রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ১৪

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১৪ | Love Story

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১৪: গত পর্বে মাহি পরীক্ষা দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে পার্টি করতে গেলে নাবিল সেটা খেয়াল করে। তারপর নাবিল মাহিকে নিয়ে বাইকে করে বাসায় আসে। কিছুটা রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে নাবিল কি করে তা দেখার পালা।

নাবিলের আবদার

মাহি বাসায় প্রবেশ করে দেখে, বাসায় মেহমান দিয়ে ভরা। সব আত্মীয় স্বজনকে একসাথে দেখতে পেয়ে মাহি কিছুটা অবাক হয়। মাহিকে দেখেও সবাই মুসকি হাসা হাসছে। মাহি বড় সবাইকে সালাম দিয়ে সবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে, মাকে খুঁজতে লাগলো।

মাহি খেয়াল করলো, আজ তার বাবা ও ভাই কেউ অফিসে যায় নি।

মাহিঃ মা মা, মাহি চিল্লিয়ে।

আম্মুঃ আরে মাহি এসে পরেছিস। ভালো হলো, যা আগে ফ্রেস হয়ে আস। তারপর কিছু খেয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নে। তা না হলে খুব ক্লান্ত লাগবে রাতে।

মাহিঃ মা এসব কি হচ্ছে, বাসায় কি কোন পার্টি হবে?

মাহির বোন সীমাও এসেছে।

সীমাঃ দেখো, যার বিয়ে তার কাম নাই পাড়া প্রতিবেশীর চোখে ঘুম নাই, বলেই সবাই হেসে উঠলো।

মাহিঃ মা কি বলছে, সীমা?

মাহির মাথায় কিছুই আসছে না, এমনেই মেজাজ খারাপ তার উপর সবার এতো ঢং আর সহ্য হচ্ছে না।

আম্মুঃ সীমা আমার মেয়েটাকে আর লজ্জা দিওনা। মাহি মা তুই আগে ফ্রেস হয়ে এসে কিছু খেয়ে নে। আস্তে আস্তে সব জানতে পারবি।

কারো কথার কোন আগা মাথাও বুজলাম না। আর ভালোও লাগছে না। তাই আর তর্ক না করে সোজা রুমে চলে গেলাম। ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসে বসে ভাবছি সবার কথার মানে।

হঠাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো, আমার তো চোখ কপালে উঠে গেলো।

“খেয়েদেয়ে, কিছুক্ষণ ঘুমা, সন্ধ্যায় দুজন মেয়ে আসবে তোকে মেহেদি দিতে। কোন নাটক না করে তাদের মেহেদি লাগাতে দিবি।”

হুমমম ঠিক ভাবছেন, নাবীলের ম্যাসেজ।

আরে মেহেদি কেনো দেবো, পাগল নি। মাহি আবার রুম থেকে বের হয়ে সোজা অর মার ঘরে যায় মাকে খুঁজতে। মার ঘরে গিয়ে মাহি যেনো আকাশ থেকে পড়ছে।
চারপাশে সোপিং ব্যাগ, গহনা, মেহেদী, হলুদের ডালা, আরো অনেক কিছু। যা মাহি শুধু দেখছে কিন্তু বুজে উঠতে পারছেনা এসব কি, আর কার?

বিয়ের সারপ্রাইজ

হঠাৎ মার ডাকে ভাবনার ছেদ পরে,

মাহিঃ মা এসব কি, আর এগুলো কার? আমাকে বলে মেহেদি লাগাতে আসবে কেনো? কিছুতো বলো।

ফুফিঃ নতুন বউ মেহেদী লাগাবে না, কি আমরা লাগাবো! (মাহির ফুফি একটু হেসে বললো)

মাহিঃ নতুন বউ মানেএএএ।

ফুফিঃ আজ বাদে কাল যার বিয়ে তাকে তো নতুন বউই বলবো। কি বলো সবাই! (আবার সবাই হা হা কারে হেসে উঠে)

মাহিঃ আমার বিয়ে, কার সাথে?

আম্মুঃ এ মা এটা কি ধরনের প্রশ্ন, মাহি? তোমার বিয়ে আর কার সাথে হবে, নাবীলের সাথে। আজ মেহেদি, কাল গায়ে হলুদ, আর পরশু বিয়ে দিয়ে উঠিয়ে দেবো।

মাহিঃ হঠাৎ করে এসব কি? আর আমাকে বিদায় দেবার এতো জলদি কেনো সবাইর! কেউ কিছু বলার প্রয়োজন মনে করলা না আমাকে।

আম্মুঃ আরে হঠাৎ কই? এক মাস ধরে সব প্লান চলছে।

মাহিঃ এতো কিছুর প্লান করেছো, আমাকে বলনি কেনো?

আম্মুঃ আরে পাগলী মেয়ে আমার, নাবীল মানা করেছে, তোর পরীক্ষা বলে। তুই যাতে কোন টেনশন না করিস, তাই। তোর থেকে লুকিয়ে এতো দিন রাখতে হইছে।
ও তো পারে না তোকে আজই নিয়ে যায়। কিন্তু তুই আমার এক মাত্র মেয়ে অনুষ্ঠান না করে কিভাবে তুলে দিই, বলতো? অনেক কথা হইছে এখন যা কিছু খেয়ে রেস্ট নে।

মাহিতো রেগেমেগে ফায়ার। সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দেয়।

বিছানায় বসে, তাহলে এই ছিলো শয়তানটার প্লান। তাইতো আমাকে কিছুই বললো না। কারণ আমাকে শাস্তি দেয়ার প্লান তো আগেই করে রেখেছে। কি করবো আমি, কতো ইচ্ছা ছিলো, পরীক্ষার পর কতো ঘুরবো ফিরবো, আনন্দ করবো, সব এক নিমিষে মাটি করে দিলো। আমাকে খাঁচায় বন্দি করার সব প্লান মিস্টার নাবীল করে ফেলছে। আমি চাইলেও এ থেকে মুক্তি পেতে পারবো না এখন। এসব ভাবতে ভাবতে মাহি ঘুমিয়ে পড়ে।

নতুন রূপে মাহি ও নাবিল

সন্ধ্যায়….

মাহির ফোনে আবার ম্যাসেজ আছে।

নাবীলঃ “তুই এখনো কিছু খাস নি কেনো? উঠ, ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি খেয়ে রেডি হয়ে নে। ওরা এসে পড়বে, মেহেদী দিতে। তুই উঠবি নাকি আমি আসবো। আর আমি আসলে তোকে কিন্তু সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।”

মাহি মেসেজ দেখে ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে বসে পরে। বিশ্বাস নেই এই নাবীলের। সত্যি সত্যি যদি আজই উঠিয়ে নিয়ে যায়। আমার বাড়ীরকেউ ওকে আটকাতে ও পাড়বে না। না কিছু ভেবে আর লাভ নেই। আমাকে বলি দেবার সব প্লান হয়ে গেছে। গিয়ে রেডি হয়ে নি।

মাহিকে তার কাজিনরা রেডি করে দিলো। আজও মাহি শাড়ি পড়লো, প্রথমে পরতে চায় নি, পড়ে সবার জোরাজোরি তে পড়তে হলো। কিছু ফুলের গহনা পড়িয়ে দিলো। হালকা সাজ আর ফুলের গহনাতে মাহিকো অসাধারণ লাগছে। মাহি ড্রয়িংরুম এ এসে একটু অবাক, ওর মেহেদীর জন্য রুম গুলো খুব সুন্দর করে সাজানো হইছে। মাহি ভাবছে, এতো অল্প সময় এতো কিছু কেমনে করছে এরা?

মাহি চুপচাপ বসে আছে, কিন্তু মেহেদী লাগাতে কেউ আসছে না। মাহি ইশারা দিয়ে সীমাকে ডাক দিলো।

মাহিঃ কি হলো মেহেদীর জন্য শং সাজিয়ে বসিয়ে রাখছিস। আরম্ভ করছোস না কেনো! কার জন্য অপেক্ষা করছিস?

সীমাঃ আরে দাঁড়া, এতো তারা কি তোর? এখনি আরম্ভ হবে সে আগে আসুকড়া?

মাহিঃ কে আসবে আবার? কথাটা বলার সাথে সাথে দেখি আমার সব কাজিনরা কাকে যেনো ধরে নিয়ে আসছো?

সামনে সীমা দাঁড়ানো ছিলো বলে দেখতে পারিনি।

সীমাঃ এই দেখ এসে পরেছে।

আমি সামনে তাকিয়ে দেখি নাবীল দাঁড়িয়ে আছে। আমার সাথে মেচিং করে নীল একটা পান্জাবী পরেছে। দেখতে কোন অংশে তাকে কম লাগছে না। নাবীল আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হয় আগে কখনো দেখেনি। ওর চোখে চোখ পড়ায়, আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। কেনো জানি আমি নাবীলের চোখে চোখ রাখতে পারিনা। যখনি উনার চোখের দিকে তাকাই মনে হয় এই চোখ দুটো হাজারো কথা বলতে চায়।

আমি ঠিক ওর সামনে বসেছি, আমার ছোট পরীটাকে আজ সত্যিই পরীর মতো লাগছে। কাচা ফুলগুলো ওর সৌন্দর্যকে আরো ফুটিয়ে তুলছে। মন তো চাইছে আজই ওকে নিয়ে যাই। আমিতো আজ পাগল হয়ে যাবো মাহি তোর প্রেমে। কি নেশা লাগাইলি তুই আমার মনে!

হঠাৎ মাহির কাজিনরা, ভাইয়া দেখা শেষ হলে শুরু করুন। কথা ছিলো সবার আগে মাহিকে মেহেদি আপনে দিবেন। তাই আমরা এতোক্ষণ ধরে আপনার অপেক্ষা করছি। আর আপনার বউতো মাথা খারাপ করে ফেলছে আমাদের, আরম্ভ করিনা কেনো? উপস্থিত সবাই হেসে একাকার।

আমারতো লজ্জায় মরে যেতে মন চাইতাছে। কি দরকার ছিলো এই নাবীলের বাচ্চার এখানে আসার। মাহি মনে মনে শতো শতো গালি দিচ্ছে নাবীলকে।

মাহির সাথে মা

নাবীল মাহির হাতটা ধরে মেহেদী দিয়ে মাহির হাতে ছোট করে নিজের নামটা লিখে দিলো। মাহিকে উদ্দেশ্য করে নাবীল বলে উঠলো, মেহেদির রংটা হয়তো দুদিন পরে চলে যাবে, কিন্তু তোর হাতে আমার নামটা সারাজীবন থেকে যাবে।

কথাটা বলার সাথে সাথে রুমের ভেতর সবাই চিৎকার দিয়ে উঠলো। ওওওওও করে।

আমার দুহাতে নাবীলের নাম লিখা হয়ে গেছে। এরপর মেয়েগুলো আমার হাতে মেহেদি দেয়া শুরু করলো।

আমার কোন রিয়েকশন নেই, আসলে কি বলবো কিছুই বুঝতাছি না?

নাবীলও সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। মা আর শফিক ভাই অনেক জোর করলো থাকার জন্য। কিন্তু বাসায় সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে, তাই চলে গেলো। মেহেদির অনুষ্ঠান ঠিকঠাক মতো শেষ হলো।

আমি ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে আছি। আর ভাবছি সবাই এতো খুশি তাহলে আমি কেনো খুশি হতে পারছি না। কি এমন বাধা কাজ করছে, যার কারণে আমি উনাকে মন থেকে মেনে নিতে পারছিনা।

এমন সময় মা আসলো হাতে খাবার নিয়ে।

মাহিঃ মা আমি খাবো না, বললাম তো।

আম্মুঃ একদম চুপ, আমি আজ নিজের হাতে তোকে খাইয়ে দেবো। আর তো পারবো না। কাল বাধে পরশু তুই চলে যাবি, তখন তো আমাদের কথা ভুলেই যাবি।

মাহিঃ কি বলছো মা, আমি তোমাদের কিভাবে ভুলবো? মার কান্না বন্ধ করার জন্য বললাম হইছে আর কানতে হবে না। আমাকে খাইয়ে দেওতো, আমার খুব ক্ষুধা পাইছে।

মা আমাকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো। খুব ক্লান্ত লাগছে, তাই শোবার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লাম।

আজ গায়ে হলুদ

সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো, বাড়ীর মানুষের চিল্লাচিল্লিতে। আমার তো মন চাইতাছে সবাইরে বাহির করে দিই। কেনো জানি, এখন আর ভালো লাগছে না এসব। একটু একা থাকতে চাই। কিন্তু এটা তো সম্ভব না আজ আর। মা নাস্তার জন্য ডাকলে, নাস্তা করে ঘরে ডুকে বসে ছিলাম আর সারাদিন বের হইনি। আজ আমার গায়ে হলুদ, মা তৈরি হবার জন্য পার্লারে পাটাতে চাইলে, রাগের মাথায় মাকে মুখ ফুসলি বলে ফেলি মা আমি বিয়ে করবো না। আর আমার মা আমাকে কতোগুলো লেকচার মেরে চলে গেলো। এ হলো আমার অবস্থা।

আমি রেডি হয়ে বসে আছি। আমাদের ছাদটা ভীষণ বড়। তাই গায়ে হলুদের আয়োজন সেখানেই করা হলো। শুধু আমার না নাবীলের হলুদ ও এখানে করা হবে। মানে বর ও কনের একসাথেই হলুদ আজ। আমাকে নিয়ে গেলো ছাদে অসংখ্য মানুষ ছাদে চারদিকে একবার চোখ ঘুড়িয়ে দেখলাম। হঠাৎ চোখ গেলো স্টেজ এর দিকে একটা ছেলে আমার দিকে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছে। এই চোখ দুটো আমি কখনোই ভুলিনা। এই চোখদুটো শুধু আমাকেই খুঁজে তা আমার অজানা নয়। আমাকে নাবীলের পাশে বসিয়ে দেয়া হলো। আমি আজও লজ্জায় চোখ তুলে সামনে তাকাতে পারলাম না। মন তো চাইছিলো এক দৌড় দিয়ে পালিয়ে যাই।

আজও সবার আগে আমাকে হলুদ দিলো, নাবীল। তার পর সবাই এক এক করে হলুদ দিয়ে হলুদের অনুষ্ঠান আমার জন্য শেষ হলো। মানে হলুদের পর আমাকে আর ছাদে এক মিনিটও রাখেনি, কড়া আদেশ ছিলো নাবীলের। কারণ নাবীল ও শফিক ভাইয়ের ফ্রেন্ডস সার্কেল আসবে। উনারা আজ ছোট একটা পার্টি করবে। তাই আমাকে আগেই ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। এদের মধ্যে কিছু ফ্রেন্ডসদের চরিত্রের সমস্যা আছে। তাই নাবীল চায় না এখন আমাকে কেউ দেখুক।

কি ভালোবাসা…আমার তো কান্নাও পাচ্ছে। চলবে….

পরের পর্ব- রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১৫

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *