অনুগল্প: প্রকৃত সুখী (Marraige Story – বিয়ের গল্প)

অনুগল্প: আমার বিয়ের ঠিক এক মাস আগে বিয়েটা ভেঙ্গে দিল আমার বাবা, হ্যাঁ আমার নিজের বাবা! কিন্তু কেনো? কি কারনে কিচ্ছু জানি না। জিজ্ঞাসা করেছি কোন উত্তর পাইনি। ওই বাড়ির লোকজন অনেক কথা শোনালো বাবাকে কিন্তু বাবা একটা টু শব্দ পর্যন্ত করেনি।

আমার বাবা রাগী, বদমেজাজি। কারো থেকে দু কথা শুনতে পারে না কখনো। কিন্তু আজ এতগুলা মানুষ এতগুলো কথা শুনায় গেলো কিন্তু সে একটা শব্দ করেনি। এমনকি আমার মা ও জিজ্ঞেস করেছিল কেন বিয়েটা ভেঙ্গে দিলা? কিন্তু আমার বাবা সোজা মায়ের মুখের উপর একটা কথাই বলেছিল এ বিষয়ে আর কোনো কথা না আমি শুনতে চাই আর না বলতে চাই। আমারা বাবাকে সবাই খুব ভয় পায় তাই আর এই বিষয়ে কারো কথা বলার সাহস হয়নি কারো।

আচ্ছা এখন আমার প্রাক্তন কে কি বলা উচিত আমার বিয়ে ভেঙে গেছে। আচ্ছা বললে নিশ্চই খুশি হবে। কিন্তু কি ভাববে ও আমাকে, বিয়ে ভেঙে গেছে বলে ফিরে যাব আবার যখন বিয়ে ঠিক হবে চলে আসব? না আমি আর ফিরব না,,কষ্ট হবে তবে ফিরব না। কিছুদিন আগে ওর সাথে দেখা করেছিলাম একটা রেস্টুরেন্টে।
আরে আর কত বসে থাকবে এবার বল কি বলবা। ধুর আমি খাই তুমি বসে থাকো।
এক মাস পর আমার বিয়ে। এটা শুনে ওর হাত থেকে চামচ পড়ে গেল।

মানে, তুমি কি বলছো এসব। মাথা ঠিক আছে। আচ্ছা বুঝেছি মজা করছ।
না কোন মজা না, আমার বিয়ে। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর বাবাকেও এখন কি বলব আমি। তোমাকে সেই কবে থেকে বলছি একটা চাকরি করো। নাহলে কোন ব্যবসা করো। তোমার তো আমার কথা কানে গেলো না। আর কত ভাঙ্গাবো আমি বিয়ে। এইবার বাবা খুব ভালো মতোই নেমেছিল। দু’দিনের মধ্যে সব ঠিক করে ফেলে। এখন কি হবে বলতো।
আচ্ছা চল পালায় যাই।

কি বলতেছ তুমি পালাবা!
হে এ ছাড়া আর কি করব?
না আমি পালাব না। এতে করে তোমার আমার দু পরিবার কষ্ট পাবে।
তাহলে কি তুমি আমায় ভালোবাস না?

হে বাসি, অবশ্যই বাসি তবে তাদের থেকে বেশি নয় যাদের থেকে আমি আমরা ভালোবাসা শিখেছি। ঐ দুইজন মানুষ জ্ঞান হবার পর আমি তাদের কেই ভালোবেসেছি। আচ্ছা তোমাকে আমি কত বছর ধরে ভালোবাসি? ৩ বছর। আর তাদের আমি ভালোবাসি জ্ঞান হবার পর থেকে। আর এটা কি যান তারা আমায় ভালোবাসে কত বছর যাবৎ ২২ বছর?

কি অবাক হলে ১ বছর কেন বেশি বল্লাম! কারন আমি যখন এই পৃথীবির আলো – বাতাস ত দুর, আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারনা ছিল না তখন থেকে তারা স্বপ্ন বুনত আমাকে নিয়ে। যখন যানতে পারল আমার কোন অস্তিত্ব আছে, ঠিক তখন থেকে হে ঠিক তখন থেকে তারা আমায় ভালোবাসে। যান, আমার একপাশে হিরা, মনি, মুক্তা বা অনেক মহামূল্যবান জিনিস রাখে এবং আরেক পাশে আমার বাবা মাকে রাখা হয়, আর যদি বলা হয় যে কোন একটা চুজ করতে আমি বাবা-মাকেই করব। কেন যান কারন আমায় সেই মনি, মুক্তা চিনিয়েছেন তারা। শুধু সেগুলো না পুরো পৃথিবীকে চিনিয়েছেন তারা।

আর তুমি যে বলছ পালাবো, কি করে পালাবো? যারা তাদের হাতগুলা দিয়ে আমায় হাঁটতে শিখাইছে সেই পা দিয়ে? আচ্ছা আমিই কি করে বলব হে চল পালাবো। যে কথা বলা তারা আমায় শিখিয়েছে তা দিয়ে? আচ্ছা কোন সাহস নিয়ে বলব যে চলো পালাবো, যে আমি আজও ভয় পেয়ে চিৎকার করলে যারা ছুটে আসে।

সেই সাহস নিয়ে? না আমি পারব না পালাতে। আমি তাদের কষ্ট দিতে পারব না। হে তোমার জন্য আমার কষ্ট হবে, মানিয়ে নিব। তবে তুমি আমায় বিশ্বাসঘাতক, স্বার্থপর বলতে পার। তবে আমি এটাই বলল আমার তোমাদের দু’জনকেই চাই, কারন আমি দু’জনকেই ভালোবাসি!

সে কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলল না আমি তোমায় কোন উপাধি দিব না। তোমার কথা শুনে তোমার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা দু’টোই বেরে গেলো। একটা কথা যান তোমায় যে পাবে সে ভাগ্যবান! সে ভালো থাকবে।
হে হয়ত সে ভাগ্যবান, সে ভালো থাকবে। কিন্তু আমি? আমি না ভাগ্যবতী? আমি কি ভালো থাকব? সেদিন দু’জন অনেক কেঁদেছিলাম। তারপর চলে আসছিলাম আর কথা হয়নি। হবে কি করে যোগাযোগ তো রাখিনি!
আজ প্রায় তিন বছর হয়ে গেল বাবা আমাকে বিয়ে দেওয়ার না কোন চেষ্টা করেছে, আর না বিয়ের ব্যাপারে কোন কথা বলেছে।

বিয়ে ভেঙে যাবার পর তেমন সম্বন্ধ আসত না তবে যে ক’টা আসতো বাবা সবাইকে ফিরিয়ে দিত। আমার জন্য আমার ছোট বোনদের বিয়ে হচ্ছিল না। কিন্তু বাবার কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিলনা। তবে বাবা একটা কথা সব সময় বলতো, নিজেকে নিজের চেষ্টায় গড়ে তোলো। নিজের নামে নামকরন কর। নিজে প্রতিষ্ঠিত হও। বাবা আমাদের কখনো মেয়ে বলে দুরে ঠেলে দেয়নি। আজ সকালে হৈচৈ শুনে ঘুম ভেঙে গেল। এত হৈচৈ কেন কে যানে?

তাই বাহিরে গেলাম গিয়ে দেখি সবার মুখে হাসি। সবাই খুব আনন্দিত। কিন্তি কি কারনে সবাই এত আনন্দিত বলতে পারছি না। আমার এখন এসবের প্রতি আকর্ষন কমে যেছে,তাই রুমে চলে যাই। সারাদিন আর বের হইনি। বিকেলের দিকে মা আর কাকিমা এসে একটা শাড়ি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল রেডি হতে, বললাম কেন? বলল বাড়িতে পাএপক্ষ আসবে। ওহ তাহলে বাড়িতে কারো বিয়ে লাগবে।

মনে মনে বললাম। কি আর রেডি হয়ে বাহিরে গেলাম,,, গিয়ে দেখি মানুষে টইটুম্বুর। মনে হচ্ছে আজকেই বিয়ে,,,তবে সবাই আমাকে দেখে যেন ভুত দেখার মত চকমাল! আর তাদের এমন চমকানো দেখে আমি চমকালাম! তাদের এমন চাহনি ভাল লাগছিলনা তাই ঘরে যেতে নিব তখনই একজন চিনা পরিচিত একজনের মুখ দেখে থমকালাম।আমার সেই প্রাক্তন প্রেমিক! অবাক হলাম সে এখানে? তবে দেখতে বেশ হয়েছে সুট, টাই পরে পুরাই সাহেব।হয়ত কোন বড় কম্পানিতে জব করে। তবে ও এখানে? আচ্ছা তাহলে ও হবে এই বাড়ির জামাই।

একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম, আর মনে মনে বললাম আমার প্রাক্তন আমার বাড়ির জামাই তবে আমার না জামাই না। চলে যাচ্ছিলাম তখন বাবা ডাক দিলেন। সামনে গেলাম হে বাবা বল। বাবা বলল ওকে চেন নিশ্চই? ভয় হচ্ছিল তবুও বলে দিলাম হে চিনি! বাবা হেসে উত্তর দিল হে চিনবেইত নিজের হবু বর বলে কথা। বাবার এহেম কথায় অবাক হলাম বেশ! তখন এক আংকেল এসে বলল আমায় চিনেছ মা? আমি বললাম হে, চিনি আপনি তো বাবার খুব ভালো বন্ধু।

তখন সে বলল তুমি কি যানো তিন বছর আগে এই ছেলেটির সাথে তোমার যেই কথাগুলো হয়েছিল তা আমি এবং তোমার বাবা দু’জনই শুনেছিলাম। আসলে সেইদিন হঠাৎ আমাদের দেখা হয়। আরএকজন আরেকজনকে বলি ট্রিট দিতে। যেমনটা আমরা সবসময় করে থাকি। তো সেদিন সেই রেস্টুরেন্টে যাই পরে দেখি তোমরা। প্রথমে তোমার বাবা খুবই রিয়েক্ট করেছিল। আমি বসিয়ে রেখেছিলাম। তারপরই সবই সুনি এবং সেইদিন তোমার বাবাকে আমি কাঁদতে দেখি। তুমি তো চলে এসেছিলে কিন্তু ও কিন্তু যায়নি। তখন তোমার বাবা এই ছেলেটির কাছে যায় আর বলে…
–ভালোবাস আমার মেয়েকে?

– এমন প্রশ্ন হঠাৎ শুনে চমকে গিয়েছিলাম! ভয়ও পেয়েছিলাম। কিন্তু তবুও বলেছিলাম হে।
–বিয়ে করবে আমার মেয়েকে?
–মানে! কি করে ওর ত…
–তোমাকে যা বলেছি উত্তর দাও করবে কিনা বলো?
–আচ্ছা ঠিক আছে। আমি জানি তুমি কিছু কর না। তোমাকে আমি তিন বছর সময় দেবো নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। তোমার উপর বিশ্বাস করলাম আমি। তবে একটা শর্ত এই তিন বছরে আমার মেয়ের সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারবা না।

–স্যার আপনি কি বলছেন এসব। আর আমি কি করে বিশ্বাস করবো আপনি এই তিন বছর চুপ করে বসে থাকবেন! আপনি তো আমাকে ওর থেকে দুরে রাখার জন্য ও এমনটা করতে পারেন। স্যার চিন্তা করবেন না আপনার মেয়ের বিবাহিত জীবনে কখনো কোন প্রকার অসান্তি করবো না। তাও মিথ্যে আশা দিবেন না।
–ওহ আচ্ছা। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে শুনবা ওর বিয়ে ভেঙ্গে গেছে। তখন নিশ্চই বিশ্বাস হবে।
–আচ্ছা আমি রাজি। তিন বছর কষ্ট করতে পারব।

–কিন্তু তোমাকে কি করে বিশ্বাস করবো যে তুমি তিন বছর পর ভালো পজিশনে যাবার পর আমার মেয়েকেই বিয়ে করবা।
–ভালোবাসি আমি। স্যার সবাই এক হয়না। আমি অবশ্যই অনেকটা চেষ্টা করবো। আসি আজকের তারিখটা মনে রাখবেন তিন বছর পর দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।

আর দেখো মা আজ সে প্রতিষ্ঠিত। সে তার কথা রেখেছে তাই তোমার বাবাও তার কথা রাখবে। তখনই বাবা বলল, “তোমরা আমাদের কি ভাব যানি না তবে আমরা ছেলে মেয়েদের খুশির জন্য কত কিছু বিসর্জন দেই। আর তোমরা ভাব আমরা স্বার্থপর! আমরা তোমাদের জন্য এত খুশি কিনি, কিন্তু সারাজিবনের খুশি কি করে না কিনি বলো? তোমরা ভাল থাক এটাই কামনা।

হে আমাদের বাবা – মায়েদের একটাই ভুল আমরা সব বিষয় ছেলে মেয়েদের তাদের ব্যক্তিস্বাধিনতা দিলেও বিয়ের মতো এত বড় একটা সিদ্ধান্ত তাদের নিতে দেইনা। হে তারা ভুল করবে না কেনো? করবে। কিন্তু সেই ভুল সুধরে দিতে হবে আমাদেরকে তোমরা ভালো থেকে। সারাজীবন আনন্দে কাটুক সেই দোয়া করি। আমি বাবাকে সেই দিন কাঁদতে দেখেছি।

আজ আমাদের বিয়ে হয়েছে। সংসার হয়েছে তিন বছরের একটা মেয়েও আছে। আজ আমি সুখী। আজ আমি দুইজনকেই পেয়েছি। আমার বাা-মা পরিবার কে আর আমার ভালোবাসার মানুষ কে। আজ আমি সত্যি সুখী।

প্রকৃত সুখী (Marraige Love Story)
– মারিয়াম ইসলাম


Read more: পিচ্চি বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *