বিয়ে – অসাধারন প্রেমের গল্প: কোমড়ে হাত গুজে চোখদুটো বড়বড় করে তাকিয়ে আছি তাদের দিকে। তাদের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। একজনের তো হাত পা কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেছে।
পর্ব ০১
- ওও মাগো, মরে গেলাম। কেউ আছে? এই ছেলে আমায় মেরে ফেললো গো। কেউ বাঁচাও। বাঁচাও! বাঁচাও! বলে চিৎকার জুড়ে দিলাম আমি।
- এই আলফা, বোন আমার চুপ যা! এইভাবে চিৎকার করিস না। মেরে ফেলবে আমার বাপ।
- সেটাই তো চাই। সালা ধপ বাজ কোথাকার। প্রেম করছো বিয়ে করছো না। বাবা আমার বিয়ে দিতে উঠে পরে লেগেছে। বাবা যদি আমার বিয়ে দেয় না তাহলে আমি, আমি বিষ খাবো, গলায় দড়ি দেবো, বলে রাখলাম তোমায়। আর চিঠিতে লিখে দিয়ে যাবো তোমার জন্য মরেছি। চোখ মুখ ছোট করে কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম আমি।
- মহা মুশকিল তো বিয়ে করতে কিছু করা লাগে না? এইভাবে হুট করে বিয়ে করে ফেলা যায়?
- চুপপ করো। তোমার আর কিচ্ছু করা লাগবে না। আমাকে তুমি চিৎকার করতে দাও। বাঁচাও! বাচাও!
আমার চিৎকারে বাড়ির সকলে ছুটে চলে আসলো। ফালাক ভাই কেবলার মতো মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বুঝছে তাকে আমি বিপদে ফেলার জন্য চিৎকার করেছি।
সবাইকে দেখে আমি এবার পায়ে হাত রেখে কান্না জুড়ে দিলাম। কেঁদে কেঁদে বললাম।
- ওহ চাচ্চু, ওহ কাকিমণি দেখও না তোমাদের ছেলে ধাক্কা মেরে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে আমায়। বলে কিনা আমি তোর থেকে বড় তাই আমি আগে বিয়ে করবো। আগে বিয়ে করে বংশের মুখ উজ্জ্বল করবো।
- হায়! হায়! মেয়েটাকে এইভাবে ফেলে দিলি তুই? একটু পর পাত্র পক্ষ চলে আসবে কিভাবে তাদের সামনে নেবো মেয়েটাকে। আলফা মা খুব কি ব্যাথা করছে? উঠতে পারছিস না? কাকিমণি আমাকে ধরে উঠানোর চেস্টা করছে। আমি আহ্ বলে চিৎকার দিয়ে আবার বসে পরছি। পায়ে হাত দিয়ে আরও জোড়ে চিৎকার দিয়ে কান্না করছি।
চাচ্চু গিয়ে ফালাক ভাইয়ের গালে কষিয়ে দিলো এক চর। ফালাক ভাই গালে হাত রেখে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চাচ্চুর মুখের দিকে।
- বড় হচ্ছো আর এতোটা বেয়াদব হচ্ছো তুমি? বিয়ে করবা? বংশের মুখ উজ্জ্বল করবা? একটা পয়সা তো উপার্যন করতে পারো না। বাপের টাকায় বসে বসে খাও। আবার বড় বড় কথা।
- বাবা আমি!
- চুপপ! একদম চুপপ! চাচ্চু কোনো কথা শুনবা না ফালাক ভাইয়ের। যার জন্য আজ আমি পাত্র পক্ষের সামনে যেতে পারবো না ভাঙা ঠ্যাং নিয়ে। বলেই ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।
- আলফা এবার কিন্তু বেশি বারাবাড়ি করছিস তুই। রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ফালাক ভাই আমার দিকে।
- ওহ চাচ্চু দেখও আবার বলে কিনা আমি বেশি বারাবাড়ি করছি। চোখ রাঙানি দিচ্ছো? আমাকে ফেলে দিয়ে আবার বড় বড় কথা তাই না? চাচ্চু দাও কষিয়ে আরেকটা চর।
বাবা পাশ থেকে বলে উঠলো তাহলে আমি আজ পাত্র পক্ষকে আসতে বাড়ন করে দিই? এই অবস্থায় মেয়েটাকে দেখলে তো পছন্দ হবে না তাদের। সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ডায়েরী পেজে আসবেন।
মা বাবার কথায় সম্মতি জানিয়ে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ তাই করও। এতো ভালো ছেলে হাতছাড়া করা যাবে না।
ফালাক ভাইয়ের ছোট দুই বোন রুমি, ঝুমি বাইরে খেলছিলো। লাফাতে লাফাতে ভেতরে এসে আমাকে ফ্লোরে পরে এভাবে কাঁদতে দেখে এগিয়ে এসে বলল,
- আলফা আপু ভাইয়া ফেলেছে বুঝি?
আমি হালকা মাথা ঝাকিয়ে বললাম হুমমমম। ওরা দুজন মুচকি হেসে আমার হাতটা ধরে বলল,
- চলো রুমে নিয়ে যায়।
আমাকে উঠাতে কানের কাছে এসে দুজনে বসে বলল, দেখেছো প্লানটা কেমন কাজে দিয়েছে?
আমি ফিসফিসয়ে বললাম, থ্যাংক ইউ। ফালাক ভাই আড়চোখে আমাদের দেখছে। মনে হচ্ছে সুযোগ পেলে এখনই গিলে খাবে।
রুমে এসে আমরা তিনজনে গান বাজিয়ে ধুমচে ড্যান্স করছি। ফালাক ভাই হুট করে রুমের মধ্যে ঢুকে পরল। রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। একবার রুমি, ঝুমির দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার আমার দিকে।
রুমি, ঝুমি ভয় ভয় দৃষ্টিতে দুজন দুজনের হাতটা শক্ত করে ধরে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ফালাক ভাই এগিয়ে এসে দুজনের চুলের বেনি টেনে ধরল।
অমনি দুজনে ভ্যা করে ফেলফেলিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিলো। সাথে সাথে ফালাক ভাই দুজনকে ছেড়ে দিয়ে বলল, চলে যা এখান থেকে। দুজনে একটা মুখ উজ্জ্বল হাসি দিয়ে লাফাতে লাফাতে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। ওরা বেড়িয়ে গেলে রাগি দৃস্টিতে ফালাক ভাই আমার দিকে তাকায় এবার। আগাতে আগাতে আমাকে বিছানার কাছে নিয়ে আসে।
আমি বিছানার উপরে বসে পরলে মোবাইলে টিপ লেগে নাগিন গানটা বেজে ওঠে। আমি একটা হাসি দিয়ে ফোনটা উঠিয়ে ফালাক ভাইয়ের মুখের সামনে ধরলাম। দাঁত কেলিয়ে বললাম,
- ড্যান্স করবা ফালাক ভাই? নাগিন ড্যান্স?
ফালাক ভাই আরও বিরক্ত হয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেললো। আমার হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরে মুখটা ঘুরিয়ে গাল দেখিয়ে বলল,
- চর খাইয়েছিস তুই আমায়। কথাটা বলে ছেড়ে দিয়ে আমার পাশে বসলো।
- বেশ করেছি চর খাইয়েছি। আরও খাওয়াবো চর। সয়তান একটা। আমায় বিয়ে করে না। খালি নাটক করে।
ফালাক ভাই চুপপ করে আছে। আমি টেনে ধরলাম। নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম,
- আমার ফাইনাল ইয়ার চলছে। এতো কম বয়সে বুড়ি হয়ে যাচ্ছি না বলো? মা বলে এখন বিয়ে না করলে চেহারা নস্ট হয়ে যাবে। তুমি কি চাও আমার চেহারা নস্ট হয়ে যাক?
- এসব ফালতু কথা। বিয়ে না করলে চেহারা নস্ট হয় এসব বাজে কথায় কান দিবি না।
- মোটেও বাজে কথা না। আজ পর্যন্ত তো একখান কিসও দিলা না। বারো বছর ধরে আনরোমান্টিক প্রেম করে চলেছো। কত ছেলে রিজেক্ট করলাম তোমার জন্য। আর তুমি কিনা বিয়ের কথায় শুনতে চাও না। বাবা আমার যদি অন্য জায়গায় বিয়ে দেয় না মরে যাবো আমি বলে রাখলাম।
- মাহি, তুষার আসছে আগে ওদের বিয়েটা হোক। তারপর আমাদের।
- কি বললে তুমি? ওই পিচ্চি দুটোর বিয়ে দেবে তারপর আমাদের বিয়ে? মজা পেয়েছো আমার সাথে?
- পিচ্ছি কোথায় হলো? আমার থেকে দশ বছরের ছোট মাহি। ওর বয়স ১৮। আর তুষার তোর থেকে তিন বছরের ছোট বয়স ২০। লেখাপড়ার পাশাপাশি তুষার একটা ভালো জব করছে। বাবা অবশ্যই ওদের ভালোবাসাটা মেনে নেবে। মাহির সাথে ওর বিয়ে দেবে।
- তাই বলে ছোট ভাইয়ের বিয়ে হবে। আর আমি কুমারি থেকে ছোট ভাইয়ের বিয়েতে ড্যাং ড্যাং করে নাচবো?
- এতো হিংসা কেন তোর মনে? নিজের ভাইয়ের ভালো দেখতে পারিস না।
- ওই মোটেও হিংসা না। নিজে দোষ করো আর আমাকে ঠ্যাস দিয়ে কথা শুনাও। একটা কথা মনে রেখও আমাকে তুমি বিয়ে না করলে তোমার বোনেরও আমি বিয়ে হতে দেবো না। কিছুতেই না।
- শোন আলফা!
- চুপপপ! একদম চুপপপ! বেড়িয়ে যাও আমার রুম থেকে।
বিছানার উপর থেকে বালিশ উঠিয়ে ছুড়ে মারলাম ফালাক ভাইয়ের গায়ের উপর। ফালাক ভাই চুপচাপ বেড়িয়ে গেলো আমার রুম থেকে।
পর্ব ২ (শেষ)
মাঝ রাতে কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। ভাবলাম এতো রাতে কে এলো? বেল বাজিয়েই চলেছে থামার কোনো নাম নেয়। ধূর! ঘুমে টলমল চোখ নিয়ে উঠে এসে দেখি ফালাক ভাই ফিসফিস করে কারও সাথে কথা বলছে। আমি গিয়ে পিছনের থেকে ফালাক ভাইয়ের শার্টের কলারটা টেনে ধরে বললাম।
- ওই চোরের মতোন কার সাথে ফুসুরফুসুর করছো মাঝ রাতে? কে ওখানে?
ফালাক ভাইকে টেনে দরজার কাছ থেকে সরিয়ে এনে আমি সামনে দাড়ালাম। চোখের সামনে দুজন মানুষকে দেখে আমি অবাক।
কোমড়ে হাত গুজে চোখদুটো বড়বড় করে তাকিয়ে আছি তাদের দিকে। তাদের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। একজনের তো হাত পা কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। আরেকজন কাঁপা কাঁপা কন্ঠস্বরে কম্পিত ঠোঁটে আপু বলে উঠতেই লাগালাম তার গালে এক চড়।
- হারামজাদা আসার আর সময় পেলি না? তোদের জন্য! এই তোদের জন্য আমার বিয়েটা হচ্ছে না! পুচকে বাদর। বলদা ফড়িং। বিয়ে করবি তুই আমার আগে? বড় বোনের আগে?
আমার এখন খুব কান্না পাচ্ছে মাহি, তুষারকে দেখে। ফালাক ভাই তাহলে যা বলেছিলো তাই? এই পুচকে দুটোর বিয়েতে আমি কুমারি থেকে ড্যাং ড্যাং করে নাচবো? না এ হতে পারে না। - আপু শোন না।
- একটাও কথা না। যা যেখান থেকে এসেছিস সেখানেই আবার চলে যা। বাড়ির কেউ যখন দেখিনি তখন কেউ দেখার আগেই বিদায় হ।
মাহি কান্না মাখা কন্ঠস্বরে আমাকে বলল,
- আপু প্লিজ এমন করো না।
- ন্যাকামো পেয়েছিস? তোর ভাইকে দেখা ন্যাকামো। যত্তসব আদিক্ষেতা।
- আপু প্লিজ আমি প্রেগনেন্ট আমার বিয়েটা হবার খুব দরকার।
- প্রেগনেন্ট মানে? তুই এতো খারাপ হয়ে গেছিস? হোস্টেলে থেকে এসব করে বেড়িয়েছিস? ছিঃ মাহি ছিঃ কার পাপ নিয়ে এসেছিস? এখন আবার আমার ভাইকে বিয়ে করতে চাচ্ছিস?
পাশ থেকে তুষার বলে উঠলো, - না আপু অন্য কারও পাপ না। ওটা আমার পাপ।
সঙ্গে সঙ্গে তুষারের গালে কষিয়ে দিলাম আরেকটা চড়। - মিথ্যা বলিস পুচকে বাদর?
- না আপু সত্যি মাহির গর্ভে আমার সন্তান বিশ্বাস করো।
- কি বললি তুই? ডাকবো বাড়ির সবাইকে? আবার বুক ফুলিয়ে বলছিস তোর সন্তান! খাবি আরেকটা চড়?
ফালাক ভাই হো হো করে হেসে উঠলো। আমি তাকাতেই আমাকে বলল,
- চিন্তা করেছি এটা বলেই এদের বিয়ে দেবো। তো মাহি তুষার পারবে না এটা বলে চাচ্চুর থুরি হবু শ্বশুরের মন জয় করতে?
- অবশ্যই ভাইয়া। মাহিকে বিয়ে করার জন্য আমি একটা কেন শত শত কুমারি মেয়ের বাচ্চার বাবা হতে পারি।
মাহি আড়চোখে তুষারের দিকে তাকালে তুষার ভয়ে চুপসে যায়। আমতা আমতা করে আবার বলে,
- মাহিকে বিয়ে করার জন্য আমি কুমারি মাহির শত শত বাচ্চার বাবা হতে পারি।
মাহি এবার তুষারের শার্টের কলার চেপে ধরে রাগি মেজাজে বলে, - ওই কি বলো এসব? বিয়ে না করে তুমি আমায় শত শত বাচ্চার মা বানাতে চাও?
- না জান। যেটা বুঝেছো সেটা বলি নি। বুঝে নাও না আমার কথা।
আমি তুষারকে টেনে ধরে বললাম,
- তোর জান! আমি ছোটাচ্ছি দাড়া বাবা- মাকে ডেকে নিই। বাবা, মা কে কোথায় আছো তারাতাড়ি এসো। দেখও কি ষড়যন্ত্র চলছে এখানে।
আমি জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে বাবা- মাকে ডাকতে থাকলাম। আমার চিৎকারে
বাড়ির সবাই ঘুমে টলমল চোখ ডলতে ডলতে ওঠে চলে আসলো। সবাইকে দেখে মাহি ফেলাফেলিয়ে কাঁদতে লাগলো। আর তুষার অপরাধ সূচক ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। ফালাক ভাই তুষারকে উঁচু আওয়াজে শাসন করছে। সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ডায়েরী পেজে আসবেন।
- পরিবারের মান সম্মান এভাবে ডুবিয়ে দিলি তুই? আজ আমি কাজিন নই। ভাই হয়ে তোকে শাসন করছি। ছিঃ তুষার ছিঃ একটা মেয়েকে ভালোবেসে এভাবে প্রেগনেন্ট বানিয়ে দিলি?
আমি ফালাক ভাইকে টেনে ধরে বললাম, - ওই নাটক বন্ধ করো?
- নাটক আমি করি না তুই? তুই আর তোর ভাই নাটকবাজ।
- কি বললে তুমি?
- ঠিকই বলেছি। মাহির দিকে তাকিয়ে বলল, মাহি বোন আমার সত্যিটা বলে দে সবাইকে। তুষার তোর কি ক্ষতি করেছে?
মাহি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
- তুষার আমায় বিয়ের কথা বলে হোস্টেল থেকে ডেকে নিয়ে রুম ডেট করেছে। প্রেগনেন্ট করেছে আমাকে।
আমি এবার ঘুরে মাহির গালে দিলাম এক চড়। মাহিকে বললাম,
- এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছিস তুই? বিয়ে করার জন্য এমন কথা বলছিস?
চাচ্চু এসে মাহির গালে কষিয়ে ঠাসসস! ঠাসসস! করে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিলো। আর বাবা গিয়ে তুষারের গালে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিলো। ফালাক ভাই মুখটা ফ্যাকাসে করে চাচ্চুর কাছে গিয়ে বলল, - বাবা বিয়ে দিয়ে দাও দুটোকে। তাছাড়াও তুষার লেখাপড়ার পাশাপাশি একটা ভালো জব করছে অবশ্যই মাহিকে ভালোবেসে করেছে ভুল। তুমি ছোট চাচ্চুর সাথে কথা বলে দেখও ছেলেকে বিয়ে দেয় কিনা।
চাচ্চু গিয়ে অসহায় মুখ করে বাবার সামনে এসে দাড়ালো। বাবার কাছে হাত জোড় করে বলল,
- আমার মেয়েটাকে তোর ছেলের সাথে বিয়ে দিবি ভাই? নইলে আমার মেয়েটার কি হবে?
বাবা কিছু বলার আগে আমি বলে উঠলাম। - না চাচ্চু ওরা মিথ্যা বলছে বিশ্বাস করো না।
ফালাক ভাই বলল,
- কেন রে? ওরা মিথ্যা বলছে আর তুই সবসময় সত্যি বলিস? নিজে তো বুড়ি হয়ে যাচ্ছিস বিয়ে করতে চাচ্ছিস না। আবার ওদেরও করতে দিবি না? দেখও বাবা যার জন্য আমাকে মেরেছিলে। তার ঠ্যাং নাকি ভেঙে গেছে। হাঁটতে পারছে না। তাহলে এখন কিভাবে রিলাক্সে দাড়িয়ে আছে? আসল কথা বলতে ওকে তখন আমি সিঁড়ি থেকে ফেলিই নি। বল সত্যি কিনা?
- হ্যাঁ ফেলো নি তো। আমি বলেছিলাম যেন পাত্রপক্ষের সামনে না যেতে হয়। ভুল
করেছিলাম। তোমাকে ভালোবাসা আমার ভুল হয়েছে। এবার বাবা- মা আমার যার সাথে বিয়ে দেবে আমি তার সাথে বিয়ে করে নেবো। আর ভালোবাসবো না তোমাকে।
- কি বললি আলফা তুই আমায় ভালোবাসিস? ও কাকি মণি ওহহ বাবা শোনো তোমরা আলফা আমাকে ভালোবাসে।
এমন ভাবে বলছে যেন নিজে বাসে না। সয়তান কোথাকার।
রুমি ঝুমি হায় তুলতে তুলতে এসে দাড়িয়ে বলল,
- এখানে এতো চিৎকার চেচামেচি কিসের জন্য?
- দেখ না রুমি ঝুমি ফালাক ভাই কি বলছে!
- কি বলছে?
- বলছে আমি তাকে ভালোবাসি..
আমার কথা শেষ না হতে দিয়ে দুজনে বলে উঠলো, - তো ভুল কি বলেছে? তোমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসো। বিয়ে করবা।
বাবা- চাচ্চু বিয়ে দিয়ে দাও দুটোর।
বাসর ঘড়ে বসে আছি। মাথায় লম্বা একটা ঘোমটা টেনে। মুখ ভর্তি মেকাপে। দরজা বন্ধ করার শব্দে আমি ঘোমটা টেনে শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজলাম। বিছানার উপর থেকে বালিশ উঠিয়ে দরজার কাছে দাড়ানো ব্যাক্তিটির গায়ে ছুড়ছি। আমার পাশে এসে বসতেই আমি তাকে কিল দিতে শুরু করলাম। সে আমার হাত ধরে বসে বলল,
- কি করছিস কি আলফা?
আমি ভ্রু কুচকে জবাব দিলাম,
- এই বিয়ে আমি মানি না মানবো না। তুমি খুব খারাপ। যেটা করেছো সেটা ঠিক না। বাড়ির সকলে যেদিন জানবে মাহি প্রেগনেন্ট না সেদিন বুঝবে।
- আরে আমি কোনো ভুল করি নি।
- ভুল করো নি মানে? মাহি সত্যি প্রেগনেন্ট?
- না।
- তাহলে?
- তাহলে শোন। তুষারের অফিসের বসের সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে আছে।
- সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে আছে মানে?
- আরে বলতে দিবি তো!
- হ্যাঁ বলো?
- মেয়েটা তুষারকে খুব ভালোবাসে। আর তুষার মাহিকে। তুষার ফোন করে বলেছিলো মেয়েটা নাকি এটা শুনে আত্নহত্যা করতে চেয়েছিলো। তুষারের বস তুষারকে অনেক টাকা দিতে চেয়েছে যেন তার মেয়ের জীবন থেকে তুষার সরে যায়।
আমি গত সপ্তাহে গেলাম না তুষারের সাথে দেখা করতে? তখন তুষারের বস আমাকে একটা জব অফার করে। বেকার বলে তোকে বিয়েও করতে পারছিলাম না। যখন বলল যেভাবে সম্ভব তুষারের বিয়ে দিতে তখন বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি করবো। তাই এমন আবরি তাবরি প্লান ভাবি। যাই হোক, এতে মাহি, তুষারের সাথে আমাদের বিয়েটাও তো হলো তাই না? সাথে আমার জবটাও।
- হায়রে! এইজন্য বিয়ে।
- হুমমম।
লেখা – মোছাঃ লিজা
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “বিয়ে – অসাধারন প্রেমের গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – বিয়ে – অসাধারণ প্রেমের গল্প (সিজন ১)