পরিবারের অবহেলা – কেন এমনটা হয়

পরিবারের অবহেলা – কেন এমনটা হয়: ভাইয়া আমার হাত ধরে ঠেনে নিয়ে গেলেন। ভাইয়া বললেন, দেখ কাকে নিয়ে এসেছি। ভাবি কি একটা কাজ করছিলেন তিনি ভাইয়ার কথা শুনে থাকালেন। হিয়া, আর কে যেন একজন মেয়ে সেও থাকাল।


পর্ব ১

আমি বাড়ির পেছন ঘেট দিয়ে প্রবেশ করছি। কেননা, আজ বাড়িতে অনুষ্ঠান। বড় ভাইয়ার সজলের বিয়ে হয়েছে আজ দিনে। কিন্তু আমি রাতে এসেছি। পেছন ঘেট দিয়ে আসার একটা কারন আছে। আমি আসার আগে আব্বু ফোন দিয়ে বলেছিল ভুলেও যেন আমি সামনের ঘেট দিয়ে প্রবেশ না করি।

আমার বাড়িতে একমাত্র বড় ভাই আমাকে ভালবাসেন। আর সবাই আমাকে অবহেলা করেন। পরিচয় দেয়া যাক আমি অনন্ত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করি। এবার বাড়িতে এসেছি শুধু ভাইয়ার কথায়। এসেছি প্রায় ৯ মাসে।

পেছন দিক দিয়ে যেই ঘরে ডুকব অমনি পেছন থেকে কে একজন আমার ব্যাগে ধরল। আমি তাঁরদিকে থাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। দেখতে অনেক সুন্দর একটা মেয়ে বলার মতো না।

মেয়েঃ এই কে আপনি? আর এখানে কী চাই।
আমি চারপাশে তাকাচ্ছি আর ভাবছি কেউ না এসে কিছু করে বসে।
মেয়েঃ কী কিছু বলছ না কেন। কে তুমি? বুঝেছি চুরির ধান্দা।
আমিঃ জ্বি না। এসব কিছু না।

মেয়েঃ তাহলে কি প্রেমিক পুরুষ?
আমিঃ ছি, ছি, ছি, তাও না।
মেয়েঃ তাহলে কে আপনি মশাই?
আমিঃ আপনি কে?

মেয়েঃ আমাদের বাড়িতে দারিয়ে আমাকেই জিজ্ঞেস করছ আমি কে?
আমিঃ আপনাদের বাড়ি মানে? এটা তো অনন্তর বাড়ি।
মেয়েঃ অনন্ত কে?

আমিঃ সজল কে চিনেন? (সজল আমার ভাইয়ের নাম)
মেয়েঃ হুম! উনি আমার দুলাভাই হোন।
আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে কনে বাড়ির লোকেদের কাছে আমার কথা বলা হয় নি। তাই আমি আর পরিচয় দিতে চাইনা।
মেয়েঃ কী বললেন না তো কে আপনি?

আমিঃ আমি এ বাড়ির কাজের লোক।
মেয়েঃ কাজের লোক তো পেছন ঘেট দিয়ে ডুকছেন কেন?
আমিঃ সাহেব আমারে গতকাল আসার কথা বলছিল। আমি আসতে পারি নাই। তাই এখন ভয়ে পেছন দরজা দিয়া ডুকতেছি।
মেয়েঃ বাব্বাহ। এত ভয় পান আপনার মালিক কে।

আমিঃ আসলে ছোট বেলা থাইকা এখানে। ভয়তো কিছু হয়ই।
মেয়েঃ আচ্ছা যান যান ভেতরে যান।

আমি চুপচাপ এখান থেকে কেটে পড়লাম। আমার রুমে এসে ফ্রেশ হলাম। বিছানা কাপড় চোপর সব ঠিক করলাম। আমার অবর্তমানে এখানে কেউ থাকে না। সব ঠিক করে বাহিরে বের হলাম। প্রথমে কাজের লোক মনোয়ার চাচার সাথে দেখা হলো। তিনি আমায় দেখে মহা খুশি। তিনি দৌরে রান্না ঘরের দিকে গেলেন আম্মুকে খবর দিতে আমি তার পেছন পেছন গিয়ে রান্না ঘরের সামনে দাঁড়ালাম।

মনোয়ার চাচাঃ মা ছোট সাহেব আসছে।

আম্মুর হাসি মুখ নিমিষেই শুকিয়ে গেল। আমার বুঝতে বাকি রইলনা আমার আসায় মা খুশি নন।

আম্মুঃ মানোয়ার শুন! তোমার ছোট সাহেবের খাবার টা একবার তাঁর ঘরে দিয়ে এসো। মানোয়ার চাচা মুখ কাল করে চলে এসেছেন। আমি চলে যাচ্ছি ২য় তলার দিকে। বাবাকে ২য় তলায় পেলাম। আমি সালাম দিলাম। সলাম শুনতেই আমার দিকে অবাক চোখে থাকালেন। আমাকে দেখে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করছেন। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বললেন “কেউ আসতে দেখেছে”

আমিঃ হ্যাঁ। একটা মেয়ে…
বাবাঃ তুমি তাকে কী বলেছ।
আমিঃ আমি তাকে বলেছি আমি এ বাড়ির চাকর।
বাবাঃ আচ্ছা। তা এসেছ কতক্ষণ?

আমিঃ এই ৪ ঘন্টা হবে।
বাবাঃ সবে মাত্র এলে। এখনি বের হয়েছ। যাও ঘরে যাও।
আমিঃ বড় ভাইয়ার সাথে দেখা করে যাচ্ছি।
বাবাঃ ঠিক আছে। যাও।

আমি বাবার কাছ থেকে চলে আসলাম। নিজের আপন মানুষের এমন কথায় অনেক কষ্ট হয়। এসব ভাবতে ভাবতে হাঁঠছিলাম। পেছন থেকে ভাইয়ার কন্ঠ ভেসে আসল।
ভাইঃ কি কমান্ডার সাহেব কেমন আছেন?
আমিঃ ভাল। তুমি?

ভাইঃ এইতো ভাল। আব্বু-আম্মুর সাথে দেখা হয়েছিল।
আমিঃ আব্বুর সাথে কথা হয়েছে। আর আম্মুর কাছে যাওয়া যায় নাই।
ভাইঃ চল আমার সাথে তোর ভাবিকে দেখবি।
আমিঃ নাহ! ভাইয়া কাল দেখব?

ভাইঃ কাল দেখবি কেন? আব্বু কিছু বলেছে।
আমিঃ আব্বু আর কি বলবে সবি আমার ভাগ্যে লেখা ছিল।
ভাইঃ কী করি বল। আচ্ছা চল রাত অনেক হয়েছে খেয়ে নিই।
আমিঃ না। ভাইয়া তুমি খেয়ে নাও আমি পরে খাব।
ভাইঃ আম্মু আবার টেবিলে খাবার খেতে নিষেধ দিয়েছে।
আমিঃ সবি তো তোমার জানা।

ভাইঃ আমিও আজ টেবিলে খাব না।
আমিঃ না ভাইয়া এ হয় না।
ভাইঃ কি হয় না। সবি হয়।
আমিঃ ভাইয়া এখানে অনেক মেহমান আছেন।
ভাইঃ তো কি হয়েছে।

আমিঃ বাবা মা এর সম্মান…।
ভাইঃ দরকার নেই এমন সম্মানের।
আমিঃ তুমি যদি টেবিলে না যাও। আর আমি বাড়িতে আসব না
ভাইঃ এ বাড়ি তোর তুই আসলে আসবি না আসলে না।
আমিঃ বলছতো।
ভাইঃ হ্যাঁ।

আমিঃ তাহলে আজ ই আমি চলে যাব।
ভাইঃ কি বলিস।
আমিঃ হ্যাঁ। চলে যাব।
ভাইঃ যাসনে ভাই।

আমিঃ তাহলে আমার কথায় রাজি।
ভাইঃ আচ্ছা।
আমিঃ আমার আর একটা কথা আছে।
ভাইঃ কী?

আমিঃ তুমি আমার পরিচয় দিবে না। আমি এখানের চাকর।
ভাইঃ কি বলিস এসব। আমি মানতে পারব না।
আমিঃ আব্বু যদি মানতে পারলে তবে তুমি কেন মানতে পারবে না।
ভাইঃ কিহ। আব্বু বলেছে নাকি।

আমিঃ নাহ। আমিই আব্বুকে বলেছি।
ভাইঃ তুই বলেছিস আর আব্বু তা মানল।
আমিঃ হ্যাঁ।
ভাইঃ আমি মানব তবে আমার একটা কথা রাখতে হবে।
আমিঃ কী কথা।

ভাইঃ তুই আমার সঙ্গে ওদের বাড়িতে যাবি।
আমিঃ আচ্ছা।
আমি ভাইয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসলাম রুমে। দেখলাম টেবিলের উপর খাবার রাখা। আমি খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।


পর্ব ২

ভাইয়ার সাথে কথা বলে রুমে চলে আসলাম। মনোয়ার চাচা খাবার রেখে গেছেন। আমি খাবার খেয়ে শুয়ে পরলাম। আমি এখন ছাঁদে দাড়িয়ে আছি, এখন সকাল প্রায় ৬টা। বাড়িতে শুধু আম্মু ঘুম থেকে উটেছেন। আমি অবশ্য অনেক আগেই ঘুম থেকে উটেছি। নিজের অজান্তেই গান ধরলাম। পেছন থেকে কারো গলা শুনতে পেলাম। আমি তাকালাম। কাল রাতের মেয়েটি। আজ দেখতে আরো ভাল লাগছে। কেমন একটা টান অনুভব করি।
মেয়েঃ সুভসকাল।

আমিঃ সুপ্রভাত।
মেয়েঃ এত সকাল এখানে?
আমিঃ কেন আসতে মানা নাকি?
মেয়েঃ আপনার বাড়ি আপনাকে কে মানা করবে?
আমিঃ মানে?

মেয়েঃ নাহ মানে, আপনি এত বছর ধরে এখানে থাকেন, আপনাকে কে মানা করবে? আচ্ছা একটা কথা বলি?
আমিঃ জ্বি বলতে পারেন।
মেয়েঃ আপনাকে দেখতে খুব সুন্দর। কি সুন্দর বডী। পুরাই হেব্বী।
আমিঃ পাম একটু কম দেন। নিতে পারছি না।

মেয়েঃ নাহ। সত্যি বলছি। আচ্ছা সব ঠিক আছে কিন্তু আপনার চুল ছোট।
আমিঃ কেন সুন্দর লাগছে না।
মেয়েঃ নাহ সুন্দর লাগছে। কিন্তু আর একটু লম্বা হলে ভাল লাগত।
আমিঃ চুল লম্বা করা নিষেদ আছে।

মেয়েঃ কেন আপনার সাহেব কি মানা করে।
আমিঃ নাহ।
মেয়েঃ তাহলে।

আমিঃ বলা যাবে না।
মেয়েঃ বাব্বাহ আপনার ও সিক্রেট আছে।
আমিঃ কেন চাকর বলে সিক্রেট থাকতে নেই।
মেয়েঃ নাহ এ কথা না। আচ্ছা আপনারর নাম কি?
আমিঃ আমার নাম আবুল। আপনার নাম?

মেয়েঃ আমার নাম হিয়া। আচ্ছা আমরা কী বন্ধুত্ব করতে পারি?
আমিঃ নাহ।
হিয়াঃ কেন?
আমিঃ মালিকের সাথে চাকরের বন্ধুত্ব মানায় না।
হিয়াঃ কে বলেছে?

আমিঃ সব কিছু বলা যায় না। আচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি। আপনি থাকেন।
আমি হিয়া মানে ওই মেয়েটার কাছ থেকে নিচে চলে এলাম। রান্না ঘরে আসলাম। এখানে এসে আম্মুকে পেলাম।
আমিঃ আম্মু কেমন আছ?

আম্মুঃ হুম ভাল। তুমি?
আমিঃ হ্যাঁ ভাল।
আম্মুঃ নাশতা তৈরি করছি। খেয়ে নিজের ঘরে চলে যাও।
আমিঃ আচ্ছা।

আমি নাশতা করে আমার রুমে চলে আসলাম। আর বের হলাম না।
রুমে বসে আছি প্রায় ১০টা হতে চলল। দরজায় ভাইয়া কড়া নারছেন। আমি দরজা খুলে দিলাম।
ভাইঃ কীরে দরজা জানালা লাগিয়ে বসে আছিস।
আমিঃ কী করব বল। আমার তো কোন কাজ নেই।
ভাইঃ কিরে আর নতুন ৩টে এওয়ার্ড।

আমিঃ হুম।
ভাইঃ কী কর্মস্হল পরিবর্তন হইছে নাকি আগের জায়গায় আছিস।
আমিঃ নাহ এখন বান্দরবনে আছি।
ভাইঃ আচ্ছা কলকে রাতের কথা মনে আছে তো।
আমিঃ কোন কথা।

