সেকেণ্ড ম্যারেজ – রোমান্টিক বিবাহের গল্প

সেকেণ্ড ম্যারেজ (১ম খণ্ড) – রোমান্টিক বিবাহের গল্প: আয়ানের যেন আরো নেশা লেগে গেল। সে রিতির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। আর অন্যহাত দিয়ে রিতির স্পর্শ অনুভবে ব্যস্ত হয়ে পরল। রিতিও আয়ানের মাথার চুল মুঠোয় ধরে তার ঠোঁটের স্বাদ নিতে ব্যস্ত।


পর্ব ১

আমি রিতি। আজ আমার বিয়ে হয়েছে।
বাকি সব নতুন বধুর মত আমিও আমার বাসররাতে বসে আছি।

কিন্তু আজ আমার মনে নেই কোন সংকোচ, নেই কোন সপ্ন আর নেই নতুন সংসার সাজানোর ইচ্ছা।
কারণ আজ প্রথমবার নয় যে আমি এভাবে নতুন বধু সেজে বসে আছি।
এর আগেও ছিল এরকম একটি রাত যে কারও জন্য এভাবেই বসে ছিলাম।
আজ হয়ত সব একই রকম শুধু মানুষটি বদলে গেছে।

হঠাৎ দরজা থেকে কারো আসার আওয়াজ শুনলাম।
সে আর কেও নয় আমার নতুন স্বামী আয়ান।
আমি উঠে সালাম করলাম।
আয়ানঃ সালাম করা লাগবে না।

বরং আপনি বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরুন আমিও সোফায় শুয়ে পরি।
রিতিঃ না। না।
আপনি বিছানায় ঘুমান আমি সোফায় থাকতে পারব।
আয়ানঃ দেখুন।

আমরা দুজনের কেও ই এ বিয়েটা মানি না।
দুজনেরই আলাদা আলাদা কারণ আছে বিয়েটি করার।
কিন্তু আমরা একজন অন্যজনের সম্মান তো করি।
আর আমি এরকম ব্যক্তি না যে নিয়ে আরামে বিছানায় ঘুমাবে আর কোন মেয়েকে এভাবে সোফায় কষ্ট করে ঘুমোতে দিবে।
আপনি আমার responsibility তাই আপনার খেয়াল রাখা আমার দ্বায়িত্ব।

আর আপনি যদি আমার এতটুকু সম্মান করেন তবে বিছানায় যেয়ে ঘুমিয়ে পরুন।
আমিও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
আর বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরলাম।
এবার বলি আমাদের বিয়েটা কিভাবে হল।
আর আমার আর আমার স্বামীর ব্যাপারেও।
ওহ sorry নতুন স্বামী।

মিঃ আয়ান চৌধুরী।
শহরের অনেক বড় একজন ব্যবসায়ী।
আমাদের বিয়েটা পরিবারের সম্মতিতেই হয়েছে।
বলতে গেলে পরিবারের জন্যই হয়েছে।
অবশ্য আমাদেরও অসম্মতি ছিল না।

আজ আমরা দুজনে এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ কিন্তু এ বন্ধনে কোন মনের জায়গা নেই।
কারণ আমাদের দুজনের মনেই যে অন্য কারও নাম আগে থেকেই লেখা।
মানে দুইজনের মন ই অন্য কারো মায়ায় জড়িত। অন্য কারো কাছে আমাদের মন বন্ধক রয়েছে।
ভাবতেই চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল বয়ে গেল।
বিয়েটা দুজনেই করেছি কিন্তু এ বিয়েতে কোন ভালবাসা নেই।

শুধু রয়েছে দায়িত্ব।
তা নিয়ে আমাদের বিয়ের আগেই চুক্তি হয়েছিল।
উনি আমার দ্বায়িত্ব নিবে আর আমি উনার, উনার পরিবারের আর উনার ছেলের।
হে উনার ছেলে আরিয়ান।
উনার আর রিয়া আপুর ছেলে।

রিয়া আপু কে তাই তো ভাবছেন।
আয়ানের প্রথম স্ত্রী।
তিনি এখন আর এ পৃথিবীতে নেই।

৩ বছর আগেই ইহকাল থেকে পরকালে প্রস্থান করেছে।
বিয়ের আগে তার ছবি দেখে জানতে পারলাম সে আর আমি একই ভারসিটিতে ছিলাম আর আয়ানও।
তারা আমার সিনিয়ার ছিল।
আয়ানের সাথে কখনও দেখা না হলেও।

রিয়া আপুর সাথে প্রায়ই দেখা হত।
sorry দেখা বললে ভুল হবে ঝগড়া হত।
উনি আমাকে তেমন একটা দেখতে পারতেন না।

এর কারণ ও আছে আমি অনেক দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম।
আর উনার সব টাইটাল নাকি চুরি করেছিলাম তা উনিই শুধু ভাবতেন অবশ্য।

আজও হয়ত থাকলে আমার সাথে ঝগড়া করতেন।
উনার স্বামীকে চুরি করেছি বলে অপবাদ ও দিতেন।
কিন্তু উনার স্বামীর উপর তো আমার কোন অধিকার ই নেই কারণ আমি উনাকে নিজের স্বামীই মানতে পারিনি।

বিয়েটা করেছি শুধু পরিবারের জন্যে আর আরিয়ানের জন্যে।
আরিয়ান এখন ৯ বছরের।
ক্লাস ২ এ পরে।

দেখতে একদম তার বাবার মতো।
যেমন সুন্দর তেমনই মায়াবি দেখতে।
বিশেষ করে তার চোখ দুটি।

আয়ানের ভাবি থেকে শুনেছি আয়ানের চোখে নাকি অনেক মায়া কিন্তু কখনোই তাকাই নি কারণ এখণ আর কারো মায়ায় পরতে চাই না।
এক বার পরে অনেক কেদেছি আর কাদার ইচ্ছা নেই আর না কষ্ট সহ্য করার হ্মমতা আছে।
থাক এসব বাদ দিয়ে এখন ঘুমিয়ে পরি।

ঘুম থেকে উঠলাম সকালের আলো যখন চোখে এসে পরল।
উঠে দেখি আয়ান এখনও ঘুমোচ্ছে।
কিন্তু জানালা থেকে আসা আলো তার ঘুমে বিঘাত দিচ্ছে।
তাই পর্দা বন্ধ করে shower নিয়ে আসলাম।
এসে রেডি হয়ে বাইরে চলে আসলাম।

এসে দেখি আমার শাশুড়ি মা আর ভাবি আগে থেকেই উঠেছে।
মাঃ আরে বউমা তুমি এত সকালে কেন।
রিতিঃ আসলে মা ঘুম ভেংগে গিয়েছিল তাই।
ভাবিঃ তা ঠিক আছে কিন্তু আমাদের নতুন বউ না কোন সাজ না কোন গয়না।
যাও পরে আসো।
রিতিঃ ভাবি আসলে আমার সাজা পছন্দ না।

ভাবিঃ জানি তাই ই তো গতকাল নিজের বিয়েতেও সাজো নি।
মাঃ বিয়েটা কি তেমন ভাবে হইছে নাকি।

তোর দেবরের জন্য কিছুই করতে পারলাম না।
ভাবিঃ থাক মা বাদ দেন।
মাঃ হম আর আমাদের নতুন বউ তো এমনিতেই চাঁদের টুকরা।

ওর সাজা গুজা লাগবে না।
ভাবিঃ আমি বুঝি সুন্দর না। (মুখ গোমড়া করে)
মাঃ তুই ও খুবই সুন্দর।

ইশিকা(আয়ানের ছোট বোন)ঃকিন্তু মা জানো আমি ছেলে হলে ঠিকই আমার দুই ভাবির প্রেমে পরতাম। ( পিছন থেকে এসে মাকে জরিয়ে ধরে বলল)
ভাবিঃ বল তোর ছোট ভাবির প্রেমে পরতি।
অবশ্য আমিও পরতাম আমার জালটা এতই সুন্দর।
সবাই হাসাহাসি করতিসে।

রিতিঃ মা আমি আপনাদের জন্য চা বানিয়ে আনি।
মাঃ আরে না তুই বস আমরা সব করব।
রিতিঃ মা আমার ভালো লাগে না এমনি বসে থাকলে।
মাঃ কিন্তু।
রিতিঃ please ma।

ভাবিঃ আচ্ছা তাহলে আমি help করি।
আর সাথে অনেক গল্প ও করবো কেমন।
রিতিঃআচ্ছা।
রিতি চা বানালো আর ইশিকা ও ভাবির সাথে গল্প করল।
আসলে গল্প করছিল না শুধু শুনছিল।

চা বানানো শেষে নিয়ে আসে।
এসে দেখে মা, বাবা আর আয়ানের ভাইয়া(আমান) বসে আছে।
বসে বসে গল্প করছে।
আয়রা সবাইকে চা দিল।
বাবাঃ বাহ।

অনেক মজা হইসে।
তোমার মার চায়ের থেকেও মজা হইসে।
আমানঃ হ্যাঁ অনেক অনেক ভালো হইসে।
নিধিকেও(আয়ানের ভাবি) একটু চা বানানো শিখিয়ে দিয়।
কি বানায় taste ই বুঝি না।
নিধিঃকি।

এত বড় কথা।
কাল থেকে ৭ দিন তোমার চা বন্ধ।
আমানঃ না না।
আমিতো দুষ্টুমি করে বলছি।
তুমি তো জানো আমি চা ছাড়া থাকতে পারি না।
নিধিঃ
আমানঃ আম্মু।

মাঃআমি তোদের মধ্যে আর কি বলবো।
আমানঃ
মাঃ রিতি মা তুই একটু আয়ানের জন্য চা নিয়ে যা।
রিতিঃ জ্বি মা।

রিতি যেয়ে দেখে আয়ান রুমে নেই।
সে খাটের পাশের ছোট্ট ওয়াড ড্রপের উপর চায়ের কাপটি রাখে যেতে নেওয়ার জন্য পিছনে ফিরে দেখে আয়ান একটি তোয়ালা পরে বাথরুম থেকে বের হচ্ছে আর নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা তোয়ালা দিয়ে মুছছে।
রিতি আয়ানকে দেখেই চোখ বন্ধ করে ফেলে।

আয়ান তোয়ালাটি সোফার উপর ফেলে উপরে তাকিয়ে রিতিকে দেখে অবাক হয়ে যায়।
রিতিঃ sorry।
আসলে আমি যানতাম না যে আপনি বাথরুমে। (চোখ বন্ধ করে)
সাথে সাথে দৌড় দিতে নেয় চোখ বন্ধ থাকায় কিছু দেখে না তাই খাটের কোণার সাথে পা লেগে পরে যেতে নেই আয়ান তাকে ধরতে যেয়ে দুজনেই খাটের উপর পরে যায়।

আয়ান চোখ রিতির চোখে পরে।

পর্ব ২

সাথে সাথে দৌড় দিতে নেয় চোখ বন্ধ থাকায় কিছু দেখে না তাই খাটের কোণার সাথে পা লেগে পরে যেতে নেই আয়ান তাকে ধরতে যেয়ে দুজনেই খাটের উপর পরে যায়।
আয়ান চোখ রিতির চোখে পরে।

আর রিতি চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকায়।
রিতিঃ আপনি যদি একটু উঠতেন।
আয়ান রিতির কথায় কিছুটা লজ্জা পায়।

আর রিতির উপর থেকে ওঠে যায়।
রিতি এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রিতি-
রুম থেকে সোজা কিচেনে আসলাম।

রুম থেকে দৌড়ে বের হওয়ার কারণে ছাপিয়ে উঠেছি।
আমায় দেখে ভাবি আর ইশিকা মিটিমিটি হাসছে।
কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না।

ইশিকাঃ sorry ভাবি।
রিতিঃ sorry কেন।
ইশিকাঃ আসলে আমি ভাইয়ার কাছে কাজে গিয়েছিলাম তখন দেখি।
আসলে আমার দেখার কোন মতলব ছিল না কিন্তু চোখে পরে গেল। (মিটমিট করে হেসে)
বুঝতে বাকি রইল না তারা কি জন্য হাসছে।
অনেকটা লজ্জা পেলাম।

কথা ঘুরানোর জন্য জিজ্ঞাসা করলাম।
রিতিঃ ভাবি আরিয়ান আর নিশান উঠেছে।
ভাবিঃ না তারা এখনও ঘুমুচ্ছে।
রিতিঃ ভাবি আমি ভাবছিলাম ওরা উঠলে ওদের পছন্দের কিছু বানিয়ে দি।
আজ আমার প্রথম দিন তো তাই।
ভাবিঃ ভালোই ভেবেছো।
ওদের দুজনের ই chocolate milkshake খুব পছন্দ।

রিতি ঃ আচ্ছা ভাবি thank you।
হঠাৎ মা কিচেনে এসে বলে।
মাঃ রিতি মা এলাকার কিছু মহিলা আসছে নতুন বউ দেখার জন্য।
মা মাথায় ঘোমটা দিয়ে আমার সাথে আসো।
রিতিঃজ্বী মা।
ইশিকাঃমা আমিও আসি।

মাঃ তুই নাস্তা বানাতে তোর বড় ভাবির help কর।
শুধু রিতি গেলেই হবে।
ইশিকাঃআচ্ছা।
মা সবার সামনে আমায় নিয়ে গেল।
সবার মন্তব্য।
-বাহ মেয়ে তো চাঁদের টুকরো।

তাই বলি ডিভোর্সি মেয়েকে কেন বিয়ে করালেন।
-হ্যাঁ তা ঠিক কিন্তু আয়ান যে প্রতিষ্ঠিত আর handsome ওর জন্য অবিবাহিত কোন মেয়েকেও তো পেতেন।
-ডিভোর্সি মেয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন তো ভালো করে।
মাঃ দেখুন আমাদের নতুন বউ দেখতে আসছে তা দেখে চলে যান এমন কোন কথা বলবেন না দয়া করে।

মা তাদের থামতে বলল তা দেখে খুব খুশি লাগল। কারণ সবাই আশে পাশের মানুষের কথা শুনেই একটি পরিবার ভেংগে দেয়।
কারণ আমার প্রথম বিয়ে ভাংগার অন্যতম কারণ ছিল এটাই।
মা থামালেও কেও তার কথা শুনছে না সবাই কিছু না কিছু বলেই যাচ্ছে।
গত ৩ টি বছর ধরে একই খোটা শুনতে শুনতেও অভ্যাস হয়নি।
আজও শুনলে মনে খুব কষ্ট হয়।

কিন্তু চোখের পানিকে আটকে রাখতে হয়।
অন্য কিছুজন বলল।
-আপনি আমায় বলতেন আয়ানের জন্য মেয়ের লাইন দ্বারা করাতাম।

  • মেয়ে শুধ ডিভোর্সি হলে বুঝতাম কিন্তু মেয়ে তো।
    কিছু বলার আগেই আয়ান এসে তাকে থামিয়ে বলল।

আয়ানঃ আপনাদের আমার চিন্তা করার তো এত দরকার নেই।
আর আপনারা যে রিতিকে এসব বলছেন চিন্তা করে দেখুন এসব আপনাদের বা আপনাদের সন্তানদের কেও বললে আপনাদের কাছে কেমন লাগবে।
আর হে এসব ভাগ্যের খেলা তাই আপনারা ভাগ্যকে নিয়ে পরিহাস না করে নিজের সংসারে খেয়াল দেন আল্লাহ ই যানে আপনাদের ভাগ্য কখন আপনাদের সাথে খেলা খেলে বসে।

সবাই কিছু না বলেই চলে গেল।
আমি আয়ানের দিকে তাকালাম সে আমার দিকে একটা মুচকি হাসি দিল।
উনার হাসিটা এই প্রথম খেয়াল করলাম খুব সুন্দর।
ভাবি আজ উনি যেভাবে আমার সম্মান রহ্মা করলেন তেমনি যদি ৩ বছর আগে অন্য কেও রহ্মা করতো তাহলে হয়তো আমাদের জীবন টা আলাদা থাকতো।
আয়ানঃ মা আমি অফিসে গেলাম।

মাঃ সে কি কাল তো তোর বিয়ে হল আর আজ অফিসে যাবি। (ভ্রু কুচকে)
আয়ানঃ মা আমার জন্য কাজ অনেক important তুমি তো জানোই।
মাঃ কি এরকম important কাজ।
তোর ভাই তো গেল না আর তুই।
এই কই যাচ্ছিস।

শুন।
আয়ান মার কথা না শুনেই চলে গেল।
আমি কিচেনে যেয়ে ভাবির কাছ থেকে জানতে পাই নিশান আর আরিয়ান উঠে গেছে।
তাই ওদের জন্য নাস্তা আর milkshake নিয়ে গেলাম।
নিশান আর আরিয়ান একসাথেই খেলছিল।

আমি যাওয়ায় সাথে সাথে নিশান দরজায় এসে আমায় জরায় ধরল।
নিশানঃচাচী কেমন আছো।
জানো কাল আমি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছি কিন্তু মা দেয় নি।
চাচীঃ আচ্ছা কেন দেখা করতে চেয়েছিলে।

নিশানঃএমনি তুমি দেখতে খুব সুন্দর তো তাই।
ওর কথা শুনে না হেসে পারলাম না।
রিতিঃএই নাও তোমার আর আরিয়ানের জন্যে নাস্তা এনেছি।

নিশানঃ আমারটা দেও আমি টিভি দেখতে দেখতে খাবো।
আর আরিয়ান পড়া ছাড়া কিছু করতে পারে না তাই তুমি ওকে এখানেই দেও।
নিশান ওর নাস্তা নিয়ে চলে গেল আর আমি আরিয়ানের কাছে গেলাম।
রিতিঃ নেও বাবা তোমার নাস্তা।
আরিয়ান খাবার নিল।

আরিয়ানঃ আপনি এখন যান আমি খাবার খেয়ে নিব।
রিতিঃআমার সমস্যা নেই তুমি খাও।
আরিয়ানঃআসলে আমার কারো সামনে খেতে লজ্জা লাগে।
রিতিঃওহ আচ্ছা তাইলে আমি যাই।
রাতে।

আমি বারিন্দায় দাড়িয়ে ছিলাম তখন আয়ানের আওয়াজ শুনে বাইরে আসলাম।
আয়ানঃ এসব এর মানে কি।
রিতিঃজ্বী। (অবাক হয়ে)
আয়ানঃ কিছু বুঝ না তাই না।
লজ্জা করে না এত ছোট বাচ্চার সাথে এরকম করে।
রিতিঃ জ্বী আমি কিছু বুঝছি না।

আয়ানঃ তুমি সারাদিন আমার ছেলেকে খাবার দেও নি।
রিতিঃমানে। (অবাক হয়ে)
আয়ানঃ সকালে, দুপুরে আর রাতের সবার সামনে খাবার নিয়ে গেছো ওর জন্যে বলে আর সব খাবার ডাসবিনে ফেলে দিসো।
আর মিথ্যা বলবা না আমি অফিস থেকে এসে সোজা আরিয়ানের রুমে যেয়ে ওকে খাবারের কথা জিজ্ঞাসা করলে ও বলল খেয়েছে।
তারপর দেখি সব খাবার ডাসবিনে তারপর ওকে অনেক জিজ্ঞাসা করার পর বলে দেয় দেয় এসব তুমি করেছো।
আরে দায়িত্ব না নিতে পারলে এত নাটকের দরকার কি।

রিতিঃকিন্তু। (কিছু বলতে যাবে তখন দরজার পাশে দেখে আরিয়ান দারানো এক অদ্ভুত হাসি নিয়ে আর কিছু বলতে পারলাম না)
আয়ানঃ কিছু বলার নেই তোমার।
রিতিঃ না। (মাথা নিচু করে)
আয়ানঃ Disgusting।

আয়ান বাইরে চলে গেল আর রিতি বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরল। আর নিজের অজান্তেই চোখের থেকে দুই ফোঁটা নোনা জল বয়ে গেল।
আজ আমাদের বিয়ের ১২ দিন হয়ে গেল।
এ বাসায় সবাই খুব ভালো অতি কম সময়ে আমায় আপন করে নিয়েছে শুধু আয়ান আর আরিয়ান ছাড়া।
এ ১২ টি দিনের মধ্যে প্রায় ৭ দিন ই আয়ান বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে খুব কথা শুনায় আরিয়ানকে নিয়ে আর আমি চুপটি করে সব কথা শুনি।
আর আরিয়ান দরজার পাশে লুকিয়ে সে হাসি দেয়।

কেন যানি আমার আরিয়ানের সে হাসিটি খুব ভালো লাগে।
ওকে দেখলে খুব মায়া হয়।
আজও ভিন্ন কিছু হল না।
আমি বিছানায় বসে ছিলাম আয়ান এসে একটান দিয়ে দাড় করিয়ে গালে থাপ্পড় দেয়।
আমি অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

আয়ানঃ কি দেখছো হে।
আমার ছেলের গায়ে তুমি হাত তুললা কোন সাহসে।
আমি জানতাম নারীর মন খুব কোমল হয়।
কিন্তু তুমি। ছিঃ।
এই ছোট্ট ছেলেটির গায়ে হাত তুলতে তোমার একটু ও দয়া হয় নি।
তোমার কি মন না পাথর।

আল্লাহ হয়ত এজন্যই তোমাকে মা হবার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখছে।
তোমার মধ্যে মমতা নেই বলে আজ হয়তো তোমায় গর্ভে সন্তান ধারনের হ্মমতাও নেই।
আয়ান কথা গুলো বলে চলে গেলেন।
আমি তার কথা শুনে নিচে ধপ করে বসে পরলাম।
আজ জানো আমার নিজের চোখ দুটি পর পর লাগছে।

আমার হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও চোখে জল আমার অমান্যে বয়েই যাচ্ছে।
আজও আমায় এ কটু কথাটি শুনতে হল যা শুনলে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে।
খুবই কষ্ট লাগে।
মনে হয় এ কথা থেকে ভালো কেও যদি আমার জীবন নিয়ে নিত তবেই শান্তি পেতাম।
কিন্তু না এখনও বেঁচে আছি।
ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও।

কিন্তু কিছুই নেয় এই জীবনে।
না এক মা হওয়ার সুখ আর না বউ।
হে আমি মা হওয়ার অযোগ্য তাকে কি আমার দোষ।
আমার কপালে কি মা হওয়ার সুখ আসলেই নেই।

ভেবেই চোখের ধারা আরো জোরে বইতে লাগল।
কান্না করতে করতে করতে কখন যে চোখ দুটি বন্ধ হয়ে আসল বুঝলাম না।
আয়ান-
রুমে এসে দেখি ও নিচে ঘুমিয়ে আছে।
দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব কান্না করেছে।
কিন্তু ও যা করেছে তাও তো ভুল।

একবার চলে যেতে নিলাম পরে ভাবলাম ফ্লোরে ঘুমোলে যদি জ্বর আসে।
তাই কোলে উঠিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিলা।
হঠাৎ ওর গালের উপর নজর পরে।
আংগুলের দাগ পরে গেছে।
কত জোরে মেরেছি।

নিজের উপরই রাগ উঠছে।
মলম এনে ওর পাশে বসে ওর গালে লাগাতে নিলাম দেখি ওর চুল মুখের উপর অগুছালো হয়ে আছে।
মলম দিতে হবে তাই চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে দিলাম।
ও ঘুমেই কিছুটা কেঁপে ওঠলো।

মলম লাগাচ্ছি এ সময় রিতি ঘুমের ঘোরে আমার শার্ট আকঁড়ে ধরে ফেলে।
আমি ছাড়াতে গেলে ও আমায় আরো কাছে টেনে নেয়।
আমি এখন ওর মুখের অনেক কাছাকাছি।
আজ প্রথম ওকে এত কাছের থেকে দেখলাম।
ওর চেহেরায় হয়ত পৃথিবীর সব মায়া একত্রিত করা।
কিন্তু মন।

মনে মায়া নেই কেন।
ওর চেহেরা দেখে কেও বলতেই পারবে না যে আজ ও এত জঘন্য একটি কাজ করেছে।
ওর চেহেরার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
মানুষ এতো সুন্দর কিভাবে হয়,
এখন ঘুমানোর সময় বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।

হয়ত সারাটি জীবন দেখলেও মন ভরবে না এরকম চেহেরা নিয়ে জন্মেছে।
ওর দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছি
যেনো হারিয়ে গেছি অন্য কোনো রাজ্যে।
আমার ঘোর তখন ভাংলো যখন রিতি ঘুমের তালেই বলল।


পর্ব ৩

ওর দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছি
যেনো হারিয়ে গেছি অন্য কোনো রাজ্যে।
আমার ঘোর তখন ভাংলো যখন রিতি ঘুমের তালেই বলল।
রিতিঃ রাফি।

বুঝতে বাকি রইল না যে আমাকে সে তার প্রথম স্বামী ভেবে এভাবে শার্ট আকঁড়ে ধরেছে।
আগে রাহাত(রিতির বড় ভাই) থেকে একবার নাম শুনেছিলাম।
এখনও হয়ত রিতি ওই ছেলেটিকে ভুলতে পারে নি।
ওকে কি বলছি আমি নিজেই তো রিয়াকে ভুলতে ব্যর্থ হয়েছি।
আজও ওকে প্রথম সে ভালবাসার অনুভূতি মনে পরে।

আজ যদি রিয়া থাকতো তবে আমাদের জীবনটা কত সুন্দর হত।
যাই হোক।
কিন্তু এখন উঠবো কিভাবে মেয়েটি যেভাবে আকড়ে ধরেছে ওঠা সম্ভব না।
জাগাবো।

না থাক বাদ দি।
রিয়ার সাথে সেদিন গুলো ভাবতে লাগলাম। প্রতিদিন ই ভাবি।
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম বুঝতেই পারলাম না।
সকালে।

রিতি-
সকালে ঘুম ভাংলে আস্তে আস্তে চোখ খুলে আয়ানকে দেখতে পাই।
মুহূর্তের জন্যে ভয় পেয়ে যাই।
তারপর দেখি আমিই উনার শার্ট আঁকড়ে ধরে রেখেছি।
বুঝতে বাকি রইল না যে উনি আমার জন্যেই এখানে ঘুমিয়েছে।
আমি সাথে সাথে উনার শার্ট ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমের বাহিরে বের হয়ে সোজা কিচেনে চলে যাই।
ভাবির সাথে নাস্তা বানাতে থাকি।

নাস্তার টেবিলে বাচ্চারা ছাড়া সবাই আছে।
উনি আসলে উনার দিকে না তাকিয়েই সব কাজ করছি।
বাবাঃ সবাই শোন আমরা আগামী সাপ্তাহে সিলেট যাচ্ছি।
আমানঃবাবা হঠাৎ করে।

বাবাঃহে, কাল তোমার মা আর আমি মিলে picnic এ যাবো বলে plan করেছি।
ইশিকাঃ wow। picnic।
আয়ানঃ আমি যাবো না।

ইশিকাঃদেখ ভাইয়া মজা নষ্ট করবি না।
বাবাঃ কেন। (ভ্রু কুঁচকে)
আয়ানঃ বাবা আমার ভাল লাগে না।
আমানঃ আগে তো তুই সবচেয়ে বেশি excited থাকতি এখন ভাললাগে না।
মাঃ হে, এখন তো আমরা কেও না কয়দিন পর মরে গেলে তখন বুঝবি।

(বলেই কান্না শুরু করে দিল)
মার কান্না দেখে রিতির মন খারাপ হয়ে যায় বুঝতে পেরে নিধি ওর কানের কাছে এসে বলে।
নিধিঃ আরে চিন্তা কর না মা আয়ানকে মানানোর জন্য নাটক করছে।
রিতিঃ
আয়ানঃ আচ্ছা যাবো।

রিতি একবার মায়ের দিকে তাকায় আবার সবার দিকে তাকায় আর।
ইশিকাঃ(রিতির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলো)
বাবাঃ বউমারা তোমাদের পরিবারের সবাইকে আমন্ত্রণ দিয়ে দিয়ো।
বল আমাদের সাথে আসতে।
সবাই একসাথে গেলে মজা হবে।

নিধিঃ বাবা আব্বু আম্মু তো ভাইয়াদের কাছে Australia আছে তারা আসতে পারবে না।
বাবাঃমন খারাপ করে।
ছোট বউ মা। (করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে)।
রিতিঃ আব্বু আম্মু তো গ্রামে তারা আসতে পারবে না।
আমি রাহাত ভাইয়া আর মাহিকে আসতে বলব।

বাবাঃআচ্ছা। (মুখে হাসি নিয়ে)
নাস্তা শেষে ভাইয়া আর আয়ান অফিসে গেলেন।
আর আমি মাহিকে ফোন দিলাম।
মাহি আমি বেস্ট ফেন্ড আর ভাবি।
আমরা সে ক্লাস ৩ থেকে একসাথে।
বলতে গেলে আমার কলিজার টুকরা।

দে ছোট বেলা থেকে আমার সাথে আমরা একে অপরের সব কষ্ট, সুখ, সব ভাগ করে নিয়েছিলাম।
আমার কষ্টে সবসময় ও আমার সাথে ছিল।
আজ যদি আমি বেঁচে আছি তাহলে আমার পরিবার আর মাহির জন্য।
বিশেষ করে মাহি আমার ডিভোর্স হওয়ার পর পুরো ভেংগে গেছিলাম।
মাহি ওর বাচ্চা ছেড়ে আমাকে বাচ্চার মত দেখাশুনো করেছে।
হাসি পাচ্ছে তাই না।

কিন্তু যদি ওদিন ও না থাকতো তাহলে হয়ত ওদিন মরে যেতাম।
কিন্তু এ ব্যাপারে মাহি আর আমি ছাড়া কেও যানে না।
আসলে হয়ত কিছু বন্ধু-বান্ধব হয়ই এরকম সুখে সাথে না থাকলেও কষ্টে সাথে থাকে।
তাদেরকেই আসল ফ্রেন্ড বলে।

যাই হোক ১০ বছর আগে ও আমার ভাবিও হয়। রাহাত ভাইয়া আর ও আগে থেকে একে অপরকে পছন্দ করতো। বিয়েটা অবশ্য আমার দ্বারাই হয়।
আচ্ছা ফোনটা দেওয়া যাক।
রিং। রিং।
মাহিঃ hi। জানু।
আজ আমার কথা মনে পরল।
রিতিঃ কেমন আছিস।
মাহিঃ তোকে ছাড়া ভালো থাকতে পারি।

তোর ভাই কি এমনি এমনি বলে তার আপন বোনই তার সতিন।
হি। হি।
রিতিঃআচ্ছা শোন।
picnic এর সব কথা বলল।
ভাইয়ার কোন কাজ নেই তো।
আসতে পারবি।

মাহিঃ তোর ভাইয়ার কাজ থাকলে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসবো।
আমার জানুর সাথে কতদিন পর দেখা করার চান্স পাইসি এমনি এমনি হাত ছাড়া করবো নাকি।
রিতিঃআচ্ছা রাখি তাইলে। বাই।
এক সাপ্তাহ পর।
আজ সবাই পিকনিকের বের হচ্ছি।
৩ দিনের জন্যে যাচ্ছি।

বাবা একটি মিনি বাস নিয়েছে।
ভাইয়ারা আসলে সবাই রওনা দি।
ইশিকাঃ আচ্ছা মাহি আপু।
মাহিঃ হ্যাঁ বল।
ইশিকাঃ একটা জিনিস ভাবছিলাম।

নিধিঃআমিও।
মাহিঃ কি।
ইশিকাঃ তুমি আর রিতি ভাবি অনেক আগে থেকে ফ্রেন্ড না।
মাহিঃ হ্যাঁ অনেক।
নিধিঃ তাইলে।
তোমার ফ্রেন্ডকে একটু মজা আর দুষ্টামী শিখাতে পারো নি।

সারাদিনে গুনে গুনে কথা বলে।
মাহি একবার রিতির দিকে তাকালো তারপর রাহাতের দিকে তাকিয়ে রাহাত আর মাহি দুজনে হেসে দিল।
মাহিঃ আমি রিতিকে দুষ্টামী শিখাবো।

রাহাতঃ আপনারা বাঁচছেন যে এখন এত শান্ত হয়ে গেছে।
আগে সারাহ্মন বাদরের মত শয়তানি করত। (সবাই রিতির দিকে হা করে তাকায় রইল মনে হয় যেন ভুত দেখছে)
সারাহ্মন শুধু দুষ্টামী বুদ্ধি মাথায় ঘুরতো।
কখন কার সাথে মজা নিবে।

(হাসতে হাসতে হঠাৎ চোখে জল এসে পরে রাহাতের)
এখন ওর দুষ্টামি গুলো খুব মিস করি।
বাসে পুরো পরিবেশ থমথমে হয়ে গেল।
নিধি situation সামলানোর জন্য বলে।
চলো সবাই গানের কলি খেলি।

রিতি-
সবাই গানের কলি খেলছে আর আমি বাইরের প্রকৃতি সোন্দর্য দেখছি।
চোখ দুটি বন্ধ করে বাতাস অনুভব করছি।
আয়ানঃ হঠাৎ চোখ পরল।
রিতি তার চোখ দুটি বন্ধ করে বাতাসে ছোয়ার অনুভুতি নিচ্ছে।
ওর চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।

চেয়েও নিজের চোখ সরাতে পারছি না।
হঠাৎ করে বাসে ব্রেক দেওয়ায় ঘোর ভাংগে।
ড্রাইভারের সাথে কথা বলে যানা গেল যে বাস নষ্ট হয়ে গেছে।

বাসে অনেকহ্মন থেকে সবার অসস্থি লাগছিল।
তাই সবাই নিচে নেমে road এর পাশে দাড়ালাম।
রিতি-
অনেকহ্মন হল বাস নষ্ট হয়েছে সবাই কথা বলছিলাম আর নিশান, আরিয়ান আর মাহিম বল নিয়ে খেলছিল।

হঠাৎ খেয়াল করি বল রোড এর মাঝখানে গিয়ে পরেছে আর আরিয়ান বল আনতে গেল।
কিন্তু অপর সাইড দিয়ে যে গাড়ি দ্রুত স্পিডে আসছে তা দিকে ওর খেয়াল ই নেই।
কিছু না ভেবেই দৌড় দিলাম গাড়ি খুব কাছে এসে পরেছিল তাই ওকে ধাক্কা দিলেও নিজে সরতে পারলাম না।
গাড়ি হয়ত তখন ব্রেক মারতে নিয়েছিল কিন্তু হয়ত সাথে সাথে পারে নি বলে গাড়ির পায়ের সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে মাথায় আঘাত লাগল আর চোখ দুটি বন্ধ হয়ে গেল।

আয়ান-
দেখি রিতি কোথায় দৌড় দিচ্ছে ও তাকিয়ে দেখি আরিয়ান গাড়ির সামনে আমি এগোতে নিব তখনই গাড়িটির সামনে থেকে রিতি আরিয়ানকে সরিয়ে নিজে আঘত হয়ে গেল।
যেয়ে দেখি মাথা থেকে সমানে রক্ত পরছে।
কোলে ওর মাথা নিয়ে রুমাল দিয়ে মাথার রক্ত আটকালাম।
গাড়ি চালকটি বলল।

ওকে গাড়িয়তে নিয়ে যেতে আমি রিতিকে কোলে ওঠিয়ে নিলাম আমার সাথে মাহি ভাবি গেল।
আর বাকি সবাই অন্য ব্যবস্থা করে আসবে বলছে।
ওর মাথার রক্ত থামার নাম ই নিচ্ছে না।
ওকে দেখে রিয়ার মৃত্যুর সময় মনে পরে গেল।
ও গাড়ি চালানোর সময়ই ও accident করে মারা যায়।
ওর মাথা থেকেও খুব রক্ত পরায় ওকে বাচানো সম্ভব হয় না।
আমি সেদিন ছিলাম না ওর কাছে তাই ওকে বাচাতে পারি নি।

কিন্তু আমি রিতি কে কিছু হতে দিব না।
রিয়ার মৃত্যুর জন্য আজও নিজেকে মাফ করতে পারি নি ওদিন যদি আমি ওর সাথে যেতাম তাহলে হয়ত এরকম হত না।
আরেকবার নিজেকে অপরাধী করার হ্মমতা আমার নেই।
রিতির কিছু হলে নিজেকে মাফ করতে পারব না।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন চোখ দিয়ে পানি বইতে লাগলো বুঝতে পারলাম না।
সেখানে আশেপাশে কোন হাসপাতাল না থাকায় ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে খুব দেরি হল।
অনেক রক্ত পরেছে।
Hospital এ এনে ডাক্তার সোজা ওকে অপরেশন থিয়েটারে নিয়ে মাথায় ব্যান্ডিস করে রক্ত দেওয়া শুরু করল।
এতহ্মনে সবাই এসে পরেছে।

সবার অবস্থা খুব খারাপ আরিয়ান তো কান্না করতে করতে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে।
মাহি ভাবি আর রাহাত ভাইয়া নিজেকে সামলাতে পারছে না।
ইশিকা, নিধি ভাবি আর আমান ভাইয়া তাদের শান্তনা দিচ্ছে কিন্তু তারা নিজেরাও টেনশনে অবস্থা খারাপ।
বাবা নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে বারবার বলছে যে আমি যদি পিকনিকের কথা না বলতাম তবে আজ এমন হত না।
মাও সমানে কাঁদছে।

বাবার ব্লাডপ্রেসার ও লো হয়ে আসছে।
আমি এক মনে কেবিনের পাশে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছি।
মনে এক ভয় লাগছে যদি রিয়ার মত রিতিকেও হারিয়ে ফেলি।
ভেবেই দমটা বন্ধ হয়ে আসছে।

ডাক্তার কেবিন থেকে বের হলে সবাই তার কাছে যেয়ে জিজ্ঞাসা করতে থাকি।
ডাক্তারঃওনার মাথা থেকে অনেক বেশি রক্ত পরেছে।
তাই ওনাকে রক্ত দেওয়া হয়েছে।
এখন আমরা কিছু বলতে পারছি না কারণ ওনার অনেক রক্ত পরেছে।


পর্ব ৪

ডাক্তারঃ ওনার মাথা থেকে অনেক বেশি রক্ত পরেছে।
তাই ওনাকে রক্ত দেওয়া হয়েছে।
এখন আমরা কিছু বলতে পারছি না কারণ ওনার অনেক রক্ত পরেছে।

তারপরও ওনার জীবন এখন রিস্ক এর বাইরে।
কিন্তু আগামী ৬ ঘন্টায় উনার জ্ঞান না ফিরলে সমস্যা হতে পারে।
ওনি হয়ত কোমাতেও যাইতে পারে।

সবাই এখনও ভয়ে থাকলেও রিক্স থেকে বাইরে বলে সস্থির নিশ্বাস নেয়।
আরিয়া আয়ানের সামনে এসে।
আরিয়ানঃ বাবা। বাবা।

sorry। (বলে কান্না শুরু করে দেয়)
আয়ানঃনা বাবা কান্না করে না তোমার বল আনার জন্য যাওয়া ঠিক হয়নি তাও এটাতে তোমার কোন দোষ নেই। (হাঁটু গেড়ে আরিয়ানের সামনে বসে)
আরিয়ানঃ কিন্তু এতদিন যা করেছি তাতে সম্পুর্ণ আমার দোষ। (কান্না করতে করতে)
আয়ানঃমানে। (অবাক হয়ে)
আরিয়ানঃ বাবা, আমার ক্লাসমেটরা আমায় বলেছিল যে শত মা নাকি খুব খারাপ হয়,
প্রথমে ভালো ব্যবহার করলেও পরে অনেক খারাপ হয়ে যায়,
আর তিনি নাকি তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিবে।

তাই এতদিন তোমায় মিথ্যা বলেছিলাম যে উনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে।
সব মিথ্যা ছিল।
আয়ানের এসব শুনে রাগ উঠে যায়।
আরিয়ানকে থাপ্পড় মারতে নিলে মাহি আটকিয়ে ফেলে।
মাহিঃ ওকে মারলে রিতি কষ্ট পাবে।

যে আপনি ওর ছেলের ওপর হাত তুলেছেন। (আয়ানকে উদ্দেশ্য করে)
আয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
মাহি আরিয়ানের সামনে বসে বলে।
মাহিঃ তোমার ভয় হয়ত ঠিক ছিল।
কিন্তু বাবা তোমার এটা করা ঠিক হয়নি।

তুমি যানো রিতি তোমার বাবার জন্য না তোমার জন্য বিয়েতে হ্যাঁ বলেছিল।
আরিয়ানঃ উনি আজ আমাকে বাঁচাতে যেয়ে নিজে কেন গাড়ির সামনে এলেন। (ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে)
মাহিঃ কারণ ও তোমার মা।
আর যে কোন মাই তার সন্তানকে নিজের জীবন থেকে বেশি ভালবাসে।
আরিয়ানঃ কিন্তু উনি তো আমায় জন্ম দেয় নি।

মাহিঃ জানি না অন্য কেও কি অন্য কারো সন্তানকে ভালবাসতে পারবে কি না।
কিন্তু রিতি।
রিতির যদি নিজের সন্তানও হত তবেও ও তোমাকে ভালবাসতো।
সে ছোট বেলা থেকেই সবাইকে ভালবাসতে জানে।
সব মেয়ের মধ্যেই মায়া আছে।

কিন্তু গর্ভে সন্তান আসলে আরও মমতা বেড়ে যায়।
রিতির ছোট থেকেই বাচ্চাদের প্রতি আলাদা মমতা ছিল।
কিন্তু আল্লাহ ওকেই মা হওয়ার খুশি থেকে বঞ্চিত করল।
আরিয়ানঃ আমি আছি না।
উনার ছেলে।

আচ্ছা উনি কি আমায় মাফ করবে।
মাহিঃ করবে।
শুধু ওকে একটি বার মা বলে ডেকো তাইলেই হবে।
সবার চোখে এখনও পানি একটু আগে যা ভয়ের চোখে জল ছিল তা এখন রিতির কষ্টের অনুভুতির জল।
হ্যাঁ তারা হয়ত রিতির কষ্ট আজ অনুভব করছে।

আর আয়ানের নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে কিছু না বুঝেই রিতিকে সে এত কষ্ট দিল, এত কথা শুনালো, থাপ্পড় দিল।
নিজেকেই ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে।
৫ ঘন্টা পর রিতির জ্ঞান ফিরল।
সবাই গেল রিতির রুমে।
সবাই রিতির অবস্থা জিজ্ঞাসা করছে।
আরিয়ান অনেক সংকোচ হলেও রিতির সামনে গেল।

রিতিঃ তুমি ব্যাথা পাওনি তো বাবু।
আরিয়ানঃsorry।
এতদিন যা করেছে please মাফ করে দেও sorry মা।
রিতিঃকি। কি বললা। (চোখে পানি টলমল করছে)
আরিয়ানঃ sorry মা।

রিতি আরিয়ানকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল।
আজ যেন তার কষ্ট অনেকটা কমে গেল।
সে প্রথমবার মা ডাক টা শুনে নিজেকে কতটা সৌভাগ্যবান মনে করছে সে নিজেই কাওকে বুঝাতে পারবে না।
রিতি আরিয়ানকে ছাড়লে।

আরিয়ান রিতির চোখের পানি মুছে দেয়।
আরিয়ানঃ মা, আমি তোমাকে আর কাঁদতে দিব না।
রিতি মুচকি একটা হাসি দিল।
রাহাতঃ ইসস আমার বোনটাকে কতদিন পর এত খুশি দেখলাম।
কতদিন পর ওর মুখে হাসি দেখলাম।

আরিয়ানঃ আরে এটা তো ছোট হাসি বড় হাসি দেখবা।
আরিয়ান একবার নিশানের দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়।
নিশান এক চোখ টিপ দিয়ে আংগুলের ইশারায় ok বলে।
আরিয়ানঃএটা অবশ্য পিকনিকে করতাম এখন এখানেই করি। হি। হি।
নিশান মুখে হাত রেখে মিটিমিটি হাসছে।

ইশিকা আর নিধিও মিটিমিটি হাসছে।
এদিকে রিতি, রাহাত আর মাহি কিছুই বুঝছে না।
আমান আর আয়ান কিছু দুরুত্বেই ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।
আরিয়ান ইশিকার কাছে গেল আর ইশিকা ব্যাস থেকে কি একটা বোতল বের করে দিল আরিয়ান সোজা আয়ানের কাছে যেয়ে বোতল আর মুক্ষা খুলে দিল।
আরিয়ান আয়ানকে ডেকে।

আরিয়ানঃ বাবা দেখ দেখ তেলাপোকা।
বলার পর আয়ান নিচে তাকিয়েই তেলাপোকা দেখে ব্যাঙ এর মত লাফানো শুরু করে।
আর সবার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।
আয়ান তো রাগে লুচি হয়ে গেসে।

কিন্তু এ রাগের মধ্যেও তার চোখ আটকায় যায় রিতির হাসিতে।
অন্য কারো হাসি না তার চোখে পরছে কানে ডুকছে।
আয়ান-
ওর হাসি এত সুন্দর। আমি এর আগে কখনও কারো এত সুন্দর হাসি দেখি নি।

ওকে হাসলে যে কত সুন্দর লাগে হয়তো ও নিজেই যানে না তাই হাসে না।
ওর হাসি দেখেই যে কেও সারাটি জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।
আরিয়ানঃ বাবা তোমার পায়ের নিচে তেলাপোকা। 😂
আয়ানঃ আওওও। 😨

আরিয়ানঃআহারে।
বাবা তুমি কত ভিতু। 😂
আয়ানঃ তাই না এবার দারা।
আরিয়ান দিল এক দৌড়।
যেয়ে রিতির বেড এর পিছনে লুকালো।

আয়ান বেডের পিছনের যায়গা ছোট বলে ডুকতে না পেরে সামনে দিক থেকে ধরার চেষ্টা করে।
রিতি ওদের এ কান্ড দেখে হাস্তে হাস্তে শেষ।
এরকম হাসি কত বছর পর দিয়েছে সে হয়ত নিজেও বলতে পারবে না।

আয়ান রিতি কারোই খেয়াল নেই যে আরিয়ানকে ধরতে যেয়ে আয়ান রিতির একদম কাছাকাছি চলে এসেছে।
রিতি আরিয়ান থেকে আয়ানের দিকে তাকালে সে দেখল হয়ত তাদের মধ্যে বেশি হলেও ২ ইঞ্চির দুরত্ব আছে।
রিতিঃ আয়ান।
আয়ান রিতির ডাক শুনে ওর দিকে তাকালো।

দেখল যে সে রিতির একটু বেশিই কাছে চলে এসেছে।
তাই তাড়াতাড়ি সরে যায়।
২ দিন পর রিতিকে Hospital থেকে Release দেয়।
রিতির রাতে ঘুম আসছে না।

আসবে কিভাবে এ দুইদিন তো তাকে শুধু ঘুমাতেই হল।
ও বিছানা থেকে ওঠতে নিলে পায়েও ব্যাথা পাওয়ার কারণে বিছানায় পরে যায়।
আয়ান হাল্কা আওয়াজ শুনেই ওঠে পাগলের মতকাছে এসে জিজ্ঞাসা করে।
আয়ানঃ কি ঠিক আছো তো।
উঠছিলা কেন।

কিছু লাগবে।
মাথা কি ব্যাথা করছে।
খিদা লাগছে নাকি।
পায়ে ব্যাথা মলম লাগিয়ে দি। (সব কথা এক নিশ্বাসে বলল)
রিতিঃ না ঘুম আসছিল না তাই।

(মুখ কালো করে)
আয়ানঃ ওহ আচ্ছা এই কথা।
তুমি শুধু ১৫ মিনিট বস আমি আসছি।
রিতিঃ না। না আপনি ঘুমান।

আয়ানঃ চুপ এখান থেকে উঠবা না(ধমক দিয়ে)
রিতি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।
আয়ান একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।
১৫ মিনিট পর আয়ান এসে রিতিকে কোলে তুলে নিল।
রিতি কিছুটা শিহরিত হয়ে উঠলো।

রিতিঃ আমি হেঁটে যেতে পারব।
আয়ানঃ পায়ে ব্যাথা আবার হেঁটে যাবা।
বিছানা থেকে নামবা না বলে দিলাম।
আর শুনো কাল কিছু লাগলে আমি না থাকলে কাওকে বলে দিবা।
অবশ্য তোমার বলা লাগবে না তারাই দেখবে।

আর বিছানা থেকে নামতে হলে কাওকে না কাওকে ডাক দিবা তারা help করবে বুঝলা।
না বলে বসে থাকবা না।
রিতিঃ তা ঠিক আছে কিন্তু এত রাতে আমরা ছাদে কেন যাচ্ছি।
আয়ানঃ গেলেই দেখতে পারবা।
আয়ান রিতিকে ছাদে গিয়ে রিতিকে দোলনায় বসায়।

আর একটা ট্রেতে দুই মগ কফি নিয়্র এ হাঁটু গেড়ে রিতির সামনে বসে।
আয়ানঃ Here your coffee mam।
রিতিঃএকটু হেসে।
Thank you। ( একটি কফির মগ হাতে নেয় এক চুমুক দেয়)
আয়ানঃ How is it।
রিতিঃইমমম। ওয়াও।

অনেক testy।
আয়ানঃ I knew it।
তোমার ভালো লাগবে।
বলে দোলনায় একটু জায়গা রেখে রিতির পাশে বসল।

রিতিঃ আপনার আমাকে ছাদে আনার আর এসব এর বুদ্ধিটা কিভাবে আসল।
আয়ানঃ রিয়া যখন pregnant ছিল তখন ওর রাতে ঘুম আসতো না তখন আমরা রাতে ছাদে দোলনায় বসে কফি খেতাম আর ও আমার কাধে মাথা রেখে চাঁদ দেখত আর অনেক কথা বলতো।
রিতিঃওহ। আচ্ছা।
আয়ানঃsorry।

রিতিঃকেন।
আয়ানঃ তোমাকে যে রিয়ার কথা বললাম।
আমার প্রথম স্ত্রী তোমার খারাপ লাগতে পারে।
রিতিঃ আমার খারাপ লাগবে কেন।

আমি এমনেও আপনাদের love story কথা ভারসিটিতে অনেক শুনেছি।
আয়ানঃ ভারসিটি।
মানে। তুমি কিভাবে।
রিতিঃ আমরা একই ভারসিটিতে ছিলাম।

আপনি আর রিয়া আপু 4th year এ আর আমি ১st year এ।
আয়ানঃকি। 😱
রিতিঃজ্বি।
আয়ানঃ কিন্তু আমি তো তোমাকে কখনোই দেখি নি।

রিতিঃআপ্নি দেখবেন কি করে আপনি তো শুধু ক্লাস আর লাইব্রেরি ছাড়া কোথাও থাকতেন না।
আর আমার আর পড়ালেখার কোন সম্পর্ক ছিল না যে দেখবেন।
আমি নিজেই সারাজীবনে লাইব্রেরীর চেহেরা দেখি নি।
আয়ানঃতুমি আমার ব্যাপারে এত কিছু কিভাবে যানো।
রিতিঃ আমি না পুরো ভারসিটি যানে।

আয়ানঃ কিভাবে।
রিতিঃ আহারে।
আপনি যে পুরো ভারসিটির ক্রাশ ছিলেন ভুলে যান।
আয়ানঃ ও হে শুনেছি।
তোমারও ক্রাশ ছিলাম নাকি। 😎
রিতিঃ আমি আপনাকে তো তখন দেখি ই নি।

কিন্তু আমার এক ফ্রেন্ড ছিল নিশি ও আপনাকে অনেক লাইক করত।
আপনার আর রিয়া আপুর রিলেশনের কথা শুনে কান্না করতে করতে শেষ।
আপুকে কত যে বকা দিয়েছিল।

যাই হোক কিন্তু আপনারা দুইজন আমাদের ভারসিটিতে এত ফেমাস ছিলেন তারপরও আপনাদের love story কেও জানল না কেন।
আয়ানঃ রিয়া আমাকে মানা করে দিয়েছিল।

আমাদের ২/১ ফ্রেন্ড ছাড়াও কেও জানে না।
রিতিঃ আমাকে বলবেল।
আমার অনেক ইচ্ছা আছে জানার।
আয়ানঃ বলব না কেন।
তাহলে শুন।

১১ বছর আগে।
আমি তখন অনার্স ৪র্থ বর্ষে পরি। ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে গেলাম। তখন হয়তো বিকেল ৪ টা বাজে। সেদিন লাইব্রেরিতে বেশি কেও ছিল না।
লাইব্রেরির জানালার সামনে বসে ছিলাম। তখন জানালার দিয়ে অপর সাইডে দেখি।

পর্ব ৫

১১ বছর আগে।
আমি তখন অনার্স ৪র্থ বর্ষে পরি। ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে গেলাম। তখন হয়তো বিকেল ৪ টা বাজে। সেদিন লাইব্রেরিতে বেশি কেও ছিল না।
লাইব্রেরির জানালার সামনে বসে ছিলাম। তখন জানালার দিয়ে অপর সাইডে দেখি একটি মেয়ে নাচছে।
কেন যানি সেখানেই চোখ আটকে গেল।

এর আগে কোন মেয়ের দিকে তাকায় নি কিন্তু ঐ মেয়েটির প্রতি কেন যানি একটা আকর্ষণ সৃষ্টি হল।
কিন্তু আমি মেয়েটির চেহেরা দেখি নি।
কারণ মেয়েটি আমার দিকে পিঠ করে নাচছিল।
মেয়েটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।

ওর নাচ দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না।
সেদিন রাতে ঘুমাতে পারি নি।
সারারাত মেয়েটিকে নিয়ে ভাবছিলাম।

পরেরদিন বন্ধুর কাছে জানতে পারলাম যে আমাদের ভারসিটিতে ৩ মাস পর dance compition তাই মেয়েরা সেখানে practice করে।
আমি ক্লাস শেষে সেখানে গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ।
মেয়েটিকে জানার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল কিন্তু সেদিন আম্মুকে নিয়ে হাস্পাতালে চেকাপ এর জন্য যেতে হত।
তাই একটি চিঠি রুমের বাইরের লকের সেখানে রেখে এসে পরলাম।

কিন্তু নিজের নাম লিখতেই ভুলে গেছিলাম।
চিঠিতে ছিলঃ
“তোমার নাচ খুব সুন্দর। দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল ময়ূরী নাচছিল।

ওগো ময়ূরী তোমার নামটা যানতে পারি”
পরেরদিন যেয়ে দেখি সেখানে আরেকটি চিঠিঃ
“এই যে মিঃ লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েদের নাচ দেখতে লজ্জা লাগে না। দেখেন রাতে ভুত ধরবে। হি। হি।
কিন্তু আমার নাচের তারিফ করলেন তাই মাফ করে দিলাম।

আসলে ৩ মাস পর dance compition এর খুব tansion ছিল। আমার আবার হারা পছন্দ না। কিন্তু আপনার কথা থুক্কু লেখা চিঠিটা দেখে মনটা খুব হালকা লাগছে। যাই হোক ময়ুরী বলেছেন তাইলে দেখি ৩ মাস পর Dance Compition এ চিনতে পারেন নাকি।
আর হে No chiting এ রুম থেকে বের হওয়ার বা ডুকার সময় দেখবেন না কিন্তু।

এর আগে না আপনি আমার পরিচয় জানতে চাবেন না আমি আপনার।
Promise। ok
Promise ভাংলে কিন্তু রাতে ভুত-জ্বীন সব আসবে আর পেত্নী ধরে নিয়ে যেয়ে বিয়ে করবে কিন্তু বলে দিলাম।
আর হে কালকে আবার সেখানে চিঠি রেখে যাবেন।
আমরা চিঠি চিঠি খেলব হিহি। “

এভাবে আমাদের প্রতিদিন চিঠি নেওয়া দেওয়া হত।
একসময় আমার ওর দুষ্ট মিষ্টি কথাগুলো ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা রুপ নেয় প্রতিসাপ্তাহে আমাদের যে দুইদিন ভারসিটি অফ থাকতো সে দুইদিন যেন প্রতি মুহুর্ত শত বছরের মত লাগত।
এভাবে কথা বলতে বলতে ২৫ মাস কেটে যায়।
হঠাৎ তিনদিন ধরে ওর চিঠি পাই না।

তখন বুকটা ফেটে যাচ্ছিল।
ওর promise না ভেংগে থাকতে পারলাম না”
ওর নাচ রুমের সামনে দারিয়ে রইলাম।

দেখি রিয়া রুম থেকে বের হয়ে আসলো আমাকে দেখে থ খেয়ে গেল।
তখন আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলামঃ
আয়ানঃ তুমি প্রতিদিন এখানে Dance practice কর।
রিয়াঃ তুমি সে যে আমায় চিঠি দিতে।

আয়ানঃহ্যাঁ কিন্তু এই তিনদিন ধরে আর চিঠি দেও না কেন।
ও কিছু না বলে চলে যাচ্ছিল ওর হাত ধরে ফেললাম।
আয়ানঃ কি হল বল।

রিয়াঃ আর আপনার মায়ায় জরাতে চাই না তাই। চিঠি দিতে দিতে কবে ভালবেসে ফেললাম বুঝতেই পারলাম না।
তাই।
ও কিছু বলার আগে ওকে জরিয়ে ধরে ফেলি।
আয়ানঃ তুমি জানো না এ তিনদিন তোমার চিঠি ছাড়া কিভাবে দিন কাটছিল।
খুব কষ্ট হয়েছে।

আমি যে ভালবেসে ফেলেছি আমার ময়ুরিকে।
রিয়াও আমাকে জড়িয়ে ধরল।
তারপর থেকে আমাদের রিলেশন।

কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য ঐ একদিন ই আমার ময়ূরীর নাচ উপভোগ করতে পারলাম।
সে তিনমাস ও জানালা বন্ধ রাখত। আমায় চিঠিতে বলেছিল যদি দেখি তবে promise নাকি নষ্ট হয়ে যাবে।
আর আমাদের রিলেশনের ৬ দিন পর compitition ছিল বলে আর রিয়াকে জোর করি নি আমিই বলেছিলাম ওর নাচ একবারে dance competition এ দেখব।

তারপর যেদিনের অপেক্ষা ছিলাম সেদিন আসল ঠিকই কিন্তু মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আর competition এ যেতে পারি নি।
পরেরদিন শুনি ও নাকি হেরে গেছে একটি ১st year এর মেয়ে নাকি জিতল।
রিয়া পুরা ভেংগে গিয়েছিল। ও লাস্ট তিন বছর ধরে এ competition এ বিজয়ী হচ্ছিল।
আর খুব different মার্ক এ হেরে যাওয়ায় ও decide করে ও আর dance করবে না।
আমার খুব ইচ্ছা থাকলেও রিয়াকে আর dance এর জন্য বলি নি।

তারপর কি অনার্স শেষে বিয়ে আর এক বছরের মধ্যে আরিয়ান আসল আমাদের জীবনে।
খুব সুখেই চলছিল আমাদের জীবন। কিন্তু বলে না এত সুখ ভাগ্যে থাকে না।
৩ বছর আগে রিয়া গাড়ি চালাতে গিয়ে accident এ মারা যায়।
খুব কষ্টে নিজেকে সামলেছি। আরিয়ানের জন্য।

এই ছিল আমাদের অস্পুন্য ভালবাসার গল্প।
তাকিয়ে দেখি আমার গল্প শুনে রিতি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়ানঃ কি হল এভাবে তাকিয়ে আছ কেন।
রিতিঃ আপনাকের গল্পে হারিয়ে গেছিলাম।
আয়ানঃ এবার তোমারটা বল।

মুহূর্তেই রিতির মুখ কালো হয়ে গেল।
আয়ানঃ আচ্ছা বাদ দেও।
রিতিঃ না। না।
আমার জীবন সম্পর্কে আপনার জানার অধিকার আছে।

আয়ানঃ না।
তোমার ইচ্ছা ছাড়া কারো তোমার জীবন সম্পর্কে কিছু জানার অধিকার নেই।
রিতিঃ আমার বলার ইচ্ছা নেই কে বলেছে।
আপনাকে বিশ্বাস করি তাই বলার ইচ্ছা আছে।

আপনি আমায় বিশ্বাস করেছেন তাই বলেছেন আপনার জীবনের ঘটনা তাই না।
আর স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে ভালবাসা থাকুক না থাকুক বিশ্বাস থাকা লাগে।
আয়ানঃ তাহলে বল।

রিতিঃ
অনার্স তৃতীয় বর্ষে থাকতে আমার আর রাফির দেখা হয়।
দেখাটা বিয়ের কারণেই হয়।
পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক করার পর ওর সাথে দেখা করি তার পর কথা শুরু হয়।

কথা বলতে বলতে ও আমাকে নাকি ভালবেসে ফেলে কিন্তু আমি পারি না।
আমার দিক দিয়ে ভাললাগা পর্যন্তই সীমিত ছিল। কারণ আমার ইচ্ছা ছিল স্বামী ছাড়া কাওকে ভালবাসবো না। আর তখনো বিয়ে ঠিক হলেও বিয়ে হয় নি।
মাঝে মধ্যে ও খুব মন খারাপ করত।
আমারও খারাপ লাগতো।

কিন্তু একদিন ওকে promise করেছিলাম যে বিয়ের পর আমার সবটা দিয়ে ওকে ভালবাসবো।
তখন ও খুব খুশি হয়।
ওর সব কষ্ট নাকি নিমিষেই দূর হয়ে যায়।

বিয়ে হয়। আমি আমার promise ও পূরণ করি। ওকে আমার সব দিয়েভালবাসি। অবশ্য ও কম বাসতো না।
ভালোই চলছিল আমাদের জীবন। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় বিয়ের ২৫ বছর পর।
সবাই বলা শুরু করে যে বিয়ের এত বছর পর আমার বাচ্চা হচ্ছে না।
আমিও কনসিভ করতে পারছিলাম না।

তারপর থকে রাফি আমার অনেক কথায় বিরক্তিবোধ করত।
অবশ্য আমার কিছু বাচ্চামি স্বভাব নিয়ে আগেও বিরক্তি প্রকাশ করলেও তখন প্রায় আমার সব কাজেই বিরক্ত হয়ে ওঠত।
আমরা ডাক্তারের কাছে কনসোল করি। তারপর দুজনই বিভিন্ন পরীক্ষা করি।
তারপর একদিন বাসায় রিপোর্ট আসে।

সেখানে লেখা থাকে আমি নাকি মা হওয়ার অযোগ্য।
আস্তে আস্তে পরিবারের সবার আমার প্রতি ব্যবহার চেঞ্জ হতে থাকে রাফির মা ছাড়া। তিনি আমায় খুব ভালবাসতেন। একদম তার মেয়ের মত।
একরাতে রাফি এসে বলে সে নাকি আমার থেকে ডিভোর্স চায়।
আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম।
আমার চোখ দিয়ে যেন বন্যা বইছিল।

কারণ জানতে চাইলে সে আমায় বলল
যে আমি তাকে সন্তানের সুখ দিতে পারব না।
এ ছাড়া আমার বাচ্চামি স্বভাব গুলো তার কাছে বিরক্ত লাগে।
আমি ওকে কিছু বুঝানোর আগেই ও বলল।

ওর নাকি ওর পিএ আয়েশার সাথে extra marital affair ছিল। সে তিন মাস থেকে এখন ঐ মেয়ে ওর বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে।
তাই ও আমাকে ডিভোর্স দিয়ে আয়েশাকে বিয়ে করবে।
আমি আর কিছু না বলে ডিভোর্স পেপার সাইন করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।
অবশ্য মা অনেক থামিয়েছিল। কিন্তু ওখানে থাকার না ইচ্ছা ছিল না শক্তি।

সোজা বাসায় এসে সবাইকে সব খুলে বললাম। রাহাত ভাইয়া তো রাফিকে মেরে ফেলতে যাচ্ছিল।
কিন্তু আমি সবাইকে আমার কসম দিয়ে বললাম যানি ওদের কাওকে কিছু না বলে।

রুমে এসে অজোড় পানি পরছিল চোখ দিয়ে। চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছিল। কিন্তু তাও পারছিলাম না। এমনি বাসার সবার অবস্থা খারাপ।
শুধু ভাবছিলাম এক সময় যে ব্যবহারের প্রেমে পাগল হয়ে গিয়েছিল আর সে ব্যবহার ই ওর অসহ্য লাগছে।
আর সেটা তো ২০১৫ তখন কত পদ্ধতিতে বাচ্চা নেওয়া যেত।

যদি আজ আসলে ভালবসতে তবে এভাবে ছেড়ে যেতে না।
তখন মনে হচ্ছিল বুকের ভিতর কেও ছুরি মারছে। খুব কষ্ট হচ্ছিল। আর সহ্য করতে পারছিলাম না তাই।
বলেই রিতি থেকে গেল।

আয়ান রিতিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেখল ওর চোখে জম। আলতো করে রিতির মুখটা ওঠিয়ে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিল।
আয়ানঃতাই কি বল।
রিতিঃ না। কিছু না।
আয়ানঃবিশ্বাস কর না আমায়।
রিতি একবার করুন দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করে।

রিতিঃ তাই sucide করার চিন্তা করি।
sucide এর কথা শুনেই আয়ানের খুব ভয় লাগছিল মনে হল বুকের নিচে কামড় দিল।
রিতিঃ সেদিন হাতটা কাটতে নিয়েছিলাম তখনই মাহি এসে দেখে আমাকে দুগালে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে।
আমাকে এরপর থেকে কখনো একা ছাড়ে না।

মাহিন তখন ৭ বছরের ছিল। ও মাহিনকে ছেড়ে সারাদিন আমাকে বাচ্চার মত সামলাতো।
এসব এর ১ সপ্তাহের মধ্যেই শুনি রাফি নাকি আয়েশাকে বিয়ে করে ফেলেছে।
এই আর কি।
ওনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনার চোখে পানি।
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।
উনি কাদঁছে কেন।

রিতিঃ কাদঁছেন কেন।
উনি কিছু না বলে আমায় জরিয়ে ধরলেন।
আমি কিছুটা কেঁপে উঠলাম।
কারণ আমায় রাফি ছাড়া অন্য কোন ছেলে এ পর্যন্ত এত কাছে আসে নি।
ওনাকে সরাতেও পারছিনা।
জরিয়ে ধরতেও পারছিনা।

উনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলেন আমাকে জরিয়ে ধরেই।
আয়ানঃ আমি জানি তোমাকে আমি ভালবাসি না।
কিন্তু কেন যানি তোমাকে হারিয়ে ফেলার কথা শুনলে বুকে খুব ব্যাথা হয়।
অজানা এক ভয় কাজ করে।

আমার প্রথম ভালবাসাকে হারানোর পর তোমাকে হারানোর শক্তি আমার নেই।
please আমায় ছেড়ে যেও না।
please riti। (কান্না করতে করতে)
বলেই আয়ান রিতিকে আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরল।

পর্ব ৬

উনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলেন আমাকে জরিয়ে ধরেই।
আয়ানঃ আমি জানি তোমাকে আমি ভালবাসি না।
কিন্তু কেন যানি তোমাকে হারিয়ে ফেলার কথা শুনলে বুকে খুব ব্যাথা হয়।
আমার প্রথম ভালবাসাকে হারানোর পর তোমাকে হারানোর শক্তি আমার নেই।
please আমায় ছেড়ে যেও না।
রিতি কি বলবে বুঝতে পারছে না।

আয়ানের হুস ফিরলে ও রিতিকে ছেড়ে দেয়।
দুজনেই কিছুক্ষন নিরবতা পালন করে।
আয়ান প্রথমে নিরবতা ভেংগে বলে।
আয়ানঃ আচ্ছা আমরা friend হতে পারি না।
Friends। (হাত বারিয়ে)
রিতিঃমুচকি হাসি দিয়ে।

Friends। (হাত মিলিয়ে)
দুজনে ছাদে বসে বসে অনেকক্ষন কথা বলে।
বলতে বলতে কখন যে দুজনেই ঘুমিয়ে যায় নিজেরাই জানে না।
হালকা সূর্যের কিরণ যখন আয়ানের চোখে পরে তার ঘুম ভেংগে যায়।
চোখ খুলে দেখে রিতি ওর বাহু জরিয়ে ঘুমুচ্ছে।

একটু সরতে চাইলে রিতি আরও জোরে তাকে জরিয়ে ধরে।
রিতির সূর্যের আলোর কারণে ঘুমের disturb হচ্ছিল।
আয়ান বুঝতে পেরে রিতির চোখের কিছু দুরুত্বে নিজের হাত রাখে যানো আলো ওর চোখে পরে রিতির ঘুম না ভাংগে।
আর আয়ান রিতির দিকে তাকিয়ে আছে।
তার চেহেরার মায়া উপভোগ করছে।

এভাবে কতহ্মন ছিলো কেও বলতে পারবে না।
রিতির ঘুম ভাংলে আয়ানের তাকানো দেখে ও লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
দোলনা থেকে উঠতে যায় তখনই আয়ান ওর হাত ধরে রাগি লুক নিয়ে তাকায়।
আয়ানঃ তোমাকে না কালকেই বুঝালাম যে একা উঠবা না।
রিতিঃ Sorry। (ভয়ে ভয়ে)
আয়ান রিতিকে কোলে উঠিয়ে নিচে নেমে আসে।

মা, ভাবি ওদের দেখল। দেখে মুচকি মুচকি হাসা শুরু করল।
দুজনে ফ্রেশ হয়ে নিল।
মা দুইজনের জন্যে নাস্তা নিয়ে আসল।
পিছনে বাবাও আসল।
বাবাঃ কেমন আছিস মা।

রিতিঃ জ্বী বাবা ভালো।
বাবাঃতোদের সাথে কথা ছিল।
সবাইকে বাইরে নাস্তার সময় বলে দিব তোদের এখন বলছি।
আয়ানঃ কি বাবা।
বাবাঃ ইশিকার হবু শশুড়বাড়ি থেকে ফোন আসছে। ফাহিমের বাবা চায় আগামী ১৫ দিনে engagement করতে।
রিতিঃ বাবা এটা তো খুশির খবর।

বাবাঃ তা তো বটে।
কিন্তু তুমি তো অসুস্থ।
রিতিঃ বাবা ততোদিনে ঠিক হয়ে যাবো।
বাবাঃ আচ্ছা মা তাহলে তাদের হ্যাঁ বলে দি। (মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)
বাবা চলে গেলেন।

আয়ান রিতির পাশে খাবারের প্লেয়াট নিয়ে বসল।
আয়ানঃ বাবাকে তো বললে ঠিক হয়ে যাবে আমার তো মনে হয় না।
রিতিঃকেন।
আয়ানঃআমার কথা যে কালকে বললাম একটাও তো শুন না।

রিতিঃ😟😟😟
আয়ানঃ Engagement পর্যন্ত না ঠিক হলে যেতে দিব না কিন্তু বলে দিলাম। হম।
রিতিঃ না না ঠিক হয়ে যাব।
আয়ানঃ Good girl।
নেও এবার খেয়ে নেও।

রিতি-
আস্তে আস্তে ১৫ টি দিন চলে গেল আমি এখন অনেকটাই সুস্থ।
সবাই খুব খেয়াল রেখেছে আমার বিশেষ করে আয়ান আর আরিয়ান ও।
আজ ইশিকার engagement তাই ওকে সাজালাম।
ইশিকাঃ বাহ ভাবি তুমি এত সুন্দর সাজাও।

মাহিঃ সাজাবে না আমাদের ভারসিটির buety queen ছিল।
ইশিকাঃ সত্যি ভাবি।
রিতিঃ
মাহিঃআগে জানো এমনি কত সুন্দর এত মধ্যে সবসময় সাজুগুজু করত পুরো পরি পরি লাগত।
এখনই না আর সাজে না।

ইশিকাঃ ভাবি please আজ সাজো না।
প্লিজ প্লিজ।
রিতিঃনা। ভালো লাগছে না।
সবার অনেক বলায় ও রিতি সাজলো না।
ছেলেপক্ষ থেকে সবাই আসল।

মেয়েপক্ষ ছেলেপক্ষকে স্বাগতম করতে গেল।
কিন্তু রিতি গিয়ে যা দেখল তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
রিতি আর সামনে এগোতে পারে না থেমে যায়।
মেহমানরা রিতিকে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে যায়।
মাহি রিতির পাশে গিয়ে দারায়।

দেখেই রিতির চোখে বিন্দু পরিমাণ জল পরে গেল।
মাহি রিতির কাধে হাত রাখল।
রাহাত এসে বলল।
রাহাতঃ এই রাফি। রাফি এখানে কি করে।
আজ আমি আর ওকে ছাড়ছি না।
মেরেই ফেলব।

রাহাত সামনে এগোতেই রিতি রাহাতে হাত ধরে ফেলে।
রিতিঃ ভাইয়া তোমাকে আমার কসম দিয়েছিলাম ভুলে গেছো।
আর ও ছেলে পক্ষ থেকে আসছে please কোন তামাশা কর না।
ইশিকার বিয়েতে কোন সমস্যা হোক তা আমি চাই না।
রাহাত কিছুটা বিরক্তি দেখিয়ে চলে যায়।

মাহিঃ তুই ঠি।
রিতিঃকথা থামিয়ে।
আমি ঠিক আছি। (হাসি দিয়ে)
কিন্তু মাহি জানে এ হাসিতে কত কষ্ট লুকিয়ে আছে।
রিতিঃ আরে মাহিন তোকে ডাকছে তুই যা।
মাহিঃকিন্তু।

রিতিঃআমি ঠিক আছি তুই যা।
রিতি পুরো engagement লুকিয়ে লুকিয়ে ফিরছে।
ওর প্রচুর অসস্থি লাগছে।
হঠাৎ কেও ওর সামনে এসে দাড়ালো।
রাফিঃ আমার থেকে লুকাচ্ছো।
রিতিঃজ্বী না। (মাথা নিচু করে যেতে নেয়)
রাফিঃসামনে এসে দাঁড়ায়।

তাহলে লুকাচ্ছিলে কেন।
রিতিঃ আপনার কি।
রাফিঃ শুনলাম এ বাড়ির ছোট ছেলের সাথে বিয়ে করেছ।
রিতিঃনিশ্চুপ।
রাফিঃ কি হল বল।

আয়ান পিছন থেকে এসে রিতির এক কাধে হাত রেখে।
আয়ানঃ হ্যাঁ ও এখন আমার wife।
রাফিঃভালোই তো।
অন্য কারো সাথে বিয়ে করলা।
এখন কি সুখে আছো।

আয়ানঃ হম রিতি বল তোমায় সুখে রেখেছি।
না ব্যর্থ হয়েছি।
রিতি মাথা তুলে আয়ানের দিকে তাকিয়েই হাসি দিয়ে বলল।
রিতিঃ খুব সুখে আছি।

রাফিঃ তাই নাকি ভালোই তো। 😠(একটি রাগ আর বিরক্তি দেখিয়ে)
বলেই চলে যেতে নিল তখনই আয়েশা একটি মেয়েকে কোলে নিয়ে আসল।
আয়েশাঃরাফি তোমাকে কতক্ষন খুঁজলাম আর তুমি এখানে।
ও আচ্ছা তোমার ex-wife এর সাথে কথা বলছিলা নাকি।

তো রিতি কেমন আছো।
রিতিঃ ভালো।
বাবুটা তো খুবই কিউট। (বাচ্চা দেখলে রিতির সহ্য হয় না ছোট বেলার অভ্যাস)
রাফি আর আয়ান অবাক হয়ে রিতির দিকে তাকিয়ে রইল।

আয়েশাঃ দেখতে হবে না আমার আর রাফির মেয়ে।
রিতি একটু কাছে গিয়ে বাচ্চাটার গালটা ধরতে নেয়।
তখনই আয়েশা ঝটকা দিয়ে হাত সরিয়ে দেয়।
আয়েশাঃ কি করছ হে।

যানো না বাঁচদের বাচ্চা ধরতে নেই।
রাফিঃ আয়েশা এভাবে কথা বলছো কেন। (একটু রাগ দেখিয়ে)
আয়েশাঃ তাইলে কি করব জান বল।
নিজেতো কখনো মা হতে পারবে না আমার বাচ্চাকেযদি কিছু করে বসে।
আয়ানঃ দেখুন।

রিতিঃ কথা থামিয়ে।
এক মিনিট।
আরিয়ান। আরিয়ান।
আরিয়ান একটু দুরুত্বেই খেলছিল।
রিতির ডাক শুনে এক দৌড় দিয়ে চলে আসল।
আরিয়ানঃ মা ডেকেছো।

রিতিঃ এইযে আমার ছেলে আরিয়ান।
আয়েশাঃ
আরিয়ানঃ বাবুটা কত কিউট।
মা তুমি আমাকে এরকম একটা বাবু গিফট কর না।
রিতি, আয়ান, রাফি সবাই চুপ হয়ে গেল।

আয়েশাঃ কি হল রিতি।
তুমি তোমার ছেলেকে একটা বাবু দিতে পারবা না।
ইসসস। কিভাবে দিবা তুমি তো মা হওয়ার ই যোগ্য না। 😆
আরিয়ানঃ
এই ডাইনি আন্টি আপনার ডাইনি মার্কা হাসি বন্ধ করেন।

কে বলছে আমার আম্মু মা হওয়ার যোগ্য না আমি উনার ছেলে দেখেন না।
আর হে আমার আম্মুকে আর কে আর খারাপ কিছু বললে কিন্তু আপনার নাক কেটে ফেলব।
বলে দিলাম। হম।

তো এখন চিন্তা করেন আপনাকে নাক ছাড়া কিরকম লাগবে।
বলেই হাসা শুরু করে দিল।
রিতিঃ বাবু বড় দের সাথে এভাবে কথা বলতে নেই।
আরিয়ানঃ আমা আমি ভুল কিছু তো বলি নি।
বাবা তুমি ই বল ভুল কিছু বলেছে।

সবাই আয়ানের দিকে তাকায় দেখে মুখে চাপ দিয়ে হাসছে।
আয়েশাঃ এসব এর মানে কি।
এবার জোরেই হেসে দিল।

আয়েশা রাগ দেখিয়ে চলে গেল।
আরিয়ানঃ মা খিদু লেগেছে।
রিতিঃ আচ্ছা চল খাইয়ে দি।

রিতিও আরিয়ানকে নিয়ে চলে গেল।
রাফি যেতে নিচ্ছিল তখন আয়ান রাফিকে থামায়।
আয়ানঃ একটু শুনেন।
রাফিঃ হম বলেন।

আয়ানঃ I want to thank you।
রাফিঃWhy। (অবাক হয়ে)
আয়ানঃ Because of you i get riti
And my son ariyan gets his mother
রাফিঃ What।
আয়ানঃ Yes, see।
যদি আপনি রিতিকে না ছাড়তেন তাহলে আমরা ওকে কিভাবে পেতাম।

আপনি নিযে নিজের সৌভাগ্য আমার হাতে তুলে দিলেন। (রিতি আরিয়ানকে খাওয়াচ্ছিল ওদিকে তাকিয়ে)
রাফি ও একবার সেদিকে তাকালো আবার আয়ানের দিকে তাকালো আয়ান রাফির কাঁধে দুবার হাল্কা থাপ্পড় দিয়ে বিদায় জানিয়ে হাসি দিয়ে এসে পরে।
রাতে সব মেহমান বিদায় হওয়ার পর রিতি রুমে আসে।
রিতিঃ আয়ান।

আয়ানঃহম। বল।
রিতিঃ আপনি জানলেন কিভাবে যে রাফি। মানে।
আয়ানঃ তোমায় আজ function এ খুজে পাচ্ছিলাম না।
তাই সবাইকে জিজ্ঞাসা করতে করতে রাহাতের কাছে গেলাম।
ও প্রথমে বলল জানি না কিন্তু ওর কথার ধরনে প্রচুর রাগ বুঝা যাচ্ছিল তারপর জোর দেওয়ায় বলে দেয়। তারপর তোমায় খুজতে থাকি।
আর পেয়ে যাই।

রিতিঃ Thank You।
আয়ানঃ কেন।
রিতিঃ আজ যে আমার সাথে ছিলেন তাই।
আয়ানঃ যানো না স্ত্রী সম্মান রক্ষা স্বামীর দ্বায়িত্ব আর কর্তব্য দুটোই।
রিতি ভাবছে এ মানুষ এত ভালো কেন।

যদি আজ তাদের #Second_marriage না হয়ে আগেই বিয়ে হত তাহলে আজ তাদের জীবনে কত খুশি থাকতো।
রিতিঃ জানেন রিয়া আপু খুবই লাকি ছিল।
আয়ানঃ কেন।
রিতিঃ আপনি তার স্বামী ছিলেন তো তাই।
আয়ানঃ তাহলে তো তুমিও খুব লাকি।

রিতিঃ কিভাবে।
আয়ানঃ কারণ আমি তো তোমার ও স্বামী।
রিতিঃ তা বটে।
কিন্তু সব সম্পর্ক তো আর এক হয় না।

স্বামী স্ত্রী নাম থাকলেই সে সম্পর্ক গড়ে ওঠ না।
আমরা কেও ই তো আর আমাদের প্রথম ভালবাসাকে ভুলতে পারবো না।
তাই না।
আয়ানঃ(মনে মনে ভাবছি ওকে কি বলব বুঝতে পারছিনা)

পর্ব ৭

রিতিঃ তা বটে।
কিন্তু সব সম্পর্ক তো আর এক হয় না।
স্বামী স্ত্রী নাম থাকলেই সে সম্পর্ক গড়ে ওঠ না।
আমরা কেও ই তো আর আমাদের প্রথম ভালবাসাকে ভুলতে পারবো না।
তাই না।

আয়ানঃ(মনে মনে ভাবছি ওকে কি বলব বুঝতে পারছিনা)
আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও।
আবার কালকে ইশিকা কি plan করেছে নাকি।

রিতিঃ হ্যাঁ জানেন কালকে নাকি সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিব সারাদিন। (বড় একটি হাসি দিয়ে)
আয়ানঃ তুমি যদি এভাবে হাসি দেও তাহলে প্রতিদিনই দিব।
রিতি একটু লজ্জা পায়।

তারপর ঘুমোতে চলে যায়।
সকালে।
ইশিকা সকাল সকাল থাল বারি দিয়ে সবাইকে ডাকে।
সবাই চোখ ডোলতে ডোলতে বের হল।

আমানঃ কিরে সকাল সকাল কি শুরু করলি।
ইশিকাঃ আমাদের না আজ সারাদিন মজা করার প্লান ছিল আর তোমরা ঘুমাচ্ছ।
আয়ানঃ কাল তোর engagement এর কাজ করতে করতে সবাই tried।
ঘুমাতে দে।

বলেই যেতে নিল আবার রুমের ভিতর যেতে নিল ইশিকা আবার জোরে থাল বাজালো।
আয়ানঃ আবার কি হল। (কানে হাত দিয়ে)
ইশিকাঃ কিসের tried।
engagement আমার হল আমি তো tried না।
আমানঃ কারণ তুই কোন কাজই করস নাই।
ইশিকা ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিল।

রিতিঃ আরে কাঁদে না আমরা কিছুক্ষনের মধ্যেই আসতিসি।
আয়ানঃ নোটাংকিবাজ।
রাহাতদের কাল রাত কেও যাইতে দেয় নি তাই ওরা এখানেই ছিল।
রাহাতঃ ছোট বোনরা আর কি পারে।
রিতিঃ ভাইয়া কি বললা। (চোখ রাঙিয়ে)
রাহাতঃ মানে বললাম ছোট বোনরা কত কিউট হয়। 😑

ইশিকাঃ ঠিক তাই আজ সব খাবার আমাদের ভাইরা রান্না করবে।
নিধিঃ Wow। তাই নাকি
আয়ানঃ কি। কেন। আমরা কেন।

আমানঃ আমরা কিছু করছি না।
ইশিকাঃ আর কয় মাস পর তো চলেই যাবো এখনই এমন কর। যাওয়ার পর বুঝবা।
আয়ান, আমান আর রাহাত এক সাথেঃ ন্যাকামি কান্না।
মাঃ ইশিকা ঠিক বলেছে আজকের সব রান্না ছেলেরা করবে।
আয়ানঃ মা তুমিও।

মাঃ জ্বী ছেলেদের ও বুঝা উচিত আমরা কি কষ্ট করি।
বাবাঃ হম তো আমরা কি কম নাকি।
তোমাদের থেকে ভালো রান্না করব।
মাঃ আচ্ছা।

ওদের কেও help করবানা কিন্তু।
বাবাঃ আমাদের help লাগবেও না।
সবাই হা হয়ে বেক্কলের মত তাকিয়ে রইল।

তারপর ফ্রেশ হয়ে ছেলেরা গেল কিচেনে আর মেয়েরা গল্প করতে বসল।
অনেকক্ষণ হল কিচেনে থেকে খুব শব্দ আসছে।
মাহিঃ আমদের যেয়ে দেখা দরকার না তারা কি করছে।
মাঃ দরকার নেই বাদ দেও তারা এবার বুঝুক।

নিধিঃ ঠিক আমান শুধু বলে আমাই নাকি ভালো রান্না পারি না।
এবার দেখি সে কত ভালো রান্না করে।
রিতিঃ আপনারা বসেন।
আমি বাচ্চাদের দেখে আসি।
রিতি ওঠে বাচ্চাদের রুমে গেল।

আসেন দেখি ছেলেদের অবস্থা কি।
আয়ানঃ বাবা তুমি রান্না না পেরে challenge accept করলা কেন।
বাবাঃআমি কি জানি নাকি আমার ছেলেগুলো এত অকাম্মা।
আমানঃ যেমন বাবা তেমন ছেলে। 😂

রাহাতঃ এখন কি করব।
রিতি রুম থেকে বেরিয়ে ভাবল একবার দেখে আসা যাক কিচেনে কি চলছে।
গিয়ে যা দেখল তারপর সে কি হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
আটা পানিতে ভিজা।
চুলায় আগুন না দিয়ে রান্না করছে।

পুরো কিচেনে শাক সবজি আওলা যাওলা করা।
রিতিঃ এসব কি।
বাবাঃ মা তুই এসেছিস।
please মা help কর না।
একজন ও রান্তে পারে না।

challenge হারলে তোর মা সারাজীবন আমাকে খোটা শুনাবে।
please।
রিতিঃ আচ্ছা আপনারা সবাই এক সাইডে দারান আমি দেখছি।
রিতি তাড়াতাড়ি রুটি করল, ডিম ভাজার জন্য রেডি করল।
সবজি কাটতে যাবে তখনই হাত কেটে যায়।

আয়ান দেখে দৌড়িয়ে এসে রিতির কাটা জায়গায় বরফের পানিতে ভিজিয়ে রাখে।
আয়ানঃ বেশি জ্বলতিছে।
চল ডাক্তারের কাছে যাই।
রিতিঃ না, না আমি ঠিক আছি।

আর এতটুকুর জন্যে ডাক্তারের কাছে কে যায়।
আয়ানঃ কিন্তু।
রিতিঃ আমি ঠিক আছি।

পানি থেকে হাত ওঠাতে নেয় আর আয়ান আবার পানিতে হাত ডুবায়।
আয়ানঃ ওঠাইতিছো কেন। (ভ্রু কুঁচকে)
রিতিঃ রান্না।

আয়ানঃ করতে হবে না।
চুপ করে পানিতে হাত ডুবিয়ে রাখো।
রিতি-
ওনাকে দেখে প্রতিবার অবাক হই।
উনি এত ভালো কেন।

এত Caring কেন।
ব্যাথা তো আমি পেয়েছি কিন্তু ওনার চেহেরা দেখে মনে হচ্ছে কষ্ট উনার হচ্ছে।
উনার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছি।
আয়ানঃ তুমি বস আমি ব্যান্ডিস নিয়ে আসি।
বাবাঃ মা, Thank You।
আর কিছু করা লাগবে না।

এগুলোই হবে।
আর বেশি ব্যাথা করছে না তো।
রিতিঃ না বাবা।
বাবাঃআচ্ছা আমান চল।

খাবার গুলো টেবিলে নিয়ে যাই।
আমানঃ চলো।
বাবা আর আমান ভাইয়া চলে গেল।
রাহাতঃ তুই অনেক লাকি রে আয়ানের মতো স্বামী পেয়েছিস।
এবার অতীত ভুলে বর্তমানে সংসার টা কর।

আয়ান তোকে অনেক care করে।
ওকে তোর অতীতের জন্যে হারাস নারে বোন।
আমি কিছু বলতে পারলাম না।
এতক্ষনে আয়ান এসে পরল।

হাতে ব্যান্ডিস করে দিল।
রিতিঃ Thank You।
আয়ান একটা হাসি দিয়ে চলে গেল।
আমিও সবার কাছে চলে গেলাম।
নাস্তার টেবিলে।
মাঃ বাহ সবাই ভালোই রান্না করেছ।

তাহলে দুপুরে কি রানছো।
আমানঃ দুপুরে মানে।
মাঃ তো দুপুরে রানবা না।
বাবাঃ মাফ কর দুপুরে বাহিরের থেকে আমায় নিব।
আর যুদ্ধ করতে পারব না।

challenge তোমরা জিতলা।
তোমরা great।
সবাই হেসে দিল।
রিতি-
আমি শুধু আয়ানের দিকে তাকিয়ে রাহাত ভাইয়ার কথা ভাবছিলাম।

আয়ান দেখে একটা চোখ টিপ মারল।
আমি অন্যদিকে তাকালাম।
বিকেলে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছিলাম।
ইশিকাঃ মাহি আপু ওদিন না বলেছিলে ছোট ভাবি খুব দুষ্ট ছিল।
তা কি সত্যি।

মাহিঃ হ্যাঁ অনেক।
রাহাতঃ ওর দুষ্টামির কারণ এ সবাই অতিষ্ঠ হয়ে যেত।
কিন্তু সবার মন ও ভালো থাকতো।
নিধিঃ সত্যি।
মাহিঃ হ্যাঁ।

জানেন আমাদের ফ্রেন্ডসিপ ক্লাস ৩ থেকে।
এই মেয়েটা তখন থেকে প্রতিদিন টিফিন টাইমেটিচারদের টেবিলে ওঠে নাচতো।
আমামদের স্কুল, কলেজ, ভারসিটিতে এরকম কোন টিচার নেই যার ব্যাগে ও তেলাপোকা প্লাস্টিকের সাপ রাখে নি।

যদি কোন ছেলে ওকে বা আমাকে ডিস্টার্ব করতো তাহলে
ও একবার এক স্টাইলে এমনভাবে মজা চাখাইত ওদের আমাদের বোন করে ফেলতো।
আরো কত কি।

এসব কিছুই না।
সবাই হা হয়ে রিতির দিকে তাকিয়ে আছে।
ইশিকাঃ ভাবি নাকি সাজতেও অনেক পছন্দ করত।

মাহিঃ হ্যাঁ এমনিই এইতি দেখতে পরির মতো উপর দিকে সাজলে উফফ বলে বুঝাতে পারব না।
সব ছেলে ওর জন্যে পাগল ছিল।
আর এর উপর যখন ও নাচতো।
তখন তো।

এর আগে বলার আগে রিতি মাহির হাত ধরে ফেলে।
নিধিঃরিতি নাচতে পারে।
রাহাতঃ হ্যাঁ অনেক সুন্দর।
আজ পর্যন্ত কোন compition হারে নি।

ইশিকাঃ ভাবি প্লিজ নেচে দেখাও না।
রিতিঃ না। না।
ইশিকাঃ প্লিজ ভাবি।
সবাই অনেক request করার পর মানলো।

ইশিকাঃ ছাদে চল।
নিধিঃকিন্তু বাইরে মেঘ জমা বৃষ্টি হবে।
মাহিঃ রিতির বৃষ্টিতে ভিজে নাচা খুব পছন্দ।

আরিয়ানঃ আম্মু তাজলে তারাতারি চল না।
সবাই ছাদে যেয়ে গান ছাড়লো।
Music। ♬, Music। ♬
Dil Ye Bechain Ve, Raste Pe Nain Ve
Dil Ye Bechain Ve, Raste Pe Nain Ve
Jindri Behaal Hai, Sur Hai Na Taal Hai
Aa Ja Saanvaria Aa Aa Aa Aa
Taal Se Taal Mila, Ho, Taal Se Taal Mila
(প্রথমে রিতি নাচছিল না কিন্তু পরে চোখ বন্ধ করে নাচা শুরু করল।

কিছুটা ক্লাসিক কিছুটা বলিউড স্টাইল।
সবাই ওর নাচ দেখে হা হয়ে তাকিয়ে রইল। আয়ান ও অবাক হয়ে রিতির দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে রইল। এর মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়। )

Saawan Ne Aaj To, Mujhko Bhigoo Diya
Hai Meri Laaj Ne, Mujhko Duboo Diya
Saawan Ne Aaj To, Mujhko Bhigoo Diya
Hai Meri Laaj Ne, Mujhko Duboo Diya

Aisi Lagi Chaadi, Sochoon Main Ye Khadi
Kuch Maine Kho Diya, Kya Maine Kho Diya
Chup Kyoon Hai Bol Tu, Sang Mere Dol Tu
Meri Chaal Se Chaal Mila, Taal Se Taal Mila
O, Taal Se Taal Mila

(আয়ান রিতিকে বৃষ্টিতে ভিজে নাচতে দেখে ওর প্রতি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর পলক যানো পরছে না। বৃষ্টির প্রতিটি বিন্দু যেন রিতির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর রিতি আজ বৃষ্টিতে যেন তার সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গেছে সে শুধু বৃষ্টির বিন্দু গুলো উপভোগ করছে)

Maana Anjaan Hai, Tu Mere Vaaste
Maana Anjaan Hoon, Main Tere Vaaste
Maana Anjaan Hai, Tu Mere Vaaste
Maana Anjaan Hoon, Main Tere Vaaste

Main Tujhko Jaan Loon, Tu Mujhko Jaan Le
Aa Dil Ke Paas Aa, Is Dil Ke Raaste
Jo Tera Haal Hai, Woh Mera Haal Hai
Is Haal Se Haal Mila, O, Taal Se Taal Mila
O, Taal Se Taal Mila

(রাহাত আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে দেয়। রিতি নাচতে নাচতে তার খেয়াল ই নেই যে সে কখন এসে আয়ানের বুকে পরল। রাহাত আর মাহি সবাইকে নিচে নিয়ে গেল। আয়ান আর রিতি ছাদে সম্পুর্ণ একা)
রিতি-
আমি উনার বুকে এসে পরলাম। আর উনি ধরতে যেয়ে আমার কোমড়ে হাত রাখলেন।

আমি চেয়েও কেন যানি নড়তে পারছি না।
পুরো বরফ হয়ে গেছি।
আয়ানঃ
পানির প্রতিটি বিন্দু আমায় ওর প্রতি আকর্ষণ করছে।
ওর নাচ দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না।

যখন নাচছিল তখন ওর হাসি আমায় পাগল করে তুলছিল।
আমার নিজের শরীরের উপর কন্ট্রোল করতে পারছিনা।
ওর কোমড় থেকে হাত দুটো উঠিয়ে হাতগুলো ওর দুই গালে রাখলাম।
মুখটা একটু উঠিয়ে।

ওর ঠোঁটগুলোতে আলতো করে নিজের ঠোঁটের ছোয়া লাগালাম।
সাথে সাথে ও কেঁপে উঠলো।
ওর কেঁপে উঠাটা আমাকে আরো মাতাল করে দিল।
একটি হাত ওর গাল থেকে কোমড়ে নেমে গেল।
ও ছাড়ানো চেষ্টা করলে আরো জরে কাছে টেনে নি।

আর ওর ঠোঁটের স্বাদ নিতে থাকি।
কিছুক্ষন পর ছাড়ার পর।
চোখ খুলে দেখি ওর চোখে পানি।
বৃষ্টির পানি ওর পুরো চেহেরায় জমা থাকলেও ওর চোখের পানি গুলো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল।

আমি কিছু বলব এর আগেই ও আমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়।
আমি নিজেই বুঝতে পারলাম না কি করে ফেললাম।
নিজেকে নিজে অপরাধী মনে হচ্ছে।
আজ রিতি আর রিয়া দুজনের সাথেই অপরাধ করে ফেলেছি।

আমার ভালবাসাকে ভুলে কিভাবে আমি অন্য।
ছিঃ নিজেকেই ঘৃণা হচ্ছে।
এখন কিভাবে রিতির সামনে যাবো।
রিতি-
রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম। উনার থেকে এ আশাটা ছিল না।

আয়নার সামনে গিয়ে ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে কান্না শুরু করে দিলাম।
কিভাবে করলাম এরকম।
ওনাকে আমি ভালবাসই না তারপরও।
কান্না থামার নামি নিচ্ছে না।

আয়ান ছাদে বসে আছে নিচে যাওয়ার ক্ষমতা নেই তার রিতি আয়ানকে রাত হয়ে যাওয়ার পর ও আসে না বলে নিজে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসল।
আজ এ ঘটনার ১০ দিন হয়ে আসল।
আয়ান আর রিতি এখন প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথা বলে না।

আয়ান রিতির কাছে এ পর্যন্ত অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে কিন্তু রিতি ওকে avoid করে চলে।
রাতে ডিনার শেষে সবাই ড্রয়িং রুমে গল্প করছিল।
মাঃরিতি মা আয়ান কোথায়।
এখনও এলো না।

রিতিঃ মা উনি উনার ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে গেছেন।
আসতে একটু দেরি হবে।
কিছুক্ষন পর কনিংবেল বাজলে ইশিকা যেয়ে দরজা খুলে।
আয়ানঃ তোর ভাবি কোথায়।
ইশিকাঃ ড্রয়িং রুমে সবার সাথে গল্প করছি।

আয়ান সোজা ড্রয়িং রুমে গিয়ে রিতিকে বসা থেকে একটানে হাত ধরে দাড়া করালো।
আর ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিল।
রিতি কিছু বুঝতে না পেরে আয়ানের দিকে তাকালো ওর চোখ আগুনের মত লাল হয়ে আছে।
বাবাঃ আয়ান এসব কি বেয়াদবী।
ঘরের বউয়ের উপর কেও হাত তুলে।

আয়ানঃ তো তোমার ঘরের বউকে জিজ্ঞাসা কর না ও আমার থেকে এত বড় সত্যি কথা কেন লুকালো। (চিল্লিয়ে)
রিতিঃ কি বলছেন।
আমি কি করেছি। (কাঁদো গলায়)
আয়ানঃ তুমি এতো ভালো নাটক করতে পারো আমার জানা ছিল না। (রাগে চিল্লিয়ে রিতির দুই কাধে হাত রেখে কথাটি বলল)

পর্ব ৮

রিতিঃ কি বলছেন।
আমি কি করেছি। (কাঁদো গলায়)
আয়ানঃ তুমি এতো ভালো নাটক করতে পারো আমার জানা ছিল না। (রাগে চিল্লিয়ে রিতির দুই কাধে হাত রেখে কথাটি বলল)
রিতিঃমানে। (কাঁদতে কাঁদতে)
আয়ানঃ তোমায় আমি।

এতক্ষনে আরিয়ান আর নিশান চিল্লানো শিনে বের হল।
আরিয়ানঃ বাবা কি হয়েছে।
আয়ানঃতোমারা দুজন রুমে যাও।
নিশানঃকিন্তু চাচ্চু।
আয়ানঃযাও বলছি।

আরিয়ানঃ বাবা মাকে বকছো কেন।
আয়ানঃ একবার বললে কি কানে শুন না এখনই রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে ঘুমাও যাও। (চিল্লিয়ে)
আরিয়ান আর নিশান ভয়ে চলে গেল।
দুজনের কেও আয়ানকে আগে এত রাগে দেখেনি আগে।
আয়ানঃহে কি বলছিলাম।

তোমায় ওদিন আমি ছাদে আমার আর রিয়ার love story এর কথা বলি নি।
(শান্ত গলায়)
রিতিঃনিশ্চুপ।
আয়ানঃ কি হল বলছো না কেন। (ভ্রু কুঁচকে)
রিতিঃ নিশ্চুপ।
আয়নঃ Tell me damn it। ( চিৎকার করে ফোন আছার মেরে বলল)
রিতি ভয়ে কেঁপে উঠল।

মাঃ কি হয়েছে বলবি তো।
ওকে বলেছিস তো কি হয়েছে।
আয়ানঃ মা তোমরা সবাই জানোই তো আমি রিয়াকে কিভাবে ভালবাসি।
ইশিকাঃ হ্যাঁ, প্রথমে রিয়া ভাবির নাচ দেখে পছন্দ হয় তারপর চিঠি অদলবদল করে ভালবাসা।
আয়ানঃ আজ ১১ টা বছর পর আমি জানতে পাচ্ছি যে মেয়েকে আমি ভালবেসেছিলাম তা রিয়া ছিল না।
ইশিকাঃকি। কি বলছিস তুই।

আমানঃ তোর মাথা কি ঠিক আছে।
এসব কি বলছিস।
আয়ানঃ জানতে চাইবে না মেয়েটি কে ছিল।
বাবাঃকে।
নিধিঃকে।
আয়ানঃ আপনাদের ঘরের ছোট বউ।
রিতি।

মাঃ তুই কি বলছিস কিছুই বুঝতে পারছি না।
নিধিঃরিতি আয়ান কি সত্যি বলছে।
রিতি মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে।

বাবাঃ এসব কি হচ্ছে এ ঘরে।
কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমানঃ আয়ান তুই একটু বুঝিয়ে বলবি।
আয়ানঃ আজ আমি অফিস শেষে আমার ভারসিটির ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
সেখানে প্রায় সবাই আসছিল।

কাওকে বিয়েতে দাওয়াত দিনি বলে সবাই আমার বউয়ের ছবি দেখতে চাইলো।
সবাইকে ফোন বের করে দেখালাম তখন যানতে পারলাম রিতি ই ওই মেয়ে যে dance compition এ রিয়াকে হারিয়ে ছিল।
ইশিকাঃতো রিতি ভাবি তো অনেক সুন্দর নাচে হারাতেই পারে।
আয়ানঃআমার কথা কি শেষ হইছে। (চোখ রাঙিয়ে)
ইশিকাঃ sorry।

আয়ানঃতারপর সবাই তারিফ করছিল কারণ রিতি নাকি আমাদের ভারসিটির সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে ছিল।
কিন্তু কিছুক্ষন পর খেয়াল করলাম মিনা(রিয়ার বেস্টফ্রেন্ড) ও ছবির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম।
আয়ানঃ মিনা এভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেন।

মিনাঃ ভাবছি।
সত্যি কারের ভালবাসার মানুষদের যতই কেও দূরে সরাতে চাক তারা কোন কোন ভাবে মিলেই যায়।
আয়ানঃমানে। (ভ্রু কুঁচকে)
মিনাঃআসলে।

আয়ানঃ কি হয়েছে।
বল।
মিনাঃআসলে তুমি যে মেয়েকে ভালবাসতে সে রিয়া না রিতি।
আয়ানঃ এসব কোন ধরনের মজা।
এটা মজা করার জিনিস। (রাগ দেখিয়ে)
মিনাঃ আমি কখনো এটা বলতে চাইনি কিন্তু এখন না বলে পারছি না।
হয়ত রিয়ার আত্নাও শান্তি পাবে তোমাকে সত্তিটা জানালে।
আমাকে আগে বলা উচিত ছিল।

কিন্তু এখন বলছি।
আসলে রিয়া তোমাকে ভারসিটির প্রথম দিন থেকে পছন্দ করত। খুব ভালোবাসতো তোমায় কিন্তু তুমি সারাদিন বই নিয়ে থাকতা ওকে পাত্তাই দিতে না।
একদিন রিয়া আর আমি তোমাকে চিঠি রাখতে দেখি dance রুমে।
রিতির practice এর পরই রিয়ার practice ছিল তাই তখন গেলাম।
ওদিন একটু তাড়াতাড়ি গিয়েছিলাম।

কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না।
কিছুহ্মন পর দেখি রিতি দরজার ভিতর থেকে মুখ বের করে উকি মেরে কি দেখে চিঠিটি নিয়ে হাসি দিয়ে আবার ভিতরে ডুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।
রিতির practice শেষে আমরা ডুকলাম।
ওর লকারটাতে ক্লিপ ডুকিয়ে খুলে ফেললাম।
তারপর অনেকগুলো চিঠি দেখলাম।

আর তোমার hand writing রিয়া চিনতো তাই বুঝতে সময় লাগে নি যে হাতে লেখাটা তোমার।
সব পরে বুঝলাম যে তুমি আর রিতি অনেক দিন ধরেই কথা বলছো কিন্তু এখনও দেখা করোনি।
তারপর রিয়া তোমাকে পাওয়ার জন্যে এতই পাগল ছিল যে plan করল যে তোমাকে তোমার ময়ুরি সেজেই পাবে।
টিচারের সাথে কথা বলে রিতির সাথে practice এর time exchange করে নেয়।
আর রিতির সময় সকালে এসে পরে।

আর সব চিঠি গুলো সরিয়ে ফেলে।
রিতি জিজ্ঞাসা করলে আমরা বলি আমরা চিঠির ব্যাপারে কিছু জানি না।
তারপর তুমি হাতে লেখা চিনে যাবা তাই আর চিঠি দি নি।
প্লান অনুযায়ী তুমি তিনপর এসো আর।

রিয়া আর তোমার রিলেশন শুরু হয় কিভাবে তা তো আর বলার দরকার নেই।
আমাদের দুজনের dance compition নিয়ে ভয় ছিল। আমরা প্লান করেছিলাম যে রিয়া পায়ের মোচরের acting করবে কিন্তু ওদিন আন্টি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তুমি আসো নি তাই কোন সমস্যা হয়নি।
রিয়া তোমার জন্য আর dance compition এ হারার জন্যে রিতিকে দেখতে পারত না। ওকে অনেক বিরক্ত করত।
তারপর থেকে আমরা যথাসম্ভব তোমাকে আর রিতিকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি।

কিন্তু বলে না সত্যি ভালবাসা নিজেই তার ভালবাসাকে খুঁজে নায়।
ভাগ্যে থাকলে একে অপরকে পেয়েই যায়।
তোমার ভালবাসা সত্যি ছিল আয়ান।
তাই আজ ১১ টি বছর পর তুমি তোমার ময়ুরিকে পেলে।
তোমার ভালবাসা পেলে।

সত্যি খুব অবাক লাগছে আমার যে তোমার বিয়ে রিতির সাথেই হল।
যানি মাফ করা possible না কিন্তু পারলে মাফ করে দিও আমাকেও আর রিয়াকেও।
মিনা হাত জোর করে মাফ চাইলো।
তখন যানো আমি পাথর হয়ে গিয়েছিলাম।

শুধু ভাবছিলাম এ ১১ টি বছর মিথ্যা ছিল,
আমার ভালবাসা মিথ্যা ছিল,
আমাদের সম্পর্কটা মিথ্যা ছিল,
পাথর হয়ে গেছিলাম তখন।
কি বলব বুঝতেই পারছিলাম না।

তখন মনে পরল আমি তো সেদিন রিতিকে সব বলেছিলাম।
রিতি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল কেন বুঝতে বাকি রইল না।
কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসলাম।
সারা রাস্তা শুধু এটাই ভাবছিলাম।
চিঠি না পাওয়ার পর কি রিতি আমাকে একবার ও খুজে নি।
তখন কি একবার ও ভালবাসে নি।
আর সেদিন রাতে কিছু বলে নি কেন।

বল রিতিওদিন বলনি কেন আমায়।
রিতিঃনিশ্চুপ।
আয়ানঃআমি কিছু জিজ্ঞাস করছি শুনতে পাচ্ছো না নাকি। (চিল্লিয়েই বলল)
রিতি ভয়ে ভয়ে বলল।

রিতিঃআ। আসলে আমি চাইতাম না যে আপনি সত্যি জানার পর রিয়া আপুকে ঘৃণা করেন।
আয়ান রিতির দুই কাধে হাত রেখে শক্ত করে ধরল রিতি হাল্কা ব্যাথা পেলেও কিছু বলে নি।
আয়ানঃ সবার এত চিন্তা কর তাই না।
আমার।

আমার কি।
তুমি কি আমাকে এতই ঘৃণা কর যে আমার কথা একটি বার ও চিন্তা কর না।
রিতি চোখ তুলে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়।
কারণ আয়ানের চোখে পানি টলমল করছিল।
রিতিঃ আসলে।

আমি।
ওই। (কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না)
আয়ান রিতির কাঁধ ঝাটকি দিয়ে ছেড়ে দিয়ে রুমে চলে যায়।
রিতিও আয়ানের পিছন পিছন যায়।
সবাইও তাদের পিছনে যায় কিন্তু মা থামিয়ে দেয়।
মাঃ এটা ওদের মাঝের সমস্যা ওদেরকেই solve করতে দেও।

সবাই থেমে গেল কিন্তু সবার মাঝে ভয়টা রয়েই গেল যে কি হবে।
রিতি যেয়ে দেখতে পায় আয়ান পিঠ মুখ করে আছে।
রিতিঃ সত্যি বলছি আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাই নি।
আমি চাইনি যে আপনি।

আগে কিছু বলতে পারল না কারণ আয়ান যে আগেই যে এর আগেই তাকে নিজের বুকের মাঝে লুকিয়ে ফেলেছে।
আয়ান রিতিকে এতো জোরে জরিয়ে ধরেছে যেন হাল্কা ছাড় পেলেই রিতি তার থেকে কোথাও দূরে পালিয়ে যাবে।
বেশি জোরে জরিয়ে ধরায় রিতির নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

আয়ানঃ তোমার কি একবার ও আমার কথা মনে পরে নি তখন।
চিঠি গুলো পরতে পরতে তোমায় ভালবেসে ফেলেছিলাম।
তুমি কি একবারও বাসো নি।

এজন্যই বলি তোমার প্রতি এত আকর্ষণ কেন সৃষ্টি হয়।
তুমি যানো রিয়ার সাথে থাকলেও ওর জন্য সে টান ফিল হত না যে টান টা তোমার চিঠি গুলো দেখে হত।
দারাও একটু।

আয়ান রিতিকে ছেড়ে দেয়।
রিতি তখন একটু নিশ্বাস নেয়।
আয়ান আলমারির ড্রয়েরের থেকে একটি বক্স বের করে রিতির সামনে নিয়ে আসে।
রিতির হতে দিয়ে বলে খুলতে।

রিতি বক্সটি খুলে চোখ বড় বড় করে ফেলে।
এগুলো তাদের সব স্মৃতি।
সে সব চিঠি যা তারা লিখেছে।

আয়ান রিয়া থেকে চিঠি গুলো নিয়ে আজ পর্যন্ত তা সামলে রেখেছে।
রিতি আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখল আয়ান হাঁটু গেড়ে বসে রিতির হাত থেকে বক্সটি নিয়ে নিচে রেখে ওর দুটি হাত নিজের হাতে নিল।

আয়ানঃ একটি সুযোগ দিবে তোমায় ভালবাসার,
তোমার কাছে আসার,
তোমার মনটি ছোয়ার,
ফিরিয়ে দিবে সে আমার ময়ুরীকে যার প্রেমে পরেছিলাম,
ফিরেয়ে দিবে সে দুষ্ট মেয়েটিকে যার চিঠি পড়ে তার ভালবাসায় জরিয়েছিলাম,
একটি বার আবার বিশ্বাস করা শিখবে,
সত্যি বলছি মৃত্যু হলেও তোমার বিশ্বাস ভাংতে দিব না,
একটিবার আবার ভালবাসবে।
আমায় ভালবাসবে।

রিতি-
কি বলব বুঝতে পারছি না।
আমার পক্ষে কাওকে আবার ভালবাসা সম্ভব না।
কিন্তু ওনার চোখ।
ওনার চোখের দিকে তাকালে যে সে সমুদ্রের মাঝে ভেসে যেতে ইচ্ছা করে।
এ মায়ায় ডুবে যেতে ইচ্ছা করে।

কিন্তু হাজার চেলেও এ মন্টার কি করব।
একবার ভেংগে গেলে যে তা জোরা লাগানো খুব কঠিন।
কিছু না ভেবেই একটি হালকা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম।
রিতিঃ চেষ্টা করব।
উনি সাথে সাথে দাড়িয়ে আমায় জরিয়ে নিলেন।

রিতিঃ চলেন ডিনার করে নিন।
আয়ানঃহম। চল। (চোখ মুছতে মুছতে হাসি দিয়ে)
খেয়ে দুজনে প্রতিদিনের মত রিতি খাটে আর আয়ান সোফায় ঘুমিয়ে পরে।
সকালে।

আয়ান-
কালরাতের পর সবাই আমাকে নিয়ে৷ খুব tension এ ছিল তাই অফিসে না যেয়ে সবার সাথে গল্প করলাম আর সময় কাটালাম।
আরিয়ান আর নিশান কালকে খুব ভয় পেয়েছিল তাই নিজে ওদের স্কুল থেকে নিয়ে আসলাম। আসার সনয় আইসক্রিম কিনে দিলাম। কালরাত কি হল ওরা ভুলেই গেল আইসক্রিমের লোভে।
সারা বাড়ি খুঁজেও আমার ময়ুরীটাকে পেলাম না।

ওফফফ আর সহ্য হচ্ছে না।
আগেও ওকে না দেখলে খালি খালি লাগত কিন্তু কালকের পর থেকে ওকে না দেখলে ওকে হারানোর অজানা একটি ভয় থাকে।
ওকে না দেখলে কিছুই ভালো লাগে না।
একি রুমেও নেই কোই গেল মেয়েটি।
ভিতরে যেয়ে দেখি রিতি বারিন্দায় ওর ভিজা চুলগুলো মুচছে।

আমার থেকে পিঠ করেই চুলগুলো মুচছিলো কিন্তু ওর সে ফর্সা রঙ এ মেরুন কালারের সেলোয়ার কামিজে ফুটে ওঠেছে।
এর মধ্যে চুলগুলো একপাশ করে মুচছে।
এর মধ্যে ওর ঘাড়ে সে বিন্দু বিন্দু জমা পানি গুলো আমায় আরো কাছে টেনে নিচ্ছিল।

যেয়েই ওর পেটে আমার হাত দুটি আবদ্ধ করে টেনে নিজের সাথে মিশাতেই ও কেঁপে উঠলো।
আমি নিমিশেই আমার নাক মুখ ওর ঘাড়ে ঘষতে লাগলাম। ওর ঘ্রাণ নিতে লাগলাম। আমার যেন নেশা লেগে যাচ্ছিল।
ওর ঘাড় থেকে মুখটা ওর চুলে নিয়ে গেলাম।

ওর চুলের ঘ্রাণ যেন আমার নেশা বাড়িয়ে দিচ্ছিলে।
ওর ঘাড়ে মুখটি আবার নিয়ে আলতো করে একটা চুমু দিলাম।
চুমু দিতেই ও কেঁপে ওঠল।
ওর ঘাড়ে আরও চুমু দিতে লাগলাম
প্রতিটি চুমুতেই ও কেঁপে উঠছিল।

ওর নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছিল।
যা আমাকে আরো পাগল করে দিচ্ছিল।
ওর ঘাড়ে আর বেশি নিজের ঠোঁটের ছোয়া লাগিয়ে দিতে লাগলাম।
ও পিছনে ফিরেই আমায় জরিয়ে ধরল।

পর্ব ৯

ওর ঘাড়ে মুখটি আবার নিয়ে আলতো করে একটা চুমু দিলাম।
চুমু দিতেই ও কেঁপে ওঠল।
ওর ঘাড়ে আরও চুমু দিতে লাগলাম
প্রতিটি চুমুতেই ও কেঁপে উঠছিল।

ওর নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছিল।
যা আমাকে আরো পাগল করে দিচ্ছিল।
ওর ঘাড়ে আর বেশি নিজের ঠোঁটের ছোয়া লাগিয়ে দিতে লাগলাম।

ও পিছনে ফিরেই আমায় জরিয়ে ধরল।
আমার তো খুশির ঠিকানাই নেই আজ প্রথমবার আমার ময়ূরী নিজের থেকে আমায় জরিয়ে ধরেছে।
আজ সব সুখ যেন আমার বুকে এসে জরিয়েছে।
আমি ও রিতিকে জরিয়ে ধরতে যাবো তখনই রিতির মুখ থেকে সে একটি শব্দ শুনে থেমে গেলাম।
সব সুখ যেন নিমিষেই কষ্টের রুপ নিয়ে নিলো।
রিতি কি বলল তাই তো।

রিতি আমায় জরিয়েই বললঃ
রিতিঃ রাফি।
এই একটি শব্দ আগেও শুনেছি কিন্তু এতো ব্যাথা হয় নি আজ খুব কষ্ট লাগছে এ একটি নাম শুনে।
আমি রিতিকে না জরিয়ে রয়েছি।
আর রিতি আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে রেখেছে।

কিন্তু তাও ও আমকে জরায় নি,
নিজের কাছে এতো কাছে টেনেও আরও দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
আয়ানঃ আমি রাফি না আয়ান।
রিতি মাথা তুলে তাকায় সাথে সাথে আয়ানকে ছেড়ে দেয়।

একবার আয়ানের দিকে তাকায়।
তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে নিচে তাকায়।
তারপর দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।
আয়ান পাথর হয়ে সেখানে দাড়িয়ে থাকে।
সে কি করবে না করবে বুঝতে পারছে না।

মুহূর্তেই তার দুনিয়া পালটে গেল।
আজ রিতিকে এত কাছে পেয়েও আরো দূরে চলে গেল সে।
অন্যদিকে রিতি-
কি করলাম এটা।

কি হল এটা এখনও বুঝে ওঠতে পারছিনা।
আজ যানো আমি নিজের হুস হারিয়ে ফেলেছি।
আজ আবার আয়ানকে কষ্ট দিলাম।
মানুষটি আমার জন্য কত কষ্ট পেল।
আর কত কষ্ট পেতে হবে তার।

নিজের উপরি আজ এত পরিমাণ জিদ উঠছে।
রাফি।
ওর নামটা কেন নিলাম।
কিন্তু উনি আজ আমার এতো কাছে এসেছে।
রাফির নামটা ভুলে চলে আসল।
রাফি ছাড়া অন্য কোন ছেলে আমার এত কাছে আসে নি হয়ত তাই।

আজ দ্বিতীয়বার আয়ান আমার এতটা কাছে ছিল।
কিন্তু ও আমার যত কাছে আসে ও আমায় ততটা রাফির কথা মনে করিয়ে দেয়।
আমার প্রথম ভালবাসা ভুলাটা তো এত সহজ না।
তাই না।

কিন্তু আয়ান,
আয়ান তো আমাকে এতো ভালবাসে ওকে কষ্ট কিভাবে দি।
এতো ভালো মানুষ,
আমার এত care করে,
এত ভালবাসে।

১১ টি বছর সে নিজের ভালবাসা বুঝে অন্যকে ভালবেসে এসেছে।
ওনাকে কষ্ট দিলে যে নিজেরো কষ্ট লাগে।
কালকে ওনাকে চেষ্টা করব বলে আজ আবার কষ্ট দিলাম,
না ঠিক করি নি।
যাই যেয়ে ওনাকে sorry বলি।

রুমে যেয়ে দেখি ওনি নেই।
ড্রাইনিং রুমে দেখি মা আর ভাবি কথা বছে তাদের জিজ্ঞাসা করি।
রিতিঃমা আয়ান কোথায়।
মাঃ কেন মা ও তো অফিসে গেছে।

কোন important meeting চলে আসছে তাই।
বলে গেল ওর দেরি হবে আসতে।
তোমাকে বলে নি।

নিধিঃ রিতি কাল রাত না সব ঠিক হয়েছিল আজ কি আবার কিছু হয়েছে।
রিতিঃ না ভাবি। (মিথ্যা বললাম না হয় সবাই tansion করবে)
নিধিঃ তাহলে আয়ান আমাদের বলে গেল অথচ তুমি যানো না কেন।
রিতিঃ ওই। আসলে ভাবি।

আসলে আমি ছাদে ছিলাম হয়তো আয়ান আমাকে খুঁজেছিল কিন্তু পায় নি।
নিধিঃ ওহ। আচ্ছা।
রুমে চলে আসলাম।
এসেই আয়ানকে ফোন দিলাম।

ফোন ধরলো না।
৫ বার আরো দিলাম ধরল না।
এর পরেরবার ফোন কেটে গেল।
খুব অসস্থি লাগছে।

এর থেকে বেশি মনের ভিতর একটি ভয় কাজ করছে।
কি করব না করব বুঝতে পারছিনা।
রাত ২ টা বেজে গেল এখন ও আসছে না।

সবাই ঘুমিয়ে গেছে।
আমি বারিন্দায় দাঁড়িয়ে উনার জন্য অপেক্ষা করছি।
কত ফোন করেছি তার হিসাব নেই।
ভয়ে মনে হচ্ছে জানটা বের হয়ে যাবে।
সকালের ঘটনার পর কিছু করে নি তো।

ভেবেই বুকের ভিতরটাতে মোচড় দিয়ে ওঠল।
চোখ দিয়ে পানির বন্যা বইতে লাগলো।
তখনই দেখলাম ওনার গাড়ি বাসার সামনে এসে দাড়ালো।
দৌড় দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে উনার গাড়ির সামনে দাড়ালাম।

কিন্তু উনার গাড়ি থেকে সাব্বির ভাইয়া (আয়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড) উনি বের হলেন।
রিতিঃ ভাইয়া আয়ান কোথায়।
সাব্বিরঃ ভাবি আপনার আর আয়ানের মধ্যে কি কিছু হয়েছে। (ভ্রু কুঁচকে)
রিতি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রাখে।
সাব্বিরঃ বুঝেছি।

রিতিঃ উনি কোথায়।
সাব্বিরঃ গাড়িতে।
Drunk তাই আমি নিয়ে আসলাম।
রিতিঃ মানে। (অবাক হয়ে)
সাব্বিরঃ আজ প্রথম আয়ান drink করেছে।

আমি ওকে আগে এরকম কখনোই দেখি নি আজ প্রথম।
ভাবি আয়ান আপনাকে অনেক ভালবাসে আমি কাল রিয়ার আর মিনার কথা জানলাম।
ভাবি সে ১৭ বছর ধরে আমাদের ফ্রেন্ডশিপ।
কিন্তু আমি আমানকে কখনও এভাবে দেখি নি।

আপনার হয়ত ওর ভালবাসার উপর বিশ্বাস নেই কিন্তু আমি দেখেছি।
ও আপনার চিঠি একটি পেলে খুশিতে পাগল হয়ে যেত।
যে তিনদিন আপনার চিঠি পায় নি সে তিনটি দিন পাগলের মতো হয়েগেছিল।
কি করছে না করছে নিজেই যানতো না।

ভাবি ভাগ্যই আপনাদের মিলিয়েছে নাহলে একবার চিন্তা করেন ১১ বছর আগে আলাদা হওয়ার সত্ত্বেও আজ আপনারা জীবন সংগী কিভাবে হলেন।
যদি আয়ানের ভালবাসার গভীরত্ব এত না হত তবে আজ হয়ত আপনাকে ফিরে পেত না।
ভাবি রিয়া একবার এসে আপনার ভাগ্য চুরি করেছিল।
নাহলে আয়ান কখনোই আপনাকে নিজের থেকে দূরে যেতে দিত না।

কিন্তু আপনি তখন চাইলে কিন্তু আয়ানকে খুঁজে পেতেন তাই না।
রিতি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রাখল।
কি বলবে সে যা সত্যি সাব্বির তাই তো বলছে।

ভাবি একবার আপনি আয়ানকে হারিয়ে জীবনের অনেক বড় ভুল করেছেন।
আপনাকে অনুরোধ করছি আবার ভুলটি করেন না।
আয়ানকে একবার ভালবেসে দেখুন পৃথিবীর সব সুখ আপনার পায়ের কাছে এনে দিবে।
আপনার জীবন ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবে।

আমি যানি আপনার সাথে আগে কি হয়েছে।
কিন্তু এর মানে তো এই না যে সবাই এক তাই না।
আমি লিখে দিতে পারবো আয়ান কখনোই আপনার বিশ্বাস ভাংবে না।
এটি বিনা দ্বিধায় আমার পক্ষে বলা সম্ভব।

রিতি এখনও চুপ করে আছে।
সাব্বির আচ্ছা ভাবি চলেন ওকে রুমে দিয়ে আসি।
আর কাওকে ওর এ অবস্থার কথা বলেন না।
নাহলে সবাই অনেক চিন্তা করবে।

রিতি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল।
সাব্বির আয়ানকে গাড়ি থেকে বের করে কাধে হাত দিয়ে সামলিয়ে রুমে নিয়ে যায়।
নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়।
রিতি দেখে আয়ানের ডান হাতে ব্যান্ডিস।

রিতিঃ উনার হাতে কি হয়েছে। (সাব্বিরকে উদ্দেশ্য করে)
সাব্বিরঃ কালরাত আপনাকে থাপ্পড় মেরেছিল তার শাস্তি দিয়েছে নিজেকে।
রিতিঃমানে।

কিভাবে। (চোখ থেকে হঠাৎ জল পরে গেল)
সাব্বিরঃ ড্রিঙ্ক করতে করতে গ্লাসটা হাত চাপ দিয়ে ধরে ভেংগে ফেলে ফলে সব কাঁচ ওর হাতে ডুকে যায়।
ব্যান্ডিস করার কথায় বলে।

যে আপনাকে এ হাত দিয়ে থাপ্পড় দিয়েছে তাই তাকে কষ্ট পেতে হবে।
হাজার বলাতেও মানাতে পারি নি।
অজ্ঞান হওয়ার পর ডাক্তারের কাছে যেয়ে ব্যান্ডিস করিয়ে দিলাম।
রিতি সাব্বিরের কথা শুলে আয়ানের দিকে অবাক হয়ে তাকালে।

সাব্বিরঃ ভাবি ওকে নিয়ে আসাতে আমি আমার গাড়ি রেখে এসেছি গাড়িটা নিয়ে যাচ্ছি।
রিতিঃ ok vaiya।
সাব্বিরঃ আর ভাবি যা বললাম তা একটু ভেবে দেখেন।
রিতিঃ জ্বি ভাইয়া।

রিতি সাব্বির চলে গেলে দরজা লাগিয়ে লেবুর শরবত নিয়ে রুমে আসে।
আয়ানকে অনেক কষ্টে হাল্কা উঠিয়ে পানির ছিটা দিয়ে জ্ঞান ফিরায় আর লেবুর শরবত খাওয়ার যাতে hangover কমে।
খাওয়ানো শেষে যেতে নেয় তখনই আয়ান রিতির হাত ধরে ফেলে।
রিতি গ্লাসটা রেখে আয়ানের পাশে বসে।

আয়ান রিতির একটি হাত নিজের দুটি হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে।
আয়ানঃ তুমি আমায় আবার ছেড়ে চলে যাচ্ছো।
আয়ান যে নেশার ঘোড়ে কথা গুলো বলছে তা রিতি ভালো মতোই বুঝছে।
রিতিঃ না আমি কোথাও যাব না।

আপনি ঘুমান। (মুচকি হাসি দিয়ে)
আয়ান রিতির বামগালে একটি চুমু দিল গতরাতে যেখানে থাপ্পড় দিয়েছিল।
রিতি হঠাৎ এভাবে কিস করায় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
আয়ান বাচ্চাদের মত একটি হাসি দিল।

আয়ানঃ ময়ুরি।
ওগো ময়ূরী।
যানো তুমাকে আমি এত্তগুলা ভালবাসি। (হাত ছেড়ে দুইহাত দুই দিকে মেলিয়ে)
আয়ানের এসব বাচ্চামি দেখে রিতির যেমন হাসি পাচ্ছে তেমন ভালোও লাগছে।
রিতিঃ সত্যি।

আয়ানঃ এক সত্যি,
দুই সত্যি,
তিন সত্যি।
হি। হি।
কিন্তু। (চোখে হঠাৎ পানি এসে)
রিতিঃ কিন্তু কি।

আয়ানঃ তুমি আমাকে ভালবাস না কেন।
যানো আমার খুব কষ্ট হয়।
বুকটা খুব ব্যাথা করে।
তুমি আজ যখন রাফির নামটা নিলে আমার জানো জানটা বের হয়ে আসছিল।

তুমি তো এখন আমার বউ তাই না আমাকে ভালবাস না।
রিতি কি বলবে বুঝতে পারছে না।
আয়ানের চোখে পানি টলমল করছে।
রিতি আয়ানের চোখে না তাকাতে চেয়েও তাকালো।

তাকাতে চায় নি কারণ আয়ানের চোখের মায়ায় ডুবে যায় প্রতিবারই।
আজ ও ব্যতিক্রম কিছু হয় নি।
আয়ানের চোখে তাকাতেই সে আয়ানের চোখের মায়ার সমুদ্রে ভাসতে থাকে।
আয়ানের চোখ যে আজ রিতির জন্য তার ভালবাসার সাক্ষী।
আয়ানের চোখে দেখলেই বুঝা যায় আয়ান তাকে কতটা ভালবাসে।

রিতি কিছু না ভেবে খাটেই এক হাঁটু একটু উঁচু করে পুরো না হালকা হাঁটুর উপর ভর দিয়ে উঠে আয়ানের কপালের সামনের চুলগুলো হাত দিয়ে পিছনে নিয়ে আয়ানের কপালে একটি চুমু এঁকে দিল।
আয়ানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
রিতি কপাল থেকে হাত গালে নিয়ে বলল।

রিতিঃ আপনি ঘুমিয়ে যান কেমন। (হাসি দিয়ে যেতে নেয়)
আয়ান তখনই রিতির হাত একটান দিয়ে বিছানায় শুয়ায় দেয়।
নিজেও শুয়ে রিতিকে নিজের বুকে টেনে নেয় আর শক্ত করে জরিয়ে নেয়।
আয়ানঃ এখানে ঘুমাও।

রিতিঃ কিন্তু।
আয়ানঃ না এখানেই ঘুমাবে।
আয়ান কিছুক্ষণ বাচ্চাদের মত জিদ করায় রিতি আর কিছু বলতে পারল না।
এছাড়া নিজেরো অনেক ভাল লাগছিল।

আয়ানের বুকের মাঝে খুব শান্তি পাচ্ছে সে।
রিতিঃআচ্ছা এখন ঘুমাও।
আয়ানঃ ঘুমালে তো তুমি চলে যাবা। (অনেকটা বাচ্চাদের মত বলল)
রিতিঃ একটু হাসি দিয়ে।
আমি কোথাও যাবো না।

আয়ানঃসত্তি।
রিতিঃ ৩ সত্যি।
আয়ান আলতো করে রিতির মাথায় চুমু দিল তারপর চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরল।
রিতি আয়ানের দিকে অপলক দেখছে আর ভাবছে।
আসলে আয়ান যদি তোমায় ১১ টি বছর আগে খুঁজে বের করতাম তাহলে আমার জীবনে আজ কোন কষ্ট থাকতো না।
কারণ আমি যানি তুমি থাকতেই দিতে না।

তোমার আর তোমার ভালবাসার উপর বিশ্বাস আছে কিন্তু আমার মন যে অন্য কারো কাছে বন্ধক রয়েছে কিভাবে ছাড়াই বল।
তুমি আমাকে তো আগে থেকে ভালোবাস।
আমি যে তোমার প্রথম ভালবাসা ছিলাম।
কিন্তু আমি ওই মানুষটাকে কিভাবে ভুলি যাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবেসে ছিলাম।

কি করে কাওকে মন থেকে বের করতে হয় তা তো আমার জানা নেই।
কিন্তু এতটুকু জানি তোমার মায়ায় দিন দিন পরে যাচ্ছি।
প্রত্যেকটা দিন তোমার ভালবাসায় আটকে যাচ্ছি।
তোমার মায়ায় মায়াবদ্ধ হয়ে যাচ্ছি।

ভাবতে ভাবতে রিতিও আয়ানের বুকে শান্তিতে ঘুমিয়ে গেল।
এত শান্তির ঘুম রিতি সে কত বছর আগে ঘুমিয়েছে সে নিজেই বলতে পারবে না।
সকালে।
আয়ান ওঠে তার মাথাটা খুব ব্যাথা আর ভারি লাগছে।

সে তার বুকে ভারি কিছু অনুভব করল।
তাকিয়ে দেখে রিতি বাচ্চাদের মত তার বুকে ঘুমুচ্ছে।
আয়ানের মনে আসল কাল রাত সে কত ড্রিংক করেছিল।
আয়ানের মনে ভয় ডুকে যায় সে রিতিকে নেশার তালে কিছু বলে বা করে নি তো।
ভয়ে তার কলিজার পানি শুকিয়ে গেল।

পর্ব ১০

রিতি
সকালে।
আয়ান ওঠে তার মাথাটা খুব ব্যাথা আর ভারি লাগছে।
সে তার বুকে ভারি কিছু অনুভব করল।
তাকিয়ে দেখে রিতি বাচ্চাদের মত তার বুকে ঘুমুচ্ছে।
আয়ানের মনে আসল কাল রাত সে কত ড্রিংক করেছিল।
আয়ানের মনে ভয় ডুকে যায় সে রিতিকে নেশার তালে কিছু বলে বা করে নি তো।
ভয়ে তার কলিজার পানি শুকিয়ে গেল।

আয়ান আস্তে করে রিতির মাথা তুলে বালিশে শুয়িয়ে দিল।
আর ওয়াসরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল।
রেডি হয়ে অফিসের জন্য বের হয়ে গেল।
যানি রিতি ফেস না করতে হয়।
আয়ান এখনও মানে করতে পারছে না কি হয়েছিল গতরাতে।
তা মিয়ে এখনও মনের এক কোণায় ভয় রয়ে যায়।

এদিকে ঘুম ওঠে আয়ানকে না পেয়ে ওয়াসরুমেও দেখে কিন্তু আয়ান তো সেখানেও নেই।
ফোন দিলে আয়ান ধরে না।
৪ বার ফোন দেওয়ার পর না ধরায় রিতি ভয় পেয়ে যায়।
এক দৌড়ে বাহিরে যেয়ে।

বাহিরে মাকে দেখে।
রিতিঃ মা আয়ানকে দেখেছেন।
মাঃ না কেন কাল রাত ঘরে আসে নি। (একটু ভয় পেয়ে)
রিতিঃ না এসেছিল।
কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে তাকে পাচ্ছি না।
মা উনাকে একটু ফোন দিবেন আমার ফোনে balance শেষ।

মাঃ দিচ্ছি।
মা ফোন দিল।
আয়ান এক রিং এই ধরে ফেলে।
তখন খুব কষ্ট লাগে রিতি।
যে ও এতবার ফোন দেওয়া সত্ত্বেও ধরে না আর এখন একটি রিং এই ধরে ফেলে।
মা কথা বলা শেষে।
মাঃ ওর কিজানি meeting আছে তাই তাড়াতাড়ি গেছে।
তোমাকে উঠায় নি তোমার ঘুম নষ্ট হবে বলে।

মা রিতির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়।
আয়ান ঠিক আছে বলে রিতি একটু সস্থির নিশ্বাস নেয়।
সারাদিন রিতি আয়ানের অপেক্ষা করে কিন্তু আজও আয়ান দেরিতে আসে।
না। না আজ আর ড্রিংক করে নি।
বিচারা কালকের পর থেকে অনেক ভয় পাইছে।

আয়ান এসে রিতিকে রুমে না দেখে শান্তির নিশ্বাস নিল।
আল্লাহ ই জানে কালকে কি হইসে তার ভয়ে।
ওয়াসরুম থেকে উঁকি মেরে দেখল রিতি নেই রুমে।
চুপচাপ সোফায় শুয়ে ঘুমের নাটক করতে লাগল।
কিন্তু খালি পেটে কি আর ঘুম আসে।
আয়ান। আয়ান।

চোখ বন্ধ করেই আওয়াজ শুনছে রিতির।
এর মধ্যে বিরিয়ানীর ঘ্রাণ।
বিচারা কত কষ্টে ঘুমের acting করছে।
রিতিঃ আয়ান উঠেন।
আয়ান।
সে ৫ মিনিট ধরেই ডাকছি শুনে না নাকি।
গভীর ঘুমে।

নাকি acting করতিছে।
দেখতে হয়। (মনে মনে)
রিতিঃ যাহ আজও না খেয়ে ঘুমাতে হবে আমার।
খিদার জ্বালায় ঘুম আসবে নাকি কে জানে।
বলেই রিতি যেতে নেয় আয়ান সাথে সাথে উঠে রিতির হাত ধরে ফেলে।
আয়ানঃ এই তুমি খাও নি কেন। (রাগি লুকে)
রিতিঃ ওমা আপনি না ঘুমিয়ে ছিলেন এতো তাড়াতাড়ি উঠলেন কিভাবে।
আয়ানঃআসলে।

রিতিঃ না খেয়ে ঘুমালেন কেন।
আয়ানঃনিশ্চুপ।
রিতিঃ খাবার এনেছি আ করেন। (পাশে বসে)
আয়ানঃ আমাকে দেও আমি খেতে পারব।
আর তুমি যেয়ে খেয়ে নেও।
রিতিঃ হাত তো কাটা কিভাবে খাবেন।

আয়ানঃ বাম হাত দিয়ে।
রিতিঃ আচ্ছা খেয়ে দেখান।
আয়ানঃ তুমি যাও আমি পারবো।

রিতিঃআগে খেয়ে দেখান নাহলে যাচ্ছি না।
আয়ান কোন উপায় না পেয়ে খাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু পারছিল না চামচ নিয়ে ভালোমতো খেতে। তারপরও বার বার চেষ্টা করছে।
রিতি বিরক্ত হয়ে আয়ানের হাতে অনেক আস্তেই চড় মারল।
আয়ান রিতির দিকে অবাক হয়ে তাকালো।

রিতিঃ আমি খাবার খাওয়ালে কি খাবার হজম হবে না। (প্লেট হাতে নিয়ে)
আয়ানের আ ও করা লাগে নি রিতির এ ব্যবহার দেখে এমনি হা হয়ে আছে।
রিতি দিল খাবার ডুকিয়ে মুখের ভিতর।
রিতিঃ গতকাল কত ভাল ছিলেন আর আজ।
আয়ানঃ কথা থামিয়ে।
গতকাল। গতকাল কি হয়েছিল।

রিতিঃ হি। হি।
আপনি জানেন আপনি বাচ্চাদের মত ব্যবহার করছিলেন।
আয়ান সুস্থির নিশ্বাস নিল তার মানে রাতে কিছু হয় নি।

রিতির হাসি দেখে আয়ান মুগ্ধভাবে তাকিয়ে আছে।
তারপর রিতি খাবারের চামচ টা এগোতেই আয়ান ওটা রিতি হাত ধরেই রিতির দিকে ফিরিয়ে।
আয়ানঃ তুমিও কিছু খাও নি এই নাও।
রিতিও খেল।
আজ শুধু রিতি কথা বলছে আর আয়ান শুনছে।

সব কথায়ই আয়ান আজ দুদিন তার ফোন ধরে নি কেন তার জন্য নালিশ করছে।
আর আয়ান।
ও তো রিতির দিকে তাকিয়ে অন্য রাজ্যে হারিয়ে গেছে।
আস্তে আস্তে রিতির কাছে আসে।
রিতির সেদিকে খেয়াল নেই সে কথা বলছে।

আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়ান তার একদম সামনে।
আর একটু কাছে আসলেই তাদের ঠোঁট দুটিতে কোন দুরত্ব থাকবে না।
রিতি পুরো বরফ হয়ে গেছে।
নড়ঁতেও পারছে না সে।
আয়ানের দিকে শুধু তাকিয়ে আছে।
সেও এক অদ্ভুত মায়ায় পরে গেছে।

আয়ান আস্তে করে রিতির ঠোঁটের পাশের খাবার মুছে দিল।
আর সরে গেল।
রিতি বোকার মত সে ভাবেই বসে আছে।
তারপর ১ মিনিট পর লজ্জা পেয়ে ওঠে গেল।

কি ভাবছিল সে ভেবে নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
আয়ান রিতির এভাবে যাওয়ায় কিছুটা অবাক হলেও মাথা বেশি না খাটিয়ে সোফায় শুয়ে পরল।
রিতি কিচেনে প্লেট রেখে রুমে এসে দেখে আয়ান সোফায় শুয়ে আছে।
রিতি সোফার সামনে যেয়ে।
রিতিঃ আয়ান।

আয়ানঃ হম বল, । ( মাথা হাল্কা তুলে)
রিতিঃ চলেন খাটে ঘুমান।
আয়ানঃ না তুমি ঘুমাও।
রিতিঃ আমরা দুজনেই ঘুমাতে পারবো খাট এত ছোট না বেশ বড়ই আছে।
আয়ান অবাক হয়ে রিতির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো।
রিতিঃ আপনার হাতে ব্যাথা পেয়েছেন আপনি এখানে ঘুমালে আরও ব্যাথা পাবেন।
আয়ানঃ না আমি এখানে ঠিক আছি।
তুমি যাও।

কিছু হবে না।
রিতিঃ না আপনি খাটেই ঘুমাবেন।
আয়ানঃ মানা করছি না,
আমি এখানেই ঠিক আছি।
রিতি আয়ানের বাম হাত ধরে এক প্রকার টানা হিচরা করতে লাগলো।
আয়ান এক পর্যায়ে রিতির হাত ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে রাগে বলল।

আয়ানঃ তুমি বুঝ না কেন তোমার সাথে ঘুমালে তোমাকে জরিয়ে বুকের মাঝে রেখে ঘুমোতে ইচ্ছা করবে।
damn it। (অন্যদিকে মুখ করে)
আয়ান কি বলল তা বুঝতে পেরে নিজেকে শান্ত করে রিতির দিকে তাকিয়ে থমকে গেল।
রিতির চোখ দিয়ে বন্যা বয়েই যাচ্ছে।
আয়ানের নিজের উপর জিদ উঠছে।
সে কিভাবে আবার রিতিকে কষ্ট দিল তা ভেবে।

আয়ান রিতির কাছে যেয়ে রিতির দুই গালে হাত রেখে পানি মুছে দিল।
আয়ানঃ sorry আসলে।
এর সামনে কিছু বলার আগেই রিতি আয়ানকে জরিয়ে ধরে।
আয়ান একবার রিতিকে জরিয়ে ধরতে যেয়েও ধরে না গতকাল সকালের কথা মনে করে।
আয়ানঃ রিতি আমি কিন্তু।

রিতিঃ কথা থামিয়ে।
আয়ান। (বলে আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে)
আয়ান একটু থমকে যায় তাহলে ও আয়ানকে রাফি মনে করছে না।

রিতিঃআপনার অসহ্য লাগবে না,
আপনার ঘুমাতে কষ্ট হবে না,
আপনার বিরক্তবোধ হবে না,
(এক নিশ্বাসে বলল)
আয়ান এক হাত রিতির কাধে আর অন্য হাত কোমড়ে রেখে জরিয়ে ধরল।

আয়ানঃ কি বলছ এসব।
তুমি জানো তুমি আমার বুকের মাঝে থাকলে আমার মনে হয় পৃথিবীর সব সুখ আমার বুকে এসে জরিয়েছে।
রিতি জরিয়ে ধরে রেখেই ওর মাথা উঠ্যে আয়ানের দিকে একবার অবাক হয়ে তাকালো তারপর আবার আয়ানের বুকে লুকিয়ে গেল।
রিতিঃ জানেন আমার খুব ইচ্ছা ছিল বিয়ের পর আমার স্বামীর বুকে ঘুমাবো কিন্তু রাফির না এসব খুব অসহ্য লাগতো।
আয়ানের রাফির কথা শুনে অনেকটা খারাপ লাগলো।
রিতিঃ আপনি কি আমার ইচ্ছা পূরণ করবেন।

আপনার বুকে জায়গা দিবেন,
যানেনে কাল রাত আপনার বুকে কত বছর পর শান্তিতে ঘুমিয়েছি।
গতকালের মত প্রতিদিন ঘুমাতে দিবেন।
আয়ান তো খুশিতে এখন সাত আসমানে।
রিতিকে আরও জোরে জরিয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে।

দুইজনেই চোখ বন্ধ করে তাদের সুখ আর শান্তি উপভোগ করছে।
সকালে।
আয়ানের ঘুম ভেংগে দেখে রিতি তার বুকে বাচ্চাদের মত ঘুমুচ্ছে।
আয়ান রিতির মাথায় আলতো করে এক চুমু দিতেই রিতি আয়ানকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল।
আয়ান –
যদি এটা সপ্ন হয়ে থাকে তাহলে এ সপ্নের ঘোরেই থাকতে চাই।

কখনও উঠতে চাই না এ সপ্ন থেকে।
আমার সপ্নপরীকে এভাবেই জরিয়ে রাখতে চাই।
ওর দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে রইলাম।

কিছুক্ষণ এর মধ্যে রিতির ঘুম থেকে উঠলো সে দেখলে আয়ান তার দিকে তাকিয়ে আছে আর সে আয়ানকে শক্ত করে জরিয়ে রেখেছে।
রিতি লজ্জায় লাল হয়ে গেল।

সেখান থেকে চলে যায়।
আয়ান রিতির লজ্জামাখা মুখ দেখে আবার প্রেমে পরে যায়।

এভাবে কয়েকদিন চলে যায়।
এভাবেই প্রতিদিন আয়ান তাড়াতাড়ি উঠে তার সপ্নপরীকে অপলক ভাবে দেখে আর রিতি লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে চলে যায় আর আয়ান রিতির লজ্জামাখা লাক মুখটি দেখে প্রতিদিন নতুন করে প্রেমে পরে।
কিছুদিন সকালে খাবারের টেবিলে।
রিতি আর নিধি সবাইকে খাবার সার্ভ করছিল তখন মাহির ফোন আসে।

রিতি প্রথমে না ধরলেও মা এর বলাতে ধরল।
ফোনে কথা শেষে।
মাঃ কি বললো মাহি।
রিতিঃ মা আসলে মাহিনের জন্মদিন ২ দিন পর তাই বলল সবাইকে যেতে আর।
মাঃ আর কি।

বল মা।
রিতিঃ বলল যে যেহেতু আরিয়ান আর নিশানের স্কুল বন্ধ তাই কয়েকদিন সেখানে গিয়ে থাকতে।
মাঃ তাহলে যাও।
বিয়ের পর এমনিও যাওনি।
যেয়ে কদিন ঘুরে আসো।

আয়ান তুইও যা।
আয়ানঃ না মা ও যাক আমার এদিকে কাজ আছে এ কয়দিন আমি জন্মদিনের দিন যাবো।
রিতিঃ তাহলে আমরাও পরেই যাই।

আয়ানঃ আমার জন্য তোমরা যাবা না কেন আজব তো।
আমার যাওয়ার সাথে তোমাদের সম্পর্ক কি।
রিতি আয়ানের এভাবে বলায় অনেকটা অবাক হয়।
মাঃ তোমরা আজকেই রওনা দেও।

আরিয়ান আর নিশান ও খুব খুশি হবে।
রিতিঃজ্বি মা।
কিন্তু রিতির যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই।
কারণ আজকাল আয়ানের অভ্যাস হয়ে গেছে তার।

রিতি গেল তার বাবার বাড়িতে। সবাই তাকে দেখে খুব খুশি। সারাদিন জুরে বাবা, মা আর মাহিনের সাথে গল্প করল কিন্তু চোখটা ফোনের দিকেই বেশি ছিল।
কিন্তু সেখান থেকে মা, বাবা, ইশিকা, নিধি, আমান সবাই ফোন দিলেও যার ফোনের অপেক্ষায় ছিল তার ফোনই আসল না।
রিতি রাতে নিজের রুমে এসে বিছানায় শুলো।
কিন্তু যে রুমে সে জীবনের এত বছর কাটিয়েছে সে রুমটি আজ পর পর লাগছে।

রিতি বারবার এপাশ থেকে ওপাশ হচ্ছে।
তার যে আয়ানের বুকে ঘুমানোর অভ্যাস ঘুম আসবে কিভাবে।
রিতি একবার ফোন হাতে নেয় আবার থুয়ে দেয়।
তারপর ভাবে আরিয়ানের সাথে কথা বলানোর বাহানায় কথা বলতে পারবে তাই মাহিনের রুমে যায়।
মাহি, নিশান আর আরিয়ান আজ সারারাত মুভি দেখবে তাই কেও ঘুমায় নি।
সাথে রাহাত ও আছে।

রিতি রুমে যেয়ে আরিয়ানকে বলে।
রিতিঃ বাবু তুমি তো আজ আয়ানের সাথে কথা বল নি ফোন লাগিয়ে দি।
আরিয়ানঃনা মা বাবার সাথে তো কথা হয়েছে।
রিতিঃ কিভাবে। (অবাক হয়ে)
আরিয়ানঃ বাবা মামার ফোনে কল দিয়েছিল তখন।
রাহাতঃতুই কথা বলতে এত ইচ্ছা হলে বলে নে।

আরিয়ান তো বললোই।
রিতিঃ আম। আমার কেন ইচ্ছা হবে আমি তো আরিয়ানের জন্য বলছিলাম।
রাহাতঃ ও আচ্ছা।
এমনিও আয়ান বলল ওর নাকি ঘুম ধরছে তাই এখন হয়ত ঘুমিয়ে গেছে।
রিতিঃওহ।

রিতি রাহে গজগজ করতে করতে রুমে এসে বিছানায় ফোন ফিক্কা মারলো।
রিতিঃ ইসসস।
তার আমার সাথে কথা বলার ইচ্ছা নেই আমি কেন বলব।
তার আমাকে মনে করবে না আমি করব কেন।

আমাকে ছাড়া ঘুমাবে আর আমি রাত জেগে তার কথা মনে করব নাকি।
আসছে।

কিন্তু এখন তো ওর বুক ছাড়া ওকে জরিয়ে না ধরলে ঘুম ও আসে না।
আচ্ছা সারাদিনে কি একটিবারও আয়ান আমায় মনে করে নি। (নিজে নিজেই বলছে)
আর আয়ানের কথা ভেবেই মন খারাপ হয়ে গেল রিতির।

পর্ব ১১

রিতিঃ ইসসস।
তার আমার সাথে কথা বলার ইচ্ছা নেই আমি কেন বলব।
তার আমাকে মনে করবে না আমি করব কেন।
আমাকে ছাড়া ঘুমাবে আর আমি রাত জেগে তার কথা মনে করব নাকি।
আসছে।

কিন্তু এখন তো ওর বুক ছাড়া ওকে জরিয়ে না ধরলে ঘুম ও আসে না।
আচ্ছা সারাদিনে কি একটিবারও আয়ান আমায় মনে করে নি। (নিজে নিজেই বলছে)
আর আয়ানের কথা ভেবেই মন খারাপ হয়ে গেল রিতির।
সারাটি রাত ঘুমাতে পারি নি সে।
শুধু বিছানার এপাশ ওপাশ করছে।

সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসল বাইরে।
এসে দেখে মাহি আগে থেকেই নাস্তা বানাচ্ছে তাই ওকে যেয়ে help করল।
মাহিঃ কিরে তোর চোখের নিচে কালো কেন সারারাত ঘুমাস নি।
আয়ান জিজু ও তো নেই যে সারারাত জাগবি।
তাইলে ঘুমাস নি কেন।
(বলেই মিটি মিটি হাসছে)
রিতিঃ ওই শয়তান টার নাম আমার সামনে নিবি না। (রাগ দেখিয়ে)
মাহিঃ কেন গো।

রিতিঃ বলসি না নিবি না মানে নিবি না।
মাহিঃআরে বলবি তো কি হয়েছে।
রিতিঃ জানিস কালকে থেকে আয়ায়ার পর একটি বার আমার খবর নেয় নি।

রাতে নাকি রাহাত ভাইয়াকে ফোন দিয়ে আরিয়ানের সাথে কথা বলেছে। (কান্না করে দিল)
মাহিঃ আচ্ছা তো এ কাহিনী। (রিতির পিছনে যেয়ে)
আমার জানুটা তাহলে শেষমেশ প্রেমে পরল। (পিছন থেকে রিতিকে জরিয়ে ধরে)
I am so happy for you janu।
রিতি মাহিকে ছাড়িয়ে পিছনে ফিরে।

রিতিঃ এরকম কিছু না।
একবার ভালবেসে কষ্ট পেয়েছি আর না।
বলেই চলে যেতে নেয়।
তখনই মাহি রিতির সামনে এসে দাঁড়ায়।

মাহিঃ দেখ রিতি সব মানুষ এক হয় না,
পৃথিবীতে কিছু মানুষ যদি বিশ্বাস ভাংগে তবে কিছু মানুষ সে বিশ্বাস গড়ে তুলে।
আর আমি যতটুকু তোকে যানি আয়ান জিজু তোর ভাংগা বিশ্বাস আর মন দুটোই জোরা লাগিয়ে দিয়েছে।
এখন এটা তোর উপর তুই কি তোর অতীত নিয়ে সে কষ্টে ভুগবি না জিজুর সাথে নতুন ভবিষ্যত গড়বি।

এক সময় রাফির উপর খুব জিদ উঠতো যে ও তোর life থেকে যেয়ে তোকে ভেংগে দিয়েছে।
কিন্তু আজ।
আজ তাকে ধন্যবাদ দিতে মন চাচ্ছে যে তার ছাড়ার কারণে তুই আয়ান জিজুকে পেলি।
জিজু তোকে খুব ভালবাসে রে।
আর হে তুই যে জিজুকে ভালবেসে ফেলিছিস তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
তোর থাকলে তুই নিজের মনের কাছে প্রশ্ন কর।

যে তোর মন কার রাফির নাকি আয়ানের।
এইবার নিজের ব্রেইন না মন দিয়ে ভাবিস।
কারণ ভালবাসা ব্রেইন না মন দিয়ে হয়।

বলে মাহি নাস্তা নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
রিতি আরিয়ানকে নাস্তা খাইয়ে নিজের রুমে এসে বারিন্দায় দাড়িয়ে আছে।
বারিন্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
বৃষ্টি হচ্ছে।

বৃষ্টির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আর মাহির কথাগুলো ভাবছে।
রিতি-
মাহি যা বলেছে তা ভুল বলেনি।
কিন্তু সত্যি আমি আয়ানকে ভালবেসে ফেলেছি।
কিভাবে বুঝবো।

আচ্ছা চোখ দুটি বন্ধ করে দেখব।
কিন্তু এটা তো ফিল্মি তারিকা আসলে কি কাজ করবে।
করেই দেখি না।
রিতি চোখ বন্ধ করে ফেলল।
হাল্কা হাল্কা বৃষ্টির পানি তার মুখে এসে পরছে।

সাথে সাথে তার সে বৃষ্টির দিনে আয়ানের প্রথম কাছে আসাটি মনে পরে যায়।
আয়ানের প্রথম স্পর্শ,
আয়ানের ঠোঁটে তার ঠোঁট মিলিত হওয়া,
আয়ানের কাছে জরিয়ে থাকা।

মনে পরতেই চোখ খুলে লজ্জা পেয়ে গেল।
তাহলে সত্যিই আমি আয়ানকে ভালবাসি।
না হলে এ বৃষ্টির মধ্যে রাফির সাথে হাজার স্মৃতি থাকা সত্ত্বেও আয়ানের সাথে সে একটি স্মৃতিই বা মনে পরবে কেন।
আয়ানের সাথে প্রতিটি মূহুর্তে রিতির চোখের সামনে ভাসছে।

আর রিতি নিজেই লজ্জা পেয়ে হেসে দিচ্ছে।
রিতি ফোন নিল আয়ানকে ফোন দিয়ে সব বলে দিবে।
রিতিঃনাহ।
এখন না কাল আসুক কাল surprise দিব।

পরেরদিন।
মাহিনের birthday party।
১২ বছরের হবে তাই মোটামুটি বড় করেই করছে।

পার্টিটা বাড়ির গার্ডেনেই হচ্ছে।
রিতির শশুড়বাড়ি থেকে সবাই আসছে কিন্তু আয়ানকে দেখা যাচ্ছে না।
কিন্তু রিতির চোখ তো আয়ানকেই খুঁজছে।
না পেয়ে লজ্জা নিয়েই মা কে জিজ্ঞাসা করতে হল।
রিতিঃ মা আয়ান আসে নি।
মাঃ হে এসেছে তো।

কয়েকটা মেয়ে জিজু জিজু করে ওকে নিয়ে গেল।
ঔ যে ওদিকে।
(আংগুল দিয়ে ইশারা দিয়ে)
রিতি মা যেখানে বলল সেদিকে যেয়ে যা দেখল তা দেখে তো আয়ানকে খুন করতে মন চাচ্ছে তার।
চারদিকে মেয়েরা আর আয়ান মাঝখানে একা ছেলে।
আরও সে বসে বসে হাসাহাসি করছে।

দেখেই রিতির মাথায় রক্ত উঠে গেল।
বেশিভাগ মেয়েরা প্রতিবেশি আর মাহির relative দেখে কিছু বলতেও পারছে না।
রিতি যেয়ে আয়ানকে বলল।
রিতিঃ আয়ান আপনি এখানে আপনাকে কতক্ষন ধরে খুঁজছি।
আয়ান পাত্তা না দিয়ে মেয়েদের সাথেই কথা বলছে।
তাদের প্রশংসা করছে।

তাদের কত সুন্দর লাগছে।
আর মেয়েরাও আয়ানের প্রশংসার পুল বেধে দেয়।
রিতি অনেকবার ডাকলেও না শুনায় রিতি রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায় সেখান থেকে।
আয়ানের একটু খারাপ লাগায় সে পিছন থেকে রিতিকে ডাকতে নেয় সে সময়ই রাহাত কোথা থেকে এসে আয়ানের মুখ চেপে ধরে।
মাহিঃ জিজু প্লান এ পানি ফেলার উপায় করতিছো নাকি।

আয়ানঃও কষ্ট পাচ্ছে। (মুখটা কালো করে)
রাহাতঃ আরে ভাই তাহলেই তো বুঝবে যে কত ভালবাসে তোমাকে।
তাই বলে তো এত প্লান।
ওকে এখানে আনানো,
তোমার ফোন না দেওয়া,
ওর কথা না বলা,
আজ ওকে জেলাস করানো।
সব গুলো কি পানিতে ঢালবা নাকি।

এতো দিন তুমি যে কষ্ট পাইসো আর আমাকে দিয়ে যে কষ্ট করাইসো দুইটার ই ফল আজকে পাবা।
মাহিঃ তুমি কি কষ্ট করলা। (রাহাতকে উদ্দেশ্য করে)
রাহাতঃ ইনি দুই মিনিট পর পর যে আমাকে কল দিয়ে রিতির কথা জিজ্ঞাস করতো।
ফোনে ভিডিও অন করে ইনাকে রিতিকে দেখানো।
ইনি যানি রিতির সাথে কথা না বলে তা নিয়ে সারাদিন উনাকে বুঝানো কি তোমার কষ্ট মনে হয় না।
এরকম আরো কয়দিন চললে তো আমার পাবনায় ভর্তি হতে হত।

আয়ান তখন রিতির কাছে না গেলেও বারবার চোখ রিতিকেই খুঁজছে।
না পেয়ে খুব ভয় পাচ্ছে ওর।
রাহাত ১ ঘন্টা পর আয়ানের অবস্থা দেখে যাইতে দেয়।
আয়ান পাগলের মত রিতিকে খুঁজছে।

কিন্তু পাচ্ছে না।
শেষ মেশ রিতির রুমে গিয়ে পেল।
রিতি অন্যদিক ফিরে চুল আছরাচ্ছিল।
আয়ানঃ ওফফফ শেষমেশ তোমায় পেলাম। (খুঁজতে খুঁজতে হাপিয়ে গেছে)
রিতি আয়ানের দিকে ফিরতেই আয়ান হা। 😯

রিতিকে দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে ব্যালেন্স হারিয়ে পরে যেতে নিলেই দেয়াল ধরে ফেলে।
রিতি আয়ানকে এভাবে দেখে মুখে হাত দিয়ে হাসছে।
আয়ানের এ অবস্থা কেন তাই তো।

সে যে আজ এক পরিকে দেখছে।
রিতি লাল সিঁদুর কালারের শাড়ি পরেছে।
এর মধ্যে হালকা আইমেকাপে গাড় কাজল।
লাল সিঁদুর কালারের লিপিস্টক।
হাল্কা মেকাপ।

দুইহাত ভরা চুরি, পায়ে নুপুর, কানেরদুল।
আজ অপ্সরিও ওকে দেখলেও লজ্জা পাবে।

আয়ান কিভাবে ঠিক থাকে ওকে দেখলে।
আয়ান হা করে তাকিয়ে আছে।
চোখে পলক ও পরছে না তার।
আজ প্রথম আয়ান রিতিকে সাজুগুজু দেখেছে।

বিয়ের দিনও রিতি সাজে নি।
দেখে চোখ সরাতে পারছে না আয়ান।
আয়ানের ঘোর ভাংগে রিতির নুপুরের আওয়াজে।
নুপুর আয়ানের পাশ কাটিয়ে দরজার দিকে যেতে নিলে আয়ান রিতির হাত ধরে ফেলে আর রিতিকে হাল্কা টান দিয়ে আয়ানের সামনে নিয়ে আসে।
আয়ানঃ কই যাচ্ছো।

রিতিঃপার্টিতে আর কই।
আয়ানঃ ওখালে সব ছেলেদের heart attack দিবা নাকি।
রিতিঃ তো আপনার জ্বলছে কেন।
যান ওই মেয়েদের কাছে।

আমায় দেখে ছেলেরা heart attack খেলে আপনার কি। ( হাত ছাড়িয়ে)
আয়ানঃও হে তখন কি যানো বলছিলে।
রিতিঃ কখন। ( বুঝেও না বুঝার ভান করে)
আয়ানঃ ওইযে যখন আমার শালিদের সাথে কথা বলছিলাম।
রিতিঃওহ তখন।

তখন তো কিছু বলার ছিল।
আয়ানঃআর তা কি।
রিতি একটি উঁচু হয়ে আয়ানের কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে।
রিতিঃ I love you।
আয়ান অবাক হয়ে দারিয়ে থাকে।

রিতি আয়ানের কানে কথাটি বলার পর হাল্কা করে এক ফুঁ দিল আর আয়ান পুরা বরফ হয়ে গেল।
রিতি মুচকি একটা হাসি দিয়ে কান থেকে নিচে নেমে গলায় শার্টের কলারের একটি উপরে চুমু দিল সাথে সাথে আয়ান কেঁপে উঠল।
রিতি আয়ান থেকে একটু দূর সরে আসলে আয়ান গলায় যেখানে চুমু দিয়েছিল সেখানে হাত দিয়ে রিতি দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে থাকে।
রিতিঃ এটা তখন বলতাম এখন না।

মুখ ভেংচি মেরে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলতে নেয় তখনই আয়ান পিছন থেকে এসে দরজা লক করে দেয়।
আয়ানঃকোথাও যেতে দিচ্ছি না।
রিতি আয়ানের নিশ্বাস অনুভব করছে কারণ রিতি ঠিক একদম পিছনেই আয়ান।
রিতিঃ কেন।

আয়ানঃ যা করেছে তার শাস্তি পেতে হবে তাই।
বলা মাত্রই রিতির চুলে মুখ গুজিয়ে ফেলল।
রিতির চুলের ঘ্রাণ নিতে বড় নিশ্বাস নিচ্ছে আর নিশ্বাস ছাড়াটা রিতির কাধে যেয়ে লাগছে।
রিতি যেন ঘোরে চলে যাচ্ছে।

তার নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে।
আয়ান মুখটা একটু উঠিয়ে রিতির সব চুল এক সাইডে সরিয়ে দিয়ে ঘাড়ে একটি চুমু খায়।
রিতির শরীরে যেন বিদ্যুৎ দৌড়াচ্ছে।

রিতি সাথে সাথে পিছনে ফিরেই আয়ানকে জরিয়ে ধরে পিঠের শার্ট আকঁড়ে ধরে।
আয়ান রিতিকে আরও নিজের সাথে মিশিয়ে তার গলায় ও ঘাড়ে এক্টার পর একটা চুমু খেতে থাকে।
তারপর রিতিকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে শুয়ায় দেয়।

রিতিকে শুয়িয়ে রিতির পায়ে কাছে যেয়ে নুপুর খুলে পায়ে একটু চুমু দেয়।
তারপর আস্তে আস্তে উপরে উঠে শাড়ির আঁচল সরিয়ে পেটে আরেকটি চুমু দেয়।
রিতি সাথেই বিছানার চাঁদরটি আঁকড়ে ধরে।

আয়ান রিতির উপরে উঠে গলায় কয়েকটি চুমু দিতেই রিতি চাদরটি আরও জোরে আঁকড়ে ধরে।
আয়ান রিতির হাতটি চাদর থেকে ছাড়িয়ে নিজের মুঠোয় নেয়।

আর রিতির কপালে একটি চুমু দিতেই চোখ বন্ধ করে ফেলে।
আর রিতির কাঁপা ঠোঁটটি নিজের অধিনে করে ফেলে।
রিতির ঠোঁটের স্বাদে নিজেকে বিলিন করে ফেলে।

দুজনে সারারাত ভালবাসার সাগরে ভাসতে থাকে।
সকালে।
আগের মতই রিতি আয়ানের বুকে জরিয়ে ঘুমুচ্ছে।

পর্ব ১২

সকালে।
আগের মতই রিতি আয়ানের বুকে জরিয়ে ঘুমুচ্ছে।
আয়ান আজও তাড়াতাড়ি উঠে তার ময়ূরীকে ঘুমে জরানো মায়াবি চেহেরা উপভোগ করছে।
হঠাৎ আরো কাছে গিয়ে মাথায় একটি ভালবাসার পরশ এঁকে দিল।
রিতির হালকা হালকা করে ঘুম ভেংগে যায়।
সে আস্তে আস্তে চোখ খুলে।

চোখ খুলে দেখে আয়ান রিতির দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়ান রিতিরকে দেখে একটি চোখ টিপ মারল।
রিতি একটি লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে আয়ানের বুকে লুকিয়ে গেল।
আর আয়ানো তার সপ্নপরীকে তার বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে।

রিতিঃ যাবে না বাইরে। ( বুকে জরিয়ে থাকা অবস্থাতেই)
আয়ানঃ না। (আরো শক্ত করে জরিয়ে)
রিতিঃ সবাই হয়তো চিন্তা করছে কাল রাতও party তে ছিলাম না।
আয়ানঃ Don’t worry jan।
রাহাত ভাইয়া আর মাহি ভাবি সব সামলিয়ে নিবে।

রিতিঃ মানে। (আয়ানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করল)
আয়ান একটু হেসে রিতিকে তাদের প্লান সব খুলে বলল।
রিতিঃশয়তান, ফাজিল, ইডিয়েট, স্টুপিড কেও এরকম করে নাকি। (আয়ানের বুকে কিল ঘুষি মারতে মারতে)
আয়ান রিতি যে বুকে ঘুষি মারছিল তখন হাত ধরে ফেলে।

আর কোমড় টেলে কাছে টেনে নিয়ে আসে।
আয়ানঃ প্লান না করলে কি ভালবাসা বুঝতে নাকি।
বলেই রিতির কাধে একটি চুমু দেয় আর রিতি শিহরিত হয়ে ওঠে।

আয়ান রিতির পুরো পিঠে হাত বুলাতে থাকে রিতির ঠোঁটের স্বাদ নিতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
রিতিও আয়ানের চুলে হাত দিয়ে চুলে হাত বুলাতে থাকে।
তারপর।
আর বলা যাবে না
রুম থেকে বের হয়ে দেখে মা বাবা আর রাহাত চা খাচ্ছে।

আর বাচ্চারা পাশেই খেলছে।
বাবাঃ আরে আয়ান বাবা তুমি এতো সকালে উঠলা।
ঘুম ঠিক মত হয়েছে তো।
আয়ানঃ জ্বী বাবা।

বাবাঃ কাল রাত কোথায় ছিলা পেলাম না যে।
আয়ান রিতির দিকে তাকালো আবার রাহাতের দিকে তাকালো রাহাত মুখ চেপে হাসছে।
মাহিনঃ হে ফুপ্পি তুমিও তো ছিলে না।

যানো আমি তোমাকে ছাড়া কেক কাটতে চাই নি বাবা জোর করে কাটিয়েছে।
রিতি লজ্জা পেয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
কি বলবে বুঝছে না।
মাহিঃ নাস্তা রেডি সবাই এখানে এসো।

রিতি একটা সস্থির নিশ্বাস নিল।
সবাই নাস্তার টেবিলে গেল।
সবাই নাস্তা শেষে চলে গেল শুধু রাহাত, মাহি, রিতি আর আয়ান থাকলো।
রিতি যেয়ে মাহিকে জরিয়ে ধরল।

রিতিঃ You’re my lifesaver janu।
ummaah। 😘 (গালে একটা কিস দিয়ে)
আয়ানঃমাহি ভাবি আপনি দেখি আমার সতিন হয়ে গেলেন। (মুখ বাকা করে)
আমি চাইলেও পাই না আর আপনি আমনি আমনি পাইতিসেন।
এটা ঠিক না।

রাহাতঃ আমি এত বছর সহ্য করছি আপনি তো মাত্র নতুন।
ওদের কথা শুনে রিতি আর মাহি হাসতিছে।
কারো ইচ্ছা না থাকলেও আরিয়ান আর নিশানের স্কুল খোলা তাই তাদের বিকালে চলে আসতে হইল।
আস্তে আস্তে ৩ মাস চলে গেল।

এ ৩ মাসে আয়ান আর রিতির ভালবাসা একটুও কমে নি বরং কয়েকগুন বেড়ে গেছে।
আজ ইশিকার হলুদ। সবাই হলুদের কাজে ব্যস্ত।
কিছুক্ষনের মধ্যে ফাংশন শুরু হবে।

ইশিকা আর নিধি পার্লারে গেলেও রিতির কাজের জন্য যাওয়া হয় নি তাই রিতি নিজের রুমেই রেডি হচ্ছিল। আয়নার সামনে দাড়িয়ে কানেরদুল পরছিল তখনই আয়ান এসে পিছন থেকে রিতিকে জরিয়ে ধরে।
রিতি আয়নার দিক তাকিয়ের আয়ানের সাথে কথা বলে।
রিতিঃআরে কি করছ।
আয়ানঃ রোমান্স করছি।

রিতিঃ আচ্ছা, আপনার বোনের যে আজ হলুদ তা খেয়াল আছে।
কই ছিলেন এতক্ষন।
আয়ানঃ এখন আমার বউ সবার খেয়াল রাখতে যেয়ে নিজে কিছু করে না তাইলে তো তার খেয়াল আমারই করতে হবে।
রিতিঃমানে।

আয়ানঃমানে ঘরে বিয়ে সবাই এত সেজেগুজে আসছে আর তুমি এটা কি পরছো। (রিতিকে ঘুরে)
রিতিঃএটাতে সমস্যা কি। (নিজের দিকে তাকিয়ে)
আয়ানঃ সমস্যা আছে।

আমার বউকে সবার থেকে সুন্দর লাগতে হবে। (হাতে একটি বক্স দেয়)
রিতিঃএত বড় বক্স এখানে কি আছে।
এখানে কি আছে।
আয়ানঃ খুলে দেখেন মেডাম।

রিতি বক্সটি খুলে হা হয়ে যায়।
বক্সে একটি মিষ্টি পিংকের মধ্যে গোল্ডেন বরডারের একটি লেহেনগা।
এক জোড়া হিল গোল্ডেন কালারের সান্ডেল।

আর একটি বক্সে ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে অনেক গুলো জুয়েলারি।
আর অনেক গুলো মেকাপের জিনিস।
রিতিঃঅবাক হয়ে।
এসব।

কিছু বলতে যাবে মুখ তুলে দেখে আয়ান নেই সামনে।
আয়ান পিছন থেকে এসে চুলে কিছু মিষ্টি কালারের গোলাপ লাগিয়ে রিতির ঘাড়ে একটি চুমু দেয়।
আর আবার জরিয়ে ধরে।

আয়ানঃ আজকে এটা পড়ে আসবা।
রিতিঃ আচ্ছা ওদিন মাহিনের জন্মদিনে আমাকে সেজে বের হতে দেন নি ছেলেরা দেখবে বলে।
আজ আপনার জ্বলবে না।
আয়ানঃ জ্বি না জ্বলবে না।

কারণ আজ তাদের জ্বলাবো।
রিতিঃ মানে। ( আয়ানের দিকে ঘুরে)
আয়ানঃ মানে, mrswife। (কোমড় টান দিয়ে কাছে এনে)
আজ সবাইকে দেখাব যে আমার এত সুন্দর বউ আছে আর সবাইকে জ্বলাবো।
হি। হি।

রিতিঃ তোমার কথা আমার মাথার উপর দিক দিয়ে গেছে।
আয়ানঃ আরে তোমার এত মাথা খাটানো লাগবে না গো জান,
তুমি শুধু রেডি হয়ে আসো।
রিতি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

আয়ান রিতির কপালে একটি চুমু দিয়ে হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
ছেলেপক্ষ থেকে সবাই এসে পড়েছে।
সবাই আয়ানকে জিজ্ঞাসা করছে রিতি কোথায়।
আয়ান সবাইকে উওর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

আয়ান মাহি আর রাহাতের সাথে কথা বলছিল তখন পুরাই হা।
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
আসলে শুধু আয়ান না সেখানের সবাই হা হয়েই তাকিয়ে ছিল।

আজ অনেকে কত বছর পর রিতিকে সাজা দেখল।
আর অনেকে প্রথম।
এত সুন্দর লাগছে রিতিকে যে অপ্সরিরাও হার মানতে বাধ্য।

কেও চোখ ফিরাতে পারছে না।
রিতি সে লেগেংগার সাথে সাইড পাফ করে খোপা করে খোপায় আয়ানের দেওয়া ফুল গুলো লাগিয়েছে।
হাল্কা মেকাপ এর সাথে মিষ্টি গোলাপি আইমেকাপ, গোলাপি গালগুলো আর মিষ্টি গোলাপি লিপ্সটিক।
এক কথায় অসাধারণ লাগছে আজ রিতিকে।
সবাই ওর দিকে না তাকিয়ে যাবে কই।

কিন্তু যার দিকে তাকিয়ে আছে তার ই খেয়াল নেই।
লেহেংগার নিচ স্যান্ডেলেরসাথে বেজে যাওয়ায় তা ঠিক করতে সে ব্যস্ত তাই আশে পাশে তার কোন খেয়ালই নেই।
আয়ান তা দেখে রিতির সামনে যেয়ে এক হাঁটু গেড়ে বসে যায় রিতি অবাক হয়ে উঠতে বলে কিন্তু কে শুনে কার কথা আয়ান রিতির লেহেংগার বেজে থাকা অংশ ঠিক করে দেয়।

আর উঠ দাঁড়ায়।
রিতিঃ কি করছিলে মানুষ কি বলবে।
আয়ানঃ বউ আমার আমার যা ইচ্ছা করব মানুষ যা বলার বলবে আমার কি।
রিতিঃ পাগল একটা।
আয়ানঃ হম। আমার ময়ূরীর জন্য পাগল।

আর। (রিতির কানের কাছে গিয়ে)
আজ দেখে আরও বেশি পাগল হয়ে যাচ্ছি।
ভাবছি আমরা আবার বিয়ে করলে মন্দ হয় না।
রিতি লজ্জা মাখা একটি হাসি দিল তখন ই রাহাত একটি ছবি তুলে নিল।

ফ্লাসে দুজনের খেয়াল আসে যে সবাই তাদের দিকে তাকানো।
রিতি লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে মাহির কাছে চলে যায়।
এদিকে রাফি এগুলো দেখে রেগে লাল হয়ে যায়।

প্রথমে যখন এইতি আসে তখন সবার মত রাফিও রিতির থেকে চোখ সরাতে পারে না।
কিন্তু যখন দেখে আয়ান রিতির কাছে যেয়ে ওর লেহেংগা ঠিক করে দেয় আর এতো কাছাকাছি এসে কথা বলে তখন রাফি চোখ মুখ লাল হয়ে যায়।
হলুদের অনুষ্ঠানে সবাই এক এক করে নাচছে।

কিন্তু আয়ানের তার দিকে কোন খেয়ালই নেয় সে শুধু তার ময়ূরীকে দেখে মন ভরছে।
সবাই এ নিয়ে আয়ানের সাথে অনেক মজাও করছে।
রিতিও কিছুক্ষন পরপর লুকিয়ে লুকিয়ে আয়ানের দিকে তাকাচ্ছে আর চোখাচোখি হলে আয়ান রিতির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারছে না হলে বিভিন্ন ইশারা দিচ্ছে।

আর রিতি হাসি দিয়ে যাচ্ছে।
আয়ান রিতির থেকে চোখ সরানোর পর দেখে অনেক ছেলেই রিতির দিকে তাকিয়ে আছে আয়ানের তো মাথা গরম হয়ে যায় তখন।
আয়ান DJ এর কাছে যেয়ে একটি গানের নাম বলে গানটি ছাড়তে।
DJ কথা অনুযায়ী গানটি ছাড়ে।

(ডুপাট্টা তেরা নো রাংদা হায়নি মেরা দিল মাংদা ♬।
শুনে নিয়েন কিন্তু)
আয়ান রিতিকে টেনে হলের মাঝখানে এনে dance শুরু করল। রিতি প্রথমে লজ্জা পেয়ে যেতে চাইলেও আয়ান যেতে দেয় নি তারপর রিতিও আয়ানের সাথে dance করল। ওদেরকে যেমন একেরকে অপরের সাথে মানাচ্ছিল তেমনই dance এর তাল ও perfect ছিল।
সবাই হাত তালি দিল আর বলল।
দুইজনের dance best ছিল।

এদিক দিয়ে রাফি ওদের দেখে রাহ কন্ট্রোল করতে না পেরে সেখান থেকে চলে গেল।
এ ব্যাপারটি কারো চোখে না বাজলেও আয়েশার চোখে ঠিকই বাজলো।
রাফি যে রিতির দিকে তাকায় ছিল তাও আয়েশার চোখে এড়ায় নি।
কিন্তু আয়েশা সবার সামনে রাফিকে কিছু না বললেও রিতির সাথে কিছু একটা করার প্লান ঠিকই করে।
অন্যদিকে আয়ান আর রিতি dance শেষে আসলে রিতির সামনে একজন এসে দাঁড়ায়। সে যে তার চিরন্তন চেনা এক মানুষ।
রিতি মা বলেই তাকে জরিয়ে ধরে।

আয়ান বুঝে যায় যে তিনি রাফির মা।
রিতি প্রায়ই আয়ানের সাথে তাকে নিয়ে কথা বলতো।
রাফির মাও রিতিকে জরিয়ে কান্না করে দিল।
তারপর রিতি তাকে ছেড়ে-
রিতিঃ কেমন আছো মা। (কান্না করতে করতে)
রাফির মাঃ ভালো মা তুই কেমন আছিস।
আমাকে ভুলে গেছিস।

যে ভুল আমার ছেলে করেছে তার শাস্তি আমাকেও দিচ্ছিস।
রিতিঃ না মা কি বলছ তোমাকে আমি ভুলতে পারি।
তুমি কখনোই আমাকে আপন মার থেকে কম আদর কর নি।
আর দেখ সবার একটি বা দুটি মা থাকে আমার তিন তিনটি মা। (মুখ ভরা হাসি নিয়ে)
রাফির মাঃ হে রে মা জানিস তোকে খুব মিস করি।
একটা মেয়ের কত শখ ছিল আগে পূরণ হয় নি।

তারপর তোকে পেয়ে ভাবলাম আমার শখ আল্লাহ পূরণ করেছে।
কিন্তু। (মুখ মলিন হয়ে গেল)
যাই হোক তুই এখন খুশি তো।
রিতিঃ হ্যাঁ মা আমি খুব খুশিতে আছি।

রাফির মাঃ আর তুমি ওর স্বামী তাই না। (আয়ানকে উদ্দেশ্য করে একটি হাসি দিয়ে)
আয়ানঃ জ্বি, আর হে কে বলেছে আপনি আপনার মেয়েকে হারিয়েছেন রিতি সবসময় আপনার মেয়ে থাকবে।
আপনি যখন চান তখন দেখা করবেন ওর সাথে।
আর আমি আপনার জামাইবাবু।
হি। হি।

রাফির মাঃ যাক একসময় নিজেকে অপরাধী মনে হত যে আমি তোর জন্যে কিছু করতে পারলাম না।
তুই যে ভেংগে গেছিস, তোর জীবন এলোমেলো হওয়ার আরেকটি কারণ আমি কারণ ৪ বছর আগে তোর জন্য কিছুই করতে পারি নি।
কিন্তু আজ সব অপরাধবোধ শেষ হয়ে গেল।
আসার পর দেখলাম তোর বর তোকে কত ভালবাসে।
কারো কথায় কান না দিয়ে তোকে support করে।

তখন লেহেংগা ঠিক করা, তোর দিকে তাকিয়ে থাকা তোদের নাচ।
সব মিলিয়ে তোদের জুটি parfact।
বাবা আমার মেয়ের খেয়াল রাখবা তো। (আয়ানকে উদ্দেশ্যে করে)
আয়ানঃ নিজের জীবনের খেয়াল না রাখলে বাঁঁচবো কি করে। (রিতির দিকে তাকিয়ে)
চিন্তা করবেন না আন্টি সারাজীবন আপনার মেয়েকে আলগে রাখবো,
নিজের জীবন থেকেও বেশি ওকে ভালবাসবো। (রাফির মা এর হাত ধরে তার দিকে তাকিয়ে)
রাফির মা আয়ানের হাতে রিতির হাত দিয়ে দুইজনকে জরিয়ে ধরল।

রাফি এতক্ষন এসব একটি দুই থেকেই দেখছিল।
পিলারের পাশে দাঁড়িয়ে এসব দেখে তার এতই রাগ উঠছিল যে তারকাটার সাথে হাত লেগে যে তার রকত পরছে সেদিকে তার কোন খেয়ালই নেই।
তারপর রাফির মা তাদের ছেড়ে চলে গেল।

আর রিতি আর আয়ান তাদের পরিবারের কাছে গিয়ে গল্পে জুড়ে গেল।
এরপরেরদিন ছেলে পক্ষ থেকে হলুদ হল কিন্তু রিতির একটু অসুস্থ হওয়ার কারণে সে হলুদে যেতে পারে নি।
যদিও যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল আর বলছিলো তারপরও কেও ওকে অসুস্থ অবস্থায় নেওয়ার জন্য রাজি হয় নি।

পর্ব ১৩

এরপরেরদিন ছেলে পক্ষ থেকে হলুদ হল কিন্তু রিতির একটু অসুস্থ হওয়ার কারণে সে হলুদে যেতে পারে নি।
যদিও যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল আর বলছিলো তারপরও কেও ওকে অসুস্থ অবস্থায় নেওয়ার জন্য রাজি হয় নি।
আর আয়ান রিতিকে অসুস্থ একা রেখে কিভাবে যায়।
তাই আয়ান ও যায় নি।

অনেক বলা সত্ত্বেও রিতি doctor এর কাছে যেতে রাজি হয় নি।
এতটুকু অসুস্থতার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়া ওর রিতির অসহ্য লাগছিল।
তাই আয়ান চেয়েও নিতে পারে নি।
সারাক্ষন রিতির সেবা করল।

রিতির ভালো না লাগায় ওকে ছাদে নিয়ে গেল আর ইশিকাকেও ডাকল।
আয়ান, রিতি আর আয়ান বসে ছাদে গল্প করছিল।
ইশিকার পরেরদিন বিয়ে হওয়ায় ও তাড়াতাড়ি যেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
আর রিতি আয়ানের বুকে মাথা রেখে দোলনায় ঝুলে।

কথা বলতে বলতে কখন চোখ লেগে আসে নিজেও জানে না।
আয়ান রিতির কপালে একটি চুমু দিয়ে ওকে কোলে করে নিচে নিয়ে যায়।
পরেরদিন বিয়ের কাজে লেগে যায়।
বিয়ের দিন।
সবকিছু প্রায় ভালো মতই সম্পন্ন হয়।

কিন্তু অনেক মহিলাই আয়ানকে রিতির পিছনে ঘুরতে দেখে আর তার খেয়াল রাখতে দেখে বাজে কথা বলে।
অবশ্য তার কারণটা আয়েশাই।
প্রায় সব মহিলারা যখন একসাথে তখন রিতির ব্যাপারে খুব খারাপ কথা বলে।
বিশেষ করে আয়েশা।

আরিয়ান তাদের কথা শুনে নেয় তাই বলে।
আরিয়ানঃ এই ডাইনি আন্টিরা আমার আম্মু ব্যাপারে খারাপ কিছু বলবেন না।
একটি মহিলাঃ মা না বল শত মা।

আয়েশাঃ এই ছেলে ভাষা শিখ নি বেয়াদব।
আরিয়ানঃ আমার মার ব্যাপারে কিছু বললে আমি সহ্য করবো নাকি।
আর আপনাকে বলছি দেখে বেয়াদব বলছেন আর আপনারা যে আমার মাকে নিয়ে কথা বলছেন।
আপনাদের কি বলবেন।

আয়েশা ঠাসস করে আরিয়ানকে একটি থাপ্পড় দিল।
অনেকটা জোরে দেওয়ায় আরিয়ান জোরে কান্না করে দেয়।
আরিয়ানের কান্না শুনে সবাই এসে সেখানে উপস্থিত হল ইশিকা ও নীলও(ইশিকার বর) স্টেজ থেকে সেখানে গেল।
আয়ান আর রিতি আরিয়ানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে জিজ্ঞাসা করছে যে ও কাঁদছে কেন।
রিতি আরিয়ানের গাল থেকে হাত সরিয়ে দেখে ওর গালে থাপ্পড়ের দাগ বসে আছে।

রিতিঃ বাবু এরকম কে করেছে।
থাপ্পড় দিয়েছে কে তোমায়।
আরিয়ানঃআম্মু যান এ আন্টিরা তোমার ব্যাপারে খারাপ খারাপ কথা বলছিল আমি মানা করছি তারপর এই ডাইনি আন্টিটা আমায় থাপ্পড় মেরেছে। (কান্না করতে করতে)
রিতিঃএসব এর মানে কি। (দাড়িয়ে)
কয়েকটি মানুষের কথা –

  • নাটক করা লাগবে না মনে হয় আপন নিজের গর্ভের ছেলে যে এরকম নাটক করছো।
  • আরে কিরকম মেয়েকে বলছেন প্রথম বিয়ে ভাংগার পরে আবার বিয়ে করল এখন আবার অন্য স্বামীকে পিছন পিছন ঘুরাচ্ছে।
  • হে আমরা তো এক স্বামীকে পিছনে ঘুরাতে পারলাম না আর তুমি দ্বিতীয় বিয়ে হয়েও ঘুরাও বাবাহ।
    -আসলেও কি চরিত্রহীনা কাজ করেছে যে স্বামী তাকে ছেড়ে গেল।
  • এর উপরে মা হতে পারবে না
    -আল্লাহ কোন পাপের ফল ই দিয়েছে।

-হে নাহলে বিয়ে ভাংগার পর এভাবে সেজে আসে মানুষ যে অন্য পুরুষরা তাকায় থাকবে।
আয়েশাঃ আসলে এরকম মেয়েরাই সমাজের নাম খারাপ করে।
এসব শুনে দুই পরিবারের সবার মাথা খারাপ হয়ে গেল নিধি আর মাহি তো মহিলাদের থাপ্পড় দিতে এগিচ্ছিল কিন্তু বিয়ে বাড়ি দেখে আমান থামায় দেয়।
আর আজ আয়ান ই না রাফি ও তাদের চুপ করাতে আগায় আর কিছু বলতে চায় কিন্তু আজ যে বলার সেই তাদের চুপ করাল।
রিতিঃ আচ্ছা তাই নাকি।

তাহলে আপনাদের হিসেবে যাদের বিয়ে একবার ভাংলো তাদের একঘরোয়া হয়ে থাকা উচিত তাই তো।
আর আমার মনে হয় আপনাদের এ যুগে না জন্মে আদি যুগে জন্ম নিলে ভালো হত।
আর বিয়ে ভাংলে সবসময় মেয়েদেরই কেন দোষ থাকবে।
আর দোষ যারই থাকুক মেয়েরাই কেন সইবে।
এই আমাদের সমাজের আধুনিকতা।
বাহ।

রেপ হলে মেয়েদের দোষ তারা এসব ড্রেস পরে দেখে রেপ হয়,
কই বোরকা পরলেও যে ছেলেদের নজর এরায় না কেন।
সংসারে অশান্তি হলে মেয়েদের দোষ সে সংসার সামলায় নি কেন।
আর বিয়ে ভাংলেও মেয়েদেরই দোষ।

বিয়ে কেন ভাংলো তা কেও জানতে চাবে না কারণ মেয়ের দোষ বের করতে তার বাধা পরে যাবে তাই না।
আর আপনারাও তো মহিলা একজন নারী হয়ে অন্য নারীর ব্যাপারে এসব বলতে কি একটুও দ্বিধা করে না।
যদি ভবিষ্যত এ আপনাদের সাথে এরকম হয় তখন।
অভিশাপ দিচ্ছি না কিন্তু কারো কষ্টের সময় তাকে আরও কষ্ট দেওয়া বন্ধ করুন।

কারণ মনের কষ্ট মুখের অভিশাপ থেকেও বেশি ক্ষতিকর।
আর বাচ্চা না হওয়া যদি পাপের ফল হয় তাহলে কত অপরাধীরা গর্ভবতী কিভাবে হয়।
আর শুধু গর্ভে ধারণ করলেই মা হয় না।
মা হওয়ার জন্য মমতা লাগে।
আর আমার আমার ছেলের জন্য যথেষ্ট মমতা আছে।
আর যদি আজ আমার নিজের বাচ্চাও হত তবে আরিয়ানই আমার প্রথম সন্তান হত।

আর কে বলল শত মা ভালোবাসতে জানে না।
হয়তো অনেকে আসলেই ভালোবাসে না কিন্তু যারা তাদের ভালবাসে আপনাদের মহিলাদের কথা শুনে তারাও তাদের ভালবাসা ভুলে যায়।
সন্তানকে ভালোবাসতে মন লাগে আর মমতা লাগে।
আর কি বললেন আমি সেজেগুজে অন্য পুরুষদের দেখাচ্ছি তাই না।

আমি সেজেছি আমার জন্য আর আমার স্বামীর জন্য অন্য কারো জন্য নয়।
তারা তাকালে তাদের চোখ বন্ধ করুন আমি তাদের জন্য কেন নিজেকে পাল্টাবো যেখানে আমি কিছু খারাপ করি নি।
আর আপনি যে আমাকে বলছেন আপনি কি সাজেন নি।

আর আপনাদের কি বলছি আমিও তো আগে আপনাদের মতই ভাবতাম যে আমার বিয়ে ভেংগে গেছে তাই আমার হয়তো আর হাসি খুশি থাকার অধিকার নেই, কাওকে আবার ভালবাসার অধিকার নেই, আবার আগের মত কারো সাথে মিশার অধিকার নেই।
কিন্তু না আমার অধিকার আছে কারণ আমার জীবন এখনও বাকি আছে।
আর কত মানুষ আছে যারা আমাকে এখনও ভালবাসে।

আর যদি আমি আসলেও কোন পাপ করে থাকি তাহলে আল্লাহ কখনও আমাকে আজ এত সুখ দিত না।
যানেন আজ আমি আমার প্রত্তাক্ত স্বামীকে মন থেকে ধন্যবাদ দিতে চাই কারণ সে যদি আমায় সেদিন না ছাড়ত তবে আজ এত সুখ আমার ভাগ্যে জুটতো না।
কয়েকটি বছরের কষ্টের বিনিময়ে যে আল্লাহ এত বছরের সুখ লিখে রেখেছে তা আমার জানা ছিল না।
সেদিন ডিভোর্সের এর পর ভেবেছিলাম হয়ত আমার জীবন এখানেই শেষ কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম।

খারাপ কিছু হলেই যে জীবন শেষ হবে তা নয় হয়ত আরো ভালো কিছু আমার জন্য অপেক্ষায় আছে।
আর জানেন রাফির সাথে বিয়ে হয়ে একটি জিনিস ভালো হয়েছে আমি একটি মা পেয়েছি। (রাফির মার দিকে তাকিয়ে)
আর পাপের ফল যদি হয় তাহলে আমার নিজেকে এত সুখী মনে হয় কেন।

আল্লাহ আমায় একটি বা দুটি নয় তিন তিনটি মা দিয়েছে। (নিজের মা আর শাশুড়ি মা দিকে তাকিয়ে)
দুটি বাবা দিল একজন অন্যজন থেকে বেশি আদর করে। (নিজের বাবা আর শশুরবাবার দিকে তাকিয়ে)
একটি ভাই বিয়ের আগে আর অন্য ভাই পরে সবসময় রক্ষা করে। ( আমান আর রাহাতের দিকে তাকিয়ে)
একটি বড় বোনের মত ভাবি যে সবসময় এত কেয়ার করে। (নিধির দিকে তাকিয়ে)
একটি ছোট বোন যে সবসময় মন ভালো করার দায়িত্ব নেয়।

(ইশিকার দিকে তাকিয়ে)
আর একটি না তিনটি ছেলে আছে আমার যারা সবসময় আমার মন জুড়ে রাখে। (আরিয়ান, নিশান আর মাহিনের দিকে তাকিয়ে)
আর এরকম সারাজীবনের সাথী আমার ভাবি, বন্ধবী যাই বলি যে সব দুঃখে কষ্টে আমার সাথে ছিল।
জীবনের প্রতিটি ধাপে কখনো আমার পাশ ছাড়ে নি আমার জানু। (মাহির দিকে তাকিয়ে)
আর সবচেয়ে বেশি যে আমাকে তার জীবন থেকেও বেশি আলগে রেখেছে।
যে আমায় আবার নিজের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে।
আমায় আবার বিশ্বাস করা ভালবাসা শিখিয়েছে।

যার জন্য আজ এত সুখ পেয়েছি।
আমার জীবনের প্রতিটি কষ্টের দাহ সে তার ভালবাসা দিয়ে মুছে দিয়েছে।
এককথায় যে আবার আমায় জীবন দিয়েছে আমার স্বামী। (আয়ানের দিকে তাকিয়ে)
রিতি সবার দিকে তাকিয়ে বলার পর সবাই একটি মুচকি হাসি দেয়।
তাদের ভয় খারাপ লাগাটা নিমিশেই দূর হয়ে যায়।

শুনুন আমি বলছি না যে শুধু মেয়েদের উপরি এসব হয় ছেলেদেরও অনেককিছু সহ্য করা লাগে।
কিন্তু যা সত্তি আমরা যতই সমানতার কথা বলি আমাদের সমাজের কিছু লোক আজও সব দোষ মেয়েদের ই দেয়।
কিন্তু এছাড়াও এরকম লোক আছে যারা সত্যি যাচাই করে কথা বলে।

কারো জিবনে দখল দেয় না।
সমাজকে উন্নতি করার চেষ্টা করে তাদের মধ্যে একজন হন।
সবাই মাথা নিচু করে আছে তারা হয়ত তাদের ভুল বুঝতে পারল।
রিতিঃআর আয়েশা তুমি আমায় চরিত্রহীন বলছ।
আয়েশাঃ যা সত্যি তাই বলছি।

সবার সামনে স্বামীর সাথে এত ঘষাঘষির কি দরকার।
রিতিঃএকটু হেসে।
আচ্ছা নিজের স্বামীর সাথেই করেছি।

আমরা বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ,
তোমার মত কোন অপবিত্র কাজ করি নি,
তোমার মত জেনেশুনে বিবাহিত পুরুষের সাথে affair করি না,
না কারো সংসার ভেংগেছি।
আমি চাইলে এ কথা আগেও বলতে পারতাম যখন আমার সংসার ভেংগেছিলে,
কিন্তু কারো অপমান করতে চাইনি বলে বলি নি।

আর আমাকে বলছো যদি ওদিন ডিভোর্স পেপারে সাইন না করতাম তাহলে গর্ভে সন্তান নিয়ে কি করতে।
এরপর কাওকে খারাপ বলার আগে নিজেকে দেখে নিও।
বলেই আয়ানের হাত ধরে চলে যেতে নিলে আবার ফিরে তাকায়।
রিতিঃ Opps। sorry।

একটা জিনিস ভুলেই গেছিলাম।
আয়েশাকে একটা ঠাসসস করে থাপ্পড় মারল আর আয়েশা গালে হাত দিয়ে রিতির দিকে তাকালো।
রিতিঃ এটা আমার বাচ্চার গায়ে হাত তুলার জন্য।
সবাই রিতির জন্য একটি হাত তালি দিল।

রাহাত আর আমান সিটি বাজাতে ব্যস্ত।
কিন্তু কিছুক্ষন এগোতেই রিতি হঠাৎ করে মাথা ঘুড়িয়ে পরে যেতে নেয় তখন আয়ান এসে রিতিকে ধরে ফেলে।
কিন্তু রিতির অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় সবাই অনেক ভয় পায়।
রাফি একবার এগিয়ে এসেও আবার তার পা পিছিয়ে নেয়।

আয়ান বারবার রিতিকে উঠানোর চেষ্টা করছে কিন্তু রিতি উঠছে না।
আরিয়ান ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগল।
আয়ান যেন পাগল হয়ে গেছে।

যদি তার রিতির কিছু হয়ে যায়।
আয়ান রিতিকে কোলে তুলে নেয় হাসপাতালে যাওয়ার জন্য।

পর্ব ১৪

আয়ান যেন পাগল হয়ে গেছে।
যদি তার রিতির কিছু হয়ে যায়।
আয়ান রিতিকে কোলে তুলে নেয় হাসপাতালে যাওয়ার জন্য।
তখনই একজন মহিলা বলে সে ডাক্তার।
তাই হলে একটি রুম ছিল।

ওখানে ওকে নেওয়া হল কিন্তু মানুষ থাকতে মানা করল তাই সবাই বাইরে ছিল আর আয়ান ডাক্তারের বলা ওষুধ আনতে গেল আরিয়ানের কান্না দেখে ডাক্তার ওকে থাকার পারমিশন দিল।

কিন্তু তাও কিছুক্ষন চেকাপের পর যখন বারবার আরিয়ান রুমে আসার জন্য কাঁদছিল তখন।
আরিয়ানঃ আন্টি আমার মার কিছু হয়নি তো। (কান্না করতে করতে)
ডাক্তারঃ না বাবা তোমার মার কিছু হয় নি কিন্তু হবে।
আরিয়ানঃ মানে।

ডাক্তারঃ তোমার জন্য তোমার আম্মু ছোট বাবু গিফট আনবে।
আরিয়ানঃ সত্যি।
নাচা শুরু করল।

রিতি ওঠে দেখে আরিয়ান ওর পাশে।
রিতিঃ বাবু তোমার কি গালে বেশি ব্যাথা করছে।
আরিয়ান রিতিকে জরিয়ে ধরল রিতি অনেকটা অবাক হল।

আরিয়ানঃ মা তুমি আমাকে ছোটো বাবু গিফট করছো। (রিতিকে ছেড়ে)
রিতিঃ কি বলছো বাবু এটা সম্ভব না তো।

ডাক্তারঃ এটা সত্যি
You’re pregnant। (হাসি দিয়ে)
রিতি চোখে পানি নিয়ে পেটে হাত দিয়ে আরিয়ানকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করে দেয়।
আয়ান তখনই এসে ওদের কান্না করতে দেখে ভয় পেয়ে যায়।
আয়ানঃ কি হয়েছে তোমরা কান্না করছো কেন।
বল কি হয়েছে।

ডাক্তার সব ঠিক আছে তো। (ডাক্তারের কাছে যেয়ে)
রিতি সব ঠিক আছে।
(পাশে যেয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করল)
আরিয়ানঃবাবা যানো আমি বড় ভাইয়া হব,
আম্মু আমাকে একটি বাবু গিফট করছে।

আয়ান এ কথা শুনে রিতির দিকে তাকায় রিতি চোখে পানি নিয়ে হাসি দিয়ে হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নাড়ায়।
আয়ান খুশিতে রিতিকে কোলে তুলে নেয়।
রিতিঃকি করছ কি নামাও।
আরিয়ান আর ডাক্তার দেখছে।

ডাক্তারঃ আমার কোন সমস্যা নেই,
আমি যেয়ে সবাইকে যানাচ্ছি।
আরিয়ানঃ মা আমি পারলে আমিও তোমাকে কোলে ওঠাতাম কিন্তু পারব না তো তাই বাবাই উঠাক। হি। হি।
রিতিঃবাবা ছেলে দুজন ই পাগল।

আয়ানঃ আপনি যেয়েন না আমি আমার স্টাইলে বলব। (ডাক্তারকে উদ্দেশ্যে করে)
আরিয়ান গেট খুলো।
আরিয়ান গেট খুলার পর আয়ান রিতিকে কোলে নিয়েই হলে যেয়ে চিল্লানো শুরু করল।
আর পুরো হলে ওকে কোলে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বলতে লাগল,
আয়ানঃ সবাই শুন।
সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে হা।

রিতি লজ্জায় শেষ।
আয়ানঃ সবাই শুন আমি আবার বাবা হতে যাচ্ছি,
আরিয়ান, নিশান আর মাহিন বড় ভাই,
আম্মু আর মা তোমরা দাদি আর নানি।
আব্বু আর বাবা তুমরা দাদা আর নানা,
রাহাত ভাইয়া তুমি মামা,
আমান ভাইয়া বড় বাবা,
নিধি ভাবি বড় মা,
মাহি ভাবি মাহি হবা তুমি,
আর ইশিকা তুই আবার ফুপি হবি।

রিতিঃ আরে কি করছ নামাও না আমার লজ্জা লাগছে,
প্লিজ।
আয়ানঃ আমার বউ ই তো।
সমস্যা কোথায়। (করুণাময় ভাবে তাকিয়ে)
রিতিঃ প্লিজ আয়ান আমার খুব লজ্জা পাচ্ছে।

আয়ান না চেয়েও নামিয়ে দিল আর সবাই এসে রিতিকে জরিয়ে ধরল মাহি তো রিতিকে জরিয়ে কান্না করে দিল,
দিবে না কেন রিতির প্রতি মূহুর্তের কষ্ট ও তো অনুভব করেছিল।
সবার খুশি যেন কয়েকগুন বেড়ে গেল।
আর মধ্যে রাফি এসে বললঃ
রাফিঃ এটা সম্ভব না।

আমরা আগেই সব টেস্ট করেছিলাম রিতি মা হতে পারবে না।
ও কনসিভ করার ক্ষমতা নেই।
থাকলে ও আগেই মা হতে পারত।
রাফির কথা শুনে সবার মুখ নিমিষেই মলিন হয়ে গেল।
আয়ান রাফির সামনে এসে বললঃ
আয়ানঃ Look bro। (রাফির সামনে এসে কাঁধে হাত রেখে বলল)
এটা আমাদের family matter।
so don’t interfere।

আপনি শুধু আমার বোনের শশুর বাড়ির লোক।
বিয়ে খান, মজা করুন আর যান এসব ব্যাপারে মাথা খাটিয়েন না।
আমার বউ আমি বুঝবো,
বাচ্চা হলেও তো আমাদেরই হবে,
না আপনি আমার কিছু হন না আমার বউ এর তাই আপনার এতো চিন্তার দরকার কি।

Be Cool ok bro। (একটি হাসি দিয়ে চলে গেল)
আর সে হাসিটি রাফির রাগ, জিদ, বিরক্তি আরও বাড়িয়ে দিল।
তারপর আয়ান রিতির সামনে এসে দেখে রিতির চোখে পানি।
সবাই ওকে সান্তনা দিচ্ছে।

সবাই বলছে কিছু হবে না এটা খুশির খবর খুশি হোক।
কিন্তু রিতির মনে তো ভয় রয়েই গেল।
কারণ এত বড় একটি খুশি পেয়ে হারালে যে সে ভেংগে যাবে।
আয়ান এসে রিতির চোখ মুছে সবার সামনেই বুকে জরিয়ে নেয়।
তখনই নীল একটা সিটি মারে।
নীলঃ ওয়াও,
ওয়াট আ কিউট জোরি।

ইশিকাঃ নীলের পেটে কোনি মেরে,
হম শিখো শিখো না হলে পরে খবর আসে,
নীলঃ😨😨😨।
নিধিঃ মা আয়ান আর আমান কি আপন ভাই।
মাঃ হ্যাঁ অবশ্যই কেন মা হঠ্যাৎ এ প্রশ্ন।
নিধিঃ তো কি করব।

ছোট ভাই এত রোমান্টিক আর আপনার বড় ছেলে।
আমানঃ
মাহিঃ জানু তুই কি লাকি,
কিন্তু তুই আমার সাথে চিটিং করসোস।

আমার দুলাভাই এতো রোমান্টিক আর তুই আমারে কি বলদা সাথে ঝুলাই দিসোস।
ভাবতাসি ডিভোর্স দিয়ে #Second_marriage করেই ফেলি।
রাহাতঃ
দুলাভাই আপনি সবার সামনে এতো ভালবাসা দেখায়েন না তো কত ঘর ভাংবেন আপনি।
নীলঃআমার তো বিয়ে হওয়া মাত্রই warning চলে আসছে।
রিতি সবার কথা শুনে হেসে দিল আর লজ্জাও পেল।

আর তার সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গার মানে আয়ানের বুকে মুখ লুকালো।
আর আয়ানো শক্ত করে জরিয়ে ধরে।
রিতি আর আয়ানকে এভাবে দেখে রিতি রাগে ফুলতে থাকে।
সে হাতের মুঠো করে সেখান থেকে চলে যায়।
এদিকে বিদায়ের সময় আসলে ইশিকা বলে যায় যে সে ফেরাতে নিজের বাসায় আসলে খুশির খবর শুনতে চায়।
আর আশা করি তাই আসবে।

ইশিতার বিদায়ের পর রিতি বাসায় এসে কানের দুল খুলছে আয়নার সামনে।
কানের দুল খুলছে না তো কিছু একটা ভাবছে।
আয়ান রুমে এসে অনেকক্ষণ যাবৎ তা খেয়াল করল।
তারপর যেয়ে রিতিকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরল।
আর রিতির কাধে মাথা রেখে বলল।
আয়ানঃ কি ভাবছে আমার বউটা।

রিতিঃ ভাবছি এত সুন্দর সপ্ন যদি ভেংগে যায়।
সপ্নটি যদি শুধু কিছু মূহুর্তের জন্য হয়।
আয়ানঃ তাও আমাই তোমায় ততোটাই ভালবাসবো যতটা আজ বাসি। (রিতিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে)
শুধু তুমি না ভাংলেই হবে।
রিতিঃসবাই কত খুশি সবার কত মন খারাপ হবে।

আয়ানঃতুমি খুশি থাকলে সবাই খুশি থাকবে বুঝলা।
আর ডাক্তার বলেছে না যে তুমি প্রেগন্যান্ট এছাড়াও হোম টেস্ট তো করেছ না পসিটিভ আসছে তো ভয় কিসের।
রিতিঃযানি না কেন জানি এক অজানা ভয় মনে জায়গা করে আছে।
মা তো আছি ই।

আরিয়ান যেদিন আমায় মা ডেকেছিল সেদিনই মা হয়ে গেছিলাম।
এজন্য এটা সত্য না নহলেও হয়তো ভাংবো না।
কিন্তু যখন ডাক্তার বলল আমার পেটে আরেকটি ছোট প্রাণ আছে তখন কিরকম একটি অনুভূতি হল তা বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয়।
আর যখন আরিয়ান এত খুশি ছিল ছোট বাবুর কথা শুনে যদি সত্যি না হয় তাহলে।
আয়ান একটু হেসে রিতির হাতটা তার ধরে নিজের পেটে রেখে।

এক মা থেকে কেও ভালো বলতে পারবে না যে তার সন্তান কি অবস্থায় আছে।
নিজে একটু অনুভব কর তো কেও আছে নাকি।
রিতি হ্যাঁ সুচকভাবে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল আর রিতির চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পরে গেল।
আয়ান রিতির হাত ছেড়ে আলতো করে রিতির চোখের পানি মুছে গালে একটি ভালবাসার স্পর্শ দেয়।
আয়ানঃযা হবে ভালোর জন্যই হবে।
আর কালই আমরা Hospital এ যাবো টেস্ট করাতে কেমন।

রিতিঃ ঠিক আছে।
আয়ানঃ আসো তোমাকে কে ঘুম পারায় দি।
রিতি একটি হাসি দিয়ে আয়ানের বুকের মাঝে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়।
এদিকে,
রুদ্র (রাফির ছোট ভাই) রাফিকে অনেক্ষণ যাবৎ খুজছে কিন্তু পাচ্ছে
না।
রুদ্রঃমা ভাইয়াকে দেখেছো।

রাফির মাঃ ওর খবর আমি এতবছর রেখেছি যা এখন রাখব। (বিরক্তি নিয়ে)
রুদ্রঃ মা তুমি এখন কি রিতির কথা বাদ দিবা সে তো এখন এত খুশি আছে তার জীবনে।
তুমি এক্টি ভুলের জন্য ভাইয়াকে আর কত শাস্তি দিবা।
আর এছাড়াও সে মিমের ভাইয়ের বিয়েতে আয়েশা ভাবিকে কত শুনালো।
ও আপনাদের বলাই হয়নি।
মিম রুদ্র এর বউ,
আর নীলের খালাত বোন।

রিতির ডিভোর্স এর এক বছর পর তাদের বিয়ে হয়।
মাঃ তোদের মত স্বার্থপর ছেলেরা থাকতে আর কি লাগে।
আয়েশার সাথে যা করেছে তার যোগ্য ছিল।
আর যাকে আজ নাম ধরে ডাকছিস সে তোকে একসময় নিজের বাচ্চার মত আদর করত।
তার জন্যই একসময় ভাবি মা ভাবি মা করে ঘর উঠাতি।
সেই তোর জ্বর হলে সারারাত জেগে তোর সেবা করত।

আর তুই ও রিতির মা না হতে পারার কতাহ শুনে আশে পাশের মানুষের কথা শুনে ওর আর রাফির ডিভোর্সের পর ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলি।
তোদের এত শিক্ষিত করে লাভ কি হল যেখানে মানুষের অযোগ্যতাকে তার উপর কলংক করে ফেলিস।
যাই হোক আজ আমি অনেক খুশি আমার মেয়ে মা হতে যাচ্ছে তাই তোদের সাথে কথা বলে নিজের মুখ নষ্ট করতে চাই না।
যেতে নিলেও পিছনে ফিরে তাকিয়ে তোর ভাই ছাদে।
বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে।
বলেই আবার চলে গেল।

রুদ্র কিছু না বলেই ছাদে চলে গেল।
রাফির সামনে যেয়ে দাড়ালো।
রুদ্রঃভাইয়া তুই কি করছিল।
এতগুলো সিগারেট। (আশে পাশে সিগারেট দেখে)
ছাড় এটা এখন নিচে চল। (হাত থেকে সিগারেট নিয়ে)
রাফিঃছেড়ে কি করব।

আর যে ছাড়িয়েছিল সে তো আর নেই।
জানিস আগে অনেক সিগারেট খেতাম কিন্তু রিতি আমাকে তার ভালবাসা দিয়ে সিগারেট ছাড়িয়ে ছিল।
আজ তো ও অন্যকারো।
রুদ্রঃভাইয়া তুই এখনও।
রাফিঃ হম এখনও ভালবাসি।
রুদ্রঃ তাহলে আয়েশা ভাবিকে বিয়ে করলি কেন।

রাফিঃ আমি সন্তানের লোভে এতই অন্ধ হয়ে গেছিলাম যে রিতিকে অবহেলা করতে শুরু করি। (কান্না শুরু করে)
ওর যে বাচ্চামি গুলোকে আগে ভালবাসতাম তাকে বিরক্ত লাগতো।
বলে না মন খারাপ সময়ে যে কাছে থাকে তখন তাকে খুব আপন মনে হয় তাই আয়েশাকে মনে হয়েছিল।
আয়েশা মেচুরিটি খুব ভাল লাগত।

কিন্তু তখনও আমাদের কোনো affair ছিল না। কিন্তু একদিন বিজনেস এর মিটিং এ ঢাকার বাইরে যাওয়ার পর খুব ড্রিঙ্ক করার ফলে ওদিন আমার থেকে ভুল হয়ে যায়।
আর যেদিন রিপোর্ট দিয়েছিল যে রিতি মা হতে পারবে না তার কয়েকদিন পর জানতে পারি আয়েশা প্রেগন্যান্ট। আমার বাচ্চা ওর পেটে।
তাই রিতিকে ডিভোর্স দিয়ে আয়েশাকে বিয়ে করি।
কিন্তু বিয়ের পরো রিতিকে খুব মিস করতাম।

পুরো ঘরে যে ওর স্মৃতি জুড়ে আছে।
তারপরও ভেবেছিলাম একসময় না একসময় ওকে ভুলে যাবো।
কিন্তু যখন ওর বিয়ের কথা শুনি বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে।
খুব কষ্ট হয় সেদিন।
ভাবতেই জানটা বেরিয়ে যাচ্ছিল যে এখন থেকে রিতি অন্য কারো।

তারপর রিতিকে যেদিন আবার নীলের engagement এ দেখি সেদিন ওকে দেখে চিনাই যাচ্ছিল।
তখন ভাবলাম হয়ত আজও রিতি আমায় ভালবাসে।
সে আমার জায়গা অন্য কাওকে দিতে পারবে না।
কিন্তু হলুদের দিন আমার ধারণা একদম ভুল প্রমাণিত হল।

ওর দিক থেকে নজর সরাতে পারছিলাম না আমার সেদিনের কথা মনে পরে গেল যেদিন ওকে নিজের বউ বানিয়ে ছিলাম।
তুই জানিস যখনই ওই আয়ানকে রিতিকে ছুতে দেখতাম আমার জান জ্বলে উঠত।
কিন্তু আমার চেয়েও কিছু করার ছিল না কারণ আমিই রিতিকে দূরে সরিয়েছি।
কিন্তু আজ।

আজ যা হল তা শুনে জানো আকাশ ভেংগে পরল আমার মাথায়।
রিতিকে যে কারণে ছেড়েছিলাম সে কারণ টাই বৃথা ছিল।

কিন্তু আমরা তো সব টেস্ট করিয়েছিলাম তাহলে কিভাবে।
কিছু মাথায় ডুকছে না।
আমার সত্যি বের করতেই হবে।

পর্ব ১৫

কিন্তু আজ।
আজ যা হল তা শুনে জানো আকাশ ভেংগে পরল আমার মাথায়।
রিতিকে যে কারণে ছেড়েছিলাম সে কারণ টাই বৃথা ছিল।
কিন্তু আমরা তো সব টেস্ট করিয়েছিলাম তাহলে কিভাবে।
কিছু মাথায় ডুকছে না।
আমার সত্যি বের করতেই হবে।

সকালে উঠেই আয়ান আর রিতি হাসপাতালে গেল টেস্ট করাতে।
তারপর বাসায় এসে ইশিকা আর নীলের সাথে গল্প করল।
সন্ধ্যায় রিপোর্ট ডিলেভার হবে সবাই হাসি খুশি থাকলেও সবার মনে খুত খুত লেগেই আছে যে রিপোর্ট এ কি হবে।
অপেক্ষার প্রহর শেষ কনিংবেল বাজার সাথে সাথে সবাই দৌড়ে গেল দরজায়।
রিতি বাদে।
রিতির যেন পা নড়ছে না।

রিপোর্ট দেখে সবাই রিতির রুমে এলো।
সবার সিরিয়াস এক্সপ্রেশন দেখে রিতির ভয় আরো বেড়ে গেল।
আয়ান এসে রিতির সামনে দাড়িয়ে মুখ গোমড়া করে রাখল।
রিতির তো ভয়ে কলিজার পানি শুকিয়ে আসছে।
আয়ান হুট করে রিতিকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বলল।

আয়ানঃ yeaahhoooo।
আমি বাবা হচ্ছি।
রিতির জেনো তার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না।
তারপর হঠাৎ করে।
কোলে থাকা অবস্থায় আয়ানের বুকে কিল ঘুষি মারা শুরু করল।
রিতিঃ শয়তান, ইতর, বাদর।
কেও এওরকম করে নাকি।

আমার জান বের হয়ে গেছিল।
তারপর সবাইকে দেখে থেমে যায়।
আয়ান ইশারা দিয়ে রাহাতকে অনুরোধ করে সবাইকে নিয়ে যেতে।
রাহাত ও সবাইকে নিয়ে যায়।
যাওয়ার আগে চোখ টিপ মেরে দরজা বন্ধ করে দেয়।
আয়ান রিতিকে কোলের থেকে নামিয়ে কোমড় টেনে কাছে এনে বলে।
আয়ানঃ তো মেডাম কি যানো বলছিলেন।

আমি ইতর, বাদর তাই না।
দাড়ান দেখাচ্ছি।
ইতর আর বাদর কাকে বলে।
বলেই রিতি একপাশ থেকে চুল সরিয়ে সেখানে একটি আলতো করে চুমু দিতেই রিতি কেঁপে উঠলো।
আয়ান রিতির গলায় ডুবে যায়।
একের পর এক চুমু দিতে থাকে।

আএ রিতি এক হাত দিয়ে আয়ানের চুল মুঠি করে ধরে আর অন্যহাত দিয়ে আয়ানের শার্ট আঁকড়ে ধরে।
আয়ান গলা থেকে উঠে রিতির পুরো মুখে তার ছোয়া দেয়।
রিতি চোখ বন্ধ করে রাখে।
ঠোঁটে ঠোঁট দুটি লাগাতে যাবে তখনই।

আয়ানঃ উহ। ভুলেই গেছিলাম আমার জানি কি কাজ আছে আসি।
রিতিকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিল।
তখনই রিতি আয়ানের সামনে এসে কলার টান দিয়ে আয়ানকে কিছুটা নিচু করে ঠোঁটে আলতো করে একটি চুমু দিয়ে দেয়।
তারপর ছেড়ে বলে।
রিতিঃবাবুর দিতে মন চাচ্ছিল আমার না।

বলেই এক দৌড়।
আয়ানঃ এই আস্তে দৌড়ায়ো না।
একটু হেসে পাগলী একটা।
রাতে ইশিকা তার শশুড়বাড়ি চলে যায়।
আগামীকাল রিশিপশন বলে সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরে।

পরেরদিন রিশিপশনে।
যারা ওদিন রিতিকে কথা শুনিয়েছিল তারা তাদের ভুল বুঝে রিতির কাছে মাফ চেয়ে নেয়।
আর রিতিও তাদের মাফ করে দেয়।
আয়ান সারাক্ষন রিতির সাথে থাকলেও রিতির পিপাসা লাগায় ওর জন্য জুস নিতে যায়।
সবাই জোড়ে গান চালিয়ে নাচছে।
রিতি একপাশে দাঁড়িয়ে সবার নাচ দেখছে আর হাত তালি দিচ্ছে।

হঠাৎ করে রিতির মনে হল কে যানি রিতির মুখে হাত রেখে তাকে টান দিল।
রিতি অনেক চেষ্টা করা সত্ত্বেও নিজেকে ছারাতে পারলো না।
তারপর একটি রুমে যেয়ে রুম বন্ধ করে দেয়।
রিতির পিছন থেকে টান দেওয়ায় দেখেনি মানুষটিকে।
তাই যখন রিতিকে ছেড়ে দেয় তখন পিছনে ফিরে দেখলেই রিতি অবাক হয়ে যায়।
রিতিঃরাফি আপনি।

রাফিঃ আপনি।
এখন তুমি থেকে আপনি হয়ে গেলাম।
রিতি কিছু না বলে যেতে নিলে রাফি হাত ধরে টান দেয়।
রিতিঃকি করছেন কি।
ছাড়ুন।
রাফিঃওহ।

আজ আমার ছোয়াতে তোমার এত সমস্যা।
আগে তো সবসময় কাছে আসতে চাইতে।
রিতিঃ কারণ তখন আপনাকে ভালবাসতাম।
রাফিঃএখন বাসো না।
রিতিঃ না।
এখন আমার মনে শুধু আয়ানের নাম লেখা।
রাফির এ কথা শুনে রাগ উঠে গেল।
ও রিতির হাত শক্ত করে ধরে ফেলে।

এত জোরে ধরায় রিতি খুব ব্যাথা পায়।
আর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে।
রাফিঃ তুমি শুধু আমার।
আর আমাকেই ভালবাসবা।

রিতিঃ কি বলছেন এসব।
আমি এখন অন্য কারো বউ আপনার এসব বলতে লজ্জা লাগা উচিত।
আমি আপনার মতো না যে নিজের জীবন সংগীর বিশ্বাস ভাংব। (হাত ছাড়িয়ে)
রাফিঃ please রিতি আমাকে মাফ করে দেও।
ফিরে আস আমার কাছে।
রিতিঃ হাত ছাড়ুন।

আমার স্বামী আমার অপেক্ষা করছে। (যেতে নিয়ে)
রাফিঃ স্বামী তাই না।
তুমি শুধু আমার।

আর আমারই থাকবে।
আজকে আবার তোমাকে আমার নিজের করে নিব।
রাফি সামনে এগিয়ে আসে আর রিতি পিছাতে থাকে।
রিতিঃদেখেন খবরদার কাছে আসবেন না।
রাফি কথা শুনে না।

রিতি আয়ানের নাম চিল্লাতে থাকে আর রুমে দৌরাতে থাকে যানো রাফি ওর কাছে না আসে।
দরজা খুলার চেষ্টা করেও পারে না।
শুধু হাজার চেষ্টার মাধ্যমে রিতি নিজেকে বাচাতে থাকে আর আয়ানের নাম চিল্লাতে থাকে।
এদিকে আয়ান জুস নিয়ে এসে রিতিকে পায় না।

সবার কাছে জিজ্ঞাসা করার আর খবর নেওয়া আর খুজার পরও রিতিকে পাওয়া যায় না।
সবাই চিন্তায় এসে পরে তাই গান বন্ধ করে দেয়।
সাথে সাথে রিতির আওয়াজ ভেসে আসে সবার কানে।
রিতির চিৎকার শুনে আয়ানের ভয়ে জান শুকিয়ে যায়।

একদৌড় দেয় যেদিক থেকে রিতির আওয়াজ আসছে।
সবাই আয়ানের পিছনে যায়।
আয়ান একটি দরজার সামনে এসে দেখে রিতির আওয়াজ ভিতর থেকে আসছে সাথে ভাংচুর এর আওয়াজ ও কিন্তু দরজা ভিতর থেকে লক।
আয়ানঃরিতি।
রিতি তুমি ভিতরে।

রিতিঃ আয়ান প্লিজ আমায় বাঁচাও।
আয়ান দরজা ভাংগার জন্য ধাক্কা মারে কিন্ত একা পারছে না তারপর রাহাত আর আমান ও এসে ধাক্কা মারে।
দরজা ভাংগার পর দেখে রাফি রিতির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে আর রিতি নিজেকে বাঁচানোর জন্য জিনিস ছুড়ে মারছে।
আয়ানকে দেখে রিতি ছুটে আয়ানকে জড়িয়ে ধরল।
আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদা শুরু করল।

রিতিঃআয়ান ও।
ও আমার সাথে। (কিছু বলার আগেই কাঁদার জন্যে নিশ্বাস ও নিতে পারছে না)
রাহাত যেয়েই রাফির কলার ধরে মুখে ঘুষি মারা শুরু করে।
রাহাতঃ তোর মত জানোয়ারকে আমার আগেই শায়েস্তা করা উচিত ছিল।
তাহলে আজ এরকমকিছু হত না।

আয়ান রিতিকে ছাড়িয়ে দুই হাত দিয়ে কান্না মুছে মাহির কাছে দিয়ে রাহাত আর রাফির কাছে যেয়ে রাহাতে কাধে হাত রেখে।
আয়ানঃ ভাইয়া আপনি ওকে অনেক মেরেছেন।
রাহাতঃকি বলছো ও রিতির সাথে যা করল।
আয়ানঃ কথা থামিয়ে।

আপনি আপনার বোনের জন্য যা মারার মেরেছেন এখন আমার বউকে ছোয়ার চেষ্টা করার জন্য ওকে শাস্তি আমি দিব।
রাহাত সরে গেল।
আয়ান রাফিকে মারা শুরু করল।

আয়ানঃ Bloody hell।
How dare you to touch my wife।
i will kill you।
damn it।
আয়ান থামার নাম ই নিচ্ছে না আমান আর রাহাত যেয়ে ওকে থামালো।

তারপরও আয়ান থামছে না।
আমান আর রাহাত মিলে ওকে ধরে রাখল।
রাফির শরীরের বিভিন্ন আংশ থেকে রকত বের হচ্ছে।

রুদ্র এসে এসব দেখে রাফির কাছে গেল।
রুদ্রঃ ভাইয়া এসব কি।
তুমি।
রাফিঃ আমার রিতিকে লাগবে।
আমি কিছু জানি না।
আয়ান এ কথা শুনে আবার রাফিকে মারার জন্য আগালো আর রাহাত ধরে ফেলে।
রিতি ভয়ে মাহির পিছনে লুকিয়ে আছে।

রুদ্রঃএসব কি বলছিস ভাইয়া তুই already আয়েশা ভাবির সাথে বিয়ে করছেন আর আরশি আপনাদের মেয়েও আছে।
রাফিঃ আরশি আমার মেয়ে না।
আয়েশা আর ওর ex-boyfriend এর মেয়ে।
রুদ্রঃকি বলছিস এসব ভাইয়া।

রাফিঃহ্যাঁ ঠিক বলছি।
রিতির প্রেগন্যান্সির কথা শুনে যেখানে আমরা দুজন টেস্ট করিয়েছিলাম সেখানে গেলাম।
সেখানে যেয়ে আগের রেকর্ড চেক করে দেখি রিতি মা ঠিকই হতে পারত কিন্তু আমি।
আমার বাবা হওয়ার ক্ষমতা নেই।

তখন মাথায় কিছুই ডুকছিল না কারণ আরশি আরশি তো আমার মেয়ে।
তাই আরশির মাথার চুল নিয়ে ডি এন এ টেস্ট করাই।
তখন রিপোর্ট এ জান্তে পাই আরশি আমার মেয়ে না।

এখানে আসার আগে বাসায় যাই তখন আয়েশাকে এসব এর মানে জিজ্ঞাসা করি প্রথম দিকে না বললেও পরে স্বীকার করে যে আরশি ওর এর ওর এক্স বয়ফ্রেন্ড এর মেয়ে।
ওর বয়ফ্রেন্ড তার সন্তান না মানায় ও আমার সাথে সে রাত কাটায়।

আর রিপোর্ট ও ই চেঞ্জ করে আর আমায় বলে যে আরশি আমার মেয়ে।
সবাই এ কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।

রাফিঃ প্লিজ রিতি আমার কাছে ফিরে এস।
প্লিজ। (কান্না করতে করতে)
আয়ানঃ ওকে এখান থেকে নিয়ে যান। (রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে)
নাহলে এখানে আমার হাত থেকে ওর খুন হয়ে যাবে।

রাফি যাওয়ার আগে রিতির দিকে তাকালে রিতি ভয়ে দৌড়ে আয়ানের বুকে জরিয়ে যায়।
আয়ানো রিতিকে বুকে নিয়ে রাফির দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকালে রাফি সেখান থেকে চলে যায়।
সবাই সেখান থেকে চলে যায়।
রাতে।

রিতি বারিন্দায় দাড়িয়ে চাঁদ দেখছে।
আয়ান পিছন থেকে এসে রিতিকে জরিয়ে ধরে আর পেটে দুই হাত আবদ্ধ করে।
আয়ান রিতির কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
রিতিও আয়ানের হাত শক্ত কর ধরে।

আর আয়ানের হাতে কিছু ভিজা অনুভব করলে চোখ খুলে রিতিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেখে রিতির চোখে পানি।
আয়ানঃকাঁদছো কেন। (চোখের পানি মুছে)
রিতিঃযদি আমাদের বাচ্চার কিছু হত।

আয়ানঃ আমি আমার রাণী আর আর আমার রাজকুমারি কারো কিছু হতে দিব না।
রিতিঃরাণী? রাজকুমারি? মানে।
আয়ান একটু হেসে রিতির মাথায় চুমু দিল।
আয়ানঃএই আমার রাণি।

আর হাঁটু গেড়ে বসে পেটে একটা চুমু দেয়।
আয়ানঃ এই আমার রাজকুমারী।
রিতিঃ যদি রাজকুমার হয়।

আয়ানঃ রাজকুমার তো আছেই এখন একটা রাজকুমারী হবে। (দাঁড়িয়ে)
আর আমি আমার রাজকুমারী আর তার আম্মুর সবসময় রক্ষা করব।
রিতিকে বুকে জরিয়ে নেয় আয়ান।
আজ ১ মাসের বেশি হল সে ঘটনার।

এ ১ মাস কিছু না হলেও আয়ান রিতিকে একা কোথাও যেতে দেয় না।
কিন্তু আজ হঠাৎ রিতির ফোনে ফোন আসল যে ডাক্তারের রাতে এপোয়েন্টমেন্ট টা চেঞ্জ করে দুপুরে দেওয়া হয়েছে।
আর ডাক্তার দুদিনের জন্য বাইরে যাবে তাই এখনই আসতে হবে।

রিতি জানতো যে আয়ানের অফিসে আজ জরুরি মিটিং আছে তাই আয়ানকে না ফোন দিয়ে ভাবিকে নিয়ে যায়।
কিন্তু কে জানতো তার জন্য এত বড় দুর্ঘটনা অপেক্ষা করছে।

পর্ব ১৬ (অন্তিম)

কিন্তু কে জানতো তার জন্য এত বড় দুর্ঘটনা অপেক্ষা করছে।
বাসা থেকে বের হয়ে দেখে গাড়ির টায়ার পাঞ্চার তাই ক্যাব নেওয়ার জন্য রাস্তায় বের হতেই নিধি ক্যাব নিতে সামনে যায়।
রিতি সেখানে একা দাঁড়ায় থেকে।

হঠাৎ করে একটি গাড়ি এসে রিতিকে টান দিয়ে নিয়ে যায়।
নিধি এটা দেখে অনেক্ষণ গাড়ির পিছনে দৌড়ায়।
কিন্তু গাড়ি ধরতে পারে না।
রিতি মুখ হাত দিয়ে কেও চেপে ধরে ও হাত বেধে দেয়।

শক্ত করে ধরে রাখায় রিতি নড়তে পারছে না।
একটু সামনে যেতেই রাস্তে খালি দেখে রিতিকে একটু ছাড় দেয়।
রিতি পাশে তাকিয়ে দেখেই চোখ বড় বড় করে ফেলে।

কারণ অন্য কেও নয় সে ছিল রাফি।
রাফি রিতির মুখ খুলে দেয়।
রিতি সাহায্যের জন্য চিল্লাতে থাকে কিন্তু আশেপাশে কেউ না থাকায় কোন লাভ হয় না।
রিতিঃ তুমি।
তুমি আমাকে এভাবে কেন।

ছাড় আমাকে।
ছাড় বলছি।
নাহলে ভালো হবে না কিন্তু।
রাফিঃ Sorry জান তোমাকে এত কষ্ট দিলাম কিন্তু কি করব বল।
তোমাকে অন্য কারো সাথে সহ্যও করতে পারি না।

খুব ভালবাসি তোমায়।
রিতিঃতোমার মুখ থেকে ভালবাসা শব্দ মানায় না রাফি।
এখন ছাড় আমায় নাহলে।
রাফিঃ ছাড়ছি না।
সারাজীবন তোমাকে নিজের ভালবাসার ঘরে আটকে রাখব।

রিতিঃ রাফি তুমি হয়তো ভুলছো আমি এখন অন্য কারো স্ত্রী।
আয়ান আমার স্বামী আর আমি ওকেই ভালোবাসি।
রাফির রাগ ওঠে গেল রিতির চুলের মুঠি ধরে বলল।
রাফিঃতুই শুধু আমার বুঝলি।
আর তোকে আমার করেই ছাড়বো।
তোর আর আয়ানের ভালবাসার সব অংশ আগে মিটিয়ে নি।
বিশেষ করে এই বাচ্চা।

তারপর আমরা দেশ ছেড়ে চলে যাবো।
রিতি বাচ্চা শেষ করার কথা শুনে ভয় পেয়ে যায়।
রিতিঃ রাফি দোহাই লাগে আমার বাচ্চাকে কিছু কর না। (বলেই চোখ দিয়ে পানির বন্যা বইতে লাগল)কিন্তু রিতি সেখানে নাই তার মানে আয়ান যে হাস্পাতালে যাচ্ছে রিতি সেখানে।
আয়ানের মনের ভয় বেড়েই চলেছে।
আজ তার যে কোন মুল্যে রিতি আর তাদের বাচ্চাকে বাচাঁতেই হবে।

আয়ান দ্রুত স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে।
হাস্পাতালের সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে রিশেপনে যায়।
জিজ্ঞাসা করলে জানতে পায় রিতির অপরেশন ১৫ মিনিট আগেই শেষ।

১ বছর পর…

আরিয়ানঃমা। মা।
রিতিঃআরে বাবু তুমি স্কুল থেকে এত তাড়াতাড়ি।
যাও নি।
আর এতো রাগে কেন।

আরিয়ানঃ মা জানো আমার বন্ধুরা বলল যে আয়রা নাকি বড় হলে আমাদের ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবে।
তাই আমি ক্লাস না করে তোমাকে জিজ্ঞাসা করতে এসে পরেছি।
মা আয়রা আমাদের ছেড়ে যাবে না তো।
আয়ানঃ ইসসস।

কেও চাইলেই কি আমার মেয়েকে নিতে পারবে নাকি।
কেও নিবে না।
আয়রা কোথাও যাবে না।
হে আয়রা রিতি আর আয়ানের মেয়ে।
তাদের নাম মিলিয়েই আয়রার নাম রাখা হয়েছে।

তা আরিয়ান ই রেখেছে।
অপরেশন যখন হয়েছিল তাহলে কিভাবে তাই তো।
১ বছর আগে যখন আয়ান পুরো ভেংগে পরেছিল তখন রাফি আয়ানের সামনে এসে বসে।
১ বছর আগে হাস্পাতালে।

আয়ান রাফির কলার ধরে মারতে যাবে তখনই।
রাফিঃ চিন্তা কর না রিতি আর তোমাদের বাচ্চা দুজনই ঠিক আছে।
আয়ান মারতে গিয়েও নিজের হাত থামিয়ে অবাক হয়ে রাফির দিকে তাকিয়ে থাকে।
রাফিঃ চেয়েছিলাম যে বাচ্চাকে শেষ করে রিতিকে নিজের করে নিব।

কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম যে কাওকে খুন করে নিজে সুখি হতে পারবো না।
আর রিতির বাচ্চার কিছু হলে রিতি আমাকে সারাজীবন ঘৃণা করবে।
যাকে ভালবাসি তার ঘৃণা কিভাবে সহ্য করব বল।

তাই অপরেশন হতে দিই নি।
হয়তো আজ অবশনটা আমারই প্লান ছিল কিন্তু যখন বারবার রিতি মুখ থেকে শুনছিলাম যে “আয়ান আমার বাচ্চাকে বাঁচাও”
তখন আর এ কাজ করতে পারার সাহস পাচ্ছিলাম না।

আমি বুঝেছিলাম রিতি যেহেতু একসময় আমায় ভালবাসতো।
আর আমি ওর প্রথম ভালবাসা ছিলাম হয়তো আমি আবার ওর মন পেতে পারবো।
কিন্তু কিছুক্ষন আগে বুঝতে পারলাম যে ওর মনের রাজত্ব তুমি কেড়ে নিয়েছো।
এতে হাজার চেষ্টার সত্ত্বেও আমি ফিরত পাবো না।
তাই এ গুনাহ হতে দিলাম না।

রিতি ৪০৪ নাম্বার রুমে।
আমি গেলাম।
আয়ান ওঠে সোজা রিতির কাছে গেল।
রিতি আর তার বাচ্চা দুজনেই সুস্থ।
তারপর ৬ মাস পর তাদের কোলে আয়রা আসে।

আয়রা দেখে যেন সব কষ্ট ভুলে যায় সবাই বিশেষ করে রিতি।
রিতি সাথে দেখা করতে রাফির পরিবারের সবাই এখনো আসে।
আয়েশাও।
হে রাফি আয়েশাকে মেনে নিজেছে।
যদিও তা শুধু বলার জন্য।

সে কখনও রিতি জায়গা অন্য কাওকে এখন আর দিতে পারবে না।
আর আশফিকে সে জন্ম না দিলেও ৩ টি বছর বাবার আদর দিয়েছে তাই আয়েশাকে মেনে নিলেও মাফ এখনও করে নি।
আয়েশা রিতির থেকে মাফ চাইলে রিতি আয়েশাকে মাফ করে দেয়।
এখন আয়েশা রিতির ভালো বান্ধবিও বটে।

কিন্তু রাফি সেদিনের পর থেকে রিতির সামনে আসে নি।
যদিও রিতি মাফ করে দিয়েছে।
রিতি না সবাই রাফিকে সেদিনের পর মাফ করে দিয়েছিল।
কারণ রাফি নিজে ভুল করলেও নিজেই তা সুধরেছে।
কিন্তু রাফি আসি নি।

কারণ সে আবার রিতির প্রতি দূর্বল হতে চায় নি।
কিন্তু এখনও রাতে রিতির ছবি বুকে জরিয়ে ছাদে বসে কাঁদে সে।

রাফির রিতির সামনে আসতে চায় না বলে আয়ান আয়রাকে প্রায় রাফিদের বাসায় নিয়ে যায়।
প্রথম যখন আয়ান আয়রাকে রাফির কাছে দিয়েছিল।
সেদিন রাফি বাচ্চাটিকে বুকে জরিয়ে খুব কেঁদেছিল।

আজও সে আয়রার সাথে খেলা করতে যেয়ে পৃথিবীর সব ভুলে যায়।
রাফি আয়রাকে আশফি থেকে বেশিই ভালবাসে।
শুধু রাফিই না দুই পরিবারের সবার প্রাণ জুরে আছে আয়রা।
হবেই বা না কেন একটি মাত্র মেয়ে বলে কথা।
আরিয়ান, নিশান আর মাহিন তো সারাক্ষণ ওকে নিয়ে ঝগড়া করে।

সারাক্ষন সবার মধ্যে জুরে থাকে আয়রা।
চলুন ফিরে আসি বর্তমানে।
রিতিঃ বাবা ছেলে দুজন এরকম।

আল্লাহ ই জানে আমার মেয়েটার ভবিষ্যত বরের কি হবে। (কাপড় গুছাচ্ছিল তখন)
আমান রুমে বাইরে দরজা খটখটিয়ে।
আমানঃআসব।

রিতিঃ হে ভাইয়া আসো প্রতিদিন জিজ্ঞাস করতে হয় নাকি।
আমানঃ আমার মামনিকে নিতে আসছি।
রাহাত পার্কে অপেক্ষা করছে।

ওকে নিয়ে ঘুরে ওই বাসায় নিয়ে আবার নিয়ে আসব।
রিতিঃ হি। হি এটা তো প্রত্যেক দিনের রুটিন বলতে হয় নাকি ভাইয়া।
ওকে রেডি করে রেখিছি।

আর এই যে সব জিনিস। (একটি ব্যাগ দিয়ে)
আর ভাইয়া মাহিকে বলেন এখানে নিল বক্সে মাহিনের জন্য গাজরের হালুয়া দিয়েছি।
আমানঃ আচ্ছা তাহলে আমি আমার Princess কে নিয়ে যাই।

চলো Princess বড় পাপার সাথে পার্কে যাবে। (আয়রাকে আয়ানের কোল থেকে নিয়ে)
আরিয়ানঃ বড় পাপা আমিও যাই।
এমনি এখন স্কুলেও যেতে পারবো না।

ওরা চলে গেল।
রিতি কাপড় গুছাচ্ছিল।

আয়ান এসে পিছন থেকে রিতিকে জরিয়ে ধরল।
আয়ানঃআচ্ছা জান।
রিতিঃ হম বল।

আয়ানঃ তোমার মনে হয় না আয়রা একা মেয়ে হওয়ায় সবাই ওকে নিয়ে বেশি টানাটানি করে।
রিতিঃএকটু হেসে।
আল্লাহ দেখ এ কথা কে বলছে।

আয়ানঃ আসলে।
আসলে আরিয়ান, মাহিন আর নিশান তিন ভাই এর এক বোন not fair।
একটা উপায় আছে এর।

রিতিঃআর তা কি। (আয়ানের দিকে ঘুরে)
আয়ানঃশুনবা। (দুষ্টুমি হাসি দিয়ে)
আরেকটি বোন এনে দি তাহলেই তো হয়।

আয়ান রিতির কোমড়ের দুই পাশে দুই হাত দিয়ে এক টানে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে।
রিতি লজ্জায় শেষ।
লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে আছে।

আয়ানঃ উফফফ এভাবে লজ্জা পেও না তো।
রিতিঃকেন। বিরক্ত হও বুঝি। (অভিমানি সুরে)
আয়ানঃ তোমার কোন কাজে আমি বিরক্ত হতে পারি নাকি।

কিন্তু এভাবে লজ্জা পেলে যে আবার তোমার প্রেমে পরে যায়।
একজনের প্রেমে পরতে পরতে হয়রান হয়ে গেছি।

রিতিঃএ একজনের প্রেমেই পরতে পারবা অন্য কারো প্রেমে পরলে তো খুন করে দিব।
আয়ানঃ এভাবে লজ্জামাখা হাসি দিলে প্রতিবারই মরে যাই।

মরা মানুষ কে আর কি মারবা। (কানের কাছে যেয়ে কথাটি বলল)
বলেই কানের পিছনে একটি চুমু দিতেই রিতি কেঁপে উঠল।
রিতিঃ কি করছো ছাড় কেও এসে পরবে।

আর অফিসেও যেতে হবে তোমার। (কথাটা একটু কষ্টে বলল কারণরিতির নিশ্বাস দীর্ঘ হয়ে আসছিল)
আয়ান কোন কথা না শুনে রিতির কানের পিছনে তার নাক ঘষা শুরু করে রিতির ঘ্রাণ উপভোগ করতে লাগল।

কানের পিছন থেকে আস্তে আস্তে নিচে নেমে গলায় এসে পৌঁছাল।
রিতির গলায় ঘাড়ে একের পর এক চুমু দিতে শুরু করল।
তারপর মুখ তুলে দেখে রিতির নিশ্বাস দ্রুত হয়ে গেছে।

আয়ানের যেন আরো নেশা লেগে গেল। সে রিতির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। আর অন্যহাত দিয়ে রিতির স্পর্শ অনুভবে ব্যস্ত হয়ে পরল। রিতিও আয়ানের মাথার চুল মুঠোয় ধরে তার ঠোঁটের স্বাদ নিতে ব্যস্ত।

দুওজনে দুজনের ভালবাসার নেশায় ভাসতে থাকে।

সবাই দোয়া করেন রিতি আর আয়ানের জন্য জানি আগামীবছর আরেকটি রাজ কন্যা হয় তাদের।

লেখা – রিতিভা জাহান রিতি

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “সেকেণ্ড ম্যারেজ (১ম খণ্ড) – রোমান্টিক বিবাহের গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – শুষ্ক পাতার ভাজে (১ম খণ্ড) valobasar golpo 2019

1 thought on “সেকেণ্ড ম্যারেজ – রোমান্টিক বিবাহের গল্প”

  1. সায়েম

    অসাধারন গল্প, আমি পড়েই গেছি পড়েই গেছি,গল্প শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত একটুও নড়িনি,,,খুবি ভাল লেগেছে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *