জন্মদিন – আমার প্রথম কষ্টের গল্প: সায়নীর অভিমান থাকলেও দিন শেষে ওরাই ওর সব। চাইলেও ওদের ছেড়ে চলে যেতে পারবে না। কিন্তু যদি কোন দিন পারে, তাহলে হয়তো চলে যাবে। যেদিন সব পিছুটান ভুলে যেতে পারবে সেদিন দুজনের কাছ থেকেই হারিয়ে যাবে।
মুলগল্প
- তোমাদের জন্য যে আমার জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এটা ভাবো নি কেন এতো দিন? আজও ঝগড়া করছ তোমরা। আলাদাই তো থাক। আজকের দিন টা ঝগড়া না করলে হত না?
চিৎকার করে বলে উঠল সায়নী। সামনে বসে থাকা বাবা মা সহ রেস্টুরেন্টের বাকিরা কেঁপে উঠল ।
সায়নী নিজেকে শান্ত করে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সামনে বসে থাকা তার বাবা আর মায়ের দিকে। তারা দুজনেও অপরাধীর দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন।
সায়নীর বাবা মা একসাথে থাকেন না। যখন সায়নীর ১৪ বছর বয়স তখনই তারা দুজন ডিভোর্স নিয়ে আলাদা হয়ে যান এবং আবার বিয়ে করেন। সেদিনও সায়নীর জন্মদিন ছিল। তারপর সায়নী কার সাথে থাকবে এ নিয়েও অনেক ঝগড়া হয়েছে। শেষে তারা ঠিক করে বছরের ৬ মাস সে মায়ের সাথে আর বাকি ৬ মাস বাবার সাথে থাকবে। সেই ১৪ বছর বয়সের জন্মদিন থেকেই এই নিয়ম পালন করে আসছে।
সায়নী ও কিছু বলে নি। আগে প্রচুর কান্না করত কিন্তু এখন হয়তো আর জল অবশিষ্ট নেই তার চোখে। পানি হয়তো সুকিয়ে গিয়েছে। তাই ছোট কাহত কারণে সে কান্না করে না। নিঃশব্দে ৬ মাস মায়ের সাথে আর ৬ মাস বাবার সাথে থাকে। এতে করে বাবার স্ত্রী আর মায়ের দ্বিতীয় স্বামী রাজি না থাকলেও তেমন কিছু বলে না। তবে সায়নীর ভাই বোনেরা ওকে খুব ভালোবাসে। তাই সৎ বাবা আর মা কে তেমন পাত্তা দেয় না সে।
আজও সায়নীর আরেক জন্মদিন। এই দিনটাই শুধু বাবা আর মা কে একসাথে পায় সে। আর কিছু চায় নি এর থেকে বেশি। বাবা আর মা কে একসাথে পেয়ে সারা দিন একটু ঘোরাঘুরি করে।
সায়নীর সৎ বাবা মা প্রথম দিকে আপত্তি করলেও পরে সায়নীর অবস্থার কথা ভেবে রাজি হয়ে যান। এজন্য তাদের প্রতি একটা আলাদা শ্রদ্ধা বোধ কাজ করে তার।
আজও সায়নী বাবা আর মায়ের সাথে ঘুরতে এসেছিল। কিন্তু রেস্টুরেন্টে খেতে বসে কি একটা ছোট কারণে দু জনেই ঝগড়া করে। সায়নী তখন ওয়াশরুমে গিয়েছিল একটু। ফিরে এসে তাদের ঝগড়া দেখে রেগে যায় আর চিৎকার করে ওঠে।
নিজে কে শান্ত করে বাকি কাস্টমারদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়। তার কিছুক্ষণ পর বলতে শুরু করে,
- তোমাদের খুশির জন্য আমি সব মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমার জন্য একটা দিন কষ্ট করতে পারছ না তোমরা? আজও তোমাদের ঝগড়া করা লাগবে? এমন করলে আমি থাকব কি করে? চিন্তা করো না, আমি তো তোমাদের কাছে বোঝা। খুব দ্রুত তোমাদের ছেড়ে চলে যাব। আর কখনো তোমাদের সামনে আসবো না।
ওর কথায় রাগ কম, অভিমান বেশি ছিল। কি বা চেয়েছিল ও । শুধু বাবা মা কে একসাথে একদিনের জন্য পাওয়া। কিন্তু ওরা তাও করতে পারল না। শুধুমাত্র নিজেদের ঝগড়া কে প্রাধান্য দিয়ে প্রথমে একে অপরকে ছাড়ল। আর আজও সেই ঝগড়া নিয়েই পড়ে আছে। কি করবে সায়নী।
চুপচাপ খাবার খেয়ে উঠে পড়ল সায়নী। তারপর মায়ের সাথে চলে গেল। বাবাকে একবার জড়িয়ে ধরে বিদায় জানালো।
সায়নীর অভিমান থাকলেও দিন শেষে ওরাই ওর সব। চাইলেও ওদের ছেড়ে চলে যেতে পারবে না। কিন্তু যদি কোন দিন পারে, তাহলে হয়তো চলে যাবে। যেদিন সব পিছুটান ভুলে যেতে পারবে সেদিন দুজনের কাছ থেকেই হারিয়ে যাবে। ততদিন ওদের সাথেই থাকতে হবে।
সায়নী যতই কঠোর নিজেকে দেখাক, নিজের বাবা মায়ের প্রতি ও রাআগ করে থাকতে পারবে না। কিন্তু যতই সময় যাচ্ছে, অভিমান এর পাহাড় বড় হচ্ছে।
কিন্তু সায়নীর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে সে কি পারতো এতোটা নিজেকে সামলাতে? কারণ অনেকের বাবা মা তো ডিভোর্স নিয়ে নিজের সন্তানকেই কাছে রাখতে চায় না। তাদের বাবা মা থাকা সত্ত্বেও পরিচয় হয় অনাথ। আশ্রয় হয় হয়তো অনাথাশ্রমে না হয় রাস্তায়। তাদের কি হয় কেউ বলতে পারে না। অনেকে ডিপ্রেশনে চলে গিয়ে খারাপ পথে চলে যায়। হয়ে ওঠে অপরাধী। যাদের শুধরানোর ব্যবস্থা আজও ঠিক মতো গড়ে ওঠে নি আমাদের সমাজে, আমাদের দেশে।
লেখা – সাদিয়া সৃষ্টি
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “জন্মদিন – আমার প্রথম কষ্টের গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – তিক্ততা – একটি বিষাদময় প্রেমের গল্প