ভাইঃ সে কি! তুই ভুলে গেলি। কাল রাতে বললাম না আমার সাথে তোর ভাবিদের বাড়ি যেতে হবে।
আমিঃ ওহ আচ্ছা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।
ভাইঃ রেডি হয়ে নে ।
আমিঃ এখনি।
ভাইঃ হুম।

আমিঃ আচ্ছা.
ভাইঃ সাদার মাঝে কাজ করা একটা পাঞ্জাবী আছে না ওটা পরবি।
আমিঃ আচ্ছা পরব। এখন যাও।
ভাইঃ যাব কি তুই চল আমার সাথে।

ভাইঃ তোর ভাবি কে দেখবি।
আমিঃ নাহ! এখন না।
ভাইঃ এখন না কি চল আমার সাথে।
ভাইয়া আমার হাত ধরে ঠেনে নিয়ে গেলেন। ভাইয়া বললেন, দেখ কাকে নিয়ে এসেছি। ভাবি কি একটা কাজ করছিলেন তিনি ভাইয়ার কথা শুনে থাকালেন। হিয়া, আর কে যেন একজন মেয়ে সেও থাকাল।

হিয়াঃ কী খবর আপনিতো এ ঘরের দিকে আসলেন ই না।
ভাই – তুমি জান ওকে?

হিয়াঃ হুম। ইনিতো আপনাদের বাড়ির কাজের লোক আবুল।
ভাইয়ার মাথায় চরক গাছ। ভাইয়া এরকম আশা করেন নি। ভাইয়া বললেন, তুমি ওকে জান কিভাবে?
হিয়াঃ উনি আপনার বাবার ভয়ে, পেছন ঘেট দিয়ে প্রবেছশ করায় উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
ভাইঃ ওহ।

তাঁরপর আমি নিচে বসে সবার সাথে আড্ডা দিলাম।

বিকালে…..

ভাইয়ার সাথে ভাবিদের বাড়ি যাচ্ছি। আমি পিছনের সিটে বসেছি। ভাইয়া,হিয়া, আর চাচাতো বোন রিয়া, বলেছিল সামনে বসতে। কন্তু চাকরের সিট কি সামনে হয় কখন। তাই আমার ও সামনে বসা হয় নি। উদ্যেশ্য সিলেট যাব। আর দের ঘন্টা সময় লাগবে পৌছাতে। আমি হিসাব করছিলাম আমার হাতে আর কত দিন সময় আছে। কারন আমি ছুটি নিয়ে ছিলাম ৫ দিনের। এসব হিসাব করার মধ্যে হিয়া বলল, আবুল! অনন্ত কে?

একথা বলতেই, সবাই আমার দিকে থাকাল।
আমি অপ্রস্তুত অবস্তায় বললাম, আমাকে কিছু বলছেন।
হিয়াঃ হ্যাঁ। আপনি ওইদিন বললেন, অনন্ত নামক একটা ছেলের বাড়ি, কিন্তু আমার জানামতে দোলাভাইয়ের বাড়িতে এ নামে কেউ নেই। তাই জিজ্ঞেস করলাম।
ভাইয়া এবং রিয়া আমার উত্তরের জন্য বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। ভাইয়া নিশ্চয় মনে মনে বলছে, দেখি কী উওর দেস তুই এবার।

আমিঃ সজল ভাইয়ের একটা ছোট ভাই ছিল, তাঁর নাম অনন্ত। সে ৬ বছর বয়সে আততায়ীর হাতে মারা যায়।
হিয়াঃ দোলাভাইয়ের যে একটা ভাই ছিল সে সম্পর্কে তো আমরা জানি না।
আমিঃ এটা জেনে তো কোন লাভ নেই, সে মারা গিয়েছে ১৫ বছর আগে। তাঁর সাথে তো আর কোন লেনদেন নেই।
আমি কি বুঝাতে চেয়েছি ভাইয়া তা ঠিক বুঝে গিয়েছেন।

হিয়াঃ সত্যি কি দুলাভাই আপনার একটা ভাই ছিল।
ভাইঃ হুম, আমার এক ভাই।
আমিঃ হিয়া ম্যামসাব আপনি আমারে বিশ্বাস করলেন না।

হিয়াঃ আরে…।
আমিঃ ম্যামসাব আপনার সাথে কথা নাই।
রিয়াঃ আবুল ভাই তুমি কিন্তু জিনিয়াস।
আমিঃ জিনিয়াস মানে কি গো আপা।
হিয়াঃ তুমি জিনিয়াস মানে জান না। কতটুকু লেখা পড়া করেছ।
আমিঃ ক্লাশ এইট পর্যন্ত।

হিয়াঃ ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েও তুমি জিনিয়াস অর্থ জান না।
আমিঃ সব আমি আমার পোড়া কপালের সাথে মিশাইয়া খাইয়া ফেলসি।
রিয়াঃ আবুল ভাই আর ঢং করো নাতো।
আমিঃ আপা মনি আমি আর কিছু কমু না।
আমি চুপ হয়ে গেলাম। কিন্তু আল্লাহ মেয়েদের একটা মুখ দিছেন যা বন্ধ হবার নাম ই নেয় না। সারা রাস্তা তাঁরা কথা বলেই গেল।


পর্ব ৩

ভাবি দের বাড়ি পৌছলাম ৪.৩৪ মিনিটে। আমরা ঘেটের কাছে যেতেই। ভাইয়া আর ভাবি কে নিতে অনেকে বেরিয়ে এল। আমি পেছন দিক দিয়ে সব কার্টোন বের করতে লাগলাম। কারন চাকরের কাজ হলো, মালিকের জিনিস বয়ে নিয়ে যাওয়া। আমিও তাই করছি। আমার সাথে কাজে হাত মেলাল এই বাড়ির একজন চাকর। কারন, বর্তমানে সবাই জাত বুঝে সাহাজ্য করে। আমি ওই বেটাকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কি?

সে উওর দিল, রাজা।
আমিঃ কত দিন হলো এখানে?
রাজা- ৮ মাস। তোর কত দিন হলো সাহেবগো বাড়িতে।
(বুঝতে পারলাম চাকরে চাকরে যখন কথা হয় তখন তুই বলেই কথা বলে। )
আমিঃ ১০ বছর।

রাজঃ তাইলে তো বালা দান মারছস!
আমিঃ বুঝার পর থাইক্কা তো ভালা কামাই করতাছি। ওইতো সেদিন আমগো সাহেবর কাছ থাইকা করকরা দুইডা এক হাজার টাকার নোট নিলাম।
রাজঃ কি কইয়া নিছস। সাহেবের কাছ থাইক্কা?

আমিঃ বলছি মা অসুস্হ ঠেকা লাগব। আর সাহেবে বিশ্বাস কইরা দিয়া দিল।
রাজঃ তুই তো শালা সেয়ানা মাল। চল চল ভিতরে চল নাইলে ডাক পারব।

আমি ওর সাথে পেকেট গুলো নিয়ে ভিতরে চলে গেলাম। বাড়ির বাহির থেকে ভিতর অনেক সুন্দর। বিয়ে উপলক্ষ্যে বাড়িতে রং দেয়া হয়েছে। ভিতরে ডুক্তেই দেখলাম। ভাইয়াকে অনেকে প্রশ্ন করছে। আর ভাইয়া লাজুক লাজুক ভাবে তাঁর উওর দিচ্ছে। আমার প্রচন্ড বেগ বাতরুম চাপার ফলে বাতরুমে যেতে হচ্ছে। এর পর অবশ্য আর কারো সাথেই কথা হয় নি। একেবারে কথা হলো রাতে। ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন, আর কত দিন তুই থাকবি?
আমিঃ আর দু’দিন।

ভাইঃ দুদিন মানে? তুই এত দিন পর এলি আর এত তারাতারি চলে যাবি।
আমিঃ ভাইয়া আমি গেলে একজন ছুটি পাবে।
ভাইঃ তুই এখন কোন পদে আছিস?

আমিঃ কমান্ডো, স্পেশাল ফোরস।
ভাইঃ ভাল। তো..?
হিয়াঃ আরেহ কি করছেন আপনারা?
ভাইঃ এইতো নিজেদের মধ্যে গল্প স্বল্প।

হিয়াঃ দুলাভাই। আব্বু বলেছে আপনাকে যাবার জন্য।
ভাইয়া আর কিছু না বলে চলে গেলেন। আমিও ভাইয়ার পেছন পেছন যাওয়া শুরু করলাম।
হিয়াঃ আরে আপনি কোথায় যাচ্ছেন।
আমি নিশ্চুপ হয়ে হাঁঠছি।

হিয়াঃ আপনাকে দাঁড়াতে বলছি দাঁড়ান।
আমিঃ জ্বি ম্যামসাব বলেন।
হিয়াঃ কি ম্যামসাব ম্যামসাব বলছেন, এ কথা শুনলে নিজেকে বৃদ্বা মনে হয়। আর ম্যামসাব বলবেন না।
আমিঃ আচ্ছা ম্যাম।

হিয়াঃ ম্যাম কি? ম্যাম ও বলবেন না।
আমিঃ জ্বি আচ্ছা।
হিয়াঃ আমার সাথে ছাঁদে চলেন।
আমিঃ আর দু’দিন পর পূর্নিমা। তখন রাতটা অন্য রকম লাগবে। এখন ভাল লাগবে না।
হিয়াঃ বাব্বাহ! আপনি পূর্নিমার হিসাব রাখেন।
আমিঃ জ্বি!

হিয়াঃ ছাঁদে চলুন। ( আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ছাঁদে। )
ওদের ছাঁদটা বাড়ির মতো সুন্দর না। সব কোঁনে ময়লা জমাল। কিন্তু ছাঁদে নানান ধরনের ফুলের গাছ থাকায় গ্রান ছরাচ্ছে। কিন্তু সবচাইতে বেশি রজনীগন্ধার সৌরভ চরাচ্ছে।
হিয়াঃ আপনাকে না সন্দেহ হয়।
আমিঃ কেন?

হিয়াঃ আপনার আছার আচরনে মনে হয় না আপনি কম শিক্ষিত।
আমিঃ শিক্ষিত লোকদের স্পর্শে থাকলে এমন হয়।
হিয়াঃ তাহলে যে আপনি ইংরেজি জানেন না।
আমিঃ সবার ধারা সব কিছু হয় না।

হিয়াঃ আমি আপনাকে ইংরেজি পড়াব আপনি পড়বেন।
আমিঃ আপনি কেন এ দায়িত্ব নেবেন?
হিয়াঃ এত কিছু জানি না। আপনি পড়বেন কি না।
আমিঃ জ্বি না।
হিয়াঃ কেন?

আমিঃ আমার সময় নেই।
হিয়াঃ খুব ভাব হয়েছে না আপনার।
আমিঃ জানি না।
হিয়াঃ আমি আপনাকে পড়াব মানে আপনি পড়বেন।
আমিঃ চিন্তা করব।

হিয়াঃ আচ্ছা আমার একটা কথা রাখবেন।
আমিঃ কি কথা।
হিয়াঃ আগে বলুন রাখবেন।
আমিঃ চেষ্টা করব।

হিয়াঃ না বলুন রাখবেন, প্লিজ?
একজন মানুষের এমন কথার উপর আর না বলা যায় না। আমি হ্যাঁ বলে দিলাম।
হিয়াঃ ধন্যবাদ। কাল আমাদের কলেজে একটা অনুষ্টান আছে সেখানে যেতে হবে।

যেহেতু কথা দিয়েছি তাই যাব। আমি আচ্ছা বলে নিচে চলে আসলাম। জানি না হিয়া কখন ছাঁদ থেকে নেমেছে। খাবার টেবিলে আমি যাই নি। কারন আমি রাতের খাবার খাই নি। আমি এসে রাজ এর বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লাম। কারন একজন চাকরের জায়গা আর একজন চাকরই ভাল দিতে পারে।


পর্ব ৪ (শেষ)

রাত থেকেই আঝরধারে বৃষ্টি পড়ছে। বর্ষা মাসে এমন বৃষ্টি রোজ হয়। আমি ঘুম থেকে উঠেছি অনেক ভোরে আনুমানিক ৪ টা। এখন ভোরের আলো চারিদিকে ফুটছে। আমি রাজার ঘর থেকে একটা ছাতা নিয়ে ছাঁদে চলে গেলাম। মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা নিয়ে দাড়িয়ে থাকা আনন্দের একটা বিষয়। আমি দাড়িয়ে ছিলাম। প্রায় দেড়ঘন্টা পর হিয়া ছাঁদে আসল।

হিয়াঃ কি খবর আপনি এ বৃষ্টির মাঝে কি করছেন?
আমিঃ ভাবছি। আর খুঁজছি?
হিয়াঃ কী ভাবছেন? আর কিই বা খুঁজছেন?

আমিঃ আমার অতীত। আচ্ছা রাখুন এসব কথা, আমাকে কেন খুঁজছেন।
হিয়াঃ আপনাকে কাল বললাম না কলেজে অনুষ্টান আছে।
আমিঃ ওহ! হ্যাঁ! কেন অনুষ্টান কি ক্যানসেল করা হয়েছে।

হিয়াঃ নাহ! ক্যানসেল হবে কেন? আমি আপনি যাবেন কি না ক্নফার্ম করার জন্য খুজছিলাম।
আমিঃ আমি তো কাল ই আপনাকে বলেছি যাব। আচ্ছা আপনি কোন ক্লাসে পড়েন?
হিয়াঃ অনার্স ৩য় বর্ষ।

আমিঃ আপনিতো অনেক শিক্ষিত। আচ্ছা কোন বিষয় নিয়ে পড়ছেন?
হিয়াঃ ইংরেজী?
আমিঃ ওহ বুঝেছি তাই আপনি আমাকে ইংলিশ পড়াতে চান।
হিয়াঃ মোটেও না। আপনাকে ভাল লাগে তাই পড়াতে চাই।

আমিঃ আপনার মতি গতি উল্ট লাগছে। আর আমি একজন চাকর।
হিয়াঃ সব কিছুতে আপনি চাকর চাকর করেন কেন? চাকর তো কি হয়েছে আপনি প্রথমে মানুষ।
আমিঃ আচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি আপনি আসুন।

হিয়াঃ আচ্ছা আপনি আমায় দেখে শুধু পালান কেন?
আমিঃ আমার কাজ আছে?
হিয়াঃ ও হ্যাঁলো। এটা আপনার বাড়ি না। এটা আমাদের বাড়ি। এখানে আপনার কোন কাজ নেই।

আমি কিছু একটা বলতে চেয়েছিলাম। ঠিক তখনি আমার ফোন এল, আমি ফোন বের করে দেখলাম আর্মি হেড অফিস থেকে। হিয়া আমার ফোনের দিকে সন্দেহের চোখে থাকাচ্ছে। আমি কিছুটা দূরে গিয়ে কথা বলে আসলাম। কি বলেছিল তাঁরা অনূরুপ বলছি, কমান্ডার অনন্ত, আপনার ৫ দিনের ছুটি থাকলেও আপনি আজ চলে আসবেন। কাল যেন আপনাকে পাই। একটা জরুরি ইন্ভেস্টিগেট করতে হবে। আপনি চলে আসুন। আপনার জন্য সিলেট ক্যাম্পে গাড়ি থাকবে আপনি আজ ই চলে আসুন।
এখন বৃষ্টি নেই বললেই চলে, আমি নিচে চলে যাচ্ছিলাম। হিয়া বলল, আবুল রেডি হয়ে নাও। সকাল সকাল যেতে হবে।

আমি নিচে এসে ভাইয়া কে বললাম, ভাইয়া একটু রাগ করলেও বুঝেছে আমার হাতে কিছু নেই।
নাশ্তা করে রেডি হয়ে নিলাম, কালো প্যান্ট, কালো জুতা,কালো বেল্ট, সাদা শার্ট। এটা আর্মিদের ফরমাল ড্রেস। হিয়ার সাথে গাড়িতে করে চললাম, হিয়ার কলেজের দিকে, এর মধ্যে আমাদের আর তেমন কথা হয় নি। কলেজে ডুকলাম ৯.৫৮ মিনিটে। গাড়ি থেকে নেমেই আমি থমকে গেলাম। কারন, এ কলেজে আমি আগে এসেছি। আর আমার ওনেক বন্ধুরা এ কলেজে পড়ে। তাঁরা যদি আমায় দেখে তাহলে তো আর আমার রক্ষে নেই। এসব ভাবছি এমন সময় একজন আমাকে এসে ঝাপটে দড়ল।

আমি রিতিমতো ভয় পেয়ে গেলাম, কলেজের অনেকেই আমার দিকে তাকাচ্ছিল। হিয়া ও অবিশ্বাসী চোখে আমায় দেখছিল। জরিয়ে ধরা লোকটি আমাকে আস্তে করে ছাঁরল। আমি অবাক হয়ে বললাম, আরি সাগর তুই?
সাগরঃ শালা চাকরি পাইয়া ভুইলা গেছ?
আমিঃ ধুর। কি বলিস এসব?

হিয়াঃ সাগর ভাই তুমি কি আবুলকে জান?
সাগরঃ কে আবুল?

হিয়াঃ কেন ইনি?
সাগরঃ আরে ওর নাম তো অনন্ত।
হিয়াঃ কিহ। আবুল তুমি সবাইকে মিথ্যে বললা কেন?
আমিঃ নিজের ঢুল নিজে পেঠানো ঠিক না।
হিয়াঃ মানে?

সাগরঃ মানে হলো অনন্তর যখন ৬ বছর বয়স তখন থাকে বর্ডিংয়ে দিয়ে দেন। সে অনেক কষ্ট করে। মাসের পর মাস চলে যেত থাকে কেউ নিতে আসত না। সজল ভাই তাকে নিয়ে যেতেন। তাঁর বাবা মা থাকে এড়িয়ে চলতেন। আর এখন তাঁরা অনন্ত কে স্বিকার করেন না।
হিয়াঃ স্বিকার না করার তো একটা কারন আছে।
সাগরঃ হুম। আবশ্যই আছে।

হিয়াঃ সে কারনটাই জানতে চাই।
সাগরঃ তা অনুষ্ঠানেই জানতে পারবেন। এখন চল অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে। আমরা সবাই অনুষ্ঠানে গেলাম। সাগর উপস্হাপনা করছে। হিয়া আমার দিকে বারবার থাকাচ্ছে। অনুষ্ঠানের শেষ সময় বলল, এবার গান নিয়ে আসছে কমান্ডার অব আর্মি। রবিউসানি অনন্ত।

সবাই নাম শুনে অবাক হচ্ছে। আর হিয়া আমার দিকে বড় বড় চোখে থাকাচ্ছে। ওর দু’চোখে অবিশ্বাস লেপ্টে রয়েছে। সাগর আবার বলল, উনি স্টেজে আসার পূর্বে বলে রাখি। ইনি এমন এক লোক যে ৮ম শ্রেনী থেকে এ প্লাস পেয়ে এসেছে। সে খুব ভাল গান করত যার জন্য সে অনেক মেডেল ও পেয়েছে। সে যখন ভার্সিটি ভর্তি পরিক্ষা দেয়। তখন সে আর্মিতেও এপ্লাই করে। সে দু’টাতেই রেসপন্স পায়। তথা। সে ঢাবি তে ইংলেশে পড়ার সুঝোগ পায়। সাতে আর্মি তোও। কিন্তু সে সবার অমতে আর্মি তেই জয়েন করে। এর জন্য সে তাঁর পরিবার থেকে অনেক প্রব্লেম ভোগ করে এখন ও করছে।

হিয়া সাগরের সব কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়েছে। আমি স্টেজে উঠে গান গেয়ে নেমে আসলাম। তাঁর পর অনুষ্ঠান শেষ হলো। আমি সাগর এর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। আমি হিয়ার কাছে আসলাম, সে বলল, আপনিতো খুব ছদ্মবেশী?
আমিঃ কিভাবে।

হিয়াঃ আপনি বললেন ও না আপনি এত বড় একজন মানুষ। আচ্ছা চলুন?
আমিঃ কোথায়?
হিয়াঃ গাড়িতে।

আমিঃ কেন?
হিয়াঃ বাড়িতে যাবেন না।
আমিঃ নাহ। যাব না।
হিয়াঃ কেন?

আমিঃ এ শহর আমায় ছিনেফেলেছে। এ শহরে আমি থকতে পারব না।
হিয়াঃ মানে কি। আপনি আমাদের বাড়ির মেহমান এসেছেন।
আমিঃ কিছু করার নেই আমার। ভাইয়ার কাছ থেকে সব শুনবেন প্লিজ।
হিয়াঃ কিন্তু।

আমিঃ কিন্তু কিছুই না।
হিয়াঃ আপনি যাবেন কোথায় এখন।
আমিঃ চলে যাব ক্যাম্পে। ভাইয়ার কাছ থেকে সব শুনবেন। আমাকে চলে যেতে হবে। বাই।

আমি চলে আসলাম সিলেট ক্যাম্পে। আর ওখান থেকে সুজা বান্দরবন। আমি জানি না আমার বাবাঃমায়ের সাথে আমার আদৌ সম্পর্ক হবে কি না।

লেখা – Ananta Sanny (স্বপ্নচোর)

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “পরিবারের অবহেলা – কেন এমনটা হয়” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ। )

আরো পড়ূন – সতীনকাঁটা – দুই সতীনের লড়াই

1 thought on “পরিবারের অবহেলা – কেন এমনটা হয়”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *