জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভাল – শিক্ষনীয় ছোট গল্প

জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভাল – শিক্ষনীয় ছোট গল্প: লোকটি মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছিল। রাগের বশে কি না করতে যাচ্ছিলো। লোকটির অবস্থা দেখে….


“বাসের সিটে জানালার ধারে একটি মেয়ে বসে বসে বই পরছে। তার সোজা অপর প্রান্তে বসে আছে সোহেল আর তার মা। সোহেলের মা কিছুক্ষণ পর পর মেয়েটিকে দেখতে লাগলো। নাহ কোনো খুত নেই বরং নিখুঁত একটা মেয়ে।

নিশ্চয় অনেক ভাল পরিবারের মেয়ে হবে হয়ত। আজকাল ছেলে মেয়েরা মোবাইল ইউজ করে যেখানে, সেখানে মেয়েটা বই পরছে। এমন একটা মেয়ে যদি সোহেলের বউ করতে পারতাম খুব ভাল হতো। সোহেলের মা এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বাসে চেঁচামেচিরর আওয়াজ শুনতে পেলো।

“আন্নি বইয়য়ের পাতা থেকে মুখ তুলে দেখলো একটা লোক তার বাচ্চা মেয়েকে চলন্ত বাস থেকে বাইরে ফেলে দিতে চাইছে, আর তার বউ আটকানোর চেষ্টা করছে।
“বাস থেমে গেলে আন্নি উঠে দাঁড়িয়ে লোকটির হাত ধরে জোর করে মেয়েটিকে কেড়ে নিলো। ছোট্ট মেয়েটি তখন ভয়ে চেন্সলেস হয়ে গেছে। মেয়েটিকে তার মায়ের কোলে দিয়ে আন্নি লোকটির উদ্দেশ্য বলল-

_ কি ব্যাপার? আপনি কেন একটা প্রাণ কে হত্যা করতে চাইছেন?
_ ও যত সমস্যার মূল! (লোকটি)
_ কি এমন সমস্যা? আপনার মেয়ে ত নাকি?

_ হ্যা আমার মেয়ে। দুইদিন পর পর অসুখ হয় ওর, আমার অত টাকাপয়সা নাই যে চিকিৎসা করাবো, আর বউ সবসময় ঘ্যানঘ্যান করে আমি নাকি কিছুই পারিনা।
_ তাই বলে রাগের বশে নিজের মেয়েকে মেরে ফেলবেন? ও যে আপনার রক্ত। কষ্ট হয়না আপনার? মানুষ নাকি আপনি?

“লোকটি মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছিল। রাগের বশে কি না করতে যাচ্ছিলো। লোকটির অবস্থা দেখে আন্নি আবারো বলে উঠলো-
_ শুনুন রাগের বশে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিই তা কখনো ঠিক হয়না। একটা প্রাণ চলে যাওয়ার পর আর ফিরে আসে না তখন আফসোস করে ও কিছু হবেনা। তাছাড়া আল্লাহ যাদের হাত পা সব দিয়েছেন তারা কখনো গরীব হতে ই পারেনা। হাত দিয়ে পরিশ্রম করে যান। সুদিন ফিরে আসবে।

_ আমি কাজ পায়না?
_ কি কাজ করেন আপনি?
_ দিন মজুরি।
_ এই নিন পাঁচশ টাকা, অই যে বাদাম দেখছেন, ওখান থেকে কিনে বাদাম বিক্রি করুন। সকালে দুই ঘন্টা বাদাম বিক্রি করে তারপর অন্য কাজ করতে পারেন। আর বাদাম বিক্রির টাকায় ওর ঔষধ নিয়ে আসিয়েন। পৃথিবীতে কাজের অভাব নেই, সৎ উপার্জনে সব কাজ ই ব্যাটার।

_ আপনাকে টাকা টা কোথায় দিতে হবে আপা?
_ দিতে হবে না, আমি ভাই হিসেবে সাহায্য করলাম। আমার ত ভাই নেই, তাই।
_ কি বলেন আপা, আজ থেকে আমি আপনার ভাই। যেকোনো প্রয়োজনে আপনার লাগলে আমায় ডাকবেন, এই সামনে আমার বাড়ি। আর আপনার উপদেশ আমি সব মনে রাখবো।

“কিছুদূর যেতে ই লোক টা বউ বাচ্চা নিয়ে নেমে যায়। তার কিছুদূর পর আন্নি ও নামে সঙ্গে সোহেল ও তার মা ও। ওরা এতক্ষণ আন্নি কে দেখে মুগ্ধ। তাদের জানতেই হবে কোন পরিবারের মেয়ে আন্নি, যে এত ছোট বয়সে এমন ব্যবহার শিখেছে।
“আন্নি কে কিছু পথশিশু জড়িয়ে ধরে, আর আন্নি আপা বলে বলে চিৎকার করছে। সোহেলের মা আন্নির নাম জেনে গেছে। আন্নি ব্যাগ থেকে কিছু খাতা আর কলম ওদের সবাই দিয়ে দেয়, সবাই খুশি হয়ে চলে যায়।

“আন্নি আবার যেতেই সোহেল ডাক দেয়-
_ আন্নি শুনুন?
আন্নি পিছনে ফিরে ওদের দেখে দাঁড়িয়ে পরে। আর সোহেলের মা কে উদ্দেশ্য করে বলে-

_ আসসালামু আলাইকুম।
_ ওয়ালাইকুম আসসালাম।
_ কিছু বলবেন?
_ ওই শিশুরা এত খুশি কেন হলো?
_ ওদের আমি বিনামূল্য পড়ায়। আমার আপন বলতে ত ওরা ই। আজ খাতা কলম দিয়েছি, তাই।

_ তোমার পরিবারে কে কে আছেন?
_ একটা দাদা।
_ মানে মা-বাবা?

_ শুনেছিলাম, আমাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনেছিল আমার দাদা। আমি রাস্তায় বসে কাঁদছিলাম, আর তখন উনি এনে আমাকে অনেক কষ্টে পড়ালেখা শিখান। ওনার কোনো সন্তান ছিল না। তাই আমাকে নাত্নি বলে ডেকেছিল।

_ তার মানে তুমি রাস্তার মেয়ে তোমার বংশ পরিচয় নেই?
_ আন্নি তখন মুচকি হেসে বলল-
“জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভাল”


(সমাপ্ত)

লেখায়ঃ তাওহীদা তাহরীমা

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই আমরা প্রতিনিয়ত লিখতে থাকি। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের অনুপ্রেরণা। আমাদের এই পর্বের “শিক্ষণীয় গল্পটি” আপনাকে কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।)

আরো পড়ুন – স্যারের সাথে প্রেম – পর্ব ১

গল্পটি pdf download লিংক – জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো pdf

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *