এলিয়েন রহস্য পর্ব ১০ – এলিয়েন মানবের গল্প: তাইসন শক্তি বাড়িয়ে যাচ্ছে, এখনেই তাকে পরাজিত করতে না পারলে সামনে শ্রাবনের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাবে। এদিকে দেশের প্রশাসন ব্যাপক চেষ্টা করে যাচ্ছে। শ্রাবণের ভয় হয় তারা তাইসনকে মারতে গিয়ে আবার স্নেহাকে যেন মেরে না ফেলে কারণ তাইসন স্নেহার শরীরে বাস করছে, তার মানে এখন স্নেহাকে টার্গেট করবে প্রযুক্তি টিম। কিন্তু শ্রাবণ জানে না যে সেও কিছু মানুষ মেরেছে যা তারা দেখেছে এবং সেও তাদের টার্গেট।
ভয়ানক আক্রমণ ও শ্রাবণের নিথর দেহ
শ্রাবণ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিপ বিপ বিপ শব্দের পর বুমমমম করে একটি ভয়ানক বিষ্ফোরণ ঘটে। সাথে চারদিকটা সবুজ ঘন তরলে মাখামাখি হয়ে যায়। শ্রাবণেরদেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে মাটিতে পরে থাকে। আবছা অন্ধকারের ভিতর থেকে বের হয়ে আসে ডিস্ট্রয়ার সেভেন, বর্ণকে উদ্দেশ্য করে ডিস্ট্রয়ার সেভেন বলে উঠে, “মিশন কম্পলিট স্যার”।
বর্ণর কথা মত ডি সেভেন আস্তে আস্তে আলাদা হয়ে পরে থাকা শ্রাবণের একটি হাত সহ মাথার দিকে এগিয়ে যায়। চারদিকে সবুজ রঙএর হালকা ধোঁয়া উড়ছে। আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শ্রাবণের দেহের ছিন্ন ভিন্ন অংশবিশেষ। খুব এক্সাইটেড লাগছে বর্ণর। যেখানে পুরো বাংলাদেশের সিকিউরিটি সিস্টেম ফেইলড, সেখানে ভীনগ্রহ থেকে আগত দুই প্রাণীটির একটিকে মুহুর্তেই উড়িয়ে দিলো তার নিজের রোবট।
নাইট ভিশন ক্যামেরা থেকে রোবটের চোখে দৃষ্টিগোচর হওয়া সব কিছুই দেখে চলেছে বর্ণ, রোবট টি শ্রাবণের বিচ্ছিন্ন মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই বর্ণ একটি চিৎকার দিয়ে এক লাফে চেয়ার ছেড়ে উঠে যায়। জহির আংকেল এবং তুরাণ দৌড়ে আসে বর্ণর কাছে শশব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, কি হলো!
বর্ণ অংগুল দিয়ে মনিটরের দিকে নির্দেশ করে। মনিটরে ভাসছে একটি মানুষের শরীরের একাংশ, শুধু হাত মাথা এবং বুকের একপাশ ছাড়া বাকি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কিছুই নেই। ক্ষত দিয়ে মোমের মত গলে পড়ছে সবুজ তরল। যদিও নাইট ভিসন ক্যামেরায় কালার দেখা যায়না, কিন্তু ডি সেভেন এর চোখের পর্দায় কোনটি কি রঙ তা লেখা হয়ে উঠে স্বয়ংক্রিয় ভাবে। বর্ণ জানায় এই মনিটরে থাকা ছেলেকে সে আগে থেকেই চিনে। হয়ত পরিচয় নেই। তবে দেখেছে বহুবার।
ম্যাট্রিক্সম্যান শ্রাবণ
বর্ণ যেখানে জিম করে, এই ছেলেও সেই একই জায়গায় ব্যায়াম করতে আসে। যদিও গত মাসে একদিন ও এই ছেলেকে দেখেনি, কিন্তু আগে তাদের প্রতিদিন ই দেখা হতো। সেই কম কথা বলা ছেলেটির চেহারা এখানে এভাবে দেখতে পাবে, বর্ণ তা কল্পনাও করতে পারে নি। তুরাণ ও জহির আংকেলের সাথে যখন বর্ণ এসব নিয়ে কথা বলে চলেছিল, ঠিক তখন ই ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা,মাথার বিচ্ছিন্ন অংশটি চোখ মেলে তাকালো। সবুজ রঙা চোখ। সাথে সাথে বর্ণের কথা একদম চুপ হয়ে গেল।
তিনজনেরই দৃষ্টি মনিটরে আটকে আছে। ডি সেভেনের দিকে বিভৎস একটি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে মাথাটি। চারপাশের বিচ্ছন্ন অংশ থেকে অদ্ভুত চিকন ফাইবারের মত সুতো বের হতে শুরু হয়। তুরাণ বর্ণকে পরামর্শ দেয়, এখনি পুনরায় হামলা করতে, কিন্তু বর্ণ তা করে না। বর্ণ দেখতে চায়, আসলে কি ঘটতে চলেছে। ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হওয়া টুকরোগুলো থেকে শিকড়ের জালের মত তন্তু বের হতে শুরু করে এবং সবচেয়ে কাছের অপর অংশের সাথে যুক্ত হতে থাকে, এভাবে আস্তে আস্তে শ্রাবণের দেহের পুরো অংশই জোড়া লেগে যায়।
হা হয়ে সবকিছু দেখতে থাকে বর্ণ, তুরাণ এবং জাকির আংকেল। তাদের মনে হচ্ছে যেন চোখের সামনে কোন মুভির সিন দেখে চলছে তারা। শ্রাবণের দেহ সম্পূর্ণ জোড়া লেগে যাওয়ার পর পর ই উঠে দাঁড়ায় সে। আস্তে আস্তে হেঁটে রোবটের একদম কাছে চলে আসে। শ্রাবণের শরীরে কোন প্রকার কাপড় চোপড় না থাকায়, জহির আংকেল এক হাত দিয়ে তুরাণের চোখ চেপে ধরে। বর্ণ শ্রাবণের সাথে কমিউনিকেশন করার চেষ্টা করে, রোবটটি শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, হু আর ইউ?
শ্রাবণ কোন প্রকারের উত্তর দেয় না।
তার মুখের সেই বাঁকা হাসিটার কোন প্রকার বিকৃতি না ঘটিয়ে ডি সেভেনের কানের পাশে নিজের হাত নিয়ে যায়। চারপাশটা তখন নিরবতায় স্তব্ধ হয়ে আছে। কোন প্রকারের টু শব্দ নেই। শ্রাবণ দু আংগুলের মাথা এক করে ডি সেভেন এর কানের পাশে ছোট্ট একটি তুড়ি বাজায়। সাথে সাথে উচ্চ কম্পাঙ্কের চিকন এবং তীব্র শব্দ ছড়িয়ে পরে চারদিকে।
ব্যর্থ প্রচেষ্টা
ডি সেভেন এর ভিতরে সেট করা ক্যামেরা লেন্স সহ সমস্ত ক্যাবল শব্দের কম্পাঙ্কের তীব্রতায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আশেপাশের বিল্ডিং এর সকল জানালার গ্লাস ঝনঝন শব্দে ভেংগে পড়ে। উপরে উড়তে থাকা ড্রোনগুল অকেজো হয়ে মাটিতে পতিত হয়। যারা নিজেদের বাসার ভিতরে জীবন হাতে নিয়ে লুকিয়ে ছিল তাদের কান ফেটে রক্ত বের হতে শুরু করে।
বর্ণর সাথে ঐ জায়গাটির যোগাযোগ সম্পূর্ণ রুপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জহির আংকেলের চোখ মুখে কান্না করার মত ভাব চলে আসে। শুধু মাত্র এক তুড়িতেই সব কিছু ওলট পালট করে দেয়া কারো বিপক্ষে কাজ করছে এটা ভাবতেই সে ভয়ে শিউরে উঠছে বার বার। তুরাণ বর্ণের আদেশ অনুযায়ী, তাইসনের হামলার শিকার হওয়া জায়গাটির ওখানে থাকা কিছু ড্রোণ উড়িয়ে ডি সেভেনের কাছে নিয়ে আসে।
চারদিক থেকে মানুষের চিৎকার চেঁচামিচির আওয়াজ ভেসে আসছে। ঘুমন্ত কোন মানুষ হঠাৎ এরকম একটা আক্রমণের শিকার হলে ঘুমের মাঝেই হার্ট ফেইলর হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চারদিকের ইলেক্ট্রিসিটি সহ অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত তারগুলো সব ছিড়ে গিয়েছে। ডি সেভেন বিধ্বস্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পরে আছে। আশেপাশের কোথাও শ্রাবণকে দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য শ্রাবণকে কোথাও দেখতে না পাওয়ায় হাফ ছেড়ে বাঁচে বর্ন, নইলে শেষ ড্রোরগুলোকেও হয়ত বাঁচানো যেত না।
ডি সেভেনকে বাসায় নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু বর্ণ এখন ই ডি সেভেনকে উদ্ধার করতে নেমে পরবে, এতটাও বোকা নয় সে। আবার ভোরের আলো ফুটে গেলে সবাই ভাববে এই বিভীষিকা ঘটানোর পিছনে হয়ত বর্ণের রোবটই দায়ী। একটা দোটানার মাঝে পরে যায় বর্ন।
সে খুব ভালো ভাবেই অনুধাবন করতে পারে, এমন শক্তিশালী কোন এনিমির বিপক্ষে লড়তে হলে শক্তিশালী কাউকেই প্রয়োজন। বর্ণকে দ্বারা এ সমস্যার সমাধান করা একেবারেই অসম্ভব। দুজন অদ্ভুত মানুষ, দুজনের এবিলিটিই অনেক উচ্চ মাপের। একজনকে তো টাচ ও করা যায় না। অপরজনকে টাচ করা গেলেও কোন প্রকারের লাভ হয় না।
এরা দুজন মিলে হয়ত পুরো পৃথিবীই কব্জা করে ফেলবে একসময়ে। ভাবতে ভাবতে অনেকটাই নিরাশ হয়ে পরে বর্ণ। শ্রাবণ ছেলেটাকে দেখে কখনোই বর্ণের মনে হয়নি, ওর ভিতরে এমন কিছু পাওয়ার থাকতে পারে।
প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা
বর্ণকে নিরাশা হতে দেখে তুরাণ এবং জাকির আংকেল শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে।
ভাগ্যের হাতে সবকিছু ছেড়ে দিতে বললেও বর্ণ ভাগ্যকে মেনে নিতে নারাজ।
ভাগ্য কম্পলিকেটেড একটা জিনিস। যা ই হোক না কেনো সেটা ভাগ্যেই পূর্বনির্ধারিত ছিলো এটা খুব বাজে একটা কন্সেপ্ট।
তাহলে কে দোযখে যাবে কিংবা বেহেশতে সেটাও যদি ভাগ্য নির্ধারিত থাকে, তবে সৃষ্টি কর্তার উপাসনা করার প্রয়োজন হত না। চেষ্টায় সব কিছু পরিবর্তন হয়। ভাগ্যটাও।
তুরাণ বর্ণকে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করে, রিভার্স ইউনিভার্সের সমস্যা ই সমাধান হলো তোমার দ্বারা, আর এটা তো নিজের দুনিয়ার সমস্যা। ওদের কোন না কোন একটা দুর্বলতা রয়েছে। এটা তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে।
বর্ণ উত্তর দেয়,
আগে ডি সেভেন কে বাসায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
তুরাণঃ সকাল না হলে যাওয়াটা ঠিক হবেনা। শ্রাবণ আশেপাশে থাকে যদি?
বর্নঃ সেটা তো সকালেও থাকতে পারে।
তুরাণঃ সকালে লুকিয়ে থাকে।এখন পর্যন্ত সকালে কোন প্রকারের দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
বর্ণঃ দুর্বল না হলে কেউ কখনো লুকায় না।
ইয়েস! এটাই হবে। ওদের দূর্বলতা তাহলে সকাল, পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে, সূর্য।
তুরাণঃ অথবা তীব্র আলো।
বর্ণঃ ঠিক ধরেছিস।
জহির আংকেলঃ এ বিষয়টি তো আমি আগেই বুঝেছি। এটা আর এমন কি?
ওদের দিনের বেলায় খুঁজে বের করে একটা ব্যবস্থা করতে হবে ।
তারপর তিনজনই চুপচাপ থাকে কিছুক্ষণ।
নতুন প্ল্যান
বর্ণ তার পকেটে হাত দেয়।
ন্যাশের দিয়ে যাওয়া ছোট্ট ডিভাইসটি খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে বর্ণ। হয়ত ন্যাশকে রি -কল করার সময় হয়েছে। এ সময়টাতে বন্ধু ন্যাশের হেল্প খুব জরুরী হয়ে গিয়েছে।
ছোট্ট লাঠির মত ডিভাইসটিতে খুব সুক্ষ্ম একটা বাটন খুঁজে পায় বর্ন।
চা বানিয়ে নিজের বাবা কে খেতে দিয়ে নিজেদের জন্য রান্না করতে বসেছিলো লিন্ডা। হঠাৎ করে বাসার কমিউনিকেশন জোন এ রিং বেজে উঠায় চমকে উঠে সে। কমিউনিকেশন জোনে সাধারণ কল আসে না। কখনো সরকারের সিকিউরিটি টিম লিন্ডা ও ন্যাশক দের ডিভাইস হ্যাক করার চেষ্টা করলে আগাম সতর্কতার জন্য কমিউনিকেশন জোনে এলার্ম বেজে উঠে, অথবা ন্যাশ খুব গুরুত্বপূর্ণ কারো সাথে কথা বললে কমিউনিকেশন জোন ইউজ করে। লিন্ডা হাজারো চিন্তা মাথায় নিয়ে জোনের ভিতরে ঢুকে দরজা লাগানর সাথে সাথেই বর্ণের আঁকাবাঁকা চেহারা দেখতে পায়। সাথে সাথে খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠে লিন্ডা। এভাবে হঠাৎ এতদিন পরে বর্ণের দেখা পেয়ে যাবে কল্পনাও করতে পারেনি সে।
এদিকে বর্ণের হাতে থাকা ডিভাইসটির উপরে হঠাৎ করে লিন্ডার হলোগ্রাফিক ত্রিমাত্রিক ছবি ভেসে উঠতেই জহির আংকেল একটা বিকট চিৎকার দিয়ে উঠে। বেচারা ভয়ে প্রায় হার্টফেল করার মত অবস্থায় চলে গিয়েছিল।
বর্ণ এসবের সাথে আগে থেকেই পরিচিত।
তুরাণ অবাক হয়ে হলোগ্রামের লিন্ডাকে দেখছে।
বর্ণ লিন্ডাকে দেখে কোন কথা না বাড়িয়েই জিজ্ঞেস করে-
লিন্ডা, হয়্যার ইজ ন্যাশ? আই নিড হিজ হেল্প। চলবে…
পরের পর্ব- এলিয়েন রহস্য পর্ব ১১ – এলিয়েন মানবের গল্প