স্ত্রীর বাইক – Shami Strir Valobasha

Shami Strir Valobashar Golpo

আমার স্ত্রী স্কুটার অর্থাৎ বাইক চালাতে জানে। কিন্তু আমি জানি না। ও আমাকে বাইকে করে অফিসে নামিয়ে দিয়ে তার নিজের অফিসে চলে যেতো। এতে আমার বেশ ভালো লাগতো। কিন্তু এই ভালো লাগা বেশিদিন স্থায়ী হলো না।
প্রতিবেশী থেকে শুরু করে আত্মীয়, বন্ধু, রাস্তার অপরিচিত মানুষ এবং অফিসের সহকর্মীরা ব্যঙ্গ করে হাসতে লাগলো এবং আমাকে বলতে লাগলো,”আপনি পুরুষ হয়ে স্ত্রীর বাইকের পেছনে বসে চলাফেরা করছেন? ছি ছি! আপনি তো পুরুষ জাতির মান সম্মান ডুবিয়ে দিচ্ছেন। নিজে বাইক চালানো শিখুন। আর স্ত্রীকে বাইকের পেছনে বসিয়ে চলাফেরা করুন।”
লজ্জা পেয়ে স্ত্রীর বাইকে চড়া বন্ধ করে দিলাম।

স্ত্রী তখন বললো,”তোমাকে বাইক চালানো শিখিয়ে দিই?”
ওর প্রস্তাবে সম্মতি দিলাম।
বাড়ির পাশে একটা খোলা মাঠ আছে। সেখানে স্ত্রী আমাকে বাইক চালানো শেখাতে লাগলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেখা সম্ভব হলো না।
স্ত্রীর কাছ থেকে বাইক চালানো শিখছি দেখে সবাই আবারো ব্যঙ্গ করে হাসতে লাগলো। তাদের হাসির যন্ত্রণায় স্ত্রীর কাছ থেকে বাইক চালানো শেখা বন্ধ করে দিলাম। সেই সাথে অন্য কারো কাছ থেকে শেখার ইচ্ছেটাও চলে গেলো। ঠিক করলাম, লোকাল বাসে করে যাতায়াত করবো। বিয়ের আগে যেমন করতাম।

কিন্তু এবারো বিপত্তি বাধলো।
সবাই বলতে লাগলো,”আপনি পুরুষ হয়ে বাসে চলাফেরা করছেন। আর আপনার স্ত্রী বাইকে চলাফেরা করছে। এটা কি মানায়? আপনি তো ছোটো হয়ে গেলেন।”
সেদিন রাতে রেগে গিয়ে স্ত্রীকে বললাম,”তোমার বাইকের জন্য আমার জীবন তো অতিষ্ঠ হয়ে গেলো। তুমি কি আমাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না?”
সে স্থির চোখে আমার দিকে চেয়ে রইলো। মুখে কিছু বললো না।

এর কিছুদিন পর দেখলাম ওর বাইকটা নেই।
জিজ্ঞেস করলাম,”তোমার বাইক কোথায়?”
সে শান্ত এবং বিষন্ন গলায় বললো,”বিক্রি করে দিয়েছি।”
বাইকটা ওর বাবা কিনে দিয়েছিলেন। আমি আর কিছু বললাম না।
স্ত্রীর বাইক চালানো বন্ধ হওয়াতে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি এবং কথা বলাও বন্ধ হয়ে গেলো। আমি স্বস্তি পেলাম।
এভাবে নির্বিঘ্নে দিন কাটতে লাগলো।

তারপর হঠাৎ করে এক রাতে আমার ভয়াবহ ভাবে বমি আর পাতলা পায়খানা শুরু হলো। এতে ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়লাম। বমি এবং পাতলা পায়খানা কোনোটাই আমার নিয়ন্ত্রণে ছিলো না। বিছানা থেকে নেমে বাথরুম পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ পেতাম না। তার আগেই কাপড় নোংরা হয়ে যেতো। আর এই ময়লা কাপড় এবং আমাকে পরিষ্কার করতো আমার স্ত্রী। গোটা রাত এক ফোঁটা ঘুমাতে পারি নি। শুধু অসুখে ককিয়েছি। আর স্ত্রী পাশে থেকে নির্ঘুম সেবা করে গেছে।
পরদিন সকালে সে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। তারপর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আমার দেখাশোনা করতে লাগলো।

হাসপাতালে তিন দিন ছিলাম। এই তিন দিনে প্রতিবেশী, আত্মীয়, বন্ধু এবং অফিসের সহকর্মীরা হাসপাতালে এলো আমাকে দেখার জন্য। তারা বেডের পাশে বসে সহানুভূতি জানালো। এবং নানা রকম উপদেশ দিয়ে চলে গেলো। কিন্তু যে মানুষটা সার্বক্ষণিক সঙ্গে থাকলো, সে হলো আমার স্ত্রী।
সুস্থ হয়ে যেদিন বাড়ি ফিরলাম সেদিন মা আমাকে বললেন,”তোর বিপদে আপদে যে সব সময় তোর পাশে থাকবে, সে হলো তোর স্ত্রী। আর বাকিরা কিছু সময় দু:খ প্রকাশ করে যে যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তাহলে বল, কাকে তোর বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত?”

এরপর বললেন,”মেয়েদের এগিয়ে যাওয়া, মেয়েদের উন্নতি অনেকের কাছে অসহ্য লাগে। তারা নানা কৌশলে মেয়েদের থামিয়ে দিতে চায়। যারা এমন করে তারা সুস্থ মনের মানুষ হয় না। তারা হয় বিকৃত মনের। আর এসব বিকৃত মনের মানুষদের পাত্তা দেয়ার কোনো মানে হয় না।”
পরদিন বন্ধের দিন ছিলো।
স্ত্রীকে বললাম,”চলো।”

“কোথায়?”
“বাইকের দোকানে।”
সে আশ্চর্য হয়ে বললো,”কেনো?”
“তোমাকে বাইক কিনে দেবো। তুমি পছন্দ করবে।”
এরপর বললাম,”বহুদিন তোমার বাইকে চড়া হয় না।”
স্ত্রী বললো,”লোকে হাসবে, কথা শোনাবে।”
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বললাম,”পরোয়া করি না।”
পুনরায় স্ত্রীর বাইকে করে চলাফেরা আরম্ভ করলাম। যারা হাসার তারা হাসতে লাগলো। যারা বলার তারা বলতে লাগলো। কিন্তু তাদের হাসি দেখে, কথা শুনে এবার আর বিভ্রান্ত হলাম না। তাই স্ত্রীকে থামালাম না।
কারণ ততোদিনে বুঝে গেছি, স্ত্রীর এগিয়ে যাওয়া মানে আমারো এগিয়ে যাওয়া। স্ত্রীর উন্নতি মানে আমারো উন্নতি।
স্ত্রীর বাইক সমস্ত বাধা ডিঙ্গিয়ে স্বমহিমায় চলতে লাগলো। আমাকে নিয়ে।

“স্ত্রীর বাইক”
-রুদ্র আজাদ

Read More: স্ত্রীর চাওয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *