চিলেকোঠার অতিথি – নতুন প্রেমের গল্প

পর্ব ১৭

ফিয়োনা কেনাকাটা শেষ করে বেরিয়েছে, এমন সময় নীলাভের সাথে দেখা। আজকে ফিয়োনা গাড়ি নিয়ে এসেছে। নীলাভ ফিয়োনার দিকে তাকিয়ে হাঁটছিল, চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নিলো। ফিয়োনা আর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না। নীলাভ সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেলো। ফিয়োনা চোখের সামনে একজনকে পড়ে যেতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে এগিয়ে আসলো। মানুষ তো, মানুষের পাশে থাকতে না পারলে কি হয়। নীলাভকে ধরে ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু নীলাভ হাঁটতে পারছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে পা ফেলতে।
ফিয়োনা নীলাভকে ধরে ধরে এনে নিজের গাড়িতে তুললো। তারপর নিজেই গাড়ি চালিয়ে নিয়ে চললো হসপিটালের দিকে। নীলাভ আপত্তি জানিয়ে বলল, আরে না না। লাগবে না।

  • চুপ করে থাকুন আপনি। কিভাবে যে হাঁটেন।
  • আমি আসলে একটা জিনিস ভাবতে গিয়ে ধপাস হয়ে গেছি।
  • কি জিনিস জানতে পারি?
  • ভাবছিলাম আপনাকে দেখলে মোটেও রাগী মনে হয়না। আপনি জোর করে রাগী হওয়ার চেষ্টা করে বরং কঠিনের পরিবর্তে হাস্যকর লাগে। দেখলেই বোঝা যায় মানুষ টা রাগার চেষ্টা করছে কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছে।

নীলাভের কথা শুনে ফিয়োনা হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারলো না। ফিক করে হেসেই ফেললো ও। হাসতে হাসতে বলল- কি যে বলেন।

  • খারাপ বলেছি?
  • হয়ত বা নয়। ভালোই বলেছেন। তবে সত্যি কিন্তু।
  • হুম আমি জানি। আপনার মত মিষ্টি মেয়ের রাগ থাকতেই পারে না।
  • আপনার পায়ে কি বেশি কষ্ট হচ্ছে?
  • না। খুব বেশি নয়। ঠিক আছি। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।
  • চুপ থাকুন। আপনারা পুরুষ রা আসলে কোনোকিছু কে গায়ে লাগাতে চান না। যখন বড় কিছু হবে তখন বুঝবেন।
  • ওরে বাবা। সত্যিকার রাগ ও আছে দেখছি।
    ফিয়োনা জানতে চাইলো, কোথায় থাকেন আপনি?
  • মোহাম্মদপুর। আপনি?
  • উত্তরায়।
  • বাসায় কে কে থাকে?
  • বাবা মা আর আমি। আমার আর ভাইবোন নেই। আপনারা?
  • আমরা দু ভাই। বড় একটা বোন আছে, বোনের বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই।
  • ওহ আচ্ছা। আপনি কি ভাইদের মধ্যে বড়?
  • আমি ছোট। বড় ভাইয়া পড়াশোনা শেষ করে একটা গভর্নমেন্ট জব করছে। ভাইয়ার বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছি কিন্তু ভাইয়ার একটা মেয়েকেও পছন্দ হচ্ছে না।
  • পছন্দ হবে না কেন?
  • তা জানিনা। ভাইয়া বলে এসব মেয়েদেরকে ওর চেনা আছে। বিয়ের পর কখনো সুখী হবেনা হ্যান ত্যান।

ফিয়োনা হেসে ফেললো। হাসতে হাসতে বলল- আপনার ভাইয়ার সাথে আমার যথেষ্ট মিল। আমিও ছেলেদেরকে সহ্য করতে পারিনা। বিয়ের কথা ভাবা তো দূরে থাক।

  • সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। তবে বাইরে থেকে আপনাকে যতই কঠিন মনে হোক না কেন, আপনার ভেতরে একটা সুন্দর মন আছে সেটা বলতেই হয়।
  • কি করে বুঝলেন?
  • কিছু কিছু জিনিস বোঝা যায়।

ফিয়োনা হাসলো। গাড়ি থামিয়ে বলল- আমরা হসপিটালে পৌঁছে গেছি। নামুন।

  • অযথা, হসপিটালের দরকার ছিলো না কোনো।
  • অবশ্যই দরকার আছে। নামুন তো।

ফিয়োনার জেদের কাছে বাধ্য হয়ে নীলাভকে গাড়ি থেকে নামতে হলো। হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে নীলাভকে খাইয়ে দিলো ফিয়োনা। তেমন ক্ষতি হয়নি, পা মচকে গেছে এই যা। কিন্তু হাঁটতে পারছে না নীলাভ। ফিয়োনা নিজের কাঁধে নীলাভের হাত নিয়ে ধরে ধরে হাঁটছে।
নীলাভকে গাড়িতে তুলে ওর বাসার ঠিকানা নিয়ে বাসায় পৌঁছে দিতে এসেছে ফিয়োনা। গাড়ি থেকে নেমে নীলাভকে ধরে ধরে বাসার ভিতরে নিয়ে এলো। নীলাভের মা ছুটে এসে বললেন, আরে আরে কি হয়েছে ওর?

  • তেমন কিছু না আন্টি। পা মচকে গেছে।
  • আহারে। দেখি, কিভাবে হলো এমন?
  • একটু সাবধানে চলতে বলবেন আপনার ছেলেকে। আমি আজ আসি।

নীলাভকে রেখে ফিয়োনা চলে যাচ্ছিল। আন্টি ফিয়োনাকে ধরে ফেললেন। বললেন, কি নাম তোমার মা? এসে এভাবে চলে যাবে কেন? আসো, ভিতরে আসো।
ফিয়োনার ইচ্ছে ছিলো না আজকে বসার। তবুও আন্টির কথা শুনে না বসে চলে যেতে পারলো না। বাসার ভিতরে এসে বসলো ফিয়োনা। নীলাভকে মা ধরে এনে ফিয়োনার পাশে বসিয়ে রাখলেন। তারপর ফিয়োনার হাত ধরে বললেন, নাম কি তোমার মা?

  • ফিয়োনা।
  • বাহ। খুব মিষ্টি নাম। তুমি দেখতেও অনেক মিষ্টি রে মা।
  • থ্যাংকস আন্টি। আমি চলে যাবো আজকে
  • এত তাড়া কেন? বাসায় কি হাজব্যান্ড আর বাচ্চা অপেক্ষা করছে?
  • হা হা। হাসালেন আন্টি।
  • হ্যাঁ। বসো, নাস্তা নিয়ে আসি।

আন্টি নাস্তা আনতে গেলেন। ফিয়োনা বারবার বারণ করা সত্ত্বেও শুনলেন না উনি। নাস্তা নিয়ে এসে পাশে বসলেন। ফিয়না নাস্তা খেতে খেতে বলল, আন্টি আপনি আমাদের বাসায় আসবেন একদিন। আজকে আমি যাই।

  • এত তাড়া কেন? তুমি আর নীলাভ একসাথে পড়ো বুঝি?

