তুই আমার যোগ্য নোস – Premier golpo: আত্মহত্যা! হ্যাঁ, সে আত্মহত্যা করবে। তার উপায় হিসেবে নিজের জমানো টাকা থেকে বিষ কিনে আনে। জানে না কেন, কিন্তু তার মনে হয়েছিল বেঁচে থেকে যখন শান্তি নেই তখন মরে গিয়েই শান্তি পাক।
মূলগল্প
দরজা খুলতেই নিজের স্বামীকে এভাবে তার মেয়ে কলিগ কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হল রুপা। মেয়েটার পোশাকে আধুনিকতার ছোঁয়া। তার স্বামী ওই অবস্থাতেই নিজের রুমে ঢুকে পড়ল আর দরজা আটকে দিল।
বিষয়টা বুঝতে বেশ সময় লাগল রুপার। আর বুঝতেই তার চোখ দিয়ে অবিরাম ধারায় পানি পড়তে লাগল। সে রাত টা তার কেঁদে কেঁদেই পার হল। এর বেশি কি বা করতে পারতো সে? কিছু দিন আগের কথা মনে করতে থাকল।
বেশ খুদিন থেকে নিজের স্বামীকে চিনতে পারছে না সে। কি হচ্ছে আসলে? তার অবহেলা, আচরণ কোনটাই আগের মতো নেই। বেশ পরিবর্তিত হয়েছে। রাতে না ঘুমিয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলা, তারপর কিছু কিছু রাতে বাড়ি না ফেরা। কথায় কথায় রুপার উপর রাগ দেখানো। কয়েকদিন ধরে ওর অফিসের কলিগ কে ঘরে এনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রুমের দরজা আটকে রাখছে। প্রশ্ন করলে একটাই উত্তর, অফিসের কাজ আছে। এতো কিছুর পরও সব মুখ বুজে সহ্য করেছিল রুপা। কিন্তু আজ রাতে এই অবস্থায় আসলো। আর এসেই ঘরের দরজা আটকে ফেলল। দেখে চোখের পানি বাঁধ মানছে না। কিন্তু সে মানতে নারাজ যে তার স্বামী এতোটা নিচে নামতে পারে।
সকালে দরজা খুলে বের হয় জাফর। তার রাতের নেশা এখনো কাটে নি হয় তো। তাই সে বুঝতে পারে নি যে সে তার কলিগের বাসায় নয়; বরং নিজের বাসায় আছে। দরজার পাশেই বসে ছিল রুপা। সাড়া রাত দু চোখের পাতা এক করে নি। দরজা খুলতেই ঘরের দিকে তাকাতে মেয়েটাকে ওই অবস্থায় দেখে নিজেরই লজ্জা লাগল। তার মানে সে সাড়া রাত ধরে নিজেকে যে আশা দিয়ে এসেছে সেটা মিথ্যে! কেন হল এমন তার সাথে।
হাত মুখ ধুয়ে এসে জাফর রুপাকে অভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায়। পরে বুঝতে পারে যে আসলে কি হয়েছে। সে কিছু না বলে তার কলিগ কে ডেকে তোলে আর রেডি করিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। এদিকে রুপা এখনো মানতে পারছে না যে এতক্ষণ সে কি দেখল।
তারপর থেকে জাফর তার সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দেয়। রুপা বেশ কয়েক বার প্রশ্ন করেও এর উত্তর পায় নি। এসব জাফর সহ্য করতে না পেরে কয়েকদিন ধরে নিজের বাড়িতে ফেরা বন্ধ করে দেয়।
রুপা প্রায়ই তাকে ফোন করত, কিন্তু কখন রিসিভ হয় নি। এক রাতে রিসিভ হলে সে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই স্তব্ধ হয়ে যায় অপর পাশের শব্দ শুনে। বজাই যাচ্ছে যে তারা এখন কেমন পরিবেশে আছে আর হয়ত, নাহ, বলতে গেলে ভুল করেই কল টা রিসিভ হয়ে গিয়েছে। আর কানে ফোন ধরে রাখতে পারে না। হাত যেন অবশ হয়ে আসছে। ফোন টা নামিয়ে নিচে রেখে দেয়।
এই কয়েক দিনে কখনো এক বারের জন্য বিছানায় বসেছে কি না সন্দেহ। মাটিতেই পড়ে ছিল। খাওয়া দাওয়ার ও কোন ঠিক ছিল না। এই বার কল এর ওপারের শব্দ শুনে আর সামলাতে পারে নি। হাউমাউ করে কেঁদেছিল। আর না পেরে নিজের মা কে এসব কথা জানায়।
রুপা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। আর তার স্বামীও মধ্যবিত্ত। কিন্তু জীবন কে কখনো প্রশ্ন করে নি, কিংবা জীবনের থেকে কখনো আশাও রাখে নি। কিন্তু তার জিবনেই যে এমন একটা সময় আসবে সে ভাবতেই পারে নি। ত্তার উপর বেশি অবাক হয়েছিল যখন তার মা এসব শোনার পর লোকলজ্জার ভয়ে নিজেকে গুতিয়ে রাখতে বলেন আর কেন নিজের স্বামীকে সামলাতে পারে নি এই নিয়ে খোঁটা দিয়ে কথা বলে, গালিগালাজ করে।
এক প্রকার ভেঙেই পড়ে রুপা। এদিকে জাফর আবার বাড়ি আশা শুরু করে। কিন্তু সাথে করে ওই কলিগ মেয়েটাকেও আনত। রুপা প্রতিবাদের ব্যপারে একেবারে ভীতু বলে এত কিছুর পরও কিছু বলতে পারে নি সে মুখ ফুটে। শেষমেশ একটা সিদ্ধান্ত নেয় সে।
আত্মহত্যা! হ্যাঁ, সে আত্মহত্যা করবে। তার উপায় হিসেবে নিজের জমানো টাকা থেকে বিষ কিনে আনে। জানে না কেন, কিন্তু তার মনে হয়েছিল বেঁচে থেকে যখন শান্তি নেই তখন মরে গিয়েই শান্তি পাক। তাই সেটা খাবারের সাথে আর পানির সাথে মিলিয়ে নেয়। যাতে কোনোভাবেই ওর বাচার সম্ভাবনা না থাকে। যেখানে ওর নিজের মা ওকে সাপোর্ট করছে না। সেখানে ও কি করে টিকবে?
তার আগে একটা চিরকুট লিখে রেখে যায় সে।
আমি চলে যাচ্ছি। আপনাদের ছেড়ে বহুদুরে। আর কখনো বাঁধা হব না। প্রথমে ভেবেছিলাম আমি হয়তো আপনার যোগ্য নই। তাই নিজেকে ঠিক করছিলাম সব দিক থেকে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে। আপনি আমার যোগ্য নন। তবু নিজেকে একটু শান্তি দেওয়ার জন্যই এই পথ বেছে নিলাম। যদি মরে শান্তি পাই। আমি আপনাকে ছেড়ে দিলাম। তবে একটা কথা আছে জানেন, ‘রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার’ । প্রকৃতি ঠিকই এর বিচার করবে। আর ইহলোকে বেঁচে গেলেও, মৃত্যুর পর আপনি শাস্তি পাবেন।
বিদায়।
লিখে ঠিকই বিষ মেশান খাবার খেতে যাচ্ছিল, তখন মনে হল বাবাকে একবার বলা উচিত। এতো কষ্ট করে যে বড় করেছেন তার থেকে বিদায় নিব না? সে বাবাকে ফোন করল। করে এতদিনের সব কথাই বলল শুধু সুইসাইড করার কথা বাদে। বাবা তখনই গর্জে উঠলেন। উনি নিজের মেয়েকে আশ্বাস দিলেন আর বললেন খাওয়া দাওয়া করে রেডি থাকতে । উনি রুপাকে নিয়ে যাবেন। এই মুহূর্তেই। রুপাকে অনেক বোঝালেন। রুপাও শেষে রাজি হল। বাবা ব্যাগ আর প্রয়োজনীয় টাকা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন আর যাওয়ার আগে রুপার মা কে শাসিয়ে গেলেন।
এদিকে বাবার কথায় রুপা বেঁচে থাকার আশা খুঁজে পেল। কিন্তু সেটা হয়তো তার কপালে ছিল না। সে ভুল বশত ওই খাবার খেয়ে পানি পান করে। আর …
রুপার বাবা এসে মেয়েকে ওই অবস্থায় দেখে স্তব্ধ হয়ে যান। জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করেন। একমাত্র মেয়েকে শেষে কি না এই অবস্থায় দেখতে হল তার।
সেদিন জাফর বাড়ি ফিরেছিল তবে একা। আর এসে দেখে যে রুপার নিথর দেহ পড়ে আছে মাটিতে। তার বাবা হাতে কাগজ নিয়ে বসে আছে।
রুপার বাবা জাফরকে দেখে চিৎকার করে বলে ওঠেন,
- তুই আমার মেয়ের যোগ্য নোস।
কিন্তু ঘটনাটা যদি অন্য রকম হত? কেমন হত? চলুন, সেই জগত থেকে আপনাদের ঘুরিয়ে আনি।
রুপা মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণী। স্বামীর সাথে ফ্ল্যাটে বাস করে। তাদের ছোট্ট সুখী পরিবার। রুপার পরিবারও অনেক খুশি, মেয়েকে ধ্বনি পরিবার দিতে না পারলেও সুখী পরিবার দিতে পেরেছেন বলে।
আশেপাশে শত সুন্দরি মেয়ে দেখেও নিজেকে নিয়ন্ত্রিনে রাখে জাফর। দিন শেষে ঘরে ফিরে এসে জড়িয়ে ধরে বলে – ভালোবাসি। এতে মুখে এক প্রশস্ত হাসি ফুটে ওঠে রুপার। সারাদিনের ক্লান্তির পরও দিন শেষে একে অপরের খো নেয়। এমন একটা দিন নেই যে অন্যের সম্পর্কে খোঁজ নেয় নি কেউ।
জাফর নিজেকে কন্ট্রোলে রাখে বলে কোন মেয়ে তার মনে বা মস্তিষ্কে জায়গা দখল করতে পারে নি। রোজ রুপার সাথে সময় কাঁটায়। কখনো কোন মেয়েদের নিজের আশেপাশে ঘেঁষতে দেয় নি। আর না জড়িয়ে পড়েছে কোন অবৈধ সম্পর্কে। তাই রুপাকেও বিষ কিনতে হয় নি। তার বাবা মা প্রচণ্ড সাপোর্ট করে তাকে।
ভালোবাসায় ভরপুর ছিল তাদের ছোট্ট সংসার। কয়েক বছরেই ঘর আলো করে আসে ছোট্ট একটি সন্তান। এক সময় সে বড় হয়। সেই ছোট শিশুটিও বড় হয়ে বিয়ে করে। তাদের নাতি – নাতনি হয়। বৃদ্ধ অবস্থায় এসেও তাদের ভালোবাসা এক ফোঁটাও কমে নি। তাদের ভালোবাসা আর বিশ্বাস তাদের সমতান্দের কাছে আদর্শ।
আচ্ছা, কোণ ঘটনাটি গ্রহন যোগ্য? প্রথম ঘটনাটি প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। অনেকের অজান্তে। কিন্তু ঘটছে। আর পরেরটি আমার কল্পনার আশ্রয়ে নির্মিত একটি জগত। কোণ জগতটি ভালো? যারা এখনো ভুল করে অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন, আপনার সাথে যার জীবন যুক্ত তার কথা চিন্তা না করেই, তারা কি অন্তত এই গল্প দুটোর পার্থক্য বুঝেও শুধরে যেতে পারেন না? তাআরা কি চান না একটা সুন্দর জগত। যেখানে সবাই খুশি থাকে? জানা নেই আমার। তবে প্রতিটা রুপা যদি এই গল্পের প্রথম রুপার মতো চুপ থাকে তাহলে তাদের বলব, এসব জাফর সেই রুপাদের যোগ্য নয়। গর্জে উঠতে বলা হবে সকল রুপাদের। সবাই যেন বলবে–
তুই আমার যোগ্য নোস।
লেখা – সাদিয়া সৃষ্টি
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “তুই আমার যোগ্য নোস – Premier golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – জন্মদিন – আমার প্রথম কষ্টের গল্প