হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প ২২

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ২২ | Love Story

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ২২: গত পর্বে দুজনে কিছু মুহুর্ত উপভোগ করেছে, এক পর্যায়ে প্রিয়ন্তীকে নীল তার পূর্বের রিলেশনের কথা বলেছে। চলুন তবে নীলের পূর্বের ইতিহাসের বাকি কথাগুলো শুনি।

প্রেমের নীল কষ্ট

নীল নদীর দিকে তাকিয়ে একমনে বলতে লাগলো,
: আগের মতো মেঘাকে ডাকলে কিংবা ফোন দিলেও পেতাম না। আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছিল। শেষে নিজেই ওর হলের সামনে চলে গেলাম। ও আমাকে দেখেই চলে যেতে চাইল। কিন্তু আমার উত্তর দরকার ছিল। ও কেন আমার সাথে এমন করছে?
প্রথম বার ওকে জোড় করেই রাগ দেখিয়ে কথা বলেছিলাম সেদিন।

ও ভয়ে কিছুই বলছিল না। আমি শুধু আমার ভুলটা জানতে চাইছিলাম।
ও প্রথমে বলল ওর ফ্যামিলি মেনে নিবেনা আমাদের সম্পর্কটা। আমি নিজে বললাম ওর বাসায় কথা বলব। তবু ও রাজী হচ্ছিল না।
হঠাৎ ওর আম্মু এলো সেই মুহুর্তেই হলে ওর সাথে দেখা করতে।
আমি ওই মুহুর্তে রাগে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। তাই কোন কিছু না ভেবেই ওর মাকে আমাদের ব্যাপারে বলি।
সেই সময় মেঘা কান্না করছিল। আমি ওর দিকে তাকাইনি। ওর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি তিনি কি বলেন।
আন্টি কিছু বলার আগেই মেঘা কি বলেছিল জানো?
প্রিয়ন্তী জিজ্ঞেস করল,
: কি?
: মেঘা বলে উঠলো দেখো নীল আম্মু যাই বলুক, ফ্যামিলি মানবেনা এটা কোন বড় কথা না, আমরা সেইম এইজ এটাও ফ্যাক্ট না বাট দ্যা মেইন ফ্যাক্ট ইজ আমি তোমাকে ভালোবাসিনা।
বিশ্বাস করো প্রিয়ন্তী আমার পায়ের নিচের মাটি সড়ে গেছিল। নিজেকে খুব নগন্য আর অসহায় মনে হচ্ছিল। কি এমন কারণে মেঘা এমন করছে বা বলছে আমি জানতাম না।

শুধু একটা কথাই বলেছি ওর কথার জবাবে যদি ও ভালোই না বাসে আমায় তাহলে আমারো আর কিছু বলার নাই। আন্টিকে সরি বলে চলে এসেছিলাম।
এরপর লাইফটা কতখানি বদলে গেছে নিজেও জানিনা। ওয়ান ইয়ার ড্রপ দিলাম। কোন কিছুতেই কন্সিন্ট্রেট হচ্ছিল না।
প্রিয়ন্তী চুপ করে আছে। কি বলবে সে! ওর নিজেরই কষ্ট হচ্ছে প্রচণ্ডভাবে।
নীল আবার বলল,
: পরে কি জেনেছিলাম জানো?
মেঘা সবার সাথে বাজী ধরে আমাকে প্রেমের ফাদে ফেলেছিল। ও কখনোই সত্যিকারে আমাকে ভালোই বাসেনি,

দুজনেই চুপ। চারপাশে বাতাসের প্রবাহটাও থমকে আছে। প্রিয়ন্তীর এই মুহুর্তে কি বলা উচিৎ সে জানেনা। শুধু একনজর নীলের চোখ জোড়া দেখল। মায়াভরা চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। পানি টলমল করছে কিন্তু গড়িয়ে পড়ছেনা।

নিস্তব্ধ মায়া

প্রিয়ন্তী উঠে গেল নীলের পাশ থেকে। ও আর নিতে পারছিল না।
তুরিন আপু গাড়ীর পাশে দাড়িয়েছিল। প্রিয়ন্তী দৌড়ে গিয়ে আপুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।
আপু কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। বারবার প্রিয়ন্তীকে জিজ্ঞেস করছিল, কি হয়েছে?
প্রিয়ন্তী কিছুই উত্তর দিতে পারছেনা। অনবরত কান্নাই করছে সে। নীল আর ভাইয়া কাছাকাছি আসতেই প্রিয়ন্তী মুখ উঠিয়ে চোখ মুছে নিল।
গাড়ীতে তুরিন আপুর পাশে পিছনের সিটে বসল।
আপুর কাধে মাথা রেখে লুকিং গ্লাসে নীলকে আবছা আলোয় দেখছে আর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

প্রিয়ন্তীর খুব অপরাধ বোধ হচ্ছিল। কেন হলো এমন? এমনটা তো না হলেও পারতো! নীলের জন্য খারাপ ও লাগছে আবার ভাবছে মেঘার অপরাধ এর জন্য ওর ভালোবাসার কোন মূল্য রবেনা!
আচ্ছা সবসময় কি ভালোবাসলে তার মূল্য পাওয়া যায়? সত্যিকার ভালোবাসাগুলো কি সত্যিই এর প্রতিদান পায়?
দেখতে দেখতে প্রিয়ন্তী নিহার বাসার কাছে চলে এলো।
কোন কথা বলতে পারছেনা সে।

উপরে গিয়ে বাসায় ঢুকতেই নিহা রাকা ছুটে এসে ওকে ঘিরে ধরল। কি হয়েছে না হয়েছে জানতে!
কিন্তু প্রিয়ন্তী চুপ। কোন কথা বলছেনা। ওর চোখ কেমন ফুলে আছে। নিহারা বুঝতে পারলোনা। কি এমন হলো!
তবু কেউ আর কিছু জিজ্ঞেস করল না।
রাতে প্রিয়ন্তী আগেই শুয়ে পড়ল।

নিহার বিয়েতে সবাইকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে এমনকি নীল আর তুরিন আপুকেও। সেদিনের পর প্রিয়ন্তী নীলের সাথে আর কোন যোগাযোগ করেনি।
বিয়েতে কি নীল আসবে? মাঝে মাঝে ভাবে ও।
বিয়ের সব আয়োজন নিয়েই ব্যস্ত থাকছে সে।
নীলের অভাব যেন কম কম অনুভব হয়। তবু সারাদিন শেষে রাতে খুব কান্না পায় ওর।

বিব্রত ভাবনা

দুদিন বাদেই নিহা আর তানুর গায়ে হলুদ। আজ মেহেন্দি প্রোগ্রাম করেছে সবাই মিলে। কিন্তু প্রিয়ন্তীর এসব নিয়ে অতো বেশী এক্সাইটমেন্ট নেই। সে শুধু সব কাজ কর্মে নিজেকে জড়িয়ে রাখছে। অর্ন রীতিমতো জোড় করে ওকে মেহেদী পড়িয়ে দিল। মেহেদীর ডিজাইনে সবাই সবার পার্টনারের নামের প্রথম অক্ষর লিখেছে। অর্ন ও প্রিয়ন্তীর হাতে ইংরেজি এন লিখে দিল।
প্রিয়ন্তীর এটাতে চোখ পড়তেই এক ঝটকায় হাত টেনে নিয়ে সম্পূর্ণ ডিজাইন মুছে ফেলল। আর উঠে সোজা রুমে চলে গেল। অর্ন কিছু না বুঝতে পেরে ওর পিছুপিছু গেল। গিয়ে দেখল প্রিয়ন্তী বারান্দার গ্রীল ধরে জোড়ে জোড়ে কান্না করছে। চারপাশে গানের শব্দে শুনা যাচ্ছেনা।

অর্ন কাছে যেতেই প্রিয়ন্তী চোখ মুছে নেয়ার চেষ্টা করল।
অর্ন বলে উঠল,
: চোখ মুছে কি হবে? কান্না লুকালেই কি কষ্টকে আড়াল করা যায়?
প্রিয়ন্তী জবাব দিল না।
অর্ন জানতে চাইলে শেষে বাধ্য হয়ে সব ঘটনা খুলে বলল।

অর্ন সব শুনে নিজেও শকড হলো। তবু প্রিয়ন্তীকে বুঝালো যে নীল হয়তো এখন চাচ্ছেনা। কিন্তু মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন হতেই পারে। তাই বলে ভেঙ্গে পড়লে কি করে হবে!
প্রিয়ন্তী ও ভাবল,
ঠিকই তো। সে কেন ভেঙ্গে পড়বে? নীলকে বুঝাবে সে। ফিরিয়ে আনবে ওই কষ্টের জীবন থেকে। তার ভালোবাসা দিয়ে নীলকে সে আবার আগের নীল বানাবেই। (চলবে)

পরের পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *