ইসলামিক রোমান্টিক গল্প পর্ব ৪

ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৪

ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৪: স্বামী হিসেবে অযোগ্য ছেলেটাকে পছন্দ না করলেও ধিরে ধিরে তার কিছু কাজের প্রেমে পড়ছে মনে হয় সাইমা। আফাদত রাগ আর শাসনের উপর রেখেছে তা বখাটে স্বামীকে। সজিব জানেনা কখন তার এই মিষ্টি সুন্দরী বউটা ভালোবেসে বুকে টেনে নেবে?

বউয়ের অপমান ও খোঁটা

ডিনার শেষে সজীব বিছানায় শুয়ে বই পড়ছে। সাইমা রুমে এসে সজীবের দিকে একবার তাকিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো।

সজীব আড়চোখে একবার দেখলো, বিকেলে কি প্রাণবন্ত ছিলো অথচ এখন মুখটা গোমড়া করে বসে আছে। কে বলবে এই মেয়ে এখনো বিয়েটাই মানে নি! অথচ ভাবখানা দেখায় সবার সামনে যেনো কতো খুশি!

সাইমা নিজ থেকেই বললো,

সাইমাঃ লকেটটা খুব সুন্দর, ভাইয়ার খুব পছন্দ হয়েছে।

সজীবঃ ভাইয়ের পছন্দ হয়েছে, তোমার হয়নি!

সাইমাঃ হুম, ভালোই।

সজীবঃ বাসর রাতে বউকে কিছু দিতে হয়, আমার কাছে ওটা ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।

সাইমাঃ দেখতে অনেক সুন্দর, আপনার পছন্দ আছে বৈকি।

সজীবঃ কাল তো ঘুমাও নি, বসে বসে ঘুমিয়ে ঘাড় ব্যথা করে ফেলেছিলে। চাইলে বেডে এসে ঘুমাতে পারো।

সাইমা দাঁড়িয়ে যায়। একটু ভেবে বললো,

সাইমাঃ আর আপনি?

সজীবঃ বাইরে যাবো।

সাইমাঃ পতিতালয়ে?

সজীব বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সাইমার কাছে এসে বললো,

সজীবঃ আগে নিজের মন ফ্রেশ করো। তারপর জঘন্য কথা গুলো বলবে।

সাইমাঃ সবাই বলে আপনি খারাপ, নতুন নতুন মেয়ে লাগে আপনার প্রতিটি রাতে।

সজীবঃ নিজের চোখে দেখেছো?

সাইমাঃ নাহহ!

সজীবঃ তাহলে কোন সাহসে এইসব বললে? যদি প্রতিদিন নতুন মেয়ে লাগতো! তাহলে তুমি এতক্ষণ পবিত্র আছো কিভাবে!

সাইমা ভয়ে কাঁপতে শুরু করে। সত্যিই তো কখনো এভাবে ভেবে দেখেনি সে। সজীবের চোখ লাল হয়ে গেছে, বুঝাই যাচ্ছে প্রচণ্ড রেগে গেছে। কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করে বাইরে বেরিয়ে যায়। সাইমা কিছুক্ষণ হতবাক থাকলেও প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে তাই নামাজ সেরে বেডে শুয়ে পড়ে। ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে পরক্ষণেই।

স্বামীর প্রথম ভালোবাসার ছোঁয়া

শীতের শেষ, দিনে যথেষ্ট গরম হলেও রাতে ভালোই ঠান্ডা পড়ে। সাইমা ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ার পর কোরআন শরিফ পড়ে। বাইরে যেতে খুব ইচ্ছে করছিলো বিধায় রুম থেকে বের হয়। ছাদের সিড়ি খুঁজে আস্তে আস্তে ছাদের দিকে যায়। ছাদের দরজা খোলা দেখে একটু অবাক হয়ে সে। সবচেয়ে বেশি অবাক হয় ছাদের এক কোণায় রাখা দোলনার উপর সজীবকে ঘুমাতে দেখে।

এক পা দুই পা করে কাছে এগিয়ে যায়, এতো ঘুম এসেছিলো যে উনি কোথায় গিয়েছিলো জানার প্রয়োজন বোধ করেনি। ঠান্ডা তে কুঁকড়ে গেছে একদম । ঘুমন্ত অবস্থায় একদম নিষ্পাপ লাগছে ওকে। সাইমা নিজের অজান্তেই সজীবের মাথায় হাত রাখে। সজীব ঘুমের ঘোরে সাইমার হাত ধরে ফেলে, সাইমা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে সজীবের ঘুম ভেঙে যায়। হাত টা ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে।

সাইমা একটু রাগী গলায় বললো,

সাইমাঃ ছাদে শুয়ে ঠাণ্ডা লাগিয়ে কি আমার থেকে সেবা পাওয়ার আশা করছেন?

সজীব কি বলবে বুঝতে পারছেনা। ঘুমের ঘোরে বললো,

সজীবঃ আরেকটু ঘুমাতে দাও, ঘুম আসছে খুব।

সাইমাঃ নিচে গিয়ে ঘুমান। এখানে শুয়ে থেকে কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন? আমি দাজ্জাল বউ, বর কে রাতে ঘর থেকে বের করে দিইই।

সজীব দোলনা থেকে উঠে সাইমাকে জড়িয়ে ধরে। আর ঘুমের ঘোরে বললো,

সজীবঃ কে বলেছে আমার বউ দাজ্জাল, আমার বউটা অনেক ভালো একটা মেয়ে।

সজীবের এভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে নিজের ভিতর শিহরণ বয়ে চলেছে। না পারছে সরিয়ে দিতে, না পারছে শক্ত করে ধরতে। হৃৎপিণ্ডটা খুব জোরে জোরে চলতে শুরু করেছে। একপ্রকার শান্তিও পাচ্ছে। স্বামীর প্রথম ছোঁয়া, মনের মাঝে অদ্ভুত অনুভূতির তৈরী করেছে।

সজীবের নিজেরও হার্টবিট বেড়ে গেছে। সাইমা কে ছেড়ে দিয়ে ছোট্ট করে সরি বললো। এরপর দ্রুত নিচে নেমে যায়।

সাইমা সজীবের কাণ্ড দেখে কাঁদতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর মনটা হালকা করে। বাসা লাগানো দুটো নারিকেল গাছ, ছাদ থেকে পাতা ধরা যাচ্ছে। ওটা ধরে টানাটানি শুরু করে। যেনো বাচ্চা মেয়ে গাছ ধরে দুলতেছে।

কিছুক্ষণ পর মনটা হালকা করে নিচে নেমে আসে। ধনী পরিবারের বউ, কাজ নেই তেমন। বুয়া ব্রেকফাস্ট রেডি করে দিয়েছে। সবার খাওয়া শেষ শুধু সাইমাই বাকি। খেতে ইচ্ছে করলো না, তাই এক কাপ চা আর একটা ডিম সিদ্ধ খেলো।

কষ্ট ভরা ভালোবাসার স্মৃতি

ঘরে এসে ডায়েরিটা আবারও ওপেন করে। জানতেই হবে কার জীবনী এটা এমন একটা নেশা।

পরের ডেটটা দেখে সাইমা অবাক হয়ে যায়।

১৪.০৫.২০১২

ওর সাথে আমার পুরো শহর টাই ঘোরা, কিন্তু ওর সম্পর্কে ডিটেইলস আজও জানতে পারলাম না! ও কেমন জানি ইদানীং, কষ্ট দিচ্ছে। এতদিন এতো আনন্দে ছিলাম যে ডায়েরি লিখার সময় পর্যন্ত পাইনি। ডের মাসে মনে হচ্ছে আমি অসহায়! আচ্ছা ও পরিবর্তন হয়ে গেলো কেনো! যেনো স্বপ্ন দেখছি, সুন্দর স্বপ্ন কিন্তু এন্ডিং টা কষ্টদায়ক।

১৯.০৪.২০১২

রোশনি আজ খুব বাজে ব্যবহার করলো, সবার সামনে অপমান পর্যন্ত করলো। কারণটাই যেনো অজানা। ছেলে হয়ে না পারছি কাঁদতে, না পারছি সহ্য করতে।

২৫.০৪.২০১২

এরপর বাসায় ফিরে আসলাম! এতো অপমান নিয়ে ওখানে থাকার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। তবে রোশনি তুমি যেভাবে আলোর ঝলকানি নিয়ে জীবনে এসেছিলে, যাওয়ার সময় আলো কেড়ে নিয়ে জীবনটা অন্ধকার না করে দিলেও পারতে। তবে জানতে বড় ইচ্ছে হয়, তোমার হটাৎ পরিবর্তন এর পিছনের কারণটা। তোমার সাথে আর দেখা হবেনা হয়তো! কিন্তু ক্ষমা করতে পারনোনা কখনো।

সাইমা পুরো অবাক, কি একটা অবস্থা! একটা প্রেম কাহিনী শুরু হতে না হতেই শেষ! কি এমন হয়েছিলো ছেলেটার সাথে! ছেলেটা কিভাবে তার সারাজীবন এর স্বপ্নকে ত্যাগ করে দেশে আসতে পারলো!

জানার আগ্রহে পরে পৃষ্ঠা উল্টায় সাইমা।

অনেক গুলো কষ্টের ইমোজি, আর কিছুই নেই। এরপরের পাতায় এক বছর পরের ডেট।

০৬.০২.২০১৩

ইচ্ছে না থাকতেও আবার অনার্স এ ভর্তি হলাম। বাবা মায়ের মুখ নীচু করে আর কতো কাল থাকবো!

০৯.০৩.২০১৩

হ্যান্ডসাম হওয়ার সুবাদে মেয়েরা শুধু প্রপোজ করে, অন্তরে পুষে রাখা রাগ টা হুট করেই বেড়ে যায়। প্রেমের নামে মেয়ে গুলো কে ফাঁদে ফেলে ওদের আসল রূপ গুলো ওদের বাবা মায়ের কাছে ধরিয়ে দেওয়া। তিনটা মেয়েকে শাস্তি দিয়েছি, এতে হয়তো ওদের ভালোই হয়েছে। এতো কম বয়সে কিসের প্রেম হে!

২৬.০৫.২০১৪

আজ আমি পুরো ভার্সিটির মেয়েদের কাছে খারাপ। কেননা, ওরা না বুঝে প্রপোজ করে আর আমি সেটার রেকর্ড ওদের মা কিংবা বাবা কে দিয়ে দিই।

সবাই খারাপ ছেলে হিসেবেই ডাকা শুরু করলো, আমিও নিজেকে খারাপই ভাবি। আমার খারাপ হওয়ার বিনিময়ে যদি মেয়ে গুলো ভালো থাকে।

০১.০১.২০১৬

জীবনে হয়তো দ্বিতীয় প্রেমে পড়েছি, তাও আবার শুধু চোখের প্রেমে। নবীন বরণে এসেছে, মানে ফার্স্ট ইয়ার। থাকুক না, এই প্রেম অন্তরে, একবার ভুল করেছি, আর ভুল করতে চাইনা।

সাইমার কেমন যেনো খটকা লাগলো। ও তো নিজেই ২০১৬ তে ভর্তি হয়েছিলো। আবার ডায়েরিটা খুলে,

০৫.১০.২০১৭

ফাইনাল পরীক্ষায় ভালোভাবেই পাশ করলাম। কিন্তু স্বপ্নটা পূরণ করতে পারলাম না। মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি তে চান্স পেয়েও তোমার জন্য গ্রাজুয়েশন করতে পারলাম না রোশনি! তবে দেখে নিও, পি এইচ ডি করতে ঠিকই আসবো, সেদিন তোমাকে খুঁজে বের করে জবাব নিবো।

এরপর অনেকগুলো পাতায় কিছুই নেই। এরপর কয়েকটি কবিতা, আর কিছু ড্রইং। হয়তো রোশনি কে আঁকার চেষ্টা করেছিলো! এরপর,

০৯.১২.২০১৮

মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ, জবের ইচ্ছে নেই। বাবার যত টাকা আছে যথেষ্ট। তবে আবার অষ্ট্রেলিয়া যাবোই যাবো।

৩১.১২.২০১৮

আজ প্রথম থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করলাম। একটু ড্রিংকস করে ফেলেছি, বিধায় একটা মেয়ে কে মেরে দিলাম গাড়ি দিয়ে। উফফ, মেয়েটা খুব আঘাত পেয়েছিলো। ওকে ট্রিটমেন্ট দিবো কোথায়, চারিদিকে হৈচৈ। উপায় না পেয়ে বাসায় আনলাম। জানতাম না, ও পতিতা ছিলো! ফার্স্ট এইড দিয়ে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করে দিচ্ছি। এমন সময় নিজের মা ও পুরো ঘটনা না জেনে ভুল বুঝলো। শালা আমার কপালটাই খারাপ।

মাত্র দুইদিন আগের লিখা, কোথাও নাম নেই । কি আশ্চর্য! কয়েকটা পাতা উল্টাতেই থাকে। একটা পাতায় চোখ আটকিয়ে যায়, ব্রাকেট দিয়ে লিখা (সাইমা + সজীব) দুজনের নামই এস দিয়ে কি আশ্চর্য!

তার মানে ডায়েরি সজীব এর। আর ও খারাপ ছেলেও না! কিন্তু ওর কাছে ডায়েরিটা রাখলো কে!

চলবে….

পরের পর্ব- ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৫

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *