তোমায় আমার প্রয়োজন (৩য় খণ্ড) – Bangla Romantic Valobashar Golpo: তনু যত যাই কিছু করুক না কেন তাওহীদ হাল ছাড়বে না। তার অর্ধাঙ্গিনীকে তার চাই। ভালোবাসার ফুলে গাথা মালা দিয়ে আবার বরণ করে সে তার তনুশাকে। কারন তাওহীদে জীবনে তনুশার প্রয়োজন অনেকখানি
পর্ব ২৬
দুইদিন অতিবাহিত হয়ে যায়। কিন্তু তাওহীদের মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। কেন জানি তনুকে আরো অপমান করতে মন চায় তার। কিন্তু চেয়েও পারে না সে।
কেমন জানি লাগে তার কাছে আবার ক্ষমাও করতে পারছে না তনুকে। কারন তার চোখে তনু আজও অপরাধী। এই অপরাধের একটাই শাস্তি আর তা হচ্ছে তাওহীদের ঘৃণা নিয়ে বেচে থাকা। আর তাই হচ্ছে।
সেইদিন তনুর উপরে রাগ করে বাসায় এসে ফোন টা ভেঙে ফেলে তাওহীদ। ফোন কিনবে কিনবে করে আর কেনা হয় নি তাই আজ দুপুরের দিকে অফিস থেকে মোবাইল কিনতে শপিং মলে যায় তাওহীদ। একটা ফোন থাকা প্রয়োজন, তাই ফোন ভেঙে আবার দৌড় দেয় ফোন কিনতে।
মোবাইল শো-রুমে মোবাইল দেখছিল তাওহীদ, হঠাৎ তার কানে লাগে।
- মাম্মাম, ও মাম্মাম আমায় এতা (এটা) কিনে তাও (দাও) না।
- নাহ মাম্মাম পাখি এটা ভালো না, আরেকদিন অন্যটা কিনে দিব।
- নাহ এতাই (এটাই) তাই (চাই) আমাল। (আমার)
- তাহুরা, দিন দিন দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো তুমি, চলো।
মায়ের মুখে নিজের নাম শুনে ঠোঁট ফুলিয়ে রাখে তাহুরা। আসলে মা তাকে মাম্মাম পাখি ডাকে কিন্তু যখন নাম ধরে ডাকে তখন সে বুঝে যে তার মা অনেক রেগে আছে। একদম মায়ের মত হয়েছে নীরবে কাদে সে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কিন্তু শব্দ নেই।
গ্লাসের ওপার থেকে সবটা খেয়াল করলো তাওহীদ। তাহুরার মাঝে অদ্ভুত মায়া কাজ করছে। তাওহীদ অনেক লজ্জিত ওইদিনের কথার জন্য যেদিন তাহুরাকে সে অবৈধ বলেছিল। বাচ্চাটা একদম নিষ্পাপ। মোবাইল রেখে সে শো-রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তাহুরাকে এক পাশে দাড় করিয়ে তনু কিছু কিনতেছে। এমন টাইমে তাওহীদ পিছন থেকে গিয়ে তাহুরার কাধে হাত রাখে। তাহুরা ঘাড় ফিরিয়ে দেখে তার চশমা আংকেল দাড়ানো। এক গাল হেসে আস্তে আস্তে বলে,
- তশমা আংতেল। (চশমা আংকেল)
- এখানে আসো।
- তলো। (চলো)
একটু সাইডে নিয়ে আসে তাহুরাকে।
- কি হলো কাদছিলে কেন?
- মাম্মা বতা (বকা) দিয়েতে। (দিয়েছে)
- কি পছন্দ হয়েছিল মাম্মাম পাখির।
- আতো (আসো) দেকাই। (দেখাই)
- চলো।
তারপর কিডস সেকশনে ইয়ায়া বড় একটা টেডি দেখায় সে তাওহীদকে। পুরো টেডি পুতুলটা পিংক কালারের ছিল। মাথায় টুপি দেয়া। অনেক সুন্দর একটা টেডি।
- দেতলে (দেখলে) তো।
- এটা পছন্দ?
- হুম অনেত (অনেক) কিন্তু মাম্মাম দিল না।
- আমি কিনে দেই?
- দিবে।
- হুম
- তাহলে দাও।
- আচ্ছা চলো
- তলো (চলো) তলো (চলো) আমাল (আমার) লতুন (নতুন) আলেকটা (আরেকটা) টেডি হবে।
তাওহীদ মুচকি হেসে দেয়। তারপর তাহুরাকে নিয়ে শোপের ভেতরে গিয়ে ৪৫০০ টাকা দিয়ে টেডি টা কিনে দেয়।
এদিকে তনু তাহুরাকে না পেয়ে প্রায় পাগল হয়ে যায়। মেয়েকে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে তনু। এদিক সেদিক ঘুরে দেখছে তবু খুজে পাচ্ছে না সে তাহুরাকে। প্রায় কেদে দেয় তনু।
পরে তাহুরা দৌড়ে এসে পিছন থেকে তনুকে জড়িয়ে ধরে।
- মাম্মাম এইতো আমি।
তাহুরার আওয়াজ পেয়ে তনু পিছনে ফিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। অনেকগুলো চুমো খায় মেয়েকে তনু।
- মাম্মাম পাখি কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি।
- তাই (যাই) নি তো।
- তাহলে
- আমি তো ওই তশমা (চশমা) আংতেল (আংকেল) এর সাতে এই টেডি টা আনতে গেতিলাম (গেছিলাম)
তাহুরার ইশারায় তনু সামনে তাকায় আর তাওহীদকে দেখতে পায়।
- তোমাকে না কতবার বলেছি অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু নিবা না।
- তরি (সরি)।
- ফিরিয়ে দিয়ে আসো যাও।
- লাখি (রাখি) না মাম্মাম প্লিত। (প্লিজ)
- না।
তারপর তাওহীদ তনুর সামনে এসে দাঁড়ায়। ইচ্ছে করছে ভরা শপিং মলে অনেক গুলো কথা শুনাতে তনুকে। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে তনুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে।
- এত দেমাগ? ঠিক আগের মত।
- আমার সন্তান থেকে দূরে থাকবেন, চলো তাহুরা।
তনু তাহুরার হাত ধরে চলে যেতে ধরলে তাওহীদ তাকে আটকে ধরে,
- রাফাতের এক কালের বন্ধু হিসেবে তার মেয়েকে তো কিছু দিতেই পারি, তাইনা?
তাওহীদের মুখ থেকে এই কথা টা শুনে তনু ভড়কে যায়। রাগ টা আর কন্ট্রোল করে রাখতে পারে তনু।
- ও আমার সন্তান, শুধুমাত্র আমার, ওর উপর কারো অধিকার নেই। না রাফাতের না অন্য কারো। আর হ্যাঁ ও আমার পাপের ফসল। এইবার খুশি আপনি? না ও রাফাতের অংশ না অন্য কারো, ও আমার পাপের অংশ।
- তনুশায়ায়ায়া।
- আস্তে, খবরদার চেচাবেন না। নিজের মন কে প্রশ্ন করেন। করেন নিজের মন কে। তাওহীদ সাহেব আমি কি একদিনের জন্যেও আপনার সাথে শুই নি? প্রশ্ন করেন নিজের মন কে আপনি কি একদিনের জন্যেও আমায় স্পর্শ করেন নি? এইসব যদি মিথ্যা হয়, হ্যাঁ তাহুরা আমার পাপের ফসল। আমার কয়েক রাতের সুখের ফসল ও। খুশি আপনি?
চলো তাহুরা।
দোতলার উপরে পুরো মলের মানুষ দাঁড়িয়ে সব শুনেছে। তনু যখন কথা গুলো বলছিল তখন তার চোখ দিয়ে পানির সাথে আগুনও ঝরছিল। তাওহীদের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো তনুর এইসব কথা শুনে।
তনু বাসায় এসে নিজেকে রুমে আটকে দেয়। সবাই দরজার সামনে গিয়ে চিল্লাপাল্লা শুরু করে দেয়। তারপর রুমেল তাহুরাকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করে।
- মামুনি, কি হয়েছে মাম্মামের।
- জানি না তো মামা সোনা।
- মামুনি মনে করে বলো তো।
- ও হ্যাঁ একতা (একটা) আংতেল (আংকেল) এর সাতে মাম্মামের ঝগড়া হয়েতে। (হয়েছে)
- আংকেল? কোন আংকেল?
- ওই যে তশমা (চশমা) আংতেল। (আংকেল)
সবাই বুঝে যায় তাহুরা কার কথা বলছে।
- তাওহীদ
- হ্যাঁ ভাইয়া তাহুরা হয়তো তাওহীদ ভাইয়ার কথাই বলছে।
- এইখানেও শান্তি দিবে না নাকি আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।
- রুমেল, কোথাও যাবা না তুমি, বসো এখানে।
- তুমি জানো না রাত্রি এই লোক খুব খারাপ।
- থামো বলতেছি, এই তনয়া তাহুরাকে নিয়ে অন্য রুমে যাও।
- আচ্ছা ভাবি।
রাত্রির কথায় তনয়া তাহুরাকে নিয়ে অন্য রুমে রেখে আসে। এইদিক দিয়ে রাত্রি রুমেল কে সব বুঝিয়ে বলে।
- শুনো রুমেল, এটা আপুর ব্যাপার। আপু কি আমাদের বলেছে যে তোরা যা গিয়ে কথা বল? বা কিছু, এখন যদি তুমি যাও তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে আর আমরা এইসব কিছুই চাই না না চায় আপু। সো হুটহাট সিদ্ধান্তে যেও না আগে দেখো আপু কি বলে,
- হ্যাঁ রুমেল, বউমা ঠিক বলেছে। আর তাছাড়া তনুকে তো চিনিসই সে কোন ঝামেলা চায় না তাই তো ৫ বছর আগে সব মাটি চাপা দিয়ে দিল বিনা ঝামেলায়।
সেদিন রাতে তাওহীদের মাথায় বার বার তনুর কথাগুলো আসতেছিল।
- তনুশা কি বললো? তাহুরা রাফাতের বাচ্চা নয়, অন্যের বাচ্চা, পাপের ফসল, কয়েক রাতের সুখের ফসল, আমি কি তনুকে স্পর্শ করে নি? আবার সেইদিন রাস্তায় বললো তাহুরা অবৈধ নয়, এইসব কথার মানে কি? ও কি বলতে চায়?
তাওহীদ বার বার কথা গুলো রিভাইন করতে থাকে। কিন্তু কাজ হয় না, কিছুতেই সে বুঝতে পারে না কথা গুলোর মানে কি ছিল।
তারপর পরক্ষণেই মনে পড়ে, ৫ বছর আগে সুইজারল্যান্ডে তো তাদের।
- হ্যাঁ সেইদিন তো আমি আর ও।
তাহলে কি তাহুরা কি আমার।
কিন্তু বুঝবো কিভাবে তাহুরা আমার বাচ্চা কারন তনুশা তো রাফাতের সাথেও সম্পর্ক রেখেছে। তাহলে তাহুরা তো রাফাতের সন্তানও হতে পারে, হয়তো আমার সামনে সাধু সাজার জন্য এইভাবে বলেছে। কিন্তু তাহুরা তো আমারও সন্তান হতে পারে, নাহ এর ব্যবস্থা করতেই হবে।
তাওহীদের এখন একটাই লক্ষ্য তাহুরা কার সন্তান বের করা। এটা জানা না অবদি তার শান্তি নেই।
গত দুইদিন তাওহীদ সব এক করে দিয়েছে তাহুরা কার সন্তান এটা জানার জন্য। অবশেষে সে সেই পার্কে চলে যায় যেখানে তাহুরা খেলতে যায়।
- এই যে মাম্মাম পাখি।
- তুমি আবাল (আবার) আসচো।
- হুম কেন, আসতে মানা বুঝি।
- আমাল (আমার) মাম্মাম বলেতে (বলেছে)তোমাল (তোমার) সাতে আল (আর) কথা বলতে না।
- কেন।
- জানি না।
কথার ছলে তাওহীদ তাহুরার মাথা থেকে একটা চুল কেটে নেয়।
- তুমি আমাল (আমার) তুল (চুল) কেন ধরেতো (ধরেছো)
- তোমার চুলে ময়লা ছিল সোনা।
- ওও আত্তা (আচ্ছা) তা তা (টা টা) তলে (চলে) তাই (যাই)
- আচ্ছা বাই বাই
তাওহীদ বড় দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যায়। সে যেই কাজ টা করতে যাচ্ছে তা কি আদৌ ঠিক হবে? আবার পরক্ষণেই ভাবে সন্দেহ দূর করতে তো দোষ নেই। তাই সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালে সেম্পল গুলো জমা দেয়। তাহুরা আর তার সেম্পল গুলো সেখানে জমা দিয়ে সে গভীর টেনশনে আছে। DNA এর রেজাল্ট আসতে আসতেও এক সপ্তাহ লাগবে। এই এক সপ্তাহ যে সে কিভাবে কাটিয়েছে সে নিজেই জানে।
আর অন্যদিকে তনু তাহুরাকে নিয়ে রংপুর যাওয়ার ব্যবস্থা করতে থাকে। তনু এখানে থাকবে না, কারন তনু বুঝে গেছে তাহুরা আর তার এখানে থাকা একদম ঠিক হবে না। এখানে তাওহীদ যতদিন আছে তনুর থাকা হবে না। সে চায় না আর কোন ঝামেলায় পড়ুক। কিংবা সে আর তাওহীদের সামনে পড়ুক।
এক সপ্তাহ পর,
তাওহীদের হাতে DNA রিপোর্ট। রিপোর্ট টা হাতে নিয়ে হসপিটালের করিডোরে বসে আছে তাওহীদ। খাম টা খুলার অপেক্ষায়। তাওহীদ খাম টা খুলে। রিপোর্ট দেখে তাওহীদের চোখের পানি গুলো চিক চিক করে।
হ্যাঁ তাহুরা তার সন্তান। তাওহীদ আর তনুর কাটানো সেই কয়েক রাতের ফসল হচ্ছে তাহুরা। আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে নি তাওহীদ। সোজা বেরিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করে বাসায় চলে আসে। দরজা আটকে রিপোর্ট টা বুকে জড়িয়ে ফ্লোরে বসে অনেক্ষণ কাদে তাওহীদ। নিজের উপরে অনেক ঘিন লাগছে তার। তার নিজের ঔরসজাত হচ্ছে তাহুরা। আর সে নিজের সন্তান কে সেইদিন অবৈধ বলে গালি দিয়েছে। এই কষ্ট সে চিৎকার করতে থাকে।
- তাহুরা আমার সন্তান। আমার মেয়ে, আমার পরী সে, আমার ছোট্ট পরী। আমার কলিজা। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে আসবো আমার কাছে। নিয়ে আসবো আমার পরীকে।
তাওহীদ মেয়েকে কাছে পাওয়ার জন্য উতলা হয়ে ওঠে। তার মেয়েকে তার চাই, তার পরীকে তার চাই।
আর ওইদিকে তনু তাহুরাকে নিয়ে কাল রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।
পর্ব ২৭
পরদিন সকাল সকাল তাওহীদ বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। গন্তব্য তনুর বাসা, সেখানেই তো তার মেয়ে আছে। সে আর এক মিনিটও সময় নষ্ট করে নি। গাড়ি নিয়ে ছুটে চলে তনুর বাসার দিকে।
অন্য দিকে তনু বাসায় সবার থেকে বিদায় নিচ্ছে। রুমেল গিয়ে দিয়ে আসবে তনু আর তাহুরাকে। তাহুরাও মুখ ভার করে আছে। সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে তার জন্যে।
- না গেলে কি হয় না?
- কয়েকটা দিন গিয়ে থেকে আসি মা
- তাহুরা টাও মন খারাপ করে আছে আপু
- ও ঠিক হয়ে যাবে রাত্রি, এখানে থাকলে ও আরো অসুস্থ হয়ে যাবে
- হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক
- আচ্ছা আসি মা
- আচ্ছা আয়, সাবধানে থাকিস
- আচ্ছা
তনু তাহুরাকে কোলে নিয়ে রেডি এখনই বাসা থেকে বের হবে। আর ঠিক সেই মুহূর্তে তাওহীদ এসে সেখানে উপস্থিত।
তাওহীদকে দেখে হতবাক হয়ে যায় সবাই। তনুর মা হয়ে থাকে, আজ থেকে ৫ বছর আগে একেই জামাই হিসেবে বরণ করে নিয়েছিল। আর আজ ৫ বছর পর আবার ওনার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সে।
- কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ওকে?
- এ আমার সন্তান, আমি একে যেখানে খুশি নিয়ে যেতে পারি
- না পারো না, এ আমার সন্তান
- কিহ, কি বললেন, এ আপনার সন্তান?
- হ্যাঁ, আমার বাচ্চা, তুমি ওকে নিয়ে কোথাও যেতে পারবে না
- এক্সকিউজ মি, তাহুরা শুধু আমার সন্তান আর কারো না
- shut up, just shut up, আমার মেয়ে আমায় দাও
- কিহহহহহহহ
- আমার বাচ্চা আমায় দাও, তুমি যে খারাপ আমি জানি কিন্তু এতটা নিচ জানতাম না, একজন সন্তানকে তার বাবার কাছ থেকে আলাদা রেখেছো এত বছর, আর এখন চোরের মত পালিয়ে যাচ্ছো আমার মেয়েকে নিয়ে how dare you আমার বাচ্চা আমায় দাও
- খবরদার, হাত টা ওইখানেই রাখুন, আমার মেয়ের দিকে হাতটা আসবে তো হাতটা কাধ থেকে কেটে ফেলে দিব
তনুর এই কথা শুনে সবাই বিস্মিত হয়ে যায়। এটা কি বললো তনু তাও তাওহীদকে। তাওহীদের বিস্ময়ের শেষ নেই৷ তনুর দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে
সে।
- তোমার সাহস হয় কিভাবে তুমি আমায় এইসব বলো
- কেন? বলতে ক্ষতি কোথায়? আপনি কোন সাহসে আমার সন্তানের দিকে হাত বাড়িয়েছেন
- ও আমারও সন্তান
- নাহ, ও শুধু আমার একার সন্তান ওর উপরে শুধু আমার অধিকার
- ওর উপর আমারও অধিকার আছে
- কিহহহ, কিসের অধিকার? কেমন অধিকার? কোন অধিকার? এত বছর কোথায় ছিল এ অধিকার?
তনুর কথায় অনেকটা সাহস পায় রুমেল। রুমেল আর সহ্য করতে না পেরে তাওহীদের কলার ধরে ফেলে। পরস্থিতি অন্যদিকে অন্যদিকে মোড় নেয়।
- অনেক তো হলো, আর কত? এইবার চুপচাপ এইখান থেকে কেটে পড়ো
- how dare you? তোমার সাহস হয় কিভাবে, তুমি আমার কলার ধরো?
- সাহস লাগবে না, চুপচাপ বেরিয়ে যাও এখান থেকে
- আহহহহ রুমেল কি শুরু করলি, ছাড়, ছাড় বলছি
- নাহ মা অনেক ছেড়েছি আর না
- রুমেল ছাড়ো বলছি
রাত্রি গিয়ে রুমেলকে ছাড়িয়ে আনে।
- তনুশা আমার মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রামের বাহিরে পা রেখে দেখাও শুধু, আইনের দরজায় যেতে আমার মাত্র ২ মিনিট সময় লাগবে
এই বলে তাওহীদ পিছনে ঘুরে চলে যেতে ধরে আর ঠিক তখনই,
- পাপাই
ডাক টা শুনে থমকে যায় তাওহীদের পা জোড়া। পা জোড়া সামনের দিকে আর এগুচ্ছে না। পিছনে ফিরে করুণ নজরে তাকিয়ে আছে তাওহীদ তনুর দিকে।
পর্ব ২৮
– মাম্মা এই তি (কি) আমাল (আমার) পাপাই?
- মাম্মাম ও মাম্মাম, বলো না এই তি (কি) আমাল (আমার) পাপাই?
তাহুরার কথায় তাওহীদ পিছনে তাকিয়ে থাকে। চোখের পানি গুলো চিক চিক করছে তার। টলটলে পানি গুলো আরেকটু হলে পড়ে যাবে গাল বেয়ে পড়ে যাবে।
তনু দেখছে তাওহীদকে। একজন বাবা তার সামনে আজ দাঁড়ানো। তার সন্তানের বাবা দাঁড়ানো আজ তার সামনে দাঁড়ানো।
অন্যদিকে মেয়ের প্রশ্ন, দুয়ে মিলে সংকটাপন্ন মুহুর্তে ঝুলছে তনু।
- মাম্মাম ও মাম্মাম এতাই (এটাই) আমাল (আমার) পাপাই?
- তাহুরা পাখি
তাওহীদের মুখ থেকে তাহুরা পাখি নাম টা শুনে তনুর চোখের পানি দ্রুত বেয়ে পড়ছে
- ও মাম্মাম, মাম্মাম গো
- জ্বি মাম্মাম পাখি
- এতাই আমাল পাপাই
- হ্যাঁ মাম্মাম পাখি এটাই তোমার পাপাই
- তুমি এই পাপাইয়ের কথা বলতে তব (সব) তময় (সময়)
- হ্যাঁ মাম্মাম পাখি এটাই তোমার পাপাই যার কথা তোমাকে বলতাম
তনুর কথা শুনে তাহুরা এক গাল হেসে দেয়,
- পাপাই, পাপাই, মাম্মাম আমায় নামাও পাপাইয়ের কোলে যাবো
- তাহুরা পাখি
বলে দুইহাত সামনে বাড়িয়ে দেয় তাওহীদ। যা দেখে তনু অবাক, সাথে বাকিরাও।
তাহুরা কোলের মধ্যেই মোড়ামুড়ি শুরু করে দিয়েছে। সে তার পাপাইয়ের কোলে যাবে। তাহুরাকে আটকে রাখা যাচ্ছে না।
তনু আস্তে করে হাতের বাধন টা খুলে দেয়
তাহুরা ছোট্ট পায়ে এক দৌড়ে তার পাপাইয়ের কোলে চড়ে যায়। তাহুরাকে কোলে নিয়ে নিচে ফ্লোরে বসে পড়ে তাওহীদ। কেদে দেয় মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। মেয়ের মুখে পাপাই ডাক শুনে তাওহীদের ৫ বছরের নিষ্প্রাণ কলিজায় যেন প্রাণ ফিরে আসে। তার যে একটা মেয়েও আছে সে এতদিন জানতো না। - পাপাইয়ের সাথে যাবা মাম্মাম?
- তাবো (যাবো) পাপাই
- সত্যি যাবা?
- হুম তলো (চলো)
- চলো
– দালাও (দাড়াও) মাম্মাম আমি তাই (যাই) পাপাইয়ের সাথে? আবাল (আবার) তন্দায় (সন্ধ্যায়) তলে (চলে) আতবো (আসবো)
- ও মাম্মাম তাই (যাই)
তাওহীদ তনুর উত্তরের অপেক্ষায় আছে। তাহুরার বার বার বলায় তনু শেষে উত্তর টা দিয়েই দেয়
- তুমি যেতে চাও?
- হুম এত্তু (এট্টু) তাবো (যাবো)
- আচ্ছা যাও
- তকে (ওকে) মাম্মাম
তাওহীদ তাহুরাকে নিয়ে চলে যায়। আর তনু আস্তে করে এসে সোফায় বসে পড়ে। ওদিকে রুমেল প্রচুর ক্ষেপে আছে তনুর উপরে।
- তুই কোন পরিপ্রেক্ষিতে তাহুরাকে ওর সাথে দিছিস
- ও তাহুরার বাবা
- তা এতদিন কই ছিল ওর বাবা
- এখন আছে
- রংপুরে যাওয়ার কি হবে
- ক্যান্সেল করে দে
- মা তোমার মেয়ে পাগল হয়ে গেছে
- আহহহহহ রুমেল কি সব বলো
- তুমি চুপ থাকো রাত্রি
- তুমি থামো, যাও অফিসে যাও
রুমেল রেগে মেগে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। আর তনু রুমে চলে আসে। আজ তনু মূর্তি হয়ে গেছে। চোখের পানি গুলোও শুকিয়ে গেছে তার
আর ওদিকে তাওহীদ তাহুরাকে বাসায় নিয়ে আসছে। মোকলেস কে তাহুরার পরিচয় দেয়ায় মোকলেস ভিষণ রকম অবাক হয়ে যায়। কিন্তু পরে আর কিছু বলে নি। চুপচাপই ছিল সে। এদিকে তাওহীদ ঢাকায় কল করে মাহবুব সাহেব রাবেয়া বেগম, মাইশা-সাকিল সবাইকে বলে দেয় তাহুরার কথা। প্রথমে সবাই অবাক। কিন্তু পরে তাওহীদ সব টা বুঝিয়ে দেয়। মাইশা অনেক খুশি তনুকে খুজে পাওয়ার ক্ষেত্রে। রাবেয়া বেগম খুশি তবে নাতিনের জন্যে। ছেলেকে স্ট্রেইট জানিয়ে দিয়েছেন তাহুরাকে নিয়েই যাতে তাওহীদ ঢাকা ফিরে।
তাওহীদ তাহুরাকে কোথায় রাখবে কু করবে ভেবে কুল পাচ্ছে না। তার মেয়ে কবে পৃথিবীতে এলো? কবে এতো বড় হয়ে গেলো? সে টের টিও পেলো না।
তাহুরা অনেক খুশি আজকে তার পাপাইকে পেয়ে।
- মাম্মাম কি খাবে?
- আইতিক্রিম (আইসক্রিম)
মেয়ের আবদার অনুযায়ী বাসায় আইসক্রিমের মেলা বসিয়ে দেয় তাওহীদ। মেয়ের যেটা পছন্দ সেটাই নিবে। মেয়েকে মাথায় রাখবে না পিঠে রাখবে সে ভেবেই পাচ্ছে না। এতদিন পরে নিজের সন্তানকে পেয়েছে তাওহীদ। আনন্দে সে আত্তহারা। খুশি যেন থামেই না তার।
অন্যদিকে তনু, রুমের এক কোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে আকাশ দেখছে।
পিছন থেকে একটা হাত এসে তনুর কাধকে স্পর্শ করে। হাতের স্পর্শ বলে সে হাত হচ্ছে তনুর মায়ের। মায়ের স্পর্শ সব সন্তানরাই বুঝে ফেলে।
- মা কিছু বলবা?
- বুঝলি কি করে আমি আসছি
- তুমি আমার মা, তোমার স্পর্শ আমি বুঝবো না
- কিরে মা, তাহুরাকে দিয়ে দিলি কেন?
- কি করতাম মা আমি, শত হোক তাওহীদ ওর বাবা, আমি বাবা আর সন্তান কে আর কত আলাদা করতাম
- তাহলে তোর কি হবে তাওহীদ যদি তাহুরাকে না দেয়
- দিবে মা, দিবে, আমার মেয়েকে আমাকে দিতেই হবে তার
- এত সিউর কিভাবে হচ্ছিস কিভাবে
- তুমি দেখে নিও তাহুরা আসবে
- আসলেই ভালো
- হু
অন্যদিকে তাহুরা খেলায় মেতে আছে। মায়ের কাছে যাওয়ার কথা তার মনেই নেই।
পর্ব ২৯
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত ৮ টা। তাহুরার খেলার দিকেই মন। ঘড়িতে তাকাচ্ছে বার বার তাওহীদ। মনে মনে ভাবছে তনুকে একটা কল করলে ভালো হতো। কিন্তু নাম্বারই তো নেই।
অন্যদিকে বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে তনু। কখন তার মেয়ে টা আসবে। সিড়িটা খালি পড়ে আছে। কলিংবেল টাও বাজছে না। তাহলে কি কলিজার ধন টাও হাত ছাড়া হয়ে গেলো?
চোখের কোণ বেয়ে পানি গুলো ঝরে যাচ্ছে। এমন সময় রুমেল এসে সামনের চেয়ার টায় বসে।
- কিরে, মন টা কু ডাকছে তো?
- নাহ তেমন কিছু না
- বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছিস যে
- ও তো এখনো এলো না রুমেল
- তোর কি মনে হয় আসবে আর?
- আসবে রে আসবে, ও আমার মেয়ে
- কেন দিতে গেলি?
- সকালে মা ও একই প্রশ্ন করেছিল কেন দিলাম, কি করতাম বল? ওর ও তো জানা দরকার ওর বাবা কে? আমার মেয়েটা আর যাই হোক পিতৃ পরিচয়হীন ছাড়া বাঁচবে না
- হঠাৎ এমন বললি? কিরে কেউ কিছু বলছে নাকি
- ওর স্কুলে কয়েকজনকে কথা বলতে শুনেছিলাম, তাহুরার বাবাকে তো কখনো দেখি না, ওর কি বাবা আছে আদৌ,
আমার বাচ্চাটা কেন প্রশ্ন হয়ে থাকবে বলতে পারিস - ওদের কাজ নেই খেয়ে দেয়ে কি করবে তাই সমালোচনা নিয়েই ব্যস্ত তারা
- তাওহীদকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না আর না তাওহীদ আমাকে যে বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছে রাফাত ওকে সে বিষ আর কাটবে না আমি চাইও না কাটুক, কিন্তু আমি প্রথমবারের জন্য তাওহীদের চোখে একজন বাবার মমতা দেখেছি যে তার সন্তানকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল। তাহুরাকে দেখছিস এতটুকু মাম্মাম পাখিটা আমার, আমাকে বলে মাম্মাম এতাই তি আমাল পাপাই? কি করে বলতাম যে না এ তোমার পাপাই নয়
- সবই বুঝলাম, কিন্তু এটা কি ভেবেছিস তাওহীদ যদি তাহুরার কাস্টাডি চেয়ে আপিল করে, তখন কি করবি
- রায় আমার কাছেই আসবে নয়তো দুজনকে এক হতে হবে। আপাতত তা নিয়ে ভাবছি না, ভাবছি আমার মাম্মাম পাখি টা যাতে কারো কাছে প্রশ্ন হয়ে না থাকে কিংবা ওর জন্মটা যাতে প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে না থাকে
- আচ্ছা কাদিস না
- এখনো আসছে না কেন, বুঝতেছ না
- হয়তো আসবে না
- মেয়েটা রাতে কাদবে রে
এমন সময় কলিংবেল টা বেজে ওঠে। তনু দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে। দেখে খেলনা হাতে তাহুরা দাঁড়িয়ে আছে আর পাশে তাওহীদ। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে তনু
হাজারো চুমু একে দেয় মেয়ের গালে নাকে মুখে। তাওহীদ তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। তনুকে দেখতে বড্ড ক্লান্তু লাগছে। চোখের চারপাশ টা কালো হয়ে গেছে। বরাবরের মতো আজও সাদা কাপড় পড়ে আছে সে।
- মাম্মা আমি তলে (চলে) আসতি (আসছি)
- মাম্মাম পাখি, মাম্মাম তোমাকে অনেক মিস করেছে
- আমি কলি (করি) নি, পাপাই ছিল সাতে
- খেয়েছো মাম্মাম পাখি
- হ্যাঁ মাম্মাম, পাপাই আতো (আসো) ভেতলে (ভেতরে) আতো (আসো)
- নাহ আম্মুন, আরেকদিন যাবো তুমি যাও রুমে যাও আম্মুন আমি তোমার মাম্মামের সাথে একটু কথা বলবো
- আত্তা (আচ্ছা), ওহহহহহ পাপাই কাল আমাল (আমার) স্তুলে (স্কুলে) যাবা
- কেন আম্মুন
- কাল তবার (সবার) মাম্মাম পাপাই আসবে আজকে মিস বলেতে (বলেছে)
আমাল (আমার) তো মাম্মাম আছে পাপাইও আছে দুজনেই যাবে - আচ্ছা কাল আমিও যাবো আম্মুন, এখন তুমি রুমে যাও
- লাপ্পিউ পাপাই
- লাভ ইউ টু আম্মুন
তাহুরা পুতুল নিয়ে খেলা করতে করতে ভেতরে চলে যায়। তনুও ভেতরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়, আর তখনি
- শুনো
তনু থেমে যায়,
- আমি তাহুরার সাথে রোজ দেখা করতে চাই
- ও আপনার সন্তান, আপনার রক্ত বইছে ওর মাঝে, দেখা করবেন ওর সাথে, সমস্যা নাই
- ধন্যবাদ, আর আমি ওকে আমার কাছেই রাখতে চাই, এই ৫ বছর আমি ওকে ছাড়া থেকেছি আর না
- আসছি
- ওর স্কুলে প্রোগ্রাম কখন কাল
- ১১ টায়
- কোন ক্লাসে পড়ে আমার আম্মুন টাহ
- প্লে তে দিয়েছি এবার
- ওহ, ওকে
তাওহীদ চলে যায়। তনু কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে। একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে দরজা টা ভেতর থেকে লক করে দেয় তনু।
পরদিন সাড়ে ১০ টায় তাওহীদ তনুর বাসার সামনে এসে গাড়িতে হর্ন দেয়। শব্দ পেয়ে তাহুরা বারান্দায় দৌড়ে চলে যায়। বারান্দা দিয়ে দেখছে তাওহীদের গাড়ি নিচে দাঁড়ানো। তারাতারি করে রুমে এসে বলে
- মাম্মাম, তালাতালি (তারাতারি) কলো (করো) পাপাই চলে আসছে
- তুমি রেডি হয়ে গেছো তো
- হুম
- তাহলে নিচে যাও মাম্মাম আসতেছি
- তকে (ওকে)
তাহুরা দৌড়ে নিচে নেমে যায়।
- পাপাই
বলে এক দৌড়ে তাওহীদের কোলে চড়ে যায়। তাওহীদও মেয়েকে পেয়ে অনেক খুশি। খুব সুন্দর করে সেজেছে মাম্মাম পাখি টা। লাল রঙের গাউন টায় বেশ মানিয়েছে ছোট্ট পরীটাকে। তাওহীদ চুমুতে ভরিয়ে দিয়েছে তার ছোট্ট মেয়েকে
- আমার আম্মুন কে আজ অনেক কিউট লাগছে
- ত্যাংকু
- ইউ আর মোষ্ট ওয়েলকাম বিউটিফুল লেডি
- হি হি হি
মেয়ের খিল খিল শব্দ করে হেসে ওঠায় তাওহীদের কলিজা টা আবার সতেজ হয়ে ওঠে।
- চলো আম্মুন আমরা যাই
- দালাও (দাড়াও) পাপাই, মাম্মামও তো আতবে (আসবে)
- কই তোমার মাম্মাম
- ও মাম্মাম, মাম্মাম, পাপাই ওই তো মাম্মাম
মাম্মাম এত্ত লেত (লেট) কেন করলা - সরি পাখি, চলো
তাওহীদ একবার তনুর দিকে তাকিয়েছে, আজও সাদা শাড়ি তবে আজকের শাড়ি টা স্লিক এর মতো। একদম গায়ে লেগে আছে। হাতে এক জোড়া চিকন চুড়ি, ঠোঁটে একদম হালকা লিপস্টিক দেয়া। এক কথায় একদম সিম্পল।
পরক্ষণেই তনু বুঝে যায় তাহুরা তো তাওহীদের সাথে যাবে, তাহলে সে কি করে যাবে। তাই বুদ্ধি করে তাহুরার কাছে যায় তনু। তাহুরা তখনও তাওহীদের কোলে। মেয়েকে একটু এলিয়ে কাছে এনে কপালে চুমু দেয় তনু,
- মাম্মাম পাখি তুমি পাপাইয়ের সাথে যাও
মাম্মাম রিক্সা নিয়ে আসতেছি - তেনো (কেনো)
- প্লিজ পাখি জেদ করে না, তুমি যাও মাম্মাম রিক্সা করে চলে আসতেছি
মেয়ের মন খারাপ থেকে তাওহীদ তনুকে বলে,
- গাড়িতেই ওঠো, দুজন এইভাবে আলাদা আলাদা গেলে সবাই কি ভাববে
- তাহুরাকে নিয়ে আগান, আমি স্কুলের একটু পিছনেই নামবো, সমস্যা নেই
- আমার সমস্যা আছে, গাড়িতে বসো
- ইয়েএএএএএএএএ আমি আজকে মাম্মাম পাইয়ের সাতে স্তুলে (স্কুলে) যাত্তি (যাচ্ছি)
- ইয়েএএএএ ইয়েস আম্মুন, চলো যাওয়া যাক
- তলো (চলো)
স্কুলে পৌঁছে তারা দুজনেই সুন্দর ভাবে সিচুয়েশন টা সুন্দর করে সামলে নেয়। কেউ বুঝতেও পারে নি তাদের মাঝে এত প্রবলেম। অন্যদিকে তাহুরাও খুশি। তনু সব দিক ভেবেই তাওহীদকে তাহুরার কাছে আসতে দিয়েছে। তাহুরার বাবার খুব প্রয়োজন, বাবার পরিচয়টা খুব প্রয়োজন তার। তাই সব দিক বিবেচনা করে তনুর এই সিদ্ধান্ত।
স্কুলের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় দুপুর হয়ে যায়। এদিকে তাহুরা পাখির ক্ষুধা লেগে গেছে। সে আবার একটু ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না। কান্নাকাটি আরম্ভ করে দিয়েছে ম্যাডাম।
- কি হয়েছে আম্মুন
- আমার তুধা (ক্ষুধা) লাগছে পাপাই
- কি লাগছে
- ওর ক্ষুধা লেগেছে, মাম্মাম পাখি আর একটু বাসায় গিয়ে খাবো কেমন?
- না মাম্মাম আমি এখনি খাবো
- কিন্তু
- কোন কিন্তু নয়, আমার আম্মুন এখনি লাঞ্চ করবে, ওকে আম্মুন
- তকে (ওকে) পাপাই, লাপ্পিউ পাপাই
- লাভ ইউ টু আম্মুন
প্রায় ১০ মিনিট পর তারা একটা রেস্টুরেন্টের সামনে নামে। তাহুরাকে কোলে নিয়ে তাওহীদ রেস্টুরেন্টে যায়।
তাহুরার প্রতি এতো ভালোবাসা, এতো আদর-মমতা সব কিছুই চোখে পড়ে তনুর। একজন ভালো স্বামী সে কখনোই ছিল না তনুর চোখে কিন্তু একজন পরিপূর্ণ আর দ্বায়িত্ববান বাবা হতে পেরেছে তাওহীদ তনুর কাছে। তনু চায় তাহুরা সব দিক পরিপূর্ণ ভাবে পাক। আর তার জন্য তার বাবাকেও প্রয়োজন। হয়তো তাওহীদের সাথে দেখা না হলে তাহুরাকে সারাজীবন বাবা বিহীন কাটাতে হতো। কিন্তু হয়তো আল্লাহ চেয়েছেন একটু অন্যরকম হোক। তাই এই চট্টগ্রামে তাওহীদকেই পাঠিয়ে দিয়েছেন।
কথা গুলো বসে বসে ভাবছে তনু। নিজের শরীর টাও আজকাল চলে না তার। বুকের উপরের দিক টায় প্রায় রাতেই ব্যাথা করে ওঠে। শরীরের ক্লান্তি টাও দিন দিন বেড়েই চলেছে তার। সামনে বসা তাওহীদ আর তাহুরার দুষ্টুমি দেখছে সে। তার মেয়েটা অনেকদিন পর তার বাবাকে পেয়ে কত খুশি।
- মাম্মাম, ও মাম্মাম
- হ, হ, হ্যাঁ মাম্মাম পাখি বলো
- খাইয়ে তাও (দাও)
- মাম্মাম পাখি, কতবার না তোমাকে বলি কথা গুলো স্পষ্ট করো, কবে করবে মাম্মাম পাখি?
- হি হি হি
- হি হি করে না মাম্মাম পাখি,
- পাপাই তলো (চলো) আমলা (আমরা) আজতে (আজকে) ঘুত্তে (ঘুরতে) তাই (যাই)
- কোথায় ঘুরতে যাবে আম্মুন
- তলো (চলো) তেভাল তাই
- কিহহহহহ,
- মাম্মাম পাখি তেভাল না নেভাল হবে
- মাম্মাম তুমি পতা (পঁচা) খালি ভুল ধলো (ধরো)
- তুমি ভুল বলো কেন?
- ধুল
- ধুর
- মাম্মাম
- মাম্মাম পাখিইই
খিল খিল করে তাহুরা হেসে দেয়। তাওহীদ তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। কেন জানি তনুকে অসুস্থ অসুস্থ লাগছে তার কাছে। কিন্তু ওইযে ইগো, ইগোটাই বড় সমস্যা। আর তনু যা করছে তার সাথে সে তা জীবনেও ভুলবে না। তাই তার এতো ইগো।
দুপুরে লাঞ্চ সেড়ে বিকেলে ঘুরে তাহুরাকে অনেক কিছু কিনে দিয়ে বাসার সামনে ড্রপ করে দেয় তাওহীদ। এখন তাহুরার বায়না তার পাপাইকেও রাতে থাকতে হবে তার সাথে। সে তার পাপাই-মাম্মামের সাথে ঘুমাতে চায়। তনু কি করবে বুঝতেছে না অন্যদিকে তাওহীদও বুঝতেছে না কি করবে?
- না না পাপাই তলো তুমি তলো আমাল কাতে ঘুমাবা তলো
- না আম্মুন আরেকদিন যাবো
- না না তলো এখুনি তলো
- আম্মুন জিদ করে না, আরেকদিন যাবো
- না না
- মাম্মাম পাখি, শুনো
- বলো
- পাপাইয়ের সাথে তুমি থাকতে চাও?
- হুম
- আচ্ছা তাহলে পাপাইয়ের সাথে চলে যাও কাল তো স্কুল অফ, সকালে চলে এসো
- না না আমাল তোমাকেও লাগবে, পাপাই আতো আমাল সাতে আতো
প্রায় কয়েক্ষন যাবত জোড়াজুড়ি করার পর তনু দেখছে তাহুরাকে সামলানো যাচ্ছে না। অগত্যা তনু তাওহীদকে বলেই ফেলে,
- কোন অসুবিধা না হলে আজ রাত টা এখানে থেকে যান, ওর ভালো লাগবে
- কিন্তু
- তিন্তু না তলো পাপাই তলো
মেয়ের জেদের কাছে হার মানতেই হয় ওদের দুজনকে। গাড়ি পার্ক করে তাওহীদও তনু আর তাহুরার সাথে উপরে উঠে যায়। কলিংবেল বাজলে তনুর মা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। তাওহীদকে দেখে ভূত দেখার মতো অনেকটা চমকে যায় সুরিয়া বেগম।
- নানুমনি দেকো পাপাই আত্তে, আমাল সাতে তাকবে
- ভেতরে আয় তোরা
বাসা পুরো খালি। রুমেল-রাত্রি নেই, তনয়াও নেই, রুবেলের তো নাইট শিফট তাই অফিসে আছে।
- মা
- ওরা কই
- রাত্রি আজকে ওর বাবার বাসায় গেছে সাথে তনয়াও গেছে আর রুমেল অফিস করে ওইখানেই থাকবে
- ওহ
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তনু। ভালোই হয়েছে কেউ নেই বাসায়, না হয় তাওহীদকে দেখে কার কেমন রিয়েকশন হতো কে জানে? ভালোই হলো কেউ নেই
- পাপাই তলো আমাদের রুমে তলো
- চলো
অনেক অস্বস্তি হচ্ছে তাওহীদের। কেমন কেমন জানি লাগছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। কিছুক্ষন পর তনু এক সেট পাজামা-পাঞ্জাবি নিয়ে আসে। রাতে পড়তে হবে তো, তাই ব্যবস্থা করা আরকি
- এটা পড়তে পারেন, ফরমালে তো আর সারারাত থাকা যাবে না
- হুম
- তাও তাও পাপাই তেঞ্চ কলে আতো
- ওকে পাকনি বুড়ি
রাতের জন্য কি খাবার রাখা আছে সেইগুলো ও দেখতে হবে তনুকে। রান্না ঘরে গিয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করছে তনু।
- মা
- হু
- কি রান্না করেছিলে আজকে, কি আছে আজকের রাতের জন্যে
- মাংস ভিজিয়েছি, ভাত বসাবো, আর দুপুরের বেগুনের তরকারি আছে
- উহু মা উনি তো এইসব খায় না, আচ্ছা সরো, আমি মাংস আর ভুনা খিচুড়ি করে দেই
- তুই রান্না করবি
- কেন মা, মনে হয় করি না, আর আজ তাহুরার বাবা আসছে আমার বর না
- ওহ
- যাও তুমি একটু বিশ্রাম করো
- নাহ ঠিক আছি, দে পেয়াজ, মরিচ কুটে দেই
- দিবা?
- হু দে
- তাহলে দাও
অন্যদিকে তাওহীদ ওয়াশরুমে এসে ফ্রেশ হয়ে পাঞ্জাবি টা গায়ে জড়ায়। পাঞ্জাবিটা খুব চেনা চেনা লাগছে তার। হ্যাঁ মনে পড়েছে পাঞ্জাবিটা তাওহীদের। এইতো সেই পাঞ্জাবিটা যেটা ৫ বছর আগে বিয়ের পরদিন যখন তনুর বাড়িতে এক রাত ছিল তখন পড়েছিল। বুকের সাইডে সেম ফুলটা ছিল। হ্যাঁ সেই পাঞ্জাবিটাই তো এটা তার মানে এতো বছর ধরে এটা তনু আগলে রেখেছে। কিন্তু কেন?
প্রশ্নটা খচ খচ করছে তাওহীদের মনে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ছোট্ট তাহুরা নিজের ড্রেস নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।
- কি করে আম্মুন টা
- পাপাই দেকো না এতা খুলতে পালি না
- আসো পাপাই খুলে দেই
- নাহ, আমাল লজ্জা কলে
- হা হা হা ওরে বুড়ি রে
- তাও ওই তয়ারের (ড্রয়ারের) কাতে তাও খুলো আর আমাল নাইত (নাইট) ত্রেস (ড্রেস) তা নিয়ে আতো
- যো আজ্ঞা রাজকুমারী
কাবার্ডের দরজা খুলে মেয়ের নাইট ড্রেস টা খুজছে তাওহীদ। কিন্তু চোখ পড়লো তনুর ড্রেসের সাইডে। ভিষণ অবাক হয়েছে তাওহীদ ড্রেস গুলো দেখে। সব গুলো ড্রেস সাদা রঙের। সাদা শাড়ি, সাদা কাপড়, সাদা সালোয়ার কামিজ, সাদা স্কার্ট, সাদা টপস, সাদা ওড়না সব কিছুই সাদা। কাবার্ড জুড়ে যদি রঙিন কিছু থাকে তা হচ্ছে তাহুরার ড্রেস গুলো আর তনুর সব কিছুই সাদা। দৃষ্টির আড়ালে থেকে সাদা রঙ টা বড়ই উজ্জ্বল লাগে।
নাইট ড্রেস এনে মেয়েকে পড়িয়ে দেয় তাওহীদ। এখন খাওয়ার পালা।
তনু এসে ডেকে নিয়ে যায় ওদের। তাওহীদ প্রথমে খেতে চায় নি পরে মেয়ের জোড়াজুড়িতে খেতে যায়। টেবিল সাজিয়ে দিয়েছে তনু। ক্লান্ত শরীর টা আরো ক্লান্তু লাগছে তার। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। তাওহীদ বুঝতে পেরেছে যে কিছুক্ষন আগেই রান্না করা হয়েছে।
- মাম্মাম পাখি তোমাকে মাম্মাম খাইয়ে দেই?
- তাও
- আচ্ছা
প্লেটে খাবার দেয় তনু। একটু অবাক হয় তাওহীদ। সেই ভুনা খিচুড়ি। আজও ভুনা খিচুড়ি করেছে তনু সাথে ডিম ভাজা মাছ ভুনা আর মাংস ভুনা। খাবারের টেবিলের আশেপাশে তনুর মাকে না দেখতে পেয়ে তাওহীদ বলে
- আন্টি আংকেল খাবেন না?
- মা রাতে রুটি খান, ডায়াবেটিস হয়ে গেছে তাই খেয়ে শুয়ে গেছে
- ওহ আর আংকেল
- বাবা আজ প্রায় সাড়ে ৪ বছর হলো মারা গেছেন
কথাটা শুনে প্লেটের মধ্যেই হাতটা থেমে যায় তাওহীদের। কথাটা শুনে খুব খারাপ লেগেছে তাওহীদের। কারন সে অন্তত দেখেছে তনু অনেক এটাচড ছিল তার বাবার সাথে। মন রক্ষার্থে অল্প কিছু খেয়ে নিয়েছে তাওহীদ। তনু বরাবরই রান্না টা ভালো করে। আজও বিপরীত কিছু হয় নি। তাহুরাকে খাইয়ে মুখ মুছিয়ে রুমে পাঠিয়ে দেয় তনু। তাওহীদও রুমে চলে যায়। কিছুক্ষন পর দরজার পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে ডাইনিং রুমের টেবিল টাতে। তনু একা একা বসে খাচ্ছে। প্লেটের দিকে নজর দেয় তাওহীদ। অল্প কয়েটা খিচুড়ি নিয়েছে প্লেটে, খালি খিচুড়ি কয়টা মুখে ভরে দিয়ে পানি দিয়ে গিলছে তনু, না নিলো মাছ না নিলো মাংস। এমন করে তিন লোকমা খেয়ে বাকি খিচুড়ি গুলো এটো করে ফেলে দিল। তারাতারি তাওহীদ দরজার কাছ থেকে সরে গিয়ে খাটে চলে যায়। তাহুরা তখন তার বাবার মোবাইলে টেম্পল রান খেলতে ব্যস্ত।
- আম্মুন টা কি করে
- আম্মুন তা গেম তেলে
- ওহ আচ্ছা তাই
- পাপাই আমাতে একতা ত্যাব কিনে দিবা?
- আচ্ছা কিনে দিবো কিন্তু তুমি তো এখনও ছোটো আছো আম্মুন ট্যাব দিয়ে কি করবে
- কিত্তু কলবো না তুধু গেম তেলবো
- আচ্ছা
এমন সময় তনু রুমে আসে। হাটতে হাটতেই তাহুরাকে বলতেছে
- মাম্মাম পাখি ঘুমিয়ে পড়ো
- তুমিও আতো
- মাম্মাম আজ তোমার মনির রুমে ঘুমাবো তুমি আর পাপাই ঘুমিয়ে পড়ো
- না না তুমিও আতো
- মাম্মাম পাখি আজকে কিন্তু বড্ড বেশি বায়না করতেছো
মায়ের ধমক খেয়ে ছোট্ট তাহুরা কেদে দেয়। এটা যে তার ঢং এর কান্না তা খুব ভালো করেই জনে তনু।
- আচ্ছা হয়েছে হয়েছে মাম্মাম পাখি নামের এক বুড়ির কাদতে হবে না এখন
- তুমি আতবা কি না
- ফ্রেশ হয়ে আসি, তুমি চোখ বন্ধ করো
- তকে
তনু ফ্রেশ হয়ে এসে তাহুরার পাশে এসে শুয়ে পড়ে।
আজ ৫ বছর পর আবার তনু তাওহীদ এক খাটে। শুধু ব্যবধান মাঝে আছে তাদের দুজনের কোন এক সময়ে কাটানো একান্ত কিছু মুহুর্তের ফসল তাহুরা। সময় টা বড্ড স্বার্থপর সে শুধু নিজের তাগিদেই ছুটে এ চলে।
মাঝরাতে হঠাৎ বুকের মধ্যে থাকা ব্যাথাট চিন চিন করে জানান দিচ্ছে তনুকে। দুপাশ থেকে কেমন জানি চাপা ব্যাথাটা ক্রমশ বেড়ে উঠছে তনুর। ঘুমটা ভেঙে যায় তনুর। আস্তে করে উঠে গিয়ে ডাইনিং রুমে চলে যায় তনু। কিছুক্ষণ সেখানে বসে সময় কাটায় তনু। ওষুধ খেয়ে আবার এসে শুয়ে পড়ে তনু।
এইসব কিছু কেউ একজন দেখছিল আর সে হচ্ছে তাওহীদ। মনে তার অনেক প্রশ্ন। তনু এমন হয়ে গেল কেন? তার কি সমস্যা? আর রাফাতের সাথের সম্পর্কটা তা কি ছিল? প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তাওহীদ।
পরদিন তাহুরাকে ঘুমে রেখেই চলে যায় তাওহীদ। অফিসে প্রচুর কাজ থাকায় বেরিয়ে যায় তাওহীদ। আর এদিকে তাহুরা ঘুম থেকে উঠে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। তার পাপাইকে চাই এক্ষুনি চাই।
তনু বুদ্ধি করে তাওহীদের নাম্বারটা নিয়ে নেয়। তখন সেই নাম্বারে কোন দিয়ে তাহুরাকে দিয়ে দেয় তনু।
তনুর ফোন পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ফোন টা রিসিভ করে তাওহীদ।
- হ্যালো
- হ্যালো পাপাইইইইইইই
- কি হয়েছে আনার আম্মুনের, আমার আম্মুন কাদছে কেন?
- তুমি আমায় ফেলে তলে গেতো কেন
- কে বলেছে আম্মুন, পাপাই তো অফিসে আছি
- তুমি তালাতালি তলে আতো তো পাপাই
- আচ্ছা আম্মুনটা
সময় গুলো ভালোই কেটেছেভেই কয়েকটা দিন। তাওহীদের এদিকের কাজ তেমন শেষ। এইবার ঢাকায় ফেরার পালা। তাওহীদ তো তাহুরাকে ছেড়ে কখনোই ঢাকা যাবে না। গেলে তার মেয়েকে নিয়ে যাবে সে।
কিন্তু তাওহীদের মনে প্রশ্ন, তাহুরা তো তার মাকে ছেড়ে ঢাকা যাবে না। আবার তাওহীদকেও ঢাকা যেতে যাবে না।
তাহুরা একদিকে যেমন তার মাকে চায় অন্যদিকে সে তার বাবাকেও
চায়।
এই ব্যাপারে তাওহীদ বসতে চায় তনুর সাথে। যেই ভাবা সেই কাজ।
তাওহীদ তনুর সাথে দেখা করে তাও বাসায় নয় কোন এক রেস্টুরেন্টে।
- জ্বি বলেন কি বলবেন
- আমি কাল ঢাকা চলে যাচ্ছি
- ওহ
- এখন আমি তো তাহুরাকে ছেড়ে যাবো না
- মানে
- আমি ওকে আমার সাথে করে নিয়ে যেতে চাই
- কোথায়?
- কোথায় মানে, ঢাকায়
তাহলে কি তনুর অনুমানটাই ঠিক ছিল? তাওহীদ তাহুরাকে নিয়ে যেতে চায় নিজের সাথে। তাহলে তনু, ও বাঁচবে কাকে নিয়ে?
পর্ব ৩০
এইবার ঢাকায় ফেরার পালা তাওহীদের। তাওহীদ তো তাহুরাকে ছেড়ে কখনোই ঢাকা যাবে না। গেলে তার মেয়েকে নিয়ে যাবে সে।
কিন্তু তাওহীদের মনে প্রশ্ন, তাহুরা তো তার মাকে ছেড়ে ঢাকা যাবে না। আবার তাওহীদকেও ঢাকা যেতে যাবে না।
তাহুরা একদিকে যেমন তার মাকে চায় অন্যদিকে সে তার বাবাকেও চায়।
এই ব্যাপারে তাওহীদ বসতে চায় তনুর সাথে। যেই ভাবা সেই কাজ।
তাওহীদ তনুর সাথে দেখা করে তাও বাসায় নয় কোন এক রেস্টুরেন্টে।
- জ্বি বলেন কি বলবেন
- আমি কাল ঢাকা চলে যাচ্ছি
- ওহ
- এখন আমি তো তাহুরাকে ছেড়ে যাবো না
- মানে
- আমি ওকে আমার সাথে করে নিয়ে যেতে চাই
- কোথায়?
- কোথায় মানে, ঢাকায়
- তাহুরা কি যাবে?
- জানি যাবে না, তাই তো এখানে আসা
- আমায় কি কিছু করতে হবে?
- তাহুরা তার মাকেও চায় সাথে বাবাকেও
আর আমি কোন মতেই তাহুরাকে এইবার ছাড়তে পারবো না - তো
- তো, তাহুরাকে আমি ঢাকা নিয়ে যাবো সাথে তোমাকেও যেতে হবে
- আমি গিয়ে কি করবো? আপনি চাইলে তাহুরাকে নিয়ে যেতে পারেন
- হা হা হা, মিস তনুশা তুমি বরাবরই পাক্কা খেলোয়াড়, তুমি খুব ভালো করেই জানো যে তাহুরা যাবে না তাই গা-ছাড়া কথা বলছো
- আপনার কি তাই মনে হয়?
- দেখো তর্কে যেতে চাচ্ছি না আমি চাই তাহুর আমার কাছে থাকুক আর তাহুরার থাকা টা ডিপেন্ড করছে তোমার উপরে। আমার দুর্বল পয়েন্টই হচ্ছে তাহুরা, সো আমার দুর্বল জায়গা নিয়ে একবার তো বিশ্বাসঘাতকতা করেই ফেলেছো আর একবার করতে যেও না
- কবে যেতে চাচ্ছেন?
- কালকেই
- ঠিক আছে
- তুমি যাচ্ছো তো?
- হ্যাঁ, তবে আপনার পরিবার?
- তা আমি ম্যানেজ করে নিব
- আসছি
তনু বের হয়ে গেছে রেস্টুরেন্ট থেকে। এতক্ষন তাওহীদের অভিযোগ গুলো শুনছিল তনু। কিন্তু কাল রাতে সব ভেবে নিয়েছে তনু। সব তার ভাবনা মতোই চলছে। এখন শুধু সব সেট-আপ দেয়ার পালা তনুর।
আজ সে বড্ড বেশি ক্লান্তু। জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে সে আজ বড্ড বেশি ক্লান্তু হয়ে গেছে।
বাসায় এসে সব কিছু ম্যানেজ করে নেয় তনু। তনু বরাবরই চটপটের। সব কিছু নিমিষেই ব্যাক-আপ দিতে পারে শুধু নিজের জীবন টাকেই ব্যাক-আপ দিতে পারলো না। তাহুরাকে ১ ঘন্টার মাঝে সব শিখিয়ে দিয়েছে তনু। তনুর কাছে সবার ছবি ছিল সবাইকে দেখিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে তাহুরাকে। এটা দাদান এটা দিদুন এটা ফুপি আম্মু তাহুরা সবাইকেই চিনে ফেলেছে ১ ঘন্টার মধ্যে।
রুমেল তনুর এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। সে কোন মতেই চায় নি যে তাহুরা ঢাকা যাক আর সেখানে তনুও যাচ্ছে। এটা তার সহ্য হচ্ছে না।
অপরদিকে ভাইয়ের রাগ জেদ সবটা জানে তনু। তনুর ভালোবাসা দিয়ে সে আবার তার ভাইয়ের মন গলাতে পারবে তাও সে জানে তাই আর বেশি বাড়ায় নি কথা।
পরদিন তাহুরা আর তনুকে নিয়ে ঢাকা রওনা দেয় তাওহীদ। ৩ ঘন্টা জার্নি করে মাহবুব মেনশনে পা রাখে তাওহীদ সাথে তাহুরা আর তনু। চেনা পরিবেশে আবার পা রাখে তনু, তবে এবার অচেনা হয়ে ঠিক যেমন ৫ বছর আগে ২২ তারিখ রাত ১১ টা ৩০ মিনিটে পা রেখেছিল এই বাড়িতে।
তাহুরাকে নিয়ে প্রবেশ করার সাথে সাথে বাড়িতে আনন্দের ধুম পড়ে যায়। মাহবুব সাহেব এবং রাবেয়া বেগমের আনন্দের সীমা নেই। তাহুরাও দাদা দাদি কে পেয়ে লুতুপুতু। তনু তখনও বাহিরে। ভেতরে যাবে কি যাবে না দ্বিধা দ্বন্দ্বের মাঝে আটকে আছে।
তাওহীদ আগেই সবাইকে সব টা জানিয়ে দিয়েছিল। প্রায় ১০ মিনিট পর তনু বাড়িতে ঢোকে। এই সেই বাড়ি যেই বাড়ি থেকে কোন এক অন্ধকার রাতে তাকে বের করে দেয়া হয়েছিল। আর আজ সেখানে ৫ বছর পর আবার আসতে হলো তাকে শুধুমাত্র মেয়ের জন্যে। তনুকে দেখে সবাই অবাক। আগের থেকে অনেকটা বদলে গেছে তনু। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।
শরীরটাও ভেঙে গেছে অনেকটা। সাদা কাপড়। এসবের মাঝেও তনু অন্যরকম সৌন্দর্য নিয়ে আছে। এখনকার তনুর দিকে দু দন্ড তাকিয়ে থাকলেই আপনা আপনি চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ার মতো হয়ে যায় সবার।
অবাক কর কথা হচ্ছে কেউই কথা বলে নি তনুর সাথে। শুধু রাবেয়া বেগম কাছে গিয়ে দারুন একটা কথা বলেছেন
- ভেবে নিও না মাথায় চড়ে বসবে, আমার একমাত্র নাতিনের জন্য তোমাকে এখানে রাখা, আর কিছুই না, নিজের অবস্থান টা কখনো ভুলবা না
- আপনারা যে স্বার্থপর তা আমার জানা আছে, স্বার্থের জন্য আপনারা অনেকখানি নিচেও নামতে পারেন তাও আমার জানা, তবে এবার আমিও স্বার্থের জন্যেই এসেছি আমার মেয়ের জন্য এসেছি
- দেখা যাবে, টাকা পয়সার লোভ তো আগের থেকেই ছিল তোমার, তাই তো আমার ছেলে থাকা সত্যেও আরেক বড় লোক ধরে রাখছিলা, তাই না
- ভুল বললেন, টাকা পয়সার লোভ কখনো ছিল না বরং আপনারা ভুলে যাচ্ছেন আপনারাই আমায় এনেছেন। আপনার ওই মদতি জুয়ারি ছেলেকে ঠিক করার জন্য। আর রইলো কথা সম্পত্তি টাকা পয়সার, আমি থুক ফেলি এমন সম্পত্তি আর টাকা পয়সার উপরে আর থুক ফেলি আপনার ওই ছেলের উপরে
এই কথা বলে তনু উপরে চলে যায়। রাবেয়া বেগম তো পারে না এখনি তনুকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে।
মাইশাও উপরে যায়। গিয়ে দেখে তনু দক্ষিন পাশের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মাইশা বুঝে যায় তনুর দাঁড়িয়ে থাকার কারন। আস্তে করে কয়েকবার ভাবি বলে ডাকে মাইশা কিন্তু জবাব পায় নি তনুর কাছ থেকে। তারপর কিছু একটা মনে করে আপু বলে ডাক দেয় মাইশা। আর তখন তনুর জবাব হয়,
- জ্বি, কিছু বলবে
এইবার আর মাইশার বুঝতে বাকি থাকে না কিছু। সবটা পরিষ্কার তার কাছে। ভাবি ডাকটার সাথে তনুর আর কোন সম্পর্ক নেই তাই বুঝিয়ে দিয়েছে তনু।
- না বলছিলাম কি
- আমার থাকার মতো কোন ঘর আছে কি
- কেন তুমি তো
- প্লিজ, অন্য কোন কথা বলো না,
একটা রুমের ব্যবস্থা করো
- আচ্ছা
- আর হ্যাঁ, তুমি অনেক কিউট হয়ে গেছো আগের থেকে
- তাই তোমার তাই মনে হয়
- হ্যাঁ, বিয়ে করলে কবে?
- এই তো সামনের মাসের ৫ তারিখ দুই বছর হবে
- যাক আলহামদুলিল্লাহ ভালো
- জিজ্ঞাসা করলে না কার সাথে করলাম
- সাকিল ভাইয়া অনেক ভালো একজন মানুষ, দেখে রেখো ওনাকে
এই বলে তনু সামনের দিকে চলে যায়। টপ টপ করে পড়ে যাওয়া চোখের পানি গুলো মুছে ফেলে মাইশা।
তাওহীদের রুমের পাশে একটা রুম খালি পড়ে আছে। ওই রুমটা তনুর জন্য ঠিক করে দেয় মাইশা।
দিন আসে রাত যায় আবার রাত আসে দিন যায়, সময় থেমে নেই। তাহুরাকে নিউ স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। নতুন পরিবেশে এসে নিজেকে ভালোই মানিয়ে নিয়েছে তাহুরা। দাদান দিদুন ফুপি ফুপার চোখের তারা সে এখন। বাবার কলিজা সে এখন। আর মায়ের অন্তর তো সে আগের থেকেই।
ইদানীং তাওহীদের তনুকে আবার ভালো লাগতে শুরু হয়েছে। তনুর শারীরিক অবস্থা ততটা ভালো না দেখলেই বুঝা যায় কিন্তু বুঝতে দেয় না কাউকে। শুয়ে বসেই থাকে অনেকটা সময় নিয়ে। তাওহীদের কাছে খুব খারাপ লাগে, তনুকে যখনই দেখে তখনই বুকের পাশ টা চিন চিন করে উঠে তাওহীদের। আর আরো বেশি খারাপ লাগে যখন তনুকে সাদা কাপড়ে দেখে তখন। কিন্তু কিছুই বলতে পারে না
একদিন বিকেলে তাওহীদ তাহুরাকে নিয়ে গার্ডেনে খেলছিল ওই সময় তাওহীদের বাবা মাহবুব সাহেব ছেলের পাশে গিয়ে বসেন।
- কিছু বলবে বাবা?
- হুম
- বলো
- সারাটা জীবন কি এইভাবেই থাকবি?
- বেশ তো আছি বাবা
- এইভাবে থাকাকে থাকা বলে না
- ভালো আছি আমি বাবা
- তনুশাকে নিয়ে আবার শুরু কর
- বাবা
- ওইযে দেখ তোদের অংশ আমার দিদিভাই টা, সে যখন বড় হবে কি জবাব দিবি?
- জানি না বাবা
- ভেবে দেখ কি করবি, আর হ্যাঁ মনে হচ্ছে ৫ বছর আগে একটা পাপ করেছিলাম আমি, প্রায়শ্চিত্ত কিভাবে করবো জানি না
আর শুন পারলে তনুকে বলিস সাদা কাপড় পড়া ছেড়ে দিতে
বাবার কথা গুলো মন দিয়ে ভাবে তাওহীদ। সম্পর্কটা কি ঠিক করে নেয়া যায় না? তাওহীদ কি এই ভাঙা সম্পর্কটা কে ঠিক করতে পারবে? তনু কি এখন রাজি হবে?
সব কিছু বিশ্লেষণ করে তাওহীদ সিদ্ধান্ত নেয় যে সে একবার হলেও তনুর সাথে কথা বলবে।
তাওহীদের এক ক্লাইন্ট আজ বাসায় আসবে। ব্যবসার কাজে ঢাকা আসছে সাথে বউ বাচ্চাও আসছে। তাই তাওহীদের সাথেও দেখা করতে আসে।
সব রান্না বান্না আজকে তনুই করেছে। রাবেয়া বেগম একটু অসুস্থ, আর মাইশা রান্নার ব্যাপার টা ততটা ভালো বুঝে না তাই তনুকেই সাহায্য করতে হয়েছে। সব রান্না একা হাতে করেছে সে তাও এই অসুস্থ শরীরে।
দুপুরের দিকে তাওহীদের ক্লাইন্ট তার বউ বাচ্চা নিয়ে বাসায় হাজির হয়। তাওহীদ সাকিল মিলে তাদের সাথে কথা বলে মাইশাও আছে। সবার সাথেই মোটামুটি কথা বলে ওরা তাওহীদের ওয়াইফের সাথে কথা বলতে চায়। মাইশা ব্যাপার টা বুঝে গিয়ে তনুকে উপরে ডাকতে যায়। তনুও আর কি করবে? মান সম্মানের প্রশ্ন, সম্মান রক্ষার্থে যেতে তো হবেই। তাই তাদের সামনে যায় তনু।
- আসসালামু আলাইকুম ভাবি
- ওয়ালাইকুম আসসালাম, আসসালামু আলাইকুম
- ওয়ালাইকুম আসসালাম
কেমন আছেন ভাবি?
- আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি? আপনারা কেমন আছেন?
- আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি
ভাবি কি অসুস্থ নাকি? - নাহ ভাবি, গরম বেশি পড়ে তো তাই ক্লান্ত লাগে
- ওহ তবে তাওহীদ ভাইয়া কিন্তু অনেক লাকি আপনার মতো বউ পেয়েছে
অন্যদিকে তাহুরা তো এমনিতেই মিশুক আরও পেয়েছে পিচ্চি পিচ্চি বাবু তাদের নিয়ে মেতে আছে সে।
দুপুরের খাবার খেয়ে আরও কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে তারা চলে যায়। তনু সব গুছিয়ে পরিষ্কার করে রাতে তাহুরার কাছে যায়। গিয়ে দেখে বাপ-মেয়ে গল্প করতেছে। মেয়ে বাপের কোলে চড়ে গল্প শুনে। তনু তাহুরার কাপড় গোছাতে গোছাতে বলে,
- মাম্মাম পাখি, তুমি ঘুমাও নি এখনো তুমি কাল স্কুল আছে তাই না
- এত্তু পলেই ঘুমাবো মাম্মাম একন গল্প তুনি
- ঘুমিয়ে যাও পাখি
- হুম
- আজ তো আমার আম্মুন অনেক খুশি ছিল তাই না আম্মুন
- হুম পাপাই কুব খুতি
- পারভেজ আংকেলের বাবুদের সাথে খেলে ভালো লেগেছে?
- হুম অনেত ভালো লেগেতে, পাপাই ও পাপাই
- হুম আম্মুন বলো
- আমার একতা ভাই তাই যেমন শুভ্রার কাছে আতে ভাই
এই কথা শুনে তাওহীদ-তনু দুজনেই অবাক হয়ে যায়। তাহুরা কি বুঝে বললো তাও তারা বুঝে নি?
- তাহুরায়ায়ায়ায়ায়া, বড্ড বেশি পেকে গেছো ইদানীং, চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো, আবার যদি এইসব বলেছো তো দেখে নিও আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না
মনে রেখে দিও কথা টা
তনু রেগে মেগে রুম থেকে বের হয়ে যায়। তাওহীদ চুপচাপ বসে থেকে তনুর বিহেভ টা দেখলো শুধু। তনু যে এত রেগে যায় বা ওর বিহেভ যে এতো খারাপ হয় তা আজ দেখলো
তাওহীদ। যেই তাহুরাকে ও চোখে হারায় সেই বাচ্চাটাকে আজ এইভাবে ধমকে গেল তনু। বাচ্চাটা মায়ের ধমক শুনে ঠোঁট ফুলিয়ে চুপ করে কাদতে থাকে। কাদতে কাদতে এক সময় ঘুমিয়ে যায় বাবার কোলে।
তাহুরাকে শুইয়ে দিয়ে তনুর রুমের দিকে পা বাড়ায় তাওহীদ। আজ কথা বলেই নিবে সে।
তনু কেনই বা তাহুরাকে এইভাবে ধমক দিল তাও জিজ্ঞেস করবে সে। দরজার কাছে গিয়ে পা জোড়া থমকে যায় তাওহীদের। দরজাটা ফাঁক করা ছিল খানিকটা। সেই ফাঁক দিয়ে তাওহীদ দেখছে তনু রুমে পায়চারী করছে আর ডান হাত টা দিয়ে বুকের বা পাশ য়া চেপে ধরে আছে।
কখনো চেপে ধরছে আবার কখনো ডলছে। আবার পানি খাচ্ছে। তনুর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে তাওহীদের চোখের কোণে পানি জমে যায় তাওহীদ তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। পানি খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় তনু
তাওহীদ প্রায় অনেক্ষন করিডোরে পায়চারী করে। রাত যখন প্রায় ২ টা তখন তাওহীদ আবার তনুর রুমের সামনে যায়। উঁকি দিয়ে রুমের ভেতর টা দেখে তাওহীদ। তনু ঘুমিয়ে আছে। ড্রিম লাইটের আলোতে তনুকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তাওহীদ দরজাটা আরেকটু ফাঁক করে
রুমের মধ্যে যায়। গিয়ে দেখে তনু ঘুমাচ্ছে। অনেক ক্লান্ত লাগছে তনুকে। শরীরটা মনে হয় আর চলছে না তার। তাওহীদ বেশ বুঝছে সবটা। তনুর বুকে হাত দেয়া, বুকে প্রেস করা, লুকিয়ে ওষুধ খাওয়া, প্রচন্ড শরীর খারাপ নিয়ে সবাইকে বলা যে সে ভালো আছে সব কিছুই ভাবাচ্ছে তাওহীদকে। তনুকে নিয়ে কালকেই ডক্টর কাছে যাবে তাওহীদ।
বিছানার পাশে সোফায় বসে আছে তাওহীদ। ঘুমন্ত তনুকে দেখছে সে। দুইহাতকে মুষ্ঠি করে বেধে থুতনিতে লাগিয়ে ভাবছে তাওহীদ।
- তোমার কোথায় কষ্ট হয় তনুশা, বুকের বা পাশ টা কি ব্যাথায় চিন চিন করে উঠে? আমায় কেন বলছো না তুমি? এতটা শক্ত হয়ে গেছ কি করে তনু? চোখের পানি গুলোকে আজ বড় অস্ত্র বানিয়ে নিয়ে নিজেকে শক্ত করে নিয়েছো তনু? যেই রাফাতের জন্য আমার সাথে
বিশ্বাসঘাতকতা করলা আর আজ সেই রাফাত ছেড়ে চলে গেল। নাকি জানতে পেরেছিল যে তুমি তার নয় আমার সন্তানের মা হতে চলেছিলে তাই ছেড়ে চলে গেছে।
কথা গুলো ভাবছে আর চোখের পানি গুলো টুপ টুপ করে পড়ছে তাওহীদের। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না তাই আস্তে করে চোখ জোড়া মুছে চশমাটা চোখে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তাওহীদ।
অপেক্ষা কাল সকালের। তনুকে নিয়ে হসপিটালে যাবে সে। আর কোন একভাবে রাফাতের সাথে আবার যোগাযোগ করবে তাওহীদ। তনুকে কেন ছেড়ে দিল তা জিজ্ঞাসা করবে
রাফাতকে। আর তনুর সব ভুল মাপ করে দিয়ে তাহুরার জন্যে তনুকে আবার আপন করে নেবে সে। কিন্তু সবার আগে এটা জানা জরুরী যে কি হয়েছে তনুর? ডক্টর এর সাথে সকাল সকাল এপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখবে সে। শুধু কাল সকাল টা হোক।
পর্ব ৩১
পরদিন সকালবেলা,
তনু প্রতিদিনের ন্যায়ে সব কাজ সেড়ে তাহুরাকে রেডি করিয়ে দেয়। রেডি হয়ে কিছুক্ষন দাদান-দিদুনের সাথে খেলা করে তাহুরা। তারপর তাওহীদের সাথে বেরিয়ে যায় স্কুলের উদ্দেশ্যে। আজ এপোয়েন্টমেন্ট নিয়েছে তাওহীদ। বিকাল ৪ টায় অফিস থেকে এসে নিয়ে যাবে তনুকে।
আর এদিকে তনু বুকের ব্যাথায় ক্লান্ত। আর কিছু কাজ বাকি আছে তার তারপরই ছুটি। দুপুর ৩ টায় তাওহীদ বাসায় আসে। অফিসটা সাকিল সামলাচ্ছে। তাওহীদ এসেছে তনুকে নিয়ে যেতে। নিচে ডাইনিং এ খেতে বসে তনুকে খুজছে তাওহীদ।
- ভাইয়া, তনু আপু উপরে রুমে
- নিচে আসে নি?
- এসেছিল তো, রান্না করে দিয়ে গেল
- ওহ, মা কোথায়
- শুয়ে আছে
- খেয়েছে?
- হ্যাঁ
- বাবা?
- খেয়েছে, তুই খেয়ে নে তো
- তুই খেয়েছিস?
- হ্যাঁ খেয়েছি তনু আপুর সাথে
- ওহ
তাওহীদ ভাতের প্লেটে হাত তো দিয়ে আছে কিন্তু গলা দিয়ে খাবার নামছে না তার। বার বার চোখের সামনে গতকাল রাতের দৃশ্য ভেসে উঠছে। তনুর ছটফট করা তনুর বুকে চাপ দিয়ে ধরা। তাওহীদ এর চোখের সামনে অনবরত ভাসছে। অনেক ভাবাচ্ছে বিষয়টা তাওহীদকে।
তাওহীদ দুই তিন লোকমা খেয়ে ভাতে পানি ঢেলে দেয়। তারপর উপরে যায় তনুর রুমের দিকে। রুমের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় তাওহীদ। তনু কারো সাথে কথা বলতেছে যা তাওহীদ স্পষ্ট শুনতেছে
– তুই কি পাগল হইছিস তনয়া
– নাহ তুই ভাবলি কি করে যে আমি আবারো,
– নাহ কখনোই না, এটা কখনোই পসিবল নাহ
– অবশ্যই, অবশ্যই তাওহীদ একজন ভালো বাবা, আমার কাছে সে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বাবা তাহুরার জন্য, তাই বলে আমি আবারও, নাহ এটা হবে না
– আমার তাওহীদকে প্রয়োজন নেই, নেই প্রয়োজন, আমি এমনি ভালো আছি
- ওর বাবার প্রয়োজন তনয়া, ওর মায়ের থেকে বাবা দরকার, ওর মা ওকে যা দিতে পারবে তার তিন ডবল ওর বাবা দিতে পারবে, আমার মেয়ের সেফটি আমার মেয়ের ভালো মন্দ আমার মেয়ের শিক্ষা সব কিছুই ভালো হবে যদি সে তার বাবার কাছে থাকে। আর তাছাড়া
আনফোরচুনেটলি তাওহীদ তাহুরার বায়োলজিক্যাল ফাদার। সো তাহুরার ওপর তাওহীদের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। তাহুরার ভালোর জন্য সে তার বাবার কাছেই থাকুক,
– অবশ্যই, অবশ্যই আমি ওর মা, আমি মা দেখেই আমি আমার সন্তানের মঙ্গলের জন্য এমন ডিসিশন নিতে পেরেছি
- নাহ, আমি কোন ইমোশনাল ডিসিশন নিচ্ছি না, বরং মন কে শক্ত করেই সব ডিসিশন নিয়েছি, একবার ভাব আল্লাহ না করুক কাল তাহুরার যদি বড় কোন অসুখ হয় আমাকে তো ভিক্ষার হাত নিয়ে ওর বাবার কাছেই আসতে হবে, আমার ভাই বোনেরা হয়তো দিবে কিন্তু
ওদের দিক টাও তো আমায় দেখতে হবে তাই না সেইক্ষেত্রে ওর বাবার অঢেল আছে তখন ওর বাপের কাছেই আমায় হাত ফেলতে হবে। তার থেকে বরং আমার মেয়ের ভালোর জন্য সে
আমার থেকে তার বাবার কাছে অনেক বেশি কমফোর্ট ফিল করবে আর তাছাড়া এখানে সবাই ওকে আপন করে নিয়েছে। আর এই ডিসিশন আমি তাহুরার ভালোর জন্যেই নিয়েছি
- নাহ তনয়া, বাড়তি আর একটা কথাও না। যখন আমার ওকে প্রয়োজন ছিল ও তো আসে নি। ৭ মাসের বাচ্চা জন্ম দিয়েছিলাম। আমার বাচ্চাটা ২ টা মাস ইনকিউবেটরে ছিল, তখন কাউকে পাশে পাই নি। এখন আমার না হোক আমার বাচ্চার তার বাবাকে প্রয়োজন আছে।
এটা আমার সন্তানের আইনগত অধিকার সে তার বাপের টাকা-পয়সা পাবে, তার থেকে ভালো সে তার বাবার কাছেই থাকুক। আর কোন কথা না, রাখছি ভালো থাক।
তাওহীদ এতক্ষন সব শুনেছে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। ফোন টা যে ছুটকির ছিল সে বুঝে গেছে আর তনুশার কথাতেও বুঝা গেছে ফোনের ওপার থেকে তনয়া কি কি বলেছে। কিন্তু তনুশা যা যা বললো কিছুটা ব্রেনে আসলেও পুরোটা আসে নি এখনো। এদিকে ডক্টরের কাছে যাওয়ার টাইম পার হচ্ছে।
তনুর কথা শুনে মনে হচ্ছে সে এভাবে যাবে না তাই অন্য পদ্ধতি আয়ত্ত করতে হবে। তাই হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে যায় তাওহীদ।
তাওহীদকে দেখে খানিকটা চমকে যায় তনু,
- কিছু বলবেন?
- হ্যাঁ
- বলুন
- বাহিরে চলো
- হঠাৎ এই টাইমে
- দরকার আছে
- আচ্ছা আপনি যান আমি আসছি
- নাহ এক্ষুনি চলো
- আচ্ছা চলুন
তনুর হাত টা ধরে টেনে নিচে নামাচ্ছে তাওহীদ। দুপুর টাইম বলে পুরো বাড়ি স্তব্ধ হয়ে আছে৷, তাই কেউ আর ব্যাপার টা দেখে নি। তাওহীদ তনুকে টেনে নিচে নামায় তারপর গাড়িতে বসিয়ে নিয়ে যায়। তনু অনেকটা অবাক, বুকের মধ্যে এক অজানা ভয় কাজ করছে তার৷, হঠাৎ করে তাওহীদ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে
– আমরা কোথায় যাচ্ছি?
– কি হলো বলুন? কোথায় যাচ্ছি আমরা
- চুপ করে আছেন যে, বলবেন তো কোথায় যাচ্ছি?
- হসপিটালে
- কেন?
- এমনি
তনুর বুকে কামড় দিয়ে ওঠে। হাসপাতালে কেন যাবে তাওহীদ। তাহলে কি কিছু আন্দাজ করে ফেলেছে ও?
না না গাড়ি থামাতেই হবে। না হয় সমস্যা হয়ে যাবে।
– গাড়ি থামান
– গাড়ি থামাতে বলছি
- গাড়ি থামায়ায়ায়ান
- চিল্লাচ্ছো তকেন তনুশা
- আপনি গাড়ি থামাবেন নাকি আমি এই চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দিব?
- কিহহহহহ
- হ্যাঁ গাড়ি থামান
তাওহীদ গাড়িটা অনেক জোড়েই ব্রেক করে। কিসমত কানেকশন এর একটা ব্যাপার থাকে না সেটাই এখানে হলো। গাড়িটা স্ট্রেট একটক পার্কের সামনেই এসে থামে। তনুশা গাড়ি থেকে নেমে যায়
তারপর একটা বেঞ্চের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তাওহীদ এমনিতেই বদ মেজাজী। তার উপরে তনুর এমন ব্যবহার সে মানতে পারছে না। সেও নেমে গিয়ে তনুর পাশে দাঁড়ায়।
- বসো
- নাহ ঠিক আছি
- সব সময়ই তো ঠিক থাকো
- হ্যাঁ
- বসো বলতেছি
তনুও বসে পড়ে। পাবলিক প্লেসে এত নাটক তনুর আগেও পছন্দের ছিল না আর এখনও না। তামাশা করার আগে বসে পড়া টা ব্যাটার।
- আমি তোমাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করতে চাই?
- হ্যাঁ বলুন
- তনুশা আমি চাই, আমি চাই, আমরা আবার একসাথে থাকি
- কিহহহহ
- হুম, তাহুরার জন্যে হলেও কি আমরা এক সাথে থাকতে পারি না?
- নাহ পারি নাহ
- কেন?
- কারণ, আমি চাই না আর প্রয়োজন মনে করি না
- তোমার এত ইগো কিসের?
- আমার ইগো, আজকে আপনি আমায় হাসালেন
- আমাকে কি তোমার হাসির পাত্র লাগে
- নাহ, হাসির পাত্রী তো আমি, আগেও ছিলাম এখনও আছি
- আমি সব কিছু ভুলে তোমাকে আবার মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আর তুমি
- আমি চাই নি তো, আমি তো চাই নি আপনি আবার মেনে নেন আমায়, আমি কখনোই চাই নি, আর চাইবোও না
- কেন, চাও না কেন, রাফাতের কাছে যেতে চাও যে তোমাকে লাত্থি মেরে ফেলে চলে গেছে
- লাথি তো আপনিও মেরেছিলেন, ভুলে গেছেন
- আমি আবার এসেছি কিন্তু তনুশা
- আমি চাই না আর ফিরতে
- তুমি কেমন আশ্চর্যজনক মেয়ে, আমি দেখে অবাক, যেখানে তুমি আমার কাছে এসে ক্ষমা চাইবে তা না করে আমি যেখানে বলছি আমরা আবার সব টা মেনে নিয়ে সামনে আগাবো সেখানে তুমি আমায় রিফিউজি করছো
- ক্ষমা, আমি কেন ক্ষমা চাইবো
- আলবাৎ চাইবে, তোমার চাওয়ার প্রয়োজন ছিল কারন তুমি অন্যায় করেছো
- যে অন্যায় আমি করিই নি, তার জন্য কিসের ক্ষমা
- তনুশা
- আমি ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি
- কিসের ডিসিশন
- তাহুরাকে আপনাকে দিয়ে আমি চলে যাবো
- কোথায় যাবে?
- যেখান থেকে এসেছিলাম সেখানেই
- তাহুরাকে সামলাবো কি করে, ও তো মাম্মাম বলতে অজ্ঞান
- ওর মাম্মাম ওকে ছেড়ে একেবারে চলে যাচ্ছে না, শুধু ওর বাবার কাছে রেখে যাচ্ছে, আমার মাম্মাম পাখি বুঝবে
- তনুশা, আমি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারছি না, জীবন আরও একবার আমাকে তোমার দিকে টানছে, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি রাফাতের সাথে তোমার অতীত নিয়ে কোন প্রশ্ন আমি করবো না, কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া তাহুরাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
- বললাম তো আমি তাহুরাকে ছেড়ে থাকতে হবে না আপনার, আমি ওকে আপনাকে দিয়ে দিবো। প্রয়োজন পড়লে ওর কাস্টাডি আমি পুরো সজ্ঞানে আপনাকে হস্তান্তর করে দিব
- শাস্তি দিতে চাচ্ছো আমাকে?
- শাস্তি তো আমিই পেয়ে আসলাম আজ এতটা বছর
- তনুশা প্লিজ চলো সব ভুলে গিয়ে নতুন করে মেয়েটার জন্যে আমরা ভালো থাকি
- নাহ তা আর হয় না, এবার না হয় ভালো থাকার অধিকারটা আমিই আপনাদেরকে দিয়ে গেলাম। চলুন যাওয়া যাকব
- তনুশা, হসপিটালে চলো
- দরকার নেই আমি ভালো আছি
- তুমি ভালো নেই তনুশা
- চলুন, যাওয়া যাক তাহুরা ঘুম থেকে উঠে খুজবে আমায়, না দেখতে পেলে কাদবে অনেক
- ও না দেখতে পেলে কান্না করবে এটা জেনেও ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছো কি করে তনুশা
- তখন অভ্যাস হয়ে যাবে ওর, চলুন
এই বলে তাওহীদকে রেখে গাড়িতে গিয়ে বসে তনু। তাওহীদ কিছুতেই মানাতে পারলো না তনুকে। কি আর করার, ভুলের মাসুল টা হয়তো এভাবেই দিতে হবে তাকে। তাই সেও গাড়িতে গিয়ে বসে আর রওনা দেয় বাড়ির দিকে।
দুদিন পর,
সকালবেলা তাহুরাকে দেখতে না পেয়ে তাওহীদ অস্থির হয়ে ওঠে। রাতে তো তার সাথেই ছিল তাহুরা তাহলে এখন কোথায় যেতে পারে। চশমা টা চোখে লাগিয়ে রুম থেকে বের হয়ে
সিড়ির কাছে যায়। নিচে সবাই আছে শুধু তাহুরা নেই তাহলে তাহুরা নিচে যায় নি। কোথায় যেতে পারে? পরক্ষনেই মনে পড়ে তনুর রুমে আছে হয়তো। সকাল সকাল মায়ের কাছে চলে গেছে।
তাওহীদও তনুর রুমে যায়। গিয়ে দেখে খাটের উপরে চুপ করে লাল রঙের টুকটুকি পুতুল টাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে তাহুরা। মুখটা অনেক গম্ভীর আর কালো করে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েকে দেখে ঘাবড়ে যায় তাওহীদ।
– morning বাচ্চা
– কি হয়েছে বাচ্চাটা, মন খারাপ কেন?
- আম্মুন আজ এত তারাতারি উঠে গেলে যে, কি হয়েছে আম্মুন
- পাপাই মাম্মাম কোতায়?
- মাম্মাম, মাম্মাম হয়তো ওয়াসরুমে সোনা
- মাম্মাম ওতাসরুমে নাই, তুমি দেতো
তাওহীদ ওয়াসরুমে ঢুকে দেখে ওয়াসরুম খালি। তনু ওয়াসরুমে নেই।
- দেতলে তো পাপাই, মাম্মান নেই
- কোন ব্যাপার না আম্মুন, মাম্মাম রান্না ঘরে আছে হয়তো, তোমার জন্য নাস্তা রেডি করছে
- নাহ পাপাই নাহ, মাম্মাম কোথাও নেই, তুমি খুতে তাও আমাল মাম্মাম কে, আমাল মাম্মাম কোতায় গেল
- আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে আম্মুন, আমি দেখছি মাম্মাম কোথায় গেল, কেমন?
এদিক ওদিক তাকাতেই তাওহীদ দেখে বিছানার পাশে রাখা ল্যাম্পসেডের সাথে আটকানো একটা কাগজ দেখা যাচ্ছে।
তাওহীদ তাহুরাকে বসিয়ে রেখে কাগজটা তুলে নেয়।
প্রথম লাইনের দুইটা শব্দেই বুঝে যায় এটা তনুর চিঠি,
- আমি চিটাগং চলে যাচ্ছি। তাহুরার ভালো মন্দ, ওর ভালো থাকা, সুস্থ থাকা সব আপনার কাছেই পাবে ও। আমি ওকে সেইসব কিছুই দিতে পারবো না যেসব আপনি ওকে দিতে পারবেন। তাহুরার সুন্দর ভবিষ্যত আর একটা সুস্থ জীবন ও আপনার কাছে থেকেই
পাবে। আমি আমার নিজের সম্পূর্ণ ইচ্ছায় এবং সজ্ঞানে তাহুরাকে আপনার কাছে রেখে গেলাম। আমি জানি আপনি তাহুরাকে অনেক অনেক ভালোবাসেন, তাহুরাও আপনাকে অনেক ভালোবাসে। আমি তাহুরাকে আপনাকে দিয়ে গেলাম, তাহুরা এখন আপনার,
আমার কোন অধিকার নেই ওর উপরে। আমি জানি আপনি ওর অনেক খেয়াল রাখবেম সেই বিশ্বাস আমার আপনার উপরে আছে, আর ও আপনার সাথে অনেক খুশি থাকবে। তবে আপনি যদি অনুমতি দেন তো আমি মাঝে মধ্যে ওর সাথে মোবাইলে কথা বলে নিবো। আপনার কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আপনি কখনো তাহুরার মনে আমার জন্য কোন
খারাপ ধারণার সৃষ্টি করবেন না। ওর মা একজন খারাপ চরিত্রের মহিলা এটা শুনলে এই দুঃখ নিয়ে আমার মেয়েটা জীবনেও মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে না। আমি চাই আমার বাচ্চাটা মাথা তুলে বাঁচুক। ওর সমস্ত দ্বায়িত্ব আপনাকে সপে দিলাম।
ওকে দেখে রাখবেন।
চিঠিটা পড়ে পুরো স্তব্ধ হয়ে যায় তাওহীদ। তার মানে আজ ভোরেই তনু চলে গেছে। এখন সে তাহুরাকে কি জবাব দেবে। তাহুরা যে বড্ড কাদছে। কি বলবে বাচ্চা মেয়েটাকে। তার মা তাকে তার বাবার কাছে রেখে চলে গেছে। ছোট্ট মেয়েটা কি এইসব কিছু বুঝবে?
তাওহীদ এইসব ভাবছে আর অন্যদিকে তাহুরা মাম্মাম মাম্মাম বলে কাদছে।
পর্ব ৩২
বাসায় সবাই জেনে গেছে যে তনু চলে গেছে। মাহবুব সাহেব ভেঙে পড়েন তবে বুঝান নি। মাইশা মনে মনে ঢুকরে কেদে মরে কিন্তু কাউকে দেখায় নি। রাবেয়া বেগম মহা খুশি তিনি তা সবাইকে বুঝিয়েছেন।
- এত টেনশন করছিস কেন বাবা, আপদ গেছে ভালোই হয়েছে
- আম্মুউউউউউ
- কি হলো কি তুই চিৎকার দেস কেন
- কাকে আপদ বলো তুমি?
- কেন আপদ কে আপদ বলছি
- ও আমাদের তাহুরার মা, তাহুরার জন্মদাত্রী ও
- তাহুরা আমার ছেলের অংশ
- ভুলে যেও না মা, তোমার এই জুয়ারি ছেলের জন্যেই ওকে এনেছিলে
- ও নিজেও কম নাটক দেখায় নাই, স্বামী থাকা সত্ত্বেও আরেক ছেলের সাথে মিশেছে
- আম্মুউউউউ আস্তে,
- আহহহ মাইশা তুমি চিল্লাও কেন
- তুমি থামো সাকিল, কথা বলতে এসো না আর মা শুনো পাপ না বাপ কেও ছাড়ে না, এটা মনে রাইখো
- আমি আমার ছেলেকে আবার বিয়ে করাবো
- মা-য়ায়ায়ায়া, থামবা কথা বেশি বলো কেন তুমি, এই মাইশা তাহুরাকে নিয়ে আয়, ওকে স্কুলে দিয়ে আমি অফিসে যাবো
- আচ্ছা
তাহুরাকে কোন মতেই রেডি করানো যাচ্ছে না। তারপরও বুঝিয়ে শুনিয়ে রেডি করে নিয়ে আসছে মাইশা।
- আম্মুন চলো, স্কুলে যাবে না
- আমি মাম্মামের কাতে তাবো
- হ্যাঁ আম্মুন, তুমি স্কুল থেকে আসো আমি আর তুমি একসাথে মাম্মামের কাছে যাবো
- চত্যি তো
- হ্যাঁ মাম্মাম সত্যি
তারপর তাওহীদ তাহুরাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। অন্যদিকে রাবেয়া বেগম রাগে গজ গজ করতে করতে উপরে চলে যায়। সাকিল ও অফিসের দিকে রওনা হয়।
এদিকে তাওহীদ গাড়ি তো ড্রাইভ করছে ঠিকই কিন্তু মন তার তনুর দিকে। আর তনুর রেখে যাওয়া চিঠির দিকে। মেয়েটা সারাজীবন কষ্টই করে গেল। তারপর আরো কষ্টের সম্মুখীন হলো।
- পাপাই লাখো লাখো
- হ, হ, হ্যাঁ আম্মুন, কি হয়েছে
- পাপাই আমাল স্তুল তলে আত্তে
- ওহ, নামো আম্মুন
- পাপাই প্লমিচ কলো স্তুল শেষে মাম্মামকে আনতে তাবো
- প্রমিস আম্মুন, তুমি স্কুলের ভেতরে যাও, চলো
- তলো
তাওহীদ তাহুরাকে নিয়ে স্কুলের ভেতরে গেল। মেয়েকে ক্লাসে দিয়ে এসে তাওহীদ বেরিয়ে আসে। গাড়ির ভেতরে যেই ঢুকতে যাবে ওমনি তাওহীদের নজরে একজন পড়ে। সে মোবাইলে কথা বলতে বলতে তার গাড়িতে উঠছিল। তার মুখে একজনের নাম শুনে তাওহীদ থমকে যায়
– হ্যাঁ রে বাবা হ্যাঁ, তোমার রাজপুত্রকে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে তারপর আমি এখন নিজের কাজে যাচ্ছি
– ওহ আফরোজ, আর পারলাম না তোমায় নিয়ে আমি। যতটা আমায় তুমি জ্বালাও তার থেকেও আমায় এত ভালোবাসো। পৃথিবীতে অক্সিজেন না হলেও চলবে কিন্তু তোমাকে আমার বড় বেশি প্রয়োজন
- হা হা হা, আচ্ছা আজ দেখবো তুমি কত শক্তিশালী হয়েছো, আচ্ছা শুনো অফিসে যাচ্ছি, ড্রাইভ করবো এখন, সাবধানে থেকো কেমন?
বাই
তাওহীদ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এ তো ওয়াসিম। আফরোজ এর হাজবেন্ড। এত বছর পর। তার মানে আফরোজ এখানেই থাকে মানে ঢাকাতে। তাওহীদ বুঝতে বুঝতেই ওয়াসিম
গাড়িতে উঠে পড়ে। গাড়ি স্টার্ট দিবে এমন সময় ওয়াসিম দেখে কেউ একজন তার গাড়ির গ্লাসটায় টোকা দিচ্ছে। ওয়াসিম তারাতারি করে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। আর সেই লেভেলের ধাক্কা খায়। তার কারন সে যাকে দেখলো সে আর অন্য কেউ না, তাওহীদ দাড়ানো বাহিরে।
- ওয়াসিম?
- তাওহীদ?
- আপনি আফরোজ এর হাজবেন্ড ওয়াসিম না?
- জ্বি, কিছু বলবেন?
- আমাকে চিনেছেন আপনি
- কেন চিনবো না, মাহবুব গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির একমাত্র মালিক মিষ্টার তাওহীদ মাহবুব, কে না চিনে?
- আমি কি একটু আফরোজ এর সাথে দেখা করতে পারি?
- কেন?
- প্লিজ ওয়াসিম, প্লিজ আমার খুব প্রয়োজন,
- তনুশা কোথায় সেটা আফরোজ বা আমি আমরা কেউই জানি না, সরি আমার লেট হয়ে যাচ্ছে
- ওয়াসিম, প্লিজ ওয়াসিম, আমার খুব প্রয়োজন
- দেখুন, এখন আপনি গেলেই প্রবলেম হয়ে যাবে তাছাড়া আমার ওয়াইফ এমনিতেই অসুস্থ
- প্লিজ ভাই, আমি বেশি সময় নিব না
- আচ্ছা ওয়েট তাহলে তো আমার ছেলেটাকে নিয়ে যেতে হবে,
- আমিও আমার মেয়েকে নিয়ে নেই তাহলে
- আপনার মেয়ে? ওয়াও বিয়ে করে নিয়েছেন দেখছি, তনুশাকে বের করে দিয়ে ভালোই করেছেন
- ওয়াসিম আপনি যা ভাবছেন তা নয়
- এখন আর প্রয়োজন নেই আমার ওয়াইফের সাথে দেখা করার
- ওয়াসিম ও আমার আর তনুশার সন্তান
- মানে,
- হ্যাঁ, আমাদের মেয়ে ও ওয়াসিম, আমার আফরোজকে খুব প্রয়োজন, প্লিজ
- আচ্ছা চলুন
তাওহীদ তাহুরাকে নিয়ে আর ওয়াসিম আফনানকে (আফরোজ+ওয়াসিম =আফনান) নিয়ে নিয়ে ওয়াসিম এর বাসার দিকে রওনা হয়। তাওহীদ ড্রাইভার কে কল দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে
বলে আর ওয়াসিম এর গাড়ি করে ওয়াসিমের বাসায় যায়। গাড়িতে বেশ কয়েকবার ওয়াসিম তাহুরাকে দেখছে, একদম মায়ের মতো হয়েছে তাহুরা। আর এদিকে বেশ ভালো ভাব জমিয়ে নিয়েছি আফনান আর তাহুরা।
হঠাৎ করে আফনান ওয়াসিমকে বলে ওঠে
- বাবাই, গত পরশুদিন তোমাকে যেই পরী মেয়েটার কথা বলেছিলাম না?
- হ্যাঁ তো
- বাবাই এই তো সেই মেয়েটা
- আমাল লাম মেয়ে নয় আমাল লাম মাম্মাম পাখি
- এটা আবার কেমন নাম, হি হি
- ওই অতভ্য তেলে তুপ কল, পাপাই পাপাই দেতো না
- আহহহ আফনান, তুমি থামবে, বেশ বিরক্ত করছো তো
- বাবাই এই পরীকেই আমি বিয়ে করবো
- আরেহহহহ ব্যাসস, এখনো ওয়ান টপকালে না এখনি বিয়ে, তাওহীদ মেয়েকে আড়াল করে রাখো, নয়তো আমার ছেলের গ্যারান্টি নাই
- হ্যাঁ তোমার ছেলেকেই জামাই করবো
- হা হা হা, এখন বলো তো কি হয়েছে কাহিনীটা, আমি তো জানি তনুশারা চিটাগং থাকে তাহলে তাহুরাকে পেলে কিভাবে আর তনুশা কোথায় এখন
- বলবো রে ভাই সব বলবো
- তবে চরম ভুল করে ফেলেছিলে ৫ বছর আগে
- মানে
- পরে শুনো
বাসায় এসে ওয়াসিম কলিংবেল দেয়। ফুলি (আফরোজ এর কাজের লোক) গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়। বেশ ভালো পজিশনে উঠেছে ওয়াসিম। নিজের ফ্ল্যাট নিজের গাড়ি, হাই ফাই করে বাসাটা সাজানো। তবে তাওহীদের তুলনায় অনেক কম। তবুও সুখে ভরা সংসার ওয়াসিম আর আফরোজ এর। ভেতর থেকে কথা বলতে বলতে আফরোজ আসতেছে
- আব্বুটা, আজকেও নিশ্চয়ই দুষ্টুমি করেছো তাই না,
আফরোজ এর কন্ঠ শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে তাওহীদ।
- আর ওয়াসিম তোমাকেও বলি, ছেলেকে এতো লাই দিও না, রেগুলার কমপ্লেইন আসে, তুমিইইইইইইইইই
একদম অবাক হয়ে যায় আফরোজ। তার সামনে তাওহীদ দাড়ানো। সে যেন নিজের চোখ কেও বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কে? কাকে দেখছে সে? তার বাসায় ইনি কে?
- আ, আ, আফ, আফরোজ, তাওহীদ
- আপনি, এখানে?
তাওহীদ আফরোজের দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ সুন্দর হয়েছে আগের থেকে। ব্রাউন কালারের একটা মেক্সি পড়া। ওড়না দিয়ে সুন্দর করে আবৃত করা আছে সামনের দিক টা। দেখে মনে হচ্ছে প্রেগন্যান্ট।
- কেমন আছেন আফরোজ?
- আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
- মরে বেঁচে আছি এক রকম
- মানে, এ কে?
- আপনার তনুর মেয়ে
- কিহহহহ, তনুশার মেয়ে
- হুম
- তাই, আম্মু এইদিকে আসো
- আম্মুন, আন্টিকে হাই বলো
- হ্যালো
- হাই আম্মু, কেমন আছো তুমি?
- ভালো না
- কেন?
- মাম্মাম নেই
- নেই মানে?
- নেই আন্তি
- মানে, কি বলে ও?
- কিছু কথা বলতে চাই আমি আর কিছু কথা জানতেও চাই
- বসুন আপনি,
- ফুলি এই ফুলি
- জ্বি মামি
- এদের নিয়ে ভেতরে যা, আর এখানে নাস্তা দেয়ার ব্যবস্থা কর
- আচ্ছা মামি, আসো তোমরা, আফনান ভাইয়া চলো
- চলো, এই ঢঙ্গী এটা আমার ফুলি আপু, এর সাথে বেয়াদবী করবা না, না হয় দিব চুল কেটে
- আহহহহহহ আফনান কি হচ্ছে কি
- সরি আম্মু
- যাও বাবুটাকে নিয়ে রুমে যাও তোমার toy’s গুলো দেখাও
- আচ্ছা
- কিছু মনে করবেন না, আমার ছেলেটা এমনি
- নাহ ঠিক আছে, কোন ক্লাসে পড়ে?
- ওয়ানে এইবার
- ওহ
- বাবুর নাম কি
- তাহুরা বিনতে রুবাইয়া
- ওহ, তনুশা কোথায় আর ও তখন কি বলছিল
- অনেক কিছু বলার আছে, আর অনেক কিছু জানারও আছে
- এত বছর পর এসেছেন সব জানতে
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গতকাল তনুর রেখে যাওয়া চিঠিটা আফরোজ এর হাতে দেয় তাওহীদ। তনু চিঠিটা নিয়ে একবার ওয়াসিমের দিকে, একবার তাওহীদের দিকে, আবার চিঠিটার দিকে তাকায়। তারপর চিঠির ভাজ খুলে চোখ বুলায় তাতে,
পর্ব ৩৩
চিঠিটা ভাজ করতে করতে চোখের পানি মুছে নেয় আফরোজ। আফরোজের হাত থেকে ওয়াসিম চিঠিটা নিয়ে পড়ে। এতক্ষণে সে বুঝতে পারে আফরোজের চোখের পানি পড়ার কারন।
- কোথায় দেখা হয়েছিল আপনার ওর সাথে?
- চিটাগাং এ,
- এইবার আটকাতে পারলেন না?
- সুযোগটাই তো দিল না আমায়
- ৫ বছর আগে যখন সুযোগ ছিল তখন তো কুকুরের মতো বের করে দিয়েছিলেন
- দেখুন, আমি সব ভুলে গিয়ে ওর হাতটা আবার ধরতে চেয়েছিলাম
- সব ভুলে গিয়ে মানে,
- হ্যাঁ রাফাতের সাথে ওর অতীত, সব কিছুই ভুলে গিয়ে ওকে আবার আপন করতে চেয়েছিলাম
- আপনি এখনো সেখানেই পড়ে আছেন তাওহীদ সাহেব
- মানে
- সেইদিন কেন আমার সাথে যোগাযোগ করলেন না? কারন তনুশাকে তো আপনার বাবার কাছে আমিই নিয়ে গেছিলাম। সেইদিন কেন ওকে অন্ধকারে বের করে দিলেন? তার দুইদিন
পরেই কেন আপনি বাহিরে চলে গেলেন? সেইদিন রাতেই কেন আপনার বাবা মিষ্টার জাহিদকে বলে রুমেলকে বের করে দেয় অফিস থেকে? পুরো একটা পরিবারকে সেইদিন কেন রাস্তায় নামিয়ে দিলেন?
এর উত্তর আছে আপনার কাছে? নেই
এইবার আমি বলি আপনি শুনতে থাকুন। তারপর নিজেই নিজেকে জার্জ করবেন, এরপর আমি দেখবো নিজেকে আপনি কোথায় লুকান?
ব্যাক টু ফাইভ ইয়ারস
- আসসালামু আলাইকুম আপুউউউউউ
- তনুউউউউউ, কি হয়েছে
- আপুরেএএএএ আমার সব শেষ আপুউউউ
- উঠ উঠ দরজার সামনে এভাবে কেউ কাদে, আয় ভেতরে আয়
- আপুউউউউরেএএএএ,
- আস্তে, লোকজন দেখলে কি ভাববে ভেতরে আয় তুই
- কি হয়েছে, বল আমায়
- আপু তুমি কি কিছুই শুনো নাই?
- কি শুনবো? আরে কি হয়েছে বলবি তো?
- আপু রুমেলকে ওরা অফিস থেকে বের করে দিছে
- কিহহহহহ, কেন?
- আপুউউউউরেএএএএএ রাফাত কুত্তারবাচ্চা সব উলটা করে দিছে রে আপুউউ
- কি করছে
- আপু তাওহীদকে সব ভুল বুঝাইছে, গত পরশুদিন পার্টিতে কিভাবে যেনো একটা পিক তুলছে সেটা সবার মোবাইলে ম্যাসেঞ্জারে দিয়ে দিছে এমনকি তাওহীদকেও, তারপর সব উলটাপালটা বুঝাইছে
- তারপর,
- গত পরশুদিনই আমাকে রাতের অন্ধকারে ওরা সবাই মিলে বের করে দিছে
- আমায় এতদিন জানাস নি কেন
- কিভাবে জানাবো আপু, তুমি নিজেই তো অসুস্থ
- দেখছিস এই জন্যেই বলেছিলাম, বলে দে, বলে দে, শুনিস নি তো আমার কথা, এখন বুঝ তুই
- আপুরেএএএএএএ সে আমার সাথে সমস্ত যোগাযোগ অফ করে দিছে, বাবার অবস্থা ভালো না। শরীর একদম খারাপ, মায়ের অবস্থা শোচনীয়, আমি এখন কি করবো রে আপু
- আচ্ছা দাড়া আমি কল করছি স্যারকে
- নাহ আপু, থাক, তুমি কারো কাছে নত হইও না, তুমি আমার সাথে চলো
- কোথায়?
- আছে এক জায়গায়,
- ঠিকমত দাড়াতে পারছিস না তুই, আগে কিছু খেয়ে নে
- নাহ এখন কিছুই খাবো না চলো তুমি
- আমরা কোথায় এসেছি তনু?
- ভেতরে চলো,
- চল
- আরে আরে কে আসছে আমার বাসায়
- রাফায়ায়ায়ায়ায়াত
তনু তুই এখানে কেন আসছিস?
সেইদিন তনু আর রাফাত মুখোমুখি দাঁড়িয়ে,
- খুব মজা লাগছে তাই না? আমার এই অবস্থা করে খুব মজায় আছো তাই না?
- হ্যাঁ, অনেক মজায় আছি, তনুশা আমার না তো কারো না
- কেন এমন করলা রাফাত কেন করলা এমনটা, কি অন্যায়ের শাস্তি এইভাবে দিলা তুমি?
তনুর চিৎকারে আফরোজের চোখ দিয়ে পানির শ্রোত বেরোচ্ছে
- কুল ডাউন বেবি, তাওহীদ ছেড়েছে তো কি হয়েছে, আমি তো আছি তাই না?
- কি করবা তুমি রাফাত? কি করবা, আমায় বিয়ে করবা, নাকি বিয়ের নামে আমায় ভোগ করবা
- তনুশায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া
- চিৎকার আমিও করতে পারি, গলার জোড় আমারও আছে, তুমি বলো তো আমি যে তোমাকে ভালোবাসবো এমন কি আছে তোমার মাঝে যে তোমায় আমি ভালোবাসতাম
- কি নেই আমার মাঝে
- আমি তোমাকে ভালোবাসবো এমন কিছুই নেই তোমার মাঝে
- তোমার মাঝে তো এমন অনেক কিছুই আছে
- হ্যাঁ, আছে তো, আমার এই শরীরটা আছে, যাকে তুমি কাছে পেতে চেয়েছিলে
- তোমার তাই মনে হয়?
- হ্যাঁ, আমার তাই মনে,
তুমি আমায় সব দিক থেকে নিঃস্ব করে দিয়েছো, সব কেড়ে নিয়েছো আমার। এই ভালোবাসো তুমি আমায়? - আহহহহহ, তনু চল তো, এর মতো জানোয়ারের কাছ থেকে কিই বা আশা করা যায়
- দাড়াও আপু, তো রাফাত বলো, এখন কি করবা আমাকে নিয়ে? উপরে রুম খালি আছে? চলো আজ সারাদিন আমায় ভোগ করবা চলো
- আহ তনু, চল
- কেন? এমন করলা কেন রাফাত? একটু সংসারটাও করতে দিলে না। বার বার বলেছিলাম বাসি না আমি তোমাকে ভালো, বাসি না, বাসি না, বাসি না, তারপরও লেগে ছিলে
আমি জানতামও না যে তুমি তাওহীদের বন্ধু। আমি তো তাওহীদকে ভালো করতে
চেয়েছিলাম রাফাত, আর ভালো করতে গিয়ে ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম আমি। সুইজারল্যান্ডে তোমার ভয়ে ওর কাছে নিজেকে সপে দিয়েছিলাম, কেন জানো যাতে ও বুঝে আমি অসতী নই
কিন্তু দেখ, সে বুঝলো না, আমি হেরে গেছি রাফাত আমি হেরে গেছি। আজ মিথ্যা জিতে গেছে আর সত্য মাটি চাপা পড়ে গেছে রাফাত
- তনু চল, ও একটা জানোয়ার, ও এখন কিছুই বুঝবে না
- রাফাত তোমাকে আমি অভিশাপ দিব না কিন্তু আমার হায় অবশ্যই লাগবে তোমার। আমার জীবন শেষ করে দিয়েছো তুমি, তোমার কখনো ভালো হবে না। দেইখো তুমি কখনো ভ, ভ, ভা, ভা, ভালোওঅঅঅঅঅ
- তনুশায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া,
- তনু, এই তনু, কি হলো তোর, তনু
খবরদার ওকে ধরবা না তুমি, - আফরোজ আপু
- চুপ, একদম চুপ, তনু এই তনু, বোন আমার, উঠ কথা বল, এই তনু
- আফরোজ আপু ওকে হসপিটালে নিতে হবে তো
- তুমি ওকে ধরবা না, সরো এখান থেকে
- আপনার যা বলার আপনি পরে আমাকে বলবেন আগে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই, প্লিজ চলেন
- হ্যাঁ চলো, তুলো ওকে
রাফাত আর আফরোজ সেইদিন তনুকে নিয়ে হসপিটালে যায়। রাস্তায় আফরোজ তনুর ভাই রুমেলকে কল করে, আর নিজের স্বামীকে কল করে। তারা খবর পেয়ে দ্রুত হসপিটালে চলে যায়। এদিকে আফরোজও অসুস্থ, সেটা নিয়ে বেশি চিন্তিত ওয়াসিম
- আফরোজ তুমি ঠিক আছো তো?
- হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি কিন্তু তনু
- কি হয়েছে তনুর আফরোজ আপু
- জানি না হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে গেল
- ডক্টর কি বললো?
- চেক আপ করছে
কিছুক্ষন পর ডক্টর রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সবার মুখে চিন্তার ভাব দেখে ডক্টর হেসে দেয়
- মিষ্টি নিয়ে আসুন, আপনাদের মেয়ে তো মা হবে
খবরটা পেয়ে সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। এই চরম বিপদের দিনে ও তারা সবাই খুশি।
At present,
- তারপর
- তারপর আর কি, রাফাত শুনে ফেলে সেই কথা, তারপর সে চলে যায় সেখান থেকে। আমিও চাকরি টা ছেড়ে দেই। মানুষ যে এত স্বার্থপর হয় আপনাদেরকে না দেখলে বুঝতাম না আমি। আপনারা আসলেই অনেক খারাপ। তনুর সাথে রাফাতের কিছুই ছিল না। তনু
আপনার মোহে এতই ছেয়ে ছিল যে সে সব জায়গায় আপনাকে ফিল করতো। তাই ওইদিন ভেবেছিল হয়তো ছাদে আপনিই ছিলেন। কিন্তু ভাগ্য যে ওর সাথে এত খারাপ করবে তা বেচারি জানতো না।
একবার সুযোগটাও দিলেন না ওকে। ও এই ভয়ে আপনাকে কিছু বলতে গিয়েও বলে নি আর আপনি জানতে পেরে বুঝতে চেয়েও বুঝেন নি।
তাওহীদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। সে এত বড় ভুল করে ফেলেছে। নিজের
অজান্তেই গুমড়ে কেদে ওঠে। কি করে এই ভুলের মাসুল দিবে সে। আজ তার একটা ভুলের জন্য তনুকে ৫ টা বছর সাফার করতে হয়েছে৷। তাহুরাকে ৪ বছর ধরে বাবার আদর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়েছে। এইসব ভেবে কেদে ওঠে তাওহীদ।
আর আফরোজ আবার বলা শুরু করে।
- এখন কি করবেন তাওহীদ সাহেব?
বুঝলেন তো বুঝলেনই সব হারিয়ে বুঝলেন - আমি এখন কি করবো? কি করবো আমি এখন? আমার যে তনুকে বড় বেশি প্রয়োজন। আমি ওকে এখন কিভাবে পাবো?
তাওহীদ কান্নায় ভেঙে পড়ে। এই কি ছিল তাহলে ভাগ্য?
পর্ব ৩৪
- যখন ছিল তখন বুঝেন নি, আর এখন কাদছেন
- আমি এতই অন্ধ ছিলাম যে ওকে বুঝতেই পারলাম না আমি
- তাহলে কেমন ভালোবাসলেন?
- জানি না
- একটা কথা বলি?
- জ্বি বলুন
- সত্যি কথা সব সময় শুনতে তেতো লাগে তবুও তা সত্যিই হয়, আপনারা প্রত্যেককেই স্বার্থপর। অনেক স্বার্থপর আপনারা
- আফরোজ কি সব বলো তুমি
- তুমি থামো ওয়াসিম, এরা আসলেই স্বার্থের জন্য এর বাবা-মা আমায় দিয়ে তনুকে এর সাথে বিয়ে দিল। আর এ কি করলো? যেই মেয়েটা ২ মাসের মাঝেই একে চেঞ্জ করে দিল সেই মেয়েটাকেই একটু ভুল বুঝে বাসা থেকে বের করে দিল তাও অন্ধকারে। আরে এমন তো
কেউ কোন কুকুরের সাথেও করে না। রাতের অন্ধকারে এর বাবা-মা মেয়েটাকে বাসা থেকে বের করে দিল।
আচ্ছা তাওহীদ সাহেব, রুমেলের কি অন্যায় ছিল? আপনার বাবা ওকে কেন বের করে দিল?
- আফরোজ আমি তা জানতাম না
- হা হা, জানতেন না, নাকি জেনেও বসে ছিলেন। তনু এক বুকে পাহাড় সমান কষ্ট নিয়ে এই শহর ছেড়েছিল। সাথে ওর পরিবারও। তারপর আমার সাথেও আর যোগাযোগ রাখে নাই।
হয়তোবা ওর এই চরম বিপদের জন্য ও আমাকেই দোষারোপ করে এখনও
- বাদ দাও আফরোজ, এখন চিন্তা করো তনুশাকে ফেরাবে
- আমিইইইই আবার, impossible কার কাছে ফিরিয়ে এনে দিব আমি? এর কাছে, কাল অন্য একজন এসে বলবে আপনার বউ আমার কাছে এসে শাড়ি খুলে দিয়েছে তখন হয়তো মেরেই দেবে, একে আর বিশ্বাস নেই
- আফরোজ প্লিজ, আপনিই পারেন আমার তনুশাকে আমার কাছে ফিরিয়ে এনে দিতে
- sorry, আপনি আসতে পারেন
- শুনো না আফরোজ, আমি বলছিলাম কি?
- ওয়াসিম, তুমি চুপ করবা নাকি আমি বের হয়ে যাবো
- আফরোজ প্লিজ, আমি জানি আপনার রাগের জায়েজ আছে। তবে আমাকে তো একটা সু্যোগ দেয়া যেতেই পারে আফরোজ
- মাপ করবেন, আপনি আসতে পারেন
আফরোজের কড়া কড়া কথায় তাওহীদের আশার শেষ প্রদীপটুকু নিভে যায়। তাহুরাকে নিয়ে তাওহীদ বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গাড়িতে মেয়েটা বার বার তার মাম্মামের কথা জিজ্ঞাসা করে কিন্তু কোন উত্তর নেই তাওহীদের কাছে। চুপচাপ গাড়ি ড্রাইভ করছে সে।
তাহুরাকে বাসায় দিয়ে তাওহীদ আবার বেরিয়ে যায়।
চট্টগ্রাম,
এইদিকে তনু বুক ভাসাচ্ছে মেয়ের জন্যে। সারাদিন জার্নিতে কেদে কেদে এক সাড় আর এখন বাসায় এসেও কেদেই চলেছে সে। পুরো পরিবারে এখন নিরবতা। তনু তাহুরার খেলার
জিনিসগুলোয় হাত বুলায় আর কাদে। রাত্রি, তনয়া আর মা তনুর রুমে আসে। এসে দেখে তাহুরার ছবি, জামা, খেলনাগুলো বুকে জড়িয়ে ধরে ফ্লোরে পড়ে আছে। তনুকে এইভাবে দেখে ওদের বুকে কামড় দিয়ে ওঠে। তিনজন গিয়েই তনুর পাশে বসে।
- তনু, এই তনু
- দিদি, দিদি
- হু
- আপু উঠো, নিচে শুয়ে আছো কেন?
তনু চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে তার মা বোন ভাইয়ের বউ তার সামনে বসে আছে। তাদের দেখে আরও জোড়ে কেদে দেয় তনু। তনুর বিলাপে মনে হয় আল্লাহর আরশও কেপে উঠবে
এমন উপক্রম। তার চোখে সে দুনিয়ার সব থেকে বড় অপরাধী। তনুর মা এত শোক কিভাবে সামলাবে। স্বামীর চলে যাওয়া, মেয়েটার সংসার ভাঙা দেখা, আর এখন নাতনি টারও চলে যাওয়া। তবুও নিজেকে শক্ত রেখেছেন তিনি
- কিরে মা, থাকতেই যখন পারবি না তাহলে রেখে এলি কেন?
মায়ের এমন কথায় আরও ঢুকরে কেদে ওঠে তনু।
- ও মা, মা, মাগো এত কষ্ট কেন হয় মা
আমার লক্ষীসোনাকে রেখে আসছি আমি মা। আমার মাম্মাম পাখিটা আমাকে না দেখে কি করতেছে কে জানে গো মা - দিদিরে যখন মেয়েকে ছেড়ে থাকতেই পারবি না কেন চলে এলি
- নিরুপায় ছিলাম রে, আমার মেয়েটা ভালো থাকবে ওর বাবার কাছে
- তাই বলে নিজে কষ্ট পাবা আপু
- রাত্রি বলে দাও না গো, কি করে কষ্টটা কমাবো, এই বুকটার মধ্যে অনেক যন্ত্রনা হচ্ছে। কি করে কমাবো আমি এই যন্ত্রনা
- মেয়েটাকে নিয়ে আসি আমরা আপু?
- নাহহহহ, দরকার নাই, ও ওর বাবার কাছেই থাকুক, ওর বাবাটা ওকে বড় বেশি ভালোবাসে গো
- আর তোর কষ্ট টা? তার কি করবি রে মা
- সেটাই তো কমাতে পারছি না গো মা, সেটাই কমাতে পারছি না আমি
- একবার কল দিয়ে দেখবা আপু?
- নাহহহহ, থাক কল দিলে আবার ও বুঝে যাবে এমনি থাক
- তাহলে আর কি, নিজেই কষ্ট পা বসে বসে
এদিকে,
সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে রাত। তাওহীদ আজ অফিসেও যায় নি। মোবাইলও অফ। মাইশা, সাকিল, মাহবুব সাহেব সহ সবাই ফোনে ট্রাই করে করে ব্যস্ত। সাকিল সব বন্ধুদের
সাথে যোগাযোগ করে ফেলেছে কিন্তু কোন লাভ হয় নি। তাওহীদ কোথাও নেই। আর অন্যদিকে তাহুরা কান্নাকাটি করে পুরো বাড়ি মাথায় করছে। সারাদিন খায়নি আজ সে।
রাত প্রায় ১২ টা, ক্লান্ত শরীরে তাওহীদ বাসায় ফিরে। সবাই চমকে যায় তাওহীদকে দেখে। চোখ মুখ একদম শুকিয়ে গেছে। কেমন দেখা যাচ্ছে।
কারো সাথে কথা না বলে সোজা উপরে যেতে ধরে তাওহীদ। তখনই মাহবুব সাহেব ডেকে বসে,
- কিরে, অফিসেও গেলি না, আমি তো সবাইকে কল করলাম, তুই তো কোথাও ছিলি না,
- সাকিল কাল কথা বলি? এখন ভালো লাগছে না
- ভাইয়া তুই রুমে যা, রেষ্ট কর, আম্মু আব্বু তোমরা রুমে যাও, সাকিল চলো
- মাইশা
- হ্যাঁ
- তাহুরা কই
- ঘুমিয়ে গেছে, আমার কাছে রাখবো আজকে, তুই রেষ্ট কর, যা
- হুম
- – তাওহীদ কোথায় ছিলি সারাক্ষণ?
তাওহীদ রুমে এসে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। ধুপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে সে। রিভাইন করে ৫ বছর আগের সে রাতের কথা।
- সুইজারল্যান্ডে তুই রাফতের সাথে দেখাও করছিস তাই না?
- না না, কখনোই না, আমি রুম থেকে বেরই হই নাই।
- ভাইয়ের চাকরি, বাবার অসুস্থতার ভালো বাহানা করে আমার গলায় ঝুলে তো পড়ছিলি, কি ভাবছিলি সারাজীবন রাজার হালে চলবি? কিন্তু তা তো হলো না
- তাওহীদ আপনি এইসব কি বলতেছেন
- আর কোন কথা না, সোজা বের হয়ে যাবি, এক্ষুনি এই মুহুর্তে
- তাওহীদ, এত রাতে আমি কোথায় যাবো
- জাহান্নামে যা, তবু এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যা
চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে তাওহীদের। আবার মনে পড়ে যায় সে রাতে তনুকে বলা তার নোংরা কথা গুলো
- হ্যাঁ এইবার বল, কি বলবি তুই বল
- তা, তা, তাও,
- কি তা তা তা করছিস, বল না কি বলবি বল, তুই না কি বলবি, বল
- তাওহীদ সব মিথ্যা, শুধু একবার বিশ্বাস করেন
- তোর মত মেয়েরা না কারো বউ হতে পারে না, তোদের কে শুধু বিছানাতেই মানায় তাও এক রাতের জন্যে
- তাওহীদ
- শুনলি না পার্টিতে সবাই কি বললো ঠিক তেমন
- ভুল বুঝতেছেন আমাকে আপনি
- চুপ, একদম চুপ, তুই তুই একটা বেশ
- তাওহীদ, আল্লাহর দোহাই লাগে, এইসব ভাষা বের করিয়েন না, দোহাই লাগে, আমি আপনার দুইটা পায়ে পড়ি প্লিজ
- ছাড় আমাকে ছাড়
- প্লিজ তাওহীদ প্লিজ
- একটা উপকার কর আমার, একটা উপকার কর
- বলুন
- বেরিয়ে যা, বেরিয়ে যা, তোর এই মুখটা আমি দেখতে চাই না বেরিয়ে যা
ঢুকরে কেদে দেয় তাওহীদ। সচরাচর ছেলেরা কাদে না। বরাবরের মতো তারা নাকি স্ট্রং কিন্তু যখন নিজের সব থেকে দামী জিনিসটা নিজের ভুলের জন্য হারিয়ে ফেলে তখন সব ছেলেই
হয়তো তাওহীদ হয়ে যায়, যেমন আজ তাওহীদ নিজে তার প্রকৃত উদাহরণ। নিজের চোখের উপর থাকা কালো পর্দাটা অবশেষে সড়ে গেল। কিন্তু অনেকটা দেরি হয়ে গেল। জীবন থেকে ৫ টা বছর কেটে গেল। আনন্দে ভরা দিন গুলো অমাবস্যার কালো অন্ধকারে ঢেকে গেল।
আজ বহুদিন পর তাওহীদের বার বার তনুর সেই কথাটাই কানে ভাসছে,
- তাওহীদ এত রাতে আমি কোথায় যাবো
কলিজা ফেটে যায় তাওহীদের তবুও চিৎকার আসছে না। আজ কাদছে সে, অনেক কাদছে। নিজের কাবার্ডে তনুর সেই সাদা শাড়িটা আজও পড়ে আছে একটা ড্রয়ারে। দৌড়ে গিয়ে সেই শাড়িটা বের করে তাওহীদ। শাড়িটায় মনে হয় এখনও তনুর গায়ের গন্ধ লুকিয়ে আছে। শাড়িটা ধরে পাগলের মতো কাদছে আজ সে, কিন্তু দেখার মতো কেউ নেই।
- তনুশা, আমিই হয়তো দুনিয়ার সব থেকে খারাপ স্বামী যে তার স্ত্রীকে এতটা কষ্ট দিয়েছে। কিভাবে ছিলে তনুশা তুমি? কিভাবে ছিলে, এত কষ্ট বুকে চেপে নিয়ে কিভাবে ছিলে বলতে পারো? গর্ভে আমার সন্তান আর বাহিরে তুমি নিঃস্ব, কিভাবে ছিলে তনুশা? স্বামীর ত্যাগ, বাবার মৃত্যু এতো শোক কিভাবে ওই বুকে ধারণ করলে তনুশা? এই জন্যেই হয়তো এখন
পাথর হয়ে গেছ। তনুশা এসে দেখে যাও আমি তাওহীদ আজ মনের সংসারে পথের ভিখারী। আমার সব হারিয়ে গেছে তনুশা। তুমি দেখে যাও তনুশা তুমি ছাড়া তোমার মেয়েটা অস্থির। কি করে পারলে নিজের কলিজার টুকরাকে আমার কাছে সপে দিয়ে নিজে চলে যেতে?
শাস্তি দিয়ে গেলে আমায় তুমি তনুশা। যেই শাস্তির আগুনে আমি পুড়ে ছারখার। ফিরে এসো তনুশা, প্লিজ ফিরে এসো। আজ বড় বেশি প্রয়োজন তোমাকে আমার। তোমায় আমার প্রয়োজন তনুশা। তোমায় আমার প্রয়োজন।
তাওহীদ আজ বড্ড একা। হ্যাঁ সে আজ বড্ড একা, বড্ড বেশি একা। আজ তার নিজেকে অনেক নিঃস্ব মনে হচ্ছে। তনুশাকে সে হারিয়ে ফেলেছে। একবার নিজ থেকে বের করে দিল, আবার বিধাতা তাদের অংশকে মিলিয়ে দিয়ে তাদের এক করার চেষ্টা করলো, কিন্তু আজ আবার সে হারিয়ে ফেলে তার তনুশাকে।
তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করে ফজর নামাজ আদায় করে কোরআন নিয়ে বসে তনু। শুক্রবার দিন, তাছাড়া শেষ পাড়া। ভেবেছে খতম দিয়ে রুমেলকে বলবে মসজিদে মিলাদ
পড়িয়ে দিতে আর জিলাপি বিলাতে। যেইভাবা সেই কাজ। ঢাকা যাওয়ার আগে ২৯ পাড়ার প্রথম ভাগ পড়ে রেখে গেছিল তনু। আর আজ বসে একসাথে ২৯ পাড়ার বাকি অর্ধেক সাথে ৩০ পাড়া পুরোটা পড়ে কোরআন খতম দেয় তনু। কোরআন কালিম খতম দিয়ে মোনাজাত ধরে তনু। আল্লাহ পাকের কাছে দু’হাত তুলে দোয়া চায়।
আজ এই দু’হাত উঠেছে শুধুমাত্র নিজের পরিবারের জন্যে নিজের সন্তানের জন্য আর নিজের জন্য। হ্যাঁ, স্বামীর জন্য। তার সন্তানের বাবার জন্য। মনের কষ্ট মনেই থাক। কিন্তু সন্তানকে যার ভরসায় রেখে এসেছে তার ক্ষতি কিভাবে চাইবে। তাই আল্লাহর দরবারে আজ সেই মানুষটার জন্যেও হাত উঠেছে তনুর।
জুমার দিন আজ। সব কাজ আগে ভাগে সেড়ে নেয় তনুশা। তারপর রুমেলকে টাকা দেয়। নিজের টাকায় সন্তানের জন্য মিলাদ দেয় তনু। ভেতরে ভেতরে মেয়েটার জন্য কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে তার। কিন্তু তবুও নিজেকে ধরে রেখেছে তনু।
অপরদিকে ঢাকায়,
দুপুর ১১ টায় চোখ মেলে তাকায় তাওহীদ। নিজেকে ফ্লোরে আবিষ্কার করে তাওহীদ। তনুর শাড়িটা বুকে জড়িয়ে কাদতে কাদতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়ে তাওহীদ। আজ শুক্রবার, সাওয়ার সেড়ে পাঞ্জাবি পড়ে মসজিদের দিকে রওনা দেয় তাওহীদ। সবাই অবাক তাওহীদকে
দেখে। আজ নামাজে গিয়ে বাসার সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। অন্যায় তো অনেক করেছে। তবুও আল্লাহ তাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। সব থেকে বড় উপহার দিয়েছেন তনুর মাধ্যমে সে হচ্ছে তার কলিজার টুকরা তাহুরা। কিন্তু সে তার জীবনের সব থেকে মূল্যবান জিনিসটা
হারিয়ে ফেলেছে। আজ সেই মূল্যবান জিনিসটার জন্য আল্লাহ দরবারে ফরিয়াদ জানাতে যাচ্ছে। আল্লাহ যাতে তার সমস্ত গুনাহ মাপ করে দিয়ে সেই মূল্যবান জিনিসটা তাকে ফেরত দেন।
চেষ্টা তো সে করবেই কিন্তু আল্লাহর রহমতও তো লাগবে। সেই রহমতের জন্যেই আজ আল্লাহর দরবারে যাচ্ছে তাওহীদ।
পর্ব ৩৫
বিকেলের দিকে তনু চুপচাপ রুমে বসে আছে। ঘুরেফিরে মেয়েটার কথা মনে পড়ছে তার। মেয়েটা এখন কেমন আছে? কি করে? খেয়েছে কিনা? এইসব ভেবে ভেবে অস্থির তনু।
ভেবেছে একটা কল দিবে তাওহীদকে। তারপরও নিজেকে দমিয়ে রেখেছে সে। রাত্রি তনয়া রুমেল রুবেল সবাই তনুর কষ্ট টা বুঝে কিন্তু কিছুই বলে না। বলবে কি করে যা করার তনু নিজে করেছে, নিজের জ্ঞানে করেছে। তাই সবাই চুপচাপ। তবে ভাগনির জন্য তাদেরও বুক ফাঁটে।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ঘড়িতে ৭ টার কাটা ছুই ছুই। তখন কলিংবেল বেজে ওঠে। বিষন্ন মনে তনয়া গিয়ে, দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলার সাথে সাথে কে যেন চিৎকার দিয়ে ডেকে উঠে
- মনিইইইইইইইইইইইই, আমি এতে গেতি
তাহুরা, হ্যাঁ তাহুরা চলে আসছে। তাহুরার গলার শুনে রাত্রি রুমেল রুবেল দৌড়ে দরজার কাছে যায়।
- মিমিইইইইইই, মামা সোনায়ায়া
- মাম্মাম পাখি তুমিইইইইই
- হুম আমিই তো
সবাই তাহুরাকে নিয়ে মেতে উঠছে। এতই আনন্দিত যে একজনের পর একজন তাহুরাকে কোলে তুলে নিচ্ছে, চুমু দিচ্ছে কিন্তু দরজার সামনে যে
আরও তিনটা মানুষ দাঁড়ানো তা তাদের খেয়ালেই নেই। হ্যাঁ,
তাওহীদ, মাইশা আর সাকিল এসেছে। আসলে হয়েছে কি, তাওহীদ নামাজ পড়ে এসে এদের সবাইকে সত্যিটা জানিয়ে দেয়। সত্যিটা জানতে পেরে মাহবুব সাহেব অসুস্থ হয়ে
পড়েন। রাবেয়া বেগম লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেন। আর মাইশার বক্তব্য – আমি জানতাম ভাবী এমন না তখন কেউ শুনলে না আমার কথা, এইবার ভালো হয়েছে তো?
তারপর ডিসিশন নেয় তাহুরাকে নিয়ে তাওহীদ মাইশা আর সাকিল চট্টগ্রাম যাবে। মাহবুব সাহেবের অনুরোধ, যেভাবেই হোক তনুকে নিয়েই যাতে বাসায় ফিরে প্রয়োজন পড়লে তিনি তনুশার পায়ে পড়বেন এই সেই।
কিছুক্ষন পর সবার নজর দরজার কাছে যায়। পরিপাটি অবস্থায় এদের তিনজন কে দেখে অনেকটাই চমকে যায় এরা।
রুমেল মাইশাকে দেখে অবাক হয়ে রয়। চুপচাপ নিরবতা পালন হচ্ছে মনে হচ্ছে। নিরবতা ভেঙে তাহুরা রাত্রিকে বলে ওঠে
- এই মিমি আমাল মাম্মাম তই
- তোমার মাম্মাম শুয়ে আছে সোনা, যাও মাম্মামের কাছে, অনেক কেদেছে তোমার মাম্মাম তোমার জন্য
- মাম্মাম ও মাম্মাম, মাম্মাম ও মাম্মাম
- আপনারা ভেতরে আসুন
- ওদের ভেতরে যেতে বললে আমাদের যেতে বলবে না
পেছন থেকে কন্ঠটা ভেসে ওঠে। সবাই পিছনে তাকায়। পিছনে তাকিয়ে তাওহীদ হেসে দেয়। হ্যাঁ আফরোজ এবং তার হাজবেন্ড ওয়াসিম আর তার পাজি ছেলেটাও আসছে। আসলে
আফরোজ আর থাকতে পারে নি। একদিকে তনুকে দেখার আকাঙ্খা অন্যদিকে তাহুরাকে তার বাবা এবং মা দুজনকেই ফিরিয়ে দিতে তার আজ এখানে আসা। তাই তাওহীদের সাথে ওরাও এসেছে। আফরোজকে দেখে রুমেল তনয়া এগিয়ে যায়।
- আপুউউউউ তুমি
- এত বেইমান কেন রে তোরা? একটা বার খোঁজ নিলি না
- ভুল হয়ে গেছিল আপু
- হইছে
- ওয়াসিম ভাই কেমন আছেন?
- আলহামদুলিল্লাহ ভালো
- এটা কে?
- তোমাদের ভাগিনা, বড় বাটপার
- আমার ছেলেকে খবরদার বাটপার বলবা না
- চলেন ভেতরে আসেন সবাই ভাই
- হ্যাঁ চলো
পুরো বাসায় মনে হয় আনন্দের বন্যা। কিন্তু এখনও তাওহীদের সাথে রুমেল কিংবা কেউই কথা বলে নি।
- তনু কইরে রুমেল
- আফরোজ আপু ওর শরীরটা ভালো না ভেতরে শুয়ে আছে। তাহুরা গেল তো
এদিকে তাহুরা চিৎকার দিতে দিতে ভেতরে যায়। মাম্মাম ও মাম্মাম, তাহুরার মাম্মাম শব্দটা সোজা তনুর কানে গিয়ে বাড়ি খায়। লাফ দিয়ে উঠে খাট থেকে নেমে যায় তনু,
- মাম্মাম পাখি
- মাম্মাম, ও মাম্মাম
- মাম্মাম পাখি
তাহুরা দৌড়ে এসে তনুর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে। তনু তার শরীরের সব টুকু শক্তি দিয়ে মেয়েকে আঁকড়ে ধরে। অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দেয় মেয়ের গাল কপাল।
- মাম্মাম পাখি, কার সাথে এসেছো
- পাপাইয়ের সাতে, জানো মাম্মাম আলো অনেতে এতেতে
- কে মাম্মাম পাখি
- তলো মাম্মাম তলো আমি দেতাই
তাহুরা তনুকে টানতে টানতে ড্রইং রুমের দিকে নিয়ে যায়।
ড্রইং রুমে এসে আকাশ থেকে পড়ার মতো অবাক হয় তনু। একদিকে যেমন তাওহীদ অন্যদিকে আফরোজ বসা। সব থেকে বেশি অবাক হয় আফরোজকে দেখে। আফরোজও
অবাক তনুকে দেখে। এ কি সেই তনুশা? চেহারাটা কেমন শুকিয়ে গেছে, চোখের নিচটায় কালি পড়ে গেছে, শরীরটাও ভেঙে গেছে। কি তনুশা কি হয়ে গেছে। উঠতে কষ্ট হলেও সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে আফরোজ।
- আফরোজ আপু তুমিইইইইইই
- এত স্বার্থপর কবে হলি তনু?
- আপু
- কে আপু? কিসের আপু? ৫ টা বছর তনু, ৫ টা বছর, ১৮২৫ টা দিন। এই এত গুলো দিনের মধ্যে একটা দিনও কি আমাকে তোর মনে পড়ে নাই তনু
- পড়ছে রে আপু অনেক মনে পড়েছে। শুধু পিছনে তাকাতে চাই নি, কারন পিছনের ওই কালো অন্ধকারটা আমাকে এই ৫ টা বছরে প্রতিটা দিন প্রতিটা রাত ঘ্রাস করেছে রে আপু
এই বলে আফরোজকে জড়িয়ে ধরে তনু।
তারপর আফরোজ তার ছেলে আফনানকে দেখিয়ে দেয়। আফনানের কাছে গিয়ে ও-কে আদর করে দেয়, ওয়াসিমের সাথে কথা বলে তনু।
অন্যদিকে তাওহীদ তনুর দিকে তাকিয়ে থাকে। দুইদিনেই ওর শরীরটা মনে হয় আরও খারাপ হয়ে গেছে। কিভাবে যে সে তনুর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে নিজেই জানে। এদিকে তাওহীদ, মাইশা, সাকিলকে দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে যায় তনু।
- আপনারা সবাই এখানে?
- আমি বলি তনু?
- হ্যাঁ আপু বলো
- আসলে আমি সব বলে দিয়েছি তাওহীদ সাহেবকে
- কি সব বলে দিয়েছো আপু
- আসলে, তনু আমি তোর আর রাফাতের সব সত্যি কথা ওনাকে বলে দিয়েছি
- ওহ আচ্ছা, সেই জন্যে ক্ষমা চাইতে এসেছেন নিশ্চয়ই, তাই না?
- তনুশা,
- থামুন, ওখানেই থেমে যান, এসেছেন মেয়েকে নিয়ে, আমার কাছে থাকুক আজ রাত টা। কাল ও-কে নিয়ে চলে যাবেন। কিন্তু আমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা মুখ দিয়েও বের করবেন না
- তনুশায়ায়ায়া
- ভাবী,
- আমি তোমার ভাবী নই মাইশা, তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে
- তনু জানি কষ্ট পেয়েছিস, অনেক কষ্ট পেয়েছিস, কিন্তু মেয়েটার দিকেও তো তাকাতে হবে তাই না?
- তাকিয়েছি তো আপু, তাহুরাকে তো আমি ওনাকে দিয়ে দিয়েছি
- তোর মেয়ের তো একজন দিয়ে হবে না তার মা-বাবা দুজনকেই চাই, সেটা বুঝবি না তুই
- সব বুঝা-বুঝির পর্ব ৫ বছর আগেই চুকে গেছে আপু
তনুর ক্ষোভটা অনেক দিনের। কমতে সময় লেগে যাবে। মেয়েটার কষ্ট গুলো অনেক গাঢ়। সেই ছোট থেকে কষ্ট করেই আসলো মেয়েটা। তারপর স্বামীর বাড়িতে গেল। শান্তিতে ঘরটাও করতে পারলো না ঠিক মতো। রাতের অন্ধকারে স্বামীর ঘর ছাড়তে হলো তাকে। মেয়েকে গর্ভে নিয়ে বাবার অকাল মৃত্যু দেখতে হলো তাকে। সব কষ্ট গুলো তাকে একত্রে ঘ্রাস করেছে
তাওহীদ বুঝে গেছে তনুর অব্যক্ত কথা গুলো। তাই তো চুপ আছে। এখন শুধু তনুকে একা পাওয়ার আশা।
পর্ব ৩৬
তনু কারো কথাই শুনে নি। নিজের মেয়েকে নিয়ে রুমে গিয়ে বসে আছে। এদিকে তাওহীদ সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে। কিন্তু কেউই তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। আফরোজও ক্লান্ত এদের
বুঝাতে বুঝাতে। তাওহীদের এই এত বছরে আজ নিজেকে অনেক ভিখারী মনে হচ্ছে। সে কোন জিনিস চেয়েছে আর সে তা পায় নি তা কখনও হয় নি। কিন্তু আজ সে তার বউকে পাচ্ছে না। এর থেকে আর বড় কোন ভিখারী নেই বলে মনে হয় না।
- রুমেল, তুমি কিছু বলবে না
- আমি কি বলবো তাওহীদ ভাই, কম কষ্ট তো আমার বোন টা পায় নি, ওইদিন আপনার
কলার ধরেছিলাম তবুও ওর চোখে পানি দেখেছি আমি। আপনি আমাদের তাহুরার বাবা এটা আমরা অস্বীকার করি না আর কখনও করবো না কিন্তু তনু হয়তো আর যেতে চায় না
- ভাবীর সাথে আমি কি একবার কথা বলে দেখবো?
- তাতে কোন লাভ হবে না মনে হচ্ছে
- একবার চেষ্টা করে দেখিই না রুমেল ভাই
- দেখতে পারেন, তবে আমার বোন যা বলবে তাতেই আমরা রাজি
এই কথা বলে রুমেল বাহিরে বের হয়ে যায়। সাকিল আর রাত্রি এতক্ষন মাইশা আর রুমেলকে ফলো করেছে তবে অবশ্যই দুজন দুজনের মত ফলো করেছে। রুমেল চলে যাওয়ার পর মাইশা ভেতরের দিকে পা বাড়ায়।
দীর্ঘ ৩০ মিনিট পরে মাইশাও ব্যর্থ হয়ে ড্রইং রুমে ফিরে আসে। মাইশার মুখের ভঙ্গীমা টাই বলে দিচ্ছে তনু রাজি হয় নি।
এখন আর একটাই উপায় আর তা হচ্ছে তনুর মা। তাওহীদ ওনার সাথেও কথা বলতে চায়।
তাওহীদ সুরিয়া বেগমের রুমের দরজার সামনে,
- আসতে পারি?
- কে, ওহ তুমি, আসো
- আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন?
- ওয়ালাইকুম আসসালাম, আর কেমন থাকবো, ডায়াবেটিস হয়ে পড়ে আছি
- ওষুধ খাচ্ছেন তো
- হ্যাঁ, ছেলে বউ মেয়েরা খাওয়ায়
- ওহ
- কিছু বলবা?
- জ্বি
- বলো
- আপনি তো মা, সব তো বুঝেন। তনুশাকে যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন
- বাবারে আমি অসহায়, আমি এই জীবনে কম কষ্ট করি নাই, আমার মতো আমার মেয়েও অনেক কষ্ট করছে। তবে আমার মেয়েটা অনেক কষ্ট করছে। কত আশা করে তোমার সংসারে গেল, ভাবছিলাম তুমি আমার মেয়েটাকে বুঝবে কিন্তু কি করলা তোমরা সবাই মিলে, আমার মেয়েটাকে রাতের অন্ধকারে বের করে দিলা
- আন্টি সেইদিন অনেক বড় পাপ করে ফেলছিলাম
- তোমার করা পাপের ফল আমার মেয়েটা আজও বয়ে বেরাচ্ছে
- রুমেল রুবেলের মতো আমিও আপনার আরেক ছেলে আন্টি, দয়া করে তনুশাকে একটু বুঝান
- আমি যদি জোড় করি আমার মন রাখতে আমার মেয়ে ঠিকই এক কাপড়ে তোমার সাথে চলে যাবে কিন্তু কোনদিন ও তোমাকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবে না তুমি ওর কাছে ওর সন্তানের বাবা হয়েই থাকবে
- তাহলে আপনারা কি চান বলেন তো?
আমি আমার মেয়েটাকে ছাড়া চলে যাই
- নাহ তো আমরা এইসব কিছুই চাই না। আমি শুধু তোমাকে বললাম, তনু ইসলামের শরীয়ত মোতাবেক এখনও তোমার বউ। এখন তুমি নিজেই চেষ্টা করো তোমার বউয়ের মান কি করে ভাঙাবে
- ধন্যবাদ
- তাওহীদ শুনো
- জ্বি বলেন
- ৫ বছরের চাপা অভিমান, সময় লেগে যাবে অনেক, অল্পতে ধৈর্য হারিও না না হয় এইবার সত্যি সত্যিই ওকে হারিয়ে ফেলবে
সুরিয়া বেগমের কথায় মাথা নেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তাওহীদ। নিজেকে আজ তার বড্ড বেশি একা মনে হচ্ছে।
লং জার্নি করাতে এদিকে আফরোজও ক্লান্তু। আফনান আর তাহুরা তনুর রুমে খেলছে। আজ ৬ টা মানুষ কোন না কোন দিক থেকে দ্বিধা দ্বন্দ্বের মাঝে আছে।
[{ (৬ টা মানুষ? কে কে? তাহলে আরও কিছু রহস্য আছে। চলেন উন্মোচন করি )}]
তনু-তাওহীদ
রুমেল-রাত্রি
মাইশা-সাকিল
দুন মাসের একটা সম্পর্ক। যা সহজেই চাপা পড়ে গেছিল তার ক্ষতস্থানটায় আজকে আবার ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে।
রুমেল ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। রাত্রি রান্না ঘরে, তনয়ার কাছে আস্ক করে মাইশা এই সুযোগে ছাদে যায়। ছাদে গিয়ে এক কোণায় নজর পড়ে মাইশার। রুমেল দাঁড়িয়ে আছে এক কোণায়। হাতে সিগারেট। এদিক সেদিক তাকিয়ে মাইশা পায়ের কদম বাড়ায় রুমেলের দিকে।
রুমেলের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায় মাইশা। রুমেলের কাধে হাত রাখে মাইশা
- তুমি?
- হ্যাঁ আমি
- কেউ দেখলে খারাপ ভাববে
- আমি কিছু বলতে এসেছি
- পরে শুনবো
- নাহ, এখুনি শুনতে হবে
- জেদ করো না মাইশা
- আমার অপরাধ টা কি ছিল জানতে পারি কি
- অপরাধ আমার ছিল, অপরাধ আমার বোনের ছিল, তাই সরে এসছি
- ভুল, তার আগের সরেছো, হয়তো তখন আপনার জীবনে রাত্রি ছিল
- অহেতুক কথা বলো না, স্বামী সংসার নিয়ে ভালো থাকো
- বিয়ে যখন করেছি, ভালো তো আছিই
- তাহলে ভালো থাকো
- আমি এখনও জানলাম না কিন্তু আমার অপরাধটা কি
- রাত্রি দেখলে প্রবলেম হবে মাইশা যাও এখান থেকে
- শুধু কি ভাইয়া আর ভাবীর প্রবলেমের জন্য সেদিন রাতের পর আমার সাথে সব শেষ করে দিয়েছিলেন
- আমি জবাবদিহি করতে বাধ্য নই
- বাকি আসল কারন টা রাত্রি
- বার বার বলছি যাও এখান থেকে
- একদিনের জন্যেও কি ভালোবাসেন নি?
- কোন টা জানতে চাও?
- আমি জানি রুমেল কখনও মিথ্যা বলে না
- সত্যিটা হচ্ছে ভালোবেসেছিলাম, মিথ্যাটা হলো আমি এখন আর তোমাকে ভালোবাসি না
- রাত্রি অনেক ভালো, তাই না?
- শুধু ভালো না, ওর মতো মেয়েই হয় না আমি তনু আর রাত্রির মাঝে অনেক মিল পাই
- ওহ, আর আমি
- তুমিও ভালো, যেই মেয়েটা সবার চোখের আড়ালে কয়েকদিনের পরিচয়ে আমায় ভালোবেসেছে সে আর যাই হোক খারাপ নিশ্চয়ই হবে না, এই জন্যই সরে এসেছি। আজ একসাথে থাকলে সিচুয়েশনটা আরও খারাপ হতো
- আপনি অনেক পাষান রুমেল
- পরিস্থিতি করে দিয়েছে
- হ্যাঁ, অবশ্য পরিস্থিতিই সব কিছু পরিবর্তন করে দেয়
- তুমি ভালো আছো, নিজের জীবনে মুভ-অন করেছো এটাই অনেক, আমি অনেক খুশি
- আমিও খুশি আপনার ভালো থাকা দেখে
- হ্যাঁ ভালোই আছি এক রকম, জীবনের সাথে সংগ্রাম করে যাচ্ছি আরকি
- সাথে তো এমন একজন আছে যে সব দিক থেকে আপনাকে রক্ষা করে নিবে
- হ্যাঁ, আমার রাত্রি সব পারে
- হ্যাঁ দেখেই বুঝা যায়
- হুম
- জীবন বড়ই অদ্ভুত তাই না
- হয়তো
- আচ্ছা আপনি ভাবীকে একটু বুঝাবেন
- সত্যি বলতে আমি নিজেও চাই না ও আর ফিরে যাক, তাই নিজ থেকে কিছুই বলতে চাইনা
- কেন
- উত্তর টা বললে হয়তো মনে কষ্ট পাবে, যাই হোক তোমার স্বামীর কথা বলো
- সাকিল অনেক ভালো একজন মানুষ, অনেকটা ফেরেশতার মতো
- যাক আলহামদুলিল্লাহ
- কত সহজেই আমরা সব মাটি দিয়ে দিলাম, তাই না?
- সব সম্পর্কের হ্যাপি এন্ডিং হয় না মাইশা
- হয়তো
- যেমন আমাদের হলো না
- হ্যাঁ
- আচ্ছা এইবার নিচে যাও, কেউ দেখে ফেলবে
- আসছি
- এসো
মাইশা পিছনে ঘুরে গিয়ে আবার রুমেলের দিকে ফিরে তাকায়।
- রুমেল
- হু
- একটা রিকুয়েস্ট করি?
- বলো
- রাখবেন তো
- সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যই রাখবো
- সম্পর্ক টা দুইমাসের হলেও অনুভূতি গুলো ছিল গভীর, আমার এই কান জোড়া ৫ বছর যাবত মরে আছে, একবার সেই নামটা ধরে ডাকবেন?
- দুইমাসের সম্পর্কে আর কি এমন গভীরতা
- প্লিজ
- মাইশু ভালো থাকো
মাইশা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি দৌড়ে এসে রুমেলকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে দেয় মাইশা। মাইশার এমন কান্ডতে রুমেল অনেক অবাক হয়ে যায়।
এইভাবে এই অবস্থায় ওদের দুইজনকে দেখে ফেললে অনেক প্রবলেম হয়ে যাবে।
- মাইশু, কি করছো কি
- আমি পারছি না
- নিজেকে সামলাতে শেখো, এমন করো না, প্লিজ
- আমি সত্যিই পারছি না
– আস্তে কাদো, প্লিজ এখানে সিনক্রিয়েট করো না
- আমার মাইশু তো অনেক স্ট্রং, তাই না
- হ্যাঁ
- কেদো না, দোয়া করি স্বামী নিয়ে ভালো থাকো
- আসি
- যাও, আর শুনো চোখ গুলোকে ভালোভাবে মুছো
- আচ্ছা
মাইশার পায়ের আওয়াজ পেয়ে আরেক জোড়া পা দৌড়ে সেখানকার সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়। আরও এক জোড়া পা সেই মুহুর্তে এই ছাদে অবস্থা করছিল, ছাদের দরজার পিছনে ছিল সে। লুকিয়ে লুকিয়ে সেও সব দেখে নেই।
চোখের পানি মুছতে মুছতে রাত্রি রান্নাঘরে ঢুকে যায়। হ্যাঁ দৌড়ে নিচে নেমে আসা মেয়েটা রাত্রিই ছিল। মাইশার পিছন পিছন সেও ছাদে যায়। তার প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। তাই সে সত্যিটা জানতেই মাইশার পিছনে গিয়েছিল। আর সত্যিটা শুধু শুনেই নি দেখেছেও সরাসরি।
অন্যদিকে আরেকজন এই দুইবছর ভ্রমের মধ্যে ছিল। আজ তার কাছে সব পরিষ্কার। এইবার তার কাছে সব ক্লিয়ার। বিয়ের প্রথম প্রথম মাইশা কেন তার কাছে আসতো না। তার কারন আজ তার সামনে। তার মানে সেই আরেকজন মাইশার স্বামী সাকিল ছিল। সব ধোঁয়াশার সমাপ্তি ঘটে গেল আজ।
রাত্রির নিজের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। অন্যদিকে সাকিল কি বলবে, কি ভাববে, কিছুই বুঝতেছে না। সব কেমন যেন গুলিয়ে যায় তার, কি করতে এখানে আসা আর কি হয়ে গেল। এ যেন কেচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
রাত ১১ টা সবাইকে তাদের শোয়ার ব্যবস্থা করে দেয় রাত্রি আর তনয়া। বাসাটা বড় হওয়ায় প্রবলেম হয় নি। রুমেল আর রাত্রির রুমে আফরোজ আর ওয়াসিমের শোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আজ রাত টা ওরা ছাদের চিলেকোঠার ঘরটায় ম্যানেজ করে নেবে। তাহুরার
জোড়াজুড়ি তে তাওহীদ আজকের রাত টা তনুর রুমে থাকবে। রুবেল তার বন্ধুর বাসায় চলে গেছে। আর তনয়া তার মায়ের সাথে শেয়ার করে নিয়েছে।
চিলেকোঠার ঘরটায় এসে কেমন যেন থমথমে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। না বলে রাত্রি তো না
বলে রুমেল। নিচে কোণার রুমটার পরিবেশ একদম শীতল। মাইশা এক পাশে তো সাকিল একপাশে। তনুর ঘরটার অবস্থাও অনেকটা এক রকম। চুপচাপ। তাহুরার বক বক শুনে যাচ্ছে তাওহীদ আর তনু। রাত গভীরের অপেক্ষা – রুমেল রাত্রির কাছে আসার অপেক্ষা, সাকিলের অশান্ত মনে শান্তি আসার অপেক্ষা, তাওহীদ তনুকে নিজের করে পাওয়ার অপেক্ষা।
অপেক্ষা
অপেক্ষা
অপেক্ষা
তিন জোড়া কপত-কপতির আজ অপেক্ষার পালা।
পর্ব ৩৭
রাত ১ টার উপরে,
আজ রাত্রি চুপচাপ। অন্যান্য দিন শুয়ে শুয়ে রুমেলের সাথে গল্প করে। কিন্তু আজ অনেক চুপচাপ সে। রুমেল সন্ধ্যার ঘটনাটা নিয়ে বড়ই চিন্তিত।
সাহস করে রাত্রিকে ডেকেই বসে রুমেল,
– রাত্রি
– রাত্রি ঘুমিয়ে গেছ নাকি
– রাত্রি
- জানো তো রাত্রি মানুষ ঠিকই বলে, ঘুমের মানুষকে জাগানো যায় কিন্তু যে ঘুমের ভান ধরে তাকে জাগানোর সাধ্য কারো নেই
- কিছু বলবে
- এতক্ষন শাকলাম সাড়া দিলা না যে
- মাথা ধরে আছে, তাই
- মিথ্যাটাও তো ঠিক মতো বলতে পারো না, তবুও ব্যর্থ চেষ্টা করছো
- কিছু বলার থাকলে বলো
- রাগ করেছো কোন কারনে?
- নাহ, সেই সন্ধ্যা থেকেই দেখছি আমার সাথে ভাড় ভাড়, কি ব্যাপার?
- কিছু না রুমেল, ঘুমাও
- বলো না প্লিজ, আর এইদিকে ঘুরো
- ঘুমাও প্লিজ
- রাত্রি এইদিকে ঘুরতে বলছি
রুমেলের দিকে মুখ করে,
- তুমি কাঁদছিলে রাত্রি?
- নাহ, চোখ ব্যাথা তাই পানি পড়তেছে
– মিথ্যা কেন বলতেছো, তোমার চোখে-মুখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে
- কি দেখছো এইভাবে, বলো না কি হয়েছে
- একটু ছাদে বের হবে?
- ঘড়িতে কয়টা বেজেছে দেখেছো
- চলো না
- ১ টা ২৮ বাজে রাত্রি, এত রাতে ছাদে বের হওয়াটা ঠিক হবে না
- চলো না
- আচ্ছা চলো
ছাদের কোণায় রুমেল-রাত্রি পাশাপাশি দাঁড়ানো। রাত্রি আকাশ দেখছে, রুমেল রাত্রিকে। রুমেল ডান হাতটা রাত্রির কাধে রেখে বাম হাত টা দিয়ে রাত্রির হাতটা ধরে।
- কি হয়েছে রাত্রি?
- মাইশা তো অনেক ভালো মেয়ে দেখে বুঝলাম, ও-কে ছাড়লে কেন?
- রাত্রি
- সরি রুমেল সব শুনে ফেলেছি আমি
- রাত্রি আমি তোমাকে
- আগে বললেও তো পারতে আজ তিনটা বছর তোমার সাথে সংসার করি, আমি কি এই কথাটা শুনার অধিকার রাখি নি রুমেল?
- রাত্রি তুমি যা ভাবছো তা নয়
- তাহলে কি রুমেল, তুমিই বলো, তাহলে কি?
- রাত্রি কি হচ্ছে কি, এইভাবে কাঁদছো কেন?
- আমি যা দেখলাম তারপরও কি চুপ থাকা যায় রুমেল?
- তুমি যদি সব দেখে থাকো, তাহলে তুমি নিশ্চয়ই সব শুনেছো, তাই নয় কি?
- হ্যাঁ সব কিছুই শুনেছি, কিন্তু কষ্ট টা আমার সেখানেই যে আমাকে আগে বললে কি হতো?
- মাইশা আমার অতীত রাত্রি, আর রিলেশনটা তখনও স্ট্যাবল হয় নি তার আগেই সব শেষ, হ্যাঁ, তবে আমি পারতাম ও-কে বিয়ে করতে কিন্তু তাতে প্রবলেম হতো, সবার ভালোর জন্য কিছু কিছু সম্পর্ক অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়াই ভালো রাত্রি
- জানো রুমেল খুব লেগেছে আমার, খুব লেগেছে এখানে যখন মাইশা তোমাকে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছে
- রাত্রি একটা কথা বলি তোমাকে শুনো, মাইশা বা তোমাকে আমি কখনোই কমপেয়ার
করবো না, কেন বলো তো? কারন, মাইশা মাইশার জায়গায় আর তুমি তোমার জায়গায়। দু’জনকে আমি দুইভাবে দেখি। সে আমার অতীত, হয়তো অনেক বছর পর দেখে সামলাতে পারে নি নিজেকে, মিথ্যা বলবো না আমিও নিজেকে সামলাতে পারি নি। তাই এখানে চলে
এসেছিলাম। আর হ্যাঁ মাইশার প্রতি মনের কোথাও একটা ভালোবাসা আজীবন থেকে যাবে আমার। আর তুমি আমার বর্তমান এবং ভবিষ্যত পথ চলার সঙ্গী। তোমার অস্তিত্ব আমার সবটা জুড়ে। তোমার অস্তিত্ব জানান দেয় আমাকে যে রুমেল তুই আজ এখানে শুধু এই মেয়েটার জন্যে। এ ছাড়া তোর গতি নেই, তোর গতিবিধি শূন্য। বুঝলে?
- মাইশাকে অনেক ভালোবাসতে, তাই না?
– অবুঝের মতো কথা বলো না, ওর প্রতি ভালোবাসা নিয়ে বসে থাকলে তোমার সাথে ৩ টা বছর কাটাতে পারতাম না আমি, এর থেকে বাড়তি কথা বলতে চাই না আমি, তুমি একজন শিক্ষিতা নারী। তোমার সব বুঝা উচিত বলে আমি মনে করি। আর যা দেখেছো যা শুনেছো এবং যা জেনেছো তাতে আমাদের এই সম্পর্কটা আরও স্ট্রং হয়ে গেল
– রাত্রি i love you, & i always love you
- রাত্রি love you, love you, love you
I still love you সোনা - love you too রুমেল
এই বলে রুমেল রাত্রিকে নিজের কাছে টেনে নেয়। কপালে চুমু দিয়ে রাত্রিকে নিজের বুকে জড়িয়ে নেয় রুমেল। আর রাত্রি পরম আদরে রুমেলের বুকে মাথা গুজে রাখে।
- রুমেল
- হ্যাঁ
- একটা কথা বলি?
- বলো
- আসলে, আসলে
- কি আসলে, বলো, কি হয়েছে আবার
- নাহ মানে
- কি আশ্চর্য, বলবা তো, তাই না?
- রু, রু, মেল, আসলে আমি
- কি তুমি, তুমি কি বলো
- রুমেল i am pregnant
কথাটা শুনে ৪৪০ বোল্ডের শক খায় রুমেল। রাত্রির মুখটা বুক থেকে উঠিয়ে নিজের সামনে তুলে ধরে।
- স, স, স, সত্যিইইইইইইইই
- হুম
- কিভাবে কি?
- লাষ্ট মান্থ এ মিস হয়ে গেছে, ভেবেছিলাম এই মান্থে ক্লিয়ার হয়ে যাবে, কিন্তু এই মান্থের ডেটও ওভার, তাই আজকে সকালে চেক করছিলাম
- তারপর,
- রেজাল্ট পজিটিভ
- ওহ জানননননন, আর তুমি এখন আমায় এই কথা বললা
- ভেবেছিলাম রাতে বলবো, কিন্তু
- কোন কিন্তু না রাত্রি, তোমার রুমেল তোমারই আছে। আর ও ওর লাফে মুভ-অন করে ফেলেছে সো আর ভয় নাই, ওকে জান?
- হুম
- তুমি জানো না তুমি আমাকে আমার জীবনের সেরা উপহারটা দিলা আজকে
- আমায় ভালোবাসবে তো?
- আবার জিগায়, আমার বাবুর আম্মুকে আমি না ভালোবেসে থাকতেই পারবো না
- ভালোবাসি রুমেল, সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি আমি
- আমিও রাত্রি, আর এই সন্তান হচ্ছে আমাদের ভালোবাসার প্রদীপ
- রুমেল
- হ্যাঁ বলো
- আমার না আজ তোমার আদর খেতে খুব ইচ্ছে করছে গো
- তাই?
- হুম
- এতদিন যে আমি আসতে চাইতাম নিজে তো দূরে দূরে থাকতেন, আর এখন?
- খোটা দিচ্ছো তো, আচ্ছা যাও করতে হবে না, ঘুমাবো বাই
এই বলে রাত্রি সামনে অগ্রসর হয়। আর ওমনি রুমেল রাত্রির হাত ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে লাগায়, তারপর কোলে তুলে রুমে যায়। খাটে শুইয়ে দেয় রাত্রিকে, দরজা লাগিয়ে লাইট টা অফ করে দেয় রুমেল। রাত্রির কাছে গিয়ে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দেয় রাত্রির কপাল গাল, ঠোঁট।
ভালোবাসার শক্তি দিয়ে জয় করে নেয় নিজেদের ভালোবাসা। সন্দেহে না থেকে নিজেরাই সমাধান করে নেয় তাদের প্রবলেম গুলো। রুমেল-রাত্রির ভালোবাসার অস্তিত্বটাও জানান দেয় (আমার মা-বাবা আসলেই অনেক খুশি, কই তোমরা? কি করো? ৮ মাস পরে আমিও আসবো তোমাদের কোলে)
নিচের একটা রুমে সাকিল আর মাইশা শুয়ে আছে। রুমেল কে দেখার পর মাইশার অস্থিরতাটা অনেকটা বেড়ে গেছে। রাতে ঠিকমত খেতেও পারে নি মেয়েটা। ওদিকে সাকিল উঠে গেছে। বারান্দায় গিয়ে স্মোক করছে সে। আজ না চাওয়া সত্ত্বেও কিছু অপ্রীতিকর সত্যি
তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। যা কখনও না আসলেই পারতো। অন্তত এই চাপা যন্ত্রনা ভোগ করতে হতো না সাকিলকে। মাইশার নিজের অস্থিরতাটা এখনও কাটে নি। তার মনেও প্রশ্ন। সে কি সাকিলকে ঠকাচ্ছে? নাকি সে এই বিয়েটা মন দিতে পারছে না? সাকিলের কোন
সাড়াশব্দ না পেয়ে সাইডে তাকিয়ে দেখে পাশের জায়গাটা খালি। তার মানে সাকিল নেই। শান্ত দৃষ্টিতে বারান্দায় তাকায় মাইশা। নাইট-ড্রেসের বেল্টটা বাধতে বাধতে বারান্দায় যায় মাইশা। সাকিল কখনও এইভাবে স্মোক করে না। হয়তো আজ সত্যিটা দেখে ঠিক থাকতে পারছে না।
– সাকিল
- সাকিল
- হ, হ্যাঁ
- কি হলো, এত রাতে স্মোক করছো?
- এমনি
- এটা অন্যের বাড়ি সাকিল
- তো, আমি এখানে বাজে কাজ করছি নাকি
- কি ব্যাপার সাকিল এইভাবে কথা বলছো যে
- যাও ঘুমাও গিয়ে
- কি হয়েছে সাকিল
- কিছু না, আমি কাল সকালেই চলে যাবো
- মানে
- খুব সোজা, ঢাকা ব্যাক করবো আমি
- আর আমি?
- তুমি যা ভালো বুঝবে করবে, যেতে চাইলে যাবে আর না যেতে চাইলে প্রবলেম নাই, রুমেল দিয়ে আসবে
- মানে
- কিছু না
- কোনখানের কথা কোথায় নিয়ে পয়েন্ট অনুযায়ী মেরে দিয়েছো সাকিল। এখানে রুমেল ভাই আসলো কেন
- কেন, আসা টা কি খুব ভুল হলো নাকি?
- সাকিল, কি সব বলতেছো
- ওহ, সরি সরি মাইশু, আই এম এক্সট্রিমলি সরি মাইশু
মাইশু নাম টা শুনেই বুকের মাঝে কামড় দিয়ে ওঠে মাইশার। এই নামে তো রুমেল তাকে ডাকতো। আর আজকে লাষ্ট ডাকছে সন্ধ্যায় ছাদে। তার মানে কি সাকিল সবটা জেনে গেছে।
- সাকিল, যা বলার আছে ক্লিয়ারলি বলো
- কিছু না মাইশা
- দাড়াও সাকিল, আধা কথা বলো না, বললে পুরোটা বলে যাও
- কিছুই বলার নাই আমার, শুধু বলবো এই দুইটা বছর আমি একটা ধোঁয়াশায় ছিলাম, এখন মনে হচ্ছে এই দুইবছরে যতবার আমি তোমার কাছে গেছি মনে হচ্ছে আমি তোমাকে রেপ করেছি
- সাকিললললল
- আস্তে মাইশা
- তুমি এই কথাটা বলতে পারলা, এই দুইবছরে যতবার তুমি কাছে এসেছো, তুমি কি আমায় জোড় করেছিলে? নাকি আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করেছিলে? তাহলে রেপ বললে কেন সাকিল
- রুমেলের কাছে থাকতে তাই ভালো হতো
- রুমেল আমার অতীত সাকিল
- তাই বলে আজ অতীতটা দেখে নিজেকে আটকাতে পারো নি তাই না
- সাকিল
- দৌড়ে তো ওর বুকে গিয়েই পড়লে তাই না
- সাকিল
- আমাকে তো এইভাবে কখনও ধরো নি
- আমি ধরি নি তোমায় সাকিল
- নাহ
- সাকিল উপরে আল্লাহ আছে
- সবার উপরেই আছে মাইশা, কি না করলাম আর কি পেলাম তার বদলে
- ভালোবাসি তোমাকে সাকিল
- তুমি ভালোবাসো রুমেলকে
- বাসতাম, সাকিল, ভালো বাসতাম
- এখনও বাসো
- নাহ সাকিল, উনি ওনার লাইফে মুভ-অন করেছে, আর আমি আমার লাইফে
- তারপরও রেষ টা রয়ে গেছে
- উফফফফফ সাকিল কেন বুঝতেছো না এখানে এসেছি ভাবীকে ফিরিয়ে নিতে
- কিন্তু ফিরে পেলে অন্য একজনকে
- নাহ সাকিল আমি তোমাকেই ভালোবাসি
- কথায় কথা বাড়ে মাইশা, যাও ঘুমিয়ে পড়ো
- নাহ, তুমি বিশ্বাস করো আমি তোমাকেই ভালোবাসি, হ্যাঁ মানছি রুমেল ভাইকে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি ঠিক কিন্তু আমি এতটাও খারাপ না
- কথা বলো না, যাও ঘুমাও
- সাকিল, দাড়াও কথা শুনো আমার
সাকিল মাইশার কথা উপেক্ষা করে রুমে চলে আসে। যা মাইশার একদম পছন্দ হয় নি। রাগে দুঃখে মাইশাও রুমে দৌড়ে আসে। এসে দেখে সাকিল শোয়ার ব্যবস্থা করতেছে তবে বিছানায় নয় সোফায়। এটা দেখে মাইশার মাথায় রক্ত চেপে যায়। দৌড়ে গিয়ে সাকিলের হাতটা চেপে ধরে।
- কি সমস্যা তোমার সাকিল
- কোন সমস্যা নেই
- তাহলে এখানে কেন
- তুমি খাটে শোও আমি এখানে শুয়ে যাবো
- কেন?
- এমনি মাথা ধরছে
- সাকিল নাটক করো না
- shut up, just shut up, কিসের নাটক হ্যাঁ কিসের নাটক, যাও এখান থেকে
- আমি যাবো না, তুমি খাটে শুবে, চলো
- আমি যাবো না
- তুমি যাবে
- না
- হ্যাঁ
সাকিলের মেজাজ অনেক খারাপ হয়ে যায়। সে মাইশাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় মধ্যে ফেলে দিয়ে সোফায় চলে আসে। মাইশার চোখ দিয়ে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে। তবুও সে হাল
ছাড়ে নি। কারণ সে জানে সাকিল এমনিতে চুপচাপ থাকলেও তার অনেক জেদ। আর একবার জেদ উঠলে সেই জেদ আর সহজে কমে না। তাই যা করার সে নিজেই করবে। চোখের পানি মুছে, সাকিলের কাছে যায়। সাকিল এইবার অনেক রেগে যায়। মাইশাকে দেখে সে আবার বলে উঠে,
– কি হলো কি আবার কেন আসছো, যাও ঘুমাও
– যাও, সরো
- যাও, স
বাকিটা শেষ করতে দেয়নি সাকিলকে মাইশা। ওমনি চট করে সাকিলের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দেয় মাইশা।
সাকিল সেই মুহুর্তে পুরো অবাক হয়ে যায়। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ সাকিল।
মাইশা তার কোমল শরীর দিয়ে সাকিলকে ধরে রেখেছে। এক সময় সাকিলও শান্ত হয়ে যায়। পুরো শরীরের ভারটা ছেড়ে দেয় সোফার উপরে মাইশা সাকিলের হাতটা ছেড়ে দিয়ে সাকিলের গালে হাত দেয়। সাকিলের হাতটা মাইশার কোমড়ে চলে যায়। প্রায় ১০ মিনিট পর মাইশা সাকিলের ঠোঁট ছাড়ে।
- ভালোবাসি তো তোমাকে, অনেক ভালোবাসি
- আর রুমেল
- সে আমার অতীত, আর তুমি বর্তমান। প্লিজ এমন করো না ভালোবাসার তোমাকে
- যাও ঘুমাও
- তুমিও চলো
- আমি এখানেই ঠিক আছি
- কিন্তু আমি ওখানে ঠিক নেই
- কেন?
- স্বামী এখানে আর আমি ওখানে, ভালো লাগবে না আমার
- তাই
- হ্যাঁ, চলো
মাইশা সাকিলকে নিয়ে খাটে যায়। দুইজন শুয়ে পড়ে। লাইট অফ করে দেয়। মাইশা সাকিলের একদম কাছে চলে আসে।
- ভালোবাসো একটু
- এখানে
- হ্যাঁ
- নাহ বাসায় যাই তারপর
- নাহ, এখনি
- আহহহ মাইশা
- হুসসসসসস
অতঃপর দুজনে মিলে ডুব দেয় ভালোবাসার অথৈ সাগরে। মাইশা তার অতীতকে ভুলে বর্তমানকে আপন করে নিয়েছে। এতে একদিকে যেমন না পাওয়ার বেদনা অন্যদিকে পরিপূর্ণতা। ভালোবাসা যে সব সময় জিতে যাবে তা কিন্তু নয়। কিছু ভালোবাসা
অপরিপূর্ণতায় আড়াল থেকে যায়। যার চাক্ষুস প্রমান রুমেল আর মাইশা। অপূর্ণর মাঝেও তারা পূর্ণতা পেয়েছে।
দুটো ভালোবাসা এখন ডানা মেলে আকাশে উড়ে বেরাচ্ছে। কিন্তু আসল মানুষ দুজন কষ্টে ভেসে যাচ্ছে। তাওহীদ বার বার তনুর সাথে কথা বলতে চাচ্ছে। কিন্তু পারছে না। মেয়েকে
জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে তনু। তনুর দিকে এক রকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাওহীদ। মা মেয়ে উভয়কেই পরীর মতো লাগছে। দুজনেই দুজনের মতো করে
অভূতপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারী। নাহ এভাবে আর না, তার তনুকে চাই, তার মেয়ে চাই তার। সে তার বউ-মেয়ে উভয়কেই চায়। ভালোবেসে ফেলেছে আবার তনুকে তেমনি ঘৃণা লাগছে তার নিজের প্রতি। তনু তার জায়গায় ঠিক, সেই মুহুর্তে তাওহোদের তনুর মায়ের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। সন্ধ্যায় তিনি বলেছিলেন,
- তাওহীদ শুনো
- জ্বি বলেন
- ৫ বছরের চাপা অভিমান, সময় লেগে যাবে অনেক, অল্পতে ধৈর্য হারিও না, না হয় এইবার সত্যি সত্যিই ওকে হারিয়ে ফেলবে
এইবার তনু যত যাই কিছু করুক না কেন তাওহীদ হাল ছাড়বে না। তার অর্ধাঙ্গিনীকে তার চাই। ভালোবাসার ফুলে গাথা মালা দিয়ে আবার বরণ করে সে তার তনুশাকে। কারন তাওহীদে জীবনে তনুশার প্রয়োজন অনেকখানি।
আস্তে করে উঠে গিয়ে তনুর সাইডে গিয়ে বসে তাওহীদ। তনুর শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে তাওহীদের মুখের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে। তাওহীদের হাসির পিছনে চাপা কষ্টের রেখাটাও স্পষ্ট বুঝা যায়। যেমন অন্যায়টা সে ৫ বছর আগে করেছে আজ সে তার মাসুল গুনছে।
জীবনটক আসলেই সিনেমেটিক। এখানে ম্যাটিনি সো থেকে শুরু করে ব্লকব্লাস্টার সোও দেখা যায়। শুধু চরিত্র গুলো কাল্পনিক না হয়ে বাস্তব হয়ে রয়ে যায়।
তাওহীদের বড় বেশি ইচ্ছে করছে এখুনি তনুকে ডেকে তুলতে ঘুম থেকে। যেই ভাবা সেই কাজ। তাওহীদ তনুকে ডেকে তুললো
লেখা – আফরোজা
চলবে
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “তোমায় আমার প্রয়োজন (৩য় খণ্ড) – Bangla Romantic Valobashar Golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – তোমায় আমার প্রয়োজন (শেষ খণ্ড) – Romantic Bangla Valobashar Golpoo