হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ২: গত পর্বে আমরা দেখেছি প্রিয়ন্তী ও তার ক্যাম্পাস লাইফের একটু অংশ, যেখানে নীল নামের একটি ছেলেও ছিল। শুরুটা প্রিয়ন্তীর প্রতি নীলের রিরক্তি দিয়ে শুরু হলেও, এই বিরক্তি কোন দিকে মোড় নেয় তা দেখার পালা। চলুন দেখি কি হয় নীল ও প্রিয়ন্তীর মাঝে?
দ্বিতীয় দেখা
সকালে ঘুম ভাঙতেই প্রিয়ন্তী ঘড়িতে দেখল বেলা বারোটা বেজে গেছে।
তাড়াতাড়ি উঠেই মায়ের ঘরে গেল।
কিন্তু মা বাসায় নেই,ছোট ফুপীর বাসায় গেছে শুনে প্রিয়ন্তীর মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। তাকে নিয়ে গেলেই পারতো!
ছোট ফুপী প্রিয়ন্তীর বেস্ট ফ্রেন্ড। যেকোন সমস্যার সমাধান প্রিয়ন্তী তার কাছেই পায়।
নাস্তা সেরেই দ্রুত বেড়িয়ে পড়ল সে। গাড়ীতে উঠেই গান শুনছিল হেডফোনে। হঠাৎই গাড়ী হার্ড ব্রেক করায় সামনে চোখ গেল তার। কোন এক ছ্যাবলা গাড়ীর সামনে চলে এসেছে! মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল প্রিয়ন্তীর! লোকটা কি মরার জন্য কেবল তার গাড়ীটাই পেয়েছিল! গাড়ী থেকে নেমে সামনে যেতেই দেখে কালকে টি এস সি তে দেখা সেই ছেলেটি! একটা ছোট্ট কুকুর ছানা হাতে দাঁড়িয়ে। কাছে যেতেই ছেলেটি প্রিয়ন্তী কে বেশ চড়া গলায় কথা শুনালো! কেন দেখে ড্রাইভ করা হয়না! এতটুকু কুকুর ছানা টা যদি আজ গাড়ীর নিচেই পড়তো নির্ঘাত মারা যেত। প্রিয়ন্তী কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না!
ছেলেটা কেমন অন্যরকম সুন্দর। চোখে কেমন একটা মায়া কাজ করে! একটা ছেলে এতটা মায়াভরা চোখের অধিকারী হতে পারে তা প্রিয়ন্তীর ধারনায় ছিল না। মেয়েদের না হয় মায়াবতী বলা হয়, কিন্তু একটা ছেলেকে কি বলে? “মায়াবতী” শব্দটার কি কোন পুরুষবাচক শব্দ আছে!
হঠাৎই প্রিয়ন্তীর ঘোর কাটতেই সে দেখল ছেলেটা চলে যাচ্ছে। খুব ডেকে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল তার! কোন উত্তরই দিতে পারেনি সে! ছেলেটার চোখ দেখতে গিয়ে সব কেমন গুলিয়ে গেল ধ্যাত!তাই শেষমেশ গাড়ীতেই ফিরে এলো সে।
ক্যাম্পাসে আসতেই নিহা, রাকা আর অর্নর সাথে দেখা করলো প্রিয়ন্তী। আড্ডায় আড্ডায় ছেলেটার কথাও শেয়ার করে ফেলল। ওরা তো হতবাক! প্রিয়ন্তী কোন ছেলেকে নিয়ে এভাবে বলছে! আবার ছেলেটার চোখ নিয়ে কমপ্লিমেন্ট ও দিচ্ছে!কিভাবে সম্ভব! যে মেয়ে আজ অবধি কোন ছেলেকে পাত্তা দেয়নি সে কি না কোথাকার কোন ছেলেকে দেখে এসে এসব বলছে!
তৃতীয় দেখা
প্রিয়ন্তীর আজ জলদি বাসায় ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছিল। তাই কোথাও না বসেই বাসায় গেল। বাসায় গিয়ে শুনলো মা ফেরেনি। মা কে ফোন দিতেই জানতে পারলো তার ছোট ফুপা অসুস্থ হওয়ায় সবাই হসপিটালে এখন। তাই সে-ও দেরী না করে সোজা হসপিটালে গেল।
সি.সি.ইউ. তে ফুপাকে নেয়া হয়েছে তাই সবাই বাইরেই দাঁড়িয়ে। প্রিয়ন্তী গিয়েই ছোট ফুপীকে বুঝালো কিছুই হবেনা ফুপার দেখো, আল্লাহ ভরসা। হঠাৎ অর্নর ফোন আসায় বারান্দায় আসলো প্রিয়ন্তী। কথা বলতে বলতে বারান্দার পাশে হাটছিল। নিচে চোখ পড়তেই দেখলো সকালের সেই ছেলেটি! তাড়াতাড়ি ফোন কেটে নিচে গেল সে। ছেলেটার সাথে যে সকালে কোন কথাই হলো না তার।
নিচে গিয়ে ছেলেটির সামনে গিয়ে থমকে গেল! আবার সেই চোখ উফফ! ছেলেটা এক আন্টির সাথে কথা বলছে। কাধে স্টেথোস্কোপ ঝুলছে। তার মানে কি ছেলেটা ডাক্তার? উফফ! এই ডাক্তার যদি এমন চাহুনি নিয়ে পেশেন্ট এর দিকে তাকায়, সে তো এমনিই সুস্থ হয়ে যাবে!
নীল (গল্পের নায়ক) এদিকে তাকাতেই প্রিয়ন্তীর সাথে চোখাচোখি হলো। সে নিজেই প্রিয়ন্তীর সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো, “কিছু বলবেন? কোন দরকার?”
নীলের প্রশ্নে প্রিয়ন্তী চমকে ওঠে আর থতমত খেয়ে উত্তর দেয়, “ইয়ে-মানে, না দরকার না আসলে!”
নীল বিরক্তির ভঙ্গিতে চলে গেল আর মনে মনে ভাবলো, “এই মেয়ে এমন কেন?”
যাইহোক নীল তার কাজে আবার মনযোগ দিল। চলবে…