ফিয়োনা নীলাভের দিকে তাকালো। নীলাভ বলল, না মা। ও আমার অনেক জুনিয়র। এমনিতেই ছোট বোন হিসেবে চিনি। আমাকে পড়ে যেতে দেখে ধরে হসপিটালে নিয়ে গেলো, ওষুধ নিয়ে দিলো।

  • অনেক লক্ষী একটা মেয়ে। আজকালকার মেয়েরা তো যা বদরাগী আর জেদী রে বাবা। অন্যের বিপদে এগিয়ে আসা তো দূরের কথা, ফিরেও তাকায় না।
    বদরাগী কথাটা বলার সময় ফিয়োনা নীলাভের দিকে তাকালো। লজ্জা পেলো ভীষণ। আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আজকের মত বাসায় চললো ফিয়োনা।

ফিয়োনা চলে যাওয়ার পরও অনেকটা সময় নীলাভের মনে ফিয়োনা নিয়েই ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছিল। মেয়েটাকে যতটা রাগী, অহংকারী মনে হয়েছিল একেবারেই সেরকম নয়। মেয়েটা অনেক লক্ষী আর সুন্দর।
আচরণেও মাধুর্যতা আছে বেশ।

ফিয়োনা বাসায় ফিরতে ফিরতে নীলাভের কথা ভাবছিল আনমনে। ছেলেটা তো খারাপ না, শুরুর দিকে যেরকম জ্বালাতন করছিল আজকে মোটেও সেরকম মনে হলো না।
বাসায় ফিরে দেখলো নীলাভ মেসেজ পাঠিয়েছে, বাসায় পৌঁছেছো?

  • হ্যাঁ। আপনি কেমন ফিল করছেন এখন?
  • খুব রোমান্টিক। তুমিও?
  • ছিহ। রোমান্টিক ফিল করবো কেন? আপনি লোকটা আসলেই খারাপ। ভেবেছিলাম অনেক ভালো কিন্তু আমার ধারণা ভূল।
  • হা হা হা। সামান্য দু একটা কথা দিয়ে মানুষকে মাপা যায় না। সামান্য একটা আচরণ দিয়ে মানুষকে বিচার করাও ঠিক না।
  • আপনাকে ভালো ভাবাটাই আমার বিবেচনার ভূল। আপনি অনেক বদমাশ একটা লোক।
  • হা হা হা। বদমাস? বেশ ভালো বলেছো। ওকে ফাইন, আর ডিস্টার্ব না করি। বাই…

নীলাভ মেসেজ পাঠানো বন্ধ করে দিলো। কিন্তু এখন ফিয়োনার মোটেও ভালো লাগছে না। বারবার মনে হচ্ছে অযথা লোকটাকে ভূল বুঝলাম। লোকটা তো এমন খারাপ নয়। হয়তো একটু দুষ্টু, এটুকুর জন্য কাউকে খারাপ ভাবাটাও ঠিক নয়। নিজের মাঝে একটা অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো ফিয়োনার।
রাতে আর থাকতে না পেরে নক করেই বসলো, কি অবস্থা এখন?

  • কিসের?
  • কিসের আবার? পায়ের কি অবস্থা?
  • ভালো। আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। একজন ভালো মানুষের ছোঁয়া পেয়েছি না আজকে?
  • ধুর। আপনার সারাক্ষণ শুধু ফাজলামি। যান তো।
  • কই যাবো? এসেছিলাম নাকি?
  • আবার? আপনি না আসলেই অনেক দুষ্টু।
  • একটু দুষ্টু না হলে মেয়েরা পছন্দ করে না।
  • এরকম হলে এমনিতেও মেয়েরা পছন্দ করবে না।
  • এমা তাই! তাহলে তো আর এরকম করা যাবে না। তাহলে কি পছন্দ করবে?
  • করতেও পারে। আমি অন্তত করবো না।
  • কেন? তুমি কি ছ্যাকাখোর নাকি ডিভোর্সি?
  • মানে কি?
  • না মানে এরা সাধারণত অন্যদেরকে সহ্য করতে পারে না৷
  • ধুর। আর মেসেজই দিবো না।
  • আচ্ছা বাবা সরি।
    ফিয়োনা আর মেসেজ রিপ্লাই দিলো না। রাতে নীলাভ আরো মেসেজ পাঠালো। কিন্তু ফিয়োনা রিপ্লাই দিলো না।

পরপর দুদিন কেটে গেলো। নীলাভ একাধারে অনেকগুলো মেসেজ পাঠিয়েছে৷ এখনো পাঠিয়েই যাচ্ছে।
ফিয়োনা অবশেষে বলল- কি সমস্যা আপনার?

  • আমার তো কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা তো তোমার।
  • কি?
  • কথা বলছো না যে?
  • আমার ছেলেদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না।
  • আমাকে কি খারাপ মনে হয়েছিল?
  • হ্যাঁ ।

অনেক্ষণ নীলাভের কোনো রিপ্লাই নেই। ফিয়োনা লিখল- না।
নীলাভ সাথে সাথেই লিখল- ফ্রেন্ডস?

  • মানে?
  • ক্যান উই বি ফ্রেন্ডস?

ফিয়োনা কি বলবে বুঝতে পারলো না। দীর্ঘদিন যাবত ছেলেদের সাথে কথা বলে না ও। এক বছর হয়ে গেলো কোনো ছেলের সাথেই কথা বলে নি। এখন আবার নতুন করে কারো সাথে বন্ধুত্ব করাটা কি ঠিক হবে?
মেসেজের কোনো রিপ্লাই না দিয়ে অফলাইনে চলে গেলো ফিয়োনা। ভাবতে লাগলো আনমনে কোনটা ভালো হবে, কোনটা খারাপ হবে।

পরদিন ভার্সিটিতে এসে ফিয়োনা রোদে দাড়িয়ে বান্ধবী র জন্য অপেক্ষা করছিল। এমন সময় কে যেন মাথার উপর ছাতা নিয়ে এসে দাড়াল। ফিয়োনা পিছন ফিরে দেখল নীলাভ।
ও অবাক হয়ে বলল- আপনি!

  • ফ্রেন্ড তো ফ্রেন্ড এর জন্যই তাই না?
  • আমি আপনার ফ্রেন্ড হলাম কবে? যান এখানে থেকে।
  • আচ্ছা যাচ্ছি।

ছাতাটা নিচে রেখে নীলাভ হনহন করে চলে গেলো।
এরপর ক্লাসে বসে আছে ফিয়োনা। হঠাৎ নীলাভ ক্লাসে এসে লেকচার দেয়া শুরু করলো। এক পর্যায়ে লেকচার থামিয়ে বলল, কেমন লাগলো তোমাদের?
সবাই তো নীলাভের লেকচারে মুগ্ধ ।নীলাভ বলল- এখন যদি আমি তোমাদের ফ্রেন্ড হতে চাই কে কে হবে?

ফিয়োনার বান্ধবীরা সবাই ছেলেটাকে চেনে। সবাই একসাথে দাড়িয়ে পড়লো আর বলল- আমি হবো আমি।
ফিয়োনা রাগে জ্বলে যাচ্ছিলো শুধু। ক্লাস শেষে তোরসা বলল, দোস্ত ছেলেটা তো তোর বয়ফ্রেন্ড হতে চায়নি। জাস্ট ফ্রেন্ড ই তো হতে চেয়েছে তাই না? ফ্রেন্ড হতে দোষ কোথায়?

  • তোর বেশি দরদ থাকলে তুই হ গিয়ে।

ফিয়োনা যখন বাইরে বসে আড্ডা দেয়, একটা ছোট ছেলে এসে সবাইকে কয়েক প্লেট ফুচকা দিয়ে যায়। বলে, নীলাভ ভাইয়া পাঠিয়েছে। ফিয়োনা ছাড়া বাকিরা সবাই ফুচকা খায় আর আনন্দ উল্লাস করে৷ এভাবেই চলছিলো সবকিছু।
বাসায় ফিরে ফিয়োনা নীলাভকে মেসেজ পাঠিয়ে অনেক রাগারাগি করলো। রাগের সাথে সাথে প্রচুর গালাগালি ও। নীলাভ কোনো রিপ্লাই দিলো না।

পরদিন ফিয়োনা ক্লাসে ঢোকার আগ মুহুর্তে দেখলো দেয়ালে লেখা- Sorry.
ফিয়োনা সামনে তাকিয়ে দেখে নীলাভ কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হাসি পেয়ে গেলো ফিয়োনার। ফিক করে হেসে ফেললো ও। নীলাভ ছুটে এসে বলল- ফ্রেন্ডস?
ফিয়োনা হাসতে হাসতে বললো- ফ্রেন্ডস।

বন্ধুত্বটা এখান থেকেই শুরু। তারপর ফিয়োনা আস্তে আস্তে জানতে পারে ছেলেটা যতটা না দুষ্টু, তারচেয়েও বেশি ভালো মনের। সবাইকে হেল্প করতে ভালোবাসে, সবার চেয়ে সবসময় একটু বেশি হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত। সবসময় উচ্ছল। ফিয়োনাকেও সারাক্ষণ হাসিখুশি রাখতে চেষ্টা করে।
প্রতিদিন ভার্সিটিতে আসার সময় কয়েকটা চকলেট নিয়ে আসবে ফিয়োনার জন্য। ফিয়োনা তো চকলেট পেয়ে মহা খুশি। ক্লাস শেষে বান্ধবীরা সহ সবাইকে ফুচকা খাওয়ায় নীলাভ। বান্ধবীরাও খুশি। সবার সাথে হাসাহাসি, আড্ডা, দুষ্টুমি সবমিলিয়ে খুব ভালোই চলছিলো দিন।

পর্ব ১৮

ফিয়োনা ও নীলাভের মধ্যে এখন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। নীলাভের দুষ্টুমি, সবসময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করা, সবকিছুতে পাশে থাকা, সারাক্ষণ আগলে রাখা সবকিছুই ফিয়োনার কাছে স্বপ্নের মত লাগে।
আজ ওদের একসাথে সিনেমা দেখার কথা। ফিয়োনার বান্ধবী রাও যাবে সিনেমা দেখতে। ক্লাস শেষ করেই ওরা সিনেমা দেখতে চলে এলো।

নীলাভের পাশেই বসেছে ফিয়োনা। এক ফাঁকে নীলাভ উঠে গিয়ে অনেকগুলো চিপসের প্যাকেট নিয়ে এলো। চিপস খুলে ফিয়োনার মুখে একটা একটা করে তুলে দিচ্ছিলো নীলাভ। ফীয়োনা মুগ্ধ হয় ছেলেটাকে দেখে। সিনেমা দেখতে এসেও কত যত্ন করে তুলে খাওয়াচ্ছে যেন ফিয়োনার এতটুকু কষ্ট না হয়। এ রকম একটা বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

ফিয়োনা চিপস খেতে খেতে আনমনা হয়ে গেছে। সিনেমা দেখার প্রতি একেবারে মনোযোগ নেই। ও বেশ বুঝতে পারছে ধীরেধীরে নীলাভের প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। হয়তো এটা ভালোবাসা না, কিন্তু ভালোলাগা তো নিশ্চয়। কি যে করবে ফিয়োনা ভেবে পায় না।
এতদিনে দুজনের মধ্যে একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। হয়তো এটা বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু।

ফিয়োনা জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা নীলাভ। তুমি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেছো?

  • হ্যাঁ। এইযে তোমাকে ভালোবাসি।
  • উফফ তোমার সবকিছুতেই শুধু ফান। ফান রেখে মাঝেমাঝে তো সিরিয়াস হতেও পারো।
  • আমি সিরিয়াস ম্যাম। আমি আপনাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতে পারি না। কাউকেই না।
  • ধেৎ শুধু ফাজলামি।
  • তোমার কি মনে হয় না, আমি তোমাকে ভালোবাসি?

ফিয়োনার শরীরে একটা অন্যরকম শিহরণ বয়ে গেলো। ও অবাক হয়ে বলল, সত্যি! আমাকে ছুঁয়ে বলো।
হাত বাড়িয়ে দিলো ফিয়োনা। নীলাভ ওর হাতটা আলতো করে ধরলো। সমস্ত শরীর ঝনঝন করে ওঠার মত একটা অন্যরকম অনুভূতি ছেয়ে গেলো ফিয়োনার শরীরে৷ ফিয়োনা চোখ বন্ধ করে ফেললো। মুহুর্তেই হাত সরিয়ে নিলো নীলাভের হাত থেকে।

সিনেমা বাকিটা আর একটুও উপভোগ করতে পারে নি ফিয়োনা। বারবার শুধু নীলাভের স্পর্শকেই মিস করছিলো। কেমন যেন একটা সুখকর অনুভূতি। বন্ধুত্ব থেকে কি তবে প্রেমটা হয়েই যাবে?
নীলাভ সিনেমা শেষে ফিয়োনাকে বিদায় দেয়ার সময় বলল, এই যে মিস। কালকে কিন্তু আপনাকে আমাদের বাসায় যেতেই হবে।

  • কেন?
  • আমার বার্থডে মিস। শুধু পারিবারিক ভাবে সেলিব্রেট করবো। কিন্তু আপনাকে থাকতেই হবে।
  • তোমার বার্থডে আর তুমি আজকে বলছো?
  • তো? বলেছি তো তাই না? অবশ্যই কাল আমার সাথে যেতে হবে। মা তোমার জন্য পায়েস রান্না করবে।
  • আমার জন্য নাকি তোমার জন্য হুম?
  • দুজনের জন্যই। এসো কিন্তু ওকে?
    ফিয়োনা বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবছিল নীলাভকে কি উপহার দেয়া যায়। নীলাভের জন্য একটা স্পেশাল কিছু নিতেই হবে। নয়তো বন্ধুদের কাছে ছোট হয়ে যাবে ফিয়োনা।
    এদিকে নীলাভ ভাবছে, ফিয়োনাকে ভালোবাসার কথাটা কালকেই জানিয়ে দিবে। কালই প্রপোজ করবে ওকে। কতদিন আর ভালোবাসাকে চেপে রাখবে এভাবে। আর যে পারছে না।

পরদিন
ফিয়োনা একটা নীল রংয়ের শাড়ি পড়েছে। হাতে নীল রংয়ের কাঁচের চুড়ি। নীল পড়ার কারণ নীলাভ। নীলাভের নামের সাথে মিল রেখে নীল শাড়ি। নীলাভ আজকে দেখে নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবে। নীলাভের খুশির কথা ভাবতে ভাবতে নিজেও খুশিমনে সাজগোছ করছিল ফিয়োনা৷ সাজগোজ শেষ করে দেখল নীলাভ মেসেজ পাঠিয়েছে- Hi cuty kothay tumi?
মুচকি হাসি ফুটে উঠলো ফিয়োনার মুখে। হেসে শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করে রিপ্লাই দিলো, আমি বেরোচ্ছি রাজকুমার।

  • তারাতারি আসুন না প্লিজ। আপনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে তো পাগল হয়ে যাচ্ছি।
  • আহারে!

ফিয়োনা মুচকি হাসছে। কপালে একটা নীল রংয়ের টিপ দিয়ে দ্রুত রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লো ফিয়োনা। বেরোবার সময় নিজেকে একবার ভালো করে আয়নায় দেখে নিলো সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। তারপর ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রওনা দিলো।

নীলাভ বাসার বেলকুনিতেই অপেক্ষা করছিল। বাড়ির গেট ঠেলে ফিয়োনাকে ঢুকতে দেখে হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো নীলাভের। ফিয়োনাকে আজ পরির মত সুন্দর লাগছে। দ্রুত ছুটে নিচে নেমে এলো নীলাভ।
ফিয়নাকে নিজেই এসে গেট খুলে দিলো৷ তারপর হা করে চেয়ে রইলো অনেক্ষণ। নীলাভের মুখে কোনো কথা ফুটছে না। একটা মেয়ে কিভাবে এত মিষ্টি হতে পারে ধারণাই নেই ওর৷ আজকে ফিয়োনাকে দেখে আর চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। নীলাভ বারবার শিহরিত হচ্ছে। ফিয়োনাকে বুকে চেপে ধরতে না পারলে ওর শান্তি হচ্ছে না।
ফিয়োনাকে দেখে বলল- আসুন ম্যাম।

ফিয়োনা মুচকি হেসে বলল- আমার জন্য বুঝি দরজার কাছে বসে ছিলে?

  • জ্বি। আপনি আসবেন বলে সেই কখন থেকে অপেক্ষার প্রহর গুণছি।
  • ইস তাই বুঝি? আন্টি কোথায়?
  • মা রান্নাঘরে। আপনার জন্য রান্না করছেন পরম যত্নে। আসুন..

নীলাভ ফিয়োনাকে নিয়ে রান্নাঘরে আসলো। ফিয়োনা আন্টিকে সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন আন্টি?
আন্টি অবাক হয়ে বললেন, ও মা গো! ফিয়োনাকে কি অপরূপ লাগছে গো। আমার লক্ষী মা কে আজকে এত অপূর্ব লাগছে কেন গো?

  • কি যে বলেন আন্টি।
  • ইস রে। মা একেবারে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। আজ তো একেবারে নীল পরি সেজে এসেছো আমার লক্ষী মা।

আন্টির এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ কথায় ফিয়োনার মনে হচ্ছিল নিজের মায়ের সাথে কথা বলছে। ও আন্টিকে জাপটে ধরে বলল, আপনি খুব ভালো আন্টি।

  • তুমিও খুব ভালো আমার লক্ষী মা।
    নীলাভ মনেমনে ভীষণ খুশি। বউ শাশুড়ী তে ভালো মিল হয়ে গেছে দেখছি। ও শুধু হাসছে আর ভাবছে, দুজনে মিলে খুব ভালো থাকতে পারবে।
    আন্টি বললেন, তুমি ভেতরে গিয়ে বসো মা। আমি খাবার দাবারের ব্যবস্থা করি।
  • না না লাগবে না। এমনিতে তুমি মেহমান ,তার উপর এসেছো শাড়ি পড়ে। তুমি ভেতরে গিয়ে বসো যাও।

ফিয়োনা নীলাভের সাথে ওর রুমে আসলো। নীলাভের রুম দেখে মুগ্ধ হয়ে ফিয়োনা বলল- বাহ! খুব সুন্দর তো তোমার রুমটা।

  • এটা ভাইয়ার রুম। আমার রুম পাশের টা। যদিও বেশিরভাগ সময় এখানেই কাটাই। তুমি বসো, আমি একটু আসছি।
    নীলাভ বাইরে বেরিয়ে কোথায় যেন গেলো। ফিয়োনা বসে বসে ঘরের সাজসজ্জা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলো। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সৌন্দর্য অবলোকন করছিলো ফিয়োনা। এমন সময় দরজা ঠেলে এমন একজন প্রবেশ করলো যাকে দেখামাত্রই ফিয়োনা চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।
    ফাহমি!

