আপনজনের অবহেলা – Koster bangla golpo: রিমি তুমি হয়ত জাননা তোমাকে আগে দুই বছর যে ভাবে ভালবাসতাম ঠিক সেভাবেই এখোনো ভালবাসি৷ কিন্তু আমার ভালবাসা তুমি বুঝলেনা৷ মনে করেছিলাম জেল থেকে বের হয়ে আবার তোমাকে বিয়ে করে দুজনে সুখি থাকব৷ কিন্তু…..
একটি সত্যি ভালোবাসার কষ্টের গল্প
পর্ব ১
আমি আজ দুই মাস পর জেল থেকে বের হচ্ছি৷ আসলে আমাকে জামিন করে বের করা হয়েছে৷ আমার বাবা শহরে অনেক বড় শিল্প পতি তাই বেশি দিন জেলে থাকতে হয় নি৷ তাই আজ আমার জামিন হয়ে গেল৷
আমি জেল খানা থেকে বের আনমনে হাটতে হাটতে বাসার দিকে হাটছি৷ আর রিমির কথা ভাবছি মেয়েটাকে আমি অনেক ভালবাসতাম কিন্তু মেয়েটা আমার ভালবাসা কোনদিন বুঝল না৷ খুব ভালবাসতাম রিমি কে৷ রিমি দেখতে একদম ডানাকাটা পরীর মত৷ যাকে দেখলে যে কোন ছেলে পানি ক্রাস খাবে৷
এবার আমার পরিচয় টা দিয়ে নি৷ আমি আহনাফ ইসলাম আরিয়ান আমি অনার্স শেষ করে রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করছি৷
পরিচয় দিতে দিতে আমার বাসাই চলে আসলাম৷ বাড়ির কলিং বেল বাজালাম কিছুক্ষন আমার মা এসে দড়জা খুলে দিল৷ আমি মাকে দেখে অনেক খুশি হলাম দুইমাস পরে মাকে দেখলাম৷ কিন্তু মা আমাকে দেখে মুখটা মলিন করে কোন কথা না ভীতরে ডুকে গেল৷
আজ আমার একটা অন্যায়ের জন্য মা আমার সাথে কথা বলল না৷ খুব খারাপ লাগছে মা আমার সাথে কথা না বলে মুখে একরাশ বিরক্ত নিয়ে চলে গেল আমার সামনে থেকে৷
আমি মার পিছু নিলাম আমি আমার মাকে ডাকলাম কিন্তু মা কোন কথা বলছেনা৷ এবার আমি দৌড়িয়ে মার সামনে গেলাম৷ মা কি হল আমার সাথে কথা বলছ না কেন৷ আমিতো রাগের মাথায় একটা ভুল করেছি তাই বলে আমাকে এভাবে শাস্থি দেবে৷
আমার কোন ছেলে নেই আহনাফ নামে একটা ছেলে ছিল৷ কিন্তু দুইমাস আগে সে মারা গেছে আমার কাছে৷ তুই আমার ছেলে না৷ তোর ওই পাপি চেহারা আমাকে দেখাবিনা আর তোর ওই নোংরা মুখে আমাকে কোনদিন মা বলে ডাকবিনা৷ তাই বলে মা কান্না করতে করতে চলে গেল রুমে৷
এবার মার কথা শুনে আমার দুচোখ বেয়ে অঝর ধারাই পানি পড়তে থাকল৷ শেষ পর্যন্ত আমার মা আমাকে দুড়ে ঠেলে দিল৷ খুব কষ্ট হচ্ছে তাই রুমে এসে দড়জা বন্ধ করে অনেক্ষন কান্না করলাম৷ কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেই জানিনা৷
ঘুম ভাঙল দড়জার ঠক ঠক ঠক শব্দে৷ আমি উঠে দড়জা খুলে দিলাম দড়জা খুলে দেখি বাবা দড়িয়ে আছে৷ আমি বাবাকে দেখে কান্না করে দিলাম আর বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম৷
আসলে বাবার সাথে আমি খুব ফ্রি ছিলাম৷
বাবাঃ কান্না করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে আর কাল থেকে তুই অফিসে জয়েন করবি তারপর দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে৷
আমিঃ আচ্ছা বাবা তুমি যা বলবে তাই হবে৷
বাবাঃ আর একটা কথা তোকে না জানিয়ে আমি বড় একটা সিন্ধান্ত নিয়েছি আশা করি তুই আমার কথা রাখবি৷
আমিঃ বল বাবা আমি তোমার সব কথা রাখব৷
বাবাঃ আমি তোর সাথে রিমির বিয়ে ঠিক করেছি৷ কারন তোর জন্য রিমির জিবন নষ্ট হোক আমি তা চাইনা৷ তাই আমি এই সিন্ধান্ত টা নিয়েছি৷
আমিঃ তুমি যা ভাল বোঝ তাই কর৷
আপনারা ভাবছেন এই রিমি টা কে৷ আসুন দুই মাস আগের কাহীনি বলছি৷
সকালে ঘুমিয়ে আছি হঠাং ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল৷ আমি বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম৷ দেখি আমার বন্ধু ফোন দিয়েছে৷ আমার বন্ধুর নাম রাজু৷
আমিঃ ওই শালা এত সকালে ফোন দিয়ে আমার অারামের ঘুম নষ্ট করলি কেন রে৷
রাজুঃ আরে রাখ তোর আরামের ঘুম৷ আর এদিকে রিমি ভাবি অন্য একটা ছেলের সাথে এক রিক্সাই কলেজে যাচ্ছে তুই তাড়াতাড়ি কলেজ চলে আয়৷
রাজুর মুখে রিমির কথা শুনে আমার নিমিষেই ঘুম উধাও হয়ে গেল৷ আমি তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে কলেজের জন্য রওনা দিলাম৷
আসুন রিমির সাথে পরিচয় করে দিই৷ রিমি আমাদের কলেজে 2 বর্ষের ছাত্তি৷ আমি রিমিকে দুইবছর ধরে ভালবাসি৷ রিমিকে অনেক বার প্রোপজ করেছি কিন্তু রিমি রাজি হয় নি৷ রিমিকে আমি অনেক ভালবাসি যা রিমিকে কেউ এইরকম ভাবে ভালবাসতে পারবে কিনা আমার জানা নাই৷
পরিচয় দিতে দিতে কলেজ চলে আসলাম৷ এসে দেখি রিমি একটা ছেলের পাশে বসে আছে৷ আর হেসে কথা বলছে৷ আমার মাথায় প্রচন্ড রাগ উঠে গেল৷
আমি সোজা গিয়ে রিমির পাশে বসা ছেলেটির শার্টের কলার ধরে সোজা নাকে একটা ঘুষি মারলাম৷ আর ছেলেটি নাকে হাত দিয়ে সোজা মাটিতে বসে পড়ল৷
আমিঃ ওই তোরে বলছি না কোন ছেলের সাথে যেন না মিশতে৷ তারপরেও তুই কেন ওই ছেলের সাথে কথা বলছিস হুমমম৷ (চিৎকার করে)
রিমিঃ আপনি ওকে মারলেন কেন৷ আপনি জানেন ছেলেটি কি হয় আমার ও আমার কাজিন হয়৷ আসলে আপনাদের মত এমন বখাটেদের জন্য আমাদের মত মেয়েরা আজ অসুরক্ষিত৷ আপনি একটা বখাটে আর যাই হক আপনাকে ভালবাসা যাই না৷ (রেগে বলল)
আমিঃ রিমি আমি সরি আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি আর সেই জন্য তোমার পাশে আমি কাউকে সহ্য করতে পারিনা৷ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও৷ (করুন স্বরে)
রিমিঃ আমি কোন রাস্তার বখাটে মাস্তান কে ভালবাসতে পারবনা৷ যে কিনা রাস্তার কুকুরের মত মেয়েদের পিছনে পড়ে থাকে৷
তাই বলে রিমি চলে গেল কলেজ থেকে৷
রিমির কথা শুনে খুব কষ্ট হতে লাগল৷ যাকে আমি নিস্বার্থ ভাবে ভালবাসলাম সে আমাকে রাস্তার কুকুর বলল৷ কিন্তু হঠাং করে মাথায় প্রচন্ড রাগ উঠে গেল৷ আমি রাস্তার বখাটে মাস্তান বলল৷
আমি যদি বখাটে মাস্তান হয় তাহলে বখাটের মতই রিমির ভালবাসা আদাই করে নিব৷ কাল রিমিকে দেখাব বখাটেরা কীভাবে ভালবাসে৷
পরেরদিন সকালে রিমির জন্য অপেক্ষা করছি রাস্তাই৷ আজ রিমিকে বখাটে বলার শাস্তি পেতে হবে৷ কিছুক্ষন পর রিমি আসল তবে আজ একা এসেছে৷
আমি কোন কথা না বলে রিমিকে জোর করে তুলে নিয়ে বাইকে বসিয়ে প্রচন্ড স্পিডে বাইকে চালিয়ে একটা পুরানো ভাঙা ঘরে নিয়ে চলে আসলাম৷ আসার সময় রিমি অনেক চিৎকার করছিল৷ আর অনেক ভয় পেয়েগিয়েছিল৷
আমিঃ রিমি দেখ আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি৷ তোমাকে আমি কোন হার্ট করতে চাই না৷ তোমাকে আমি দুই বছর ধরে ভালবাসি কোনদিন তোমার সাথে খারাফ ব্যাবহার করিনি৷ তাহলে কেন আমাকে ভালবাসতে পারবেনা৷ (করুন সুরে)
রিমিঃ তুমি বখাটে মাস্তান তা তোমার এমন আচরনে বুঝা যাই৷ তুমি যদি আমায় সত্যি ভালবাসতে তাহলে আমাকে এমন ভাবে তুলে নিয়ে আসতে পারতেনা৷ কারন এগুলো রাস্তার বখাটে গুলোই পারে এমন কাজ করতে৷ যার কারন তার মা বাবা তাকে ঠিক ভাবে কোনদিন শাষন করেনি৷ তুমি এরকম তাহলে তোমার মা বাবা কিরকম হবে আল্লাই জানে৷ (রেগে চিৎকার করে বলল)
এবার আমার মাথাই রাগ উঠে গেল তুই আমাকে যা বলার বল কিন্তু আমার মা বাবা কে তুই কেন মাঝখানে তুলল কেন৷
আমি এবার রিমিকে এতটা শরীরের সব শক্তি দিয়ে রিমিকে একটা চড় মারলাম আর রিমি পাশে পড়ে গেল৷ আমি তখন রিমির কাছে গিয়ে রিমির শরীর থেকে উরনা ছুরে ফেলে দিয়ে৷ রিমির উপর শারীরিক অত্যাচার করলাম৷
আমাদের ভাষাই যাকে বলে ধর্ষন৷ হ্যা আমি রিমিকে ধর্ষন করেছি৷ আমাকে বাখাটে বলে মাস্তান বলে আমার মা বাবা কে গালি দেয়৷
রিমি আমাকে আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি আমি শক্তির সাথে৷ রিমি আমার পা প্রর্যন্ত ধরেছিল৷ কিন্ত আমার সেই সময় মাথায় প্রচন্ড রাগ উঠে ছিল৷
রিমি একভাবে কান্না করেই যাচ্ছে৷ কিছুক্ষন পর সেখানে কিছু মানুষ আসল হয়তো রিমির চিৎকার শুনে মানুষ চলে এসেছে৷
মানুষ গুলো আমাকে একসময় মারতে লাগলো তারপর আমার আর কিছু মনে নেই যখন জ্ঞান ফিরে তখন আমি জেলখানায়৷
তারপর আমার বাবা আসল বাবা সব কাহীনি শুনতে চাইল৷ বাবাকে আমি সব খুলে বললাম৷ বাবা বলল তুই চিন্তা করিস না আমি তোকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জামিন করে নিয়ে যাব৷
আমি জেলে থাকতে রিমির আর কোন খোজখবর পাইনি৷ এমনকি আমার মা আমাকে দেখতে আসেনি৷ বাবা মাঝে মাঝে আসত আমাকে দেখতে৷ আর তার দুইমাস পর জামিন হয়ে যাই৷
আর তার পরের কাহিনী সব আপনারা তো জানেন৷ পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে গুছিয়ে অফিস যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ সব কিছু গুছিয়ে নিচে এসে দেখি মা বাবা সবাই একসাথে নাস্তা করছে৷ আমি যেই নাস্তা করার জন্য টেবিলে বলতে যাব তখনি আমার মা নাস্তা রেখে উঠে চলে গেল৷
নিজের প্রতি খুব খারাফ লাগছে৷ আমার জন্য মা নাস্তা না করে উঠে চলে গেল৷ মা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে৷ তারপর আমিও নাস্তা না করে বাবার সাথে অফিসে চলে গেলাম৷
অফিসে এসে সবার সাথে পরিচয় হয়ে নিলাম৷ দিন টা খুব ভাল কাটল৷ হঠাং করে বাবা আমার ড্ক্সে আসল৷
বাবাঃ আগামী শুক্রবার তোর বিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখিস৷
দেখতে দেখতে শুক্রবার চলে আসল৷ কোন আয়োজন বাদেই বিয়ে হয়ে গেল৷ শুধু দুই পরিবারের মানুষ ছিল আর কেউ ছিলনা৷
আমি এখন বাসর ঘরের সামনে দাড়িয়ে৷ আর ভাবছি রিমির সামনে কোন মুখ নিয়ে যাব রিমি কোনদিন মেনে নিতে পারবে আমাকে৷ তারপর তিন টাকার সাহসে নিয়ে রুমে ডুকে পড়লাম৷ কারনরিমিকে বিয়ে করার ব্যাপারে কোন আপত্তি ছিলনা কারন রিমিকে আমি ভালবাতাম৷ আর আমার রাগের কারনে রিমি জীবন টা নষ্ট হয়ে গেল৷
রুমে ডুকে দেখি রিমি বসে বসে কান্না করছে৷ আমি রিমির পাশে বসতে যাব তখনই রিমি আমাকে এক ঝাটকাই সরিয়ে দিয়ে বলল৷
রিমিঃ তুই আমার পাশে আসবিনা৷ তোর জন্য আমার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে৷ তোর জন্য আমার বাবার মার সম্মান নষ্ট হয়ে গেছে৷ তোকে আমি কোনদিন ক্ষমা করব না৷ আর তোকে স্বামী হিসাবে কোনদিন মানব না৷ তুই কোনদিন আমার কাছে স্বামীর অধিকার দেখাতে আসবিনা৷
আমিঃ রিমি আমি তোমাকে এর আগেও ভালবাসতাম আর এরপরেও ভালবাসব৷ সেদিন রাগের মাথায় ওসব কাজ করেছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও৷
রিমিঃ আমার ঘুম আসছে ঘুমাব৷ আর রাস্তার বখাটে মাস্তানের সাথে আমি একখাটে ঘুমাতে পারব না৷ আর যদি আবার রাগ হয় তাহলে আবার আমাকে রাস্তার কুকুরদের মত ভোগ কর৷ সেটাতো তুমি খুব ভালবাবেই পার৷ (চিৎকার করে কান্না করে বলল)
তাই বলে রিমি ঘুমিয়ে পড়ল৷ আর আমি নিচে বিছানা পেতে ঘুমিয়ে পড়লাম৷
আরো পড়ূন – শেষ কান্না – Student teacher relationship
Koster premer golpo bangla
পর্ব ২
রিমি আমাকে কোনদিন মেনে নেবেনা সেটা আমি জানতাম৷ কিন্তু রিমি কেন বোঝেনা যে আমি রিমিকে অনেক ভালবাসি৷ রিমি বিছানায় শুয়ে পড়ল৷ আর আমি নিচে একটা চাদর আর বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়লাম৷
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রিমি এখনো শুয়ে আছে৷ কিন্তু রিমি অনেক চেন্জ হয়ে গেছে৷ আগে মেয়েটা অনেক সুন্দর ছিল৷ এই দুই মাসে রিমি অনেক শুকিয়ে গেছে৷ মনে হয় নিজের শরীরের যত্ন নেই না৷
রিমি নড়চড়া করছে মনে হয় ঘুম থেকে এখনি উঠে পড়বে৷ তাই আমি তাড়াতাড়ি বাথরুমে ডুকে পড়লাম ফ্রেশ হতে৷ ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেড়িয়ে দেখি রিমি হাটু ভাজ করে বিছানার উপর মাথা নিচু করে বসে আছে৷
আমিঃ কি হয়েছে রিমি তুমি এমন ভাবে বসে আছো কেন ফ্রেশ হবে না৷
এবার রিমি মাথা তুলল দেখি রিমি কান্না করছে৷ মূহুর্তের মধ্যে মনটা খারাফ হয়ে গেল৷
রিমিঃ আমি কান্না করি আর যাই করি আপনাকে না দেখলেও চলবে৷ যে মানুষ টা আমার সব কিছু শেষ করে দিয়ে ছে৷ আমার স্বপ্ন আশা ইজ্জত যে মানুষ টা নিমিষেই সব শেষ করে দিয়েছে৷ তার সাথে আমার একই রুমে থাকতে হচ্ছে৷ কতটা ঘৃনা করি আপনাকে যানেন আপনি৷ আপনাকে দেখলে আমার মনে হয় যে নিজেকে শেষ করে দিই৷ আর আজ পরিস্থিতির কারনে আপনি আমার স্বামী৷ তাই আমি আমার মত থাকব আর আপনি আপনার মত৷ আর যদি রাস্তার কুকুরদের মত যদি আবার আমাকে ভোগ করতে চান তাহলে করতে পারেন৷ কারন বিয়ের আগে আপনি একটা মেয়ের বেচে থাকার সম্বলকে ছিনিয়ে নিয়েছেন৷ তাই আপনাকে আমি ঘৃনা করি আর সারাজীবন ঘৃনা করে যাব৷ (করুন সুরে আর কান্না করে বলল)
আমি কোন কথা না বলে সোজা বাইরে চলে আসলাম৷ কিছুক্ষন হেটে বাসাই আসলাম৷ আর ভাবতে লাগলাম রিমিকে কোনদিন ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্পর্শ করব না৷ মেয়েটা এই দুইমাস অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছে৷ তাই রিমি যেন সুখি থাকে তাই তাকে তার মত থাকতে দেব৷
বাসাই এসে দেখি মা আর রিমি রুমে রান্না করছে৷ মা আর রিমি তারা দুজনে হেসে হেসে কথা বলছে৷ মনটা ভাল হয়ে গেল যে রিমি মাকে অাপন করে নিয়েছে৷
আমি সোজা রুমে চলে আসলাম এসে গুছিয়ে নিলাম অফিস যেতে হবে৷ ব্যাগ নিয়ে নিচে এসে দেখি মা আর রিমি একসাথে বসে নাস্তা করছে৷ আমি একটু না অনেক অবাক হলাম কারন মা আমাকে ছাড়া কোনদিন নাস্তা করেনি৷ খুব কষ্ট হতে লাগল৷ দেখলাম আমার নাস্তাটা টেবিলের এক পাশে রাখা আছে৷ আমি একবার রিমি আর একবার মার দিকে তাকালাম৷ দেখি তারা মাথা নিচু করে নাস্তা করছে৷
আমার ভীষন রাগ হতে লাগল৷ কারন তারা আমাকে একবারো ডাকলনা নাস্তা করতে৷ তাই আমি নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেলাম৷ গিয়ে আব্বুর সাথে সব কিছু দেখাশুনা করতে থাকলাম৷ আমি এখন আর বন্ধুদের সাথে তেমন বেড়াই না৷
দুপুরে লান্স টাইমে আমি আর বাবা গাড়িতে করে বাসাই আসলাম দুপুরের খাবার খেতে৷ আমি আর বাবা টেবিলে বসলাম৷ দেখলাম বাবাকে প্লেট ভাত সবকিছু এগিযে দিচ্ছে মা আর রিমি৷ কিন্তু আমার সামনে কেউ কিছু দিচ্ছেনা৷ সবাই দুপুরের খাবার খাওয়া শুরু করে দিলে৷ কিন্তু আমার উপর কোন কারও নজর নেই৷
খুব কষ্ট হতে লাগল যে যে মা আমাকে খাবার না দিয়ে কোনদিন খাইনি আর আজ এটা কি হল৷ খুব হাসি পাচ্ছে৷ আর বুকের মধ্যে চিন চিন করে ব্যাথা করছে৷
তখন বাবা আমার দিকে একটা প্লেট এগিয়ে দিল আর কিছু ভাত দিল৷ আমি না খেয়ে উঠে পড়লাম আর বাইরে চলে আসলাম৷ এখন আর অফিসে যাব না৷ তাই বাইরে গিয়ে কিছু খেয়ে এক প্যাকেট সিগারেট কিনলাম আর চলে আসলাম আমাদের পুরানো আড্ডাখানায়৷ সেখানা রাত 10 টা পর্যন্ত অাড্ডা দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম৷
রাস্তাই একটা ফুসকার দোকান দেখলাম৷ আগে রিমি ফুসকা খুব পছন্দ করত তাই রিমির জন্য কিছু ফুসকা নিলাম৷ তারপর বাসাই চলে আসলাম৷
রুমে এসে দেখি রিমি টিভি দেখছে৷ আমি রিমির দিকে প্যাকেট টা বাড়িয়ে দিলাম৷ রিমি একবার প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে আবার টিভি দেখায় মনযোগ দিল৷
আমিঃ কি হল ধর তুমিতে আগে প্রচুর ফুসকা খেতে নাও তোমার জন্য নিয়ে আসলাম৷
রিমিঃ আপনাকে বলেছি না আমার বিষয়ে আপনার কোন অধিকার ফলানোর চেষ্টা করবেনা৷ আর আপনি কি ভাবছেন আপানার হাতের জিনিস আমি খাব৷ ভাবলেন কিভাবে হুমমম৷ আপনার ওই নোংরা হাতে আমি কোনদিন বিষ পর্যন্ত খাবনা৷ যে একটা মেয়ের সম্মান দিতে পারেনা তার হাতের জিনিস খেলে আমার পাপ হবে৷ যত্তসব রাস্তার কুত্তা বখাটে মাস্তান৷ আবার আপনাকে গালি দিলাম এখন তো আর জোর করে কোন মেয়েকে ধর্ষন করতে হবে না৷ আর সে চাইলেই আর আটকাতে পারবেনা৷ (রেগে চিৎকার করে বলল)
আমি আর কোন কথা বললাম না প্যকেট টা টেবিলের উপর রেখে আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম৷ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রিমি ঘুমাই পড়ছে৷ আমি কিছুক্ষন রিমির দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়লাম৷ কারন রিমি যতই আমাকে গালাগালি দিক এসবের জন্য দায়িত আমিই৷ আর আমি রিমিকে অনেক ভালবাসি৷
অসাধারণ কষ্টের গল্পগুলো আমাদের কাঁদায়।
এভাবে কিছুদিন চলে গেল৷ এই কয়দিন মা আমার সাথে একবারও কথা বলিনি৷ আর রিমি কথা বললেই গালাগালি দিত আর অবহেলা করত৷ আমি আর সহ্য করতে পারতি না অপানজনের অবহেলা গুলো৷ আমি এই কযদিন বাড়িতে খাবার খাইনি৷ কিন্তু কেউ একবারো জিজ্ঞাসা করেনি কিছু খাইছি কিনা৷
আজ অফিসে বসে কাজ করছি আর তখন বাবা এসে বলল রিমি নাকি হঠাং করে শরীর খারাফ হয়েছে৷ মাথা ঘুরে পড় গেছে৷ আমি আর বাবা তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে বাসাই চলে আসলাম৷ এসে দেখি রিমি আর মা রিমির সাথে কথা বলেছে৷ রিমি বিছানায় শুয়ে আছে আর মা রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷
আমি আসা মাত্তই মা রুম থেকে চলে গেল৷ আমি গিয়ে রিমির পাশে বসলাম৷ আর রিমি একটু দূড়ে সরে গেল৷
আমিঃ কি হয়েছে তোমার বাবা নাকি বলল তোমার শরীর খারাফ৷
রিমিঃ…………..(চুপ করে বসে আছে)
আমিঃ কি হল বল কি হয়েছে বড় সমস্যা হলে ডাক্তারে কাছে নিয়ে যাব৷
রিমিঃ আমি মা হতে চলেছি৷ (মন খারাফ করে বলল)
কিহহহহ আমি বাবা হতে চলেছি এত খুশির সংবাদ আর তুমি এমন মনমরা হয়ে বলছ কেন৷ তুমি যানন আমি কত খুশ………..
রিমিঃ আমি এবরশন করব৷ (করুন সুরে)
আমিঃ মানে ঠিক বুঝলাম না৷
রিমিঃ আমি এই বাচ্চা চাই না আমি এবোরশন করব (কিছুটা রেগে)
আমিঃ কি বলছো এসব বাচ্চা এবোরশন করবে মানে পাগল হলে নাকি তুমি৷ আমি কিছুতেই হতেদ দিবনা৷ আমার বাচ্চা আমি নষ্ট করতে দেব না৷
রিমিঃআমার পেটে আমি কোন বখাটে মাস্তান ধর্ষন কারির বাচ্চা রাখতে পারব না৷ আমার পেটে কোন অমানুষের বাচ্চা রাখতে দেব না৷ তাই আমি ডিসিশন নিয়েছি আমি এবোরশন করব৷ (রেগে বলল)
আমিঃ রিমি তুমি যা শাস্তি দিবে আমাকে দাও কিন্তু আমার নিষ্পাপ বাচ্চাকে তুমি কোন ক্ষতি করনা৷ সে তো আর কোন দোষ করেনি৷ প্লিজ তুমি এমন করনা তুমি আমাকে যা শাস্তি দিবে আমি সব মাথা পেতে নেব৷ কিন্তু আমার বাচ্চাটাকে কোন ক্ষতি করনা৷ তোমার পায়ে পড়ি প্লিজ এমন বড় শাস্তি আমাকে দিও না৷ (কান্না করে বললাম)
রিমিঃ আমার পেটে যে বাচ্চা সে একটা অমানুষের বাচ্চা একজন বখাটের বাচ্চা যে নিজের ভালবাসা পাওয়ার জন্য একটা মেযেকে জীবিত লাশ করে দিতে পারে৷ আর তার বাচ্চা বড় হলে তার বাবার মত হবে না সেটা কেউ বলতে পারবে৷ তাই আমার পেটে কোন অমানুষের বাচ্চা পেটে ধরে রাখতে পারবনা৷ আর এই বাচ্চা যদি বড় হয়ে তার বাবার মত অমানুষ হয়৷ তাই আগে থেকে আমি পৃথীবিতে কোন অমানুষ নিয়ে আসতে পারব না৷ (চিৎকার করে কান্না করে)
আমিঃ প্লিজ রিমি তুমি আমাকে যা বলার বল কিন্তু আমার বাচ্চাকে কিছু বলনা৷ আমু তোমাকে কথা দিলাম আমার বাচ্চা পৃথিবীর আলো দেখার সাথে তোমার থেকে অনেক দুরে নিয়ে যাব৷ আমার বাচ্চার চেহারা পর্যন্ত তোমাকে দেখতে দেব না৷ তার আগেই আমি সব কিছু ছেড়ে চলে যাব৷ (রিমির সামনে হাটগেরে বসে কান্না করে)
আমার কান্না দেখে রিমির হয়তো কিছুটা মায়া হল তাই সে রাজি হয়ে গেল৷
আরো পড়ূন – শুষ্ক পাতার ভাজে (১ম খণ্ড) valobasar golpo 2019
Jiboner koster golpo bangla
পর্ব ৩
আমার কান্না দেখে রিমির হয়ত কিছুটা মায়া হল তাই সে আর কিছু বলল না৷ আমার সামনে থেকে উঠে চলে গেল৷ আমি ওখানে বসে বসে ভাবছি নিজের সন্তান কে কেউ কোনদিন এভাবে বলে আমার কোনদিন জানা ছিল না৷
রিমির সাথে না হয় আমি একটা অন্যায় করেছি কিন্তু সেতো আমার বৌ হয়৷ আমি তো রিমিকে বৌয়ের মর্যদা দিয়েছি৷ তাহলে কেন রিমি আমার সাথে এমন করছে৷ রিমিকে তো আমি অনেক ভালবাসি রিমি কেন বোঝেনা৷
আমি বাইরে চলে আসলাম৷ আর এক প্যাকেট সিগারেট নিলাম৷ নিয়ে ছাদে চলে আসলাম৷ আর মনের সব দুঃখ ধোয়ার সাথে উড়িয়ে দিচ্ছি৷
আমার সন্তান জন্ম নেওয়ার সাথে সাথে আমি সবার থেকে ওকে দুড়ে নিযে চলে যাব৷ কেউ যেন তাকে অমানুষের বাচ্চা না বলতে পারে৷ রিমি তো আমার সন্তান কে কোনদিন মেনে নেবে না৷
তাই সবাইর বোঝার আগে আমি আমার সন্তন কে নিয়ে অনেক দুড়ে চলে যাব৷ চাইলেই আর খুজে পাবে না৷
সিগারেট শেষ করে নিচে আসলাম এসে দেখি সবাই একসাথে বসে রাতের খাবার খাচ্ছে৷ আমার মন টা আবার খারাফ হয়ে গেল৷ আজকেও আমাকে না ডেকে সবাই একসাথে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে৷
আমি আমার রুমের দিকে যাচ্ছি তখন বাবা আমাকে ডাকল খাবার খেতে৷ আমার ক্ষুদা না বলে রুমে চলে আসলাম৷ আমার মার কাছে আমি এতটায় ঘৃনার পাত্ত হয়ে গেলাম যে আমার সাথে এই কয়টা দিন একটা কথাও বলেনি৷
আমি নিচে বিছানা পেতে শুয়ে পড়লাম৷ কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি ঠিক নেই৷ সকালে উঠে দেখি রিমি খাটের উপর নেই হয়ত নিচে গেছে৷ আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা না অফিসে চলে আসলাম৷
বিকালে অফিস শেষে বাসায় আসার সময় রিমির জন্য কিছু জিনিস নিয়ে নিলাম৷ কিছু ফল আর মাদার হরলিক্স আর অন্যন্য মায়ের শরীরের উপকারে আসে সব কিছু নিয়ে আসছি৷ তখন অঝর ধারায় বৃষ্টি হতে লাগল৷ আজ খুব বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করছে অনেক দিন বৃষ্টিতে গোসল করিনি৷ আমার আবার বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর ঠান্টা লাগে৷ আমি কোন কিছু না ভাবে একভাবে হেটে চলেছি৷
বাসাই এসে কলিং বেল বাজালাম দেখি আব্বু দড়জা খুলে দিছে৷
বাবাঃ কিরে তুই বৃষ্টি তে কেন ভিজেছিস তোর জ্বর আসবে৷
আমিঃ কিছু হবে না অনেকদিন পর বৃষ্টিতে ভিজেছি তাই ভাল লাগছে৷
আমার রুমে চলে আসলাম এসে দেখি রিমি জানালার গ্রিল ধরে একমনে বাইরে তাকিয়ে আছে৷
আমি রিমি কে ডাক দিলাম৷ রিমি আমার দিকে তাকাল৷ আমি রিমির হাতে ফল আর হরলিক্সের প্যাকেট টা দিতে যাব৷ তখন রিমি চিৎকার করে রেগে বলল৷
আপনাকে এসব আনতে বলেছে কে৷ এসব ডং করার কোন দরকার নেই৷ আমার জীবন টা শেষ করে এখন নাটক করতে আসছে৷ যত্তসব ঢং দেখলে বাচিনা৷ আর আপনি ভাবলেন কি করে একটা অমানুষের হাতের জিনিস আমি খাব৷ যদি সারাদিন না খেয়েও থাকি তবুও আপনার মত একটা মানুষের কোন জিনিস খাব না৷
আমিঃ রিমি আমি এসব কিছু আনতে চাইনি৷ শুধু আমাদের বাচ্চা টার জন্য নিয়ে এসেছি৷ তুমি আমাকে যেভাবে শাস্তি দেবার দাও আমাদের বাচ্চা টাকে কোন শাস্তি দিও না৷ তুমি এগুলো আমার বাচ্চার জন্য নিয়মিত খাও৷
রিমিঃ আমাদের বাচ্চা মানে শুধু আপনার বাচ্চা৷ আমার কোন বাচ্চা নেই৷ তাও আবার আপনার মত একটা জানোয়ারের বাচ্চা নেব আমি কোনদিন সম্ভব না৷
আমিঃ আচ্ছা শুধু আমার বাচ্চা তোমাকে বাচ্চার মা বলে আমি কোনদিন পরিচয় দেব না তুমি নিচ্শিন্তে থাকতে পার৷ শুধু আমার বাচ্ছাটার জন্য এগুলো নাও৷
এবার রিমি রাগি মুখে আমার হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে অন্য রুমে চলে গেল৷ আর আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম৷
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রিমি বিছানায় শুয়ে পড়ছে৷ আমি ফ্লোরে বিছানা পেতে শুয়ে পড়লাম৷ মাঝরাতে আমার শরীরে কাপুনি দিয়ে জ্বর আসল৷ আমি একটা চাদর নিয়ে শুয়ে পড়লাম৷
যখন ঘুম ভাঙল তখন দেখি সকাল 12 টা বেজে গেছে৷ আর আমার পাশে বাবা বসে আছে আর মাথায় পানি দিচ্ছে৷
তাহলে সারারাত আমার শরীরে জ্বর ছিল৷ কিন্তু রিমির তো জানার কথা যে আমার জ্বর এসেছে৷ হয়ত রিমি আমার উপর ঘৃনা করে আমার শরীরে হয়ত স্পর্শ করেনি৷
আমিঃ বাবা তুমি এখানে রিমি মা কোথায়৷
বাবাঃ সকালে অফিসে গিয়ে দেখি তুই আসিস নি৷ আবার ফোন বন্ধ তাই আমি বাড়িতে এসে দেখি৷ তুই জ্বরে শরীরে কাপুনি দিয়ে উঠছে তাই আমি মাথায় পানি দিয়ে দিচ্ছি৷ (আসলে বাবা সব জানে যে রিমি আর মা আমার সাথে কথা বলেনা তাই হয়ত বাবা আমার খোজখবর নিচ্ছে)
আমার চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি বের হয়ে গেল৷ আমার মার জন্য আমার উপর একটু মায়া হল না৷ আর রিমিকে তো আমি নিজের থেকেও ভালবাসি তাহলে রিমি অন্তত একটু দেখত যে আমি মারা গেছি না বেচে আছি৷
আমিঃ বাবা কিছু খাবার নিয়ে আসবে রাতে থেকে কিছু খাওয়া হয়নি৷
বাবাঃ একটু বস, আমি বৌমাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি৷
আমিঃ না বাবা দরকার নেই আমি বাইরে থেকে খেয়ে নেব৷
বাবাঃ আমি সব বুঝি রে বাবা মেয়েটা তোকে এখনও ক্ষমা করতে পারিনি৷ আমি নিয়ে আসছি খাবার৷
তাই বলে বাবা চলে গেল নিচে খাবার আনতে৷ আর আমি বিছানায় শুয়ে আছি৷ তখন রিমি রুমে আসল আর আমার দিকে একবার তাকিয়ে নিজের কাজ সেরে আবার রুমের বাইরে চলে গেল৷
আমি যেই মেয়েটাকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালবাসি সেই মেয়েটা আমার প্রতি একটু মায়া কাজ করেনা৷
যেদিন আমি থাকব না সেদিন বুঝতে পারবে কতটা ভালবেসে ছিলাম তাকে আমি৷ সেদিন হয়ত আর আমাকে পাবেনা৷ সব কিছু মায়া ত্যাগ করে চলে যাব৷ তখন আমার উপরে আর কারও রাগ থাকবেনা৷ কেউ আমাকে অমানুষ জানোয়ার বখাটে বলবেনা৷
তারপর বাবা আমাকে খাবার দিয়ে গেল আমি খেয়ে নিলাম৷ তারপর বিকালের দিকে একটু শরীর টা ভাল হল৷ আমি আস্তে আস্তে উঠে বাইরে চলে আসলাম৷ আর কিছু খেয়ে নিলাম৷
এভাবে চলে গেল দুইদিন এই দুইদিন আমার শরীরে হালকা জ্বর ছিল কিন্ত মা রিমি কেউ আমাকে দেখেনি৷ সবাই অবহেলা করেছে৷ এখন কেমন যেন নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে৷
নিজের আপনজনের এমন অবহেলা সহ্য হচ্ছে না৷ আমি বাসার খাবার খুবই কম খাই৷ বেশীর ভাগই বাইরে খাই৷
আজ আবার একটু অফিসে আসলাম৷ এসে কিছু কাজ করে বাসাই আসার সময় রিমির জন্য কিছু জিনিস কিনলাম৷ যাতে আমার বাবুটা রিমির ভেতরে সুস্থ থাকে৷
মা আমার সাথে একদম কথা বলা বন্ধ করে দিছে৷ আমি আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গেলেও মা কথা বলেনা৷ আর রিমি আমার সাথে যখনি কথা বলতে আসে তখনই রাগ দেখিয়ে আর গালাগালি করে৷
এভাবে চলে গেল সাত মাস এখন রিমি একটু একটু করে নিজের শরীরে উপর যন্ত নেওয়া শুরু করছে৷ হয়ত নিজের সন্তান তাই একটু মায়া হচ্ছে৷
এখন রিমির যা যা প্রোয়জন সব বাবা কে বলে আর বাবা আমাকে বলে আমি সেগুলো নিয়ে আসি৷ মাঝে মাঝে দেখি রিমি নিজের পেটে আলতো করে হাত বুলাই আর নিজে নিজে কথা বলে৷ খুব আস্তে আস্তে কথা বলে৷ আমি শুনতে পারিনা৷ মনে নিজের সন্তানের সাথে কথা বলে৷
এসব দেখে খুব ভাল লাগে যে রিমি তার পেটের সন্তান কে একটু একটু করে ভালবাসতে শিখেছে৷ হাজার হলেও মা সে৷ আর রিমি আগে সবসময় কেন মন মরা আর উদাস হয়ে থাকত৷ এখন আর আগের মত থাকেনা৷ আবার আগের মত স্বভাব টা ফিরে আসছে৷
আর এখন রিমি আমার দিকে কেন আড় চোখে তাকাই তবে মাঝে মাঝে৷ আমি সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করে থাকি৷ হয়ত নিজের বাচ্চার সাথে সাথে আমার উপরো একটু একটু মায়া জন্মাতে শুরু করছে৷
কিন্তু সেদিক থেকে আমার কোন ইচ্ছায় নেই৷ আমি সারাদিন আমার মত থাকি আর রিমি রিমির মত৷
আজ মাঝ রাতে হঠাং করে ঘুম ভেঙে গেল৷ উঠে দেখি রিমি ঘুমিয়ে আছে আর এতটা হাত রিমির পেটের উপর৷ হয়ত বাচ্চাকে আদর করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে৷
আমি এবার উঠে রিমির পাশে গিয়ে বসলাম৷ আর আমার হাত টা রিমির পেটে আলতো করে রাখলাম৷ খুব ভাল লাগছে আমার ছোট বাবুটা রিমির মধ্যে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে৷
আমি আস্তে আস্তে মাথা টা নিচু করে রিমির পেটে চুমু খেতে যাব তখন রিমির ঘুম ভেঙে যায়৷ আর রিমির পেটে আমার হাত দেখে আর আমার মুখটা রিমির পেটের কাছে দেকে রিমির চোখ রাগে ভরে গেল৷ আর রিমি আমাকে আমার পাওনা টা বুঝিয়ে দিল৷
ঠাসসসসসসসসসস, ঠাসসসসসসসসসসস কে দুইটা চড় মারল৷ আর আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূড়ে সরিয়ে দিল৷
আরো পড়ূন – মিথ্যা অপবাদ – Ekti korun kahini
bangla new koster golpo
পর্ব ৪
আমি এবার উঠে রিমির পাশে গিয়ে বসলাম৷ আর আমার হাত টা রিমির পেটে আলতো করে রাখলাম৷ খুব ভাল লাগছে আমার ছোট বাবুটা রিমির মধ্যে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে৷
আমি আস্তে আস্তে মাথা টা নিচু করে রিমির পেটে চুমু খেতে যাব তখন রিমির ঘুম ভেঙে যায়৷ আর রিমির পেটে আমার হাত দেখে আর আমার মুখটা রিমির পেটের কাছে দেকে রিমির চোখ রাগে ভরে গেল৷ আর রিমি আমাকে আমার পাওনা টা বুঝিয়ে দিল৷
ঠাসসসসসসসসসস, ঠাসসসসসসসসসসস কে দুইটা চড় মারল৷ আর আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূড়ে সরিয়ে দিল৷
আমি গালে হাত দিয়ে রিমির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি৷ আর রিমির চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে৷
রিমিঃ কুত্তা তুই আমার কাছে কেন এসেছিস৷ আমার জীবন টা নষ্ট করে তোর শান্তি হয়নি৷ ছোটলোক একটা তোর কোন মানুষ্বত্যবোধ নাই৷ তুই দেখছিস আমার পেটে 7 মাসের বাচ্চা তারপরও তুই কিভাবে আমার কাছে আসিস হ্যা৷ তোর মত জানোয়ার কে আমার আর বিশ্বাস নেই৷ ছি ছি ছি মনে হচ্ছে আমি এখনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাই সব কিছু ছেড়ে৷ (রেগে চিৎকার করে বলল)
আমিঃ প্লিজ রিমি তুমি বিশ্বাস কর আমার কোন খারাফ উদ্দেশ্য ছিল না৷ আমি আমার সন্তান কে একটু স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম৷ তুমি বিশ্বাস কর আমার কোন খারাফ উদ্দেশ্য ছিল না৷ (করুন কন্ঠে)
রিমিঃ বিশ্বাস করব তোকে তুই ভাবলি কি করে তোর মত একটা ছোটলোক জানোয়ার রাস্তার কুকুর কে বিশ্বাস করব৷ আমার ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে যে একটা সাত মাস গর্ভবতির মায়ের কাছে তোর আসতে একটুও বিবেকে বাধল না৷ আজ থেকে তুই আর এই রুমে থাকতে পারবিনা৷ তোকে আস্তে আস্তে মেনে নিতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু তুই কোনদিন ভাল হবিনা৷ আসলে রাস্তার কুকুর কোনদিন ভাল হয়না৷ (রাগি কন্ঠে বলল)
আমি আর কিছু না বলে বাইরে চলে আসলাম৷ এসে ছাদের চলে আসলাম৷ খুব কষ্ট হচ্ছে আমার৷ রিমি আবার আমাকে ভুল বুঝল৷ আমি তো আমার সন্তান কে একটু স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম৷ আর রিমি আমাকে থাপ্পর মারল৷ নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দুফোটা নোনা পানি বের হল৷ আজকে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা হচ্ছে৷ কিন্তু আমাকে বেচে থাকতে হবে আমার সন্তানের জন্য আমাকে বেচে থাকতে হবে৷ নইলে আমার মত আমার সন্তান ও এমন অবহেলা পাবে৷
আর নিজের আপনজনের কাছ থেকে এমন অবহেলা পেলে সে নিজেও ঠিক থাকতে পারবেনা৷ তাই আমি আমার সন্তান কে নিয়ে এই পরিবার এই শহর থেকে অনেক দূড়ে চলে যাব৷ চাইলেও কেউ আর খুজে পাবে না৷ সারারাত এবাবে ছাদে কাটিয়ে দিলাম৷ রিমির কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে সকাল হয়ে গেছে ঠিক খেয়াল করিনি৷
সকালে নিচে চলে আসলাম৷ এসে সোজা মায়ের রুমে চলে গেলাম৷ দেখি মা বসে আছে৷ আমি মায়ের কাছে গিয়ে মায়ের সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লাম৷
আমিঃ মা কেন তুমি আমার সাথে এমন ব্যাবহার করছ৷ কেন এমন অবহেলা করছ৷ তুমি তো যান আমি অবহেলা একদম সহ্য করতে পারিনা৷ সেদিন রিমি তোমাদের নামে অনেক খারাফ ভাষাই গালাগালি করছিল তাই আমি রাগের মাথাই রিমির সাথে এমন ব্যাবহার করি৷ চাইলে তুমি আমাকে মারতে পার৷ আর যদি না শাস্তি দাও তাহলে তুমি একবার বল যে এবাড়ি থেকে চলে যেতে আমি সব কিছু ছেড়ে চলে যাব৷ আর কোনদিন তোমার এই শয়তান ছেলের মুখ দেখতে দেব না৷
মাঃ তোর সাথে আমার কোন কথা নেই৷ আমি আগেই বলেছি আমার ছেলে সেদিনিই মারা গেছে আমার কাছে৷ যেদিন সে ওরকম একটা নোংরা কাজ করেছিল৷ আর আমি কারো মা না৷ আমার কোন ছেলে নেই৷ তুই যেখানে পারিস সেখানে চলে যা৷ আমার কিছু যায় আসে না৷ (অন্যদিকে ফিরে কথাটা বলল)
আমিঃ ঠিক আছে মা আমি আর কোনদিন তোমাকে মা বলে ডাকবনা৷ আমি চলে যাব সবাই কে ছেড়ে চলে যাব৷ তখন এই শযতান টা চেহারা তোমাকে আর দেখতে হবে না৷ আর কোন অমানুষ তোমাকে মা বলে ডাকবেনা৷ (কান্না করে)
আমি মায়ের রুম থেকে চলে আসলাম নিজের রুমে৷ রুমে ডুকে দেখি রিমি বাথরুমে ফ্রেশ হচ্ছে৷ আমি তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিলাম অফিস যাওযার জন্য৷ যাতে রিমির ফ্রেশ হওয়ার আগে আমি অফিসে চলে যেতে পারি৷
রিমির বাথরুম থেকে বের হবার আগেই আমি অফিসে চলে আসলাম৷ বাইরে থেকে কিছু নাস্তা করে অফিসে প্রবেশ করলাম৷ সারাদিন অফিস করে বিকালে যখন ছুটি হল তখন ভাবলাম এখন বাসাই গেলে৷ রিমি মা হয়ত আমাকে দেখে আবার বিরক্ত হতে পারে৷ তাই একটু পার্কে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত 12 টার সময় বাসাই আসলাম৷
বাসাই এসে অন্য রুমে ঘুমাতে চলে গেলাম৷ আজ আর নিজের রুমে ঘুমাতে যায় নি৷ কারন রিমি আমাকে দেখলে আবার রাগ করবে৷ আবার মাঝরাতে আমি কিছু করব ভেবে সারারাত জেগে থাকতে পারে৷ আর সারারাত জেগে থাকলে আমার বাচ্চা টার ক্ষতি হতে পারে৷
তাই আজ অন্য রুমে ঘুমিয়ে পড়লাম৷ এভাবে আরো 1 মাস চলে গেল এই একমাসে আমি কারও সাথে কথা বলিনি৷ মানে কেউ আমার সাথে কথা বলিনি৷ শুধু বাবা কথা বলত আমার সাথে৷ আর কথা বলবে কিভাবে আমার সাথে এখন কারো দেখা হয় না৷ খুব সকালে উঠে অফিস চলে যাই আর ফিরি অনেক রাত করে৷
তাই কারো সাথে দেখা হয় না৷ আর যদিও ভুল করে মা অথবা রিমির সামনে চলে আসে তখন আমি মাথা নিচু করে চলে আসি৷ আর এই একমাস আমি কোনদিন বাসার কোন খাবার খাইনি৷ হয়ত আমার জন্য রান্না করা বন্ধ হয়ে গেছে৷
একদিন সকালে আমার ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হয়ে গেছে তাই আজ আর সকালে বাসা থেকে বের হতে পারিনি৷ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিস যাওযার জন্য তৈরি হয়ে যেই রুম থেকে বের হব তখন দেখি রিমি আমার রুমের দড়জার সামনে দাড়িয়ে আছে৷
আমি রিমির একসাইড করে চলে আসতে যাব তখন দেখি রিমি আমাকে কি বলতে চাইল৷ আমি শুনেও না শুনার ভান করে চলে আসলাম৷ হয়ত বলতে চেয়েছিল যে কিছু ফল আর কিছু হেলদি খাবার কিনে আনার জন্য বলতে চাইছিল৷
তাছাড়া রিমি আমার সাথে কেন কথা বলবে৷ তাই আমি অফিসে চলে আসলাম৷ সারাদিন অফিস করে অফিস শেষে ফলের দোকানে গিয়ে অনেক ফল মাদার হরলিক্স সব কিছু কিনলাম৷ কিনে বাবার কাছে গেলাম৷
বাবার কাছে ফলের প্যাকেট টা দিয়ে বললাম এই গুলো রিমিকে দিতে৷ বাবা কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইল৷ বাবা সব কিছু জানে যে মা আর রিমি আমার সাথে কথা বলেনা৷ কিন্তু বাবা কিছু বলতে পারেনা৷ কারন দোষ টা তো আমারই ছিল৷
আপনারা পড়ছেন “আপনজনের অবহেলা – Koster bangla golpo.”
তারপর অফিসশেষ করে রাত 11- 30 বাসাই আসলাম দেখি সব রুমেই লাইট অফ মনে হয় সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে৷ আমি আমার রুমে ডুকে কাপড় চেন্জ করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম বাথরুমে৷ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রিমি আমার রুমে খাটের উপর বসে আছে৷
আমি রিমিকে দেখে কিছু টা ভয় পেলাম৷
আমিঃ রিমি তুমি এখানে কোন সমস্যা হয়েছে৷ সমস্যা হলে আমাকে ডাকতে পারতে তুমি কষ্ট করে কেন এলে৷
রিমি ভাবছে আমি এতদিন শুধু শুধু মানুষটাকে খারাফ ভেবেছি কত গগালাগালি দিয়েছি৷ আর সেই মানুষ টা আমার সাথে কোনদিন খারাফ কথা বলেনি এমনকি আমার উপর কোনদিন রাগ পর্যন্ত করিনি৷
আমিঃ রিমি কি ভাবছ তুমি কোন সমস্যা হয়েছে৷ আর আমি তো বাবার কাছে সব কিছু কিনে দিয়েছি৷ কোন কিছু কিনতে ভুলে গেলে বল আমি কাল সকালে ড্রাইভার কে দিয়ে পাঠিয়ে দেব৷
রিমিঃ আহনাফের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসল৷ না কিছু হয় নি সব কিছু ঠিক আছে৷ আপনি রাতে কিছু খেয়েছেন৷ মনে হয় কিছু খাননি চলেন আপনাকে খাবার দিই৷
আমি রিমির কথা শুনে মনে হল আকাশ থেকে পড়লাম৷ রিমি আমাকে খাবার জন্য বলছে খুব অবাক হলাম৷
আমিঃ আমার খাওযা নিয়ে কারো চিন্তা করতে হবে না৷ আর তুমি এত রাত পর্যন্ত জেগে আছো কেন৷ শরীর খারাফ করবে৷ যাও ঘুমিয়ে পড়৷ আর এতদিন যখন কেউ আমাকে খাবার খেতে ডাকেনি৷ আর এখনো না ডাকলে চলবে৷
তুমি যাও ঘুমিয়ে পড় বেশি রাত জাগলে আমার সন্তানের আবার ক্ষতি হতে পারে৷ আর আমি চাইনা আমার জন্য আমার সন্তানের কোন ক্ষতি হোক৷
রিমিঃ আসলে সেদিন রাতে আপনাকে ওভাবে দেকে খুব ভয় আর রাগ উঠেগিয়েছিল তাই আপনার সাথে সেদিন খারাফ ব্যাবহার করেছিলাম৷
আমিঃ এখন আর ওগুলো নিয়ে আমি আর ভাবিনা সব কিছু অভ্যাস হয়ে গেছে৷ এখন আর মন খারাফ হয না৷
তাই বলে আমি চাদর টেনে শুয়ে পড়লাম আর রিমি মুখ টা মলিন করে চলে গেল৷ আর আমি ভাবতে থাকলাম৷ রিমি এতদিন পড়ে আমার সাথে কথা বলল৷ খুব ভাল লাগছে রিমি তাহলে আমাকে ফিল করতে শুরু করেছে৷ কিন্তু আগেরকার কথা মনে পড়তেই সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেল৷
রিমির বলা সেই পুরোনো কথা গুলো মনে পড়তেই আবার আমার মন টা বিষন্নোতাই ছেয়ে গেল৷ আমি তো মাকে কথা দিয়েছি যে সব কিছু ছেড়ে অনেক দূড়ে চলে যাব৷
আর মা আমাকে তার ছেলে বলে মানে না যখন আমি কার জন্য এখানে থাকব৷ তাই সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম৷
আরো পড়ূন – প্রাপ্তির অপ্রাপ্তি (১ম খণ্ড) – প্রেমের দুঃখের গল্প
koster golpo bangla font
পর্ব ৫
আমি রিমির কথা শুনে মনে হল আকাশ থেকে পড়লাম৷ রিমি আমাকে খাবার জন্য বলছে খুব অবাক হলাম৷
আমিঃ আমার খাওয়া নিয়ে কারো চিন্তা করতে হবে না৷ আর তুমি এত রাত পর্যন্ত জেগে আছো কেন৷ শরীর খারাফ করবে৷ যাও ঘুমিয়ে পড়৷ আর এতদিন যখন কেউ আমাকে খাবার খেতে ডাকেনি৷ আর এখনো না ডাকলে চলবে৷
তুমি যাও ঘুমিয়ে পড় বেশি রাত জাগলে আমার সন্তানের আবার ক্ষতি হতে পারে৷ আর আমি চাইনা আমার জন্য আমার সন্তানের কোন ক্ষতি হোক৷
রিমিঃ আসলে সেদিন রাতে আপনাকে ওভাবে দেকে খুব ভয় আর রাগ উঠেগিয়েছিল তাই আপনার সাথে সেদিন খারাফ ব্যাবহার করেছিলাম৷
আমিঃ এখন আর ওগুলো নিয়ে আমি আর ভাবিনা সব কিছু অভ্যাস হয়ে গেছে৷ এখন আর মন খারাফ হয় না৷
তাই বলে আমি চাদর টেনে শুয়ে পড়লাম আর রিমি মুখ টা মলিন করে চলে গেল৷ আর আমি ভাবতে থাকলাম৷ রিমি এতদিন পড়ে আমার সাথে কথা বলল৷ খুব ভাল লাগছে রিমি তাহলে আমাকে ফিল করতে শুরু করেছে৷ কিন্তু আগেরকার কথা মনে পড়তেই সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেল৷
রিমির বলা সেই পুরোনো কথা গুলো মনে পড়তেই আবার আমার মন টা বিষন্নোতাই ছেয়ে গেল৷ আমি তো মাকে কথা দিয়েছি যে সব কিছু ছেড়ে অনেক দূড়ে চলে যাব৷
আর মা আমাকে তার ছেলে বলে মানে না যখন আমি কার জন্য এখানে থাকব৷ তাই সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম৷
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য রওনা হব৷ তখন আবার রিমি আমার রুমে আসল৷ আমি সেদিকে কোন খেয়াল না বললাম৷
এত সকালে ঘুম থেকে উঠছো কেন৷ যাও যেয়ে শুয়ে পড়৷ আর কিছু লাগলে বলতে পার বাবার কাছে কিনে পাঠিয়ে দেব৷
রিমিঃ না মানে আপনি প্রতিদিন খুব সকালে অফিসে চলে যান কেন তাই জানতে আসলাম৷ আর সকালের নাস্তা টুকু করেন না৷ বাবা তো যাই সকাল 9 টার সময়৷ তাহলে আপনি এত সকাল সকাল যাচ্ছেন কেন৷
আমিঃ আমি তোমাকে বলেছি না আমার খাবার খাওয়া নিয়ে কারো চিন্তা করতে মানা করেছি না৷ এই এক বছর যেভাবে খেয়ে আসছি ঠিক এভাবে সারাজীবন খাবার খেতে পারব৷ আর এত সকালে অফিস যায় কেন৷ সেটা তুমি ভাল করেই যান আমাকে আর বলার প্রয়োজন মনে করিনা৷ তুমিই তো বলেছিলে যে আপনার ওই চেহারা যেন আমাকে আর না দেখান৷ তাই যতটা সম্ভব চেষ্টা করি না দেখানোর৷
অবার দেখি রিমি মাথা নিচু করে বসে আছে৷ হয়ত এমন কথা রিমি আমার কাছ থেকে আশা করিনি৷ আমি আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে চলে আসলাম বাইরে৷ নিচে এসে দেখি টেবিলে সব নাস্তা রাখা আছে৷ হয়ত রিমি আমার জন্য তৈরি করেছিল৷
আমি রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু নাস্তা করে অফিসে প্রবেশ করলাম৷ অফিসে কাজ করতে করতে দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেল৷
সবাই লান্স করতে চলে গেছে৷ এমন কি বাবা ও চলে গেছে বাসাই লান্স করতে৷ আর আমি নিজের ডেক্সে বসে আছি৷ তখনি আমার ফোন টা বেজে উঠল৷ আমি রিসিভ করলাম৷ একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে৷ কোন কাজ নেই তাই ফোন রিসিভ করলাম৷
আমিঃ হ্যালো আস্সালামু ওলাইকুম
ফোনের ওপাশ থেকেঃ ওলাইকুম আস্সালাম৷
আমিঃ কে বলছেন আপনি৷
ফোনের ওপাশ থেকেঃ আমি রিমি বলছি আপনি দুপুরের লান্স করতে বাসাই আসছেন না৷
আসলে রিমি আমাকে এই প্রথম ফোন দিল তো তাই নাম্বার আর কন্ঠ চিনতে পারিনি৷ আর তার থেকে বেশি অবাক হলাম যে রিমি আমাকে ফোন করে লান্স করার জন্য বলছে৷
আমিঃ আমি বাইরে থেকে লান্স করে নিয়েছি৷ (মিথ্যা বললাম) আর আমি লান্স করেছি কি না করেছি তা কেউ না ভাবলে খুশি হতাম৷ এতদিন যখন কেউ কোন খোজ খবর রাখেনি তাই এখনও খোজ খবর না রাখলে৷ আমি না খেয়ে মরব না৷
তাই বলে আমি ফোন রেখে দিলাম৷ আর ভাবতে থাকলাম হঠাং করে রিমি এত চেন্জ হল কীভাবে বুঝলাম না৷ সকালে নাস্তা করেছি কিনা৷ দুপুরের লান্স করেছি কিনা৷ সব জানতে চাইছে এর কারন টা কি হতে পারে৷
হয়ত আমার উপর হালকা করুনা করছে৷ কিন্তু আমি কারো উপর করুনা হতে চাই না৷ এতদিন কীভাবে ছিলাম তা একবারো কেউ খোজ খবর নিই নি তাই এতোদিন খোজ নেওয়ার কোন দরকার নেই৷
তারপর আমি উঠে গিয়ে বাইরে থেকে লান্স করে নিলাম৷ তারপর আবার অফিসে কাজে মনোযোগ দিলাম৷ অফিস শেষ হয়ে গেল আর আমি বাইরে বেড হয়ে আমার প্রতিদিনের কাজ করতে থাকলাম৷
মানে কিভাবে সময় অপচয় করে রাত 12 টার সময় বাসাই যাওয়া যাই৷ রাত নয়টা বাজে আমি বন্ধুদের সাথে সিগারেট টানছি আর আড্ডা দিচ্ছি৷ সেই সময় আবার আমার ফোন বেজে উঠল৷
আমি ফোন হাতে নিয়ে দেখি রিমি ফোন দিছে৷ আমি কেটে দিলাম এভাবে বেশ কয়েক বার ফোন দেওয়ার পর আমি রিসিভ করলাম৷
আমিঃ হ্যালো ফোন দিয়েছো কেন৷
রিমিঃ আপনি বাসাই আসবেন না৷
আমিঃ দেড়ি আছে বাসাই যাওয়ার৷
রিমিঃ না মানে আমা……….
আর কোন কিছু বলতে না দিয়ে ফোন কেটে দিলাম৷ তারপর আবার আড্ডাতে মনোযোগ দিলাম৷ তারপর 11 টার সময় বাসাই আসলাম৷ এসে কাপড় চেন্জ করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম৷ ফ্রেশ হয়ে এসে আমার রুমের বেলকনিতে দাড়িয়ে সিগারেট টানছি আর পুরানো কথা ভাবছি৷
আপনি সিগারেট কেন খাচ্ছেন৷ যানেন না এসব খাইলে শরীর খারাফ হয়৷
আমি চমকে উঠলাম পিছনে তাকিয়ে দেখি রিমি কথা গুলো বলল৷
আমিঃ আমি সিগারেট খেয়েই বেচে আছি৷ তাই সিগারেটের বিষয়ে আর কোন কথা না বললে খুশি হব৷
রিমিঃ প্লিজ ওইটা ফেলে দিন কাশি হচ্ছে আমার আর কষ্ট হচ্ছে প্লিজ ফেলে দিন৷
দেখলাম রিমি এক হাত পেটে দিয়ে কাশতে লাগল৷ আমার বুকের মধ্যে কেমন অজনা এক ব্যাথা অনুবহ করলাম৷ কারন রিমিকে যে আমি এখনো অনেক ভালবাসি৷ আর তার মধ্যে গড়ে উঠছে আমার বাবুটা৷ তাই সিগারেট ফেলে দিয়ে৷ রিমির এক হাত ধরে বিছানার উপর বসালাম৷ আর এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলাম৷
আমিঃ এত রাতে না ঘুমিয়ে এখানে কি করছ৷ আর আমার চেহারা দেখাতো তোমার পাপ৷ তুমি আমার রুমে এসেছো আমাকে দেখছো কথা বলছ৷ তোমার পাপ হবে৷ তুমি চলে যাও৷ আর হাত টা রুমে গিয়ে ডেটল দিয়ে ভাল করে পরিষ্কার করে নিবে৷ কারন আমি তো একটা অমানুষ৷ আর একজন নোংরা মানুষ কাউকে স্পর্শ করলে তা ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিবে৷
রিমি আমার দিকে কেমন কান্না কান্না ভাবে তাকিয়ে আছে৷ মনে হয় এখনি কেদে দেবে৷ চোখে পানি জমা হচ্ছে৷
রিমিঃ প্লিজ আমাকে আপনি ক্ষমা করে দেন৷ আপনার সাথে অনেক খারাফ ব্যাবহার করেছি৷ অনেক অবহেলা করেছি প্লিজ মাপ করে দাও৷ (কান্না করে বলল)
আমিঃ তুমি কেন মাপ চাইছো তোমার কোন দোষ নেই৷ সব দোষ তো আমার৷ কারন আমি যে একটা জানোয়ার রাস্তার কুকুর অমানুষ৷ আর সবচেয়ে বড় অন্যায় করেছি তোমার জীবন টা নষ্ট করে৷ তুমি আমাকে মাপ করে দাও তোমার সুন্দর জীবন টা নষ্ট করার জন্য৷ হয়ত তুমি আমার থেকে ভাল কাউকে আশা করেছিলে৷ কিন্তু তোমার জীবনে আমার মত এতটা অমানুষ আসবে এটা তুমি হয়ত আশা করনি৷ (করুন কন্ঠে)
যা হবার হয়ে গেছে তুমি এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়৷ আর তোমার জীবন আগের মত সুন্দর করে দেওয়ার দায়িক্ত আমার৷ তুমি আবার আগের মত চলাফেরা করবে৷ শুধু আমার বাবুটা বাইরে আসতে দাও তোমাকে চিরদিনের জন্য সুখি করে দেব৷
যাও অনেক রাত হয়েছে গেছে বেশি রাত জাগলে শরীর খারাফ করবে৷ তাই ঘুমিয়ে পড়৷
আমি রিমির দিখে তাকিয়ে দেখি রিমি কান্না করছে হয়ত ওর আর বলার কিছু নেই৷ কারন এই কথা গুলো রিমিই একদিন আমাকে বলেছিল৷
তারপর আমি আর একটা সিগারেট ধরিয়ে বেলকুনিতে চলে আসলাম৷ আর রিমি কান্না করতে করতে চলে গেল নিজের রুমে৷
পরেরদিন আবার একই সময়ে বের হয়েগেলাম অফিসের জন্য৷ লান্সের সময় আবার রিমি ফোন দিয়ে বলল৷ যে বাবার সাথে যেন আমি বাসাই আসি লান্স করতে৷ কিন্তু আমি যাই নি কারন আমাকে দেখলে মা আবার বিরক্ত হতে পারে৷
আর আমি চাইনা আমার জন্য মা না খেয়ে থাকুক৷ তাই আমি আর যাইনি৷ কিছুক্ষন পর রিমি আবার ফোন করল৷
রিমিঃ কিব্যাপার আপনাকে না বাবার সাথে বাসাই আসতে বললাম আপনি কেন আসলেন না৷
আমিঃ আমি দুপুরে এখন খাইনা না খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে৷ আর এখন আবার খাওয়া শুরু করলে অভাাসে পরিনিত হবে৷ তাই আমার টা বাদ দিয়ে তোমার টা চিন্তা কর৷
তারপর আমি ফোন বন্ধ করে নিজের কাজ করতে থাকলাম৷ অফিস শেষে আবার আমার আর একটা চাকরি করতে হবে৷ সেটা হল সময় নষ্ট কিভাবে রাত 12 টা প্রর্যন্ত বাইরে থাকা যায়৷
আজ আর ফোন অন করিনি৷ ঠিক 12 টার সময় বাসাই পৌছালাম৷ রুমে ডুকতেই দেখি রিমি হাজির৷
রিমিঃ আপনার ফোন বন্ধ কেন কতবার ফোন দিয়েছি যানেন আপনি৷
আমিঃ কেন এই অমানুষটাকে আবার ফোন দেওয়ার কারন কি৷
রিমিঃ ………(চুপ করে থাকল)
আমিঃ তোমাকে বলেছি না বেশি রাত জাগতে নিষেধ করেছিনা৷ তারপরো কেন রাত জাগ হ্যা৷ রাত জাগলে আমার সন্তান শুধু আমার সন্তান টার ক্ষতি হতে পারে৷ তাই বেশি রাত জাগবে না যাও ঘুমিয়ে পড়৷
রিমি আবার আমার দিকে কাদো কাদো মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে৷ চোখের কোনে পানি জমতে শুরু করেছে৷ রিমি চোখ মুছে বলল৷
রিমিঃ না আসলে ডেলিভারির আর তো বেশি সময় নেই আর একমাস সময় আছে৷ তাই বলছিলাম কি এই এক মাস আমার রুমে ঘুমাবেন৷
আমিঃ কেন তোমার রুমে কেন৷ আর তাছাড়া একটা জানোয়ার কে তোমার রুমে থাকলে তোমার সমস্যা হবে তো৷
রিমিঃ না কোন সমস্যা হবে না৷ আরো ভাল হবে বলা যাই না কখন ডেলিবারি পেইন উঠে যাবে আর রাতে কখন কি লাগে যদি ঠিক মত নিতে না পারি তাই৷ আর পরে যদি বাচ্চার কোন প্রবলেম হয় তাই৷
এবার আমি কিছু বললাম না কারন সবার আগে আমার বাবুটা তারপরে অন্য কেউ৷
তাই রিমির সাথে রিমি রুমে চলে আসলাম৷ রিমি বিছানায় ঘুমালো আর আমি সোফাই ঘুমালাম৷ তারপর সকালে রিমির ঘুম থেকে উঠার আগে অফিসে চলে আসলাম৷
পরেরদিন এভাবে সারাদিন কাজ করে রাতে রিমির রুমে সোফায় শুয়ে আছি৷ তখন রিমি বলল আচ্ছা আমাদের বাবু হলে বাবুর নাম কি রাখবেন৷
আমিঃ আমাদের বাবু মানে শুধু আমার সন্তান ও আর কারো না৷ আমার সন্তান আমার যেইটা ভাল লাগবে সেই নাম রাখব৷ তোমার এই বিষয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে৷ এখন ঘুমাও তুমি৷ (কিছুটা ঝাড়ি দিয়ে)
রিমি এবার কান্না শুরু করে দিল৷ কিছুক্ষন কান্না করতে করতে পরে ঘুমাইপরে৷
এভাবে কেটে যায় একমাস এই একমাসে রিমি অনেক চেন্জ হয়ে গেছে৷ আমার উপর অধিকার খাটানো শুরু করছে৷ কিন্তু আমি রিমি কে সেই সুযোগ দিতাম না৷
প্রতিদিন সকালে নাস্তা করার জন্য ডাক দিত৷ কিন্তু আমি কোন কিছু নালবলে চুপ করে চলে আসতাম৷ এতে রিমি অনেক কষ্ট পেত৷ তারপর দুপুরে লান্স টাইমে প্রতিদিন আমাকে ফোন দেবে৷ আমি কোন ফোন বন্ধ করে রাখতাম আর না হয় ফোন রিসিভ করতাম না৷
একদিন অফিসে কাজ করছি তখনি বাবা আমার কাছে দৌড়ে আসল৷ আর বলল যে রিমিলকে নাকি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ ডেলিভারি পেইন উঠেছে তাই৷
আমি আর বাবা তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আসলাম৷ রিমি কে ডাক্তার OT তে নিয়ে গেছে৷ আর মা বাইরে বসে আছে৷
কিছুক্ষন পর ডাক্তার বেড়িয়ে আসল৷ আর বলল আমার ছেলে হয়েছে আর রিমি ও ভাল আছে৷
আরো পড়ূন – আমার সংসার (১ম খণ্ড) – ভালবাসার সুখ দুঃখের গল্প
sad love story bangla golpo
পর্ব ৬
পরেরদিন এভাবে সারাদিন কাজ করে রাতে রিমির রুমে সোফায় শুয়ে আছি৷ তখন রিমি বলল আচ্ছা আমাদের বাবু হলে বাবুর নাম কি রাখবেন৷
আমিঃ আমাদের বাবু মানে শুধু আমার সন্তান ও আর কারো না৷ আমার সন্তান আমার যেইটা ভাল লাগবে সেই নাম রাখব৷ তোমার এই বিষয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে৷ এখন ঘুমাও তুমি৷ (কিছুটা ঝাড়ি দিয়ে)
রিমি এবার কান্না শুরু করে দিল৷ কিছুক্ষন কান্না করতে করতে পরে ঘুমাইপরে৷
এভাবে কেটে যায় একমাস এই একমাসে রিমি অনেক চেন্জ হয়ে গেছে৷ আমার উপর অধিকার কাটানো শুরু করছে৷ কিন্তু আমি রিমি কে সেই সুযোগ দিতাম না৷
প্রতিদিন সকালে নাস্তা করার জন্য ডাক দিত৷ কিন্তু আমি কোন কিছু নালবলে চুপ করে চলে আসতাম৷ এতে রিমি অনেক কষ্ট পেত৷ তারপর দুপুরে লান্স টাইমে প্রতিদিন আমাকে ফোন দেবে৷ আমি কোন ফোন বন্ধ করে রাখতাম আর না হয় ফোন রিসিভ করতাম না৷
একদিন অফিসে কাজ করছি তখনি বাবা আমার কাছে দৌড়ে আসল৷ আর বলল যে রিমিলকে নাকি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ ডেলিভারি পেইন উঠেছে তাই৷
আমি আর বাবা তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আসলাম৷ রিমি কে ডাক্তার OT তে নিয়ে গেছে৷ আর মা বাইরে বসে আছে৷
কিছুক্ষন পর ডাক্তার বেড়িয়ে আসল৷ আর বলল আমার ছেলে হয়েছে আর রিমি ও ভাল আছে৷ আমার ছেলের কথা শুনে আজ আমি সবচেয়ে বেশি৷ আসলে বাবা হওয়া যে কি আনন্দ আর কেমন অন্য রকম একটা অনুভুতি কাজ করে মনের মধ্যে৷ খুশিতে আমার দুচোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল৷
আমিঃ ডাক্তার সাহেব আমি কি আমার ছেলের সাথে দেখা করতে পারি৷
ডাক্তারঃ হুমমম অবশ্যই দেখা করতে পারেন৷ কিন্তু সবাই প্রথমে নিজের বৌয়ের কথা জানতে চাই আর আপনি নিজের ছেলে কেন৷ একবারো জিজ্ঞাসা করলে না যে আপনার স্ত্রী কেমন আছে৷
ডাক্তারের কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম৷ আর পাশে থাকা মা বাবা সবাই কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে৷
আমি মৃদু হেসে কেবিনে চলে গেলাম৷ আর আমার সন্তানের কাছে গেলাম৷ নিজের ছেলেকে দেখে কেমন যেন নিজেকে খুব বাচ্চা লাগছে৷ পাশে বেডে রিমি শুয়ে আছে সেদিকে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই৷ আমার শুধু আমার ছেলেকে চাই৷
তারপর মা আর বাবা কেবিনে আসল৷ মা রিমির পাশে গিয়ে বসল আর বাবা আমার কাছে এসে আমার ছেলের মাথাই হাত বুলিয়ে দিতে লাগল৷
কিছুক্ষন পর মা বাবা বাইরে চলে গেল৷ আমি এখনো আমার ছেলের কাছে বসে আছি৷ কিছুক্ষন পর রিমি বলল৷
রিমিঃ আমার ছেলেকে আমার কাছে দাও আমিতো এখনও ভালভাবে দেখতে পারিনি৷
আমার এবার মাথায় প্রচন্ড রাগ উঠে গেল৷
আমিঃ কি বললে তোমার ছেলে মানে৷ এটা শুধু আমার ছেলে৷ এর বাবাও আমি মা ও আমি৷ মনে থাকে যেন৷ আর কোন অমানুষের বাচ্চা তোমার ছেলে হয় কিভাবে৷ তুমি একদম ওকে স্পর্শ করবে না৷ আমার ছেলেকে আমি দেখে রাখব৷
তাই বলে আমি রিমি কে কিছু বলতে না দিয়ে বাইরে চলে আসলাম৷ রিমি কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু আমি তার আগেই চলে এসেছি৷ অবশ্য রিমি আমার কথা শুনেকান্না শুরু করে দিয়েছিল৷ কাদুক তাতে আমার কি৷ এর থেকে হাজার গুন কষ্ট আমি পেয়েছি৷ পুরো একবছর আমার কষ্টা তিলে তিলে আমাকে শেষ করে দিয়েছে৷
তারপর বাইরে এসে সব কিছু ঠিক ঠাক করে নিলাম৷ চট্টগ্রামের একটা টিকিট কাটলাম৷ তারপর আমার যা যা লাগে সবকিছু যাবতীয় জিনিস নিয়ে প্যাক করে নিলাম৷ আর দুইটা চিঠি লিখলাম৷ একটা মায়ের জন্য৷ আর একটা রিমির জন্য৷ আজ রাতেই আমি সব কিছু ছেড়ে আমার ছেলেকে নিয়ে এই শহর ছেড়ে চলে যাব৷
তারপর আমি দুপুরের পরে আবার হাসপাতালে গেলাম৷ গিয়ে দেখি রিমির পাশে আমার ছেলে চুপটি করে শুয়ে আছে৷ এতে আমার রাগ টা আরো বেশি হয়ে গেল৷ আমি তাড়াতাড়ি গি়য়ে রিমির পাশ থেকে আমার ছেলেটাকে তুলে নিলাম৷
আমিঃ ওই তোকে না আমি মানা করেছি আমার ছেলেকে স্পর্শ করতে৷ তাও তুই কেন ধরেছিস৷ তুই কি ভুলে গেছিস আগের তার কথা৷ তুই কি বলে গালাগালি দিয়েছিলি আমার আর আমার ছেলেকে৷ তারপরো তুই কিভাবে ওকে কোলে নিস হ্যা৷
রিমিঃ প্লিজ আহনাফ আমাকে ক্ষমা করে দাও৷ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি৷ একটা মা হওয়া যে কত অনন্দের তা আমি যানতাম না৷ প্লিজ আমার ছেলের কাছ থেকে আমাকে দূড়ে সরিযে দিও না৷ তুমি যা বলবে আমি সব শুনব৷ তবুও আমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ো দাও৷ (কান্না করে)
আমিঃ কেন সেদিন মনে ছিল না যেদিন অামার ছেলেকে আর আমাকে জানোয়ার, রাস্তার কুকুর, অমানুষ বলে গালাগালি দিয়েছিলি৷ তুই তো আমার ছেলেটাকে গালাগালি দিয়েছিস৷ কিন্তু তার বয়স মাত্ত দুই মাস৷ তার তখন জন্ম হয়নি তখন তুই গালাগালি দিয়েছিস৷ কোন মা তার নবজাতক ছেলেকে এভাবে গালাগালি দিতে পারে না৷ তাই এর প্রতি তোর কোন অধিকার নেই মনে থাকে যেন৷ (রেগে চিৎকার করে)
তাই বলে আমি ছেলে কে নিয়ে বাইরে একটা চেয়ারে বসে পড়লাম৷ আর এদিকে রিমি অঝর ধারাই কান্না করতে থাকল৷
তারপর বিকাল হতেই দেখি মা বাবা চলে আসল হাসপাতালে৷ আমাকে ছেলে নিয়ে এভাবে বাইরে বসে থাকতে দেখে বাবা আমার কাছে আসল৷
বাবাঃ কিরে কি হয়ে আমার দাদুভাই কে নিয়ে বাইরে বসে আছিস কেন ভিতরে গিয়ে বস৷
আমিঃ বাবা আমাকে ক্ষমা করবেন৷ আমার ছেলেকে আমি দেখতে পারব৷ মা বা রিমি আমার ছেলের উপর কোন অধিকার না দেখালে খুশি হব৷
বাবাঃ দেখ বাবা এতদিন যা হয়েছে সব ভুলে যা৷ আবার নতুন করে শুরু কর তোরা৷ আর তাছাড়া এখন তোরা দুজন না তিন জন৷
আমিঃ বাবা তুমি কি ভুলে যেতে বলছ৷ আমার জীবনের সবচেয়ে খারাফ কষ্টকর 1 বছর ভুলে যাব৷ কোন দিন সম্ভব না বাবা৷ এতোদিন আমাকে যেমন অবহেলা করে এসেছে৷ তেমন আমি চাই না আমার ছেলেটা সবসময় আমার মত অবহেলা নিয়ে বড় হোক৷
বাবা তুমি আমার আর আমার ছেলের নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না৷ তুমি শুধু মায়ের শরীরের দিকে খেয়াল রাখবে৷
তাই বলে আমি আমার ছেলেকে নার্সের কাছে দিয়ে বাইরে চলে আসলাম৷ তারপর সারাদিন বাইরে কাটিয়ে দিলাম৷ আমার চট্টগ্রামের বাস রাত 11-30 টা বেজে৷
তারপর সোজা হাসপাতালে চলে গেলাম৷ গিয়ে দেখি রিমি ঘুমিয়ে আছে আর তার হাতের পাশে আমার বাবুটা ঘুমিয়ে আছে৷ আমি বাবুটাকে কোলে নিয়ে তারপর সেখানে একটা চিঠি রেখে আমার ছেলেকে নিয়ে সোজা বাস স্টান্ডে চলে আসলাম৷
আর আমার মার জন্য যে চিঠি সেটা মা কাল সকালে পেয়ে যাবে৷ তারপর আমি ব্যাগপত্ত নিয়ে বাসে উঠে পড়লাম৷ আর মোবাইলের সিমটা খুলে ভেঙে বাইরে ফেলে দিলাম৷ আজ সবাই কে ছেড়ে অনেক দুড়ে চলে যাচ্ছি৷
হয়ত কোনদিন আর ফিরে আসা হবে না আমার প্রিয় শহর যশোরে৷ খুব কষ্ট হবে মা বাবা কে ছেড়ে৷ কিন্তু কি করব৷ আমার মা আমার সাথে এক বছর কথা বলেনি৷ শুধু অবহেলা পেয়েছি৷ আর রিমি কে তো আমি ভাসবাসাতাম৷
আমি চেয়েছিলাম সবকিছু ভুলে আবার নতুন করে রিমির সাথে সংসার শুরু করব৷ কিন্তু রিমি আমার নবজাতক বাচ্চা কে অবহেলা করছে৷ তার তো কোন দোষ ছিল না৷ তাই আমি আর চাই না অবহেলা নিয়ে বেচে থাকতে৷ তাই অচেনা শহরে চলে আসলাম নতুন করে জীবন শুরু করতে৷
পরের দিন সকালে রিমি ঘুম থেকে উঠে দেখে তার ছেলে নেই৷ আর সেখানে একটা চিঠি রাখা আছে৷
এদিকে সকালে আহনাফের মার কাছে একটা চিঠি পৌছায়ে দিল একটা অচেনা ছেলে৷ আহনাফের মা চিঠি পড়তে লাগল৷
মা তুমি যখন আমার চিঠিটা পাবে তখন হয়ত আমি তোমাদের থেকে অনেক দূড়ে চলে এসেছি৷ নতুন করে জীবন শুরু করতে৷ মা আমি জানি তোমাদের ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হবে৷ কিন্তু তাও আমাকে মানিয়ে নিতে হবে৷ আমি যে একবছর তোমাদের কাছ থেকে অবহেলা পেয়েছি সেটা আমি সহ্য করতে পারতাম না মা জান৷ খুব কষ্ট হত মাঝে মাঝে মনে হত এই পৃথিবী ছেড়ে চিরতরে চলে যায়৷ কিন্তু আমি আমার ছেলের জন্য নিজের ক্ষতি করিনি৷ কারন আমার যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে আমার মত আমার ছেলেটাকে এমন অবহেলা নিয়ে বড় হতে হত৷ আর আপনজন অবহেলা করলে কতটা কষ্ট হয় শুধু আমি জানি৷ তাই আমি তোমাদের ছেড়ে অনেক দূড়ে চলে যাচ্ছি৷ আমি তো তোমার কাছে সেই এক বছর আগে মারা গেছি৷ তাই আর তোমাদের ছেলে বলে পরিচয় দিতে হবে না৷ আর আমার এই পাপি নোংরা চেহারা তোমাকে আর দেখতে হবে না৷ তাই আমি আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক দূড়ে চলে যাচ্ছি মা৷ যেখানে কোন অবহেলা নেই৷ যদি কোনদিন ভুল করে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দিও মা৷
ইতি
তোমার অবহেলার পাত্ত৷
আহনাফের মা চিঠিটা পড়া মাত্তই কান্না শুরু করে দিল৷ আর তাড়াতাড়ি উঠে হাসপাতালে যেতে লাগল৷
এদিকে হাসপাতালে আহনাফের দেওয়ার চিঠি পড়তে থাকল৷
রিমি তুমি হয়ত জাননা তোমাকে আগে দুই বছর যে ভাবে ভালবাসতাম ঠিক সেভাবেই এখোনো ভালবাসি৷ কিন্তু আমার ভালবাসা তুমি বুঝলেনা৷ মনে করেছিলাম জেল থেকে বের হয়ে আবার তোমাকে বিয়ে করে দুজনে সুখি থাকব৷ কিন্তু বিয়ে হল আমরা সুখি হতে পারলাম না৷ তুমি যদি চাইতে তাহলে আমাদের সংসার টা আজ অন্যরকম হত৷ কিন্তু তুমি চাওনি৷ কারন আমি যে একটা অমানুষ জানোয়ার তাই না৷ তুমিই তো একদিন বলেছিলে আমার গর্ভে কোন অমানুষের বাচ্চা ধারন করতে পারব না৷ কিন্তু আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ যে আমার ছেলেটাকে তোমার গর্ভেধারন করার জন্য৷ আর তুমি যেদিন আমাকে ভুল বুঝে থাপ্পড় মেরেছিলে সেদিন যান কত কষ্ট পেয়েছিলাম৷ আর তুমি কি বলছিলে৷ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি সেদিন রাগের মাথায় উল্টাপাল্টা বলে ফেলছি৷ রিমি তুমি কি জান মানুষ রাগের মাথায় সবসময় সত্যি কথা বলে৷ আর তাই সেদিন তুমি যা বলছো হয়ত সব সত্যি৷ আর আমি তোমার জীবন নষ্ট করেছিলাম৷ আজ সেই জীবন থেকে আমি চিরদিনের জন্য আমার ছেলেকে নিয়ে চলে যাচ্ছি৷ তুমিই তো একদিন বলেছিলে তোর মত পাপির চেহারা আমি দেখতে চাইনা৷ তাই আমি তোমার কথা রাখার জন্য চলে যাচ্ছি৷ আর আমার ছেলেকে আর কোনদিন অমানুষ বলে গালাগালি করনা৷ তুমি পারলে যতখুশি গালাগালি আমাকে দিও৷ আমার ছেলেটাকে আমি কেমন ভাবে গড়ে তুলব জানিনা৷ কিন্তু তোমাদের মত অবহেলা করব না৷ যেভাবে তোমরা আমাকে করছো৷ তাই আমি চিরদিনের জন্য তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি কোন এক অজানা শহরে৷ যদি পার আমাকে ক্ষমা করে দিও৷
ইতি
একটা অমানুষ
রিমি আহনাফের চিঠি পেয়ে পাগলের মত কান্না করতে থাকল৷ আর আহনাফ বলে চিৎকার করতে থাকল৷ তখনি আহনাফের মা আসল রুমে৷ আর রিমি আহনাফের মাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করতে থাকল৷ আর বার বার আহনাফ ফিরিয়ে আন আমার ছেলেকে ফিরিযে দাও বলে চিৎকার করে কান্না করতে থাকল৷
আরো পড়ূন – সত্যের আড়ালে – তার অগোচরে গোপন প্রেম
new sad love story
পর্ব ৭
রিমি আহনাফের চিঠি পেয়ে পাগলের মত কান্না করতে থাকল৷ আর আহনাফ বলে চিৎকার করতে থাকল৷ তখনি আহনাফের মা আসল রুমে৷ আর রিমি আহনাফের মাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করতে থাকল৷ আর বার বার আহনাফ ফিরিয়ে আন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও বলে চিৎকার করে কান্না করতে থাকল৷
আর এদিকে আহনাফ তার ছোট ছেলেকে নিয়ে এক অচেনা শহরে চলে আসল৷ কাউকে চিনেনা কোথায় থাকবে আহনাফ নিজেই জানেনা৷
পরেরদিন আমি আমার ছেলেকে নিয়ে একটা চায়ের দোকানে বসে আছি৷ আমি হালকা নাস্তা করে আমার ছেলের জন্য দুধ কিনে তাকে কষ্ট করে খাওয়ালাম৷
অনেক হয়েছে এবার আমার ছেলের একটা নাম রাখতে হবে৷ তাই আমার ছেলের নাম ( আবদুল্লাহ আল সামি) রাখলাম৷ কিন্তু আমি তাকে সামি বলেই ডাকব৷ আপনারাও ডাকতে পারেন সামি বলে৷
তারপর দোকানে আর কিছুক্ষন বসে থাকার পরে হঠাং করে দোকানদার বলল৷ কি ব্যাপার আপনি এতটুকু বাচ্চা নিয়ে এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন৷ আর বাচ্চার মা কোথায়৷
আমিঃ আসলে আমি এই শহরে নতুন তাই কাউকে চিনিনা৷ আর থাকার একটা জায়গায় ও নেই৷ আর বাচ্চার মা নেই৷ আমিই তার মা বাবা৷
তারপর দোকানদার কি যেন ভেবে বলল৷ আপনি চাইলে আমার বাড়ির পাশে একটা ছোট বাড়ি আছে৷ আপনাদের দুজনের থাকার জন্য বেশ ভাল জায়গা৷
আমি দোকানদারের কথা শুনে বেশ খুশি হলাম৷ আমি আর কিছু না ভেবে তার কথাই রাজি হয়ে গেলাম৷ তারপর তিনি আমাকে বাসাটা দেখিয়ে দিয়ে চলে গেল৷ আর বলল আমার বাড়িটা পাশেই আমি আমার মেয়েকে বলে যাচ্ছি৷ আপনার যা যা লাগে সবকিছু যেন সে দেখে নেই৷ আর কোন সমস্যা হলে আমার মেয়েকে বলবেন৷
দোকানদার তাই বলে চলে গেল৷ আর আমি ঘরটা একটু দেখে নিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম৷ মানে ঘর গোছানোর কাজ৷
কিছুক্ষন পর দেখি একটা মেয়ে আসলো রুমে৷
মেয়েটিঃ ওহহহ আপনিই তাহলে তিনি যার কথা বাবা বলে গেল৷
তার মানে ইনিই দোকানদারের মেয়ে হবে হয়ত৷ দেখতে মাশশাল্লাহ বেশ সুন্দর তবে গরিব বলে বেশি সাধারন ভাবে চলাফেরা করে৷ তাই সৌন্দর্যটা বেশি ফুটে উঠছে না৷
আমিঃ জ্বী আমি এই ঘর ভাড়া নিয়েছি৷ আসলে এখানে কাউকে চিনিনা তো তাই আপনাকে আসতে হল৷ আপনি একটু দেখিয়ে দিলেই চলবে৷
মেয়েটিঃ আরে আপনি কোন চিন্তা করবেন না৷ আপনার যা যা দরকার বলবেন আমি দেখিয়ে দেব৷ আর আমাকে আপনি করে না বলে নাম ধরে ডাকলে খুশি হব৷ আমার নাম তনিমা৷ তনিমা বললেই খুশি হব৷
আমিঃ ওহহহহ আচ্ছা নাম ধরেই ডাকব৷
তখনি সামি (আমার ছেলে) কেদে উঠল৷ আর তনিমা বলল৷ এখানে একটা বাচ্চা কান্না করতেছে কোথায়৷ আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে সামি কে কোলে তুলে নিলাম৷ কিন্তু কান্না থামার কোন নামগন্ধই নেই৷
তনিমাঃ এই বাচ্চাটা কার৷ কার বাচ্চা চুরি করে নিয়ে আসছেন৷ বলেন কার বাচ্চা নইলে আমি কিন্তু লোকজন ডাকব আর বলব আপনি একটা বাচ্চা পাচার কারি৷ (রেগে চিৎকার করে)
আমিঃ আমি বাচ্চা চুরি করতে যাব কেন৷ এটা আমার ছেলে৷ আমি ওর বাবা৷ আর আমি কোন বাচ্চা পাচারকারি না বুঝলেন৷
তনিমাঃ তাহলে বাচ্চার মা কোথাই৷ বাচ্চার মাকে তো দেখতে পাচ্ছিনা৷
আমিঃ আমার ছেলের মা নেই সে আমার ছেলেটাকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে৷ এখন থেকে আমিই ওর মা বাবা৷
তনিমাঃ ওহহহহ তা আগে বলবেন তো৷ আর বাচ্চা কেউ এভাবে কোলে নেই দেন আমার কাছে দেন৷
তাই বলে তনিমা আমার কাছ থেকে বাচ্চাটা নিজের কাছে নিয়ে নিল৷ আর সামি কান্না থেমে গেল৷ আসলে বাচ্চারা মাতৃক্রোড়ে বেশি মানাই৷
তনিমাঃ আচ্ছা আপনি ঘরটা গোছান আমি আপনার ছেলেকে দেখছি৷
তাই বলে তনিমা সামি কে নিয়ে বাইরে চলে গেল আর আমি ঘরটা গোছানো শুরু করলাম৷ ঘর গোছানো শেষে আমি বাইরে গিয়ে দেখি সামি তনিমার কোলে অারামে ঘুমিয়ে আছে৷ দেখে খুব ভাল লাগল৷ কারন সারাটা দিন বাসের মধ্যে ভাল ভাবে ধুমাতে পারিনি৷
আমিঃ দেন সামি কে আমার কাছে দেন রুমে শুইয়ে দিয়ে আসি৷
তনিমাঃ আপনার কাছে দিলে আবার ঘুম ভেঙে যাবে আমি নিয়ে যাচ্ছি চলেন৷
তারপর তনিমা সামি কে বিছানায় রেখে চলে আসবে তখন বলল৷ আচ্ছা আপনার নাম টাই তো জানা হল না৷
আমার নাম আহনাফ হাসান৷ আমাকে আহনাফ বলে ডাকলেই হবে৷
ওহহহ আচ্ছা দুপুরে আমাদের বাসাই খাবেন৷ বাবা বলে গেছে যেন দুপুরের খাবার যেন আমাদের বাসাই খাই৷
আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে ইশারা করে হ্যা বললাম৷ তারপর আমি নিজের ঘরে চলে আসলাম৷ আর কিছু টুকটাক কাজ করে নিলাম৷
আসার সময় কিছু টাকা নিয়ে এসেছিলাম এখন আপাতত এই টাকা দিয়ে চলতে হবে৷ আর কিছুদিনের মধ্যে একটা চাকরি জোগাড় করতে হবে৷ কিন্তুু আমি চাকরি করতে গেলে সামি কে দেখবে৷
তারপর আমি দুপুরের সময় বসে আছি তখনি তনিমা আমার জন্য খাবার নিয়ে আসল৷ আর সামির জন্য ফিডারে করে দুধ নিয়ে আসলো৷
আপনি আবার কষ্ট করে নিয়ে আসলেন কেন আমাকে বললে আমি গিয়ে নিয়ে আসতাম৷
তা কি করে হয় আপনি তো আমাদের মেহমান তাই আপনার ভালমন্দ দেখার সব দায়িক্ত আমার৷
তারপর আমি তনিমার কাছ থেকে দুধের ফিডার টা নিয়ে সামির দুধ খাওয়াতে যাব৷ তখন তনিমা বলল এসব কাজ আপনাদের না৷ এসব কাজ আমাদের তাই আপনি খেয়ে নেন৷ আমি সামি কে দুধ খাওয়াচ্ছি৷
তারপর আমি দুপুর খাবার খেতে লাগলাম৷ আর তনিমা সামি কো কোলে তুলে খুব যন্ত করে খাওয়াতে লাগল৷
মনে হচ্ছে সামি তার মায়ের কোলে দুধ খাচ্ছে৷ আর তনিমা মনে হচ্ছে তার নিজের ছেলেকে কোলে তুলে যন্ত করে দুধ খাওয়াচ্ছে৷
এভাবে চলছিল আমাদের দিন গুলি৷ এখন আমার থেকে তনিমা সামি কে বেশি খেয়াল করে খুব আদর করে সামি কে৷ সামি যেন তার নিজের মাকে পেয়েছে৷
আর তনিমা আমাকেও বেশ কেয়ার করে৷ আর হ্যা তনিমার মা বেচে নেই৷ তনিমার বাবা সারাদিন চায়ের দোকানে কাজ করে৷ আর তনিমা সারাদিন সামি কে নিয়ে পড়ে থাকে৷
আমি কিছুদিন ধরে ভাবছি আমি একটা চাকরি করব৷ কারন বাড়ি বসে থাকতে সবসময় ভাল লাগেনা৷ আর এখন সামিকে নিয়ে বেশি চিন্তা করিনা৷ কারন সামি দেখাশুনা করার জন্য তনিমা আছে৷
কারন আমার থেকে তনিমা সামি কে বেশি দেখাশুনা করে৷ প্রাই সবসময় সামি তনিমার কাছে থাকে৷ আর তনিমা কেমন যেন সবসময় আমাকে কেয়ার করে৷ সবসময় খোজ খবর নেই৷ কখন কোনটা লাগবে সবকিছু তনিমা নিয়ে আসে৷
তারপর আমি কিছুদিনের মধ্যে একটা চাকরি পাই৷ আর পরশু চাকরিতে জয়েন্ট করতে হবে৷
আমিঃ তনিমা শোন বলছি আমি একটা চাকরি পাইছি৷ আর ভাছি চাকরি টা করব৷ কিন্তু সামিকে দেখে রাখবে কে৷ তাই তুমি যদি সামি কে একটু দেখে রাখতে৷
তনিমাঃ তো আমাকে বলছেন কেন যান না চাকরি করেন৷ আর এতোদিন সামি কে মনে হয় অন্য কেউ দেখে রাখছে৷ যে আজ আমাকে বলছে যে দেখে রাখতে৷ এতোদিন অন্য মানুষ দেখে রাখছে৷ আমি না হয় এখন দেখে রাখব৷ (কিছুটা অভীমানি সুরে)
আমিঃ আসলে আমি কথা টা ওভাবে বলতে চাইনি৷ আমার থেকে তো তুমি ওকে বেশি দেখাশুনা কর৷ তাই তোমাকে একটু বললাম এখন তো আমি সেই সকালে যাব আর ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে তাই বললাম আর কি৷
তনিমাঃ আপনি কোন চিন্তা করবেন না৷ সামি কে আমি ভালভাবে দেখে রাখব৷ আর সামি তো আমারই ছেলে নাকি৷
আমিঃ কি বললে সামি তোমার ছেলে মানে৷
তনিমাঃ কইইই কখন বললাম আমিতো বলছি সেতো আমার ছেলের মতোই৷
আমিঃ ওহহহহ ঠিক আছে৷
কিছুদিন ধরে দেখছি তনিমা কেমন যে সবসময় মনে মনে কি সব বলে৷ আর কেমন সবসময় আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে৷ আমি বুঝতে পারছি তনিমা আমাকে ভালবাসতে শুরু করেছে৷ কিন্তু এটা যে কোনদিন সম্ভব না৷ কারন আপনারা তো সবই জানেন৷ কিন্তু তনিমা তো আর জানেনা৷
তবে আমি বুঝতে পারছি তনিমা কে ছাড়া সামি লালন পালন করা সম্ভব না৷ আর তনিমা কেমন যেন সামি নিজের ছেলের মত দেখাশুনা করে৷ আর তনিমা মেয়েটা অনেক ভাল৷ কোন অহংকার নেই তার মধ্যে৷
তারপর আমি অফিস জয়েন্ট করলাম৷ তনিমা এখন আমাকে প্রতিদিন সকালে সবকিছু গুছিয়ে দেয়৷ সকালে উঠে নাস্তা তৈরি করে দেবে৷ তারপর সন্ধ্যার পর নিজের স্বামীর মত করে রাতের খাবার নিয়ে অপেক্ষা করে৷
কিন্তু তনিমা যা ভাবছে তা কোনদিন হবার নয়৷ তনিমাকে আমার সব কিছু বলতে হবে নইলে পরে অনেক বড় সমস্যা হতে পারে৷
তাই ভাবলাম তনিমাকে সবকিছু বলে দেব৷ আমি সকালে অফিস যাচ্ছি তখন তনিমার বাবা আমাকে ডাকদিল৷ আমি তনিমার বাবার কাছে গিয়ে সালাম দিলাম৷ তনিমার বাবা সালামের উত্তর নিয়ে বলল৷ যেন রাতে তাদের সাথে একসাথে রাতের খাবার খাই৷ আর কিছু কথা আছে তাই রাতে একজায়গাই কথা টা বলবে৷
আমি এত কিছু না ভেবে অফিসে চলে আসলাম৷ অফিস শেষে রাতে বাসাই ফিরলাম৷ ফ্রেশ হয়ে তনিমার বাবার সাথে একসাথে খেতে বসলাম৷ তখন তনিমার বাবা বলল৷
তনিমার বাবাঃ দেখ আহনাফ বাবা তুমি যেদিন থেকে এখানে এসেছো তুমি দেখছো আমার মেয়েটা কেমন৷ আর আমার মেয়েটা তোমার ছেলেকে নিজের ছেলের মত লালন পালন করে৷ তুমিই তো সব জান৷ আর আমার মা মরা মেয়ে তাকে কোনদিন কষ্ট দিইনি আমি৷ আর মেয়ের কষ্ট হবে বলে আমি আর বিয়ে করিনি৷ তুমিই তো সব জান৷
আর সামির জন্য একটা মা দরকার৷ আর তুমি কতদিন একা একা থাকবে তাই বলছিলাম কি৷ আমার মেয়েকে তুমি বিয়ে করে নাও বাবা৷ খুব টেনশন হয় বাবা বৃদ্ধা হয়ে গেছি কখন কি হয়ে যায় বলা যাই না৷
আমি তনিমার বাবা হিসাবে বলছিনা৷ আমি তোমার ভালোর জন্য বলছি৷
আমিঃ আংকেল কি বলছেন এসব আর আমি তনিমাকে কোনদিন ওই চোখে দেখিনি৷ আর হ্যা তনিমা মেয়েটা অনেক ভাল৷ আমার ছেলেকে নিজের ছেলের মত ভাল বাসে আর আমারো খুব যন্ত নেই৷ কিন্তু এটা সম্ভব না৷
কথা টা বলার সাথে সাথে তনিমার দিকে তাকালাম দেখি তনিমার চোখদিয়ে অঝর ধারাই কান্না করতে করতে বাইরে চলে গেল৷ তনিমা মনে হয় আমাকে ভালবাসে আর তনিমা মনে হয় আমার কাছ থেকে এ কথা আশা করিনি৷
আংকেলঃ তাহলে কেন তনিমাকে বিয়ে করতে পারবেনা৷ কি সমস্যা বল আমি দেখছি৷
আমিঃ অনেক সমস্যা আছে আংকেল৷ আপনি আমার পুরো কাহিনি জানেন না৷ কেন আমি ছোট একটা বাচ্চা নিয়ে কেন এক শহর থেকে অন্য শহরে চলে আসলাম৷ আমার একটা পুরোনা অতিত আছে৷ আর সেই অতিত শুনলে আপনি আর আমার সাথে আপনার মেয়েকে বিয়ে দিবেন না৷
আংকেলঃ তোমার একটা অতিত আছে৷ কই তুমি আমাকে তো আগে বলনি৷
আমিঃ তখন বলার মতো পরিস্থিতি ছিলনা তাই বলিনি কিন্তু আপানাদের কাছ থেকে আর লুকাবো না সব বলব আজ৷
তারপর আমি তনিমা কে ডাকলাম আর আমার অতিতের পুরো কাহীনি বলতে থাকলাম৷
লেখা – শাহজান সিরাজ
চলবে…
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “আপনজনের অবহেলা – Koster bangla golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আপনার গল্প গুলো অনেক ভালো