রাগী মেয়ের ভালোবাসা – অফিসের বসের সাথে প্রেম শেষ পর্ব: অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছি ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে। তাই স্বাভাবিক হতে কষ্ট হচ্ছে খুব। এদিকে ম্যাম একের পর এক পাগলামি আর ক্ষমা প্রার্থনা করেই যাচ্ছে। হয়তো আমি আর অভিমান করে থাকতে পারব না।
বসের দুষ্টুমি ভালোবাসার পরশ
আমি হাপাচ্ছি। নিলা একটু দম নিয়ে তার বান্ধুবিদের বলতে
লাগলো,
নিলাঃ কি হয়েছে? তোদের আসার আর সময় টময় নেই। চলে এসেছিস, দেখছিস যে আমরা দুজন একসাথে আছি। মন চায় আরো কিন্তু তোদের জন্য আর কিছুক্ষণ পারলাম না।
ওর এই কথা শুনে ওর বান্ধুবিরা হেসে বললো,
ওর বান্ধবিরাঃ তা হলে আমরা আসি।
নিলাঃ না থাক, যাওয়া লাগবে। না ওর সাথে পরিচিত হয়ে নে।
আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম, এরা তো তারাই যারা আমাকে আগে
অপমান করেছিল। এবার আমি নিলাকে বললাম,
আমিঃ আমার মতো ছোট লোকের সাথে কি ওনারা পরিচিত হবেএএ।
নিলার বান্ধুবিরাঃ সরি ভাইয়া, সেদিন বুঝতে পারিনি যে নিলা আপনাকে
এত ভালোবাসে।
আমিঃ আসলেই কিন্তু আমি একটা ছোটলোক।
বান্ধুবিরাঃ সরি ভাইয়া, আমরা বুঝতে পারি নি। আমরা তো আপনার
ছোট বোনের মতোই। ওই দিনের কথা ভুলে যান। প্লিজ প্লিজ।
আমিঃ আচ্ছা, ঠিক আছে।
বান্ধুবিরাঃ আচ্ছা, নিলা। আমরা যাই, তুই তোর কাজ শেষ কর।
ওরা চলে গেলো। নিলা আমার দিকে ঘুরে তাকালো।
নিলাঃ কাছে আসো।
আমিঃ কেন?
নিলাঃ বাকিটুকু সেরে নেই।
আমিঃ বাকিটুকু মানি।
নিলাঃ তুমি আসোতো, এত বুঝাতে পারবো না। আজ কোনো বাধা দিবে না
আমাকে। আমার মন যতক্ষণ না বলে ততক্ষণ ছাড়ছি না তোমায়। এই কথা বলে নিলা আমার উপর ঝাপিয়ে পরলো। আমি সত্যি নিলাকে কোনো বাধা দিতে পারিনি।
অনেক্ষণ পর নিলা আমাকে ছেড়ে দিল।
আমার ঠোট জোড়া লাল হয়ে গেছে।
চোখ জোড়া আগুন হয়ে গেছে।
ওর মতিগতি ভালো না দেখে আমি পাশ কাটিয়ে নিচে দৌড় দিলাম।
নিলা পিছন থেকে বলতে লাগলো,
নিলাঃ এই কোথায় যাও? এখনো হয়নি তো। আমার এদিকে আসো।
আমি এই কথা শুনে আরো জোরে দৌড়িয়ে নিচে চলে এলাম।
বসের অহংকারী মেয়ের ভালোবাসা
নিচে যেতেই রুমা এসে ধরলো।
রুমাঃ তোমাকে কতক্ষণ ধরে খুজছি? তুমি কোথায় গিয়েছিলে?
আমিঃ উপরে ছিলাম।
রুমাঃ তোমার চোখ এমন কেন? ঠোঁট জোড়া লাল হলো কিভাবে?
কি হয়েছে আমাকে বলোতো ?
রুমা কি কিছু বুজে ফেললো নাকি!
আমিঃ ককই, কি হয়েছে? গরম চা খেতে গিয়ে এমন হয়েছে।
রুমাঃ ও আমি তো অন্যকিছু মনে করেছি।
আমিঃ আচ্ছা চলো, ওই দিকে চলো।
কিছুক্ষণ পর খাওয়ার সময় হয়ে গেল। আমরা বসে গেলাম খেতে। খাবার যেই মুখে দিতে যাব তখন কে যেন হাত ধরলো।
তাকিয়ে দেখি নিলা।
আমিঃ কি ব্যাপার, ম্যাম?
নিলাঃ তুমি এখানে খাচ্ছো কেন?
আমিঃ তো কোথায় খাব?
নিলাঃ ভিতরে আমার সাথে ।
আমিঃ সরি, সবাই যেহেতু এখানে খাচ্ছে আমিও এখানে খাবো।
নিলা কিছুটা রেগে বললো,
নিলাঃ ওই তুমি আর সবাই এক হলে নাকি! তাছাড়া বাবা তোমাকে ভিতরে যেতে বলেছে।
কি আর করার স্যার যেহেতু বলেছে তা হলেতো যেতে হবেই।
ওনার সাথে ভিতরে গেলাম।
উরিমা এত খাবার! কে খাবে?
নিলাঃ কি ব্যাপার দাড়িয়ে আছো কেন? বসো।
আমি বসলাম। নিলাও বসলো।
আমিঃ স্যার কোথায়?
নিলাঃ ভিতরে। আচ্ছা ডাকছি। বাবা বাবা।
কিছুক্ষণ পর স্যার আসলেন।
আমি, নিলা আর ওর বাবা খাচ্ছি।
খাওয়ার মাঝে নিলার বাবা বললো,
শোনো জনি, আমার মেয়েটা এতটা খারাপ না যতটা তুমি ভাব।
আমি এবার খাওয়া রেখে ওনার দিকে তাকালাম। ওনি কেন আমাকে এসব কথা বলছেন?
ওনি আবার বলতে লাগলেন,
আমার মেয়েটা উপরে একটু রাগী কিন্তু ওর ভিতরটা একদম নরম।
একেবারে ওর মায়ের মতো। কিন্তু বাকিটুকু এমন হয়েছে ওর মা নেই
বলে। ওর মাও খুব ছোট থাকতেই মারা যায়।
ভালোবাসার কাঁটা
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললো,
নিলাকে কখনো কারো জন্য কাঁদতে দেখিনি। কিন্তু তোমার জন্য ও প্রায়ই কাদে। যা আমার চোখ এরায় না।
নিলাঃ এবার চুপ করোতো বাবা। খাওয়ার ভিতর এত কথা বলে কেউ।
আমি নিলার দিকে তাকালাম।
ও মাথা নিচু করে আছে। লজ্জায় নাক কান গাল লাল হয়ে আছে। যা লাগছে না এখন ও…
আমি খেয়ে উঠতেই ও নিজের খাওয়া রেখে টাওয়েলটা এগিয়ে দিল।
আমি হাত মুছে স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসবো তখন ম্যাম আমার হাত ধরে বললো আজকে থেকে গেলে হয়না।
আমিঃ এইটা কি আমার কোনো রিলেটিবের বাসা নাকি যে থেকে যাব!
নিলাঃ ও তোমার কথার শুর এখনো বদলায়নি। তখনকার মতো আরেকটা লাগবে বুঝি। আসো এদিকে আ…
আমি এ কথা শুনে এক দৌড় দিয়ে মেইন রাস্তায় চলে আসলাম।
তারপরের দিন থেকে আবার অফিস।
এখন নিলা ম্যামকে দেখলে আগের মতো মনমরা লাগে না। একটু খুশি খুশি মনে হয়।
তো সেদিন অফিসে বসে কাজ করছি।
তখন রুমা আসলো আমার ডেক্সে।
রুমাকে কেমন উওেজিত মনে হচ্ছে। আমাকে হুট করে বলে ফেললো,
রুমাঃ জনি তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আমিঃ হ্যা বলো।
রুমাঃ এখানে না কেন্টিনে চলো। সেখানে কফি খেতে খেতে বলি।
আমিঃ দেখছো না, হাতে কাজ। এখানেই বলো।
রুমা আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল। আর বলতে লাগলো,
রুমাঃ আমার জরুলি কথা, না বলে থাকতে পারবো না। চলো।
কেন্টিনে বসে আছি অনেক্ষণ ধরে। কিন্তু রুমা কিছু বলছে না।
আমিঃ কিছু তো বলো। কাজ রেখে এসেছিতো।
রুমাঃ বলতেছি তো।
আমিঃ হমম, বলো। তাড়াতাড়ি বলো।
রুমা হুট করে আমার হাত ধরে দ্রুত বলে দিল- জনি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি।
আমি হাত ছাড়িয়ে বললাম, কি বলছো তুমি এসব?
রুমাঃ আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি। ম্যামের মতিগতি ভালো দেখছি না। তাই তোমাকে এত তাড়াতাড়ি বলে দিলাম।
আমিঃ দেখো, আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না।
রুমাঃ কেন?
আমিঃ কারণ আমি একজনকে ভালোবাসি।
রুমাঃ কে সে?
আমিঃ আমাদের নিলা ম্যামকে।
রুমাঃ তোমার সাথে এতকিছু করেছে তারপরেও ওনাকে ভালোবাসো।
আমিঃ হ্যা কিন্তু সেটা কখনো প্রকাশ করবো না।
এই কথা বলতেই রুমা কেঁদে দিল।
আমিঃ আহা কাঁদছো কেন? প্রেমিকা হয়ে নয় ভালো বন্ধু হয়েতো পাশে থাকতে পার।
এই কথা বলাতে রুমা চুপ হয়ে গেল।
আমিঃ এইতো ভালো মেয়ে।
এই বলে ওর চোখ দুটো মুছে দিলাম।
ভুল বোঝাবুঝি প্রেম
হঠাৎ কারো কান্নার আওয়াজে পাশে তাকালাম।
চেয়ে দেখি নিলা ম্যাম কান্না করতে করতে দৌড়ে চলে যাচ্ছে।
আহা সব গেল। ওনি আসলেন কখন?
রুমাঃ আমার জন্য ম্যাম তোমাকে ভুল বুঝলো। দাড়াও আমি গিয়ে বলছি।
আমিঃ থাক, বলা লাগবে না। যা হওয়ার তা তো হয়েছেই।
রুমাঃ না, তারপরেও আমার জন্য তোমাকে ভুল বুঝলো।
আমিঃ সমস্যা নেই। আমি পরে বুঝিয়ে বলবো।
এখন চলো সময় হয়ে গেছে।
অফিসে ঢুকে ভাবলাম, ম্যামের কেবিনে একবার যাই। গিয়ে ভুলটা ভাঙ্গিয়ে আসি।
ম্যামের কেবিনের সামনে গিয়ে দরজাটা একটু ফাক করতেই দেখি ম্যাম টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদছে। এটা দেখে আমার খুব খারাপ লাগলো।
এভাবে কখনো কাঁদতে দেখিনি তো, তাই!
নাহ, এখন রেগে আছে। আমি বরং পরে যাই।
বিকালে দেখলাম ম্যাম আগেই বেরিয়ে গেল।
আফসোস নিয়ে বাসায় ফিরলাম। বিনা কারণে কেউ আমায় ভুল বুঝলো।
পর দিন থেকে ম্যাম আমার সাথে একটা কথাও বললো না।
আমাকে ইগনোর করতে শুরু করলো। একটু কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। এভাবে তিন দিন চলে গেল। এই তিনদিন নিলা আমাকে নানা ভাবে এড়িয়ে যেতে লাগলো।
যে মেয়ে আমার সাথে একটু কথা বলার জন্য পাগল হয়ে যেতো সে মেয়ে আজ তিনদিন আমার সাথে কথা বলে না আমাকেও বলতে দেয় না। সবসময় এড়িয়ে চলছে বিনা কারণে। না, আর মেনে নেয়া যায়না।
আমি সোজা ম্যামের কেবিনে ঢুকে গেলাম।
দেখলাম, ম্যাম মাথা নিচু করে বসে আছে।
আমি যেতেই ম্যাম মাথা উচু করে আমার দিকে তাকালো।
আমি বলতে লাগলাম,
আমিঃ নিলা, তুমি আমাকে শুধু শুধু ভুল বুঝেছো। তুমি যেটা দেখেছো…
আমাকে আর বলতে দিল না। উঠেই শরিলে যত শক্তি ছিল তা দিয়ে একটা
থাপ্পর মারলো। তার পর বলতে শুরু করলো,
নিলাঃ শেট আপ মিষ্টার জনি। ভুলে যাবেন না আমি আপনার বস। আর আপনি আমার কোম্পানির সামান্য একজন কর্মচারি, বুঝতে পেরেছেন।
এই কথা শুনে বুকটা ধক করে উঠলো।
রাগ ও প্রেম
আমি তারপরেও সাহস সঞ্চয় করে বললাম,
আমিঃ আসলেই আপনি সেই দিন ভুল দেখেছেন। আপনি আমাকে শুধু শুধু ভুল বুঝছেন।
ম্যামঃ আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না আমি। আপনি এখন যেতে পারেন।
আমি কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে আসলাম। সেখান থেকে সোজা ওয়াস রুমে চলে আসলাম। ওর দেওয়া থাপ্পরের চেয়েও ওর বলা কথাগুলো আমাকে বেশি আঘাত করেছে। চোখের পানি কেন জানি আমার বাধা মানছে না।
আয়নায় তাকিয়ে দেখি ঠোট ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। রক্ত মুছে চোখে পানি দিয়ে বের হলাম। এরপর ডেক্সে গিয়ে বসলাম।
নিলা বাসায় গিয়ে ওয়াস হবে। তখন তার হাতের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দেয়।
তার হাতে রক্ত লেগে আছে আমার ঠোটের।
নিলা জোরে কেদে দেয়। আর চিৎকার করে বলতে থাকে,
নিলাঃ এই হাত দিয়ে আমি আমার জানকে মেরেছি। জানি, তুমি কষ্ট পেয়েছো। তোমার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছি আমি।
নিলা চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে চোখ লাল করে ফেলেছে।
নিলা তার রুমে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে।
অন্য দিকে নিলার বাবা নিলাকে খেতে ডাকছে।
যখন দেখলো কোনো সারাশব্দ নেই তখন নিলার রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখে নিলা বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে।
নিলার বাবা নিলার পাশে গিয়ে বসে নিলার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
বাবাঃ কি হয়েছে মা? কাদছিস কেন?
নিলা এবার তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।
বাবাঃ কি হয়েছে মা? আমাকে বলো।
নিলাঃ বাবা এই হাত দিয়ে আমি আজকে জনিকে মেরেছি, এই হাত দিয়ে ।
বাবাঃ ওকে খুব ভালোবাসিস।
নিলাঃ হ্যা, খুব। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।
বাবাঃ আচ্ছা, কি করা যায় আমি দেখছি। তুই খেতে আয়।
নিলাঃ না বাবা, আমার খিদে নেই।
বাবাঃ আচ্ছা, আমি ঢেকে রেখে যাচ্ছি পরে খেয়ে নিস।
অন্য দিকে নিলার হাতের থাপ্পর খেয়ে আমার ডুমছে জ্বর উঠলো।
পর দিন আর অফিসে যেতে পারলাম না।
অনুশোচনাময় ভালবাসা
ওই দিকে নিলা ম্যাম প্রতিদিনের মতো আমাকে দেখতে না পেয়ে বুকের ভিতর আনচান আনচান করতে থাকে।
উকি দিয়ে চারপাশ দেখতে থাকে। কিন্তু কোথায়ও আমাকে দেখতে পায় না। ম্যাম তার কেবিনে গিয়ে পিওন কে খবর দিল।
পিওন আসলো।
নিলাঃ আজ কি জনি আসেনি?
পিওনঃ জি না, ম্যাম।
নিলাঃ আচ্ছা, তুমি যাও।
নিলা টেনশনে কপালটাকে টেবিলের সাথে ঠেকালো। চোখের কোণ থেকে পানি বেয়ে বেয়ে পরছে। হঠাৎ কারো গলার আওয়াজে উপরে তাকালো। চেয়ে দেখে রুমা। ওকে দেখে নিলা তেলে বেগুনে জল উঠলো।
ম্যামঃ তুমি কি চাও? এখানে আমার কাছ থেকে আমার মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে গেলে কেন? বলো, কেন করলে এমন? এখন কি চাইতে এসেছো? আমার সামনে থেকে সরে যাও। চলে যাও আমার সামনে থেকে।
এই বলে নিলা টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে কাদতে লাগলো।
রুমা নিলার মাথায় হাত দিল।
নিলা একজটকায় হাত ছাড়িয়ে নিল।
নিলাঃ ছুবেনা তুমি আমায়।
রুমাঃ আমার একটু কথা শুনুন।
তারপর রুমা সব খুলে বললো।
নিলা এবার আরো বেশি করে কাঁদতে লাগলো।
নিলাঃ তুমি আগে বলো নি কেন?
রুমাঃ জনি বলতে বারণ করেছে।
নিলাঃ ও আমার সাথে অভিমান করে আজ আসেনি।
রুমাঃ তবে একটা কথা সত্য যে, জনি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসে।
এই কথা বলে রুমা সেখান থেকে চলে আসে।
নিলা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
নিলাঃ আমি কি করে ওর সামনে মুখ দেখাবো? কাল ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিব? দরকার হলে ওর পা ধরবো।
অভিমানী প্রেমিকার পাগলামি
পর দিন অনেক কষ্ট করে একটা রিজাইন লেটার লিখলাম। ওর বাবার দেওয়া এগ্রিমেন্টের ডেট যেহেতু শেষ সেহেতু আমি চাকরি ছাড়তে পারি।
খুব সকালে রিজাইন লেটারটা নিয়ে পিওনের কাছে দিয়ে আসলাম।
নিলা অফিসে গিয়ে আগে আমাকে খুজতে লাগলো। কাল রাত থেকেই আমার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।
পিওন বলে চিৎকার দিতে লাগলো।
পিওনঃ কি হয়েছে ম্যাম?
নিলাঃ জনি, আসেনি।
পিওনঃ হ্যা এসেছিল। এটা দিয়ে গেছে।
নিলা খামটা খুলেই একটা চিৎকার দিয়ে অঙ্গ্যান হয়ে গেল। এরপর সবাই তাকে ধরে হসপিটালে নিয়ে যায়।
অন্যদিকে আমি দুপুরে শুয়ে আছি। তখন আমার ফোনে একটা কল আসে। আমি ধরে দেখি ইরা। কল রিসিব করতেই ও পাশ থেকে কান্নার আওআজ শুনতে পেলাম।
আমিঃ কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?
ইরাঃ তুমি এমনটা করলে কেন? চাকরিটা ছাড়লে কেন?
আমিঃ তাতে কি হয়েছে? ফয়সালকে নিয়ে আমার বাসায় চলে আসিস।
অন্যদিকে নিলার গ্যায়ান আসতেই চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলত, আমার জনি কই? আমি জনির কাছে যাব।
এই বলে নিলা দৌড়ে নিচে গিয়ে সোজা গাড়ি নিয়ে আমার বাসায় চলে গেল।
আমি সুয়ে আছি। তখন কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পেলাম। মনে হচ্ছে, কলিংবেল ভেঙ্গে ফেলছে।
আমি দরজা খুলতেই কে যেনো আমার বুকে ঝাপিয়ে পরলো। দু’জন মিলে বাসার ভিতরে পরে গেলাম।
চেয়ে দেখি নিলা। আমি ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
আমিঃ কি হয়েছে ম্যাম? এমন করছেন কেন?
নিলাঃ আমাকে মাফ করে দেও, প্লিজ। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।
আমিঃ কি বলছেন? পাগল হলেন নাকি! আমার মতো সামান্য একজন কর্মচারির জন্য মরে যাবেন।
নিলাঃ আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি। ওরকম তো রাগ উঠলে প্রায়ই বলি।
আমিঃ দেখুন, আমি আপনাকে আগেও বলেছি এখনো বলছি আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
নিলাঃ ও বুঝেছি এভাবে কাজ হবে না।
রাগী বসের সত্যিকারের ভালোবাসা
এই বলে নিলা চারপাশে কি যেন খুজতে লাগলো।
তারপর ফলকাটার ছুরিটা নিল।
আমিঃ কি করছেন, কি?
নিলা আমার দিকে তাকিয়ে হাতে একটা পোচ দিল। সাথে সাথে রক্ত গড়িয়ে পরতে লাগলো।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
আমিঃ কি করছো, কি?
নিলাঃ কাছে আসবি না, আসলে আমার বুকের ভিতর ঢুকিয়ে দিবো।
তারপর হাতে আর একটা পোচ দিল। এবার আর সইতে পারলাম না।
দৌড়ে গিয়ে হাত থেকে ছুরিটা ফেলে দিয়ে হাতটা চেপে ধরে বুকের মাঝে চেপে ধরলাম।
আমিঃ কি করছো, কি? পাগল হয়ে গেছো নাকি!
নিলা এক ঝটকায় আমার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
নিলাঃ হ্যা, আমি পাগল হয়ে গেছি। তোর জন্য পাগল হয়ে গেছি। সর তুই, রক্ত ঝরে মরে যাব আমি।
আমি আবারো বুকের মাঝে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। আর বলতে লাগলাম,
আমিঃ পাগলি তোকে ছাড়া আমি কি নিয়ে বাঁচবো। তোকে ছাড়াতো আমি নিজেই মরে যাবরে।
আমার কথা শুনে নিলা আমার মুখ চেপে ধরলো।
নিলাঃ এসব কথা আর বলবে না। আমি তোমায় সত্যি খুব ভালোবাসি। আমাকে একটু ভালোবাসবে।
আমি নিলার কপালে একটা চুমু দিলাম। নিলাকে আর কিছু বলতে হলো না। খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো আমায়। ওর হাত থেকে খুব রক্ত পরছে।
ওকে কোলে বসিয়ে হাতে ব্যাণ্ডেজ করে দিলাম।
নিলা আমার বুকের মাঝে ওর মুখ গুজে কাঁদতে লাগলো। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
নিলা কাঁদছে আর বলছে,
নিলাঃ আর যদি আমাকে কষ্ট দেও তাহলে তোমাকেও খুন করবো। নিজেও মরে যাব।
আমি একটু মুচকি হাসি হাসলাম।
এমন সময় হঠাৎ নিলার বাবা সহ আমার বাবা মা ঘরে ঢুকলো। আমি তো অবাক।
আমিঃ আরে আব্বু আম্মু তোমরা কখন এলে?
আমার বাবাঃ এইতো এখন আসলাম। বেয়াই সাহেব আমাদের গ্রাম থেকে নিয়ে আসলেন।
নিলা আমার বুক থেকে উঠে বাবা মাকে পা ধরে সালাম করলো।
বস বউয়ের সাথে বাসর রাত
নিলা আবার এসে সবার সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকের ভিতর মুখ গুজে দিল।
নিলার বাবাঃ আপনাদের মান-অভিমান শেষ হলে এবার আমার কথা শুনুন। কাল আপনাদের বিয়ে প্রস্তু্ত হন। এ কথা বলে ওনারা রুম থেকে অন্যরুমে চলে গেল। নিলা আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
পর দিন নিলা আর আমার বিয়ে হয়ে গেল। খুব ধুমধাম করে।
বাসর রাতে বাসর ঘরে ঢুকতেই নিলা আমার পা ধরে সালাম করলো। আমি নিলাকে বুকে জরিয়ে নিলাম। নিলা আমাকে খাটের উপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। এরপর নিলা আমার উপর উঠে গেল।
আমিঃ এই কি করছো?
নিলাঃ ওই দিন তো বাকিটুকু শেষ করতে পারলাম না। আজ তৃপ্তি সহকারে শেষ করবো। আজ কোনো না নেই। আজ আর তোমাকে ছাড়ছি না।
আমিঃ দেখবো, কে কাকে ছাড়ে? কতটুকু পার দেখবো?
এই বলে নিলাকে ভালোবাসার আবেসে জড়িয়ে নিলাম। নিলাও আমাকে আস্টে পিস্টে জড়িয়ে নিল।
দু’জনে ডুবে গেলাম ভালোবাসার সাগরে।
দোয়া করবেন, আমাদের এ ভালোবাসার বন্ধন চিরদিন অটুট থাকুক।
~সমাপ্ত~