Abegi Valobashar Golpo

সে কি ফিরে আসবে? – Abegi Valobashar Golpo

পর্ব ৬

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অবনীকে ফোন দিলাম।
ও রিসিভ করে ঘুমঘুম গলায় বলল, হ্যালো..

  • কি ব্যাপার মহারাণী? আজ ফোন দিলেন না যে?
  • আসলে আমি ঘুমাচ্ছিলাম।তোমার ফোন পেয়ে ঘুম ভাংলো।
  • ওহ আচ্ছা আচ্ছা। ঘুমাও তাহলে।
  • উহু,বলো। কেমন আছো?
  • খুব ভালো গো।
  • কখন উঠলে ঘুম থেকে?
  • এইমাত্র, উঠেই ফোন দিলাম।
  • আজ খুব আরাম করে ঘুমিয়েছি। কেন বলোতো?
  • কেন?
  • সুখে।তোমার পরশের সুখের আবেশ আমাকে অনেক শান্তি দিয়েছে। এত শান্তির ঘুম আমি কখনো ঘুমাইনি।
    আমি হেসে বললাম, ভালো তো। আমিও তো এত শান্তির ঘুম কখনো ঘুমাইনি। তো ম্যাডাম, এখন তো নয়টা বাজে প্রায়।আমার অফিসের টাইম হয়ে এলো। ফ্রেশ হয়ে অফিসে বেরোতে হবে।
  • ওহ হ্যা। যাও বের হও তাড়াতাড়ি।
  • আর তুমি?
  • আমিতো ঘুমাচ্ছি।
  • ঘুমাবা? আজই কিন্তু লাস্ট দিন।এরপর আর রিক্সায় একসাথে যেতে পারবো না। তোমার আব্বু আজ চলে আসবে।
    অবনী বলল,উম ভূলেই গেছিলাম।আচ্ছা আমিও রেডি হয়ে নিচ্ছি।তারপর আসছি। তুমি বের হও।খেয়ে নিও অবশ্যই।
  • তুমিও খেয়ে নিও অবনী।

এরপর তাড়াতাড়ি গোসল সেরে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলাম।অবনী রিক্সায় বসে আছে। আমাকে দেখে হাসল।আমি গিয়ে রিক্সায় উঠলাম।
ও একটু কাছে সরে এসে বলল, এত শুকনা লাগছে কেন?

  • তুমিও না। রোজ রোজ এক কথা। গতরাতেই তো দেখা হলো। একদিনে কেউ শুকিয়ে যায় বুঝি?
  • যায়না আবার? তুমি দিনদিন খুব শুকনা হয়ে যাচ্ছো।

আমি হাসলাম ওর কথা শুনে। মেয়েটা আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করে জানতাম না তো। বললাম,

  • আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করলে আপনি ও শুকিয়ে যাবেন ম্যাডাম।
  • তোমাকে নিয়ে চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক। যাই হোক, নতুন শার্ট পড়ো নি কেন?
  • ইস! মিস্টেক হয়ে গেলো।
  • আচ্ছা,রাতে কিন্তু নতুন শার্ট পড়ে আসবা বাসার সামনে।
  • তুমি শুধু বারান্দা থেকে তাড়িয়ে দাও, কখনো তো ভিতরে নিয়ে গেলে না।
    অবনী লজ্জা পেয়ে বলল,আচ্ছা আজ যেও।
  • সত্যি!
  • হুম সত্যি। বারান্দা দিয়ে এসে সিরি তে উঠবা, তারপর সোজা উপরতলার চার নম্বর রুমটায়।
  • যদি কেউ দেখে ফেলে?
  • তাহলে আর কি? চোর চোর বলে ধাওয়া করবে।
  • হা হা, তাহলে উপায়? অন্য ব্যবস্থা নাই?
  • আছে, বাসার পিছন দিক দিয়ে পাইপ বেয়ে উঠে আসতে হবে। পারবা?
  • একবার দেখতে হবে পারবো কিনা।

অবনী মুচকি হেসে বলল, আজ তো ভাইয়া মিটিং এ গেছে। টায়ার্ড হয়ে ফিরবে। ভাইয়া ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সহজে ভাঙে না।তুমি আজ বাসার ভিতর দিয়েই এসো।

  • ওকে মহারাণী। আপনার যা হুকুম হয়।
  • এবার অফিসে যাও, সাবধানে থেকো কেমন?
  • তুমিও… টেক কেয়ার।

অবনী আমাকে অফিসের সামনে নামিয়ে দিয়ে রিক্সা নিয়ে চলে গেলো। আমি ওকে বিদায় জানিয়ে এসে অফিসে বসলাম। মনে অন্যরকম ভালো লাগার ছোঁয়া। গতরাতের ব্যাপার টা এখনো মনে সুখ এনে দিচ্ছে। ভালোবাসার স্পর্শ এত সুন্দর হয় আমি জানতাম না।
অবনী কিছুক্ষণ বাদেই ফোন করলো। আমি রিসিভ করর বললাম, ক্লাস নেই?

  • ক্লাসেই যাচ্ছি।কেন যেন কিছুই ভালো লাগছে না।বারবার তোমার কথাই মনে পড়ছে।
    আমি হাসলাম।আমার ও তো বারবার ওর কথাই মনে পড়ছে।কি অদ্ভুত টানা দুটি মনের!

অবনীর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেই রেখে দিলাম।ব্যস্ত হয়ে পড়লাম অফিসের কাজে।সারাদিন কাজ নিয়েই পড়ে রইলাম। তবুও বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল অবনী কে।আর ওর সেই মিষ্টি স্পর্শকে! খুব মিস করছি পাগলি টাকে!
দুপুরবেলা লাঞ্চের সময় একবার কথা বললাম অবনীরর সাথে। ও নিজেও খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছে বুঝতে পারছি।আমিও যতটা পাগল হয়ে যাচ্ছি,ও ও ঠিক ততটাই হয়েছে বোঝা যাচ্ছে।
বললাম, অবনী তুমি ঠিক আছো?

  • হ্যা, কেন?
  • আমার তো মনে হয় ঠিক নেই।
  • কেন মনে হলো?
  • কোথাও কিছু একটা ভাংছে বোধহয়।
    অবনী লজ্জা পেয়ে বলল,তুমিও না।যাও রাখলাম।

ও লজ্জা পেয়ে ফোন রাখলো।আমি জানি বুকটা কিভাবে ফাটছে দুজনের। একে অপরকে সত্যিই অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।
এরপর মনোযোগ দিয়েই কাজ করলাম। অফিস শেষ করে বাসায় ফিরে এলাম। রোজকার মত একটু ফোনে কথা বলেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
আজ খুব টায়ার্ড ছিলাম বলে আর ঘুমই ভাংতে চাইলো না।বুঝলাম ও না কিছু।অবনী ফোন দিলো ঠিক সাড়ে এগারো টায়। অভিমানী কন্ঠে বলল,ভেবেছিলাম আজ তুমি একাই জাগবে।

  • সরি,
  • তাড়াতাড়ি আসো এখন।

আমি আর এক মুহূর্ত ও দেরি করলাম না। তাড়াতাড়ি বের হয়ে ওর বাসায় চলে আসলাম। অবনী দরজা খুলে দিলো। তারপর আমাকে নিয়ে গেলো ওর রুমে।
অবনী একটা নীল রঙের স্যালোয়ার কামিজ পড়েছে। দারুণ লাগছে আজ ওকে। এক্সট্রা কি সেজেছে বুঝলাম না।তবে খুব অপূর্ব দেখাচ্ছে।
ও একটা ফ্লাক্স থেকে গরম কফি ঢেলে দিলো। কফিতে চুমুক দিতে দিতে দুজনে আস্তে আস্তে গল্প করতে লাগলাম।
ও বলল,শার্ট টা তোমায় মানিয়েছে বেশ।

  • তোমার পছন্দ বলে।
  • উম, তোমাকে সব ড্রেসেই মানায়।
  • তাই নাকি!

অবনীর চোখে চোখ পড়তেই ও চোখ নামিয়ে নিলো। কফি খাওয়া শেষ করে ওর দিকে তাকালাম। অবনী আমার একদম কাছে বসে আছে।আমার ডানপাশে। ও একটু একটু করে কাছে এগিয়ে এলো। আমিও একটু কাছে এগিয়ে গেলাম ওর।
অবনী আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার কাঁধে মাথা রাখলো। আমি আড়চোখে দেখছি ওর ঠোট কাঁপছে। এত কাছ থেকে এত সুন্দর ঠোট জোড়া দেখবো ভাবতেও পারিনি! কি সুন্দর আর মিষ্টি। অবনী বারবার নিচের ঠোট টা কামড়ে ধরছে।

আমি অজান্তেই একটা আঙুল দিয়ে ওর ঠোট ছুঁয়ে দিলাম কেপে উঠল অবনী। আমি কেমন যেন পাগল হয়ে যাচ্ছি। ওকে এত নেশাভরা দেখাচ্ছে কেন? নেশা লেগে যাচ্ছে চোখে।
একটু এগিয়ে এসে দুহাতে ওর মুখটা ধরে কাছে টেনে নিয়ে আলতো করে ওর ঠোঁটে ঠোট রাখলাম। অবনীর ঠোট এতটা মিষ্টি যা বলার মত না। আলতো করে একটু চুমু দেয়ার পর ছেড়ে দিতে যাবো এমন সময় অবনী একটা কামড় বসিয়ে দিলো।
আমি ওর মাথাটা ছেড়ে দিলাম।তাকিয়ে দেখি অবনী লজ্জায় চোখ খুলছে না। বন্ধ করেই আছে।আমি একটা হাত এর কোমরে হাত দিয়ে ওকে কাছে টেনে নিলাম।
অবনী এবারে চোখ খুলে আমার বুকে মাথা রেখে বিড়বিড় করে কি যেন বলল। আমি বুঝতে পারলাম না সে কথা। বললাম, কি গো?

  • আই লাভ ইউ।
    বলেই আমার গলায় মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো। ও কি কাঁদছে?
    অবনী কে ছাড়াতে গেলাম কিন্তু ও আরো শক্ত করে চেপে ধরলো আমায়।তারপর আমার গলায় ঠোট ছুঁইয়ে দিতে লাগলো। আমি হারিয়ে যাচ্ছি সুখের অতলে! এত সুখ কেন ওর স্পর্শে?
    অবনী আমার গলায় অসংখ্য চুমু দিলো। তারপর আলতো করে ঠোট ছুঁয়ে দিলো আমার গলায়,কানের নিচটাতে।আমিও পাগলের মত ওকে জাপটে ধরে আবারো ঠোটে একটা চুমু দিলাম।জানিনা আজ কি হয়েছে দুজনের! কোন মাদকতায় মাতাল হয়ে যাচ্ছি দুজনে!

অবনী আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মাথা রাখলো।আমি ওকে শক্ত করে চেলে ধরলাম আমার বুকে।ও বুকে মাথা দিয়ে দুহাতে খামচি দিয়ে ধরলো আমার পিঠে।
আমিও ওকে গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে চেপে ধরে আছি। সুখের ভেলায় ভেসে যাচ্ছি দুজনে।আমি চোখ বন্ধ করে আছি। আবেশে চোখ খুলতে পারছি না, অবনীও চোখ মেলছে না।শুধু জড়িয়ে ধরছে আমায়।আরো নিবিড় ভাবে ধরে ফেলছে।

পর্ব ৭

অবনীকে বুকে জড়িয়ে রাখলাম অনেক্ষণ।এরপর ও আস্তে আস্তে মুখ তুলে আমার দিকে তাকাল। একেবারে লজ্জায় ওর ছোট্ট মুখটা লাল বর্ণের হয়ে উঠেছে। ও ভালো ভাবে চোখ ও মেলছে না।
আমি বললাম, কি গো আমার লজ্জাবতী লতিকা। কি ভাবছো?

  • উহু,কিছুনা।
    কথাটা বলেই অবনী আবারো আমার বুকে মুখ গুঁজে দিলো। আমিও সুখের পরম আবেশে ওকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম। মনেহচ্ছে এত সুখ আর পৃথিবীর কোথাওও নেই। যতটা অবনীকে বুকে ধরে রাখলে অনুভব করছি। আমি সত্যিই আজ বড্ড খুশি!

অবনী বলল,তোমার বুকে এত শান্তি কেন স্নিগ্ধ?

  • সত্যি!
  • হ্যা। এত সুখ আর এত প্রশান্তি ইচ্ছে করে হাজার বছর ধরে রাখি।
  • রাখো, মানা করেছে কে?
  • রাখবো তো। তোমাকে আর কোথাও যেতে দিবো না।
    অবনী বুকের ভিতরে মিশে যেতে চাইছে। আমি ওকে ধরে আবেশে চোখ বুজে রইলাম। এভাবে কতক্ষণ কেটে গেলো জানিনা। অনেক্ষণ পর অবনী মাথা তুলে আমার দিকে তাকাল।
    বলল,কয়টা বাজে?

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম, ১ টা।

  • সেকি! এত রাত হয়ে গেছে?
  • হুম। সত্যিই তো অনেক রাত হয়ে গেছে। বুঝতেই পাইনি।
  • আচ্ছা তাহলে তুমি বাসায় যাও এখন।
  • যেতে ইচ্ছে করছে না।
  • আমার ও তো তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু যেতে তো হবে। যাও প্লিজ।
    আমার ইচ্ছে করলো ওকে বলি, না গেলে হয়না? কিন্তু সেটা বলতে পারলাম না। বললাম, আচ্ছা যাচ্ছি। তুমি নিজের খেয়াল রেখো।
  • তুমিও রেখো। আর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেও।
  • আচ্ছা ঠিক আছে। তুমিও…

অবনী কে রেখে বেড়িয়ে আসলাম। দ্রুত চলে এলাম সেখান থেকে। বাসায় ফিরেই ওকে কল দিয়ে জানালাম বাসায় এসে গেছি। ও বলে দিলো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে। তারপর ফোন রেখে দিলো। কিন্তু ঘুমাতে বললেই কি আর ঘুম আসে? এত সুখের পর, ওকে এত কাছে পাওয়ার পর দুচোখের সব ঘুম উধাও হয়ে গেছে। এখন ওকে কাছে পেতে খুবই ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে আবার ওর কাছে চলে যাই। কিন্তু তা তো সম্ভব না।
অনেক কষ্ট করেও ঘুম এলো না। সারারাত জেগেই রইলাম। একেবারে ভোরবেলা একটু ঘুম এলো চোখে।

ঘুম ভেঙে গেলো অবনীর ফোনের শব্দে। রিসিভ করে কানে ধরতেই ও বলল,আরে ঘুমাচ্ছো নাকি এখনো? তাড়াতাড়ি ওঠো।

  • কেন?
  • কেন আবার? সাড়ে নয়টা বাজে। অফিসে যাবা না? দশটায় না তোমার অফিস?
  • সেকি! এত দেড়ি তে ফোন দিলা কেন?
  • আমি নিজেও ঘুমাচ্ছিলাম।
  • আচ্ছা আমি তাহলে রেডি হয়ে অফিসে যাচ্ছি। তুমি আজ একাই চলে যেও কেমন?
  • ঠিক আছে যাও। উঠো তাড়াতাড়ি প্লিজ।
    এরপর আমি দ্রুত উঠে রেডি হলাম।তারপর সিএনজি নিয়ে অফিসে চলে আসলাম।

অফিসে পৌছে ফোন দিলাম অবনীকে।
ও রিসিভ করে বলল, গেছো?

  • হ্যা। তুমি কি করছ?
  • আমিও রেডি হচ্ছি।
  • আজ আমাদের দেখা হলোনা সকালে।ধেৎ ভাল্লাগেনা।
  • অর্ধেক রাত অব্দি তো আমার সাথেই ছিলা। তবুও মন ভরেনি?

আমি হেসে বললাম, সারাজীবন প্রত্যেকটি রাত একসাথে থাকলেও মন ভরবে না রে পাগলী।

  • হুম তাও ঠিক। তুমি খেয়ে বেড়িয়েছো?
  • না, খাবার সময় পেলাম কখন?
  • তাহলে? খাবা না?
  • এখন না। পরে খাবো
  • না প্লিজ এখুনি খেয়ে নাও। আমার সাথে যে দুই মিনিট কথা বলবা এইটুকু সময়ে নাস্তা খাওয়া হয়ে যাবে। প্লিজ স্নিগ্ধ বাবুটা খেয়ে নাও।
    আমি হেসে বললাম, তুমি এত ভালো কেন?
  • যাও তো। পাজিটা খেয়ে নাও তাড়াতাড়ি।
    অবনী ফোন রেখে দিলো। কিন্তু আমিতো জানি ও সত্যিই কত ভালো একটা মেয়ে। আমার কত খেয়াল রাখে, কত ভালোবাসে আমায়!

বাইরে এসে নাস্তা করে নিয়ে তাড়াতাড়ি অফিসে চলে আসলাম। এরপর সারাদিন মনোযোগ দিয়ে কাজ করলাম।
অবনী কে ফোন দিলাম একদম বিকেলবেলা। কয়েক মিনিট কথা বলার পর আবারো কাজে মন দিলাম।
এভাবে ই সময় চলে যেতে লাগলো। অফিস থেকে বাসায় ফিরে ঘুম দেই। অবনী ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়ে অনেক্ষণ ফোনালাপ করি। আবারো রাতের খাবার খেয়ে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে যাই।
অফিসে যাওয়ার পথে ওকে একবার দেখে যাই। আমি রাস্তায় থাকি আর ও বেলকুনিতে এসে দাঁড়ায়।এভাবেই দিন চলতে লাগলো আমাদের। একে অপরকে গভীর ভাবে ভালোবাসতে শুরু করলাম।

এক সপ্তাহ হয়ে গেলো। অবনী ফোন দিয়েই বলল, কেমন আছো স্নিগ্ধ মশাই?

  • ভালো, তুমি?
  • ভালো না।
  • কেন?
  • এরপর আর তোমার সাথে কথা হবেনা। তাই।
  • মানে!
  • শর্তের কথা ভূলে গেছো নাকি? শর্তে ছিলো এক সপ্তাহ আমরা কথা বলার পর এক মাস যোগাযোগ থাকবে না।
  • সেকি! কবে?

সত্যিই এই কদিনের সুখের আবেশে আমি শর্তের কথা ভূলেই গেছিলাম। কিন্তু সত্যি যদি তাই হয়,আমিতো নির্ঘাত মরে যাবো। অবনীর সাথে কথা না বলে থাকতেই পারবো না আমি। এটা কিছুতেই হতে পারেনা।কিছুতেই না।
কিন্তু অবনীককে বুঝানো দায় হলো। ওকে যতই বুঝাই আমি থাকতে পারব না, অবনী ততই বেকে বসে।একসময় বলল,সামান্য এইটুকু কষ্ট সহ্য করতে পারবা না? কোনো বড় সমস্যা হলে কিভাবে ম্যানেজ করবা?
আমিও জেদ করেই বললাম, ঠিক আছে আমি আর ফোন দিবো না।ফোন রাখো।

আর কোনো কথা না বলেই ফোন রেখে দিলাম। আমিতো জানি অবনী আমাকে অনেক ভালোবাসে।ও কিভাবে থাকবে আমায় ছাড়া? ও যদি থাকতে পারে তাহলে আমাকে ও থাকতে হবে।
জেদ চেপে রেখেই অফিসে কাজ করলাম। লাঞ্চের সময় খুব মিস করলাম অবনীকে। প্রতিদিন এই সময়ে আমি অবনীকে কল দিয়ে কথা বলতাম।আজ আর সেটা হলোনা। খুব মন খারাপ হয়ে গেলো আমার।
এরপর অফিস থেকে বের হয়ে একটা রিক্সায় দুজন ছেলেমেয়ে কে হাসাহাসি করতে দেখে আমার আবারো অবনীকে মনে পড়ে গেলো। কেন যে ও এতটা নিষ্ঠুর হতে পারলো! সেদিনের ওই রাতে আমাকে এত কাছে পেয়েও আজ এভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে পারলো? ও কি আমাকে ভালোবাসে না? কেন এই নিষ্ঠুরতা করলো?

মেয়েটা যতটা ইমোশনাল ঠিক ততটাই নিষ্ঠুর আর দয়ামায়াহীন। ভালো লাগছে না কিছু। মনটা শুধু অবনী অবনী করে ছটফট করছে।
এসব ভাবতে ভবাতে রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছিলাম। হয়ত ভূলবশত একটু অসচেতন হয়ে পড়েছি। একটা গাড়ি এসে খুব জোরে ধাক্কা দিলো।
আমি কিছু বুঝতে না পেরে টাল হারিয়ে পড়ে গেলাম রাস্তার উপর। এরপর আর কিছুই মনে নেই আমার।

জ্ঞান ফিরলে তাকিয়ে দেখি আমি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছি। আর আমার পাশে মাথার কাছে বসে আছে অবনী!
আমি অবাক হয়ে বললাম, তুমি!
অবনীর চোখে পানি ছলছল করছে। ও বলল, অন্য কারো থাকার কথা নাকি?

  • না বাবা। বলছি যে তুমি কিভাবে জানলা আমি এখানে? আর আমি এখানে এলাম ই বা কিভাবে?

অবনী বলল,লোকজন নিয়ে এসে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে।আর একটা লোক তোমার কললিস্ট থেকে আমার নাম্বার পেয়ে আমাকে জানিয়েছে। তাই ছুটে চলে আসলাম। জানো আমি কত ভয় পেয়েছিলাম?
অবনী কেঁদে ফেললো।আমি ওকে সান্তনা দিয়ে বললাম, আমার তো কিচ্ছু হয়নি। এইতো আমি ভালো আছি, আর সুস্থ আছি একদম। তুমি চিন্তা করোনা অবনী।
অবনী আমার হাত জরিয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে বলল,আর কক্ষনো এরকম বলবো না।আমিতো রাতেই তোমাকে কল দিতাম।তোমার সাথে কথা না বলে কি আমি থাকতে পারি?

  • তাহলে তখন ওভাবে কেন ফোন রাখলা?
  • তোমাকে একটু কষ্ট দেয়ার জন্যই বলেছিলাম।
  • এখন তো অনেক কষ্ট পেয়েছি। হ্যাপি?

অবনী আমাকে জড়িয়ে ধরেরে বলল, সরি স্নিগ্ধ। আমার ভূল হয়ে গেছে। আর কক্ষনো এমন করবো না। সরি সরি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।

  • একটা চুমু লাগবে।
    অবনী মাথা তুলে টুক করে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল, এইযে দিলাম।
  • কপালে? অন্য কোথাও দাও।
    অবনী লজ্জায় মুখ নিচু করে বলল,উহু পারবো না।

পর্ব ৮

অবনীর লাজুক চেহারার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, আরে বাবা দিয়ে দাও তো তাড়াতাড়ি।
অবনী এগিয়ে এসে আলতো করে আমার ঠোঁটে ঠোট রাখলো। আমিও গভীর আবেশে ওর মাথাটা চেপে ধরে অনেক্ষণ ধরে চুমু দিলাম ওর ঠোঁটে!
অবনী মাথা তুলে আর কথাই বলতে পারলো না। একদম লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। তারপর বলল, অনেক রাত হয়ে গেছে। আমি বাসায় যাবো। আব্বু বাসায় আছে।

  • আচ্ছা যাও তাহলে।
  • তোমার আম্মুকে ফোন দিয়েছি। উনি চলে আসলেই আমি চলে যাবো।
    আমি ওর চোখের দিকে চেয়ে রইলাম অনেক্ষণ ধরে। এমন সময় আমার আম্মু চলে এলো। আম্মু এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,কি হইছে বাবা তোর?
  • সেরকম কিছুনা আম্মু। আমি একদম ঠিক আছি দেখো।
  • হুম, এই কি তোর অবনী?
  • হুম।

আম্মু অবনীর দিকে তাকিয়ে খুশি হয়ে ওকে বুকে টেনে নিয়ে বলল,বাহ! এত সুন্দর একটা মেয়ে! আমি তো কল্পনাও করিনি তোর বউ এত সুন্দর হবে।
অবনী লাজুক ভঙ্গিতেতে হাসলো। আম্মু ওকে বুকে জড়িয়ে ধরেই বলল,আমারর একটা লক্ষী মেয়ে পেলাম বুঝলি স্নিগ্ধ? তোর আব্বুও অনেক খুশি হবে দেখিস।
এরপর অবনীর সাথে আর দু একটা কথা বলে আম্মু গিয়ে ওকে সিএনজি তে তুলে দিয়ে আসলো। ভিতরে এসে আমাকে খাবার খাইয়ে দিতে দিতে বলল,মেয়েটা বেশ ভালো রে। আমার খুব মনে ধরেছে।

  • হুম আম্মু। আমার পড়াশোনাটা শেষ হয়ে গেলেই ওকে বউ করে আনবা।
  • আচ্ছা বাবা। এবার খেয়ে নে তো বেশি করে।
    আম্মু আমাকে তুলে খাইয়ে দিলো। অবনীকে নিয়ে অনেক গল্প করলাম আম্মুর সাথে। তারপর আমি ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।

পরদিন সকালেই অবনী আমাকে দেখতে চলে এলো। অবনী আসার পর আম্মু বাসায় গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
আমি অবনিকে কাছে টেনে নিয়ে ওর গাল টেনে নিয়ে বললাম, আম্মু তো তোমার খুব প্রশংসা করলো।

  • তাই! কি কি বলেছে?
  • মেয়েটা অনেক ভালো, অনেক মিষ্টি, লাজুক। এইসব নানান কথা।
  • এসবের পিছনে কিন্তু তোমার ই অবদান সবচেয়ে বেশি।
  • কিভাবে?
  • তোমার জন্যই তো এতটা চেঞ্জ হতে পেরেছি।আমি কখনো এতটা ভালো ছিলাম না।
    আমি হেসে বললাম, উম। আমার লক্ষী বউটা!
    তারপর ওর কোমরে হাত দিয়ে আরেকটু কাছে টেনে নিলাম।
    অবনী শিউড়ে উঠে বলল,উহহু সুড়সুড়ি লাগছে তো।
  • কেন?
  • কোমর থেকে হাত সরাও।
  • না, সরাবো না।
    আমি আরো শক্ত করে চেপে ধরলাম ওর কোমরটা।অবনী শিউরে উঠে একদম আমার বুকে এসে মুখ গুঁজে দিলো।আমি এক হাত ওর কোমরে চাপ দিয়ে বললাম, এবার ও সুড়সুড়ি লাগছে?
  • উহু, ভালো লাগছে।
  • তাহলে আরেকবার দেই?
    অবনী আমার বুকে দুটো মাইর দিয়ে বলল,দুষ্টুটা।
  • উম,আম্মুকে বলেছি আমার স্টাডিটা শেষ হয়ে গেলেই তোমাকে বউ করে আনতে।
  • সত্যি!
  • হুম। আমি যে এই মেয়েটার জন্য একদম পাগল হয়ে যাচ্ছি।
    অবনী আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,উম।তাড়াতাড়ি একটা ব্যবস্থা করে ফেলো। আমিও তোমার বউ হতে চাইছি।
    আমি ওর কোমর টা চেপে ধরে ওকে এক টানে কাছে এনে আমার কোলের উপর বসিয়ে নিলাম। তারপর একটু এগিয়ে এসে ঠোট ছোঁয়ার চেষ্টা করতেই অবনী আমার ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিলো। দুহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,এই না।

আমি ওর বাধা শুনলাম না। আরো কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। অবনী একটু দূরে সরে গিয়ে বলল,এটা হসপিটাল। কখন কে চলে আসে বলা যায়না।

  • কে আসবে?
  • কেউ চলে আসবে।
  • কেউ আসবে না।

আমার কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই একজন নার্স এসে ঢুকলো। অবনী মুখ টিপে হাসলো। নার্স আমাকে বলল,ওষুধ ঠিকমত খেয়েছেন তো?

  • হ্যা খেয়েছি।
  • আপনি আজ বিকেলেই রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে যেতে পারেন।
  • থ্যাংকস।

নার্স বেড়িয়ে যেতেই অবনী বলল,দেখেছো? যদি তোমার কোলে বসে থাকতাম তো নার্স কি ভাবতো?

  • ভাবতো বউকে আদর করছে।
  • ইস! বউকে ঘরে আদর করতে হয়। হাসপাতাল আদর করার জায়গা নয়।
    আমি হেসে বললাম, আচ্ছা। তবে তাই হবে। ওয়েট এন্ড সি।

এরপর অনেক্ষণ বসে অবনীর সাথে গল্প করলাম। ও হেসেই গড়াগড়ি খাচ্ছিল আমার কথা শুনে। গল্প করতে করতেই আম্মু চলে এলো। আম্মুর সাথে ওর অনেক কথা হবার পর ও চলে গেল। আমি একটু ঘুমিয়ে নিলাম।শরীর টা একটু ফুরফুরে লাগছে।
বিকেলেই হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে এলাম।

পুরোটা বিকেল শুধু ঘুমালাম। রাতে খাবার খেয়ে অবনীকে কল দিলাম।
অবনী রিসিভ করে বলল,হ্যালো।

  • কেমন আছো অবনী?
  • হ্যা গো ভালো, তোমার শরীর কেমন?
  • অনেকটা ভালো। একদম সুস্থ ফিল করছি।তবে হাটুর কাছটা একটু জ্বালা করছে।
  • এই দশা আমার জন্যই হয়েছে। সরি গো।
  • আরে না, ঠিক আছে। তুমি শুধু সবসময় পাশে থেকো, কখনো দূরে যেও না
  • আরো ভূলেও ওই কাজ কখনো করবো? কক্ষনো না।
  • হুম,মনে থাকে যেন। খাইছো রাতে?
  • হ্যা, তুমি?
  • আমিও মাত্র খেয়ে আসলাম। তা কি করছো এখন?
  • তোমার ছবিগুলো দেখছি।আমার ফোনের গ্যালারি তে শুধু তোমার ই ছবি। যে কেউ দেখলেই ভাব্বে এটা তোমার ফোন।
  • হা হা হা। তাই নাকি?
  • হুম তাই।
  • এই,তুমি জানো তোমার সানগ্লাস পড়া ছবিটা অনেক সুন্দর হইছে দেখতে?
  • বাব্বাহ! তাই নাকি? কোনটা?
  • আরে সেদিন রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে যেটা তুললা।
  • ওহ আচ্ছা।

অবনী একটু চুপ থেকে বলল,স্নিগ্ধ তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে গো।

  • আচ্ছা দুই মিনিট ওয়েট, আমি আসছি।
  • এই একদম না। আব্বু বাসায় আছে,বুঝে ফেলবে।
  • কিচ্ছু বুঝবে না। সেদিনকার মত চুপিচুপি তোমার রুমে চলে যাবো। পিছনের পাইপ বেয়ে। তুমি জানালা খুলে রাখো, আমি আসছি।
  • না গো, তোমার শরীর ভালো নেই।
  • আহা! আমার ও তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। ওয়েট, আমি আসছি।
    অবনী কিছু বলতে যাচ্ছিলো। আমি ফোন কেটে দিলাম। তারপর দ্রুত চলে আসলাম ওর বাসার নিচে।

অবনীর রুমে ঢুকতেই ও দরজা লাগিয়ে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি বললাম, পাগলী।

  • তোমার বুকে অনেক শান্তি গো।
  • আসতেই তো নিষেধ করছিলা।
  • এত সাহস কিন্তু ভালো না বুঝলে?

আমি অবনিকে কোলে তুলে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। ও চোখ বন্ধ করে ফেললো। আমি আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললাম, রাত জাগবে না। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। এক্ষুনী ঘুমাও।

  • তুমি চলে গেলেই ঘুমাবো।
  • যদি না যাই?
  • কি করবা এখানে থেকে?
  • করার মত কত কাজ বাকি।
  • যেমন?

আমি আচমকা অবনী কে এক ঝটকায় কাছে টেনে নিয়ে ওর কোমরে হাত দিয়ে একদম বুকের কাছে টেনে নিলাম।অবনী আমার পিঠের উপর দিয়ে হাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
আমি ওর গলায় আলতো করে কয়েকটা চুমু একে দিলাম।অবনী দুহাতে আমার চুল জোরে টেনে ধরছে। আর জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ এরকম পাগলামি চলার পর অবনী বলল,এর বেশী কিছু করাটা ঠিক হবেনা। তুমি বাসায় যাও স্নিগ্ধ।
আমি অবনীকে একটা চুমু দিয়ে বললাম, আচ্ছা যাচ্ছি।

এরপর ওকে ছেড়ে দিয়ে আস্তে করে বেড়িয়ে আসলাম জানালা দিয়ে।
বাসায় এসে ফোন দিলাম ওর নাম্বারে। কিন্তু কল রিসিভ করলেন একজন লোক।রিসিভ করেই বললেন, এই ছেলে কে তুমি? এত রাতে তুমি এসেছিলা বাসায় তাইনা?
আমি ভয়ে জড়সড় হয়ে গেলাম। অবনির বাবা নয়ত ভাইয়া বুঝতে পেরেছে তাহলে।চুপ করে রইলাম।
উনি বললেন, নাম কি তোমার?

  • স্নিগ্ধ
  • বাসা কোথায়?
    আমি বাসার ঠিকানা বলতেই উনি বললেন, কাল সকালেই এর ব্যবস্থা নিচ্ছি আমি।
    বলেই ফোন রেখে দিলেন। আমি অনেক বার কল দিলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ। আমার গলা শুকিয়ে গেল। উনি তো আমাদের ভূল বুঝলেন। এবার কি হবে!

পর্ব ৯

সারারাত খুব টেনশনে ছিলাম।একটুও ঘুমাতে পারিনি।সকাল হতেই অবনীর বাবা চলে আসলেন।
আমাকে আব্বু আম্মুর সামনে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করলেন। আব্বুকে অনেক বাজে কথা শুনিয়ে দিলেন। আমাকে এমন সব বাজে কথা বললেন যা শুনার জন্য আমার ফ্যামিলি প্রস্তুত ছিলোনা।
উনি অনেক অপমান করে চলে গেলেন। আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। আব্বু এসে আমার গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল,ছি এত নীচে নেমে গেছিস তুই?
আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না। সত্যিই বলার মত কিছুই নেই।

আব্বু বলল,তোকে মানুষ করলাম এইসব শুনার জন্য? আমার মরণ হলোনা কেন এটা শুনার আগে?

  • আব্বু, আসলে আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।
  • রাখ তোর ভালোবাসা। ভালোবাসা বাসি এমনি তে করা যেতো না? ওর বাসায় রাতে গিয়েছিস কেন?
  • বাবা আমাদের মাঝে সেরকম কিছু হয়নি।
  • কিন্তু লোকটা কিভাবে অপমান করলো দেখলি?
  • বাবা আমি সরি।
  • সরি আমাকে বলছিস কেন? ওই মেয়েকে ভূলে যাবি। আজকের পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ রাখবি না ওর সাথে।
    কথাটা বলেই আব্বু চলে গেলো। আমার মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়লো। এরকম কথা কখনো নিজের কানে শুনবো সেটা আমি নিজেও ভাবিনিম আসলে প্রেমে পড়লে বোধশক্তি লোপ পায়। কিছুই মাথায় আসেনা। কিন্তু এবার কি হবে? অবনীকে ভূলতে পারবো না আমি।

রুমের দরজা বন্ধ করে বসে রইলাম সারাদিন। ফোনে একবার অবনীর কল ও এলোনা। আমি জানি ওর উপর দিয়েও অনেক ঝড় যাচ্ছে। ওর বাবা যেভাবে আমাকে অপমান করলেন, ওকে ও নিশ্চয় ই সেভাবে বকা দিয়েছেন। অবনী কি একবার ফোন দেবেনা?

এভাবে সারাটা দিন কেটে গেলো। আমি মরার মত পড়ে রইলাম বিছানায়। শরীর এমনি তেই খারাপ, এখন আরো খারাপ লাগছে।অবনীর জন্য বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টে।
বাইরে এসে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে নিলাম। ঘরে এসে একটা সিগারেট বের করে ধরালাম। আমি কখনো স্মোকিং করিনি নিজের ইচ্ছায়। বন্ধুদের সাথে ফাজলামি করে কিংবা অনুরোধে টানতে হয়েছিলো। এই প্রথম সেচ্ছায় ধরালাম। কিচ্ছু ভালো লাগছে না।অবনীর কোনো খোজ পাচ্ছিনা। ওর বাসার সামনে যাওয়ার ও মুখ নেই আমার।

কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। অবনীর ফোন বন্ধ। ধেৎ, অসহ্য একটা লাইফ! কি যে করে বসি মাঝেমাঝে! নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে এখন।
সিগারেট টানতে টানতে একটা প্যাকেট শেষ করে ফেললাম। তবুও রাগ কমছে না নিজের উপর। এখন কি কোনোই উপায় নেই?

দিন কেটে গিয়ে রাত হলো।
আম্মু জোর করে ভাত খাইয়ে দিলো একটু। খেয়েদেয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম। সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলাম শুধু। ফোনের গ্যালারি তে শুধু অবনীর ছবি দেখতে লাগলাম
অবনীর চেহারা টা এত মায়াবী! দেখতেই ইচ্ছে করে শুধু। অবনীকে দেখার জন্য বুকটা ছটফট করছে। এভাবে থাকলে আমি মরে যাবো। কিন্তু অবনী তো ফোন ও ধরছে না।কি উপায় এখন আমার?
রাত ১২ টা…

ঘুম আসছে না। ভেবে ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছি।অবনীকে না দেখে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিনা।কি যে করি? একবার কি যাবো? যদি বিপদ হয় হোক,ওকে না দেখে আর যোগাযোগ না করে আমি থাকতে পারছি না। একবার যাবোই,তারপর যা হবার হবে।
আমি দ্রুত বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। প্রতিদিন যেভাবে আসি সেভাবে ই চলে এলাম অবনীর বাসায়।ওর রুমেও ঢুকে পড়লাম এসে।
এসে দেখি অবনী বালিশ জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে। বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।

আমি এগিয়ে গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখলাম। অবনী চোখ মেলে তাকালো। আমাকে দেখতে পেয়ে বিস্ময়ে অবাক হয়ে বলল,তুমি!
তারপর উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে।আমিও ওকে বুকে চেপে ধরে বললাম, থাকতে পারলাম না অবনী। তাই বাধ্য হয়েই..

  • কিন্তু এতটা রিস্ক কেন নিলে?
  • কিছু হবেনা। তোমার বাবা জানে এভাবে কাউকে অপমান করার পর সেই ছেলে আর আসবে না।
  • আব্বু তোমাকে খুব বাজে ভাবে অপমান করেছে তাইনা?
  • হুম।ব্যাপার না।তোমার জন্য এটুকু শুনতে ই পারি।
  • আমার সব দোষ। সব দোষ আমার।আমার জন্যই এমন হলো তোমার।

আমি অবনীকে একটু জোরে চেপে ধরে বললাম, ধুর পাগলী মেয়ে। তোমার দোষ কেন হবে?

  • আই লাভ ইউ স্নিগ্ধ। প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।
  • না গো। এখান থেকে নিয়ে যাবো কিন্তু এভাবে নয়। সম্মানের সাথে।
  • সেটা কিছুতেই সম্ভব নয়। তুমি প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো।প্লিজ স্নিগ্ধ। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।

আমি অবনীকে বুঝিয়ে বললাম, পারবা। দুইটা দিন কষ্ট করো। আর তোমার আব্বুকে বুঝাও। আমরা কোনো খারাপ কাজ করিনি,শুধু ভালোবেসেছি।

  • আমি চেষ্টা করবো। কিন্তু আব্বু রাজি না হলে তুমি আমাকে নিয়ে যাবে বলো?
  • সেটা তখন দেখা যাবে। কিন্তু আমি পালিয়ে বিয়ে করতে চাইনা।
  • প্লিজ স্নিগ্ধ। আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না। আব্বু বলে দিয়েছে সব রিলেশন শেষ করে দিতে। ফোন কেড়ে নিয়েছে আমার কাছ থেকে।
    অবনী কেঁদে ফেলল।জিজ্ঞেস করলাম, খেয়েছো কিছু?
  • না।খেতে পারিনি। জোর করে একটু মুখে দিয়েছি।
  • হুম।আমিও পারিনি।
  • তাহলে এভাবে ছেড়ে যেওনা প্লিজ। আমি মরে যাবো।
    কথাটা বলতে বলতেই অবনী আমার ডান হাত টা নিয়ে ওর পেটের উপর রেখে বলল, ধরো।
    আমি বিস্ময়ের ঘোরে বললাম, কি?
  • একটু আদর করে দাও আমাকে। সারাদিন ধরে কেঁদেছি আমি। আর পারছি না। প্লিজ স্নিগ্ধ, একটু আদর করে দাও।
    আমি আস্তে করে ওর পেটে চাপ দিলাম। অবনী শিউড়ে উঠে আমাকে টেনে নিয়ে বিছানায় শোয়ালো। আমি ওর পেটে এক হাত রেখে,আরেক হাতে ওর মাথাটা ধরে ওর ঠোঁটে চুমু দিলাম।অবনী কাঁদছে তো কাঁদছে ই।
    আমি আস্তে আস্তে পেটটার উপর হাত বুলাতে বুলাতে মাথাটা পেটের উপর নিয়ে ওর শরীরের গন্ধ নিলাম। জামাটা আস্তে করে তুলে ওর নাভীর উপর আলতো করে একটা চুমু দিলাম।তারপর এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলাম ওকে।

অবনী বলল,এতকিছুর পর ও কিভাবে তোমাকে ছেড়ে থাকবো বলো? আমি পারবো না থাকতে। তুমি আমাকে নিয়ে যাও।

  • পাগলামি করোনা। তুমি যেভাবে পারো, আমার সাথে যোগাযোগ করবা। আমি আছিতো, একটা ব্যবস্থা ঠিক করে ফেলব।তোমার আব্বুর পা ধরে কাঁদবো প্রয়োজনে।
    অবনী আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল,আমাকে আরো আদর করো প্লিজ।
    -না অবনী। তোমার সবকিছু শেষ করে দিতে পারিনা আমি।
  • আমিতো তোমার ই।
  • তবুও এটা হয়না। আমি তোমার বাবার পা ধরে কান্নাকাটি করবো, তবুও যদি একটু মাফ করে দেন উনি। তুমিও কাল ওনাকে একটু বুঝিয়ে বলবা। আর কি বলে আমাকে ফোন করে জানাবা।
    অবনী আমার শার্ট টেনে ধরে বলল,না… তুমি এভাবে আমাকে ফেলে যেওনা। আমিও যাবো তোমার সাথে।
  • প্লিজ অবনী। তোমার আব্বুকে বুঝাও, আমাকে জানাইয়ো কি বলে। আমি কাল রাতে আবার আসবো। আগে সবটা বুঝে নেই,তারপর তোমার আব্বুর পা ধরে ক্ষমা চাইবো।
    অবনী কিছু বললো না। শুধু নিরবে কাদলো।আমি বেড়িয়ে খুব সাবধানে চলে এলাম বাড়িতে।

পর্ব ১০

সারাটা দিন খুব বিষণ্ণতার মধ্য দিয়ে কাটালাম। অবনীর সাথে কোনোভাবে ই যোগাযোগ হলোনা।
ওর নাম্বার বন্ধ, ও নিজেও একবার ও ফোন দিলো না। এভাবে কি বাঁচা যায়?

শরীর অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে আজও অফিসে গেলাম না। কিন্তু অসুস্থতা তো আমার শরীরে নয়,অসুস্থতা আমার মনে। অবনী ছাড়া এই অসুখ কেউ দূর করতে পারবে না। সেই অবনী কেই পাচ্ছিনা এক মুহুর্তের জন্য।
সন্ধ্যার পর থেকে দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো। সারাদিনে কতগুলা যে সিগারেট খেয়েছি তার হিসেব নেই।রাগের চোটে সিগারেট খেয়ে ফেলছি অসংখ্য। কি করবো এছাড়া? জীবন টা যে দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বাসায় আব্বুকে অনেক করর বুঝালাম একবার অবনীর বাবার সাথে কথা বলে বিয়ের ব্যাপারে আলাপ করা যায় কিনা দেখতে। কিন্তু আব্বু কিছুতেই রাজি হলোনা। যে পরিবারের মেইন গার্ডিয়ান এভাবে গালি দিয়ে অপমান করতে পারে,তার কাছে ছোট হতে কিছুতেই আব্বু রাজি নয়। কিন্তু ছোট যা হবার তা তো হয়েই গেছি। এখন আমাদের দুজনকে এক করার চিন্তা করতে কি এমন অসুবিধা হবে?

আব্বুকে অনেক অনুরোধ করেও কোনো কাজ হলোনা। তাহলে ফাইনাল ডিসিশন এটাই যে,আমি নিজেই যাবো অবনীর বাবার কাছে। হাটু গেরে বসে ওনার পা ধরে ক্ষমা চাইবো,অবনীও ক্ষমা চাইবে আর বুঝিয়ে বলবে ওর বাবাকে। কিন্তু অবনীর সাথে আগে এ ব্যাপারে কথা বলা দরকার। ওর ফোন ও তো বন্ধ। তাড়াতাড়ি রাত নামুক গো,সোজা গিয়ে দেখা করে আসব।
সময় যেন আর কাটতেই চায়না। কি যে দুঃসহ সময় কাটাচ্ছি! অবনী অবনী করে বুক ফেটে যেতে চাইছে।এরকম পরিস্থিতি তে জীবনে প্রথমবার পড়েছি আমি!
অপেক্ষা করতে করতে অনেক রাত হয়ে এলো। প্রায় সাড়ে এগারো টা। এখনই যেতে হবে অবনীর কাছে। তাই দ্রুত বাসা থেকে বেড়িয়ে এসে অবনীর বাসায় চলে এলাম।

অবনী জেগেই ছিলো। আমাকে দেখে ছুটে এসে সামনে দাঁড়াল। দুইদিনেই কি বিদঘুটে চেহারা হয়েছে ওর! নিশ্চয় ই তিন রাত থেকে ঘুমায় না,গোসল করেনা, খায়না, ঠিকমত কোনো কাজই করেনা, বোধহয় চুল ও আচড়ায় না। চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে ওর!
আমি বললাম, এই অবস্থা করেছো কেন নিজের?

অবনী কেঁদে ফেললো। কাঁদতে কাঁদতে ই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,আমি এভাবে আর বন্দি হয়ে থাকতে পারছি না স্নিগ্ধ। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম, বাবার সাথে কথা বলেছো?

  • হ্যা বলেছি। কিন্তু আব্বু কিছুতেই এ সম্পর্ক মেনে নেবে না। আর আব্বু আমাকেও আর আগের মত ভালোবাসে না স্নিগ্ধ। আমার সাথে সবসময় ই রেগে রেগে কথা বলে। আমি না খেয়ে থাকলেও কেউ এসে বলেনা খেয়েছি কিনা? আমি সারাদিন রুমে পড়ে থাকি।কেউ একবার দেখতেও আসেনা। সবাই ভাবে আমি বাজে হয়ে গেছি। আর কেউ আমাকে ভালবাসেনা স্নিগ্ধ।
    অবনীর কথা শুনে আমার ও কান্না পেয়ে গেলো। বললাম, প্লিজ এভাবে কেদোনা। অবনী।

অবনীর কান্না আরো বেড়ে গেলো। বলল,স্নিগ্ধ আমি অনেক চেষ্টা করেছি বুঝানোর।কিন্তু ওরা কেউই আমার কথা শুনছে না।কেউই বুঝতে চাইলো না আমাকে। আমি কি করবো বলো তুমি? আমার কথা না শুনলে কিভাবে আমি ওদেরকে বোঝাবো আমাদের ভালোবাসা খারাপ কোনো উদ্দেশ্যের জন্য ছিলোনা।
আমি ওকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় এনে শুইয়ে দিলাম।অবনী আমাকে জাপটে ধরে শুয়ে রইলো। বললাম,তুমি বোধহয় একটুও ঘুমাও না। আজ আমি তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে তারপর যাবো।

  • আমাকে ছেড়ে যেওনা স্নিগ্ধ। আমাকে সাথে করে নিয়ে যাও।
  • আবারো? বলেছি না সবাইকে রাজী করিয়ে নিয়ে যাবো।
  • কিভাবে করাবে?
  • আমি কাল তোমার বাবার মুখোমুখি হবো। সোজাসুজি ওনার সাথে কথার বলবো। এরপর প্রয়োজনে তুমি আমি দুজনে ওনার পা ধরে ক্ষমা চাইবো।

অবনী আমার হাত ধরে বলল,চলোনা আমরা পালিয়ে যাই? আমরা এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে কেউ আর কিচ্ছু জানতে ও পারবে না,বলতেও পারবে না।আমরা বিয়ের এক বছর পর ফিরে আসবো। তখন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আব্বু আম্মু সব ভূলে আমাদের মেনে নেবে।
আমি একটু ভেবে বললাম, আমি পালাতে শিখিনি। জয় করতে শিখেছি।

  • কিন্তু আমরা যেভাবে ফেঁসে গেছি তাতে দুই পরিবার ই এখন আমাদের বিপক্ষে। এখন ওদেরকে বুঝিয়ে রাজি করাতে চাইলে অনেক অনেক সময় কেটে যাবে স্নিগ্ধ। প্লিজ,একটু বোঝার চেষ্টা করো।
  • যত সময় লাগে লাগুক,আমি কিছুতেই পালাবো না।আমি শেষ টা দেখতে চাই। শেষে যদি সবটা ঠিক না হয়ে যায়,তাহলে অন্য ব্যবস্থা নেবো।
    অবনী আবারো কেঁদে উঠলো – স্নিগ্ধ প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো। আমরা পালিয়ে যাই প্লিজ? পালিয়ে না গেলে আমরা কখনো একে অপরকে পাবো না।আমার বাসায় কেউ রাজি নয়।
  • আমার বাসাতেও নয়।আম্মুও আর আমাকে সাপোর্ট দেয়না।
  • তাহলে কিভাবে আমরা এক হবো স্নিগ্ধ? কিভাবে?

অবনী আমার কলার ধরে টানতে টানতে কান্না করতে লাগলো। আমি ওকে সান্তনা দিতে গিয়ে নিজেই কেঁদে ফেলেছি। আমার ও খুব কষ্ট হয় ওকে ছাড়া থাকতে।
অবনী আমার কলার ধরে টেনে কাছে নিয়ে বলল,আমাকে নিয়ে নাও তুমি। প্লিজ আমাকে নাও।

  • একটু সময় দাও অবনী। তোমাকে আমি এখন ই বিয়ে করবো কিন্তু একটু টাইম লাগবে। বাসায় চেষ্টা করে দেখি কিছু হয় কিনা।
  • আমার শরীর টা নাও।
  • কি বললা?
  • আমার শরীর টা নিয়ে নাও। আমি আর এ কষ্ট সহ্য করতে পারছি না।আমি আমার সবকিছু তোমাকে দিয়ে দিতে চাই। এরপর তোমাকে না পেলেও আমার আর দুঃখ থাকবে না,আমি সুইসাইড করবো।
    আমি অবনীর মুখ চেপে ধরে বললাম, এইসব বাজে কথা বলিও না তুমি। প্লিজ অবনী।

অবনী কাঁদতে কাঁদতে বলল,কি বলবো তাহলে? আমি সুইসাইড করবো। তোমাকে না পেয়েও এই অপবাদ সহ্য করে আমি বাচতে চাইনা।

  • প্লিজ অবনী, শক্ত হও একটু।
  • আমি কি বাসায় বলবো আমি প্রেগন্যান্ট? তাহলে যদি ওরা রাজি হয়?
  • ছিঃ ছিঃ এসব কেন বলবা? এটা বললে ওরা আমাদের আরো খারাপ ভাব্বে। আমাদের হয়ত বিয়ে দিয়ে দিবে কিন্তু আজীবন খারাপ চোখে দেখবে আমাদের।
  • দেখুক,তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি।
    আমি অবাক হয়ে বললাম, এত ভালোবাসো কেন আমায়?
  • তুমি আমার তাই।

অবনী আমাকে শক্ত করে ধরে রইলো।আমি ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। অনেক্ষণ পর ওকে ডাকলাম কিন্তু সাড়া দিলোনা। অবনী ঘুমিয়ে পড়েছে। আরো অনেক কথা বলার ছিলো ওকে। কিন্তু ঘুমিয়েই যখন পড়েছে, আর ডাকবো না।মেয়েটা কতদিন থেকে ঘুমায় না। আজ একটু ঘুমাক।
কিছুক্ষণ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে একটা ছোট্ট চুমু দিলাম।তারপর বেড়িয়ে এলাম।
পরদিন সকাল হতেই আম্মু ডেকে তুলে দিলো অফিসে যাওয়ার জন্য। আমি গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে অফিসে চলে এলাম।

অফিসে বসে বসে নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগলাম কিভাবে অবনীর বাবার মুখোমুখি হবো? কি কি বলবো, কিভাবে ওনাকে রাজী করানো যাবে?
এরপর বিকেলে অফিস থেকে ফিরে হালকা খাবার খেয়েই অবনীদের বাসায় চলে এলাম।
ওর বাবা আমাকে দেখে খুব রেগে গেলেন।আমি তবুও যথেষ্ট বিনয়ের সাথে ওনাকে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপার টা বুঝিয়ে বললাম।
কিন্তু উনি বুঝতে চাইলেন না।উল্টো আমাকে অনেক কথা শুনিয়ে দিলেন। অবনীও নেমে এসে ওর বাবার পায়ের কাছে পড়ে কান্নাকাটি করলো। আমিও ওনার পা ধরে অনেক কাঁদলাম। ওনাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম আমরা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারবো না। কিন্তু উনি কিছুতেই আমার কথা শুনলেন না।

আমাকে বেড়িয়ে যেতে বলে শুধু একটা কথাই বললেন যেরকম বেয়াদব ছেলের সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিবো না।
অবনী তৎক্ষণাৎ জবাব দিলো, আব্বু ও যদি বেয়াদব হয় তাহলে তোমার মেয়েও বেয়াদব। কারণ আমিই ওকে আমার সাথে দেখা করার জন্য ডাকি। আমি না ডাকলে ও কখনো ই আসতো না।
অবনীর বাবা অবনীর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। এটা দেখে আমার কান গরম হয়ে উঠলো। বাবা হিসেবে মেয়েকে মারার অধিকার ওনার আছে। কিন্তু আমিতো ওকে ভালোবাসি। আমি সহ্য করতে পারছি না এটা। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে ও বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলাম। কি করবো এখন আমি? অবনী যদি ভুলভাল কিছু করে ফেলে তাহলে খুব খারাপ হবে। কিন্তু ওর সাথে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না।কি করবো এখন আমি?

রাত এগার টা বাজতেই চলে এলাম ওর কাছে। এতক্ষণ শুধু মনেমনে বলেছি অবনী যেন ভুলভাল কিছু করে না বসে।
অবনী আমাকে দেখেই কেঁদে ফেললো। আমি ওর গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, আমার জন্য আজ তোমাকে মার খেতে হলো।সরি অবনী।
অবনী আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,আমি কি কখনো ভেবেছি আমাদের ভালোবাসা এরকম অবস্থার মধ্যে পড়বে?

বলতে বলতেই অবনী আমাকে কাছে টেনে নিচ্ছিলো। আমিও আজ বাধা দিলাম না ওকে।মেয়েটার খুব কষ্ট হচ্ছে আমি জানি। কতদিন থেকে আমরা ফোনে কথা বলতে পারিনা!
অবনী আমাকে টেনে নিয়ে বিছানায় ফেলে অনেক গুলো চুমু দিলো আমার গালে,কপালে,মুখে। তারপর আলতো করে ঠোঁটে একটা চুমু দিয়েই মুখ তুলে বলল,তুমি সিগারেট খাওয়া শুরু করেছো?

  • সরি অবনী। মাথা ঠিক থাকেনা তাই খেয়ে ফেলেছি।
  • তুমি তো তবু সিগারেট খেতে পারো কিন্তু আমি? আজ তুমি চলে যাওয়ার পর মা আমাকে খুব বাজে ভাষায় গালি দিয়েছে।

বলতে বলতেই আমার মাথাটা চেপে ধরে চুল টেনে ধরলো। তারপর আমার ঠোট কামড়ে ধরে রইল অনেক্ষণ। ছেড়ে দিয়েই নেমে এলো আমার গলায়। গলায় ও ঘাড়ে অসংখ্য চুমু দিলো। অবনী খুব পাগলামো করছে। কোথায় চুমু দিচ্ছে, না দিচ্ছে হিসেব নেই। চুমু দিতে দিতেই এক এক করে আমার শার্টের বোতাম গুলো খুলে ফেললো। তারপর আমার খোলা বুকে অনেক কামড় বসিয়ে দিলো।এরপর মুখ তুলে একবার তাকালোম ওর চোখে অসম্ভব নেশা!

আমি উঠে বসতে যাবো এমন সময় অবনী আমার বুকের উপর উঠে বসলো। তারপর ওর জামাটা খুলে ছুড়ে ফেলে দিলো। ওর এরকম নগ্ন বুক দেখে আমি কেমন নেশাগ্রস্ত হয়ে উঠলাম যেন! খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে ওকে। অবনী আমার বুকের উপর শুয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,আমাকে খুব আদর করে দাও স্নিগ্ধ। আমি শুধু তোমার হতে চাই।
এভাবে অবনীর নিজেকে আবেদন করার দৃশ্য দেখে আমি আমাকে সামলাতেই পারছি না।তার উপর অবনী আমার ঠোটে চুমু দিচ্ছে বারবার।

আমি ওর পিঠে একবার হাত বুলিয়ে দিয়েই পাগল হয়ে গেলাম যেন। এত মসৃণ আর কোমল! খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সেটা তো করা যায়না। এসব করলে বেশি অন্যায় হয়ে যাবে। আমি অবনীকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলাম। অবনী আমাকে কাছে টেনে নিতে যাচ্ছিলো আমি বাধা দিয়ে বললাম, এর সময় এখনো আসেনি।সময় হলে সব হবে।আমরা যতদূর এগিয়েছি,সেটাই অনেক হয়ে গেছে।
অবনী আমাকে ছেড়ে দিয়ে অভিমানী গলায় কাঁদতে কাঁদতে বলল,যাও চলে যাও তুমি। আমি মরে গেলেই বা তোমার কি? আমিতো মরেই যাবো তাই তোমাকে আপন করে পেতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু তুমিতো আমাকে চাওনা,আমার মরণ টাই চাও। তাই হোক,তুমি চলে যাও।

আমি এগিয়ে এসে অবনীর মাথাটা ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,ভালবাসলে একটু ধৈর্য ধরতে হয় অবনী। কষ্ট পেওনা,আর ভুলেও মরার কথা বলিও না।আমি দেখছি কি করা যায়।
আমি অবনীকে ছেড়ে বেড়িয়ে এলাম।জানি ও খুবই কষ্ট পেয়েছে। এরকম ভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার পরও আমি ওকে গ্রহণ করলাম না এটা ওর জন্য অনেক কষ্টের। তাছাড়া ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।আমার সাথে কতদিন থেকে ফোনে কথা বলতে পারেনা, সারাদিন রুমে বন্দি,খাওয়াদাওয়া নেই,বাবা মায়ের কত গালি শুনতে হচ্ছে। এতকিছুর মধ্যে একবার কাছে পেলে একটু আদর চাইবেই। কিন্তু আমি কি করবো? এটা যে অন্যায়। আর কোনো ভূল হতে দিতে চাইনা আমি। এবার ওকে যেভাবে পারি,বিয়ে করতেই হবে। প্রয়োজনে জান দিয়ে দিবো, তবুও অবনীকে পাওয়ার চেষ্টা করতেই হবে।আমি আবারো আসবো ওর বাবার কাছে।আরেকবার ছোট হবো।

কিন্তু পরেরদিন অফিস থেকে এসেই শুনি অবনীরা বাসা চেঞ্জ করেছে। আমার বুকের ভিতর যেন বজ্রপাত হয়ে গেলো। অবনীর ফোন তো বন্ধ,বাসাও চেঞ্জ? এবার কিভাবে ওর সাথে যোগাযোগ হবে আমার?
অবনীকে কাল রাতে ওভাবে ফিরিয়ে দেয়ার পর থেকে এমনি তেই সারারাত আজকের সারাটা দিন আমি প্রচুর কষ্ট পেয়েছি। এখন আবার এভাবে চলে গেলে….
আমি বাঁচবো কিভাবে?

শেষ পর্ব – ১১

আমি পাগল প্রায় হয়েই গেছি।
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেছে। অবনীর কোনো খোজ পাইনি। আমি জানিনা সে এখন কোথায় আছে,কিভাবে আছে? বেঁচে আছে নাকি বিয়ে হয়ে গেছে কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। ওর সাথে যোগাযোগ করার কোনো সুযোগ পাইনি এ কয়দিনে। ওর নাম্বার বন্ধ,ওদের বাসার ঠিকানা জানিনা।।খুব সম্ভবত অনেক দূরে কোথাও চলে গেছে ওরা। ঢাকায় আছে কিনা তাও বুঝতে পারছি না। এদিকে আমার অবস্থা একদম পাগলের মত হয়ে গেছে।
সেই রাতে অবনীকে অতটা কাছে পাওয়ার পর আর কিছুতেই ওকে ভূলে থাকতে পারিনা আমি। সবসময় ওর কাছে ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করে। এত কাছে থেকে এরকম ভাবে কোনো মেয়েকে কখনো দেখিনি আমি। ওর সেই অপরূপ শরীরের সৌন্দর্য আচ্ছন্ন করে রেখেছে আমায়। আর ওর মনটা প্রতিমুহুর্তে আহবান করে ডাকছে আমাকে। কিভাবে দূরে থাকি ওর কাছ থেকে?

অফিস থেকে বাসায় ফিরে চুপচাপ বসে সিগারেট টানছি। অবনীর কথা খুব মনে পড়ছে। ওর কিনে দেয়া শার্ট গায়ে দিয়ে বসে আছি। সবকিছু তেই অবনীর স্পর্শ লেগে আছে। এখনো মাঝেমাঝে মনেহয় আমার গলায় ওর কোমল ঠোট স্পর্শ করছে। মাঝেমাঝে রাত্রিবেলা ঘুম থেকে চিৎকার করে উঠি। আমার এই অবস্থা কাটানোর জন্য আব্বু আম্মু আমাকে বিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু ওরা বোধহয় এখনো বুঝতে পারেনি অবনীকে ছাড়া এ স্নিগ্ধ’র জীবন অর্থহীন।

অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ভিতর। দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। মনেহচ্ছে বুকের ভিতরে টর্নেডোর মত তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। কি যে কষ্ট হচ্ছে কাউকে বুঝাতে পারব না। আমি সত্যিই ওই মেয়েটাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
এসব ভাবতে ভাবতে চোখ ভিজে যাচ্ছিলো। এমন সময় মোবাইল টা বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা অচেনা নাম্বার। নাম্বার টা দেখেই বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। যদি অবনী ফোন দিতো তাহলে আমার মত খুশি বোধহয় কেউ হতোনা।

কিন্তু রিসিভ করতেই শুনি একটা পুরুষের গলা। শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। বললাম, কে বলছেন?

  • আমি অবনীর বাবা।
    অবনীর বাবা! আমি চমকে উঠলাম। উনি তো আমাকে সহ্যই করতে পারেন না। তাহলে উনি কেন ফোন করেছেন? মনে একটা নতুন আশার আলো ফুটে উঠলো।
    বললাম, আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
  • ওয়ালাইকুম সালাম। বাবা স্নিগ্ধ,
    কথাটা বলেই উনি কেঁদে ফেললেন। তবে কি কোনো বিপদ হয়েছে? উনি এভাবে কাঁদছেন কেন? আমার ভয় বেড়ে গেল হঠাৎ করেই। বললাম, আংকেল আপনি কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে?
  • বাবা,অবনী…

আমার বুকের ভিতর দুমদুম করে আওয়াজ হচ্ছে। আমার অবনীর কিছু হয়েছে? উনি কাঁদছেন কেন?
উনি বললেন, অবনী সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিলো। ওর অবস্থা খুবই খারাপ। বাঁঁচানো যাবে কিনা ডাক্তার ও বলতে পারছে না।
উনি ঝরঝর করে কেঁদে দিলেন। আমিও চিৎকার করে উঠলাম। এসব কি শুনছি আমি? এ কিছুতেই হতে পারেনা। কিছুতেই না। আমার পা দুটো যেন অবশ হয়ে এলো। মেঝেতে ধপ করে পড়ে গেলাম।ফোনটা ও পড়ে গেলো হাত থেকে। মাথাটা ঘুরছে ভীষণ। অবনীকে ছাড়া এই স্নিগ্ধ ও বাঁচতে পারবে না। আমিও মরে যেতে চাই।

ফোনটা আবারো বেজে উথলো।আমি হাত ও নাড়াতে পারছি না। তবুও অনেক কষ্টে হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলাম। অবনীর বাবা বললেন, স্নিগ্ধ তুমি প্লিজ একবার হাসপাতালে আসো। অবনীকে একবার দেখে যাও। আমার বিশ্বাস, ও চোখ মেলে তোমাকে দেখতে পেলে ওর খারাপ কিছু হবেনা। তুমি কি আসবে?

আমি উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম, হ্যা আংকেল। আমি আসছি। আমার জন্য অবনীকে বাচতেই হবে। নয়ত এই স্নিগ্ধ ও মরে যাবে যে।
ফোনটা পকেটে রেখে সোজা হয়ে দাড়ানোর চেষ্টা করলাম।গায়ে শক্তি পাচ্ছিনা। তবুও মনের জোরে পা ফেললাম। আম্মুকে ডেকে বললাম অবনীর অবস্থার কথা। আমি হাটতে পারছি না দেখে আম্মু এসে আমাকে ধরলো। আম্মুর কাধে ভর দিয়ে বাইরে এসে গাড়িতে উঠলাম।

হাসপাতালে এসে গাড়ি থেকে নেমে তাড়াতাড়ি অবনীর কাছে চলে এলাম। ওর মুখে অক্সিজেন লাগিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে। খুবই খারাপ অবস্থা। ওর চেহারা শুকিয়ে একদম কংকালের মত হয়ে গেছে। দেখেই আমার কষ্ট হচ্ছে খুব। মেয়েটা আমার চেয়েও আমাকে বেশী ভালোবাসে!
অবনীর বাবা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, বাবা আমাকে মাফ করে দিও। তোমাকে ওভাবে অপমান করার কারণেই আজ আমার মেয়ের জীবন চলে যাচ্ছে।

  • ছি আংকেল এভাবে বলবেন না। ওর কিচ্ছু হবেনা।
  • আজ বুঝতে পেরেছি তোমাদের ভালোবাসা মিথ্যে ছিলোনা। যদি কোনো খারাপ উদ্দেশ্যই থাকতো, আমার মেয়েটা এভাবে জীবন দিয়ে দিত না।
    বলতে বলতেই উনি কেঁদে দিলেন।আমি ওনাকে সান্তনা দিয়ে বললাম, অবনী ভালো হয়ে যাবে। আমার জন্য ওকে ভালো হতেই হবে।

এরপর ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। ডাক্তার জানালেন, অবস্থা খুবই আশংকাজনক। কিন্তু যেহেতু স্নিগ্ধ’র জন্যই এই অবস্থা হয়েছে, ও একবার স্নিগ্ধকে দেখলে একটু উপকার হতেও পারে। তবুও কিছুই বলা যাচ্ছেনা।
ডাক্তারের কথা শুনেও ভেঙে পড়লাম না আমি। যেভাবেই হোক, অবনীকে সেরে তুলতেই হবে। আমি এসে অবনীর শিয়রে বসে রইলাম।
এভাবে কঠিন সময় পার হচ্ছিলো সকলের। অবনীর বাবা মা, আমার বাবা মা সবাই নামাজে বসে দুয়া করছেন অবনীর জন্য। আর আমি ওর মাথার কাছে বসে ঠায় চেয়ে আছি অবনীর দিকে। আমার বোধশক্তি লোপ পেয়েছে।

কত লম্বা সময় যেন পেড়িয়ে যাওয়ার পর অবনীর জ্ঞান ফিরলো। কিন্তু আমাককে দেখেও কোনো পরিবর্তন হলোনা ওর! শুধু এ যাত্রায় বেঁচে গেলো।
প্রায় এক সপ্তাহ পর কিছুটা পরিবর্তন এলো। অবনী চোখ মেলে এদিক সেদিক তাকাতে পারে, মাথা ঘুরে তাকাতে পারে, ইশারায় টুকটাক কথাও বুঝতে পারে। কিন্তু হাত পা নাড়াতে পারেনা।
আমি সবসময় ই ওর সেবা করে যাচ্ছি। অবনীর বাবা মনে মনে অনেক খুশি। আমাকে ভূল বুঝে ভূল করেছিলেন সেটা বুঝতে পেরেছেন উনি।

এভাবে দেখতে দেখতে বিশ দিন পার হয়ে গেলো। অবনী আগের চেয়ে একটু ভালো হয়েছে। কিন্তু এখনো কথা বলতে পারেনা। হাটাচলার ও শক্তি নেই।
আমি অবনীর বাবাকে বললাম,আমি অবনীকে এই অবস্থাতেই বিয়ে করতে চাই। ওকে এভাবে হাসপাতালে ফেলে রাখা ঠিক হবেনা। আমি ওকে বাসায় নিয়ে গিয়ে সুস্থ করে তুলবো।

  • কিন্তু ও তো কথাই বলতে পারেনা। বিয়ে হবে কিভাবে?
  • হাতে কিছুটা হলেও জোর এসেছে। রেজিস্ট্রি পেপারে তো সাইন করতে পারবে? রাষ্ট্রীয় ভাবে বিয়েটা করি। ও কথা বলতে পারলে না হয় আবারো বিয়ে পড়াবো।
  • কিন্তু সেটা কেমন হয়ে যায়না?
  • আংকেল প্লিজ।আমি কথা দিচ্ছি,আমি অবনীর সাথে শারীরিক কিছুই করবো না। সবকিছু ঠিক থাকবে। কিন্তু নিজে ওকে সুস্থ করে তুলতে চাই। প্লিজ, না করবেন না।

আমার জেদের কাছে হার মানতে হলো ওনাকে। ম্যারেজ রেজিস্ট্রি করে অবনীকে বাসায় নিয়ে এলাম আমি। আমার আম্মু ও আমি সর্বক্ষণ ওর সেবা করে যেতে লাগলাম।ধীরেধীরে অবনীর শরীর অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠল। হাটতে পারেনা,কিন্তু কথা বলতে পারে টুকটাক। এই সুযোগে কাজী ডেকে বিয়েটা পড়িয়ে ফেললাম। এখন অবনী আমার স্ত্রী!
এরপর আরো দ্রুত ও সেরে উঠতে লাগলো। পুরোপুরি সুস্থ হতে সবমিলিয়ে সারে চার মাস লেগে গেলো।

কিন্তু সময়টা যত দীর্ঘই হোক, অবনী কে আপন করে পেয়েছি এটাই আমার জন্য অনেক। ও যদি সুস্থ নাও হতো, সারাজীবন এভাবেই ওর সেবা করে যেতাম। সবসময় যে ওর ভালোবাসা পেতেই হবে,এমন তো কথা নেই। আমি আমার ভালোবাসা দিয়েই সবটা পুষিয়ে দিতাম। এই চার মাসে অবনীর প্রতি আমার ভালোবাসা আরো বেড়ে গেছে।

আজ অবনী সম্পূর্ণ সুস্থ। ও শুয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। আমি বসে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর চেয়ে আছি ওর দিকে। ওর ঘুমন্ত মুখটা খুবই মায়াবী দেখতে। যতবার দেখি,ততবার ওর প্রেমে পড়ে যাই!
অবনী চোখ মেলে একবার তাকিয়ে ঘুম জড়ানো গলায় বলল,ঘুমোবে না?

  • উহু,আজ শুধু তোমাকে দেখবো।
  • এভাবে দেখছো কেন? আরো কাছে এসে দেখো।

অবনী দুহাতে আমার কলার টেনে ধরে আমাকে কাছে টেনে নিলো। আহ! কতদিন পর অবনী স্বাভাবিক হয়েছে! প্রায় ৫ মাস পর আমাকে কাছে টেনে নিলো ও।
বললাম, অবনী আই লাভ ইউ।

  • আই লাভ ইউ স্নিগ্ধ।
    বলেই আমাকে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরল।আমি ওর মাথাটা বুকের উপর চেপে ধরে রইলাম। মনে প্রশ্ন ছিল,সে কি ফিরে আসবে? ভেবেছিলাম অবনী আর ফিরবে না আমার কাছে। কিন্তু ভালোবাসার শক্তিতেই ও ফিরে এসেছে আবার।সত্যিই ভালোবাসার চেয়ে বড় কিছুই আর হয়না। খুব ভালোবাসি এই পাগলী টাকে,খুব বেশী ভালোবাসি 💜

লেখকঃ নীলাভ্র নেহাল

পুত্রবধূ (ধারাবাহিক গল্প) – Ekta Valobasar Golpo

নীল পদ্মাবতী (৮ পর্বের গল্প) – New Valobasar Golpo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *