ভয়ানক ভৌতিক গল্প ১

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১: বিচিত্র এই পৃথিবীতে কত ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত তা কি আমরা জানি? এমন অনেক অজানা কাহিনী বা চরিত্র আমাদের চারপাশে ঘুরোঘুরি করছে, যা আমরা স্বাভাবিক মনে করি। কিন্তু অনেক স্বাভাবিক বিষয় একটু গভীরে তদন্ত করলে অনেক রহস্য বের হয়ে আসবে। এমনি এক অশুভ আত্মার প্রতিশোধ নিয়ে ঘটে যাওয়া ভৌতিক ঘটনা লিখেছেন- রিয়াজ হোসেন ইমরান। চলুন তার মুখ থেকে এই গা ছমছম করা অবিশ্বাস্য গল্প শুনি।

রহস্যময় তেতুল গাছ

রাত তখন ০২:৪৮।

চারপাশে নিরবতা ছেয়ে গেছে। বিদঘুটে অন্ধকার আর ঝি ঝি পোকার শব্দে চারদিক মুখরিত। সেই রাতে আমরা চারজন বন্ধু মিলে যাচ্ছিলাম ভোলাকোট তিন রাস্তার মোড়ে এক তেঁতুল গাছের নিচ দিয়ে।

আমি (শাফিন), পলাশ, সুমন, নাজিম। কাজ শেষ করে সে রাস্তা দিয়ে আসার কথা। আমরা আগে থেকে একটু ভয় পেয়ে ছিলাম। অবশ্য ওই রাস্তাটা নাকি খারাপ। লোকের মুখে শোনা যায়, সে তেঁতুল গাছটিকে নাকি কেউ কাটতে পারে না।

তেতুল গাছে আঘাত করলে সেই গাছ থেকে অবিরাম রক্ত পড়তে থাকে এবং যে লোক তেতুল গাছে আঘাত করে, তার কিছুদিনের মধ্যে মৃত্যু হয়ে যায়। সেই ভয়ে তেতুল গাছটি কাটার জন্য সাহস হয়নি কারো।

এরকম অনেক ঘটনা নাকি আগেও ঘটেছে। সেজন্য আমার একটু ভয় পেয়েছিলাম, কারণ একটু পরেই তেঁতুল গাছের নিচ দিয়ে যেতে হবে আমাদের, এছাড়া আর কোন রাস্তাও নেই যে আমরা যেতে পারবো।

আমরা যখন তেঁতুল গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন রাত্রি ২:৫০ কিংবা তার চেয়ে ২-৩ মিনিট বেশি হবে। প্রথমে ততটা ভয় পাইনি।

আমরা যখনই এগোতে লাগলাম, ততই তেঁতুল গাছ আমাদের কাছাকাছিই আসতে হচ্ছে।

শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ পতঙ্গ কেমন একটা ঠান্ডা শিহরণে জেগে উঠলো। অনূভূতিটা হয়ত আমি বুঝাতে পারছিনা। তবে এইটুকুই বলতে পারি, ধীরে ধীরে শরীরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমাদের।

ভাবলাম বনের বাঘে খায় না তো, মনের বাঘে খায়। হয়তো এরকম কিছুই আমরা ভাবছি। ভূত প্রেত বলতে কিছুই নেই, এইটা বলে আমি বাকি তিনজনকে সান্তনা দিচ্ছি।

কিন্তু নাজিম আমাদের সবার থেকে বয়সে অনেক ছোট। ওর দিকে তাকিয়ে বুঝলাম খুব ভয় পেয়ে আছে। আমার হাতটা এত জোরে ধরে ছিল যে, মনে হতে লাগলো কিছুক্ষণ পর সে নিজে আমার হাতের রক্ত চলাচল বন্ধ করে দিবে।

একটা ভারি বস্তু তোলার সময় মানুষ যতটা শক্তি ব্যয় করে, ততটা শক্তি দিয়ে নাজিম আমার হাত চেপে ধরেছে ভয়ে। আমিও তাকে সাহস দেওয়ার জন্য হাতটা এগিয়ে দিলাম।

আমরা এখন সেই তেঁতুল গাছটার নিচে চলে এসেছি।

ভয় ও নিরবতা

আগেই বলে রাখা ভাল, রাস্তার মাঝখানে গাছটি অবস্থিত। আমরা কাঁচা রাস্তা (মাটির রাস্তা) দিয়ে আসছি। পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে যাচ্ছি।

তিন রাস্তার মাঝ বরাবর থেকে উত্তর দিকে একটা রাস্তা আছে। উত্তর দিক থেকে পূর্ব দিকে যেতে হয়। আমরা যে রাস্তা দিয়ে বাহির হচ্ছি, এইটা পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে।

এই তিন রাস্তার মাঝখানে গাছটি অবস্থিত।

আমরা যে কাঁচা রাস্তা দিয়ে আসতেছি, তখন যদি কোন মানুষ কিংবা পশুপাখি যেটাই হোক, আশেপাশে থাকলে আমরা স্পষ্ট দেখতে পারতাম।

কারণ যে রাস্তা দিয়ে আসছি আমরা, সেই রাস্তার দুপাশে ছিল ২টা বিল। বিলের মধ্যে তখন প্রচুর পরিমাণ পানি জমা ছিল।

সেখানে কোন ভাবেই কারো অবস্থান করার জায়গা নেই। আর আমাদের সামনে কোন মানুষ থাকলে আমরা অবশ্যই তাদের দেখব।

সেই হিসেবে আমি শিওর হয়ে বলতে পারি, আমাদের আশেপাশে কেও ছিল না। আর তখন তো আমি কাওকেই দেখতে পেলাম না।

মনে মনে ভয় পাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু ততটা না। আমার হাতে একটা সিগারেট ধরানো আছে।

সিগারেট থাকলে নাকি অশরীর কোন কিছু কাছে আসতে পারে না। সেজন্য আগে থেকেই সিগারেট নিয়ে নিয়েছিলাম।

অনেকটা ভয়ের চাপ পার করে কোনো রকম ৩ রাস্তার মাঝখানে উঠলাম। আগে বলেছিলাম যে আমরা সেখানে কাওকেই দেখিনি। I mean কেও থাকলেও আমরা দেখতে পারতাম।

অশরীরি আত্মার ডাক

এরপর তিন রাস্তার মাঝখানে উঠে সামনে ২৫ থেকে ৩০ হাত চলে গেছি।

এমন সময় পেছন থেকে কেউ গম্ভীরমুখে বলে উঠল,

  • কোথায় যাস, দাঁড়া…!

আমি আওয়াজটা শুনেই থমকে গেলাম। নিজের দুটি পা যেন রক্ত শূন্যে হয়ে গেছে। হাটার শক্তিই পাচ্ছিলাম না।

তবে আবাক হয়েছি এই কারণে যে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি কেও পেছনে তাকাল না।

সাহস নেওয়ার জন্য ভাবলাম, হয়তো আমিই ভুল শুনছি। যদি কেও সত্যিই ডাকতো,তবে এদের মধ্যে কেও তো পিছনে তাকিয়ে দেখতো। আমিও ভূল শুনেছি ভেবে পিছনে তাকালাম না।সোজা হাটতে লাগলাম। আবার যখন সেই গম্ভীরমুখের আওয়াজ থেকে ভেসে আসলো,

  • রিয়াজ দাঁড়া…!

তখন আমি কি বলবো, আমার শরীরের সমস্ত লোম দাঁড়িয়ে গেছে। চুলের মাঝখান দিয়ে টপটপ করে ঘাম ঝরছে ভয়ে। আমার হাত পা অবশ হয়ে গেছে।

কিন্তু কেও পিছনে তাকানোর আগেই আমি পিছন দিকে তাকিয়ে যা দেখলাম, তার জন্য কখনো মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমার জীবনের প্রথম, আমি এরকম একটা ভয়ঙ্কর রূপ দেখেছি।

একটা বিশাল বড় লম্বা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে সে তেতুল গাছের নিচে। উনার পাও জমিন থেকে ২ হাত উপরে এবং মাথা তেতুল গাছের আগা (উপরিভাগ) পেরিয়ে গেছে।
এত লম্বা মানুষ?

না মানুষ বললে ভুল হবে। এইটা একটা অশরীর।

আমি সেটা দেখে ভয়ে যেন আর চলাচল করতে পারছি না।

ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, চাঁদের আলো থাকা সত্ত্বেও মুখ দেখা যাচ্ছে না।

ভয়ানক পরিস্থিতি

এতো কালো চেহারা, যা বলার বাহিরে। তবুও এইটুকু বলতে পারি যে, উনার চেহারার মধ্যে যদি কোন এল ই ডি লাইট মারা হয়। সে লাইটের আলো সে চেহারায় যাবে ঠিকই, কিন্তু চেহারা আলোকিত হবে না। এতই কালো উনার চেহারা।

আর চোখ গুলোও খুব ভয়ংকর, এবং মুখের চাড়মা গুলো যেন ১২০ থেকে ১৫০ বছরের কোন বয়স্ক লোকের।

পা থেকে মাথা পর্যন্ত কালো সব। হাতে ছিল অসংখ্য লম্বা লম্বা কালো লোম।

সাদা পাঞ্জাবির মতো কিছু একটা পড়ে দাঁড়িয়ে ছিল সে তেতুল গাছের নিচে।

আমি সেটাকে দেখে মুখ দিয়ে কোন সূরা বলতে চাইছিলাম। কিন্তু আমার দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না।

নামাজের মধ্যে দাঁড়ালে অটোমেটিক মুখ দিয়ে সূরা বের হয়ে যায়, আর তখন আমি মনে করতে চেয়েও পারিনি।

এমন দৃশ্য দেখে তাড়াতাড়ি সামনে তাকিয়ে সবাইকে বললাম,

  • কেউ পিছু ফিরে তাকাস না!

(আমার কথা শুনে পলাশ চলতি অবস্থায় প্রশ্ন করল)

  • কেন, কি হচ্ছে পিছনে? (একটু রেগেই বললাম)
  • ভুলেও পিছনে তাকাস না, বলছি তাকাবিনা। সামনে যেতে থাক।

(পরবর্তীতে তারা হয়তো কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে… আমরা একটু সামনে এগিয়েছি মাত্র। বলে রাখি, সামনে গিয়ে একটা মোড় আছে। এই রাস্তার মোড়টা হচ্ছে একটা বিলের পাশ দিয়ে। বিলের উপাশে পাশে হচ্ছে তেঁতুল গাছ। আমরা যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, সেই রাস্তার মোড় ঘুরলেই এপাশ থেকে তেতুল গাছ দেখা যাবে।)

ঐ পাশে আমরা মোড় ঘুরে মাত্র গেলাম।

তার সাথে সাথেই পিছনে কিছু একটা আওয়াজ আন্দাজ করতে পেরেছি।

আওয়াজটা এমন ছিল, যেন কোন ঝড় প্রচন্ড গতি বেয়ে আমাদের দিকে আসছে। আমি মনের অজান্তেই হুট করে পিছনে তাকাই। তখন দেখলাম সেই তেঁতুল গাছের মাথায় অনেক বড় অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে। আগুনের কালারটা ছিল নীল কালার।

চোখের সামনে অলৌকিক ঘটনা

আগুনটা তেতুল গাছের মাথা থেকে যেন আসমান পর্যন্ত উঠে গেছে। এতই লম্বা ভাবে আগুন জ্বলছিলো। আমি দেখে যেন নিজেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছি। কারণ হটাৎ করেই এখানে কোন ভাবেই আগুন লাগার কথা নয়। আর ২য় কারণ হচ্ছে এত উপরে আগুন উঠবে কেন। আমি তো আগুনের উপরের শেষ অংশ ও দেখতে পাচ্ছিনা।পুরো বিজলির মত লম্বা।

অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল রেখে আবার সামনে তাকিয়ে বললাম,

  • সবাই একটু জোরে জোরে হাটতে থাক।

(সবাইতো হাঁটতে লাগলাম… কিন্তু পরে আর কোন আওয়াজ কিংবা সাড়াশব্দ পেলাম না। সামনেই ভোলাকোট একটা ছোটখাট মাদ্রাসা আছে, মাদ্রাসার পাশেই ছিল একটা মসজিদ। সেই মসজিদের পাশে যেতেই আমার শরীর স্বাভাবিক ভাবে হয়ে আসলো। এতক্ষণ শরীর ভার ছিল। কোন রকম পলাশের বাড়ি অব্দি এসেই সেখানে রাতটুকু পার করে দিলাম। তারপরেই আমার জীবনে নেমে আসে ভয়ঙ্কর সব দিনগুলো। পরের দিন সন্ধ্যাবেলা আমি বাসা থেকে বের হচ্ছিলাম।

আমাদের বাসার সামনে একটা মসজিদ আছে, মসজিদের সামনে একটা বিশাল বড় পুকুর এবং সে পুকুরে পাশে, মানে রাস্তার পাশ আর পুকুরের পাড়ে একটা তালগাছ ছিল।
অনেক বড় তাল গাছ। সেই তাল গাছে নাকি একটা সাদা বেড়াল থাকে। অনেকে দেখেছিল সেই বেড়ালটা।

আসলে বেড়ালের কোন কিছুনা। আমার সাথে গতকাল রাত্রে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা মনের মধ্যে গেথে গেছে। এখনো কাউকে কিছু বলিনি। তাই হয়ত ভয়টা একটু বেশিই প্রেসার দিচ্ছে।

কখনো এই তালগাছের নিছ দিয়ে দোকানে যাওয়ার সময় ভয় পাইনি। তবে সেদিন কেন এত ভয় পাচ্ছিলাম, বুঝতেছিলাম না? একটু সাহস আনার জন্য পলাশ আর নাজিমকে ফোন দিয়ে বললাম)

  • তোরা সবাই দিঘীরপাড় চলে আয় কথা আছে।

(ওরা আসতে আসতে ২০-৩০ মিনিট লাগবে। সন্ধ্যার নামাজ শেষে সবাই বাড়ি চলেও গেছে। এইদিকে অন্ধকার নেমে আসে। আমি দোকানে যাওয়ার জন্য সেই তাল গাছের নিচ দিয়ে যাচ্ছিলাম। ট্রাস্ট মি,তখন আমার সাথে এমন একটা ঘঠনা ঘটে গেল,যেটা কখনোই ভূলার মত নয়।

দেখলাম মানুষের মত কিছু একটা তালগাছের উপর থেকে নেমে আসছে উল্টো হয়ে। মানে সেই জিনিসটার হাত নিছের দিকে,এবং পা উপরের দিকে করেই নিছের দিকে নেমে আসছে। আমি দৌড়াবো নাকি হাটবো নাকি কি করবো কিছুই মাথায় কাজ করছিলো না।

পুরো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি। অশরীরটা তালগাছ থেকে নিছে নামতে নামতে প্রায় অনেক চলে এসেছে। সেই অশরীরী মাটিতে নামতে আর ২-৩ হাত বাকি।
আমার চোখ ২ টি কেমন যেন বশ হয়ে গেছে। হটাৎ করেই সেই অশরীর আমার দিকে তাকালো। তার চোখ দেখে আমি আর নিজেকে শক্ত করে রাখতে পারলাম না। চোখ ২ টি যেন পচা মাছের চোখের মত বিশ্রি দেখাচ্ছে। চোখের কোনা দিয়ে কালো কালো রক্ত ঝরছে। আমি প্রায় বোমি করে দেওয়ার মুডে চলে আসছি)। চলবে….

পরের পর্ব- ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *