পর্ব ৫
নেহার শরীরের অবস্থা দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। সারাদিন ধরে মিছিল চললো। গাড়ি অবরোধ করে, প্রায় তিন ঘন্টা জ্যামে আটকে রাখা হলো সমস্ত গাড়ি৷ এতে করে যাত্রীদের নজরে আসবে ব্যাপারটা৷ সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্যাপকভাবে আন্দোলন চলছে৷ আর নেহার মনে চলছে ঝড়। নিজেকে গুছিয়ে নতুন করে একবার জন্ম নেয়ার ঝড়। বুকটা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে, একইসাথে যন্ত্রণা আবার নতুন একবার জন্ম পাবার আনন্দে৷ অয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ইচ্ছে করছে ওর৷
এদিকে দিনশেষে বাসায় ফেরার সময় অয়ন শুধু একটা কথাই ভাবছিলো- আজকে #রূপন্তী এলো না কেন? গতরাতের ব্যাপারটার কারণে মেজাজ খারাপ এখনো? অয়নের উপর রাগ করে আজকে আসেনি হয়তো। এসব ভেবে অয়নের মনটাও খারাপ হয়ে গেল৷ ও কল দিল রূপন্তীর নাম্বারে।
অয়ন যথারীতি ভেবেছিল রূপন্তী রিসিভ করে আজকেও ঝাড়ি দেবে। কিংবা গম্ভীর স্বরে বলবে, কেন ফোন করেছেন?
কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার আজকে রূপন্তী খুব নরম গলায় বলল, হ্যালো..
অয়নের হাত থেকে মোবাইল পড়ে যেতে চাইলো। কাহিনি কি? ঠিক জায়গায় ফোন করা হয়েছে তো?
রূপন্তী আবারও নরম সুরে বললো, হ্যালো। কথা বলছেন না যে?
- রূপন্তী না?
- হ্যা। বলুন।
অয়ন আবারও ফোনের স্ক্রিণে তাকালো। আসলেই রূপন্তী তো? এই প্রশ্নে রূপন্তীর রেগে মেগে আগুন হয়ে বলার কথা, তাছাড়া কে? আমার ফোনে কল দিয়ে আবার জিজ্ঞাস করা হচ্ছে রূপন্তী না? অদ্ভুত ব্যাপার। রূপন্তীর আচরণে এই বিশাল পরিবর্তন এলো কি করে?
রূপন্তী বলল, চুপ কেন ভাই? কিছু না বললে রাখুন।
অয়ন বুঝতে পারলো রূপন্তীর শরীর খারাপ। কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে আপনার?
- তেমন কিছু না। রাত থেকে জ্বর।
- জ্বর? শুধু জ্বর?
- সাথে মাথাব্যথাও আছে। আর হাত পা ঝিমঝিম করছে।
- ওহ। এজন্যই আপনি আজকে এলেন না। নেহা খুব মন খারাপ করেছে আপনি আসেননি বলে।
- নেহা মন খারাপ করেছে? আমার তো মনেহচ্ছে আপনি মন খারাপ করেছেন।
ধরা পড়া চোরের মত অয়ন বলল, আমি না। নেহা বারবার জিজ্ঞেস করছিল আপনার কথা। আপনি ওকে অনেক কিছু বুঝিয়ে বলেন, ওর ভালো লাগে। - বাহ, আপনি থাকতে আমার কথা নেহার ভালো লাগে?
- বিশ্বাস হচ্ছে না?
- না। দিন তো নেহাকে কথা বলি
- একচুয়েলি আমি হাসপাতালের বাইরে। আমি এখন রাস্তায়।
- ওহ আচ্ছা।
অয়ন বললো, দেখুন আপনি আমাকে বিশ্বাস করছেন না।
- আমি বিশ্বাস করাতে বা না করাতে কিছুই আসে যায় না। নেহার শরীর কেমন এখন?
- আগের তুলনায় অনেক ভালো। আজকে মিছিলে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। যাই হোক, আপনি ওষুধ খেয়েছেন?
- না। বাসায় ওষুধ নেই। আর আমার শরীর এতটাই খারাপ লাগছে যে নিচে নামার সাহস করিনি।
- বাসায় আর কেউ নেই?
- আমার রুমমেট বাইরে গিয়েছিলো। ও ব্যস্ততার কারণে ওষুধ আনতেই ভুলে গেছে। আবার বাইরে যাবে হয়ত।
- আজব! কাল থেকে শরীর খারাপ, আজকে সন্ধ্যে হয়ে এলো। অথচ এখনো নাকি মেডিসিন নেয়া হয়নি। আপনার কি কি সমস্যা বলুন তো, আমি মেডিসিন নিয়ে আসছি।
- না না আপনাকে আসতে হবে না। প্রয়োজন নেই।
- প্রয়োজন আছে কিনা সেটা আমি বুঝবো। আপনি বলুন কি কি অসুবিধা হচ্ছে?
- বললাম তো। এত দরদ দেখানোর প্রয়োজন নেই।
- এটাকে দরদ বলে না ম্যাম, এটাকে বলে মানবিকতা৷ দয়া করে বলবেন? আচ্ছা থাক, আপনাকে বলতে হবে না। আমি ডাক্তারের কাছে গিয়ে আপনাকে কল দেবো। আপনি তখন যা যা সমস্যা ডাক্তারকেই বলবেন। আর বাসার এড্রেসটা এসএমএস করে রাখুন।
এবার রূপন্তী রেগে বলল, আমার এত বেশি বেশি পছন্দ না।
অয়ন ও রাগের সুরে বলল, বেশি বেশিটা আপনি ই করছেন। সবকিছু স্বাভাবিক টাই ভালো।
কথাটা বলে কল কেটে দিলো অয়ন। রূপন্তী কি বলবে বুঝতে পারলো না। এটা কি আধিখ্যেতা নাকি দরদ? ছেলেদেরকে সহ্য হয়না ওর। কখনো প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছেলের সাথে এক মিনিট কথা বলার রেকর্ড ওর নেই। অনেক আগ থেকেই পুরুষদেরকে ওর দুচোখের বিষ মনে হয়। আর তাদের কথাও বিষাক্ত লাগে। কেউ ভালো কিছু করলেও অসহ্য লাগে ওর লাগে। কেন যে এমন স্বভাব হয়েছে বুঝতে পারেনা ও। সম্পূর্ণ পুরুষ বিদ্বেষি একটা মেয়ে।
কিছুক্ষণ পর অয়নের নাম্বার থেকে কল। রিসিভ করামাত্র কেউ একজন সালাম দিলো।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে বলছেন?
- ম্যাম আমি ডাক্তার নিরব। আপনার কি কি সমস্যা বলতেন যদি?
অপ্রস্তত বোধ করলো রূপন্তী। তবুও এটা আসলেই বেশি বেশি। তবুও বাধ্য হয়ে নিজের অসুখের কথা বললো ডাক্তারকে। ডাক্তার সাহেব প্রেসক্রিপশন করে দিলেন। অয়ন মেডিসিন গুলো নিয়ে রূপন্তীকে এসএমএস পাঠালো, basar address?রূপন্তী রাগ করলেও বাসার ঠিকানাটা লিখে পাঠালো। কিছুক্ষণের মধ্যেই অয়ন বাসার নিচে এসে মেসেজ দিলো, ami basar niche. Apnar aste ki kosto hbe? Naki kaw k pathaben?
অনেক্ষণ কোনো রিপ্লাই আসলো না। অয়ন অবাক হয়ে দেখলো মাথায় ওড়না জড়িয়ে রূপন্তী নামছে। জ্বরের প্রভাবে মেয়েটার চেহারা অন্যরকম হয়ে গেছে। কিন্তু খুব মায়াবী দেখাচ্ছে। সন্ধ্যার স্নিগ্ধকর আলোয় ভারী মায়া ভর করেছে ওর চেহারায়। এই মেয়েটা এতটা রগচটা না হলেও পারে। কত সুন্দর বিশুদ্ধ একটা মেয়ে!
রূপন্তী এসে অয়নের সামনে দাড়াল। কথা বলতে ভুলে গেছে অয়ন। রূপন্তী ওর হাত থেকে ওষুধের প্যাকেট নেয়ার সময় হুশ ফিরে এলো। লজ্জিত মুখে মাথা নিচু করে ফেললো অয়ন। রূপন্তী বলল, সিনেমার মত কল্পনায় গানের সাথে নাচ্ছিলেন নাকি?
লজ্জা পেলো অয়ন। মেয়েটা এমন কেন?
রূপন্তী বলল, এই মানবিকতার জন্য থ্যাংকস। আর এভাবে তাকানোর জন্য স্টুপিড।
কথাটা বলে আর একটুও দাড়াল না। সোজা বাসার ভেতরে ঢুকে গেলো। অয়ন হা হয়ে তাকিয়ে রইলো বাড়িটার দিকে। এরকম অদ্ভুত প্রজাতির মেয়েও আছে জগতে? সত্যিই ভাবা যায়না। তবে মেয়েটা বিশুদ্ধ, দেখলেই ভালো লাগে। মনে বিশুদ্ধতা এসে ভর করে। রাগী স্বভাবটা হয়ত জন্মগত কিংবা পরিবেশগত। যাই হোক, শেষের কথাটা ভালো লেগেছে।
মুচকি হাসলো অয়ন। রূপন্তী এমন কথা বলে গেছে যার পরে আবার কল দেয়াটা একেবারেই অনুচিত। মন বারবার চাইলেও মনটাকে দমিয়ে রাখলো অয়ন।
সকালে অয়নের ঘুম ভাংলো রিংটনের শব্দে। ফোনের দিকে না তাকিয়ে রিসিভ করে কানে ধরলো, হ্যালো।
- রূপন্তী বলছিলাম।
লাফ দিয়ে বিছানার উপর উঠে বসলো অয়ন। #রূপন্তী! অবিশ্বাস্য ব্যাপার!
রূপন্তী বললো, ঘুম ভাঙালাম?
অয়ন আড়মোড়া ভেংগে বলল, না স্বপ্ন ভাঙালেন। - কি স্বপ্ন দেখছিলেন?
- বলা যাবে না।
- ওহ আচ্ছা। সিক্রেট!
- হা হা। সেরকম কিছুও না। বলুন, এই সাত সকালে আমার মত গরীব প্রজাকে কেন মনে পড়লো?
- আপনি প্রজা হলে আমি কি জনাব?
- অবশ্যই মহারানী।
- ওমা তাই? তাহলে বলতে হয় প্রজার মহৌষধে মহারানী একেবারেই সুস্থ হয়ে গেছেন। সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে ফোন দিয়েছেন।
অয়ন বলল, সিরিয়াসলি! শরীর ঠিক হয়ে গেছে? - এত ঝাড়ি খেয়েও ওষুধ নিয়ে এলেন। শরীর ঠিক না হয়ে যায় কই?
- তা বটে। আপনার কণ্ঠ শুনে অনেক ঝড়ঝড়ে লাগছে।
- এখন ঝড়ঝরেই ফিল করছি। এনিওয়ে, থ্যাংকস।
- স্বাগতম মহারানী।
- আচ্ছা, বাই।
তৎক্ষনাৎ ফোন কেটে দিলো #রূপন্তী। অয়ন অবাক হয়ে চোখ মেললো। প্রয়োজন ছাড়া একটাও কথা বলবে না এই মেয়ে। অভ্যেসটা ভালো বটে।
পর্ব ৬
একটা মেয়ে ধর্ষিতা হবার পেছনে আসল কারণগুলো কি কি? সবসময় যদি বলা হয় মেয়েদের পোশাকে সমস্যা, মেয়েদের চলাফেরায় সমস্যা, খারাপ মেয়েরা ধর্ষিতা হবেই। ঠিক আছে, এটা মেনে নেয়া যায়।
কিন্তু শতবর্ষী বৃদ্ধা ধর্ষিতা হওয়ার কারণ কি? সাধারণত বয়স পঞ্চাশ পার হলেই একজন মহিলাকে দেখলে আর কাম জাগে না। তাহলে? এটা নাহয় বাদ দিলাম। একটা ছোট্ট শিশু, যে মায়ের সাথে ঘুমায়।
মাকে অবচেতন করে যেই ছোট্ট শিশুটাকে ধর্ষণ করেছে তার বাবা। তাহলে একটা মেয়ে কার কাছে নিরাপদ? না সমাজের কাছে না বাবার কাছে? মেয়েরা যাবে কোথায়? প্রধান কারণটা দাড়ায় মানুষের নৈতিকতার অবক্ষয়। কারো মাঝে নৈতিক শিক্ষা নেই, বিবেক বোধ লোপ পেয়েছে।
আর দ্বিতীয় কারণ দেশে ধর্ষকের সাজা নেই। ধর্ষকের শাস্তি থাকলে অবশ্যই যেকেউ কাউকে রেপ করতে গেলে একশবার কলিজা কাঁপবে। রেপ করার আগে তার মাথায় একটা কথাই বাজবে, এই কাজ করলে নিশ্চিত আমাকে জনসমুক্ষে ফাঁসি দেয়া হবে৷ কাজেই এই কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।’
দীর্ঘ বক্তব্য দিয়ে অয়ন থামলো। সামনে উপস্থিত সকলে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো। প্রত্যেকটা কথাই সত্য।
অয়ন বললো- তাহলে আমাদের সর্বপ্রথম কঠোর আইন জারি করতে হবে। ধর্ষকের শাস্তি সরাসরি ফাঁসি। জনসমুক্ষে ফাঁসি কার্যকর করা হোক। মাত্র কয়েকজনকে এই শাস্তি দেয়া হলেই ধর্ষণ থেমে যাবে। বিশ্বাস করুন, ধর্ষকরাও মৃত্যুকে মেনে নিতে কষ্ট পাবে। ওদেরকে একমাত্র এই ভয় দেখিয়েই ধর্ষণ থামানো সম্ভব।
সবাই একবাক্যে বললো, ঠিক।
এরপর আবারও জোরে চিৎকার করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে লাগলো সবাই। রূপন্তীও এসেছে। অয়নের বলা কথাগুলো ভালো লাগছে ওর। ছেলেটার মধ্যে কিছু আছে বলতে হবে।
কিছুক্ষণ মিটিং মিছিল চলার পর যে যার মত চলে গেলো। অয়ন ও রূপন্তী নেহার সাথে বসে ওকে অনেক কিছু বোঝালো৷ তারপর রূপন্তী বাসায় যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো।
অয়ন বলল, আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি। তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসি?
রূপন্তী বাঁকা চোখে তাকালো অয়নের দিকে। অয়ন ভয় পেয়ে গেলো সেই দৃষ্টি দেখে। বলল, এত ভয়ংকর চাহনি কেন?
- তুমি বলার মত ভালো সম্পর্ক আমাদের হয়নি। আর আমার বয়স নিশ্চয় এতটাও কম নয় যে আমাকে তুমি করে বলবেন।
- ওহ সরি। ভুল হয়ে গেছে।
- ভুলটা আর না হলেই হয়।
- আবারও সরি রূপন্তী আপু। আমি কি আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আসবো?
- তার কোনো প্রয়োজন তো দেখছি না। আমি একাই চলে যেতে পারবো।
- আমি জানি একাই চলে যেতে পারবেন। গাড়িতে করে নামিয়ে দিয়ে আসলে সময়টা বেঁচে যাবে।
- আমার হাতে যথেষ্ট সময় আছে।
- অদ্ভুত! সবকিছুর এত কারণ খুঁজলে চলে?
- হ্যা। প্রয়োজন ব্যতীত কোনো কাজ করার সমর্থন আমি করিনা।
- এত কঠিন না হলে হয়না?
- কঠিন হলে ঘাড়ের উপর উঠে বসবেন আবার।
নেহা বলল, কি ঝগড়া শুরু করেছেন আপু ভাইয়া? আপু, এত তর্ক করবে না তো। যেতে ইচ্ছে করলে যাও নয়তো বাদ দাও৷ এত তর্কের তো মানে দেখিনা। আর অয়ন ভাইয়া, আপনি আপনার মত বলেছেন। কেউ যেতে চাইলে যাবে অন্যথায় আপনি একাই চলে যান। আপনার তো ঠেকা পড়েনি কাউকে নিয়ে যাওয়ার তাইনা?
অয়ন রূপন্তীর দিকে একবার তাকিয়ে আবার সোজা হলো। রূপন্তী লজ্জা পেলো বটে৷ নেহার কথাটা গায়ে লাগছে ওর। সত্যি কথা অকপটে বলে দিতে নেই।কেউ আর কথা না বাড়িয়ে অয়ন বেড়িয়ে গেলো। গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে এমন সময় রূপন্তী এসে গাড়িতে উঠে বসলো। মনেমনে হাসলো অয়ন। তারপর গাড়ি ছাড়লো।
অনেক্ষণ কারো মুখেই কোনো কথা নেই। অয়ন গাড়ির এসিটা বাড়িয়ে দিয়ে চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে। রূপন্তী কোনো কথা বলছে না। কিছুদূর আসার পর একটা টং দোকানের সামনে গাড়ি দাড় করালো অয়ন। রূপন্তী কৌতুহলী চোখে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না।
অয়ন গাড়ি থেকে নেমে টং দোকানের টংয়ের উপর গিয়ে বসলো। দোকানের একটা ছোট্ট ছেলেকে পাঠালো গাড়ির কাছে। ছেলেটা এসে রূপন্তীকে বললো, আফা ভাইয়া আপনারে চা খাওয়ার দাওয়াত দিছে। নাইমা আসেন আফা..
রূপন্তী অয়নের দিকে তাকালো। দেখলো অয়ন হাসিমুখে দোকানীর সাথে কথা বলছে। ওর হাসি হাসি মুখটা দেখতে ভালো লাগছে #রূপন্তীর। ও গাড়ি থেকে নেমে দোকানের কাছে এগিয়ে গেলো।
দোকানী বললো, আপায় বসেন। লাল চা দিবো না দুধ চা?
- লাল চা দিয়েন মামা। আদা লেবু দিতে পারলে দিয়েন।
- আচ্ছা মামা বসেন।
রূপন্তী দোকানের সামনের টংয়ের উপর বসলো। দোকানদার চা বানাতে বানাতে অয়নের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলো।
উনি বললেন, অয়ন ভাই। দেশে যে হারে ধর্ষণ হইতেছে, তাতে মেয়ে মানুষ করতে গেলেই তো ভয়। এত যত্ন কইরা বড় করতাছি, কতদিন আর আগলে রাখবো বলেন? ঘর থাইকা বাহির হইতেই হইবো। স্কুল কলেজ যাইতে হইবো না কন?
অয়ন বলল, ভরসা রাখো মিজান ভাই। আমরা বড় আন্দোলনে নেমেছি। ধর্ষকের শাস্তি ফাঁসি কার্যকর করার জন্য। আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না। এই শাস্তি কার্যকর হলেই ধর্ষণ অনেকাংশে কমে যাবে।
দোকানী বলল, কি জানি। এ দেশে কোনোকিছুই বিচার হয় না। মেয়ে স্কুলে যাইতে বারণ করছি। বলছি সারাদিন তোর মায়ের সাথে রান্নাবান্না করবি। বাড়ির কাজ দেখবি।
- মিজান ভাই, আপনার বাড়িতে এসে যে রেপ করে যাবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে বলেন? বয়স্ক মহিলারাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এত টেনশন নিয়েন না ভাই। মেয়েকে স্কুলে পাঠান। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।
মিজান ভাই মাথা দোলাতে দোলাতে চা বানিয়ে রূপন্তীর দিকে এগিয়ে দিলো। রূপন্তী চা হাতে নিয়ে দেখলো চায়ের রংটা ভারি সুন্দর। ওর মনটা ভালো হয়ে গেলো। চায়ে চুমুক দিয়ে দেখলো স্বাদটাও অসাধারণ। এ কারণেই হয়তো অয়ন গাড়ি থামিয়ে চা খেতে এসেছে।
রূপন্তী চা খেতে খেতে বলল, মামা সুন্দর চা বানান তো! আমি আবার আসবো খেতে। - আচ্ছা আপা।
তারপর অয়নকে বলল, অয়ন ভাই। আপনাদেরকে কিন্তু সুন্দর মানাইছে।
অয়নের চোখ বড়বড় হয়ে গেল। #রূপন্তী অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো অন্যদিকে। তারাতাড়ি চা শেষ করে উঠে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
অয়ন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তারাতাড়ি চায়ের দাম মিটিয়ে দিয়ে নিজেও এসে গাড়িতে বসলো।
তারপর বলল, রাগ করেছেন? ওনার হয়ে আমি সরি বলছি। উনি আমাদেরকে একসাথে দেখে… - থাক। ব্যাখ্যা করতে হবে না। আপনি গাড়ি স্টার্ট দিন। তারাতাড়ি বাসায় যেতে হবে।
- ওকে বাবা।
অয়ন গাড়ি স্টার্ট দিলো। একটা রবীন্দ্র সংগীত ছেড়ে দিলো হালকা সুরে।
রূপন্তীর প্রিয় একটা গান। ও উৎফুল্ল হয়ে বলল, রবীন্দ্র সংগীত শোনা হয়? - হুম। গান ভালোবাসি।
- বাহ তাই নাকি? রবীন্দ্র সংগীত আমারও প্রিয়।
- বাহ! আপনি আবার গানও শোনেন? দেখে মনে হয় না।
রূপন্তী মুখ বাঁকা করলো। অয়ন জোরে গাড়ি চালাচ্ছে দেখে #রূপন্তী বলল, এত জোরে চালানোর দরকার নেই। আমার অত তাড়া নেই। আবার একসিডেন্ট হয়ে যাবে। - আপনাকে সেফলি পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমার।
রূপন্তী মনেমনে হাসলো। অয়ন গাড়ির স্পিড কমিয়ে দিলো।
পর্ব ৭
আকাশে গোধুলির ছায়া নেমেছে। অয়ন পশ্চিমাকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, ওই দেখুন। রক্তলাল দেখাচ্ছে তাই না?
রূপন্তী বললো, আকাশ ভালো লাগে আপনার?
- হুম। আপনার লাগে বলে তো মনে হয় না।
- কেন মনে হয়না?
- যেরকম রগচটা মানুষ, তার আবার আকাশ ভালোলাগে!
- এভাবে বলছেন কেন? রাগী মানুষের যে কোনোকিছু ভালো লাগার থাকেনা, এটা আবার কেমন কথা?
- এটা এমন কথাই। রাগী মানুষের ভালোলাগার কিছু থাকেনা। তাদের সবকিছুতেই রাগ হওয়ার কথা। আকাশ, নদী, প্রকৃতি এসব ভালো লাগবে মিষ্টি স্বভাবের মানুষ দের।
রূপন্তী ক্ষেপে বললো, আমার স্বভাব মিষ্টি না? - একদম ই না।
- গাড়ি থামান, আমি নামবো।
অয়ন সাথে সাথেই গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দিলো। রূপন্তী অবাক হয়ে বললো- আমি থামাতে বলামাত্র আপনি গাড়ি থামিয়ে দিলেন?
- বললে থামাবো না?
- আজব মানুষ। এইযে আমাকে রাগী, রগচটা মেয়ে বলছেন। আপনি নিজে কি বলুন তো? নিজে একটা আজাইরা।
- হা হা হা। তাও ভালো। আপনি নামুন গাড়ি থেকে।
- আমাকে মাঝপথে নামিয়ে দেয়ার জন্যই গাড়িতে তুলেছিলেন?
অয়ন মুখ বাঁকিয়ে হাসলো। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে রূপন্তীর। ও গাড়ি থেকে নামতে নামতে রীতিমতো অপমানে লাল হয়ে যাচ্ছিলো। তবুও নেমে আর একটা কথাও না বাড়িয়ে রাস্তা ধরে জোরে হাঁটতে লাগলো।
অয়ন ও গাড়ি থেকে নেমে রূপন্তীর পিছুপিছু গিয়ে বলল, পশ্চিম দিকে তাকিয়ে হাঁটুন রাগান্বিতা।
রূপন্তী আরো রেগে বলল, গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে আবার বিরক্ত করছেন কেন?
- বিরক্ত করার জন্যই তো গাড়ি থেকে নামালাম।
- মানে?
- মানে আপনাকে আকাশ দেখাবো। গোধুলির সৌন্দর্য যে কত মনোমুগ্ধকর সেটা না দেখলে বুঝবেন না। একসাথে বসে আকাশ দেখতে দেখতে নাহয় দুটো সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নিলাম।
- অসম্ভব। যে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে তার সাথে বসে আকাশ দেখার প্রশ্নই আসে না।
- আর যে আকাশ দেখার জন্যই গাড়ি থেকে নামতে বলে তার কি হবে?
রূপন্তী অবাক হয়ে অয়নের দিকে তাকালো। চোখাচোখি হতেই বুঝতে পারলো কত শান্ত শীতল অয়নের চোখ! যে চোখে অসম্ভব মায়া ভর করে আছে। চোখের দিকে তাকালেই প্রশান্তি আসে মনে। রূপন্তীর রাগটা কমে গেলো। আর তাকিয়ে থাকতে পারলো না অয়নের চোখের দিকে।
অয়ন মুচকি হেসে বললো, আসুন।
দুজনে পাশাপাশি হাঁটছে। রূপন্তীর ওড়নার দু কোণা বাতাসে উড়ছে। অয়নের ভালো লাগছে খুব। রূপন্তীর রাগটা বাদ দিয়ে মেয়েটাকে সত্যিই অন্যরকম বলা যায়। কিংবা রাগ আছে বলেই মেয়েটা অন্যরকম। কিজানি, কিন্তু মেয়েটা সত্যিই আর সবার থেকে আলাদা। কোন বিশেষত্বের গুণে আলাদা সেটা জানেনা অয়ন।
একটা খোলা প্রান্তরে এসে বসলো অয়ন ও রূপন্তী। অয়ন বলল, সুন্দর না?
রূপন্তী সামনের দিকে তাকিয়ে বলল, সত্যিই সুন্দর। থ্যাংকস এরকম একটা জায়গায় এসে বসার জন্য। অনেকদিন পর যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি।
- এখনো কি রাগ আছে?
- না।
বলেই মুচকি হাসলো রূপন্তী।
অয়ন বললো, হাসলে সুন্দর দেখায়। মাঝেমধ্যে তো হাসতেও পারেন।
- হাসি আসে না। জগতের এত কঠিন সব নিয়ম দেখতে দেখতে হাসতেই ভুলে গেছি।
- আমার কেন যে মনেহয় তোমার অনেক বড় একটা কষ্ট আছে। আমি কি সেটার ভাগীদার হতে পারি? রূপন্তী অবাক হয়ে অয়নের দিকে তাকালো।
অয়ন বলল, ভাগীদার মানে যদি শেয়ার করতে কষ্টগুলো। তোমার ও হালকা লাগতো। আর আমারও ভালো লাগতো। - কষ্ট শেয়ার করলে কি কষ্ট কমে?
- বেদনা কমে। আরেকজন যদি ইন্সপায়ার করতে পারে।
- ইন্সপিরেশন দরকার নেই। আমি একাই আমার জন্য যথেষ্ট।
- আরেকজনের জন্য যদি মুখে সামান্য হাসিটুকুও লেগে থাকে সেটাও কি কম?
- কি বলতে চাচ্ছেন বলুন তো?
- আমার কথা শুনে কি স্পষ্ট হচ্ছেনা কি বলতে চাচ্ছি? আমি তোমার লুকানো কষ্টগুলো শুনতে চাচ্ছি। বলবে?
- না।
- প্লিজ? রূপন্তী…
- আমি বলতে চাচ্ছিনা। বাদ দিন।
- প্লিজ রূপন্তী?
রূপন্তী তাকালো অয়নের দিকে। অয়নের মুখ দেখে খুব মায়া লাগছে। মনে হচ্ছে ছেলেটা সত্যিই ওর কষ্টের কারণ শুনতে চাচ্ছে। কি শুনে কি হবে? ওর কষ্ট তো ওরই থাকবে। বরং আরেকজন মানুষ জেনে যাবে ওর কষ্টের কথা। এসব নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগেনা ওর। আর কষ্ট জিনিসটা এমন যে, কিছু কিছু কষ্ট একান্তই নিজের থাকে। যার কথা অন্য কাউকে বলা যায় না।
অয়ন রূপন্তীর দিকে অপলক ভাবে তাকিয়েই আছে৷ আজকে উত্তর না নিয়ে যাবে না এমন ভাব৷
অবশেষে বাধ্য হয়ে বলতে শুরু করলো #রূপন্তী-
আমার ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্টে বড় হতে হয়েছে। আব্বু আম্মুর সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকতো। আমি এসএসসি দিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম, সেই সময় জানতে পারলাম আব্বু আরেকটা বিয়ে করেছে। সংসারে লাগলো আগুন। আব্বু আমাদেরকে টাকা পয়সা দেয়া কমিয়ে দেয়। যা দিতো তাতে সংসার চলতো না। আমার চাচা আমার পড়াশোনার খরচ দিতেন, মাঝেমধ্যে বাজার করে দিতেন।
কয়েকদিন আগে সে চাচাও মারা গেলেন। এক ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ালাম, সেও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। চাচাতো বোন অনামিকার একটা রিলেশন ছিলো, ওর বয়ফ্রেন্ড ওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে ভিডিও ভাইরাল করে দিয়েছে। আমি না পুরুষ দেরকে একেবারেই সহ্য করতে পারিনা। আমার বাবাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। কলেজে পড়া মেয়ে থাকতে কেউ আরেকটা বিয়ে করে?
বলতে বলতে আরো পাথর হয়ে উঠলো #রূপন্তীর মুখ। অয়ন অজান্তেই রূপন্তীর হাতের উপর হাত রাখলো। রূপন্তী সচেতন ভাবে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। খারাপ লাগলেও চমকে উঠে স্বাভাবিক হলো অয়ন।
পর্ব ৮
রূপন্তীর গালের দুপাশে ছোট ছোট করে কাটা চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলো অয়ন। অপরদিকে রূপন্তীর কষ্টের কথা শুনতে শুনতে কেমন অন্যরকম বোধ করতে আরম্ভ করেছে।
রূপন্তী বললো, আমি পুরুষ মানুষ দের একেবারে সহ্য করতে পারি না। এরা এমন কেন? এরা একটা মেয়ের জীবনকে কোনোভাবেই মূল্যায়ন করেনা। ভাবে মেয়েরা সস্তা বাজারের পণ্য। চাইলেই বোধহয় পাবে। আর তারপর পুরনো হয়ে গেলে আর প্রয়োজন নেই। ঠিক বলেছি না?
অয়ন চমকে উঠে বলল- তোমার ধারণায় তুমি ঠিক। কিন্তূ রূপন্তী ছেলেদের মাঝেও তফাত থাকে।
- রাখুন এসব সস্তা ডায়ালগ। এবার বলবেন তো সব ছেলে এক নয়? তাই না?
- কথাটা কিন্তু সত্য রূপন্তী। সব ছেলে একরকম না। হতে পারেনা।
- শুনুন, আমি যাকে ভালোবেসেছিলাম তার সাথে সম্পর্ক হওয়াটাও একটা লম্বা কাহিনি ছিলো। প্রতিদিন সে আমার জন্য অপেক্ষা করতো। আমাকে রাজি করানোর জন্য কত কি যে করেছে তার হিসেব নেই। পাগলের মত পিছে পিছে ছুটতো। তারপর কি হলো জানেন?
- কি?
রূপন্তী বললো – আমাকে একদিন হঠাৎ জাপটে ধরলো। আমি বাধা দেইনি। এরপর আস্তে আস্তে আমার বুকে হাত দেয়ার চেষ্টা করছিলো। সেবার আমার রাগ উঠে যায়। রেগে যেতেই সে বলে সব বয়ে ফ্রেন্ড গার্ল ফ্রেন্ড নাকি এসব করেই। নরমাল ব্যাপার। কে কি করে আমি জানিনা। কিন্তু বিনা অনুমতিতে আমাকে টাচ করাতে আমি রেগে যাবো এটাই স্বাভাবিক। সে বলে আমি তোমার বয় ফ্রেন্ড। তোমাকে টাচ করার অধিকার আমার আছে। আমিও সাথে সাথে বলেছিলাম – তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড, স্বামী তো নও।
ব্যস, ঝগড়াটা এখানেই লেগে যায়। ও বলে বয়ফ্রেন্ড আর হাজব্যান্ডের মধ্যে পার্থক্য কি? আমি বললাম পার্থক্য না থাকলে আমাকে বাসায় নিয়ে যাও। আব্বা আম্মার সাথে পরিচয় করিয়ে দেও। সে ভয়ে কথার টপিক চেঞ্জ করলো। তারপর আমাকে রেখে চলে গেল। এটা নাকি আজকাল কমন ব্যাপার? কিন্তু সবার কাছে যেটা কমন আমার কাছে সেটা অযৌক্তিক। আমি সহ্য করতে পারিনা এদেরকে।
অয়ন চুপচাপ শুনলো। কত কষ্ট বুকে চেপে বড় হয়েছে মেয়েটা। ওকে স্বান্তনা দেয়ার ভাষা নেই অয়নের। তবুও একবার বৃথা চেষ্টা করে বললো- ওসব আজেবাজে ছেলের কথা ভেবে কষ্ট পেও না তো।
- আমি কষ্ট পাচ্ছি না। বরং খুব ভালো আছি।
- এটাকে ভালো থাকা বলে? জীবনে ছেলেদের প্রয়োজন আছে রূপন্তী।
- কি প্রয়োজন আছে শুনি? ভরণ পোষণ? সেটা আমি নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে পারবো৷ আমার কোনো ছেলে মানুষ দরকার নেই।
- ভরণ পোষণের জন্য ছেলেদের দরকার হয়না। কেয়ারের জন্য দরকার আছে। আগলে রাখার জন্য দরকার আছে।
- আমাকে কেয়ার করার জন্য আমি একাই যথেষ্ট। ছেলে লাগবে কেন?
- তাও ঠিক। কিন্তু রূপন্তী, আমরা তো সামাজিক প্রানী তাইনা? সমাজের নিয়ম অনুযায়ী আমাদেরকে ছেলে মেয়ে একসাথে থাকতেই হয়।
রূপন্তী শব্দ করে হেসে বললো- রাখুন আপনার সামাজিক প্রাণি। সমাজের কথা বললেন না? এটা সমাজ? এই নোংরা সমাজের কি দরকার? একটা মেয়ে পথেঘাটে ধর্ষিতা হবে। লোকজন তাকে দেখে চলে যায়, কেউ তুলে হাসপাতালে নেয়না বরং ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে। এটা সমাজ?
অয়ন কোনো উত্তর দিতে পারলো না।
রূপন্তী আবার বলল- এটা সমাজ নামে কলংক। ধর্ষণের কোনো বিচার যেখানে হয়না, সেটাকে সমাজ বলে? যেখানে কলেজ পড়ুয়া মেয়ে থাকতে বাবা আবার বিয়ে করে সেটাকে সমাজ বলে? মাকে অচেতন করে শিশু বাচ্চা কে ধর্ষণ করে সেটাকে সমাজ বলে?
শব্দ করে হাসতে লাগল #রূপন্তী। সেই হাসি যেন থামতেই চায়না। অনেক্ষণ ধরে হাসতে হাসতে হাটুর উপর মাথা রেখে বসে নিচু হয়ে থাকলো।
অয়ন বলল- রূপন্তী…
রূপন্তীর কোনো সাড়া না পেয়ে আবার ডাকলো- প্লিজ মন খারাপ কোরো না। সমাজে ভালো খারাপ দু প্রকার মানুষ ই থাকে। ওরা হচ্ছে খারাপ শ্রেণী।
রূপন্তী কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল- তাহলে আমার ভাগ্যটা কি খারাপ? আমার সাথে কেন সবসময় খারাপ কিছু ঘটে?
অয়ন বললো- ভাগ্য! হয়তো বা। এভাবে মন খারাপ কোরো না রূপন্তী। খারাপ মানুষ গুলো যখন তোমাদেরকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো, তখন আমি আর বাবা তো ঠিকই তোমাদের পাশে গাড়ি থামিয়েছি তাই না? ভালোটাও মিশে আছে সবখানে। শুধু বুঝে নিতে হয় কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ।রূপন্তী বললো- সমাজে বোধহয় ভালোর চেয়ে খারাপ টাই বেশি তাইনা?
- হুম।
- কিন্তু কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ সেটা বুঝবো কিভাবে? আমি যার প্রেমে পড়েছিলাম, তাকে তো কখনোই আমার খারাপ মনে হয়নি। যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে। আপনাকেও ভালো মানুষ মনে হচ্ছে। কিন্তু কখন যে আবার খারাপ রূপটা বেরিয়ে আসে।
অয়ন হেসে বলল- সবার খারাপ রূপ থাকে না। - বুঝবো কি করে?
- আস্তে আস্তে বুঝে যাবে।
- ততদিনে মরে ছাই হয়ে যাবো কিংবা ধর্ষিতা হয়ে যাবো।
- রূপন্তী…
অবাক হয়ে রূপন্তীর দিকে তাকিয়ে আছে অয়ন। রূপন্তী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল- সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। অন্ধকার নামছে। এখন ওঠা যাক…
- তোমার কষ্টের ভাগীদার হতে চেয়েছিলাম।
- চাইলে কি আর সব কষ্টের ভাগ নেয়া যায়?
- যায় রূপন্তী। তোমার বাবাকে নিয়ে তোমার মনে যে কষ্টটা আছে সেটা হয়তো দূর করতে পারবো না। কিন্তু অন্যসব কষ্টগুলো…
রূপন্তী আবারও একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলল- ছাড়ুন এসব। চলুন ওঠা যাক।
নিঃশব্দে উঠে এলো অয়ন। কোনো কথা বললো না। মনেমনে ভেবে চলেছে কি করা যায় এখন? রূপন্তীর পাশে থাকার ইচ্ছেটা যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কিভাবে কি করলে ওর বিশ্বাস অর্জন করা যাবে? ওই মেয়েটা কোনো ছেলেকেই বিশ্বাস করতে পারে না, পুনরায় বিশ্বাস স্থাপন করাটা অনেক কষ্টকর।
রূপন্তী বলল- আমি দীর্ঘদিন এরকম একটা সুন্দর বিকেল কাটাইনি। এরকম একটা সন্ধ্যা উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
- ওয়েলকাম। তুমি চাইলে তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারি। আশাকরি ভালো লাগবে।
- থাক। ভালো-লাগা যত কম হয় ততই ভালো।
- তুমি সবসময় এরকম করে কথা বলো কেন #রূপন্তী?
- আমি মেয়েটা এরকম ই তাই।
অয়ন আর কথা বাড়ালো না। যেভাবেই হোক রূপন্তীকে নিয়ে ও ঘুরতে যাবে ই। মনে মনে সংকল্প ও করে ফেললো।
গাড়ি জোরে চালিয়ে তারাতাড়ি রূপন্তীকে বাসায় নামিয়ে দিলো অয়ন।
রাতে ঘুমানোর সময় রূপন্তীর কথা খুব মনে পড়ে যাচ্ছিলো। এলোমেলো চুলে মেয়েটাকে কি অপূর্ব ই না লাগছিলো! ওকে বড্ড বেশি ভালো লাগে অয়নের। নিশ্চিতভাবে প্রেমে পড়ে গেছে ওর। কিন্তু রূপন্তী তো এসব পছন্দ করেনা। ছেলেদেরকে সহ্য করতেও পারে না। ওকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়া যাবে না।
তাহলে কি সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেবে? তাহলে অন্তত বিশ্বাস ফিরে পাবে মেয়েটা।
ভাবামাত্র দ্রুত বাবার কাছে চলে এলো অয়ন। বাবাকে নিজের মনের কথা, ভালোলাগা ভালোবাসার কথা সব খুলে বললো। বাবা শুনে কোনো আপত্তি জানালেন না। সেদিন মেয়েটাকে দেখে ওনারও ভালো লেগেছিলো। তাছাড়া ছেলের পছন্দকে ইগনোর করার সাধ্য ওনার নেই। আজীবন সংসার করবে ছেলে, সে যেরকম চায় সেরকম ই হোক।
বাবার মতামতে খুশি হলো অয়ন। এখন রূপন্তীকে প্রস্তাব দেয়ার পালা।
সারারাত বিছানায় শুয়ে ছটফট করলো অয়ন। সেইসাথে নানান ফন্দিফিকির আটতে লাগলো। কিভাবে প্রপোজালটা দেবে সেটা ভেবেই বিভোর হয়ে রইলো।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই রূপন্তীর বাসার সামনে চলে এলো। মাথায় কিছু কাজ করছে না। রূপন্তীকে কোথাও যেতে রাজি করাতেই একদিন কেটে যাবে। এত ধৈর্য হচ্ছে না অয়নের। তার আগেই দেখা করা দরকার।
সাত সকালে অয়নের ফোন পেয়ে চমকে উঠলো রূপন্তী। অয়ন বলল- একটু নিচে আসবে? বাসার সামনে রাস্তায় দাড়িয়ে আছি আমি।
এত সকালে অয়নের আসার কারণ অনুধাবন করতে করতে নিচে নেমে এলো #রূপন্তী। কৌতুহল লুকিয়ে রেখে অয়নকে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে?
অয়ন রীতিমতো হাফাচ্ছে। কিভাবে বলবে কিছুতেই বুঝতে পারছে না। নিজেকে সামলে নিতেই ওর কয়েক মিনিট লেগে গেলো। তারপর কোনোমতে বললো- তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আজকে বিকেলে আমার সাথে এক জায়গায় দেখা করতে পারবা? প্রমিস তোমার কোনো রিস্ক নেই। তুমি চাইলে গতকালের জায়গাটাতেই যেতে পারি। কিংবা অন্য কোথাও? প্লিজ!
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলো অয়ন। রূপন্তী আগাগোড়া কিছুই বুঝতে না পেরে বলল- এটা তো ফোনেই বলা যেতো। এত সকালে এসেছেন কেন? আমার কষ্টের ভাগ নেবার কোনো আইডিয়া পেয়েছেন নাকি?
- অনেকটা সেরকম ই। প্লিজ? একবার এসো?
অয়নকে হাফাতে দেখে আর ওর নার্ভাস চেহারা দেখে রূপন্তী বলল- ওকে। বিকেলে দেখা হবে। এখন আসুন।
অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। কি বলতে কি বলে ফেলেছে। তাও তো বলা হলো কিছু একটা। বাকিটা নাহয় বিকেলেই বলা হবে।