হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ২১ | Love Story

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ২১: গত পর্বে নীলকে নিয়ে প্রিয়ন্তির অস্থির কিছু ভাবনা ও কল্পনা দেখেছি আমরা। নীলের একটু একটু করে এগিয়ে আসা ও গুরুত্ব দেয়াটা প্রিয়ন্তি বেশ পজিটিভ ও সবুজ সিগন্যাল হিসেবে নিয়েছিল। চলুন তবে দেখতে শুরু করি প্রিয়ন্তির এই ভাবনা কতটুকু বাস্তবতার দিকে নিয়ে যায়।
লজ্জাবতী প্রিয়ন্তী
চারজন একসাথে যাবে তাই কারেই রওনা দিল। নীল কার ড্রাইভ করছে আর প্রিয়ন্তী নীলের পাশের সিটে বসেছে।
তুরিন আপু আর তার হাজবেন্ড বসেছে পিছনে।
তুরিন আপু বারবার মজা করে কত কিছুই না বলছে। নীলের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই বললেই চলে। সে পৃথিবীর সব সিরিয়াসনেস দিয়ে ড্রাইভ করছে।
তাই বাধ্য হয়েই তুরিন আপু দমে গিয়ে বলল গান প্লে করতে।
নীল মিউজিক অন করতেই বেজে উঠলো,
আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি
তাই তোমার কাছে ফিরে আসি….
তুরিন আপু বলল,
: হ্যা রে নীল! আমরা কি শোক পালন করতে যাচ্ছি নাকি তোদের ব্রেকাপ পার্টি করতে চাচ্ছিস?
নীল বেশ বড় বড় চোখে তাকিয়ে জবাব দিল,
: আমাদের ব্রেকাপ মানে? আমাদের বলতে কার কার? আর ব্রেকাপ হবে কিসের!
তুরিন আপু প্রিয়ন্তীর দিকে এক পলক তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল। সে ভেবেছিল নীল আর প্রিয়ন্তীর মধ্যে কিছু একটা হয়েছে কিন্তু নীলের রিয়্যাকশন দেখে পুরোপুরিভাবে অবাক হয়ে গেল।
কিছুক্ষন এর মধ্যেই গাড়ী মাওয়া পৌঁছে গেল। প্রিয়ন্তী গাড়ী থেকে নামতেই খোলা আকাশের নিচে একটা প্রশান্তি অনুভব করল। সবাই নেমে নদীর পাড়ে গেল।
বাতাসে প্রিয়ন্তীর চুল উড়ছে। তুরিন আপুরা একপাশে ছবি তোলায় ব্যস্ত। নীল এসে প্রিয়ন্তীর পাশে দাড়াল।
প্রিয়ন্তীর মনে হচ্ছিল সিনেম্যাটিক রোমান্টিক সিনে আছে সে। সব কেমন অসম্ভব সুন্দর লাগছে তার কাছে। শুধু নীল আজ কেমন বিহ্যাভ করছে।
নীল হঠাৎ জিজ্ঞেস করল,
: চা খাবে?
: হ্যা খাবো।
নীল তারপর প্রিয়ন্তীকে নিয়ে একটা টং এ গিয়ে বসল। দুজনে চা নিল।
প্রিয়ন্তী মালাই চা নিলো আর নীল রং চা।
খেতে খেতে নীল প্রিয়ন্তীকে বলল,
: তোমার কপালের টিপটা বেশ সুন্দর। অনেক মানিয়েছে তোমায়,
(ইশশ শুধু টিপই সুন্দর আর আমি!)
: ধন্যবাদ।
নীল দোকানদার মামার সাথে কথা বলছিল। প্রিয়ন্তীর মনে মনে দুষ্টুমি করবে ভাবলো। ও দেখবে নীল কি রিয়্যাক্ট করে!
ও নিজের কাপটা রেখেই নীলের চায়ের কাপ নিয়ে চা খেয়ে নিল। নীল তাকাতেই বলল,
: ইয়ে মানে এখানকার রং চা কেমন সেটাই টেস্ট করছিলাম।
নীল হেসে বলল,
: তুমি চাইলে আরেক কাপ চা খেতে পারো। আমারটা থেকে টেস্ট করার দরকার নেই।
(প্রিয়ন্তী ভাবল, এহহহ আরেক কাপে খেলে তো খেতোই! বয়েই গেছে ওর রং চা খেতে! কেবল আপনার ঠোঁটের স্পর্শ ছুতে চেয়েছি আমি)
: আরে না খাব না আর।
চা খাওয়া শেষে বিল মিটিয়ে দিয়ে ফেরার সময় দোকানদার মামা বলে উঠলো,
: মামা আপনাগো একসাথে অনেক মানাইছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি সবসময় সুখে থাকেন একলগে।
প্রিয়ন্তীর মুখ মুহুর্তেই লাল হয়ে গেল। ও লজ্জা পেলেও খুব খুশি হলো মামার কথায়। চুপচাপ নীলের দিকে তাকিয়ে দেখল।
নীল ও হেসে মামাকে বলল,
আচ্ছা আসি মামা,
প্রিয়ন্তীও নীলের পিছুপিছু বেড়িয়ে এলো।
নীলের নীল কষ্ট
দুপুরে সবাই খেতে বসল। প্রিয়ন্তী প্রথমবার ইলিশ ভর্তা খাচ্ছে। এমনিতে ইলিশ ওর পছন্দ না। কিন্তু ডাক্তারবাবুর পছন্দ বলেই খাচ্ছে আজ।
খাওয়ার মাঝেই নীল জিজ্ঞেস করল,
: কেমন লাগছে ভর্তাটা?
: হ্যা অনেক মজা। সত্যিই ভাল লাগছে।
তুরিন আপু নিচে তাকিয়ে হাসছে। কারন আপু ঠিকই ধরতে পারছে যে প্রিয়ন্তীর এতোটাও পছন্দ হয়নি তবু নীলের জন্যই সে বলছে অনেক মজা।
খাওয়া শেষে ওরা অনেক্ষন আড্ডা দিল। নীল আবার চা আনতে গেল। সে সময় তুরিন আপু বলে উঠলো,
: প্রিয়ন্তী শোনো, যাকে ভালোবাসো তাকে সেটা জানাও। আর সে না বুঝলে তাকে বুঝাও। হয়তো পরে আর সুযোগই পাবেনা। তার চেয়ে আগে বলাই ভালো।
প্রিয়ন্তী কি বলবে বুঝতে পারল না। শুধু হেসে বলল,
: জ্বী আপু। আপনাকে আর ভাইয়াকে একসাথে দেখলে ভালোবাসার উপর ভরসা করতে ইচ্ছে হয়।
: এমনটা হতে হলে সেই উদ্যোগ তো নিতে হবে নাকি?
তুরিন আপুর হাজবেন্ড হঠাৎ বলল,
: সেটাই প্রিয়ন্তী। চা খাওয়ার পর তুমি নীলকে নিয়ে ওদিকটায় একবার ঘুরে এসো। ততক্ষনে আমরাও একটু সময় কাটাই কি বলো তুরিন?
তুরিন আপু হেসে বলল,
: উফফো তুমিও না!
চা খাওয়ার পরে নীল আর প্রিয়ন্তী নদীর ধারের ঘাসে বসল। প্রিয়ন্তীর ইচ্ছে হচ্ছিল নীলের হাতটা ধরতে তবু ধরল না। বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকার পরে প্রিয়ন্তীই বলল,
: চেষ্টা করছেন ভালো। তা কোন ডিসিশন নিলেন?
: দেখো প্রিয়ন্তী আমি আগেও বলেছি আমাকে দ্বারা এসব হবেনা। আই ডোণ্ট হ্যাভ ট্রাস্ট ইন কমিটমেন্ট অর রিলেশন। সো আই ডোণ্ট থিংক আমি এসবে আর ইনভলব হতে পারব।
: কি এমন কারণ যে এমন করছেন আপনি?
: দেখো মানুষ বারবার ঠকতে চায়না। তবে আমি জানি তুমি অন্যরকম। হয়তো আমায় অনেক ভালোবাসো। কিন্তু আমি এসবে আর জড়াতে চাচ্ছিনা।
: কেন জানতে চাই। কারণ না জেনে মেনে নিতে পারব না।
: তাহলে বলি,
আমি তখন মেডিকেলে সবেমাত্র ভর্তি হয়েছি। অনেক চুপচাপ স্বভাবের ছিলাম। কারো সাথেই সহজে মিশতে পারতাম না। তাই অনেকেরই ধারণা ছিল আমি ইচ্ছে করেই ভাব নেই। কলেজে প্রথম পরিচয় হয় এক মেয়ের সাথে। নাম মেঘা। আমারই ব্যাচমেট ছিল। ও নিজেই এসে এসে আমার সাথে মিশতে শুরু করল। আড্ডা দিতে দিতে এক সময়ে ভাল বন্ধুত্ব হয়। একদিন ও হঠাৎই বলে বসল আমাকে ভালোবাসে। আমি বিশ্বাস করিনি। পরে দেখলাম ও কেমন এভয়েড করছে আমায়। তাই আমিও হার্ট হতে শুরু করলাম। পরে নিজে গিয়ে সরি বলেছি আর রিলেশন এর জন্য রাজীও হয়েছি। বেশ ভালোই কাটছিল আমাদের দিন।
(প্রিয়ন্তীর চোখ লালচে মরিচের বর্ন ধারণ করেছে। নীলের অতীত ছিল তা ও জানতো কিন্তু এসব কথা কেন যেন ওর কানে তীরের মত আঘাত করছিল। তবু চোখের পানি ফেলল না সে।কারো সামনেই চোখের পানি ফেলা ঠিক নয়।বিশেষ করে অতি প্রিয়জনদের সামনে।)
নীল আবার বলতে লাগল,
: ৭মাস পেরিয়ে গেল সম্পর্কের। সবই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু হঠাৎ যেন কি হলো! মেঘা পুরোপুরি বদলে গেল। আগের মত কথা বলছে না, দেখা করছেনা। আমি বললেও কোনো না কোনো অযুহাত দিতে শুরু করল। প্রথম দিকে ভাবতাম হয়তো সত্যিই ব্যস্ত। পরে বুঝলাম আসলে ও ইচ্ছে করেই করছে। (চলবে)
পরের পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ২২