দুজনাতে চোখাচোখি হয়ে দুজনেই স্তব্ধ। কারো চোখের পলক অব্দি পড়ছে না। এক বছরে ফাহমির চেহারায় খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। আগের মতই আছে। চুল, হেয়ার স্টাইল, ফ্যাশন সবই আগের মতই আছে। যেন এক বছর আগের ফাহমিকেই দেখছে ফিয়োনা।

কিন্তু ফাহমি যেন একটা অন্য ফিয়োনাকে আবিষ্কার করছে আজ৷ এই ফিয়োনাকে সে দেখেছিল খুব ছোটবেলায়। যখন ভরা কৈশোর পেরিয়ে সদ্য যৌবনে পা দিচ্ছিল মেয়েট। আচরণে ছিল উচ্ছলতা, ফুটফুটে একটা কিশোরি। চলাফেরা সবকিছুতেই একটা চাঞ্চল্যকর ভাব ছিলো। চোখমুখ ছিল ভাবলেশহীন। সাজগোজের ব্যাপারে যার ছিল ভীষণ রকম উদাসীন্যতা। সেই মেয়েটা যেন এক বছরে অনেক বেশি বড় হয়ে গেছে। রূপ সৌন্দর্য আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি বেড়েছে। দেখতে হয়েছে নজরকাড়া, যেকোনো ছেলের ক্রাশ খাওয়ার মত। যেকেউ এই মেয়েকে প্রথম দেখেই একটা ধাক্কা খাবে। চোখ দুটো অপূর্ব, কাজলকালো তেমনি টানা টানা। ভ্রু দুটো তলোয়ারের মতন। আর ঠোঁট গুলো যেন কমলেবুর কোয়া।

এত কোমল আর লাবণ্যময়ী হয়েছে দেখতে। দেখার পর যে কারো মাথা ঘুরে যাবে। ফাহমি অনেক্ষণ স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইলো। চোখের পলক ফেলতে পারছিলো না।
ফিয়োনা প্রথম দেখাতেই বুঝে গেছে এটা নিঃসন্দেহে নীলাভের বড় ভাই। কি সর্বনাশা একটা ব্যাপার! কিন্তু এতদিন পর ফাহমিকে দেখে তো রাগ হওয়ার কথা। দীর্ঘদিন পর ফাহমিকে দেখে রাগে ফুঁসে ওঠার কথা ছিল ফিয়োনার। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় ফিয়োনার মোটেও রাগ হচ্ছে না। বরং খুব মুড নিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে এই ভেবে যে, আমার কাছে এখন তোমার কোনো পাত্তা নেই। তোমার মত হাজারটা ছেলে আমার পিছনে ঘোরে।

সেরকম ভাব নিয়েই অন্যদিকে মুখ ঘোরালো ফিয়োনা। নীলাভ রুমে প্রবেশ করে বলল, আরে ভাইয়া যে। কখন এলে? এ হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ফিয়োনা। ফিয়োনা, ও আমার বড় ভাই ফাহমি।
ফাহমি ফিয়োনার দিকে এখনো চেয়ে আছে। আর ফিয়োনা ফাহমির দিকে তাকিয়ে সৌজন্যসূচক হাসি দিলো। আজ প্রতিশোধের দিন এসেছে। ফাহমি যেভাবে দিনের পর দিন এভোয়েড করে ফিয়োনাকে কষ্ট দিয়েছে, আজ সমস্ত কষ্টের শোধ তুলবে ফিয়োনা।
ফিয়োনা ফাহমির সামনেই গিয়ে নীলাভের গা ঘেষে দাঁড়িয়ে বলল, বাহ, তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে। এই পারফিউম টা নতুন নিয়েছো?

  • উহুম। ভাইয়ার।
  • বাহ, তোমার ভাইয়ার পছন্দ অনেক ভালো। বেশ রুচিশীল উনি।
    ফাহমি জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিল। ফিয়োনার কথা মনেই ছিল না ফাহমির। কিন্তু এতদিন পর এই পূর্ণ যৌবনা সুন্দরীকে দেখার পর মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে ফাহমির। এত সুন্দর কেন ফিয়োনা! এত সুইট কবে হলো ও? আর কি ভয়ংকর সুন্দর চোখ। এই চোখের দিকে তাকিয়েই একটা জীবন পার করে দেয়া যাবে।
    ফিয়োনা বলল, ভাইয়া কি কম কথা বলেন?

ফাহমি হাসার চেষ্টা করে বলল, না। ভালো আছেন আপনি?

  • আমি বয়সে আপনার অনেক ছোট ভাইয়া। আমাকে প্লিজ তুমি করে বলবেন। এই নীলাভ, আন্টি কি রান্না করছে? এত সুন্দর সেন্ট। আমি রান্নাঘরে যাবো।
    নীলাভ ফিয়োনাকে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো। রান্নাঘরে যাওয়ার সময় ফিয়োনা বারবার নীলাভের হাত ধরছিল। ব্যাপারটা দেখে জ্বলে যাচ্ছিল ফাহমি।

রান্নাঘর থেকে ফিয়োনার হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এই এক বছরে ফিয়োনা ভীষণ স্টাইলিশ হয়ে গেছে। ফ্যাশনেবল আর স্মার্ট ও। ওকে দেখেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠছে ফাহমির।
কেক কাটার সময় ফিয়োনার উচ্ছলতা, হাসাহাসি, কেক নীলাভকে তুলে খাওয়ানো, আবার নীলাভের মুখ থেকে তুলে খাওয়া সবমিলিয়ে একটা অন্যরকম মুহুর্ত কাটছিল নীলাভের জীবনে। কিন্তু ফাহমি এসব দেখে যন্ত্রণার কাতরে ভুগছিল। পার্টি রেখে রুমের ভেতর চলে যেতেও পারে না।

এরপর খাবার টেবিলে বসে নীলাভ ফিয়োনার সোজাসুজি বসলো। খাবার খেতে টেবিলের নিচ দিয়ে ফিয়োনা পা তুলে দিলো ফাহমির পায়ের উপর। কিন্তু নীলাভের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে হাসছিল যেন সে নীলাভের পায়ের উপর পা রেখেছে। ইচ্ছেকৃত ভাবে এমন করে ফাহমিকে জ্বালাচ্ছিল ফিয়োনা।
ফাহমি মনেমনে ভাবল নীলাভের পায়ের উপর পা তুলে দিতে গিয়ে ভুলে আমার পায়ের উপর তুলে দিয়েছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ক্ষুদ্ধ্ব হয়ে উঠলো। কিছুতেই এসব সহ্য হচ্ছে না ওর।

ফিয়োনা নীলাভের দিকে তাকিয়েই হাসছে। একটা মেয়ে এত দ্রুত পুরোটাই চেঞ্জ হয়ে গেছে ভাবতে লাগলো ফাহমি। কিন্তু ফিয়োনার পায়ের স্পর্শ পেয়ে জ্বলে উঠলো ভেতরটা। এই স্পর্শ তো তারই পাওয়ার কথা। তবে! এমন কোমল স্পর্শ কিছুতেই ছেড়ে দেয়া যায় না।
খাবার শেষ করে ফিয়োনা নীলাভকে নিয়ে ওর রুমে গিয়ে জোরে জোরে হাসছিল আর আড্ডা দিচ্ছিল। এদিকে নিজের রুমে বসে ফাহমি জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছিল এই ভেবে যে, ওরা রুমে কি যে করছে!
আর ভাবতে পারছে না ফাহমি। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ওর। এত যন্ত্রণা আজ কেন হচ্ছে? উফফ অসহ্য!

পর্ব ১৯

নীলাভ ও ফিয়োনা কাছাকাছি বসে আছে। ফিয়োনা বসে আছে জানালার কাছে। জানালা দিয়ে এক চিলতে রৌদ্রজ্বল আলো এসে পড়েছে ফিয়োনার গালে। গালের উপর আলো লেগে চিকচিক করছে। ফিয়োনাকে আজ অপূর্ব সুন্দর লাগছে। রূপ যৌবন দুটোই যেন আজ প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। যতই দেখছে ততই খেই হারিয়ে ফেলছে নীলাভ। মেয়েটাকে বুকে না জড়িয়ে ধরা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না।
ফিয়োনা হাসিহাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে। নীলাভ উঠে গিয়ে ফিয়োনার সামনে বসলো। আচমকা বলল, ফিয়ো, তোমার হাতটা কি আমি একটু ধরতে পারি?
চমকালো ফিয়োনা। কিন্তু কিছু বললো না। ফাহমি ওর হাত ধরতে চেয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বসে আছে। ফিয়োনা কি করবে বুঝতে না পেরে বলল, আমাকে বাসায় যেতে হবে।

  • এখনই কেন? আরো কিছুক্ষণ থাকো।
  • না নীল। বাসায় অনেকদিন আম্মুর বকা খাইনি। আজকে আবার দেরি করে যাওয়ার কারণে সন্দেহ করতে পারে।
  • সন্দেহ কেন করবে? একটা দিন দেরি করে যেতেই পারো। তাছাড়া আমার জন্য নাহয় একদিন দেরি করলেই।
  • কি যে বলো। দেরি করলে আব্বু রেগে যায়। আজ তারাতাড়ি আমাকে রেখে এসো প্লিজ।

নীলাভ প্রতিদিন ফিয়োনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে। কিন্তু আজ এত তাড়া কেন দিচ্ছে বুঝতে পারছে না নীলাভ। এদিকে ফিয়োনার বেশিক্ষণ বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না। যে বাড়িতে ফাহমি আছে, সেখানে এভাবে নির্দ্বিধায় বসে থাকা যায় না।
নীলাভ বললো, ঠিক আছে আর দু চার মিনিট বসো।

  • আচ্ছা।
  • এবার তো হাতটা একবার ধরি?
  • হঠাৎ হাত ধরতে চাইছো কেন নীল?
  • হাত তো মানুষ হঠাৎ ই ধরতে চায়। নাকি এক মাস আগে থেকে হাত ধরার জন্য টিকেট কেটে রাখা দরকার ছিলো?
  • না মানে তুমি তো কখনো এরকম চাও নি তাই..

নীলাভ ফিয়োনাকে কিছু বোঝার সময় দিলো না। ওর সামনে হাঁটুগেরে বসে একটা হাত বা হাত দিয়ে কোমল ভাবে ধরলো। তারপর ডান হাতে পকেট থেকে একটা লাল গোলাপ বের করে এগিয়ে দিলো ফিয়োনার দিকে। ফিয়োনার শরীর কেঁপে উঠলো। এমন লাগছে কেন কে জানে।
নীলাভ গোলাপটি এগিয়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো- তুমি কি জানো আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই?

  • কিছু বলতে চাও? তুমি তো সারাক্ষণ কথা বলো৷ আজ আবার কি বলতে চাও?
  • অনেক কিছুই। সারাক্ষণ হয়তো অনেক কথাই বলি। কিন্তু এ কথা কখনো হয়নি বলা।
  • কি বলতে চাইছো বলবে? ক্লিয়ারলি বলো। মনে কোনো দ্বিধা রাখবে না।
  • ওকে রাখবো না। তুমি কি কিছুই বোঝো না ফিয়োনা?

ফিয়োনা অবাক হওয়ার ভান করে বললো, মানে? কি বুঝি না?

  • আমার তো মনেহয় কিছুই বোঝো না। কিংবা বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকো।
  • নীল, কিছু বলতে চাইলে বলো। এত ভণিতা করছো কেন?

নীলাভ হাঁটুগেরে বসে ফুলটা রোমান্টিক স্টাইলে এগিয়ে দিয়ে বললো, ফিয়োনা আই লাভ ইউ। আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি। তুমি কি আমার হবে?
ফিয়োনা চমকালো। বিস্ময়ে অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো নীলাভের দিকে। কি বলছে নীল এসব? ফিয়োনা মনেমনে চেয়েছিলো নীলাভ ওকে প্রপোজ করুক। কিন্তু আজ সত্যি সত্যি প্রপোজ করাতে আর ভালো লাগছে না কিছু। সবকিছু মিথ্যে মনে হচ্ছে। তাছাড়া ফিয়োনা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। যে বাড়িতে ফাহমি আছে, সে বাড়ির বউ কিছুতেই হতে পারবে না সে। কিন্তু ভালোবেসে আর কষ্টও পেতে চায় না। কাজেই সম্পর্ক টাকে আর আগাতে দেয়া উচিৎ হবে না।

নীলাভের হাত থেকে ফুলটা নিতেও ভুলে গেছে ফিয়োনা। নীলাভ ফুলটা ফিয়োনার কোলের উপর দিয়ে দুহাতে ফিয়োনার হাত ধরলো। হাত ধরে ফিয়োনাকে কাছে টেনে নিচ্ছিলো এমন সময় রুমের দরজা খুলে গেলে ভেতরে প্রবেশ করলো ফাহমি।
ফাহমি এমন কিছুই কল্পনা করেছিলো। ও জানতো ফিয়োনা নীলাভের সাথে কিছু করছে। সামনা সামনি এমন দৃশ্য দেখার পর নিজেকে সামলাতে পারলো না ফাহমি। কিন্তু ছোট ভাইকে কিছু বলতেও পারলো না। ফিয়োনার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো।

ফিয়োনা ফাহমির চোখের ভাষা বুঝতে পারলো না। কিন্তু এতটুকু বুঝলো যে ফাহমি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। ফাহমির কাছে নিজেকে খারাপ মনে হতে লাগলো ফিয়োনার। ভাবতে লাগলো ফাহমি হয়তো ওকে খারাপ ভাবছে। কিংবা জেনেশুনে ফিয়োনা এরকম করছে এটা ভাবছে। ভাবনাটা হতেই ফিয়োনার বুকে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। টেনশন হতে লাগলো। ও নীলাভের হাত ছাড়িয়ে নিলো।
ফাহমি ফিয়োনার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় বলে গেলো, সরি প্রাইভেসিতে ঢুকে যাওয়ার জন্য।

ফিয়োনার খারাপ লাগছে। ওরা তো কোনো প্রাইভেসিতে ছিলো না। এমন বোধ হচ্ছে যে মিইয়ে যাচ্ছে ফিয়োনা। উফফ আর ভালো লাগছে না কিছু। ফিয়োনা অপ্রস্তুত বোধ করছে। নীলাভ বুঝতে পেরে বলল, ডোন্ট ওরি ফিয়োনা। ফাহমি ভাইয়া আর আমি অনেক ক্লোজ। ভাইয়া কিছু মনে করবে না।
কিন্তু ফিয়োনার মনে যা চলছে সেটা বোঝার সাধ্য তো নীলাভের নেই। ফিয়োনা তারাতাড়ি বলল, আমি বাসায় যাবো নীল। তোমাকে যেতে হবে না, আমি একাই চলে যেতে পারবো।

নীলাভ কিছু বুঝতে পারলো না। ফিয়োনা আর এক মুহুর্ত ও দাঁড়ালো না। দ্রুত বেরিয়ে গিয়ে আন্টিকে বলল, আজ আসছি আন্টি।
তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। ফাহমির দৃষ্টি বারবার চোখে ভাসছে ওর। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। অথচ অপরাধী তো ফাহমি। কিন্তু সেটা একবারও মনে হচ্ছে না। তাহলে কি এখনো মনে ফাহমির জন্য ভালোবাসা রয়ে গেছে?ফিয়োনা বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ ওপাশ করছে। কিছুতেই ঘুম আসছে না। আজকের দিনটা চরম বাজে একটা দিন ছিলো। মনে খুব অশান্তি বিরাজ করছে।

এদিকে নীলাভ দুপুর থেকেই বারবার ফোন দিয়ে চলেছে। এখন রাত বারোটা৷ এখনো ফিয়োনা কল রিসিভ করেনি। টেনশনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে নীলাভের। নিশ্চয় ফিয়োনা ভুল বুঝেছে। বন্ধুত্বের বিশ্বাস ভাঙার মত ফ্রড ভাবছে নীলাভ কে। যেকোনো কারণেই হোক ফিয়োনা যে নীলাভ কে এড়িয়ে যাচ্ছে এটা বুঝে গেছে নীলাভ। ফিয়োনাকে হারানোর ব্যথায় জরাজীর্ণ হয়ে যাচ্ছে ও। এমন কষ্ট হচ্ছে যে ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যায় ফিয়োনার কাছে। গিয়ে ওর মাথাটা বুকে চেপে ধরতে। তাহলে হয়তো শান্তি লাগবে নীলাভের।

ফিয়োনা অনেক রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারলো না। সারা রাত পুরনো স্মৃতি গুলো মনে তাড়া করে বেড়াতে লাগলো।
ফাহমি ফিয়োনার সদ্য যৌবনা চেহারাটাকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। এখনো ফিয়োনার প্রতি কোন টান সেটা জানেনা ফাহমি। কিন্তু ফিয়োনাকে নীলাভের কাছাকাছি দেখার পর থেকে আর সহ্য হচ্ছে না ফাহমির। নিজেকে অসহ্য লাগছে। নীলাভকেও অসহ্য লাগছে। উফফ এভাবে কি পারা যায়?

পরপর দুটো দিন কেটে গেলো। দুদিন ই চরম অস্থিরতায় কাটলো তিন জনের সময়। ফাহমি বারবার ফিয়োনাকে ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছিল। নীলাভ ফিয়োনাকে হাজারবার ফোন করে ফোনে না পেয়ে পাগল হওয়ার মত অবস্থা। আর ফিয়োনা শুধুই ভাবছে, নীলাভের সাথে এত সুন্দর বন্ধুত্ব টা শেষ হয়ে গেলো। কত ভালো সম্পর্ক ছিল দুজনের। কিন্তু নীলাভ যে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিয়েছে। অথচ ওই বাড়িতে বউ হয়ে যেতে পারবে না ফিয়োনা।

তিনজনের সময়গুলো চরম বিষাদ আর অস্থিরতায় কাটলো। দুদিন পর ফিয়োনা ভার্সিটিতে এসেছে। নীলাভ ফিয়োনাকে দেখা মাত্রই এসে পাকড়াও করলো। ফিয়োনার পথ আটকে বলল, তুমি কি আমাকে ভুল বুঝছো? প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না। প্লিজ?

  • সরে দাড়াও। প্লিজ নীল আমার সামনে আর এসো না।
  • কিন্তু কেন? ভালোবাসাটা কি অপরাধ?
  • আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না।
  • আমার কিসের কমতি আছে বলো? আমরা দুজন দুজনকে বুঝি, আমরা অনেক ভালো থাকবো।
  • প্লিজ। তুমি জানো আমি ছেলেদেরকে সহ্য করতে পারছি না। এরপর আরো পারছি না। প্লিজ..
    ফিয়োনা নীলাভকে সরিয়ে দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেলো। নীলাভ ফিয়োনার পিছুপিছু ছুটলো কিন্তু ফিয়োনাকে ধরতে পারলো না। অবশেষে রিক্সা নিয়ে ফিয়োনার রিক্সাকে ফলো করতে করতে এসে ফিয়োনাকে আটকালো নীলাভ।
    ফিয়োনা বলল, রিক্সা আটকালে কেন?

নীলাভ রিক্সা থেকে নেমে এসে ফিয়োনার হাত দুটো ধরে বলল, প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই না। শুধু বন্ধু হয়ে থাকি আমরা? বন্ধু হয়ে থাকতে তো তোমার কোনো আপত্তি নেই তাই না? তবুও এত সুন্দর সম্পর্ক টাকে নষ্ট করে দিওনা প্লিজ।
ফিয়োনা কি বলবে বুঝতে পারলো না। ওর চোখে পানি এসে গেছে। দূর থেকে এই দৃশ্য দেখলো ফাহমি। ফাহমি রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিল। হঠাৎ ওর চোখে পড়লো নীলাভ ফিয়োনার হাত ধরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। কি কথা বলছে বোঝা গেলো না। কিন্তু কথা বলছে এটাই মেনে নিতে পারলো না ফাহমি। উফফ, এমন অসহ্য লাগছে কেন?

ফিয়োনা বলল, আচ্ছা ঠিকাছে। ফোনে কথা হবে। এখন আমাকে যেতে দাও।
নীলাভ সরে দাঁড়ানোর আগেই রিক্সা চলতে শুরু করল। বাধ্য হয়ে সরে দাঁড়ালো নীলাভ। কাছের মানুষ গুলো বদলে গেলে কি যে কষ্ট!
ফিয়োনা চলে গেলো। ফাহমির মনে যন্ত্রণা হচ্ছে, নীলাভের মনেও যন্ত্রণা হচ্ছে। অন্যরকম একটা যন্ত্রণা!

পর্ব ২০

ফাহমি বাসায় এসে রাগে গজরাতে লাগলো। ফিয়োনাকে নিজের আপন ছোট ভাইয়ের সাথে দেখে কিছুতেই নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না। রাগে, ক্ষোভে ফাহমির মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কিভাবে এ রাগ দমন করবে বুঝতে না পেরে চুপ করে বসে রইলো।

নীলাভ বাসায় ফিরলো কিছুক্ষণের মধ্যেই। বাসায় আসার পর থেকেই ফোনে কথা বলছে, পাশের রুম থেকে ওর কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। কি বলছে তা বোঝা যাচ্ছে না কিন্তু কথা বলছে এটা ঠিক স্পষ্ট। ফাহমি নিশ্চিত ও ফিয়োনার সাথেই কথা বলছে। নাহ, এটা আর কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। দহন তো কিছুতে কমছে না, দাউদাউ করে বাড়ছে।
প্রায় দেড় ঘন্টা যাবত নীলাভ ফোনে কথা বললো। শেষের দিকে এসে খুব জোরে হাসির শব্দ কানে আসছিলো ফাহমির। সব দেখে একদিকে হিংসে হচ্ছে অন্যদিকে ক্ষোভ জন্মাচ্ছে। ফাহমি কিছু বুঝতে না পেরে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।

এদিকে ফিয়োনা দেড় ঘন্টা যাবত নীলাভের সাথে কথা বলার পর একটা সমঝোতায় এলো। নীলাভ বলেছে কোনো ভালোবাসার সম্পর্কে যাবে না কিন্তু বন্ধু হয়ে থাকতে হবে। দুজনে খুব ভালো বন্ধু হয়ে থাকবে সারাটা জীবন। ফিয়োনা এতে রাজি হয়ে গেছে। কারণ নীলাভের মত এত সুন্দর একজন বন্ধুকে ফিয়োনা হারাতে চায় না। নীলাভ আছে বলেই দিনগুলো খুব আনন্দে কাটছে ফিয়োনার।
রাতে ঘুমানোর আগে ফিয়োনা ও নীলাভ অনেক্ষণ ফোনে কথা বললো। রাতে চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় সব কথা ফাহমির ঘর থেকে শোনা যাচ্ছিলো। শুনতে শুনতে ফাহমি শুধু যন্ত্রণার আগুনে দগ্ধ হচ্ছিলো।

এভাবে দুটো দিন কেটে যাওয়ার পর আর সহ্য করতে পারলো না ফাহমি। একদিন রাতে ফিয়োনা দের বাসায় চলে এলো। ফিয়োনাদের বাসায় ছাদে ওঠার একটা রাস্তা আছে। সেই রাস্তা সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে ফাহমির। ফাহমি আস্তে আস্তে ছাদে উঠে এলো। তারপর চিলেকোঠার ঘরের দরজা খুলে ঘরে শুয়ে ঘুম দিলো। অপেক্ষা করতে লাগলো সকাল হবার জন্য। কারণ সকালবেলা ফিয়োনা ছাদে আসবে।
ফিয়োনা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছাদে চলে এলো। চিলেকোঠার ঘরে। এটা ওর প্রতিদিনের অভ্যেস। সকালে ছাদে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পর চিলেকোঠার ঘরে কিছুক্ষণ সময় কাটানো। ফিয়োনা দেখলো ঘরের দরজা আটকানো নেই। ও দরজা ঠেলে ভিতরে ধোকার আগেই ওর হাত টেনে ধরে ভিতরে টেনে নিলো ফাহমি। তারপর ফিয়োনার মুখ চেপে ধরে বললো, একদম চেঁচাবে না।
ফিয়োনা মাথা নেড়ে ওকে বললো।
ফাহমি বললো, তুমি এসব কি করছো?

  • কি করলাম আমি আবার? তারচেয়ে বড় কথা তুমি এ ঘরে কিভাবে এলে? সর্বনাশা ব্যাপার। তোমার জায়গায় যদি অন্যকেউ এভাবে ঢুকে যেতো.. উফফ ভাবতেই পারছি না।
  • ফিয়োনা।
  • হুম। কেন এসেছো?
  • তুমি কি নীলাভকে ভালোবাসো?
  • হ্যা বাসি। তোমার কি কোনো সমস্যা?
  • সত্যি ভালোবাসো?
  • হ্যাঁ বাসি। তোমার এত জ্বলছে কেন? জানো তোমার জন্য কি পরিমাণ কষ্ট পেয়েছি আমি?
  • সরি ফিয়োনা। আমি জানি তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো।
  • সরি বললেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। আমাকে যে পরিমাণ কষ্ট তুমি দিয়েছো তার কোনো ক্ষমা হয় না।

ফাহমি চুপ করে রইলো। আজ ফিয়োনাকে বলতে দেয়া উচিত। ওর কষ্টের কথাগুলো বলে হালকা হয়ে নিক ফিয়োনা।
ফিয়োনা শুরু থেকে সব বলে গেলো। দিনের পর দিন না খেয়ে, দুঃখে, বিরহে সময় কেটেছে ওর। কিছুই খেতে পারতো না, কোনো কাজ করতে পারতো না, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারতো না। সবসময় ভাবতো শুধু ফাহমির কথা। ফাহমিকে ছাড়া বেঁচে থাকাটাই অর্থহীন মনে হয়েছিলো ওর কাছে। কিভাবে বেঁচে থাকবে সেটাই বুঝতে পারছিলো না। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েছে ও। ধীরেধীরে নিজেকে শক্ত করে নিয়েছে। কিন্তু সেই সময়ে পাওয়া কষ্টটা কিছুতেই আর ভুলতে পারছে না। এখনো মাঝেমাঝে ভাবলে কষ্টে শিউরে ওঠে ফিয়োনা।ফাহমি সব শুনে বললো, আমার কথাটা আগে শোনো। শুনে সবকিছু বোঝার চেষ্টা করো।

  • কি শুনবো? আমি কিছু শুনতে চাই না।
  • না শুনলে কিভাবে বুঝবে আমার অপরাধ কোথায়? আমি নয়তো আজীবন তোমার কাছে অপরাধী হয়ে থাকবো।
    ফিয়োনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল- তুমি এমনিতেও আজীবন আমার কাছে অপরাধী হয়ে থাকবে ফাহমি।
  • ফিয়োনা.. প্লিজ এত বড় কথা বোলো না।
  • তুমি আজকে এভাবে চলে এসে আজো একটা অন্যায় করে ফেলেছো। একবারও ভাবলে না আমার মা কিংবা অন্যকেউ থাকলে তোমার কি দশা হতো?
  • আমি জানি তুমি রোজ এই সময়ে ছাদে আসো। আর আসবেও। তাই আমি না এসে পারিনি। ফিয়োনা প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না। আমার কথাটা একবার শোনো..
    ফিয়োনা চুপ করে গেলো। বলতে শুরু করলো ফাহমি-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *