ইচ্ছাধারী নাগ – মানুষরূপী ভয়ংকর সাপের গল্প

ইচ্ছাধারী নাগ – মানুষরূপী ভয়ংকর সাপের গল্প: অনিক ভাই একটা মানুষ না। ওনি একটা ইচ্ছাধারী নাগ। আর এ বিষয়টা শুধু আমি জানি। আর অনিক ভাই অয়নীর সাথে ভালোবাসার নাটক করছে শুধু স্বার্থ হাসিলের জন্য। আভার কথা শোনে তানভীর যেন অবাক না হয়ে পারল না। মানুষ আবার সাপ হয় কিভাবে উত্তরটা যেন খোজে পাচ্ছিল না।


পর্ব ১

সাত, সাত বার সাপে কাটার পর ও যখন আমার বি এফ এর কিছু হল না তখন ব্যাপারটা কেন জানি না আমি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছিলাম না।

সাধারণ কোন বিষবিহীন সাপ কামড় দিলে হয়তো আমি বিষয় টা স্বাভাবিক ভাবে মানতে পারতাম। কিন্তু আমার সামনে একদিন একটা বিষাক্ত সাপ ওকে কামড় দিল। ও প্রথমে একটু ঝিম ধরে বসে ছিল তারপর স্বাভাবিক মানুষের মত চলতে লাগল। আমি তারাহুরা করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম ডাক্তার বলল, কিছুই হয় নি রোগীর। ডাক্তার তো বিশ্বাসেই করল না ওকে কোন বিষধর সাপ কামড় দিয়েছিল।

কিন্তু আমি নিজের চোখে দেখেছি ওকে একটা কেউটে সাপ কামড় দিল। ব্যাপার গুলা কেন জানি না এড়িয়ে চলতে গেলেও এড়িয়ে চলতে পারতাম না।
অনিকের সাথে আমার পরিচয়টা বেশ মিরাক্কেলের মত হয়েছিল। অনেকটা সিনেমার রোমান্টিক সিন ও বলা যায়। আমি, আমার বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম একটা পাহাড়ে। সেখানে ঘুরতে ঘুরতে খেয়াল করলাম অনিক সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। কিছুটা অবাক হয়ে অনিক কে পানির ঝাপটা দিতে লাগলাম।

অনেকক্ষন পর খেয়াল করলাম অনিকের জ্ঞান ফিরেছে। সে থেকেই আমাদের পরিচয়। জানতে পারি সে ঢাকায় থাকে। এরপর থেকে আমাদের কথা শুরু আর কথা থেকেই প্রেম শুরু। একে অপরকে খুব বুঝতে পারি। দুজন দুজনকে পেয়ে খুব খুশি ছিলাম। সবকিছু ভালোই চলছিল আমাদের।

কিন্তু অনিকের সাথে রিলেশনের পর পরই আমার কেমন জানি অস্বাভাবিক লাগত ওকে। প্রতিটা মুহুর্তে মনে হত অনিকের মধ্যে কিছু একটা আছে যা আমার জানার আড়ালে, ভাবনার বাইরে, কল্পনার অন্তরালে। মাঝে মাঝে তাকে খুব অদ্ভূত লাগত আবার স্বাভাবিক মনে হত। হয়ত আমি নিছক কল্পনার আধাঁরে ডুবে এমন ভাবছি, না হয় এর আড়ালে কিছু একটা লুকিয়ে আছে যেটা আমার মনের অন্তরালে রয়ে গেছে।

সাপে কাটার ঘটনার বাইরেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছিল যেগুলার মানে আমি বুঝতে পারতাম না কেন হয়েছে। আমি কি করি, না করি অনিক কিভাবে যেন সব টের পেয়ে যায়। মনে হত ও আগে থেকেই আমার মনের পড়া গুলো বুঝতে পারে। আমার মনে কি না কি ঘটছে সবকিছু যেন ওর জানা।

মাঝে মাঝে আমি যা বলতে চাইতাম তার আগেই ও সব বলে দিত। কিছুটা অবাক হলেও পরে ভাবতাম হয়ত ও আমায় খুব ভালোবাসে তাই এমন ভাবে ও আমাকে বুঝতে পারে। কিন্তু এর মধ্যে কিছু কিছু বিষয় গুলা আমার খুব অদ্ভূত লাগত। আমার মাথায় কোনভাবেই আসত না কেন এমন হচ্ছে। কি হচ্ছে বা কেন হচ্ছে বুঝতে পারতাম না। মনে হত কোন একটা মায়ার জালে আমি আটকে আছি। সে মায়ার জাল ভেদ করে আসার ক্ষমতা যেন আমার ছিল না।

এইতো বেশ কয়েকদিন আগে আমার এক বান্ধবী আভার সাথে আমার বেশ ঝগড়া হয়। বলা যায় অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এটা নিয়ে বেশ মন খারাপ ও হয়েছিল আমার। এতটা খারাপ ছিল মন সেদিন অনিকের সাথেও ঠিক করে কথা বলতে পারি নি। অনিক বুঝতে পেরেছিল আমার মনটা বেশ খারাপ।

তাই সেও তেমন কিছু বলে নি। সে রাতে তার সাথে তেমন কোন কথা না বলেই ঘুমিয়ে পরি। পরদিন সকালে ভার্সিটি যাওয়ার পর জানতে পারি আভাকে নাকি একটা সাপে কামড় দিয়েছে। কি সাপে কামড় দিয়েছে সেটা শনাক্ত করা যায় নি। আর জানতে পারি আভা হাসপাতালের আই সি ইউ তে ভর্তি আর তার অবস্থা তেমন ভালো না। বিষের প্রভাবে তার সারা শরীর নাকি নীল হয়ে গেছে। আমি কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম তার এ অবস্থা শোনে। তার উপর জলজ্যান্ত মানুষ কালকে কত ভালো ছিল আজকেই তার এ হাল এটা শোনে যে কাউরেই খারাপ লাগত।

আভার জন্য বেশ মনটা খারাপ লাগতে লাগল। কারণ গত কালেই আভার সাথে আমার জগড়া হল আর আজকেই তার এ হাল। ক্লাস না করেই কিছুটা অবছা মন নিয়ে বসে রইলাম। এর মধ্যেই খেয়াল করলাম অনিকের আগমন। অনিক প্রথমে এসে আমার মন খারাপের কারণ টা জানতে চাইল। তাকে সব বলার পর বলল,
_ তুমি কি সত্যিই তোমার ফ্রেন্ড এর জন্য কষ্ট পাচ্ছে। তোমাকে তো ও কালকে কত কথা শোনাল। কষ্ট দিল।

দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে উত্তর দিলাম।
_ হ্যাঁ। অনিক যতই হোক ও আমার ফ্রেন্ড ছিল। ওর এ অবস্থা শোনে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
অনিক আমার হাত টান দিয়ে বলল,
_ চল অয়নী তোমার ফ্রেন্ডকে দেখে আসি এতে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে।

অনিক এর কথা শোনে আমার ও মনে হল সত্যিই তো দেখে আসলে হয়ত একটু মনটা ভালো লাগবে। এরপর আমি আর অনিক মিলে আভাকে দেখতে যায়। হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারলাম আভার অবস্থা তেমন ভালো না। এর মধ্যে অনিক হুট করে বলে বসল।
_ আমি একটু আসতেছি।
আমিও বললাম,

_ আচ্ছা যাও।
কিছুক্ষণ পর অনিক আসল আর আমাকে শাত্ত্বনা দিয়ে বলল,
_ অয়নী দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা কর না।

অনিক এ কথা বলার কিছুক্ষন পরেই ডাক্তার এসে বলল,
_ আপনাদের রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ। জানি না হুট করে কিভাবে এত সুস্থ হয়ে গেল। এটা মিরাক্কেল বলতে পারেন। এমন রোগী এ প্রথম এসেছে। আর এমন ঘটনাও এ প্রথম ঘটেছে।
এ বলে ডাক্তার চলে গেল আর অনিক একটা মুচকি হাসি দিল। আমি তাড়াতাড়ি আভার কাছে গেলাম। খেয়াল করলাম আভা শান্ত হয়ে বসে আছে। আভার কাছে গিয়ে আভাকে জড়িয়ে ধরলাম। আর বললাম,

_ আভা কালকে যা করেছি সেটা ঠিক হয় নি। আমাকে মাফ করে দিস।
_ আরে বোকা আমিও তো ভুল করেছি। আমাকেও মাফ করে দিস।
_ আচ্ছা আভা তোর হুট করে এমন কিভাবে হল। কি হয়েছিল তোর।
প্রশ্নটা শোনার পর আভার মুখটা একদম ফিকে হয়ে গিয়েছিল। বেশ বুঝায় যাচ্ছিল আভা বেশ ভয় পেয়েছে। আভা ভয়ার্ত কন্ঠ নিয়ে বলল,

_ জানি না কি হয়েছিল তবে আমি রিডিং টেবিলে বসে পড়ছিলাম। রাত তখন সাড়ে বারটা বাজে। হুট করে একটা আওয়াজ পেলাম খেয়াল করলাম আওয়াজটা বেলকনি থেকে আসছে। বেলকনি তে গিয়ে কোন শব্দ পেলাম না। বেলকনি থেকে যখন রুমে ফিরলাম খেয়াল করলাম কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে আমার রুমে। বুঝতে পারলাম না রুমে কে দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা দেখা যায় নি। কারণ পিছন দিকে ফিরা ছিল। আমি স্তম্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কে আপনি? কোন উত্তর আসল না।

আবারও জিজ্ঞেস করলাম কে আপনি? এবার ও উত্তর আসল না। বারবার জিজ্ঞেস করার পর ও যখন উত্তর আসলনা তাই আমি একটু সামনে অগ্রসর হলাম। অগ্রসর হয়ে খেয়াল করলাম মানুষটা একটা প্রকান্ডা সাপে পরিণত হল। আর আমাকে পেচিঁয়ে ধরল। আমি চিৎকার করতে লাগলাম কিন্তু গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হতে চাইল না। এর মধ্যে আমার সারা শরীর জিম ধরে নিস্তেজ হতে লাগল। আর সাপটা আমায় ছোবল দিল। বিষে আমার সারা শরীরে যন্ত্রণা হতে লাগল। যন্ত্রনার চুটে আমি খিচুনি দিতে লাগলাম। কিন্তু হঠাৎ খেয়াল করলাম। সাপটা আবার মানুষ হয়ে গেল। আর বেলকনির দিকে চলে গেল।

একথা গুলো বলে আভা বেশ জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগল। মনে হচ্ছিল আভা অনেক ভয় পেয়েছিল। আভার কথা গুলো শোনে আমি বেশ অবাক হলাম।
কারণ সাপ আবার মানুষ হয় কিভাবে আর মানুষ আবার সাপ হয় কিভাবে। নিশ্চয় আভা কোথাও ভুল করছে। বিস্মিত কন্ঠে আভাকে বললাম
_ তুই যা বলছিস তা তো সম্ভব না আভা। এগুলা কি বলছিস তুই। মাথা খরাপ হয়ে গেছে নাকি তোর
আভা খানিকটা পানি খেয়ে ঢুক গিলতে গিলতে আমাকে বলল,

_ বিশ্বাস কর দোস্ত আমি ঠিকেই বলছি। একটুও ভুল হচ্ছে না আমার। আমি স্পষ্ট দেখেছি একটা মানুষকে সাপ হতে। শুধু তাই না একটু আগেও দেখলাম।
আমি আভার কথাটা শোনে বেশ বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
_ একটু আগে দেখেছিস মানে?

_ হ্যা দোস্ত। একটু আগে জ্ঞান ফিরার পর খেয়াল করলাম একটা সাপ আমার উপর থেকে গেল। আর দরজার সামনে গিয়ে মানুষ হয়ে বেরুল। এর পরেই তো আমি সুস্থ হলাম। আমার সব যন্ত্রণা চলে গেল।

আভার কথা যতই শোনতেছিলাম ততই গুলিয়ে ফেলছিলাম। একবার সত্যি মনে হচ্ছিল। আরেকবার মনে হচ্ছিল হয়ত এটা আভার ভুল ধারণা। এ ঘটনার পর বারবার কেন জানি না অশান্তি হচ্ছিল মনে। অনিক যাওয়ার পর আভার এরকম হুট করে সুস্থতাটাও কেন জানি না বেশ অবাক লাগছিল। মনে হচ্ছে এর সাথে অনিক জড়িত আবার মনে হচ্ছে এসব আমি কি ভাবছি। মানুষ আবার সাপ হয় কিভাবে। সেদিনের ঘটনা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করলেও আমি এড়িয়ে চলেছি।

কিন্তু এর পরের ঘটনা এড়িয়ে চলতে চাইলেও যেন পারি নি। কারণ সেদিন আমি ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হুট করে খেয়াল করলাম।


পর্ব ২

হুট করে খেয়াল করলাম আভা দৌঁড়ে আসতেছে। মনে হচ্ছে খুব ভয় পেয়ে দৌঁড়ে আসতেছে। দৌঁড়ে এসেই আমার হাতটা টান দিয়ে বলল,
_ অয়নী আমার সাথে একটু ওদিকে চল কথা আছে তোর সাথে। তাড়াতাড়ি চল অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

আমিও বুঝতে পারছিলাম না হুট করে আভা কি বলবে? আর এরকমেই বা করছে কেন? আভাবে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব ভয় পেয়েছে। কারণ আভা ভয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল আর বারবার ঢুক গিলছিল। খেয়াল করলাম কপালেও বেশ ঘাম জমেছে আভার। আমি আভাকে নিয়ে একটু দূরে গেলাম আর বললাম
_ আভা আস্তে আস্তে কথা বল। আগে রিলাক্স হ তারপর বল কি হয়েছে। এত তারাহুরা করার দরকার নাই।

খেয়াল করলাম আভা আমার কথা পাত্তা না দিয়েই কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল কিন্তু বলতে পারছিল না। আমি আভাবে ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে বললাম,
_ আগে তুই পানি খা। তারপর শান্ত হয়ে বস। এত উত্তজিত হওয়ার দরকার নাই আস্তে ধীরে বল কি হয়েছে।

আভা আমার কাছ থেকে পানি নিয়ে এক নিঃশ্বাসে সব খেয়ে ফেলল আর হাঁপাতে লাগল। তারপর জিম ধরে কিছুক্ষণ বসে রইল। কিছুক্ষণ বসে একটু শান্ত হয়ে আভা বলল,
_ অয়নী কথাটা শোনে তুই রাগ করবি না বল। কিন্তু কথাটা না বলল, েও হবে না।

আমি বুঝতে পারছিলাম না আভা এভাবে কথা গুলা কেন বলছে। কি এমন কথা যেটা শোনে আমি রাগ করতে পারি। আমি আভাকে কিছুটা আশ্বাস দিয়ে বললাম,
_ ধুর পাগল। আমি তোর কথায় রাগ করব কেন? কি বিষয় নিয়া কথা বলবি বল।
আভা ঢুক গিলতে গিলতে আর হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

_ অনিক ভাইয়ার ব্যাপারে। জানি কথাটা শোনার পর তোর খারাপ লাগবে এজন্য এভাবে বলা।
বুঝতে পারছিলাম না আভা অনিকের ব্যাপারে কি এমন বলবে যেটা শোনে আমার খারাপ লাগতে পারে। যেটা শোনার পর আমি কষ্ট পাব। অনিক কি তাহলে অন্য কোন মেয়ের সাথে রলিশনে গেছে নাকি অন্য কিছু। মাথায় কাজ করছিল না কিছু। তাই আভাকে সম্পূর্ণ অভয় দিয়ে বললাম,

_ তুই বল আভা। আমার কোন সমস্যা নাই। আমি কষ্ট পাব না। অনিক কি অন্য কোন মেয়ের সাথে রিলেশনে গেছে?
_ আরে অয়নী ঐরকম কিছুই না।
কিছুটা অবাক আর বিরক্ত হয়ে বললাম
_ তাহলে কি?

_ অয়নী মনে আছে আমি তোকে বলেছিলাম না আমার রুমে ঐদিন একটা ছেলে আসছিল যে পরে সাপ রূপ ধারণ করে আমাকে কামড় দিয়েছিল। আজকে ঐ ছেলেকে দেখেছি।
_ কিভাবে দেখেছিস? তুই তো বলেছিলে ছেলেটা পিছনে ফিরা ছিল তাহলে কিভাবে চিনলি?

_ হ্যা সত্যিই ছেলেটা পিছনে ফিরা ছিল কিন্তু ছেলেটা যে শার্ট টা পড়েছিল তা আমি খেয়াল করেছিলাম। আজকে যখন আমি ভার্সিটির দিকে আসছি। তখন পুকুর পাড়ে হঠাৎ খেয়াল করলাম, কেউ একজন এ শার্ট টা পড়ে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। পিছন দিকটা দেখে আমি চমকে যায় কারণ এ ছেলেটাই ছিল আমার রুমে ঐদিন। ঠিক এক রকম দেখতে।

_ তা বুঝলাম ছেলেটার মুখ কি আজকেও দেখতে পারিস নি।
আভা আমার প্রশ্নটা শোনে একটু চুপ হয়ে গেল। আমি আভাকে ধাক্কা দিয়ে বললাম
_ কি রে আভা কি হয়েছে? কথা বলছিস না যে।
আভা নিরাশ কন্ঠে উত্তর দিল

_ হ্যা দেখেছি তো।
_ তাহলে বল ছেলেটা কে? আমরা কি চিনি?
আভা এবারও বিক্ষুব্দ মনে উত্তর দিল

_ হুম ছেলেটা অনিক ভাইয়া।
আভার কথাটা শোনে আমি বেশ চমকে গেলাম। কারণ অনিক আবার সাপ হবে কেন? আর এসব রূপকথার গল্পে ভালো মানায় বাস্তবে না। কারণ মানুষের পক্ষে সাপ হওয়া সম্ভব না। আমি আভাকে একটু শান্ত স্বরে জাবাব দিলাম

_ আভা তুই যা বলছিস এটা তো বাস্তবে সম্ভব না। মানুষের পক্ষে সাপ হওয়া আর সাপের পক্ষে মানুষ হওয়া এগুলা রূপকথার গল্পে মানায় বাস্তবে না। হয়তো মনের ভ্রমে এমন বলছিস। হয়ত সাপে কাটার পর তুই কোন স্বপ্ন দেখেছিলে আর সেটাকেই তোর সত্যি মনে হচ্ছে। আর অনিক কে সবসময় দেখিস তো তাই অনিক কে তোর মনে হচ্ছে সে লোকটা অনিক।
আভা খুব সিরিয়াস একটা মোড নিয়ে আমাকে উত্তর দিল

_ বিশ্বাস কর অয়নী আমি একটা কথাও ভুল বলছি না। সত্যিই আমি ঐদিন দেখেছি একটা মানুষকে সাপ হতে। কেউই আমার কথা বিশ্বাস করছে না। আমি কোন মিথ্যা বলছি না।
এ বলে আভা বেশ কাচুমাচু করে মুখটা কালো করে ফেলল। বুঝায় যাচ্ছিল আভা কোন মিথ্যা বলছে না।
ঠিক এ মুহুর্তে কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে ডোকল। আমি খেয়াল করলাম আশা ডাকছে। আর আমাকে দেখে বলল,
_ কিরে কখন থেকে কি পড়ছিস। কার ডায়রী এটা?

আমি ডায়রীটা লুকিয়ে আমার বান্ধীকে উত্তর দিলাম
_ তেমন কিছু না। কি বলবি বল।
_ কিছু তো একটা লুকাচ্ছিস। বল কার ডায়রী এটা?
আমি বেশ শান্ত হয়ে বললাম

_ জানিনা কার ডায়রী তবে চিলেকোঠার ঘরে পেলাম
_ ওহ তাই বল। কি লেখা এ ডায়রীতে। অনেক মন দিয়ে পড়ছিলি দেখলাম।
_ সত্যি বলতে ডায়রীটা তে অসাধারন ভাবে একটা কাহিনী লিখা। সেটায় পড়ছিলাম। এটার শেষটা কি হয়েছিল এখনও জানতে পারি নি। মনে হচ্ছে এটা একটা সত্যি কাহিনী। কাহিনীটা রূপকথার গল্পের মত লাগছে অনেকটা।

ওহ তোমাদের বলায় হল না। আমি তরী। একমাস হল এ বাসায় আসলাম। আর হুট করে এ ডায়রীটা পেলাম। আর পড়তে শুরু করলাম। খেয়াল করলাম ডায়রীটা অনেক আগের লিখা। পড়তে পড়তে ডায়রীটাতে ডুবে গিয়েছিলাম। হঠাৎ আশার ডাকে ঘোর কাটল। আশা এবার আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
_ কি রে বল ডায়রীটাতে কি লিখা?
_ আশা আমি পুরোটা পড়ে নি। কিছুক্ষন সময় দে আমি পড়ে তোকে জানাচ্ছি।
_ নাহ যতটুকু পড়েছিস ততটুকু আগে বল

আশার জেদের কাছে হার মেনে আশাকে ঘটনাটা বললাম, এরপর বললাম
_ এবার বাকিটা পড়তে দে।
আশাও সম্মতি সূচক মাথা নেড়ে বলল,

_ আচ্ছা। কিন্তু পড়ার পরেই আমাকে ঘটনাটা শোনাবি।
আমার ও তর সইতে ছিল না ডায়রীটাতে কি লিখা এটা পড়ার জন্য। আবার ডায়রীটাতে মুখ লুকালাম। আর পড়তে লাগলাম। সারাটাদিন কাটল আমার ডায়রীটা শেষ করতে। এর মধ্যে আশা এসে আমাকে বলল,

_ কিরে এবার তো বল কি ছিল ডায়রীটাতে। বাকিটা তো বল। অয়নী কে আভা পরে কি বলেছিল।
আমি খুব উৎসাহ নিয়ে বললাম
_ তাহলে শোন

অয়নী বুঝতে পেরেছিল যে আভা কোন মিথ্যা বলছে না। কিন্তু অয়নীর এটাও বিশ্বাস হচ্ছিল না যে কোন মানুষ কখনও সাপ হতে পারে। অয়নীর আবার এটাও মনে হল _ একরকম শার্ট তো দুইটা হতেই পারে। আভার ঘটনা সত্যি হলেও এটা যে অনিক এটা তো প্রমান হয় নি। অয়নী একটু ভেবে আভাকে বলল,
_ আচ্ছা আভা একরকম শার্ট তো দুিটা হতেই পারে। তুই কিভাবে সিউর হচ্ছিস এটা অনিক। আর বলছিস অনিক একটা সাপ। এতটা সউর হয়ে বলল, ি কিভাবে।
আভা অয়নীর কথাগুলো শোনে কিছুটা চুপ হয়ে উত্তর দিল

_ অয়নী আমিও প্রথম তোর মত একই কথা ভাবছিলাম। ভাবছিলাম এক শার্ট দুজনের হতেই পারে। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি ঐদিন খেয়াল করেছিলাম। আমার রুমে থাকা ঐ ছেলেটার এক কানে একটা দুল ছিল। আর হালকা অন্ধকারে ঐ দুলটার পাথরটা বেশ চকচক করছিল। আর আজকে যখন আমি অনিক ভাইকে দেখলাম তখন দেখলাম অনিক ভাইয়ের কানেও সে দুলটা আর সূর্যের আলোর রশ্নিই সেটা চকচক করতেছে। তখন আমি সিউর হলাম আমার রুমে যে ছেলটা ছিল সে ছেলেটা আর অনিক ভাই এক।

আভার কথা শোনে অয়নীর মাথাটা বেশ ঘুরাতে লাগল। কারণ অনিককে কখনও অয়নী ঐভাবে ভেবে দেখি নি। অয়নী ভাবল হয়ত বিষের প্রভাবে আভা সে ট্রমা থেকে বের হতে পারছে না। তাই এমন উল্টা পাল্টা কথা বলছে।

অয়নী আভাকে তখন শান্তস্বরে জাবাব দিল

_ আচ্ছা আভা বাদ দে। ঐদিন হয়ত কোন ভুল দেখেছিস আর না হয় মনের কল্পনা। বাস্তবে এটা সম্ভব না।
_ আরে বিশ্বাস কর দোস্ত আমি কোন ভুল বলছি না। আমি সত্যিই….
অয়নী আভার কথাটা আটকে দিয়ে বলল,

_ বললাম তো বাদ দে।
আভাও আর কোন কথা বাড়াল না। কিন্তু আভার কথাটা কেউ বিশ্বাস করছে না এটা ভেবে আভা বেশ কষ্ট পেতে লাগল। আভা কাউকে বুঝাতে পারল না যে ও যা বলছিল তা সত্যি। আভা বেশ মন খারাপ নিয়ে বলল,
_ চল ঐখানে গিয়ে বসি।
অয়নীও বুঝতে পারল আভার মনের অবস্থা ভালো না। তাই আভাকে একটু শাত্ত্বনা দিয়ে বলল,

_ আরে বোকা এমনে মুখ করে রাখিস না চল যাই ঐখানে গিয়ে বসি।
তারপর আভা আর অয়নী একটু সামনে এগিয়ে বসল। দুজন বেশ গল্প করতে লাগল। হঠাৎ আভা পিছন ফিরে দেখল অনিক আসতেছে। অনিকের দিকে তাকাতেই খেয়াল করল অনিক একবার সাপ আরেকবার মানুষ রূপ নিচ্ছে। আর আভার দিকে তেড়ে আসছে। আভা অয়নীকে ডাক দিয়ে ভয়ার্ত গলায় বলল,

_ অয়নী দেখ অনিক ভাই সাপ হয়ে গেছে। আমার কথা তো তোর বিশ্বাস হচ্ছিল না। এখন নিজের চোখে দেখ।
হুট করে আভার এমন কথা শোনে অয়নী বেশ চমকে পিছনে ফিরে দেখল


পর্ব ৩

হুট আভার এরকম কথা শোনে অয়নী চমকে গিয়ে পিছন ফিরে দেখল কোন সাপেই আসছে না। অনিক আসতেছে শুধু। আর এদিকে আভা খেয়াল করল অনিক তার দিকে সাপ হয়ে তেড়ে আসছে। অয়নী আভাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
_ কি রে আভা অনিক তো ঠিকেই আছে সাপ কোথায় দেখলি তুই?

আভা ভয়ার্ত গলায় চোখ বন্ধ করে বলতে লাগল
_ অয়নী তুই দেখছিস না কেন? এই তো সাপটা তেড়ে আসছে আমার দিকে।
অয়নী বেশ ভালোই বুঝতে পারছিল আভার মাথাটা গেছে এবার। ঐদিনের ট্রমা থেকে এখনও বের হতে পারছে না।

তাই আভাকে বেশ শান্ত স্বরে ধাক্কা দিয়ে বুঝিয়ে বলল,
_ আভা তুই চোখটা খোল আগে আর দেখ এই যে অনিক বসে আছে এখানে কোন সাপ নেই। তুই আগে চোখটা তো খোল। তোর মাথা থেকে সে সাপের ভুূত নামে নি এখনও তাই এমন করছিস। চোখ খোলে দেখ এখানে অনিক আর আমি ছাড়া কেউ নেই। এখানে কোন সাপ নেই।

আভা বেশ রাগ হয়ে বলতে লাগল
_ জানতাম অয়নী এমন বলবি। কিন্তু আমি সত্যি বলছি আমি। আমাকে কেন বিশ্বাস করছিস না বুঝতেছি না।
এ বলে আভা চোখ খোলে দেখল অনিক বসে আছে। কোন সাপ আশে পাশে নাই। আভা বেশ অবাক হল। এ মাত্রই তো সে সাপটা দেখল। আভা বিমর্ষ গলায় বলল,
_ অয়নী সত্যি বিশ্বাস কর আমি অনিক ভাইয়াকে দেখেছি সাপ হতে।
পাশ থেকে অনিক একটু হেসে বলল,

_ আভা আমি এখানে বসে আছি জলজ্যান্ত একটা মানুষ। সাপ হব কিভাবে? আভা তুমি ঠিক আছ তো?
অনিকের কথা শোনে আভা কি বলবে বুঝতে পারছিল না। বারবার এমন ঘটনায় আভা একটু থমকে যাচ্ছিল। আভার এবার মনে হচ্ছে হয়ত তার মনের ভুল এটা। তাই নিজেকে সামলে আভা জাবাব দিল

_ নাহ ভাইয়া তেমন কিছু না। মনের ভুল হয়ত। বারবার এমন হচ্ছে তো তাই। ভাইয়া সরি কিছু মনে করবেন না।
অনিক মুচকি হাসি দিয়া উত্তর দিল
_ আরে বোকা কি মনে করব? আমি কিছু মনে করে নি। তুমি একটু সাবধানে থেক।
আভা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জবাব দিল

_ ধন্যবাদ ভাইয়া।
পাশ থেকে অয়নী আভার কাঁধে হাত রেখে বলল,
_ আভা, অনিক কিছু মনে করে নি। তুই আপসেট হইছ না।
_ আচ্ছা অয়নী আমি উঠলাম পরে কথা হবে।

_ আচ্ছা সাবধানে যা।
আভা সেখান থেকে আসার সময় বারবার ভাবতেছিল সত্যিই কি এটা তার মনের ভুল নাকি অন্য কিছু। কিন্তু মনের ভুল হয় কি করে? চোখের সামনে সব ঘটতে দেখেছে তাহলে মনের ভুল হয় কিভাবে। আভা যেন চিন্তা করে কূল কিনারা পাচ্ছে না।
আর এদিকে অনিক অয়নীরর দিকে ফিরে বলল,

_ তুমি ও কি আভার মত আমাকে সাপ ভাবো নাকি।
অনিকের কথাটা শোনে যেন অয়নীর বুকের ভিতর চমক দিয়ে উঠল। কারণ অয়নীর ও একবার অনিককে সাপ মনে হয় আবার মানুষ মনে হয়। কি জবাব দিবে বুঝতে পারছিল না। কিছুটা চুপ থেকে উত্তর দিল

_ আরে কি যে বল তুমি। সাপ ভাবব কেন?
_ আচ্ছা অয়নী তোমার ২২ তম জন্মদিনের আর কয়দিন বাকি?
অয়নীর সাথে অনিকের রিলেশন হওয়ার পর পরই অয়নী শুধু অনিকের এ প্রশ্নটা শোনেছে অসংখ্যবার। তাই এবার একটু বিরক্ত বোধ হয়ে বলল,

_ আচ্ছা অনিক বারবার এ প্রশ্নটা কর কেন? ২২ তম জন্মদিনে কি এমন হবে। তোমার এ জন্মদিন নিয়ে এত মাথা ব্যাথা কেন?
অনিক কিছুটা রহস্যময় মুখ করে ফেলল এবং পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে জবাব দিল

_ আরে এমনি ঐ সময় তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিব তো তাই। রাগ করেছ নাকি। রাগ করলে সরি।
অয়নী এবার মায়া মাখা মুখে জাবাব দিল
_ আরে রাগ করব কেন? রাগ করি নি। তবে বারবার তোমার মুখে এই ২২ তম জন্মদিন কবে এ প্রশ্নটা শোনি তো তাই।
_ আচ্ছা এবার বল কবে?

অয়নী বেশ বিরক্তমাখা মুখ নিয়ে উত্তর দিল
_ আর ৬ মাস পর।
অয়নীর কথাটা শোনে অনিক বেশ রহস্য মাখা একটা হাসি দিল। মনের অজান্তেই হুট করে বলে ফেলল
_ তার মানে আর ৬ টা মাস আামাকে কষ্ট করতে হবে তার পর আমার সব ইচ্ছা হাসিল হয়ে যাবে।

অয়নী অনিকের কথা শোনে বেশ অবাক হল। কিসের ইচ্ছা হাসিল হবে। অনিক এসব কি হাবি জাবি কথা বলছে। অনিক কে ধাক্কা দিয়ে অয়নী বলল,
_ আরে কি সব বলছ তুমি। কিসের ইচ্ছা হাসিল হবে। মাথা কি ঠিক আছে তোমার? নাকি আভার মত তোমার মাথাও গেছে।

অনিক এবার কিছুটা স্তব্দ হয়ে গেল। মনে হয় কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছিল না। তাই বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
_ আরে তেমন কিছু না। ব্যাপার টা সারপ্রাইজ থাকুক। সব কিছু বলে দিলে কি সারপ্রাইজ দিতে পারব নাকি?

_ হয়েছে হয়েছে আর সারপ্রাইজ লাগবে না। আমাকে বাসায় যেতে হবে। এখব গেলাম।
অনিক এবার অয়নীর হাত ধরে বলল,
_ অয়নী তুমিও কি আভার মত আমাকে সন্দেহ কর?

অনিকের কথাটা শোনে আর অনিকের মায়া মাখা মুখটা দেখে কেন জানি না অয়নীর মনে হল অনিক কে সন্দেহ করে সে ঠিক করে নি। এরকম সন্দেহ মনে আনাও উচিত হয় নি। এমন সন্দেহ করে সে শুধু অনিকের ভালোবাসাটাকে ছোট করেছে। এটা একদমেই উচিত হয় নি। তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল সে অনিক কে আর কষ্ট দিয়ে কথা বলবে না। আর অনিক কে ভুল বুঝবে না। তাই অনিকের হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,

_ প্রথম প্রথম আমিও একটু তোমাকে সন্দেহ করে ফেলেছিলাম। এজন্য সরি। তোমাকে এভাবে সন্দেহ করা আমার ঠিক হয় নি। এখন তোমার প্রতি আমার কোন সন্দেহ নেই। তোমাকে এভাবে সন্দেহ করে নিজের ভালোবাসাটাকে ছোট করা ঠিক হয় নি। আর আভা যেটা বলছে সেটা একটা অবাস্তব কাহিনি। এটা কখনও সম্ভব না। মানুষের পক্ষে তো সাপ হওয়া সম্ভব না।

অনিক একটা মায়া মাখা হাসি দিয়ে বলল,
_ আভা কি ভাবছে সেটা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। তুমি যে আমাকে বিশ্বাস করেছ, আমাকে ভুল বুঝ নি এটাই অনেক। অয়নী আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
অয়নী এবার অনিকের হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরে বলল,

_ আমিও তোমাকে অনেক ভালেবাসি। এবার বাসায় যায়, না হয় মা টেনশন করবে।
_ আচ্ছা সাবধানে যেও।
অয়নী বাসায় চলে গেল। আর রাতে শুয়েশুয়ে ভাবতে লাগল। সত্যিই অনিকের মত বি এফ কেউ হতে পারবে না। কারণ অয়নীকে অনিক এতটা বুঝে যা অন্য কেউ কখনও পারত না। অয়নী বেশ খুশি মন নিয়েই ঘুমিয়ে গেল।

আর এদিকে আভা বারবার ভাবছে যে তার মনের ভুল হওয়া সম্ভব না। কেন যে অয়নী তাকে বিশ্বাস করছে না আভা বুঝতে পারছে না কি করবে। অয়নী কে বারবার বলার পর ও অয়নী আভাকে ভুল বুঝছে। কি করলে অয়নী আভাকে বিশ্বাস করবে সেটা বুঝতে পারছিল না।

এসব চিন্তা করে যেন আভা বেশ বিমর্ষ হয়ে গেল। হঠাৎ একটা আচমকা শব্দে আভার আবার চিন্তার ঘোর কাটল। আভা শব্দটার দিকে এগিয়ে খেয়াল করল শব্দটা বেলকনি থেকে আসছে। আভা বেলকনিতে গিয়ে দেখল বেলকনিতে কেউ নেই।

আভা বিরক্ত হয়ে রুমে ঢুকল। খেয়াল করল একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আভা বেশ বুঝতে পারল এটা ঐ ছেলেটায় যেটা আভাকে ঐদিন সাপ হয়ে কামড় দিয়েছিল। আভা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
_ কে আপনি? এখানে কিভাবে আসলেন?

আভার কথা শোনে ছেলেটা একটা বিকট হাসি দিল। আভা হাসিটা শোনে ছেলেটাকে বলল,
_ কে আপনি এদিকে ফিরেন বলছি।
ছেলেটা আভার দিকে মুখ ফিরে তাকানোর পর আভা বেশ চমকে গেল। তার মানে আভা যা ভেবেছিল সবটা ঠিক। আভা চমকে গিয়ে প্রশ্ন করল

_ অনিক ভাইয়া আপনি? তার মানে আমি যা ভেবেছিলান সবটা ঠিক, আপনিই একটা সাপ যে মানুষের রূপ ধারন করে আছেন তাই তো।
অনিক পুনরায় বিকট একটা হসি দিয়ে বলল,

_ হ্যা, আভা, তুমি যা বলেছ সব ঠিক।
অনিকের কথা শোনে আভা বলল,
_ আমি অয়নীকে সবটা জানাব। এবার আর ভুল করব না। অয়নীকে বলে দিব আপনি মানুষ রূপী একটা সাপ।
অনিক এবারও একটা বিকট হাসি দিয়ে বলল,

_ সে সুযোগ পেলে তো।
এরপর অনিক সাপ রূপে আসল। আভা সাপ রূপে অনিক কে দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেল। আর অনিক আভাকে ঠিক আগের মত পেঁচিয়ে ধরল আর…


পর্ব ৪

আভাকে আগের মত পেঁচিয়ে ধরল। আর আভা নড়তে চড়তে পারছিল না। মনে মনে আভা ভাবতে লাগল হয়ত এবার তার জীবনটা শেষ। কিন্তু এত সহজে আভাকে হেরে গেলে হবে না। আভা জোর খাটিয়ে কোন রকমে একটা হাত ছুটিয়ে সাপটার গলায় চেপে ধরল। সাথে সাথে অনিক সাপ রূপ থেকে মানুষ রূপে আসল। আভা অনিক কে উদ্দেশ্য করে বলল,

_ শত্রু মেরে যুদ্ধে জয় না করে শত্রুকে প্রতিরোধ করে যুদ্ধে জয় করার চেষ্টা করুন। আপনার উদ্দেশ্য কি আমি জানি না। তবে আপনি যে অয়নীর জন্য হিতকর না এটা আমি ভালোই বুঝতে পারছি। আমি অয়নীকে সবটা বলে দিব।
অনিক হাত দিয়ে গলা থেকে আভার হাতটা সরিয়ে জবাব দিল

_ তুই অয়নী যা ইচ্ছা বল। অয়নী আর তোর কথা শোনবে না। আজকের পর থেকে অয়নী তোকে বিশ্বাস করবে না।
_ অয়নী আমাকে বিশ্বাস করুক বা না করুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি চাই অয়নীর কোন ক্ষতি যেন না হয়। আর এর জন্য আমাকে যা করতে হয় করব।
অনিক বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলল,
_ আমার পথে যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাকেই শেষ করে দিব। হোক সে অয়নী বা অন্য কেউ।

আভা অনিকের কথা শোনে চমকে গেল। তার মানে অয়নীকে অনিক কোন কাজের জন্য ব্যাবহার করছে। অয়নীকে অনিক ভালোবাসে না। তার মানে অয়নীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাচ্ছে। আভা অনিককে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
_ তার মানে অয়নীর সাথে প্রেমটাও আপনার নাটক ছিল। সব কিছুই নাটক। আপনার উদ্দেশ্য টা কি? অয়নী আপনাকে কতটা ভালোবাসে সেটা তো আপনি জানেন।
অনিক আবার একটা হাসি দিয়ে বলল,

_ আমার কাছে ভালোবাসা বলতে কিচ্ছু নেই। ভালোবাসা কি আমার এসব ভেবে লাভ ও নেই। আমার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অয়নীকে দরকার তাই অয়নীর সাথে প্রেমের নাটক করছি।
আভা বেশ চমকে গিয়ে বলল,
_ কি উদ্দেশ্য আপনার? কেন এমন করছেন। আমি অয়নীকে সব বলে দিব।

_ আমার উদ্দেশ্য এর কথা তোকে বলতে কেন যাব। আর অয়নী আজকের পর থেকে তোকে বিশ্বাস করবে না। অয়নীকে আমি যা বলব তাই করবে। দেখে নিস।
এ বলে অনিক চলে গেল। আভা বুঝতে পারল না কিসের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অয়নী কে অনিক ব্যাবহার করছে। খুব তাড়াতাড়ি কালকে ভার্সিটিতে গিয়ে অয়নীকে সবটা জানাতে হবে। বুঝাতে হবে অনিক অয়নীকে ভালোবাসে না। অনিক একটা ইচ্ছাধারী নাগ। আভার এসব চিন্তায় সারা রাত আর ঘুম হল না। পরদিন সকালে তারাহুরা করে ভার্সিটি তে গেল। আর অয়নীকে বলল,

_ দোস্ত আমি যা ভেবেছিলাম তাই। অনিক ভাই কোন মানুষ না অনিক ভাই একটা ইচ্ছাধারী নাগ। সে তোকে ভালোবাসে না। সে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তোকে ব্যাবহার করছে। কালকে রাতেও অনিক ভাই আমার রুমে এসেছিল। তখন এ কথা বলল,

আভার একথা শোনে অয়নী আভাকে কষিয়ে একটা থাপ্পর মারল। আভা বুঝতে পারল না অয়নী আভাকে এভাকে কেন মারল। আভা বুঝে উঠার আগেই অয়নী আভাকে বলল,
_ তুই কি ভেবেছিলে তোর এ নাটক আমি বিশ্বাস করব? আমার অনিক কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাস। তুই যে অনিক কে চাস সেটা মনে হয় আমি জানতে পারব না তাই না। আর এখন ধরা পড়ে যাবি বলে এসব নাটক সাজাচ্ছিস তাই না।

আভা বুঝতে পারল না অয়নী এসব কি বলছে। না বুঝেই অয়নী কে জিজ্ঞেস করল
_ তুই এসব কি বলছিস অয়নী। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। অনিক ভাইকে কেড়ে নিতে চায় মানে কি?
_ ন্যাকা, মনে হয় কিছুই বুঝিস না। ভাজা মাছটা মনে হচ্ছে উল্টিয়ে খেতে পারিস না। অনেক হয়েছে এসব নাটক ছাড়।
আভা বেশ অবাক হয়ে জাবাব দিল

_ বলবি তো কি হয়েছে? আমি কিসের নাটক করছি?
আভার কথা শোনে অয়নী ব্যাগ থেকে একটা চিঠি বের করে আভার হাতে দিয়ে বলল,
_ তুই অনিক কে এ চিঠিটা লিখিস নি যে তুই অনিক কে ভালোবাসিস। আর অনিক যেন আমাকে বাদ দিয়ে তোকে চায়। তার পরও বলবি যে তুই এসব করিস নি। আর যখন অনিক তোকে না করে দিল তখন আমাদের মধ্যে জামেলা করার জন্য নাটক সাজাচ্ছিস তাই না।

আভা চিঠিটা পড়ে চমকে গেল। কারণ এমন চিঠি তো সে অনিক কে লিখে নি। তাহলে এ চিঠি কে লিখল। আভা অয়নীকে চমকে গিয়ে বলল,
_ সত্যি দোস্ত আমি এমন চিঠি লিখি নি। এটা আমি লিখি নি। আমি কেন অনিক ভাইকে এসব লিখতে যাব। অয়নী আমি যা বলছি সবটা সত্যি কোন মিথ্যা বলছি না। আমাকে বিশ্বাস কর
অয়নী তার হাত দিয়ে কথাটা আটাকাতে বলল, আভাকে।

আর জবাব দিল,
_ তোর হাতের লিখা মনে হয় আমি চিনি না। এখন বল এ হাতের লিখা তোর না।
অয়নীর কথা শোনে আভা লিখাটার দিকে তাকিয়ে দেখল যে সত্যিই তো হাতের লিখাটা তো তার। কিন্তু আভা তো এ চিঠি লিখেই নি। তাহলে কে লিখল এ চিঠিটা। আভা বেশ চমকে গেল আর বলল,

_ অয়নী বিশ্বাস কর হাতের লিখাটা আমার এটা ঠিক, তবে আমি এ চিঠিটা লিখি নি। অনিক ভাই মিথ্যা বলছে।
হুট করে অনিক যেন কোথায় থেকে এসে বলতেছে
_ আভা তুমি গতকাল বিকেলে এখান থেকে যাওয়ার পর চিঠিটা আমাকে দিয়েছ। আর এখন মিথ্যা বলছ। আমাকে ফাসাতে চাচ্ছ। বাহ ভালো তো।
_ ভাইয়া আমি কোন মিথ্যা বলছি না এটা আপনি ভালো করেই জানেন। অয়নী বিশ্বাস কর এসব ভাইয়ার নাটক। আমি কোন মিথ্যা বলছি না।
অনিক একটা হসি দিয়ে জাবাব দিল

_ নাটক কে করছে সেটা সবাই জানে। অয়নী তুমিই বল তুমি কি আভার কথা বিশ্বাস করে আমাকে কষ্ট দিবা নাকি আমার কথা বিশ্বাস করবা। তোমার কি মনে হয় মিথ্যাটা কি আমি বলছি নাকি আভা।
আভা অয়নীর দিকে ফিরে বলল,
_ অয়নী বল কার কথা বিশ্বাস করবি তুই। ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছি। কখন তোর ক্ষতি চায় নি। তবে এখন কেন তুই আমাকে বিশ্বাস করছিস না। বিশ্বাস কর এসব অনিক ভাই এর নাটক। আমি একটা কথাও মিথ্যা বলছি না।

অয়নী আভাকে থামিয়ে বলল,
_ তোকে আমার চিনা হয়ে গেছে আভা। অনিক কে পেতে চেয়েছিলে আর এখন পাস নি তো তাই এমন করছিস। আমার কাছ থেকে অনিক কে কেড়ে নিতে চেয়েছিলে আর যখন অনিক তোর কথায় রাজি হল না তখন তুই নাটক সাজানো শুরু করলি যাতে আমি অনিক কে ভুল বুঝে চলে যায়। তোর প্ল্যান খুব ভালোই বুঝতে পারছি আমি। আর কোনদিন তুই আমার সামনে আসবি না।

অয়নীর কথা শোনে আভার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। আভা বেশ বুঝতে পারল অয়নী কে অনিক হাত করে ফেলছে। অয়নীকে বুঝাতে চাইলেও আভা এখন বুঝাতে পারবে না। তাই অয়নীকে আভা কিছু না বলেই চলে আসল। কিছুক্ষণ পর আভা খেয়াল করল যে অনিক আভার সামনে। আভা রাগান্বিত হয়ে অনিক কে জিজ্ঞেস করল
_ আপনি এত বড় নাটক কেন করলেন।

অনিক একটা বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলল,
_ আমার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যা করা লাগে আমি করব।
_ আপনি যা করছেন সেটা একদিন ফাস হবেই। আমার হাতের লিখা কপি করে অয়নীর কাছে আমাকে ছোট করেছেন। আপনাকে এর জন্য ভোগতে হবে।

_ আমার কিছুই করতে পারবি না তুই। অয়নী আর তোকে বিশ্বাস করবে না। বিষিয়ে দিয়েছি ওর মন কে। তোকে চাইলে মেরে ফেলতে পারতাম। কিন্তু খালি মাঠে খেলতে আমার একদম ভালো লাগে না।

_ আপনার মুখোশ আমি অয়নীর সামনে তুলে ধরবই। অয়নীর কোন ক্ষতি আমি হতে দিব না।

আভার কথা শোনে অনিক একটা অট্ট হাসি দিয়ে চলে গেল। আর অপরদিকে আভা বেশ মন খারাপ নিয়ে বসে রইল। কি করবে সে বুঝতে পারছিল না। অনিক কেন অয়নীকে ব্যাবহার করছে কি উদ্দেশ্য তার সেটা আভা একটুও বুঝতে পারছিল না।

আবার মনটা এসব ভেবে বেশ অস্থির হতে লাগল। আভা চুপ করে বসে রইল। হঠাৎ আভা খেয়াল করল কেউ একজন তার চোখ চেপে ধরেছে। আভার চোখটা থেকে হাতটা সরিয়ে যা দেখল নিজের চোখকেও যেন সে বিশ্বাস করতে পারছিল না। কারণ আভা দেখল..


পর্ব ৫

কারণ আভা দেখল তানভীর এসেছে। তানভীর, আভা আর অয়নীর ভালো ফ্রেন্ড। ছোট বেলা থেকেই তারা একসাথে পড়ে বড় হয়েছে। অপরদিকে তানভীর অয়নীকে বেশ পছন্দ করত। অয়নীকে বলার পর অয়নী তানভীরের এ প্রোপোজালে রাজি হয় নি। কারণ অয়নী তানভীরকে ফ্রেন্ড এর বাইরে কখন ভাবতে পারে নি। আর তানভীর ও অয়নীকে এ বিষয়ে তেমন জোর করে নি। এর কিছুদিন পড়েই তানভীর বিদেশ চলে যায় পড়াশোনার জন্য। বিদেশ যাওয়ার প্রথম দিকে আভার সাথে যোগাযোগ রাখলেও পরে আর রাখে নি।

কোথাও যেন হারিয়ে গিয়েছিল। আজকে হঠাৎ তানভীরকে এভাবে দেখে আভার খুশিতে যেন লাফাতে ইচ্ছা করছে। আভা ভাবতেও পারে নি এ অসময়ে তানভীরকে পাবে। তানভীর কে দেখে যেন সে আশার আলো খুজে পেয়েছ। আভা তানভীরকে আবেগজড়িতে কন্ঠে বলল,
_ দোস্ত তুই। এতদিন কোথায় ছিলি। আজকে হুট করে কোথায় থেকে আসলি। আমার যে কি খুশি লাগছে তোকে বুঝাতে পারব না।
তানভীর একটা হাসি দিয়ে বলল,

_ আরে আস্তে। এতগুলো প্রশ্ন একসাথে করলে কিভাবে উত্তর দিব। এতদিন ইচ্ছা করেই কারও সাথে যোগাযোগ করি নি। একটু আড়ালে থাকতে চেয়েছিলাম।
তানভীরের কথা শোনে আভা বলল,
_ যাইহোক, তোকে পেয়েছি অনেক ভালো লাগছে। কি যে খুশি লাগছে বলে বুঝাতে পারব না।
তানভীর একটা হাসি দিয়ে বলল,

_ হুম বুঝতে পেরেছি। তা তুই একা কেন? অয়নী কোথায়? অয়নীকে ছাড়া তো তোকে কখনও দেখি নি। আর এভাবে মন মরা হয়ে বসে ছিলি কেন? কি হয়েছে তোর?
অয়নীর কথা শোনে আভার বেশ মন খারাপ করে ফেলল। কি করে তানভীরকে সবটা ঘটনা বলবে তা বুঝতে পারছিল না। আভা কোন উত্তর না দিয়ে চুপ হয়ে বসে রইল। তানভীর আভার নীরবতা দেখে প্রশ্ন করল

_ কি রে আভা কিছু বলছিস না যে। কি হয়েছে? চুপ করে আছিস কেন? আর অয়নীর কথা শোনে এভাবে মুখ গোমরা করে রাখলি কেন?
আভা বেশ মন খারাপ নিয়ে উত্তর দিল
_ অয়নীর সাথে আমার বন্ধুত্বটা আর নেই। অয়নীর সাথে আমার সব শেষ হয়ে গেছে।

কথাটা শোনে তানভীর বেশ বিস্মিত হল কারণ অয়নী আর আভা ছোটবেলা থেকেই বেশ কাছের বন্ধু ছিল। তাদের মধ্যে জগড়া হতে পারে তা যেন বিশ্বাসেই হচ্ছিল না তানভীরের। তানভীর কিছুটা অবাক হয়ে আভাকে বলল,
_ কি হয়েছে তোদের। হঠাৎ করে কি নিয়ে এতটা ফাটল ধরল তোদের বন্ধুত্বে। কি নিয়ে এত সমস্যা হল শোনি। দেখি কিছু করা যায় কিনা।
আভা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

_ আমি যা বলব হয়ত তোর কাছে সেটা রূপকথার গল্প মনে হতে পারে। মনে হতে পারে আমি একটা মনগড়া কাহিনী তোকে বলছি। মনে হতে পারে দোষটা আমার। মনে হতে পারে আমিই দোষ করেছি। তবে বিশ্বাস কর দোস্ত আমি সবটা সত্যি বলেছি। আমি কোন মিথ্যা বলছি না। আমার কথা অয়নী কেন বিশ্বাস করছে না আমি জানি না। অনিক ভাই এর সামান্য নাটকে সে আমাকে ভুল বুঝল।
তানভীর আভাকে শাত্ত্বনা দিয়ে বলল,

_ কি হয়েছে বলবি তো? আর অনিক টা কে?
আভা মনটা ভার করে উত্তর দিল
_ অয়নীর বি এফ।

উত্তরটা শোনে তানভীরের বুকে যেন একটা হালকা ব্যাথা অণুভব হল। কারণ অয়নীকে তানভীর অনেক ভালোবাসে। নিজেকে বেশ সামলে তানভীর আভাকে জিজ্ঞেস করল
_ তা অয়নীর বি এফ রে নিয়া কি এমন হল শোনি।
আভা কান্নাজড়িত কন্ঠে উত্তর দিল

_ অয়নী ভাবে আমি তার বি এফ কে তার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাই। আর অয়নীকে এমনটা বুঝিয়েছে তার বি এফ অনিক। সে অয়নীর ব্রেন ওয়াশ করে দিয়েছে। অয়নী আমাকে একটুও বিশ্বাস করছে না। আমাকে ভুল বুঝল অয়নী।
তানভীর আভাকে আরেক টু শাত্ত্বনা দিয়ে বলল,

_ বোকা মেয়ে কাঁদছিস কেন? তবে অয়নীর বি এফ এর সাথে তোর কি এমন হয়েছে যে ওনি তোকে এভাবে খারাপ বানাল।
আভা একটা বড় শ্বাস ফেলে বলল,
_ কারণটা শোনলে তুই ও বিশ্বাস করবি না। ভাববি আমি তোকে ভুল বলতেছি। ভাববি এটা আমার সাজানো নাটক।
_ আরে বোকা আগে কারণটা তো বল কি হয়েছে। কেন এমন করেছে।

আভা একটু স্থির হয়ে জাবাব দিল
_ কারণ অনিক ভাই একটা মানুষ না। ওনি একটা ইচ্ছাধারী নাগ। আর এ বিষয়টা শুধু আমি জানি। আর অনিক ভাই অয়নীর সাথে ভালোবাসার নাটক করছে শুধু স্বার্থ হাসিলের জন্য।
আভার কথা শোনে তানভীর যেন অবাক না হয়ে পারল না। মানুষ আবার সাপ হয় কিভাবে উত্তরটা যেন খোজে পাচ্ছিল না। তানভীর বেশ বিস্মিত হয়ে জাবাব দিল,
_ কি হাবিজাবি বলছিস। তুই কি পাগল হয়ে গেছিস নাকি।
তানভীরে এ কথাটা শোনে আভা যেন আরও কষ্ট পেল। হাউমাউ করে কেঁদে বলল,

_ আমি জানতাম তুই এমন বলবি। তুই ও আমাকে ভুল বুঝবি।
আভার কান্না শোনে তানভীরের কেন জানি না মনে হল আভা মিথ্যা বলছে না। তানভীর বেশ অনুতপ্ত হয়ে আভাকে বলল,
_ তুই আমাকে সম্পূর্ণ ঘটনাটা বলতো। দেখি কি করা যায়।

আভা প্রথম থেকে ঘটে যাওয়া সম্পূর্ণ ঘটনা তানভীরকে বলল, তানভীর যখন ঘটনাটা শোনল তানভীরের কাছে ঘটনাটা যেন রূপকথার গল্প মনে হল। কিন্তু আভা যে মিথ্যা বলবে না সেটা তানভীরের বিশ্বাস ছিল। আভাকে বলল,
_ তুই ভাবিস না। আমি তোর পাশে আছি। দুজন মিলে রহস্য বের করব। তুই কি তোর বাসায় থাকার ব্যাবস্থা করতে পারবি? তাহলে কাজটা করতে আরও সুবিধা হত।
আভা হাসি মুখে উত্তর দিল।
_ আমার বাসায় তো আমি একাই থাকি। বাবা, মা তো আমি সুস্থ হওয়ার পরেই আবার বিদেশ চলে গেল। তুই যতদিন ইচ্ছা থাকতে পারিস।
_ কিন্তু কি এমন স্বার্থ আছে যে কারণে অনিকের অয়নীকে প্রয়োজন।

_ আমি নিজেও সেটা জানি না। তবে যে করেই হোক জানতে হবে। এখন তুই এসে গিয়েছিস কাজটা অনেক সহজ হবে।
_ হ্যা সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না। অয়নীর কোন ক্ষতি আমি হতে দিব না।
_ আমিও চাই না অয়নীর কোন ক্ষতি হোক।
_ আচ্ছা তুই বলতো অয়নী এখন কোথায় আছে?

_ একটু সামনে যা পেয়ে যাবি। সাথে অনিক ও আছে দেখিস।
_ হুম। তুই এখানে থাক আমি একটু দেখে আসি ব্যাপারটা।
_ আচ্ছা।

এরপর তানভীর অয়নীর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কিছুক্ষণ এগুতেই তানভীর অয়নীকে দেখল। সাথে একটা ছেলেকেও দেখল তানভীরের বুঝতে বাকি রইল না এটা অনিক। তানভীর অয়নীর সামনে গিয়ে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে উঠল।

অয়নী চিৎকার টা শোনে ভয় পেয়ে পিছনে ফিরে দেখল তানভীর দাঁড়িয়ে আছে। তানভীরকে দেখে বুকে থুথু দিয়ে বেশ চমকে গিয়ে বলল,
_ আরে দোস্ত তুই হঠাৎ করে কোথায় থেকে আসলি। আমি তো ভয় পেয়েই গিয়েছিলাম।
_ এইতো আসছি দুদিন হল। কেমন আছিস তুই?

_ ভালো আছি তুই কেমন আছিস।
_ ভালো। আন্টি কেমন আছে?
_ বাসার সবাই ভালো আছে। তোর বাসার সবাই কেমন আছে?
_ সবাই ভালো আছে। তা ওনি কে চিনতে পারলাম না তো।
অয়নী বেশ লজ্জা মাখা কন্ঠে উত্তর দিল

_ আমার বি এফ অনিক।
কথাটা শোনে অনিকের একটু খারাপ লেগেছিল যতই হোক তানভীর অয়নী কে পছন্দ করে। তানভীর নিজেকে বেশ সামলিয়ে অনিকের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। আর অনিক ও হাত বাড়াল। তানভীর যখন অনিকের সাথে হাত মিলালো তখন অনিকের চোখে খেয়াল করল একটা সাপ ভাসছে। তানভীর ভিতরে ভিতরে বেশ ভয় পেল কিন্তু প্রকাশ করল না। অনিক কে উদ্দেশ্য করে বলল,
_ আমি তানভীর অয়নীর ফ্রেন্ড। আপনি?

অনিক হাসতে হাসতে উত্তর দিল
_ আমি অনিক।
_ কেমন আছেন ভাই?
_ ভালো। আপনি?
_ ভালো। কোথায় থাকেন?
_ এইতো সামনেই একটা বাড়িতে। শহর থেকে একটু ভিতরে। আপনি?

_ আমার বাসা কাছেই। তবে আপাদত ঘুরব ফিরব যখন যেখানে মন চায় থাকব। তা একদিন আপনার বাসায় যাব কেমন?
তানভীরের এমন আবদারে অনিকের মুখটা যেন ফিকে হয়ে হেল। বুঝায় যাচ্ছিল অনিক তানভীরকে তার বাড়িতে নিয়ে যেতে তেমন রাজি না। তবুও বলল,
_ আচ্ছা সময় হলে বলবেন নিয়ে যাব।

তানভীর এবার একটু আবদার করে বলে বসল
_ কালকেই যাব। কালকে রাতের দাওয়াত কি পেতে পারি। আড্ডা দেওয়াও হবে আর একে অপরকে চিনতেও পারব।
অনিক মনে মনে হয়ত চাচ্ছিল না তানভীর বাড়িতে যাক। কিন্তু সামনে অয়নী বসা। তাই না ও করতে পারল না মুখের উপর। তাই তানভীরকে অনিক বাড়ির ঠিকানাটা দিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,

_ আচ্ছা ঠিক আছে। কালকে আসবেন।
এরপর তানভীর ঠিকানাটা নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান নিল। আর আভাকে এসে সবটা বলল, আভা সবটা শোনার পর বলল,
_ আমিও যাব তোর সাথে। কারণ তুই একা গেলে বিপদ হতে পারে।

_ পাগল তুই। তোকে নিয়ে যাব না। কারণ তোকে নিয়ে গেলে আমি অনিকের সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারব না। অনিক সন্দেহ করে বসবে। অনিককে বুঝতে দেওয়া যাবে না আমি সবটা জানি। আমাদের প্ল্যান করে সামনে যেতে হবে। এমন ভাবে এগুতে হবে যেন অনিক বুঝতে না পারে। আর আমার কিছু হবে না। তুই এত ভাবিস না।
_ আচ্ছা তুই যা ভালো মনে করিস।

পরদিন রাতে তানভীর অনিকের বাড়ির পথে রওনা দিল খেয়াল করল বাড়িটা শহর থেকে ভালোই ভিতরে। নিরিবিলি একটা জায়গায় বাড়িটা। বাড়িটার বাইরে কেমন জানি অগোছাল গাছের সারি। এ অল্প রাতেই কেন জানি না বাড়িটাকে বেশ অন্ধকার মনে হচ্ছে। চাঁদের আলো যেন গাছ ভেদ করে বাড়িটাতে পৌছাতে পারছে না। তানভীরের গা টা বেশ ছমছম করতে লাগল। কিছুটা ভয়ে ভয়ে বাড়িটার ভিতর ঢুকে চমকে গেল কারণ_


পর্ব ৬

কিছুটা ভয়ে ভয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে চমকে গেল তানভীর। কারণ কোন মানুষের বাড়ি এমন হতে পারে সেটা তানভীরের জানা ছিল না। বাড়িটার চারপাশে কোন জানালা নেই। কেমন জানি লাইট জ্বলার পরও বাড়িটাতে বেশ বিদঘুটে অন্ধকার। এ বাড়িতে আর কেউ থাকে বলে মনে হচ্ছে না। হঠাৎ করে অনিকের ডাকে তানভীর চমকে গেল। অনিক বলে উঠল

_ আরে তানভীর ভাই যে, তা কখন আসলেন। দরজাটা খোলায় রেখেছিলাম আপনি আসার জন্য।
তানভীর কিছুটা হতচকিয়ে গিয়ে উত্তর দিল
_ এই তো কিছুক্ষন হল এসেছি। বাড়িটা দেখছিলাম।
অনিক একটা হাসি দিয়ে বলল,

_ তা কেমন দেখলেন বাড়িটা।
তানভীর বেশ শান্ত মেজাজে জবাব দিল
_ বাড়িটা বেশ সুন্দর। সাধারণ বাড়িগুলো থেকে আলাদা। তবে খুব জানতে ইচ্ছে করছে বাড়িতে কোন জানালা নেই কেন?
অনিক প্রশ্নটা শোনে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উত্তর দিল
_ এমনিতে আলো তেমন ভালো লাগে না তাই জানালা দেয় নি। কেন এতে কি কোন সমস্যা ব্রো।

_ নাহ সমস্যা হবে কেন? একটু ব্যাতিক্রম দেখলাম তো তাই জিজ্ঞেস করলাম। তা ব্রো তোমার মা, বাবা কোথায়? তাদেরকে তো দেখছি না।
তানভীরের প্রশ্নে অনিকের মুখটা বেশ কালো হয়ে গেল। হয়ত কি জবাব দিবে বুঝতে পারছিল না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে জাবাব দিল
_ বাবা, মা বিদেশ থাকে। আমি এখানে থাকি শুধু।

অনিকের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছিল সে মিথ্যা বলছে। তাই তানভীর কথা আর না বাড়িয়ে অনিক কে বলল,
_ তোমার বাড়িটা ঘোরে দেখার খুব শখ। আমি কি ঘোরে দেখতে পারি?
অনিক হয়ত চাচ্ছিল না তানভীর বাড়িটা ঘোরে দেখুক। কিন্তু তবুও অয়নীর জন্য হলেও তানভীরকে বাড়িটা ঘোরে দেখাতে হবে। না হয় অয়নী অনিক কে সন্দেহ করে বসবে। তাই অনিক হাসতে হাসতে বলল,

_ অবশ্যই দেখাব। চলেন আমার সাথে।
তানভীর ও হাসতে হাসতে বলল,
_ তাহলে চল।

এরপর অনিক তানভীরকে বাড়িটা ঘোরে দেখাতে লাগল। তানভীর যতই বাড়ির ভিতর ঢুকতে থাকল ততই যেন অবাক হতে লাগল। কারও বাড়িতে এরকম অন্ধকার সুরঙ্গ পথ থাকতে পারে সেটা তার জানা ছিল না। চারপাশটা যেন অন্ধাকারে গিজ গিজ করছে। এ অবস্থায় যে কেউ একা আসলে হয়ত দম বন্ধ হয়ে মারা যেত।

কিছুটা পথ এগিয়ে তানভীর একটা ঘর লক্ষ্য করল। আর অনিক ঘরটা অতিক্রম করে সামনের দিকে গেল। তানভীর অনিককে কোন কিছু না বলে ঘরটাতে ঢুকে গেল। আর অনিক তানভীরকে পিছনের দিকে খেয়াল না করেই সামনে এগুতে লাগল। আর তানভীর ঘরটাতে ঢুকে দেখল। বিশাল এক নাগ_পিশাচ মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। তার নীচে কয়েকটা প্রদীপ কিছু জ্যান্ত জীব বলি দেওয়া। আর সবচেয়ে বেশি অবাক হল এটা দেখে এখানে একটা নর শিশুর মাথা আলাদা করা।

তানভীর এবার বেশ বুঝতে পারল, অনিক কোন সাধারণ মানুষ না। আভা যা বলেছে সবটা ঠিক। তানভীর হুট করে একটা আলোর রেখা খেয়াল করল। আলোর রেখাটা উৎপত্তি কোথায় সেটা দেখার জন্য একটু উপরে তাকাল। হঠাৎ তানভীর খেয়াল করল একটা চাবি ঐখানে। কিছুটা আবেগ আর কৌতুহল নিয়ে সে চাবিটার দিকে তাকিয়ে ধরতে নিল। চাবিটা ধরার পর খেয়াল করল বাড়িটা কেমন জানি নড়ছে। তানভীর এবার বেশ ভয় পেয়ে গেল।

কিছুক্ষন পর খেয়াল করল মূর্তিটা একটা সাপে পরিণত হল। তানভীর এবার মনে মনে ভাবতে লাগল তার জীবন বুঝি এখানেই শেষ। এটা ভাবতে ভাবতেই চোখ বন্ধ করে ফেলল। কিছুক্ষন পর খেয়াল করল কেউ একজন তার কাঁধে হাত দিল। তানভীর চোখটা খোলে যখন তাকাল তখন খেয়াল করল অনিক দাঁড়িয়ে আছে। তানভীর সামনের মূর্তিটার দিকে তাকাল দেখল এটা স্থির হয়ে আছে। আর অনিক তানভীরকে বলে উঠল

_ কি ব্যাপার আপনি এখানে কি করছেন? আমি তো না দেখেই সামনে এগিয়ে পড়েছিলাম।
তানভীর কিছুটা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল
_ ঘরটা খেয়াল করলাম তাই ঢুকে পরলাম। কিন্তু এ ঘর এমন কেন?
অনিক হাসি দিয়ে বলল,

_ কেন কি হয়েছে?
তানভীর বলল,
_ এই যে মূর্তি, মানুষ, পশু এগুলার মানে কি?
অনিক কিছুটা হাসতে হাসতে জবাব দিল
_ কোথায় মূর্তি আমি তো কিছু দেখছি না।

তানভীর মূর্তিটাকে ইশারা করে অনিক কে দেখাতে গিয়ে খেয়াল করল মূর্তিটা এখানে নেই। এবার তানভীরের মনে হল সে মায়া জালে ফেসে গেছে। কখন কি দেখছে বুঝতে পারছে না। তানভীর একটু চমকে গিয়েও নিজে স্বাভাবিক রেখে উত্তর দিল
_ নাহ কিছু না এ হয়ত আমার মনের ভুল। আচ্ছা চল নীচে যায়।

_ হতে পারে। চলেন নীচে চলেন। আজকে এখানে থাকবেন নাকি চলে যাবেন।
_ চলে যাব। অন্য একদিন এসে থাকব।
_ আচ্ছা খেয়ে যান কিছু।

_ আজকে না, পরে একদিন খাব। আজকে চলে যাই। আমার একটা কাজের কথা মনে পড়েছে।
_ আপনার ইচ্ছা
তারপর তানভীর বাড়ি থেকে প্রস্থান নিল। কিছুটা পথ এগিয়ে বাড়িটা থেকে একটু সামনে গেল। এবার তানভীরের যেন দমটা ফিরে এল। একটা বড় নিঃশ্বাস নিল। তানভীরের বুঝতে বাকি রইল না যে অনিক একটা নাগ। কিন্তু অনিক কেন অয়নীর পিছনে পড়ে আছে সেটা তানভীর বুঝতে পারছিল না। তারপর তানভীর বাসার দিকে রওনা দিল।

তানভীরের আভার বাসার কাছাকাছি আসতে আসতে বেশ রাত হয়ে গেল। খেয়াল করল রাস্তায় কেউ নেই। হুট করে তানভীর দেখল সামনে অনিক দাঁড়িয়ে আছে। তানভীর অনিক কে দেখে বেশ ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করল
_ আরে তুমি এখানে?

_ হ্যা আমি এখানে। তোকে মারতে এসেছি। তোকে শেষ না করলে আমার স্বার্থ হাসিল হবে না।
এবলে অনিক একটা প্রাকান্ড সাপে পরিণত হল। আর তানভীরকে পেঁচিয়ে ধরল। আর এ দৃশ্যটা অয়নী আভার বাসার জানাল দিয়ে দেখে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না। অনিকের জন্য আভাকে কত ভুল বুঝেছে অয়নী। তানভীরকে এ অবস্থায় দেখে অয়নী দৌঁড়ে নীচে যেতে চাইল তানভীরকে বাঁচানোর জন্য আভা তখন অয়নীর হাতটা ধরে আটকে দিয়ে বলল,

_ তুই এখন গেলে সব প্ল্যান নষ্ট হবে। তানভীরকে অনিক কিছু করতে পারবে না।
_ তাহলে কি করব।
_ এখানে বসে থাক।

অয়নীর ভুল ভাঙ্গানো আর সত্যিটা আনার জন্যই তানভীর অনিকের বাসায় গিয়েছিল। আর আভার বাসার সামনে এসে তানভীর অনিককে মেসেজ দেয় যে, সে সব জেনে গেছে এখন অয়নীকে বলে দিবে। তানভীর জানত এ কথা বলল, ে অনিক আসবে তানভীরকে মারতে। তাই তানভীর আভাকে বলে দিয়েছিল, অয়নীকে নিয়ে যেন সে সময় জানালার পাশে থাকে। আর আভা অয়নীকে বুঝিয়ে তাই করে আর অয়নীও নিজের চোখে সব দেখতে পারে। সব দেখার পর অয়নী, আভার সাথে করা খারাপ ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত হল।

আর তানভীরের জন্য চিন্তা করতে লাগল। হুট করে বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠল। অয়নী দৌঁড়ে গিয়ে কলিং বেল খোলে দেখল তানভীর। কোন কিছুই না বলে তানভীরকে জড়িয়ে ধরল অয়নী। জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল

_ তোর কিছু হয় নি তো। তোর জন্য কত চিন্তা হচ্ছিল।
অয়নীর এ কান্ড দেখে যেন তানভীর স্থির হয়ে গেল। একটা শুভ্র বাতাস যেন তানভীরকে স্পর্শ করে গেল। এতটা শীতলতা অণুভব মনে হয় তানভীর এর আগে হয় নি। সত্যিই ভালোবাসার মানুষের আবেগ মাখা স্পর্শ সবাইকে পাগল করে দেয়। তানভীরের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে।

তানভীর নিজেকে একটু সামলে অয়নীকে ধরে বলল,
_ আরে বোকা আমার কিছু হয় নি। তুই যে আভাকে বুঝতে পেরেছিস এটাই অনেক। এবার আমাদের উদঘাটন করতে হবে যে কি উদ্দেশ্যে অনিক তোর সাথে নাটক করছে। এর আগে তুই বুঝতে দিবি না যে তুই সব জেনে গেছিস। তুই অনিকের সাথে স্বাভাবিক ব্যাবহার করে যাবি। আর আমি এর মধ্যে একজন সাধকের সাথে দেখা করব। সাধক কি বলে সেটা জানব।

অয়নী কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
_ কিসের সাধক?
_ একজন সাধক আছে যিনি এসব ঘটনা নিয়ে কাজ করে।

অয়নী কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
_ কিন্তু তুই চিনিস কি করে?
তানভীর এবার একটু হেসে জাবাব দিল

_ আমি বিদেশ থেকে এসে কিছুদিন সন্নাসী হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। এটা পরিবারের কাউকে জানায় নি। সবাই জানত আমি বিদেশ থাকি। কিন্তু আমি ছিলাম কাটাবন বনে। তাই সবার থেকে আড়ালে ছিলাম এতদিন। আর হুট করে মনে হল এ জীবন ভালো লাগবে না। তাই চলে এসেছিলাম।
অয়নী একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
_ ওহ তাই বল।

পাশ থেকে আভা বলে উঠল
_ তোরা কি একে অপরকে ছাড়বি না নাকি এভাবেই থাকবি।
আভার কথা শোনে অয়নী আর তানভীর বেশ লজ্জা পেয়ে দুজন দুদিকে চলে গেল। অয়নীর মুখটা দেখে আভা বলল,
_ কিরে লজ্জা পাচ্ছিস কেন।

অয়নী বেশ লজ্জা মাখা মুখে জাবাব দিল।
_ যাবি তুই।
আভা হাসতে হাসতে রুমে গেল।
পরদিন সকালে তানভীর, আভা, আর অয়নী সাধকের কাছে যাওয়ার জন্য রওনা দিল। এদিক দিয়ে অয়নী অনিক কে বলল, সে তার আত্নীয়ের বাড়ি যাবে বেড়াতে। অনিক ও সেটা বিশ্বাস করল। অনেক পথ পার করে তারা সাধকের কাছে পৌঁছাল। সাধক তানভীরকে বলল,
_ কি রে বাছা তুই আবার আসলি যে?

_ আমি এসেছি একটা রহস্য উদঘাটনের জন্য। আমি জানি আপনিই পারবেন এটার রহস্য ভেদ করতে।
_ কি জানতে চাস বল? কিসের রহস্য।
তানভীর প্রথম থেকে ঘটে যাওয়া সবটা ঘটনা খুলে বলল, তানভীরের কথা শোনে সাধক বলল,

_ এর উত্তর জানার আগে একটা কাজ করতে হবে।
তানভীর জবাব দিল।
_ কি কাজ বলুন।
সাধক এরপর তানভীরকে যা বলল, তানভীর ভয় পেয়ে গেল কিছুটা কারণ_


পর্ব ৭

সাধক এরপর তানভীরকে যা বলল, তানভীর ভয় পেয়ে গেল। কারণ সাধক তানভীরকে বলল, যে তানভীরের হাত কেটে রক্ত বের করে সে রক্ত একটা পাত্রে রেখে নাগ পিতাকে আহ্বান করার জন্য। আর তানভীরের হাতটা কাটতে হবে একটা পাথর দিয়ে জোরে আঘাতের মাধ্যমে এতে তানভীরের অনেক যন্ত্রণা হবে।
তানভীর কথাটা শোনে ভয় পেয়েও পুনরায় নিজের মনে সাহস যুগিয়ে বলল,

_ আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত। আপনি আমাকে পাথরটা দিন।
_ তুই আরেকবার ভেবে বল।
_ আমি ভেবেই বলেছি।

সাধক তানভীরকে পাথরটা দিল আর তানভীর যখন পাথর টা দিয়ে হাতে আঘাত করতে যাবে ঠিক সে মুহুর্তে অয়নী বলে উঠল
_ আমি এসবের মধ্যে নেই আমি এখনই বাসায় চলে যাব। আমি চাই না অনিকের কোন ক্ষতি হোক। যতই হোক আমি অনিক কে ভালোবাসি। তানভীর আমাকে অনিকের ঠিকানা দে আমি অনিকের কাছে যাব।

অয়নীর মুখে এমন কথা শোনে আভা বিস্মিত হয়ে গেল। কারণ অয়নী জেনে শোনে আবার আগুনে ঝাপ দিতে চাচ্ছে। আভা অয়নী কে বলল,
_ তুই কি পাগল হয়ে গেছিস। জানিস তো অনিক তোকে ব্যবহার করছে স্বার্থ হাসিলের জন্য তাহলে তুই কেন অনিকের প্রতি দুর্বলতা দেখাচ্ছিস।
অয়নী একটু রেগেই উত্তর দিল।

_ আমি আমার জীবনে কি করব না করব সেটা আমার ব্যাপার। তোকে কে বলেছে আমার ব্যাপারে নাক গলাতে। দয়া করে আমার ব্যাপারে আর নাক গলাবি না। আমি অনিক কে ভালোবাসি আর অনিকের কাছেই যাব। তানভীর তোকে অনিকের ঠিকানা দিতে বলছি। অনিকের ঠিকানাটা দে তো।

তানভীর অয়নীর কথার কোন প্রতিক্রিয়া না করে হালকা হাসি মুখে অয়নীকে অনিকের ঠিকানা দিল। আভা বুঝতে পারছিল না। তানভীর কেন এমন করছে। অয়নীকে বাধা দেওয়ার পরিবর্তে আরও ঠিকানা দিচ্ছে। আর তানভীর কেনই বা চিন্তিত হওয়ার পরিবর্তে হাসি হাসি মুখে আছে। আভার এসব ভাবতে ভাবতেই অয়নী উঠে চলে যেতে লাগল। আভাও হুট করে অয়নীর সাথে উঠে বলল,
_ আমিও যাব তোর সাথে।

অয়নী তেমন কিছু প্রতিক্রিয়া না করে বলল,
_ চল। তবে আমার আর অনিকের মাঝে কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারবি না।
অাভা নিজেকে সামলিয়ে উত্তর দিল।
_ আচ্ছা ঠিক আছে।

এরপর অয়নী আর আভা রওনা দিল অনিকের বাড়ির পথে। আভা দেখল অয়নী বেশ চিন্তিত হয়ে বসে আছে। অয়নীর চিন্তা মাখা মুখ দেখে আভা জিজ্ঞেস করে বসল
_ কি হয়েছে অয়নী তোকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?
অয়নী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিল।
_ তানভীরের যেন কিছু না হয় আমি সে চিন্তায় আছি।

অাভা অবাক হয়ে গেল অয়নীর কথা শোনে। কারণ তানভীরের কি হবে। তানভীরকে একটু আগে অয়নী রেখে চলে আসছে। তাহলে আবার তানভীরের জন্য কেন চিন্তা করছে মানে বুঝতে পারল না। আভা চমকে গিয়ে উত্তর দিল।

_ মানে? তানভীরের জন্য চিন্তা করছিস মানে কি? তুই তো একটু আগে তানভীরকে রেখে আসলি অনিকের জন্য।
অয়নী শান্ত স্বরে চিন্তা মাখা মুখে জবাব দিল।
_ ঐটা তানভীর ছিল না।
অয়নীর কথাটা শোনে যেন আভার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এসব কি বলছে অয়নী। আভা এর মানে বুঝতেই পারছিল না। আভা অয়নীকে কিছুটা বিমূর্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল
_ কি বলছিস তুই? তানভীর ছিল না মানে কি? তাহলে কে ছিল।

এরপর অয়নী যা বলল, তা শোনে আভা বিস্মিত না হয়ে পারল না। কারণ অয়নী বলল,
_ ঐটা তানভীর ছিল না অনিক ছিল। অনিক তানভীরের বেশ ধরে ছিল।
আভা অবাক হয়ে বলল,

_ তাহলে তুই বুঝলি কিভাবে?
_ কারণ আমি অনিকের হাতে সবসময় একটা তীর চিন্হ ট্যাটু করা দেখতাম এটার জন্য অনেকবার ওকে জিজ্ঞেস ও করেছিলাম কেন এই ট্যাটু আঁকা। ও বলেছিল এটা জন্মগত। আর আজকে যখন অনিক তানভীর সেজে হাতটা কাঁটতে নিয়েছিল তখন আমি একই ট্যাটু দেখি। আর আমি আরও কনফার্ম হলাম যখন আমি অনিক কে ভালোবাসি এ কথা শোনার পরও তানভীরের বেশ ধরা অনিক হাসতেছিল। কারণ সে এটা শোনে খুশি হয়েছিল। আর আমি এটা সিউর অনিক তানভীরের কোন ক্ষতি করেছে। আর সে তার বাড়িতেই তানভীরকে রেখেছে। তাই বাড়ির ঠিকানা নিয়ে এসেছি।

আভা বেশ অবাক হয়ে বলল,
_ তাহলে তানভীর না মানে অনিক সাধকের কাছে কেন আসল। আর নাগপিতাকে কেন আহ্বান করতে চাইল।
অয়নী জবাব দিল।

_ অনিক আমাদের মায়ার জালে বশ করতে চাইছিল। আর ওনি কোন সাধক না। পিশাচ সিদ্ধ কেউ হবে। আর আমি ব্যাপারটা বুঝেই এ নাটক করে চলে এসেছি।
_ কিন্তু তুই তো বলেছিলে অনিক তোর মনের কথা আগেই বুঝতে পারে। আজকে বুঝতে পারল না কেন?
অয়নী বলল,
_ আমি অনিক কে যে কথা বলতে চাই অনিক শুধু সে কথা বুঝতে পারে। আমি মনে মনে যেটা ভাবছি অনিক সেটা বুঝতে পারে না।
আভা কিছুটা অবাক হয়ে বলল,

_ কিন্তু এখন কি হবে? তানভীরকে আমরা কোথায় পাব। না জানি অনিক তানভীরের কি হাল করেছে। আর এর মধ্যে যদি অনিক ঐ বাড়িতে চলে যায় তাহলে কি হবে।
_ অনিক যাবে না এর মধ্যে।
আভা বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।

_ তুই বুঝলি কিভাবে?
_ কারণ অনিক ঐখানের কাজ না সেড়ে যাবে না।
_ কিন্তু অয়নী তুই যে অনিক কে বেড়াতে যাবি বলল, ি তাহলে সে অনিক কে?
অয়নী এবার আর ও একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,

_ সেটাও একটা মায়া ছিল। আমি বুঝতে পারি নি। এখন সবটা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
আভা কিছুটা মন ভাঙা নিয়ে বলল,
_ এবার তানভীরকে কোথায় পাব? না জানি তানভীরের কি হাল করেছে অনিক। অনেক চিন্তা হচ্ছে আমার।
অয়নীও এবার তানভীরের কথা ভেবে বেশ কষ্ট পেতে লাগল। অয়নী আভাকে বলল,

_ আমিও জানি না কি হয়েছে। তবে মন বলছে তানভীর অনিকের বাড়িতেই আছে।
আভা অয়নীর কথা শোনে দম নিতে নিতে বলল,
_ তাই যেন হয়।

এরপর আভা আর অয়নী অনিকের বাড়ির ঠিকানায় পৌঁছাল। পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাড়িটা দেখে দুজনেই খুব ভয় পেয়ে যায়। এমন বাড়ি তারা এর আগে দেখে নি। এক তো অগুছালো গাছের সারি তার উপর বিদঘুটে অন্ধকার। অয়নী আর আভা বেশ ভয়ে ভয়ে বাড়িটার ভিতর ঢুকল। বাড়িটা এমন অন্ধকার দেখাচ্ছিল মনে হচ্ছে ঘোর আমাবস্যা বিরাজ করছে। আভা হঠাৎ করে বলল,

_ অয়নী দেখ একটা সুরঙ্গ।
অয়নী খেয়াল করে দেখল সত্যিই একটা সুরঙ্গ। অয়নী বলল,
_ চল যায় ঐ সুরঙ্গে ঢুকি।
তারপর অয়নী আর আভা সে সুরঙ্গে ঢুকে গেল। দুজনেই বেশ ভয় পেতে লাগল। ভয়ে ভয়ে ভিতের দিকে ঢুকতে লাগল। অন্ধকার যেন আরও বাড়তে লাগল। হঠাৎ আভা বলে উঠল।

_ তানভীর আমাকে বলেছিল ফোনে, এ সুরঙ্গে যাওয়ার পথে একটা ঘর দেখেছিল। সেটাতে নাকি অনেক অদ্ভূত কিছু ছিল।
অয়নী আভার কথা শোনে সুরঙ্গের পথে এগুতে লাগল আর ঘরটা খুঁজতে থাকল। হঠাৎ করে অয়নী ঘরটা দেখতে পেল। অয়নী আর আভা ঘরটাই ঢুকে তানভীরকে যে অবস্থায় দেখল তা দেখে অয়নীর মাথাটা ঘুরে গেল। কারণ অয়নী দেখল।


পর্ব ৮

কারণ অয়নী খেয়াল করল তানভীর মাটিতে পড়ে আছে বিভৎস অবস্থায়। তানভীরের চোখে মুখে কেমন জানি খুচা খুচা দাগে ভরে আছে। আভা তানভীর এর এ হাল দেখে ভয় পেয়ে গেল। তারাহুরা করে অয়নীকে বলল,
_ অয়নী তানভাীরকে ধরি চল।

এ বলে আভা অয়নীকে নিয়ে তানভীরকে ধরতে যাবে ঠিক সে মুহুর্তে অয়নী আভাকে আটকে দিল। আভা কিছুটা আশ্চর্য হয়ে বলল,
_ কি হল অয়নী? তুই বাঁধা দিচ্ছিস কেন এভাবে? কোন সমস্যা? তানভীরকে তো আগে ধরে বাঁচাতে হবে। চল যাই ওকে ধরি।
এবার অয়নী একটা বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলল,

_ তোদের মত বোকারা নাকি আমার সাথে খেলতে চেয়েছিস। তোর সাথে এতক্ষণ যা হয়েছে সব মায়ার জাল ছিল। তানভীরের সাথে যেমনটা হয়েছে এবার তোর সাথেও এমনটা হবে। হাহাহাহা।
অয়নীর মুখে এরকম কথা শোনে আভা এর মানেই বুঝতে পারছিল না। কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
_ এসব কি বলছিস অয়নী? তোর কি মাথা ঠিক আছে?

হুট করে অয়নী অনিকের রূপ ধরে বসল। অয়নীর এ রূপ দেখে আভা ভয় পেয়ে গেল। তাহলে এতক্ষণ যে ছিল সে কে? যদি অনিক অয়নীর রূপ ধারণ করে তাহলে অয়নী কোথায়? এ প্রশ্নটার উত্তর যেন আভা মিলাতে পারছিল না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা সব কিছু যেন আভা গুলিয়ে ফেলছে। সবকিছু যেন আভার চিন্তার বাইরে চলে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে আভার মনে হচ্ছে এটা কোন মতিভ্রম আবার অন্য কিছুও হতে পারে। অনেকটা নিরাশ হয়ে আভা বলল,
_ অনিক ভাই আপনি? তার মানে এতক্ষন যে ছিল সে অয়নী না?

অনিক একটা হাসি দিয়ে বলল,
_ নাহ অয়নী ছিল না। আমি ওর রূপ ধরে ছিলাম। এতটা নাটক করতে হয়েছে শুধু তোকে এ বাড়িতে আনার জন্য। তানভীরকে তো ঐদিন ঐখান থেকেই এ হাল করে নিয়ে আসছি। তারপর তানভীর এর রূপ ধরে তোর বাড়িতে ঢুকলাম। রাতে আবার অয়নীকে পুরোপুরি আমার কব্জায় এনে ওকে ওর বাসায় রেখে এসেছি। অয়নী এখন আমার মায়ায় বশে আটকে আছে। আর এরপর অয়নীর রূপ ধরে আর মায়ার জাল দিয়ে তোকে ফাঁসালাম। আমি চাইলেই যে কোন মুহুর্তে তোকে নিয়ে আসতে পারতাম।

কিন্তু তোকে আমার ক্ষমতার এক অংশ বুঝাতে এরকম নাটক করেছি আর মায়ার জালে ফাঁসিয়েছে। কি না বলেছিলে তুই… শত্রুকে মেরে নয় প্রতিহত করে যুদ্ধে জয় লাভ করতে হয়। তাই তোকে বুঝিয়ে দিলাম আমার ক্ষমতা কত।

আভা কিছুটা ভয় আর নিরাশ হয়ে গেল অনিকের কথা শোনে। তার যেন সব আশার আলো নিভে গেল। এতটা মায়ার জালে আভা ফেঁসে গেছে অথচ টেরেই পেল না। এখন এ মায়া থেকে কিভাবে বের হবে সেটাও বুঝতে পারছে না। এতটা বোকার মত কাজ করে বসল এটার জন্য আফসোস করার সময় ও সে পাবে না। অয়নীর কি হাল হলো এটা ভেবে আরও নিরাশ হয়ে গেল আভা। আভা বুঝতে পারল এবার তার জীবন ও শেষ। আভা কিছুটা নিরাশ হয়ে বলল,

_ আপনি কেন এমন করছেন? অয়নী কি ক্ষতি করেছে আপনার? অয়নী তো আপনাকে অনেক ভালোবাসে। কিসের জন্য আপনি অয়নীর ক্ষতি করতে চাচ্ছেন?
অনিক একটা অট্ট হাসি দিয়ে বলল,

_ আমার কাছে ভালোবাসা বলতে কিছু নেই। আমার অমরত্বের জন্য অয়নীকে দরকার তাই অয়নীকে ব্যবহার করছি শুধু। আর মাত্র ৬ টা মাস অপেক্ষা করতে হবে এর পর অয়নীকে ব্যবহার করে আমার স্বার্থ হাসিল করব। সে পর্যন্ত তুই আর তোর ফ্রেন্ড তানভীর এখানেই থাকবি। তোদের নিজের হাতে মারার শখ ছিল কিন্তু এ ছয় টা মাস আমি কোন নর নারী বা প্রাণী নিজ ইচ্ছায় হত্যা করতে পারব না। তাই এ ঘরে তোদের তালা বদ্ধ করে দিয়ে যাব। তারপর ৬ মাস পর তোদের সাথে দেখা হবে। হাহাহাহা।

এ বলে অনিক একটা প্রাকান্ড সাপ রূপ ধারণ করল আর আভাকে তার লেজ দিয়ে একটা আঘাত করল। সাথে সাথে আভার মাথাটা ঘুূরে গেল আর মাটিতে আঁচড়ে পড়ল। এরপর আভার কি হল আভা টের পেল না। অনেকক্ষন পর আভার জ্ঞান ফিরার পর আভা খেয়াল করল সে আর তানভীর রুমটাতে তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। আভার মাথা এখন কাজ করছে না সে কি করবে এটা ভেবে। কি করলে অয়নীকে বাঁচাতে পারবে এটা বুঝতে পারছিল না। কিছুটা কষ্ট নিয়ে শরীরের অসহ্য ব্যাথা নিয়ে আভা তানভীরের কাছে গেল আর ডাকতে লাগল।

_ দোস্ত ঠিক আছিস তো? উঠ।
কিন্তু তানভীরের কোন সাড়া শব্দ পেল না। হঠাৎ আভার চোখে গেল আভার ব্যাগটার দিকে যেটা এক কোনায় পড়ে আছে। অনিক হয়ত খেয়াল করে নি আভার ব্যাগটা পড়ে আছে। না হয় ব্যাগটাও নিয়ে যেত। আভা অসহ্য ব্যাথা নিয়ে ছেছড়াতে ছেছড়াতে ব্যাগটার কাছে গেল। ব্যাগটা থেকে পানির বোতল বের করে তানভীরের মুখে হলকা ঝাপটা দিল। পানি দেওয়ার পর তানভীর এর জ্ঞান ফিরল। আর আভা বলল,
_ দোস্ত তুই ঠিক আছিস তো?

তানভীর কাতরাতে কাতরাতে বলল,
_ আমি ঠিক আছি কিন্তু অয়নীকে কিভাবে বাঁচাব আর তুই এখানে আসলি কিভাবে?
এরপর অাভা তানভীরকে সবটা ঘটনা খুলে বলল, আরও বলল,

_ আমি এটাও এখনও জানি না অনিক অয়নীকে কি কাজে ব্যবহার করবে। সব রেখে অয়নীই বা কেন?
এবার তানভীর পাশে থাকা বোতলটা নিয়ে হালকা পানি খেয়ে জবাব দিল যে

_ কারণ অনিকের অমরত্বের জন্য অয়নীকে অয়নীর ২২ তম জন্মদিনে বলি দিতে হবে। বলি দিয়ে পিশাচ নাগকে খুশি করতে পারলে সে অমরত্ব পেয়ে যাবে।
কথাটা শোনে আভা ভয় পেয়ে উত্তর দিল।
_ তাহলে তো যে কোন ২২ বছরী মেয়েকে এনে বলি দিলেই হয় কিন্ত অয়নীকে কেন নিল। অয়নীর মধ্যেই বা কি এমন শক্তি আছে যে অয়নীর জন্য অনিক এতদিন এত নাটক করল। আর তুই এসব জানলি কিভাবে?

তানভীর কিছুটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
_ কারণ অয়নী নাগরাণীর বংশধর। আর অনিকের অমরত্ব পেতে হলে নাগরাণীর বংশের কোন মেয়ের ২২ বছর পূর্ণ যেদিন হবে সেদিন বলি দিতে হবে। এজন্য অনিক অয়নীর পিছনে পড়ে আছে। আর অনিকেই এসব বলেছে আমাকে।

আভা অনেকটা অবাক মাখা মুখে বলল,
_ নাগরাণীর বংশধর মানে?
_ হ্যা নাগরাণীর বংশধর। অয়নীর বংশে মায়া নামে একজন নারী ছিল যে কিনা নাগরাণী ছিল। মায়াকে পাঠিয়েছিল মূলত নাগ মনি রক্ষার জন্য। পরপর দুবার নাগমনি রক্ষা করে মায়া। মায়ার পরে যেন আর কোন নাগরাণীর জন্ম না হয় সে জন্য মায়া নাগপিতাকে বলে নাগরানী আসার পথ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু বংশ পরিক্রমায় মায়া আর মায়ার স্বামী অরন্যের বংশে কোন ছেলে সন্তান জন্ম নেয় নি। সবার ঘরেই একটা করে মেয়ে সন্তান জন্ম নিয়েছিল।

এভাবে বংশ বাড়তে বাড়তে অয়নীর জন্ম হয়। সে সময়টা অনেক কাল আগের ছিল। আর এখন এটা বর্তমান কাল। তার উপর অয়নী হচ্ছে রাফানি বংশধর। কারণ অয়নীর বংশধর মায়ার মত অয়নীর মায়ের ও কালের পরিক্রমায় বিয়ে হয়েছে একজন রাফানি বংশধরের ছেলের সাথে।

একদিকে রাফানি বংশধর অন্যদিকে নাগরাণীর বংশধর। তাই অয়নী কে বলি দিলে যে পিশাচ নাগ খুশি হবে সেটা অনিক বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছিল। আর এজন্যই সে অয়নীকে ব্যবহার করতেছে।
কথা গুলো শোনে আভা অনেকটা ভেঙে পড়ল কারণ সে অয়নীকে কিভাবে রক্ষা করবে বুঝতে পারছিল না। কিছুটা হতাশ হয়ে বলল,
_ তাহলে অয়নীকে কিভাবে বাঁচাব? আমরা তো এখানে আটকা পড়ে গেলাম।

তানভীর একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
_ আমি নিজেও জানি না। অয়নীকে অনিক মায়ার জালে ফাঁসিয়ে রেখেছে। অয়নী অনিকের মায়ার বশে এখন। অনিক কে ছাড়া অয়নী কিছুই বুঝবে না। তবে আমাদের এখান থেকে বের হওয়ার পথ বের করতে হবে। অনিক ছয় মাসের আগে আর এখানে আসবে না। সে ভাববে আমরা হয়ত ছয় মাছ না খেতে পেয়ে মরে যাব। কিন্তু আমাদের যে করেই হোক বের হতে হবে।

অয়নী কিছুটা নীরবতা মাখা মুখ নিয়ে বলল,
_ কিভাবে বের হব এখান থেকে। কোন পথ তো দেখছি না। যে শক্ত প্রাচীর সেটা ভাঙ্গারও কোন উপায় দেখছি না। কি করলে বের হতে পারব সেটাই তো বুঝছি না। আর কঠিন কোন কাজ করতে গেলে শক্তির দরকার সে শক্তিটাও তো আমাদের নেই। আমার ব্যাগে কিছু শুকনো খাবার আছে। এ দিয়ে আর কি হবে।
তানভীর আভাকে ধরে বলল,

_ চিন্তা করিস না আপাদত এটুকু খেয়ে নিব দুজন। তারপর আস্তে ধীরে কাজ করব। কোন পথ তো আছেই বের হওয়ার। আমরা যদি মনোবল হারিয়ে ফেলি তাহলে আমরা কোন পথেই বের করতে পারব না। মনে শক্তি আন আভা। মনোবল স্থির কর।
আভা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

_ যখনেই আশার আলো দেখি তখনেই সেটা নিভে যাচ্ছে। এ কোন মায়ার জালে ফাঁসলাম বুঝলাম না। কেন জীবনটা এভাবে পাল্টে গেল বুঝতে পারছি না। সব তো ভালোই ছিল হুট করে অনিক কেন যে অয়নীর জীবনে আসল আর জীবনটা নরক করে দিল। সব দোষ আমার কারণ আমিই অয়নীকে নিয়ে পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। অয়নী যেতে চায় নি জোর করে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমি না নিয়ে গেলে অয়নীর এ হাল হত না।

তানভীর আভাকে শাত্বনা দিয়ে বলল,
_ আরে পাগলি ভাগ্যের লিলাখেলা থেকে কি কেউ বের হতে পারে নাকি? সব তো ভাগ্যের লিলাখেলা। এখন এভাবে কেঁদে সময় নষ্ট করলে কিছুই হবে না। পথ খুঁজতে হবে বের হওয়ার। খাবার গুলা বের কর খেয়ে নেয় আগে।
অাভা চোখ মুছতে মুছতে বলল,

_ দিচ্ছি দাঁড়া।
এ বলে অাভা তার ব্যাগ থেকে শুকনো খাবার গুলা বের করল। কিছু কেক, বাদাম, চানাচুর, আচার এগুলা ছিল। ঐখান থেকে তানভীর কিছু খেল আর আভাও কিছু খেল। আর কিছু পরে খাওয়ার জন্য রেখে দিল। খাওয়ার পর আভা বেশ মন খারাপ নিয়ে বসে রইল। তানভীর আভার কাছে গিয়ে আভার হাতটা হালকা করে ধরে বলল,
_ তুই নিজেকে স্থির কর। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। পথ বের করতে হবে। মনে সাহস না থাকলে আমরা পথ খুঁজে পাব না। মনে সাহস আন আগে। এভাবে ভেঙে পড়িস না। আমাদের এখনও অনেক কাজ বাকি। সব কাজ আমাদের ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।

তানভীরের কথাগুলো শোনে আভা তানভীরের দিকে তাকাল। এপ্রথম তানভীরকে আভা অন্যভাবে অণুভব করতে লাগল। এ প্রথম তানভীরকে কেন জানি না আভার ফ্রেন্ডের বাইরেও একটা কিছু মনে হচ্ছে। তানভীরকে আভা আরেকেটু শক্ত করে ধরে বলল,

_ হয়ত তুই ঠিক বলছিস। কিন্তু এত কিছু ঘটার পর মনে শক্তি পাচ্ছি না। যাই হোক পুরো ঘরটা আমাদের একবার দেখতে হবে। কোন বের হওয়ার রাস্তা পাই কি না খোঁজতে হবে।
_ এইতো বুঝতে পেরেছিস। চল একবার ঘরটা দেখে আসি। যদিও অন্ধকারে তেমন দেখা যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা করলে ঠিকেই পথ বের করতে পারব।

এরপর তানভীর আর আভা পুরো ঘরটা খুঁজল। খুঁজে কোন কিছুই যেন পাচ্ছিল না। টুকিটাকি সুতা, হাড়গোড় আর স্যাতস্যাতে রক্ত ছাড়া এ ঘরটাতে তেমন কিছু নেই। আভা যতই চারদিকে হাঁটছে ততই ঘরটার হাল দেখে সিউরে উঠছে। এত ভয়ঙ্কর ঘর ও হতে পারে সেটা তার জানা ছিল না। হঠাৎ আভা স্যাতস্যাতে রক্তে পিছল খেয়ে পড়ে গেল। সাথে দেয়ালে থাকা পোস্টারটাও পড়ে গেল। আভা পড়ে গিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে উঠল।

আভার চিৎকার শোনে তানভীর সে জায়গায় গেল আর দেখল আভা পড়ে গেছে। আভাকে ধরতে গিয়ে তানভীর খেয়াল করল একটা ছোট জানালা। আভাকে উঠিয়ে তানভীর বলল,
_ দোস্ত দেখ একটা জানালা। তবে আটকানো। এটাকে ভাঙ্গতে হবে।
আভা নিরাশ হয়ে বলল,
_ ভাঙ্গবি কিভাবে? এখানে তো ভাঙ্গার মত কিছু নেই।

তানভীর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
_ ঐখান থেকে শক্ত দেখে কতগুলো ফিমার আর হিউমেরাসের হাড় নিয়ে আয়। এগুলা দিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা করব। লক টা জঙ্গ ধরে আছে একটু চেষ্টা করলেই খুলে যাবে।
আভা পাশে পড়ে থাকা কয়েকটা হাড় থেকে লম্বা শক্ত একটা হাড় নিল আর তানভীরকে দিল।
তানভীর আভার থেকে হাড়টা নিয়ে জানালায় জোরে আঘাত করতেই জানালাটা খুলে গেল। জানালাটা খোলার পর দুজন যা দেখল তা দেখে অবাক হয়ে গেল। কারণ……


পর্ব ৯

কারণ তারা খেয়াল করল জানালার ও পাশে আরেকটা ছোট ঘর। আভা আর তানভীর ঘরটায় প্রবেশ করল। ঘরটার চারদিকে দেখতে লাগল, হঠাৎ করে আভা খেয়াল করল একটা কর্ণারে একটা বাক্স পড়ে আছে। বক্সটার নকশা দেখেই বুঝা যাচ্ছে এটা কোন রাজকীয় বাক্স আর অনেক পুরনো। আভা তানভীরকে ডেকে বলল,
_ দোস্ত দেখ একটা বাক্স। কিসের বাক্স বুঝতে পারছি না তবে কিছু একটা তো আছেই।

আভার কথা শোনে তানভীর দৌঁড়ে আসল আর দেখল সত্যিই একটা বাক্স পড়ে আছে। তানভীর গিয়ে বাক্সটা হাতে নিল আর খেয়াল করল বাক্স টা অনেক পুরনো। তানভীর কি করবে বুঝতে পারছে না। বাক্সটা খুলবে নাকি রেখে দিবে। আভা তানভীরকে বলে উঠল।
_ কি রে কি করবি? বাক্সটা কি খুলবি না?

তানভীর ভাবাক্রান্ত মন নিয়া বলল,
_ কি করব বুঝতে পারছি না। খুলব নাকি খুলব না জানি না। তবে খোলে দেখাটাও জরুরি। খোলতে গেলে যদি আবার বিপদে পড়ি এ ভয়ে খুলতেও মন চাচ্ছে না।
আভা নিরাশ হয়ে জবাব দিল।
_ বিপদের আর কি বাকি আছে যা হবার হবে। তুই খুলতো দোস্ত।

_ তাহলে খুলে ফেলি।
_ হুম খুল।
তারপর আভা আর তানভীর মিলে বাক্সটা খুলল। বাক্সটা খুলার পর খেয়াল করল একটা সরু আলোকরশ্নি মেঝেতে পড়েছে আর সেখান থেকে একজন সুন্দর রমনী বের হয়েছে। এত সুন্দর মেয়ে আভা আর তানভীর এর আগে কখনও দেখি নি। তার উপর চোখগুলা দেখে দুজনেই চমকে গেছে এত সুন্দর চোখ কোন মানুষের হয় সেটা যেন তানভীর আর আভার জানা ছিল না। ওনাকে দেখে তানভীর আর আভা বলল,
_ আপনি কে?

সুন্দরী রমণী জাবাব দিল।
_ আমি মায়া। আদি নাগরাণী।
মায়া নাম শোনেই আভা আর তানভীর চমকে গেল কারণ এর কথায় তো অনিক বলেছিল। তাহলে ওনি এ বাক্সে বন্দি হল কিভাবে? তানভীর কিছুটা চমকে গিয়ে মায়াকে বলল,
_ আপনি আদি নাগরাণী হলে এ বাক্সে বন্দি কেন?
মায়া কিছুটা চুপ হয়ে জবাব দিল।

_ নাগরানীদের মৃত্যুর আগে ওদের নাগ রাজ্যে প্রবেশ করতে হয়। দুনিয়াতে একটা নির্দিষ্ট সময় থাকার পর তারা নাগরাজ্যে যায়। আমিও গিয়েছিলাম সেখানে। মনুষ্য জীবনের ইতি ঘটিয়ে নাগরাজ্যের দায়িত্ব পালন শুরু করেছিলাম। আর সেখান থেকেই আমাকে অনিক ধরে এনে বাক্সবন্দি করে দেয়।
তানভীর কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
_ কিন্তু আপনাকে কেন এমন করে বন্দি করে রাখল।

_ কারণ আমি ওর অমরত্বের কাজে বাধা প্রদান করতে পারি এজন্য। ও একটা ইচ্ছাধারী পিশাচ নাগ। ওর অমরত্বের জন্য নাগরাণীর বংশধর আর রাফানি বংশের কোন নারীকে তার ২২ বছর বয়সে বলি দিতে হবে। আর এজন্যই সে অয়নীকে ব্যবহার করছে।

তানভীর ওনার কথা শোনে অবাক না হয়ে পারল না। কারণ ওনি এত কিছু জানেন কিভাবে বুঝতে পারল না। কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
_ আপনি এত কিছু জানলেন কিভাবে?
মায়া একটু হেসে বলল,

_ নিয়তিই সব বলে দেয়।
তানভীর এবার বলল,
_ আপনি যেহুত আদি নাগরাণী আপনি নিশ্চয় জানেন এ পথ থেকে মুক্তির উপায় কি? আপনি হয়ত জানেন অয়নী এখন মায়ার বশে চলে গেছে। আর সে মায়া কাটানোর উপায় কি? অনিক কে ধ্বংসের উপায় কি?
_ হ্যা জানি।

_ তাহলে বলুন কি করতে হবে।
_ হ্যা সব বলব। এর আগে এখান থেকে বের হতে হবে। আর আমি ঐ রুমে তোমাদের জায়গায় একটা মায়া বসিয়ে দিয়েছি যাতে অনিক এসে ভাবে তোমরা ঐরুমেই আছ। আর এই প্রাচীরে একটা ময়া দরজা বানিয়ে দিব এটা দিয়ে তোমরা বের হবে।
_ কিন্তু আমাদের চেহারা তো অনিক চিনে ফেলবে।
_ তোমাদের কেউ চিনবে না?

আভা কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
_ কেউ চিনবে না মানে?
_ কারণ তোমাদের রুপ অনিকের কাছে প্রকাশ পাবে না। অনিকের সামনে গেলে তোমরা অন্য রুপে চলে যাবে। আপাদত এ দরজা দিয়ে বের হও। এখানে থাকাটা নিরাপদজনক নয়।
আভা আর তানভীর খেয়াল করল মায়ার চোখ থেকে একটা তীব্র জলসানো রেখা দেয়ালে পড়ল আর সাথে সাথে একটা দরজা তৈরী হয়ে গেল। তানভীর একবার ভাবছে বিশ্বাস করে আবার ফেঁসে যাচ্ছে না তো আবার ভাবছে যা হবার হবে। এসব ভেবেই আভাকে বলল,
_ চল আভা বের হই।

তারপর দুজন বের হল। খেয়াল করল সবটা ঠিক আছে তার মানে ওনি সত্যিই নাগরাণী। আর তানভীর কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
_ আপনি কি অয়নীর জন্য কিছু করতে পারবেন না।
মায়া কিছুটা নিরাশ হয়ে জবাব দিল।

_ দুনিয়ার আসার পথ নেই আমার। তবে মাঝে মাঝে এভাবে অদৃশ্য অবস্থায় আসতে পারব। কাউকে দেখা দিলে সে আমাকে দেখবে এর আগে না। কিন্তু প্রত্যক্ষ ভাবে কারও জন্য কোন কাজ করা সম্ভব না।

কথাটা শোনে তানভীর একটু বিচলিত হয়ে বলল,
_ কিন্তু পরোক্ষভাবে সাহায্য তো করতে পারবেন। অয়নীকে বাঁচানোর আর অনিক কে ধ্বংসের উপায় তো আছে নিশ্চয়।
_ হুম। সব কিছুর যেমন সৃষ্টি আছে ধ্বংসের উপায় ও আছে।
_ তাহলে বলেন সে উপায় কি?

মায়া কিছুটা চুপ থেকে বলল,
_ এটা অনেক কঠিন কাজ। তবে শক্ত মনোবল নিয়ে কাজ করলে পারবে অবশ্যই।
_ যত কঠিনেই হোক আগে বলেন। আমরা পারব।

_ তাহলে শোন। এই পথ ধরে ৭০ কদম পার হয়ে দেখবে একটা সুরঙ্গ। আর এ সুরঙ্গ ধরেই এগিয়ে যাবে। পিছন ফিরে কখন ও তাকাবে না। পিছন ফিরে তাকালেই বিপদ ঘটবে। তোমাদের পিছন ফিরে তাকানোর জন্য অনেক চেষ্টা করা হবে কিন্তু তোমরা লক্ষ্যে অবিচল থাকবে। সামনের দিকেই এগিয়ে যাবে। অনেকটা পথ পার হওয়ার পর একটা পদ্ম পুকুর খেয়াল করবে। সে পুকুরে একটা রাজ পদ্ম আছে সেটা চিনার দায়িত্ব তোমাদের। রাজ পদ্মটা নিয়ে আমার কাছে আসবে। তারপর বাকি সব বুঝিয়ে দিব। তবে একটা কথা বলে রাখা ভালো।

তানভীর বলে উঠল।
_ কি কথা?
মায়া বলল,

_ ভুল পদ্ম টেনে তুললে তুমি সেখানে মায়ার জালে ফেঁসে যাবে। আর এ মায়ায় ৫ মাস কেটে যাবে তুমি টেরেই পাবে না। যেহুত অয়নীর ২২ বছর হতে আর মাত্র ৫ মাস ১৮ দিন বাকি সেহুত তোমাকে সাবধানে পদ্মটা তুলতে হবে।
এ কথাটা শোনে তানভীর একটু নিরাশ হল কারণ রাজ পদ্মটা কোনটা সে তো সেটাই চিনে না। তাই মায়াকে বলল,
_ পদ্মটা চিনার উপায় তো বলে দিন।

_ আমি যদি পদ্মটা চিনার উপায় বলে দেয় তাহলে পদ্মটা কোন কাজ করবে না। পদ্মটা তোমাদেরেই চিনতে হবে।
কথাটার শোনার তানভীর একটু হতাশ হল। তবুও রাজি হল যেতে। কারণ এছাড়া আর কোন উপায় নেই। আর মায়াকে বলল,
_ আমরা আসছি আবার দেখা হবে। সাথে করে রাজ পদ্মটা নিয়ে আসব।

এ বলে তানভীর আর আভা ৭০ কদম হাঁটল তারপর একটা সুরঙ্গ খেয়াল করল। সুরঙ্গে ঢুকার পর মনে হল আভা আর তানভীরকে কেউ যেন পিছন থেকে ঢাকছে। কিন্তু তানভীর আর পিছনে তাকাল না। কারণ মায়া বলেছিল পিছনে তাকালে বিপদ হতে পারে তাই আর পিছনে তাকায় নি। অপরদিকে আভা মায়ার কথাটা ভুলে যায় সে পিছনে তাকিয়ে ফেলে আর সাথে সাথে আভা একটা মূর্তিতে পরিনত হয়। তানভীর বুঝতে পেরেছিল আভার কিছু একটা হয়েছে।

তবুও নিজেকে সামলিয়ে সে আর পিছনে তাকায় নি। অবশেষে তানভীর পদ্ম পুকুর টা খেয়াল করল। আর দেখল সেখানে অনেকগুলো পদ্ম চকচক করছে। তানভীর ঐখান থেকে সবচেয়ে চকচকে পদ্মটা ধরে টান দিল। কারণ তানভীরের কাছে মনে হল এটাই রাজ পদ্ম। তানভীর পদ্মটা টানার পর খেয়াল করল।


পর্ব ১০ (অন্তিম)

তানভীর পদ্মটা তোলার পর খেয়াল করল পদ্মটা মিলিয়ে গেছে। তার মানে এটা রাজ পদ্ম ছিল না। এবার তানভীর বেশ ভয় পেয়ে গেল। সাথে সাথে তানভীরের মাথাটা বেশ ঝিমাতে শুরু করল।

তারপর আবার তানভীর এর সব ঠিক হল। তানভীর বুঝতে পারল তার জীবন থেকে ৫ টা মাস চলে গেছে। এবার তানভীর যদি হুজুগের মাথায় না বুঝে পদ্মটা তুলে তাহলে তানভীর আর অয়নীকে বাঁচাতে পারবে না এটা বেশ বুঝতে পারছে। তাই এবার তানভীর মনে মনে ভাবল যেহুত চকচকে পদ্মটা রাজ পদ্ম না তাহলে সবচেয়ে নির্জীব পদ্মটা রাজ পদ্ম হতে পারে। এবার তানভীর খুব উত্তেজনার সাথে ভয়ে ভয়ে সবচেয়ে নির্জীব পদ্মটাকে তুলল। আর খেয়াল করল পুকুর থেকে মায়া উঠে এসেছে। মায়াকে দেখে তানভীর অবাক হয়ে গেল। আর বলল,

_ আপনি এখানে?
মায়া একটু হাসি মাখা মুখ নিয়ে বলল,
_ হ্যা আমি এখানে। তুমি তুমার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
তানভীর হেসে বলল,

_ এখন কি করতে হবে বলুন।
_ তোমার সময় আর ১৮ দিন আছে। এখান থেকে বের হতে ১৭ দিন চলে যাবে। এ পদ্মটা নিয়ে মায়া দরজা দিয়ে ঐ রুমে প্রবেশ করবে আর দেখবে অনিক অয়নীকে বলি দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে যখন তুমি অনিক কে দেখবে তার নাকে শুধু এ পদ্মটা ধরবে সে পদ্মটার ঘ্রাণে মৃত্যু বরণ করবে।

তানভীর মায়ার কথা শোনে তাড়াতাড়ি রওনা দিল। মাঝপথে আভাকে দেখল। আভা কে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আর বলল, চল তাড়াতাড়ি চল। আভা তানভীরকে দেখে বলল,
_ আমি এতক্ষন কোথায় ছিলাম।

তানভীর বলল,
_ এসব কথা বলার সময় নাই। চল তাড়াতারি।

তারপর আভা আর তানভীর রওনা দিল। পৌঁছানোর পর মায়া দরজা দেখল, মায়া দরজা দিয়ে তানভীর প্রবেশ করে দেখল অনিক অয়নীকে বলি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ঠিক এ মুহুর্তে তানভীর অনিকের নাকে ফুলটা ধরল। আর অনিক মারা গেল। তানভীর আর আভা অয়নীকে নিয়ে বের হয়ে গেল। আর বাড়িটা ধ্বংস হয়ে গেল। সে সাথে কাহিনীটাও শেষ হল। আর কিছুদিন পর অয়নীর সাথে তানভীর এর বিয়ে হয়ে গেল। আর আভা বিদেশ চলে গেল তার বাবা মায়ের কাছে।

আশাও এবার আমার মুখে কাহিনীটা শোনে বেশ অবাক হল। সত্যিই কত কাহিনী ঘেরা এ দুনিয়া। মায়ের বকায় দুজনের ঘুর কাটল। আর আজকে আমাকে দেখতে আসবে। মা বলল, ।
_ তরী তাড়াতাড়ি রেডি হ।

_ হ্যা মা রেডি হচ্ছি।
তারপর আমি রেডি হলাম। আমাকে দেখতে আসল। ছেলেকে দেখে বেশ পছন্দ হল। আলাদা করে কথা বলতে বলল, আমার সাথে আাশাও গেল। ছেলে জিজ্ঞেস করল।
_ আপনার নাম টা যেন কি?
_ তরী। আপনার?

_ অরন্য।
নাম টা শোনে পাশ থেকে আশা বলে বসল। নাগরানী মায়ার স্বামীর নাম ও তো অরন্য ছিল। কথাটা শোনে উনি একটু বিব্রত বোধ হয়ে বলল,
_ মানে বুঝলাম না।

আমি একটু হেসে বললাম,
_ তেমন কিছু না।
আর ভাবতে লাগলাম। আশার মন থেকে গল্পের প্রভাবটা যায় নি। আর সত্যি বলতে আমার মন থেকেও গল্পের প্রভাবটা যায় নি। জানি না এটা কি ছিল সত্যি নাকি গল্প।
যাইহোক, এর মধ্যে আমার বিয়ের পাকা কথা হয়ে গেছে। কিছুদিন পরেই আমার আর অরন্যের বিয়ে।

লেখিকা_ শারমিন আঁচল নিপা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “ইচ্ছাধারী নাগ – মানুষরূপী ভয়ংকর সাপের গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – আলপিন – bangla voyonkor bhuter golpo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *