মধ্যরাতের অপরিচিতা – অবশেষে দু’জনার মধুর মিলন

মধ্যরাতের অপরিচিতা – অবশেষে দু’জনার মধুর মিলন: হঠাৎ ইশিকা সোহেলকে অবাক করে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। ইশিকা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,’ আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি তুমিই সোহেল।’ সোহেল মুচকি হেসে বলল,’পরশু রাতের আগে আমিও জানতাম না তুমিই…


মূলগল্প

‘আমি কি তোমার সাথে কোনোদিন ও দেখা করতে পারব না?’
বলতে বলতে কেঁদে ফেলল রুমানা।

‘না রুমানা,কোনোদিন ও না। শুধু দেখা না কথাও বলতে পারবেনা আর।’
‘কেন? কেন এমন করছ?’
‘সমস্যা আছে।’

‘কি সমস্যা?’
‘আমার সমস্যার কথা তুমি শোনার কে?’
‘আমি কে মানে?’
‘বাংলা কথা বোঝোনা? তুমি আমার সমস্যা শুনতে আসার কে? হু আর ইউ?’

রুমানা সোহেলের ব্যবহারে অবাক হয়ে গেল। তারপর চোখ মুছে বলল, ‘আমি কেউ না।’
‘আমি রাখি রুমানা। তুমি ভালো থেকো।’
‘আরেকটু কথা বলো প্লিজ।’
‘আচ্ছা। আর দুই মিনিট।’

‘বাসা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।’
‘ওহ গুড নিউজ। তোমার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা রইল।’
রুমানা খানিকক্ষণ চুপ থাকল। সোহেল বলল, ‘রাখি রুমানা।’
‘একটা কথা শোনো।’

‘বলো। এটাই শেষ কথা।’
‘আমি…আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
সোহেল কল কেটে দিল।

দুই মাস আগের কথা। মাঝরাতে কল পেয়ে জেগে উঠল রুমানা। বিরক্তির সাথে কল ধরে সে। মাঝরাতে আজেবাজে লোকেরা কল দিয়ে বিরক্ত করে মাঝেমাঝে। কল ধরতেই ওপাশ থেকে হ্যালো বলল।
রুমানা চমকে যায়। কী আশ্চর্য সুন্দর কন্ঠ! বিষাদময়, একটু ভাঙা ভাঙা।
‘কে আপনি?’
‘চিনবেন না।’

‘চিনব না যখন কল করেছেন কেন?’
‘মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার কথা বলার মত মানুষ নেই। তাই অপরিচিতদের কল দিয়ে বিরক্ত করি।’
‘ওহ।’

‘বিরক্ত হচ্ছেন?’
রুমানা খেয়াল করল কথা বলতে তার খারাপ লাগছেনা। তাছাড়া ছেলেটাকে আজেবাজে কেউ মনে হচ্ছে না। রুমানা বলল, ‘না। বিরক্ত হচ্ছিনা।’
‘তাহলে কী গল্প করতে পারি?’

‘হুম পারেন। কিন্তু আপনি কে বলুন তো?’
‘আমি তেমন কেউ না।’
‘আচ্ছা। আপনার নাম কী?’
‘নাম বলব না।’

‘কেন?’
‘বলতে ইচ্ছে করছে না। আপনার নাম কী?’
‘আপনি না বললে আমিও বলব না।’
‘আচ্ছা বেশ। আমার নাম সোহেল।’
‘আমার নাম রুমানা।’

সোহেল শব্দ করে হেসে উঠল। বিষাদময় হাসি।
‘হাসলেন কেন?’
‘আমার নাম সোহেল না।’
‘তাহলে?’

‘মিথ্যে বলেছি। তবে আপনি আমাকে সোহেল বলেই ডাকবেন।’
‘দূর। আপনার উপর রাগ লাগছে৷’

সোহেল আবার হাসল।
‘তাহলে রাখি মিস রুমানা।’
বলে কল কেটে দিল সোহেল।

রুমানা কল ব্যাক করল। কিন্তু সোহেল ফোন বন্ধ করে রেখেছে। রাগে গা জ্বলে গেল রুমানার।
পরেরদিন আবার কল মাঝরাতে।

‘চিনতে পারছেন, মিস রুমানা?’
‘হুম পারছি৷ আপনি সোহেল।’
‘মনে রেখেছেন তাহলে।’

‘হুম। আপনার পরিচয়টা দিন।’
‘আমি সোহেল।’
‘কালকে কিন্তু বলেছিলেন আপনার নাম সোহেল না।’

‘সোহেল আমার ছদ্মনাম।’
‘ছদ্মনাম কেন ব্যবহার করেন? আপনার নাম নেই? হুম?’
‘ছদ্মনাম ব্যবহার করাটা দোষের কিছু না। পৃথিবীর সব বড় বড় কবি সাহিত্যিকরা ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। রবীন্দ্রনাথের ছদ্মনাম ছিল ভানুসিংহ ঠাকুর।’

‘আপনি কী রবীন্দ্রনাথ?’
‘না আমি সোহেল। হা হা হা।’
‘এই একদম হাসবেন না।’

‘কেন? আমার হাসি সুন্দর না?’
রুমানা চুপ করে গেল। এত সুন্দর হাসি সে আগে কখনো শোনেনি। যার হাসি এত সুন্দর না জানি সে কত সুন্দর। না! না! এসব কী ভাবছে সে। কে না কে তার ঠিক নেই। তার হাসি সুন্দর হলেই কী আর হায়েনার মত হলেই কী।

‘চুপ করে কেন? মিস রুমানা।’
‘আমি এখন রাখি, হ্যাঁ?’
‘আচ্ছা কাল কিন্তু আবার কল দেব।’

রুমানা কল কেটে দিল। পরদিন মাঝরাতে জেগে বসে রইল রুমানা। কিন্তু কল আসে না। একি ব্যাপার! কল আসে না কেন? দুইটা, তিনটা, সাড়ে তিনটা বেজে গেল। কল আসল না। রুমানা ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের মধ্যেই রুমানা শুনছে রিংটোন বাজছে। ফোনের হাত বাড়িয়ে ফোন রিসিভ করল।

‘অ্যাই রুমানা!’
রুমানা চমকে উঠল। এমনভাবে তাকে কেউ ডাকেনা কতদিন ধরে। রুমানা ঘুম ঘুম গলায় বলল,
‘হুম বলুন।’

‘ঘুমোচ্ছিলেন?’
‘হুম। কে আপনি বলুন তো?’
‘আমি সোহেল।’

‘আমার কাছে কি চান? প্রতিদিন কল করেন কেন?’
‘আমার কথা বলার মানুষ নেই, তাই!’
‘আপনি কি আমাকে চেনেন?’
‘না।’

‘দেখা করবেন আমার সাথে?’
‘করব।’
‘কবে করবেন?’
‘কোনো একদিন।’
‘আচ্ছা।’
‘আজকে যে দেরিতে কল দিয়েছি, মিস করেননি?’
‘করেছি।’

‘বেশি না অল্প?’
‘অল্প।’
‘আচ্ছা।’
‘হুম।’
‘এখন রাখি,রুমানা।’
‘হুম।’

এরপর থেকে প্রতিদিন কল আসতে লাগল। মধ্যরাতে, সকালে, বিকেলে। রুমানার কথা বলতে খুব ভালো লাগত। কিন্তু এত ভালো লাগে কেন? প্রেমে পড়ে গেছে? এত সহজ? এই দুইমাস কতরকম কথা, হাসি, ঠাট্টা, ঝগড়া আর আজকে তার পরিসমাপ্তি। রুমানা খুব কাঁদছে। সোহেল কেন এমন করল? কেন?

সোহেল একটা সোফায় বসে আছে। তার আসল নাম নিহাল। রুমানাকে সে কখনোই তার আসল নাম বলেনি। কারণ সোহেল নামই ভালো লাগে তার। রুমানাকে সোহেল ও ভালোবেসে ফেলেছিল। কিন্তু বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করে ফেলল তাই আর সোহেল এগুতে চাইনি। তাছাড়া রুমানার ও বিয়ে ঠিক হয়েছে। একদিক দিয়ে ভালোই হলো। আস্তে আস্তে রুমানা ও সোহেল কে ভুলে যাবে।
এবার সোহেল তাকাল খাটের দিকে। খাটের মধ্যে লাল শাড়ি পরে আঁচল ছড়িয়ে একটা মেয়ে বসে আছে।

মেয়েটা সোহেলের বিয়ে করা বউ৷ হ্যাঁ, আজকেই তার বিয়ে হয়েছে এই মেয়েটার সাথে। নাক পর্যন্ত ঘোমটা টানা মেয়েটার। তাই ভালো করে মুখ দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য সোহেল ছবিতে দেখেছে মেয়েটাকে। দেখতে ভীষণ সুন্দর। মেয়েটার নাম ইশিকা। খাটের মাঝে ধবধবে সাদা চাদর। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লাল গোলাপের পাপড়ি। তার মাঝখানে লাল শাড়ি পরা ইশিকাকে একটা জীবন্ত টকটকে লাল গোলাপের মত লাগছে। সোহেলের হাতের কাছে রং-তুলি থাকলে সে অবশ্যই এই দৃশ্যের একটা ছবি এঁকে ফেলত। ছবির নাম হতো ‘বাসর’ কিংবা ‘জীবন্ত লাল গোলাপ’।

ইশিকা অনেকক্ষণ যাবৎ মাথা নিচু করে বসে আছে। সোহেল ভাবল এবার কিছু বলা উচিৎ। সোহেল ডাকল, ‘ইশিকা।’

ইশিকা চমকে তাকাল। সোহেল ভাবল হঠাৎ করে ডাক দেয়ায় বোধহয় ভয় পেয়েছে। চমকে উঠে আবার দ্রুতই নিজেকে সামলে নিল। মৃদু স্বরে বলল,’ জ্বি।’
‘সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে। আপনি ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। আলমারিতে সুতি শাড়ি রাখা আছে।

কাপড় পালটে নিন। চাইলে শাওয়ার ও নিতে পারেন। ফ্রেস লাগবে।’
সোহেলের মনে হলো সে স্বামী হিসেবে বেশ দায়িত্ববান। এই মেয়েটাকে সে সবটুকু উজাড় করে ভালোবাসবে। মেয়েটা যেন তার কাছে পরিপূর্ণ সুখী হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মাথার মধ্যে রুমানা ঘুরঘুর করছে। সোহেলের প্রথম ভালোবাসা। আজকে এই মেয়েটার জায়গায় রুমানাও থাকতে পারত৷ কিন্তু সোহেল কখনো তার পরিবারের বিরুদ্ধে যায়নি। সবাই বিয়ে ঠিকঠাক করে তাকে জানিয়েছে। পরিবারের মান সম্মান রক্ষার জন্যই তাকে বিয়েটা করতে হয়েছে৷

ইশিকা ধীর পায়ে খাট থেকে নেমে আয়নার সামনে দাঁড়াল। তারপর মাথার ঘোমটা তুলল। সোহেল দেখল মেয়েটা ছবির চেয়েও সুন্দর। টানা টানা চোখ। মুখে লালচে আভা। সোহেল মনে মনে হাসল। সকালে ঘুম থেকে উঠে এমন সুন্দর একটা মুখ দেখলে সারাদিন ভালো কাটবে। ইশিকা গয়নাগাটি খুলে একটা সুতি শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল।

সোহেল ও পাঞ্জাবী পায়জামা পালটে একটা নেভি-ব্লু কালারের টি-শার্ট আর ট্রাউজার পরে নিল। হাতে মোবাইলটা নিয়ে টাইম চেক করল। সাড়ে বারোটা বেজে গেছে৷ আচ্ছা রুমানাকে কী একটা কল দেয়া যায় না? এমনিতেই একটু খোঁজখবর নেয়া। খুব কী অন্যায় হবে? না মনে হয়। সোহেল তার টেবিলের ড্র‍য়ার থেকে সেই সিমটা বের করল যেটা দিয়ে রুমানাকে কল করত।

মোবাইলে সিমটা ঢুকিয়ে রুমানার নাম্বার খুঁজে বের করল। একটু ইতস্তত করে শেষে কলটা দিয়েই ফেলল সোহেল। রিং হচ্ছে। হঠাৎ সোহেল আবিষ্কার করল কাছেই কোথাও গান বাজছে। ওর খুব প্রিয় একটা গান। ‘মায়া বন বিহারিনী’। সোহেল আশেপাশে তাকাল। দেখল ইশিকার ফোনটা বাজছে। সোহেল একবার নিজের ফোনের দিকে তাকাল একবার ইশিকার ফোনের দিকে তাকাল। তারপর ইশিকার ফোনটা হাতে নিল।

স্ক্রিনে ওর নাম উঠেছে। সোহেল ফোনটা রেখে কতক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। তাহলে ইশিকাই..। নাহ! আর ভাবতে পারছেনা সে। এত ভাগ্য নিয়ে এসেছে পৃথিবীতে! এমন সময় ইশিকা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসল। সোহেল বলল,’আপনার ডাকনাম কী?’
‘বাসায় ইশিকা ডাকে আর বন্ধুরা রুমানা ডাকে।’

সোহেল বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। সে এখন ও বিশ্বাস করতে পারছে না ইশিকাই রুমানা। সোহেল কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশিকা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল।

‘ইশিকা।’
ইশিকা মাথা না তুলেই বলল,’জ্বী,বলুন।’
‘আপনার মোবাইলে কল এসেছিল।’

ইশিকা তার ফোনটা হাতে নিতেই একটা ধাক্কার মত খেল। সোহেল কল দিয়েছিল। তার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসল। হাত পা কাঁপতে লাগল। ভালোবাসার অনুভূতি। কিন্তু খুব দেরী হয় গেল যে। সে যে এখন অন্য কারো স্ত্রী। ইশিকা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে সোহেলের নাম্বারটা ডিলিট করে দিল।

তারপর ভাবল ডিলিট করে কী হবে নাম্বার তো তার মুখস্তই। ইশিকা খাটের দিকে তাকাল। নিহাল নামের মানুষটা কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমিয়ে পড়েছে। ইশিকা ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলল। বাসররাতে কী কেউ ঘুমায়? সে ভেবেছিল মানুষটা তার সাথে সারারাত গল্প করবে। ভালোই হয়েছে ঘুমিয়ে পড়েছে। ইশিকার নিজের ও ঘুম পাচ্ছে। সেও বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ল।

পরদিন সকাল। ইশিকা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ঠান্ডা বাতাস। তার শীত শীত করছে। তার স্বামী ঘরে নেই৷ কোথায় গেছে তাও ইশিকা জানে না। জানার প্রয়োজন ও মনে করছে না। এই লোকটা তার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাই ইশিকার ও ইচ্ছে করছে না আগ্রহ দেখাতে৷ হঠাৎ ফোনে রবীন্দ্রসংগীত বেজে উঠল ‘মায়া বন বিহারিনী..’। এই গানটা সোহেলের পছন্দ বলে সে রিংটোনে দিয়ে রেখেছিল। ইশিকা দেখল সোহেল কল করেছে। কল ধরে ইশিকা ক্লান্ত গলায় বলল,’ কেন কল করেছ?’
‘আই এম সরি,রুমানা।’

ইশিকার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল দীর্ঘদিন পর পরিচিত কন্ঠটা শুনে।

সোহেল আবার বলল,’রুমানা, প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে। আমি সেদিন তোমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছিলাম যা আমার মোটেও উচিৎ হয়নি৷ আমিও তোমাকে ভালোবাসি রুমানা,খুব ভালোবাসি।’
ইশিকার দম বন্ধ হয়ে আসছে সোহেলের এসব কথা শুনে।

সে বলল,’কেন এমন করেছিলে সেদিন?’
‘বলব রুমানা,সব বলব। তবে এভাবে না, মুখোমুখি। আমি তোমার সাথে দেখা করব।’

‘কিন্তু সোহেল, খুব দেরি হয়ে গেছে। এখন আর সম্ভব না। আমার বিয়ে হয়ে গেছে৷ আর আমি আমার স্বামীকে ঠকাতে পারব না।’
ইশিকার ঠিক মাথার উপরে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা সোহেল একটু হকচকিয়ে গেল। গতকাল রাতে সোহেলের কল দেখে ইশিকার যে এক্সপ্রেশন দেখেছিল তাতে সে ভেবেই নিয়েছিল ইশিকা সোহেলকে অন্ধের মত ভালোবাসে। কিন্তু মেয়েটা এত ভালো যে সে নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে দিল স্বামী আর সংসারের জন্য।

‘হ্যালো,সোহেল।’
সোহেলের ভাবনায় ছেদ পড়ল।

‘হ্যাঁ, রুমানা শোনো। তুমি কি একবার আমার সাথে দেখা করবে? প্লিজ রুমানা, শুধু একবার।’
রুমানা চুপ করে আছে।
সোহেল বলল,’ একবার দেখা করলে তো তোমার স্বামীকে ঠকানো হবে না, তাই না?’
রুমানা বলল,’বেশ করব।’
‘কালকে বিকেলে তাহলে তুমি চলে এসো। সাড়ে চারটার দিকে এসো। চারুকলা অনুষদের সামনে থাকবে। সবুজ রঙের শাড়ি পরে আসবে। হাতে একটা সিলভার কালার পার্স রাখবে৷ তোমার সিলভার কালার পার্স আছে তো?’

‘কিন্তু সোহেল..’
‘কোনো কিন্তু না। তুমি আসবে এটাই ফাইন্যাল।’
সোহেল ফোন রেখে দিল। ইশিকা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল।

পরদিন বিকেল। সোহেল আড়চোখে দেখছে ইশিকা রেডি হচ্ছে। তার কথা মতোই সবুজ রঙের একটা শাড়ি পরেছে। সাজগোজ করেনি শুধু চোখে কাজল দিয়েছে। হাতে একটা সিলভার কালারের পার্স নিল। তারপর সোহেলের দিকে ফিরে বলল,’শুনছেন।’
‘হ্যাঁ,বলুন।’

‘আমার একটা বান্ধবীর বাসা চারুকলা অনুষদের কাছে। ওর বাসায় যাব একটু।’
সোহেল মনে মনে হাসল। কী অবলীলায় মিথ্যা কথা বলছে।
‘ঠিক আছে, যান।’
ইশিকা বেরিয়ে গেল।

চারটা চল্লিশ বাজছে। ইশিকা চারুকলা অনুষদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ সোহেলের দেখা নেই। ফোনটাও অফ করে রেখেছে। এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন ডাকল,’ইশিকা।’
ইশিকা পেছনে ফিরে নিহালকে দেখে চমকে গেল।
‘আপনার বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার কথা। আমি অনেকক্ষণ ধরে দেখছি আপনি এখানেই দাঁড়িয়ে আছেন। কার জন্য অপেক্ষা করছেন?’
‘ইয়ে..মানে..’

ইশিকা কিছু বলার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠল। ইশিকা দেখল সোহেল কল করেছে৷ সামনে তার স্বামী। কীভাবে কল ধরবে সে?
সোহেল বলল,’ কলটা রিসিভ করুন।’

ইশিকা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। সোহেল একটু ধমকের সুরে বলল,’ কী হলো কথা কানে যাচ্ছে না? কলটা রিসিভ করুন।’
ইশিকার চোখে পানি এসে পড়ল। সে উল্টোদিকে ঘুরে কলটা রিসিভ করল। রিসিভ করে ইশিকার মনে হলো সে দুইটা হ্যালো শুনতে পেল৷ একটা ফোনের ভেতর থেকে আরেকটা পেছন থেকে। ইশিকা ঘুরে দাঁড়াল। নিহালের কানেও ফোন। নিহাল বলল,’কী হলো? মিস রুমানা,চিনতে পারছেন না বুঝি?’

ফোনের ভেতর থেকেও একই আওয়াজ আসল। ইশিকা ফোনটার দিকে গভীর বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে তাকাল। মানুষটা হাসি হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ নিঃশব্দে কাটল। হঠাৎ ইশিকা সোহেলকে অবাক করে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। ইশিকা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,’ আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি তুমিই সোহেল।’
সোহেল মুচকি হেসে বলল,’পরশু রাতের আগে আমিও জানতাম না তুমিই সেই মধ্যরাতের অপরিচিতা।’

লেখা – ইউসা ইনতান মৃন্ময়ী

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “মধ্যরাতের অপরিচিতা – অবশেষে দু’জনার মধুর মিলন”গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – বাসর রাতে গল্প – মিহিনের কোমরে হাতটে দিতেই সে শিউরে উঠল

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *