অসময়ে (শেষ খণ্ড) – valobashar romantic prem er golpo bangla

অসময়ে – valobashar romantic prem er golpo bangla: সীমান্ত হাসছে! কিন্তু কেন! সেই কি তার কথা শুনেছে! সর্বনাশ! মান ইজ্জত কি সব ওর সামনে হারাতে হবে সবসময়!


পর্ব ৯

~ মাসটা ফেব্রুয়ারি হলেও শীত যেনো তখন মাথা নাড়া দিয়ে বসেছে। তার উপরে দুপুর বেলা এক ঝাঁক বৃষ্টিতে শীত মামা কে যেনো সাদরে গিয়ে আমন্ত্রিত করে এসেছে। এখন আবারও শুরু হলো গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি।

শীতের রাতে হঠাৎ বৃষ্টির অম্লমধুর অভিজ্ঞতা কিছু মানুষের জন্য সুখকর হলেও সবাই জন্য হয়না তেমনি রাস্তার পাশের বসাবস করা মানুষগুলো।
~ দেশ বিদেশে ভ্রমণের ফলে বাংলাদেশের শীত সীমান্ত কে বেশ কাবু করতে পারেনা। সেই বসে আছে পাতলা একটি টি-শার্ট পরে৷ অপূর্ব বিরক্ত স্বরে বললো, তোরে এতো মোটা মোটা সুয়েটার দিলাম আর তুই পাত্তাই দিলি না! শীত কি তার পাশ কেটে চলে যাইতাছে নাকি? আমাদের তো হাত পা অবশ হওয়ার পথে।
সীমান্ত কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, আপাতত নিজেকে গন্ডারের জায়গা রেখে দুনিয়ার শীত উপভোগ করতে ইচ্ছে করতাছে।

অপূর্ব নাক কুঁচকে বললো, নকরা তোর শেষ নাই! কেমনে যে এই বৃষ্টির রাতের এই কনকনে শীত হজম করস ভগবান জানে।
সীমান্ত এই কথার প্রেক্ষিতে কিছুই বললো, না। সেই খুবই কম কথা বলে যখন তার মস্তিষ্ক অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অপূর্বের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সীমান্ত, দৃষ্টি তার দোয়ার জানালা বরাবর।

হাসিব হাক তুলে বললো, তুই আজও খাবি না? এক ঢোগ গিললে কিছুই হবে না মামা, গান আরো শাঁ শাঁ করে বের হবে।
অপূর্ব সহমত গলায় বললো, ব্যাটা আজ তো খা কি হয়েছে, আজ তো আর ড্রাইভিং করতাছোস না!
সীমান্ত দৃষ্টি ঘুরিয়ে অপূর্ব আর হাসিবের দিকে তাকিয়ে বললো, কাল আমি ড্রাংক অবস্থা একটা মানুষ কে ধাক্কা দিয়েছিলাম, লোকটা এখনও হসপিটাল পরে আছে আর তোরা বলতাছোস আবারও গিলবো!

অপূর্ব আর হাসিব কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, তো তাতে কি হয়েছে হিরো! লোকটা তো সুস্থ তুই তো বললি বেডে বসে সেই আঙ্গুর ফল খাচ্ছে বউয়ের সাথে মহানন্দে! আর কি লাগে বস!
সীমান্ত এক পেশে হেঁসে ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস নিয়ে দোয়ার জানালা দিকে আবারও লক্ষ্য করে বললো, আজ আর এই নেশাতে গান কাজ হচ্ছে না অপূর্ব মশাই, আজ অন্য নেশাতে ডুবেছে সীমান্ত, সেই এক অদ্ভুত মাদকতার নেশা।

অপূর্ব, হাসিব ড্রাংক অবস্থা হিহি করে কোলাকুলি অবস্থা হাসলো। তারপর মিনিট দুয়েকের মধ্যে তারা ব্যতি ব্যস্ত হয়ে মদের বোতল নিয়ে মৃদু ঝগড়া তে মেতে উঠলো। আমি খামু! না আমি খামু!
তাতেও মনোযোগ সরলো না সীমান্তের।

~ রাত দুটো। চেয়ারের উপরে একটি
ছোট্ট কম্বল ভাঁজ করে তার উপরে নিশ্চিত আরো একটি কম্বল মোড় দিয়ে বসে আছে দোয়া। টেবিলের উপরে তার প্রানপ্রিয় চিত্র করার খাতাটি রেখে তাতে খসখস করে পেন্সিল দ্বারা আওয়াজ তুলছে সেই।
টেবিলে তার ছোট টেবিল ল্যাম্প জ্বালানো, পাশে রয়েছে তার প্রিয় চকলেট কেক আর অর্ধেক কাপ চা, রয়েছে ছোট্ট একটি কাঁচের পিরিচ। যার মধ্যে পরে আছে কিছু অবশিষ্ট চা, বুঝায় যাচ্ছে পিরিচের মাধ্যমে দোয়া তার চা খেয়েছে। সুস্বাদু চকলেট কেক মিসেস জুলেখা সন্ধ্যা নিজ হাতে মেয়ের জন্য বানিয়েছে দোয়ার বড্ড প্রিয় বলে।

~ হঠাৎ দোয়ার কানে ভেসে এলো গিটার টুংটাং আওয়াজ। দোয়া থমকে গেলো। তার হাতের পেন্সিল খাতার উপরে পরে গেলো। তার আর বুঝতে বাকী নেই এই আওয়াজ টি কার গিটারের সুর হতে তার কানে এসে পৌঁছিয়েছে।
দোয়া কে আরো হতবুদ্ধি করে দিয়ে গিটারের মালিক এক অদ্ভুত গান ধরে বসলো।

Mere Saamne Waali Khidki Mein
Ek Chaand Ka Tukda Rehta Hai
Afsos Ye Hai Ke Vo Hamse
Kuchh Ukhda Ukhda Rehta Hai
Mere Saamne Waali Khidki Mein

Ek Chaand Ka Tukda Rehta Hai
Jis Roz Se Dekha Hai Usko
Ham Shamaa Jalaana Bhool Gaye
Dil Thaam Ke Aise Baithe Hain

Kahin Aana Jaana Bhool Gaye
Ab Aath Pahar In Aankhon Mein
Koi Chanchal Mukhda Rehta Hai
Mere Saamne Waali Khidki Mein
Ek Chaand Ka Tukda Rehta Ha
Afsos Ye Hai Ke Vo Hamse
Kuchh Ukhda Ukhda Rehta Hai

~ দোয়া স্তব্ধ সেই এই ঠান্ডার মধ্যে কুলকুল ঘামাতে লাগলো। সেই নিজের কপালের ঘাম মুছে শুকনো ঢোগ গিলে বন্ধ জানালার দিকে স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে রইলো।
এই গান! তাও হিন্দি! সীমান্ত তো কখনও হিন্দি গান ফলো করে না তাহলে!
দোয়া কে আরো ভড়কে দিলো অন্ধকার রুমে মাহা আর নিদা মৃদু চিৎকারে। দোয়া ছুটে গিয়ে রুমের বাতি জ্বালিয়ে তার হরিণ টানা বড় বড় চোখ গুলোকে আরো বড় করে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো, হুসসস! কি করছিস কি তোরা! বোবা ধরছে! চিৎকার কেন দিচ্ছিস এই রাতে! তোমাদের জুলেখা খালা যে গলায় বটি বসিয়ে দিবে খবর আছে!

নিদা আর মাহা বসে আছে খাটের মাঝখানে তাদের দেখে মনে হবে এই মাত্র স্বপ্নে উভয় জাদ্দরেলকে দেখলো। মাহা ঘুম আর চমকপ্রদ মিশ্রণ গলায় বললো, সীমান্ত!
নিদা মাহার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো, সীমান্ত গান করছে! তাও তোর জন্য! সিরিয়াসলি!
দোয়া মিইয়ে গেলো সেই চোখ চোখা খাটের কিনারে বসে বললো, তোদের এই সংবাদ কে দিলো যে ঐ আমার জন্য গান করছে!

ভাতের সাথে মদ মিশানো ছিলো নাকি!
নিদা জ্ঞানী জ্ঞানী কন্ঠে বললো, শোন!
তোর জানালা আর ওর জানালা বরাবর এক। তার উপরে তুই একটু আগে তারে মুটামুটি জুতা পেটা করতে ধরছিলি তার মানে কি দাঁড়ালো তুই তার উপরে রাগান্বিত! আর তার গান টা সার্চ দিয়ে আবারও শুনে দেখ।
মাহা এই ঘুম ঘোরে সত্যি গান টা সার্চ দিয়ে ছেড়ে দিলো।

নিদা ভ্রু নাচিয়ে বললো, কি প্রমান পেলা মাদুবতী! নাকি তার আপলোডের উপরের ক্যাপশনের জন্য অপেক্ষা করতাছেন?
দোয়ার মুখে ছড়িয়ে আছে এক আকস্মিক লাজ, সেই লাজুক গলায় বললো, ধ্যাঁত! এটা মোটেও আমার জন্য না! দেখিস ক্যাপশন কি হয়।
নিদা হাসতে হাসতে বললো, আমি জানি তো তুমি ধরে ফেলছো, তাও অন্যের মুখ থেকে বিস্তারিত শুনার জন্য এই নকশা করছো!
দোয়া লজ্জাবতীর গাছের মতো মাথা নুইয়ে বললো, চাঁদকা টুকরা!
তারপর দুহাত দিয়ে নিজের মুখ ডেকে ফেললো।

নিদা মাহা দোয়াকে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। দোয়া হাসতে হাসতে বেডে পরে গেলো। আজ যেনো দোয়ার কাছে পৃথিবীর সব সুখ হার মানাবে।
~ রাতের গভীরতা আরো এক প্রহর বাড়লো। চারিদিকে নিস্তব্ধতা আরো বেড়ে গেলো। দূর থেকে কুকুরের ডাক শুনা যাচ্ছে।
নিদার আর মাহার মাঝখানে শুয়ে আছে দোয়া। নিদা আর মাহার ঘুমন্ত মুখের দিকে আঁড়চোখে দোয়া তাকালো। তারপর চট করে অপূর্বে একাউন্ট ডুকে তার লাইক কমেন্ট চেক করলো।

সীমান্ত তাইমুর! পুরো নাম দেখে দোয়ার ভ্রু কুঁচকে গেলো। ব্যাটা কি পাকিস্তানী নাকি! নাম তো ফরেনার মুসলিম দেশ গুলোর মতো!
স্টাভি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাবজেক্ট ম্যাথ। ইয়ার ফর্থ প্রথম সেমিস্টার।
দোয়া খুশিতে মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠলো। নিদা ভড়কে গিয়ে বড় বড় চোখে তাকিয়ে বললো, তুই ঘুমাবি নাকি লাথি মেরে খাট থেকে ফেলবো!
মাহা এপাশ ওপাশ করে আবারও কম্বলের ভিতরে ডুকে গভীর ঘুম তলিয়ে গেলো।

দোয়া খুশিতে আধ মরা হয়ে নিদা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো, ঐ আমাদেরই ক্যাম্পাসের নিদা। আমি শেষ। আজ আমি নিজেকে মৃত ঘোষণা করছি। শুনে রাখ!
নিদা দোয়ার বুকে আবারও ঘুমিয়ে গেলো। সেই শুনলোই না দোয়ার খুশির কারণ। দোয়া নিদা কে বালিশে রেখে আবারও ফোন হাতে নিয়ে মিটমিট করে হাসলো।
সারাটা রাত দোয়ার সীমান্তের ছবি দেখতে দেখতে কাটিয়ে দিলো।

কিন্তু সেই অবাক হলো একাউন্টে তার ফ্রেন্ডস একদমই কম! দোয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে তার কাজে লেগে গেলো। সেই এক অদ্ভুত আজানা কারণে সীমান্তের সবচাইতে প্রথম ছবিতে দোয়া তার একটি রিয়েক্ট বসিয়ে এলো যেটাতে অপূর্বের কমেন্ট বা লাইক নেই।
দোয়া বিড়বিড় করে বললো, তুমি এতো সুন্দর না হলেও পারতে সীমান্ত ভাইয়া!
তারপর লজ্জা কম্বলের নিচে নিজেকে লুকিয়ে নিলো।

~ সকাল বেলা সবাই ব্যস্ত ভঙ্গিতে রান্না ঘরের দৌড়াদৌড়ি করছে।
মি. ইমতিয়াজ মাংসের পাতিলের ঢাকনা সরিয়ে আদুরী গলায় বললো, দেখি দেখি আমার মাদুবতী কি রান্না করলো!
দোয়া এক গাল হেঁসে বললো, মাংস বাবা, দেখো দেখো খেয়ে দেখো মার থেকেও ভালো রান্না পারি দেখো!
মি. ইমতিয়াজ এক টুকরো মাংস মুখে পুরে নাক কুঁচকে বললো, আহা! মাদুবতী তো একদমই গুনী না রান্নার দেখি রও জানে না।

দোয়া হাত পা নাচিয়ে বললো, হবে না হবে না মা বললো, আমি অনেক ভালো রান্না করতে পারি তুমি বড্ড দুষ্ট বাবা!
মি. ইমতিয়াজ হাসতে হাসতে দোয়ার কপালে চুম্মু খেয়ে বললো, গুনবতী, রুপবতী যে হলি কই পাবো তোর জন্য এতো সুন্দর বর!
দোয়া সটাং বলে বসলো আমি স্বয়ংবরা হবো বাবা। তোমাকে কষ্ট করতে হবে না। তোমার এই গুনবতী মেয়ে আরেক গুনবতা কে খুঁজে নিবে।
মি. ইমতিয়াজ অবাক গলায় বললো, গুনবতা!
দোয়া চোখ মেরে বললো, ছেলেদের জন্য গুনবতা, বতী তো আর বলা যাবে না।

বাবা মেয়ে দুজনে উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো। আর সেই দৃশ্য দেখতে লাগলো দোয়াদের বাসায় আসা আত্মীয় স্বজন।
~ সীমান্তের কালকে তার গানের নতুন ভিডিও আপলোড করেছে, যার উপরে অসাধারণ বাংলায় লিখা ছিলো।
হাসনাহেনা ফুলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সেই জান্নাতের হুর কে উৎস্বর্গ করে আমার এই কয়েকটি লাইন।
তারপর হ্যাসট্যাগ দিয়ে লিখা জানালা।

এটাতে দোয়া চিৎকার চেচামেচি করে নেচে-কুঁদে রাতের গানটি গাইতে গাইতে বাসার মধ্যে মহাভারত করে ফেললো। তার সব খালা ফুফি আর মামা কে ফোন করে দাওয়াত করলো নিজ হাতের রান্না করে খাওয়াবে বলে।
~ ড্রয়িং রুমে সব আত্মীয় স্বজনের জট বেলা তখন এগারোটা। নিদা আর মাহা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাই জন্য চা করছে। দোয়া আলমারি থেকে সবাই জন্য প্লেট বের করছে দুপুরের জন্য।

নিদা শান্ত গলায় দোয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো, তুই সীমান্তের প্রেমে পরিস নি তো!
দোয়া চট করে নিদার দিকে তাকালো। নিদা আর মাহা তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে তাদের চোখে কৌতূহল, প্রশ্ন।
দোয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, আমার কি মাথায় দোষ আছে অতো বড় মানুষের প্রেমে পরা! আর প্রেম কি ছেলে খেলা নাকি যে বললো, হয়ে গেলো!
নিদা চোখ ছোট ছোট করে বললো, সেই তোকে উল্লেখ করে একটা গান আর ক্যাপশন কি দিলো তুই অঘোষিত বর বাদে বিয়ের আয়োজন করে ফেললি আর তুই বলছিস প্রেমে পরিস নি! এটা কে তো আর হালকা পাতলা ভালো লাগার নাম দেওয়া যাইনা।

মাহা নিদার কথাতে সহমত হয়ে চামচ দেখিয়ে বললো, ঠিক, ঠিক একদমই ঠিক!
দোয়া চেয়ার টেনে আরাম করে বসে বললো, শুন সীমান্তের পরিচয় আমার জানা নেই। তার গান, তার কথা, তার লেখা এইসব কিছু মিলিয়ে একটা ভালো লাগা তৈরী হয়েছে আর কিছুই না।
নিদা চোখ মেরে বললো, পরিচয় ও তো আপনার জানা হয়ে গেছে, এইবার তো মাদুবতীর আড্ডা জমবে কার্জনের সামনে। আমরা তাকে নিজ ডিপার্টমেন্ট কম কার্জনে পাবো বেশী।

দোয়া শব্দ করে তার গেজ দাঁতের হাসিটা দিয়ে বললো, খালাতো বোন শুন একটা মানুষ কে না দেখে তার সাথে চলাফেরা না করে তার প্রেমে পরা অসম্ভব।
আমার মতে, তার কিছু নেতিবাচক প্রতিভা দেখে আমি তার প্রেমে পরলে এটা হবে অস্থায়ী প্রেম। এর রেশ বেশী দিন থাকবে না, থাকার কথাও না।
তাকে আমি জানবো তার সাথে সময় কাটাবো। এমন কদম কদম চলে প্রেমে পরাটা সবসময় দীর্ঘ স্থায়ী হয়। কারণ তাকে ঘিরে আমার থাকবে হাজারো স্মৃতি।

এইরকম প্রেম নামক ভালোবাসাগুলো যখন হয় তখন মৃত্যু পর্যন্ত যত পুরুষ জীবনে আসুক ঐ মানুষ টার মত কেউকে উজাড় করে ভালোবাসা যাই না।
আর এমনেতে যাকে ভালোবাসবো তার ভালো খারাপ দুই দিক দেখে ভালোবাসবো, একদিক দেখে ভালোবেসে তার খারাপ অভ্যাস দেখে ব্রেকআপ বলে চলে এসে নায়িকাদের মত বালিশ ভিজিয়ে কান্না করা হলো পাগলামি। এটা আর যাই হক ভালোবাসা না।
আর সীমান্ত কে আমি এই প্রথম বার দেখলাম। আর সীমান্ত তার আসল নাম কিনা সেটা ও জানা নেই আর এমন মানুষ কে চট করে ভালোবাসা হলো গাধামি ঐ ব্যাটা নিজেও শুনলেও হাসবে।

নিদা ঠোঁট সুরু করে বললো, বাব্বাহ! তোর এই বানী খালামনিকে শুনানো উচিত ছিলো উনি মসজিদে টাকা দিবে তোর বুদ্ধিমতী ভাব দেখে।
দোয়া ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বললো, আমি তোকে বলি মা কি বলবে। উনি উপর আলাহ কাছে মুনাজাত ধরে উপরে তাকিয়ে বলবে, হেই আল্লাহ তুমি আমার হাঁটু সমান বুদ্ধি মেয়ের, বুদ্ধি তুলে মাথায় এনে দিয়েছো! তার জন্য শুকরিয়া, শুকরিয়া, শুকরিয়া।
দোয়া, নিদা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।

মাহা দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, এটা কোন কথা হলো! আমার তো কারও সাথে কয়েকদিন ফোনে কথা বললেও প্রেম পাই। আমি তো ওর কথা কিছুই বুঝলাম না। এই নিদু তুই বুঝলি!
নিদা মাহার মাথায় খাট্টা মেরে বললো, তুমি বুঝবা না জানা আছে টিউবলাইট তো শখে বলি না তোমাকে। দোয়া আর নিদা আবারও হাসতে লাগলো। মাহা ঠোঁট বাঁকিয়ে ভাবতে লাগলো
টিউবলাইট বলার কারণ কী! সেই কি জিজ্ঞেস করবে! সেই আঁড়চোখে রুমের টিউবলাইটার দিকে তাকালো।

~ দুপুরে সবাই খাওয়ার পর দোয়া হাত মুচতে মুচতে নিদা কে উদ্দেশ্য করে বললো, তুই সাভার কবে যাবি!
নিদা দই মুখে দিয়ে বললো, কালকে সকালে ভোরে যাবো, গিয়ে ক্লাস ধরবো। তুই তো এখন চলে যাবি তাইনা!
দোয়া মাথা নেড়ে বললো, কালকে টিউশনি টা মিস দিয়েছে আজ দেওয়া যাবে না। বাচ্চা টা পথ চেয়ে বসে আছে।
মিসেস মমতাজ ওরপে মাহার দাদু তিনি এসেছে মাহাদের পরিবারের সাথে। তিনি দেওয়াকে রসিকতা সুরে টিপুনি কেটে বললো, সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় পরতে পারস না কি সব ত্যানা প্যানা পিন্দস! ব্যাটারা তো চোখ ও মারবো না।

দোয়া মস্করা সুরে বললো, আমি সুন্দর জামা পরলে তেমার আরো ছয়টা নাতনীরে বিদায় করতে তো বিপদে পড়বা। ব্যাটারা তো তখন ওদের ধোঁয়াশা দেখবো।
মিসেস মমতাজ ভেংচি কেটে বললো, ওরে আমার আল্লাহ! রুপে বাহার হলে হইবো! বুদ্ধি তো সব হাঁটুতে। ব্যাটারা বুদ্ধিমতী খুঁজে। কথাবার্তার ছিরি যে ব্যাটারা ট্যাঁগা নিবো!

দোয়া হাসতে হাসতে ব্যাগ ঠিক করতে করতে বললো, দেখবা এই কথাবার্তার ছিরি জন্য ব্যাটারা নেচে-কুঁদে নিবে।
মিসেস মমতাজ ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, তক্তা! বাল্সার! এতো সোজা! ব্যাটারা বাড়িতে রাখি যাইবো হুন্নারাহো!
দোয়া ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে চোখ মেরে বললো, তাহলে তোমার ব্যাটা রে কবরে থেকে উঠায় কবুল বলে ফেলমু সব ঝামেলা শেষ।
মিসেস মমতাজ হাই হাই করতে লাগলো। পুরো রুম জুড়ে সবাই অট্ট হাসিতে মেতে উঠলো।
~ আজিমপুর কবর স্থানে পাশে চারতলা বাসাতে টিউশনি শেষ করে দোয়া যখন নিচে নামলো তখন আকাশে মেঘে এলোমেলো দৌড়াচ্ছো। সময় তখন সন্ধ্যার পূববর্তী। দোয়া ব্যাগ হাতড়ে তার ছাতাটা হাতে নিলো।

হয়তো কিছুখন পর আকাশ গর্জে উঠে মুষলধারে বৃষ্টি নামবে। দোয়া বিড়বিড় করে বললো, আল্লাহ হল পর্যন্ত পৌঁছে দাও।
কিছুদূর না যেতে সত্যি ঝুম বৃষ্টি নামলো। দোয়ার মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো। এই শীতের মাসে বৃষ্টি হওয়ার কোন কারণ সেই খুঁজে পাচ্ছে না।
শুধু বৃষ্টি নয়, রীতিমতো অঝোর ধারায় বৃষ্টি। সারাদিন মিষ্টি রোদের পর হঠাৎ নেমে আসা বৃষ্টিতে রীতিমত চমকে উঠেছেন মানুষ।
এই বৃষ্টি যে চলবে দীর্ঘ সময় সেটা সবাই বুঝলো। এ ব্যাপারে আবহাওয়ার আগাম কোনো আভাসও পাওয়া যায়নি।

দোয়ার বিরক্তিতে মুখ একটি খিস্তি বের হয়ে আসলো।
হঠাৎ বৃষ্টি বাসা বাড়িতে থাকা লোকজনের চোখে তন্দ্রা ডেকে আনলেও বেশী দুর্ভোগ পোহাতে হয় ফুটপাতের ‘বাসিন্দাদের’ আর ঘরে ফেরা লোকজনকে।
বৃষ্টির আর বাতাসের বেগ এতো বেশী যে ছাতাতে কুল পাচ্ছে না, বার বার উল্টো যাচ্ছে তার ছাতা। দোয়া আকাশের দিকে তাকালো, না এই মেঘ এতে জলদি কাটবে না তার মানে এই বৃষ্টি ও এতো জলদি থামবে না। ভারী বিপদ হলো।

দোয়া দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলো। সন্ধ্যা হওয়ার আগে ক্যাম্পাস এরিয়ায় ডুকতে হবে তাকে। বৃষ্টি সময় এইসব এলাকা নির্জন হয়ে যাই একদমই।
ভাগ্য সয়ে কারণে দোয়া একটি রিকশা পেয়ে গেলো। সেই চট জলদি উঠে গেলো। রিকশা চালক মাথায় একটি পলিথিন বাঁধা হয়তো বৃষ্টি থেকে বাঁচার তাগিদে। দোয়া নিজ ছাতাটা তার দিকে এগিয়ে দিলো। লোকটা ভীষণ বৃদ্ধ ছাতা নেওয়ার সময় দোয়া সূক্ষ্ম ভাবে খেয়াল করলো লোকটি কাঁপছে।
পলাশি রোড পর্যন্ত গিয়ে রিকশা টানা যেনো লোকটির জন্য দুষ্কর হয়ে গেলো। তিনি ক্লান্ত গলায় বললো, মা তোমার কাছে মোবাইল আছে! বউ টা আমার এই ঝড়বৃষ্টি সময় ঘরে একা। চিন্তা করতাছে আমার জন্য।

দোয়া তার মোবাইল এগিয়ে দিলো লোকটি দুই তিন বার অপর পাশে ফোন করলো কিন্তু কেউ ধরলো না। লোকটি দোয়ার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো, জানতাম ধরবো না এই বৃষ্টির মধ্যে কে বা যাইবো অতো দূর মোবাইল দিতে। দোয়া শান্ত গলায় বললো, ফোন কি চাচীর!
লোকটি নরম করে হেঁসে বললো, না মা একটু দূরের একটা ঘরের।
দোয়া রিকশা চালক কে উদ্দেশ্য করে বললো, চাচা রিকশা টা থামান তো।

লোকটি দোয়ার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো মা তো কইলা রোকেয়া হলের সামনে যাবা এটা তো পলাশী রোড!
দোয়া মিষ্টি করে হেঁসে নাতিশীতোষ্ণ গলায় বললো, আপনার শরীর টা ভালো নেই চাচা আপনি আমাকে এখানে নামিয়ে বাড়িতে চলে যান।
লোকটি অসহায় গলায় বললো, না মা! জ্বরের জন্য সারাদিন বের হতে পারিনি এখন তো ইনকাম করা লাগবো। ঔষধ কিনে নিয়ে যাইতে হইবো। দোয়া মুটামুটি রনযুদ্ধ করে বুড়ো রিকশা চালক থেকে তার ঔষধের ছোট্ট কাগজটি নিলো। ভিজে তা একাকার।

দোয়া চট করে রিকশা থেকে নেমে অপেক্ষা করতে বলে একটি দোকানে ডুকে কিছু শুকনো খাবার নিয়ে নিলো তারপর কিছু ঔষধপত্র।
দোকান থেকে বের হয়ে দোয়া রিকশা চালকের কাছে এগিয়ে এসে থলে ধরিয়ে বললো, এই নেন চাচা, এইগুলো নিয়ে এখন বাসায় যান দুইদিনে হয়ে যাবে। দুইদিন শুধু ঘুমাবেন।

তারপর তার ব্যাগ থেকে একটি ১১০০ মডেলের ফোন বের করে দিয়ে বললো, এটা রেখে দেন যখন চাচা, প্রয়োজন হবে বাইরে এলে চাচীর খবর নিতে পারবেন।
লোকটি তাজ্জব হয়ে গেলো। তিনি কোন মতে এইসব কিছু নিতে রাজি হলেন না। দোয়া তার চতুর কথার মধ্যে লোকটিকে মানিয়ে নিলো। লোকটি দোয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, আল্লাহ তোমাকে জীবনে অনেক সুখ দেক।
লোকটি আবারও বললো, তিনি দোয়া কে তার ঠিকানায় নামিয়ে দিবে। দোয়া সম্পূর্ণ নাখোশ করে দিলো।
কারণ লোকটির ঠোঁট অতিমাত্রায় সাদা হয়ে গেছে ঠান্ডা তাই জলদি উনাকে বাসায় যেতে হবে। দোয়া জানালো সেই অন্য একটি রিকশা নিয়ে নিবে। দোয়া লোকটিকে তার ছাতা ও দিয়ে দিলো।

~ বেশ কিছুখন ধরে দোকান একটু ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে দোয়া। পাশে কিছু কালো কালো ইতর স্বভাবের ছেলে চা খাচ্ছে আর এটা সেটা বলে বিরক্ত করছে। দোয়া রাস্তায় তাকালো রিকশা তো দূরে থাক একটা সাইকেলও রাস্তায় নেই। বৃষ্টি যেনো আজ শপথ করেছে অবিরাম বর্ষন করার। কিছুখন পর দোয়ার মনে হলো ছেলেগুলোর আওয়াজ শুনা যাচ্ছে না সেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর আগে তার ফোনে বেজে উঠলো।
দোয়া ফোন হাতে দেখলো মামানি লেখা। সেই কপালে চাপড় মারলো। তারপর ফোন কানে নিয়ে মিসেস নীরা কে সালাম জানালো। উত্তরে মিসেস নীরা সালাম নিয়ে জিজ্ঞেস করলো সেই এখন কোথায় আছে। দোয়া তাকে জানালো সেই বৃষ্টির কারণে পথে আটকে আছে।

দোয়া যেটার ভয় পেলো সেটায় হলো। মিসেস নীরা গদগদকণ্ঠে বললো, আমার ফোন ঠিক করলি মাদু! সাবধানে হলে রাখবি বুঝছিস! হারিয়ে যাবে নয় তো।
দোয়া কাচুমাচু গলায় বললো, মামী একটু বিপত্তি হলো! তোমার মোবাইলের আশা না এইবার ছেড়ে দাও।

মিসেস নীরা চমকপ্রদ হয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, তুই আমার মোবাইল ও ছাড়লি না মাদু! কারে দান করে দিলি আবার?
দোয়া গায়ের ভিজে লেপ্টে যাওয়া জামা ঠিক করতে করতে বললো, সেই অনেক কাহিনী মামী বাসায় এলে রসিয়ে রসিয়ে কবো নি।
মিসেস নীরা ভেংচি কেটে বললো, তোর রসকষ নিয়ে তুই থাক। তোর এই অভ্যাস কেন রে মাদু এইগুলো তো ভালো স্বভাব না। বর তো তোরে বেতাবে।
দোয়া ঠোঁট সরু করে বললো, দেখো মামী আমার সেবার উপরে কিছু কইবা না আমার মন বিশাল বড় তোমরা জানো।
মিসেস নীরা নিজ মাথায় চাপর মেরে বললো, হ্যাঁ, হ্যাঁ হাঙরের পেটের মত তোর মন। বিশাল বড়।

দোয়া হিহি করে হেঁসে বললো, আহা মামী কি চমৎকার উদাহরণ দিলা হাঙরের পেটে কিন্তু কয়েক কোটি টন খাবারের জায়গা হয় তা তোমার জানা নেই।
মিসেস নীরা বিলাপের সুরে কেঁদে বললো, আমার কত শখের ফোন ছিলো রে মাদু! এই বিশ্রী সমাজসেবা কবে বন্ধ হবে রে তোর! তুই আমাদেরও হাঙরের পেটে দিয়ে দিবি মনে হয়!
দোয়া হাই তুলে বললো, ছিঃ মামী কি ছিঁচকাদুনি দের মতো কান্না করছো!
তাও ১১০০ মডেলের এই মোবাইল নিয়ে।

আমার মামা তোমার জন্য সুইজারল্যান্ড থেকে গরম গরম টাকা পাঠায় আর তুমি কান্দো এই মোবাইলে জন্য।
আমার পাশের বেডের মেয়েটা শুনলে কি ভাববে বলো তো! কত প্রশংসা আমি তোমার নামে করি এইতো মিনিট তিনয়েক আগেও করলাম।
মুহুর্তের মধ্যে মিসেস নীরা তার কন্ঠ স্বর বদলিয়ে হিহি করে হাসার চেষ্টা করে বললো, আরে আমি তো মজা করছিলাম! ঐটা কোন ফোন হইলো! পুরান মডেল! আমার ফোনের অভাব আছে! কোন সমস্যা নেই আমার কত মোবাইল আছে হিহি।

তারপর ফিসফিস গলায় দোয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো, তুই তো তোর ফোনের ভলিউম বারিয়ে দে তাহলে ঐ শুনবো!
দোয়া সহমত গলায় বললো, আরে আমার ভলিউম তো বাড়ানো মামী ফোন নষ্ট না আমার? ভলিউম বাড়ানো ছাড়া কথা বলা যাই নাকি।
তারপর সেই ফিসফিস করে একি সুরে বললো, ড্রামা মানী ড্রামা, আমার ফোন একদমই ঠিক আছে। ঐ অনেক বার তাকাচ্ছে আমার দিকে তোমাকে নিয়ে ওর চিন্তা ভাবনা মাউট এভারেস্ট চূড়ায় পৌঁছে গেছে।

মিসেস নীরা সত্যি ভীষণ খুশি মনে ফোন কাটলেন আর তাতে দোয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। মিসেস নীরা অত্যন্ত বোকা ও সহজ সরল তাকে কথাতে ঘুরিয়ে দিতে দোয়ার সময় লাগে না।
দোয়া তার গায়ে হালকা ভেজা শাল আর মুড়িয়ে পাশে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো। তার পা পুরো শরীর যেনো একটি ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। পায়ের পাতা থেকে এক অদ্ভুত শিহরণ রগে রগে শরীরে বিভিন্ন অংশে দ্রুত গতিতে পৌঁছাতে লাগলো।

সীমান্ত!
সীমান্ত দোয়ার দুই ইঞ্চি দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে।
দোয়া ঢলে পরে যাওয়ার আগে সীমান্ত দোয়ার হাতে বাহু শক্ত হাতে ধরে ফেললো। তারপর তাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে ফিসফিস গলায় তার পুরুষালি শক্ত কন্ঠ স্বর কে যথেষ্ট নরম করে বললো, আপনি ঠিক আছেন ম্যাম?
দোয়া হা করে তাকিয়ে রইলো সীমান্তের মুখের প্রানে। সীমান্ত দোয়ার হাতে বাহু হালকা করে ঝাঁকিয়ে বললো, ম্যাম আপনি ঠিক আছেন!
দোয়া জোরে জোরে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো। সীমান্ত হালকা করে হেঁসে দোয়াকে ছেড়ে দিলে।

সীমান্ত দাঁড়িয়ে আছে দোয়া কাছ ঘেঁষে যে কেউ তাদের দেখলে ভাববে তারা হয়তো প্রেমিক যুগল বা স্বামী স্ত্রী।
বৃষ্টির কারণে হালকা কোঁকড়ানো চুল গুলো ভিজে কপাল বরাবর এসে হানা দিলো। চুল থেকে নিজ দায়িত্বে টপ টপ করে পরছে পান, তার সারা মুখময়। শার্ট হালকে ভিজে যাওয়ার কারণে শরীরে সাথে লেপ্টে গেছে এক অদ্ভুত সৌন্দর্যের রুপ নিলো যেনো। দোয়া হা গিলতে লাগলো। হঠাৎ চোখ বন্ধ করে লম্বা একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে আবারও সীমান্তের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে জিভ দ্বারা নিজের ঠোঁট কে ভিজিয়ে শুকনো ঢোগ গিললো। এই ছেলেকে এতো লোভনীয় কেন লাগছে! দোয়া নিজের ভেজা চুল ঠিক করলো তার নিজেকে একদমই স্বাভাবিক লাগছে না।

দোয়া আঁড়চোখে আবারও তাকিয়ে রইলো সীমান্তের ভেজা শরীরের দিকে।
দুহাত তার প্যান্টের দুই পকেটে, দৃষ্টি তার সামনের বৃষ্টিময় রাস্তার দিকে। কিন্তু তার মুখে লেগে আছে তীরের মত রক্তাক্ত করার মত সেই হাসি!
দোয়ার সীমান্তের দৃষ্টি লক্ষ্য করলো তারপর পাশে তাকিয়ে দেখলো ঐ বেঁটে কালো ছেলেগুলো তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। দোয়া নজর আবারও সীমান্তের দিকে আনলো।

সীমান্ত হাসছে! কিন্তু কেন! সেই কি তার কথা শুনেছে! সর্বনাশ! মান ইজ্জত কি সব ওর সামনে হারাতে হবে সবসময়!
সীমান্ত দাঁড়িয়ে রইলো একি ভাবে তেমনি দাঁড়িয়ে রইলো দোয়া। দূরত্ব কয়েক ইঞ্চি। সীমান্ত কেন যেনো আরো একটু কাছ ঘেঁষে গেলো। মুখে তার দুষ্ট হাসি। দোয়া বিড়বিড় করে বললো, ভাই হাসি তে কুপিয়ে ফেলছো! আবার ঘেঁষছো কেন! বাচ্চা মেয়েটার জান নিবা নাকি!
হঠাৎ একটি রিকশা এসে জিজ্ঞেস করলো যাবি কিনা! সীমান্ত সটাং বলে বসলো হ্যাঁ মামা কার্জনে যাবো। ফজলুল হক হলের সামনে!
দোয়া অবাক চোখে সীমান্তের দিকে তাকালো তাহলে সেই ফজলুল হক হলে থাকে। চমৎকার! দোয়া মিটমিট করে হাসতে লাগলো।

রিকশা সামনে গিয়ে সীমান্ত দোয়া কে উদ্দেশ্য করে বললো, ম্যাম! আর কোন রিকশা সহজে পাবেন না, আপনি চাইলে আপনাকে আমি রোকেয়া হল নামিয়ে দিতে পারি! দোয়াকে যেনো কেউ বৈদ্যুতিক শক দিলো। সেই আক্কেলগুড়ুম গলায় আবারও প্রশ্ন করলো জ্বী!
সীমান্ত ছোট্ট করে হেঁসে বললো, আমি আপনাকে নামিয়ে দিতে পারি। আমার হাঙরের মত মন না হলেও তিমির মত মন আছে।

দোয়া মনে মনে জিভ কাটলো! ছিঃ লোকটা সব শুনে নিলো। দোয়ার যেনো আজকাল নিজের উপরে বড্ড রাগ আসে। কেন সেই এতো বেখেয়ালী! একটু খেয়ালী হলে খুবই কি বিপত্তি হতো!
সীমান্ত দোয়ার আকাশ কুসুম চিন্তা ভাবনা করার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। রিকশা চালক তাড়া দিতে লাগলো।

দোয়া আঁড়চোখে দোকানে তাকালো, অনেক ছেলের ভীড় জমেছে এখন আরো, এইখানে ঐ কালো বেঁটে মোটা ছেলে গুলো তাদের দেখছে তাজ্জব চোখে। কি যে হয়তো ভেবেছে তারা প্রেমিক যুগল সেইজন্য অশ্লীল নোংরা কথাবার্তা আগাতে পারিনি। কিন্তু যখন সীমান্ত তার সাথে অত্যন্ত অপরিচিত দের মত মার্জিত রিকশা ছড়ার প্রস্তাব দিলো তাতে ছেলেগুলোর চক্ষু চড়কগাছ। দোয়া মুখ টিপে হেঁসে সত্যি সত্যি সীমান্ত সাথে রিকশা তে উঠে গেলো।
সীমান্ত তার পাশে বসার সাথে সাথে দোয়ার পুরো শরীর ময় যেনো আরো তিনগুন শীতল হয়ে গেলো, ভিতরটা এক ঐশ্বরিক অনুভূতি এসে যেনো চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিতে লাগলো। হাত পা আসাড় হয়ে এলো পরক্ষণেই আবারও যেনো এক অদৃশ্য মায়া নৃত্য করে উঠলো তার পুরো শরীরময়।

সীমান্ত আঁড়চোখে দোয়া মৃদু কাঁপতে থাকা শরীরের দিকে তাকিয়ে বললো, আপনি নিজের মত করে বসতে পারেন। আমার অল্প একটু জায়গাতে হবে। দোয়া দাঁতে দাঁত চেপে কোন রকম পুতুলের মত মাথা নাড়লো। আনন্দের ঠ্যালায় তার মুখ থেকে যেনো কথা বের হওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। সীমান্ত যেনো বুঝলো দোয়ার শরীরে কাঁপুনি সেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো।
দোয়া পাথর, সেই যেমন বসে ছিলো তেমনি মূর্তির মত বসে রইলো নড়বড় কিছুই করলো না। তাকে দেখলে মনে হবে একটি মোমের পুতুল যে অন্যের সাহায্য বাদে এক ইঞ্চি ও নড়তে পারেনা।

সীমান্ত দোয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, আমি কি হুড উঠিয়ে দিবো ম্যাম! আমার ছাতাতে মনে হয় এই বৃষ্টি সাথে পাল্লা দিতে পারবে না। দোয়া ভাঙা গলায় ফিসফিস করে বললো, ঠি-ঠিক আছে।
সীমান্ত শুনলো কিন্তু সেই হুড উঠালো না।
হঠাৎ নিজ থেকে বললো, না থাক হুডি উঠালে আপনি আমার সাথে বসতে সুস্থ বোধ করবেন না। আমি এতোটা ও জাহিল না যে একটা মেয়ের অবস্থা বুঝতে চাইবো না।

দোয়া ঠোঁট কামড়ালো। যা শালা এই পোলা কি তাকে খোঁচানোর জন্য রিকশাতে উঠালো নাকি!
সেই তো ভুলে গেছে কালকে সেই এই ছেলেকে জাহিল বলছিলো।
দোয়া শুকনো ঢোগ গিলে, সীমান্ত থেকে একটু সরে বসে আঁড়চোখে তার দিকে তাকালো।

সীমান্ত তা ত্যাড়া চোখে সবটাই খেয়াল করলো। তারপর তার ঝংকার ময় গলায় বললো, ম্যাম এটা রিকশা, বাস না এই পিচঢালা রাস্তায় নিচে পরলে দুইদিন বেড রেস্ট থাকতে হবে ম্যাম। দোয়া হালকা করে তাতে হেঁসে আবারও একি ভঙ্গিতে বসে রইলো।
সীমান্ত দোয়ার ভয়াতুর মুখের দিকে চেয়ে রিকশা চালকে উদ্দেশ্য করে বললো, বুঝলে মামা ময়ূর সবসময় দল ভারী থাকলে নৃত্য করে একা থাকলে সেই তার সুন্দর চঞ্চল পাখনা টাও দেখাতে চাইনা।

রিকশা চালক সেই কথার প্রেক্ষিতে বললো, মামা দল ভারী থাকলে সবাই বনের রাজা। সীমান্ত হো হো করে হেঁসে বললো, রানী মামা রানী।
তারপর দুজন উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলো।

দোয়া ঠিকই সীমান্তের খোঁচা ধরতে পারলো। কালকে যে সেই তার খালাতো বোনদের সাথে মিলে এই ছেলেকে ইভটিজিং সহ নৃত্য দেখিয়েছে লাফিয়ে সাফিয়ে তার সব শোধ এই ছেলে হাড়ে হাড়ে তুলছে। দোয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো এটা কে দেখলে মনে হয় কত সাধাসিধে কিন্তু এতোটা বর্নচোরা স্বভাবের তা সত্যি বুঝা দায়।
দোয়া মনে মনে বিড়বিড় করে বললো, বড্ড যাচ্ছে তাই আপনি সীমান্ত ভাইয়া।

সীমান্ত ভালোই বুঝলো দোয়া মনে মনে তার গুষ্ঠি উদ্ধার করার কাজ করছে। কারণ মেয়ে ঠোঁট কামড়ে বসে আছে। নাকে ডগা তার একবার ফুলছে আবারও স্বাভাবিক হচ্ছে এতেই স্পষ্ট ভিতরে ভিতরে রাগে ফেটে যাচ্ছে এই মেয়ে।
সীমান্ত অন্য পাশে তাকিয়ে দুষ্ট হাসলো। তার দারুনই লাগছে এই মেয়েকে জব্দ করে।


পর্ব ১০

~ শাহবাগ এরিয়াতে ঝুম বৃষ্টি নামলেও নারায়ণগঞ্জ যেনো একদমই কুয়াশা ময় সন্ধ্যা। কিন্ত আকাশে মেঘ জমে গুমোট বেঁধে আছে, যেনো সন্ধ্যার পরপরই ঝরঝর করে আকাশ পাঠিয়ে বৃষ্টি নামবে।

~ নারায়ণগঞ্জ থেকে বেলা তিনটা সবাই নিদাদের বাসায় এসে নামলো। ভিতরে ডুকে সব জামা কাপড় না ছেড়ে আবারও কাজে লেগে পড়লো সবাই।
মিসেস জুলেখা আর মি. ইমতিয়াজ আসেনি। হঠাৎ মি. ইমতিয়াজ বুকে অসহ্য যন্ত্রণা করছিলো ফলস্বরূপ কেউই দুজনে বাদ পড়লো। সবাই চিন্তিত হয়ে গেলে মিসেস জুলেখা জানালো আজ সকাল থেকে ছয় কাপ চা খেয়েছে উনি ফলস্বরূপ পেটে গ্যাস জমেছে হয়তো তারই ফল এই যন্ত্রনা।
~ নিদা সোফায় বসে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে সবাই দৌড়া-দৌড়ি দেখছে, তার খালা মামিরা ব্যস্ত ভঙ্গিতে নাস্তা রেডী করছে যেনো এক এলাহি কান্ড। নিদা যেনো বাসায় নতুন কিছুর গন্ধ পাচ্ছে।

মাহা তার কালকে বিকালের ছাদের ছবিগুলো আপলোড করে নিদার দিকে তাকিয়ে বললো, কি রে এইরকম নারীমূর্তি হয়ে আছিস কেন?
নিদা মাহার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই কি বুঝতাছোস না বাসায় কি চলছে?

মাহা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, সন্ধ্যার নাস্তার রেডী চলছে আর কি?
নিদা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো গাধীর কাছে রাজ্যের খবরে আবার আশা করা!
নিদা তার ছোট মামী মিসেস নীরা কে হাতের ইশারায় ডেকে উঠলো নীরা এসে গদগদকণ্ঠে বললো, সে কি তোমরা এখনও রেডী হও নি, এই জামা কাপড় ছেড়ে রেডী হয়ে যাও।

মাহা খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে বলল ওয়াও মামী আমরা আবারও ঘুরতে যাবো নাকি? আগে বলবা তো কত্ত আগে রেডী হয়ে নিতাম।
মাহা মুটামুটি উঠে দাঁড়িয়ে গেলো রেডী হওয়ার জন্য।
নিদা মিসেস নীরা হাসি হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো, কাকে দেখতে আসছে মামী? সত্যি করে বলবা।
মাহা বিষ্ময় ঠ্যালায় ঠাস করে আবারও পূনরায় বসে গেলো। তাকে দেখাচ্ছিলো এই পৃথিবীর সবচাইতে চমকিত মানুষ।
মিসেস নীরা জিলাপির প্যাঁচে পরে হিহি করে হেঁসে বললো, আহা নিদা তুমি এতো রাগ করছো কেন? মেয়ে মানুষ কে তো ১৫, ১৬ বছর থেকে দেখতে আসে তোমার বয়স হয়েছে না!

নিদা দাঁতে দাঁত চেপে বললো, মামী আমি এখন মাত্র ১ম বর্ষে আছি আর তোমরা বলছো বয়স হয়েছে সিরিয়াসলি!
হঠাৎ মি. মাহবুব সম্পর্কে নিদার বাবা তিনি এসে গুরুগম্ভীর গলায় বললো, নিদা কি সমস্যা তোমার? মামী সাথে উচ্চ কন্ঠে কথা কেন বলছো?
মিসেস নীরা হরগরিয়ে বললো, আহা ভাইয়া এটা মোটেও না, ঐ জাস্ট আমার সাথে কথা বলছে। আপনি এটা কে উচ্চ কন্ঠের নাম দিলেন? এটা কোন কথা!
নিদা নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো, সেই মাত্রাতিরিক্ত ভয় পাই তার বাবাকে। মাহা ফিসফিস গলায় বললো, নিদু চল, আংকেল ক্রুদ্ধ হয়ে গেলে অনেক ঝামেলা হয়ে যাবে চল ভিতরে চল।

মাহা নিদার হাত ধরে ওকে রুমে নিয়ে গেলো। নিদা বার বার দোয়া নাম্বারে কল দিচ্ছে, কিন্তু প্রত্যেক বার বিপরীত পাশে মহিলা একি সুরে গান গেয়ে উঠছে।
এই মুহুর্তে মোবাইল টি বন্ধ আছে অনুগ্রহ করে আরো একটু পরে ট্রাই করুন।

নিদার সত্যি কান্না পাচ্ছে, বাবা তার সাথে এই কাজ টা কীভাবে করলো? কত বড় বড় বোন রয়েছে ওর আর ওকে জবাই করতে হলো!
নিদা মাহার দিকে তাকালো, সেই ব্যতি ব্যস্ত হয়ে নিদার পরার জন্য জামা সিলেক্ট করছে। নিদা নাক কুঁচকালো। মাহা এইসব পরিস্থিতি কোন রকম পরামর্শ দিতে পারেনা। নিদা বিড়বিড় করে বললো, আমার এখন তোকে খুব বেশী দরকার মাদু কই তুই!
~ রিকশায় উঠার মিনিট দুয়েকের মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেলো।

প্রথম যেভাবে গর্জে ওঠেছিলো শেষটা তেমন হয়নি। প্রায় আধাঘন্টা পর বৃষ্টি নমনীয় হয়ে পড়ে।
সীমান্ত ছাতাটা বন্ধ করে দিলো। বৃষ্টি একদমই থেমে গেছে কিন্তু ফিনফিন বাতাস টা বয়ে বেড়াচ্ছে।

দোয়া ভিতরটা আকুপাকু করছে আরো এক নজর সীমান্তকে দেখার জন্য। দোয়া সত্যি নজর সীমান্ত দিকে দিয়ে দিলো সেই আঁড়চোখে সীমান্তের পরনে শার্টের দিকে তাকালো
ধূসর রঙের একটি শার্ট আর কালো একটি অতি দামী প্যান্ট, শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটানো। হাতে খুবই দামী একটি হাত ঘড়ি তাতে মুটামুটি ভালোই পানি ডুকেছে, শার্টের পকেটে গোল ফ্রেমের একটি চশমা। দোয়া মিনমিন গলায় বললো, এই ছেলে চার-চোখ নাকি!
তারপর ঠোঁট সুরু করে একি গলায় বললো, অসম্ভব কিছুনা। ম্যাথে পড়ছে আর চোখে স্পষ্ট দেখতে পারবে এটা তো প্রায় অবিশ্বাস্য।

দোয়া রাস্তা ভেজা পরিবেশ দেখতে লাগলো। এই বৃষ্টি স্নাত সন্ধ্যা রাস্তায় ঝরে যাওয়া সবুজ পাতা আর শুকনো লাল পাতাতে যেনো এক অদ্ভুত মিশ্রণে অপরুপ সৌন্দর্য নাম লিখেছে।
দোয়া চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে যেনো এই দৃশ্য এই মুহুর্তে টাকে সেই তার প্রানপ্রিয় চিত্র খাতাতে পেন্সিল দ্বারা রুপ দিবে।

তীব্র বৃষ্টিতে পথঘাট সব ভিজে গিয়েছে, এতোখন বৃষ্টির গতি এতটাই ছিলো, যেন আকাশ ভেঙে পড়বে। একটু পরপর বাজ পড়ার শব্দ আহা সেই কি ভয়াতুর অনুভূতি। এমন ভাবে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, যেন চিড়ে দিয়ে যাচ্ছে, আকাশের এক দিক থেকে অন্যদিক। সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে ঢাকাকে লাগছে অন্যরকম।
বৃষ্টি আর বাতাসে এক অন্যরকম অনুভূতি। একটু একটু শীত লাগছে দোয়ার। ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাঁপছে তার। সালোয়ার কামিজের কিছু অংশ ভিজে গেছে, শরীরে সাথে লেপ্টে গেছে একদমই।

ঠান্ডা বাতাসের জন্য দোয়া নড়েচড়ে বসলো, বৃষ্টির জন্য ঝরঝর লম্বা চুল গুলো হালকা কোঁকড়ানো লাগছে। বাতাসের বেগে সেই চুল গুলো বার বার মুখের উপরে এসে পরছে, তা পরমযত্নে নিজ হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে দোয়া।

সীমান্ত তাকিয়ে রইলে এই পৃথিবীর সবচাইতে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য টির দিকে, হঠাৎ দুজনে চোখাচোখি হয়ে গেলো। সীমান্ত কিছু সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো। কিন্তু পরক্ষণেই গলা পরিষ্কার করে আবারও সামনে তাকিয়ে গেলো।
দোয়ার নজর চলে গেলো তার কোলের আঁকড়ে ধরা ব্যাগের দিকে।

সীমান্ত দৃষ্টি! এই কেমন অদ্ভুত ভালো লাগার দৃষ্টি ছিলো তার প্রতি! দোয়া আরো শক্ত হাতে নিজের ব্যাগ আঁকড়ে ধরলো। এই অদ্ভুত অনুভূতির বেড়াজালে পরে বার বার তার ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ বার বার তাকে জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নিতে হচ্ছে। দোয়া বেশ কিছুখন পর শান্ত কন্ঠে সীমান্ত কে উদ্দেশ্য করে বললো, আপনি কীভাবে জানেন আমি রোকেয়া হলে থাকি?
সীমান্ত নজর ফিরিয়ে দোয়ার দিকে তাকালো, তারপর সামনে পিচঢালা কংক্রিটের রাস্তা টার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো, আগের নিজের জায়গা মজবুত করতে হয় তারপর অন্যে কে সাহায্য করতে হাত বাড়াতে হয়।

দোয়া ঠোঁট কামড়লো। তার মানে সীমান্ত তার আর ঐ রিকশা চালকের ও কথাবার্তা শুনেছে! ও আল্লাহ! সেই ছিলো কই! এতোটা লক্ষ্য করছিলো তাকে! কিন্তু কারণ!
সীমান্ত আঁড়চোখে দোয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো। দোয়া এক ঠোঁট দ্বারা আরেক ঠোঁট কামড়ানোর প্রতিযোগিতা করছে, যেনো দুনিয়ার সব চিন্তা সেই একা দায়িত্ব হিসেবে নিয়ে পূরন করছে, নজর তার হাতের শালের দিকে শালের ভেজা কিছু অংশ কে নিজের আঙ্গুলে বিব্রত ভঙ্গিতে পেঁচাচ্ছে সেই।

সীমান্তের নজর পূনরায় দোয়ার ঠোঁটের দিকে গেলো। বার বার তার অবাধ্য চোখ গুলো দোয়ার হালকা ভেজার শরীর নজর বুলাতে তাড়া দিতে লাগলো। সিমান্ত চোখ বন্ধ করে অন্য পাশে তাকিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা চালালো।
কি করছিস কি সেই! কেন বার বার নিজেকে সস্তা পুরুষের জায়গায় ফেলছে! কেন তার নজর কে সামলিয়ে ধমকে স্বরে বলতে পাচ্ছে না, তুমি নিজের স্থানে থাকো, আমি একজন পুরুষ তা আমাকে নোংরা ভাবে উপলব্ধি করতে দিও না।

সীমান্ত নিজেকে শাসালো তাকে মেয়েটির সাথে কথা চালু রাখতে হবে। নাহলে যে মহনীয় দৃষ্টি তার মেয়েটির প্রতি আজকাল হচ্ছে তা নোংরা ভাবে প্রয়োগ হবে। তাহলে ঐ কালো বেঁটে ছেলেগুলো সাথে তার ভাই ভাই সম্পর্ক হয়ে যাবে কারণ সেই তো ঐ নিম্নবর্গের কাজ টি করছে।
সীমান্ত দোয়া কে উদ্দেশ্য করে বললো, আপনার উচিত হয়নি লোকটাতে ছাতা দিয়ে এই সন্ধ্যা আচ্ছন্নের সময় দোকান দাঁড়িয়ে থাকা।
দোয়া শান্ত স্বরে বললো, উনি অনেক অসুস্থ ছিলো, আমি তো সুস্থ। ছাতা আমার না উনার বেশী প্রয়োজন ছিলো।

সীমান্ত ছোট্ট নিঃশ্বাস নিয়ে বললো, দোকানে দাঁড়ানোর সাথে সাথে আপনার কোন নিকটবর্তী বন্ধু ফোন দেওয়া উচিত ছিলো।
দোয়া চুপ করে রইলো, সত্যি সেই এমন কিছুই ভাবেনি সেই উল্টো বেখেয়ালি দের মত বৃষ্টি থামার আর রিকশার অপেক্ষা করছিলো।
সীমান্ত রিকশা চালক কে তদারকি করে বললো, মামা এই রাস্তা দিয়ে কেন যাচ্ছো? অনেক ঘুরতে হয়ে যাবে তো!
রিকশা চালক সীমান্ত কে উদ্দেশ্য করে বললো, মামা ঐ রাস্তায় নাকি একটা গাছ ভেঙে পড়েছে তাই নীলক্ষেত দিয়ে যেতে হবে।

সীমান্ত হালকা শব্দে বললো, ও! আচ্ছা সমস্যা নেই খালি রোকেয়া হলের সামনে দিয়ে যেতে পারলে হলো।
এরপরে দুজনে চুপ সীমান্ত যেনো আর কথায় খুঁজে পাচ্ছে না কিন্তু কেন যেনো বলতে ইচ্ছে করছে অনেক কিছু। দোয়া নিজ মনে বিড়বিড় করে বললো, ভাই তুমি কথা বলো, আমি মেয়ে মানুষ না এতো কথা বলতে পারি! তুমি বলো না কেন! বোবা ধরছে!
দোয়ার আশা পূরণ হলো সীমান্ত দোয়া কে উদ্দেশ্য করে শান্ত গলায় বললো, আপনাদের ছাদ টা অনেক সুন্দর, আমি এমন অদ্ভুত সুন্দর ছাদ বাংলাদেশে কম দেখেছি।
দোয়া তাতে যেনো অধিক খুশি হয়ে গেলো সেই চট করে সীমান্ত দিকে তাকিয়ে তার চমৎকার গেজ দাঁতের হাসিটা দিয়ে বললো, সত্যি সুন্দর তাইনা! আমি নিজ হাতে তৈরী করেছি। দোলনা পাশে যে ফুল গাছ গুলো দেখলেন? ঐ ফুল গুলো আমাদের দেশে খুবই কম জায়গায় পাওয়া যাই অনেক কষ্ট করে এনেছি।
সীমান্ত মৃদু হাসি মুখে দোয়ার হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলার দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁ সেটা আমি খেয়াল করেছিলাম। আর অপূর্ব ও বললো,

দোয়া চঞ্চলতা স্বভাবের কারণে চট করে চোখ বড় বড় রাগী সুরে সীমান্তের দিকে তাকিয়ে বলে বসলো ঐ ইতর কি বললো, আমার ছাদের কথা!
সীমান্ত ভড়কে গেলো কিন্তু সেই খুব দ্রুত নিজেকে স্বাভাবিক করে রসিকতা সুরে বললো, ঐ ইতর বলেছে ছাদের সাথে ছাদের মেয়েগুলোও সুন্দর।
দোয়ার এইবার যেনো বুদ্ধি হলো। সেই অদৃশ্য জিভ কাটলো। সর্বনাশ! সেই মার কাছে মাসির গল্প করছে! দোয়া খু খু করে কাশতে কাশতে সামনে তাকিয়ে রিকশা চালকে উদ্দেশ্য করে বললো, মামা জলদি জলদি।

তারপর আঁড়চোখে সীমান্তের দুষ্ট হাসি মুখের দিকে তাকানোর সাথে সাথে সীমান্ত হো হো করে উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলো।
দোয়া আশ্চর্য চোখে চোখের পাতা ঝাপটা মেরে বললো, আপনার হাসি একটু বেশী সুন্দর।
সীমান্ত থেমে গেলো। সেই হাসি ধরে রেখে আশ্চর্য গলায় বললো, তুমি কি সবসময় এইভাবে সরাসরি কথা বলো?

দোয়া মিষ্টি করে হেঁসে বললো, তিরস্কার মুখের উপরে করতে পারলে প্রশংসা ও মুখের উপরে করা উচিত নাহলে অনুচিত হবে।
সীমান্ত ঠোঁট উলটিয়ে হাসলো। তারপর হঠাৎ কিছু বলার আগে রিকশা চালক বললো, মামা রোকেয়া হল।
দোয়া আর সীমান্ত তাকিয়ে দেখলো তারা সত্যি সত্যি রোকেয়া হলের সামনে চলে এসেছে।
দোয়া নেমে গিয়ে সীমান্তের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা হাসি দিয়ে বললো, দুইবার খোঁচানোর জন্য ধন্যবাদ বাদ। তাই এই কৃতজ্ঞতা হাসি দিয়ে কাজ চালিয়ে নেন সিনিয়র।

সীমান্ত তার অসম্ভব সুন্দর হাসিটা দিয়ে রহস্য ময় গলায় বললো, প্রথম বর্ষ রা কিন্তু আমাদের কাছে মুরগী হয়।
দোয়া মস্করা গলায় বললো, এই মুরগী কে বাঁচানোর জন্য অনেক মোরগ আছে।
সীমান্ত ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, বাব্বাহ!
দোয়া হাসতে হাসতে গেটের ভিতরে এক পা রাখার আগে সীমান্ত পিছন থেকে ডেকে উঠলো হুর!
দোয়া চমকিত চোখে সীমান্তের দিকে তাকালো তাকে ভারী আশ্চর্য দেখালো।

সীমান্ত দোয়ার আশ্চর্য মুখের দিকে তাকিয়ে দুষ্ট হেঁসে বললো, সীমান্ত তাইমুর নামক ছেলেটির একাউন্ট আরো একবার দর্শন করলো উপকার হতো।
দোয়া অস্পষ্ট সুরে বললো, জ্বী!
সীমান্ত দোয়াকে এমন তাজ্জব অবস্থা রেখে রিকশা চালক কে রিকশা টানতে বললো, দোয়া দাঁড়িয়ে রইলো মূর্তির মত হা করে। কিছুখর পর গেটের দারোয়ানে ডাকের সাথে সেই যেনো নিজ দুনিয়াতে প্রস্থান করলে।

সেই উল্টে সীমান্তের রিকশা যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবারও গেটের বাইর ও ভিতরল এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।
তার প্রশ্ন সীমান্ত হুর নামে কাকে ডাকলো! আর তার একাউন্ট দর্শনে কাকে যেতে বললো,? সেই কি কোন অপ্সরী দেখেছিলো তার আশেপাশে!
দোয়া বিড়বিড় করে বললো, এই ছেলের সাথে জ্বীন-ভূত আছে নাকি!

তারপর শুকনো ঢোগ গিলে বললো, থাকতেও পারে শ্বেত রুগীদের মত যে ফর্সা। এরে ধরবে না তো কি কালো বেঁটে মোটাদের ধরবে নাকি!
দোয়া দ্রুত পায়ে ৭ মার্চ ভবনের তিন তোলা দিকে যেতে লাগলো। কাঁদা তে তার পুরো জামা ছোঁড়াছুড়ি। গেটের দারোয়ান হা করে দোয়া দৌড়ানি দেখতে লাগলো।
দোয়া দ্রুত পায়ে দৌড়াচ্ছে কি সর্বনাশের কান্ড সেই কি একটা ভুতুড়ে ছেলের সাথে এতোখন বসে বসে লজ্জা পাচ্ছিলো!
~ পুরো রুমে কেউ নেই রশ্মি তার বেডে বসে মহানন্দে পায়ে নেল প্রিন্ট করছে আর কিছুখন পর প্লেট থেকে খিচুড়ি ভুনা চামচ কেটে খাচ্ছে।

ঠিক তখনি দোয়া ছুটে এসে রশ্মি বেডে এসে পরলো। রশ্মি ভড়কে গিয়ে সব গুলো খিচুড়ি নিজের পায়ের উপরে ঠেলে দিলো, তাতে পুরো বেড মাখামাখি হয়ে গেলো।
দোয়া স্তব্ধ। রশ্মি হা করে একবার নিজের পায়ের দিকে তাকালো আরেক বার দোয়ার মুখের দিকে।
দোয়া কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, আমি একদমই খেয়াল করিনি রে, এমন টা হবে বিশ্বাস কর আ-আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি। দোয়া দ্রুত হাতে খিচুড়ি ভুনা বেড থেকে ঝাড়তে লাগলো।

রশ্মি ঝাঁঝিয়ে উঠে বললো, ক্যালা ঠিক করবা তুমি যা নিজের বেডে গিয়ে ভেজা জামা কাপড় বদলা আমি ঠিক করছি।
রশ্মি মুটামুটি দোয়া কে ধাক্কা মেরে বেড থেকে উঠিয়ে তার বেডে পাঠিয়ে দিলো।
রশ্মি ভালোই খেয়াল করেছে দোয়া প্রচন্ড ভয়কাতুরে অবস্থা রয়েছে, এই ছোট্ট ব্যাপারে দোয়া ভয় পাওয়ার কথা না। উল্টো বলতো দুই কাজ একসাথে করলে বাঁশ তো খাইবাই।

~ নিদা সবুজের উপরে লতাপাতা ডিজাইনের একটি জামা পরে বসে আছে শক্ত মুখে।
মিসেস নাসরিন এসে জরুরি গলায় বললো, কি নিদা তুই এখনও বসে আছিস চুল টা একটু আঁচড়ে নে।

নিদা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললো, এইসব কি হচ্ছে মা! তোমারা এতো জলদি আমার বিয়ে কেন ধরছো?
মিসেস নাসরিন নিদার চুল আঁচড়ে দিতে দিতে বললো, দেখতে আসলে বুঝি বিয়ে হয়ে যাই?
নিদা দাঁত কিড়মিড় করে বললো, মিথ্যা বলবা না মা। বাবা আজ পর্যন্ত কোন ছেলেকে আমাকে দেখাই নেই, যত বিয়ের কথায় চলেছে। আজ দেখাচ্ছে মানে অবশ্যই তোমরা অন্য কিছু চিন্তা করে রেখেছো।
মিসেস নাসরিন আদুরী গলায় বললো, ছেলে অনেক ভালো অবস্থা রয়েছে আর দেখতেও মাশাআল্লাহ ভালোই। বিয়ের পর পড়াবে তোকে, ছেলের মা নিজে কথা দিয়েছে।

নিদা আশ্চর্য গলায় বললো, মা সেই আমার থেকে বারো বছরের বড় মা!
মিসেস নাসরিন দৃঢ় গলায় বললো, তোর তো এক বছর মিস গেছে।
নিদা হতবাক গলায় বললো, তো! কি বলছো কি তোমরা মা! আমার এক বছর মিস করার জন্য কি উনাকে বিয়ে করতে হবে!
বিয়ের এক মাস না যেতে এই ছেলে বাচ্চা বাচ্চা করবে তখন আমার এতো কষ্টের পড়াশোনা কোন দামই থাকবে না। বিয়ের পর বলার মতো কোন কথায় ও থাকবে না।

মিসেস নাসরিন থমথমে গলায় বললো, এইসব ত্যাড়া চিন্তা তোকে মাদু দিয়েছে তাইনা!
নিদা অবিশ্বাস্য সুরে বললো, মা আমার কি জ্ঞান নেই? আমি কি বুঝিনা কিছু সবকিছুতে তোমরা মাদুকে দোষারোপ কেন করো?
মিসেস নাসরিন ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, বারণ করেছিলাম তোকে এই উড়ালচন্ডি মেয়ের সাথে বেশী মাখামাখি করবি না।
নিদা রাগে ফেটে পরে মৃদু চিৎকার বললো, যদি বিয়ে দিয়ে দিবা তাহলে এতো কষ্ট করে এতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিকালে কেন!
তারপর দ্রুত পায়ে বাথরুম ডুকে সজোড়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।

মিসেস নাসরিন জোর গলায় বললো, নকশা করবি না নিদা জলদি বের হয় ছেলেরা এখন সাইনবোর্ড কিছুখনের মধ্যে চলে আসবে।
মিসেস নাসরিন বিড়বিড় করে দোয়াকে বকতে বকতে বের হয়ে গেলো। এই বেয়াদব বেখেয়ালি মেয়ে একদিন নিজে শেষ হবে অন্যদের ও শেষ করবে।
~ তুই সত্যি করি বলতাছোস তো ঐটা সীমান্ত ছিলে। দোয়া জোরে জোরে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো, হাতে তার ভুনা খিচুড়ি যা রশ্মি রান্না করেছে।
রশ্মি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, স্বাভাবিক! তুই যেভাবে ঐ ছেলেকে গিলে খাস আল্লাহ তোর উপরে মায়া হয়ে পাঠিয়ে দিলো ওরে।
দোয়া ঠোঁট উলটিয়ে বললো, দূর কি বালের গিলে খাবো ভুতুড়ে ছেলে একটা আল্লাহ গো। কি সর্বনাশ হতো আজ আমার!
রশ্মি দোয়ার মাথায় খাট্টা মেরে বললো, গাধীর গাধী চাতুরী গিরি তো সবসময় দায়িত্ব সহকারে করিস আর এটা বুঝলি না ঐ তোরে হুর নামে ডাকছে অন্য কোন মেয়েকে না।

দোয়া ছুটে আয়না সামনে গিয়ে নিজেকে আপাদম্তক দেখে ভেংচি কেটে বললো, ধোপা বাড়ির মেয়ের মতো লাগে আমারে আর তুই বলস হুর! গ্যাস্টিকে ঔষধ এনে দিবো তোরে? মাথায় গ্যাস্টিক জমছে?
রশ্মি দোয়ার পিছনে অংশ মৃদু লাথি মেরে বললো, লম্বা মেয়েদের হাঁটুতে বুদ্ধি লোকে গুজব ছড়ায় না। তুই নিজে তার গানের ক্যাপশন মনে করে দেখ।
দোয়া জ্ঞানী জ্ঞানী কন্ঠে বললো, হ্যাঁ রে! সত্যি তো! আমি তো চিন্তায় করতে পারিনি। সীমান্ত! সীমান্ত আমাকে সামনাসামনি হুর ডাকবে!
রশ্মি চোখ প্রজাতির মত রুমে উড়ে উড়ে গান ধরলো।

Khamoshiyan jo sunle meri
Inmein tera hi zikra hai
Khwaabon mein jo tu dekhe mere

Tujhse si hota ishq hai
Ulfat kaho ise meri
Na kaho hai mera kasur
Koyi hoor jaise tu

Koyi hoor jaise tu
দোয়া আক্কেলগুড়ুম হয়ে রশ্মি গানের দিকে তাকিয়ে কিছু মনের পড়ার ভঙ্গি করে মৃদু চিৎকার দিয়ে বললো, তার মানে সীমান্ত আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়েছে ইয়াহু। আল্লাহ এই সুখ আমি কই রাখবো!
দোয়া লাফিয়ে নিজের বেডে উঠে রশ্মি সাথে তাল মিলিয়ে গান করতে করতে করতে উড়া দুড়া নাচতে লাগলো।

koyi hoor jaise tu
koyi hoor jaise tu
তারপর মৃদু চিৎকার দিয়ে বললো, আজ পুরো রোকেয়া হল কে আমি চিৎকার দিয়ে বলছি। আমার সীমান্ত আমাকে হুর ডেকেছে হুর!
রশ্মি হাসতে হাসতে বেডে গড়িয়ে পড়লো।
দোয়া এইবার দ্রুত হাতে ব্যাগ হাতড়ে নিজের ফোন নিলো। বাসে তার ফোনে চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিলো দোয়া চট জলদি ফোন চার্জে লাগিয়ে সেইখানে দাঁড়িয়ে ফোন খুললো।

কিন্তু ফোন খুলে তার হাসি উড়ে গেলো। নিদার নাম্বার থেকে ২৩ বার কল। দোয়া ভয়ে কলিজা এতোটুকু হয়ে গেলো। সেই চিন্তিত চেহেরায় নিদার নাম্বারে কল করতে লাগলো। কিন্তু নিদা ফোন ধরলো না। তারপর মাহার নাম্বারে কল দিলো কিন্তু বার বার মাহা ফোন বন্ধ আসছে।
দোয়া রাগে মুখ দিয়ে একটি কঠিন খিস্তি বের হলে সারাখন ফোন গুতাগুতি করে বিপদের সময় বন্ধ থাকে।
দোয়া এইবার মিসেস জুলেখা কে কল দিলো।

মিসেস জুলেখা ফোন ধরার সাথে সাথে দোয়া হরগরিয়ে নিদার কথা জিজ্ঞেস করলো।
মিসেস জুলেখা গম্ভীর গলায় দোয়াকে সব বললো, তারপর ধমকির স্বরে বললো, নিদার আজ আংটি বদল আমি চাইনা তুই কোন সমস্যা করস।
আমাকে নাসরিন ফোন করে অহেতুক অনেক কথা বলেছে তোকে আমি সাবধান করছি নিদার ফোনে কল দিবা না।
দোয়া ত্যাড়া গলায় বললো, এই কাজ আমি জীবনেও করতে পারবো না মা। নিদা আমার উপরে ভরসা করে আছে, ওর অমতে একটা বয়স্ক লোকের সাথে আংকেল এই কাজ জীবনেও করতে পারেনা।

আমি তোমার সব কথা সব সময় মেনেছি মা কিন্তু নিজের বোনদের সাথে অন্যায় হবে জেনেও চুপ করে তোমার কথা মানতে পারবো না এটা দোয়ার চরিত্রের সাথে যাইনা।
মিসেস জুলেখা কে আর কিছু বলতে না দিয়ে দোয়া ফোন কেটে দিলে।
~ নিদা দাঁড়িয়ে আছে তাদের বারান্দায় তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে কচি চেহেরায় এক যুবক। সেই তাকিয়ে রয়েছে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অত্যন্ত রুপবতী মেয়েটির দিকে।

বাইরে হিমশীতল বাতাসে সাথে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। নিদার অবাধ্য চুল গুলো বার বার মুখে পরছে কিন্তু সেই মুখের দৃঢ়তা জন্য হাত উঠিয়ে চুল গুলো কে যত্নের সাথে সরিয়ে দিচ্ছে না। হয়তো তাতে এই অপরুপ রমনীটির মুখের কঠিন ভাব সরে এক নরম চেহেরায় রুপান্তরিত হতো।
ছেলেটি গলা পরিষ্কার করে বললো, আসলে সত্যি আমরা চিন্তা করতে পারিনি ভাইয়া কাজটি করে বসবে।

নিদা চুপ করে রইলো তার দৃষ্টি এখনও বারান্দায় গ্রিল বেধ করে পাশের ছাদের আমড়া গাছটির দিকে যেটি বাতাসে এদিক ঐদিক দুলছে।
ছেলেটি নিদার পক্ষে থেকে কোন উত্তর না পেয়ে বললো, মা অনেক লজ্জা পেয়েছিলো, আসলে আপনাদের কি জবাব দিবে সেটা ভেবে উনার প্রেশার বেড়ে গিয়েছিলো। তাই আমি সাথে করে আসলাম। ভাইয়া বলেছিলো ফোন দিয়ে সব বলতে কিন্তু মা নিজ থেকে ছুটে এলো।
নিদা অনেকখন পর নিজের মুখ খুলে শান্ত কন্ঠে বললো, আমার এই বিয়েতে কোন মত ছিলো না।

বাইরের মানুষ না জানলেও ঘরের মানুষ আত্মীয় স্বজন সবাই জানে ব্যাপারটা, এই নিয়ে বাবা অনেক সম্মান লেগেছে।
আপনার ভাইয়ের পছন্দ থাকলে সেই বলতে পারতো। নিজের পরিবার, অন্যের পরিবার কে ছোট করে তিনি সংসার জীবনে শুরু করবে ব্যাপারটা হাস্যকর না!
ছেলেটি চুপ করে রইলো সত্যি এই কথার গুলোর উত্তর তার কাছে এখন মোটেও উপস্থিত নেই।

নিদা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, চলুন ভিতরে যাওয়া যাক। মশা কামড়াচ্ছে আমার দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না।
ছেলেটি হালকা করে হাসলো। নিদা রুমে পা বাড়ানোর আগে ছেলেটি বলে উঠলো। ভাইয়া হয়তো সত্যি ঠকেছে।
নিদা পিছনে মুড়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে এক পেশে হেঁসে বললো, হয়তো না, অনেক বেশী ঠকেছে।
~ রাতে দোয়া নিদার সাথে কথা বলার পর আর খাবারে মন বসলো না। আজকে হওয়া সীমান্তের ব্যাপারে নিদা কে কিছুই বললো, না, কারণ নিদা বিয়ের জন্য তৈরী না থাকলেও এমন পরিস্থিতি জন্য সেই আরো বেশী তৈরী ছিলো না।

রুমের কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ পড়াছে, কেউ বা নিজের প্রিয়জনের সাথে কথা বলছে। দোয়া নিস্তব্ধ হয়ে জানালা দিয়ে বাইরের তুমুল বর্ষন দেখতে লাগলো। বৃষ্টি দোয়ার কোন কালে পর্যন্ত না। মেয়েদের অনেক প্রিয় জিনিস তার অপ্রিয়ের খাতাতে রয়েছে।
রাত যত বাড়ে মানুষের চিন্তা ভাবনার জগৎ যেনো আরো বেশী লম্বা হয়। কিছু অপ্রিয় সত্য মনে পরে যাই, কিছু আপত্তি ও বিভ্রান্তিকর মুহুর্তে মনে পরে যাই। রাতে প্রহর যেনো সুখ কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দুঃখ নামক এই যন্ত্রণা টাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসে।

তাইমুর নামক একাউন্টে। বিগত বারো ঘন্টা আগ থেকে ঝুলে আছে দোয়ার রিকুয়েষ্টের ঝুড়িতে।
দোয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ফেসবুক থেকে বের হয়ে গেলো। এখন তার মন ভালো নেই। একদমই নেই। তার এই প্রিয় লোকটি এখন এক্টিভ থাকলেও সেই ক্ষূন্ন মনে কথা বলতে পারবে না হয়তো তাতে লোকটি অপমান বোধ করবে তাই কালকে সকালে সময় করে তার ফ্রেন্ড লিস্টে জায়গা করে নিবে।
~ পরের দিন পুরোদমে চারটা ক্লাস করে দোয়া কাত হয়ে পরে রইলো, তার আর সীমান্ত কথা মনে পড়লো না।

চারটা নাগাদ ফোন আসার সাথে সাথে আবারও ছুট লাগালো দোয়া, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচাইতে তার প্রিয় জায়গা টিএসসির সেই করিডরে।
এই টিএসসির করিডরে পাওয়া যাই কত শত রকমের মানুষ। একেক জনের চিন্তা ভাবনা থাকে একেক রকমের।
হেমন্তের গোধূলিতে হালকা শীতের রেশ লাগতেই তারা চিন্তা করে শীতকালে উত্তরবঙ্গের শীতার্তদের কথা।
পড়ন্ত বিকাল থেকে সন্ধ্যা পুরো সময়টুকু যেন প্রাণের মেলায় ছেয়ে যায় টিএসসি।

এ সময় সৌন্দর্যপিপাসু ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের হল থেকে বেরিয়ে ছাত্র মিলিত হয় টিএসসি এই করিডরে বা সেই গাছ তলায়।
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চর্চা, আলাপ-আলোচনা করে নিজেদের ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে তারা।
এভাবেই সবাই গোধূলির সময়টুকুকে একান্তই নিজের করে নেয় প্রাণ ও জ্ঞানের সাগরে।
কিন্তু সন্ধ্যা শেষ হলে অনেক জনকে ছুটে যেতে হয় সেই পড়ার টেবিলে।

~ টিএসসি তে গিয়ে দোয়া দেখলো সবগুলো তাকে দেখে চিৎকার করে এক সাথে গান গেয়ে উঠলো।
রিমঝিম এ ধারাতে চায় মন হারাতে
রিমঝিম এ ধারাতে চায় মন হারাতে
আগে কত বৃষ্টি যে দেখেছি শ্রাবণে
জাগেনি তো এত আশা, ভালোবাসা এ মনে
আগে কত বৃষ্টি যে দেখেছি শ্রাবণে

জাগেনি তো এত আশা, ভালোবাসা এ মনে
সে বৃষ্টি ভেজা পায়ে
সামনে এলে হায়, ফোটে কামিনী
আজ ভিজতে ভালোলাগে
শূন্য মনে জাগে প্রেমের কাহিনী
সে বৃষ্টি ভেজা পায়ে

সামনে এলে হায়, ফোটে কামিনী
আজ ভিজতে ভালোলাগে
শূন্য মনে জাগে প্রেমের কাহিনী
দোয়া ডানে বামে মাথা দুলালো তাদের বিবিসি জানালা রশ্মি রয়েছে এখানে।

দোয়ার আর বুঝতে বাকী রইলো না রশ্মি ব্রেকিং নিউজ হিসেবে সব প্রচার করে ফেলছে।
ইশিতা দোয়া কে টেনে হিঁচড়ে করিডরে বসিয়ে বললো, তারপর বল না সীমান্ত সাথে তোর ফেসবুকে কি কি কথা হয়েছে?
দোয়া ঠিক মত জামা ছড়িয়ে বসে বললো, আগে বল এই গান করছিস কেন? আর গান পেলি না!
ইতি দোয়া কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ঠাট্টা সুরে বললো, এখান থেকে গিয়ে ফেসবুকে ডুকবেন তার বুঝবেন কারণ।
দোয়া ছোট্ট নিঃশ্বাস নিয়ে বললো, ঠিক আছে।

ইশিতা আবারও তাড়া দিয়ে বললো, বল বল ফেসবুকে কি কথা হয়েছে তোদের?
দোয়া রাত থেকে নিদার ব্যাপার নিয়ে দুঃখেকাতর হয়ে আছে সেই বেলুমান ভুলে গেলো সীমান্তের ব্যাপারটা।
সেই শান্ত গলায় বললো, আমি তো তার রিকুয়েষ্ট এখনও এক্সেপ্ট ও করিনি, কথা কীভাবে হবে!
ইতি ভেংচি কেটে বললো, ভাব লও মনু! নিজ থেকে রিকুয়েষ্ট দিয়েছে তো তাই সাপের ঠ্যাঁ দেখছো।

দোয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। মন টা তার আজ সত্যি বিক্ষিপ্ত, কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
সবগুলো দোয়াকে এদিক ওদিক করে সীমান্ত সাথে রিকশার প্রত্যেকটা মুহুর্তে বার বার শুনতে লাগলো।
কিন্তু দেয়ার জায়গায় তা রশ্মি রসিয়ে রসিয়ে তা সবাইকে বলতে লাগলো।
হঠাৎ দোয়া খেয়াল করলো তাদের মধ্যে পূজা নামক একটি মেয়ে উদাস চোখে ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

দোয়া তার দৃষ্টি লক্ষ্য করে বললো, কি
রে ঐদিকে কি দেখিস! মন খারাপ তোর? কেমন উদাস লাগছে?
ইতি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, অভি নতুন প্রেম করছে তৃধা দাস নামের একটি মেয়ে সাথে। সেইজন্য এটা শোকে কাত হয়ে আছে।
দোয়া শুধু ওহ্ বলে একটি শব্দ মুখে উচ্চারণ করলো। আর কোন কথা এই প্রেক্ষিতে সেই বললো, না। পূজা দোয়ার দিকে তাকিয়ে কাতর গলায় বললো, আমি দুঃখিত রে।

দোয়া মিষ্টি করে হেঁসে বললো, কোন ব্যাপার না।
অভি, চরিত্র খারাপ বখাটে, মেয়েবাজ, গালিবাজ আর আলালের ঘরে দুলাল ছেলে।

সেই অনেক বার পূজা কে না করেছে এই ইতর মেয়েলি স্বভাবের ছেলেটার থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু প্রত্যেক বার এই মেয়ে ন্যাকা ন্যাকা ওর পক্ষে নিয়ে তাকে যা তা শুনিয়েছে। আজ ফল!
দোয়া পূজা কে কিছুই বললো, না। সেই সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো, চা খাবি সবাই?
হেনা এক গাল হেঁসে বললো, আবার জিগ্গায় তুমি সীমান্ত লগে পুরে ক্যাম্পাস এরিয়া রিকশা তে ঘুরলা আর ট্রিট দিবা না যাও যাও নিয়ে আসো।
দোয়া হাসলো তারপর সবাই কে বললো, সেই চা নিয়ে আসছে সবার জন্য।

রশ্মি দোয়ার সাথে উঠে গেলো। ক্যান্টিনে ডুকে রশ্মি দোয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো, তুই কিছু বললি না কেন পূজাকে? আগের বার তোকে কত আজেবাজে কথা শুনিয়েছে এই ছেলের পক্ষ নিয়ে মনে নেই!
দোয়া মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে বললো, বাদ দে।
রশ্মি ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, এইবারও ওর শিক্ষা হবে না দেখিস। আর আমি চিন্তা করি ওর দরকার টা কি এতো হাই ক্লাস পরিবারে ছেলেকে ধরার? এরা কোন জাতের হয় জানে না?

দোয়া মুচকি হেঁসে বললো, সব বিত্তবান পরিবারে ছেলেরা খারাপ না। যে চরিত্র খারাপ সেই সব শ্রেণির পরিবারে চরিত্র খারাপ হয়ে জন্ম নেই।
ভুল সম্পূর্ণ আমাদের। আমরা এই বলে কথা বাদ দিই ছেলেটা নিচু বংশের এমন তো করবেই, আবারও বলি ছেলেটা উঁচু বংশের এমন তো হবেই। সবসময় আমরাই ওদের উঁচু নিচু বলে বিষয় টাকে টাল বাহানা করে তুলি।

রশ্মি চটপট উত্তরে বললো, আমি তো ওকে বলেছি বেছে বেছে ইলিশ মাছ ধরিস আর গলায় কাটা বিধলে দোষ!
ওর জন্য সৌমিক কত্ত পাগল আর ঐ একদম চেহেরা বংশ দেখে লাফিয়ে চলে গেসিলো। এখন বুঝুক ঠ্যালা।
গোধূলির আলোর মিষ্টি আভা শেষাংশ যখন কুয়াশা হালকা হালকা ধোঁয়াশার রুপ নিচ্ছে। তখন গুটিগুটি পায়ে দোয়ার দল-বল টিএসসি থেকে বের হয়ে গাছ তলা এসে দাঁড়িয়েছে।

চারিদিকে আজানের প্রতিধ্বনিতে সব মুখরিত হচ্ছে, চারিদিকে নানা প্রজাতির মেয়েগুলো এক অদ্ভুত সৌন্দর্যের সাথে মাথায় ঘোমটা তুলে নিচ্ছে। দোয়া যখন মাথায় তার ঘোমটা তুলে দিচ্ছে, তখনি তার নজর এলো কিছু দূর থেকে হেঁটে হেঁটে এক চেনাপরিচিত লোক আসছে।
দোয়া চোখ সুরু করে দেখতে লাগলো কিন্তু সন্ধ্যার আচ্ছন্নতাটা আর কুয়াশা ধোঁয়াশা রুপের কারণে স্পষ্ট কিছু ধরা পড়লো না।
কিন্তু সময় বেশী লাগলো না তার আগে দোয়াকে বিষ্ময় করে দিয়ে তার সামনে হাজির হলো সীমান্ত।

দোয়া ভড়কে গিয়ে দুই পা পিছিয়ে গেলো। কারণ সেই একদমই ভাবনাতে আনে নি সীমান্ত এইভাবে তার কাছ ঘেঁষে এসে দাঁড়াবে।
দোয়ার দল-বলের সবাই একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। রশ্মি শান্ত গলায় দোয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো, উনি কে মাদু!
দোয়া অস্পষ্ট স্বরে বললো, সী-সীমান্ত!

পর্ব ১১

~ টিউশনি শেষ করে নিদা যখন তার হলের দিকে এগিয়ে যেতে ধরলো ঠিক তখনি তার চোখে পড়লো একটি মানব যুবক।
সেই তাকিয়ে আছে তার দিকে হাসি হাসি মুখে কিন্তু তাকে এক নজর দেখে নিদা খুশি হতে পারলো না। সেই পা বাড়িয়েই হলের গেটে ডুকার আগে মৃদু ডাক।
নিদা আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
ছেলেটি নিদা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।

নিদা চারিদিকে চোখ বুলালো। সন্ধ্যা আচ্ছন্নে লোক সমাহার এই জায়গা টি হয়ে আছে বিশেষ করে মাসটি শীতকাল বলে।
নিদা দাঁড়িয়ে রইলো নিজ জায়গায় তাকে দেখালো প্রচন্ড গম্ভীর।
ছেলেটি এগিয়ে এসে নিদার সামনে দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখে বললো, আপনাদের ক্যাম্পাস অনেক সুন্দর।
নিদা প্রশ্ন চোখে বললো, এটা বলার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন?

ছেলেটি হাসলো সুন্দর করে। নিদা নজর অন্য দিকে ঘুরালো। ছেলেটি কাচুমাচু গলায় বললো, আহ! আপনি কি আমার সাথে কিছু সময় কাটাতে পারবেন?
নিদা চট করে ছেলেটির তাকালো তার নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক করে শান্ত গলায় বললো, আমি এখনও হ্যাঁ বলিনি মি. আদনান।
আদনান নিজে আগের হাসি বজায় রেখে বললো, না ও তো বলেননি।

নিদা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। আদনান রসিকতা সুরে বললো, আমি কিন্তু এতোও বাজে পথ সঙ্গী না।
নিদা চোখ তুলে এক পেশে হেঁসে বললো, কিন্তু আমি অনেক বাজে শ্রোতা।
আদনান একি সুরে বললো, তাহলে উত্তরে আমি বলবো, আমি অনেক ভালো শ্রোতা আপনি নিজের কথা যতখন ইচ্ছে চালু রাখতে পারবেন।
নিদা কপাল কুঁচকে বললো, আপনি কি তাহলে আমাকে হলে এখন পা রাখতে দিবেন না?
আদনান কাঁধ ঝাঁকিয়ে উদাস গলায় বললো, মতামত তো আপনার।

নিদা মুখ টিপে হাসলো। যেটা আদনান নামক ছেলেটি খেয়ালই করলো না।
নিদা হলে না গিয়ে সামনে দুই কদম এগিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো আদনান ঘুরে দাঁড়িয়ে তার মুখের প্রানে চেয়ে আছে, তাকে লাগছিলো হতবাক।
কুয়াশা ভরা এই সন্ধ্যার গেটের হলুদ বাতির মৃদু আলোতে এই শ্যাম বর্নের লম্বা, ক্লিন শেপের এই ছেলেটিকে দেখে নিদা কেন যেনো কিছুখনের জন্য থমকে গেলো।
এইতো এই মায়াবী মুখ খানা দেখে তো নিদা প্রথম বার নিজে মন প্রান সব হারিয়ে বসে ছিলো এই ছেলেটির উপরে। পুরানো ভালো লাগার অনুভূতি যেনো নিদাকে ছোট্ট একটি ধাক্কা দিলো।

আপনি কি তাহলে আমার সাথে ঘুরবেন? আদনান হাসিজ্জ্যেল গলায় নিদা কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন খানা করলো।
আদনানে কথাতে নিদা তার ভাবনা জগৎ থেকে চিটকে আবারও বাস্তব জীবনে আসলো।

সেই কোন রকম হালকা করে হেঁসে বললো, আমার বিশ্ববিদ্যালয় দর্শনে এলেন, আমি তদারকি না করলে তো বড্ড অসামাজিক দেখায়।
আদনান ফিসফিস গলায় বললো, সত্যি অসামাজিক হয়ে যাবে, কারণ আপনাকে দেখার জন্য আজ অনেক কাঠখোট্টা পোড়াতে হয়েছে এই আদনান কে।
নিদার কথাটি শুনেও শুনলো না। সেই কোন প্রতিক্রিয়া না করে জরুরি গলায় বললো, চলুন চলুন শীত বাড়লে বাইরে থাকতে আমার সমস্যা হবে।
আদনান ছুটে এসে নিদার সাথে পথ চলতে শুরু করলো, উদ্দেশ্য পুরো ক্যাম্পাসের রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা।

~ দোয়াসহ তার প্রতিটা বান্ধবী হতভম্ব চোখে দেখছে সীমান্ত কে। তারা সবাই নিজ নিজ জায়গা চমকে স্থির হয়ে গেলো। তারা হা করে সীমান্ত কে দেখতে লাগলো।
পরণে তার একটি হালকা সবুজ রঙের ফুল হাতা টি-শার্ট তার উপরে মুড়ে আছে একটি গাঢ় সবুজ রঙের শাল যা একদমই অগোছালো অবস্থা শরীরে পড়ে রয়েছে।
কেউ যদি বলে এটা শীত কাবু করার জন্য পরেছে তাহলে ব্যাপারটা বেসামাল হাস্যকর হবে। আর রয়েছে একটি কালো সবুজ মিশ্রণ টাউজার, চোখে রয়েছে তার একটি গোল ফ্রেমের চশমা।

হেনা হালকা শব্দে বিড়বিড় করে বললো, এই তো হাংলা! আর ছেলে মানুষ বুঝি এতো ফর্সা হয়! শ্বেত রুগী? নাকি ফরেনার!
সীমান্ত দোয়ার চমকপ্রদ মুখের দিকে তাকিয়ে এক রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো, আমাকে আসতে বলে যাচ্ছো কই তুমি?
দোয়া চোখ বড় বড় করে তার দল-বলের দিকে তাকালো, তারা সবাই অভিভূত চোখে দোয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
দোয়া কোন রকম আশ্চর্য গলায় কোন রকম বললো, জ্বী!
সীমান্ত রসিকতা সুরে বললো, বড্ড বাজে অভ্যাস। তুমি কি কানে কম শুনো? কিছু বললে আবারও প্রশ্ন ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকো।

ইশিতা দোয়াকে চিমটি কেটে ফিসফিস গলায় বললো, ওকে টিএসসি কখন ডাকলি, কাল? তাহলে লুকালি কেন আমাদের থেকে?
দোয়া অসহায় চোখে সবাই দিকে তাকালো, তারা ঠোঁট ফুলিয়ে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে দোয়ার দিকে।
তাদের দৃষ্টি বলে দিচ্ছে, প্রেম শুরু করছো তাইনা? কথা লুকাতো শিখছো? আচ্ছা এই ব্যাটা যাক লুকানোর ফল হাড়ে হাড়ে টের পাবা।
সবাই কে আরো এক ধাপ বিষ্ময় করে দিয়ে সীমান্ত হাসি হাসি মুখে বললো, আপনাদের সাথে পরিচয় হলাম না, আমার মনে হয় নাম বলতে এতো আপত্তি হবে না সবাই।

রশ্মি হেঁসে বললো, অবশ্যই না।
তারপর এক এক করে সবাই সাথে সীমান্ত পরিচিত হলো।
সবাই সাথে হাসি মুখে কুশল বিনিময় করার সময় সীমান্ত আঁড়চোখে দোয়া কে দেখতে লাগলো।

ঘোমটা মাথায় দিয়ে তার ক্লান্ত বড় বড় হরিণ টানা চোখ গুলো আরো বড় করে হতবিহ্বল হয়ে অতি মনোযোগ দিয়ে সীমান্তের কাজকর্ম দেখছে সেই।
তখন দোয়া নামক মেয়েটিকে সীমান্তের কাছে দেখাচ্ছিলো ক্লান্ত নগরীর এক অনাবিল সুন্দরী হুর।
দোয়া শুকনো ঢোগ গিলে সীমান্তের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগে সীমান্ত সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো, আপনারা চাইলে জয়েন করতে পারেন।
তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, দোয়ার সমস্যা না থাকলে আমার কোন সমস্যা নেই।

দোয়া হতবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। সবগুলো জোরপূর্বক না বোধক মাথা দুলিয়ে বললো, না ভাইয়া আপনারা ইমজয় করুন, আমরা অন্য দিন জয়েন করবো।
সীমান্ত তার সুন্দর হাসি টা দিয়ে সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো, ওহ্ সত্যি ভারী চমৎকার আপনারা, পরিচিত হয়ে খুশি হলাম।
সবগুলো সুন্দর করে হেঁসে দোয়াকে কিছু না বলে গটগটিয়ে সামনে হাঁটা ধরলো।

দোয়া কাঁদো কাঁদো অসহায় গলায় রশ্মি কে ডাকলো, ইতি কে ডাকলো কিন্তু কেউ ফিরে ও তাকালো না।
দোয়া দুহাত মেলে হতবাক গলায় বললো, আশ্চর্য! আমি কি করলাম?

সীমান্ত দোয়ার তাজ্জব মুখের দিকে তাকিয়ে তার দুহাত টাউজারের দুই পকেটে রেখে কাঁধ ঝাঁকিয়ে ঠোঁট উলটিয়ে বললো, সেটা আমারও প্রশ্ন।
দোয়া সাপের মত ফোঁস করে সীমান্তের দিকে তাকানোর সাথে সাথে সীমান্ত ব্যস্ত গলায় বললো, চলো, চলো! চা কি আজকে খাবেনা?
দোয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো, না!
সীমান্ত মুখ টিপে হেঁসে ভারী সরল গলায় বললো, কেন একাহারী নাকি তুমি?

দোয়া কাল থেকে মন ভালো নেই, যখন তার মন ভালো থাকে না তখন তার সবকিছু এক অসহ্য রকমের বিষাক্ত লাগে। যেমন এখন সিমান্ত নামক মাত্রাতিরিক্ত ফর্সা তার অত্যন্ত প্রিয় এই ছেলেটিকে বিরক্ত লাগছে।
দোয়া মুটামুটি ঝগড়া করার প্রস্তুতি নিয়ে কিছু বলার আগে সীমান্ত চট করে দোয়ার ব্যাগ ধরে হিড়হিড়িয়ে ওকে টানতে টানতে টিএসসি ক্যান্টিনে নিয়ে গেলো।
দোয়া যেনো কাঠের পুতুলের মত বাকরুদ্ধে রুপান্তরিত হলো সীমান্ত এমন আত্মকেন্দ্রিক ব্যবহারে।
~ সীমান্ত মহানন্দে চা খাচ্ছে আনারসের ছোট্ট ছোট্ট বিস্কুট দিয়ে।

কিছুখর পর সেই উঠে গিয়ে আরো দুটো বিস্কুট আনলো। যেনো এমন মজার বিস্কুট সেই প্রথমবার খাচ্ছে।
কিন্তু এই বিস্কুট সবসময়ই এই ক্যান্টিনে অবস্থান করে। সীমান্তের এমন হালুম হালুম করে খাওয়ার কোন মানে দোয়া পেলো না।
দোয়া বসে আছে মুখকে ভাঙা হাড়ের মত করে। আনারসের বিস্কুট দিয়ে কেউ চা খাই! সিরিয়াসলি!
দোয়া কখনও চা-য়ের মত এমন অসাধারণ জিনিসের সাথে কখনও বিস্কুট খেতে পারেনা, সেটা এমনেও না, ভিজিয়ে ও না।

কিন্তু কেউকে তাদের নিজস্ব পছন্দ দিয়ে দোয়া কিছু বলে না এমনকি নিজের পছন্দ ও চাপিয়ে দেই না।
কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো দোয়ার কেন যেনো সীমান্ত এমন চা খাওয়ার ভঙ্গিটা আজ ভীষণ ভালো লাগছে। তার মনে হচ্ছে একবার নিজেও খেতে আপত্তি হবে না।
কোন মানুষ খাওয়ার সময় তার দিকে এমন নির্লজ্জের মত তাকিয়ে থাকা অত্যন্ত লজ্জাদায়ক, কি আশ্চর্য বিষয় দোয়া যেনো কোন লজ্জায় এলো না সেই যেনো তার নজর অন্যদিকে মনোযোগ করতে পাচ্ছে না এমন সুন্দর মুহুর্তে থেকে।

হয়তো হুমায়ুন আহমেদ ঠিক বলছে প্রিয় মানুষের সবকিছু প্রিয় লাগে, সেটি আপনার কাছে যত অপ্রিয় হক।
কিন্তু তার মাথায় ধরছে না এই ছেলে সমস্যা কোন জায়গায়। সেই একজন ফেমাস ইউটিউবার হয়ে তাকে নিয়ে এতো হল্লা কেন করছে! তার কাছে কি চাই?
দোয়া বিড়বিড় করে ঠোঁট উলটিয়ে বললো, রহস্যময় চরিত্র মানুষটার।
দোয়া আবারও সীমান্তের দিকে লক্ষ্য করলো সেই তাকে চা খেতে কখন ডাকলো?

দোয়া কালকের সব ঘটনা এক এক করে মনে করার চেষ্টা চালালো, না এমন কিছুই সেই বলেনি।
সবচাইতে বিষ্ময়কর হলো কাল আপনি, ম্যাম, হুর-বুর আর আজ এক্কেবারে তুমি! এইতো চলছে না মুটামুটি দৌড়াচ্ছে।
দোয়ার এইবার হঠাৎ মনে উঠলো এই ছেলে তখন তাকে গরুর মত টানতে টানতে এখানে আনলো কিন্তু কেন! সেই কি একবারেও চিন্তা করেনি দোয়া তার উপরে ক্রুদ্ধ হয়ে চেচামেচি করে বসতে পারে।

দোয়ার এই অধিক চিন্তিত মাথায় আবার ও বিনা দাওয়াতে এক টন প্রশ্ন এসে নৃত্য করতে লাগলো।
এই ছেলে তো কোন কথায় বলছে না নিজে নিজে চা বিস্কুট অর্ডার করে নিজে নিজে খাচ্ছে।
আশ্চর্য বৃষ্টির সাথে কি মাথার তারে মরিচা পরেছে নাকি, একটা মেয়ে তার সামনে বসে আছে সেই যেনো মেয়েটাকে অদৃশ্য দেখছে! হ্যাঁ সেই খাবে না বলছে তাই বলে অর্ডার করবে না! দোয়ার কপাট রাগ হলো, দারুন অসভ্য এই ছেলে।

দোয়া আর থাকতে না পেরে শান্ত গলায় প্রশ্ন চোখে বললো, আপনি কীভাবে জানেন আমি এই মুহুর্তে টিএসসি তে আছি?
সীমান্ত চা তে ছোট্ট একটি চুমুক দিয়ে দোয়ার দিকে পূর্ন দৃষ্টি দিয়ে বললো, মন খারাপের কারণ জানতে পারি?
দোয়া তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বুদ্ধিমত্তা গলায় বললো, আপনি আমাকে অনুসরণ করছেন?

সীমান্ত চা-য়ের কাপটি থেকে শেষ চুমুক দিয়ে তার দু-হাত টেবিলে উপরে রেখে দু-হাত দ্বারা টেবিলে তবলা মত শব্দ তুলে বললো, রোকেয়া হল থেকে বের হয়ে টিএসসি তে এসে বান্ধবীদের সাথে সীমান্ত নামক এক ফেমাস ইউটিউবার নিয়ে হাসিতামাশা পরে এক পেয়ালি চায়ের সাথে এই সন্ধ্যা শেষ করে আবারও হলের উদ্দেশ্য রওনা হওয়া।
তারপর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে দোয়ার হতভম্ব মুখের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো, এটা কে যদি অনুসরণ বলে, তাহলে হ্যাঁ করছি অনুসরণ।
দোয়া যেনো কথা বলার খেই হারিয়ে ফেললো সেই তাকিয়ে রইলো সীমান্তের হাসি হাসি ভারী সুন্দর মুখ খানার দিকে।
তারপর নরম গলায় বললো, কেনো?

সীমান্ত ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস নিয়ে বললো, আমার জানা নেই।
তারপর হঠাৎ হাত বাড়িয়ে গ্লাস থেকে পানি খাওয়ার আগে দোয়া হাই হাই করে বলে উঠলো কি করছেন কি!

সীমান্ত ভারী অবাক গলায় বললো, হোয়াট!
দোয়া চোখের ইশারায় গ্লাস দেখিয়ে বললো, আপনি কি এই প্রথম চা খাচ্ছেন?
সীমান্ত ভড়কে গেলো, যেনো তার কোন অপরাধ ধরা পড়েছে এমন ভঙ্গি করে বললো, ন-নো!
দোয়া সীমান্তের কাছ থেকে গ্লাস টা মুটামুটি কেড়ে নিয়ে বললো, অবশ্যই এই প্রথম খাচ্ছেন। আর নাহলে আপনার বাজে স্বভাব রয়েছে। কারণ চা খাওয়ার পর সাথে সাথে পানি খাওয়া প্রচন্ড বাজে স্বভাব।

সীমান্ত কি যেনো ভেবে ঠাট্টা সুরে বললো, বাজে মানুষ বাজে স্বভাব দ্বারা পরিপূর্ণ।
দোয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে ঘড়ির সময় দেখে ক্যান্টিনের চারিদিকে নজর বুলিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, চলুন এখানে আর বসা যাবে না।
সীমান্ত কপাল কুঁচকে বললো, কেন! আমার মনে হয় এটাই বেস্ট জায়গা গল্প করার জন্য।
দোয়া তার গায়ের শাল আরো ভালো মতো গায়ে মুড়ে বললো, আমার ভালো লাগে না সাতটার পর এখানে থাকতে। চলুন ক্যাম্পাস এরিয়া হাঁটা যাক। তার সৌন্দর্য আরো অকল্পনীয়।

সীমান্ত কিছু বললো, না কিছুখন সেই তার চতুর দৃষ্টি দ্বারা দোয়াকে পরখ করে বললো, তাহলে তো সত্যি উঠা লাগবে।
দোয়া সীমান্তের কথার উত্তর না দিয়ে দ্রুত পায়ে বিল দিতে হাঁটা ধরলো। টাকা দেওয়ার আগে সীমান্ত ভারী সহজ মনে দোয়ার হাত ধরে ফেললো।
দোয়া চমকে সীমান্তের দিকে তাকালো। তার পুরো শরীর যেনো এক বিদ্যুৎ খেলে উঠলো, পায়ের তালু থেকে যেনো এক অজানা অনুভূতি শিরা-উপশিরায় ছুটাছুটি করতে লাগলো।

সীমান্ত স্বাভাবিক কন্ঠে বললো, আমার জন্য আলরেডি তোমার টাকা খরচ হয়েছে আজ আর না।
দোয়া আক্কেলগুড়ুম চোখে সীমান্ত দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা গলায় বললো, আপনি এটাও দেখলেন!
সীমান্ত হাসলো কিন্তু সেই দোয়ার হাত ছাড়লো না, অন্য হাত দ্বারা সেই টাকা দিয়ে দোয়া কে বললো, চলো বাইরে যাওয়া যাক, আমি চাইনা আমার জন্য তুমি কোন বিপদে পড়ো।

দোয়া আঁড়চোখে সীমান্তের হাতের মুঠো নিজের হাত লক্ষ্য করলো পরক্ষণেই সেই সাবধানতার সাথে নিজ হাত আগলে ছুটানোর চেষ্টা চালালো, তা স্বাভাবিক ভাবে সীমান্ত ও লক্ষ্য করলো। কিন্তু তাও সেই দোয়ার হাত ছাড়লো না উল্টো বললো, কি চলো, আকাশ কুসুম কি ভাবছো?
দোয়া সত্যি রাগ, অবাক দুটো লাগছে, কি অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ এই সীমান্ত! কেমনে সেই এতো কিছু লক্ষ্য করে।
কই দোয়া তো তাকে বলেও নেই তার বিপদ হবে এখানে থাকলে।
দোয়া আঁড়চোখে আবারও সীমান্তের দিকে তাকালো এই ছেলের সাথে সত্যি জ্বীন-ভূত আছে তা সেই শত ভাগ নিশ্চিত।
দোয়ার নিজ ভালো লাগার কারনে সেই আর সীমান্ত থেকে দ্বিতীয় বার নিজ থেকে হাত ছুটালো না।

~ আদনান তার হাতের চিতল পিঠা ভক্তা দ্বারা মুখে পুরে বললো, আপনি ইন্জিনিয়ারিং কোচিং করে চারুকলা অনুষদে! মানে সম্ভব কীভাবে হলো?
নিদা মনে করিয়ে দেওয়ার ভঙ্গি করে বললো, আপনার হয়তো স্বরণ নেই আমার সাথে আমার এক কাজিন ঐখানে কোচিং করতো নাম মাদু।
আদনান কিছু চুপ থেকে বললো, মনে আছে আমার লেকচারে সময় ওর সাথে অগুনিত কথা বলার জন্য আপনাদের দুজন কে দাঁড় করিয়েছিলাম।
নিদা চট করে আদনানের মুখের দিকে তাকালো। মৃদু আলোতে তার মুখ দেখালো ভারী স্বাভাবিক।

নিদা তার নজর সামনে ছেলে মেয়েদের ব্যাডমিন্টন খেলার দিকে রেখে বললো, ওর আর্টের হাত ভীষণ ভালো, যখন আমার বুয়েট আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও হলো না তখন ঐ আমাকে টার্গেট হিসেবে চারুকলা অনুষদ পছন্দ করে দিলো।
তারপর আর কি এখানে দেওয়ার পর ভাগ্যের জোরে হয়ে গেলো।

আদনান ছোট্ট করে বললো, আমি আশা করেছিলাম আপনার বুয়েটে হবে।
নিদা চুপ করে রইলো। এই প্রেক্ষিতে সেই আর টুঁশব্দ ও করলো না।
~ মলচত্বরে গাছে গাছে জড়িয়ে আছে ঝিঝি পোকার মত ছোট ছোট তারাবাতি। এটি মূলত ২১শে ফেব্রুয়ারি আগমনের জন্য সাজানো।
সত্যি অসাধারণ এই বিশ্ববিদ্যালয় টা
উজ্জ্বল হাসি দিয়ে বলে উঠলো সীমান্ত।

দোয়া রসিকতা সুরে বললো, ভাবখানা এমন যেনো পাশের বাড়ি, নিজেরই তো বিশ্ববিদ্যালয়। সীমান্ত হাসলো, এক রহস্যময় হাসি।
দোয়া হাঁটছে হেলেদুলে। হঠাৎ কি মনে করে নিজ ব্যাগ থেকে একটি কাঠের কাটি বের করে নিয়ে ডানে বামে মুচড়ে চুল গুলো হাত খোঁপা করে তাতে কাটি ডুকিয়ে দিলো।

সীমান্ত আঁড়চোখে তার সবটুকু খেয়াল করে দোয়ার হাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে বললো, খোঁপা টা সুন্দর, কিন্তু আমার ধারণা এখানে কোন জ্বীন-ভূত নেই।
দোয়া শব্দ করে হেঁসে চট করে তার চুলের খোঁপা টা খুলে বললো, আপনি পুরুষ মানুষটা তো বড্ড জ্বালাতন সোজাসাপ্টা আবদার করতেই পারেন না।
সীমান্ত উত্তর দিলো না। সেই গায়ে থেকে তার শাল টা খুলে ভাঁজ করে হাতে নিলো।

দোয়া গন্ডারের দ্বিতীয় রুপ দেখার মত দাঁড়িয়ে গিয়ে সীমান্ত কে আপাদম্তক দেখে বললো, এই কাঠ শরীরে এতো গরমী!
সীমান্ত হো হো করে ডাকাতের মত হেঁসে বললো, সিরিয়াসলি! সবাই আমার শীত অবজ্ঞা করার ভাব দেখে এতো শক কেন খাই!
দোয়া হাঁটা ধরলো পূনরায় তারপর ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, দেখুন আমি জানি আমি মানুষটা সুন্দর। তারমানে এই নই যে আপনি আপনার জ্বীন-ভূত বিতরণ করার জন্য আমায় অনুসরণ করবেন।

সীমান্ত মুটামুটি হালকা দৌড়ে দোয়ার পাশে গিয়ে থেমে থেমে হাঁটতে হাঁটতে বললো, তার মানে তুমি নিজেকে সুন্দরী বলে দাবি করো? বাহ! ভালোই।
দোয়া অবাক গলায় তার হাঁটার গতি থামিয়ে বললো, বারে! পৃথিবীর কোন কিছু কি অসুন্দর আছে নাকি? সৃষ্টিকর্তা সবকিছু মধ্যে সৌন্দর্য দিয়ে পাঠিয়েছে, এটা সত্যি সব সৌন্দর্য সবাই চোখে পড়েনা।

সীমান্ত কিছু বলার জন্য মুখ খুলার আগে হঠাৎ দোয়ার হাতের দুবাহু কে আঁকড়ে ধরে সজোরে টান দিয়ে সরিয়ে ফেললো। ঠিক তখনি একটা বাইক শাঁ করে গেলো।
দোয়া সীমান্তের বুকে তার পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আঁকড়ে ধরা অবস্থা কাঁপতে লাগলো।

তার বুক অস্বাভাবিক ভাবে উঠানামা করছে, চোখ মুখে তার অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদের ভয়।
সীমান্ত সেই বাইকে উদ্দেশ্য করে গলা ছাড়িয়ে চিৎকার করে বললো, হেই! এক্সকিউজ মী!
ছেলেটি বাইক থামিয়ে সীমান্ত আর দোয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো, কি বস!
সীমান্ত দৃঢ় গলায় চেচিয়ে বললো, এটা শিখার জায়গা না, শিখার জায়গা হলের ভিতরে হয়।

ছেলেটি কাঁধ ঝাঁকিয়ে সীমান্তের বাহু ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা দোয়ার ভয়াতুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, হিরোইন তো আপনার ঠিকই আছে।
সীমান্ত দাঁতে দাঁত চেপে ঠাট্টা সুরে বললো, পরিচালক কে আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে বলো, সেই যে আমার হিরোইন উড়ানো জন্য পাঠালো দ্বিতীয় অপশন (হিরোইন) রাখছিলো কিনা!
ছেলেটি হাসতে হাসতে বাইক চালিয়ে চলে গেলো।
দোয়া সীমান্তের ঘেঁষে থাকা বুক থেকে বের হয়ে মুটামুটি তেড়েফুঁড়ে গিয়ে বললো, রসিকতা হচ্ছে! ঐ ছেলে আমাকে আর একটু জন্য হসপিটাল নিতো আর আপনি মস্কারা করছিলেন?

সীমান্ত হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো দোয়া এমন হঠাৎ অগ্নি শর্মা রুপে, যেনো সেই এক অভিমানী প্রিয়শী যে নিজের প্রেমিক পুরুষের মস্করা তে বড্ড ক্ষিপ্ত।
সীমান্ত নিজের হাসি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বললো, আমি বাচ্চা মেয়েদের গার্লফ্রেন্ড করিনা কিন্তু।
দোয়া চুপ মেরে গেলো, সেই নিজের এমন উদ্ভুট্টি আচরণ যেনো ভারী লাজ ফেলো।
সীমান্ত অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললো, অনেক রাত হয়েছে তোমাকে এখন হলে দিয়ে আসা উচিত, কাল তো আবার ক্লাস তোমার।
দোয়া হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।

এতোখনে তার উপচে পড়া চঞ্চলতা যেনো হাওয়া বলুনের মত বাতাসে উড়ে গেলো।
তার সত্যি এখন হলে যাওয়া উচিত কারণ তার অকারণে অদ্ভুত লজ্জাবোধ হচ্ছে, কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার সীমান্ত লজ্জায় এমন লজ্জাবতী হওয়ার মত এমন কোন কথায় বলেনি।

সারা রাস্তা দুজন আর কোন বাক্য বিতরণ করলো না। রোকেয়া হলের গেট পর্যন্ত দোয়া এসে সীমান্তকে ছোট্ট করে হাসি মুখে বললো, আল্লাহ হাফেজ।
সীমান্ত হাসি মুখে মাথা ঝাঁকালো।
দোয়া কপাল কুঁচকে বললো, আল্লাহ হাফেজের উত্তর আল্লাহ হাফেজ বলতে হয়।
সীমান্ত হাসি মুখে দোয়ার দিকে তাকিয়ে ধীর স্বরে বললো, চেষ্টা করবো।

দোয়া ডুকে গেলো। কিন্তু এক অব্যক্ত কারণে সীমান্ত দাঁড়িয়ে রইলো সেইখানে দীর্ঘক্ষন তারপর হাঁটা ধরলো তার গন্তব্যে।
হলের সিঁড়িতে দোয়া টুক করে সীমান্তের ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করে নিলো।
~রশ্মি দেয়ালে পা ঠেকিয়ে শুয়ে শুয়ে রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা টি পড়ছে।

দোয়া ঠোঁট ফুলিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে রশ্মির ধারালো জিদ দেখছে।
সেই একটু আগে অনেক চেষ্টার আর কৈফিয়তের পরেও রশ্মির মান ভাঙতে সক্ষম হয়নি।
প্যাচপ্যাচ এক লাইনের কান্নার আওয়াজে রশ্মি চমকে ঘাড় উল্টিয়ে দেখলো দোয়া তার কোলে ছোট্ট একটা স্টিলের বাটি রেখে কেঁদে কেটে ভাসিয়ে ফেলছে।
রশ্মি হতবাক গলায় বললো, তুই কাঁদছিস কেন?

দোয়া ঠোঁট উলটিয়ে বললো, যা কথা বলিনা আমি, তুই আমার বান্ধবী লিস্ট থেকে বাদ।
রশ্মি ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, নখরাই তো করবা তুমি। ভালোই তো প্রেমে করে মাখামাখি অবস্থা করে ফেললা আর আমারে বাচ্চা ফুটানোর সময় বলতে আসলা!
দোয়া ঠোঁট সরু করে বললো, ছিঃ! কি অশ্লীল রে তুই! বাংলা ছবি কি রাত জেগে দেখিস? ব্যাটা আমার খালি হাত ধরলো আর তুই বলিস পেটে বাচ্চা চলে আসবে।
রশ্মি হাউমাউ করে চিল্লিয়ে ছুটে দোয়ার বেডে এসে বললো, কি! সীমান্ত! দ্যা গ্রেট ইউটিউবার! সেই তোর হাত ধরছে! মিথ্যা কও তুমি?
দোয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, ঠিক আছে ওরে পরের বার কমু আগুনে কিছুখন হাত রেখে আমারে স্পর্শ করতো, তাহলে জ্বলে যাওয়া হাতের দাগ দেখলে তুমি বিশ্বাস করবা।

তারপর ব্যতি ব্যস্ত হয়ে সীমান্তর ইনবক্সে গিয়ে টাইপিং করতে লাগলো তার বলা কথাটি।
রশ্মি দোয়ার মাথায় খাট্টা মেরে ফোন কেঁড়ে নিয়ে বললো, মানে আলাদীনের জিনির ও এসে তোর মাথায় বুদ্ধি দিতে পারবো না কি লিখছিস এটা?
দোয়া সরল গলায় বললো, তুই তো বললি মিথ্যা বলছি, পরের বারও যদি বলিস মিথ্যা বলছি তাই প্রমানের ব্যবস্থা করছি।
রশ্মি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো মাঝে মাঝে তার এই মেয়েকে অদ্ভুত রকমের বুদ্ধিমতী মানবী লাগে আর মাঝে মাঝে বোকাসোকার শেষ পর্যায়ের মানবী লাগে মানুষ সত্যি বিচিত্র প্রানী।

রশ্মি দোয়ার কোল থেকে বাটি টা সরিয়ে বললো, এই বাটি কোলে রাখছিস কেন? ল্যালা ফেলিস নাকি?
দোয়া কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, তোর তো সবকিছু তে প্রমান লাগে আমি তো ভেবেছিলাম তুই আমার দিকে তাকাবিও না তাই বাটিতে চোখের পানি জমা করছিলাম এইগুলো ফ্রীজে রেখে কাল সবাই সামনে হাজির করতাম।

রশ্মি দোয়ার কথার কোন কিছু না বুঝে বললো, তারপর কি করতি?
দোয়া কাঁদো কাঁদো মুখ মুহুর্তে দুষ্ট হাসিতে রুপান্তর করে বললো, বলতাম দেখ তোদের রশ্মি মান ভাঙাতে আমার চোখের পানি বরফে রুপান্তর হলো কিন্তু ওর বরফ মন পানিতে রুপান্তর হলো না।

দোয়া সহ সবাই মুহুর্তের মধ্যে রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগলে। রশ্মি দুয়েক লাগলো এই মস্করা বুঝতে তারপর মুহুর্তে দোয়া কে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো।
~ রশ্মি সাথে হাসি ঠাট্টার পর গভীর রাত দোয়া যখন ফেসবুক ডুকলো তখন সীমান্তের ফেসবুক ফেজে তাকে উল্লেখ করে একটি গান দেখলো যেটি বিকালে তার বান্ধুবীরা বেসুরো কন্ঠে গেয়ে ছিলে।

দোয়া বিড়বিড় করে বললো, এইবার বুঝলাম কেন সবগুলো তখন এতো হল্লা করলো।
কারণ সেই গানের উপরে ছোট্ট একটি ক্যাপশন ছিলো, সেই হুর।
সীমান্তের ফেসবুকে ফেজে আজকের সন্ধ্যার সৌন্দর্য কে উপলব্ধি করে একটি উক্তি ও ছিলো।
সারা রাত অবিরাম পরিশ্রম করে মিটমিট জ্বলে থাকা অসংখ্য তারার মধ্যে ক্লান্ত হয়ে টুপ করে মাটিতে পরা একখান তারা সাথে এই সন্ধ্যালগ্ন দেখা হওয়াকে পৃথিবীর সব অনুভূতি ভাষা দিয়েও প্রকাশ করা সম্ভব না।

~ চোখ বন্ধ করে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস উঠা নামা করছে তার।
যেনো নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এক অজানা অনুভূতি তাকে বার বার তাড়া দিতে লাগলো সীমান্ত নামক ছেলেটির সাথে গল্পের আসরে সারারাত কাটিয়ে দেওয়ার।
হঠাৎ টুং করে একটা শব্দ হলো। দোয়া ফোন হাতড়ে নিয়ে দেখলো সীমান্ত তাইমুর তার নিক নেম চেঞ্জ করেছে।
দোয়া চটজলদি তার ইনবক্সে গিয়ে দেখলো তার নাম পরবর্তী হয়ে হুর হয়েছে।

দোয়া লজ্জায় মুখ দুইহাত দিয়ে ডেকে নিলো সেই বিড়বিড় করে বললো, ভালোলাগা আর ভালোবাসার মধ্যে আমার সত্যি পার্থক্য জানা নেই সত্যি।
আবারও টুং করে দোয়ার ফোন বেজে উঠলো দোয়া দেখলো সীমান্ত তাকে ছোট্ট একটা মেসেজ করেছে।
ওয়াইফাই রয়েছে?

দোয়া প্রতিত্তোরে লিখলো হুম!
সীমান্ত শুধু লিখলো ঠিক আছে বন্ধ করো না। আর ফোন আশেপাশে রাখবে।
দোয়া শুধু লিখলো আচ্ছা।

তারপর সীমান্ত ফেসবুক থেকে লাপাত্তা। দোয়ার রাগ হলো ছেলেটা ভাব নেই সেটা বলা যাই না, কিন্তু এতো অসামাজিক কেন?
একটা আল্লাহ হাফেজ আর একটা শুভ রাত্রি বলতে কতই বা সময় লাগে!
দোয়া ওয়াইফাই বন্ধ করে ফোন গিয়ে চার্জ দিয়ে দিলো, রাখবে না সেই ফোন আশপাশে থাকুক দূরে পড়ে। দোয়া শব্দ করে খাটে এসে শুয়ে গেলো। বড্ড অভিমান হচ্ছে তার।

কিন্তু আরামপ্রিয় এই কম্বল কে ত্যাগ করে দোয়া আবারও তার ফোনটি এনে পাশে রাখলো।
তারপর নিজ মনে মনে বিড়বিড় করে বললো, শুভ রাত্রি তাইমুর সাহেব।
তার মনে হলো এক অদৃশ্য বার্তা এসে তার কানে কানে ফিসফিস করে বলছে শুভ রাত্রি আমার হুর।
দোয়া লজ্জায় কম্বল নিচে নিজেকে আড়াল করলো।

~ ভোর তখন ৫ টা ৪০ কুয়াশাতে চারিদিক যেনো ধোঁয়াশা হয়ে আছে। পুরো রুমে সবাই শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শুনা যাচ্ছে। সেই সময় টা দোয়া মেসেঞ্জার দিশেহারা হয়ে বাজতে লাগলো।
দোয়ার ঘুম অত্যন্ত পাতলা বলে সেই সাথে সাথে উঠে গেলো।
কল সীমান্ত তাইমুর।

দোয়া ভড়কে গেলো। সেই চোখ বড়বড় করে সময় দেখলো এই ছেলে এতো ভোরে কল দেওয়ার মানে কি!
দোয়া ফোন কানে নেওয়ার সাথে সাথে সীমান্ত ব্যস্ত গলায় বললো, আমার তোমার হলের সামনে যেতে সময় লাগবে সাতমিনিট তারপরেও অপেক্ষা করবো।
দোয়া হতভম্ব, হতবিহ্বল, হতবুদ্ধি গলায় অস্পষ্ট স্বরে বললো, আ-আচ্ছা।
ঐপাশ থেকে কল কাটা গেলো।

দোয়া স্তব্ধ, সেই রশ্মির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আতংক ভঙ্গিতে বললো, আচ্ছা! সিরিয়াসলি! আচ্ছা বললাম আমি!
সময় যকন ৫ টা ৫৫ গেট দিয়ে বের হলো দোয়া, তার গেট বরাবর গাড়িতে হেলান দিয়ে পা কে ক্রাসের মত করে দাঁড়িয়ে আছে সীমান্ত।
পরনে তার একটি কালো টি-শার্ট তাতে সাদা রঙের চিটকা দিয়ে একটি হাতের চাপ, তার উপরে একটা সাদা শার্ট বোতম খোলা অবস্থাতে গায়ে জড়ানো।
আর রয়েছে একটি সাদা কালো চেক টাউজার সবচাইতে নজর কাড়া মত যা ছিলো তা হলো সীমান্ত মাথার উপরে সাদা মেয়েলি একটি কানটুপি যা দুকানের দুপাশে রাম ছাগলের মত লতা ঝুলে আছে।

দোয়া শব্দ করে হেঁসে দিলে তার যেনো হাসি থামছে না, সীমান্ত কপাল কুঁচকে না বোধক মাথা নেড়ে বললো, জানতাম এই রিয়াকশন টা হবে।
দোয়া তার নাকে হাত দিয়ে হাসি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বললো, সিরিয়াসলি! ছোট বোনের কানটুপি নিয়ে আসলেন নাকি?
সীমান্ত মুচকি হেঁসে বললো, আমার কোন বোন নেই, এটা আমার জন্যেই কিনা!
দোয়া অবাক গলায় বললো, সেই কি! আপনার জন্য! কিন্তু মেয়েদের কানটুপি কিনলো কে?
সীমান্ত কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, মা।

দোয়া অবাক গলায় বললো, আন্টির বুঝি মেয়ের খুবই শখ!
সীমান্ত হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে বললো, অত্যন্ত। আমার মায়ের মেয়ের অনেক শখ রয়েছে।
কিন্তু আমার কোন বোন হয়নি। ফলস্বরূপ আমাকে মাঝে মাঝে মেয়েদের খুটিনাটি পোশাক পরতে হয়।

দেয়ার সীমান্তের দিকে তাকিয়ে আবারও খিলখিল হেঁসে উঠে বললো, কিন্তু আপনাকে দারুন লাগছে, মানতে হবে।
সীমান্ত হাসলো, তারপর বললো, কার্জন পর্যন্ত কি হেঁটে যাবা?
দোয়া জোরে জোরে হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে বললো, এই শিশির ভেজা কুয়াশা মাখা সকালে না হেঁটে গেলে একদমই বেমানান হয়ে যাবে।
~ দুজন হাঁটছে, সীমান্ত দৃষ্টি সামনে রেখে আলতো হাতে দোয়ার ঠান্ডা শীতল হাতটি তার হাতের মুঠো নিয়ে নিলে।

দোয়া চমকে উঠে সীমান্তের দিকে তাকালে। সীমান্ত ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে নজর সামনে রেখে বললো, কালকের পরিস্থিতি আবারও হক তা চাইনা।
দোয়া মুখ টিপে হাসলো, তারপর ভারী লজ্জা গলায় বললো, আমার জানা মতে এই কুয়াশাজড়ানো সকালে ক্যাম্পাস এরিয়াতে গাড়ী আসবে না।
সীমান্ত শীতল গলায় বললো, আসতে পারে, আমার মতো এমন অনেক মানুষ রয়েছে পায়ে হাঁটাকে ভীষন ভয় পাই।
দোয়া প্রশ্ন চোখে বললো, আপনার ধানমন্ডি বাড়ি থাকার সর্তেও হলে কেন থাকেন?
সীমান্ত ছোট্ট করে বললো, ভালো লাগে।

তারপর দোয়ার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে বললো, একদমই পরিপাটি হয়ে বের হলে যে আর কি হলে যাবে না?
দোয়া না বোধক মাথা নেড়ে বললো, এইখান থেকে ক্লাসে চলে যাবো আর হলে ডুকবো না।
সীমান্ত চুপ করে রইলো, দোয়া সীমান্ত দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে বললো, আপনি এত্তো সকাল সকাল উঠেন?
আমি সত্যিই অবাক। আমি তো ক্লাসে যাই মুটামুটি নিজের শরীরে ৯৫% অংশ কম্বলের নিচে রেখে।

সীমান্ত কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, আমার অভ্যাস আছে, আর প্রথম বর্ষ বাচ্চাদের এটায় বড় সমস্যা ঘুমকাতুরী।
দোয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে মস্করা সুরে বললো, আচ্ছা বাচ্চা মেয়ের সাথে প্রেম করবেন না কেন? বুড়ো গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি?
সীমান্ত দোয়ার খোঁচা ধরতে পারলো সেই হো হো করে শব্দ করে হাসলো।
এই ভীড়হীন শিশির ভেজা সকালে সীমান্তের হাসি শব্দ যেনো আরো জোরে প্রতিধ্বনি তুললো।

দোয়া কপাট রাগ দেখিয়ে বললো, হাসছেন যে, এতো হাসি পাই কেন?
সীমান্ত বহুকষ্টে তার হাসি থামিয়ে বললো, সবাই কি কাবিরসিংয়ের নায়িকা প্রীতি হয় নাকি?
দোয়া কিছুখন কি যেনো চিন্তা করে মৃদু স্বরে বললো, ছিঃ! বড্ড অসভ্য আপনি।
সীমান্ত আবারও একি সুরে হাসতে
লাগলো তারপর দোয়ার কথার প্রেক্ষি ধরে বললো, তা অনেক আগের জানা।

কার্জন হলে ডুকে সীমান্ত দোয়ার হাত ছাড়লো না। দোয়া রসিকতা সুরে বললো, এইখানে কোন গাড়ি আসবে না।
সীমান্ত দৃষ্টি সামনে রেখে ভারী স্বাভাবিক গলায় বললো, সাইকেল তো আসতে পারে।
দোয়া ঠোঁট কামড়ে হাসলো, তারপর বিড়বিড় করে বললো, ইশ কি বাহানা।

পর্ব ১২

~ বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল মাঠ। ঘাসের উপরে বিন্দু বিন্দু শিশির। আবছা আঁধার অনেকখানি কেটে গিয়েছে।
মাথায় কানটুপি টা খুলে তাতে একটি রক্ত জবা গুঁজে দিলো দোয়া। সীমান্ত আঁড়চোখে দোয়া হাত খোঁপাতে রক্ত জবাটি সহ ফুলটির এখনকার মালিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো। সীমান্তের চোখ মুখে ছড়িয়ে আছে এক বিষ্ময় মুগ্ধতা।

সীমান্ত যেনো কুয়াশার এই শিশিরের স্নিগ্ধতা সাথে কোমল, এলোকেশী, সুশ্রী, সুদর্শনা এই শ্যামবর্ন চেহেরার মেয়েটির রুপের সাথে অধিকাংশ মিল পেলো।
হঠাৎ নিজ মনে বিড়বিড় করে গাছের উপরে পড়ে থাকা শিশির কে উদ্দেশ্য করে বললো, কি ঈর্ষা হচ্ছে তোমার? তোমার রুপের সাথে পাল্লা দেওয়া রুপ এনে যে হাজির করলাম।

সীমান্তের মনে হলো যেনো শিশির তাকে মৃদু ভেংচি কেটেছে, যার অর্থ সেই জ্বলে, পুড়ে যাচ্ছে ঈর্ষাতে। কিছুখন পর দোয়া
আঁড়চোখে সীমান্তের দিকে তাকালো, তার দৃষ্টি কার্জনের দোতালায়।
দোয়া আলতো হাতে নিজের চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে সীমান্ত কে উদ্দেশ্য করে বললো, শুনুন!
সীমান্ত দোয়ার দিকে ফিরে বললো, বলুন!
দোয়া ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বললো, আমার জন্য একটু কষ্ট করবেন?
সীমান্ত কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, করলাম কষ্ট।

দোয়া তার কানে কাছে চুল গুলো সরিয়ে সীমান্ত কে উদ্দেশ্য করে বললো, আমার ছাড়া চুলে ফুলটা গুঁজেছে নাকি একটু দেখুন তো?
সীমান্ত মুখ টিপে হাসলো, সেই চট করে বুঝে ফেললো দোয়া তার জন্য চুল গুলো ছেড়েছে আর তাকে লক্ষ্য করানোর জন্য এই পরিকল্পনা।
সীমান্ত দুষ্ট কন্ঠে অতি পর্যবেক্ষণ গলায় বললো, খোঁপা অবস্থা মনে হয় বেশী ভালো মত বসেছিলো।
দোয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে দুষ্ট হেঁসে বললো, না আমার মনে হয় চুল ছাড়া অবস্থা বেশী ভালো বসেছে।
সীমান্ত না বোধক মাথা নেড়ে বললো, না যতটা ভেবেছি তার থেকেও বেশী বুদ্ধিমতী।

দোয়া শব্দ করে হাসলো তারপর হঠাৎ কিচমিচ গলায় বললো, সে কি আপনি জুতা পরে ভেজা ঘাসে হাঁটছেন কেন?
সীমান্ত স্বাভাবিক গলায় বললো, হ্যাঁ তাতে কি হয়েছে?
দোয়া জরুরি গলায় বললো, খুলুন, খুলুন আমি তো খুললাম, আমি ভেবেছিলাম আপনি জানেন হাঁটার নিয়ম।
সীমান্ত প্রশ্ন চোখে আশ্চর্য গলায় বললো, ঘাসে হাঁটার ও নিয়ম রয়েছে নাকি!
দোয়া ফিক করে হেঁসে বললো, ঠিক সেটা না।

সব কাজের সৌন্দর্য রয়েছে, তেমনি হাঁটারও।
এই শিশির ভেজা ঘাসে জুতা পরে হাঁটলে ব্যায়ামের সাথে কোন পার্থক্য থাকবে না।
এই ঘাস হলো স্পর্শকাতর প্রকৃতির নরম রুপ, তাই এতো পা ও স্পর্শ করতে হবে আলতো করে।
সীমান্ত নাছোড়বান্দা মত কপাল কুঁচকে ঘাস গুলো কে দেখতে লাগলো।

দোয়া কখনও কারও উপরে নিজের জোরজবরদস্তি প্রযোগ করে না কিন্তু এই সীমান্ত নামক ছেলেটির উপরে তার কেন যেনো নিজের জেদ, অভিমান সব কিছুই প্রয়োগ করতে ইচ্ছে করছে।
তার যেনো ভিতরের থেকে কেউ একজন তাড়া দিয়ে বলছে মাঝে মাঝে কেউ একজন কে নিজের মত করে একটু-আধটু বানিয়ে নেওয়া উচিত নাহলে জীবনের অনেকাংশ স্বাদ যে ফিকা পড়ে রবে।

অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর সীমান্তের পা থেকে জুতা জোড়া খুলতে সক্ষম হয়েছে দোয়া।
তার বাক্যমতে আমি কুয়াশা ভরা সকাল উপভোগ করতে এসেছি, শহীদ মিনারে ফুল দিতে না।
দোয়া সীমান্তের কথা কে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিজের নতুন জিদ্দি রুপের সাথে পরিচিত হলো।

সীমান্ত নিজের কানটুপি খুলে চুল গুলোকে এলেমেলো করে বললো, না! সত্যি! তুমি তো প্রচন্ড জিদ্দি আমি কিন্তু এতোটা আশা করিনি।
দোয়া তাতে হাসলো, দুজনে হাত ধরে এই শিশির ভেজা ঘাসে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুড়ে বেড়ালো।
তাদের সাথে রয়েছে এমন অনেক প্রেমিক যুগল যারা নিজেদের কুয়াশাজড়ানো সকাল উপভোগ করার জন্য প্রেয়সীর হাত ধরে নেমে পড়েছে খালি পায়ে।
~ প্রকৃতিতে ফরসা আলোর ঝলকানি, পূর্বাকাশে উঁকি মারছে সূয্যি মামা। সোনালি রোদে ঝিলমিল করছে শিশিরের জল। তাপহীন রোদে দাঁড়িয়ে শিশিরে অট্টহাসি দেখতে ভালোই লাগছে দোয়ার।

দোয়া সীমান্তের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধতা ভরা গলায় বললো, জানেন এই শিশির ভেজা অনুভূতি আমার প্রথম।
সীমান্ত দোয়ার মনোমুগ্ধকর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, তোমার উৎফুল্ল চেহেরা দেখে বুঝি গিয়েছি।
সীমান্ত বললো, তারা হলের পুকুর ঘাটে কিছু সময় কাটাবে।
দোয়া তৎক্ষনাৎ পরিষ্কার গলায় বললো, না। আলরেডি সাতটা বারো বাজে আমাকে আবার নাস্তাও করতে হবে। চুলন।
সীমান্ত কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, হুরের যা আদেশ।

দোয়া খিলখিল করে হেঁসে দিলো তা নির্বিকার ভঙ্গিতে দেখতে লাগলো সীমান্ত।
সীমান্ত যখন নিজ গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো দোয়া বললো, চলুন নাস্তা করবো এখন কই যাচ্ছেন?
সীমান্ত ভ্রু কুঁচকে বললো, আমি সকালে নাস্তা করিনা আমি এখন গিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিবো।
দোয়া গাল হা করে বললো, আপনি তো বড্ড জাহিলগিরি করেন নিজের ছোট্ট পেটের সাথে। একদিন নাস্তা করলে কিছু হবে না চলুন।
সীমান্ত দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, আচ্ছা চলো তার কেন যেনো ভালোই লাগলো এমন আদুরী আদেশ।

~ তারা মহসিন হলের বাইরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি ক্যাফেটেরিরায় বসলো।
সীমান্ত মুটামুটি অসন্তুষ্ট চেহেরা তে পরোটা ছোট্ট ছোট্ট টুকরো করে খেতে লাগলো, যেনো এই তৈলাক্ত পরোটা তার বড্ড অপছন্দ।
দোয়া আঁড়চোখে তা লক্ষ্য করে বয় কে ডেকে বললো, তেল কমে পরোটা আনার জন্য।
মিনিট দুয়েকের মধ্যে ছেলেটি আরো দুটো পরোটা নিয়ে হাজির হলো।

দোয়া সীমান্ত দিকে ফ্লেট টা এগিয়ে দিয়ে ঐ তৈলাক্ত পরোটা গুলো সরিয়ে নিলো।
সীমান্ত চমকে দোয়ার দিকে তাকালো। দোয়া তার ভাজিতে পরোটা ভিজিয়ে সীমান্ত চমকপ্রদ চেহেরা দিকে তাকিয়ে বললো, আমার মনে হলো আপনি তৈলাক্ত পরোটা খেতে পারেন না।

সীমান্ত কৃতজ্ঞতা ভরা সুন্দর একটি হাসি দিলো, তার প্রতিত্তোরে দোয়া ও মুচকি হাসলো। সত্যি বেশী তৈলাক্ত পরোটা খেলে তার প্রচন্ড পেট ব্যাথা শুরু হয়।
দোয়া খেতে খেতে নিদা, মাহা তার কাজিনদের ব্যাপারে অগুনিত কথা বলতে লাগলো তা চুপটি করে শুনতে লাগলো সীমান্ত তাকে দেখালো ভারী মনোযোগী।
কিন্তু সেই কেন যেনো নিজের মনোযোগ দোয়ার কথাতে স্থির রাখতে পারছে না।
সেই কখনও বা দোয়ার হালকা লিপস্টিক লাগানো ঠোঁট, লেপ্টে যাওয়া কাজলমাখা চোখ, কপালে জামা সাথে মিলালো ছোট্ট সবুজ টিপ, কখনও বা গেজ দাঁতের হাসি বিরতিহীন ভাবে দেখছে।

সীমান্ত বিড়বিড় করে বললো, হুমায়ুন স্যার মিথ্যা বলেন নি, মানুষের সব সৌন্দর্য চোখে, যার চোখ সুন্দর তার সবই সুন্দর।
সীমান্তের মনোযোগ সরলো আগের বয় টি দুকাপ চা হাতে আবারও ফিরে এসেছে।
দোয়া তখন তাকে মিষ্টি বকাতে বললো, এই যে তুমি দেরী করে চা আনলে আমার প্রথম লেকচার মিস গেলে তোমার নাম বলবো।
ছেলেটি হাসতে হাসতে চলে গেলো।

সীমান্ত তার চা শব্দহীন টুকটাক চুমুকে শেষ করে ফেলতে লাগলো, যেনো সেই জিভ পুড়িয়ে যাওয়া কে ভীষন ভয় পাই।
দোয়া তার শেষের পরোটা খেয়ে চা হাতে নিয়ে খেতে লাগলো তখনি বিষ্ময়ে সীমান্তের চোখ যেনো কোটর থেকে বের হতে ধরলো।
দোয়া চা খাচ্ছে পা নাচিয়ে নাচিয়ে পিরিচে ঢেলে সুরুত্ সুরুত্ শব্দ তুলে।

দোয়া সীমান্তের বিষ্ময়মাখা দৃষ্টির তীব্রতা এড়িয়ে বললো, বড্ড গরম ছিলো।
সীমান্ত হতবুদ্ধি চেহেরায় বিনা বাক্যে মাথা দুলালো যার অর্থ ঠিক আছে কোন ব্যাপার না, সেই দেখতে লাগলো একটা মেয়ের অদ্ভুত চা খাওয়ার ভঙ্গিমা।
~ এইভাবে চলতে লাগলো তাদের পথচলা প্রতি সকালে তারা শিশির ভেজা শীত উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়তো কখনও বেইলী রোড, কখনও বা ধানমন্ডি লেক।
নাস্তা করা বাঁধে তাকে কখনও গাড়িতে উঠতো দিতো না দোয়া।

সন্ধ্যার আচ্ছন্নে তে দুজনের গল্পের আসর যেনো শেষ হতো না।
দোয়াকে উপলব্ধি করে সীমান্তের গান করা তার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্তে কে উদ্দেশ্য করে তীব্র অনুভূতির কথা লেখা, না চাইতেও দোয়া যেনো কঠিন ভাবে সীমান্ত নামক ছেলেটির প্রেমের বেড়াজালে আটকাতে লাগলো।

এটি তাদের অঘোষিত বন্ধুত্ব ছিলো নাকি প্রেম ছিলো তা দোয়ার জানা ছিলো না।
কিন্তু তার ছোট্ট মনটি তাকে মাঝে মাঝে বলতো এটির প্রেম নামক ভালোবাসার এক স্বর্গীয় অনুভূতি।
তার বান্ধবীরা মজার ঝুড়িতে বলতো প্রেম তো দোয়ার মাখামাখি অবস্থা। কিন্তু দোয়া এর সর্ত্যতা জানতো না শুধু এতোটুকু সেই জানতো এই মানুষটিকে সকাল বিকাল নিয়ম করে না দেখলে তার জীবনে বিষাদ সেই গুনে শেষ করতে পারবে না। এতো বাক্য আদানপ্রদানের পরে দোয়া বলতে ইচ্ছে করে আরো একটু থাকো, এখনও অনেক কথা বলার বাকী।

সীমান্ত সাথে রিকশা অলিতেগলিতে ঘুরে-বেড়ানো ফুসকা খাওয়া, শাড়ি পরে বই মেলায় চক্কর কাটা যেনো জীবনের সর্বোচ্চ সুখ দোয়ার শিরা-উপশিরায় বিনা দ্বিধায় ঘুরপাক খেতে লাগলো সীমান্তের আগমনে।

তার সবচাইতে আনন্দদায়ক লাগতো ঐ মুহুর্তে যখন সীমান্ত তার পছন্দের বেলী ফুলের মালা নিয়ে আসতো। সকালে শিশির ভেজা যেকোন ফুল ফেলে তা গুঁজে কানে আর বিকালে নিয়ে আসতো বেলী ফুলের ছোট্ট লতা, যা হাতে পেঁচিয়ে রাখতো দোয়া। আর যে জীবনে কিছুই চাওয়ার নেই দোয়ার।
~ আজ অনেক দিন পর নিদা নারায়ণগঞ্জ এসেছে কারন মূলত সেমিস্টারে ব্রেক বলে। আজ সাতদিনযাবত দোয়া নারায়ণগঞ্জ রয়েছে তারও সপ্তাহ খানিক আগে সেমিস্টারে ব্রেক পড়লো।

দোয়া মন খারাপ গলায় বললো, মাহা টা যে কবে সিলেট থেকে আসবে ভালোই মনে পড়ছে ওকে।
নিদা বললো, আরো কিছুদিন নাকি থাকবে ওর ফুপু আসতে দিচ্ছে না।
নিদা হঠাৎ শান্ত গলায় বললো, বাবা বার বার মতামত জানতে চাচ্ছে রে মাদু।

দোয়া স্বাভাবিক গলায় বললো, বল তুই এই বিয়ে করবি না আর এই অপদার্থ কে তো মোটেও না।
নিদা হেঁসে উঠে বললো, তুই এখনও ওকে একি নামে ডাকিস?
দোয়া মৃদু ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, অপদার্থ কে অপদার্থ বলবো না তো পদার্থ বলবো!
নিদা মৃদু মুখ বাঁকিয়ে আদুরী গলায় বললো, ধ্যাঁত! এতোই খারাপ না সেই।

দোয়া হাই হাই করে বললো, ওরে মোর আল্লাহ! একদিন সাক্ষাৎ করাতে আমাদের নিদা আবারও ফিদা!
নিদা শব্দ করে মুখ চেপে হেঁসে দিলো।
দোয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, কিন্তু যাই বলিস মানতে হবে ব্যাটা বহুত গাধা। শালা কত বার আড়াল প্রমান করলাম তার গার্লফ্রেন্ড একটা ছ্যাচঁড়া তাও বিশ্বাস করলো না!

নিদা হেঁসে উঠে বললো, জানিস কাইল্লা আগ থেকে অনেক বেশী সুন্দর হয়েছে ভালোই লাগে আরো।
দোয়া হাসতে হাসতে কুটিকুটি হলো তারপর ঠাট্টা সুরে বললো, আবারও প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি।
দোয়া বিড়বিড় করে গান ধরলো প্রেমে মরা জলে ডুবে না।

নিদা হাক তুলে বললো, এই না না মোটেও না, আমি উনাকে মোটেও বিয়ে করবো না, তার প্রতি আমার আর কোন ভালো লাগা ভালোবাসা নেই।
দোয়া শান্ত গলায় বললো, জানিস নিদা ভালোবাসার মাঝে এক অদ্ভুত মায়া আছে, কষ্ট পেলেও ছাড়া যাই না মন ভেঙে গেলেও ঘৃনা করা যাইনা। তাই তো কষ্ট পেয়েও ভাঙা মন নিয়ে মানুষ ভালোবাসে এবং ভালোবাসবে।

নিদা ঠাট্টা সুরে বললো, বাব্বাহ! আমাদের মাদু দেখি ভালোবাসার প্রকারভেদ ও বুঝে গেছে।
দোয়া লাজুক হেঁসে বললো, জানিস তো ঐ সীমান্ত টেনে হিঁচড়ে তার প্রেমে আমাকে ফেললোই ফেললো।
নিদা তার জামার ওরনা পেঁচাতে পেঁচাতে বললো, এখন কি বলবো বাবা কে কাল?
দোয়া বুঝ দেওয়ার ভঙ্গি করে বললো, শুন মানুষ টা আগ থেকে তোর পছন্দের মানুষ ছিলো। উপরে আল্লাহ যখন আরো একটা চান্স দিয়েছে তাকে পাওয়ার তাহলে অমত করিস না ঝুলে পড়।

নিদা প্রশ্ন গলায় বললো, উনার গার্লফ্রেন্ড ছিলো মাদু, তখন আমাকে সেই পাত্তা ও দিতো কিন্তু এখন নেই তো আমার কাছে ফিরত আসতে চাই।
দোয়া মিষ্টি করে হেঁসে বললো, এটা তো তোর খুশি হওয়ার কথা উনার গার্লফ্রেন্ড থাকা সর্তে তোর সাথে সম্পর্কে গেলে সেটা চিটিংবাজি হতো। বাট সেই তার সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর তোর সাথে সম্পর্কে যেতে চাই তাও চটজলদি কবুল চটজলদি বিয়ে।

নিদা লজ্জাকাতর গলায় বললো, ইশ বড্ড বেয়াদব হয়েছিস, আমার বুঝি লজ্জা করে না!
দোয়া হাসলো তারপর বললো, তাও একটু সময় নেই। দেখা কর কথা বল, ঘুরাঘুরি কর, দেখ মানুষ টাকে বুঝে উঠতে পারিস কিনা।
নিদা বললো, বাবা তো কালকে উত্তর জানতে যাচ্ছে।

দোয়া ঠোঁট উলটিয়ে বললো, তো! হ্যাঁ বলে দে। আংকেল তো বললো,ই বিয়ে আরো তিন বছর পর, আদনান ভাইয়া ও তো পড়া শেষ করতে এক বছর সময় রয়েছে।
নিদা দোয়ার হাত চেপে ধরে বললো, এতোদিন আমার সেমিস্টারে জন্য দেখা হয়নি পরশু আবির (হোলি) উৎসবে বলেছে দেখা করবে, আমি কি বলবো তখন?
দোয়া নিদার গাল টেনে বললো, আমার বুদ্ধিমতী বোনের এই প্রেমে পড়ে কি বোকা হাল হলো রে।

নিদা নিচের দিকে তাকিয়ে হাসলো সুন্দর করে। দোয়া তাকিয়ে রইলো নিদার দিকে। নিদা অত্যন্ত সুন্দরী, যেনো উপর আল্লাহ রুপ তাকে নিজ হাতে মনের মতো দিয়েছে। কিন্তু এতো রুপবতী হয়েও তার কোন অহংকার বিদ্যমান নেই।
দোয়া বললো, সময় চাইবি।

নিদা বললো, হ্যাঁ আমিও ঠিক করেছিলাম পরের বার এটাই বলবো।
দোয়া হাসলো তারপর সেই হাত বারিয়ে ঘুমানোর জন্য তার বালিশ ঠিক করতে লাগলো।

~ নিদা নরম গলায় বললো, তুই সত্যি কঠিন প্রেমে পড়ে গেছিস মাদু, কি যে বুঝদার হয়ে গেলি।
দোয়া নিদার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বললো, খালি এই ব্যাটা সীমান্ত বুঝে না।
নিদা প্রশ্ন গলায় বললো, তুই ভালো মত খবর নিয়েছিস উনার গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি?
দোয়া বললো, হ্যাঁ। আপাতত নেই।

নিদা অবাক গলায় বললো, তার মানে ছিলো!
দোয়া মাথা দুলিয়ে বললো, উনি নিজ থেকে বলেছে উনার দশম শ্রেণিতে একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো, মেয়েটি তার বন্ধুর বোন ছিলো। উনত্রিশ দিন পর জানতে পারে মেয়েটির আরো একটি বয়ফ্রেন্ড রয়েছে।

নিদা চমকে উঠে বললো, সে কি! কিন্তু তাহলে মেয়ে রিলেশন কেন করলো?
দোয়া ছোট্ট নিঃশ্বাস নিয়ে বললো, উনি যাতে পড়ালেখা থেকে একটু সরে যাই আর মেয়েটির ভাই প্রথম স্থান লাভ করতে পারে।
নিদা কিছু না বুঝে বললো, আরে বুঝিয়ে বল আমি নিজেকে এখন মাহার
জায়গায় দেখছি কিছুই বুঝতাছি না।

সীমান্ত ভাইয়া স্কুলে সব সময় প্রথম স্থান লাভ করতো আর মেয়েটির ভাই দ্বিতীয়। কিন্তু দুজনে বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। দ্বিতীয় হওয়ার জন্য মেয়েটির ভাই কে প্রচন্ড মার খেতে হতো পরিবারের কাছে।

মেয়েটি তাতে প্ল্যান করলো সীমান্ত ভাইয়া কে প্রেমে জালে ফাঁসাবে যাতে সেই পড়ালেখা থেকে সরিয়ে আনতে পারে, তাই সেই নিজেই প্রপোজ করেছিলো দোয়া এক নাগারে বললো,
নিদা হতবুদ্ধি গলায় বললো, ছিঃ! কি সাংঘাতিক নোংরা মেয়েলোক।

দোয়া হতাশ ভঙ্গিতে বললো, এই মেয়ে জন্য উনি আজ পর্যন্ত প্রেম করেনি কারণ সেই মেয়েটিকে এখনও ভুলতেও পারে নি।
নিদা ঠোঁট উলটিয়ে বললো, ব্যাটা রাম ছাগল নাকি? এই নোংরা মেয়ের জন্য নিজের অনুভূতি কে কষ্ট দেওয়ার মানে কি?
দোয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, মেয়েটা তার সাথে সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর আরো তিনজনের সাথে সম্পর্কে গিয়েছে।
তারপর পারিবারিক ভাবে বিয়ে করে বসলো, আজ তিন বছর হলো তার সংসার এমনকি একটা মেয়ে বাচ্চা ও রয়েছে।
নিদা আকাশ থেকে পড়ে বললো, মানে কী! এতো গুলো প্রেম করে সেই শেষ পর্যন্ত পারিবারিক ভাবে বিয়ে করলো?

দোয়া মাথা নেড়ে বললো, হ্যাঁ। তুই জানিস কিছুদিন আগে আমি আর সীমান্ত ভাইয়া তার প্রাক্তন প্রেমিকার জন্য আর তার বাচ্চার জন্য শপিং করেছিলাম।
নিদা তেতে উঠে দোয়ার মাথায় খাট্টা মেরে বললো, গাধীর গাধী তুই উনাকে ভালোবাসিস আর তুই কিনা উনার প্রাক্তনের বাচ্চাকাচ্চার জন্য শপিং করছিস!
দোয়া ঠোঁট উলটিয়ে বললো, তো কি হয়েছে, আমি আবদার করেছিলো পছন্দ করে দেওয়ার জন্য।
নিদা নিজ মাথায় চাপড় মেরে বললো, তুই কি পাগল! তোর হিংসে হয়না? উনি আজ ছয় বছর তার প্রাক্তনের জন্য পাগলামি করে বেড়াচ্ছে সব জেনেও তুই শপিং করছিস।

দোয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, হিংসের কি হলো, মানুষ টা তো আর উনার কাছে ফিরত আসছে না। উনার সব কথা শুনার পর আমি তো উনার প্রেমে আরো এক ধাপ পড়েছি।
নিদা আক্কেলগুড়ুম গলায় বললো, কেন! এখানে প্রেমে পড়ার কি হলো?

দোয়া লাজুক হেঁসে বললো, মানুষ টা কঠিন ভাবে ভালোবাসতে জানে। তা নাহলে কি একটা মানুষ তাকে ধোঁকা দেওয়ার পরেও তার সম্পর্কের সময় করা ওয়াদা গুলো পূরণ করতো নাকি!
নিদা ঠাস করে বালিশে শুয়ে পড়ে বললো, তুই একটা জিনিস রে বোন আমার সাথে কাইল্লা যদি এই কাম করতো ইট মেরে মাথা ফুটো করে দিতাম।
দোয়া হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।

নিদা বললো, আমার তো এখন তোর সীমান্ত ভাইয়ার সামনে বসে উনাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে সিগারেটের সাথে নিয়ম করে বেহায়ামির ঔষধ খাই নাকি।
দোয়া নিদা চুল টেনে মন খারাপ সুরে বললো, বেচারা কে এইভাবে বলিস না।
আমার উনাকে ভীষণ মনে পড়ছে রে আজ সাতদিন হলো দেখা নেই।

নিদা ঠাট্টা সুরে বললো, ভিডিও কলে তো ফুসুরফুসুর ঠিকই করো আর কি!
দোয়া নিদা কে পা দিয়ে লাথি উপহার দিয়ে বললো, উনার হাতটা তো আর আলতো করে স্পর্শ করতে পাচ্ছি না। তুমি এখন বুঝবা না, সময় আসবে।
নিদা অশ্লীল রসকিতা সুরে বললো, কয়েকদিন পর বলবি আমার ঠোঁট ফেটে চৌচির হয়ে গেছে তার ঠোঁট টা আলতো করে স্পর্শ করতে পাচ্ছি না বলে।
দোয়া নিদা কে এলোপাতাড়ি বালিশ মারতে লাগলো দুজনের হাসির শব্দ মুখরিত হতে লাগলো দোয়াদের ছোট্ট এই দোতালা বাড়ি।

~ নিদা ঘুমিয়ে গেলো কিন্তু দোয়া জেগে রইলো প্রচন্ড ক্লান্ত শরীর নিয়ে। নিদা ঘুম জড়ানো গলায় বললো, ঘুমা মাদু হয়তো উনিও ঘুমিয়ে পড়েছে।
দোয়া ছোট্ট করে হেঁসে বললো, ফোন বাজলে মা শুনে ফেলবে, তাই সাইলেন্ট করে রাখা ঘুমিয়ে গেলে তো কল আসলে বুঝবই না।
নিদা কাত হয়ে অন্য পাশে শুয়ে গেলো, কিছুখনের মধ্যে তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে গেলো হয়তো গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছে।

কিন্তু দোয়া নিরন্তর অপেক্ষায় রয়েছে সীমান্ত নামক ছেলেটির জন্য। বাইরে উত্তাল পাতাল বাতাস হচ্ছে বড় বড় গাছ গুলো এদিক ওদিক ঝাপ্টা দিচ্ছে।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে দোয়া হঠাৎ সেই ফিসফিস করে বললো, খুব ক্লান্ত হওয়ার পরও তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে সীমান্ত ভাইয়া।
প্রচন্ড ঘুম পেলেও তোমার ফোন আসার অপেক্ষায় রাত জাগতে ভালো লাগে আমার মারাত্মক ভালো লাগে।
সেইদিন রাতের অর্ধেক প্রহরে দোয়ার ঘুম পাখি এসে তীব্র ভাবে যখন ছুটাছুটি করছে ঠিক তখনি সীমান্তের কল এলো।
অন্ধকার রুমে এই গহীন রাতে দোয়ার হাসিজ্জ্যেল আনন্দের মুখ হয়তো কেউ পরিমাপ করেও উঠতে পারতো না তখন।

তার ভালো লাগার মানুষ তার প্রতি ভালো লাগার অনুভূতি ব্যয় করছে, তাতে যেনো দোয়ার পৃথিবীতে হাজারো ফুলের বাগান হলো।
তার মনে হলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ আনন্দ নিজ হাতে যেচে এলো তার দুয়ারে। সারারাত সীমান্ত আর দোয়ার গল্পের আসরে রাত কেটে গেলো।
সীমান্ত কৈফিয়ত হিসেবে কখনও বলে না সেই কোন এতো দেরী করে কল দিলো, আশ্চর্য ব্যাপার হলো দোয়া নিজেও কখনও তার থেকে কৈফিয়ত চাইনি।
বন্ধুত্ব ও না প্রেমিক / প্রেমিকা ও না। এর মাঝামাঝি সম্পর্ক গুলো সত্যি বাজে। কোন আশা রাখা যায়না, কোন অভিযোগ করা যাই না শুধু একতরফা অভিমানের পাল্লা ভারী করা যাই।

দোয়া নিজ থেকেও কখনও সীমান্ত কে ফোন দিয়ে বিরক্ত করে না।
ভালো লাগে তার অপেক্ষা করতে, তার বিশ্বাস একটুখানি সময় পেয়ে মানুষটা ঠিকই তাকে মনে করে বলবে ইশ আমার হুর টা অপেক্ষা করছে একটুকরো কল তো দেওয়া যাই।

পরের দিন চব্বিশ ঘণ্টা সীমান্তের ফোন বা মেসেজ কিছু ই এলো না। সেই আবারও পূনরায় নিজেকে লাপাত্তা ঘোষণা করলো।
কিন্তু দোয়া ছোট্ট ছোট্ট মেসেজ বার্তা ঠিকই তার ইনবক্সে পাঠিয়ে ভর্তি করে ফেললো।
নিদা আশ্বাস ভরা গলায় বললো, সেই হয়তো ব্যস্ত তুই মন খারাপ করিস না।

দোয়া তাতে মিষ্টি করে হাসতো কিন্তু পরক্ষণেই সেই আঁড়চোখে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে থাকতো।
সেইদিন তিনটা নাগাদ দোয়া আর নিদা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে চলে গেলো, অন্য ধর্মের উৎসব হলেও ক্যাম্পাসের এই উৎসবমুখর সৌন্দর্য সেই একদমই উপেক্ষা করতে চাইনা।
~ পরের দিন সকালে আটটা সময় দোয়ার রুমে একটি বেনামি বক্স এলো, এটি দিয়ে গিয়েছে গেটের দারোয়ান মি. আফজাল। বক্সটির উপরে ছোট্ট করে লিখা ছিলো হুর।

দোয়া যেনো খুশিতে দম বন্ধ হয়ে গেলো। সেই এলোপাতাড়ি নাচতে লাগলো, তার সাথে যোগ দিলো রশ্মি।
রুমে তখন ছিলো জুমুর আর অরিন নামে দুটো সিনিয়র মেয়ে, একজন বই হাতে বসে আছে আরেকজন তার প্রেমিক পুরুষের সাথে কথা বলছে
অরিন খুবই মিশুক প্রকৃতির মেয়ে, সেই সবসময় মুখে হাসির রেখা টেনে রাখে, সেই পড়ে ফার্মেসি তে তয় বর্ষে।
আর জুমুর হলো অত্যন্ত দুষ্ট প্রকৃতির মেয়ে। সেই প্রচন্ড চাপাবাজ, কূটনীতি চিন্তা ভাবনা আর বড় মাপের হিংসুটে। তার আরো একটি বিশেষ গুন রয়েছে সেই একজন কথা আরেকজনের কাছে জগাখিচুড়ি করে পাচার করতে প্রচুর ভালোবাসে।

অরিন দোয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে। তার ভালোই লাগে এই প্রান খোলা হাসিখুশি মেয়ে দুটো কে সেই উৎসাহ গলায় বললো, খুলো, খুলো জলদি খুলো।
রশ্মি মৃদু চিৎকার বললো, আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলছি সেই তোকে প্রপোজালে পাঠিয়েছে, এই আংটি হবে আংটি।
দোয়া ভারী নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। সেই তার হরিণ টানা বড় বড় চোখ গুলো কে ঝাপ্টা মেরে রশ্মির দিকে তাকিয়ে রইলো।
কথাটি শুনে জুমুর নামক মেয়েটিও উঠে এলো।

রশ্মি চটজলদি দোয়ার হাত থেকে বক্সটি নিয়ে খুলতে লাগলো তাতে ছোট্ট একটি চিরকুট।
দোয়া বিষ্ময় চোখে রশ্মি সহ অরিন আর জুমুরের দিকেও তাকালো। তার হাতপা কাঁপছে কপালে আর নাকে ডগায় জমে গেছে বিন্দু বিন্দু লোভনীয় ঘাম।
রশ্মি টান দিয়ে চিরকুট টা খুলে ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, ইশ কি নিরামিষ রে, এতো চিৎকার আর উৎসব বৃথা।
তাতে লিখা ছিলো।
সময় দশটা, স্থান চারুকলা।

রশ্মি চিরকুট জুমুরের হাতে দিয়ে বেডে বসে বললো, ছিঃ! ব্যাটা চারুকলাতে দাওয়াত করছে আমি তো ভেবেছিলাম আংটি বা প্রপোজালে হবে।
অরিন উঠে এলো সেই দোয়ার আদুরে বিষ্ময় মুখখানা কে টেনে দিয়ে বললো, ডেটে ডেকেছে এটা বরাবরই প্রপোজের মত, একদমই তার হুরপরী সেজে যাবা।
দোয়া লাজুকলতা হয়ে হেঁসে বললো, আপু! তুমিও!
অরিন হাসতে হাসতে তার বেডে চলে গেলো সাথে জুমুর ও এখন তার প্রথম কাজ হবে রসিয়ে রসিয়ে নিজের বয়ফ্রেন্ড এই কাহিনী বলা।
দোয়া চিরকুট টি তার বুকে নিয়ে দড়াম করে তার বেডে পড়লো। তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা সুখময় পানি। মানুষ টা ঠিক আছে তাতে মাত্রাতিরিক্ত খুশি সেই আর যে উপরের আশা তার নেই।

~ রঙ ছিটিয়ে, বন্ধু-বান্ধবী ও সহপাঠীদের গায়ে-মুখে রঙ মেখে আবির উৎসবে (হোলি) মেতেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাতে শিক্ষার্থীরা।
চারুকলার বকুলতলায় এ উৎসব শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা সহ বহিরাগত ছেলেমেয়েরা ঢাকঢোলের তালে র্যালি বের করেন।

বরাবরের মতো এ বছরও দোল উৎসবের মূল আয়োজন হয় ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে।
দোয়া তার সুন্দর সাদা ড্রেসটি পরে চারুকলা তে যখন এলো তখন বেলা দশটা পঁচিশ।
সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব হোলি খেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, বন্ধু-বান্ধবী, বড় ভাই-ছোট ভাই, পরিচিত সকলে একে অপরকে নানা রঙে রঙিন করে দিচ্ছে।

তরুণ-তরুণীদের রঙ মাখামাখির আনন্দে মুখর হলো যেনো চারুকলা। রঙের কারণে কারও চেহেরা স্পষ্ট দেখাও যাচ্ছে না।
দোয়া দাঁড়িয়ে চারিদিকে নজর বুলালো। সেই খুবই সাবধানতার সাথে দাঁড়িয়ে আছে যাতে কেউ ছুটে এসে রঙ না মাখিয়ে দেই।
না কোথাও নেই এই ছেলে, আধ ঘন্টা এদিক ওদিক আড়ালে গিয়ে সীমান্তের ছায়ার খোঁজ ও না পেয়ে দোয়া অগত্যা তাকে কল করলো।
কিন্তু কয়েকবার কল বেজে কাটা গেলো। দোয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না ছেলে মেয়েরা ভ্যাঁং গেয়ে মুটামুটি নোংরা অবস্থা মাখামাখি করছে।
~ দোয়া দুই কদম চলে যাওয়ার উদ্দেশ্য বের হওয়ার আগে একটি রঙ মাখা চিকন পাতলা গড়নের মেয়ে এসে বললো, তুমি মাদুয়া না?
দোয়া সুন্দর করে হেঁসে বললো, জ্বী আপু।

মেয়েটি চমৎকার করে হেঁসে বললো, আমি সীমান্তের ক্লাসমেট ও তোমাকে আমার সাথে কিছুখন অপেক্ষা করতে বলেছে।
দোয়া সুন্দর করে হেঁসে বললো, কিন্তু উনি কই আছে আমি অনেকক্ষন যাবত অপেক্ষা করছি আপু।
মেয়েটি বললো, আরো কিছুখন অপেক্ষা করো আপু ঐ বললো, তোমাকে আমার সাথে দোতলায় ভাষ্কর্য ডিপার্টমেন্টে বসতে।
দোয়া ছোট্ট করে বললো, ঠিক আছে।

দোতলায় একদমই শেষের কর্নার রুম টি হলো ভাষ্কর্য ডিপার্টমেন্ট রুম। পুরো ক্লাস রুম ফাঁকা, নিরবতা যেনো সুঁই দিচ্ছে গায়ে।
নিচে গান বাজনা, নেচে-গেয়ে হৈ হুল্লোড় মেতে উঠেছে সবাই।

নিচে রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দোয়ার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে যেনো, এই ছেলে আসলে আজ আচ্ছা করে বকে দিবে তাকে।
দোয়া কিছু বলার আগে মেয়েটি বললো, তোমার হয়তো পানি খেতে মন চাচ্ছে অনেকখন তো দাঁড়িয়ে ছিলে রোদে।
দোয়া হালকা করে হেঁসে ক্লান্ত গলায় বললো, সত্যি আপু আমার ভীষণ পানি পিপাসা পেয়েছে।

মেয়েটি দোয়া কে ছোট্ট একটি পানির বোতল এনে দিলো দোয়া বিনা বাক্য তা গটগট করে খেয়ে নিলো। ঠিক তখনি দোয়ার ফোনে রশ্মির কল এলো, দোয়া ফোন কানে নেওয়ার সাথে সাথে মেয়েটি বললো, সেই কিছু খনের মধ্যে চলে আসবে একটু কাজ পড়েছে নিচে।
দোয়া জানালো কোন সমস্যা নেই সেই তার বান্ধবী সাথে কথা বলছে, ততখনে তিনি নিজের কাজ করতে পারে।
রশ্মি গলা ছড়িয়ে বললো, তোকে না বললাম সীমান্ত কে পেলে আমাকে একটা কল দিবি?

দোয়া উদাস গলায় বললো, তাকে পেলাম কই বল!
দোয়া রশ্মি কে এক এক করে এখানে আসা পর্যন্ত সব কাহিনী বললো,
রশ্মি বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো, ব্যাটা কি নকশা করে, তোকে এতো আয়োজন করে ডেকে নিয়ে কই হাওয়া হলো?

দোয়া ঠোঁট উলটিয়ে বললো, কি যে এতো ভীড় আমার তো গায়ে কাটা দিয়ে দিয়েছে ভয়ে, ভাগ্যিস দোতালায় ভাষ্কর্য ডিপার্টমেন্ট এসে বসে আছি।
রশ্মি বললো, আমি হলের সিঁড়িতে আছি, তুই তাহলে বস আমিও আসতাছি ঐখান থেকে বের হবি না আমি শুনেছি ছেলেমেয়েরা মদ, ভ্যাঁং খেয়ে হুলুস্থুল অবস্থা।
~ রশ্মি ফোন কেটে, গেটে এসে দেখলো সীমান্ত তার গাড়ি থেকে নামছে পরনে তার হলুদ পাঞ্জাবি হাতে রয়েছে নিয়ম করে আনা বেলী ফুলের মালা।
রশ্মি সীমান্ত কে আপাদমস্তক দেখে বিড়বিড় করে বললো, মাদু তোর সীমান্ত তো আমার দিল কেড়ে নিলো, কি ভয়ানক লাগছে এই হ্যাংলা ছেলেটাকে।
সীমান্ত তার চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে রশ্মি কে উদ্দেশ্য করে সুন্দর করে হেঁসে বললো, হ্যালো! দোয়া কই? রুমে!
রশ্মি কপাল কুঁচকে বললো, রুমে কেন হবে ও তো আপনি যেখানে থাকতে বলেছেন ঐখানে আছে।

সীমান্ত রশ্মি থেকে দিগুণ কপাল কুঁচকে বললো, মানে! আমি কই থাকতে বললাম? আর ওর সাথে তো বিগত দেড়দিন আমার কথায় হয়না।
রশ্মি সীমান্তের কথা কোন প্রেক্ষি না বুঝে বললো, আরে আপনি তো একটু আগে একটা চিরকুট দিয়ে ওকে চারুকলা তে ডাকলেন।
সীমান্ত প্রায় দিশেহারা হয়ে বললো, নো! এমন মোটেও না আমি তো মাত্র ওর সাথে দেখা করতে এলাম আমি কোন চিরকুট ওর জন্য কারও হাতে দিই নেই।
রশ্মি যেনো পায়ের তালু থেকে রগ এক মৃদু টান দিলো সেই শুকনো ঢোগ গিলে ভয়াতুর গলায় বললো, কি বলছেন কি আপনি?
সীমান্ত অবাক গলায় বললো, সিরিয়াসলি! আমি যা বলছি সত্যি বলছি।

রশ্মি সীমান্ত কে কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গি করে বললো, সেই বক্সে হুর লেখা ছিলো। আমরা ভেবেছিলাম আপনি। তাই তো দোয়া চলে গিয়েছে।
এমনকি ঐ একটু আগে আমাকে ফোন দিয়ে বললো, আপনার একটা মেয়ে বান্ধবী ওকে ভাষ্কর্য ডিপার্টমেন্ট বসিয়ে রেখেছে। মেয়েটি বললো, আপনি নাকি ওকে সেইখানে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন।
সীমান্ত যেনো এক বৈদ্যুতিক শক খেলো, সেই তার মাথার চুল গুলো টেনে ধরে কি যেনো ভেবে মৃদু চিৎকার বললো, শিট!

পর্ব ১৩

~ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শীত মানেই উৎসব। সে উৎসব প্রকৃতির, সে উৎসব পাখির, সে উৎসব প্রকৃতিপ্রেমীর।
জাহাঙ্গীরনগর, সে এক অনাবিল সৌন্দর্যের নগর, নৈসর্গের অন্য নাম।

কোনো এক দক্ষ শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো সুন্দর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
দোয়ার ড্রেসের মত একি কারুকাজের ড্রেস পড়ে পরিপাটি হয়ে, লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে বসে আছে নিদা। তার গায়ের জামার বিভিন্ন জায়গায় মেখে আছে আবিরের অংশ।

আদনান আঁড়চোখে নিদার দিকে তাকিয়ে বললো, আপনি বরাবরই কি সুন্দর! নাকি এই জামা তে সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে!
নিদা লজ্জিত ভাবে হেঁসে বললো, আপনি এই হোলির মধ্যে কীভাবে আসলেন?

আদনান কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, আমি তো কাল থেকে এখানে, আমি আপনার সাথে দেখা করা টা মিস দিতে চাচ্ছিলাম না।
নিদা ঠোঁট কামড়ে ধরলো, ইশ মানুষ টা এতো প্রেমময় কথা কেন বলছে! তার যে দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়।
আদনান মৃদুস্বরে বললো, আপনি নাকি বাবা কে হ্যাঁ বলে দিয়েছেন?
নিদা চমকপ্রদ গলায় বললো, আপনার বাবা! কিন্তু উনি তো শুনলাম বেঁচে নেই।
আদনান সুন্দর করে হেঁসে বললো, আমি আপনার বাবার কথা বলছি নিদা।

নিদা অসাধারণ করে হেঁসে বললো, বাব্বাহ বিয়ের নাই খবর আর আপনি এখনি বাবা ডাকছেন?
আদনান হঠাৎ গুরুগম্ভীর গলায় বললো, অবশ্যই বিয়ের খবর আছে, আর দুই বছরের মধ্যে আপনাকে ঘরে তুলছি ওয়াদা রইলো।
~ রুমে মধ্যে দিশেহারা হয়ে দৌড়াচ্ছে দোয়া হাতের কাছে যত বেঞ্চ পাচ্ছে ধাক্কা দিয়ে মারছে ওদের দিকে।

তার চোখ বার বার নিভু নিভু হয়ে আসছে হাত-পা ভেঙে আসছে কিন্তু তাও সেই নিজেকে বাঁচাতে প্রানপ্রন চেষ্টা করছে।
আবিরে (হোলি) মাখামাখি একটি ছেলে নোংরা একটি খিস্তি দিয়ে বললো, আর একবার নখরা করবি তোরে এমন অবস্থা করমু এক মাস হসপিটালে বেডে পড়ে থাকবি।
অন্য গুলো ছেলে হো হো করে উচ্চ কন্ঠে হেঁসে উঠলো, যেনো এটা বড্ড মজার ব্যাপার।
দোয়া চিৎকার করে কাঁদছে আর এলোপাতাড়ি দৌড়াচ্ছে। আর তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মহা উৎসবে উপভোগ করছে ঐ ছেলে গুলো।
এইবার ছেলেগুলো খুবই চালাকির সাথে দোয়া কে ঘিরে ফেললো, দোয়া গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগলো। কিন্তু তার অকেজো শরীর আর পেড়ে উঠছে না এই দানব গুলোর হাতের ছোবল থেকে।

একটি ছেলে ছুটে এসে দোয়াকে ধরে ফেললো, সেই বার বার দোয়ার গায়ের আবির লাগাতে লাগলো, প্রতিবারই দোয়া তাকে এলোপাতাড়ি খামচি দিচ্ছে। সবগুলো ছেলে তাতে যেনো মহানন্দ পেলো।
~ সজোরে দরজা মধ্যে অসংখ্য লাথি মারছে কে! সবগুলো ছেলে কপাল কুঁচকে সেইদিকে তাকালো। আশ্চর্য জনক ভাবে দরজাটি ঠাস করে খুলে গেলো।
ভাষ্কর্য ডিপার্টমেন্ট দুটো দরজা রয়েছে একটা সাধারণত খোলা অবস্থা থাকে আরেকটি খুব কমই খোলা হয়।

কিন্তু কাল এই ডিপার্টমেন্ট ছেলে মেয়েরা অনেক রাত পর্যন্ত আবির উৎসবের আয়োজন করার ফলে দুটো দরজায় খোলা রয়ে গিয়েছিলো। তা ছেলেগুলোর জানা ছিলো না, তারা সবসময় খোলা থাকা দরজাটি অনেক আয়োজন করে তালা মেরেছে ভিতরের দিয়ে।
সীমান্ত ভিতরে ডুকে হতবিহ্বল হয়ে গেলো, এখানে উপস্থিত চারটা ছেলে তিনটা দোয়া কে ঘিরে রয়েছে আরেকটা ফোন হাতে দাঁড়িয়ে দাঁত কেল্লাচ্ছে বুঝায় যাচ্ছে এই ঘটনাটি সেই মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছে।

দোয়া সীমান্ত কে দেখে যেনো মরুভূমির তে এক ফোঁটা পানির সন্ধান পাওয়ার মত খুশি হয়ে গেলো, সেই কাঁপা কাঁপা কান্নায় জর্জারিত খুশি তে উৎফুল্ল কন্ঠে বললো, সী-সীমান্ত ভাইয়া!
কিন্তু পরক্ষণেই কি ভেবে যেনো তার সারা মুখের ভঙ্গি পাল্টে গেলো ঘিন্না ভরা দৃষ্টিতে সীমান্তের দিকে তাকালো সেই, সীমান্ত তাকিয়ে রয়েছে তার হুরের বিধ্বস্ত মুখখানার দিকে।

অনেক খাচি চুল ছিঁড়ে গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়েই আছে, জামা তে লেগে আছে আবির, ওরনা ছিঁড়ে একটুখানি গায়ে জড়িয়ে আছে।
ছেলেগুলো সীমান্ত কে দেখে যেনো ভড়কে গেলো। তারা ভাগ ভাগ করে চিৎকার দিতে লাগলো।
সীমান্তের যেনো সেইদিকে নজরই গেলো না, তার দৃষ্টি তো তার হুরের দিকে নির্বন্ধ।
সীমান্ত শুকনো ঢোক গিলে বিড়বিড় গলায় বললো, নো হুর নো।

তার হুর আস্তে আস্তে তার পায়ের বল শক্তি হারিয়ে ফেলছে। সীমান্ত নিখুঁত ভাবে খেয়াল করলো দোয়া যদি ঘুরে পড়ে যাই তাহলে টেবিলের কোনা সাথে সেই প্রচন্ড ভাবে আঘাত খেতে পারে। সীমান্ত ছুটে তার হুর কে ধরতে গেলো।
ছেলে গুলো এতে মহা সুযোগ পেলো তারা দরজা দিয়ে উঠে পালাতে লাগলো, তৎক্ষনাৎ রশ্মি এসে হাজির হলো। রশ্মি এই-এই বলে চিৎকার দিতে লাগলো। ছেলেগুলো রশ্মি কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে উঠে পালালো।

দোয়া আড়মোড়া ভেঙে সীমান্ত গায়ে জ্ঞান হারিয়ে চিৎপটাং হয়ে ঢলে পড়লো।
পিছন দিয়ে রশ্মি ছুটে এলো সেই এসে দোয়াকে স্তব্ধ, জ্ঞান হারা অবস্থায় দেখে প্রায় দিশেহারা হয়ে গেলো।
সেই ভয়াতুর মুখে চিৎকার চেচামেচি করে বললো, ওর-ওর সাথে উল্টো পাল্টা কিছু হয়নি তো ভাইয়া! এই মাদু এই মাদু কথা বল।
সীমান্ত দোয়াকে পাঁজ কোলে নিয়ে রশ্মি কে উদ্দেশ্য করে বললো, কেউ নিচে জিজ্ঞেস করলে বলবা ভাং খেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে।

রশ্মি কান্নারত চেহেরায় জোরে জোরে হ্যাঁ বোধক মাথা দুলালো।
~ চারুকলা সামনে সীমান্ত তার গাড়ি রেখে ছিলো পিছনের সিটে রশ্মি দোয়া কে বুকে জড়িয়ে বসলো কান্না করতে করতে তার নিজেরও বেহুশ হওয়ার অবস্থা।
রশ্মি কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে বললো, সব ঐ অপূর্ব বেজন্মা কাজ, জানোয়ার থেকে নিচু কীট ঐ।

সীমান্ত চট করে রশ্মির দিকে তাকিয়ে বললো, মানে! অপূর্ব!
রশ্মি ঝাঁঝের গলায় বললো, হ্যাঁ হ্যাঁ সব আপনার বন্ধুর কাজ ঐ কুত্তার মত পিছনে পড়ে থাকতো মাদুর। আজ চার বছর ঐ জ্বালিয়ে খাচ্ছে এই মেয়েটাকে।
সীমান্ত যেনো আকাশ থেকে পড়লো তার মাথা যেনো কাজ করা বন্ধ হয়ে গেলো, সেই হতবিহ্বল গলায় বললো, কি বলছো কি তুমি! স্পষ্ট করে বলো।
রশ্মি সীমান্তের আশ্চর্য হতবুদ্ধি মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো মাদু দশম শ্রেণিতে থাকতে অপূর্ব দা ওকে প্রপোজ করে কিন্তু মাদু না করে দেই অপূর্ব দা নিজের ধর্ম নাকি বদলাবে বলছিলো তাও মাদু রাজি হয়নি।

ঐ কুত্তা হাল ছাড়ে নি, প্রতিদিন স্কুলের সামনে বখাটে দের মত বসে থাকতো এমনকি একি কাজ আমরা কলেজে উঠার পরেও করতে লাগলো।
কিন্তু ভাগ্য খারাপ বলে একি ভার্সিটি তে টিকলো মাদু অনেক চেষ্টা করেছিলো ঢাকার বাইরের টিকার কিন্তু আন্টি জন্য হয়ে উঠেনি। এখানে এসে এর উত্তাপ আরো দশগুণ বৃদ্ধি পেলো।

যেখানেই সেইখানে গায়ে হাত দেওয়া ওরনা টেনে ধরা কোন ছেলে বন্ধু হলে ওদের মারা, যেনো জাহান্নাম করে দিয়েছে মেয়েটার জীবন।
সীমান্ত যেনো পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো, সেই কোন রকম মিনমিন গলায় বললো, তু-তুমি কীভাবে বলতে পারো এটা অপূর্ব করছে?
রশ্মি তেতে উঠে বললো, কারণ ঐ ছেলেগুলো দোয়াদের এলাকার আর এদের সবগুলোর নাম জানি আমি।
সীমান্ত কপাল কুঁচকে বললো, কিন্তু ওদের তো চেহেরায় বুঝা যাচ্ছিলো না আবিরের জন্য।

রশ্মি এক পেশে হেঁসে বললো, ওরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে যাওয়ার সময় একজন আরেকজনের নাম ধরে বলতে ছিলো অপূর্ব কে বারণ কর এখন উপরে না আসতে।
সীমান্তের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো ঘিন্না তার চোখ যেনো জ্বালা দিয়ে উঠলো।
এতো টা নোংরা এতোটা নিচু প্রকৃতির মানুষের সাথে সেই এতো কাল গাঢ় বন্ধুত্ব রেখেছিলো এতো বিশ্বাস করেছিলো! আর সেই কিনা লোক ধরিয়ে একটা মেয়ের খারাপ ভিডিও বানাচ্ছে!

রশ্মি দোয়াকে জড়িয়ে ধরে ওর গালের মধ্যে আলতো হাতে থাপ্পড় মারতে লাগলো হুশ আনার চেষ্টা।
তারপর সীমান্তের দৃঢ় মুখখানার দিকে তাকিয়ে বললো, ভাইয়া ওর তো জ্ঞান আসছে না আমার ভয় করছে খুব আংকেল আন্টি কে কি জবাব দিবো!
সীমান্ত গাড়ি থেকে পানি নিয়ে দোয়ার মুখে ছিটিয়ে মারলো দোয়া তাতে যেনো একটু নড়ে উঠলো।
সীমান্ত চটজলদি ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি সজোড়ে টান দিয়ে রোকেয়া হলের সামনে নিয়ে গেলো।

তারপর গাড়ি থেকে নেমে রশ্মি কে উদ্দেশ্য করে বললো, তুমি হলের ভিতর থেকে ওর জন্য লেবুর শরবত নিয়ে আসো।
রশ্মি প্রশ্ন চোখে বললো, মানে!
সীমান্ত ঠান্ডা গলায় বললো, ওরা ওকে ভাং-য়ের পাতা খাইয়ে দিয়েছিলো এটা লেবু দ্বারা সারবে। বাইরের ক্যান্টিন গুলো তে অনেক ভীড় এখন আনার অসম্ভব তাই তুমি নিজ ক্যান্টিনে যাও।

রশ্মি দোয়ার হালকা মৃদু জ্ঞান আসা মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, কিন্তু মাদু!
সীমান্ত আশ্বাস ভরা চোখে বললো, আমি আছি।
রশ্মি চলে গেলো হলের ভিতরে।

সীমান্ত পিছনে সিটে বসে দোয়া কে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো, দোয়া সীমান্তের বুকে মাথা হেলে গেলো।
সীমান্ত আরেক হাত দিয়ে আবারও বোতল থেকে পানি নিয়ে দোয়ার মুখে ছিটিয়ে-ছিটিয়ে মারতে লাগলো।
দোয়া চট করে হরগরিয়ে সীমান্তের গায়ে বমি করে দিলো। সীমান্ত স্তব্ধ, কিন্তু দ্রুত সেই নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে পাশে থেকে টিস্যু আর পানি দিয়ে দোয়ার মুখ মুছে দিতে লাগলো।

দোয়া মৃদু চোখ খুলে সীমান্তের গম্ভীর চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে আদুরী গলায় বললো, সী-সীমান্ত ভাই-ভাইয়া!
সীমান্ত দোয়ার মুখ মুছে দিতে দিতে বললো, জ্বী!
দোয়া একি আদুরী গলায় বললো, আপনার উপরে আমার বড্ড অভিমান হচ্ছে সীমান্ত ভাইয়া।

সীমান্ত চমকে দোয়ার দিকে তাকিয়ে একটুকরো হাসলো, দোয়া এক চোখ খোলা আরেক চোখ মৃদু বন্ধ কথা কেমন লেগে লেগে আসছে।
সীমান্ত দোয়াকে বুকে জড়িয়ে মুখের উপরে ঘামে ভিজে যাওয়া চুল গুলো কে আলতো হাতে সরিয়ে বললো, অপরাধ!
দোয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, সারাদিন কোথায় থাকেন হ্যাঁ! একটুও মনে পরে না আমায়! একটাও কি ম্যাসেজ দেওয়া যায় না!
অদ্ভুত এক কারণে সীমান্তের নাক আর চোখ যেনো মৃদু জ্বলে উঠলো। সেই যেনো দোয়ার বিধ্বস্ত বড্ড অভিমানী অভিযোগে পরিপূর্ণ মুখখানার দিকে তাকিয়ে কোন প্রতিত্তোরে ফেলো না।

ঠিক তখনি রশ্মি এলো এক বোতল লেবুর শরবত হাতে। রশ্মি হতভম্ব গলায় বললো, ও খোদা মাদু তো বমি করে আপনার গা ভাসিয়ে দিয়েছে ভাইয়া।
সীমান্ত স্বাভাবিক গলায় বললো, কোন ব্যাপার না এটা ওর প্রয়োজন ছিলো, সেই হাত বারিয়ে বোতলটি নিলো।
রশ্মি সামনের ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে সীমান্ত আর দোয়ার দিকে দৃষ্টি দিলো।

অনেক কাঠখোট্টা পোড়ানোর পর সীমান্ত দোয়া কে ঝাঁঝ ভরা লেবুর শরবত অর্ধেক খাওয়াতে সক্ষম হলো।
সীমান্ত হেলে বসে রইলো দোয়া কে বুকে জড়িয়ে রশ্মি চিন্তিত ভঙ্গিতে সবগুলো কে গ্রুপে নক দিতে লাগলো।
দোয়ার ভাংয়ের নেশা অনেকটা কেটে গেলো বমির ফলে শরবতের পর অর্ধেক হুসে চলে আসলো।
সেই নড়েচড়ে বসে দেখলো সীমান্তের বুকে সেই লেপ্টে বসে আছে আর সীমান্তের চোখ বন্ধ।

দোয়া সজোড়ে সীমান্ত কে ধাক্কা দিলো, সীমান্ত চিটকে গাড়ির সাথে পিঠে মারাত্মক ব্যাথা পেলো।
রশ্মিও দোয়া এমন উদ্ভট কাজে যেনো ভড়কে গেলো, সেই চেচিয়ে বললো, মাথা গেছে তোর মাদু কি করছিস কি তুই?
~ নিদা হেঁটে যাচ্ছে লেকের পাড়ে হঠাৎ আদনান পিছনে থেকে এসে নিদার হাতে তার ওরনার শেষের অংশ দিয়ে বললো, আপনার ওরনায় ময়লা লেগে যাচ্ছে খেয়াল করুন।

নিদা মুচকি হেঁসে দুষ্ট গলায় বললো, এতো খেয়ালই মানুষ হওয়া ভালো না মাঝে মাঝে বেখেয়ালি হতে হয়।
আদনান একি দুষ্ট সুরে বললো, এক জোড়ার মধ্যে একজনকে খেয়ালই হলে চলে দুজন কে হতে হয়না।
নিদা মিষ্টি করে হেঁসে বললো, ঢাকায় কখন ফিরবেন?
আদনান তার মাথা চুলকিয়ে বললো, কাল ফিরলে কি খুব বেশী সমস্যা হবে?
নিদা ঠোঁট কামড়ে হাসলো।

~ আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে স্পর্শ করার? দোয়া চেচিয়ে বলে উঠলো।
সীমান্ত কিছু না বুঝে আহত স্বরে বললো, মানে!
রশ্মি ধমকি স্বরে বললো, মাদু কি করছিস কি তুই চিৎকার কেন করছিস?

দোয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো, আমি যা করছি ঠিকই করছি, তুই জানিস উনি ঐ ছেলে গুলোকে ধরিয়েছে।
সীমান্ত আক্কেলগুড়ুম হয়ে অবিশ্বাস্য গলায় বললো, তোমার মাথায় সমস্যা হয়েছে হুর কি বলছো কি তুমি?

দোয়া ঘিন্না ভরা গলায় বললো, আপনি আমাকে চারুকলাতে ডাকেন নি? আপনি হুর নাম দিয়ে বক্স পাঠান নি?
সীমান্ত নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে দৃঢ় গলায় বললো, আগে বলো ভোর বেলা আর বিকাল পাঁচটার পর ছাড়া আমি তোমার সাথে আজ পর্যন্ত দেখা করেছি কিনা?
দোয়া হিসহিসিয়ে তাকিয়ে রইলো তার নাকে ডগা অস্বাভাবিক কাঁপছে ক্রুদ্ধে সেই কোন উত্তরে দিতে পারলো না।

রশ্মি শান্ত গলায় দোয়া কে উদ্দেশ্য করে বললো, ঐ ছেলেগুলো গুলো তোদের এলাকার শান্ত মানে অপূর্বের দলবল ছিলো।
দোয়া ঝাঁঝের চেহেরা চুপসে গেলো, সেই চট করে রশ্মির দিকে তাকিয়ে কাঁপা গলায় বললো, মা-মানে?
রশ্মি এক এক করে সেইখানে ঘটে যাওয়া সব কথা দোয়া কে বললো, দোয়া চেঁচিয়ে বললো, উনি তো অপূর্বের বন্ধু।
রশ্মি বুঝ দেওয়ার ভঙ্গি করে বললো, এখানে সীমান্ত ভাইয়ার হাত থাকলে ওরা উনাকে দেখে উৎসাহ পেতো পালাতো না।

দোয়া স্তব্ধ, তার চোখের পানি পড়া অগুনিত হলো। সেই অস্পষ্ট স্বরে বললো, একটা মানুষ এতো নোংরা হতে পারে!
সেই অসহায় চোখে সীমান্তের শান্ত মুখখানির দিকে তাকালো।
ঠিক তখনি সীমান্ত পরিষ্কার গলায় রশ্মি কে উদ্দেশ্য করে বললো, ওর জন্য হল থেকে একটি সুতির ওরনা নিয়ে আসো এই হালে হলে ডুকলে মেয়েরা প্রশ্ন করবে আজ আরো বন্ধ দিন।

রশ্মি বুঝলো সীমান্ত তার থেকে একা সময় যাচ্ছে সেই মাথা নেড়ে হলের উদ্দেশ্য রওনা হলো।
~ সীমান্ত দোয়ার দিকে না তাকিয়ে তার দৃষ্টি সামনে রেখে বললো, তোমার সাথে আমার পরিচয় মাসখানেক হতে চলছে এর মধ্যে প্রতিদিন আমাদের দেখা হতো তাও সকাল বিকাল তাইনা?

দোয়া নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে কান্নারত চেহেরায় হ্যাঁ বোধক মাথা দুলালো।
সীমান্ত বললো, আমি কখনও তোমাকে হল গেটের সামনে ছাড়া কোথাও যেতে বলেছিলাম?
দোয়া আগের ভঙ্গিমা বসে এইবার না বোধক মাথা নাড়ালো।

সীমান্ত দাঁতে দাঁত চেপে এইবার কিড়মিড় গলায় ধমকির স্বরে বললো, তাহলে একটা বক্স পাওয়ার সাথে সাথে তুমি এমন একটা দিন কীভাবে চারুকলাতে গেলে?
দোয়া যেনো কেঁপে উঠলো সীমান্ত এমন চাপা ধমকে সেই কাঁপা কাঁপা স্বরে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো তার কান্না আরো দিগুণ বৃদ্ধি পেলো।
সীমান্ত এইবার মুটামুটি হুংকার দিয়ে দোয়া কে এক হাতে টেনে তার দিকে ফিরিয়ে বললো, এত্তো বড় মেয়ে এতোটুকুও জ্ঞান খরচ করে চলতে পারো না।
দোয়া চোখ বন্ধ করে মৃদু ঠোঁট কাঁপিয়ে বললো, ঐ-ঐখানে হ-হু-হুর লে-লেখা ছিলো।

সীমান্ত গলার তেজ আগের মত রেখে বললো, পৃথিবীতে হুর নাম আমি আবিষ্কার করিনি দোয়া। যে এই নামে শুধু আমার ডাকার হক রয়েছে। আর এমনটাও না তুমি শুধু আমার কাছে অন্যের কাছেও হুরই হতে পারো।

দোয়া বললো, আমি-আমি সত্যি বুঝতে পারিনি, আমার শুধু আপনার খেয়াল আসছিলো।
সীমান্ত দৃঢ় গলায় বললো, বুঝতে পারো নি! সিরিয়াসলি হুর! আমি সবসময় তোমাকে আমার উপস্থিত জানান দিয়ে নিচে ডাকি। এতো টুকু জিনিস চিন্তা করার তোমার বোধ ছিলো না!
দোয়া নিশ্চুপ।

সীমান্ত হঠাৎ এক আশ্চর্য রকম কাজ করে বসলো সেই আলতো হাতে দোয়ার কোমলপ্রাণ দুগালে নিজের হাত রাখলো।
দোয়া চমকে তাকিয়ে গেলো তার পুরো শরীর যেনো এক বিদ্যুৎ খেলে গেলো। সীমান্ত তার এতো কাছে! দোয়া যেনো নিস্তব্ধ হয়ে গেলো, কিন্তু সেকেন্ড খানিক সেই সীমান্ত ধারালো মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না সেই আবারও তার চোখের পাতা বন্ধ করে নিলো।
সীমান্ত অত্যন্ত স্পর্শকাতর গলায় মৃদুস্বরে ডাকলো হুর।
দোয়া যেনো কেঁপে উঠলো এমন একটি ডাকে।

সীমান্ত একি সুরে বললো, আমার দিকে তাকাও হুর। আমি চাই তুমি কথা গুলো চোখ ব্রেন সবকিছু খুলে শুনো। তাকাও আমার দিকে।
দোয়া তাকালো তার লাল হয়ে টুকটুকে হয়ে যাওয়া অগুনিত অশ্রু মাখা চোখে যেখানে এখনও পানি টলমল অবস্থায় অবস্থান করছে।
সীমান্ত দৃঢ়তা চেহেরায় কিন্তু অতি মার্জিত সাথে বলতে লাগলো এই স্বার্থপর পৃথিবীতে এতো বিশ্বাস কেউ কে করো না হুর। আমাকেও না। আমি যদি তোমাকে সত্যি চারুকলাতে এই পরিস্থিতিতে ডাকতাম তোমার একা আসা কখনও উচিত হতো না।
পৃথিবীতে কোন পুরুষ ভালো না হুর। এই পুরুষের জাত প্রচন্ড নোংরা হয়, এরা সময়ই ঠিকই তাদের আসল রুপ দেখায়। কিছু ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিজের বাবা কেও বিশ্বাস করতে হয়না হুর।

একটা নারী তাদের কাছে যতই প্রিয় হক অসময়ে সব পুরুষই হিংস্র দানবের থাবা বসাতে পারে। তাই প্রতিটা কদম এই নারী জাতিকে সামলিয়ে ফেলতে হয়।
তুমি নিজের পায়ের মাটি যত শক্ত করবে সামনের মানুষ তোমাকে তত বেশী ভয় করবে, এমনকি তোমার চুপটিকেও ভয় করবে।
কেউ কোথাও যেতে বললো, একা যাবে না সাথে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করে যাবে, পরিস্থিতি বুঝে সেটা আড়াল করে হলোও যাবে। একটা ভুল সারাজীবনের কান্না বয়ে আনে হুর।

এত্তোগুলো কথা বলে সীমান্ত থামলো দোয়ার চোখের পানি বন্ধ হয়ে গেছে, সেই বেশ সময় পর নিজের চোখের পাতা ঝাপটা দিলো তাতে এক ফোঁটা পানি তার চোখ থেকে গড়িয়ে ঠোঁটের কিনারায় এসে ধাক্কা লেগে এলোমেলো হয়ে গেলো।
সীমান্ত তাকিয়ে রইলো সেই দিকে, তারপর তার মাথা ঝুঁকে ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে দোয়া কে ছেড়ে দিলো, কিন্তু দোয়ার দৃষ্টি এখনও সীমান্তের নাক লাল, কুঁচকানো কপাল, এলোমেলো চুলের মুখ খানার দিকে টিকে আছে।

সীমান্ত সোজা হয়ে বসে তার দৃষ্টি সামনে রেখে কঠোর স্বরে বললো, রশ্মি ওকে হলে নিয়ে যাও।
দোয়া চমকে তাকিয়ে দেখলো রশ্মি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কাচুমাচু অবস্থায়, সেই তো খেয়ালই করলো না রশ্মি কে।
দোয়া তার চোখ মুখ দু-হাত দ্বারা মুছে সীমান্ত কে উদ্দেশ্য করে বললো, আ-আমার আপনার সাথে কথা রয়েছে।
সীমান্ত তার দৃষ্টি সামনে রেখে দৃঢ় স্বরে বললো, আমাদের কথা এখানে শেষ দোয়া।

~ দোয়া এই দোয়া কই হারিয়ে গেলে? অনেকখন থেকে এই ডাক শুনা যাচ্ছে নুবার মৃদু ধাক্কাতে দোয়া তার অতীত থেকে বর্তমানে ছিটকে এলো।
চারিদিকে এখোনও একি গান নাচের রেশ।
দোয়া চট করে আগুনের বিপরীতে পাশে তাকালো। সীমান্ত চেয়ে আছে তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে, এই কেমন মনকাড়া, ভিতরটা উত্তালতা করে দেওয়ার দৃষ্টি, এই নজরে কেউ খুন হলেও যেনো অপরাধ মঞ্জুর ঘোষণা হবে।

সীমান্ত বিড়বিড় করে বললো, যতটুকু আমি ভাবনা জগৎ ছিলাম তোমাকে ঘিরে ততটাও ও কি তুমি ছিলে আমার হুর!
নুবা আঁড়চোখে সীমান্ত দিকে তাকিয়ে দোয়া কে উদ্দেশ্য করে বললো, আমি সেই কখন থেকে তোমাকে ডাকছি কোন খেয়ালই ছিলে, হ্যাঁ!

দোয়া সীমান্তের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেঁসে আবারও নুবার দিকে তাকিয়ে বললো, নিজেকে পরিবর্তন করার কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত স্মৃতি মনে পড়ে গেলো আপু।
নুবা একটু করে হাসলো। সীমান্ত তার চোখ মুখ দৃঢ় করে বসে রয়েছে তার আশপাশ পরোয়ানাবিহীন দৃষ্টি এখোনও দোয়ার মুখের দিকে।
দোয়া নুবা কে বললো, সেই একটু ওয়াশরুম যাবে নুবা জানালো সেই ও যাবে কিনা?
তখনি দোয়া জানালো তার প্রয়োজন নেই সেই কিছুক্ষণের মধ্যে আবারও চলে আসবে।

~ আমি কিন্তু এক্কেবারে চিন্তা করিনি অনিক এতো গর্জিয়াস বউ পাবে ও ইশ্বর আপনি একটু বেশী সুন্দরী।
দোয়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে যখনি সামনে যাবে ঠিক তখনি বিত্তবান, মার্জিত চেহেরার একটি লোক এসে বলে উঠলো।
দোয়া তাকে আপাদম্তক দেখে চতুর হাসি দিয়ে বললো, এটা বলার জন্য আপনি মেয়েদের ওয়াশরুমের সামনে বিগত বারো মিনিট থেকে দাঁড়িয়ে আছেন?
লোকটি উচ্চ স্বরে হেঁসে বললো, ওয়াও আমি সত্যি চমকে গেলাম, আপনি তো অত্যন্ত বুদ্ধিমতী।

দোয়া দারুণ করে হেঁসে এক্সকিউজ মী বলে সামনে আগাতে লাগলো
লোকটি অনেক কৌশলে দোয়ার নগ্ন পেটে হাত রাখার আগে লোকটিকে হতবাক করে দিয়ে দোয়া চট করে তার হাত মুচড়ে ধরলো।
লোকটি আহ করে মুখ বিকৃত করে একটি মৃদু চিৎকার করে উঠলো।

দোয়া এক পেশে হেঁসে বললো, বিনয়ী। তার মানে এই নই যে মার্জিত চেহেরার পিছনে ইতর চেহেরার মানুষ চিনবো না।
লোকটি ঝটকা মেরে দোয়ার হাত সরিয়ে হিসহিসিয়ে বললো, তোমার এত্তো বড় সাহস তুমি আমার হাত মুচড়ে ধরেছো এর জন্য আমি তোমার কঠিন হাল করতে পারি সেটা জানা আছে?

দোয়া তার আগের হাসি বজায় রেখে বললো, না জানা নেই। বলুন! সত্যি অনেক আন্তরিকতা হবে।
লোকটি তাচ্ছিল্যে সুরে বললো, এই যে চড়ুই পাখির মত উড়ছো, পাখনা কাটতে আমার সময় বেশী লাগবে না কিন্তু।
দোয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক গলায় বললো, এই বাক্য টা আমিও বলতে পারি, কিন্তু আমি পাখনা কাটবো না আমি আপনার দুই উরুর মাঝে সজোরে একটা লাথি মারবো।
লোকটি যেনো হতভম্ব, হতবুদ্ধি হয়ে গেলো তিনি ভেবেছিলেন মেয়েটি ভয় পেয়ে যাবে, কিন্তু এই ভয় তো মুখ ছুরি’র মত চলে। না তাকে চমকে গেলে হবে না এই মেয়েকে আজকে সেই এক হাত শিক্ষা দিবে।

লোকটি দোয়ার দিকে ঝুঁকে দাঁত কিড়মিড় করে বললো, অনিক কেমন জানা আছে তো!
তার একটা ডিল ক্যান্সেল করার মূল্য হিসেবে তোমাকে যদি একদিনের জন্য বেডে চাই তাহলে ঐ হিড়হিড়িয়ে নিয়ে আসবে তোমাকে।
দোয়া তার জায়গা থেকে এক চুল ও না নড়ে শান্ত গলায় বললো, অনিকের মধ্যে এমন কোন বিশেষত নেই যে তার সাথে সংসার করার জন্য আমি আপনার বেডে চলে যাবো।

তারপর দুই কদম সামনে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে সাপের মত ফোঁস ফোঁস করা লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললো, আপনি চিন্তা করবেন না আমাকে ছোঁয়ার যখন আপনার এতোই শখ তাহলে অনিকে লিঙ্গ পরিবর্তন করে পাঠিয়ে দিবো, তার গায়ে তো আমারই স্পর্শ রয়েছে।
লোকটি দোয়ার দিকে তেড়েফুঁড়ে আসার আগে থমকে গেলো দোয়ার ঠিক পিছনে সীমান্ত দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি ভড়কে গেলো এইবার সত্যি সত্যি।
সীমান্তের চেহেরা হাল দেখে লোকটির যা মনে হলো এখনি তার শরীর থেকে মাথা আলাদা করে নিবে।
লোকটি শুকনো ঢোক গিললো তারপর দ্রুত পিছনে দিয়ে দৌড়ে পালালো। সীমান্ত ছুটে যাওয়ার আগে, দোয়া ঠান্ডা গলায় বললো, আমার আপনার সাথে কথা রয়েছে।

সীমান্ত চট করে দোয়ার দিকে তাকালো, দোয়া সীমান্তের কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ফিসফিস গলায় বললো, আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া বাকী রয়ে গেলো।
সীমান্ত প্রশ্ন চোখে দোয়ার দিকে তাকালো, তার চোখ মুখে কৌতূহলতা।
দোয়া মিষ্টি করে হেঁসে বললো, ধন্যবাদ।
যদি আপনি আমার জীবনে এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে না আসতেন তাহলে জীবন আমার নরম মাটিতে শেষ হতো, মাটিটা এতো টা লোহাতে পরিণত হতো না।


পর্ব ১৪ (অন্তিম)

~ বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল মাঠ। ঘাসের উপরে বিন্দু বিন্দু শিশির। আবছা আঁধার অনেকখানি কেটে গিয়েছে।
মাথায় কানটুপি টা খুলে তাতে একটি রক্ত জবা গুঁজে দিলো দোয়া। সীমান্ত আঁড়চোখে দোয়া হাত খোঁপাতে রক্ত জবাটি সহ ফুলটির এখনকার মালিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো। সীমান্তের চোখ মুখে ছড়িয়ে আছে এক বিষ্ময় মুগ্ধতা।

সীমান্ত যেনো কুয়াশার এই শিশিরের স্নিগ্ধতা সাথে কোমল, এলোকেশী, সুশ্রী, সুদর্শনা এই শ্যামবর্ন চেহেরার মেয়েটির রুপের সাথে অধিকাংশ মিল পেলো।
হঠাৎ নিজ মনে বিড়বিড় করে গাছের উপরে পড়ে থাকা শিশির কে উদ্দেশ্য করে বললো, কি ঈর্ষা হচ্ছে তোমার? তোমার রুপের সাথে পাল্লা দেওয়া রুপ এনে যে হাজির করলাম।

সীমান্তের মনে হলো যেনো শিশির তাকে মৃদু ভেংচি কেটেছে, যার অর্থ সেই জ্বলে, পুড়ে যাচ্ছে ঈর্ষাতে। কিছুখন পর দোয়া
আঁড়চোখে সীমান্তের দিকে তাকালো, তার দৃষ্টি কার্জনের দোতালায়।

দোয়া আলতো হাতে নিজের চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে সীমান্ত কে উদ্দেশ্য করে বললো, শুনুন!
সীমান্ত দোয়ার দিকে ফিরে বললো, বলুন!
দোয়া ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বললো, আমার জন্য একটু কষ্ট করবেন?

সীমান্ত কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, করলাম কষ্ট।
দোয়া তার কানে কাছে চুল গুলো সরিয়ে সীমান্ত কে উদ্দেশ্য করে বললো, আমার ছাড়া চুলে ফুলটা গুঁজেছে নাকি একটু দেখুন তো?
সীমান্ত মুখ টিপে হাসলো, সেই চট করে বুঝে ফেললো দোয়া তার জন্য চুল গুলো ছেড়েছে আর তাকে লক্ষ্য করানোর জন্য এই পরিকল্পনা।
সীমান্ত দুষ্ট কন্ঠে অতি পর্যবেক্ষণ গলায় বললো, খোঁপা অবস্থা মনে হয় বেশী ভালো মত বসেছিলো।

দোয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে দুষ্ট হেঁসে বললো, না আমার মনে হয় চুল ছাড়া অবস্থা বেশী ভালো বসেছে।
সীমান্ত না বোধক মাথা নেড়ে বললো, না যতটা ভেবেছি তার থেকেও বেশী বুদ্ধিমতী।
দোয়া শব্দ করে হাসলো তারপর হঠাৎ কিচমিচ গলায় বললো, সে কি আপনি জুতা পরে ভেজা ঘাসে হাঁটছেন কেন?
সীমান্ত স্বাভাবিক গলায় বললো, হ্যাঁ তাতে কি হয়েছে?
দোয়া জরুরি গলায় বললো, খুলুন, খুলুন আমি তো খুললাম, আমি ভেবেছিলাম আপনি জানেন হাঁটার নিয়ম।

সীমান্ত প্রশ্ন চোখে আশ্চর্য গলায় বললো, ঘাসে হাঁটার ও নিয়ম রয়েছে নাকি!
দোয়া ফিক করে হেঁসে বললো, ঠিক সেটা না।
সব কাজের সৌন্দর্য রয়েছে, তেমনি হাঁটারও।
এই শিশির ভেজা ঘাসে জুতা পরে হাঁটলে ব্যায়ামের সাথে কোন পার্থক্য থাকবে না।

এই ঘাস হলো স্পর্শকাতর প্রকৃতির নরম রুপ, তাই এতো পা ও স্পর্শ করতে হবে আলতো করে।
সীমান্ত নাছোড়বান্দা মত কপাল কুঁচকে ঘাস গুলো কে দেখতে লাগলো।
দোয়া কখনও কারও উপরে নিজের জোরজবরদস্তি প্রযোগ করে না কিন্তু এই সীমান্ত নামক ছেলেটির উপরে তার কেন যেনো নিজের জেদ, অভিমান সব কিছুই প্রয়োগ করতে ইচ্ছে করছে।

তার যেনো ভিতরের থেকে কেউ একজন তাড়া দিয়ে বলছে মাঝে মাঝে কেউ একজন কে নিজের মত করে একটু-আধটু বানিয়ে নেওয়া উচিত নাহলে জীবনের অনেকাংশ স্বাদ যে ফিকা পড়ে রবে।

অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর সীমান্তের পা থেকে জুতা জোড়া খুলতে সক্ষম হয়েছে দোয়া।
তার বাক্যমতে আমি কুয়াশা ভরা সকাল উপভোগ করতে এসেছি, শহীদ মিনারে ফুল দিতে না।
দোয়া সীমান্তের কথা কে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিজের নতুন জিদ্দি রুপের সাথে পরিচিত হলো।

সীমান্ত নিজের কানটুপি খুলে চুল গুলোকে এলেমেলো করে বললো, না! সত্যি! তুমি তো প্রচন্ড জিদ্দি আমি কিন্তু এতোটা আশা করিনি।
দোয়া তাতে হাসলো, দুজনে হাত ধরে এই শিশির ভেজা ঘাসে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুড়ে বেড়ালো।
তাদের সাথে রয়েছে এমন অনেক প্রেমিক যুগল যারা নিজেদের কুয়াশাজড়ানো সকাল উপভোগ করার জন্য প্রেয়সীর হাত ধরে নেমে পড়েছে খালি পায়ে।
~ প্রকৃতিতে ফরসা আলোর ঝলকানি, পূর্বাকাশে উঁকি মারছে সূয্যি মামা। সোনালি রোদে ঝিলমিল করছে শিশিরের জল। তাপহীন রোদে দাঁড়িয়ে শিশিরে অট্টহাসি দেখতে ভালোই লাগছে দোয়ার।

দোয়া সীমান্তের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধতা ভরা গলায় বললো, জানেন এই শিশির ভেজা অনুভূতি আমার প্রথম।
সীমান্ত দোয়ার মনোমুগ্ধকর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, তোমার উৎফুল্ল চেহেরা দেখে বুঝি গিয়েছি।
সীমান্ত বললো, তারা হলের পুকুর ঘাটে কিছু সময় কাটাবে।

দোয়া তৎক্ষনাৎ পরিষ্কার গলায় বললো, না। আলরেডি সাতটা বারো বাজে আমাকে আবার নাস্তাও করতে হবে। চুলন।
সীমান্ত কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, হুরের যা আদেশ।
দোয়া খিলখিল করে হেঁসে দিলো তা নির্বিকার ভঙ্গিতে দেখতে লাগলো সীমান্ত।

সীমান্ত যখন নিজ গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো দোয়া বললো, চলুন নাস্তা করবো এখন কই যাচ্ছেন?
সীমান্ত ভ্রু কুঁচকে বললো, আমি সকালে নাস্তা করিনা আমি এখন গিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিবো।
দোয়া গাল হা করে বললো, আপনি তো বড্ড জাহিলগিরি করেন নিজের ছোট্ট পেটের সাথে। একদিন নাস্তা করলে কিছু হবে না চলুন।
সীমান্ত দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, আচ্ছা চলো তার কেন যেনো ভালোই লাগলো এমন আদুরী আদেশ।

~ তারা মহসিন হলের বাইরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি ক্যাফেটেরিরায় বসলো।
সীমান্ত মুটামুটি অসন্তুষ্ট চেহেরা তে পরোটা ছোট্ট ছোট্ট টুকরো করে খেতে লাগলো, যেনো এই তৈলাক্ত পরোটা তার বড্ড অপছন্দ।
দোয়া আঁড়চোখে তা লক্ষ্য করে বয় কে ডেকে বললো, তেল কমে পরোটা আনার জন্য।

মিনিট দুয়েকের মধ্যে ছেলেটি আরো দুটো পরোটা নিয়ে হাজির হলো।
দোয়া সীমান্ত দিকে ফ্লেট টা এগিয়ে দিয়ে ঐ তৈলাক্ত পরোটা গুলো সরিয়ে নিলো।
সীমান্ত চমকে দোয়ার দিকে তাকালো। দোয়া তার ভাজিতে পরোটা ভিজিয়ে সীমান্ত চমকপ্রদ চেহেরা দিকে তাকিয়ে বললো, আমার মনে হলো আপনি তৈলাক্ত পরোটা খেতে পারেন না।

সীমান্ত কৃতজ্ঞতা ভরা সুন্দর একটি হাসি দিলো, তার প্রতিত্তোরে দোয়া ও মুচকি হাসলো। সত্যি বেশী তৈলাক্ত পরোটা খেলে তার প্রচন্ড পেট ব্যাথা শুরু হয়।
দোয়া খেতে খেতে নিদা, মাহা তার কাজিনদের ব্যাপারে অগুনিত কথা বলতে লাগলো তা চুপটি করে শুনতে লাগলো সীমান্ত তাকে দেখালো ভারী মনোযোগী।
কিন্তু সেই কেন যেনো নিজের মনোযোগ দোয়ার কথাতে স্থির রাখতে পারছে না।
সেই কখনও বা দোয়ার হালকা লিপস্টিক লাগানো ঠোঁট, লেপ্টে যাওয়া কাজলমাখা চোখ, কপালে জামা সাথে মিলালো ছোট্ট সবুজ টিপ, কখনও বা গেজ দাঁতের হাসি বিরতিহীন ভাবে দেখছে।

সীমান্ত বিড়বিড় করে বললো, হুমায়ুন স্যার মিথ্যা বলেন নি, মানুষের সব সৌন্দর্য চোখে, যার চোখ সুন্দর তার সবই সুন্দর।
সীমান্তের মনোযোগ সরলো আগের বয় টি দুকাপ চা হাতে আবারও ফিরে এসেছে।
দোয়া তখন তাকে মিষ্টি বকাতে বললো, এই যে তুমি দেরী করে চা আনলে আমার প্রথম লেকচার মিস গেলে তোমার নাম বলবো।
ছেলেটি হাসতে হাসতে চলে গেলো।

সীমান্ত তার চা শব্দহীন টুকটাক চুমুকে শেষ করে ফেলতে লাগলো, যেনো সেই জিভ পুড়িয়ে যাওয়া কে ভীষন ভয় পাই।
দোয়া তার শেষের পরোটা খেয়ে চা হাতে নিয়ে খেতে লাগলো তখনি বিষ্ময়ে সীমান্তের চোখ যেনো কোটর থেকে বের হতে ধরলো।
দোয়া চা খাচ্ছে পা নাচিয়ে নাচিয়ে পিরিচে ঢেলে সুরুত্ সুরুত্ শব্দ তুলে।

দোয়া সীমান্তের বিষ্ময়মাখা দৃষ্টির তীব্রতা এড়িয়ে বললো, বড্ড গরম ছিলো।
সীমান্ত হতবুদ্ধি চেহেরায় বিনা বাক্যে মাথা দুলালো যার অর্থ ঠিক আছে কোন ব্যাপার না, সেই দেখতে লাগলো একটা মেয়ের অদ্ভুত চা খাওয়ার ভঙ্গিমা।
~ এইভাবে চলতে লাগলো তাদের পথচলা প্রতি সকালে তারা শিশির ভেজা শীত উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়তো কখনও বেইলী রোড, কখনও বা ধানমন্ডি লেক।
নাস্তা করা বাঁধে তাকে কখনও গাড়িতে উঠতো দিতো না দোয়া।

সন্ধ্যার আচ্ছন্নে তে দুজনের গল্পের আসর যেনো শেষ হতো না।
দোয়াকে উপলব্ধি করে সীমান্তের গান করা তার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্তে কে উদ্দেশ্য করে তীব্র অনুভূতির কথা লেখা, না চাইতেও দোয়া যেনো কঠিন ভাবে সীমান্ত নামক ছেলেটির প্রেমের বেড়াজালে আটকাতে লাগলো।

এটি তাদের অঘোষিত বন্ধুত্ব ছিলো নাকি প্রেম ছিলো তা দোয়ার জানা ছিলো না।
কিন্তু তার ছোট্ট মনটি তাকে মাঝে মাঝে বলতো এটির প্রেম নামক ভালোবাসার এক স্বর্গীয় অনুভূতি।

তার বান্ধবীরা মজার ঝুড়িতে বলতো প্রেম তো দোয়ার মাখামাখি অবস্থা। কিন্তু দোয়া এর সর্ত্যতা জানতো না শুধু এতোটুকু সেই জানতো এই মানুষটিকে সকাল বিকাল নিয়ম করে না দেখলে তার জীবনে বিষাদ সেই গুনে শেষ করতে পারবে না। এতো বাক্য আদানপ্রদানের পরে দোয়া বলতে ইচ্ছে করে আরো একটু থাকো, এখনও অনেক কথা বলার বাকী।
সীমান্ত সাথে রিকশা অলিতেগলিতে ঘুরে-বেড়ানো ফুসকা খাওয়া, শাড়ি পরে বই মেলায় চক্কর কাটা যেনো জীবনের সর্বোচ্চ সুখ দোয়ার শিরা-উপশিরায় বিনা দ্বিধায় ঘুরপাক খেতে লাগলো সীমান্তের আগমনে।

তার সবচাইতে আনন্দদায়ক লাগতো ঐ মুহুর্তে যখন সীমান্ত তার পছন্দের বেলী ফুলের মালা নিয়ে আসতো। সকালে শিশির ভেজা যেকোন ফুল ফেলে তা গুঁজে কানে আর বিকালে নিয়ে আসতো বেলী ফুলের ছোট্ট লতা, যা হাতে পেঁচিয়ে রাখতো দোয়া। আর যে জীবনে কিছুই চাওয়ার নেই দোয়ার।
~ আজ অনেক দিন পর নিদা নারায়ণগঞ্জ এসেছে কারন মূলত সেমিস্টারে ব্রেক বলে। আজ সাতদিনযাবত দোয়া নারায়ণগঞ্জ রয়েছে তারও সপ্তাহ খানিক আগে সেমিস্টারে ব্রেক পড়লো।

দোয়া মন খারাপ গলায় বললো, মাহা টা যে কবে সিলেট থেকে আসবে ভালোই মনে পড়ছে ওকে।
নিদা বললো, আরো কিছুদিন নাকি থাকবে ওর ফুপু আসতে দিচ্ছে না।
নিদা হঠাৎ শান্ত গলায় বললো, বাবা বার বার মতামত জানতে চাচ্ছে রে মাদু।
দোয়া স্বাভাবিক গলায় বললো, বল তুই এই বিয়ে করবি না আর এই অপদার্থ কে তো মোটেও না।
নিদা হেঁসে উঠে বললো, তুই এখনও ওকে একি নামে ডাকিস?

দোয়া মৃদু ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, অপদার্থ কে অপদার্থ বলবো না তো পদার্থ বলবো!
নিদা মৃদু মুখ বাঁকিয়ে আদুরী গলায় বললো, ধ্যাঁত! এতোই খারাপ না সেই।
দোয়া হাই হাই করে বললো, ওরে মোর আল্লাহ! একদিন সাক্ষাৎ করাতে আমাদের নিদা আবারও ফিদা!
নিদা শব্দ করে মুখ চেপে হেঁসে দিলো।
দোয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, কিন্তু যাই বলিস মানতে হবে ব্যাটা বহুত গাধা। শালা কত বার আড়াল প্রমান করলাম তার গার্লফ্রেন্ড একটা ছ্যাচঁড়া তাও বিশ্বাস করলো না!

নিদা হেঁসে উঠে বললো, জানিস কাইল্লা আগ থেকে অনেক বেশী সুন্দর হয়েছে ভালোই লাগে আরো।
দোয়া হাসতে হাসতে কুটিকুটি হলো তারপর ঠাট্টা সুরে বললো, আবারও প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি।
দোয়া বিড়বিড় করে গান ধরলো প্রেমে মরা জলে ডুবে না।

নিদা হাক তুলে বললো, এই না না মোটেও না, আমি উনাকে মোটেও বিয়ে করবো না, তার প্রতি আমার আর কোন ভালো লাগা ভালোবাসা নেই।
দোয়া শান্ত গলায় বললো, জানিস নিদা ভালোবাসার মাঝে এক অদ্ভুত মায়া আছে, কষ্ট পেলেও ছাড়া যাই না মন ভেঙে গেলেও ঘৃনা করা যাইনা। তাই তো কষ্ট পেয়েও ভাঙা মন নিয়ে মানুষ ভালোবাসে এবং ভালোবাসবে।
নিদা ঠাট্টা সুরে বললো, বাব্বাহ! আমাদের মাদু দেখি ভালোবাসার প্রকারভেদ ও বুঝে গেছে।

দোয়া লাজুক হেঁসে বললো, জানিস তো ঐ সীমান্ত টেনে হিঁচড়ে তার প্রেমে আমাকে ফেললোই ফেললো।
নিদা তার জামার ওরনা পেঁচাতে পেঁচাতে বললো, এখন কি বলবো বাবা কে কাল?
দোয়া বুঝ দেওয়ার ভঙ্গি করে বললো, শুন মানুষ টা আগ থেকে তোর পছন্দের মানুষ ছিলো। উপরে আল্লাহ যখন আরো একটা চান্স দিয়েছে তাকে পাওয়ার তাহলে অমত করিস না ঝুলে পড়।

নিদা প্রশ্ন গলায় বললো, উনার গার্লফ্রেন্ড ছিলো মাদু, তখন আমাকে সেই পাত্তা ও দিতো কিন্তু এখন নেই তো আমার কাছে ফিরত আসতে চাই।
দোয়া মিষ্টি করে হেঁসে বললো, এটা তো তোর খুশি হওয়ার কথা উনার গার্লফ্রেন্ড থাকা সর্তে তোর সাথে সম্পর্কে গেলে সেটা চিটিংবাজি হতো। বাট সেই তার সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর তোর সাথে সম্পর্কে যেতে চাই তাও চটজলদি কবুল চটজলদি বিয়ে।

নিদা লজ্জাকাতর গলায় বললো, ইশ বড্ড বেয়াদব হয়েছিস, আমার বুঝি লজ্জা করে না!
দোয়া হাসলো তারপর বললো, তাও একটু সময় নেই। দেখা কর কথা বল, ঘুরাঘুরি কর, দেখ মানুষ টাকে বুঝে উঠতে পারিস কিনা।
নিদা বললো, বাবা তো কালকে উত্তর জানতে যাচ্ছে।

দোয়া ঠোঁট উলটিয়ে বললো, তো! হ্যাঁ বলে দে। আংকেল তো বললো,ই বিয়ে আরো তিন বছর পর, আদনান ভাইয়া ও তো পড়া শেষ করতে এক বছর সময় রয়েছে।
নিদা দোয়ার হাত চেপে ধরে বললো, এতোদিন আমার সেমিস্টারে জন্য দেখা হয়নি পরশু আবির (হোলি) উৎসবে বলেছে দেখা করবে, আমি কি বলবো তখন?
দোয়া নিদার গাল টেনে বললো, আমার বুদ্ধিমতী বোনের এই প্রেমে পড়ে কি বোকা হাল হলো রে।
নিদা নিচের দিকে তাকিয়ে হাসলো সুন্দর করে। দোয়া তাকিয়ে রইলো নিদার দিকে। নিদা অত্যন্ত সুন্দরী, যেনো উপর আল্লাহ রুপ তাকে নিজ হাতে মনের মতো দিয়েছে। কিন্তু এতো রুপবতী হয়েও তার কোন অহংকার বিদ্যমান নেই।
দোয়া বললো, সময় চাইবি।

নিদা বললো, হ্যাঁ আমিও ঠিক করেছিলাম পরের বার এটাই বলবো।
দোয়া হাসলো তারপর সেই হাত বারিয়ে ঘুমানোর জন্য তার বালিশ ঠিক করতে লাগলো।

~ নিদা নরম গলায় বললো, তুই সত্যি কঠিন প্রেমে পড়ে গেছিস মাদু, কি যে বুঝদার হয়ে গেলি।
দোয়া নিদার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বললো, খালি এই ব্যাটা সীমান্ত বুঝে না।
নিদা প্রশ্ন গলায় বললো, তুই ভালো মত খবর নিয়েছিস উনার গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি?
দোয়া বললো, হ্যাঁ। আপাতত নেই।

নিদা অবাক গলায় বললো, তার মানে ছিলো!
দোয়া মাথা দুলিয়ে বললো, উনি নিজ থেকে বলেছে উনার দশম শ্রেণিতে একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো, মেয়েটি তার বন্ধুর বোন ছিলো। উনত্রিশ দিন পর জানতে পারে মেয়েটির আরো একটি বয়ফ্রেন্ড রয়েছে।

নিদা চমকে উঠে বললো, সে কি! কিন্তু তাহলে মেয়ে রিলেশন কেন করলো?
দোয়া ছোট্ট নিঃশ্বাস নিয়ে বললো, উনি যাতে পড়ালেখা থেকে একটু সরে যাই আর মেয়েটির ভাই প্রথম স্থান লাভ করতে পারে।
নিদা কিছু না বুঝে বললো, আরে বুঝিয়ে বল আমি নিজেকে এখন মাহার
জায়গায় দেখছি কিছুই বুঝতাছি না।

সীমান্ত ভাইয়া স্কুলে সব সময় প্রথম স্থান লাভ করতো আর মেয়েটির ভাই দ্বিতীয়। কিন্তু দুজনে বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। দ্বিতীয় হওয়ার জন্য মেয়েটির ভাই কে প্রচন্ড মার খেতে হতো পরিবারের কাছে।

মেয়েটি তাতে প্ল্যান করলো সীমান্ত ভাইয়া কে প্রেমে জালে ফাঁসাবে যাতে সেই পড়ালেখা থেকে সরিয়ে আনতে পারে, তাই সেই নিজেই প্রপোজ করেছিলো দোয়া এক নাগারে বললো,
নিদা হতবুদ্ধি গলায় বললো, ছিঃ! কি সাংঘাতিক নোংরা মেয়েলোক।

দোয়া হতাশ ভঙ্গিতে বললো, এই মেয়ে জন্য উনি আজ পর্যন্ত প্রেম করেনি কারণ সেই মেয়েটিকে এখনও ভুলতেও পারে নি।
নিদা ঠোঁট উলটিয়ে বললো, ব্যাটা রাম ছাগল নাকি? এই নোংরা মেয়ের জন্য নিজের অনুভূতি কে কষ্ট দেওয়ার মানে কি?
দোয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, মেয়েটা তার সাথে সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর আরো তিনজনের সাথে সম্পর্কে গিয়েছে।
তারপর পারিবারিক ভাবে বিয়ে করে বসলো, আজ তিন বছর হলো তার সংসার এমনকি একটা মেয়ে বাচ্চা ও রয়েছে।
নিদা আকাশ থেকে পড়ে বললো, মানে কী! এতো গুলো প্রেম করে সেই শেষ পর্যন্ত পারিবারিক ভাবে বিয়ে করলো?

দোয়া মাথা নেড়ে বললো, হ্যাঁ। তুই জানিস কিছুদিন আগে আমি আর সীমান্ত ভাইয়া তার প্রাক্তন প্রেমিকার জন্য আর তার বাচ্চার জন্য শপিং করেছিলাম।
নিদা তেতে উঠে দোয়ার মাথায় খাট্টা মেরে বললো, গাধীর গাধী তুই উনাকে ভালোবাসিস আর তুই কিনা উনার প্রাক্তনের বাচ্চাকাচ্চার জন্য শপিং করছিস!
দোয়া ঠোঁট উলটিয়ে বললো, তো কি হয়েছে, আমি আবদার করেছিলো পছন্দ করে দেওয়ার জন্য।
নিদা নিজ মাথায় চাপড় মেরে বললো, তুই কি পাগল! তোর হিংসে হয়না? উনি আজ ছয় বছর তার প্রাক্তনের জন্য পাগলামি করে বেড়াচ্ছে সব জেনেও তুই শপিং করছিস।

দোয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, হিংসের কি হলো, মানুষ টা তো আর উনার কাছে ফিরত আসছে না। উনার সব কথা শুনার পর আমি তো উনার প্রেমে আরো এক ধাপ পড়েছি।
নিদা আক্কেলগুড়ুম গলায় বললো, কেন! এখানে প্রেমে পড়ার কি হলো?

দোয়া লাজুক হেঁসে বললো, মানুষ টা কঠিন ভাবে ভালোবাসতে জানে। তা নাহলে কি একটা মানুষ তাকে ধোঁকা দেওয়ার পরেও তার সম্পর্কের সময় করা ওয়াদা গুলো পূরণ করতো নাকি!
নিদা ঠাস করে বালিশে শুয়ে পড়ে বললো, তুই একটা জিনিস রে বোন আমার সাথে কাইল্লা যদি এই কাম করতো ইট মেরে মাথা ফুটো করে দিতাম।
দোয়া হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।

নিদা বললো, আমার তো এখন তোর সীমান্ত ভাইয়ার সামনে বসে উনাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে সিগারেটের সাথে নিয়ম করে বেহায়ামির ঔষধ খাই নাকি।
দোয়া নিদা চুল টেনে মন খারাপ সুরে বললো, বেচারা কে এইভাবে বলিস না।

আমার উনাকে ভীষণ মনে পড়ছে রে আজ সাতদিন হলো দেখা নেই।
নিদা ঠাট্টা সুরে বললো, ভিডিও কলে তো ফুসুরফুসুর ঠিকই করো আর কি!
দোয়া নিদা কে পা দিয়ে লাথি উপহার দিয়ে বললো, উনার হাতটা তো আর আলতো করে স্পর্শ করতে পাচ্ছি না। তুমি এখন বুঝবা না, সময় আসবে।

নিদা অশ্লীল রসকিতা সুরে বললো, কয়েকদিন পর বলবি আমার ঠোঁট ফেটে চৌচির হয়ে গেছে তার ঠোঁট টা আলতো করে স্পর্শ করতে পাচ্ছি না বলে।
দোয়া নিদা কে এলোপাতাড়ি বালিশ মারতে লাগলো দুজনের হাসির শব্দ মুখরিত হতে লাগলো দোয়াদের ছোট্ট এই দোতালা বাড়ি।
~ নিদা ঘুমিয়ে গেলো কিন্তু দোয়া জেগে রইলো প্রচন্ড ক্লান্ত শরীর নিয়ে। নিদা ঘুম জড়ানো গলায় বললো, ঘুমা মাদু হয়তো উনিও ঘুমিয়ে পড়েছে।
দোয়া ছোট্ট করে হেঁসে বললো, ফোন বাজলে মা শুনে ফেলবে, তাই সাইলেন্ট করে রাখা ঘুমিয়ে গেলে তো কল আসলে বুঝবই না।

নিদা কাত হয়ে অন্য পাশে শুয়ে গেলো, কিছুখনের মধ্যে তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে গেলো হয়তো গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছে।
কিন্তু দোয়া নিরন্তর অপেক্ষায় রয়েছে সীমান্ত নামক ছেলেটির জন্য। বাইরে উত্তাল পাতাল বাতাস হচ্ছে বড় বড় গাছ গুলো এদিক ওদিক ঝাপ্টা দিচ্ছে।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে দোয়া হঠাৎ সেই ফিসফিস করে বললো, খুব ক্লান্ত হওয়ার পরও তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে সীমান্ত ভাইয়া।
প্রচন্ড ঘুম পেলেও তোমার ফোন আসার অপেক্ষায় রাত জাগতে ভালো লাগে আমার মারাত্মক ভালো লাগে।

সেইদিন রাতের অর্ধেক প্রহরে দোয়ার ঘুম পাখি এসে তীব্র ভাবে যখন ছুটাছুটি করছে ঠিক তখনি সীমান্তের কল এলো।
অন্ধকার রুমে এই গহীন রাতে দোয়ার হাসিজ্জ্যেল আনন্দের মুখ হয়তো কেউ পরিমাপ করেও উঠতে পারতো না তখন।
তার ভালো লাগার মানুষ তার প্রতি ভালো লাগার অনুভূতি ব্যয় করছে, তাতে যেনো দোয়ার পৃথিবীতে হাজারো ফুলের বাগান হলো।

তার মনে হলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ আনন্দ নিজ হাতে যেচে এলো তার দুয়ারে। সারারাত সীমান্ত আর দোয়ার গল্পের আসরে রাত কেটে গেলো।
সীমান্ত কৈফিয়ত হিসেবে কখনও বলে না সেই কোন এতো দেরী করে কল দিলো, আশ্চর্য ব্যাপার হলো দোয়া নিজেও কখনও তার থেকে কৈফিয়ত চাইনি।
বন্ধুত্ব ও না প্রেমিক / প্রেমিকা ও না। এর মাঝামাঝি সম্পর্ক গুলো সত্যি বাজে। কোন আশা রাখা যায়না, কোন অভিযোগ করা যাই না শুধু একতরফা অভিমানের পাল্লা ভারী করা যাই।

দোয়া নিজ থেকেও কখনও সীমান্ত কে ফোন দিয়ে বিরক্ত করে না।
ভালো লাগে তার অপেক্ষা করতে, তার বিশ্বাস একটুখানি সময় পেয়ে মানুষটা ঠিকই তাকে মনে করে বলবে ইশ আমার হুর টা অপেক্ষা করছে একটুকরো কল তো দেওয়া যাই।

পরের দিন চব্বিশ ঘণ্টা সীমান্তের ফোন বা মেসেজ কিছু ই এলো না। সেই আবারও পূনরায় নিজেকে লাপাত্তা ঘোষণা করলো।
কিন্তু দোয়া ছোট্ট ছোট্ট মেসেজ বার্তা ঠিকই তার ইনবক্সে পাঠিয়ে ভর্তি করে ফেললো।
নিদা আশ্বাস ভরা গলায় বললো, সেই হয়তো ব্যস্ত তুই মন খারাপ করিস না।

দোয়া তাতে মিষ্টি করে হাসতো কিন্তু পরক্ষণেই সেই আঁড়চোখে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে থাকতো।
সেইদিন তিনটা নাগাদ দোয়া আর নিদা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে চলে গেলো, অন্য ধর্মের উৎসব হলেও ক্যাম্পাসের এই উৎসবমুখর সৌন্দর্য সেই একদমই উপেক্ষা করতে চাইনা।
~ পরের দিন সকালে আটটা সময় দোয়ার রুমে একটি বেনামি বক্স এলো, এটি দিয়ে গিয়েছে গেটের দারোয়ান মি. আফজাল। বক্সটির উপরে ছোট্ট করে লিখা ছিলো হুর।

দোয়া যেনো খুশিতে দম বন্ধ হয়ে গেলো। সেই এলোপাতাড়ি নাচতে লাগলো, তার সাথে যোগ দিলো রশ্মি।
রুমে তখন ছিলো জুমুর আর অরিন নামে দুটো সিনিয়র মেয়ে, একজন বই হাতে বসে আছে আরেকজন তার প্রেমিক পুরুষের সাথে কথা বলছে
অরিন খুবই মিশুক প্রকৃতির মেয়ে, সেই সবসময় মুখে হাসির রেখা টেনে রাখে, সেই পড়ে ফার্মেসি তে তয় বর্ষে।
আর জুমুর হলো অত্যন্ত দুষ্ট প্রকৃতির মেয়ে। সেই প্রচন্ড চাপাবাজ, কূটনীতি চিন্তা ভাবনা আর বড় মাপের হিংসুটে। তার আরো একটি বিশেষ গুন রয়েছে সেই একজন কথা আরেকজনের কাছে জগাখিচুড়ি করে পাচার করতে প্রচুর ভালোবাসে।

অরিন দোয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে। তার ভালোই লাগে এই প্রান খোলা হাসিখুশি মেয়ে দুটো কে সেই উৎসাহ গলায় বললো, খুলো, খুলো জলদি খুলো।
রশ্মি মৃদু চিৎকার বললো, আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলছি সেই তোকে প্রপোজালে পাঠিয়েছে, এই আংটি হবে আংটি।
দোয়া ভারী নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। সেই তার হরিণ টানা বড় বড় চোখ গুলো কে ঝাপ্টা মেরে রশ্মির দিকে তাকিয়ে রইলো।
কথাটি শুনে জুমুর নামক মেয়েটিও উঠে এলো।

রশ্মি চটজলদি দোয়ার হাত থেকে বক্সটি নিয়ে খুলতে লাগলো তাতে ছোট্ট একটি চিরকুট।
দোয়া বিষ্ময় চোখে রশ্মি সহ অরিন আর জুমুরের দিকেও তাকালো। তার হাতপা কাঁপছে কপালে আর নাকে ডগায় জমে গেছে বিন্দু বিন্দু লোভনীয় ঘাম।
রশ্মি টান দিয়ে চিরকুট টা খুলে ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, ইশ কি নিরামিষ রে, এতো চিৎকার আর উৎসব বৃথা।
তাতে লিখা ছিলো।
সময় দশটা, স্থান চারুকলা।

রশ্মি চিরকুট জুমুরের হাতে দিয়ে বেডে বসে বললো, ছিঃ! ব্যাটা চারুকলাতে দাওয়াত করছে আমি তো ভেবেছিলাম আংটি বা প্রপোজালে হবে।
অরিন উঠে এলো সেই দোয়ার আদুরে বিষ্ময় মুখখানা কে টেনে দিয়ে বললো, ডেটে ডেকেছে এটা বরাবরই প্রপোজের মত, একদমই তার হুরপরী সেজে যাবা।
দোয়া লাজুকলতা হয়ে হেঁসে বললো, আপু! তুমিও!
অরিন হাসতে হাসতে তার বেডে চলে গেলো সাথে জুমুর ও এখন তার প্রথম কাজ হবে রসিয়ে রসিয়ে নিজের বয়ফ্রেন্ড এই কাহিনী বলা।
দোয়া চিরকুট টি তার বুকে নিয়ে দড়াম করে তার বেডে পড়লো। তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা সুখময় পানি। মানুষ টা ঠিক আছে তাতে মাত্রাতিরিক্ত খুশি সেই আর যে উপরের আশা তার নেই।

~ রঙ ছিটিয়ে, বন্ধু-বান্ধবী ও সহপাঠীদের গায়ে-মুখে রঙ মেখে আবির উৎসবে (হোলি) মেতেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাতে শিক্ষার্থীরা।
চারুকলার বকুলতলায় এ উৎসব শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা সহ বহিরাগত ছেলেমেয়েরা ঢাকঢোলের তালে র্যালি বের করেন।
বরাবরের মতো এ বছরও দোল উৎসবের মূল আয়োজন হয় ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে।

দোয়া তার সুন্দর সাদা ড্রেসটি পরে চারুকলা তে যখন এলো তখন বেলা দশটা পঁচিশ।
সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব হোলি খেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, বন্ধু-বান্ধবী, বড় ভাই-ছোট ভাই, পরিচিত সকলে একে অপরকে নানা রঙে রঙিন করে দিচ্ছে।

তরুণ-তরুণীদের রঙ মাখামাখির আনন্দে মুখর হলো যেনো চারুকলা। রঙের কারণে কারও চেহেরা স্পষ্ট দেখাও যাচ্ছে না।
দোয়া দাঁড়িয়ে চারিদিকে নজর বুলালো। সেই খুবই সাবধানতার সাথে দাঁড়িয়ে আছে যাতে কেউ ছুটে এসে রঙ না মাখিয়ে দেই।
না কোথাও নেই এই ছেলে, আধ ঘন্টা এদিক ওদিক আড়ালে গিয়ে সীমান্তের ছায়ার খোঁজ ও না পেয়ে দোয়া অগত্যা তাকে কল করলো।
কিন্তু কয়েকবার কল বেজে কাটা গেলো। দোয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না ছেলে মেয়েরা ভ্যাঁং গেয়ে মুটামুটি নোংরা অবস্থা মাখামাখি করছে।

~ দোয়া দুই কদম চলে যাওয়ার উদ্দেশ্য বের হওয়ার আগে একটি রঙ মাখা চিকন পাতলা গড়নের মেয়ে এসে বললো, তুমি মাদুয়া না?
দোয়া সুন্দর করে হেঁসে বললো, জ্বী আপু।

মেয়েটি চমৎকার করে হেঁসে বললো, আমি সীমান্তের ক্লাসমেট ও তোমাকে আমার সাথে কিছুখন অপেক্ষা করতে বলেছে।
দোয়া সুন্দর করে হেঁসে বললো, কিন্তু উনি কই আছে আমি অনেকক্ষন যাবত অপেক্ষা করছি আপু।
মেয়েটি বললো, আরো কিছুখন অপেক্ষা করো আপু ঐ বললো, তোমাকে আমার সাথে দোতলায় ভাষ্কর্য ডিপার্টমেন্টে বসতে।
দোয়া ছোট্ট করে বললো, ঠিক আছে।

দোতলায় একদমই শেষের কর্নার রুম টি হলো ভাষ্কর্য ডিপার্টমেন্ট রুম। পুরো ক্লাস রুম ফাঁকা, নিরবতা যেনো সুঁই দিচ্ছে গায়ে।
নিচে গান বাজনা, নেচে-গেয়ে হৈ হুল্লোড় মেতে উঠেছে সবাই।

নিচে রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দোয়ার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে যেনো, এই ছেলে আসলে আজ আচ্ছা করে বকে দিবে তাকে।
দোয়া কিছু বলার আগে মেয়েটি বললো, তোমার হয়তো পানি খেতে মন চাচ্ছে অনেকখন তো দাঁড়িয়ে ছিলে রোদে।
দোয়া হালকা করে হেঁসে ক্লান্ত গলায় বললো, সত্যি আপু আমার ভীষণ পানি পিপাসা পেয়েছে।

মেয়েটি দোয়া কে ছোট্ট একটি পানির বোতল এনে দিলো দোয়া বিনা বাক্য তা গটগট করে খেয়ে নিলো। ঠিক তখনি দোয়ার ফোনে রশ্মির কল এলো, দোয়া ফোন কানে নেওয়ার সাথে সাথে মেয়েটি বললো, সেই কিছু খনের মধ্যে চলে আসবে একটু কাজ পড়েছে নিচে।
দোয়া জানালো কোন সমস্যা নেই সেই তার বান্ধবী সাথে কথা বলছে, ততখনে তিনি নিজের কাজ করতে পারে।
রশ্মি গলা ছড়িয়ে বললো, তোকে না বললাম সীমান্ত কে পেলে আমাকে একটা কল দিবি?

দোয়া উদাস গলায় বললো, তাকে পেলাম কই বল!
দোয়া রশ্মি কে এক এক করে এখানে আসা পর্যন্ত সব কাহিনী বললো,
রশ্মি বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো, ব্যাটা কি নকশা করে, তোকে এতো আয়োজন করে ডেকে নিয়ে কই হাওয়া হলো?

দোয়া ঠোঁট উলটিয়ে বললো, কি যে এতো ভীড় আমার তো গায়ে কাটা দিয়ে দিয়েছে ভয়ে, ভাগ্যিস দোতালায় ভাষ্কর্য ডিপার্টমেন্ট এসে বসে আছি।
রশ্মি বললো, আমি হলের সিঁড়িতে আছি, তুই তাহলে বস আমিও আসতাছি ঐখান থেকে বের হবি না আমি শুনেছি ছেলেমেয়েরা মদ, ভ্যাঁং খেয়ে হুলুস্থুল অবস্থা।
~ রশ্মি ফোন কেটে, গেটে এসে দেখলো সীমান্ত তার গাড়ি থেকে নামছে পরনে তার হলুদ পাঞ্জাবি হাতে রয়েছে নিয়ম করে আনা বেলী ফুলের মালা।
রশ্মি সীমান্ত কে আপাদমস্তক দেখে বিড়বিড় করে বললো, মাদু তোর সীমান্ত তো আমার দিল কেড়ে নিলো, কি ভয়ানক লাগছে এই হ্যাংলা ছেলেটাকে।
সীমান্ত তার চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে রশ্মি কে উদ্দেশ্য করে সুন্দর করে হেঁসে বললো, হ্যালো! দোয়া কই? রুমে!
রশ্মি কপাল কুঁচকে বললো, রুমে কেন হবে ও তো আপনি যেখানে থাকতে বলেছেন ঐখানে আছে।

সীমান্ত রশ্মি থেকে দিগুণ কপাল কুঁচকে বললো, মানে! আমি কই থাকতে বললাম? আর ওর সাথে তো বিগত দেড়দিন আমার কথায় হয়না।
রশ্মি সীমান্তের কথা কোন প্রেক্ষি না বুঝে বললো, আরে আপনি তো একটু আগে একটা চিরকুট দিয়ে ওকে চারুকলা তে ডাকলেন।
সীমান্ত প্রায় দিশেহারা হয়ে বললো, নো! এমন মোটেও না আমি তো মাত্র ওর সাথে দেখা করতে এলাম আমি কোন চিরকুট ওর জন্য কারও হাতে দিই নেই।
রশ্মি যেনো পায়ের তালু থেকে রগ এক মৃদু টান দিলো সেই শুকনো ঢোগ গিলে ভয়াতুর গলায় বললো, কি বলছেন কি আপনি?
সীমান্ত অবাক গলায় বললো, সিরিয়াসলি! আমি যা বলছি সত্যি বলছি।

রশ্মি সীমান্ত কে কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গি করে বললো, সেই বক্সে হুর লেখা ছিলো। আমরা ভেবেছিলাম আপনি। তাই তো দোয়া চলে গিয়েছে।
এমনকি ঐ একটু আগে আমাকে ফোন দিয়ে বললো, আপনার একটা মেয়ে বান্ধবী ওকে ভাষ্কর্য ডিপার্টমেন্ট বসিয়ে রেখেছে। মেয়েটি বললো, আপনি নাকি ওকে সেইখানে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন।

সীমান্ত যেনো এক বৈদ্যুতিক শক খেলো, সেই তার মাথার চুল গুলো টেনে ধরে কি যেনো ভেবে মৃদু চিৎকার বললো, শিট!

লেখা – ফারু ইসলাম (ফারহানা)

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “অসময়ে – valobashar romantic premer golpo bangla” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – অসময়ে (১ম খণ্ড) – valobashar romantic premer golpo bangla

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *