তোমায় আমার প্রয়োজন (শেষ খণ্ড) – Romantic Bangla Valobashar Golpo

তোমায় আমার প্রয়োজন (শেষ খণ্ড) – Romantic Bangla Valobashar Golpo: তনুকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক টেনশনে আছে তাওহীদ। পা থেকে কপাল অবদি পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে তার। প্রায় ১ ঘন্টা পর নার্স এসে খবর দেয়। তারপর….


পর্ব ৩৮

  • তনুশা
  • ..
  • এই তনুশা
  • ..
  • তনুশা, প্লিজ উঠো
  • কিহ ব্যাপার, কিছু বলবেন?
  • হ্যাঁ
  • বলুন
  • এখানে না, ছাদে চলো
  • আপনার মাথা ঠিক আছে রাত ৪ টা বাজে আমি এখন ছাদে যাবো, যান ঘুমান

– তনুশা উঠো

  • তনুশা উঠো প্লিজ, ওকে ছাদে যেতে হবে না, বারান্দায় চলো
  • আপনি যান ঘুমান
  • তুমি চলো তনুশা, না হয় কিন্তু
  • কিন্তু কি, রাত ৪ টা বাজে কি শুরু করেছেন
  • চলো আগে তুমি
  • আচ্ছা চলুন

তাওহীদ তনুকে বারান্দায় নিয়ে যায়। বারান্দায় দুইটা বেতের চেয়ার ছিল। সেখানে তাওহীদ তনুকে বসতে বলে। এই মুহুর্তে তাওহীদকে অনেকটা সাইকো লাগছে তনুর। সাইকো নয় তো কি? রাত ৪ টা বেজে ১৫ মিনিট আর সে এখন বারান্দায় বসছে মিটিং করতে। আজব পাবলিক।

  • আপনার সমস্যা কি, বলবেন একটু
  • কোন সমস্যা নাই তনুশা
  • তাহলে এমন অটিস্টিকের মতো করছেন কেন?
  • মানে? কি বললা তুমি, আমি অটিস্টিক?
  • তাই মনে হচ্ছে আমার
  • তোমার তা মনে হওয়ার কারণ?
  • এখন রাত প্রায় ৪ টা ১৫। আর আপনি আমায় ঘুম থেকে তুলে এখানে এনে বসিয়েছেন
  • তনুশায়ায়ায়া
  • কি তনুশা তনুশা করেন হ্যাঁ, কিসের তনুশা, তনুশা মরে গেছে৷। ৫ বছর আগে আপনি খুন করেছেন তনুশাকে
  • কি যা তা বলতেছো
  • যা তা নয়, ঠিক বললাম। এখন আসছেন আদিক্ষেতা দেখাতে। খবরদার নেক্সট টাইম এমন কিছু করবেন না। কাল মেয়েকে নিয়ে চলে যাবেন এখান থেকে
  • তুমি আমার সাথে রাগ করে মেয়েটাকে মা ছাড়া করবা। ও মাম্মাম বলতে অজ্ঞান, এই একটা দিন আমি ও-কে কিভাবে সামলেছি তা আমিই জানি
  • ঠিক হয়ে যাবে পরে। নিয়ে চলে যাবেন আপনাকে আপনার মেয়ে ছাড়া থাকতে হবে না। বুঝেছেন?
  • কি হয়েছে তনুশা, এমন করছো কেন
  • কি হয়েছে? কিছুই হয় নি। এমন করছি কেন? কিছুই করি নি
  • তনুশা ফিরে চলো প্লিজ
  • সকাল বেলা মেয়েকে নিয়ে সোজা বেরিয়ে যাবেন। আর ভুলেই এই কথা বলবেন না
  • তনুশায়ায়া, কেন বুঝো না তোমায় আমার প্রয়োজন
  • আমার আপনাকে প্রয়োজন নেই
  • তনুশা
  • গুড নাইট
    এই বলে তনু উঠে চলে যায়। তাওহীদ সেখানেই চুপ করে বসে থাকে। শ্বাশুড়ির কথাটাই ঠিক। চাপা অভিমানটা বড্ড কষ্ট করে মনের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে। সহজে সে তার জায়গা দিবে না কাউকে। চেয়ারের মধ্যে মাথা দিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুম চলে আসছে তাওহীদের সে নিজেও জানে না।

পরদিন সকালে,

রাত্রি তনয়া তনু মিলে নাস্তা রেডি করছে। রাত্রিকে বেশ চনমনে লাগছে। সকাল সকাল গোসল, ভেজা চুলে এক কথায় দারুন লাগছে তাকে। তনয়া দেখে মজায় মজায় বলে উঠলো,

  • কি গো ভাবীজান, রাত কেমন কাটলো
  • রাত রাতের মতই কাটলো
  • আচ্ছা তাই নাকি
  • হুম
  • তা এই ভেজা চুলের রহস্য কি
  • মানে কি
  • সকাল সকাল গোসল কেন?
  • আপুউউউ, দেখছো তোমার বোন কি সব বলে
  • ছুটকি কি বলিস এইসব
  • দিদি থাম তো আমি আর ছোট নেই৷, ওই কও রাতে কি কি করলা
  • আপুউউউউউ, ওরে এইবার একটা বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করো তো, তাহলে ও বুঝবে রাতে কি কি করে
  • থাম তো তোরা, বাসায় মেহমান, শুনলে কি বলবে।

রান্না ঘরের দরজার সামনে মাইশা দাঁড়িয়ে ছিল। সব শুনে নিয়েছে সে। কষ্ট হলেও কষ্ট গুলো আড়াল করে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে ধরেছে সে

  • তুমি অনেক ভালো থাকো রুমেল। সত্যি রাত্রি অনেক ভালো মেয়ে। অনেক সুখে রাখবে তোমাকে। ভেবে নিবো তোমার আর আমার পথের সমীকরণটা মিলার ছিল না তাই মিলে নাই। আর আমার সাকিলও আমায় যথেষ্ট ভালোবাসে। আল্লাহ আমাউ করে দিয়েন আমি বিপথে বেকে গিয়েছিলাম। আমি আমার বরকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতে পারি না (মনে মনে)

রাত্রির চোখ যায় মাইশার দিকে। রান্নাঘরের বেসিনের উপরের আয়নাটায় ওকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। ওর ও ভেজা চুল। দেখে মনে হচ্ছে সেও সকালে গোসল করেছে। তার মানে কি কাল রাতে তাদের মাঝেও। রাত্রির মনটা মুহুর্তে আরও খুশি হয়ে যায়

। সেও চেয়েছে মাইশা খুশি থাকুক। ভালো থাকুক। না পাওয়ার যন্ত্রনা ভুলে গিয়ে পাওয়া সুখ গুলোকে মুঠো বন্দী করে ভেসে চলুক ভালোবাসার শেষ সীমানা অবদি। কালকের খারাপ লাগা গুলো আজ মায়ায় রূপ নিয়েছে রাত্রির। মাইশাকে দেখে নিজেই ডাক দেয়,

  • আরে মাইশা, ওইখানে কি করছো? ভেতরে আসো

রাত্রির কথা শুনে ধ্যান ভাঙে মাইশার। হাসি মুখে সেও রান্নাঘরে যায়। মাইশাকে দেখে তনয়া আরও ফাইযলামি শুরু করে

  • তোমারও সেম অবস্থা?
  • মানে
  • এই ভাবী আমিও বিয়ে করবো প্লিজ ছেলে খুজো
  • এএএএএএএএএ
  • এএএ নয় হ্যাঁ, তাহলে আমিও প্রতিদিন সকালে গোসল করবো
  • আল্লাহ গো, এই মেয়ে বলে কি
  • কেন মাইশা আপু, ভুল কিছু বললাম
  • এ তো দেখি বিয়ে পাগলী
  • ইসসসসস, এইভাবে বলো না। লজ্জা লাগে তো আমার
  • আহারেএএএএ কি লজ্জা তার
  • মাইশা ওর কথায় কিছু মনে নিও না ও অলয়েজ এমন করে আমার সাথে
  • নাহ রাত্রি ঠিক আছে, ব্যাপার নাহ
  • এই ছুটকি তোমার ভাই কই গো
  • ভাইয়া তো চা নিয়ে ছাদে গেল

তনয়ার কথা শুনে বুকে কামড় দেয় মাইশার। কারণ কিছুক্ষন আগেই সাকিলও চায়ের কাপ নিয়ে সকালের হাওয়া খেতে ছাদে গেছে। অজানা ভয়ে বুক শিহরিত হতে থাকে মাইশার। রুমে চলে আসে। বার বার মাথায় হাত দিয়ে শুধু এক টেনশন তার,

  • তাহলে তো ওরা দুজন একসাথে। হায় আল্লাহ এখন কি হবে। কাল রাতে তো সাকিল অনেক রেগেছিল। যদি এখন উলটাপালটা কিছু হয়। ছি ছি মুখ দেখাতে পারবো না এখানে

এইসব উলটাপালটা ভাবছে মাইশা। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে তার।

অপরদিকে,

ওয়াসিম আর আফরোজ রুমেই আছে। নিজেরা নিজেরা কথা বলছে।

  • শুনো না
  • হ্যাঁ বলো
  • তনুকে তো রাজি করাতে পারছি না
  • হুম
  • কি করবো বলো তো?
  • আমার কি মনে হয় জানো
  • কি
  • ওদের একা ছাড়া উচিত, দেখো আমরা বললে তো আর তনু মানবে না তাই না
  • হ্যাঁ
  • তার চেয়ে বরং ওদের দুজনকেই বুঝতে দাও ব্যাপার টা
  • তাও ঠিক বলেছো
  • তবে যাওয়ার আগে একটু বুঝিয়ে যেও
  • আচ্ছা
  • এখন শরীর কেমন তোমার
  • ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ
  • আচ্ছা, তুমি থাকো আমি একটু ছাদে যাই
  • আচ্ছা যাও

ছাদে,

রুমেল দাঁড়িয়েছিল। সাকিলও কাছে গেছে রুমেলের। কথা বলে দুজনে,

  • আসসালামু আলাইকুম
  • ওয়ালাইকুম আসসালাম
  • কি অবস্থা রুমেল সাহেব
  • এই তো ভাই চলে কোম রকম। আপনার?
  • আছি ভাই ভালো
  • ওহ
  • তা এখন কিসে আছেন
  • ন্যাশনাল ব্যাংকে, জি এম পদে আছি
  • ওহ তাই নাকি, অনেক ভালো পজিশন তাহলে
  • জ্বি ভাই আল্লাহর রহমতে আছি
  • ভাবিও কি জব করে
  • হ্যাঁ, একই ব্যাংকে
  • ওহ আচ্ছা

তারপর চায়ের কাপে দুজনেই চুমুক দেয়। সাকিল ভাবছে কালকের কথাটা কি এখন তুলবে? কিন্তু যদি হিতে বিপরীত হয়ে যায়। আর যেখানে মাইশা তার অতীতকে ভুলে গেছে। সেখানে নাই বা হলো বাড়াবাড়ি। এইসব ভেবে সাকিল চুপ থেকে গেল।

তনুর বাসায় থাকতে কেমন যেন লাগছে। রান্নাঘরে ওদের কথা গুলো তনুর বুকে ছুরির মতো গিয়ে বিধেছে। তারও তো এমন সুখী হওয়ার কথা ছিল। ভালোবাসা নিয়ে থাকার কথা ছিল। স্বামী সন্তান সংসার এইসব নিয়ে থাকার কথা ছিল। কিন্তু কি হয়ে গেল? এমন টা না হলেও

তো পারতো? মেয়েটার জন্য অনেক মায়া লাগছে তনুর। কাল তো জেদের বশে বলে দিল মেয়েকে নিয়ে চলে যেতে, আসলেই কি থাকতে পারবে তনু তাহুরাকে ছাড়া। বাচ্চা মেয়েটা কেদে কেদে শেষ হয়ে যাবে।

অন্যদিকে,
তাওহীদের মন মেজাজও ভালো না। বাসা থেকে বের হয়ে গেছে সে। সেই রেষ্টুরেন্টে বসে আছে যেখানে মেয়ের সাথে দেখা হয়েছিল। আজ বড় অসহায় লাগছে নিজের কাছে তাকে। তনুশা কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। আর একবার চেষ্টা করবে সে। তারপর যা করার করবে।

দুপুরের দিকে তাওহীদ বাসায় আসে। রাস্তায় সব ভেবে নিয়েছে। কি কি বলবে তনুকে। এসে সোজা তনুর রুমে ঢুকে যায় তাওহীদ। তনু তখন কাপড় পরছিলো।

বুকে কাপড় ছিল না। তাওহীদ সেই অবস্থায় তনুকে দেখে ফেলে। আর ওই অবস্থাতেই তনুকে তার দিকে ঘুরায়।

  • এ কি ধরনের অসভ্যতা
  • মানে
  • একজনের রুমে আসতে হলে নক করে আসতে হয়, জানেন না আপনি?
  • একজন কেন হতে যাবে, বউয়ের ঘরে আসছি নকের কি দরকার
  • কিসের বউ, বের হোন রুম থেকে
  • তনুশা, এমন করতেছো কেন
  • বের হোন এই ঘর থেকে
  • আমি তোমার সাথে কথা বলতে আসছি
  • আমি কিছুই শুনতে চাই না
  • তনুশায়ায়ায়ায়া
  • একটা অসভ্য, ইতর, বড়লোক খারাপ মানুষ, নিজেকে কি মনে করেন, সব টাকায় পাওয়া যায়, হ্যাঁ। বলা নেই কওয়া নেই আমার ঘরে চলে এলেন। কেন এসেছেন হ্যাঁ কেন এসেছেন। জোড় করে আমায় রেপ করতে আসছেন যাতে আমি আপনার সাথে যেতে বাধ্য হই।
  • তনুশায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া

তনুর কথা শুনে তাওহীদের মাথায় আগুন ধরে যায়। কি বললো মেয়েটা এইসব। তাও আবার তাওহীদকে। এইবার তাওহীদেরও মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সেও চিৎকার চেচামেচি শুরু করে

  • তোমার প্রবলেম কি তনুশায়ায়ায়া। এমন করতেছো কেন, আর এইসব কি বলতেছো তুমি, হ্যাঁ, আমি তোমাকে রেপ করতে আসছি?
  • বলা তো যায় না
  • তনুশায়ায়ায়ায়ায়ায়া
  • চিৎকার দিবেন না, যান বের হয়ে যান তো
  • হবো না, কি করবা
  • ওকে আমিই বের হয়ে যাই
  • কোথাও যাবা না তুমি, এইখানেই থাকবা তুমি
  • আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই
  • তুমি বাধ্য
  • না
  • হ্যাঁ

এইবার তাওহীদের মাথায় আরও আগুন চেপে যায়। এইবার হাতটা উঠেই যায় তনুর গাল বরাবর।


পর্ব ৩৯

  • থামলেন কেন, মারেন মারেন, আরে মারেন না, মারেন
  • তনুশা স্টপ
  • আরে মারেন আপনি
  • তনুশা স্টপ
  • কেন স্টপ কেন, মারেন আপনি, এইসবই তো চাচ্ছেন আপনি, তাই না?
  • তনুশায়ায়ায়ায়ায়া
  • কি তনুশা, হ্যাঁ কি তনুশা। সব ভুলে গেছেন নাকি, আমি কিন্তু কিছুই ভুলি নি
  • তনুশা আস্তে কথা বলো
  • হ্যাঁ, এত বছর তো আস্তে কথা কেন, কথাই তো বলি নি আমি, তাহলে আজ কেন?

সবাই অবাক হয়ে দেখছে। তবে কেউ কিছু বলছে না। ভেবেছিল এই ঝগড়ার মধ্যেই হয়তো ওদের সব কিছুর অবসান ঘটে যাবে। তবে হিতে বিপরীত হয়ে গেল।

  • কতবার বলবো আমি, কতবার বললে তুমি বিশ্বাস করবে যে আমি সেদিন ভুল করেছি ভুল করেছি ভুল করেছি আর সেই ভুলের মাসুল আজ অবদি গুনতেছি। তুমি শুধু নিজের টাই বুঝতেছো তনুশা আমার দিকটা বুঝতেছো না
  • কি, হ্যাঁ কি বললেন, হা হা হা, কে কোথায় আছো শুনে যাও আমি নাকি এনাকে বুঝি না, আপনি আমাকে বুঝেছিলেন?
  • আবারও সেই কথাতে পড়ে আছে, আমার জায়গায় যে কেউ থাকলে সেম করতো
  • নাহ, ভুল কথা এটা, কেউ সেম করতো না, কেউ না। আরে জেল খানায় ফাঁসি দেয়ার আগেও কয়েদিকে প্রশ্ন করা হয় শেষ ইচ্ছা কি, কাটগড়ায় রায় দেয়ার আগে অপরাধীকে বলা হয় তোমার কিছু বলার আছে? আর সেখানে আমাকে, ভুলে গেছেন সে রাতের কথা?
  • উফফফফ, তনুশা আমি বলছি তো আমি ভুল করেছি, আচ্ছা বলো কি করলে তোমার রাগ কমবে, পায়ে ধরবো? না হয় তোমার পায়ের জুতো দিয়ে আমায় আঘাত করো, তারপরও এমন করো না প্লিজ
  • তাহলে যদি বলি ফিরিয়ে দিন আমার ৫ টা বছর, ফিরিয়ে দিন আমার হাসি গুলো, ফিরিয়ে দিন আমার এতগুলো দিন, ফিরিয়ে দিন আমার বাবাকে, পারবেন?
  • আমি মানছি আমি ভুল করেছি, যার কোন ক্ষমা হয় না, তবুও প্লিজ আমায় ক্ষমা করো, প্লিজ

সবাই ওদের ঝগড়া দেখছে। আফরোজ কয়েকবার থামাতে গিয়েও ছিল। কিন্তু কাজ হয় নি। তাই আর কেউ থামানোর চেষ্টাও করে নি। সবাই ভেবেছে চাপা অভিমানগুলো বেরিয়ে আসুক।

  • এখনও দাঁড়িয়ে আছেন এখানে
  • তো কি করবো এখন আপনি
  • চলে যান, যান, চলে যান
  • তনুশা ভালোয় ভালোয় বলছি চলো, না হয় কিন্তু খবর আছে
  • আপনি একজন খারাপ মানুষ, যে নিজের বউকে বিশ্বাস করা না। যে নিজের বুঝটাকে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। রাতের অন্ধকারে বাড়ির বউকে বের করে দেয়। আরে আপনারা সব্বাই স্বার্থপর৷ স্বার্থের জন্য আমায় ব্যবহার করেছেন
  • ভুলে যেও না তনুশা তুমিও কিন্তু আমায় ভালোবেসে বিয়ে করো নি। নিজের স্বার্থে বিয়ে করছো আমার বাবার প্রস্তাবে।

এই কথা শুনে তনুও অনেক রেগে যায়। সবার দিকে তাকিয়ে দেখে তনু। তারপর দৌড়ে এসে সবার মুখের উপরে দরজা লাগিয়ে দেয় তনু। দরজা লাগানো দেখে সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। এইবার তনু আবার বলা শুরু করে,

  • কি বললেন আপনি, নিজের স্বার্থে বিয়ে করছি আমি আপনাকে?
  • হ্যাঁ, আমার বাপও স্বার্থের জন্য তোমার কাছে গেছে আর তুমিও রাজি হয়ে গেছ
  • তাহলে তো বলতে হয় স্বার্থের জন্য আপনিও আমার কাছে এসেছেন। দিনের পর দিন আমার শুয়েছেন, দিনের পর দিন আমার সাথে সে, তারপরও বলেছেন আমি নাকি বেশ্যা, তাহলে আপনি কতটুকু ভালো হলেন, রাতের অন্ধকারে বের করে দিলেন। যেই বাবা মাকে

এত ভালোবাসলাম তারা পর্যন্ত আমার সাথে এমন করলো। আমার ভাইটার চাকরি নিয়ে নিল। তাহলে আপনি কোথাকার একদম ফেরেশতা হলেন, বলেন আমায়, বলেন?

  • তনুশা, ভুলে গেছো সুইজারল্যান্ডে তুমিই আমার কাছে ধরা দিয়েছিলে, আমি কিন্তু যাই নি তোমার কাছে

পরিস্থিতি এতই খারাপ হয়ে যায় যে তনু এক সময় তাওহীদের কলার পর্যন্ত ধরে ফেলে। আজ তনু কেন জানি নিজেকে সামলাতে পারছে না। চাপা গলায় চোখে ফেটে বেরিয়ে যাবে মনে হচ্ছে তার।

  • কেন গেছিলাম জানেন নি আপনি? কেন শুয়েছিলাম আপনার সাথে বুঝেন নি আপনি? নাকি সে রাতে শরীরের উন্মাদনাগুলো এতই বেড়ে গিয়েছিল যে আমার যন্ত্রনাগুলো চোখেই পড়ে নি আপনার। আরে একজন স্বামীই তো বুঝে তার স্ত্রী সতী নাকি অসতী। তাহলে

আপনি বুঝলেন না কেন আমি শুদ্ধ ছিলাম নাকি অসুদ্ধ ছিলাম। সে রাতে নিজেকে আপনার কাছে বিলিয়ে দিয়েছিলাম এই কারণেই যাতে আপনি আমার সতীত্বের প্রমান পান। আমি আদৌ রাফাতের সাথে শুয়েছিলাম কিনা তা তো আপনার বুঝা উচিত ছিল। সোজা কথায়, আমি ভার্জিন ছিলাম নাকি না বুঝেন নাই আপনি

  • তনুশায়ায়ায়ায়ায়ায়া (ঠাসঠাস)

তাওহীদ আর নিজেকে সামলাতে পারে নি। থাপ্পড়টা মেরেই দিলো তনুকে সে। থাপ্পড় রর বেগ এতই দ্রুত ছিল যে সামাল দিতে না খাটে গিয়ে পরে তনু। তারপর জেদের বসে তাওহীদ

খাটে গিয়ে তনুর উপরে উঠে যায়। জোড় করে তনুর ঠোঁট জোড়াকে নিজের ঠোঁটের আয়ত্ত্বে নিয়ে আসে তাওহীদ। দুহাত দিয়ে তাওহীদকে সরানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেই যাচ্ছে তনু। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। তাওহীদ জোড় করে ধরে রেখেছে তনুকে। চাদর খামছে প্রায় দলা করে নিয়েছে তনু। দুচোখ বেয়ে ক্রোধের চোটে পানি বেয়ে বেয়ে পড়ছে।

আর অন্যদিকে তাওহীদ যতক্ষন না পর্যন্ত নিজের শরীরের রাগ কমাতে পারছে তনুকে ধরেই রেখেছে। মিনিট পনেরো পরে তনু নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাওহীদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলে।

  • নির্লজ্জ, বেহায়া, লম্পট, চরিত্রহীন পুরুষ। সরে যা আমার চোখের সামনে থেকে, দূর হয়ে যা। আমি তোকে কেন তোর ছায়াও দেখতে চাই না। বেরিয়ে যা তুই। আল্লাহ করুক তোর এই চেহারাটা যাতে আমায় দেখতে না হয়। এই জীবনে যাতে তুই চোখ মেলে আমার দিকে না তাকাতে পারিস। আল্লাহ করুক তোর মৃত্যুর খবর যাতে আমি পাই। তুই বের হয়ে যা আমার সামনে থেকে।

তনুর কথায় আজ সত্যি তাওহীদ আহত। মন থেকে আহত। হৃদয় থেকে আহত। এতটাই আহত যে পিষিয়ে দিয়েছে তনু তাওহীদকে। চরিত্রহীন পুরুষের দাগ লাগিয়ে দিল তনু তাকে। মরে যাওয়ার অভিশাপ পর্যন্ত বেরিয়ে গেল ওর মুখ থেকে। টপ টপ করে পানি গুলো দ্রুত গতিতে তাওহীদের চোখে থেকে বেরিয়ে যায়। ছুটে গিয়ে তনুর চুলের পিছন দিক টা ধরে ফেলে তাওহীদ।

  • শেষ পর্যন্ত অভিশাপটা দিয়েই দিলি
  • এখন গায়ের জোড় দেখাবেন তাই না
  • আপনি কেন তুই তুই বল, তাই তো বলেছিলি তাই না তুই তুই বল। মৃত্যুর অভিশাপ দিয়েছিস না তুই। যাহ আল্লাহ কবুল করুক তোর এই কথাটা। আল্লাহ তুমি আমার বউয়ের কথাটা যত দ্রুত সম্ভব কবুল করে নিও। ভালো থাক তুই। মেয়েকে তোর কাছেই দিয়ে গেলাম

এই বলে চোখের পানি গুলো বা হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বেরিয়ে যায় তাওহীদ। ড্রইং রুমে সবাইকে উপেক্ষা করে সোজা বেরিয়ে যেতে থাকে তাওহীদ। যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যায়

  • তাহুরাকে রেখে চলে এসো তোমরা আমি ঢাকা চলে যাচ্ছি

এইটুকু বলেই বেরিয়ে যায় সে। আর অন্যদিকে তনু ফ্লোরে বসে বালিশ চাপা দিয়ে কান্না শুরু করে। রাত্রি, তনয়া, আর মাইশা দৌড়ে তনুর রুমের সামনে যায়। হুলস্থুল অবস্থা রুমের। বিছানার চাদর এলোমেলো, তনু নিজেও এলোমেলো। রাত্রি, তনয়া আর মাইশা সবাই মিলে তনুর কাছে যায়। বার বার জিজ্ঞাসা করতে থাকে। শুধু একটাই উত্তর দেয় তনু,

  • মাইশা দয়া করে তোমরা চলে যাও। দয়া করো, আমায় বাচতে দাও। চলে যাও তোমরা, প্লিজ চলে যাও

তনুর এমন কথায় ভালো মন্দ কিছুই বলে নাই মাইশা।
সেইদিন বিকেলেই সবাই ঢাকা চলে আসবে বলে সব গুছিয়ে নেয়। খাওয়া দাওয়া হয় নি কারো। পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে যে খাওয়া কারো গলা দিয়ে নামবে না। এর মধ্যে দিয়ে তাহুরা এসে বড্ড বেশি বিরক্ত করছে তনুকে।

– মাম্মাম পাপাই তই

– মাম্মাম পাপাই তই

  • ও মাম্মাম, মাম্মাম পাপাই তই
  • তাহুরা বিরক্ত করো না
  • ও মাম্মাম বলো না পাপাই তই
  • তাহুরায়ায়ায়া (ঠাসঠাস)
  • এ, এ,
  • চুপ একদম চুপ, এত পাপাই পাপাই কিসের, রেখে আসছিলাম না পাপাইর কাছে, আসছিস কেন, বেয়াদব একটা, আমার হাড় মাংস জ্বালিয়ে খাইছিস, যা সর এখান থেকে

বাচ্চা মেয়েটার সাথেও এত বাজে ব্যবহার করলো তনু। রুমেল-রাত্রি একসাথে সব দেখেও ফেলে সাথে শুনেও ফেলে

  • তনুউউউউউ, তুই ও-কে এইগুলা কি বললি?
  • সমস্যা কি তোমার আপু, তাহুরা কি করছে যে ও-কে আজকে মারলা তুমি
  • এইখান থেকে যাও
  • হ্যাঁ হ্যাঁ বের করে দে আমাদেরকেও। তুই আমার ভাগনির গায়ে হাত দিছিস, ওই হাতটা যদি আমি কেটে না দিছি
  • আহহহহ রুমেল থামো তো, আপু পাগল হয়ে গেছে৷, তাহুরাকে কোলে নাও, রুম থেকে চলে আসো, আর আপু তুমি তাহুরার কাছে আসবা না, এই বলে গেলাম আমি
  • মিমি ও মিমি
  • জ্বি মাম্মাম পাখি
  • মাম্মাম আমায় মেরেতে তেনো
  • তোমার মা পাগল হয়ে গেছে সোনা, তুমি চলো আমার সাথে মাম্মাম পাখি আর মিমি আর মনি মিলে আজকে আইসক্রিম খেতে যাবে, চলো মাম্মাম
  • তলো, মাম্মাম পতা

যন্ত্রনাটা আরও দ্বিগুণ হয়ে যায় তনুর।
মেয়েটাকে পর্যন্ত আজকে চড় মেরে দিল। এত রাগ কোথা থেকে উদয় হয়েছে কে জানে?
বিকেল সাড়ে ৪ টা, ওরা সবাই যাওয়ার জন্য রওনা দিবে এখন। আফরোজ এসেছে তনুর সাথে কথা বলতে। তনু আজ সারাদিনেও রুম থেকে বের হয় নি।

– আসবো?

  • নক নক,
  • কে, ওহ আপু আসো
  • চলে যাচ্ছি ঢাকাতে, তাই দেখা করতে এলাম
  • আরও দুইটা দিন থেকে যাও আপু
  • যার জন্য আসা তা তো ফুলফিল হলো না তাই চলে যাচ্ছি। আচ্ছা একটা কথা বলি?
  • হ্যাঁ আপু বলো
  • তাওহীদকে এইভাবে কষ্ট না দিলেও পারতি
  • আপু তুমিও, তুমি তো সব জানো তাই না
  • হ্যাঁ সব জানি, এমন কি এটাও জানি যে তাওহীদ আজও তোকে ভালোবাসে
  • ওটাকে ভালোবাসা বলে না
  • তাহলে কোন টাকে ভালোবাসা বলে, কাছে থেকে সারাক্ষণ লুতুপুতু করাই কি ভালোবাসা। মানলাম অনেক অন্যায় করেছে তোর সাথে যার ক্ষমা হয় না তেমনি অনেক কষ্ট পেয়েছে ছেলেটা। একবার ভেবে দেখেছিস কি সে আজ পর্যন্ত বিয়েও করে নি। মাইশার কাছে

শুনেছিলাম, কানাডায় কত সম্বন্ধ পাঠিয়েছে ওর মা সবার সব প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে ও। তোকে যেমন কষ্ট দিয়েছে তার চেয়ে নিজে জ্বলেছে তিনগুন। যাই হোক, যা করার করেছিস। শুধু এতটুকুই বলবো তোর মেয়েটার বাবা-মা উভয়কেই লাগবে। একটা সন্তান সর্বদিক

থেকে তার বাবা-মা উভয়কেই চায়। অথচ তুই সেই বাচ্চার সামনে দলিল ছুড়ে দিয়েছিস, তুই কাকে চাস মা নাকি বাবা। এখন বলবি ওকে তো ওর বাবার কাছে দিয়ে আসছি। আমি বলবো সব থেকে বোকামি এখানেই করেছিস। জীবন টা খুব ছোট হয় তনু, হয়তো ৫ টা বছর নষ্ট

হয়ে গেছে। কিন্তু বাকি জীবন টা তো কাটাতেই পারতি তাই না? যাই হোক, তীর জীবন তোর সব, ডিসিশন টাও তোর ভালো থাক। দোয়া করিস, আসি

তনুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায় আফরোজ। আফরোজের বিশ্বাস সে যতটুকু বলেছে তনু যদি সত্যিই বুদ্ধিমতি হয় তাহলে সে সব বুঝবে।

৫ টা নাগাদ সবাই বের হয়ে যায়। রুম অন্ধকার করে বিছানায় পড়ে থাকে তনু। চোখের পানি গুলো যেন পাল্লা দিচ্ছে, থামছেই না। কারো কিছুই বলার নেই তনুকে। সবাই যে যার মতো কাজ করছে। সুরিয়া বেগম সব দেখেও চুপ কারণ তিনি তাওহীদকে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়েছিলেন। হয়তো তাই চুপ আছেন।

এইদিকে রাত্রি প্রেগন্যান্ট। তা নিয়ে ওরা সবাই অনেক আনন্দিত। কিন্তু কারো মুখেই হাসি নেই। সবাই এক রকম ঘোরের মাঝে আছে। কি হওয়ার কথা ছিল আর কি হয়ে গেল?

এক সপ্তাহ পর,

এত দিন না তাওহীদ তনুকে কল দিয়েছে না তনু তাওহীদকে। হ্যাঁ তবে দুইদিন আগে রাত্রির সাথে মাইশার কথা হয়েছে। তাহুরার কথা জিজ্ঞেস করার জন্য কল দেয়া।

মাইশার কাছ থেকেই সব জানতে পারে রাত্রি। তাওহীদ ভালো নেই, একদম ভালো নেই। চট্টগ্রাম থেকে যাওয়ার পর একদম শান্ত হয়ে গেছে। তাহুরা আর তনুর ছবি দেখে সারাদিন

কাটে তার। ইদানীং মদ খাওয়া শুরু করেছে আবার। রাত করে বাসায় ফিরে। আরও অনেক কিছুই বদ অভ্যাস করে নিয়েছে এই কয়েকদিনে সে। তাওহীদের মা-বাব দিন রাত কান্নাকাটি করে নাতিনের জন্য, বউয়ের জন্য। একটাবার তাহুরাকে দেখতে চায় এই সেই আরও অনেক কিছুই।

ঢাকা

  • কত রাত হয়ে গেছে এখনও ছেলেটা ফিরলো না
  • মা টেনশন নিয়েন না চলে আসবে তাওহীদ
  • তুমি আরেকবার কল দাও না সাকিল
  • মাইশা মাত্র ১১ টা, আর ইদানীং তো ও রাত করেই বাড়ি ফেরে
  • সাকিল আমার বা চোখ টা সকাল থেকে লাফাচ্ছে বাবা, মন টাও কু ডাকছে, একবার কল দাও না বাবা
  • আচ্ছা দিচ্ছি মা

কয়েকবার কল হলো কিন্তু রিসিভ হলো না

  • রিসিভ করে নাই তো মা
  • ওহহহহ রে আল্লাহ, কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছো
  • ভুলে গেলে আম্মু, কোন পাপের জানো না?
  • হ্যাঁ রে মা, মনে আছে। সেই পাপের মাসুল গুনতে হচ্ছে আমাদের
  • সাকিল কি মনে হয় গো
  • অফিসে তো নেই,
  • হুম

প্রায় এক ঘন্টা পরে সাকিলের ফোনে একটা কল আসে।

  • হ্যালো আসসালামু আলাইকুম,
  • ওয়ালাইকুম আসসালাম
  • কে বলছেন?
  • ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলছিলাম
  • জ্বি বলেন
  • আমি একটা মোবাইল থেকে নাম্বার টা পেলাম
  • ক্লিয়ার করে বলবেন প্লিজ, কি হয়েছে
  • দেখুন একটা গাড়ি হাইওয়ে তে এক্সিডেন্ট হয়েছে। ওই গাড়িতে যিনি ছিলেন তার মোবাইল থেকে আপনার নাম্বার পেয়েছি
  • accident, whatttttttttttt
  • আল্লাহ গোওওওওও, আমার ছেলেএএএ
  • কি বলছেন কি কিসের এক্সিডেন্ট, গাড়ির নাম্বারটা বলেন তো
  • AWM 60-59-399
  • whattttttttttttttttt
  • চলে আসুন তারাতারি, রোগীর অবস্থা আশংকাজনক

ফোন টা কেটে যায়। সাকিল ধুপ করে সোফায় বসে পড়ে। মাইশা আর রাবেয়া বেগম চিৎকার দিয়ে কান্না করে উঠে।

তাহলে কি তনুর অভিশাপ টা লেগেই গেল? হ্যাঁ হয়তো সব কিছু অবসান এখানেই ঘটে গেল। হয়তো তাওহীদ সব কিছুর ইতি টেনে দিয়েছে। হয়তো জীবনে করা কিছু ভুল কিংবা অজান্তে হয়ে যাওয়া কিছু পাপের শাস্তি এইভাবেই হয়।


পর্ব ৪০

রাত প্রায় ১২ টা ৪৫ মিনিট,

যে যেভাবে ছিল, সে সেভাবেই হাসপাতালে ছুটে গেছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখে সেখানে পুলিশও আছে। তাওহীদের পরিবারকে দেখে পুলিশ ওনাদের দিকে এগিয়ে আসেন।

  • আসসালামু আলাইকুম
  • ওয়ালাইকুম আসসালাম, আমি সিনিয়র ইন্সপেক্টর শাওন
  • হ্যালো স্যার
  • হ্যালো, দেখুন গাড়িটার খুবই বাজে অবস্থা, আর তাছাড়া রোগীর অবস্থাও তো ভালো না

ইন্সপেক্টর এর কথা শুনে রাবেয়া বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। মাহবুব সাহেব তো যায় যায় অবস্থা। মনে হচ্ছে বহু কষ্টে সে দাঁড়িয়ে আছে।

  • মা কান্না করবেন না, আসুন তাওহীদকে দেখতে যাই
  • হ্যাঁ আপনারা বরং রোগীর কাছে যান আর মিষ্টার সাকিল আপনি আমার সাথে একটু পর দেখা করুন
  • জ্বি স্যার

কোন রকম দেরি না করেই OT তে নিয়ে যাওয়া হয় তাওহীদকে। সাকিল নিজ দ্বায়িত্বে রাবেয়া বেগম এবং মাহবুব সাহেব কে বসিয়ে দেন চেয়ারে। মাইশাও পাশে বসা। সাকিল এই সুযোগে পুলিশের সাথে দেখা করে,

  • আরে মিষ্টার সাকিল
  • জ্বি স্যার, এইবার বলুন
  • দেখুন এটা একটা এক্সিডেন্ট। এক্সিডেন্ট স্পট থেকে কিছুই পাওয়া যায় নি। ভাগ্য ভালো ছিল মোবাইল টা ছিটকে রাস্তায় এসে পড়ছে। যেই ট্রাকটা চাপা দিয়েছে তাকে আমরা আটক করছি। শালা মাল খেয়ে ট্রাক ড্রাইভ করছিল। তাই এক্সিডেন্টটা হয়ে গেছে। আর গাড়িটা যিনি ড্রাইভ করছিলেন তিনিও অন্যমনস্ক ছিলেন,
  • এছাড়া আর কিছু নেই তো?
  • জ্বি না
  • ওকে ধন্যবাদ
  • আচ্ছা আসি তাহলে
  • ওকে আল্লাহ হাফেজ

পুলিশ বিদায় নেয়। ওইদিকে OT চলছে। সাকিল আরেক ডক্টরের সাথে কথা বলছে, গার্জিয়ান ছাড়া রোগীকে কেন OT তে নেয়া হলো। ডক্টর ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

প্রায় এক ঘন্টা পর মানে রাত প্রায় ২ টার মতো বাজছে তখন OT থেকে সিনিয়র ডক্টর বেরিয়ে আসেন। এত রাতে OT করতে এসে ডক্টরকেও বিরক্ত লাগছিল।
সাকিল মাহবুব সাহেব ছুটে গেলেন ওনার কাছে

  • কেমন বুঝলেন ডক্টর
  • আপনারা?
  • আমরা রোগীর ফ্যামিলি
  • ওহ আচ্ছা, দেখুন অবস্থা ক্রিটিক্যাল, ততটা ভালো না। বুকের দুইটা পাজর ভেঙে গেছে, মেরুদন্ডতেও চোট এসেছে, ঘাড়েও ফ্র‍্যাকচার, ডান হাত, বাম পা এর অবস্থা খুব খারাপ, মাথায়ও আঘাত পেয়েছে, বলতে পারেন তিনি এখন একজন জ্যান্ত লাশ। ৩৬ ঘন্টার আগে

কিছুই বলা যাচ্ছে না। হয়তো কোমায় চলে যেতে পারে নয়তো প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে, আর হ্যাঁ ৩৬ ঘন্টা পর হাত আর পায়ের অবস্থা আমরা দেখবো, যদি দেখি ভালো না তাহলে হয়তো কেটে ফেলতে হবে। দোয়া করেন সব আল্লাহর কাছে

  • এ আপনি কি শুনালেন ডক্টর, এর থেকে তো ভালো হতো এটা বলতেন যে ও মারা গেছে
  • আহহহহ আব্বু, কি বলো
  • আমি বাপ হয়ে ছেলেকে কি করে এই অবস্থায় দেখবো
  • সামলাও নিজেকে আব্বু
    (ঘাড় ঘুরিয়ে) আমুউউউউউউউ
  • মায়ায়ায়ায়া

রাবেয়া বেগম ছেলের কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। এখন ওনাকে নিয়ে টানাটানি। রাত পোহাবারও খবর নেই। বিপদের রাত গুলো হয়তো এত বড়-ই হয়। রাবেয়া বেগমকে অন্য

কেবিনে রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত টেনশন করে বি পি লো হয়ে গিয়ে ঘুরে পড়ে গেছেন তিনি। ইনজেকশন, স্যালাইন দিয়ে ওনাকে রাখা হয়েছে। তাওহীদকে ICU তে রাখা হয়েছে।

পরদিন সকাল ৮ টা,

তনু রেডি হয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। অফিস থেকে প্রায় ১ মাসের ছুটি নিয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন লেট হয়ে গেছে। অফিসে রাখবে কিনা তাই এখন সন্দেহ। কোন রকম রেডি হয়ে বেরিয়ে যেতে ধরে তনু,

  • কোথায় যাচ্ছিস?
  • অফিসে মা, ছুটি তো কয়েকদিন আগেই শেষ হয়ে গেল। প্রিন্সিপাল স্যার আর কল দিলেন না, দেখি কি বলে
  • ওহ

তনুও এক পা বাহিরে দেয় আর ওর ফোনটা বেজে ওঠে। নাস্তার টেবিলে রুমেল, রাত্রি, রুবেল, তনয়া সবাই এক সাথে ওর দিকে তাকায়। সকাল সকাল কার ফোন। তনু ফোন রিসিভ করে। ফোনের ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ,

  • হ্যালো মাইশা, কাদছো কেন
  • ভাবীইইইই
  • কি হয়েছে মাইশা, কি হয়েছে কাদছো যে
  • ভাবীইইইই ভাইয়ায়ায়ায়া

ধুরুম করে তনুর বুকে মনে হয় পাথর পড়ে যায়। মাইশার এইভাবে কান্নার মানে কি?

  • ক, ক, কি-ই হয়েছে মাইশা

– ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে গতকাল রাতে

– ভাইয়া ভালো নেই ভাবী, ও মরে যাবে নয়তো কোমায় চলে যাবে, ডক্টর কোন আশ্বাস দিচ্ছে না, একবার আসবা প্লিজ?

– হ্যালো ভাবী

  • হ্যালো, হ্যালো

হাত থেকে মোবাইল টা পড়ে যায় তনুর। সেখানেই দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তনু। ওর এই অবস্থা দেখে সবাই ছুটে আসে। রুমেল বার বার প্রশ্ন করছে তনুকে কিন্তু কোন জবাব নেই তার

– কিরে কে কল দিছে?

  • এই আপু কথা বলো, কি হয়েছে
  • ভাইয়া কল টা লাইনে আছে, দেখতো কে কল দিছে
  • আরে এটা তো মাইশার কল,

হ্যালো মাইশা?

  • রুমেল ভাইইইইইইইই
  • কি হয়েছে মাইশা, কাদছো কেন
  • ভাইইইই আমার ভাইয়াটায়ায়ায়া
  • মানে, ভাইয়াটা মানে? কি হয়েছে
  • ভাইয়া এক্সিডেন্ট করছে ভাই,
  • কিহহহহহহহ
  • হ্যাঁ ভাই, গতকাল রাতে এক্সিডেন্ট করছে। অবস্থা খুব খারাপ, ডক্টর কোন আশ্বাস দেয় নাই ভাই
  • ক, কিইইই করে হলো এইসব
  • জানি না ভাই, পুলিশ ফোন পেয়ে আমরা হাসপাতালে আসছি। এইদিকেও মায়ের অবস্থাও ভালো না
  • ওহ আল্লাহ
  • তাহুরা আর ভাবীকে নিয়ে আসেন ভাই
  • মাইশা আমি দেখছি কি করা যায়
  • হ্যাঁ ভাই, একটু তারাতারি করেন প্লিজ
  • হু তুমি রাখো

তনু সেই থেকে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই রুমেলের কাছ থেকে তাওহীদের এক্সিডেন্ট এর খবর পায়। তনু আস্তে আস্তে নিজের রুমে চলে আসে। ও এখনও মাথায় আনতে পারছে না কি হয়ে গেল এটা। তাওহীদের এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। তাহলে কি সেইদিনের তনুর দেয়া

অভিশাপ টা লেগে গেল। তনু চেয়েছিল আর তাওহীদও বলেছিল। তাহলে কি এর জন্যেই এক্সিডেন্ট টা হয়ে গেল? ফ্লোরে ধুপ করে বসে পড়ে তনু। একদম চুপ হয়ে আছে সে।
সুরিয়া বেগম তনুর রুমে আসে। পাথর হয়ে ফ্লোরে বসে থাকা মেয়েটাকে একদম পুতুল লাগছে। মেয়ের সামনে গিয়ে বসে সুরিয়া বেগম।

– কিরে মা, এইভাবে বসে পড়লি যে? ঢাকা যাবি না?

– কিরে চুপ কেন? কথা বল

  • কিরে, চুপ করে আছিস কেন? পাথর হয়ে গেছিস নাকি, তনু, এই তনুউউউ
  • মাহ, কেউ কাউকে অভিশাপ দিলে কি সহজে লেগে যায়?
  • মানে?
  • বলো না মা, অভিশাপ কি লেগে যায়?
  • কেন এইসব কথা বলিস, এই গুলা কুসংস্কার, মিথ্যা কথা এইগুলা
  • তাহলে আমার অভিশাপ কি করে লেগে গেল মা
  • মানে? কি করছিস তুই
  • হ্যাঁ মা, আমিই তো ও-কে অভিশাপ দিছিলাম, ওর যাতে মৃত্যু হয়, ওর মরা মুখ টাও যাতে আমায় না দেখতে হয়
  • তুই এইসব কি বলস
  • হ্যাঁ মা, এখন কি হবে মা, আমার মেয়েটা বাবা হারা হয়ে যাবে মা
  • তনুউউউউউ, চুপ কর মা চুপ কর
  • ও মা, মা, ও মা আমি এটা কি করলাম মা, ও তো একটা ভুল করছিল আর আমি ওর মৃত্যু কামনা করলাম, কি করে মা?

তনুর আহাজারি, বিলাপ শুনে রাত্রি আর তনয়া দৌড়ে রুমে চলে আসে। কাদতে কাদতে অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম হয়ে গেছে তনুর। শরীরটা পুরো মিশে যাচ্ছে ফ্লোরে।

তনুকে অনেক কষ্টে শান্ত করিয়ে ১০ টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় রুমেল, তনু আর তাহুরা। ছোট্ট বাচ্চাটা মায়ের কান্নার কারণ খুজছে বার বার। কিন্তু খুজে পাচ্ছে না। সাকিলের সাথে যোগাযোগ করে প্রায় ৫ ঘন্টা পর দুপুর ৩ টা ৩২ এ হাসপাতালে পা রাখে তনু, তাহুরা।

নিচ থেকে সাকিল ওদের নিয়ে যায়।
তনুকে দেখে মাহবুব সাহেব কেদে দেয়। মাইশাও কেদে কেদে অস্থির।

  • মা রে দেখ, তোর সাথে করা সব অন্যায়ের ফল আজ ওই ICU তে শুয়ে আছে

তনু ঘাড় ঘুরিয়ে ICU র দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। মধ্যিখানে মাইশা এসে জড়িয়ে ধরে তনুকে।

  • ভাবীইইইইই, ভাইয়ায়ায়ায়া
  • আমি একটু ভেতরে যাবো, ব্যবস্থা করতে পারবে?

তনুর এমন শান্ত কথায় সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

  • কিন্তু ভাবী, ডক্টর নিষেধ করেছেন
  • সাকিল ভাই, একটু ব্যবস্থা করেন না ভাই। ভেতরে যাবো

তনুর এই শান্ত আচরণে বুঝাই যাচ্ছে ও-কে ঘাটানো যাবে না। কারণ ঝড় আসার আগে পরিবেশ এমন শান্তই থাকে।
তাই ডক্টরের সাথে কথা বলে তনুর ভেতরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে তাওহীদ।

ICU র ভেতরে এসে তাওহীদের বেডের পাশে রাখা চেয়ার টায় বসে পড়ে তনু। তাওহীদকে দেখছে সে। বলতে গেলে পুরো শরীরটাই ব্যান্ডেজে মোড়ানো। নিথর একটা দেহ পড়ে আছে, যেন মনে হচ্ছে বেডে একটা লাশ রেখে দেয়া হয়েছে। তাওহীদকে এই অবস্থায় দেখে তনুর ভেতরটা ভেঙে গুরিয়ে যায়।

আস্তে আস্তে হাতটা তাওহীদের হাতের উপরে রাখে তনু। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে মুখটা তাওহীদের কাছে আনে তনু। বিড় বিড় করে কি যেনো বলছে তনু। একদম আস্তে করে কথাগুলো বলছে সে তাওহীদকে।

– শুনছেন, এই শুনছেন

– উঠেন, দেখেন আমি আসছি

– এই, উঠেন না, এই যে আমি আসছি তো

– কি শুয়ে আছেন? আর এমন এক্সিডেন্ট কি করে হলো? আপনি তো অনেক ঠান্ডা মাথায় গাড়ি ড্রাইভ করতেন ওহ বুঝছি, আমি যে ওইদিন অভিশাপ দিলাম, তার জন্যই কি এক্সিডেন্ট হয়েছে? আচ্ছা সরি আর অভিশাপ দিব না। আমার রাগ উঠেছিল অনেক তাই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে

– কি ব্যাপার কথা বলেন না যে, আপনার আম্মুনকেও নিয়া আসছি, এখন তো উঠেন

– উঠবেন না তো, কি হয়েছে আপনার, উঠেন বলছি উঠেন

  • উঠেন না প্লিজ, আমি এখন থেকে আপনার কাছেই থাকবো, উঠেন না একটু

এক সময় শান্ত হয়ে থাকা গলাটা কান্নায় রূপ নেয়। বার বার আকুতি জানায় একটাবার উঠে যাক তার স্বামী।

ওদিকে ছোট্ট তাহুরাও বুঝে গেছে যে তার পাপাই অসুস্থ। ফুপির কোলেই ঘুমিয়ে গেছে বাচ্চাটা। সাকিল তাহুরাকে আর মাইশাকে পাঠিয়ে দেয় বাসায়। বাচ্চা মেয়ের এখানে থাকা ঠিক হবে না।

সেইদিন সারাদিন সারারাত তনু তাওহীদের কাছে ঠায় বসা। শুধু নামাজের সময় উঠে নামাজ পড়েছে তাও কেবিনের মধ্যেই।

শেষ রাতের দিকে তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করে ফজর নামাজ পড়ে তাওহীদের মাথার কাছে বসে ইয়াসিন সূরা পড়ছে। মুখটা ব্যান্ডেজের জন্য দেখা যাচ্ছে না ভালো করে তার উপরে অক্সিজেন লাগানো।

নিজেকে অনেকটা শক্ত করে নিয়েছে তনু। অভিশাপ যখন নিজেই দিয়েছে সেই অভিশাপও কাটাবে সে নিজেই। শুধু ওর একটু ভালো হওয়ার অপেক্ষা।

কথায় আছে খুজলে নাকি আল্লাহকেও পাওয়া যায়। কিছু কিছু ঘটনা এমন হয় যা বাস্তবকেও কাল্পনিকতায় রূপ দেয়। সেইদিন তনুর অভিশাপ দেয়াটা হয়তো ঠিক ছিল না আবার অভিশাপ দিলেই যে লেগে যাবে তাও কেউ জানতো না।

সেইবার হয়তো তনুর ৫ ওয়াক্ত নামাজ, তনুর মানত করা ১০০ রাকাত নফল নামাজ, সৎ ও নেক মনে চাওয়া দোয়ার জন্য সে যাত্রায় প্রাণ ফিরে পায় তাওহীদ। প্রায় ১ মাস এক প্রকার

মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করেছে মানুষ টা। একটু সুস্থ তবে মনের দিকে অনেক অসুস্থ। সেইদিনের তনুর ব্যবহার আজও তার মনে আছে। এত অসুস্থ তবুও তনু সেবা করে যাচ্ছে কিন্তু তাওহীদ একটা কথাও বলে নি তনুর সাথে শুধু মেয়েটার সাথে ইশারায় কথা বলতো

এই এক মাসে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। তনুও সব দিক মেনে নিয়েছে। রাবেয়া বেগম, মাহবুব সাহেব বার বার সেইদিনের জন্য ক্ষমা চায় তাই তনুও ক্ষমা করে দেয়।

আজ শুক্রবার,

তাওহীদকে ডিসচার্জ করে দিবে। তাই তনু রুমেলকে বলেছে ঢাকাতে আসতে। বিকেলের দিকে সাকিল আর রুমেল মিলে তাওহীদকে বাসায় নিয়ে আসবে

তনু সব গুছিয়ে রেখেছে। পুরো রুমটায় নতুন চাদর, নতুন কার্টেন, নতুন সব কিছু ডক্টর বলেছে সুস্থ করতে হলে আগে পরিবেশ সুস্থ রাখতে হবে।

কিন্তু এইসবের মাঝে কি আদৌ গড়ে উঠবে সেই ভালোবাসার বন্ধন টুকু। যা আজ দুজনের জন্যেই নষ্টের দিকে।


পর্ব ৪১

বিকেলের প্রায় শেষের দিকে সন্ধ্যার একটু আগেই তাওহীদকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। এইদিক দিয়ে তনু সব গুছিয়ে নেয়, মাইশা আর রাত্রিও হ্যাল্প করে।
তাওহীদের মায়ের অনুরোধে রুমেল রাত্রিকেও নিয়ে আসে।

বিছানার চাদর থেকে শুরু করে সব চেঞ্জ করে রাখে রুমের। গরম পানি সহ প্রয়োজনীয় সব কিছু ওয়াসরুমে রাখা হয়েছে। আজ প্রায় ১ মাসের উপরে হাসপাতালে ছিল সে তাই তনু আগে তাকে ফ্রেশ করাবে। অনেক সংসারী হয়ে গেছে তনু। কোন টা থেকে কোন টা করবে। কী থেকে কী করলে ভালো হবে রি সবই তার জানা এখন।

তাওহীদকে রুমে রেখে রুমেল আর সাকিল বাহিরে যায়। ছোট্ট তাহুরা বাবার সাথে আঠার মতো লেগেই আছে। তার পাপাইকে দেখতে একদম ভালো লাগছে না, এটা তার মন্তব্য।

  • মাম্মাম তুনো
  • বলো
  • মাম্মাম পাপাইতে এত্তুও ভালো দেতায় না
  • পাপাইয়ের এইগুলা ব্যান্ডেজ মা
  • ও, এই পাপাই তুমি কতা তেন বলো না
  • মাম্মাম পাখি ডিস্টার্ব করো না পাপাইকে, পাপাই অসুস্থ, তুমি এক কাজ করো তো, মিমি আর ফুপির কাছে যাও
  • আত্তা, বাই বাই পাপাই

মেয়ের সাথে ইশারায় কথা বলে তাওহীদ। তনু তাওহীদ এর কাছে আসে। একটু ইতস্তত তো হচ্ছেই তারপরও, সব কিছু তো ওকেই করতে হবে। কারণ ও ভাবে তাওহীদের এই অবস্থার জন্য ও নিজেই দায়ী। কিন্তু তাওহীদ তো কথাই বলে না। একদম চুপ হয়ে গেছে সে।

  • একটু ঠিক করে বসেন

হুইলচেয়ার টাকে ঘুরিয়ে ওয়াসরুমের কাছে নিয়ে আসে তনু। অনেক কষ্টে চেয়ারটাকে ওয়াসরুমের ভেতরে নিয়ে যায়। স্পঞ্জ দিয়ে মুছে দিতে পারতো কিন্তু এতদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল তাই একটু ভালো মতো পরিষ্কার করে দিলে ভালো লাগবে।

তাওহীদ যে এইসব কিছুই যাচ্ছে না তা ওর চোখে মুখে স্পষ্ট বুঝা যায় যা তনুর দৃষ্টিকেও এড়ায় নি। তবুও সেই সব আড়াল করে তাওহীদকে ফ্রেশ করিয়ে দিচ্ছে। এই ৫ বছরে একটুও চেঞ্জ

হয় নি তাওহীদ। ৩৫ বছরে এখনও অনেক স্ট্রং আরও সুদর্শন হয়ে গেছে সে। বুকের বা সাইড টায় ভাজ পড়া এখানটায় ব্যাথা বেশি।
এইদিকে তাওহীদেরও কেমন জানি লাগছে। তাওহীদ নিজেকে তনুর কাছ থেকে একটু সরিয়ে নিয়ে যায়,

  • আমি পারবো
  • কি করে পারবেন ডান হাতটা তো অনেকটা যখম হয়েছে
  • সমস্যা নেই, যখম হয়েছে কেন? মরে গেলেই ভালো হতো
  • হ্যাঁ, এখন যতদিন বাঁচবো এটাই শুনতে হবে
  • না শুনলেই হয়
  • আচ্ছা কানে তুলো গুজে রাখবো

এভাবেই চলে যায় প্রায় ১৫ দিন। তাওহীদও একটু একটু সুস্থ হয়ে ওঠে। সুস্থ হবেই বা না কেন। তনু রাত দিন এক করে দিচ্ছে। এই ওষুধ সেই ওষুধ, এই তেল সেই তেল যখন যা পেয়েছে তাই তাওহীদের জন্য ব্যবহার করেছে।

৫ বছরে জ্যাম লেগে থাকা সম্পর্কটা এই ১৫ দিনে একটু হলেও উন্নতি করেছে। কিন্তু সেইদিনের সেই অভিশাপটা আজও কড়া নাড়ে তাওহীদের মনকে। তনুর সেইদিনের বলা কথা গুলো আজও তাওহীদের কানে বাজে। তাই নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছে সে।

হাটা-চলা করতে কষ্ট হলেও সাকিল আর তনুর চেষ্টার জোড়ে অনেকটাই হাটতে পারে সে। মেয়ের সাথে কথা বলে খেলা করে কিন্তু তনুর দিকে খুব কম তাকায়। ইদানীং তাহুরা মাইশার

কাছে ঘুমায়। অবশ্য ঘুমায় তাওহীদের কাছেই ঘুমানোর পরে মাইশা বা সাকিল এসে নিয়ে যায়। তাওহীদের অনেক জায়গা লাগে বিছানায়। আর তাহুরা তো ঘুমের মাঝে হাত-পা ছুড়ে তাই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ফুপির কাছে।

সেইদিন রাতেও তাওহীদ ঘুমাচ্ছিল। সন্ধ্যা থেকেই গায়ে জ্বর ছিল কিন্তু রাতে জ্বরটা তীব্র গতিতে বেড়ে যায়। এত পরিমান বেড়ে যায় যে তাওহীদ নিজের মাঝেই থাকে নাই। সে রাতে বেশ কাপুনি দিয়ে জ্বর আসে তাওহীদের। জ্বরের প্রকপে মাথা তুলতে পারছে না সে। তনু

রাত জেগে মাথায় পানি ঢেলছে। বমি করে সব নষ্ট করে ফেলেছে। হঠাৎ করে এইসব দেখে ঘাবড়ে যায় তনু। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে সব পরিষ্কার করে তনু। জামা কাপড় চেঞ্জ করে দিয়ে আবার শুইয়ে দেয় তাওহীদকে।

জ্বর কমার কোন নাম নাই। উল্টো আরও বেড়ে গেছে। জ্বরের ঘোরে আবল তাবল বকতেছে সে। তনু এইসব সহ্য করতে না পেরে তাওহীদকে জড়িয়ে ধরে। নিজের সব টুকু শক্তি দিয়ে তাওহীদকে বুকের মাঝে চেপে ধরে সে। তাওহীদের শরীরের তাপে তনুর শরীর পুড়ে যাচ্ছে

তবুও চেপে ধরে আছে তনু। এক পর্যায়ে তনুর বুকেই ছটফট করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে তাওহীদ। সে রাতে তনুর হৃৎপিন্ডের সাথে তাওহীদের হৃৎপিন্ডের ধুকপুকানি গুলো

মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। যেন এক অন্য তাওহীদ তার বুকে। কিন্তু পরক্ষনেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই রাতের কথা, ভেসে ওঠে বাবার মৃত্যু, ভেসে ওঠে চার বছর

সন্তানকে একা লালন পালন করার দৃশ্য, একটা ঝড় আর সব শেষ। ৫ বছর পর আবার নতুন করে দেখা, মেয়েকে ভালোবেসে ও-কে কাছে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল মানুষটা কিন্তু কাল হয়ে দাঁড়ায় তনুর মুখের বোল (ভাষা)।

কথায় বলে মুখের কথা, বন্দুকের গুলি আর ধনুকের তীর সব সময় লক্ষ্য ভেদ না করলেও কোথাও না কোথাও গিয়ে লাগে আর যেখানে লাগে একদম লাগার মতো লাগে। সেইদিন তনুর দেয়া অভিশাপ টাও তাওহীদের জীবনে একদম ধনুকের তীরের মতো লেগে গেলো, যার ফলাফল স্বরূপ আজ প্রায় দেড় মাসেরও উপরে তাওহীদ বিছানায়।

এইসব ভাবতে ভাবতে তনুর বুক ভাসে চোখের পানিতে। যার কিছু অংশ তাওহীদের মাথার চুলকেও ভিজিয়ে দিয়েছে। তাওহীদকে বুকে জড়িয়েই তার চোখে ঘুম নেমে আসে।

পরদিন সকাল বেলা নিজেকে তনুর বুকে পেয়ে খানিকটা চমকে যায় তাওহীদ। মাথা উচিয়ে তনুর মুখের দিকে তাওহীদ। মলিন মুখ খানা নেতিয়ে আছে হাতের ভাজের উপরে। দেখে

মনে হয় কত দিনের ক্লান্ত সে। আসলেই তাওহীদের তনুশাটা বড্ড বেশিই ক্লান্ত। নিজেকে তনুর কাছ থেকে সরাতে যায়, কিন্তু নড়াচড়ায় তনুর ঘুম ভেঙে যায়, যার কোন ইচ্ছাই ছিল না তাওহীদের। সে চেয়েছিল তনু আরেকটু ঘুমাক। কিন্তু তনু চোখ মেলে তাওহীদকে দেখে ব্যস্ত হয়ে ওঠে,

– কি ব্যাপার, উঠলেন কেন?

  • জ্বর টা কেমন হয়েছে দেখি
  • আমি আরেকটু ঘুমাবো
  • আচ্ছা শুয়ে পড়ুন

তনু উঠে যায়, রাতে তাওহীদের বমি করা কাপড় গুলো ধুয়ে বুয়াকে দিয়ে ছাদে পাঠিয়ে দেয়। তারপর নিচে গিয়ে নাস্তা বানানোর কাজে লেগে যায়। তাওহীদকে ভারী নাস্তা দিবে না সে, কারণ গায়ে এখনও জ্বর। তাই একটু স্যুপ করেছে তার জন্য। এইদিকে সবার জন্য নাস্তা বানাচ্ছে। তাহুরার স্কুলের টাইম হয়ে যাচ্ছে।

  • ভাবী তাহুরা উঠে গেছে
  • উঠে গেছে?
  • হু
  • এক কাজ করো না ভাই, ও-কে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে এসো আর নাস্তাটা করিয়ে দাও, পারবা?
  • পারবো গো পারবো, ভাইয়ার কি অবস্থা এখন?
  • আর বলো না কাল রাতে কাপিয়ে জ্বর আসছেচ, বমি করে সব ভরাইছে
  • সেকি আমাদের ডাকলে না কেন
  • সবাই তো দিন রাত ব্যস্ত থাকো, রাতের বেলাতেও যদি ডিস্টার্ব করি কেমন দেখায়
  • ধুর, তা এখন কেমন আছে?
  • ভালো, জ্বর টাও কম, আচ্ছা তুমি তাহুরাকে রেডি করিয়ে আনো, মা আর বাবাকে টেবিলে আসতে বলো ওনাদের নাস্তা দিয়ে আমি তোমার ভাইকে খাওয়াতে যাবো
  • আচ্ছা,
    ভাবী একটা কথা বলি?
  • বলো
  • মান অভিমান গুল এক পাশে রেখে দিয়ে আবার নতুন করে শুরু করো না প্লিজ
  • মানে
  • অনেক তো হলো ভাবী, কষ্ট তুমিও পেয়েছো, কষ্ট সেও পেয়েছে। এইবার না হয় দুজনায় বাকিটা জীবন সুখেই কাটালে
  • দেখি
  • হুম, আচ্ছা তুমি টেবিলে নাস্তা দাও আমি তাহুরাকে নিয়ে আসছি
  • আচ্ছা, সাকিল ভাইয়াকেও বলো
  • আচ্ছা

সবাইকে নাস্তা করিয়ে তাহুরাকে মাইশার সাথে স্কুলে পাঠিয়ে সাড়ে ৯ টায় রুমে আসে তনু। স্যুপের বাটি টা টি-টেবিলের উপরে রেখে তাওহীদকে ডেকে তুলে তনু। তাওহীদ ঘুমাতে চাইলেও তিনু ঘুমাতে দেয় নি। বেডে রেখেই ব্রাশ করিয়েছে তাওহীদকে। ওয়াসরুম থেকে বালতি মগ সব এনে দিয়েছে। বেডে রেখেই ফ্রেশ করিয়ে দিয়েছে তাওহীদকে।

  • এটা কি?
  • স্যুপ
  • এটা খাবো না এখন
  • এটাই তো খেতে হবে, জ্বর এখনও আছে ভারী খাবার খাওয়ার দরকার নাই
  • এটা খাবো না বলছি
  • খেয়ে নিন না প্লিজ
  • নাহ

আর কি করার জোড় করে খাইয়েই ছাড়ে তাওহীদকে। নিজে এক বাচ্চার বাবা হয়ে নিজেই এখন বাচ্চা হয়ে গেছে।

  • একটা কথা বলি?
  • হু
  • মাম্মাম পাখিকে খাওয়াতেও আমার এত কষ্ট হয় না যতটা আজকে হলো
  • ওহ, এ্যা,
  • হি হি, ধরুন ওষুধ টা খেয়ে নিন

এ বেলা তাওহীদের সব কাজ সেড়ে তনু রান্না ঘরে পা রাখে। তাহুরা আসার আগে আগে ওর জন্য রান্না করতে হবে। এসেই বলবে ক্ষুধা লেগেছে। কাজের মেয়েটার সাথে মিলে সব কাজ সামলে নিচ্ছে তনু।

  • ভাবী
  • হুম
  • এক খানা কতা কই
  • বলো
  • আন্নে কি এই বাড়ির বউ?
  • কি মনে হয়?

পুরাতন কাজের মেয়েটা চলে গেছে। এ নতুন, এক বছর হয়েছে আসছে। এর আগে কয়েকদিন তনু ছিল কিন্তু ততটা কথা হয় নি ওর সাথে।

  • কন না ভাবী
  • একদিকে জানো না আমি অন্যদিকে ভাবী বলছো
  • আপায় ডাকে তাই আমিও ডাকি
  • ওহ, তাহলে ঠিক আছে
  • ভাবী আরেকখানা প্রশ্ন আছে করুম নি
  • করে ফেল

– আন্নে সাদা জামা কাপড় কিত্তে পরেন

  • ও ভাবী
  • ফ্রীজ থেকে মসলার বক্স টা বের করো তো

মেয়েটা বুঝে যায় যে তনু খুব সহজে কথাটা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে। তাই মেয়েটাও আর কথা বাড়ায় নি। রান্নাঘরের বাহির থেকে পুরো ঘটনা টাই দেখলেন রাবেয়া বেগম। তিনি নিজের

ব্যবহারের খুবই লজ্জিত। মেয়েটা হয়তো সব ভুলে আপন করে নিয়েছে সবাইকে কিন্তু মুখে কিছুই বলবে না। একবার কথা বলা উচিত মেয়েটার সাথে।

  • এই মুন্নি শুন তো
  • জ্বে খালাম্মা
  • বাগানে যা তো গার্ডেনে তোর খালু বসা, দেখ গিয়ে কিছু লাগবে কিনা
  • আইচ্ছা
  • দাড়াও মুন্নি
  • জ্বে ভাবী
  • এই চায়ের কাপ টা নিয়ে যাও, বাবাকে দিও
  • দেন

কাজের মেয়েটা চলে গেলে রাবেয়া বেগম এগিয়ে যায় তনুর দিকে। তনু নিজের মতো করে রান্না করছে।

  • তনু
  • জ্বি, কিছু বলবেন মা?
  • না মানে একটা কথা বলতাম
  • জ্বি বলেন না
  • আসলে, আসলে তুমি আমারে ক্ষমা করে দিও মা, আমি না বুঝতে পারি নাই
  • ময়লা আবর্জনা যত ঘাটবেন বাজে পঁচা গন্ধ তত বের হবে মা, বাদ দিন

তাওহীদ এখন মোটামুটি অনেকটাই সুস্থ। মাথার যন্ত্রনাটাও কমে গেছে। ক্ষত স্থানগুলায় অনেকটাই টান ধরেছে। রাবেয়া বেগম মানত করেছিলেন ছেলে সুস্থ হয়ে উঠলে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রাঃ) এর মাজার শরীফে গিয়ে ১০০ ফকির মিসকিন খাওয়াবেন।
তার সময়ও হয়ে এলো।

সুস্থ হলেও এখনো পুরোপুরি সেড়ে উঠে নি তাওহীদ। তাই তাকে রেখেই বাকিরা যাবে। মাহবুব সাহেব এর ইচ্ছে নাতনিও যাক সিলেট। মাইশা-সাকিল, রাবেয়া বেগম আর মাহবুব সাহেব এর সাথে ছোট্ট তাহুরা মনিও যায় সিলেট। ইদানীং ফুপা-ফুপির চোখের মনি সে। তাই তাদের সাথে থাকতেও সে কমফোর্ট ফিল করে।

আজ সকালেই রওনা দিয়ে দেয় সবাই। বাসায় তাওহীদ তনু আর কাজের মেয়ে মুন্নি। তাওহীদের পক্ষে সিলেট যাওয়া এই মুহুর্তে সম্ভব না আর তাওহীদকে একা রেখে তনুর পক্ষে যাওয়াও সম্ভব না। তাই দুজনেই থেকে যায়।

দুজনে একা থাকাতে এক রকম ভালোই হয়েছে। যদি মনের কষ্ট গুলোকে এক পাশে মাটি চাপা দিয়ে আবার সামনে এগুনো যায়।

পড়ন্ত বিকেলবেলায় গার্ডেন এরিয়াতে বসে আছে তাওহীদ। আজকাল বাড়িতে আর বাড়ির চারপাশে হাটা-চলা করে সে। তাওহীদের প্রিয় ব্ল্যাক কফি বানিয়ে তনুও তার সামনে হাজির,

  • নিন
  • থ্যাংকস
  • হুম
  • তনুশা
  • জ্বি
  • বসো এখানে
  • হু
  • আমি এখন অনেকটাই সুস্থ আছি
  • তো
  • আশা করি এখন আর তোমাকে এত কষ্ট করতে হবে না
  • মানে?
  • তুমি চলে যেতে পারো
  • চলে যাবো?
  • মুক্তিই তো চেয়েছিলে তাই না, মুক্ত করে দিলাম

সামনের দিকে তাকিয়ে এক নাগারে বলে দিল তাওহীদ। চুপ করে তাকিয়ে আছে তনু। তাওহীদ এটা বলবে ভাবে নি সে। ভেবেছিল সব মিটিয়ে নিয়ে আবার নতুন কিছুর সূচনা

করবে সে কিন্তু তার আগেই সব নষ্ট হয়ে গেলো। তনু স্পষ্ট বুঝতে পেরে গেছে কষ্ট পেয়েই এই কথা গুলো বলেছে তাওহীদ। সেইদিনের আচরণে তনু আসলেই লজ্জিত। তার মুখে লাগাম দেয়া উচিত ছিল।

  • হঠাৎ করে এই কথা
  • তুমিই তো মুক্তি চেয়েছিলে, আর আমি খারাপ মানুষ, বাজে লোক, চরিত্রহীন। আমার সাথে তোমার যায় না
  • নাকি আমাকে এখনও আপনার বেশ্যা মনে হয়
  • তনুশায়ায়ায়ায়া
  • তাহলে চলে যেতে বললেন কেন
  • তোমার ভালোর জন্য
  • এতে ভালো কোথায়
  • নিজেকে নতুন রূপে সাজাও তনুশা
  • সাজালে আজ ৫ টা বছর এমন বিধবা বেশে থাকতাম না আমি
  • এতে তোমার ভালো হবে
  • তাহুরার কি হবে
  • সে তোমার কাছেই থাকবে
  • আর আপনি
  • আমি মাঝে মাঝে দেখে আসবো তাকে গিয়ে
  • তাহুরা তার বাবাকে চায়
  • তাহুরা তার মাকেও চায় তনুশা
  • আমি চলে গেলে ভালো থাকতে পারবেন তো?
  • ভালো কখনোই ছিলাম না, হয়তো কষ্ট হবে তবুও থেকে যাবো
  • বেইমাম, স্বার্থপর
  • আমি আরও খারাপ তনুশা, দেখলা না কত সহজেই তোমার অভিশাপটা আমার লেগে গেল
  • তাওহীদ, ওইটা ভুলবশত বেরিয়ে গেছে
  • ব্যাপার না, আচ্ছা একটা কাজ করতে পারবে
  • কি
  • আরও একবার এইভাবে আল্লাহর কাছে বলবা প্লিজ, তবে এইবার আরও খারাপ ভাবে বলবা যাতে এইবার মরেই যাই
  • তাওহীদ

তাওহীদ টেবিল থেকে উঠে আস্তে আস্তে বাড়ির মধ্যে ঢুকে যায়। তনু সেখাইনেই বসা। তনু এখন কি করবে? এই দেড় দুই মাসে সেও আবার তাওহীদের প্রেমে পড়ে গেছে। সব দিক

থেকে সব কিছু আবার কেমন জানি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসে সে এখন তাওহীদকে। এখন কি করে ছেড়ে যাবে তাকে?


পর্ব ৪২

প্রায় আধা ঘণ্টা পর তনুও উঠে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আকাশেও অনেক মেঘ ধরেছে। চারপাশটায় কেমন যেন ঠান্ডা বাতাস বইছে। ঝড়ের পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। আজ

প্রকৃতির সাথে তনুর জীবনটাও বেশ খাপ খেয়ে গেছে। তনু চেয়েছিল সব কিছু ঠিক করতে কিন্তু পারলো না। সব ভেস্তে যাচ্ছে। নিজেকে শান্ত করে তনুও বাড়ির ভেতরে চলে যায়

রাতে তাওহীদকে খাইয়ে দিতে যায় তনু। কিন্তু তাওহীদ খাবে না। তার ভাষ্যমতে সে এখন অনেকটাই সুস্থ। তাই তাকে আর অন্যের উপরে ভরসা করতে হবে না। নিচে ডাইনিংয়ে গিয়েই খাবার খেয়ে চলে আসে তাওহীদ। তনুও আর কিছু খায় নি। মুন্নিকে দিয়ে সব গুছিয়ে রেখে সেও উপরে চলে যায়।

  • ওষুধ খেয়েছেন?
  • নাহ
  • কেন, সুস্থ হয়ে গেছে বুঝি?
  • মানে?
  • কিছু না
  • তাহুরার সাথে কথা হয়েছিল তোমার?
  • দুপুরে আর বিকেলে হয়েছিল
  • ওহ আমি সন্ধ্যায় কল দিলাম আর তোমাকে চাইলো
  • ও এমনি আমি কল করলেও আপনাকে চায়, এই নিন ধরুন, খেয়ে নিন
  • থ্যাংকস

তাওহীদকে রুমে রেখে ওয়াসরুমে যায় তনু। ফ্রেশ হচ্ছে এমন সময় বুকের বাম পাশটায় আবার ব্যাথা অনুভব করে তনু।
ইসসস ব্যাথাটা আবার উঠে গেছে।

  • আহারে ব্যাথা, উঠার আর সময় পেলে না

বুকে বার বার হাত দিয়ে প্রেস করছে তনু যাতে ব্যাথাটা কমে যায়। তাই যতটা সম্ভব প্রেস করছে বুকটা। কিছুক্ষন পরে ব্যাথাটা কমে আসে। তারপর ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে সোজা

রুম থেকে বাহিরে চলে যায় তনু। আগে যেই রুমে ছিল সেখানেই তনুর ওষুধের বক্সটা আছে। তাড়াতাড়ি করে কোন রকম ওষুধ একটা মুখে গুজে দেয় তনু। ব্যাথাটা অনেকটাই কমে আসে।

-জীবন কেন এত রঙ বদলায়?

এত রাতে তনুর এমন প্রশ্নে তনুর দিকে তাকিয়ে থাকে তাওহীদ। বারান্দার দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে তনু। ক্লান্তিতে ছেয়ে থাকা মুখটাও আজ কি যেন খুজে বেরাচ্ছে বাহিরে।

  • মানে
  • আজকাল বড্ড বেশি মানে মানে করেন
  • নাহ বুঝলে তো মানে বলবো-ই তাই না?
  • হ্যাঁ তাও ঠিক
  • তোমাকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে
  • হয়তো
  • শুয়ে পড়ো
  • আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন
  • হু
  • আমি কি কালকেই চলে যাবো
  • তোমার ইচ্ছা
  • ওহ

তনু চেয়েছিল সব ঠিক হয়ে যাক। তাই আবারও একটা চেষ্টা করবে সে। জীবন তো একটাই কিছু ভুলের জন্য ৫ টা বছর নষ্ট হয়ে গেছে। আর নষ্ট করা ঠিক হবে না। তাই আরেকটু চেষ্টা সে অবশ্যই করবে।

সকালের দিকে সব কাজ সেড়ে নিয়ে ডাইনিংয়ে নাস্তা রেডি করে রাখে তনু। তাওহীদ এসে খেয়ে নিবে। সকাল থেকেই তনুর শরীরটা খারাপ। বুকের ব্যাথাটা আবার বেড়েছে। তাই ওই

রুমে গিয়ে শুয়ে আছে। বাসায় কেউ নেই তাই কাজের চাপও কম। তাওহীদ নাস্তা খেয়ে উপরে চলে যায়। বারান্দায় বসে বসে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বিখ্যাত উপন্যাস পথের পাঁচালী এর বইটি নিয়ে পড়া শুরু করে।

তাওহীদ সাহিত্য সংস্কৃতির দিকে ভালোই ঝুকে গেছে। বাহিরে একা একা থাকতো কাজ সেড়ে অবসর টাইমটা বই পড়েই কাটিয়ে দিত। বইটার প্রায় অর্ধেক পড়া হয়ে গেছে, দুপুরে লাঞ্চ টাইমও হয়ে এলো। মুন্নি এসে একবার ডেকেও গেছে। কিন্তু তনুশাকে না দেখে মনের অস্থিরতাটা বেড়ে গেছে তাওহীদের।

বইটা রেখে ওই রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তাওহীদ। তনু গোসল সেড়ে চুল মুছতেছে। ভেজা চুলের নিচে দিয়ে একটা দুইটা ফোঁটা পানি বেয়ে বেয়ে পড়ছে। তনুকে দেখে তাওহীদের পুরো শরীরটা নাড়া দিয়ে ওঠে। আস্তে করে দরজাটা ফাঁক করে রুমে যায় তাওহীদ। পেছন থেকে

তনুকে জড়িয়ে ধরে সে। হঠাৎ জড়িয়ে ধরায় ভয় পেয়ে যায় তনু। কিন্তু পরক্ষনেই বুঝতে পারে তাওহীদ। তাই আর বাধা দেয় নি। তাওহীদ ভেজা চুলের মাঝে নাক ডুবিয়ে দেয়। তনুর শাড়ির সাইড দিয়ে তাওহীদ বাম হাত টা ঢুকিয়ে দেয়।

আজ প্রায় ৫ বছর পর তনু আবার তাওহীদের ছোয়া পেল। তাওহীদকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরতে মন চাইছে তনুর, কিন্তু পারছে না। কিন্তু হঠাৎ করেই তাওহীদ তনুকে ছেড়ে দেয়। তনুকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে দিয়ে পেছন থেকে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তাওহীদ। তনুও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ও বুঝে গেছে তাওহীদের এমন আচরণের কারণ কী?

আজকের বিকেলটা অনেক সুন্দর। পুরো বাড়ি খুজেও তাওহীদকে না পেয়ে মুন্নিকে জিজ্ঞাসা করে তনু।

  • মুন্নি
  • জ্বে ভাবী
  • তোমার ভাইকে দেখেছো
  • কোথায়
  • ছাদে গেছে দেখলাম
  • আচ্ছা

রুমে এসে আফরোজকে ফোন করে তনু। এই মুহুর্তে আফরোজের সাথে কথা বলাটা অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ এই মুহুর্তে সেই একমাত্র ভরসা।

  • হ্যালো
  • আসসালামু আলাইকুম
  • ওয়ালাইকুম আসসালাম, কে তনু?
  • চিনলা কিভাবে আপু
  • তোর কন্ঠ আবার না চিনে থাকবো আমি
  • কেমন আছো আপু
  • আছি কোন রকম, সামনের মাসের ৫ তারিখ ডেট দিছে
  • ওহ
  • বল কি বলবি, তাওহীদ ভাইয়ের কি অবস্থা, এখন কেমন আছে
  • তুমি কার কাছ থেকে শুনলা
  • ওয়াসিম বললো, সাকিল ভাইয়ের কাছ

থেকে শুনেছে

  • তবুও আসলা না
  • কিভাবে আসবো, শরীরের অবস্থাও ভালো না, তবে শুনেছিলাম তুই এসেছিস
  • একবার কল ও করলা না আপু
  • নাম্বার দিছিস নাকি? আর ইচ্ছা করেই যোগাযোগ করি নি, ভেবেছি দুইজন আবার এক হয়েছিস, কিছু সময় নে
  • আপু তোমার সাথে কিছু কথা বলার আছে
  • হ্যাঁ বল

তনু সব বলে দেয় আফরোজকে। আফরোজও চিন্তিত এই ব্যাপারে। এখন কথা হচ্ছে সে কি বলবে বুঝতেছে না।

  • তুই কি চাস?
  • মানে
  • মানে হচ্ছে তুই কি সংসার টা করতে চাস তাওহীদ ভাইয়ের সাথে
  • আপু আমি আর পারতেছি না
  • তাওহীদ ভাইকে ভালোবাসিস
  • সেটা তো আগেও বাসতাম
  • এখনকার কথা বল
  • বাসি আপু, খুব বাসি
  • তাহলে নিজের মতো করে তাকে মানিয়ে নে, আমিও বলবো সেইদিন অভিশাপটা দিয়ে ভালো করিস নাই তুই
  • তা আমি জানি আপু, কিন্তু ও এখন চায় আমি চলে যাই
  • যাস না তাহলেই হয়, বাসাও ফাঁকা। এই সুযোগ ও-কে আবার আপন করে নে
  • আচ্ছা আপু,
  • আচ্ছা রাখ, ছেলেটা কি করে একটু দেখি
  • আচ্ছা

আজকের বিকেল টা অপূর্ব সুন্দর। চারদিকটা কেমন যেন হলুদ রঙের হয়ে আছে। অসাধারন লাগছিল পরিবেশটা। তনু ছাদে গিয়ে দেখে রেলিং এর সাইডে দাঁড়িয়ে আছে তাওহীদ। আকাশ দেখছে মাথা উপর করে। তনু পাশে গিয়ে দাঁড়ায়

  • কি ব্যাপার তুমি এখানে
  • আসতে বারণ নাকি
  • নাহ তা কেন হবে

– তাহলে

  • কি করছিলেন
  • আকাশ দেখছিলাম
  • কি দেখলেন
  • দেখলাম এই সুবিশাল আকাশের কত দয়া মায়া
  • কিভাবে
  • সে নিজে এত বিশাল, তার মাঝে কত কিছু কি করে ধারণ করে
  • যেমন
  • রাতে চন্দ্র, তারা, দিনে সূর্য আবার বর্ষায় বৃষ্টি। তার তো কখনও বিরক্ত লাগে না। কিন্তু আমরা মানুষরা মানুষের কাছে আসাতে কত বিরক্ত হই

তনু বুঝে গেছে তাওহীদ এই কথা কেন বললো। সেইদিন তাওহীদ কিস করায় তনু তাওহীদকে অভিশাপ দিয়েছিল সাথে তুই তুকারিও। ছি ছি সেই কথা মনে পড়লে আজও ইচ্ছে করে মাটিতে মিশে যাই।

  • আজকের প্রকৃতিটা অনেক সুন্দর
  • হ্যাঁ, তুমি তো বললে না
  • কী
  • তুমি কি অসুস্থ
  • নাহ ঠিক আছি,
    একটা কথা ভেবেছি
  • কী
  • ভাবছি সাদা শাড়ি পড়া ছেড়ে দিব
  • কেন, ভেবে নাও আমি মরে গেছি
  • তাওহীদ
  • আমি তো এমনিতেও তোমার কাছে মৃত তার জন্যেই তো সাদা শাড়ি পরে থাকো
  • এইটা ভেবে পরি নি, মনের কষ্টে পরেছিলাম
  • থাক, কষ্ট গুলো মুখে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে রঙিন শাড়ি পরো
  • আমি তো এমনিই পর‍তে পারি, আর বিয়ে কয়টা করবো
  • আচ্ছা বাদ দাও, আমি রুমে যাই, আর হ্যাঁ কাল ওরা সবাই চলে আসবে, আমার কথা হয়েছিল সাকিলের সাথে
  • হ্যাঁ, তাহলে কি আমি কালকেই চলে যাবো?
  • তোমার ইচ্ছে
  • আমার ইচ্ছে আমার ইচ্ছে শুধু আমার ইচ্ছে, তাই না?
  • রুমে যাচ্ছি

তনুকে ইগনোর করে তাওহীদ নিচে চলে যায়। যা তনুর একদম পছন্দ হয় নি। রাগে ফোস ফোস করতে করতে তনুও নিচে নামে।
আর এইদিকে,

  • সাকিল যা করছি তা কি ভালো করছি?
  • এ ছাড়া উপায় নাই বন্ধু, কাল আমরা আসতেছি, দেখো আজকের মধ্যে কাজ হয় কিনা
  • যদি হিতে বিপরীত দিক ধারণ করে, তখন
  • তুই আছিস কি করতে, ফালাইতে
  • হুর, মুখ খারাপ করিস কেন
  • আমার মুখ এখন আরও খুলবে, তুই আছিস কি করতে, সামলে নিস
  • তা তো পারবোই, আচ্ছা রাখ রাখ তনুশা আসতেছে
  • all the best বস

কাঁদতে কাঁদতে রুমে আসে তনু। তাওহীদ খাটে হেলান দিয়ে আধো বসা অবস্থায় ল্যাপটপ দেখতেছিল। বাহিরে তখন ঝড় শুরু হয়ে গেছে। তনু দৌড়ে এসে তাওহীদের সামনে এসে দাঁড়ায়। চোখে তার আগুন-জ্বল। তাওহীদ তনুর দিকে একদমই তাকাচ্ছে না। তনু দৌড়ে গিয়ে আরেক রুমে চলে যায়।

  • আর পারছি না আমি। আমার সাথেই কেন এমন হয়। এই মান অভিমানের পাহাড় কবে ধসে পড়বে? আমি আর পারছি না। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। নাহ এইভাবে আর না। আজ হয় এস্পার নয়তো ওস্পার। এর শেষ দেখে ছাড়বো আমি। মানলাম ভুল

করেছিলাম সে কি ভুল করে নাই? মানলাম অভিশাপ দিয়েছিলাম কিন্তু সেও আমায় গালি দিয়েছিল। ওহ হ্যাঁ অবশ্য গালি আর অভিশাপের মধ্যে পার্থক্য আছে আচ্ছা ঠিক আছে এখানে ভুল টা আমারই। কিন্তু সেবাগুলো যে করলাম, তার কি কোন দাম নাই?

এই ৫ বছর যে আমি এত কষ্ট পাইলাম সে তো কানাডা নাকি ফানাডায় ভালোই ছিলেন। এখন ফাইযলামি করে। আমারে বলে চলে যাও চলে যাও। ইসসসস শখ কত, দেখাবো না কি করে যাই আমি। বুইড়া খাটাস একটা দিন কূল গিয়ে এক কূলে ঠেকছে এখন আসছে ফাইযলামি করতে। দেখাইতেছি মজা, চলেই যাবো আমি।

বক বক কর‍তে কর‍তে আবার দরজা খুলে তাওহীদের রুমে যায়। এইবারও তাওহীদ ল্যাপটপে মুখ গুজে বসে আছে। তনুর মেজাজ আরও গরম হয়ে গেছে।

  • এইযে বুইড়া বেটা, এইদিকে তাকান একটু

তনুর এমন কথাতে তাওহীদ তনুর দিকে তাকায়। ৮৮০ ভোল্ডের কারেন্ট খায় তাওহীদ। এ কে দাঁড়ানো ওর সামনে। এ কি আদৌ তনু? নাকি বাড়ি ফাঁকা পেয়ে কেউ ঢুকে গেছে
বাড়িতে। তাওহীদ হা করে তাকিয়ে আছে তনুর দিকে,


পর্ব ৪৩

– কি হলো কি, হা করে তাকিয়ে আছেন কেন?

  • ওই, এইভাবে কি দেখেন

এইরকম ভাবে তনুকে দেখবে ভাবে নি তাওহীদ। পুরো হা হয়ে তাকিয়ে আছে সে। লাল শাড়ি, দু হাত ভর্তি লাল চুড়ি, চুড়ির মাঝে স্টোন বসানো মোটা দুইটা চুড়ি যেন লাল চুড়ি গুলোর সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ করে দিয়েছে। নেটের ব্লাউজ, চুল গুলো ছাড়া, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক

টা যেন ঠোঁট দুটোকে নেশার মতো করে রেখেছে। শাড়ির সাইড দিয়ে কোমড়ের ভাজ টা দেখা যাচ্ছে। শাড়িটা পাতলা হওয়ার কারনে ফর্সা পেট টাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এক রকম মাতাল করা অনুভূতি জেগে উঠে তাওহীদের ভেতরে।

  • আবার হা করে তাকিয়ে আছে?
  • কি হয়েছে কি
  • কি হবে
  • এমন চিল্লাও কেন
  • বুইড়া বেটা একটা
  • আমার মাঝে বুড়োর কি দেখলে তুমি
  • সব কিছুই
  • যেমন
  • বলা যাবে না
  • এত সেজেছো কেন
  • এমনি
  • প্রসেসিং শুরু করে দিয়েছো নাকি
  • কিসের প্রসেসিং
  • নতুন করে জীবন শুরু করাএ
  • হ্যাঁ, ভাবছি তাই করবো
  • গুড, তা কবে যাচ্ছো
  • এখুনি
  • তাহুরা?
  • ও থাকুক আপনার কাছে
  • আচ্ছা যাও, ভালো থাকো
  • চলে যাবো?
  • হ্যাঁ যাও, নতুন জীবনের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
  • আপনি এমন কেন
  • কেমন
  • বুইড়া বেটা একটা, বুইড়া খাটাস একটা
  • এই এই কিসের বুইড়া খাটাস, এইসব কি বলো
  • হ্যাঁ, আপনি বুইড়া বেটা, নিজে তো আর ভালোবাসতে পারেন না তাই আরেকজনের কাছে চলে যেতে বলেন, থাকবো না আর আপনার সাথে। আমার মতো এত সুন্দর আর যুবতী কি করে একটা বুইড়া বেটার সাথে থাকবে?
  • এহহহহহ নিজে মনে হয় ১৪ বছরের ছুড়ি
  • তা নয়তো কি
  • হু হু হু, জানি জানি, যাও যাও
  • বেইমান, স্বার্থপর
  • হ্যাঁ তা আমি জানি
  • এত দিন ধরে সেবা করলাম আর এখন বলে যাও চলে যাও
  • ওহ আচ্ছা, ধন্যযোগ আপনাকে, ধন্যপ্রদান আপনাকে, আপনি কত সেবা করেছেন আমার, মাদার তেরেসা
  • অসভ্য একটা, আল্লাহ হাফেজ

মিষ্টি একটা ঝগড়া হয়ে গেলো দুজনের।

তনুও কম জেদি না। ট্রলি ব্যাগ টা নিয়ে হন হন করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। যেতে যেতে বলে,

  • রাফাতই ভালো ছিল, ওর সাথেই থাকবো। হু

রাফাতের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে তাওহীদের জন্য আজ এত কিছু ও আবার সেই রাফাতের কথা বললো। এমন সময় আকাশে বিদ্যুৎ চমকিয়ে ওঠে। ঝড় শুরু হয়ে যায় সেই মাপের। তাওহীদের কলিজায় কামড় দিয়ে ওঠে। ইচ্ছে করে তনুর সাথে এই রাগটা না

দেখালেও পারতো তাওহীদ। এখন তো হিতে বিপরীত দিক ধারণ হয়ে গেল। এখন তাওহীদ কি করবে? হঠাৎ সাকিলের কথা মনে পড়ে যায় তাওহীদের। সাকিলের কথা অনুযায়ী দ্রুত

সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়। কিন্তু বেচারা পায়ের ব্যাথার জন্য তাড়াতাড়ি নামতেও পারছে না। তারপরও কোন রকম নামে। দৌড়ে গিয়ে মেইন দরজার কাছে চলে গেছে, কিন্তু ততক্ষনে তনু গার্ডেন অবদি পৌঁছে গেছে। দৌড়ে গিয়ে ধরে তনুর হাতে ধরে তাওহীদ।

  • কি হইছে, হাত ছাড়েন
  • না ছাড়লে কি হবে?
  • কেন ছাড়বেন না, ছাড়েন হাত
  • এহহ শখ কত, ছাড়লে যাতে রাফাতের কাছে যেতে পারো
  • হ্যাঁ, রাফাতই ভালো ছিল
  • চুপ একদম চুপ, একদম খুন করে ফেলবো
  • কেন? নিজেই তো চলে যেতে বলে এখন খুন করবে, আপনার কথার ভাজ খুজে পাই না আমি
  • ঝড়ের সময় কই যাও তুমি
  • বলবো না
  • চলো রুমে চলো
  • যাবো না
  • চুপচাপ রুমে চলো দারোয়ান, আর মালি দেখতেছে
  • দেখুক আমার কী
  • এক বাচ্চার মা, তবুও বাচ্চামো করতেছো কেন
  • ছাড়েন আমাকে
  • চলো না হয় কোলে তুলে নিয়ে যাবো
  • না যাবো না, বৃষ্টিতেই ভিজবো আমি আপনার কি?
  • পায়ে ব্যাথা না হয় কোলে তুলে নিয়ে যেতাম, এখন কিন্তু চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে যাবো
  • তারপর
  • পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিব
  • আগে নিজের পা সামলান তারপর আমার পা ভাঙতে আইসেন
  • তুমি ঘরে চলো
  • না

এইবার তাওহীদ সত্যিই অনেক রেগে যায় হাত টা ধরে টানতে টানতে বাসার ভেতরে নিয়ে যায় তনুকে।

  • উফফফফ লাগে, ছাড়েন তো
  • চুপ, লাগুক, লাগার জন্যই তো ধরছি
  • ব্যাথা লাগে আমার
  • লাগুক, মুন্নি এই মুন্নি, মুন্নি
  • মুন্নি নাই
  • কোথায় গেছে?
  • ওর বাসায় গেছে, ওর মা কল দিছিল তাই গেছে
  • বাহ ভালোই হলো, ফাঁকা ঘর, আমার জন্য সুবিধা হবে
  • কি করবেন শুনি
  • জবাই দিবো
  • কাকে
  • তোমাকে
  • কেন
  • রাফাত রাফাত করবা আবার একদম জবাই করে ফেলবো
  • এহহহহহহ আইছে, মনে হয় আমি কোরবানির পশু, আমায় জবাই দিবে
  • হ্যাঁ, তু

তাওহীদের নজরটা তনুর উপরে পড়ে যায়। তাওহীদ এক পলকে তনুর দিকে চেয়ে আছে। ভেজা চুলে তনুকে বেশ লাগছিল। যেন সদ্য ফোঁটা এক তাজা পদ্ম ফুল। ভিজে গিয়ে শাড়িটা শরীরের সাথে লেগে আছে। তাওহীদের সব চিন্তাভাবনা স্থগিত হয়ে গেছে কয়েজ মিনিটের

জন্য। ওইদিকে তনুর খবর নেই, সে শাড়ি থেকে পানি ঝাড়ছে আর বক বক করছে। তাওহীদ যে তার দিকে এমন গভীর নয়নে তাকিয়ে আছে তার কোন হুশ নেই

  • আপনি আসলেই খারাপ, বাজে, ফাযিল, অসভ্য, ইতর, সজারু, পিশাচ, সব সব সব আপ

মাথা উঠিয়ে তাওহীদের দিকে তাকায় তনু। তাওহীদের দৃষ্টি তখনও তনুকেই ঘ্রাস করছে। সে এখনও এক নাগাড়ে তাকিয়ে আছে তনুর দিকে। তনুর সব কথা বন্ধ হয়ে যায়। তাওহীদের এই দৃষ্টি স্বাভাবিক দৃষ্টি না। এই দৃষ্টি অন্য কিছু চাইছে।

তাওহীদ এক পা দু পা করে তনুর দিকে এগুচ্ছে আর তনু এক পা এক পা করে পেছনে যাচ্ছে,

  • আমি খারাপ?
  • ন, ন, না
  • আমি বাজে?
  • ন, ন, না
  • আমি ইতর?
  • নাহ, আহহহহ

দেয়ালের সাথে পিঠটা ঠেকেই গেল তনুর। দুপাশে হাত দিয়ে তনুকে আটকে দেয় তাওহীদ। তাওহীদ কেমন যেনো করতে থাকে। তনুর ঘাড়ের কাছে নাক টা নিয়ে যায় তাওহীদ।

ভেজা চুলের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্থ তাওহীদ। ডান হাতটা দিয়ে আলতো করে তনুর পেটের নিচের অংশে হালকা চাপ দেয় তাওহীদ। তনু নিজেকে একটু সংযত করে সরে আসে তাওহীদের থেকে

  • চে, চে, চেঞ্জ করে আসি
  • হুম

তাওহীদকে হালকা সাইড করে ধাক্কয়ে তনু দৌড়ে উপরে উঠে যায়। আসলে এতটা কাছে আসায় তনুর কেমন যেন অস্বস্তি বোধ হয়। তনুর মুখে বিজয়ের হাসি আর ভেতর টায় লজ্জায় কাচুমাচু। তনুর মুখের বিজয়ের হাসিটা ছিল সে তাওহীদকে তার খেলায় ফাঁসিয়ে

নিজে জিতে গেছে বলে এবং লজ্জাটা ছিল নিচে তাওহীদ ওইভাবে তনুর একদম কাছে চলে আসাতে। আসলে তনু ইচ্ছে করেই এমন করেছিল যাতে তাওহীদ তাকে আটকে দেয়। কারণ তনু দরজার আড়াল থেকে তাওহীদ আর সাকিলের কথা গুলো শুনে নিয়েছিল। তাই

তাওহীদের এক গেইমের উপরে তনুও ডাবল গেইম খেলে দিল। এতে করে সাপটাও মরে গেল আর লাঠিটাও ভাঙলো না।
বাহ তনু বাহ, তুমি তো পাক্কা খেলোয়াড়।

  • বুইড়া বেটা একটা, ইসসসস ভেবেছিল আমায় জব্দ করবে, অথচ নিজেই জব্দ হয়ে গেছে। ঢং যত হুহহ

পর্ব ৪৪

হাসি মাখা মুখে যেইনা তনু ভেজা শাড়ি টা সবে মাত্র বুক থেকে সরালো ওমনি কে যেম হ্যাচকা টানে তনুকে পিছন দিকে ঘুরিয়ে এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে সোজা তনুর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। স্পর্শটা খুব স্পষ্ট হয়ে যায় তনুর কাছে। এই স্পর্শটা তাওহীহের।

যা ৫ বছর আগে যেমন ছিল এখনও ৫ বছর পর তেমনি আছে। তনু ধুপ করে তার হাতের থেকে শাড়ি টা ফেলে দেয়। বাহিরে প্রবল ঝড় বয়ে চলছে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আর ভেতরে তাওহীদ তনুকে আরও নিবিড় ভাবে আঁকড়ে ধরে। তনুও তাওহীদকে আঁকড়ে ধরে।

বিদ্যুৎ এর আওয়াজে তনু হালকা কেঁপে ওঠে। তনুর কেঁপে ওঠা টা তাওহীদকে আরেকটু নাড়িয়ে দেয়। আরও যতটুকু নিবিড় ভাবে জড়ানো যায় তার থেকেও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে তনুকে সে। এইবার কোলে নেয়ার রিস্ক টা নিতেই হবে না হয়তো রোমান্সের ১২ টার জায়গায় ১৮ টা বেজে যেতে পারে।

রিস্কটা নিয়েই নেয় তাওহীদ। ঝটপট করে কোলে তুলে নেয় সে তনুকে। এগিয়ে যায় নিজের রুমের দিকে। এইটুকু সময়ে দুজনের কারো মুখেই কোন কথা নেই। আজ না হয় কথাগুলো সব চোখে চোখেই হোক। ইশারায় দুজন দুজনকে আঁকড়িয়ে ধরে। যেমনটা লাউয়ের ডগা আঁকড়িয়ে ধরে নারকেল পাতা দিয়ে বানানো ঝোঁপকে।

আস্তে করে খাটে শুইয়ে দেয় তনুকে। শাড়িটা পুরো ভিজে গেছে। তনুকে শুইয়ে দিয়ে তাওহীদ দরজা বন্ধ করে দেয়। জানালার পর্দাগুলো টেনে দেয়। এইসব দেখে তনুও বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

  • কোথায় যাচ্ছো?
  • শ, শা, শাড়িটা ভেজা। চেঞ্জ করে আসি
  • লাগবে না
  • বিছানাটা ভিজে গেছে
  • হুসসসস, উপায় আছে তো
  • কি?

উত্তরে নিশ্চুপ তাওহীদ। সামনে এগিয়ে তনুর শাড়ির আচল বুক থেকে সরিয়ে দেয় সে। লজ্জা নিবারণ করতেই বেচারি সাথে সাথে পিছনে ফিরে যায়। কিন্তু রেহাই নেই। আটকে দেয় তাকে তাওহীদের ডান হাতটা। মুখটা কানের কাছে নিয়ে যায় তাওহীদ

  • কি হলো?
  • চেঞ্জ করে আসি
  • আমি করিয়ে দিব
  • মা
  • হুসসসসস আজ আর কথা না। সব কথা গুলোকে আজ সাইডে রেখে দাও, প্লিজ

ওই অবস্থাতেই শাড়ির কুচিতে হাত দেয় তাওহীদ। খুলে দেয় কুচিগুলো। তনু সামনে সব অন্ধকার দেখছে। এক ঝটকায় পিছনে ফিরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাওহীদকে। তাওহীদের ওই ছোট্ট বুকটায় মুখ লুকায় তনু। তাওহীদ কোলে তুলে নেয় তনুকে, এগিয়ে যায় খাটের দিকে। আস্তে করে খাটে শুইয়ে দেয় তনুকে সে। তারপর নিজের ভরটাও ছেড়ে দেয় তনুর উপরে।

  • এতক্ষন চলে যেতে বলে এখন আদর করা হয়, তাই না?

তনুর বুকে নাক ঘসতে ঘসতে তাওহীদের উত্তর টাও হয় এই রকম

  • এমন না করলে তো তোমার জেদ টা দেখতে পারতাম না। ভালোবাসি তোমাকে নিজের থেকেও বেশি। সাদা শাড়িটা বড্ড বেশি জ্বালায় আমায়।
    উফফফ তনুশা আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।

তাওহীদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তনু। যত জোড়ে ধরা যায়। ব্লাউজের বাটনগুলোয় হাত পড়ে তাওহীদের। আর প্রকৃতিও লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেয় ওদের দিক থেকে। প্রবল ঝড়ের গতিতে কারেন্ট ও বিদায় নেয় এই দুই ভালোবাসার মাঝ থেকে।

৫ বছর পর আবার সেই ভালোবাসাটা এক হলো। ৫ বছর পর আবার সেই ভালোবাসাটা স্থান পেল দুজনের মনে। ৫ বছর পর আবার সেই ভালোবাসাটা স্বাক্ষী হলো এমন ঝড়ের রাতে। ৫ বছর পর আবার সেই ভালোবাসাটা দখল করে নিল তার স্থানটুকু। অন্ধকার রুমে দুটো মানুষের মিলন চলে আজ। দুটো আত্না আজ আবার এক হয়েছে।

পরদিন সকালে রোদের আলয় ঘুম ভাঙে তাওহীদের। তনু তখনও ঘুমে মগ্ন। তাওহীদ আস্তে করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে টাইম দেখে চমকে যায়। ৬ টা বাজে। তার মানে পরদিন হয়ে গেছে। কাল রাত ৭-৮ টা নাগাদ ওরা রুমে ছিল আর এখন পরদিন ৬ টা। অনেকটাই অবাক সে। তাদের এই আশ্চর্যজনক ঘুমের কথা ভেবে। রাতে খায়ও নি তারা। এমনকি তাওহীদ মেডিসিনও নেয় নি কাল রাতে।

কেউ হয়তো ঠিকই বলে, মানুষ মনের শান্তি পেলে খাওয়া দাওয়া কেন সব ভুলে যায়। হঠাৎ করে তনুর দিকে চোখ যায় তাওহীদের। এক দৃষ্টিতে তনুকে দেখছে সে। কাজল গুলো চোখের চারপাশে হালকা লেপ্টে আছে। ঠোঁটে লিপস্টিকের ছিটে ফোঁটাটাও নেই। তবে

চেহারায় এক অজানা সুখ বিরাজ করছে। দেখে মনে হচ্ছে শান্তির ঘুম ঘুমুচ্ছে সে। চাহনিতে এক পাগল কাড়া অনুভূতি লেগে আছে তার। বাম হাত টা দিয়ে তনুর চুল নিয়ে খেলা করে তাওহীদ। প্রকৃতি আজ বড্ড ঠান্ডা। কাল এত ঝড়ের পর আজ পরিবেশ নিরবতা পালোক ন

করছে। প্রকৃতির ঝড়ের সাথে তাওহীদ তনুর মনের ঝড়টাও থেমে গেছে। অসাধারণ ক্ষমতা এই ঝড়ের। এক ঝড়ে সব ভেঙে তছনছ হয়ে যায় আর আরেক ঝড়ে সব কিছু ঠিক হয়ে যায়।
তনুর ঘুমটাও ভেঙে যায়। চোখ মেলে তাকিয়ে আছে তাওহীদের দিকে। শরীরে হাত দিতেই বুঝে গেছে কাল রাতে ওদের দুজনার দুটো শরীর এক হয়ে গেছিল। লজ্জা পাচ্ছে প্রচুর।

পুরো লাল হয়ে আছে সে। কিভাবে কিভাবে এত কিছু হয়ে গেল এখনও ভাবছে তনু। কিন্তু চোখ তার তাওহীদের চোখের দিকে। আর মস্তিষ্ক ভাবছে অন্য কিছু।

  • মর্নিং
  • মর্নিং
  • উঠে গেলে যে
  • আপনিও তো উঠে গেছেন
  • ঘুমাও আরেকটু
  • নাহ উঠি এখন, বাবা মা ওনারা সবাই চলে আসবে
  • আসতে দেরি হবে
  • কেন
  • এমনিই নাকি
  • ওহ

এইভাবে শুয়ে থাকতে তনুর খুব আনিজি ফিল হচ্ছে। তাই উঠে চলে যেতে ধরলে তাওহীদ ধরে নেয় তাকে। পাশে টেনে নিয়ে যায়

  • উঠে যাচ্ছো কেন?
  • এমনি

– শুয়ে থাকো

  • কি হলো, চুপ করে আছো যে
  • কই
  • কৈ তো পুকুরে
  • আমি কৈ বলি নি আমি কই বলছি
  • আমি তো এটাই শুনলাম
  • হুম, বুইড়া বেটা তো তাই, কানেও এখন কম শুনেন
  • আমি বুইড়া বেটা?
  • তা নয়তো কি
  • কাল রাতে আমার এক্টিভিটিতে বুঝো নাই আমি আদৌ বুইড়া না কি?
  • হায়ায়ায়া, যা অসভ্য কোথাকার, সরেন তো

– তনুশা

  • এই
  • হুম
  • আমার বুকে আসবা একটু?
  • আমি তো আপনার বুকেই আছি
  • অতীতের সব কিছুর জন্য ক্ষমা করে দিও প্লিজ
  • প্লিজ তাওহীদ, আর না। বাদ দিন এইবার সব
  • নাহ সত্যিই, অনেক অন্যায় করে ফেলছি জীবনে
  • ভালোবাসতাম আমি আপনাকে। এখনও বাসি, আজীবন বেসে যাবো। তবে আমি অন্যায় করে ফেলছি আপনাকে অভিশাপ দিয়ে। আমায় ক্ষমা করে দিন
  • ঠিকই করেছিলে
  • প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন
  • আচ্ছা বাদ দাও, তনুশা একটা প্রশ্ন করি
  • হুম করেন
  • তাহুরার ছোট বেলার ছবি আছে?
  • আছে সব রাত্রি আর ছুটকির মোবাইলে
  • সব ছবি নিয়ে নিও
  • আচ্ছা

– এখনও কি আপনিতেই থাকবে

  • এত লজ্জা এখনও পাও তুমি
  • হুম
  • আরেকটা সত্যি কথা বলবা আমাকে?
  • বলেন
  • তোমার কি হয়েছে?
  • কোথায় কি হয়েছে
  • মিথ্যে বলো না আমায়৷, প্রায়ই দেখেছি বুকে হাত দাও, ডক্টরের কাছে যেতে চাও না কেন? কি সমস্যা বলো আমায়
  • কিছু না সত্যি। এমনি মাঝে মধ্যে বুকে ব্যাথা করে ব্যাস আর কিছু না
  • সত্যি তো
  • হ্যাঁ সত্যি
  • আচ্ছা তাহুরা কিভাবে হয়েছিল, আই মিন নরমাল ডেলিভারি নাকি সিজারিয়ান
  • সিজারিয়ান, তবে ও প্রিমিচুয়ার হয়েছিল, মাত্র ৭ মাসের ছিল
  • ওহ
  • জানেন, তখন আপনাকে আমার খুব প্রয়োজন ছিল তাওহীদ। খুব প্রয়োজন ছিল। বার বার চেয়েছিলাম যাতে আপনি থাকুন আমার সাথে। কিন্তু হলো না।

আজও তনুর সেই কষ্ট গুলো চোখের সামনে ভাসে। কথার মাঝেই চোখের কোণ থেকে পানি বেয়ে পড়ে তনুর। তাওহীদের বুঝতে বাকি নেই, সেই সময়ে সত্যিই ওর তাওহীদেকে খুব

প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাওহীদ অন্যের কথায় কান দিয়ে নিজের সব চাইতে খুশির দিন গুলো মিস করে গেছে। প্রথম বাবা হওয়ার আনন্দ, প্রথম সন্তানকে কোলে নেয়ার আনন্দ,

গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে সময় কাটানো সব কিছুই মিস করে গেছে তাওহীদ। এইসব ভেবেই তার চোখেও আজ পানি চলে আসে। তাওহীদ তনুকে বুকে জড়িয়ে ধরে। তাওহীদের ছোয়া পেয়ে তনুও ঢুকরে কেঁদে ওঠে।

– আমি খুব খারাপ তনুশা, খুব খারাপ

  • আমার একার একটা ভুলের জন্য আজ ৫ টা বছর তুমি আর আমার সন্তান টা সাফার করলো, আমায় ক্ষমা করে দিও
  • ভুল আমারও ছিল তাওহীদ
  • সত্যি ভালোবাসি তোমাকে। খুব ভালোবাসি
  • আমিও ভালোবাসি। যার কোন ব্যাখ্যা নেই আমার কাছে
  • আর কখনও আমায় ছেড়ে চলে যেতে দিব না
  • আর আমিও কখনো আপনাকে ছেড়ে যাবোও না

দুজন দুজনার বুকে এইভাবে মিশে কাটিয়ে দেয় এক সকাল।

বিকেলের দিকে বাসায় চিল্লা-পাল্লা শুরু হয়ে যায়। মাহবুব ম্যানসন গরম হয়ে আছে তাহুরার চিল্লানিতে। সে ইদানীং বড় পাকনা হয়েছে। সিলেটে কি কি করেছে, কোথায় কোথায় গেছে সব বলছে মাম্মাম আর তার পাপাইকে।

অন্যদিকে, মাহবুব সাহেব, রাবেয়া বেগম
সহ মাইশা আর সাকিলও খুশি তনুকে এমন হাসি খুশি দেখে। অলরেডি মাইশাকে সব বলে দিয়েছে তনু। মাইশা অনেক খুশি।
তাহুরা এখন রুমে তার মাম্মাম আর পাপাইয়ের সাথে গল্পে মজেছে

  • পাপাই তানো
  • তানো কি আবার মাম্মাম পাখি, ওইটা জানো হবে
  • মাম্মাম তুপ কলো
  • তুপ না চুপ কলো না করো
  • এ, এ, পাপাই মাম্মাম কে বতা দাও
  • বতা না বকা
  • হা হা আহহহহ তনুশা আম্মুনকে জ্বালাচ্ছো কেন?
  • আপনার আম্মুনকে কথা সুন্দর করে স্পষ্ট করে বলতে বলেন
  • পাপাই
  • আহহহহ তনুশা,
  • আচ্ছা যান আমি কথাই বলবো না
  • পাপাই তানো, ফুপা আতে না ফুপ্পিকে তুম্মা দিতে

তাহুরার এমন কথায় তাওহীদ আর তনুর চোখ আকাশে। মেয়ে কি বলে এইগুলা।

  • তুমি কেমনে দেখলা মাম্মাম পাখি
  • হু হু দেতেতি দেতেতি তব দেতেতি লুতিয়ে লুতিয়ে
  • আম্মুন, ছিহ এইসব দেখে না তারা তোমার বড় হয় না। এইসব করে না মা
  • কি মা মা করেন, সরেন তো। এই মেয়ে এই, কি সব বলো তুমি। ঠাটিয়ে চড় বসিয়ে দিব গালে। তুমি এইসব করতে গেছো ওইখানে
  • আহহহহ তনুশা, বকছো কেন ও-কে
  • কি বলেন আপনি এইসব কি অভ্যাস। উঁকি ঝুঁকি দেয়া। মেয়ে দিন দিন বড় বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে।

মায়ের বকা খেয়ে কেঁদে কেঁদে তাহুরা অন্য রুমে চলে যায়।

  • আহহহ তনুশা, বকা দিলে কেন
  • আপনি দেখলেন কি বললো ও। মাইশা আর সাকিল ভাই শুনলে কি ভাববে
  • আচ্ছা ও কি অনেক বড় নাকি বলো, বাচ্চা মেয়ে। ও কি বলতে কি বলেছে এ নিয়ে বুঝি এমন করা লাগে। এখন কোথায় গেছে? কে জানে
  • আপনি নাকি কাল অফিসে যাবেন?
  • হ্যাঁ
  • তাহলে কাজ করেন, ওকে

তনু রেগে গেছে অনেকটা। বাচ্চা মানুষ এত পেকে যাবে কেন? তা নিয়েই তার সমস্যা। তাওহীদও আর কিছু বলে নাই। সাকিলের সাথে বসে অফিসের ফাইল পত্র দেখার কাজে লেগে যায়। তনুও রান্নাঘরে কাজ করতে যায়।

অন্যদিকে ছোট্ট তাহুরা গার্ডেনের এক কোণায় বসে চুপ করে কাঁদতে থাকে।
বুঝ হওয়ার পর থেকে এই সহ দুইবার তার মা তাকে এইভাবে বকা দিল। সেই কষ্টেই তার এত চোখের পানি।

একদম তনুর মতো হয়েছে সে। তনু যেমন চাপা স্বভাবের মেয়েও তেমন হয়েছে। চুপি চুপি কাঁদে কাউকে দেখায় না।

প্রায় অনেক্ষণ পর তনু নিজেই গার্ডেনে গিয়ে মেয়ের পাশে বসে। মাকে দেখে ঠোঁট ফুলিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসে তাহুরা।

  • মাম্মাম পাখি কি তার মাম্মামের সাথে রাগ করেছে?
  • আমি কালো মাম্মাম পাখি না
  • কে বলেছে?
  • আমি বলেতি
  • মাম্মাম পাখি যদি ভুল করে মাম্মাম কি তাকে বকতে পারে না?
  • আমি মলে তাবো
  • মাম্মাম পাখি

মেয়ের এমন কথায় তনুর বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে। এইবার নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে তনুর। কেন যে এইভাবে বকতে গেলো মেয়েটাকে। এখন মেয়েটা এইভাবে বলছে।
পিছন থেকে সব দেখে এবং শুনে নেয় তাওহীদ। মেয়ের এমন কথা তার বুকে তীরের মতো বিধে গেছে। এইটুকুন মেয়ে এইসব বলে তাও মায়ের সাথে রাগ করে।

মেয়ের অন্য পাশে গিয়ে বসে তাওহীদ। এক পাশে তনু আরেক পাশে তাওহীদ মাঝে তাহুরা বসা। তনুর মুখের দিকে তাকিয়ে তাওহীদ বুঝে যায় যে তনুর মনে কি চলে। চোখের পানি গুলো চিক চিক করছে তার। হয়তো ছোট্ট মেয়ের এমন কথাটা হয়তো তনুর বুকে গিয়ে লেগেছে। তনুকে চোখ দিয়ে ইশারা করে তাওহীদ। তাওহীদের ইশারা বলছে, আমি আছি তো, সব সামলে নিব

  • আম্মুন, কি হয়েছে?
  • আমি কালো আম্মুন না
  • পাপাই কি করলাম
  • আমি মলে য়াবো
  • এইসব বলে না আম্মুন, মাম্মাম তোমাকে কেন বকা দিয়েছে জানো?
  • তেনো
  • মাম্মাম এইজন্য বকা দিয়েছে যাতে তার মাম্মাম পাখিটা আর কখনও এইসব না বলে। তুমি বলো তো আম্মুন, তুমি এইসব বললে মাম্মামের খারাপ লাগবে না?
  • হু
  • তাহলে আর বলবে এইসব?
  • না পাপাই
  • তাহলে মাম্মামকে আদর করে দাও
  • লাভ ইউ মাম্মাম
  • লাভ ইউ টু সোনা

তাহুরাকে কোলে নিয়ে অনেক আদর করে তনু। মায়ের আদর পেয়ে মেয়েও হেসে কুটি কুটি।
মা-মেয়ের এমন হাসি দেখে তাওহীদও মনে মনে অনেক শান্তি পায়। সামনে ডুবে যাওয়া সূর্যর দিকে তাওহীদও মুচকি হেসে দেয়।

  • জীবনের অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গেছে। আর হারাতে চাই না কিছু। আমার সব থেকে কাছের মানুষ আর আমার কলিজার টুকরাকে বুকে নিয়েই সারাজীবন কাটাতে চাই

শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে তাওহীদ। আর অন্যদিকে মা-মেয়ে দুষ্টুমিতে মেতে আছে।


পর্ব ৪৫ (শেষ পর্ব)

দিন তো ভালোই যাচ্ছে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভালো আছে তাওহীদ। স্বামী সন্তান নিয়ে ভালো আছে তনুশাও। দুঃখ গুলো অনেক হানা দিয়েছে এদের দুজনের উপরে। জীবন যেখানে ঘুর্নায়মান সুখ দুঃখগুলোও সেখানে ঘুর্নায়মান। সুখ দুঃখের মাঝেই বেঁচে থাকা।

কাল তনুর জন্মদিন। রুমেল ফোন দিয়েছিল তাওহীদকে। সব বলে দিয়েছে তাওহীদকে। এই ৫ বছরে নিজের জন্মদিনটা মনেও করেনি তনু। জীবন যুদ্ধে এমনভাবেই নেমেছিল যে নিজের সব শখ আল্লাদ সব ভুলে গেছে সে।

তাওহীদ এখন তনুকে সেইসব সুখ দেয়ার চেষ্টা করে যা সে ডিজার্ভ করে। আর তনু আগে যেমন ছিল আর এখন ৫ বছরের অভিমান ভুলে গিয়ে আবার সেই আগের মতো হয়ে আছে।
ভালো আছে এখন তারা। খুব ভালো আছে। শ্বশুরবাড়ির সবাইকে নিয়ে একসাথে ভালোই

আছে তনুশা। অন্যদিকে তনুর বাবারবাড়ির সবাইও ভালো আছে। সব আছে, সুখের কমতি নেই আন কারো জীবনে কিন্তু তনুর বাবার ভাগ্যে ছিল না সুখ গুলো দেখা। এক বুক দুঃখ নিয়ে চিরবিদায় নিলেন তিনি।

তাওহীদ সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে। কাল তনুর সাথে সারাদিন কাটাবে তাওহীদ। কাল সারাদিন সারারাত শুধু তাওহীদ আর তনু। মাইশা আর সাকিলের কাছে তাহুরাকে একদিনের জন্য রেখে যাবে তাওহীদ।

  • হ্যালো তনুশা, কোথায় তুমি?
  • এই তো রেডি হচ্ছি
  • এখনও হচ্ছি? হবে কখন
  • আর মাত্র ৫ মিনিট প্লিজ, আচ্ছা আমরা যাচ্ছি টা কোথায়
  • একটা ফ্রেন্ডের বাসায়
  • ওহ, তাহলে মাম্মাম পাখি কে নিলে কি হতো
  • নাহ, ওখানে বড়রা থাকবে ও মাইশার কাছেই থাক। তুমি আসো তাড়াতাড়ি
  • আচ্ছা

প্রায় ৩৫ মিনিট পরে তনু গাড়ি থেকে নামে। সামনে তাওহীদ দাঁড়িয়ে আছে। তনু আজ সেজেছে। অনেক সেজেছে। হালকা হলুদ রঙের শাড়ি সাথে ম্যাচিং করা চুড়ি। ঠোঁটে

হালকা লিপস্টিক, খোলা চুল। এক কথায় অসাধারন লাগছে তনুকে আজ। গাড়ি থেকে নেমে তাওহীদের দিকে এগিয়ে যায় তনু। তাওহীদ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তনুর দিকে। যেন এক মায়াবী রাজকন্যা দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। তাওহীদকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দেয় তনু।

  • অবশেষে এসেছো
  • সরি
  • ইটস ওকে
  • আচ্ছা আমরা এখানে কেন এসেছি
  • কারণ আছে
  • কি কারণ
  • ভেতরে চলো
  • ওকে, তাওহীদ
  • হু
  • বলো না কোথায় আসছি আমরা?
  • গেলেই দেখতে পাবে
  • একি একি চোখ বাধছো কেন?
  • হুসসসস, চুপ

তাওহীদ তনুর হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যায়। আস্তে করে চোখের বাধন টা খুলে দেয়। চোখের বাধন খোলার পরে আরও অন্ধকার লাগে সব কিছু। তনু কিছুই দেখছে না।

  • তাওহীদ, আমি কিছুই দেখতে পারছি না
  • মানে?
  • হ্যাঁ সামনে সব কিছুই অন্ধকার
  • হা হা, অন্ধকার করে রাখা হয়েছে তাই অন্ধকার দেখছো

– তাওহীদ তুমিও না, ফাইযলামি করো শুধু

– তাওহীদ

– এই তাওহীদ, কোথায় তুমি?

– তাওহীদ, এই তাওহীদ

  • কেমন লাগে মেজাজটা, কই তুমি

হঠাৎ করেই তনুর উপর একটা লাইট পড়ে আর তনুর সামনে আরেকটি লাইট পড়ে। সেই লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে অনেক বড় একটা ফ্লাওয়ার বুকে। যার চারপাশে অসংখ্য ফুলের সমাহার আর মাঝে লিখা
Happy
Birthday
To
You

Fairy light দিয়ে সাজানো লিখাটায় তনুর চোখ যায়। হঠাৎ করেই চারপাশের মোমবাতি গুলো জ্বলে ওঠে। পুরো রুমটা জুড়ে শুধুই মোমবাতি আর গোলাপের পাঁপড়ি

ছড়ানো ছিটানো আছে। এত সুন্দর ডেকোরেট করা হয়েছে রুমটা যা দেখে তনু হা হয়ে থাকে। আজ তার জন্মদিন আর সে নিজেই ভুলে গেল এই দিনটা। অবশ্য এই ৫ বছরে কেউই কিছু

করে নি ওর জন্য। কথাটা বললেও ভুল হবে, তনু নিজেই এইসব করে নি। আজ এত বছর পর আবার এইদিনটা এলো। আর এই দিনটাকে এত স্পেশাল করে দিল তাওহীদ। কিন্তু সেই তাওহীদকেই দেখা যাচ্ছে না কেন?

– তাওহীদ, কোথায় তুমি?

– তাওহীদ, বের হয়ে আসো বলছি

  • উফফফফফ, এইবার কিন্ত বেরিয়ে যাবো বলে দিলাম কে গো তুমি অনন্যা
    যার মোহে আমি মোহিত

কে গো তুমি বিলাসীনি
যার দৃষ্টিতে আমি ঘায়েল
কে গো তুমি প্রেয়সী

যার ঠোঁটের এক চিলতে হাসিতে
আমি বার বার মরি
কে গো তুমি নন্দিনী

যে আছো আমার হৃদয়ে
তুমি কি জানো আমার অর্ধেকটা

জুড়ে তোমার বসবাস
তুমি কি জানো আমার সারাদিনের

ক্লান্তি দূর করার শান্তির ছায়া তুমি
তুমি কি জানো আমার মনের

মনিকোঠায় বিচরণকারী এক হলুদ পরী
তুমি
তুমি কি জানো কতটা প্রয়োজন

আমার তোমায়
হ্যাঁ গো বিলাসীনি তোমায় আমার
প্রয়োজন, বড় বেশি প্রয়োজন

হ্যাঁ গো প্রেয়সী আমি ভালোবাসি তোমায়
হ্যাঁ গো নন্দিনী আমি মন দিয়েছি তোমায়

হ্যাঁ গো বিচরণ করি আমি তোমার
মাঝে
কারণ আমি যে ভালোবাসি তোমায়
শুভ জন্মদিন প্রিয়তমা

আড়াল থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে আসে তাওহীদ। তাকিয়ে আছে তনুর দিকে। তনুও দেখছে তাওহীদকে। ভালোবাসার আবেশে আজ রুমের প্রতিটা কোণা ভরে উঠেছে। দীর্ঘ হয়ে রয়ে যাওয়া কষ্ট টা আজ জলস্রোত হয়ে নেমে যায় প্রকৃতির মাঝে। তাওহীদের ওই পাগল করা

হাসির প্রেমে পড়ে যাচ্ছে তনু। চোখ টিপ টিপ করে দাঁড়িয়ে আছে তাওহীদ। তারপর দু’হাত মেলে ধরে তনুর সামনে। আরেকটা হাসি দিয়ে কাছে ডাকে তার তনুকে। আর তনু, সে তো পারে না উড়াল দিয়ে চলে যায় তাওহীদের কাছে।
দৌড়ে গিয়ে তার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে তাওহীদ।

  • হ্যাপি বার্থডে জান, মেনি মেনি হ্যাপি রির্টান্স অফ দ্যা ডে
  • ভালোবাসি
  • হা হা, আমিও ভালোবাসি
  • জানি তো
  • কিভাবে
  • এখন তো সব বুঝতে পারি
  • তাই?
  • জ্বি জনাব তাই, আচ্ছা মিথ্যে বলার কি দরকার ছিলো?
  • না বললে আপনি যে আসতেন না
  • কে বলেছে
  • আমি বলেছি, আমি জানি
  • আপনি কচুটা জানেন
  • আচ্ছা আসো কেক টা কাটো
  • আবার কেকও আছে
  • জ্বি ম্যাডাম

তনুকে ধরে সোফায় বসিয়ে দেয় তাওহীদ। সামনে থাকা টি-টেবিলে একটা কেক সাজানো আছে। তনু হাতে knife নিয়ে তাওহীদের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।

  • কাটো একটা
  • হুম

বহুদিন পর তনুর শূন্য বুকে সুখের ছায়া ভেসে আসে। ভালোবাসা যে এমনও হয় তা সে জানতো না। হ্যাঁ ভালোবাসা এমনও হয়। যার চাক্ষুষ প্রমাণ সে নিজেই। লো-ভলিউমে

মিউজিক ছেড়ে দিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছে তাওহীদ। হাতটার দিকে তাকিয়ে থেকে হাতটা ধরে ফেলে তনু। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে তাওহীদ তনুকে।

  • can you dance with me?

তাওহীদের এমন প্রশ্নের কি উত্তর দিবে তনু খুজে বেরায়। আজ হঠাৎ তাওহীদের কি এমন হলো যে সে আজ এমন করছে।

তাহলে কি সুখ গুলো তনুর জীবনে ফিরে এসেছে। ভালোবাসা গুলো কি ওর চারপাশে খেলা করা শুরু করে দিয়েছে। হয়তো এত দুঃখের পরে সুখ গুলোও আর চায় না এইবার আর ওদের মাঝে কোন দুঃখ আসুক।

  • hey
  • yes, i can

লো-ভলিউম মিউজিক এর সাথে তাওহীদের সাথে তাল মিলিয়ে নাচে মেতে ওঠে তনুও। এই রাত শুধু একান্ত ওদের। ভালোবাসার চাদরে মোড়ানো এক অপূর্ব রাত। যার আড়ালে রয়েছে হাজার তারার মেলা।

  • তাওহীদ
  • হু
  • love u
  • love u too
  • ভালোবাসি
  • ভালোবাসি
  • অনেক ভালোবাসি
  • অনেক অনেক ভালোবাসি
  • তাই
  • জ্বি ম্যাডাম
  • আমার একটা জিনিস চাই
  • আমারও চাই
  • কী
  • তুমি আগে বলো
  • নাহ তুমি আগে বলো
  • উহু তুমি
  • উহু তুমিই
  • আমার একটা ছোট্ট তন্ময় চাই

লজ্জায় লাল হয়ে যায় তনু। তাওহীদের দিকে তাকাতে পারছে না সে। তাওহীদের বুকের মধ্যে মিশে যায় লজ্জায়।
তাওহীদ তনুর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলতে শুরু করে,

  • আমি তাহুরার সময় ছিলাম না। আমাকে এইবার বঞ্চিত করো না। নাহলে আমি মরেই যাবো এইবার তনুশা
  • তাওহীদদদদদ, হুসসসস চুপ করো
  • সত্যিই বলছি, সত্যিই মরে যাবো। তাহুরার ছোট থেকে এই পর্যন্ত বড় হওয়াটা আমি দেখি নি। আমি চাই আরেকজনের মধ্যে আমি তাহুরার ছোটবেলাটাও উপভোগ করতে
  • একি চোখে পানি কেন
  • এমনি
  • ছেলেরাও কাঁদে?
  • কাঁদে ম্যাডাম, ছেলেরাও কাঁদতে জানে তবে ওরা কাঁদে নিরবে। ওদের কান্না আল্লাহ আর ওরা ছাড়া কেউই দেখে না
  • হয়তো
  • জ্বি

সেইরাতে ভালবাসা নামক সূতার মাঝের গিটটা আরও মজবুত হয়। এতটা মজবুত হয় যে আর কোন ঝড়ের কবলে পড়লেও এই গিট আর খুলবে না।

সুখে শান্তির মাঝে প্রায় ৮ টি মাস পার করে দেয় তনু আর তাওহীদ। অনেক কালো রাত দেখেছে এই দুইটা জীবন। যার অন্ধকার এদের ঘ্রাস করে নিয়েছিল। আল্লাহর হুকুম ছাড়া নাকি গাছের পাতাও নড়ে না। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছে এদের। হয়তো এদের ভবিতব্য এটাই ছিল যে ৫ বছর বিচ্ছেদের পর তাদেরই ভালোবাসার অংশের মাধ্যমে আবার তাদের দেখা

হবে। আবার মিলন হবে। ভালোবাসার সুখটা এতটাই গাঢ় হয়ে গিয়েছিল যে দুজনের মাঝে সব রাগ, অভিযোগ, অভিমান সব উড়ে চলে গেছে। তাহুরা এক সাথে তার মাম্মাম এবং তার পাপাই কে পেয়েছে। আর কি চাই তার। সবার চোখের মনি সে।

  • মাম্মাম ও মাম্মাম
  • জ্বি মাম্মাম পাখি
  • তোমার পেত তা ফুলা তেন
  • কোথায় মাম্মাম পাখি
  • এই তো দেতা তায়
  • মাম্মাম পাখি শব্দ গুলো ঠিক করো
  • পালি না
  • পালি না হবে না পারি না হবে

তাহুরা রেগে গেছে। তার ভুল ধরলেই সে রাগে।

  • বলো না মাম্মাম
  • কি বলবো
  • ধুল, পাপাই ও পাপাই
  • জ্বি আম্মুন
  • মাম্মামের পেত ফুলা তেন
  • আসলে কি হয়েছে আম্মুন বলো তো, ওইখানে তোমার একজন ভাই/বোন আছে, তাই মাম্মামের পেট টা ফুলা
  • চত্যি
  • জ্বি চত্যিইইইইই
  • ইয়েএএএএএএএ আমাল ভাই তবে ভাই তবে
  • মাম্মাম পাখি, তবে কি আবার তবে হবে না, এটা হবে উচ্চারণ করো
  • ধুল
  • ধুল না ধুর হবে, তাওহীদ ও-কে উচ্চারণ শেখাও
  • পাপাইইইইইইইইইই
  • হা হা হা

হাসি ঠাট্টায় রুমের কাণায় কাণায় ভরে ওঠে। হ্যাঁ অনু আবার মা হতে চলেছে। দ্বিতীয় সন্তানের মা হবে তনু আর তাওহীদ হবে বাবা। ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তনু। খুশির সীমা নেই এখন তাদের মাঝে। তাহুরার সময় এই সুখটা তাওহীদ পায়নি। তাই এখন দ্বিতীয় সন্তানের সময় পুরো সুখটা উপভোগ করছে তাওহীদ। সর্বক্ষণ তনুর আশেপাশে থাকে সে। চোখে হারায় সে এখন তনুকে।

ভালোবাসার সুখ গুলো আজ তনুর আঁচলে। ৫ বছরের কালো অধ্যায়ের পর সোনালী সকাল আজ তাওহীদ তনুর ঘরের আঙ্গিনায়।

  • আহহহহহহহহ ও আল্লাহগো
  • তনুশায়ায়ায়ায়ায়া
  • ঠিক আছো তুমি তনুশা?
  • হুম ঠিক আছি
  • আমি না ধরলে কি হতো ভেবে দেখেছো
  • কি হতো আর মরে যেতাম
  • চুউউউউউউপ, বেশি বুঝো তুমি, তাই না? নিচে নামতে কে বলেছে তোমায়
  • আজব তো, রান্না করা লাগবে না? খাবে কি? বাবা মা সাকিল ভাইয়া তুমি না খেয়ে থাকবে নাকি

তনু সিড়ি দিয়ে নামার সময় পড়ে যেতে নেয় আর ভাগ্যক্রমে তাওহীদ এসে ধরে ফেলে। যদি আজ তাওহীদ না ধরতো তাহলে কোন এক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হতো তনু আর তাওহীদকে। রাবেয়া বেগম আর মাইশা দৌড়ে আসে।

  • কি হয়েছে?
  • কি হবে আর, সে নাকি রান্না করবে সবার জন্য তাই রান্নাঘরে যাবে বলে নিচে নামছে, শাড়ির সাথে পা আটকে পড়ে যেতে নিছিলো
  • কেন, তনু এইসব কি। আমরা কি মরে গেছি নাকি
  • মা কি সব বলেন আপনি?
  • ঠিকই তো ভাবি, আমরা থাকতে তুমি নিচে কেন আসবে। তুমি রুমে শুয়ে থাকবে আর আমরা সব করবো
  • কি সব বলছো তুমি মাইশা, আমি শুয়ে বসে আরাম করবো আর মা এই বয়সে রান্নাঘরে রান্না করবেন, ছি ছি
  • আমি এখনও স্ট্রং আছি, তোমাকে বলতে হবে না৷। তুমি শুধু খাবা আর ঘুমাবা
  • শুনেছো, শুনে নিয়েছো তো এখন আর কোন কথা না। চলো রুমে চলো

সবাই ধমকে তনুকে রুমে পাঠায়। সবার মনের মাঝে এখন রাজ করে তনু আর তার মেয়ে। হাসি খুশির ছোয়ার মাঝে কেটে যায় আরও ৪ টি মাস।

সকাল থেকেই হঠাৎ করে তনুর শরীর খারাপ হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যায় সবাই মিলে। চট্টগ্রাম থেকে রুমেল আর তনুর মা চলে আসে। তনয়া রাত্রির কাছে থেকে যায়। রাত্রির ছেলেটার মাত্র ৪ মাস হলো। ছোট বাচ্চাকে নিয়ে জার্নি করতে পারবে না বলে রাত্রি আসেনি। কিন্তু আফসোস করেছে অনেক।

তনুকে সিজার করা হবে। বিকেল ৪ টায় OT। সবাই অপেক্ষা করছে ডক্টরের জন্য। ডক্টর আসলেই অপারেশন শুরু হয়ে যাবে। প্রচন্ড টেনশনে আছে তাওহীদ। তাহুরা ভয়ে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। মাকে জড়িয়ে ধরে আছে সে।

যথা সময়ে ডক্টর চলে আসে। এখন তনুকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হবে। সবার সাথে কথা বলে তনু এখন ভেতরে যাবে এখন। এমন সময় তাওহীদ তনুর হাত টা ধরে নেয়।

  • কি হলো
  • যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না
  • কি সব বলো
  • তনুশা,
  • হু
  • তোমায় আমার প্রয়োজন
  • আমারও তোমায় প্রয়োজন
  • ফিরে আসবে কথা দাও
  • ছোট্ট তন্ময়কে নিয়েই ফিরবো ইনশাআল্লাহ
  • ভালোবাসি
  • আমিও ভালোবাসি

তনুকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক টেনশনে আছে তাওহীদ। পা থেকে কপাল অবদি পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে তার। প্রায় ১ ঘন্টা পর নার্স এসে খবর দেয়।

  • মিষ্টার তাওহীদ
  • জ্বি, কি অবস্থা
  • মেয়ে হয়েছে
  • মাশা-আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। আমার স্ত্রী কেমন আছে এখন
  • মা মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছে
  • আমি কি একটু দেখা করতে পারি
  • একটুপরে কেবিনে দেয়া হবে
  • আচ্ছা

সবাই খুশি। তাহুরা তো খুশিতে নেচে বেড়াচ্ছে। পুরো হাসপাতালে দৌড়ে চিৎকার করে বলছে, আমাল বোন হয়েতে, বোন হয়েতে । কিছুক্ষণ পর তাওহীদ তাহুরাকে নিয়ে তনুকে দেখতে কেবিনে যায়।

তনু বেডে শুয়ে আছে। পাশে ছোট্ট বাবুটা শুয়ে আছে। একদম দ্বিতীয় তাহুরা। সেম চোখ সেম নাক সেম ঠোঁট। দুই বোনের সব সেম সেম। তাওহীদ দেখে তনুর মন খারাপ।

  • কেমন আছো তনুশা
  • ভালোই
  • কি হয়েছে
  • তুমি রাগ করেছো তাই না
  • কেন রাগ কেন
  • তন্ময় এলো না তো
  • তো কি হয়েছে, তন্নি তো এসেছে
  • আপনার মন খারাপ হয় নি তো
  • নাহ তো, আমি বরং খুশি হয়েছি। আর তুমি কি ভুলে গেছো আল্লাহ তায়ালা যাদের উপরে বেশি সন্তুষ্ট হোন তাদের ঘরেই কন্যা সন্তান দেন। ভাবো তো আমরা কত ভাগ্যবান দম্পতী যাদের ঘরে মাশা-আল্লাহ দুইজন কন্যা সন্তান আছে।
  • চরো চরো, আমাল বোনকে আমি এত্তু দেতি
  • আসো আম্মুন
  • পাপাই বোনের নাম তি
  • তন্নি। তুমি হচ্ছো তাহুরা বিনতে রুবাইয়া
    আর উনি হচ্ছে তন্নি বিনতে রুবাইয়া। কেমন
  • ইয়েএএএএএএ আমাল বোন

সেই সময়ে সবাই রুমে আসে। তনু আর ছোট্ট তন্নিকে সবাই দোয়া দেয়। তাওহীদ আজ বড় খুশি। এতটাই খুশি যে চোখের পানি গুলো গড়িয়ে পড়ে। মাহবুব সাহেব আর রাবেয়া বেগম এর পুরো ঘর আলোয় ফুটে উঠে। সবাই বাহিরে চলে গেলে তাওহীদ তনুর কাছে এসে বসে। তনুর কপালে চুমো খায় তাওহীদ।

  • ভালোবাসি মিসেস তাওহীদ
  • ভালোবাসি মিষ্টার তাওহীদ
  • আর কোন ঝড় আসতে দিব না
  • আগলে রাখবে তো
  • সব সময়
  • বুইড়া বেটা একটা
  • বুইড়া বেটি একটা

হাসি খুশিতে ভরে ওঠে তাওহীদ তনুর বাকী জীবন। ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে হয়তো একদিন ইতি ঘটবে তাওহীদ তনুর জীবনের।
সুখে থাকুক ভালোবাসা গুলো। সুখে থাকুক ভালোবাসার মানুষ গুলো।

লেখা – আফরোজা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “তোমায় আমার প্রয়োজন (শেষ খণ্ড) – Romantic Bangla Valobashar Golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – তোমায় আমার প্রয়োজন (১ম খণ্ড) – Bangla Romantic Valobashar Golpo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *