বোকা জামাই – এর বাসর ঘরে ভালোবাসা: আমি দেখলাম ওর হাতে অনেক গুলো গোলাপ। কোনও কোনও টা শুকিয়ে আছে। এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। আমার বলদ জামাইয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। আর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে লাগলো।
পর্ব ১
আমি সেই তিন ঘন্টা ধরে সেজেগুজে বাসর ঘরে বসে আছি। আমার জামাইয়ের কোনও খোঁজ নেই। এখন রাত দুই টা বাজে। আমার দুই ননদ বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেছে। আর যাওয়ার সময় বলে গেছে ভাইয়া কে পাঠিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু তার কোনও খবর না।
মনে হচ্ছে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে আছে। এটাই স্বাভাবিক। এই কয়দিন বিয়ের ঝামেলায় সবাই কাহিল। কিন্তু আমার জামাই গেল কই। নতুন বউ আমি। সব কিছু ভাল করে চিনিও না। কি যে করি।
ওহ আপনাদের তো আমার পরিচয় টাই দিলাম না। আমার নাম জুথি। এবার এইস এস সি পরীক্ষা দিলাম। আমার তিন বোন। আমি সবার ছোট। বড় আর মেজ আপু নিজেদের পছন্দ মতোই বিয়ে করেছে।
এই জন্যই আমি আমার বাবার পছন্দ করা ছেলে কে বিয়ে করেছি। জীবনে অনেক ছেলে কেই ভাল লেগেছে। কিন্তু ভাল বাসিনি। আমি সব সময় চেয়েছি বাবার পছন্দ করা ছেলে কেই বিয়ে করবো। আমার জামাই একটা কলেজের প্রফেসার।
খুবই সাদাসিধে মানুষ। আমি যেমন তার ঠিক উল্টো টা। বান্ধবী দের কাছে শুনতাম। ছেলে রা বেশি লেখাপড়া করলে নাকি দিন দিন বলদ হয়ে যায়। আমার জামাই টা ও সেইরকম।
আর এই বলদ কে মানুষ করার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন আমার শশুড় মশাই।
শুরু থেকেই বলি,
একদিন বিকালে বসে বসে গল্পের বই পড়ছি। এমন সময় বাবা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো, আমার মা কে?
কই গো জুথির মা!
কি হলো আবার?
আজকে রাস্তায় একটা ছেলে কে দেখলাম। অনেক ভাল। গরিব মানুষের অনেক উপকার করছে। আমার ভিষন পছন্দ হয়েছে ছেলে টাকে। আমার এক বন্ধুর পরিচিত। বন্ধুর মুখে সব খোঁজখবর নিয়ে জানলাম। খুবই ভাল পরিবার। দুই বোন এক ভাই। ছেলে টা প্রফেসার।
দেখতে শুনতে খুবই ভাল। জুথির সাথে ও ভাল মানাবে। তাই আমার ওই বন্ধু কে দিয়ে সব খোঁজ খবর নিতে পাঠালাম।
কিন্তু জুথি কি এখন বিয়েতে রাজি হবে?
হবে মানে একশো বার হবে। আমি আমার এই মেয়ে টার উপর ভরসা রাখি।
সে দিন বাবার এই কথা শুনে পুরাপুরি ভদ্র মেয়ে সেজে গেলাম। কি আর করার। সব ভাল লাগার মানুষ গুলো কে ভুলে গেলাম। এক সপ্তাহ পরেই আমাকে দেখতে এলো। আমাকে তাদের পছন্দ হলো। ছেলে আর আমাকে একটা রুমে পাঠানো হলো।
আমার দুই দোলাভাই দের আগ্রহ তে। আমার থেকে আমার দুই দুলাভাই বেশি খুশি। কেন বুঝলাম না। আমি ছেলের সামনে বসে আছি। কিন্তু বুঝতে পারছি না। আমি ছেলে দেখতে এসেছি। নাকি ছেলে আমাকে দেখতে এসেছে।
সে চুপ চাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার মনে হচ্ছে কি যেন দেখছে মনোযোগ সহকারে। আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। সে ও একটু নড়েচড়ে উঠলো। এবার দেখলাম ঘরের সব কিছু খুঁটে খুঁটে দেখছে। তাকে যেন বলা হয়েছে ঘরের সব কিছু দেখতে।
আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আমার আবার এই একটা দোষ। অল্প তে রেগে যাই। এবার আমি তাকে বললাম,
আপনার ঘরের সব কিছু দেখা শেষ হয়েছে?
ইয়ে না মানে!
~ কি মানে মানে করছেন?
~ আমাকে কিছু জিগ্যেস করুন?
~ ওহ তাইতো! আমার নাম মাহদি। আপনার নাম জানতে পারি?
~ নাহ পারেন না।
~ ওহ ঠিক আছে। সমস্যা নেই। পরে জেনে নেব।
এই টুকু কথা বলে আবার চুপ করে আছে। এবার দেখলাম পকেট থেকে মোবাইল বের করে অযথা টিপাটিপি করছে। আমার মেজাজ এবার আরও গরম হয়ে গেল। আমি বললাম,
~ আর কিছু বলবেন? (আমি)
এবার ও নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
~ আপনি কাউকে ভালবাসেন?
আমি অবাক হলাম কথা টি শুনে। আমার বলদ জামাই বলে কি। আমি কিছু বলার আগে বললো,
~ সমস্যা নেই। বিয়ের আগে সবাই কম বেশি প্রেম করে। বিয়ের পরে কি করে সেই টাই দেখার বিষয়।
সেই দিন আমি আমার জামাইয়ের প্রেম এ পড়ে গিয়ে ছিলাম। কতো ভাল একটা মানুষ।
যাওয়ার আগে আমার শশুড় মাথায় হাত দিয়ে বলেছিল। জুথি মা! আমার ছেলে টা ছোট বেলা থেকে লেখা পড়া ছাড়া কিছু বোঝেনি। ওর কোনও বন্ধু ছিল না।
সারা জীবন শুধু বই পড়ে কাটিয়ে ছে। এই জন্যে একটু অন্য রকম। তুমি ওকে ঠিক করো। আজ থেকে ওর দায়িত্ব তোমাকে দিলাম। আমি চুপ করে ছিলাম। এটাই ছিল আমার নিরব সম্মতি।
সবাই চলে যাওয়ার পর দুই দুলাভাই ধরলো।
~ কি গো শালিকা কেমন লাগলো?
~ ঘোড়ার ডিমের মতো।
~ কিন্তু তোমাদের এতো আগ্রহ কেন শুনি?
~ কি যে বলো তুমি আমাদের একমাত্র শালি। তোমার সব ভাল মন্দ আমাদের ই দেখতে হবে না।
~ যার যার বউয়ের খোঁজ খবর নেও বুঝলে।
~ এখনই এই। পরে আমাদের ভুলে যাবে বুঝতে পারছি।
এই বলে দুজনেই খুব হাহাসাহাসি করতে লাগলো। আমি সরে গেলাম। না হলে আরো কতো কি শুনতে হবে কি জানি।
এক মাসের ভিতর আমার বিয়ে হলো। আর আমি সেই তিন ঘনটা ধরে বসে আছি। জামাইয়ের কোন খোজ নেই।
হঠাৎ কারো শব্দে চমকে উঠলাম। আমার জামাই ঘরে ঢুকছে। আমি ঘোমটা টা ভাল করে টেনে নিলাম। শুনেছি বাসর ঘরে রাগ করতে নেই। তাই আমি খুশি মনেই আছি। আমি ঘোমটার ভিতরে বুঝতে পারছি দুরে দাড়িয়ে আছে। আমার মনে হয় ভাবছে কি করবে। আমি নিজেই খাট থেকে নেমে সালাম করলাম। ও লজ্জা পেয়ে খাটে উঠে বসলো। আমি কি লজ্জা পাব। আমার জামাই নিজেই লজ্জায় লাল। এবার আমাকে বললো,
~ আসলে আমি দুঃখিত।
~ কেন?
~ এই যে আপনাকে বসিয়ে রেখে ছি বলে।
আমি একটা বই পড়েছিলাম। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারি নি।
~ ওহ আচ্ছা।
~ আপনি এখনও জেগে আছেন কেন?
ঘুমিয়ে পড়ুন। অনেক রাত হলো।
ইসসসস কতো সপ্ন ছিল বাসর রাত নিয়ে। সব মাটি হলো। কি বলবো এই হাদারাম টাকে!
পর্ব ২
আমার ওর কথা শুনে ভিষন রাগ হলো। আমি রাগের সাথে ওর দিকে তাকালাম। ও কিছুটা মিনমিন করে বললো,
~ আসলে আপনার অনেক কষ্ট হয়েছে তো এই জন্য ঘুমাতে বললাম। যদি বলেন তাহলে আমি আপনার সাথে সারারাত বসে থাকবো।
~ তোমার সারা রাত বসে থাকতে হবে না। আমি যা যা বলি মন দিও শোন। ঠিক আছে আমার বাবুটা।
ও মনে হলো একটু লজ্জা পেল। তারপর ও মাথা কাত করে সম্মতি জানালো। আমি বললাম,
~ প্রথম কথা হলো আমাকে তুমি করে বলতে হবে। প্রতি সপ্তাহে শপিং করতে নিতে হবে। এবং ছুটির দিনে ঘুরতে নিতে হবে। আমার জন্য প্রতি দিন গোলাপ ফুল আনতে হবে। আমি রাগ করলে রাগ ভাঙাতে হবে। কোনও কিছু তে বেশি মাতব্বরি করা যাবে না।
কোনও বিষয় নিয়ে অযথা চেচামিচি করা যাবে না। ঠিক আছে বাবু।
~ কিন্তু আমি যে কখনও এই সব করি নি। আমার অভিজ্ঞতা নেই।
~ তাহলে আগে একটা বিয়ে করে অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাকে বিয়ে করতে?
~ ধুর কি যে বলেন। দুঃখিত কি যে বলো।
এই তো আমার লক্ষী জামাই। আর একটা কথা।
~ যতো সময় ঘরে থাকবে কোনও বই যেন হাতে না দেখি। তাহলে সব বই ছিড়ে ফেলবো।
এই সব কথা বলার সময় অনেক হাসি পাচ্ছিল। ওর মুখ টা দেখে। কারণ আমি চাই আমার জামাইকে বদলে দিতে।
এবার আমি ওকে বললাম,
~ ঠিক আছে এখন ঘুমিয়ে পড়ি।
ও বললো,
~ কিন্তু আমার পাশে কেউ শুলে যে আমার ঘুম হয় না।
~ এখন থেকে ঘুমাতে হবে। কারণ তোমার বউ তো আর অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাবে না।
এই টাই তাঁর রুম। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
ও আমার থেকে কিছু টা দুরত্বে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। আমি ও ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার যখন ঘুম ভাঙলো দেখি অনেক বেলা হয়ে গেছে। ও আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। কখন আমার কাছে এসেছে টের পাইনি। আমি রাতের কথা গুলো ভাবতে লাগলাম।
হঠাৎ দেখলাম ওর ঘুম ভেঙেছে। আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম। দেখি কি করে। আমি বুঝতে পারলাম ও ভিষন লজ্জা পাচ্ছে। আমি ও কিছু বলছি না। অনেক সময় এই ভাবেই শুয়ে রইলাম। ও নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে ওয়াশ রুমে গেল।
আমি শুয়ে রইলাম। ও ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে কি বলবে বুঝতে পারছে না। আপনি বলবে নাকি তুমি বলবে। অবশেষে মুখ খুললো আমার জামাই। আমাকে বললো,
~ অনেক বেলা হয়েছে। মা ডাকছে নাসতা করতে।
আমি এবার ওর দিকে তাকালাম। বললাম,
~ আমার নাম নেই কোনও?
~ ইয়ে না মানে!
~ ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি।
আমি ওয়াশ রুম থেকে বের হয়েছে এমন সময় আমার দুই ননদ এলো আমাকে অনেক আগ্রহের সাথে বললো,
~ ভাবি! রাতে ঘুম কেমন হলো?
~ সে আর বলতে। তোমার ভাইয়া যা রোমান্টিক। কি ভাবে রাত কেটে গেল বুঝতে পারলাম ই না।
ওরা মনে হয় এই উওর আশা করেনি। ভেবেছিল আমি হয় তো খুব দুঃখ প্রকাশ করবো। কারণ ওরা যানে ওদের ভাই কতোটা হাদারাম। কিন্তু আমি কিছুই বলবো না।
আসলে একটা জিনিস বুঝে আসে না এই ননদ দের সব বিষয়ে এতো ইন্টারেস্ট কেন থাকে ভাবিদের উপর। ওদের সব বিষয়ে নাক গলানো চাই চাই।
আমি ওদের সাথে নাস্তার টেবিলে গেলাম আমাকে দেখে শশুড় শাশুড়ি খুব খুশি হলো। শশুড় বললো,
~ এ সো মা আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
আমি তাদের দুজন কে সালাম করলাম। আমার নতুন জীবনের প্রথম সকাল। সবাই নাস্তা করছি। এমন সময় আমার জামাই বললো,
~ মা! কয়েক দিন কলেজে যাওয়া হয় না। তাই ভাবছি আজকে যাব।
~ সে কি কথা আজকে বিয়ের পরের দিন। কেউ বাইরে বের হয়। আর আগামী কাল বউয়ের বউ ভাত। সবাই আসবে তোর শশুড় বাড়ি থেকে তোদের নিতে। সে খানে কাল যাবি। এক বারে কিছুদিন পর থেকে কলেজে যাস।
~ তোর মা ঠিকই বলেছে। এখন এতো তাড়া কিসের। কিছু দিন রেস্টনে। তারপর যাবি।
দুই ননদ মুখ টিপে হাসছে। আমি টেবিলের নিচ থেকে ওর পায়ে আমার পা দিয়ে জোড়ে চিমটি কাটলাম। ও আহ করে উঠলো। সবাই বলছে কি হলো কি হলো। ও বললো,
~ ইয়ে না মানে পোকা পোকা কামরে ছে।
আমি মনে মনে বললাম,রুমে চলো তোমাকে মজা দেখাবো। বিয়ের পরের দিন কলেজ।
ও রুমে আসতেই ওর কলার চেপে ধরলাম। আর রাগের সাথে বললাম,
~ বিয়ের পরের দিন কলেজে যেতে কেন চাইছিলে?
~ আসলে বাসায় বসে কি করবো তাই ভাবলাম লাইব্রেরি তে গিয়ে বই পড়লে ভাল লাগবে।
আমার ওর কথা শুনে ভিষন রাগ হয়। বাড়িতে নতুন বউ রেখে ও যাবে লাইব্রেরি তে। কি আশ্চর্য। আমি ওকে রাগানোর জন্য বললাম,
~ নাকি কলেজের সুন্দরী মেয়ে দের দেখতে যাবে।
~ ছি ছি! কি বলো এই সব। আমি কখনও কোনও মেয়ে দের দিকে চোখ তুলে তাকাইনা।
~ এই কথা টা যেন সব সময় মনে থাকে বুঝলে আমার ময়না পাখি।
ও আমার কথা টা শুনে হেসে দিল। কি সুন্দর হাসি। যে হাসি দেখলে বার বার প্রেম এ পড়তে ইচ্ছে করে।
পরদিন….
আমার বউ ভাতের অনুষ্ঠান শেষ হলো। আমার শশুড় অনেক বড়ো করে বউ ভাতের আয়োজন করেছেন। আমার বাপের বাড়ি থেকে সবাই এসেছে।
এখন আমি বাবার বাড়ি যাবো। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি তে উঠলাম। কিন্তু আমার জামাই কে দেখছি না। সবাই বলছে ও কই। আমি বললাম,এক সাথেই তো বের হলাম। আমার বড়ো দুলাভাই বললো,
~ আমি দেখছি কোথায়।
একটুপর দেখলাম আমার জামাই আসছে। হাতে কতো গুলি বই নিয়ে। আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আপুরা বলছে
~ কি রে জুথি। তোর জামাই এতো গুলি বই দিয়ে কি করবে?
আমি রেগে বললাম
~ গাড়ি তে সবাই কে পড়তে দেবে।
ও আমার পাশে বসে দাঁত কেলিয়ে বললো,
~ জুথি! বই গুলো দারুণ পড়তে। তাই নিয়ে এলাম। তোমাদের বাসায় বসে পড়তে পারবো। তুমি রাগ করোনা। একা একা যদি সময় না কাটে তাই নিয়ে এলাম।
সবাই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
আমি কি করবো বুঝতে পারছি না হাসবো নাকি কাদবো। ওকে বাসায় যেয়ে উচিত শিক্ষা দিতে হবে।
গাড়ি এগিয়ে চললো আমার বাবার বাড়ির দিকে
পর্ব ৩
আমার জামাই গাড়িতে উঠেই বই নিয়ে পড়তে বসলো। একটু পর পর চোখের চশমা ঠিক করছে আর বই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। কেমন যেন কোনও প্রতিযোগিতায় যাচ্ছে।
সেইখানে তাকে বই পড়ে শুনাতে হবে। আমার ইচ্ছে করছিল বই আর চশমা দুইটাই গাড়ি থেকে ফেলে দিতে। কিন্তু আমার বাবার সাধের জামাই। তাই নিজেকে শান্ত রাখলাম। এর মজা পরে বোঝাবো।
বাসায় যেতেই মা নাস্তা তৈরি করতে লেগে গেল। আমি আপুদের সাথে গল্প করছি। আর আমার দুই দুলাভাই আমার জামাই কে নিয়ে গল্পে মেতে উঠলো। আমি বুঝতে পারছিলাম দুলাভাইরা বেশি সুবিধা করতে পারবে না আমার জামাই এর সাথে। কারণ ও কথা বলে কম। দশটা বললে একটা বলে।
আমার মা বললো,
~ জুথি এই নে। এই গুলি জামাইদের খেতে দে।
আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম। মা সরে যেতেই আমার হাদারাম বর টার শরবতের ভিতরে ভাল করে লবন মিশালাম। এবার দেখি কি করো।
দুই দুলাভাইকে শরবত দিলাম। আমার জামাইকে ও দিলাম। দুলাভাইয়েরা চলে গেল। এবার আমার জামাই শরবত মুখে দিতে পারে কি থু দিয়ে ফেল দিল। আর আমাকে বললো,
~ জুথি! শরবতের ভিতরে মনে হয় চিনির বদলে লবন দিয়েছো। তাই এমন লাগছে।
আমি বললাম
~ আমি ইচ্ছে করে দিয়েছি বুঝলে।
ও আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ওর মনে হচ্ছে আমি হয়তো পাগল টাগল হয়ে গেছি। আমি বললাম,
~ আচ্ছা তুমি এমন কেন?
~ কেন আমি আবার কি করলাম? তুমি যা বলছো আমি তো তাই শুনছি।
~ ঘোড়ার ডিম শুনছো। কোথায় দেখছো নতুন জামাই শশুড় বাড়িতে এক গাদা বই নিয়ে আসে পড়তে?
~ ইয়ে না মানে! আমি ভাবলাম একা একা কি করবো। তাই নিয়ে এলাম। ঠিক আছে তুমি বললে আর পড়বো না।
এই বলে ও মন খারাপ করে বসে থাকতো। আমার নিজেরই খারাপ লাগতো ওর চেহারা দেখলে। পরে আবার বলতাম
~ আচ্ছা ঠিক আছে। মাঝে মাঝে পড়তে পারো।
ও আমার কথা শুনে খুব খুশি হয়ে সাথে সাথে আবার বই নিয়ে পড়তে বসতো।
আমি মাঝে মাঝে অবাক হতাম একটা মানুষ কি করে এতো বই পাগল হয়।
রাতে আমি ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। পাশে দেখলাম আমার বর নেই। আমি মোবাইলের আলো জালালাম। দেখলাম কোথাও নেই। কই গেল তাহলে!
আমি আমার বারান্দায় গেলাম দেখলাম ও দাড়িয়ে আছে। আমি ওকে বললাম,
~ কি হলো এতো রাতে না ঘুমিয়ে কি করছো?
ও হঠাৎ চমকে উঠে বললো,
~ ওহ তুমি? আসলে ঘুম আসছে না তাই এখানে এসেছি।
আমি ওর আরো কাছে গিয়ে ওর বুকে মাথা দিয়ে বললাম,
~ কেন ঘুম আসছে না আমার বাবুটার?
ও বললো,
~ আসলে বাসা ছেড়ে কোথাও কখনও ঘুমাইনিতো তাই।
আমার ওর এই কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। এখন যদি রাত না হতো ওকে জোর করে ওদের বাড়ি পাঠিয়ে দিতাম। যতো সব বাচ্চাদের মতো কথা।
ইচ্ছে করছে এক ঘুসি দিয়ে নাক ফাটাতে। এখন সে নতুন বউ কে নিয়ে রোমাঞ্চ করবে তা নয়। এখানে এসে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
বাবা যে কেন আমার সাথে এই করলো। আমি এখন এই হাদারাম টাকে কি করে মানুষ করবো।
যাইহোক,
ওকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললাম,
~ চলো ঘুমাবে। কাল সকালে চলে যাবো ঠিক আছে!
ও কিছু না বলে শুয়ে পড়লো।
এই ভাবে ভালই কাটছিল আমার খুনসুটি সংসার। এর মধ্যে পুরোপুরি নিজেকে সংসারের কাজে জড়িয়ে নিলাম।
একদিন …..
আমার জামাই কলেজে গেছে। ওর একটা দোষ কখনও ফোন মনে করে নিবে না। আমি বসে বসে গল্পের বই পড়ছি। এমন সময় ওর ফোনে একটা মেসেজ আসলো।
আমি এতো টা গুরুত্ব দিলাম না।একটু পর আবার মেসেজ আসলো পরাপর দুইটা। আমি মনে মনে চিন্তা করলাম হয় তো দরকার এ কেউ বার বার মেসেজ দিচ্ছে। ফোন টা আমি কাছে নিলাম। আর মেসেজ গুলি বের করলাম। মেসেজ গুলি দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। মেসেজ গুলি এই রকম ছিল।
মিস করছি জান কতো দিন হলো আমার সাথে দেখা করো না নাকি নতুন বউ পেয়ে আমাকে ভুলে গেছ।
আমার গুলি পড়া শেষ হতে না হতেই ওই নম্বর থেকে কল আসলো। আমি রিসিভ করতেই বললো,
~ সেই কখন থেকে মেসেজ করছি কোনও রিপলাই দিচ্ছ না। নাকি বউ কাছে আছে?
আমার মেজাজ পুরাপুরি গরম হয়ে গেল। আমি রাগের সাথে বললাম,
~ কে আপনি কাকে ফোন করছেন? আর কি সব আজেবাজে কথা বলছেন?
~ এই টা মাহদির ফোন না? ওকে একটু দিন না দয়া করে।
~ আপনি কে সেইটা আগে বলুন। আমি তার স্ত্রী। আর কি সব কথা বলছেন?
~ ঠিক ই বলছি। মাহদির সাথে আমার দুই বছরের সম্পর্ক। সে শুধু আপনাকে বিয়ে করেছে বাবা মায়ের কথা রাখতে।
~ আমি আপনার কথা বিশ্বাস করি না
~ আপনি না বিশ্বাস করলে আমার কিছুই করার নেই।
~ আপনি কে সেইটা আগে বলুন?
~ আমি কে সেই টা না হয় মাহদির কাছে জেনে নিবেন।
এই বলে মেয়ে টা ফোন কেটে দিল। ওর কথা শুনে আমার সমস্ত শরীর বেয়ে তরতর করে ঘাম পড়তে লাগলো।
পর্ব ৪ (অন্তিম)
আমার চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেল। এমন কথার জন্য আমি কোনও দিন প্রস্তুত ছিলাম না। আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না মেয়েটার কথা। আমি এই সব ভাবছি ঠিক এমন সময় আমার বর এসে বললো,
~ জুথি! আমার ফোন টা ভুলে বাসায় রেখেগেছি। কতো দরকারি একটা কল আসার কথা ছিল। কেউ কি ফোন করেছিল?
~ হুম করেছিল একটা মেয়ে।
~ কি বলছো পাগলের মতো। একটা মেয়ে ফোন করেছিল? কি বললো, মেয়ে টা?
~ বললো, তোমাকে অনেক মিস করছে। তুমি নাকি তার জান তোমাকে দেখা করতে বলেছে।
~ তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে। আমি আবার কার জান হবো।
এই বলে ও আমার হাত ধরলো। আমি ওর হাত ঝাড়া দিয়ে বললাম,
~ আমাকে মোটেই সপর্শ করবা না। তোমাদের দুই বছরের সম্পর্ক এইটা ও বলেছে।
~ আরে কেউ দুষ্টামি করে হয়তো বলেছে। বাদ দাও তো এই সব। চলো তোমাকে নিয়ে আজকে ঘুরতে যাবো।
~ এই সব নিয়ে কেউ দুষ্টামি করে না। আমি আজই চলে যাবো। তুমি থাকো তোমার ওই মেয়ে কে নিয়ে।
এই বলে আমি ব্যাগ গোছাতে লাগলাম। ও আমাকে বললো,
~ তুমি কিন্তু সামান্য জিনিস নিয়ে বেশি করছো।
~ এই টা তো তোমার কাছে সামান্য জিনিস হবেই। তুমি তোমার বাবা মায়ের কথা রাখতে আমাকে বিয়ে করেছো।
~ তুমি বিশ্বাস করো তুমি ছাড়া আর কোনও মেয়ে আসেনি আমার জীবনে।
সে দিন আমার রাগ চরম পৌছে গেছিলো। আমি কারো কথা শুনিনি। আমাকে সবাই বলেছে আমার কোথাও ভুল হচ্ছে। কিন্তু আমি কারো কথা না শুনে বাবার বাড়িতে চলে আসি। বাবা মা আমাকে দেখে অবাক। আমাকে বললো,
~ কি রে মা! একা এলি যে জামাই কোথায়?
~ ও আসেনি।
~ কেন?
~ ওর ছুটি নেই।
আমাকে দেখে বাবা মায়ের ও কেমন যেন লাগছে।বাবা আমার কাছে এসে বললো,
~ কি হয়েছে মা তোর? জামাইয়ের সাথে কোনও ঝামেলা হয়নি তো?
~ বাবা আমার এখন ভাল লাগছে না। পরে কথা বলবো।
আমি এই বলে আমার রুমে চলে গেলাম। এর মধ্যে মাহদির ফোন আসলো। আমি রাগেতে ফোন বন্ধ করে রাখলাম। এপর ও আমার বাবা মা কে ফোন দিয়ে সব বলে। বাবা ওকে বলেছিল
~ তুমি কোনও চিন্তা করো না। ওর একটু রাগ বেশি। কয়েক দিন পর আমি নিজে ওকে বুঝিয়ে তোমার কাছে দিয়ে আসবো।
আমার শশুড় শাশুড়ি কে ও বাবা তাই বলেছিল।
এই ভাবে কয়েক দিন কেটে গেল। আমার কেমন জানো ওর জন্য কষ্ট হতে লাগলো। ওর শূন্যতা আমি প্রতিটা মূহুর্ত অনুভব করতে লাগলাম। ওকে যে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি।
তাইতো সেই দিনের কথা গুলি আমি কিছুতেই মানতে পারছিলাম না। কিন্তু ও তো একবার হলেও আমাকে নিতে আসতে পারতো। আমি বলেছিলেন আমার কাছে কোনও দিন তুমি আসবে না। ও ঠিক তাই করলো।
আমার বোকা জামাইটা আমার রাগ টাই শুধু দেখলো। আর ওকে কতোটা ভালোবাসি এইটা বুঝলো না।
একদিন আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আমাকে জলদি করে ডাক্তারখানা নেওয়া হলো। ডাক্তার বললো, আমি মা হতে চলেছি। সে দিন এই খবর শুনে সবাই অনেক খুশি। বাবা আমার শশুড় বাড়িতে খবর দিল। সবাই খুব খুশি।
কিন্তু আমার দিন দিন ওর উপরে অভিমান টা বেশি হতে লাগলো। আমি ঠিক করলাম এই খবর টা ওকে জানাবো না। ও একবার তো এসে আমার রাগ ভাঙাতে পারতো।
আমি একদিন বিকেলে ছাদে বসে আছি। ওর কথা ভিষন মনে পড়ছিল। আমি সব কিছু বসে বসে ভাবছিলাম। ও কখন যে আমার পিছনে এসে দাড়িয়েছে আমি কিছু টের পাইনি। হঠাৎ কারো স্পর্শে চমকে উঠলাম। দেখলাম ও দাড়িয়ে আছে
ওকে দেখে আমার সমস্ত অভিমান এক সাথে জড়ো হলো। আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। ও বললো,
~ নিজে কষ্ট পাচ্ছো আমাকে ও কষ্ট দিচ্ছ। কিন্তু আমার এখন একটু ও কষ্ট নেই। যখন শুনেছি আমি বাবা হতে চলেছি। সেই থেকে আমি কতোটা খুশি তোমাকে বোঝাতে পারবো না।
আমি কিছু না বলে চুপ করে আছি। ও আবার বললো, সে দিন তুমি আমার কথা না শুনে চলে এসেছো। পরে একবার ও ফোন ধরোনি।
সে দিন আমার একটা কলেজ জীবনের বান্ধবী মজা করে এমন করেছিল। পরে ও সব জানতে পেরে অনেক অনুতপ্ত হয়েছে। আমাকে বলেছে তুমি ফিরে গেলে তোমার কাছে ক্ষমা চাইবে। আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।
~ চলো তোমাকে নিতে এসেছি। সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
এবার আমি মুখ খুললাম।
~ এতো দিন তাহলে নিতে আসো নি কেন?
ও বললো,
~ নিজেকে পরিবর্তন করছিলাম। তুমি যেই গুলি অপছন্দ করো সেই গুলি আর করি না।
এই বলে ও কতো গুলি গোলাপ বের করে বললো,
~ এই দেখো জুথি তুমি বলতে না রোজ তোমাকে একটা করে গোলাপ দিতে হবে। তুমি চলে আসার পর ও রোজ তোমার জন্য আমি একটা করে গোলাপ এনেছি।
আমি দেখলাম ওর হাতে অনেক গুলো গোলাপ। কোনও কোনও টা শুকিয়ে আছে। এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। আমার বলদ জামাইয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। আর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে লাগলো।
ও আমাকে বললো,
~ জানো সেইদিন ই আমি আমার ফোন টা ভেঙে ফেলেছিলাম।
~ কেন?
~ ওই ফোন টাই তো তোমাকে আমার কাছ থেকে এতো দিন দুরে সরিয়ে রেখেছে।
আচ্ছা তুমি বললে নাতো আমাদের নতুন অতিথি কেমন আছে?
~ সেই টা তুমি না হয় নতুন অতিথির কাছে জিগ্যেস করো।
আমি এই কথা বলতেই ওর বুকের মাঝে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~ তোমাকে আমি সারা জীবন এই ভাবে কাছে পেতে চাই।
আমি ও হেসে দিয়ে বললাম
~ অবশেষে আমার বোকা বর চালাক হলো তাহলে।
ও জোরে হেসে দিয়ে বললো,
~ তুমি চাইলে আমি সারা জীবন বোকা হয়ে থাকতে ও রাজি।
লেখা – অধরা জেরিন
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “বোকা জামাই – এর বাসর ঘরে ভালোবাসা” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – আপুর বান্ধবী যখন বউ – Heart Touching Bangla Love Story