর্ষার নাম্বার থেকে কল আসলো।
রিসিভ করতেই বর্ষা বললো, হ্যালো শ্রাবণ।
- হ্যা বলো। বাসায় কিছু বলেছে?
- আব্বু তোমাকে দেখা করতে বলেছে।
- আর কিছু?
- আমি আমাদের সম্পর্কের কথা বাসায় জানিয়ে দিয়েছি। ভালোভাবে বুঝিয়ে বলেছি আম্মুকে।।আম্মু তো রাজী কিন্তু আব্বু কিছুতেই রাজি হচ্ছেনা। আব্বু তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে।
- আমি তাহলে আজকেই আসি?
- হ্যা, সন্ধ্যায় আসো। আব্বু বাসায় ফিরবে তখন।
- আমাকে কি রাগ দেখাবে বলে তোমার মনেহয়?
- না হয়ত। তুমি তো গ্রাজুয়েট আর আমার টিচার। রাগ দেখাবে না।
- তাহলে আমি আসছি সন্ধ্যায়। অপেক্ষা করো।
আমার বুকের ভিতর দুমদুম করে শব্দ হচ্ছে। খুব ভয় হচ্ছে বর্ষাকে নিয়ে। শেষ অব্দি ওকে পাবো তো? এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম ওর সাথে মিশতে গিয়ে। সাধারণত এ ধরণের সম্পর্ক গুলোতে এমন ই হয়। টিচার দেরকে কখনোই বাবা মা মেনে নেন না। আমাকে ও হয়ত নেবেন না। না নিলে তো বর্ষা মেয়েটা পাগল প্রায় হয়েই যাবে!
ভয় নিয়েই ওদের বাসায় চলে আসলাম। আন্টি দরজা খুলে দিলেন। আমাকে দেখে রোজ হাসতেন কিন্তু আজ হাসলেন না। গম্ভীর মুখে বললেন, বসো।
আমি সোফায় বসতে বসতে বললাম, আন্টি কেমন আছেন?
উনি গম্ভীর ভাবে বললেন, তোমরা যেমন রেখেছো।
এরপর উনি উঠে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ একা একা বসে রইলাম। বর্ষা এসে আমাকে ফিসফিস করে বলল,আব্বুর আসার সময় হয়ে গেছে। আমি কিন্তু কিচ্ছু জানিনা।।আব্বু যদি তোমাকে মেনে না নেয়, আমি কিন্তু পালাবো বলে দিলাম। আম্মুকেও তাই বলে দিয়েছি। বাকিটা ওরা জানে। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলেই বর্ষা চলে গেলো। একটু পর আংকেল আসলেন। আমাকে দেখে উনি গম্ভীর মুখে বললেন, তুমি শ্রাবণ? বর্ষার টিচার?
- জ্বি।
- টিচার থাকবে পড়ার টেবিলে, ছাত্রীর সাথে রেস্টুরেন্ট এর টেবিলে কি?
আমি মাথা নিচু করে রইলাম। কিছু বলার মত খুঁজে পাচ্ছিনা।
উনি আমার বাবা মা, ভাই বোন ও আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, তোমার আব্বু আম্মুকে আমার সাথে কথা বলতে বলো। যত দ্রুত পারো তাদেরকে আমার বাসায় আসতে বলো।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম। উনি বললেন, এত অবাক হওয়ার কি আছে? মেয়ের সুখেই আমাদের সুখ। মেয়ে তো ওর মাকে বলেছে, তোমাকে মেনে না নিলে সে বাড়ি থেকে পালাবে। এই সম্মানহানী তো বাবা আমরা মেনে নিতে পারবো না।
আমার চোখে পানি এসে গেলো কথাটা শুনে! অবাক হয়ে বললাম, আংকেল! আপনারা এত ভালো কেন! আমিতো ভেবেছিলাম বর্ষাকে হারাতে হবে।
আংকেল হেসে বললেন, মেয়েটার জন্যই সবকিছু করেছি। মেয়েটার মুখে হাসি থাকলেই হবে। তুমি তাড়াতাড়ি একটা চাকরী জোগাড় করে ফেলো।
এরপর আন্টি আমাকে নাস্তা দিয়ে গেলেন। নাস্তা খাওয়ার পর আবার বর্ষাকে পড়াতেও বললেন। আমি রীতিমত অবাক হয়ে গেছি। সাধারণত এরকম টা হয়না সবসময়। আমার ভাগ্য দেখে আমার ই হিংসে হচ্ছে!
বর্ষাকে পড়াতে আসলাম। বর্ষা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, এই যে স্যার। আমার কান্নাকাটির কেরামতি দেখেছেন?
- সেকি! কেঁদেছ তুমি?
- তাছাড়া? নয়ত এত সহজে বরফ গলে? আব্বু আম্মু আমার কষ্ট সহ্য করতে পারেন না।
- আমিতো ভেবেছিলাম বাংলা সিনেমার মতন আমাকে অপমান করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে।
বর্ষা আমাকে জোরে জাপ্টে ধরে বলল,তুমি কি সেরকম মেয়েকে ভালবেসেছ? তোমার বর্ষা তোমার জন্য সব করতে পারে। - তাই! আর কি কি পারে শুনি?
- একটুখানি প্রেম….
আমি হেসে ওকে শক্ত করে ধরে ফেললাম। আড়চোখে দরজার দিকে তাকালাম। দরজা খোলা নয়তো আবার?
- নীলাভ্র নেহাল