চিলেকোঠার অতিথি

চিলেকোঠার অতিথি – নতুন প্রেমের গল্প

প্রথম পর্ব: আজ শুক্রবার। ছুটির দিন। কোনো কাজ নেই বলে দুপুর অব্দি ঘুমানোর কথা। মায়ের ডাকে আড়মোড়া ভেঙে উঠতে হলো ঘুম থেকে। চোখ মেলে ফিয়োনা দেখলো দরজায় এক লম্বা টিনটিনে যুবক দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমটায় স্বপ্ন ভেবে উড়িয়ে দিতে চাইছিলো। কিন্তু মা আবার ডাকলো বলে স্বপ্ন ঝেড়ে উঠে বসতে হলো।
চোখ কচলাতে কচলাতে ফিয়োনা বললো, ‘এত সকাল সকাল ডাকছো কেন?’
মা রেগে বললো, ‘কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে? দশটা বেজে গেছে ওঠ।’

-‘উফফ মা, আজ ফ্রাইডে। কোথায় একটু দুপুর অব্দি ঘুমাবো তা আর হতে দিলা না। সকাল সকাল ডাকাডাকি।’
মা কাছে এসে ফিসফিস করে বললো- ছেলেটা এই ঘরটা দেখতে এসেছে। যা উঠে নিচে যা।

  • আগে জানতাম মানুষ মেয়ে দেখতে আসে। ঘর দেখতে এসেছে কেন?
  • আস্তে কথা বল। শুনলে কি ভাব্বে? ও এই ঘরটা ভাড়া নেবে। পরেই তো থাকে, তাই ভাবলাম ভাড়া দিয়ে দিই। ছেলেটা অনেক ভদ্র।
  • বাহ, মুখ দেখেই বুঝে গেলে ভদ্র?
  • ফিয়ো, আস্তে কথা বল। আস্তে কথা বলাটা তোর জাতে নেই।

ফিয়োনা মুখ বাঁকা করে উঠে এলো। এটা চিলেকোঠার ঘর। এই ঘরে প্রতিদিন অনেকটা সময় কাটে ফিয়োনার। এটা ভাড়া দেবে শুনেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো। ভোরবেলা উঠে সকালের শীতল পরিবেশে ছাদে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে এই রুমে শুয়ে ঘুম দিয়েছিলো ফিয়োনা। সবেমাত্র শীত শুরু হয়েছে, কুয়াশা পড়তে আরম্ভ করেছে। এই শীতের দিনে চিলেকোঠার ঘরে শুতে যে কি আরাম! এই ছেলে ভাড়া উঠলে তো আর ছাদেও ওঠা যাবে না।

ফিয়োনা দরজার কাছে এসে ছেলেটা কে বলল- আপনার জন্য আমার ঘুম ভাঙালো। শুক্রবারে যে দুপুরে ঘুম থেকে উঠতে হয় তাও জানেন না?
ছেলেটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল- ওহ আচ্ছা। জানতাম না তো। আপনি ঘুমান। আমি তো ঘর দেখতে এসেছি, আপনাকে দেখতে আসিনি।
ফিয়োনা এরকম জবাবে চোখ পাকিয়ে তাকাল। কি বলে এই ছেলে। সাংঘাতিক ছেলে তো! একে কিছুতেই এই বাসায় উঠতে দেয়া যাবে না।
ফিয়োনার চোখের দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বলল- আপনার বাসাটা অনেক সুন্দর। আমার খুবই পছন্দ হয়েছে।

  • আপনাকে আমরা ভাড়া দেবো না।
    মা এসে ফিয়োনার দিকে রেগে তাকালেন। মুখে রাগ ফুটিয়ে তুলে বললেন, কি হচ্ছে কি ফিয়ো? অতিথির সাথে এভাবে কথা বলে কেউ?
  • অতিথি! চিলেকোঠার অতিথি। এ আর এমন নতুন কি? আমার চিলেকোঠায় রোজ কাক আসে মা।

ছেলেটা ফিসফিস করে বলল- যেখানে কোকিল থাকে কাক তো আসতেই পারে। সবসময় যে কাকের বাসায় কোকিল ডিম পাড়তে হবে এমন তো কথা নেই। কাকও কালো, কোকিলও কালো।
ফিয়োনা রেগে কটমট করে তাকালো। ছেলেটা সত্যিই সাংঘাতিক। মা এই ছেলেকে ভদ্র বলল কোন দৃষ্টিতে?
ফিয়োনা বলল- আপনার মত ছেলে মরে গেলেও আমরা ভাড়া দিচ্ছি না। মা, একে বিদায় করো তো।

মা এসে ফিয়োনাকে টেনে বাইরে বের করে দিয়ে ছেলেটাকে বলল- ওর কথায় রাগ কোরো না বাবা। মেয়েটাও হয়েছে কেমন যেন। বদমেজাজি।

  • আমার তো খুব পছন্দ হয়েছে।
    আন্টি ড্যাবড্যাব করে তাকালো ছেলেটার দিকে। ও হেসে বলল- বাসাটা। মানে এই ঘরটা খুব পছন্দ হয়েছে।
  • এত রুম থাকতে তুমি চিলেকোঠায় থাকতে চাইছো কেন বাবা?
  • আসলে আমার খোলা আকাশ ভালো লাগে। এই শহরে তো আকাশ দেখাই দেখা যায় না। সব ইট কংক্রিটে ঘেরা। তাই আর কি। তাছাড়া এখন তো শীতকাল আসছে।

আন্টি মাথা দোলালেন। ছেলেটার নাম ফাহমি। এবার ভার্সিটিতে ফাইনাল ইয়ারে। ছেলে হিসেবে খুবই ভদ্র, আন্টি যতটা শুনেছে সবার কাছে। সবাই বলতে আন্টির বোন, খালা, মা ইত্যাদি। আসলে ছেলেটা আন্টির বোনের বাসার পাশের বাসার ছেলে। সবাই বলে ছেলে হিসেবে চমৎকার। কিছুটা দুষ্টু কিন্তু অনেক মেধাবী। মেধাবীরা দুষ্টু হতে হয়, নয়তো আবার মানায় না। ফিয়োনার মা তো মহাখুশি এমন একজন কে পেয়ে। বাসায় ফিয়োনা আর একটা ছেলে আছে। দুটোকে এর কাছে পড়তে পাঠাবে। পড়াশোনাও হবে, আদব কায়দাও শিখবে।

এদিকে ফাহমি ভাবছে ফিয়োনার কথা। এমন অতিরিক্ষি মেজাজের মেয়ে ও কক্ষনও দেখেনি। ঠিক যেন ধানি লংকা। যেমন দেখতে তেমন ঝাঁঝ। এই বাসায় তো উঠতেই হবে। প্রেম টেম বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে মেয়েটার সাথে খুনসুটি। ওকে জ্বালাতে পারলে দারুণ মজা লাগবে ফাহমির।

আনমনা হয়ে এসব ভাবছিল ফাহমি। আন্টি ফাহমিকে নিচে নামতে বললেন। বসার ঘরে এসে সোফায় বসতে বললেন। তারপর গেলেন নাস্তা নিয়ে আসতে। এই সুযোগে ফিয়োনা এসে ঠাস করে শব্দ করে ফ্রিজ খুললো। একটা আপেল নিয়ে আবার ঠাস করে ফ্রিজ আটকে দিলো। বেসিন থেকে আপেলটা ধুতে ধুতে ফাহমির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিল। তারপর ফাহমির সামনে বসে দাঁত কিড়মিড় করে বলল- কেন এসছেন এখানে মরতে? আসিয়েন না, আসিয়েন না। ঘাড় মটকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবো। এই যে আপেলটা যেভাবে কটাস কটাস করে খাচ্ছি, ঠিক সেভাবে।

ফাহমি হাসতে হাসতে বলল- আপেল তো কটাস কটাস করে খাচ্ছেন মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে নরম করে ফুস ফুস করে কামর দিচ্ছেন। এভাবে আমাকে খেলে আমার একটুও কষ্ট হবে না।
ফিয়োনা রেগে বলল- আপনি একটা বেয়াদব। শুধু বেয়াদব না, চরম লেভেলের বেয়াদব। একটা অচেনা মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শেখেন নি।

  • আপনি আমার চেয়েও বেশি বেয়াদব। যাকে বলে মাত্রাতিরিক্ত বেয়াদব। একটা অচেনা ছেলের সাথে যেরকম আচরণ করছেন তাতে আপনার চৌদ্ধগুষ্টি সম্পর্কে আমার ধারণা হয়ে গেছে।
  • কি বললেন? আমি মোটেও এরকম মেয়ে না। আপনাকে যাতে এ বাসায় না উঠতে হয় সেজন্য এমন বিহ্যাভ করছি। যাতে ভয়ে পালিয়ে যান।
  • আমিও মোটেও এরকম ছেলে না। আপনার মত মেয়েকে কিভাবে সোজা করতে হয় সেটা জানি বলেই এরকম বিহ্যাভ করছি।
  • কিহ? আপনি কেমন ছেলে সেটা আমার বোঝা হয়ে গেছে।
  • আমার প্রেমিকারা বছরের পর বছর প্রেম করেও বুঝলো না আর আপনি মাত্র কয়েক সেকেন্ডে বুঝে গেলেন? বাহ! কেয়া ব্রিলিয়ান্ট হ্যায়।
  • চুপ করুন। আপনি এ বাসায় উঠবেন না।
  • আমি এখানেই উঠবো। আমার যেটা পছন্দ হয় আমি সেটা মিস করি না। পারলে আপনার মাকে বারণ করুন।
  • মা আমার কথা শুনবে না। আমার একটা কথাও শুনবে না।
  • আমি জানি। প্রথম দেখেই বুঝে গেছি আপনি বাবা মায়ের অবাধ্য সন্তান। বেড়ে উঠতে গিয়ে বাঁকা হয়ে গেছেন। আপনাকে সাইজ করার জন্য আমাকেই দরকার।
  • হোয়াট? সাইজ মানে?
  • সোজা করার জন্য।

ফিয়োনা রেগে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। এমন সময় মা এসে ঘরে ঢুকলেন। নাস্তার ট্রে ফাহমির সামনে দিয়ে হাসি হাসি মুখে বললেন, খাও বাবা।
ফিয়োনা জাস্ট অবাক! এই ছেলেকে এত আধিখ্যেতা করার কি আছে? যেন জামাই আদর। এ বাসা দেখতে নয় বুঝি ফিয়োনাকেই দেখতে এসেছে। মায়ের ভাবটা ঠিক সেরকম। অদ্ভুত!
মা ফিয়োনাকে বললেন, তুইও নাস্তা কর। একা একা ওর সামনে বসে আপেল খাচ্ছিস কেন? তুই কি জীবনেও বড় হবি না?

ফাহমির সামনে ফিয়োনাকে এভাবে ইনসাল্ট করায় ওর মেজাজ গরম হলো। মা ও যেরকম। অবশ্য মায়েরা এমনই হয়। ফিয়োনা সুবোধ সন্তানের মত হয়নি। সারাক্ষণ বন্ধু বান্ধব নিয়ে মেতে থাকা, ঘুরাঘুরি আর আড্ডা। আজ এই ফ্রেন্ডের বার্থডে তো কাল অমুকের বোনের বিয়ে। এখানে সেখানে ঘুরেই দিন পার করে। সারা রাত জেগে মোবাইল টেপে আর সারাদিন ঘুমায়। এই হচ্ছে ফিয়োনার অবস্থা। মায়েরা এমন সন্তানের প্রতি খুবই বিব্রত। কিন্তু না পারেন কিছু বলতে আর না পারেন মেনে নিতে। তবুও মানিয়ে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। যেহেতু নিজের পেটের সন্তান।

ফিয়োনা কিছু না বলে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। ফাহমি বলল, আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না। আমি কখনো ভেতরে আসবো না সোজা সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যাবো।

  • সে কি? কেন আসবে না? অবশ্যই আসবে। এখানে থাকবে যখন মাঝেমাঝে আমাদের সাথে খাবে। মায়ের হাতের রান্না নিশ্চয় অনেক মিস করো?
  • তা তো করি ই আন্টি। শুনে খুব খুশি হলাম। আন্টি, পিঠা কি আপনি বানিয়েছেন?
  • হ্যাঁ বাবা। মজা হয়েছে?
  • হ্যাঁ আন্টি। মজা লেগেছে। আপনি নিন না।

আন্টিও নিলেন। ফাহমির সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে লাগলেন। ছেলেটাকে ওনার বেশ পছন্দ হয়েছে। তার উপর বড় বোন যেভাবে বলেছে, তাতে ফাহমি সম্পর্কে অন্যরকম একটা ধারণা হয়েছে ওনার।
নাস্তা শেষ করে এডভান্স টাকা পেমেন্ট দিয়ে ফাহমি চলে গেলো। আন্টি মনেমনে বেজায় খুশি। এদিকে ফিয়োনা ঘরে বসে শুধু রাগে ফুসছে। মা শেষ পর্যন্ত এই ছেলেটা কে ভাড়া দিয়েই ছাড়লো? উফফ মা যে কি করে।
ফাহমি বাইরে এসে ভাবতে লাগলো মেয়েটা এমন উদ্ভট কেন? শহরের মেয়েগুলোও হয়েছে যেমন। মায়ের কথা শোনেনা, শাসন মানেনা, বারণ রাখে না। অপরিচিত কারো সাথে কিরকম আচরণ করলো। একই বাড়িতে থাকলে দেখা তো হবেই। পরবর্তী তে বোঝা যাবে মেয়ের সত্যিকার সমস্যাটা কোথায়?

পর্ব ২

আজ নতুন বাসায় উঠেছে ফাহমি। রৌদ্রজ্বল একটা দিন। বাসায় এসেই দরজা খোলা রেখে রুম গোছানোর কাজে লেগে পড়েছে। স্বভাবতই ছেলেরা যেরকম হয়, ফাহমি একেবারেই তেমন নয়। ছেলেরা সাধারণত রুম অগোছালো রাখে, কোনোদিকে খেয়াল থাকে না, বাসা গোছগাছ করায় মনোযোগ থাকে না। ফাহমি সেদিক থেকে অনেক গোছানো আর পরিপাটি। বিশেষ করে আর্টের দিকে ওর অনেক ঝোঁক। বাসা গোছগাছ করে রাখায় কোনো জুরি নেই।

রুম পরিষ্কার করে সুন্দর করে রাখায় মনোযোগী ফাহমি। ফিয়োনা কখন এসে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে খেয়াল করেনি। আচমকা ফিয়োনার গলার স্বর শুনে চমকে গেলো ফাহমি। ফিয়োনার দিকে তাকিয়ে দেখলো আঙুল চুষে চুষে কি যেন খাচ্ছে আর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। না দেখার ভান করে আবার কাজে মনোযোগ দিলো ফাহমি।
ফিয়োনার ব্যাপারটা ভালো লাগে নি। ছেলেরা ওকে দেখলে হাবলার মত তাকিয়ে থাকে। আর সেখানে ফাহমি দেখেও না দেখার ভান করছে। এত ভাব কেন ছেলেটার?

ফাহমি কিছুক্ষণ পর আবার তাকালো। দেখলো ফিয়োনা আগের জায়গাতেই ঠায় দাড়িয়ে আছে। নড়াচড়া করেনি। মেয়েটার মাথায় গন্ডগোল আছে কি না ভাবছে ফাহমি। বলল, ভেতরে এসে বসুন না। দরজায় দাড়িয়ে আছেন যে?
ফিয়োনার ঝটপট উত্তর – নাহ থাক। আপনার বাসায় গেলে আবার কি না কি ভাবেন।

  • আরে কি ভাব্বো? এভাবে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে তো আমারই খারাপ লাগছে। ভেতরে এসে বসুন।
    আজকে ফাহমির সুন্দর আচরণে একেবারে অবাক ফিয়োনা। যেদিন বাসা দেখতে এসেছিল সেদিন তো একেবারে দা কুমড়ো সম্পর্কের ন্যায় আচরণ করে গেছে। আজ আবার এত ভদ্রতা কোথ থেকে উদয় হলো?
    ফাহমি বলল- রুমটায় তেমন ধুলা ছিল না। আন্টি বলেছিল আপনি বেশিরভাগ সময়ই এখানে কাটাতেন। সেজন্যই হয়তো।
  • আমার পছন্দের একটা জায়গা আপনি দখল করে নিলেন। কাজটা কিন্তু ঠিক হলো না। যে মেয়ে এখানে ঘুমিয়ে থাকতে পারে তাকে দেখেও আপনার মনে হয়নি এই বাসাটা না নিলেও হয়?
    ফাহমি বেকায়দায় পড়ে গেল। এই প্রশ্নের উত্তর কি দেবে ভেবে পেলো না। বলল- সত্যিই কি আপনি সে কারণেই চান নি আমি এখানে উঠি?
  • তো?
  • মাই গড। আমি তো ভেবেছিলাম আপনার আচার আচরণ স্বভাবতই এরকম। কিন্তু সত্যি সত্যি বাসা নেই এটা চাচ্ছিলেন না সেটা একেবারেই বুঝতে পারিনি।
  • এখন বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ। তাহলে এখন চলে যান?
  • কিন্তু আজ তো মাসের এক তারিখ। আজ কোথাও গিয়ে আমি বাসা পাবো না। এটা কয়েকদিন আগেই কনফার্ম করে গিয়েছিলাম দেখেননি?
  • হুমম তাহলে আপনি ছাড়ছেন না তাই তো?
  • আপনার কি খুব বেশি সমস্যা হবে? তাহলে আমি আগামী মাসেই ছেড়ে দেবো। এই একটা মাস সহ্য করুন।
  • শিওর?
  • হ্যাঁ শিওর।

ফাহমির কথা শুনে মনেমনে খুশি হলো ফিয়োনা। যাক, অবশেষে আপদটা লাইনে এসেছে। এখন একমাস সহ্য করে নিতে হবে। ভালোয় ভালোয় বিদায় হলেই বাঁচে ফিয়োনা। একমাস দেখতে দেখতে চলে যাবে।
আজ ফাহমির মুড সুয়িং। ফিয়োনাকে সেদিন অসহ্য লাগলেও আজ একেবারেই ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া ঝগড়া করার অভ্যেস ও নেই ওর। সেদিন নেহাত মেয়েটা বাজে আচরণ করেছিল বলে। আজ তো আচরণ স্বাভাবিক ই লাগছে।
ফাহমির ভাবনায় ছেদ পড়লো যখন ফিয়োনা প্রশ্ন করল- আচার খাবেন?

  • নো থ্যাংকস।
  • আমি আচার শুকাতে দিতে এসেছিলাম। ওই যে ওখানে দিয়েছি। কাক তাড়াবেন আর আপনার খেতে ইচ্ছে হলে খাবেন।
    ফাহমি ব্যঙ্গ করে হাসতে হাসতে বলল- কাকের সাথে নাকি আপনার অনেক ভাব? রোজ আসে আপনাকে দেখতে। আবার তাড়াতে বলছেন কেন?
  • একটা নতুন কাক এসেছে জুটেছে তাই পুরাতন কাককে তো বিদায় করতেই হবে।
  • এরকম দুধে আলতা রংয়ের ছেলেকে কাক বললে কাকেরা দুঃখে বেদনায় আত্মহত্যা করবে তো।
  • ওমা তাই! তাহলে তো আমার সাদা গরু বলা উচিৎ ছিল। বলিনি, যেহেতু এতগুলো সিড়ি বেয়ে গরু ছাদে উঠতে পারে না। যদি গরু উঠতে পারতো, তাহলে গরুই বলতাম।
    ফাহমি হেসে বলল- আবলামি টাইপের কথাবার্তা। কাউকে কিছু বলতে ইচ্ছে হলে বলে ফেলতে হয়। অত যুক্তি নিয়ে ভাবতে হয় না। আমার তো মনেহয়, গরু উঠতে পারুক আর নাই পারুক ঠিকই ছাদে গরু পালা যায়।
  • আপনি স্বীকার করছেন আপনি গরু?
  • জ্বি না। গরু দোতলায় থাকে।

ফিয়োনা এক কথাতেই ভয়ানক রেগে গেলো। কারণ দোতলায় সে ই থাকে। রাগ সংবরণ করে বলল- আপনার কিন্তু অনেক সাহস বলতে হবে। আমার সাথে এভাবে কথা বলার আগে ভেবে নিবেন আপনি আমাদের বাসায় ভাড়া উঠেছেন।

  • ওহ আচ্ছা। আপনাদের বাসায় ভাড়া দেয়ার আগেই আপনি বুঝে গিয়েছিলেন আপনি যেমন ধানি লংকা, আমিও তেমনি বাঘা তেতুল। জেনেশুনে ভাড়া দিলেন কেন?
    ফিয়োনা মুখ বাঁকা করে হাসলো। তুচ্ছতার হাসি। আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে মোটেও ভালো লাগছে না। তর্কে হারলে ভালো লাগার কথাও না। ফাহমি নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। ধুলোবালি ঝাড়তে লাগলো। ফিয়োনা কখন চলে গেছে খেয়ালও করলো না। এভাবে ঝগড়া দিয়েই শুরু পরিচয়ের প্রথম ধাপগুলো।

পরেরদিন…
ফাহমি গোসল করতে এসেছে। ছাদের উপর ওয়াশরুম না থাকায় ফিয়োনাদের বাসার ওয়াশরুমেই গোসল করতে আসে ও। আন্টি বলেছেন দ্রুত ছাদে একটা বাথরুম করে দেবেন। ইদানীং খাবার দাবারও ফিয়োনাদের বাসাতেই হচ্ছে ফাহমি’র।
খাবার খেতে খেতে আন্টির সাথে গল্প করছিলো ফাহমি। ফিয়োনা পাশে বসে চুপচাপ খাচ্ছে। মায়ের আধিখ্যেতা দেখে গা জ্বলে যায় ওর। ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে আচ্ছা মতো শাস্তি দিতে। কিভাবে শাস্তি দেয়া যায় সেই ফন্দি আটতে লাগলো মনেমনে। ফাহমি খাওয়া শেষ করে যথারীতি চলে যাচ্ছিলো। আন্টি বললেন, বাবা তুমি আমার বাচ্চা দুটোকে একটু পড়াবে?

ফাহমি চমকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এত বড় ঢিংগি মেয়েটা নাকি আবার বাচ্চা! ফিয়োনাও এমন প্রস্তাবে ড্যাবড্যাব করে তাকাচ্ছে। মায়ের মাথা কি ঠিক আছে?
আন্টি ফাহমিকে এমন ভাবে বললেন যে ফাহমি আর না করতে পারলো না। ফিয়োনা ভয়ানক রেগে যাচ্ছে। ফাহমি চলে যেতেই মায়ের সাথে রাগারাগি শুরু করলো। পা নাচাতে নাচাতে বলল, আমি ওর কাছে পড়বো না।
কিন্তু মায়েরও রাগ। ফিয়োনাকে এক ঝাড়ি দিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন। মায়ের উপর কিছু বলতেও পারে না ও। হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো। ফাহমিকে উচিৎ শিক্ষা দেয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে উঠলো ফিয়োনা।

কিছুক্ষণ পর কাপড় শুকাতে দেয়ার ছলে ছাদে এসে দেখলো ফাহমির অনেক কাপড় শুকাতে দিয়েছে। দেখামাত্রই মগজে তিরিং করে একটা মোক্ষম আইডিয়া চলে এলো। এই তো সুযোগ। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। তৎক্ষনাৎ ওর এক বন্ধুকে কল দিয়ে বললো বিলাই চিমটি নিয়ে ওদের বাসায় আসার জন্য। বিলাই চিমটি হচ্ছে এমন এক জিনিস যা জামাকাপড়ে কোনোভাবে লাগালেই সারা গায়ে চুলকানি শুরু হয়ে যাবে। এই বস্তু ফাহমির গায়ে লাগিয়ে দিতে পারলেই হয়, মজা বুঝবে ব্যাটা। এই বাড়ি থেকে পালাবে না মানে, সুড়সুড় করে পালাবে।

ফিয়োনার বন্ধু বিলাই চিমটি নিয়ে এলে ফাহমির সব জামাকাপড়ে লাগিয়ে দিলো ফিয়োনা। তারপর মনের আনন্দে ওর নাচতে ইচ্ছে করছিলো। এত আনন্দ হচ্ছে যে আনন্দে ছাদ থেকে লাফ দিতে মন চাইছে। কিন্তু সেটা তো করা যাবে না। করা সম্ভব ও না।
দ্রুত নিজেদের বাসায় এসে পড়লো ফিয়োনা। ফাহমি আজকে একটা না একটা কাপড় তো সেখান থেকে পরবেই। আজ কে না পরলেও পরেরদিন তো অবশ্যই পরবে। তখনই বুঝবে মজা কাকে বলে? এখন শুধু অপেক্ষা সেই কাঙ্খিত সময়ের।

ফাহমি বাসায় ফিরলো রাত্রিবেলা। ছাদ থেকে কাপড় গুলো তুলতে গিয়ে দেখলো সব কুয়াশায় ভিজে গেছে। তাই আর কাপড় তুললো না ফাহমি। রুমে এসে একটা টি শার্ট পরে নিজের কাজে মন দিলো। ফিয়না শুধু কল্পনা করছে ফাহমির কি অবস্থা এখন সেটা ভেবে। ফাহমি চুলকানির ঠেলায় লাফালাফি করবে সেটা ভেবেই ওর হাসি পাচ্ছে।

রাত কিছুটা বাড়লে ছাদে উঠে এলো ফিয়োনা। আকাশ দেখার ছলে ফাহমির চুলকানি দেখবে। কিন্তু এসে দূর থেকে দেখলো ফাহমির ঘরে লাইট জ্বলছে। দরজাটা খোলা কিন্তু ওকে দেখা যাচ্ছে না। ফিয়োনা কিছুক্ষণ আড়পেতে দেখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তারপর নিজের মত দাঁড়িয়ে রইল। আকাশের দিকে তাকিয়ে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো।
এদিকে ফাহমি পড়াশোনা শেষ করে গিটার নিয়ে বসেছে। গিটারে টুংটাং সুর তোলার চেষ্টা করছে আর গলায় গান গাইছে। ওর গিটারের মিউজিক শুনে কান খাড়া করলো ফিয়োনা। ছেলেটার তাহলে গিটারেও আগ্রহ আছে? বেশ ভালো।

সেই মুহুর্তে ছাদের কাপড়ের দিকে নজর গেলো। ফাহমি তো একটা জামাও তোলে নি, গায়েও দেয়নি। ইস রে, ওর চুলকানি আর উপভোগ করা হলো না আজকে।
ফাহমির গিটারের সুর শুনে আর বেশিক্ষণ ভাবতে পারলো না। বেশ টানছে সুর টা। সুরের টানে ফাহমির দরজায় এসে দাঁড়ালো ফিয়োনা। দরজায় কারো ছায়া দেখে চোখ তুলে তাকালো ফাহমি। অবাক হয়েও হলো না যেন। স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই গান গাইতে লাগলো। ফিয়োনা দরজার কাছে বসে ওর গান শুনতে লাগলো।

পর্ব ৩

ফাহমির গলায় গানের মাদকতাময় ছন্দ ফুঠে ফুঠেছে-
‘স্বপ্নের বালুকায়, কেউ কি পা লুকায়
যদি না ভেজা দিন,
ইচ্ছের হিমালয়, হয় না কভু ক্ষয়,
হৃদয় থাকে অমলিন,
কিছু স্বপ্ন কিছু ইচ্ছে,
এই আমায় টেনে নিচ্ছে, তোমার কাছে বারেবার,
কেউ না জানুক, আমি তো জানি আমি তোমার,
কেউ না জানুক, তুমি তো জানো তুমি আমার,
কেউ না জানুক, আমি তো জানি আমি তোমার,
কেউ না জানুক, তুমি তো জানো তুমি আমার…’

এই পর্যন্ত গাইতেই ফাহমির কন্ঠে মায়ার পরিমাণ আরো বেড়ে গেলো। ফিয়োনার চোখে পানি এসে গেছে। কেউ এত মায়া নিয়ে গান গাইতে পারে? আরো শুনতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ফাহমি গান থামিয়ে শুধু মিউজিক বাজাচ্ছে। ইস! গান গাইছে না কেন?

ফাহমি আবার গান ধরলো,
সব লেনা-দেনা হয় না কভু শেষ,
আজীবন কিছু কিছুর থেকে যায় রেশ,
সব লেনাদেনা হয় না কভু শেষ,
আজীবন কিছু কিছুর থেকে যায় রেশ,
ভালোবাসা ফুরায় না,
প্রেম কভু হারায় না,
অনুভবে থাকে যার যার,

কেউ না জানুক, আমি তো জানি আমি তোমার,
কেউ না জানুক, তুমি তো জানো তুমি আমার…
কেউ না জানুক, আমি তো জানি আমি তোমার…

গান শেষ করে ফাহমি দরজার দিকে চেয়ে দেখে ফিয়োনা মুগ্ধ হয়ে ওর গান শুনছে। চেয়ে আছে অন্যদিকে কোথাও। মুখ মলিন, চোখ স্তব্ধ। আপনমনে ভেবে চলেছে কোনো অলৌকিক ভাবনার কথা। কে জানে মেয়েটা কোথায় হারিয়ে গেছে?
এতক্ষণে ফিয়োনার খেয়াল হলো যে ফাহমি গান শেষ করেছে। ও চমকে উঠে ফাহমির দিকে তাকালো। ফাহমি বলল, কি হয়েছে আপনার?

  • কিছু না তো।
  • আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
  • গান শুনে এমন হয়ে গিয়েছিলাম। কারো গান এত টানতে পারে আমার জানা ছিলো না। আপনি খুব মায়া নিয়ে গান।
  • তাই বুঝি?
  • হ্যাঁ। মাদকতাময় আপনার কন্ঠ।
  • মাদকতায় আসক্তি আসবে না তো আবার?
  • একবার খেয়ে হয়তো আসবে না। কিন্তু ভুল করে যদি আবার কখনো শুনে ফেলি হয়তো তখন আসবে।
  • ভুল করে আবার শোনার ইচ্ছে আছে?
  • যদি কল্পলোকের অজানা কোনো রাজ্যে নিয়ে যায়, সেই ভুল বারবার করতে আমি রাজি আছি।

ফিয়োনার কথা শুনে অবাক হলো ফাহমি। মেয়েটাকে এখন মোটেও হেয়ালি কিংবা বেপরোয়া বা অভদ্র কোনোটাই মনে হচ্ছে না। মাঝেমাঝে কেন ওরকম হয়ে যায় কে জানে? সবসময় এরকম থাকলেই তো পারে।
ফিয়োনা বললো, থ্যাংকস এ লট। আপনি সাধারণত কখন গান গেয়ে থাকেন?

  • ঠিক নেই। কেন?
  • সে সময়ে ভুলটা করবো বলে।
    ফাহমি হেসে বলল, ভুল করার জন্য রাজকুমারীর এত ইচ্ছে কেন?
  • আমি রাজকুমারী! কখনো কেউ এ নামে সম্বোধন করেনি।
  • নিজেকে কি রাজকুমারী মনে হয় না?
  • সেই সৌভাগ্য কি আমার আছে?
  • প্রত্যেকটা মেয়েই তো তার বাবার কাছে রাজকন্যা। হুমায়ুন আহমেদের এই উক্তি শোনেননি?

ফিয়োনা অভিভূত হয়ে বলল, না শুনিনি। আপনি হুমায়ুন আহমেদের ভক্ত?

  • ঠিক ভক্ত কিনা জানিনা। তবে মাঝেমাঝে পড়া হয়।
  • আমি কখনো ওনার লেখা পড়িনি।
  • সে কি? কোনো মেয়ে হুমায়ুন আহমেদের লেখা পড়েনি এটা আমার বিশ্বাস হয়না। ওনার নাম বলাটাকেই তো মেয়েরা স্মার্টনেস মনে করে।

ফিয়োনা অবাক হয়ে বলল- সে কি? আমি তো কখনোই পড়িনি। তবে শুনেছি উনি খুব ভালো লেখেন।

  • একবার পড়লে নেশা হয়ে যাবে।
  • আপনার গানের মত? একবার শুনেই…
  • একবার শুনেই নেশা হয়ে গেছে? হা হা হা।

ফাহমি হাসছে। ফিয়োনা হা করে ওর হাসির দিকে তাকিয়ে আছে। কি অদ্ভুত সুন্দর করে হাসে ছেলেটা! ইচ্ছে হয় তাকিয়েই থাকি তাকিয়েই থাকি।
ফাহমি বলল- হুমায়ুন আহমেদের একটা বই দিচ্ছি। নিয়ে যাও, পড়ে আবার ফেরত দিয়ে যেও।

  • আচ্ছা। যদিও আমার বই পড়ার অভ্যেস নেই।
  • বই না পড়লে সে আবার মানুষ হয় নাকি? একটা ভালো বই দিচ্ছি নিয়ে যান।
  • আচ্ছা দিন।
  • ফেরতযোগ্য তো? পরে যদি আবার ফেরত না দেন?
  • কি আজব! ফেরত না দিয়ে আমি যাবো কোথায়? আপনি যে কি বলেন না।
    ফাহমি হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো। বুক সেলফ থেকে ‘দারুচিনি দ্বীপ’ নামক বইটা বের করে ফিয়োনার দিকে এগিয়ে দিলো। এত সুন্দর নাম কোনো বইয়ের হতে পারে ফিয়োনা সেটাই জানে না। বই নিয়ে ও অভিভূত হয়ে বলল- চমৎকার তো।
  • পড়লে আরো চমৎকৃত হবে। নিয়ে যাও। তুমি বলাতে কি মাইন্ড করলে?
  • ইটস ওকে। আপনি আমার অনেক সিনিয়র, তুমি বলতেই পারেন। আজ তাহলে আসি।
    ফিয়োনা বইটা বুকে চেপে ধরে নিচে নেমে এলো। ফাহমির সম্পর্কে হওয়া ধারণাটা বদলে যেতে আরম্ভ করেছে। প্রথমে ভেবেছিলো ছেলেটা বেয়াদব, অভদ্র, মুখোশধারী শয়তান টাইপের হবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, মায়ের ধারণাই ঠিক। ছেলেটাকে বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। তাহলে প্রথম প্রথম ওনার সাথে ওরকম আচরণ করাটা উচিৎ হয়নি। আর দ্বিতীয়ত জামাকাপড়ে বিলাই চিমটি লাগিয়ে দেয়াটাও অন্যায় হয়ে গেছে, ঘোর অন্যায়।

ফিয়োনা এসব ভাবছিল আর বইটার পাতা ওল্টাচ্ছিল। বই পড়ায় ওর তেমন অভ্যাস নেই। এই প্রথম বই পড়তে বসেছে। স্কুল কলেজের বইগুলো বাধ্য হয়ে পড়তে হয় বলেই পড়া লেগেছে। গল্প উপন্যাস সবসময় নামই শুনে এসেছে কিন্তু কখনো পড়ে দেখা হয়নি। কে জানে কেমন লাগবে। কিন্তু খুব আগ্রহ হচ্ছে ফিয়োনার।

আস্তে আস্তে বইটা পড়তে শুরু করলো ফিয়োনা। প্রথম দিকটা পড়ে অনেক ইন্টারেস্টিং লাগলো। শুভ্র ছেলেটার চরিত্র ফিয়োনার খুবই পছন্দ হয়েছে। পড়তে পড়তে বারবার ফাহমির চেহারাটা চোখে ভেসে উঠছিল। আনমনে মনে হচ্ছিলো ফাহমির চেহারার সাথে শুভ্র’র চেহারার অনেক মিল। ফাহমিও শুভ্র, সুন্দর। বিশুদ্ধ একটা চেহারা। যতই পড়ছে ততই মনে হচ্ছে ফাহমিকে খারাপ ছেলে ভাবাটা একেবারেই উচিৎ হয়নি।
ফিয়োনা ধীরেধীরে বইয়ের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। এক বসাতে অনেক গুলো পৃষ্ঠা পড়ে ফেললো। খুব মজা পাচ্ছে পড়তে। ফিয়োনার শুধু মনে হচ্ছে আমি যদি এই গল্পে থাকতাম তাহলে আমিও দারুচিনি দ্বীপে যাওয়ার বায়না করতাম।

অনেক রাত পর্যন্ত শুয়ে শুয়ে পড়ছিল ফিয়োনা। কোনোদিনো ওর তারাতাড়ি ঘুম আসে না। কখনো রাত দুইটা, কখনো তিনটার দিকে ঘুমায়। কিন্তু এই প্রথম রাত সাড়ে এগারো টায় ঘুমিয়ে পড়লো বই পড়ার সুবাদে।
পরেরদিন সকাল সকাল ঘুম ভাংতেই ফিয়োনা অবাক হলো। প্রতিদিন তো দশটার আগে ঘুমই ভাঙে না। আজ এই পরিবর্তন শুধুমাত্র ফাহমির জন্যই। মুখে হাসি ফুটে উঠলো ওর। সকালে উঠে বেলকুনিতে এসে দাঁড়াল। দেখলো প্রকৃতিটা অনেক সুন্দর। প্রতিদিন সকালে উঠলে এমন সুন্দর প্রকৃতি দেখতে পারবে সেটা ভেবেই আফসোস হতে লাগলো ফিয়োনার। কেন যে রোজ দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে! প্রতিদিন সকালে উঠলেই এই সকালটা দেখবে আর ভালো লাগবে ওর।

খুশি মনে এসে মুখ ধুয়ে আবারো বইটা নিয়ে বসলো। মা ফিয়োনার রুমে এসে অবাক একেবারে। যে মেয়ে প্রতিদিন এগারো টায় ঘুম থেকে ওঠে সে আজ এত সকালে উঠে গেছে তাও আবার বই পড়ছে! হায় হায়! এটা কি সত্যি!
আন্টি চোখ কচলালেন। নাহ, একেবারে সত্যি। উনি ফিয়োনাকে বললেন, আজ সূর্য কোনদিকে উঠেছে?
ফিয়োনা হাসতে হাসতে বলল- কাল রাতে বইটা পড়তে পড়তে তারাতাড়ি ঘুমিয়েছি মা। আজ সে কারণেই তারাতাড়ি ঘুম ভেঙে গেছে।

  • বইয়ের ম্যাজিক এটাই। তা এই বই কে দিয়েছে পড়তে? কি বই পড়িস?
  • মা দারুচিনি দ্বীপ। আমার পড়া শেষ হলে তুমি নিয়ে পড়ে দেখিও। খুবই মজার একটা বই। যত পড়ছি ততই ভালো লাগছে।
  • কোথায় পেয়েছিস এটা?
  • মা, ওই যে আমাদের নতুন ভাড়াটে উনি দিয়েছে।

মা খুশি হয়ে বললেন, ছেলেটা কত বুদ্ধিমান দেখেছিস? এসেই তোকে একটা বই ধরিয়ে দিয়েছে যাতে একটু ভালো হয়ে যাস।

  • মা, তোমার মেয়ে কি খারাপ?
  • না। আমার মেয়ে তো রাজকন্যা।
  • মা জানো কাল উনি আমাকে রাজকন্যা বলেছে।
  • বাহ! তাই নাকি? আমার মেয়ে তো রাজকন্যাই।

ফিয়োনা মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, মা বইটা পড়তে পড়তে আমার মনে হচ্ছে আমি ওনার সাথে যে আচরণ করেছি এটা ঠিক হয়নি। বেয়াদবি হয়ে গেছে তাইনা মা?
মেয়ের সুবুদ্ধি দেখে মা বললে,হ্যাঁ তুই সরি বলে নিস।

  • ওকে মা। উনি কি আমাকে পড়াবে?
  • হ্যাঁ। পড়াতে তো বলেছি। পড়তে তোর আপত্তি নেই তো?

ফিয়োনা কি ভাবলো কে জানে। অনেক্ষণ পর শুধু একটা শব্দই উচ্চারণ করলো, না।
ফাহমির সাথে আর দেখা হলো না সারাদিন। বইটা শেষ করে সন্ধ্যায় একবার ওর ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো ফাহমি আসে নি। দরজায় তালা ঝুলছে। হয়তো বাইরে কোনো কাজে ব্যস্ত। ছেলেটা কি কাজ করে সেটা শোনা হয় নি। আজকে তো পড়ানোর কথা ছিল, তাও তো পড়াতে এলো না। ভাবতে ভাবতে ফিয়োনা আবার নিজের রুমে চলে এলো।
রাত্রিবেলা আরেকবার ছাদে উঠে দেখলো ফাহমির ঘরে লাইট জ্বলছে। কিন্তু দরজা আটকানো। ফিয়োনা কিভাবে কথা বলবে সেটা ভাবতে ভাবতে এসে দরজায় শব্দ করলো। ফাহমি দরজা খুলে দিয়ে বলল- বারে তুমি!

  • হ্যাঁ। আমি।
  • ভুল করতে চলে এলে নাকি?
    ফিয়োনা হেসে বলল- না। আমি আজকে কয়েকবার আপনার খোঁজ করেছি কিন্তু পাইনি। কোথায় ছিলেন সারাদিন?

ফাহমি একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বলল, সেটা আর বোলো না। একটা কাজে গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময় শুকাতে দেয়া প্যান্ট আর শার্ট পড়ে গিয়েছিলাম । কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয়, রাস্তায় বের হওয়ার পরপরই এমন গায়ে চুলকানি শুরু হলো যে আর না পারছি হাঁটতে আর না পারছি বাসায় ফিরতে। পরে কাছাকাছি এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে গোসল করে ওর ড্রেস পড়ে বের হয়েছি।

ফিয়োনা লজ্জায় কষ্টে মাথা নামিয়ে ফেললো। প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ছেলেটাকে আঘাত করাটা ঠিক হয়নি একেবারে। সকালেই ওকে এই জামাকাপড় পড়তে বারণ করা দরকার ছিলো।
ফাহমির মুখ দেখে খারাপ লাগলো ফিয়োনার। বলল, আপনি আর এই জামাকাপড় পড়বেন না।

  • হুম পড়বো না তো।
  • গতকাল ছাদে যতগুলো জামাকাপড় শুকাতে দিয়েছিলেন এগুলো একটাও আর পড়বেন না।

ফাহমি অবাক হয়ে ফিয়োনার দিকে তাকালো। কাহিনি কি?
ফিয়োনা মুখ কাচুমাচু করে বলল- সরি। আমি একটা অন্যায় করে ফেলেছি। আপনার জামাকাপড়ে বিলাই চিমটি লাগিয়ে দিয়েছিলাম। ভুল হয়ে গিয়েছে। প্লিজ আর এসব পরবেন না।
ফাহমির মুখে কোনো কথা নেই। ও এটা ধারণা করেছিল কিন্তু বলতে পারেনি। ধারণা সত্যি হবে সেটাও ভাবেনি। কিন্তু একটা মেয়ে কি করে এটা করতে পারে? ফাহমি ফিয়োনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এদিকে ফিয়োনা লজ্জায় মুখ নিচু করে রেখেছে।

পর্ব ৪

ফিয়োনার লজ্জানত মুখ দেখতে ভালো লাগছে ফাহমির। কিন্তু একটা মেয়েকে লজ্জায় ফেলে দেয়াটা মোটেও উচিৎ কাজ হবে না। ফাহমি বললো – এটা নিয়ে মন খারাপ কোরো না। যাইহোক, বাদ দাও।

  • আপনি আমাকে কিছু বলবেন না?
  • কি বলবো?
  • বকা দিবেন না?

ফাহমি হেসে বলল- বকা কেন দেবো? বকা দেয়ার মত কিছু করো নি তো।

  • বারে, আপনার জামাকাপড়ে বিলাই চিমটি লাগিয়ে দিলাম এটা বকা দেয়ার মত কাজ নয়?
  • ইচ্ছা হয়েছে করেছো। আমি তো কারো ইচ্ছায় বাধা দিতে পারি না তাই না?

ফিয়োনা ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো ফাহমির দিকে। বলে কি ছেলেটা? ইচ্ছায় বাধা দেবে না ঠিক আছে। তাই বলে জামাকাপড়ে চুলকানি লাগিয়ে দিলেও ছেড়ে দেবে?
ফিয়োনা বললো- আমি হলে তো ঘুষি মেরে আপনার নাক ফাটিয়ে দিতাম।
ফাহমি হো হো করে হেসে উঠলো। হাসি থামিয়ে বললো- নাক ফাটানোর মত ঘুষি তোমার হবেই না। এনিওয়ে, ভেতরে এসে বসো?

  • না থাক।
  • তুমি কি বইটা পড়েছিলে?
    ফিয়োনা উত্তেজিত হয়ে বলল- পড়েছি মানে? কি যে বলেন। বইটা পড়তে পড়তে একেবারে পাগল হয়ে গেছি। একটা বই কি করে এত সুন্দর হতে পারে আমি ভেবেই পাই না। আমার নিজেরই মনে হচ্ছিল বইয়ের ভেতর ঢুকে গিয়েছি। যেমনি সুন্দর, তেমনি এক্সাইটমেন্ট। ইচ্ছে করছে আমিও ওদের সাথে চলে যাই।
    ফিয়োনার আনন্দ দেখে ফাহমির বেশ ভালো লাগছে। ও কৌতুহলী চোখে বলল- তাহলে আরেকটা বই দেই? নিয়ে গিয়ে পড়ো। নেবে?
  • হ্যা হ্যা অবশ্যই নেবো। দিন না, এটাও যেন মজার হয়।
    ফাহমি একটা বই বের করে ফিয়োনার হাতে দিলো। বইয়ের নাম ‘দীপু নাম্বার টু’। নাম দেখেই ফিক করে হেসে ফেললো ফিয়োনা। অবশ্য বেশ চকচক করছে ওর চোখ। খুশি হয়ে বলল- থ্যাংক ইউ। এটাও কি মজার বই?
  • হ্যাঁ। যাও পড়ো গিয়ে। পড়া শেষ হলে ফেরত দিয়ে আরেকটা বই নিয়ে যেও।
    ফিয়োনা মাথা ঝাঁকিয়ে আচ্ছা বলে নিচে নামার জন্য উদ্দত হলো। কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল- আপনি কি আমাকে পড়াবেন?

ফিয়োনা কিংবা ওর ভাই কাউকেই পড়ানোর ইচ্ছে ছিলো না ফাহমির। কিন্তু ফিয়োনার এই হাস্যোজ্জ্বল মুখ আর প্রশ্ন দেখে আর না করতে পারলো না। বলল- কাল থেকে পড়াবো। কিন্তু বেশিক্ষণ সময় দিতে পারবো না।

  • কেন? আপনি কি খুব ব্যস্ত মানুষ?
  • হুম। খুব ব্যস্ত মানুষ।
  • দোকানদার দের মত ব্যস্ত?
    ফাহমি হেসে জবাব দিলো, হ্যাঁ দোকানদার দের মত ব্যস্ত।

ফিয়োনা হাসতে হাসতে ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে চলে গেলো। ফাহমি বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ ফিয়োনার পথের দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটা কখনো নিশ্চুপ, আবার কখনো উচ্ছল। একেকবার একেকরকম লাগে। কিন্তু মনটা একেবারে যে খারাপ সেটা মনে হলো না। ভালোই মনে হলো। তবে প্রথম দিনের আচরণের কথা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। জিনিসটা ঠিক মেলানো যাচ্ছে না।

পরদিন সন্ধ্যায় ফাহমি ফিয়োনাকে পড়াতে এলো। ওকে দেখেই মুচকি হাসলো ফিয়োনা। এই হাসির অর্থ বুঝলো না ফাহমি। আন্টি ফাহমিকে ডেকে বুঝিয়ে বললেন মেয়েটাকে যেন সবকিছু ভালোমতো বোঝায়। ফাহমি হাসতে হাসতে বলল- আন্টি ও তো সবকিছু এমনিতেই ভালো বোঝে। হা হা হা।
ফিয়োনা পড়ার টেবিলে বসে মুখ গোমরা করে রেখেছে। ফাহমি কারণ জানতে চেয়ে বলল- একটু আগেই তো হাসিখুশি ছিলে হঠাৎ আবার কি হলো?

  • আমার একটা ফ্রেন্ড আমাকে মেসেজে গালি দিয়েছে।
  • গালি দেয়ার মত কিছু করেছিলে?
  • না মানে ওকে বলেছিলাম তুই একটা হাফ লেডিস। আর ও..
  • ও আমাকে বলেছে তুই কি জানিস তুই নিজে কি? নিজে তো মাইয়া মানুষের এক ইঞ্চিও হইতে পারোস নাই। হিজড়া তো তুই নিজে। এইভাবে বলেছে।

ফাহমি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল- হুম খুব বড় অপমান করেছে তো।

  • শুধু কি অপমান? আমার তো রীতিমতো চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। এই দেখুন?
  • কই দেখছি না তো।
  • আপনিও লোকটা ভালো না।
  • দেখো ফিয়োনা, কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় এটা একটা ম্যানার্সের মধ্যে পরে।
  • আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আমার ম্যানার্স জানা নাই?

ফাহমি পড়লো মহাবিপদে। কিছু বলাও তো যায় না এই মেয়েকে। মাথা ঠান্ডা করে নরম সুরে বলল- সবকিছু পসিটিভলি নিতে শেখো। শোনো, আমি বলিনি তুমি ম্যানার্স জানো না। কিন্তু আমি যেটা বলতে চেয়েছি সেটা হচ্ছে, সবার সাথে সব ধরণের কথা বলা যায় না। বুঝে বলতে হয়। যদি সবার সাথে সেইম বিহ্যাভ করো তাহলে তোমাকে সবাই ফালতু ভাব্বে। দু একজন বেস্ট ফ্রেন্ড দের সাথে ঝগড়া, গালিগালাজ করা যায়। কিন্তু তাই বলে সব ফ্রেন্ড দেরকে তো গালি দিলে তারা তোমাকে ছেড়ে দেবে না তাইনা? সেদিন আমার সাথে যেসব আচরণ করেছো এগুলোও তোমার উচিৎ হয় নি।

এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলার পর ফাহমি টেনশনে পড়ে গেল। আবার ফিয়োনা রেগে গিয়ে পড়ার টেবিল উল্টে দেয় কিনা। কিন্তু ফিয়োনা সেরকম কোনো সিনক্রিয়েট করলো না। বরং কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে থাকার পর বলল- আমি এটা মানছি। সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত আমি আপনার সাথে যত আচরণ করেছি তার একটাও আমার উচিৎ হয়নি। আমার উচিৎ ছিল নমনীয় হয়ে ভালোভাবে কথা বলা। সরি।
ফাহমি মনেমনে হাসল। যদিও মুখে কিছু বলল না। গম্ভীর মুখে বসে রইলো। ফিয়োনা বলল- বিলাই চিমটির জন্য ডাবল সরি।

  • ইটস ওকে। একদিন তোমার হাতের রান্না খাওয়াইয়ো তাহলেই মাফ করে দেবো।
  • বাট আমি তো রান্না পারি না।
  • তাও করবে। নয়তো সরি এলাও না।
    ফিয়োনা ভেবে বলল- ওকে আমি শিখে নেবো।
  • আরে বাহ। তুমি তো খুব ভালো মেয়ে। এখন তাহলে পড়াশোনা শুরু করা যাক।

ফিয়োনা বই এগিয়ে দিলো ফাহমির দিকে। ফাহমি একটা চ্যাপ্টার বের করে ওকে জিজ্ঞেস করলো আগের পড়া আছে কি না। ফিয়োনা মাথা ঝাঁকালো, না পড়া নেই। ফাহমি দুই লাইন করে পড়ার পর সেটা আবার ওকে বুঝিয়ে দিতে লাগলো। ফিয়োনা অবাক হয়ে দেখলো ফাহমি খুব সুন্দর করে প্রত্যেকটা বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছে। প্রতিটা লাইন পড়ে পড়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে। এরকম করে বোঝাতে সবাই পারে না, আর সব শব্দ বিশ্লেষণ করাটাও সবার সাধ্য হবে না। ফিয়োনা রীতিমতো অবাক, মুগ্ধ!
ফাহমি বলল- মাথায় ঢুকেছে?
ফিয়োনা মুগ্ধতার চোটে কথা বলতে ভুলে গেছে। ফাহমি আবার বলল- কি হলো?

  • এত সুন্দর করে পড়ালে তো আমি ঠিক থাকতে পারবো না।
  • মানে?
  • আমি তো চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে পাড়ার সবাইকে বলে দেবো। তাহলে সবাই সবার মেয়েকে পড়তে পাঠাবে। তখন তো আরেক সমস্যা হবে, সবাই আপনার প্রেমে পড়ে যাবে।
  • কেন? তুমি কি প্রেমে পড়ে গেলা নাকি?

ফিয়োনা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল- আমি পড়িনি। কিন্তু অন্যকেউ তো পড়বে নিশ্চিত।

  • ভালোই তো হবে। অনেকদিন ধরে গার্ল ফ্রেন্ড সংকটে আছি।
  • সেকি! আপনি না বললেন আপনার সব গার্ল ফ্রেন্ড জানে। ওগুলো তাহলে কারা?
  • আরে বোকা মেয়ে মজা করে বলেছিলাম।
  • ওহ আচ্ছা। কিন্তু ছাত্রীর প্রেমে পড়া কি ঠিক হবে?
  • এখানে ছাত্রীর ব্যাপার আসছে কেন? আমি তো টিচার না। সবাই তোমার মত ভালোভাবে বোঝার জন্য পড়তে আসবে। এতে করে কেউ আমার প্রেমে পড়লে তো আমি দায়ী না।

ফিয়োনা মুখ বাঁকা করে অন্যদিকে তাকালো। তারপর বলল- এরপর বুঝান?
ফাহমি আরেকটা বিষয় বুঝিয়ে দিয়ে আজকের মত পড়া শেষ করলো। ফিয়োনা বলল, ব্যস এতটুকুই?

  • অল্প শিখলে মনে থাকে ভালো।
  • ওকে। একটু বসুন আমি আসছি।

ফাহমি বসে রইলো। মিনিট দুয়েকের মধ্যে একটা পিরিচে করে ফিয়োনা নাড়ু নিয়ে এসে হাজির। নাড়ু দেখে ফাহমি বলল, আমার ফেভারিট সুইটমিট। কি করে জানলে?

  • নাড়ু সবারই ফেভারিট। কারণ এটা তো সবসময় খাওয়া হয় না। মাঝেমাঝে খাওয়া হয়। তাই।
  • হা হা হা। দারুণ যুক্তি।
  • থ্যাংক ইউ। আচ্ছা আপনার বাসায় কে কে আছে?
  • বাবা মা আর ছোটবোন।

ফিয়োনা ‘হ্যাপি ফ্যামিলি’ বলতে বলতে উঠে দাঁড়ালো। আলমারি খুলে একটা শপিং ব্যাগ এনে ফাহমির হাতে দিয়ে বলল- এটা নিয়ে যান। আম্মুকে আমার কথা বলবেন না।
ফাহমি অবাক হয়ে বলল- এটা কি?

  • রুমে গিয়ে দেখবেন। এখন নাড়ু খেয়ে চলে যান। আর দীপু নাম্বার টু বইটা শেষের দিকে। আজকে রাতেই শেষ করে ফেলবো। কাল আমাকে আরেকটা বই দেবেন। কেমন?

ফাহমি নাড়ু শেষ করে পানি খেয়ে উঠতে যাবে এমন সময় ফিয়োনা এক কাপ চা এনে সামনে দিলো। চা খেয়ে ফাহমি দ্রুত চলে এলো নিজের চিলেকোঠার ঘরে। মনে মনে কৌতুহল জাগছিলো ব্যাগে কি আছে দেখার জন্য। খুলতেই ফাহমি পুরোপুরি অবাক! তিনটা শার্ট আর দুইটা প্যান্ট! এজন্যই এত ভাড়ি লাগছিল। কি অদ্ভুত ব্যাপার। জামাকাপড়ে বিলাই চিমটি লাগিয়ে আবার নতুন গিফট করেছে। পাগলী একটা মেয়ে। অকারণেই হাসি ফুটে উঠলো ফাহমির মুখে। এখনই কিছু জানাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখন তো আর যাওয়া সম্ভব না। কালকে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। একটা উপায় অবশ্য আছে। ছাদে বসে গিটার বাজিয়ে গান ধরতে হবে। ভাগ্যক্রমে শোনা গেলে হয়তো সে ছাদে আসতেও পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *