ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ২: আমার সাথে কেন এরকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে, কেনই বা ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছি না। এতদিন শুধু এগুলো ভুতের গল্প কাহিনী পড়ে আসছিলাম কিন্তু এখন দেখি আমার সাথে ঘটছে। জানি না কি হবে আমার? কি বা দোষ আমার?
অশরীর আত্মার বর্ণনা
সেই অশরীরী মাটিতে নামতে আর ২-৩ হাত বাকি। আমার চোখ ২ টি কেমন যেন বশ হয়ে গেছে! একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি সেই অশরীর দিকে।
হটাৎ করেই সেই অশরীর আমার দিকে তাকালো। তার চোখ দেখে আমি আর নিজেকে শক্ত করে রাখতে পারলাম না।
চোখ ২ টি যেন পচা মাছের চোখের মত বিশ্রি দেখাচ্ছে। চোখের কোনা দিয়ে কালো কালো রক্ত ঝরছে। আমি প্রায় বোমি করে দেওয়ার মুডে চলে আসছি।
তারপর….আমি দাঁড়িয়ে থেকেই সেই অশরীরের দিকে তাকিয়ে আছি।
হঠাৎ করে সে অশরীর একটা বেড়ালের রূপ ধরে আমার সামনে দিয়েই এক দৌড়ে কোথাও যেন উধাও হয়ে গেল। আর তখনই আমার হুঁশ ফিরে আসলো।
আমি যেখানে দেখেছিলাম,
সেই জায়গা থেকে এক দৌড়ে দিঘির পাড়ে চলে যাই়। মানে আমাদের দোকানের মধ্যে গিয়ে দেখলাম পলাশ এবং নাজিম দাঁড়িয়ে আছে।
শাফিনঃ কিরে, কখন আসলি তোরা?
পলাশঃ তোর ঘড়ির টাইম টা দেখবি?
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ৯ টা বাজে। আমি এতক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম? সন্ধ্যার পরেই আমি বাসা থেকে বাহির হয়েছি। তখন হয়তো ৬টা বাজবে।
এই তিন ঘন্টা আমি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম! অদ্ভুত ব্যাপার তো? আমার কাছে তো ৫ মিনিট মনে হল।
তেঁতুল গাছে আগুন
পলাশ এবং নাজিমকে কিছু বললাম না। জানি, যদিও বলে ফেলি, তারা এখান থেকে আবার লক্ষীধর পাড়া, মানে তাদের বাসায় ফিরে যেতে পারবেনা।
নাজিমঃ কি হলো, কি ভাবছিস?
শাফিনঃ না, কালকে রাতের কথা ভাবতেছি?
তখনই পলাশ বলল, আমি একটা কথা বলতে চাই।
সাথে সাথে নাজিম ও বলল, আমিও তো একটা কথা বলতে চাই।
আমি বললাম, তোরা দুজনেই যদি কথা বলতে চাস, তাহলে আমার কথা কে শুনবে?
আচ্ছা যাই হোক, যে যার মোবাইল ফোন বাহির কর।
নোটবুকে যে যার মনের কথাটা লিখে ফেল। শেষে একত্র করে দেখবো, কে কি বলতে চায়?
এরপর সবাই এক সাথে বললাম, ঠিক আছে।
আমি আমার ফোন বাহির করে লিখলাম, কাল রাতে আমি তেঁতুল গাছের মাথায় অনেক বড় অগ্নিকান্ডের দৃশ্য দেখেছি।
এরপর লেখা শেষ হলে আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, তোদের লেখা হয়েছে?
পলাশ এবং নাজিম দুজনে বলল, হ্যাঁ, আমাদের লেখা শেষ।
আমি তিন ফোন এক করে অদ্ভুত ভাবে বিস্মিত হলাম। একি তারাও লিখেছে কাল রাতে তেতুল গাছের আগায় আগুন দেখেছিল। আমার নোটবুকে লেখা টুকু দেখে তারাও বিস্মিত হয়ে যায়।
আমি বললাম,
শাফিনঃ আচ্ছা, সেই আগুন দেখার আগে কি তোরা কোন কিছু দেখেছিলি?
পলাশ ও নাজিমঃ না দোস্ত, আমরা সেরকম কিছু দেখিনি। শুধু পিছন থেকে কিছু একটা আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম। কিন্তু তোর বলাতে পিছনে তাকালাম না।
শাফিনঃ তোরা কোন সাদা পাঞ্জাবি পরা কালো চেহারা দেখতে পাস নি?
পলাশ ও নাজিমঃ না দোস্ত, আমরা তেমন কিছু দেখতে পাইনি। কেন, তুই দেখেছিস নাকি?
শাফিনঃ নাহ, আমিও দেখি নি! তোদেরকে ভয় লাগানোর জন্যে বলেছি ।হা হা হা (তারা যেন ভয় না পায়, সেজন্য অভিনয়টা করতে হল।
ভৌতিক পরিবেশে গল্প
এরপর আবারো বললাম,
শাফিনঃ যাই হোক, রাত অনেক হয়ে গেছে, এখন বাসায় চলে যা।
পলাশ ও নাজিমঃ হ্যাঁ, তা তো যাবোই কিন্তু!
শাফিনঃ কিন্তু কি?
পলাশ ও নাজিমঃ আরে…এই যে রাস্তা। পকেটে সিগারেট একটাও নাই।
তখন আমার পকেটও খালি। সিগারেট একটা তো হাতে নিয়ে যেতেই হবে। কোন সময় আবার কী ঘটে বসে?
শাফিনঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আমার নাম করে নুরুজ্জামান এর দোকান থেকে দশটা সিগারেট নিয়ে যা।
পলাশ ও নাজিমঃ ঠিক আছে দোস্ত, তাহলে আমরা গেলাম।
শাফিনঃ ঠিক আছে, আল্লাহ হাফেজ।
আমি তাদেরকে বিদায় দিয়ে নিজের বাসার দিকে আবার রওনা হলাম। অবশ্য আমার সিগারেট কিনা লাগবো না, কারণ আমার পকেট এ দু একটা ছিল মনে হয়। হাত দিয়ে দেখি দুইটা সিগারেট আছে। একটা সিগারেট ধরিয়ে বাসার দিকে এগোতে লাগলাম। আস্তে আস্তে সেই তাল গাছ বরাবর চলে আসলাম। তখন আমার চোখে কিছুই দেখা দেয়নি। মনের মধ্যে সাহস রেখে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লাম।
দরজায় নক করতেই আম্মু বলে উঠলো,
আম্মুঃ রিয়াজ নাকি!
শাফিনঃ হ্যাঁ আম্মু, আমি। দরজা খুলো।
দরজা খোলার পরে আমি আমার রুমে চলে গেলাম।
আম্মুঃ কিরে, ভাত খাবি না?
শাফিনঃ না আম্মু, খিদে নেই।
আমি রুমের মধ্যে শুয়ে শুয়ে সবগুলো কথা চিন্তা করতেছি – পলাশ, সুমন, নাজিম তারা সেই জ্বীনটাকে দেখেনি কাল রাতে। শুধুমাত্র আমি নিজেই দেখেছি। আজকে আবার তাল গাছের নিচে এই অশরীরটাকে দেখেছি। তার মানে আমি পিছনে তাকানোর জন্য অশুভ আত্মা আমার পিছনে পড়ে গেছে নাকি। না, এমনটা হবে কেন? আমি তার দিকে তাকিয়েছি কিন্তু কোন ক্ষতি তো করিনি।
আর আমাকে ডেকেছে বিদায় আমি পিছনে তাকিয়েছিলাম, এখানে আমার দোষ কোথায়? চার পাঁচ না ভেবে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বলতেও পারব না! হটাৎ আমার জানালার পাশে একটা শব্দ শুনতে পেলাম। কেউ যেন ঠকঠক শব্দ করে আমার জানালায় আঘাত করছে। আমি ঘুম থেকে এক লাফে উঠে বসে পরলাম।
শাফিনঃ কে বাহিরে, কে? জানালা এভাবে পিটাচ্ছিস কেন?
তখনই সব আবার নিরব হয়ে গেল। আমি আবার শুয়ে পড়েছি। এবার আগের থেকে আরো জোরে ঠক ঠক ঠক ঠক আওয়াজ করতে লাগল। এবার খুব ভয় পেয়ে গেলাম।
ভয় দেখানো
বিছানা থেকে নেমে টর্চ লাইট হাতে নিলাম। দরজাটা খুলে বাহিরে জানালার পাশে এসে লাইট মেরে দেখলাম, আশেপাশে কেউই নেই। তাহলে আমার জানালায় আঘাত করলো কে?
ভাবলাম, হয়তো ঘুমের মধ্যে ভুল শুনেছি। এমন সময় আমার পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেলাম।
ভাবলাম, এবার আর পিছনে তাকাবো না, পিছনে তাকালেই হয়তো আমি তাকে দেখতে পারবো। আর যদি সেটা কোন অশুভ আত্মা হয় তাহলে তো হয়েছে। আমি সামনের দিকে এক পা বাড়ালাম, এমন সময় আমার কাঁধের মধ্যে কেউ হাত দিল।
আমি সাথে সাথেই ব্রেক মারলাম। আমার চোখ ২ টি খাড়া করে পেলছি। ভয়ে ঢোক গিলতে লাগলাম, কিন্তু পিছনে আজ তাকাবই না।
তবে কাদের মধ্যে যে হাতটা রাখল, সেই হাতটা বরফের মত ঠান্ডা। এখন শীতকাল চলে গেছে। তারপরেও আমার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে যেন আমার কাঁধের উপর কোন এসি বসানো।
আমি ভয়ে কাপতে কাপতে এক হাত দিয়ে কাধের উপর থেকে হাতটা ধরে নামিয়ে দিলাম।
বিশ্বাস করুন, যখন আমি হাতটা ধরেছি। আমার হাত ঠাণ্ডায় জ্বলে যাচ্ছিল যেন আমি অনেক অনেক অনেক ঠান্ডা একটা বড় বরফ হাত দিয়ে ধরেছি।
হাতটা নামিয়ে দিয়ে যেই আবার আরেকটু সামনে ১পা গেলাম। তখনই আবার সেই হাত আমার কাঁধে বসিয়ে দিল। চলবে….
পরের পর্ব- ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ৩