অভিশপ্ত ফ্ল্যাট – Sotti vuter golpo

অভিশপ্ত ফ্ল্যাট – Sotti vuter golpo: রাত প্রায় দেড়টা বাজবে তখন। আবার আমার ঘুম ভেঙে গেল সেই ভয়ংকর চিৎকারের আওয়াজে। তবে এবার আওয়াজটা যেন আমার খুব কাছাকাছি কোথাও থেকে আসছে মনে হচ্ছিল। আমি ভয়ে প্রায় জমে যাচ্ছিলাম।


পর্ব এক

প্রচলিত মুখে শোনা যায় নিউ ইয়র্কের এই গলিটা অভিশপ্ত। এর একটা লোমহর্ষক ঘটনাও শোনা যায় মুখে মুখে। সে ছিল অনেক বছর আগের ঘটনা।

গলির শুরুতে একটা বাড়িতে এক রুপসী মেয়ে থাকত। যার নাম ছিল মেরিনা। সেই মেয়েটা একটা বড়লোক বাবার ছেলের সাথে প্রেম করত। ছেলেটার বাবা ছিল খুব প্রভাবশালী।

সবকিছু ঠিকঠাক মতই চলছিল। হঠাৎ একদিন ছেলেটি জানালো সে তাকে বিয়ে করতে পারবে না।

তার পরিবার এটা মেনে নেবে না। মেয়েটি বুঝতে পেরেছিল যে ছেলেটি তাকে ভালবাসেনি। পুরোটাই ছিল অভিনয় এবং লালসা। ছেলেটির নাম বলা হয়নি,তার নাম ছিল মার্ক এডিসন।

এমন অবস্থায় মেয়েটির সামনে আর কোন রাস্তা ছিল না আত্মহত্যা করা ছাড়া। তবে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বললে ভুল হবে। তাকে খুন করা হয়েছিল। এডিসনের বাবা জানতে পেরেছিল যে এডিসনের সন্তান মেরিনার গর্ভে অবস্থান করছে।

তাই মেরিনা যেন সেই সন্তানের দাবি নিয়ে তাদের বাড়িতে যেতে না পারে,সেজন্য তাকে খুন করা হয়। সেদিনটা ছিল অভিশপ্ত দিন,যেদিন মেরিনাকে খুন করা হয়। সেদিন অবশ্য মেরিনা নিজেই আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরবর্তীতে কোন সমস্যায় হত না যদি মেরিনা নিজেকে নিজে শেষ করে দিতে পারত।

কিন্তু এডিসনের বাবার পাঠানো খুনিরা তাকে আত্মহত্যার সুযোগও দেয়নি। সেদিন রাতে হত্যাকারীর দল তার বাড়িতে এসে তার উপর চালায় শারীরিক অত্যাচার। তাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয় সেদিন। তাকে মেরে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়। তাকে মারার কয়েকদিন পর থেকেই তার আত্মার উপস্থিতি টের পেতে থাকে ঐ এলাকার লোকজন।

প্রতিদিন রাতে সে তার বাড়িতে আসত এবং এমনভাবে চিৎকার করত যেমনভাবে তাকে খুন করার সময় করেছিল। এরপর থেকেই গভীর রাতে ঐ গলি দিয়ে যারা আসা যাওয়া করত,তারা তার চিৎকার শুনতে পেত।

আমি নিউ ইয়র্ক এসেছি সবে কয়েকসপ্তাহ হবে। এর মধ্যেই অফিসের সবার সাথে আমার খুব ভাল সম্পর্ক হয়ে গেছে। নিয়মিত অফিস করি।

আর থাকার জন্য একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করেছি। গলির শুরুতেই আমার ফ্ল্যাট। তবে অবাক করা বিষয় হল ফ্ল্যাটে উঠার পর থেকেই অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা চোখে পড়ে।

যেমন সেদিন বাথরুমে গেলাম গোসল করতে। হঠাৎ দেখি বাথরুমের বাইরে কে যেন হেঁটে যাচ্ছে। চোখটাকে একটু ঘুরিয়ে দেখতে গিয়ে দেখি পলকের মধ্যে কোথায় জানি হারিয়ে গেছে। বিষয়টাকে ততটা সিরিয়াস নিইনি। তাই সেদিনের মত অফিসে চলে গেলাম। আরেকদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরেছি। বেডরুমে ঢুকতে যাব,এমন সময় দেখি ভেতর থেকে দরজা লক করা।

ডাকাডাকি করছি,দরজা ঠেলছি,কিন্তু কোন সাড়াশব্দ নেই। তারপর কি যেন ভেবে আমি একটু পাশ ফিরে সামনে গেলাম। দরজা থেকে পিছনে ঘোরার সাথে সাথে আমার মনে হল কে যেন আমার পিছন দিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি পিছনে ঘুরে কাউকে দেখতে পেলাম না। তারপর আমি দরজা ঠেলতে গিয়ে দেখি দরজা খোলা-ই আছে।

আজকে অফিসে খুব ব্যস্ততা। কাজের চাপও খুব বেশি। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। আমিও একরকম কাজের ভেতরই ছিলাম। তাই রাতে ভাবা কথাটা কাউকে বলতে পারিনি এবং বলার সুযোগই পায়নি।

ভাবনাটা ছিল এমন যে আমি যে ফ্ল্যাটে উঠেছি এর সম্পর্কে কিছু জানব স্থানীয় কাউকে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠেনি। অন্যান্য দিনের মত আজকেও বাসায় ফিরছিলাম।

তবে একটু রাত হয়ে গিয়েছিল। আর আগেই বলেছি আজ কাজের চাপ বেশি ছিল। তো নিজেই ড্রাইভ করে ফিরছিলাম। হঠাৎ একটা পাগলমতো লোক আচমকা আমার গাড়ির সামনে এসে পড়ে। আমি গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম,কিন্তু অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম এবং লোকটারও কিছু হয়নি। আমি গাড়ি থামিয়ে লোকটাকে কিছু বলতে যাব এর আগেই লোকটি আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি গলির প্রথম ফ্ল্যাটটায় থাকি কি না। আমি হ্যাঁ বললাম।

লোকটি আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন কিছুক্ষণের মধ্যেই কিছু হতে যাচ্ছে। লোকটি বলল, সাহেব ঐ ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দিন। আমি বললাম,কেন? কিন্তু লোকটি এর জবাব না দিয়েই আচমকা দৌঁড়ে পালিয়ে গেল। তার এই হুট করে আগমন আর হুট করেই প্রস্থানের কিছুই বুঝলাম না।

পাগল লোকটার কথার সাথে ফ্ল্যাটে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মিলাতে লাগলাম আর ভাবলাম আসলেই এই ফ্ল্যাটটা অভিশপ্ত। এখানে উল্লেখযোগ্য,মেরিনার আত্মার ঘটনাটা তখনো আমি জানতে পারিনি।

তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম,যে করেই হোক ঐ ফ্ল্যাটের আসল ঘটনা আমি জানব এবং খারাপ কিছু হলে ফ্ল্যাট ছেড়ে দেব। তো সকাল সকাল অফিসের জন্য রেডি হয়ে অফিসের দিকে চললাম। তাড়াতাড়ি বের হওয়ার একটা কারনও আছে বটে।

কারণটা হল পথিমধ্যে এলাকার স্থানীয় লোকজনের কাছে ফ্ল্যাট সম্পর্কে জানা এবং তাতে যেন দেরি না হয় অফিসে যেতে। পথে একজন লোককে জিজ্ঞেস করলাম যে পাশের গলির প্রথম বাড়িটার ব্যাপারে কিছু জানে কি না।

কিন্তু লোকটি কিছু না বলেই চলে গেল। তারপর আরো অনেকেই প্রথম লোকটার মত আচরণ করতে লাগল এই কথা জিজ্ঞেস করায়। পাশে একটা লোক দাঁড়িয়ে আমার অবস্থা দেখছিল। শেষ পর্যন্ত সেই লোকটিই আমার কাছে আসে এবং আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। তার বাসায় বসে ঐ ফ্ল্যাট সম্পর্কে সবকিছু খুলে বলে সে।

ঘটনা জানতে পেরে আমি খুব নার্ভাস হয়ে যাই। লোকটি আমার অবস্থা দেখে বলল,অফিস থেকে ফিরে আমার বাসায়ই থাকেন।

কালকে নতুন ফ্ল্যাট ভাড়া করে সেখানে যাবেন। আমি তার কথায় কিছুটা আশ্বস্ত হই এবং অফিসে যাই। অফিসে সবার সাথে মিশে ঘটনাটার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।

অফিস শেষে ভাবলাম পুরোনো ফ্ল্যাটে আমার অনেক দরকারি জিনিসপত্র আছে। তাই অফিস থেকে বেরিয়ে পুনরায় আমার ফ্ল্যাটে যাই এবং সিদ্ধান্ত নেই যে আজকের রাতটা এখাএ থেকে কালকে ফ্ল্যাট ছাড়ব। এই সিদ্ধান্ত নেওয়াই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

দরকারি জিনিস সব গুছিয়ে রাত প্রায় ১১ টার দিকে ঘুমাতে গেলাম। তারপর ঘুমানোর উদ্দেশ্যে চোখের পাতাগুলো এক করেছি বেশিক্ষণ হবে না। এরই মধ্যে আমি অদ্ভুত এক চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেলাম।

তারপর সজাগ হয়ে গেলাম আমি। লোকটার বলা ঘটনাটা যেন আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আমি একরকম কান পেতে রেখেছিলাম আবার কোন শব্দ হয় কি না তা শুনবার জন্য। কিন্তু অনেকক্ষণ যাবত চিৎকারটা আর শোনা গেল না।

আমার ঘুমও আসছিল না। রাত যত বাড়তে লাগল আমার ভয়টাও যেন জেগে উঠতে থাকল। বারবার মনে হচ্ছিল একটু পরই হয়ত কিছু একটা হবে যার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত নই। এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখে আবার ঘুম চলে আসে।

রাত প্রায় দেড়টা বাজবে তখন। আবার আমার ঘুম ভেঙে গেল সেই ভয়ংকর চিৎকারের আওয়াজে। তবে এবার আওয়াজটা যেন আমার খুব কাছাকাছি কোথাও থেকে আসছে মনে হচ্ছিল। আমি ভয়ে প্রায় জমে যাচ্ছিলাম।

আওয়াজটা ধীরে ধীরে আমার নিকটবর্তী হতে লাগল। শোয়া থেকে উঠে লাইট অন করার শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছি। হঠাৎ চিৎকারের আওয়াজটা অট্টহাসিতে পরিণত হল এবং হাসিটা আমার ঠিক পেছন থেকেই আসতে থাকল।

আমি ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালাম। যা দেখলাম তাতে আমার শিরা-উপশিরায় বরফ ঠাণ্ডা শীতল ভয় প্রবাহিত হতে শুরু করল। আমি দেখলাম একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে এক ভয়ংকর হাসি।

তার মুখের গঠনটা ঠিক যেন চাপা পড়া লাশের মত। সারা শরীর থেকে একটা পচা চাপা গন্ধ আসছিল। হাত পায়ের অনেক জায়গায় মাংস ছিল না। চোখের অবস্থান ঠিক ছিল না। একটা চোখ কপালের কাছাকাছি চলে গেছে। আর কতটা ভয়ংকর ছিল তা তার চাহনি না দেখে বোঝার উপায় নেই।

চোখ দিয়ে যেন রক্ত ঝরছে তার। আমার বুঝতে আর বাকি রইল না যে এটা মেরিনার আত্মাই। আমি প্রাণের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু মেরিনার আত্মাটা বলতে লাগল,ফ্ল্যাট ছেড়ে কোথাও গেলে আমাকে বাচতে দেবে না। মরার আগ পর্যন্ত আমাকে এই ফ্ল্যাটেই থাকতে হবে। আর উপায় না দেখে এবং বাঁচার আশায় আমি মেরিনার কথাই মেনে নিই। আর বেঁচে থাকি প্রতিদিন ভয় ও আশঙ্কা নিয়ে যা ছিল মরার মতই।

পরদিন সকালে নৃশংসভাবে খুন হয় ঐ লোকটি যিনি আমাকে ফ্ল্যাটের আসল ঘটনাটা বলেছিল।


পর্ব দুই

হঠাৎ এরকম একটা ভৌতিক ঘটনা আমার সাথে ঘটবে তা আমি কল্পনাও করিনি। কারন আমি কখনো ভুত-প্রেত বা আত্মা ফিরে আসাতে বিশ্বাসী ছিলাম না।

যাই হোক,সেদিনের সেই ঘটনার পর আমার জীবনের মোড় ঘুরে গেল। সারাক্ষনই আমাকে অবচেতনায় ঘিরে রাখত। আর দুশ্চিন্তায় কাটত সারা সময়। সেই রাতের পর সকালে যখন আমি অফিসে গেলাম তখন প্রায় অনেকেই আমার চেহারা দেখেই বুঝে ফেলেছিল যে আমার কিছু হয়েছে।

কয়েকজন জিজ্ঞেসও করেছিল। কিন্তু আমি তাদেরকে আসল ব্যাপারটা বুঝতে দেয়নি। আরেকটা বড় দুশ্চিন্তা ছিল যে সামনের মাসেই আমার স্ত্রী আসবে এখানে। এমনটাই কথা ছিল বাড়িতে। বিয়ে করে নিউ ইয়র্ক এসেছি, আসার আগে সবাইকে বলেছি সবকিছু ঠিকঠাক করে আমি আমার স্ত্রীকেও নিয়ে আসব।

কিন্তু আমার জীবন যে মরনফাদে আটকে গেছে,আমি চাই না অন্যকেউ আমার সাথে সে ফাদে নিজেকে জরিয়ে জীবনকে ধ্বংস করে দেক। তাই যে করেই হোক তাকে এখানে আসা থেকে আটকাতে হবে। এসব চিন্তাভাবনা করতে করতেই আবার সেই অভিশপ্ত ফ্ল্যাটের সামনে এসে পৌছে গেলাম।

আজকে হবে আমার জীবন বাচানোর দ্বিতীয় রাত। একটা একটা করে সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠছি আর মনে হচ্ছে যেন মরনের কাছাকাছি যাচ্ছি।

কয়েকটা বিষয় আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে এবং কিছুটা আশাও যোগাচ্ছে বাচার জন্য। কারনগুলো এই যে, যেমন সেদিন রাতে মেরিনার আত্মার সাথে অপ্রস্তুতভাবে দেখা হওয়া। কিন্তু একটা আত্মার সামনাসামনি গিয়েও সুস্থ শরীরে ফিরে আসা।

ইতিমধ্যে কয়েক দিন পার হয়ে গেছে ঐ ঘটনা ঘটার পর,তবুও আমার কোন ক্ষতি হয়নি। আমাকে যদি মারবার উদ্দেশ্য থাকত তাহলে অনেক আগেই মারত।

তাই এসব বিষয় থেকে এটা পরিষ্কার যে মেরিনার আত্মার আসল উদ্দেশ্য আমাকে মারা নয়। কিছুটা দুশ্চিন্তা তাহলে মাথা থেকে সরল। এবার বাচার কোন পথ খুজে দেখা যায়।

আর একটা কথা আমার স্ত্রীর এদেশে আসার প্ল্যান যেকোন একটা কারনে বাতিল হয়েছে। তাই অনেকটা দুশ্চিন্তা কমে গেল। আর আমিও প্রতিদিনের মত অফিস করতে লাগলাম। আগের মত সবার সাথে মিশতে শুরু করলাম। মনে হচ্ছিল যেন কিছুদিন আগে যা হয়েছিল তা নেহাতি আমার একটা দুঃসপ্ন।

কিন্তু ব্যাপারটা এখানেই শেষ না। সবচেয়ে ভয়ংকর রাতের জন্য আমাকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল,যে রাতে আমি প্রায় মারা গিয়েও বেচে গেছিলাম।

আমি ভেবেছিলাম মেরিনার আত্মা হয়ত চলে গেছে বা শান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আমার ধারনা পুরোটাই ভুল প্রমাণিত হল মেরিনার মৃত্যু বার্ষিকীর রাতে। ২৪ই অক্টোবর ১৯২৩ সালের রাতে মেরিনাকে খুন করা হয়েছিল। তো সেই দিনটি আবার ঘুরে আসল এই বছর। অর্থাৎ ২০০৯ সালের ২৪ই অক্টোবর রাত পুনরায় ফিরে আসল।

কিন্তু অফিসের কাজের মাঝে আমি প্রায় সেদিনটির কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রতিদিনের মত অফিস শেষ করে সেদিনও আমার ফ্ল্যাটে ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছিল। ডিনার করে ঘুমাতে গেলাম। আমি অবশ্য মেরিনার আত্মার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। ভুলে যাওয়ার কয়েকটা কারনও আছে।

একদিনের পর মেরিনার আত্মাকে এই এপর্যন্ত আমি দেখিনি,এমনকি রাতে ভয়ংকর চিৎকারও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই সেই ভয়ংকর স্মৃতির কথা মনে করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। ঘুমাতে ঘুমাতে ১১ টা বেজে গেল।

ঘুমিয়েও পড়েছিলাম।

মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে গেল। তারপর কি জানি মনে করে শোয়া থেকে উঠে বসলাম। পাশেই টেবিলে পানি রাখা ছিল। সেখান থেকে পানি খেয়ে পুনরায় ঘুমাতে যাব, এমন সময় রুমের এক কোণে আবছা কিছু একটা চোখে পড়ল।

অন্ধকারে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। তাই স্পষ্ট করে বোঝার জন্য বাতি জ্বালাতে উঠে দাড়ালাম। তখন কিছুটা ভয় করছিল। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুইচবোর্ডের কাছে গেলাম। সুইচ অন করে যা দেখলাম তা দেখে আমি আতকে উঠলাম। একটা বিড়াল নিচের দিকে মাথা দিয়ে বসে আছে। কালো কুচকুচে রঙের বিড়ালটাকে দেখে আমার সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠল।

খুব দ্রুত এটাকে আমি তাড়িয়ে দেই। যখন এটি রুম থেকে পালাতে গেল,তখন আমি এর পিছু নিলাম। ফ্ল্যাটের কিছুদুর গিয়েই এটা হঠাৎ কোথায় যেন মিশে গেল। এটা দেখে আমার প্রায় মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা। কোনমতে দৌড়ের বেগে আমি রুমে ফিরলাম। গলা প্রায় শুকিয়ে গেছে।

কিন্তু একটু আগেই আমি পুরো এক গ্লাস পানি খেয়েছিলাম। যাই হোক,পানি খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম আর ভাবতে লাগলাম হাজার রকম চিন্তাভাবনা। এতবড় ফ্ল্যাটে কিভাবে একটা বিড়াল এল। তাও আবার এটা বিড়ালের মত লাগছিল না। তার অবয়ব দেখলে যে কেউ ভরকে যাবে। এগুলো ভাবতে ভাবতে আমি আবার ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুমানোর আগে ঘড়িতে সময় দেখেছিলাম প্রায় ১২ঃ৫৩।

পাঠকরা হয়ত ভাবছেন ঐ রাতে আর কিছু হয়নি। কিন্তু তা হয়নি। আমিও ভেবেছিলাম সেদিন রাতে আর কিছু হবে না। একটু পরই সকালের সূর্য দেখতে পাব। সেই আশাতেই পুনরায় ঘুমাতে গিয়েছিলাম।

কিন্তু সূর্য দেখার বদলে দেখতে হয়েছিল ভয়ংকর কিছু ঘটনা,যা হয়েছিল ঘুমানোর কিছুক্ষন পরই। তাহলে এবার বলা যাক সে কাহিনী।
সেদিন রাতে ঘুমানোর কিছুক্ষন পরই পুনরায় আমার ঘুম ভেঙে গেল। আর ঘুম ভাঙার কারন ছিল মেরিনার সেই ভয়ংকর চিৎকার। চিতকারের শব্দে ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠালাম। তবে এবার চিৎকারের আওয়াজে অনেক রাগ অনুভুত হল আমার কাছে। আর আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম পুনরায় মেরিনার আত্মার সাথে মোকাবেলা করার। কিছুক্ষনের মধ্যেই মেরিনার আত্মা আমার সামনে হাজির হল।

তবে এবার মনে হচ্ছিল আমাকে মারার উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছে। এসেই আমাকে ভীষণ জোরে কি দিয়ে যেন আঘাত করল। সাথে সাথেই আমি জ্ঞান হারালাম। তারপর অনেকক্ষন আমি অজ্ঞান অবস্থায় ছিলাম। যখন জ্ঞান ফিরল,তখন চোখ খুলে দেখি মেরিনার আত্মা সহানুভূতির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে এবং আমার পাশেই। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই ঘটেছিল।

তারপর আমি উঠে বসলাম। কিছুক্ষন পর মেরিনা আমাকে যা বলল তা শুনে আমার মধ্যে অন্যরকম এক ভাল লাগা কাজ করছিল। আর সবকিছু শোনে আমি তার কথাতে রাজি হয়ে গেলাম। শুরু হল আমার পরবর্তী মিশন।

তবে এবার সেটা নিজেকে বাচানোর জন্য নয়,মেরিনার জন্য।

উল্লেখ্য মেরিনার হাতে একটা কিছু দেখলাম। যা দেখার পর একটু আগে বিড়ালের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে গেল আমার কাছে।


পর্ব তিন

মেরিনার কথামতো পরদিন সকালে আমি বিভিন্ন প্ল্যান কষতে লাগলাম। ভাবছিলাম কিভাবে তাদের সবাইকে একসাথে এই বাড়িতে হাজির করতে পারি।

সারাদিন ধরে এই ভাবনাটাই করছিলাম। যার জন্য অফিসেও গেলাম না। পাঠকরা হয়ত কাদের কথা বলছি বুঝতে পারছেন না। বেশ তাহলে কালকে রাতের ঘটনাটা খোলাসা করেই বলি।

রাতে যখন আমার জ্ঞান ফিরেছিল তখন পাশে মেরিনাকে বসে থাকতে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করি কেন সে আমায় এখনো মারেনি। মেরিনা অনেক্ষন চুপ থেকে বলতে লাগল,
তোমাকে এখনো বাচিয়ে রাখার একটা কারন আছে। তুমি চাইলেই নিজেকে বাচাতে পার।

মেরিনার এহেন কথা শুনে কিছুটা পুলকিত হই এবং বাচার একটা তীক্ষ্ণ রেখা দেখতে পাই। তাই অধিক আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করি,

কিভাবে?

তুমি হয়ত জানো কিভাবে আমাকে কঠোর অত্যাচার করে খুন করা হয়েছিল। শয়তান এডিসনের বংশধর এখনো পৃথিবীতে বেঁচে আছে। তোমার কাজ হবে তাদেরকে খুজে বের করা এবং এ বাড়িতে হাজির করানো। তবেই তুমি বাচঁতে পারবে।

কাজটা কঠিন হবে ভেবেও আমি তার কথায় রাজি হয়ে যায়।

এবার আসি মেরিনার হাতে দেখা বস্তুটার কথায় যা দেখে রাতে বিড়ালের ঘটনাটা অনেকাংশেই বুঝতে পেরেছিলাম।

আসলে তার হাতে বিড়ালটাই বসে ছিল। এটা দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। মেরিনাকে জিজ্ঞেস করাতে সে যেমনটা বলল তা নিম্নরুপঃ

“এটি ছিল আমার সবচেয়ে আদরের পোষাপ্রানী। এর নাম হল টিমি। খুনির দল যখন আমার উপর পাষণ্ডের মত অত্যাচার করছিল তখন এটি তাদের উপর আক্রমন করে। শয়তানের দল তাকেও মেরে ফেলে। আমার আত্মা ফিরে আসার পরপরই বিড়ালটার আত্মাও ফিরে আসে। অতৃপ্ত থেকে যায় তার আত্মাও। তাই বলছি যদি বাচতে চাও,নিজের ভাল চাও তাহলে যা বলেছি তাই কর। “

তার কথাগুলো শুনে অনেক খারাপ লাগছিল। এডিসনের পরিবারের উপর হচ্ছিল ভীষণ ঘৃনা। কিছুটা আবেগের বশে এবং নিজের জীবন বাঁচাতেই আমি মেরিনার সবগুলো কথা মেনে নেই। শপথ নিই যে করেই হোক আমি মেরিনার আত্মাকে তৃপ্তি দেবই।

তারপর সে রাতে যেখানে আঘাত পেয়েছিলাম সেখানে ঔষধ দিয়ে ঘুমাতে যাই আর এদিকে মেরিনার আত্মাও কোথায় যেন হারিয়ে যায় সাথে তার টিমিকে নিয়ে।

পরদিন সকালে অর্থাৎ আজকে সারাদিন আমি সেই প্ল্যান নিয়েই ব্যস্ত যা শুরুতেই বলেছি। সকালে ব্রেকফাস্ট করেই বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম আর ভাবতে লাগলাম কি করা যায়। হঠাৎ নিউ ইউর্কের এক বন্ধুর কথা মনে হল। যার নাম ছিল লুইজ হ্যানরিক্স। সে এখানকার স্থানীয়। সুতরাং তার সাহায্য নেওয়াটায় আমি উত্তম মনে করলাম। তাকে ফোন দিয়ে সবকিছু বলতে যাব এর আগেই দরজায় কে যেন বেল টিপতে লাগল। সুতরাং ফোন দেওয়া বন্ধ রেখে গেলাম দরজা খুলতে। দরজা খুলে আমি প্রায় অবাকই হয়ে গেলাম।

কারন দরজাতে দাঁড়িয়ে ছিল সেই পাগল লোকটা যে আমার গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে মরতে মরতে বেচেঁ যায়। তাকে ভেতরে আসতে বললাম। কিন্তু লোকটা ঐ দিনের মতই শুধু একটা কথা বলে চলে গেল। আর তা হল হ্যানরিক্স এডিসনের বংশধর। কথাটা শুনে আমি ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম।

নিজের বন্ধুকে কিভাবে আমি একটা আত্মার সামনে দিয়ে দিই যে কেন তাকে মারার জন্যই মরার পরও ফিরে এসেছে। মাথাটা কেমন জানি ঘুরে উঠল। মনে হচ্ছিল আমার জীবন যাক,তবুও হ্যানরিক্সের কিছু হতে দেওয়া যাবে না। কি করব বুঝতে পারছিলাম না।

কিন্তু পাগল লোকটাও কি করেই বা জানতে পারল যে রাতে মেরিনার সাথে আমার কি কথা হচ্ছিল। প্রচুর চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি। একসময় রাত চলে আসল। আমি আজকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে রাতে মেরিনাকে ঐ পাগল লোকটার কথা জিজ্ঞেস করব।

তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মধ্যরাতে উঠার জন্য এলার্ম সেট করে রাখলাম।

মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে সোজা ছাদে চলে গেলাম। গিয়েই মেরিনাকে ডাকতে লাগলাম। বেশিক্ষণ ডাকতে হল না। এর মাঝেই মেরিনা উপস্থিত হল। তারপর আমি তাকে পাগল লোকটার কথা জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে যা বলল তা শুনে আমার শরীর শিউরে উঠল। কারন ঐ পাগল লোকটাও ছিল একটা আত্মা।

সে মেরিনাদের বাড়ির কেয়ারটেকার ছিল। সুতরাং যা কিছু হয়েছিল সব তার জানারই কথা।

সবকিছু জানার পর পাগল লোকটা আমার চিন্তায় কোন প্রভাব ফেলতে পারল না। আর এই পাগল লোকটার কথা আমি অনেককেই আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু কেউ চিনতে পারেনি হয়ত এজন্যই।

তবে এরপর আরো কয়েকবার ঐ পাগল লোকটার আত্মার সাথে আমার দেখা হয়। এই সুযোগে আমি তার কাছ থেকে অনেক কিছু জেনে নিই যা পরবর্তীতে আমার অনেক দরকার লেগেছিল। যাই হোক,আমি কারো উপর আস্থা না রেখে নিজেই একটা প্ল্যান করলাম। প্ল্যানটাও দারুন হয়েছে। আশা করি কাজে দিবে।

আর হ্যানরিক্সকে কিভাবে বাচানো যায় এর উপায়ও একটা বের করে ফেলি। তারপর আমার প্ল্যান অনুযায়ী আমার বাড়িতে খবর দেই যে এখানে সব ওকে। সামনের সপ্তাহেই আমার স্ত্রীকে যেন নিউ ইয়র্ক পাঠানো হয়। সে-ই হবে আমার প্ল্যানের মুখ্যম হাতিয়ার।

সব প্ল্যান ঠিক করে করতে পারায় মনে মনে খুশি হয়। নিজেকে প্রস্তুত করি প্ল্যান মোতাবেক কাজ করার।

এতক্ষন ছাদে দাড়িয়েই সব প্ল্যান করেছি। এখন বিছানায় যাচ্ছি ঘুমাতে। আমার স্ত্রী যেদিন এদেশে আসবে সেদিন থেকেই শুরু হবে আমার ফাইনাল মিশন।


পর্ব চার (শেষ)

আজকে ভোরের ফ্লাইটে আমার স্ত্রীর আসার কথা। তাই ভোর রাতেই তাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্ট চললাম। শেষ রাতে রাস্তা প্রায় ফাকাই থাকে।

আর তাছাড়া নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের মত জ্যাম থাকে না। গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। এয়ারপোর্ট পৌছাতে বেশিক্ষন লাগল না। তারপর আমার স্ত্রীকে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সকাল হয়ে গেল।

আমার প্ল্যানটা তাহলে খোলাসা করি। সেদিন বলেছিলাম পাগল লোকটা অর্থাৎ মেরিনার বাড়ির কেয়ারটেকারের আত্মার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু জেনেছিলাম।

এডিসনের বংশধরদের বর্তমান ঠিকানাটাও জেনে নিয়েছিলাম। এখন পাঠকদের প্রশ্ন হতে পারে কেয়ারটেকার যদি জানে এডিসনের বংশধর বর্তমানে কোথায় আছে তাহলে মেরিনা কেন জানেনা। মেরিনা জানে না এই কারনে যে মেরিনার আত্মা ঐ ফ্ল্যাটেই সীমাবদ্ধ। বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা তার নেই।

কিন্তু কেয়ারটেকারের আত্মা বাইরে যেতে পারত। তাই সে এগুলো জানতে পেরেছিল। যাই হোক আমি এডিসনের বংশধরদের বর্তমান অবস্থাম জানার পর তাদেরকে আমার বাড়ি দাওয়াত করি। শুধু তাদেরকেই নয়,সেখানকার পরিচিত অনেককেই দাওয়াত করি। আর দাওয়াতের কারনটা হল আমার স্ত্রীর বৌভাত।

এখন হয়ত বুঝতে পারছেন কেন আমার স্ত্রীকে জরুরী তলব পাঠিয়েছিলাম এদেশে আসার জন্য। সব আয়োজন ধুমধাম করে হতে থাকে। কিন্তু আমার আসল উদ্দেশ্য কিন্তু বৌভাত নয়। এডিসনের বংশধরদের এ বাড়িতে হাজির করানোই হল আমার আসল উদ্দেশ্য।

লুইজ হ্যানরিক্সের ব্যাপারটা বলি এবার।

তাকে বাঁচাতে আমি তাকে আমার দেশ ঘুরে আসার অফার করি। তাকে বলি যে বাংলাদেশ থেকে ঘুরে আস। এটা শুনে সে অনেক খুশি হয়। তার পাসপোর্ট-ভিসার ব্যবস্থাও করি ফেলেছি। যতদিন পর্যন্ত মেরিনার আত্মা নিষ্কৃতি না পাবে ততদিন তাকে ঐখানেই থাকতে হবে। তবে তাকে এব্যাপারে কিছুই জানাইনি।

শুধু সে-ই নয়,কাউকেই আমি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দেয়নি যে আমার ফ্ল্যাটে কি অভিশপ্ত ঘটনা ঘটছে।

আমার স্ত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল এত জরুরী তলব কেন। আমি শুধু বলেছি যে আমার কলিগরা তোমাকে দেখতে চেয়েছিল। তাই এখন বৌভাত করব।

আমার স্ত্রী অবশ্য এটা শুনে খুশিই হয়। তারপর সবকিছুর এ্যারেঞ্জমেন্ট এ ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমি। আমি যে বৌভাতের অনুষ্ঠান করছি সেটা আমি হ্যানরিক্সকে জানাইনি। জানালে হয়ত সে বাংলাদেশ যেতে অমত করত। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়।

এবার শুধু অপেক্ষা নির্দিষ্ট দিনটির যেদিন বৌভাত অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। একটা কথা বলে রাখি বৌভাতের অনুষ্ঠানটা আমি রাতে করার সিদ্ধান্ত নিই। কারন মেরিনার আত্মা বলেছিল তাদেরকে যেন রাতে উপস্থিত করি এই অভিশপ্ত ফ্ল্যাট।

আমার স্ত্রীকে নিয়ে একটা সমস্যায় পড়ে গেলাম। কারন তাকে যদি আমার সাথে এই অভিশপ্ত ফ্ল্যাটেই থাকতে দেই তাহলে মেরিনা তার কোন ক্ষতি করে দিতে পারে। আর আমি চাইনা তার উপর কোন অভিশাপের ছায়া পড়ুক। কিন্তু কি করব বুঝতে পারছিলাম না। অবশেষে হ্যানরিক্সের কথা মনে হল।

সে তো এখন বাংলাদেশে। তাই আমার স্ত্রীর থাকার জন্য হ্যানরিক্সের ফ্ল্যাটই নির্ধারণ করলাম। আমার স্ত্রী অবশ্য কিছুটা মন খারাপ করেছিল একসাথে থাকতে না পারায়। কিন্তু আমি তাকে একটু মিথ্যে বলেই বোঝায়। বলি যে দূর থেকে আমার অনেক গেস্ট আসছে। তাদের থাকার জন্য একটা ফ্ল্যাট দরকার।

তাই এই ফ্ল্যাটটায় কয়েকদিনের জন্য ওদের থাকুক। তুমি মন খারাপ করো না জান।

আমার সব কথাই সে মেনে নিল। এতে আমার একটা সমস্যা সমাধান হল। নির্ধারিত দিন চলে আসল। সকাল থেকেই ব্যস্ততা ঘিরে আছে আমাকে আর আমার স্ত্রীকে। অবশ্য কাজের লোকও কয়েকজন রাখা হয়েছে।

বৌভাত করার আগের দিন রাতে আমি মেরিনার সাথে দেখা করি। তাকে আমার সমস্ত প্ল্যান খুলে বলি। আমার প্ল্যান শুনে আমি তার ভয়ংকর চোখে তৃপ্তি আর সন্তুষ্টি দেখতে পাই। তাকে পরের দিন রাতে প্রস্তুত থাকতে বলি।

ঐদিন রাতে মেরিনার সাথে আমার অনেকক্ষন কথা হয়। কেন জানি সেদিন রাতে আমার একটুও ভয় করছিল না। আমার মনে হচ্ছিল না যে সে একটা আত্মা। সেদিন রাতেই আমি তার আচরনে কোমলতার ছোঁয়া দেখতে পাই।

সেও তার দুঃখের কথা সবকিছু মন খোলে বলে। আর শেষে আমার কাছে ক্ষমা চায়। সে বলছিল,

“কালকেই হয়ত আমি দীর্ঘ এই আত্মিক জীবন থেকে মুক্তি পাব। প্রায় একশো বছর আমি আত্মা হয়ে ভেসে বেরিয়েছি এই পৃথিবীর আলো বাতাসে। মেরেছি কত মানুষকে। এগুলোর জন্য আমি মানুষদের কাছে ক্ষমা চাই। আমারও সবার মত বাচার ইচ্ছে ছিল,ইচ্ছে ছিল প্রিয়তমকে নিয়ে ঘর করার।

আমারও একটা স্বপ্ন ছিল। কিন্তু ঐ শয়তান এডিসন ও তার বাবা আমার সাথে প্রতারণা করে। শুধু তাই নয়,আমাকে পাশবিক অত্যাচার করে খুন করে। তাইতো তাদের শেষ না করা পর্যন্ত আমার আত্মার তৃপ্তি হয়নি এখনো। আমি তৃপ্তি চাই,শয়তান এডিসনের বংশকে শেষ করার মাধ্যমেই হবে আমার তৃপ্তি। “

সবগুলো কথা শুনে আমি চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি। সেদিনই প্রথম আমি কোন আত্মার জন্য কাদি। মেরিনার প্রায় সারারাত কথা হয় আমার সাথে। মেরিনা আমাকে ধন্যবাদও জানায় তাকে সাহায্য করার জন্য।

তারপর ভোরের দিকে এসে ঘুমাতে যায়।

সকালে প্রায় নয়টার দিকে স্ত্রীর ডাকে ঘুম ভাঙে। আজকের ঘুমটা খুব ভাল হয়েছে গত কয়েকদিনের তুলনায়। যদিও কম সময় ঘুমিয়েছিলাম। ফ্রেশ মাইন্ডে ও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পেরেছি বলেই হয়ত ভাল লেগেছে। সকালে যথারীতি ঘুম থেকে উঠেই হালকা ব্রেকফাস্ট করে কাজে লেগে পড়লাম।

অফিস থেকে তিনদিনের ছুটি নিয়েছিলাম। তাই আজকের দিনটা স্ত্রীর সাথে কাজে কাজেই কাটিয়ে দিয়েছি।

আমার স্ত্রী অবশ্য এখনো পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেনি। এই প্রথমবার নিজের জন্মভূমি ছেড়ে এতদুরে এসেছে। খাপ খাওয়াতে একটু সময় লাগবেই। তাই তার উপর কোন চাপ সৃষ্টি না করে কাজের লোককে দিয়েই সব কাজ করাচ্ছিলাম। ধীরে ধীরে দিনের দৈর্ঘ্য কমে গিয়ে সন্ধ্যা নামতে থাকে। অতিথিরাও একজন দুজন করে আসতে থাকে।

সব অথিতি আসার পর আমি তাদের সাথে আমার স্ত্রীকে পরিচয় করিয়ে দেই। তারপর শুরু হয় আতিথ্যের পালা। সবার খাওয়া শেষ হলে যারা এডিসনের বংশধর তাদেরকে আমি থেকে যাওয়ার অফার করি। তবে অন্যরা চলে যাচ্ছে একে একে। এডিসনের বংশধররাও চলে যেতে বলেছিল।

কিন্তু অনেক কষ্টে আমি তাদের রাতে থেকে যাওয়ার জন্য রাজি করাই। ওদের সাথে আমার আগে থেকেই পরিচয় ছিল। কারন তাদের আত্মীয় হ্যানরিক্স আমার বন্ধু। যাই হোক,যাকে যেই রুমে থাকতে দেওয়া হয় তারা সেই রুমে ঘুমানোর জন্য চলে যায়। রাত প্রায় ১১.৩০ বাজে তখন।

সবাইকে থাকার জায়গা করে দিয়ে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে হ্যানরিক্সের বাসায় চললাম তাকে পৌছে দিতে। গাড়িতে করে যাচ্ছিলাম আমরা। পথিমধ্যে আবার সেই কেয়ারটেকারের আত্মার সাথে দেখা হল।

আমি গাড়ি থামিয়ে তার সাথে কথা বলছিলাম। পাশে যে আমার স্ত্রী সেকথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু কেয়ারটেকার আমাকে যা বলল তা শুনে আমার কিছুটা টনক নড়ল। আত্মাটা যা বলছিল তা হলঃ
“তুমি এটা খুব অন্যায় করলে। মেরিনার সাথে যা হয়েছে তার জন্য দায়ী এডিসন ও তার বাবা।

কিন্তু তার বংশধরদের কি দোষ? তাদেরকে যে তুমি মেরিনার হাতে তুলে দিলে মেরিনা তো তাদের মেরে ফেলবে। এর জন্য তুমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে?যদি তাদেরকে বাচাতে চাও তাহলে মেরিনার আত্মাকে থামাও।

তা না হলে সে কাউকে ছাড়বে না। এমনকি তোমাকেও মেরে ফেলবে। “

তার কথা শুনে আমার ঘোর কাটল। নিজেকে বাচানোর সকল প্রচেষ্টা হারিয়ে ফেললাম। এই মুহূর্তে আমার জীবনের চাইতেও এডিসনের বংশরদের বাচাঁনো আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হল। কিন্তু মেরিনার আত্মাকে থামানোর উপায় আমার জানা ছিল না।

তাই কেয়ারটেকারের আত্মাকে জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে মেরিনার আত্মাকে থামানো যায়। আত্মাটা বেশিকিছু বলতে পারল না। এর আগেই আমার স্ত্রী ঘুম থেকে উঠে আমাকে ডাকতে শুরু করল। তাই আত্মাটাও উধাও হয়ে গেল।

সারদিনের ধকলে আমার গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আত্মার সাথে আমায় কথা বলতে দেখে আমার স্ত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করল গাড়ি থামিয়ে কার সাথে কথা বলছিলাম। কিন্তু এই মুহূর্তে তার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় আমার হাতে নেই।

তাকে একটা টেক্সিতে উঠিয়ে দেই আর বলি যে পরে সব বলব। তুমি এখন বাড়ি যাও। নিরুপায় হয়ে সে টেক্সিতে উঠে হ্যানরক্সের ফ্ল্যাটে চলে গেল।

আমার স্ত্রীকে নামিয়ে দিয়েই গাড়ি ঘুরিয়ে অভিশপ্ত ফ্ল্যাটের দিকে চললাম। বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে না গিয়ে পেছনের রাস্তায় ফ্ল্যাটের পেছনের দিকে চললাম যেখানে মেরিনার শরীর চাপা দেওয়া হয়েছিল।

সেদিকে যাওয়ার কারন হল কেয়ারটেকারের আত্মাটা মেরিনাকে থামানোর উপায় হিসেবে সুধু এটুকুই বলেছিল যে,’মেরিনার দেহকে’। আর বলার সুযোগ পায়নি। কিন্তু এতটুকু শুনেই বুঝতে পারলাম যে মেরিনার চাপা পড়া দেহটাকে কিছু করতে পারলেই মেরিনার আত্মাকে আটকানো যাবে।

তাই দ্রুত মেরিনার কবরে গেলাম। ফ্ল্যাটের পিছন খুব অন্ধকার তখন। রাতের ২টা বাজবে। আমার সাথে একটা ম্যাচবক্স আর চার্জলাইট ছাড়া কিছুই নেই। অনেক কষ্টে মেরিনার কবর বের করলাম।

চারদিকে কি রকম সুনসান অবস্থা বিরাজ করছে। গাছগুলোকে বিশাল বিশাল দৈত্য মনে হচ্ছিল। কিন্তু এসব ভাবার সময় নেই এখন। গাড়ি থেকে একটা চাইনিজ কোড়াল সাথেই নিয়ে এসেছিলাম। সেটা দিয়ে মাটি খোঁড়া শুরু করলাম। বেশ খানিকক্ষণ খোড়ার পর মেরিনার লাশ বেরিয়ে আসল।

তবে সেটা লাশ নয়। শুধু হাড্ডিগুলোই ছিল। আমি সেগুলোই গর্ত থেকে উপরে নিয়ে আসলাম। তারপর অতিদ্রুত এগুলোর উপর পেট্রোল দিয়ে আগুন দিয়ে পোড়াতে লাগলাম।

আগুন দেয়ার সাথে সাথে ফ্ল্যাট থেকে সেই ভয়ংকর চিৎকার আসতে লাগল। আর আমার নাম নিয়ে কুৎসিত ভাবে ডাকতে লাগল। আমি মনে মনে মেরিনার আত্মার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। আর বলতে লাগলাম এছাড়া আমার আর কোন পথ ছিল না মেরিনা। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।

লেখা – মোঃ রাইহান আহমেদ

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “অভিশপ্ত ফ্ল্যাট – vuter golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ। )

আরো পড়ূন – উচিত রিভেঞ্জ উইথ শিক্ষা – bd valobashar golpo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *