হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প ১৯

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৯ | Love Story

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৯: গত পর্বে নীলের জন্য প্রিয়ন্তির অধির আগ্রহে অপেক্ষা করা এবং অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নীলের বাইক ভ্রমণ ও প্রিয়ন্তির গানে দুটো মন ভেসে যাওয়া দেখেছি আমরা। আজ দেখি তারা দুজনে কোথায় যায় এবং কি করে?

বনফুলের মন

নীল বাইক নিয়ে বসিলা ব্রীজে যেতেই প্রিয়ন্তী বলে উঠলো,
: চলুন না এখানে একটু নেমে দাড়াই?
আমি নদী দেখব।
নীল ব্রিজের এক পাশে বাইক দাড় করালো।
প্রিয়ন্তী নেমেই আশে পাশে দেখছে। বাতাসে তার চুল উড়ছে। নদীর ছবি তুলল সে। নীল হেলমেট পড়েই পাশে দাড়িয়ে দেখছে।
প্রিয়ন্তী নীলের হাত টেনে বলল চলুন আমরাও সেলফি তুলি। নীল রাজী হয়ে গেল। প্রিয়ন্তীর খুব খুশি লাগছিল। রোদ থাকায় বেশিক্ষন থাকলো না ওরা।
বাইক নিয়ে সোজা মধুর সিটির সামনে।
মধুর সিটির মূল আকর্ষন একটি সুন্দর পরিপাটি বাড়ী। কোন এক প্রজেক্টের বাড়ীটা।
নীল, প্রিয়ন্তী বাড়ির পাশের ছোট গলিতে ইটের উপর বসল। আশেপাশে কাশফুলের ছড়াছড়ি।এত্ত এত্ত সাদার শুভ্রতা আর সাথে নীল।

প্রিয়ন্তী বলল,
: বাড়ীটা বেশ সুন্দর তাইনা?
: হ্যা অনেক। তোমার ফ্রেন্ডকে ফোন করোনা। ওরা এখনো এলো না যে!
: আরে চলে আসবে।
: তাও খবর নেয়া দরকার।
: আজব ওরা কি বাচ্চা যে হারিয়ে যাবে! আসুক না দেরী করেই!
নীল অত:পর চুপ করে গেল। পাশে দেখতেই প্রিয়ন্তী দেখল বেশ সুন্দর একটা বনফুল,
মোট তিনটে রং ফুলটায়। মাঝে হালকা বাদামী, এরপর গাড় হলুদ আর পাপড়ি গুলো গোলাপী। প্রিয়ন্তী নীলকে ফুলটা দেখাতেই নীল বলল,
: বাহ খুব সুন্দর তো।
নীল নিজেও ফুল নিয়ে দেখতে লাগল। নীল আরো এক ধরনের ফুল পেল। খুব ছোট টকটকে লাল একটা ফুল। ফুলগুলো বনফুল হওয়ায় দুজনের কেউই নাম জানেনা। ফুলটা নিয়ে নীল প্রিয়ন্তীকে দেখাল।
প্রিয়ন্তী মনে মনে ভাবছিল,
“ইশ এখন যদি নীল ফুলটা ওকে দিয়ে ভালবাসি কথাটা বলতো! বলুক না! কি এমন হয় বললে! আর কত অপেক্ষা করবে প্রিয়ন্তী!”

নীল সত্যিই ফুলটা প্রিয়ন্তীকে দিল। কিন্তু কিছুই বলেনি। উফফফফ বুদ্ধু এক ছেলে,
কি এমন ক্ষতি হয় বলে দিলে? প্রিয়ন্তী কি নিজেই বলবে আবার?

নীল আবার বলল,
: রাকাকে ফোন করোনা। ওরা কোথায়?
: আপনি এমন করছেন কেন বলেন তো? আমিই চাই ওরা পরে আসুক। হয়তো ওরা আটকে গেছে অথবা নিজেদের মতো সময় কাটাচ্ছে। আপনার এতো সমস্যা কি? আমরাও আমাদের মতো থাকি না?
নীল এবারো থেমে গেল। এই প্রিয়ন্তীর সাথে সে কথায় পারবেই না।

রাকা আর সাব্বিরও চলে এলো। প্রিয়ন্তী মজা নিয়ে বলল,
: কিরে হারিয়ে গেছিলি নাকি? তা ফিরে আসার দরকার কি ছিল শুনি!
রাকা: হারাবো কেন? আমিতো ইচ্ছে করেই দেরী করলাম। যাতে মানুষজন একটু সময় পায়।
নীল আর সাব্বির হাসছে ওদের মেয়েদের কথোপকথন শুনে।

সিনেমাটিক দৃশ্য

প্রিয়ন্তী হঠাৎ কাশবনের মাঝে এক উচু ইটের দেয়াল দেখে। এর উপর দিয়ে হেটে কাশফুল দেখতে চাইলো। নীল প্রথমে না বললেও রীতিমতো বাধ্য হয়ে নিয়ে গেল কারন প্রিয়ন্তীও নাছোড়বান্দা।
দেয়ালটা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে প্রিয়ন্তী গেয়ে উঠলো,
তুমি জানোনা..
ও তুমি জানো নারে প্রিয়,
তুমি মোর জীবনের সাধনা,
তোমায় প্রথম যেদিন দেখেছি,
মনে আপন মেনেছি।
তুমি বন্ধু আমার বেদন বোঝো না,

নীল: তোমার গান শুনে প্রেমে পড়ে গেলাম মিস প্রিয়ন্তী।
এ কথা শুনে প্রিয়ন্তী পিছনে ঘুরে তাকাতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলো। নীল তাড়াতাড়ি হাত ধরে টান দেয়ায় প্রিয়ন্তী জোড়ে নীলের বুকের সাথে ধাক্কা খায়। প্রিয়ন্তীর শ্বাস প্রশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছিলো।
কি শুনলো আর কি হলো,
ফিরে আসতেই রাকা বলে উঠলো,
: দেখ নায়ক নাইকার পিক কি সুন্দর এসেছে।
প্রিয়ন্তী ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলো রাকা চুপিচুপি ওর আর নীলের কত ছবি তুলেছে।
মুখে বকা দিলেও মনে মনে রাকার উপর খুশিই হলো প্রিয়ন্তী।

সন্ধ্যা পড়ে গেলে চারজন মিলে বিশাল ফুড কোর্টের এক টেবিলে বসল।
খেতে খেতে কিছুক্ষন আড্ডা চলল।
প্রিয়ন্তী শুধু আড্ডার পুরোটা সময়ে লুকিয়ে লুকিয়ে নীলকে দেখছে। অবশ্য ঠিক নীলকে না নীলের ওই মায়াভরা চোখজোড়া দেখছে অপলকভাবে।
এভাবে যেন বহুকাল চেয়ে থাকা যায়,
(চলবে)

পরের পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ২০

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *