ইসলামিক বাসর রাত

ইসলামিক বাসর রাত ১০টি করণীয় ও বর্জনীয় কাজ হাদিসের আলোকে

ইসলামিক বাসর রাত ১০টি করণীয় ও বর্জনীয় কাজ হাদিসের আলোকে: আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ লেখায় আমি আপনাদের বলব বাসর রাতে করনীয় বর্জনীয় কাজ এবং কিভাবে মিলিত হলে কোন ওষুধ না খেয়ে আপনি স্বাভাবিকভাবে অনেকক্ষণ স্ত্রীকে তৃপ্ত করতে পারবেন, যা ডাক্তারী ভাবে পরীক্ষিত। তাই পুরো লেখাটি মনযোগ দিয়ে পড়ুন। প্রথমে ইসলামিক নিয়মে বাসর রাতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কি করা উচিত এবং উচিত না তা জেনে নেই-

নাম্বার ১: বিয়ের নিয়ত শুদ্ধ করা

সর্ব প্রথম কাজ হবে, নারী-পুরুষের উভয়ের উচিত বিয়ের মাধ্যমে নিজকে হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে বাঁচানোর নিয়ত করা। এতে উভয়ই এর দ্বারা ছাদাকার ছাওয়াব পাবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের সবার স্ত্রীর নিম্নাঙ্গে রয়েছে ছাদাকা। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমাদের কেউ কি তার চাহিদা মেটাবে আর তার জন্য সে কি নেকী লাভ করবে?

তিনি বললেন, ‘তোমরা কি মনে করো যদি সে ওই চাহিদা হারাম উপায়ে মেটাতো তাহলে তার জন্য কোনো গুনাহ হত না? অতএব তেমনি সে যখন তা হালাল উপায়ে মেটায়, তার জন্য নেকি লেখা হয়।’

মনে মনে নিয়্যত করতে হবে আর মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে।

নাম্বার ২: বাসর রাতে স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে দোয়া

বেশির ভাগ মুসলিম বাসর ঘরের দোয়া নিয়ে বেখেয়াল। অথচ এতে উভয়র জন্য আছে মঙ্গল। বাসর ঘরে স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগে বা সামনে ডান হাত রেখে এই দোয়া পড়বে-

হযরত মোহাম্মদ (সা:) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো নারী, ভৃত্য বা বাহন থেকে উপকৃত হয় তবে সে যেন তার মাথার অগ্রভাগ ধরে, বিসমিল্লাহ পড়ে এবং বলে :

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি। (সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: বিবাহ, অনুচ্ছেদ: বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিধান, হা/ ২১৬০, সনদ: হাসান)

অর্থ- ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এর ও এর স্বভাবের কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং এর ও এর স্বভাবের অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’

এভাবে মাথায় হাত রেখে দোয়া করলে স্ত্রীর সাথে সম্পর্কটা বেশ রোমান্টিক ও মধুর হয়।

নাম্বার ৩: বাসর রাতের নফল নামাজ

বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একসঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, স্ত্রী যখন স্বামীর কাছে যাবে, স্বামী তখন দাঁড়িয়ে যাবে। আর স্ত্রীও দাঁড়িয়ে যাবে তার পেছনে। অতপর তারা একসঙ্গে দুইরাকা‘ত সালাত আদায় করবে এবং বলবে-

اَللّهُمَّ بَارِكْ لِىْ فِىْ أَهْلِىْ وَبَارِكْ لَهُمْ فِىَّ، اَللّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنَنَا مَا جَمَعْتَ بِخَيْرٍ و فَرِّقْ بَيْنَنَا إِذَا فَرَّقْتَ إِلَى خَيْرٍ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বা-রিকলী ফী আহলী, ওয়া বা-রিক লাহুম ফিইয়্যা, আল্লাহুম্মাজমা’ বাইনানা মা জামা’তা বিখাইর, ওয়া ফাররিক বাইনানা ইযা ফাররাকতা ইলা খাইর।

র্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন এবং আমার ভিতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। হেয় আল্লাহ, আপনি তাদের থেকে আমাকে রিযিক দিন আর আমার থেকে তাদেরকেও রিযিক দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণেই একত্রে রাখুন। আর আমাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিলে কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটান।” (তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, হা/৮৯০০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৭৫৪৭; সিলসিলাতুল আছার আছ-ছহীহাহ হা/৩৬১; আদাবুয যিফাফ, পৃঃ ২৪।)

অনেক ভাবে এই নামায না পরলেও হবে, কিন্তু এটা যেহেতু আমাদের নবীজি করছেন তাই আমাদের করা উচিত।

নাম্বার ৪: স্ত্রী সহবাসের দোয়া

প্রতিটি মুসলিমের উচিত স্ত্রী মিলনের সময় দোয়া পাঠ করা। বউ বা স্ত্রীর সাথে সহবাসের সময় এই দু’আ পড়া সুন্নাত। হযরত মোহাম্মদ (সা:) বলেন, তোমাদের কেউ যদি স্ত্রী মিলিত হবার সময় বলে-

بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা। [বুখারী হা/ ৬৩৮৮ ও মুসলিম হা/ ১৪৩৪)]

অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তানের কাছ থেকে দূরে রাখুন আর আমাদের যা দান করেন তা থেকে দূরে রাখুন শয়তানকে।

এই দোয়া পড়ে মিলনে কোনো সন্তান দান করা হলে শয়তান কখনো তার ক্ষতি করতে পারবে না।

নাম্বার ৫: সহবাস পদ্ধতি

প্রত্যেক মুসলিমের উচিত মিলনের নিষিদ্ধ সময় ও জায়গা থেকে বিরত থাকা। আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবতী মহিলার সঙ্গে কিংবা স্ত্রীর পেছন পথে মিলন করে অথবা গণকের কাছে যায় এবং তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করলো।’

ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে স্ত্রীর পায়ুপথে যৌন মিলন করে আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না। (তিরমিযি ১১৬৫)

যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর আবার সহবাস করতে চায় তখন সে যেন এর মাঝখানে ওযু করে নেয়। কেননা, এটি দ্বিতীয়বারের জন্য অধিক প্রশান্তিদায়ক। (মুসলিম ৩০৮ হাকিম ১/২৫৪)

স্বামী-স্ত্রীর জন্য জায়েয একে অপরের সমস্ত দেহের দিকে তাকানো, এমনকি যৌনাঙ্গের দিকেও। বলা হয়- স্ত্রীর গোপনাঙ্গের দিকে তাকালে স্বামীর চোখের জ্যোতি কমে যায়, আসলে একথার কোনো ভিত্তি নেই।

নাম্বার ৬: স্বামী-স্ত্রী সহবাসের পর ফরজ গোসল

নিয়ম হল, স্ত্রী মিলনের পর সুন্নত হলো অযূ বা গোসল করে তবেই ঘুমানো। অবশ্য গোসল করাই উত্তম। আম্মার বিন ইয়াসার রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তিন ব্যক্তির কাছে ফেরেশতা আসে না : কাফের ব্যক্তির লাশ, জাফরান ব্যবহারকারী এবং অপবিত্র শরীর বিশিষ্ট ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে অযূ করে।’

গোসলের প্রথমেই মনে মনে এই চিন্তা করবেন যে, নাপাকি দূর করার জন্য গোসল করছি। তারপর প্রথমে লজ্জাস্থানে লেগে থাকা নাপাকি ধুয়ে ফেলবেন। তারপর সাবান বা এজাতীয় কিছু দিয়ে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিবেন। এরপর নামাজের অজুর ন্যায় পূর্ণাঙ্গ অজু করবেন, পানি দিয়ে মাথা ভিজিয়ে নিবেন। তারপর প্রথমে শরীরের ডান অংশে এবং পরে বাম অংশে পানি ঢালবেন। সবশেষে সারা দেহে পানি ঢালবেন।

আবু দাউদ হাদীসে এসেছে, মায়মুনা রাযি. হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তা দিয়ে তিনি অপবিত্রতার গোসল করেন। নাবী ﷺ বদনা নিজের ডান হাতের উপর কাৎ করে তা দুই বা তিনবার ধৌত করেন। এরপর তিনি তাঁর লজ্জাস্হানের উপর পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে ধৌত করেন। পরে তিনি মাটির উপর হাত ঘষে তা পানি দিয়ে ধৌত করেন। অতঃপর তিনি কুলি করেন এবং নাক পরিষ্কার করেন। অতঃপর মুখমন্ডল ও দুই হাত ধৌত করেন। তারপর তিনি স্বীয় মাথা ও সর্বাংগে পানি ঢালেন। পরে তিনি উক্ত স্থান হতে অল্প দূরে সরে গিয়ে উভয় পা ধৌত করেন। (আবু দাউদ ২৪৫)

উপরোক্ত বিষয়গুলো সবাই ভালভাবে খেয়াল করবেন এবং সঠিক ভাবে এপ্লাই করবেন।

নাম্বার ৭: স্বামী স্ত্রীর সহবাসের নিয়ম

স্বামীর জন্য ঋতুবতী স্ত্রীর সঙ্গে নিম্নাঙ ব্যবহার ছাড়া অন্য সব আচরণের অনুমতি রয়েছে। স্ত্রী পবিত্র হবার পর গোসল করলে তার সঙ্গে সবকিছুই বৈধ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সবই করতে পারবে কেবল মিলিত ছাড়া।’

সহবাসের আরো কিছু সুন্নত নিয়ম হলো:

  • সহবাস কখনো কেবলা মুখি হয়ে করবেনা।
  • স্ত্রী সহবাসের আগে উভয়ই ভাল করে দাতঁ ব্রাশ বা মিসওয়াক করবে।
  • স্বামী স্ত্রী সহবাসের পুর্বে উভয় অযু করে নিতে হবে।
  • সহবাসের আগে বিসমিল্লাহ বলে আরম্ভ করা মুস্তাহাব।
  • শুরুতে ভুলে গেলে বীর্যপাত হবার পর বিসমিল্লাহ পড়া যাবে।
  • স্ত্রী শরীরে সুগন্ধি টেলকম পাউডার বা সুগন্ধি লাগিয়ে নিবে। স্বামীও আতর বা সুগন্ধি লাগিয়ে নিবে।
  • সহবাসের সময় একেবারে উলঙ্গ হওয়া যাবে না। যদি তৃপ্তি না আসে তাহলে উপরে কোন কাপড় বা চাদর দিয়ে ঢেকে নিবে।
  • বীর্যপাত হয়ে যাবার সাথে সাথে স্ত্রীর উপর থেকে নেমে পড়বেনা। বরং কিছু সময় তার উপর শুয়ে থাকবে। আবার পুরো শরিরের ভর তার উপর ছেড়ে দেয়া যাবে না যাতে তার কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখাও সুন্নাত।

আশা করি প্রত্যকে ইমানদার ভাই এই নিয়মগুলো মেনে চলবেন।

নাম্বার আট: বাসর রাতের গোপনীয়তা

বিবাহিত ব্যক্তির আরেকটি কর্তব্য হলো স্ত্রীর সাথে ঘটা গোপন তথ্য কারো কাছে প্রকাশ না করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে ওই ব্যক্তি সবচে নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে যে তার স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয় এবং স্ত্রী তার ঘনিষ্ঠ হয় অতপর সে এর গোপন বিষয় প্রচার করে।’

ইসলামিক বাসর রাত এর বিবাহের শর্তাবলী ও রুকন

বিবাহের শর্ত হলো চারটি-

১। পরস্পর বিবাহ বৈধ এমন পাত্র-পাত্রী নির্বাচন।
২। উভয়ের সম্মতি।
৩। মেয়ের ওয়ালী থাকা।
৪। দু’জন ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষী থাকা।

প্রত্যেকে মুসলিমের উচিত এই নিয়মগুলো মেনে বিবাহ করা।

বাসর রাতে দীর্ঘ সময় যৌন মিলনের উপায়

এখন আসি বেশিরভাগ মানুষ যে বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তিত তা নিয়ে। আপনি কি জানেন আপনার শারীরিক সমস্যার ৯৯ ভাগই মানসিক? ৯৯ ভাগ পুরুষ শারীরিক নয়, মানসিক রোগে আক্রান্ত। তারা মনে করে যে তারা দূর্বল এবং ভীত। তাই তারা মিলনে ভয় পায় বা দ্রুত হয়ে যায়। তাই সবার প্রথমে আত্মবিশ্বাস রাখুন, একজন স্ত্রী চাইলে তার স্বামীকে সুপারম্যান বানাতে পারেন।

এজন্য স্বামীকে সবসময় সাহস দিতে হবে ও খুশি রাখতে হবে। আর স্বাভাবিক মিলনের সময় পুরুষদের একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে- হাত ও পায়ে ভর থাকে যেন বেশি এবং যখনি মনে হবে বের হতে পারে তখনি নিম্নাং গতি থামিয়ে বের করে নিন, তারপর কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন। এভাবে অন-অফ পদ্ধতিতে করুন তাহলে ভাল ফল পাবেন।

তাই প্রথমে তেমন ভাল ফল না পেলেও অভ্যাস করতে করতে একসময় সফল হবেন। আশা করি আপনাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হবে। তাই সবার প্রথমে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাজের প্রশংসা করুন, একে অপরকে উৎসাহ দিন। আপনার দাম্পত্য জীবনে ম্যাজিকিয় সুখ উপভোগ করুন। ভাল থাকুন সবাই, পরিবারকে সময় দিন।

আরও পড়ুন- আদর্শ বাসর রাত কিভাবে করবেন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *