লাভ উইথ মাই বেটার হাফ – বিবাহিত জীবনের প্রেম: সোবহান বিবাহিত। এখন সে সোনালীকে তার খোলামেলা ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছে ইমরানকে বিয়ে করার জন্য। ওর সাথে সম্পর্কে যাওয়ার জন্য। এতে সোবহানের দুটো লাভ।
পর্ব ১১
কার্ডিয়াক আই সি ইউ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে অধরা। তার শ্বশুরের অপারেশন শেষ কিন্তু তাদের ভিতরে যাওয়ার অনুমতি নেই।
ইমরান ছুটে এসেছে এই কথা শুনে। তার চুল দিয়ে এখনো টপটপিয়ে পানি পড়ছে।
চোখ দুটো মারাত্মক লাল হয়ে আছে। এই এক সমস্যা ইমরানের৷ একটু রাত জাগলে বা শরীরের উপর দিয়ে ধকল গেলে তার চোখ হয়ে যায় রক্তবর্ণের।
“ডক্টর কোনো কমপ্লিকেশন?”
ইমরানের কাধে হাত রেখে আশ্বস্ত করে ডক্টর জানালেন,
“চিন্তা করবেন না। আগামী ৬-৭ ঘন্টায় জ্ঞান চলে আসবে। জ্ঞান ফিরলে আপনাকে জানাবো। তখন এসে দেখে যেতে পারবেন।”
সবাই স্বস্তির শ্বাস ফেলল। এবার ইমরান তাকালো অধরার দিকে। তার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
চোখের নীচের কালি জানান দিচ্ছে তার বিশ্রাম প্রয়োজন।
ইমরান এবার অধরার বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাদের চলে যেতে বলল।
যেহেতু এখানে থেকে তাদের কোনো কাজ নেই তাই তারা চলে গেল।
বাবার সাথে বাসায় ফিরে অধরা ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ করে আছে। তার নিজস্ব রুমে ঢুকে প্রথমে কোনো ভাবে গোসল করে ফিরে এসে গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। তার চেনা পরিচিত আপন ঘরের চার দেয়ালে চোখ বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নেয় সে। বারান্দায় লাগানো কোনো ফুল থেকে আসছে মিষ্টি গন্ধ। ফুলটার গন্ধ সে চিনে কিন্তু নাম মনে পড়ছে না। এখন তার উঠে যেতেও ইচ্ছে করছে না।
পাশ ফিরে বালিশ বুকে নিয়েই সে তলিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে। তার যখন ঘুম ভেঙেছে তখন রাত ফুরিয়ে ভোর হবে বলে। রাত তিনটে, ক্ষুধার জ্বালায় সে বসে থাকতে পারছে না। ওড়না নিয়ে খাবারের রুমের দিকে গিয়ে দেখতে পায় তার মা ভাত নামাচ্ছে চুলো থেকে।
হাত দিয়ে চুলগুলো খোপা করে অধরা জিজ্ঞেস করলো,
“এখন ভাত রান্না করো কার জন্য?”
“ওই যে এক নবাবজাদি আছে না? তার জন্য।”
“নবাবজাদী যে এখন খেতে আসবে তা আপনি জানেন কীভাবে?”
“২৫ বছর পেলে তারপর বিয়ে দিছি। নারী নক্ষত্র সব জানি।”
টেবিলে বসে অধরা দেখতে পেল তার মা তার জন্য শুটকী ভর্তা, সজের পাতা ভর্তা এবং গরম ধোঁয়া উঠা ভাত নিয়ে বসে আছেন।
এমন খাবার দেখে অধরার আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ খেয়ে নেয়। খেতে খেতে হঠাৎ তার মনে হয় আঞ্জুমের কথা। আঞ্জুম কেন এটা বলল?
সে একবার চিন্তা করে মা কে কী জিজ্ঞেস করবে?
আবার ভাবে মা যদি না বলে? রঙ্গান ভাই জানলেই বা কী বলবে?
অধরাকে ভাবুক চেহারায় দেখে তার মা তাকে উল্টো জিজ্ঞেস করলেন,
“খাওয়ার সময় এত কীসের চিন্তা?”
“তেমন কিছু না।”
“বলে ফেলো।”
অধরা তখন ধীরেধীরে মা কে সব’টা বললে তার মা বলল,
“রঙ্গানের মায়ের লিভার সিরোসিস। প্রায় লাখ লাখ টাকার খরচ এই চিকিৎসায়। এখন তারা চায় রঙ্গান সব টাকা দিক। কারণ তার মা বলে।
কিন্তু তুই তো জানিস রঙ্গান কেমন। ওর হাতে টাকা থাকে কই? ও এক সাথে ৫০ জন বৃদ্ধার খরচ একা চালায়। ও যদি ওর মা কে টাকা দেয় তবে সেই পঞ্চাশ জন না খেয়ে থাকবে।
আঞ্জুম হচ্ছে রঙ্গানের সৎ বোনের জা। তাই সে সব জানে। হয়তো রঙ্গান টাকা দেয়নি তাই সে এমন বলেছে।”
“একে বারেই দেয়নি?”
“ও ছেলেকে তুই জানিস না? দিয়েছে ঠিকই কিন্তু কী বলতো! ওদের চাহিদা পূর্ণ করতে পারছে না বলে এত সমস্যা।”
এক মগ চা হাতে নিজের ঘরে ফিরে এলো অধরা। তার শাশুড়ি মা পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছেন।
নানা জল্পনা কল্পনায় অধরা কল দিলো ইমরানের ফোনে।
বালিশের নিচ থেকে বেজে উঠেছে ফোন।
চায়ের মগে চুমুক দিয়ে অধরা ফোন হাতে নিলো। কপালের দিকটায় আবেগী ভঙ্গিতে একটু আঘাত করে সে ইমরানের ফোন দিয়ে৷
নিজের ফোন টেবিলের উপর থেকে নিয়ে কল দেয় তার ভাইকে।
একবার কল হতেই রিসিভ করে সে। মনে হয় ফোন হাতেই ছিল।
“প্রেম করছিলে?”
“বেশি পেকেছিস?”
“পাকতে পাকতে ঝুনা নারকেল হয়ে গেছি।”
“তাই তো দেখছি।”
“ডক্টর কিছু বলেছে?”
“না।”
“কোথায় তোমরা? গাড়ির শব্দ কীসের?”
“চা খেতে বেরিয়েছিলাম।”
“চা খাওয়া যায় না।”
“এই একদম চুপ। বইন্যা এখন শুরু করিস না।”
“আচ্ছা। ইমরান কই?”
“কেন? প্রেম করবি? লজ্জা করে না? বড় ভাইয়ের ফোনে কল দিয়ে প্রেম করতে চাস?”
“না করে না। ফোন দাও তো।”
“ওর ফোনে কল দে। আমি ঘুমাবো।”
“রাস্তায় ঘুমাবা? দেও নইলে বাবাকে তোমার বিয়ের কথা বলবো না।”
“আচ্ছা দিতেছি। তোর জ্বালায় মনে হয় দেশ ছাড়ি চলি যাই।”
“লাভ নাই, লাভ নাই। ছোটো সে তরী। তোমার কুকামে গিয়াছে ভরী।”
বলেই অধরা হাসতে থাকে। ততক্ষণে ফোন উঠেছে ইমরানের কানে। সে চুপচাপ শুনছিল হাসি।
“আসসালামু আলাইকুম।”
হঠাৎ সালাম শুনে অধরা কিছুটা অবাক হয়ে কান থেকে ফোন নামিয়ে নেয়। কল কী কেটেছে না কী কনফারেন্স হয়েছে দেখার জন্য। কিন্তু না এমন কিছুই হয়নি। পুনরায় ফোন কানে নিয়ে অধরা বলল,
“ওয়ালাইকুম আস সালাম। হঠাৎ সালাম?”
“তোমার হাসিটা আমায় শান্তি দিলো তাই এই সালামের মাধ্যমে চাইছি তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।”
“বাবা কেমন আছে? জ্ঞান ফিরেছে?”
“হ্যাঁ। ভালো আছে।”
“আলহামদুলিল্লাহ।”
টুকটাক কথা শুরুর আগেই হঠাৎ টুং ম্যাসেজের শব্দ হয় ইমরানের ফোনে।
লক খুলে ম্যাসেঞ্জারে ঢুকতেই অধরা দেখল,
সোনালী ইভা নামের মেয়ে আইডি থেকে অনেকগুলো ম্যাসেজ। লাস্ট ম্যাসেজে মেয়েটা আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছে।
পর্ব ১২
সোনালীর সামনে বসে আছে অধরা। মেয়েটার অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়ে গেল অধরার।
“আপনি কে?”
“আমি অধরা। ইমরানের স্ত্রী।”
“আপনাদের ডিভোর্স হয়নি?”
“এখনো হয়নি। তবে…”
“তবে কী?”
“হয়ে যাবে। চিন্তার কিছুই নেই।”
অধরার পাশে বসে থাকা তুষার বিস্ফোরক চোখে তাকিয়ে আছে তার বোনের দিকে। পাশে বসে তার বোন শান্ত চোখে কথাগুলো বলে ফেলল।
এই কী সেই অধরা? যে রাতের পর রাত পাহারা দিয়েছিল ইমরানকে। যখন সে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সেবার ইমরান ক্যাম্পাস থেকে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল খাগড়াছড়ি। ফেরার পথে ওদের বাস এক্সিডেন্ট হলো।
ইমরানের পায়ের হাড়ে চির ধরেছিল।
হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাকে। অধরার তখন অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষা চলে। টানা চার ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে সে চলে যেত হাসপাতালে।
ইমরানের পাশের বেডে একটু খানি জায়গায় ইমরানের মায়ের সাথে ভাগাভাগি করে থাকতো।
পুরো কেবিনে ছোট্ট এক সংসার সাজিয়ে ফেলেছিল সে।
দিনে একবার বাসায় এসে গোসল করে খাবার নিয়ে ছুটতো হাসপাতালে।
ইমরান তখন পুরোপুরি অধরার উপর নির্ভরশীল।
প্রচন্ড বৃষ্টিতে ইমরানের মা বাসা থেকে আর যেতে পারেনি হাসপাতালে।
রাত তখন এগারোটা। ইমরান হঠাৎ তুষারকে কল দিয়ে বলল,
“একটু আসবেন?”
তুষার বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দ্রুত ছুটে এসেছিল। কেবিনে ঢুকে দেখে অধরা ঘুমিয়ে আছে। ইমরান বসে বসে একটা ইংরেজি নোবেল পড়ছিল।
কেবিনে কোথাও ইমরানের মা কে না দেখে তুষার ভেবেছিল হয়তো ওয়াশরুমে কিন্তু কিছুক্ষণ পর ইমরান বলল বৃষ্টির কারণে সে আসতে পারেনি।
“তুমি আমায় আসতে বললে কেন?”
“আপনি অধরার ভাই। সত্যি বলতে অধরার জন্যই।
যদি আমি না পারি আমার লোভ কে সামলাতে!”
“এই ভাঙা পা নিয়ে?”
“মনে শয়তানি ঢুকলে শরীরে অসুরের শক্তি ভর করে।”
তুষার সে রাতেই এমনকি ঠিক সেই মুহুর্তে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
অধরাকে বিয়ে ইমরানের কাছেই দিবে।
ওয়েটার এসে ডাক দেওয়াতে ঘোর কাটে তুষারের। কি চলছে ইমরান এবং অধরার জীবনে? কোনো ঝড় বইছে কী?
আর তার সামনে বসে থাকা মেয়েটিই বা কে?
আজ সকালে বাসায় ফেরার পর যখন তুষার ফ্রেশ হয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন অধরা এসে দরজায় নক করে।
তার সাথে যেতে হবে বললে তুষার ঝটপট তৈরী হয়ে নেয়।
এত বছরেও বোনকে কোথাও তারা একা ছাড়েনি। ভেবেছিল হয়তো কলেজে যাবে ছুটির ব্যপারে কিন্তু তারা এসেছে বাসার কাছাকাছি একটা রেস্তোরাঁয়। কেন যেন আজ অধরা বোরখা পরেনি৷
পরণে তার ধূসর রঙের সালোয়ার সাথে লম্বা কোটি। পনিটেইল করে বাধা চুল ছড়িয়ে আছে পুরো পিঠ ঝুড়ে।
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অধরা সামনে থাকা মেয়েটিকে বলল,
“এত অল্প দিনের সম্পর্কে এতটা বিশ্বাস কিভাবে?”
“ভালোবাসার মূল স্তম্ভই তো বিশ্বাস।”
“কিন্তু আপনার ভালোবাসা তো নোংরামি ছাড়া কিছুই দেখছি না।”
“আমি ইমরানকে…….. “
“আমি জানতে ইচ্ছুক নই। তবে শুনুন। মাত্র মাস কয়েকের সম্পর্কে আপনি কাউকে আপনার খোলামেলা ছবি দিবেন, তার সাথে বার বার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় রাখবেন, সেগুলো গোপনে ভিডিও ধারণ করে যদি আপনাকে কেউ ব্ল্যাকমেইল করে এর দায়ভার অন্য কেউ কেন নিবে?”
“আমি নিরুপায়।”
“একজন নারী কখনো নিরুপায় হয় না। আপনার সাথে যা হয়েছে দুজনের সম্মতিতে হয়েছে। সে আপনাকে জোড় করেনি। তাছাড়া তার স্ত্রী আছে জানা স্বত্তেও আপনি তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক রেখেছেন। এর দায়দায়িত্ব আপনার উপরেই বর্তায় মিস সোনালী।”
“আপনি কী সম্পূর্ণ দোষ আমার দিচ্ছেন?”
“মোটেও না। আমি শুধুই আপনার ভুলগুলো বললাম। আপনি একটা ভুল ধামাচাপা দিতে আরো অনেক বড় ভুল করে ফেলেছেন। আপনার জন্য আজ আমার সংসার নষ্টের পথে। এর দায়ভার কে নিবে একটু বলবেন আমাকে?”
“আপনার স্বামীর কোনো দোষ নেই।”
“আমি কীভাবে ধরে নিবো তার দোষ নেই? যে ছেলে তার বন্ধুর কথায় স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে তার কোনো দোষ নেই?”
“আপনি বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করুন।”
“দুঃখিত আমার আর সময় হবে না। আপনি সাহায্য চেয়েছিলেন আপনি পাবেন। এই নিন, এই নাম্বারে কল দিয়ে শুধু বলবেন আমার নাম টা বলে সমস্যার কথা বলবেন। আশা করি সমস্যার সমাধান খুব দ্রুত পেয়ে যাবেন।”
“ইমরান সত্যি আপনাকে ভালোবাসে। ও শুধুই ওর বন্ধুর ষড়যন্ত্রের স্বীকার।”
“আজ ষড়যন্ত্রের স্বীকার, কাল যে আবার হবে না এর কী নিশ্চয়তা? আমি আমার মানসিক শান্তি নিয়ে খেলতে পারবো না।”
“ডিভোর্সটা কী সত্যি করে ফেলবেন।”
“হ্যাঁ।”
তুষার বিল মিটিয়ে অধরাকে নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে আসে। অধরা কিছুই খায়নি৷ এখন প্রথমে তাকে খাওয়ানো প্রয়োজন। রঙ্গানকে ম্যাসেজ করে পূর্বেই আসতে বলেছে সে। রঙ্গানের জন্য অপেক্ষা করছিল দুই ভাইবোন।
“তোকে দেখলেই আমার গলা শুকায় কেন রে?”
রঙ্গানের কথায় চোখ ছোট করে তার দিকে তাকায় অধরা। তুষার ততক্ষণে বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত কারণ অধরার প্রিয় বিরিয়ানি আনতে যাবে।
কিন্তু রঙ্গান ইশারায় দেখালো সে সাথে করেই নিয়ে এসেছে৷
তুষার, অধরা বাইকে করে এসেছিল। অধরা ভাইয়ের বাইকে উঠতে যাবে তখন রঙ্গান বলল,
“আমি কী ডেলিভারি ম্যান? ফুড পান্ডার খাবার সার্ভিস দিতে এসেছি?”
তুষার বলল,
“দে ভাই দে। আমি নিয়ে যাচ্ছি তুই তৃষ কে নিয়ে আয়।”
“যেতে পারি, এক শর্তে।”
“কী?”
“আজকেই ভাইয়ের বিয়ের কথা বাবাকে জানাতে সাহায্য করবে?”
রঙ্গান হাত এগিয়ে হ্যাণ্ডশেক করে বলল,
“ডিল।”
বাসায় ফিরে রঙ্গানকে সবটা বলল তুষার। ইমরানের বন্ধু সোবহানের সাথে সোনালীর সম্পর্ক।
সোবহান বিবাহিত। এখন সে সোনালীকে তার খোলামেলা ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছে ইমরানকে বিয়ে করার জন্য। ওর সাথে সম্পর্কে যাওয়ার জন্য। এতে সোবহানের দুটো লাভ।
রঙ্গান জিজ্ঞেস করল,
“কী?”
“এটা সেই সোবহান যে অধরার পিছনে ঘুরতো এবং আমি ওর একটা দাঁত ভেঙেছিলাম অধরাকে এসিড মারার হুমকি দিয়েছিল বলে৷
এক প্রতিশোধ নিবে। আর দুই ইমরান যেহেতু ওর জালে ফেসেছে তাই ও চাইলে বিয়ের পর যখন তখন সোনালীকে ব্যবহার করতে পারবে।”
“ইমরান এসব জানে?”
“না।”
ঠিক সে মুহূর্তে অধরার ফোন বেজে উঠলো। রঙ্গান ফোন রিসিভ করে ইমরানকে জানালো অধরা গোসলে৷
ইমরান ফোন কেটে দিলো কোনো জবাব না দিয়েই।
তার পাশে বসে থাকা সোবহান বলল,
“ঘন্টা খানেক আগেই দেখলাম ওই পোলার লগে হাত ধইরা বের হতে রেস্তোরাঁ থেকে। আবার এখন কীসের গোসল? ইমরান বিশ্বাস কর ঠিক আছে কিন্তু তোর বিশ্বাসটা অন্ধবিশ্বাস। সব’চে বড় কথা তুই যে এত খুশি যে অধরা তোর বাবার চিকিৎসার খরচ নিজে সবটা ম্যানেজ করছে। দেখিস তো খোঁজ নিয়ে? দেখবি ওই পুলিশ ব্যাটায় টাকা দিছে।”
পর্ব ১৩
“আমি কী তোকে মিথ্যে বলছি ইমরান? এই দেখ ছবি। আমি যখন ওইদিক দিয়ে আসি দেখি দুজনে দাঁড়িয়ে আছে। কি নিয়ে যেন কথা কাটাকাটি হচ্ছে। তারপর অধরাই আগে হাত বাড়িয়ে দিলো আর রঙ্গান হাত ধরলো। তারপর বাইকে করে চলে গেল।”
“কখন দেখেছিস?”
“কিছুক্ষণ আগে। বড়জোর ঘন্টাখানেক আগে।”
ইমরান কিছুই বলল না, সিগারেট ধরালো। সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে দিতে দিতে বলল,
“তোর কী মনে হয় সোবহান?”
“কী মনে হতে পারে?”
“ওদের মধ্যকার সম্পর্ক?”.
” এইভাবে হাত ধরাধরি? সরি টু সে, কিন্তু আমার বউকে আমি তো দিবো না।”
“আমার জায়গায় থাকলে তুই কী করতি?”
“সত্যি বলবো?”
” জিজ্ঞেস যখন করেছি সত্যিটাই জানতে চাই।”
“চুলের মুঠি ধরে বাসা থেকে বের করে দিতাম। আর পরদিন সোজা তালাক।”
“আর বউ যদি ফিনফিনে শাড়ি পড়ে সুগঠিত শরীর দেখিয়ে রাতভর পার্টি করে?”
“আর যাই হোক ওই বউ নিয়ে সংসার হয় না।”
“একদম ঠিক। তাহলে চল।”
“কোথায়?”
“এই তো এডভোকেট আব্দুল মোতালেব এর কাছে।”
“ডিভোর্স স্পেশালিষ্ট? আমি তো জানি তুই কাগজ রেডিই করেছিস।”
“করেছি আমার জন্য। তোর টা তো এখনো বাকী।”
“মানে?”
“খুব সোজা। তুই তো আমাদের ব্যাচের শেয়াল পন্ডিত অথচ এই সোজা কথার মানে বুঝলি না?”
“ঝেড়ে কাশি দে। কি বলতে চাইছিস?”
“অধরা, রঙ্গানের হাত ধরেছে বলে তুই বলছিস আমার ওকে তালাক দিয়ে দেওয়া উচিৎ।”
“রাস্তাঘাটে মান-সম্মান খোয়াতে না চাইলে দিয়ে দেওয়া উচিৎ।”
“তবে তোর উচিৎ তাই করা। তোর বউকে তালাক দেওয়া।”
“কি সব বলছিস? পিনিকে আছিস?”
“ছিলাম। শোন তোদের কাছে সাপ্তাহিক রিল্যাক্স মানে সুইমিং পুলের পানিতে নেমে ছেলে মেয়ে একত্রে গোসল করে নেশায় মত্ত থাকা। কে কার বউকে কীভাবে স্পর্শ করছে, কই কই স্পর্শ করছে সেসব তোরা দেখিস না।
তোরা ওই নীতিতে চলিস।
‘তোর বউ আমার বউ, আমার বউ তোর বউ। ‘
কিন্তু আমি না। হ্যাঁ আমার অনেক দোষ। বিগত চারটে মাস আমার ছোট্ট পাখির বাসায় কি না বয়ে গেল। যে মেয়েটা আমার সব সেই মেয়েকে আমি সেসব মেয়ের সাথে তুলনা করতেছিলা।
শালা কি বলবো আমরা কাপুরুষের জাতটাই এমন। নিজের ঘরের হীরেকে চিনি না, বাইরের বালির প্রশংসায় মেতে থাকি।
তুই একটা কথা বল তো!
কোটি টাকার সম্পত্তি তুই কাউকে এমনিই ধরতে দিবি?
না তো!দামী ফোনটাই দিবি না কারো হাতে। অথচ দেখ
আমার অধরা আমার সারাজীবনের সম্পদ।
আর বললি না? টাকা ও কোথায় পেল?
নিজের গয়না বন্ধক দিয়েছে। বিয়ের গয়না। কখনো ভেবেছিস?
আমার বাবার জন্য ওর দায় পড়ে নেই কিন্তু ও দিয়েছে। স্টুডেন্ট লাইফ থেকে বিন্দু বিন্দু টাকা জমিয়ে যে টাকাটা ফিক্সড ডিপোজিটে রেখেছিল তা ভেঙেছে। এরপর আর কিছু বলার থাকে?”
“এসব দেখে তুই গলে গেছিস? চকচক করলেই সোনা হয় না।”
“কিন্তু অধরা তো সোনা নয়। ও আমার সেই সম্পদ যাকে আমি পায়ে ঠেলে দিয়েছিলাম। অধরার মিতব্যয়ী স্বভাব যা আমার আগে খুব পছন্দ ছিল কিন্তু হঠাৎ তোর কথায় সে স্বভাব আমার গলায় ফাঁসির ফান্দার মতো লাগছিল কেন?
কারণ জানিস? কারণ হচ্ছে তুই আমার মধ্যে সেসব ঢুকিয়েছিলি।
আজ দেখ অধরার ওই বাজে স্বভাব, টাকা না খরচ করার স্বভাবের জন্য আমার বাবা আজ ঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে পেরেছেন।
তোর সাথে তো বাবার রক্তের গ্রুপ মিলেছিল, তুই তো দিতে এলি না।”
“কারণ আমি নেশা করি। আমার রক্ত আরো ক্ষতিকর।”
“শুধু তোর রক্ত নয়, তুই নিজেও আমার সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।”
“আমি এতটাই ক্ষতিকর যখন তবে বেশ আমি যাচ্ছি। আর তোকে বিরক্ত করবো না।”
“তোর ফোনটা নিয়ে যা। আর ছবিটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখ পাশে তুষার দাঁড়িয়ে। অধরার ভাই।”
“তুষার না থাকলে কী তুই আমাকে বিশ্বাস করতি?”
“না, কারণ যে একবার ঠেকে শিখে সে বারবার ভুল করে না। অধরা আমার জন্য সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত। রহমতকে পায়ে ঠেলে, কষ্ট দিয়ে যা শাস্তি পাওয়ার আমি পেয়েছি। আর নয়। আমি জানি না তুই এমন কেন করেছিস তবে শুধু বলব।
” বন্ধুবেশে শত্রু হেমলকের থেকেও বিষাক্ত।”
সোবহান চলে যাওয়ার পর ইমরান নিজ চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো। আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে সাথে সাথে নিভিয়ে ফেলল সে। অধরাকে কল দিচ্ছে সে।
কল ধরলো ইমরানের মা।
অধরা তার বাবার সাথে দেখা করতে সি আই সি ইউ এর ভিতরে গিয়েছে।
ফোন রেখে ইমরান মনে মনে চিন্তা করলো,
“আজ যাই হোক না কেন, সব কিছুর জন্য সে মাফ চাইবে সবার কাছে। ভুল যা করছিল আর কখনো হবে না।”
কলেজ থেকে ফেরার পথে অধরা দেখল তার বাবা তার জন্য অপেক্ষা করছে। সামনে পূজোর প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে। ভীড় বলেই সে মেয়েকে নিতে এসেছে।
বিকেলে সবাই যখন হাসপাতালে ছিল তখন সম্পূর্ণ কথা তুষার তার মা-বাবাকে জানায়। তারা কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। সব’টা অধরার উপর দিয়ে দিয়েছে।
সবার সামনেই অধরা তার মতামত জানিয়ে দিলো,
“সে ইমরান কে ডিভোর্স দিচ্ছে। কারণ তাদের কেস ইতিমধ্যে কোর্টে উঠেছে।”
পর্ব ১৪
ইমরান অধরার সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল তার বসার ঘরে। অফিস থেকে ফিরে সে ফ্রেশ হয়ে সবে মাত্র বসেছে। সে মুহুর্তে তার মা তাকে কল দিয়ে সব’টা জানায়। তবে এখন তার বাবাকে কিছু জানাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অধরার কাছে আজ কোর্ট থেকে কাগজ পাঠিয়েছে। সেটা সে হাতে পেয়েছে এবং তুষারকে নিয়ে সে এক উকিলের সাথেও কথা বলেছে।
অধরা না কী নিজেও চায় দ্রুত ডিভোর্সটা হয়ে যাক।
ফোনটা রেখে মানিব্যাগটা হাতে নেয় রঙ্গান। সেখানে দেখা যাচ্ছে অধরাকে।
সোনালী পাড়ের হালকা গোলাপি শাড়িতে।
ছবিটা কবে কার হবে? ইমরান চিন্তা করছে। হ্যাঁ এটা তার প্রেমে পড়ার বছরের ছবি।
এই ছবিটাও লুকিয়ে তোলা। অধরাদের কলেজ ফাংশানে তার হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সে।
কারো সাথে কথা বলার সময় হাসতে হাসতে ফুল কপালে ঠেকায়।
তখন তুলেছিল ছবিটা।
সে সময় থেকেই ছবিটা তার মানিব্যাগে থাকে।
এরপর মানিব্যাগ বদলেছে অনেকগুলো কিন্তু বদলায়নি এই ছবিটা। তার সর্বক্ষণের সাথী।
অধরার প্রতি তার ভালোবাসা তার প্রতি অধরার ঘৃণার বা অভিমানের সমানুপাতিক।
ভালোবাসায় অভিমান সমানুপাতিক হলে সম্পর্কটা টিকে না। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় শেষ পরিণতির দিকে।
অধরার প্রতি তার সকল ভালোবাসার এখন কোন মূল্য কেউ দিবে না, শুধু তার করা কিছু ভুলের কারণে।
এসব চিন্তা ভাবনায় কখন দুচোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছিল নিজেও জানে সে। ঘুম ভাংলো তখন রাত অনেক। নিজ হাতে কফি বানিয়ে ফেসবুকের ডাটা অন করতেই ম্যাসেজে ভরে যেতে লাগলো ইনবক্স।
একটাই ম্যাসেজ।
“সোবহান কে পুলিশে ধরেছে। সাইবার ক্রাইমের জন্য। জানিস কিছু?”
ইমরান কিছুটা অবাক হয়ে রইল। এরপর কল দিলো ওর বন্ধু ফারদিন কে। ফারদিনের কাছ থেকে সব’টা শুনে ইমরান কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে বসে রইল। কারণ সোবহানের বিছানো সুন্দর মায়াজালে সে এভাবে তার নিজের সংসার বিসর্জন দিয়ে দিলো?
তবে কী সত্যি? বন্ধু নির্বাচনের কোনো বয়স হয় না?
পিঠ পিছনে ছুড়ির আঘাতগুলো কাছের মানুষ করে?
তারা এতটা হিংসে পরায়ণ? শুধু নিজ স্বার্থ হাসিল করার জন্য অন্যকে এভাবে ব্যবহার করে?
পরদিন সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকের শব্দে বৃষ্টি নিজ তালে নৃত্য করছে। পূজোর আগমনী বার্তায় হিন্দুপাড়া গুলো নতুন বউয়ের সাজে সাজতে ব্যস্ত৷
তবে এই বৃষ্টির দিনে সবার একটাই আবদার থাকে। তা হলো কী করে আরাম আয়েশে থাকা যায়।
কিন্তু সে আয়েশ হয়নি তুষারের। রোগীর সাথে থাকার ব্যবস্থা নেই তাই হাসপাতালেই একটা কেবিন ভাড়া করেছে তারা। সেখানে ইমরানের মা ছিল রাতে। তাকে খাবার দিতে গিয়েছিল সে। কিন্তু মাঝপথে দেখা গেল ইমরান আর তার মা আসছে। তাই আবার সে ফিরে এসেছে বাসায়।
খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই। গরম গরম খিচুড়ি সাথে বেগুন ভাজা আর কষা মাংস।
অধরা সবাইকে পরিবেশন করছিল। তুষারের দিকে এসে দেখলো তার চুলে এখনো পানি। লেবুর বাটিটা টেবিলের উপর রেখে সে নিজ ওড়নায় ভাইয়ের মাথার চুল মুছে দিচ্ছে।
ইমরানের মা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। কে বলবে এটা ছোটো বোন?
যে কী না বড়ভাইকে এভাবে যত্ন করে?
মেয়ে তো তার নিজের আছে অথচ সে আর খবর রাখে কোথায়?
বিয়ের আগে ভাইকে এভাবে যত্ন খুব কম করতো তবে বিয়ের পর তাও যেন নেই। না হলে তার বাবা এতদিন ধরে হাসপাতালে, পরের মেয়ে এত খেয়াল রাখছে, কই সে তো নিজে একবারো এলো না।
অবশ্য না আসার পিছনে অধরা কারণ।
তার ননদ ইমরান বিয়ে করলো না, এদিকে ছেলের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে মেয়েকে সবার সামনে হেনস্থা হতে হলো তাকে।
ছেলের বৌয়ের জন্য সম্পর্ক টান পোড়নে মেয়েটা তার হারিয়েই
গেল।
ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার অন্তর থেকে।
অধরা সবার সামনে ইমরানের সাথে কথা বলছে না আবার তার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে না। আর পাঁচ জনের সাথে যে ব্যবহার করছে ইমরানের সাথেও ঠিক একই ব্যবহার করছে সে৷
ইমরান চাইছিল তার সাথে একা কথা বলার সুযোগ। অধরার পরিবার অবশ্যই অধরাকে সাপোর্ট করছে কিন্তু তাদের সংসার নষ্ট হোক তারা এটা চায় না।
অধরার একটাই কথা,
“সোবহানের মতোন বন্ধু যদি আবার ফিরে আসে? তবে কী করবে? আবার সোনালীর মতোন কেউ এলে? আবার আমাকে তালাক দিতে চাইবে, নেশা করে ঘরে ফিরবে, আমাকে মারধর করবে, মুখের উপর ডিভোর্স লেটার সাইন করে ফিক্কা মারবে। এসব করার জন্য ওকে আমি আবার সুযোগ দিবো?
তোমাদের কাছে বেশি হলে বলো আমি চলে যাবো। আমাকে সরকার থেকে কোয়ার্টার দিবে কী না সে খোঁজ নিবো। না নিলে অন্য কোথাও বদলি হয়ে শহর ছেড়ে যাচ্ছি যদি এত সমস্যার কারণ হয়ে থাকি।
তোমরা মেয়ে বিয়ে দিয়েছো মানে গাছ কেটে ফেলেছো। তো আমার দায় দায়িত্ব তোমাদের নিতে হবে না।
তোমরা চিন্তা করো না তোমার ছেলের বউ এসে অন্তত ডিভোর্সী ননদের জ্বালাতন সহ্য করবে না। তার আগেই আমি আমার ব্যবস্থা করে নিচ্ছি। বাবা মায়ের কাছে, ভাইয়ের কাছেই আমি বেশি সেখানে ইমরান পরের ছেলে। তার কী দায় পড়েছে আমাকে ভাত কাপড় দিয়ে পালতে?
হ্যাঁ সে আমার দায়িত্ব নিতে বাধ্য কিন্তু বিনিময়ে আমি তার রাগ ক্ষোভের ডাস্টবিন হতে পারবো না। আমার নিজস্ব মতামতকেই আমি প্রাধান্য দিবো। কারণ আমি মানুষ, আমার নিজের মতামতের প্রতি তোমাদের সম্মান জানাতেই হবে। তোমরা চাইলেও, তোমরা না চাইলেও।”
গতকালের বলা কথাগুলো ইমরান ফোনেই শুনতে পেয়েছিল। আচ্ছা নিজ ভুল বুঝতে পারার পর কী আর করবে সে?
ইমরান খুব ভালো করেই জানে,
ভালোবাসার অধিকার আদায় করে নিতে হয়। মানুষ সব উপেক্ষা করতে পারে, ভালোবাসার জ্বালাতন উপেক্ষা করতে পারে না।
ইমরান অপেক্ষা করছে কখন সে কথা বলতে পারবে অথচ অধরা ফোনে ব্যস্ত। রঙ্গানকে কল দিয়ে এটা ওটা আনতে বলছে কারণ আজ তুষারের প্রেয়সীর বাড়ির লোক আসবে৷ কথা বলতে বলতে হাত চালিয়ে কাজ করছিল সে।
ওদিকেই তাকিয়ে আছে ইমরান। হঠাৎ তার কানে এলো অধরার দাদী যেন কী সব বলছে অধরাকে নিয়ে।
একটু ধ্যান ওদিকে দিতেই সে শুনতে পেল।
“ওই মেয়েই তো প্রেম কইরা নিলো, বাপ ভাইয়েও মাইনা নিলো। নইলে রঙ্গান আমার কলিজায় অধরারে মাথায় কইরা রাখতো।
তালাকের কথা মুখেও আনতো না। আমার বাছায় বুক দিয়া আগলাই রাখতো আমার নাতনীরে।
আমি আল্লাহ্ এর কাছে চাইতেছি ওর লগে ডাইভূস টা হইয়াই যাক। এক বছর হয় নাই বিয়ার৷ এখনি পোলায় ওই কথা কেমনে কয়?
ডাইভূস হইলেই রঙ্গানের সাথে চার হাত এক কইরা দিমু। দেহি এইবার আমারে কে আটকায়।”
পর্ব ১৫
রঙ্গান দাঁড়িয়ে আছে ভিজে চুপসে দরজার সামনে। তার দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে আছে অধরা।
“মহারাজ্ঞী? আমার কি ভিতরে প্রবেশের অনুমতি আছে?”
“এই কাঁদা পায়ে?”
“আমি আপনার সামান্য বেতনভুক্ত কর্মকর্তা। আমাকে এই মার্জনা করুন।”
“না, মোটেও তুমি আমার বেতনভুক্ত নও।”
“তবে আজন্ম আপনার দাস হয়ে থাকবো। এবার অনুমতি দিন।”
“দাস নয়, পুরুষ মানুষ এর জন্য দাস শব্দটা আমার কাছে বড্ড দৃষ্টি কটু। তুমি বরং এক সাম্রাজ্যের সম্রাট হও বৎস৷”
“তবে আপনি হন সেই সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী। আপনি কি রাজি?”
“বেটার লাক নেক্সট জন্ম। এজন্মের জন্য আপাতত বুকড।”
অধরার জবাবে রঙ্গান দেয়ালে হেলান দিয়ে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে এমন ভঙ্গি করলো যেন কেউ বিষাক্ত তীর দিয়ে তার হৃৎপিন্ডকে এফোড় ওফোড় করে দিয়েছে।
আর অধরা খিলখিল করে হাসছিল যেন ভরা যৌবনা নদীতে মাঝি তার বৈঠা দিয়ে ছপাৎ ছপাৎ শব্দে এগিয়ে চলেছে।
অধরার দাদী পানের জন্য সুপুরি কাটার সময় সব’টা খেয়াল করে মনে মনে বললেন,
“ও ছুড়ি তুই সোনা থুইয়া কাচের পিছনে ছুটলি। কিন্তু কাঁচ তো তোরে সামলাবো না, আরো ভাইঙ্গা গিয়া তোর মন ক্ষতবিক্ষত করে দিলো।”
তুষারের বিয়েতে এক উল্টো কাজ হয়ে গেলো। আশেপাশের মানুষ নয় তার দাদী ছি ছি করছিলেন। কারণ বিয়ের আগে মেয়ে তার পরিবারের সাথে এসেছে বিয়ের পাকা কথা দিতে। একে তো তাদের প্রেমের বিয়ে আবার এর মাঝে মেয়ে নিজে এসেছে বিয়ে কথা বলার জন্য আসা পরিবারের সাথে।
এই বিষয় কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
পুরো বিষয়টি সামাল দিলো ইমরান। সে সম্পূর্ণ দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে বলল,
“দাদীজান, আমিই নিয়ে আসতে বলেছি কারণ দেশের যা অবস্থা এর মধ্যে বাসার সব মানুষ আসবে এখানে। এই মেয়েটাকে কোথায় রেখে আসবে?
আর তাছাড়া যে দিন কয়েক পর এই বাড়ির বউ হয়েই আসবে সে যদি দিন কয়েক আগে আসে এতে সমস্যা নেই।
অধরাকে নিয়েও তো বিয়ের আগে আমাদের বাসায় কত অনুষ্ঠানে গিয়েছি। ধরে নিন এটাও একটা অনুষ্ঠান। ইনফ্যাক্ট, সব কথা পাকা হলে আমরা আংটি বদল করে রাখতে পারি।”
অধরার দাদী ইমরানকে পছন্দ করেন না এমন নয় তবে যখন জানতে পেরেছে ইমরান তার বন্ধুর পাতা ফাঁদে পা দিয়ে হলেও অধরার সাথে খারাপ আচরণ করেছে।
তখন থেকে কেন যেন তাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখতে পারছেন না তিনি।
তবুও এক ঘর ভর্তি মানুষের সামনে ইমরানকে কিছুই বললেন না,
কারণ আজ সকালেই সবার সাথে কথা হয়েছে আপাতত অধরা এবং ইমরানের বিয়ে ভাঙ্গনের কথা কনে পক্ষকে জানানোর প্রয়োজন নেই।
এতে করে তুষারের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।
তাছাড়াও ইমরান এখনো এই বাড়ির মেয়ের জামাই। আর এই বাড়ির মেয়ের জামাইদের সাথে কখনো কেউ খারাপ ব্যবহার করার দুঃসাহসিক বেয়াদবির কাজ এ অবধি কেউ করেনি।
ইমরান এভাবে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার জন্য অধরার বাবা তার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলেন।
কনে পক্ষের সাথে মোটামুটি কথা ঠিক হলেও কিছু কথা নিয়ে বেশ ঝামেলা হলো। এর মধ্যে অন্যতম হলো তারা চাইছেন বিয়ের কাবিন হিসেবে দশ লক্ষ টাকা। কিন্তু তুষারের বাবা নারাজ। কারণ তার ছেলের সামর্থ্য নেই সে নগদ এতগুলো টাকা দিতে পারবে। কিন্তু কনেপক্ষের কথা এটা তাদের মেয়ের লাইফ সিকিউরিটি।
কথা-কাটাকাটির এক সময় বিয়ে না হওয়া অবধি চলে যায়। তখন কনে এসে সরাসরি তুষারকে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি কতটা দিতে পারবেন?”
“পাঁচ জমানো আছে আমার।”
“লাখ?”
“জি।”
“তবে আমার বিয়ের কাবিন করুন পঞ্চাশ হাজার টাকা।”
কনের কথা শুনে সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। ধমকে উঠেছে তার মামা। এসব কী বলছে? মাথা ঠিক আছে?
“দশ লাখ টাকায় আমার জীবন যাবে না। তাছাড়া আমি তো আর ডিভোর্সের চিন্তা করে বিয়ে করছি না। আমার পুরো জীবনের সব দায় দায়িত্ব শরীয়ত মতে আমার স্বামীর উপর থাকবে। শুধু লোক দেখানো বড় অংকের টাকা দিয়ে লাভ নেই। সে আমার সারা জীবনের দায়িত্ব নিচ্ছে। এটাই অনেক।”
যেখানে কনে এই কথা বলেছে সেখানে আর কারোর কিছুই বলার থাকে না তবে তুষার বলল,
“আপনারা অনুমতি দিলে কাবিনে পাঁচ লাখ লিখুন। এবং আমি বিয়ের রাতেই উশুল করবো কারণ যে মেয়ে আমাকে এতটা বিশ্বাস করতে পারে
তার পরিবারের খুশীর জন্য আমি এটুক করতেই পারি।”
কিছুক্ষণের মাঝে তাদের কাবিন হয়ে গেল। নবনীতাকে অধরা লাল শাড়ি পরিয়ে হালকা সাজে সাজিয়েছে। আজ তার খুব করে নিজের বিয়ের কথাগুলো মনে পড়ছে।
এইতো মাস আর কয়টা হবে? তাদের বিয়ের এক বছর এখনো পূর্ণ হয়নি। সেদিন তার চোখেমুখেও ছিল উপচে পড়া খুশি অথচ আজ?
ভালোবাসা রঙ বদলায় না,
ধীরেধীরে ভালোবাসা ক্ষয় যায়।
পুরো দিন ব্যস্ততায় কাটিয়ে রাতে বিছানায় ধপাশ করে শুয়ে পড়লো অধরা। ইমরান একপাশে বসে ল্যাপটপে কি যেন করছিল।
অধরার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে প্রায় ঘুমিয়ে যাচ্ছে৷
তার মনে হঠাৎ কুবুদ্ধি উদয় হলে সে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“মনে হলো খাটে এক আস্ত কাঁঠাল পড়েছে।”
অধরা একবার মুখ তুলে চেয়ে আবার বালিশে নাক গুজলো। কোনো জবাব না পেয়ে হতাশ ইমরান পুনরায় বলল,
“শোনো যেখানে সেখানে এই কাঁঠালের মতোন ধড়াস করে বসবে না। মানুষ কী ভাববে বলো তো?
অবশ্য দিন দিন একটু মোটা হচ্ছো। ঠিক আছে সমস্যা নেই বিয়ের পানি পড়লে মেয়েরা একটু মোটা হয়৷”
ইমরানের কথায় তেড়েমেরে উঠে বসলো অধরা। হিসহিসিয়ে বলল,
“বাড়ি আমার, ঘর আমার, বিছানা আমার, বালিশ আমার। যা ইচ্ছে করবো আপনি বলার কে?
আর আপনি এখানে কেন? নিজ বাড়িতে যান। ওখানে গিয়ে থাকুন।”
ইমরান ল্যাপটপ বন্ধ করে অধরার কাছাকাছি এসে বলল,
“শ্বশুর বাড়ি আমার, বউ আমার, আমার যা ইচ্ছে বলবো। তুমি বলার কে?”
“শ্বশুরের মায়েরে বাপ।”
অধরার মুখের কথা শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ইমরান।
“এই তুমি এই কথার মানে জানো? কত বার বলেছি হুটহাট এসব কথা বলতে নেই। এগুলোর মানে বড্ড বাজে।”
“হলে হবে। আমার কী?”
“তুমি পাগল।”
“যান তো যান। ঘুমাতে দেন।”
অধরা যখন গভীর ঘুমে, ইমরান তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভালোবাসা ক্ষয় হয় অধরা। আমি এই ক্ষয়টা পুষিয়ে দিবো। আমি জানি আমার এতটা ধৈর্যশীল নই তবে এটাও ঠিক সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরলে তা রোধ করা খুব কঠিন।
আমি আবার একবার প্রেমিক হবো তোমার।
ঠিক ভালোবাসায় ভুলিয়ে দিবো তোমার মনকে।
কারণ আমি তোমার প্রেমিক হবো, তোমার প্রেমিক স্বামী। কারণ তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী।”
পর্ব১৬
“কী বললি? মেয়ের বয়স চল্লিশ? তুষারের সাথে ওই মেয়ের পরকীয়া? আরে ওটা মেয়ে না তো!ওইটা বুড়ি, তিন বাচ্চার মা সে আবার মেয়ে বা মহিলাও বলা চলে না সে আস্ত একটা বুড়ি। মেয়েরা কুড়িতেই বুড়ি হয় আর সে চল্লিশ? ঝুনা বুড়ি।
শেষ মেষে তুষার এক ঝুনা বুড়িকে?”
রঙ্গানের এমন কথায় বেশ বিরক্ত হলো অধরা। কোথায় সে নিজের সমস্যা নিয়ে কথা বলছিল আর কই সে তুষারকে ক্ষেপানোর জন্য এসব বলছে। সামনেই একটু দূরে তুষার দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে, তাকে বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে সে এসব বলছে।
“তুমি থাকো তো! আমি যাচ্ছি।”
এবার রঙ্গান বসে থাকা অবস্থায় অধরার বেনুনী তার হাতে প্যাঁচিয়ে নিয়ে একদম তার পাশে বসালো অধরাকে।
অধরা রঙ্গানের গা ঘেঁষে বসে পড়েছে। তখন অধরাকে আরেক দফা বিরক্ত করার উদ্দেশ্য রঙ্গান বলল,
“কী ব্যাপার? তুই কী আমার কোলে বসবি না কী? ‘
” চুল ছাড়ো। ব্যথা লাগছে।”
“লাগুক। এতে যদি তোর বিরিং কিছুটা কমে।”
“লোকে দেখলে কী বলবে? বাড়িতে এত মানুষ! আমি তোমার সাথে পরকীয়া করছি।”
“নাউজুবিল্লাহ্। মেয়ের অভাব পড়ছে কী? যে তোর মতো বুড়িকে বিয়ে করবো?”
“আমি বুড়ি?”
“চল্লিশ বছরের দামড়ি বুড়ি যদি নিজেকে তোর সমান বলে তোর সাথে নিজের কম্পেয়ার করে তবে তুই বুড়ি।”
“আমার কী দোষ? আমি বুঝি না সে নিজেও একজন প্রফেশনাল আমিও তাই। তাকে মানুষ কম চিনে, স্টুডেন্ট বলো কিংবা অন্যকেউ। তার পরিচিতি কম বলে কী সে আমাকে সব সময় এমন বলতে পারে?
হ্যাঁ বুঝলাম তার কাজের অভিজ্ঞতা বেশি কিন্তু আমার কাজের চাহিদা বেশি।
সে সবসময় আমার নামে এর কাছে ওর কাছে বদনাম করবে আবার আমি কিছু বললে সবাই আমাকে কথা শোনাবে, আমি কেন সহ্য করি না, এদিকে সেই অভব্য মহিলা যে নিজ থেকে আগে লাগতে আসে সেটা সবাই ভুলে যায় তখন।”
রঙ্গান অধরার দিকে তাকিয়ে একটু উচ্চস্বরে হেসে দিয়েছে। এদিকে অন্যমনস্ক অধরা হঠাৎ হাসির শব্দ শুনে কিছুটা ভড়কে গিয়ে তার হেঁচকি উঠে গেছে।
তার দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে রঙ্গান বলল,
“সে তোর কলিগ মাত্র। পাত্তা দিস না। ৩০ বছরের পর থেকে শরীরের হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে মহিলার ব্রেণ ক্ষয় হওয়া শুরু করেছে।
আমি যাচ্ছি, প্রিন্সিপালের থেকে তোর ছুটি মঞ্জুর করে নিয়ে আসবো। কেমন? এবার বল কী খাওয়াবি?”
“আগে ছুটি। ছুটি মঞ্জুর করে দিয়েছিল তবে এই অভব্য মহিলা গিয়ে বলেছে আমি আগেও ছুটি নিয়েছি এখন ছুটি নেই কী করে?
না কোনো মেডিকেল ইস্যু না অন্য কোনো জরুরী কারণ। ভাইয়ের বিয়ের জন্য ছুটি?
হাফ ডে করেও তো বিয়ে এটেন্ড করা যায়৷”
“বলেছি তো, উনার ব্রেণ ক্ষয় হওয়া শুরু করেছে। চিন্তা করিস না।”
এবার তুষার এগিয়ে এসে বলল,
“কথা হয়েছে, ছুটি মঞ্জুর করে দিবে। একটা আবেদন করতে বলল এই আরকি। অফিশিয়াল ব্যাপার স্যাপার।”
“ব্যস হয়ে গেল। আর কী?”
“তবে বলো কী খাবে?”
তুষার এবং রঙ্গান একে অপরের দিকে তাকিয়ে দু জনেই এক সঙ্গে বলল,
“কড়া করে দুধ চা। সাথে চানাচুর মাখা।”
ইমরান অফিসের কাজে ইদানীং খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাঝের দুদিনের বিরতিতে অনেক কাজ জমেছে।
দ্রুত হাতে কাজ শেষ করছে সে। কিছুক্ষণ পর মিটিং শুরু হবে তার।
প্রথমে মা কে কল দিয়ে তার বাবার সাথে কথা বলে নিলো সে।
অধরাকে কল দিতেই অধরা রিসিভ করে বলল, ।
“আমি গোসলে।”
“আসবো?”
“কোনো প্রয়োজন?”
“আপনাকে আমার সবসময় প্রয়োজন।”
“আমি গোসলে।”
“ফোন সাথে কেন?”
“মাত্র ভাই কল দিয়েছিল। তাই।”
“কী খাবে বলো!”
“কিছুই না।”
“বাজারে কিছুই না পাওয়া যায় না।”
“বিরক্তির একটা সীমা থাকে।”
“প্রিয়তমা, ভালোবাসা এবং বিরক্তির কোনো সীমা থাকে না।”
“আপনার মিটিং শুরু হবে। দশ মিনিটে। পানি খেয়ে নিবেন। চশমা পরে প্রেজেন্টেশন দিবেন। আর হ্যাঁ সব ভালোয় ভালোয় হবে।”
“দ্যাটস্ মাই লেডি। আচ্ছা রাখছি।”
“হুম।”
ফোন রেখে ইমরান মিনিট দুই জিরিয়ে নিলো। চোখ বন্ধ করে। প্রতিবার যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেকে জড়ানোর আগে সে অধরার সাতে ফোনে কথা বলে নেয়৷ কারণ অধরা তার জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসে সব সময়। মনটা ভালো থাকে, এদিকে কাজেও শান্তি। তবে মাঝের করা ভুলগুলো সে কী করে শুধরাবে?
সে চেষ্টা করছে তার ভুলগুলো শুধরে নিতে কিন্তু কোনো অনুতপ্ততা তার মনকে শান্তি দিচ্ছে না।
যাইহোক না কেন সে অধরাকে ছাড়তে রাজি নয়। তার করা ভুলের শাস্তি সে যেকোনো কিছু মাথা পেতে নিবে শর্ত একটাই অধরা তাকে ছেড়ে যেতে পারবে না।”
রঙ্গান এবং তুষার কলেজ থেকে অধরার ছুটি মঞ্জুর করে নিয়ে এসেছে। তুষার মনে হচ্ছে তার বিয়ে নিয়ে একটু বেশিই খুশি।
নিজের বিয়ের কাজ সে নিজ হাতে করছে।
আর তার দাদী তাকে বার বার ধমকে বলতেছে,
“ও লো ছেরা শরম নাই? নিজের বিয়ার কাম নিজেই করতাছো?”
তুষার হেসে বলল, ।
“দাদী আমার বুইড়া বেটি কাম করবো তাইলে কোনো ছেমড়ি? দাদী তুমি আরেকটু জোয়ান হইলা না কেন? তাহলে বিয়াটা আমি তোমারেই করতাম।”
“ও লো মুখ পোড়া। সাহস দেখছোনি? হাত পা বাইন্ধা বাইড়ামু কিন্তু।”
ছাদে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে উচ্চস্বরে গান বাজছে।
এমন গান কে বাজাচ্ছে তাকে দেখার খুব শখ হচ্ছে অধরার। আপাতত সে পারছে না কারণ তার হাতে মেহেদী পরানো হয়েছে। তার শ্বশুরের কথায় সে দুহাত ভর্তি মেহেদী লাগিয়েছে। কারণ উনি বলেছে যে অধরার মেহেদী রঙা হাতে না কী অধরাকে পুতুল পুতুল লাগে।
ইমরান ঘরে এসেছে। ক্লোজেট থেকে নিজের কাপড় বের করার সময় সে গুনগুনিয়ে গান গাইছে,
“পাশের বাড়ির চ্যাংরা পোলা প্রেম করিতে চায়
হিন্দি গানের তালে আমায় ডাকে ইশারায়।”
এই গানটাই বাজছে উপরে। আর অধরার মেজাজ গরম হচ্ছে তার।
অধরা ইমরানকে ধমকে বলল,
“এমন গান কে বাজাচ্ছে?”
“কে আবার তোমার ভাই।”
“বিয়ের খুশীতে ওর মাথাটা একদম গেছে।”
“বউ যে কী জিনিস! জানলে খুশী হতো না। দেখি হা করো।”
“কী এটা।”
“কিছুই না।”
“এটা খিচুড়ি।”
“হুম তোমার প্রিয়টা। নাও হা করো খাইয়ে দিচ্ছি।”
‘খাবো না।”
“তৃষ! খাবারের সাথে রাগ আমার পছন্দ না তুমি জানো। আমিও দুপুরে খাইনি। একসাথে খাবো বলে।”
অধরা ইমরানের এই কণ্ঠস্বর খুব ভালো করে চিনে। ইমরান যখন গুরুত্ব দিয়ে কোনো কথা বলে তখন তার কন্ঠস্বর এমন হয়।
খাওয়া শেষ করে ইমরান তাকে পানি খাইয়ে মুখ মুছিয়ে দিলো। অধরা উঠে দাঁড়িয়েছে, তার পরণে হলুদ শাড়ি। এর মানে হচ্ছে সে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য একদম তৈরী।
ইমরান কিছু না বলে তৈরী হতে চলে যায়। ফিরে এসে অধরার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি জানি না আমি কী করলে তুমি আমাকে মাফ করবে। তবে আমি চাই তুমি আমাকে মন থেকে মাফ করো। তবে এটা মনে রেখো তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মেনে নিবো কিন্তু আমাদের ডিভোর্স হচ্ছে না।”
অধরা ইমরানের কথায় দাম্ভিকতার হাসি হেসে বলল,
“আগামী বুধ বার আমাদের ডিভোর্স নিয়ে কোর্টে যাচ্ছি। আশা করি সেদিন আপনার ভুল ভেঙে যাবে।”
পর্ব ১৭
সোবহানের সামনে হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে অধরা।
হাতের মেহেদী লেপ্টে গেছে অনেক আগেই। কপালের দিকটায় জখম হয়ে নীলচে কালো বর্ণ।
হাত- পা বাধা অবস্থায় পড়ে থাকা অধরার মুখে গোঙানির শব্দ।
নিজ বাসায় বন্দী অধরার মুখে এক গ্লাস পানি ছুড়ে মারলো সোবহান।
তাকে টেনে হিচড়ে উঠিয়ে চেয়ারে বসিয়ে কল দিলো ইমরানকে।
এত কোলাহলের কারণে ইমরান ফোন রিসিভ করেনি। রঙ্গান এবং সে ব্যস্ত মেয়ের বাড়ির লোককে আপ্যায়ন করায়।
কোথাও অধরাকে না দেখে তুষার এগিয়ে গিয়ে অধরাকে খুঁজতে লাগলো।
আশেপাশে কিংবা পুরো বাসা খুঁজেও যখন অধরাকে খুঁজে পেলো না তুষার তখন ছাদে ফিরে এসে বাবার হাত ধরে বলল,
“বাবা আমার বুকের মাঝে এমন ফাকা ফাকা লাগছে কেন? আমার কলিজা কই?”
“কী হয়েছে?”
“বাবা অধরা কোথায়?”
মুহূর্তের মধ্যে বিয়ে বাড়ির পরিবেশ হটাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে গেল। ইমরান ফোনে বার বার কল দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।
ঘরে ফিরে এসে দেখলো বিছানার নিচে ফোন বন্ধ হয়ে পরে আছে। ফোনের ডিসপ্লে ভেঙেছে, মনে হচ্ছে কেউ খুব জোরে পা দিয়ে আঘাত করেছে।
ইমরানের এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো অধরা বুঝি তার থেকে দূরে চলে যাবে বলে কোথাও চলে গিয়েছে। পর মুহূর্তে মনে হলো অধরা এতটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন মেয়ে নয়। নিজের ভাইয়ের বিয়ের দিন এমন কিছু করবে বা এমন সিদ্ধান্ত নিবে।
যেহেতু অধরার ফোন এ বাড়িতেই বন্ধ হয়েছে তাই ট্রেস করেও লাভ হবে না। রঙ্গান আশেপাশের রাস্তার সিসি টিভি ফুটেজ দেখতে বেরিয়েছে। যখন সে বেরিয়ে যাচ্ছিলো তুষার তার হাত ধরে বলল,
“আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার কলিজা আমার থেকে আলাদা করে নিয়েছে। আমি শ্বাস নিতে পারছি না। দেশের অবস্থা ভালো না। না জানি কেমন আছে রে আমার বোন। খুঁজে এনে দে। বিনিময়ে যা চাইবি দিবো।”
“তোর কলিজায় হাত দিয়েছে বলছিস? আমার তো সম্মানে। ইমরানের অস্তিত্বে। চিন্তা করিস না খুব দ্রুত ঘরের সম্মান ঘরে ফিরিয়ে আনবো।”
সিসিটিভি ফুটেজে তেমন কিছুই পাওয়া গেল না। তবে এটা নিশ্চিত অধরা বাড়ির বাহিরে যায়নি। ইমরান নিজের ফোন হাতে ব্যস্ত ছিল। হুট করেই তার ফোনে আবার কল এলো। ব্যস্ত থাকায় ইমরান কেটে দিলে তার ফোনে আসে একটি এম এম এস।
যেখানে অধরা চেয়ারে বাধা অবস্থায় এবং সোবহান অভব্য ভাষা ব্যবহার করে নানান ধরনের কথা বলছে।
রঙ্গান ফিরে এসে কিছু বলার পূর্বেই ইমরান বলল,
“সোবহান আমার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য… “
“তোমার থেকে না। ওকে জেলে পাঠিয়েছিল অধরা। তাই অধরাকে অপহরণ করেছে। আমার উচিৎ ছিল যেদিন ও তৃষ কে এসিড মারার হুমকি দিয়েছিল সেদিন ওকে শাস্তি দেওয়ার। আবার বুঝতে পারলাম” আগুন এবং শত্রুর শেষ রাখতে নেই। তবে অধরা এবাড়িতেই আছে। ওকে বাহিরে নিয়ে যায়নি।”
“কোথায়?”
“জানি না। তবে আমরা পুরো বাসা তল্লাশী করবো। বিশেষ করে বদ্ধ ঘরগুলো।”
সেই মুহূর্তে সোবহানের কল এলো। সে নিজ থেকে জানালো কোথায় আছে। সবাই যখন বাড়ির পিছনে পৌঁছেছে সোবহান পালানোর চেষ্টা করলো না।
সে শুধু হেসে বলল,
“আমি পালালেও আমাকে ঠিক ধরে নিবি তোরা। কিন্তু আমার কাজ আমি করে ফেলেছি। ইমরান দেখ! দুই ঘন্টা তোর বউয়ের সাথে আমি একা। ভাবতে পারছিস? আমি কী কী করতে পারি? এখন। হয়তো পুলিশের অত্যাচারে আমি স্বীকারোক্তি দিবো আমি কিছুই করিনি শুধু মাথায় আঘাত লাগায় তোর বউ মরার মতোন পড়ে আছে কিন্তু তুই তো জানিস সত্যিটা কী? এমন মেয়ের সাথে সংসার করবি?”
সোবহান এরপর আর কোনো কথা বলতে পারেনি। রঙ্গানের থাপ্পড়ে সে কানে হাত দিয়ে বসে পড়লো। তুষার এগিয়ে গিয়ে ততক্ষণে অধরার বাধন খুলে ফেলেছে।
কোনো ভাবেই বোনকে কোলে তুলে নিয়ে ছুটলো ঘরের দিকে। ইমরান ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল শূন্য ঘরটায়।
মানসিক ভাবে যে ধাক্কাটা লেগেছিল অধরার কিংবা শারিরীক! সব’টা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লেগেছে অধরার। এই সময়টায় সবাই তাকে সাপোর্ট করেছে। সব’চে করেছে ইমরান।
সেরাতে কী হয়েছিল কেউ জিজ্ঞেস করেনি। অভিশপ্ত সন্ধ্যের কথা কেউ অধরাকে মনে করাতে চায় না। তবে অধরা নিজ থেকে সবটা বলেছিল। ইমরান বেরিয়ে যাওয়ার পর সোবহান ঘরে প্রবেশ করে। তার পরণেও কনে পক্ষের পোশাক ছিল। ওয়াশরুমে যাবে বলে অধরার সাহায্য চায়। তাই অধরা তার ঘরেরটা ব্যবহার করতে বলে। পিছন ফিরে ফোন হাতে নিচ্ছিলো তখন ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় দেখে লোকটা তার দিকে ফুলদানি তুলেছে। পিছন ফিরে তাকাতেই বাড়িটা তার কপাল বরাবর আঘাত করে। এরপর তার আর কিছুই মনে নেই।
ইমরান তার কৃতকর্মের জন্য অধরার কাছে শেষ একটা বার সুযোগ চেয়েছে।
সোবহানের কাজে সে সন্দেহ তো দূর অধরাকে জিজ্ঞেস অবধি করেনি। কারণ তার বিশ্বাস সোবহানের মতোন কাপুরষ এর কোথায় বার বার ভাঙার নয়। সে ভুল করেছিল তবে পাপ করবে না।
প্রতিটি মানুষ অধরার কাছে অনুরোধ করেছে ইমরানকে একটা বার সুযোগ দেওয়ার। কারণ প্রতিটা সম্পর্ক একটা দ্বিতীয় সুযোগ প্রাপ্য।
অধরা কিছু বলেনি। গত কয়েকদিনে তার সব কিছু কেমন ঝাপসা হয়ে উঠেছে।
সকল স্মৃতি ইমরানের চেষ্টায় পুনরায় উজ্জ্বল। মাঝেমধ্যে অধরা নিজেকে জিজ্ঞেস করে,
“ইমরানকে মাফ করে দেওয়ার কারণ কী এটাই যে সে সোবহানকে বিশ্বাস করেনি?”
এমন হলে কী সে ইমরানের উপর অন্যায় করছে না?
রঙ্গানকে সব’টা বলার পর রঙ্গান বলেছিল,
“না। একটি সম্পর্কে বিশ্বাস আয়নার মতোন। তুই তার প্রতি বিশ্বাস দেখিয়েছিস তাই আয়নাও তোকে বিশ্বাস করছে। একটা সুযোগ সবার প্রাপ্য।”
ইমরান প্রেমিক স্বামী হওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে এমন সব পাগলামো করে ফেলে অধরা তাকে ভালো না বেসে পারে না।
দুঃস্বপ্নের মতোন ভুলে যেতে চায় সেই কয়েকটা দিন।
প্রতিদিন সকালে ইমরান ঘুম থেকে উঠে অধরার কপালে ঠোঁট স্পর্শ করিয়ে যখন বলে,
“আমার ভালোবাসা একঝাক বোলতার মতোন। আমি চাই এই এক ঝাক বোলতা তোমায় পুরোদিন আমার কথা ক্ষণে ক্ষণে মনে করিয়ে দিক।”
“বোলতা? আর কিছু পেলে না? এখন বুঝি আমার হাত দিয়ে মাছের আঁশটে গন্ধ আসে না? কম দামী জিনিস পরলে মানে লাগে না?”
“না। কারণ ক্ষয় যাওয়া ভালোবাসায় প্রেমের প্রলেপ দিচ্ছি। ভালোবাসতে বাসতে প্রেমটা উবে গিয়েছিল। ভুলে গিয়েছিলাম প্রেমিকের অনুভূতি।”
অনেকদিন পর আজ অধরা কলেজে এসেছে। পুরো ব্যস্ততম দিন পার করে ফিরছিল ইমরানের সাথে।
বাহিরে তখন ঝুম বৃষ্টি। তাই সি এনজি নিয়ে ফিরছিল তারা। অধরা পাশে বসতেই ইমরান সেই চিরচেনা গন্ধ পেল। যে গন্ধটা কেবল অধরার থেকেই পায় সে। অধরার হাত নিজ হাতে আবদ্ধ করে মনে মনে বলল,
“ভাগ্যিস! সময় থাকতে ভুল বুঝতে পেরেছিল। নিয়তি তাকে আরেকবার সুযোগ দিয়েছে। না হলে কী হতো? আজকের এই মুহূর্ত কী কখনো স্মৃতির পাতায় জমা হতো?”
অধরা তার দিকে তাকিয়ে চোখ ইশারায় জিজ্ঞেস করে কী ভাবছে?
ইমরান অধরার ডান হাতের উল্টো পাতায় আলতো চুমু দিয়ে বলল,
“নাউ আই ফিল ইন লাভ উইথ মাই বেটারহাফ।”
কিছু কথাঃ ডিভোর্স কোনো সমস্যার সমাধান নয়। একটি সম্পর্কে উভয়কেই কিছু না কিছু ত্যাগ করতে হয়। ডিভোর্স এর পর যাকে বেছে নিবেন সে আপনাকে সুখী রাখবে এমন নাও হতে পারে। সম্পর্ককে একটা শেষ সুযোগ দিয়ে দেখুন। যদি সুযোগের পর মানুষটা না বদলায় তবে সিদ্ধান্ত নিন।
লেখা – সাদিয়া খান (সুবাসিনী)
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “লাভ উইথ মাই বেটার হাফ – বিবাহিত জীবনের প্রেম” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ুন – লাভ উইথ মাই বেটার হাফ – বিবাহিত জীবনের গল্প (সিজন ১)