বাসর রাতের প্রেম – ভিলেন বউয়ের কাণ্ড: বাসর রাত প্রতিটি মানুষের জীবনে একটি স্মরণীয় অধ্যায়। বিচিত্র সব প্রেম ভালবাসার গল্প লেখা হয় এই রাতে। এক এক জনের বাসর ঘর এর কাহিনীটাও এক এক রকম হয়। এরকমি একটি প্রেমকাহিনী নিয়ে আজকের গল্প। চলুন তবে শুরু করা যাক, আরে আরে বাসর না, গল্পের কথা বলছিলাম, হাহাহা।
বাসর রাতের রোমান্টিক ভালবাসার গল্প
আমি বাসর ঘরে ঢুকে পাশে বসতেই বৌ আমাকে বলল,
বউঃ ঘড়িতে তাকিয়ে দেখুন তো কয়টা বাজে?
বাসর রাতে বৌয়ের এমন সাহসী প্রশ্নে কিছুটা বিচলিত
হলাম। তখন ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ১:৩০মি।
আমি বৌয়ের পাশে বসে আস্তে করে বললাম,
আমিঃ শোনো, আমার এখন বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই ছিলো না। আমার বাবা-মায়ের পছন্দেই তোমাকে বিয়ে করেছি। তবে আমার কারো সাথে কোন সম্পর্কও নেই। কিন্তু আমি বিয়ের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। তাই আমি এখন চাইলেও এত সহজে তোমাকে বউ হিসেবে মানতে বা বৌয়ের অধিকার দিতে পারবোনা।
কথাগুলো বলে শেষ করা মাত্রই নতুন বউ আমার পাঞ্জাবির কলারটা চেপে ধরে বলল,
বউঃ আমাকে কি খেলার পুতুল মনে হয় নাকি? পছন্দ হয়নি, বিয়ে করতে চাননি এইটা আগে বলতে পারলেন না? নিজের মায়ের মন রক্ষা করতে আমার সব আশা-স্বপ্নকে কেন বলিদান দিতে হবে? বিয়ে করার ইচ্ছে নেই, এইটা আমাকে আগে বললেই পারতেন। তবেই আমি আমার পক্ষ থেকে বিয়ে ভেঙে দিতাম। মায়ের প্রতি ভন্ড ভক্তি শ্রদ্ধা দেখাতে গিয়ে আমার জীবনটা কেন এইভাবে নষ্ট করে দিলেন, হুম? আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি। এখন আমি যেভাবে বলব সেভাবেই সব হবে। ঠিক আছে?
বলেই কলারটা ছেড়ে দিলো। পরে আবার বলল,
বউঃ আচ্ছা, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। দিতে হবে না আপনাকে বউয়ের অধিকার। যান নিচে গিয়ে ঘুমান। একদম খাটে ঘুমাতে পারবেন না। বলেই আমার বালিশ পা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো। আমি ও বাধ্য ছেলের মতো ফ্লোরেই শুয়ে পড়লাম। আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কেমন গুন্ডি মেয়েরে বাবা। জীবনেও এমন মেয়ে দেখিনী। মনে তো হচ্ছে জীবন পুরাই তেজপাতা করে ছাড়বে।
ভিলেন বউয়ের কাণ্ড
ফ্লোরে আমার ঘুম একেবারেই আসছেনা। এর আগে আমি কখনোই ফ্লোরে ঘুমাইনি। কিন্তু আজকে বিয়ে করার কারণে নিজের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ফ্লোরে ঘুমাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে কানের কাছে একদল মশার আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। ইসসসসসস, আর সহ্য হচ্ছেনা। চোখ বন্ধ করে আমি শুয়ে আছি। কখন জানি ঘুমটা লেগে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। হঠাৎই সজাগ হয়ে দেখি, আমার শরীর কম্বল দিয়ে ঢাকা। আর পাশে একটা মশার কয়েল লাগানো। এবার মনটাতে একটু স্বস্তি পেলাম। বউটা আমার কঠোর হলেও মানুষ ভালো। মনে মায়া-দয়া আছে অনেক।
পরের দিন আমি ঘুম থেকে উঠেই দেখি টেবিলে চা রাখা। চা খেয়ে, ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে ফোন টিপছিলাম। তখনি তানিয়া (আমার বৌ) এসে বললো,
তানিয়াঃ এই যে সেই কতক্ষণ যাবত খাবার নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছে। আর আপনি ঘরে বসে আছেন কেন? এখনি নিচে চলুন আগে?
কথাটা বলেই আমার কানের কাছে এসে আস্তে করে বললো,
তানিয়াঃ নাকি খাবার টা রুমে নিয়ে আসবো?
আমি তো হার্ট এ্যাটাক হতে হতে বেচেঁ গেছি। আমি তো ভাবছিলাম, বউ বুঝি এইবার ও কলার ধরেই আমাকে খাবার টেবিলে নিবে। কিন্তু না, বউয়ের স্বর পাল্টে গেছে। তবে কি বউ আমার প্রেমে পড়ে গেল নাকি? কথাটা ভাবতে ভাবতেই বউয়ের দিকে তাকালাম। হা হয়ে তাকিঁয়ে আছি, বউ তো আমার হেব্বি সুন্দরী। রাতে তো ভাবছিলাম হিটলারনি। এখন দেখি না মায়াময়ী। এইবার যে আমি বউয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম। নিজেই নিজেকে বললাম,
ইমনঃ মনে হয়, তুই তোর হিটলারনি ভিলেন বউয়ের প্রেমে পড়ে গেছিস।
হঠাৎ একটা বিকট শব্দে বাস্তবে ফিরলাম। সামনে তাকিঁয়ে বউ আমার ফ্লোরে পরে চোখ বন্ধ করে আছে। বুঝতে পারলাম, পাগলীটা খুবই ব্যথা পাইছে।
রোমান্টিক বউ
দৌড়ে গিয়ে টেনে তুলে বসাতে গেলাম। আর অমনি আস্তে করে বলল,
তানিয়াঃ কেমন স্বামী গো আপনি?
আমি তো একটু ভ্যাবাচ্যকা খেয়ে গেলাম। বললাম,
ইমনঃ আমি আবার কি করলাম?
বৌঃ আমি মাটিতে পরে আছি? কই কোলে করে নিয়ে বিছানায় শোয়াবেন, তা না করে আমার হাত ধরে টানছেন।
সাথে সাথেই আমি কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
তানিয়াঃ ইচ্ছে করে এইভাবেই ধরে রাখি সারাটা জীবন। কিন্তু আপনি তো আমাকে পছন্দই করেন না। কথা শেষ করেই তানিয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।
আমারও বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেল।
আমারো খুব বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল, কপালে একটা চুমো একেঁ দিয়ে বলি,
ইমনঃ পাগলী, আমি যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি গো। কিন্তু পারলাম না। কোথায় জানি একটা বাধাঁ পাচ্ছিলাম। এই সুযোগে তানিয়া আমাকে ঠেলে বিছানায় ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালালো। আমি শুধু ওর চলে যাওয়ার পানে তাকিঁয়ে রইলাম। পরক্ষণেই খেয়াল হলো, ও তো ব্যথা পাইছে। যার কারণে কোলে করে উঠাতে হলো। বুঝতে আর বাকি রইলো না, এইবার ও আমাকে বোকা বানানো হয়েছে।
পাগলি বউয়ের ভালবাসা
পাগলিটার সাথে খুনসুটি প্রেম করতে করতেই কেটে গেল ২টা বছর। এখন কেউ কাউকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারিনা। আমার পাগলীটা এখন গর্ভবতী। তাই খুব যত্ন নেই তার।
আজকেই বাচ্চা হবার তারিখ দিয়েছে ডাক্তার। আমি অফিসে ছিলাম, হঠাৎই বাবার ফোন পেয়ে ছুটে গেলাম হসপিটাল। গিয়েই শুনলাম আমার ঘর আলো করে এসেছে এক ছোট্ট রাজকন্যা।
কিন্তু….
আমার পাগলিটার কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছিনা কেন? ভয়ে আতঁকে উঠলাম। অনেকের মুখেই শুনেছি, বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে অনেক মা। সে ভয়েই বাচ্চা নিতে চাইনি। কিন্তু ওর নাকি বাচ্চা লাগবেই। ওর ইচ্ছে পূরন করতে গিয়েই কি তবে….?
আর ভাবতেই পারছিনা। আর একটা মিনিট ও নষ্ট না করে, দৌড়ে গেলাম কেবিনে।
গিয়ে দেখি বাচ্চাটা হাত পা নাড়িয়ে খেলছে।
কিন্তু তানিয়া চোখ বন্ধ করে রাখছে।
ওর নিঃশ্বাস আছে কি নাই তা দেখার মতো ধৈর্য আমার ছিলোনা। তাই তানিয়াকে জড়িয়ে চিৎকার দিয়ে ফেললাম।
সাথে সাথেই কানের কাছে একটু ব্যথা অনুভব করলাম। পরে দেখি তানিয়া আমার আস্তে করে কানে কামড়
দিয়ে বলল,
তানিয়াঃ কি ভাবছিলা, তোমাকে একা রেখে চলে যাবো? আরে না গো, আমি চলে গেলে তোমাকে জ্বালাবে কে?
আমিও বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলাম। আর বললাম, বড্ড ভালোবাসি রে পাগলি তোকে। ছাড়বোনা কখনই। কি আপনারা কি দেখছেন অমন করে আমাদের বাসর রাতের প্রেম গল্প তো শেষ এখন আপনারা অন্য গল্প পড়েন, আমরা একটু জড়িয়ে ধরে অনুভব করি দুজন দুজনাকে।
আরো পড়ুন- পালিয়ে বিয়ে – কাজি সাহেব যখন শশুর