সমবয়সী বউ – সুন্দর প্রেমের গল্প: আমাদের সমাজে একটা কমন সমস্যা আছে আর তা হলো সমবয়সী প্রেম বা বিয়ে। এটা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। চলুন এরকম একটি মিষ্টি আর কষ্টে ভরা ভালোবাসার গল্প পড়ি।
পর্ব ১ – বেকার ছেলের প্রেম
শিপ্রাঃ চলো যাওয়া যাক?
আমিঃ হুম চলো।
শিপ্রাঃ আজকে আমরা বাইকে যাবোনা।
আমিঃ তাহলে কিসে যাবো?
শিপ্রাঃ রিকশাতে যাবো দুজনে।
আমিঃ ওকে চলো।
আরে কি ভাবছেন পার্কে অথবা বেড়াইতে যাচ্ছি? না আমরা যাচ্ছি কলেজে। আমি চয়ন সমাদ্দার। আর শিপ্রা আমার একমাত্র বউ। আমরা দুজনে অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি। আমাদের বিয়েটা হয়েছিল অল্প বয়সেই। ঘটনাটা আপনাদের খুলেই বলি।
আমি ছোট থেকেই মামা বাড়িতে থাকতাম। ওখানেই আমার শৈশব কেটেছে। পড়লেখা করেছি মাধ্যমিক পর্যন্ত ওখানে। তারপর যখন পরীক্ষা শেষে অবসব সময় কাটাচ্ছিলাম। ভাবলাম বাড়িতে যাবো। কিন্তু ওখানে কেউ চেনা পরিচিত না থাকায় যেতে ইচ্ছা করতো না। আমাদের বাসা ঝিনাইদহ জেলার কালীগজ্ঞ থানাতে।
হঠাৎ বাড়ি থেকে ফোন আসলো।
মাঃ চয়ন বাবা কেমন আছিস?
আমিঃ হ্যা মা ভালোই আছি তুমি?
মাঃ হুম বাবা ভালো। বাবা তোর তো এখন পড়াশোনার ঝামেলা নেই?
আমিঃ না মা কেনো?
মাঃ বাবা তুই কালই বাড়িতে চলে আয়।
আমিঃ কেনো? কোনো সমস্যা?
মাঃ তোর বাবা ব্যবসার কাজে 5বছরের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছে। আমি একা হয়ে যাবো তাই তুই চলে আসলে ভালো হতো।
আমিঃ আচ্ছা মা দেখি কি করা যায়।
মাঃ আচ্ছা বাবা। এখন রাখছি।
আমিঃ আচ্ছা।
কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। যেখানে বড় হয়েছি।
যেখানে আমার শৈশবের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। শৈশবের বন্ধুবান্ধব ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো না। তারপরও সিন্ধান্ত নিলাম বাড়ি ফিরে যাবো।
পরেরদিন….
স্টেশনে দাড়িয়ে আছি ট্রেনের অপেক্ষায়। আমি একানা অন্তত আরও 20জন। ওরা সবাই আমার বন্ধু। সবার চোখেই জল। আসলে বন্ধুত্ব যদি খুব গাড়ো হয়। তাহলে সেই বন্ধুদের ছেড়ে থাকার শিপ্রা ভাবতেও কষ্ট লাগে।
অপেক্ষার সমাপ্তি টেনে ট্রেন আসলো। সবাইকে বিদায় দিয়ে ট্রেনে উঠলাম। অনেকটা পথ আসার পর ঘটলো একটা বিপত্তি। আমার পাশে একটা মেয়ে এসে বসলো। মেয়েদের প্রতি আমার একটা এলার্জি আছে। কারন এরা সুবিধার না। তারপর যখন আবার ট্রেন ছাড়লো তখন মেয়েটা আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়লো আবার আমার কাধে মাথা দিয়ে। কেমন যেনো লাগছে। দুই তিনবার ডাক দিলাম উঠলোনা। অনেকক্ষনথাকার পর আর সহ্য করতে পারলাম না। দিলাম ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে।
আমিঃ এই যে আপু সমস্যা কি?
মেয়েটাঃ না কোনো সমস্য নাই।
আমিঃ তাহলে কাধে মাথা রাখেন কেন? সরকারি জায়গা পাইছেন নাকি?
মেয়েটাঃ একটা মেয়ের সাথে কিভাবে শিপ্রা বলতে হয় জানেন না।
আমিঃ জানিনা। সরে বসুন কাধে যেনো আর মাথা রাখতে না দেখি।
মেয়েটাঃ এমনভাবে শিপ্রা বলছেন যেন ছ্যাকা খাইছেন। সেজন্য মেয়েদের সহ্য করতে পারেন না।
আমিঃ ও হ্যালো। দাড়ি কমা দিয়ে শিপ্রা বলেন।
ছ্যাকা খাইতে যাবো কোন দুঃ খে?
মেয়েটাঃ তা আপনিই জানেন। যাইহোক পরিচিত হতে পারি?
আমিঃ না পারিনা।
মেয়েটাঃ কেনো পারেননা?
আমিঃ দেখেন অত শিপ্রা বলতে পারবোনা। চেনা নাই জানা নাই আসছে পরিচিত হইতে।
মেয়েটাঃ চেনা জানার জন্যইতো পরিচিত হতে চাইছি।
আমিঃ পরিচিত হতে পারি। তবে একটা শর্তে।
মেয়েটাঃ কি শর্ত?
আমিঃ এই যে আমার পাশ থেকে সরে বসবেন। আর পরিচিত হওয়ার পর চুপ থাকবেন। রাজি?
আমিঃ হুম রাজি।
মেয়েটাঃ আমি শিপ্রা। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি এবার।
আমিঃ আমি চয়ন। আমিও মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি এবার।
শিপ্রাঃ ওহ তাহলে তো আমরা সমবয়সী।
আমিঃ হুম এবার চুপ থাকেন আর সরে বসুন ঐদিকে।
শিপ্রাঃ আচ্ছা।
মেয়েটা মনেহয় শিপ্রা বেশি বলে। জীবনেও এমন মেয়ে দেখিনি যে ছেলেদের সাথে সেধে শিপ্রা বলে। মেয়েটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর। সেজন্যই শিপ্রা বললাম না। প্রথমে মিষ্টি মিষ্টি শিপ্রা বলবে তারপর কাছ থেকে সব লুট করে নিয়ে চলে যাবে।
তারপর বাসাতে আসলাম। চিনতে একটু অসুবিধা হলেও পৌছে গেছি।
এখানে আসার পর বাবা বিদেশে চলে গেছে। এখন আমি আর মা থাকি। এলাকায় অনেকের সাথেই পরিচিত হয়ে গেছি। বাবার টাকা আছে এজন্য সবাই এসে পরিচিত হয়। কিন্তু বাবার টাকার প্রতি আমার কোনো লোভ নাই। টাকার গরমও দেখায় না।
বেশ কয়েকদিন থাকার পর রেজাল্ট দিলো। ভালোদেখে একটা কলেজে ভর্তি হলাম।
কলেজ জীবন খুব ভালোই চলতে লাগলো। এখন সারাদিন বাড়ির বাইরেই কাটায়। বন্ধুবান্ধবের সাথে ইয়ার্কি আড্ডায় মেতে থাকি।
এভাবেই এক বছরের বেশি কাটিয়ে দিলাম। সামনে আমার H.S.C পরীক্ষা। বসে পড়ছি এমন সময় মায়ের আগমন।
মাঃ বাবা পড়ছিস?
আমিঃ হ্যা মা সামনে পরীক্ষা তো তাই।
মাঃ তোকে কিছু বলার ছিলো।
আমিঃ হ্যা বলো কি বলবে?
মাঃ তুই সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকিস। আমার একা থাকতে ভালো লাগেনা।
আমিঃ কি করবো বলো কলেজ প্রাইভেট থাকে। এগুলো রেখেতো বাড়িতে বসে থাকতে পারিনা?
মাঃ হুম তাও ঠিক। আমারতো একা থাকতে ভালো লাগেনা।
আমিঃ আমার কিছু করার আছে বলো?
মাঃ হ্যা আছে
আমিঃ কি উপায়?
মাঃ তোর বিয়ে।
আমিঃ মা তুমি কি পাগল হইছো? আমার কি বিয়ের বয়স হইছে?
মাঃ অত কিছু জানিনা তোর বিয়ে দিয়ে একটা বউমা আনবো তার সাথে গল্প করে আমার সময় কেটে যাবে।
আমিঃ তা এই ছাড়া কোন উপায় নেই? আর বিয়ে করে বউকে খাওয়াবো কি?
মাঃ তোকে খাওয়াতে হবে না। তোর বাবার যা আছে তা দিয়ে তোর বউকে খাওয়াতে কোন অসুবিধা হবে না।
আমিঃ তা ঠিক আছে। কিন্তু আমার মত বেকার আর ছোট একটা ছেলের সাথে মেয়ে দিবে কে?
মাঃ তা নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা আমার সব ঠিক করা আছে।
আমিঃ আচ্ছা তাহলে এতদুর। এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই?
পর্ব: ০২ – দুষ্টুমি প্রেম
মাঃ হ্যা আছে। আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আয়। ওখানে সময় কাটানোর অনেক মানুষ আছে।
আমিঃ মা কি সব বলনা তুমি। এসব বাজে শিপ্রা আর বলবা না।
মাঃ তাহলে বিয়েটা কর?
আমিঃ মা আমাকে কয়েকটা দিন সময় দাও?
মাঃ হুম দিলাম। তবে হ্যা শুনতে চাই।
আমিঃ আচ্ছা ভেবে দেখি।
মাঃ যা ভাবার ভাবো। আমি সব ব্যাবস্থা করছি
আমিঃ আচ্ছা যা ভালো বুঝো।
কি বলবো এই মুহুর্তে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। মায়ের শিপ্রাও ঠিক মা সারাদিন একা বাড়িতে থাকে। মায়ের সময় কাটানোর কোন উপায় নেই। একমাত্র আমার বিয়ে ছাড়া। কিন্তু এই বয়সে বিয়ে করাটা কি ঠিক হবে।
না কিছুই বুঝতে পারছিনা। দুইদিন চলে গেলো কি করবো ঠিক করবো বুঝতে পারছিনা।
রাতে ঘরে বসে মায়ের বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। বিকল্প কোন সমাধান পেলাম না। শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম বিয়েটা করবো। তখন মা রুমে আসছিলাম।
মাঃ বাবা কি করিস?
আমিঃ এইতো তোমার একাকিত্ব ঘোচানোর বিয়টা নিয়ে চিন্তা করছিলাম।
মাঃ তো কি চিন্তা করলি?
আমিঃ বিয়েটা করবো তবে পরীক্ষার পর।
মাঃ না বিয়েটা কালকেই হবে।
আমিঃ মা এখন বিয়ে করলে এক্সামটা ভালো হবেনা।
মাঃ না বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি। তাই কালই হবে।
আমিঃ আমার দিকটা একটু ভেবে দেখবা তো?
মাঃ ভেবেছিতো।
আমিঃ তা কি ভেবেছো?
মাঃ কাল শুধু তোদের বিয়েটা দিবো। আর তোরা কেউ কাউকে দেখবিনা। বিয়ের পর যে যার বাড়িতে। পরিক্ষারপর তোরা একসাথে থাকবি।
আমিঃ এতে লাভ কি হবে। তুমিতো সেই একা হয়েই থাকবে। এখন আর পরীক্ষার পরে বিয়ে করাতো একই হচ্ছে তাইনা?
মাঃ না এখন তোর বিয়েতে মত আছে। পরীক্ষা পর যদি তোর মত পাল্টে যায় সেজন্য এই ব্যাবস্থা।
আমিঃ আরে না মত ঠিকই থাকবে। বরং এখন যদি বিয়ে করে বউ না দেখতে পাই তাহলে মন কেমন করবে। আর পড়াশোনাতেও মন বসাতে পারবোনা।
মাঃ চুপ যা বলছি তাই করবি।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
মাঃ এইতো সোনা ছেলে।
আমিঃ হয়েছে যাও।
এইটা কোন শিপ্রা? মা যেইটা বলে গেলো তাতে কি দাড়ালো? নামমাত্রবিয়েটা করবো তারপর বিবাহিত ব্যাচেলর হয়ে থাকতে হবে। যাগ্গে মা যা ভালো বুঝে তাই করবে।
ঘুমিয়ে পড়লাম রাতে।
সকাল যেনো তাড়াতাড়ি চলে গেলো। ঠিক তেমনি রাত চলে আসলো। টুকটাক সব আয়োজন শেষ।
বিয়েটা করেই ফেললাম। এখন আমি বিবাহিত ব্যাচেলর। হালকা আয়োজনের মাধ্যমেই বিয়েটা শেষ হলো।
মায়ের শিপ্রা অনুযায়ী। মেয়ের বাড়ি মানে শ্বশুর বাড়ির লোকেরা আমার একমাত্র বউকে নিয়ে চলে গেলো। সাথে আমাকে বিবাহিত ব্যাচেলর পদবিটা দিয়ে গেলো।
বিয়ে শেষ এখন ঘুম দিবো। মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ি থেকে দাওয়াত খেতে গেছিলাম।
কি ফিলিংস এমন বিয়ে কয়জন করে।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর দেখলাম খাটে আমি একা। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে রাতে আমার বিয়ে হইছে। সিউর হওয়ার জন্য মাকে ডাক দিলাম।
আমিঃ মা ওমা কই তুমি?
মাঃ কি হইছে সকাল সকাল?
আমিঃ রাতে আমি বিয়ে করলাম না?
মাঃ হ্যা কেন কি হইছে?
আমিঃ কি হইছে মানে? আমা বউ কই?
মাঃ ওই সব শিপ্রা ভুলে গেছিস নাকি?
আমিঃ ওহ মনে পড়েছে। যাও তুমি।
মাঃ হুম।
কি জ্বালা বিয়ে করেই বউ পাগল হয়ে গেছি। বউটাকে একটু দেখতে দিলো না। ধ্যাত বউ এর নামটাও জানিনা। দাড়ান মাকে ডাক দিই।
আমিঃ মা ও মা।
মাঃ কি হইছে আবার?
আমিঃ বিয়েত করলাম তা বউয়ের নাম কি?
মাঃ সেইটা জেনে তোমার কাজ নেই।
আমিঃ তা এইটাতো বলো এত তাড়াতাড়ি মেয়ে মানে বউকে পাইলে কোথায়?
মাঃ আমার বান্ধবীর মেয়ে। তোর অতকিছু জানতে হবেনা। তুই পড়াশোনাই মন দে।
আমিঃ আচ্ছা যাও তুমি।
কি বললো দেখেছেন? বউয়ের নামটা পর্যন্ত বললোনা। কি বিয়েটাই না করলাম। এটা বিয়ে নাকি ইয়ে? ? নামটা বললে কি এমন হতো। এখন একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে।
ও বউ তুমি শুনতে কি পাও?
নাম কি তোমার একবার বলে যাও।
ও বউ তুমিইইই কোথায়?
এই হতভাগারে একটু আদর দিয়ে যাও।
না আর গাইবোনা। বউ এখন বাদ। পড়াশোনা করতে হইবো নাইলে ফেল করবো। বউতো আর লিখে দিয়ে যাইবোনা আমারই লিখতে হবে।
পরেরদিন থেকে বউয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে আবার পড়াশোনায় মন দিলাম। একেবারে মন দিয়ে না মনের ভিতরে বউয়ের চিন্তা আছে কিছুটা।
দেখতে দেখতে পরীক্ষা চলে আসলে। প্রিপারেশনভালো ছিলো। তাই পরীক্ষা গুলো ভালোই হলো। পরীক্ষা শেষে এখন ফ্রি যদি বউ থাকতো তাহলে গল্প করে সময় কাটানো যেত।
বউ যেহেতু নেই তাই ফেসবুকেই সময় কাটাই। এখানেও একটা ঘাপলা আছে। একটা মেয়ের সাথে প্রতিদিন শিপ্রা হয়। আমারে জান বলে। বলেছি বিবাহিত তাও বিশ্বাস করেনা। আমার কাছে প্রমান চাইছে কিন্তু আমি দিতে পারিনি প্রমান পাবো কোথায়? আজও জানের সাথে চ্যাটিং করলাম।
জানঃ হাই জান কালতো রেজাল্ট দিবে?
আমিঃ হুম তো?
জানঃ তো তুমি কোথায় ভর্তি হবে?
আমিঃ তা জেনে তুমি কি করবে?
জানঃ আমিও সেখানে ভর্তি হবো। প্লিজ বলোনা।
আমিঃ শহীদ নুর আলী কলেজ।
জানঃ আচ্ছা জান কাল শিপ্রা হবে। বাই
আমিঃ হুম।
জানঃ উম্মা।
আপদ বিদায় হইছে। প্রতিদিন যাওয়ার আগে একটা উম্মা নামের চুম্মা দেয়। আর জান?
টেনশন করবো কিনা ভাবছি। কালতো রেজাল্ট দিবে? আচ্ছা জানের একটা ম্যাসেজ দিই আমার টেনশন জান করে দিবে। আমি ঘুমাই। ম্যাসেজ সেন্ড করে ঘুমিয়ে গেলাম। *
পর্ব: ০৩ – মিষ্টি ভালোবাসা
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হলাম। তারপর নাস্তা করলাম। এবার অনলাইনে যেতে হবে। দেখা যাক রেজাল্টের কি খবর।
ঘরে এসে ফোনটা হাতে নিলাম। ডাটা অন করার সাথে সাথেই টুংটাং শব্দ। জান ম্যাসেজ দিছে। এক্টিভ আছে তাই রিপ্লে দিলাম। রাতের ম্যাসেজের উত্তর দিছে।
জানঃ ওকে জান। আমি আছি না তোমার কোন টেনশনের দরকার নাই।
আমিঃ হুম
জানঃ আচ্ছা জান কি করো? নাস্তা করেছো?
আমিঃ হুম করেছি। বসে আছি। তুমি?
জানঃ হ্যা আমিও। আচ্ছা তোমার ধারনা কেমন হতে পারে তোমার রেজাল্ট।
আমিঃ F গ্রেড হওয়ার চান্স বেশি। তোমার?
জানঃ খালি বাজে শিপ্রা। দেখো তোমার আমার রেজাল্ট একই হবে।
আমিঃ আচ্ছা দেখবো এখন যাই। তুমি টেনশন করতে থাকো।
জানঃ হুম তুমি ঘুমাও।
আমিঃ ওকে। বাই
জানঃ উম্মা।
ধ্যাত আবার দিছে উম্মা। টাকা দিয়ে কিনতে হলে এত দিতো না। যাহোক দিছে ভালো করেছে। আমি এখন ঘুম দিবো।
বউ নেই তাই বউয়ের তরফ থেক জান দিয়ে দিচ্ছে এখন। বউ চলে আসলে দিতে বারন করে দিবে।
ঘুম ভাঙল বিকালে। মনেই ছিলোনা আজ রেজাল্ট দিবে। তাড়াতাড়ি উঠেই অনলাইনে গেলাম। এর মধ্যেই জানের অনেক ম্যাসেজ হাজির। ম্যাসেজ সিন করলাম। এখনও এক্টিভ আছে। সারাদিন অনলাইনে কি করে কাজ নেই কোন?
জানঃ জান বলেছিলাম না আমাদের রেজাল্ট এক হবে? দেখেছো আমরা দুজনেই এ পাইছি তবে পয়েন্টে একটু ব্যাবধান আছে।
আমিঃ হ্যা জান।
জানঃ এতক্ষন কোথায় ছিলে? সেই কখন ম্যাসেজ দিছি। আর তুমি এখন রিপ্লে দিলে?
আমিঃ আসলে ঘুমিয়ে গেছিলাম।
জানঃ হুম ভালোই করেছো। আচ্ছা জান ফ্রেশ হয়ে নাও। এখন যাচ্ছি আবার রাতে শিপ্রা বলবো।
আমিঃ আচ্ছা তুমিও একটু রেষ্ট নাও। সারাদিন কি টেনশন টাই না করেছো।
জানঃ ঠিক আছে জান। তুমি যা বলবা। উম্মাআআআআআ।
ওরে বাপরে আজকেরটা অনেক লম্বা। চার পাচ দিন ধরে খেতে হবে। ধ্যাত চুম্মা আবার খাওয়া যায় নাকি। কিসব ভাবছি। কিন্তু আজকের এত বড় কিল্লাই? ডারমি কুচ কালা হে?
ফ্রেশ হইয়া বসে আছি। একা একা ভালো লাগেনা। বন্ধুরা এখন কেউ নেই। যে যার মতো পড়ার জন্য অন্য জায়গায় চলে গেছে। আমিই যেতে পারিনি। বিয়ে করলাম অথচ বউ নেই। বউ থাকলে নাহয় একটু গল্প করা যেত।
আচ্ছা এখন পরীক্ষা শেষ এখন তো বউকে বাড়িতে আনা যেতে পারে। শুনেছি বউ নাকি আমার সাথেই পড়ে। তাহলে বউয়ের রেজাল্ট শুনে আসি। মা নিশ্চয় জানে।
আমিঃ মা একটা শিপ্রা ছিলো
মাঃ হ্যা ঢং না করে বল।
আমিঃ বউ নাকি আমার সাথেই পড়ে?
মাঃ হ্যা। তো কি হইছে?
আমিঃ মানে তাহলে আজকে বউয়ের রেজাল্ট দিছে। কি হইছে জানো তুমি?
মাঃ না আমি এখনো জানিনা।
আমিঃ এখনতো পরীক্ষা শেষ বউকে এখানে নিয়ে আসো।
মাঃ না এখন না দেরি আছে।
আমিঃ দেরি আছে মানে? তোমার একা থাকতে কষ্ট হবেনা?
মাঃ না।
আমিঃ না? ? তাহলে তোমার একা থাকতে কষ্ট হবে বলে বিয়ে দিলে। এখন বলছো একা থাকতে কষ্ট হবেনা? মানে কি এসবের?
মাঃ ওটাতো তোকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য বলেছি।
আমিঃ মানে? বুঝতেছিনা কিছুই বুঝিয়ে বলো।
মাঃ তোর যার সাথে বিয়ে দিয়েছি ও আমার বান্ধবীর মেয়ে তোকে আগেও বলেছি। ও খুব লক্ষী মেয়ে সুন্দর ও। সেজন্য ভাবলাম তোদের বিয়েটা দিয়ে দিই। যাতে তোরা প্রেমে জড়িয়ে না যাস।
আমিঃ ওহ বুঝলাম।
মাঃ বুঝেছি না ছাই। একটু চালাক হ।
আমিঃ তুমি বলতে চাচ্ছ আমি বোকা?
মাঃ বলতে চাচ্ছিনা বলছি তুই বোকা।
আমিঃ কেমনে?
মাঃ তোকে যে বলেছিলাম বৃদ্ধা আশ্রমে দিয়ে আয়। আর তুই অমনি রাজি হয়ে গেলি। এই আমি কি বুড়ি হয়েছি? যে আমাকে বৃদ্ধ আশ্রমে নিবে।
আমিঃ ধ্যাত সত্যিই আমি বোকা।
মাঃ হুম যা একটু বাইরে থেকে ঘুরে আয়।
আমিঃ হুম যাচ্ছি।
অনেক দিন পর আজকে বাইরে বের হলাম। এখানো অতটা মানিয়ে নিতে পারিনি। তাই সারাদিন ঘরেই থাকি। হাটতে হাটতে পাশের গ্রামে গেলাম। মানে জানের গ্রামে। ওহ সেই জান জান করেই যাচ্ছি নামটা এখনো বলা হয়নি। জানের নাম হচ্ছে স্নেহা। আমি জানকে ছবিতে দেখেছি কিন্তু ও আমাকে নাকি সরাসরি দেখেছে।
যাহোক জানের গ্রামে একটু ঘুরলাম। কিন্তু ওদের বাসা চিনিনা। গ্রামটাওতেমন ভালো চিনিনা। আগে কোনদিন আসিনি। গ্রামের পাশেই নদী। হাটতে হাটতে নদীতে গেলাম। নদীতে দেখলাম নৌকা। মাঝি ভাইয়ে সাথে শিপ্রা বলে আমাদের গ্রামে পৌছালাম নৌকা ভ্রমনে। বেশ ভালই লাগল। প্রথম নৌকা ভ্রমন তো তাই।
বাসায় যেতে যেতে সন্ধা হয়ে গেল। খালি বউয়ের চিন্তা মাথায় ঘুরছে। ঘুরবেইনা কেনো এখন দেখতে পারিনি। নামটাও জানিনা।
মাঃ চয়ন বাবা ভেতরে আসবো?
আমিঃ হ্যা মা আসো কিছু বলবা?
মাঃ হুম। বলছি তুই কি কাছেই কোথাও ভর্তি হবি না শহরে যাবি?
আমিঃ না আমাদের এখানে যে কলেজটা আছে ওখানেই ভর্তি হবো। আমি গেলেতো একা হয়ে যাবে।
মাঃ হ্যা আমিও তাই ভাবছিলাম।
আমিঃ মা তোমার বউমাকে কবে আনবে?
মাঃ সময় হলেই আনবো। এত পাগল হচ্ছিস কেন?
আমিঃ না বিয়ে করলাম বউয়ের বদনখানি তো একবারও দেখতে পারলাম না।
মাঃ হুম খুব তাড়াতাড়ি দেখার ব্যাবস্থা করছি।
আমিঃ কবে?
মাঃ 2মাস পর বাবা দেশে আসবে। তখনই বৌমাকে নিয়ে আসবো।
আমিঃ বাবা চলে আসবে? বাবার কাজ শেষ?
মাঃ না বেড়াতে আসবে।
আমিঃ আমার যে বিয়ে দিছো বাবা জানে?
মাঃ জানবেনা মানে? সবটাই তোর বাবার প্লান। বউমাকে তোর বাবাই পছন্দ করেছিলো।
আমিঃ প্লান? তাহলেবাবার বিদেশ যাওয়া কি প্লানের একটা অংশ?
মাঃ হ্যা আবার না। তোর বাবা কাজের জন্যই বিদেশ গেছে। আর এটাকেই কাজে লাগিয়ে আমাদের প্লান।
আমিঃ ও তুমিও সাথে আছো?
মাঃ হ্যা। তোর বাবা পরিকল্পনা কারি। আর আমি পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারি।
আমিঃ এত বড় ষড়যন্ত্র আমার সাথে?
মাঃ তুই মনে হচ্ছে খুশিনা? তাহলে বউ বউ করছিস কেনো?
আমিঃ ধ্যাত কি যে বলোনা?
লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলাম। আসলে আমি একেবারে অখুশি তা নয়। আমিতো বউয়ের চিন্তায় বিভোর। কিন্ত বউ কি আমার মতো চিন্তা করে? আমার জান আছে নাকি? থাকলে থাকুক আমার কি?
অনলাইনে ঢুকতেই জানের ম্যাসেজ।
স্নেহাঃ আজ আমাদের বাসার সামনে দিয়ে যেতে দেখলাম তোমাকে।
আমিঃ হ্যা গেছিলাম।
স্নেহাঃ কোন কাজে এসেছিলে?
আমিঃ না একটু ঘুরতে গেছিলাম।
স্নেহাঃ তা আমাকে বলতে পারতে আমি গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখাতাম তোমাকে।
পর্ব: ০৪ – বিবাহ সমাচার
আমিঃ আসলে মনে ছিলোনা।
স্নেহাঃ আচ্ছা অন্য একদিন আমি তোমাকে গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখাবো।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
রিমিঃ বাই। উম্মা
উম্মা টা কখনো মিস হয়না। মেয়েটা রাগ আভিমান কিছুই বোঝেনা। সবসময় হাসিখুশি থাকে। প্রথমে যখন শিপ্রা বলতে চাইতাম না তখন ও আমার সাথে জোর করেই শিপ্রা বলার চেষ্টা করতো। এখন অবশ্য ভালোই লাগে।
এভাবেই চলছে এই হতভাগা বিবাহিত ব্যাচেলরের জীবন। জানিনা আর কতদিন এই উপাধি নিয়ে ঘুরতে হবে।
একমাস পর….
স্নেহাকে ফোন দিলাম। আজ কলেজে ভর্তি হতে হবে। এখন আমরা ফোনেও শিপ্রা বলি। এর মাঝে ওর সাথে দেখাও করেছি। মেয়েটা খুব মজার।
আমিঃ হ্যালো জান?
স্নেহাঃ হুম জান বলো।
আমিঃ তুমি কি রেডি হয়েছো?
স্নেহাঃ এইতো প্রায় হয়ে গেছে। তোমার?
আমিঃ হুম। আমি বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছি।
স্নেহাঃ বাসার সামনে থেকে ভিতরে কেউ ফোন দেয়? ভিতরে আসলেইতো পারতে।
আমিঃ না থাক তুমি রেডি হও আমি দাড়িয়ে আছি।
স্নেহাঃ ওকে।
বাইরে দাড়িয়ে আছি জানের অপেক্ষায়। জানিনাকখন আসবে। ওহ বলাই হয়নি একটা হুন্ডা কিনেছি। সেটাতেই বসে আছি।
অতঃ পর জান আসলো। অপরুপ সুন্দর লাগছে। মেয়েটা অনেক মায়াবী। ইচ্ছে করে ওর মায়াতে জাড়িয়ে যায়। কিন্তু উপায় নেই। কারন বউ আছে। আমি স্নেহার দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছি।
স্নেহাঃ কি হলো আমার দিকে একটু তাকাও।
আমিঃ না তোমাকে এই অবস্থায় দেখলে প্রেমে পড়ে যেতে পারি।
স্নেহাঃ তা প্রেমে পড়লে অসুবিধা কোথায়?
আমিঃ তুমিতো বিশ্বাস করোনা যে আমার বউ আছে। বউ থাকতে প্রেম করি কি করে বলো?
স্নেহাঃ তাহলে তোমার বউকে আমার সাথে দেখা করাও পরিচিত হই।
আমিঃ আমিই দেখিনি তোমাকে কি করে দেখাবো?
স্নেহাঃ মানে? তোমারবউ তুমি দেখনি? আজব।
আমিঃ হুম। তোমাকে পরে সব খুলে বলবো। এখন চলো।
স্নেহাঃ হ্যা চলো।
গন্তব্য এখন কলেজ।
কলেজটা ঘুরে দেখছি দুজনে। অনেক ভালো ক্যাম্পাস। খানিকক্ষন ঘুরে দেখে ভর্তি হলাম দুজনে। অনেকটা সময় কেটে গেলো। আমরা দুজন একই সাবজেক্ট পেয়েছি। আমার আবশ্য অন্য একটা এসেছিলো। জানের শিপ্রায় মাইগ্রেশন করে একই সাবজেক্টটে ভর্তি হয়েছি।
এখন জানের আবদার আমরা নাকি ঘুরবো। তো আর কি করা ঘুরতে বের হলাম।
অনেক ঘোরার পর এখন একটা পার্কে বসে আছি।
স্নেহাঃ কি হলো চুপ কেনো কিছু বলো।
আমিঃ আমি কি বলবো?
স্নেহাঃ কিচ্ছা বলবা না?
আমিঃ কিছুই খুজে পাচ্ছিনা।
স্নেহাঃ তাহলে আমিই কিছু বলি?
আমিঃ হ্যা।
স্নেহাঃ তোমার কি সত্যিই বিয়ে হইছে?
আমিঃ হ্যা। তোমাকে প্রামান না দিলেতো বিশ্বাস করবেনা।
স্নেহাঃ আচ্ছা যাও বিশ্বাস করলাম।
আমিঃ সত্যিই?
স্নেহাঃ আচ্ছা তোমার বিয়ের কাহিনীটা আমাকে শোনাও।
আমিঃ আচ্ছা শোন তাহলে।
এই বিবাহিত ব্যাচেলরের বিয়ের কাহিনী শোনাতে লাগলাম। প্রায় আধাঘন্টা ধরে কাহিনীটা পুরো শোনালাম জানকে।
স্নেহাঃ হা হা হা।
আমিঃ হাসো কেনো?
স্নেহাঃ তোমার মত এমন বিয়ে পৃথিবীতে 2টা হইছে বলে আমার মনে হয় না।
আমিঃ তা অবশ্য ঠিকই বলেছো।
স্নেহাঃ চলো অনেক ঘুরেছি এবার বাসায় যাই।
আমিঃ হুম চলো।
বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
স্নেহাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে নিজে বাসায় আসলাম। অনেক ক্লান্ত লাগছে। ফ্রেশ হলাম।
তারপর নিজের রুমে এসে রেষ্ট নিচ্ছি। মায়ের আগমন।
মাঃ কিরে কি করিস?
আমিঃ এইতো একটু রেষ্ট নিচ্ছি কিছু বলবা?
মাঃ হ্যা কাল তোর বাবা দেশে আসবে। আর এর মধ্যেই বউমাকে এখানে নিয়ে আসবো।
আমিঃ এতো ভালো খবর।
মাঃ কোনটা? বাবার দেশে আসা? নাকি বউমাকে এখানে নিয়ে আসা?
আমিঃ দুটোই।
মাঃ শোন কাল তোর বাবাকে একটু এগিয়ে আনতে পারবি?
আমিঃ হ্যা পারবো।
মাঃ আচ্ছা তুই রেষ্ট নে এখন।
মা চলে গেলো। আমিও রেষ্ট নিচ্ছিলাম কিন্তু কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নাই। স্নেহা ফোনে ঘুম ভাঙল। কলটা কেটে ব্যাক দিলাম।
আমিঃ হ্যালো জান বলো।
স্নেহাঃ হ্যা জান কি করো তুমি?
আমিঃ এইমাত্র ঘুম থেকে উঠলাম। তুমি কি করছো?
স্নেহাঃ তোমার সাথে শিপ্রা বলছি। ড্রিস্টাব করলাম?
আমিঃ আরে না। এই অসময়ে ফোন দিলে কিছু বলবা?
স্নেহাঃ কাল ভাবছিলাম তোমাকে নিয়ে আমাদের গ্রামটা ঘুরবো। সময় হবে?
আমিঃ সরি জান কাল বাবা দেশে আসবে। তাই বাবাকে এগিয়ে আনতে যেতে হবে।
স্নেহাঃ আচ্ছা তাহলে কি আর করা?
আমিঃ আচ্ছা করার আছে। বিকালে তোমার সময় হবে?
স্নেহাঃ হুম আমিতো সবসময় ফ্রি।
আমিঃ আচ্ছা তাহলে বিকালে আমি আসবো।
স্নেহাঃ আচ্ছা ঠিক আছে বাই।
আমিঃ আচ্ছা বাই।
রাতে একটু মায়ের সাথে গল্প করে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকাল হতেই মা ডাক দিল।
মাঃ চয়ন এই চয়ন উঠ অনেক বেলা হয়ে গেছে।
আমিঃ ধ্যাত একটু পরে উঠছি যাও।
মাঃ তাহলে তুই পরেই উঠ বউমা আর আনছিনা।
আমিঃ আরে কি বলো এইতো উঠে গেছি।
মাঃ এইতো গুড বয়। এবার ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে।
আমিঃ রেডি হবো কেনো?
মাঃ একরাতেই সব ভুলে গেছিস? তোর না বাবাকে এগিয়ে আনতে যাওয়ার শিপ্রা?
আমিঃ ওহ শিট। আচ্ছা তুমি নাস্তা রেডি করো আমি আসছি।
মাঃ হ্যা ফ্রেশ হয়ে আয়।
আমিঃ হুম।
নাস্তা করে রেডি হলাম। এবার যেতে হবে।
আমিঃ মা বাবা কি এয়ারপোর্টে নেমেছে?
মাঃ হুম অনেক আগে। প্রায় ঝিনাইদহ চলে এসেছে। তুই ওখান থেকে নিয়ে আসবি।
আমিঃ আচ্ছা তাহলে বাইক নিয়েই যায়?
মাঃ হ্যা সবধানে যাবি। সাবধানে চালাবি।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে তুমি কোনো চিন্তা করোনা।
মাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বাবাকে আনতে।
বাবাকে নিয়ে বাসাতে পৌছালাম। রাস্তায়কোন শিপ্রা হয়নি।
আমিঃ বাবা তুমি ফ্রেশ হয়ে রেষ্ট নাও।
বাবাঃ হুম তুই রেষ্ট নে বিকালে একটু কাজ আছে তোর সাথে।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
রুমে এসে ড্রেস চেজ্ঞ করলাম। জানকে ফোন দিতে হবে কারন বিকালে হয়ত ওদের ওখানে যেতে পারবো না।
আমিঃ হ্যালো জান কেমন আছো?
স্নেহাঃ হুম ভালো। কি করো?
আমিঃ বসে আছি। আচ্ছা একটা শিপ্রা বলার ছিলো।
স্নেহাঃ হ্যা বলো?
আমিঃ বিকালে হয়ত তোমাদের ওখানে যাওয়া হবেনা।
স্নেহাঃ কেনো?
আমিঃ বাবা আজ দেশে আসলো। বিকালে বাবার সাথে একটু বের হতে হবে কিছু মনে করোনা।
স্নেহাঃ আচ্ছা তাহলে কালকে?
আমিঃ শিওর কালকে মিস হবেনা।
স্নেহাঃ ওকে জান ঠিক আছে।
এভাবে জানের সাথে অনেক শিপ্রা হলো। মেয়েটা অসলেই ভালো। কোন শিপ্রাই রাগ আভিমান করেনা। আমার বউটা যে কেমন তা সৃষ্টিকর্তাই জানে।
পর্ব: ০৫ – ভুল বোঝাবোঝি
বিকালে ঘরে বসে চ্যাট করছি জানের সাথে। বাবা ডাক দিলো।
বাবাঃ চয়ন শোন। এদিকে আয়।
আমিঃ হ্যা বলো।
বাবাঃ চল গ্রামটা একটু ঘুরে আসি।
আমিঃ তুমি না বললে বিকালে তোমার কি কাজ আছে?
বাবাঃ ঘুরতে যেতেই চাইছিলাম।
আমিঃ ওহ চলো তাহলে।
বাবাঃ চল।
আমি আর বাবা গ্রামের একটু ঘোরাঘুরি করছি।
বাবাঃ শুনলাম তুই নাকি বিয়ে করেছিস?
আমিঃ ঢং করোনা। সবটাইতো তোমাদের প্লান।
বাবাঃ হুম। তা বউমাকে পছন্দ হয়েছে?
আমিঃ আর মজা নিওনা। বউমাকে দেখতেই দেয়নি এমনকি নামটাও জানি না।
বাবাঃ কি বলিস? এসব তো আমার প্লানের বাইরে।
আমিঃ তাহলে?
বাবাঃ তাহলে এই কাজ তোর মায়ের ইচ্ছাতে হয়েছে।
আমিঃ তাহলে মা?
বাবাঃ হুম বাদ দে চল।
আমিঃ এখনই চলে যাবে?
বাবাঃ হ্যা চল
বাড়িতে ফিরে আসলাম। এখনও অনেকটা সময় পড়ে আছে। জানের সাথে এখন ঘুরতে যাওয়া যায়। ফোন দিয়ে দেখি।
আমিঃ জান ফ্রি আছো এখন?
স্নেহাঃ হুম কেনো?
আমিঃ এখন কি ঘুরতে বের হবা?
স্নেহাঃ হুম। কিন্তুতোমার না বাবার সাথে ঘুরতে যাওয়ার শিপ্রা?
আমিঃ হ্যা ঘোরা শেষ।
স্নেহাঃ আচ্ছা তাহলে আসো।
আমিঃ তুমি নদীর পাড়ে আসো।
স্নেহাঃ নদীতে কেনো?
আমিঃ আজ নৌকায় করে ঘুরবো।
স্নেহাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
আমিঃ ওকে বাই।
স্নেহাঃ বাই।
রেডি আগে থেকেই ছিলাম। তাই আর দেরি না করে নদীতে গেলাম। নদীতে মাত্র একটা নৌকা আছে।
অনেক কষ্টে নৌকা ভাড়া করলাম। অবশ্য বাবার নাম বললেই দিয়ে দিত। কেনো আমি চাইনা ক্ষমতার অপব্যাবহার হোক। নৌকাতে উঠে বৌঠা বাইতে বাইতে জানের গ্রামের কাছে চলে গেলাম। নৌকা অবশ্য আগে থেকেই চালাতে পারতাম।
যাইহোক জানকে একটা ফোন দেওয়া দরকার। কিন্তু তার আগেই জানের ফোন।
আমিঃ জান কোথায় তুমি?
স্নেহাঃ এইতো চলে এসেছি প্রায়। তুমি কোথায়?
আমিঃ আমিতো তোমাদের গ্রামের নদীতে।
স্নেহাঃ আচ্ছা চলে এসেছি। তুমি একটু অপেক্ষা করো।
আমিঃ ওকে।
অল্প একটু অপেক্ষা করার পর জানকে দেখতে পেলাম।
আমিঃ এই তোমার অল্প একটু সময়?
স্নেহাঃ সরি দেরি হয়ে গেলো। মাঝি কোথায়?
আমিঃ মাঝির কি দরকার?
স্নেহাঃ দরকার নেই? তাহলে নৌকা চালাবে কে?
আমিঃ কেনো আমি আছিনা?
স্নেহাঃ তুমি নৌকা চালাতে পারো?
আমিঃ পারিনা মানে? নৌকা চালানোর অভিজ্ঞতা আমার ২০ বছরের।
স্নেহাঃ হি হি চলো।
আমিঃ হুম আসো।
নৌকাতে করে অনেক দুরে চলে এসেছি। কিন্তু কেউ কোন শিপ্রা বলিনি।
স্নেহাঃ চুপচাপ কেনো তুমি?
আমিঃ তুমিওতো।
স্নেহাঃ হ্যা তা ঠিক। আচ্ছা যদি তোমার বউ আমাদের এইভাবে দেখে নেয় তাহলে কি হবে?
আমিঃ বউ দেখবে কি করে? আমাকে দেখেছে বলে মনে হয়না।
স্নেহাঃ তা জানিনা। কিন্তু আমার জায়গায় তোমার বউ থাকলে রোমান্স হতো।
আমিঃ হু কচু হইতো। যাকে দেখলাম না তাকে নিয়ে রোমান্স?
স্নেহাঃ হইতো। মনে তখন এমনিতেই রোমান্স চলে আসতো।
আমিঃ ওহ তাই বুঝি?
স্নেহাঃ হুম। চলো ফেরা যাক।
আমিঃ হ্যা চলো।
অতঃ পর স্নেহাদের গ্রামের নদীতে ফিরে এলাম। ওকে নামিয়ে তারপর আমার গ্রামে।
আমিঃ আচ্ছা তাহলে সাবধানে যেয়ো।
স্নেহাঃ হুম তুমিও মিঃ মাঝি
আমিঃ হুম কাল কলেজে যাবে?
স্নেহাঃ না। ওহ তোমাকে বলতেই ভুলে গেছি।
আমিঃ কি?
স্নেহাঃ আমরা কাল ফ্যামিলি ট্যুরে বান্দরবনে যাচ্ছি।
আমিঃ ওহ আচ্ছা কতদিনের জন্য।
স্নেহাঃ প্রায় ২০দিনের মতো।
আমিঃ এতদিন কেনো?
স্নেহাঃ বাবার অফিসের কিছু কাজ আছে ওখান সেজন্য।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
আমাদের নদীতে এসে মাঝিকে তার নৌকা সহ টাকা দিয়ে বাসাতে আসলাম। ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে গেলাম।
এখন হাল্কা নাস্তা করে রুমে এসে বললাম। তার একটু পরেই বাবা মায়ের আগমন একসাথে।
আমিঃ দুজন একসাথে আমার রুমে কি ব্যাপার?
মাঃ কোথায় গিয়েছিলি?
আমিঃ এই একটু ঘুরতে।
বাবাঃ আচ্ছা শোন ভাবছি বউমাকে ঘরে নিয়ে আসবো।
আমিঃ তো আমার কি করার আছে?
মাঃ না তোর কিছু করার নাই তবুও বলে রাখলাম।
বাবাঃ ১৫তারিখে বউমাকে ঘরে আনবো।
আমিঃ আচ্ছা।
মনে মনে খুশি খুশি লাগছে। আবার খারাপও লাগছে ওদিকে জান নাকি বেড়াতে যাচ্ছে। আমাকে একা একা কলেজে যেতে হবে। এখনও কলেজে কোন বন্ধু জোটাতে পারিনি। একা একা সময় পার করতে হবে কলেজে। আবার বউকে ঘরে আনার অনুষ্ঠানে জান থাকবে না। আর মাত্র ১৫ দিন আছে কিন্তু জান থাকবে ২০দিন।
ঘুমিয়ে পড়লাম কাল কলেজে যেতে হবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেলো। এদিকে জান ১৭বার ফোন দিছে। ১৮বারের সময় ধরলামাম।
আমিঃ হ্যা জান বলো।
স্নেহাঃ জান তুমি ঘুমাচ্ছিলে?
আমিঃ হুম দেরি হয়ে গেলো উঠতে। কিছু বলবা?
স্নেহাঃ আমরা এখন বান্দরবনের দিকে রওনা দিচ্ছি।
আমিঃ আচ্ছা সাবধানে যেও।
স্নেহাঃ আচ্ছা বাই।
আমিঃ বাই।
আজ দশদিন পর কলেজে বসে আছি। জানের সাথে শিপ্রা বলে সময় কাটায়। আবার একটা বন্ধু জুটিয়েছি। ওর নাম মিষ্টি।
মিষ্টিঃ দোস্ত তোর সাহসের পরীক্ষা দিতে পারবি?
আমিঃ হঠাৎ এই শিপ্রা কেনো?
মিষ্টিঃ তুইতো বলিস তোর বউ থাকতে অন্য মেয়ের সাথে শিপ্রা বলিস।
আমিঃ হ্যা তো?
মিষ্টিঃ তাহলে পুজাকে প্রপোজ করে দেখা[আমার ক্লাসমেট]
আমিঃ ওরতো বয়ফ্রেন্ড আছে। সেইরকম দেখতে আবার মাস্তান।
মিষ্টিঃ এজন্যইতো তোকে বলছি।
আমিঃ আচ্ছা যদি পারি তাহলে?
মিষ্টিঃ যা বলবি তাই হবে।
আমিঃ পারলে তোকে আমাদের ডিপামেন্টের সবাইকে খাওয়াতে হবে।
মিষ্টিঃ ওকে মামা।
আমিঃ আচ্ছা যাই তাহলে।
মিষ্টিঃ যাও মামা।
যাই যা থাকে কপালে। একটা ঘাসফুল নিয়ে গেলাম। দেখলাম ক্লাসে পুজা আর একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। গিয়ে পুজাকে ডাক দিলাম ও কোন শিপ্রা বললো না।
আমিঃ পুজা এদিকে একটু শুনো তোমার সাথে শিপ্রা আছে।
পুজাঃ চুপ
কিন্তু ওর পাশের টা উওর দিলো।
:-যা বলার এখানেই বলো
আমিঃ আমি পুজাকে ডেকেছি তোমাকে না।
:-হ্যা আমিও ওকে যা বলার এখানেই বলো।
আমিঃ তোমার সামনে বলা যাবেনা।
:-তাহলে বলতে হবেনা চলে যাও।
আমিঃ আচ্ছা বলছি। পুজা আমি তোমাকে ভালোবাসি I Love U.
ঠাস ঠাস ঠাস
একি প্রপোজ করলাম একজনকে চড় মারলো আরেকজন।
আমিঃ ওই তুমি মারলে কেনো?
:-লজ্জা করেনা নিজের বউ থাকতে অন্য মেয়েকে প্রপোজ করতে?
আমিঃ আমার বউ আছে তোমাকে কে বললো।
:-সে যেই বলুক তোমার জানা লাগবেনা এখান থেকে যাও[রাগি লুকে]
আমিঃ হু যাচ্ছি।
চলে আসলাম। বুঝলাম না এই মেয়ে কি করে জানলো যে আমি বিবাহিত। আবার মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছে। কিছুই বুঝতেছি না।
পর্ব: ০৬ – নতুন জীবনের পথ চলা
লেখকঃ Chayon Samadder
চলে আসলাম মিষ্টির কাছে। শালা শয়তান হেসে মরছে।
আমিঃ ওই হাসছিস কেন?
মিষ্টিঃ দাড়া মামা হেসে নিই। তারপর বলছি।
আমিঃ প্রপোজ করলাম একটারে আর মারলো আরেকটা।
মিষ্টিঃ ওটাইতো কাহিনি মামা।
আমিঃ কাহিনি মানে?
মিষ্টিঃ এখনো পর্যন্ত পুজাকে প্রপোজ করেছে সবাই ওর বান্ধবীর কাছে চড় খাইছে।
আমিঃ পুজাকে প্রপোজ করলে ওর বান্ধবী মারবে কেন?
মিষ্টিঃ সেইটা জানিনা।
আমিঃ পুজার বান্ধবীর নাম কি?
মিষ্টিঃ আমি জানি না।
আমিঃ তাহলে কে জানে?
মিষ্টিঃ মামা ওর সাথে শিপ্রা বলার সাহস নেই কারো।
আমিঃ চল আমরা গিয়ে শুনে আসি।
মিষ্টিঃ মামা আমি নাই।
আমিঃ কেন?
মিষ্টিঃ মামা ওর নাম শুনতে চাইলে জুতা পিটা করবে এবার।
আমিঃ ধুর ব্যাটা ভিতু।
মিষ্টিঃ তুমিও কম না। দেখলামতো কেমন সাহস তোমার।
আমিঃ আচ্ছা চল বাসায় যাই।
মিষ্টিঃ হুম চল।
অতঃ পর বাসার দিকে রওনা দিলাম। জানের সাথে একটু শিপ্রা বলতে হবে। কাম সারছে পকেটে ফোন নেই। তাইলে গেছে হারাইয়া।
ব্যাপার না বাসার এক্সটা ফোন দিয়ে কয়েকদিন কাজ চালিয়ে নিবো।
বাসাতে ঢুকতেই দেখি বাবা আর মা বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। ব্যাপার খানা কি?
আমি চুপচাপ তাদের পাশ কাটিয়ে ঘরে চলে আসলাম।
ঘরে দেখি ফোন আছে। জান কল দিয়েছে। ফোনটা চেক করে দেখলাম কল রিসিভ করা হয়েছে। কাম সারছে এইবার আমি শেষ।
ভয়ে ভয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। জানিনা জান কি বলেছে।
খিদা লাগছে কিন্তু খেতে ডাকছেনা। নিজে থেকেই খাওয়ার টেবিলে গেলাম। খাবার রেডি করাই ছিলো তাই খেতে বসে গেলাম। বাবা,মা কোন শিপ্রা বলছেনা। বুঝতে পারছি কিছু একটা হতে চলেছে।
খাওয়া শেষ করে রুমের দিকে যাবো যাবো করতেছি তখনই মায়ের কন্ঠ থেকে আওয়াজ ভেসে এল।
মাঃ চয়ন এদিকে শোন শিপ্রা আছে।
আমিঃ শুনতেছি বলো।
মাঃ তোকে এত তাড়াতাড়ি কেন বিয়ে দিয়েছি জানিস?
আমিঃ না কেনো?
মাঃ যাতে তুই অন্য কোন মেয়ের সাথে প্রেমে জড়িয়ে না পড়িস। সেজন্য আমাদের পছন্দের মেয়েকে তোর সাথে বিয়ে দিয়েছি। আর তুই কিনা সেই প্রেম করছিস?
আমিঃ কি বলছো এসব? আমি প্রেম করছি তোমাকে কে বললো?
মাঃ কে বলবে আবার? তোর প্রেমিকা।
আমিঃ আমার প্রেমিকা? কে?
মাঃ নাটক বাদ দে। তুই কলেছে ফোন থুয়ে চলে গেছিলি তখনই স্নেহা নামে একটা মেয়ে ফোন দিয়েছিল। তোর ফোনে জান নামে সেভ করা।
আমিঃ মা আমরা শুধু ফ্রেন্ড তাছাড়া কিছুনা।
মাঃ হুম এখন তো শিপ্রা ঘুরাবাই তাইনা?
আমিঃ মা আমি শিপ্রা ঘুরাচ্ছিনা। আচ্ছা ও তোমাকে কি বলেছে?
মাঃ তুই চলে যাওয়ার পর তোর ফোন বাজছিল। কিন্তু আমি ধরিনি। কিন্তু যখন বিরক্ত হয়ে গেলাম তখন রিসিভ করলাম।
ধরে বললাম,
মাঃ হ্যালো কে বলছেন?
স্নেহাঃ আমি চয়নের প্রেমিকা। আপনি কে বলছেন?
মাঃ ওহ তা কবে থেকে চলছে এসব?
স্নেহাঃ প্রায় একবছর। আপনি কে বললেন না?
মাঃ আমি চয়নের মা।
স্নেহাঃ আসলে আন্টি আমি ওর ফ্রেন্ড। এমনি একটু মজা করছিলাম।
মাঃ সেতো বুঝতেই পারছি।
স্নেহাঃ আচ্ছা আন্টি রাখছি। চয়ন আসলে একটু ফোন দিতে বলবেন।
মাঃ আচ্ছা।
এবার আমি শুরু করলাম।
আমিঃ দেখেছো ওই বলে দিছে আমরা ফ্রেন্ড। আর ও মজা করছিলো।
মাঃ চোর চুরি করে ধরা খেলে বলে আমি চোর না চুরি করিনি।
আমিঃ প্লিজ বিশ্বাস করো।
মাঃ কিচ্ছু শুনতে চাচ্ছি না। কালই বৌমাকে নিয়ে আসবো।
আমিঃ কালই কেনো? এখনো তো 5দিন বাকি আছে।
মাঃ হ্যা তার আগে তুমি ভেগে যাও।
আমিঃ বাবা?
বাবাঃ আমিও তোমার মায়ের সাথে একমত।
আমিঃ ধ্যাত।
ঘরে এসে স্নেহাকে ফোন দিলাম। কিন্তু স্নেহার প্রতি কোন রাগ নেই বরং খুশি হয়েছি।
আমিঃ হ্যালো জান?
স্নেহাঃ হুম তোমার ফোন কার কাছে থাকে?
আমিঃ ভুলে বাসাতে রেখে গেছিলাম। তুমি নাকি আমার প্রেমিকা?
স্নেহাঃ মেয়ে কন্ঠ শুনে ভাবলাম ফষ্টি নষ্টি করছো কারো সাথে তাই মজা করেছি।
আমিঃ ভালো করেছো।
স্নেহাঃ কোনো সমস্যা?
আমিঃ না তোমার জন্যই। কাল দ্বিতীয় বারের মতো বিয়ে হতে যাচ্ছে আমার।
স্নেহাঃ মানে?
আমিঃ কালকে আমার বিয়ে করা বউকে ঘরে আনা হবে।
স্নেহাঃ তাহলে তো ভাল।
আমিঃ হুম খুব ভালো।
স্নেহাঃ আমিতো তাহলে থাকতে পারলাম না।
আমিঃ হুম। বাই
স্নেহাঃ বাই
ফেসবুক থেকে বের হয়ে মিষ্টিকে ফোন দিয়ে কালকে আসার শিপ্রা বললাম। এখন না বললে আর বলা হবেনা। কারন একটু পরে আমার ফোনটা নেওয়া হবে। আর কাল বাড়ি থেকে বের হতে দিবেনা।
হলও ঠিক তাই মা এসে ফোনটা নিয়ে গেলো। আর কাল ঘর থেকে বের না হওয়ার শিপ্রা বলে গেলো।
আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম ভাঙল চিল্লাচিল্লির শব্দে। উঠে দেখি বাড়িতে লোক ভর্তি বাড়ি সাজানো হচ্ছে। আমি ঘর থেকে বের হলাম না।
সারাদিন টিভি দেখে কাটালাম।
রাতে….
বাড়িতে লোক ভর্তি এখনই জানিয়ে দেওয়া হবে আমি বিবাহিত। সাথে বাদ যাবে বিবাহিত ব্যাচেলর উপাধি।
একা দাড়িয়ে আছি মিষ্টি আসলো।
মিষ্টিঃ কিরে একা কেনো?
আমিঃ তো কে থাকবে আর?
মিষ্টিঃ কেনো তোর বউ। চল পরিচয় করিয়ে দিবিনা।
আমিঃ এখনো আমি পরিচিত হতে পারলাম না তোকে কি করে পরিচয় করাবো?
মিষ্টিঃ কি বলিস এখনো পরিচিত হতে পারিসনি?
আমিঃ হুম।
টুকটাক গল্প করছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম যে কলেজে আমাকে চড় মেরেছিলো। সেও আছে অনেক সেজে গুজে। একে কে ইনভাইট করেছে। আমিতো করিনি। তাহলে কে করলো।
অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবশান ঘটিয়ে। আমাদের জুটির নাম ঘোষনা করা হলো। নাম শুনে যতটা অবাক হলাম তার চেয়ে বেশি অবাক হলে বউকে দেখে।
আমার বউ হচ্ছে যার হাতে চড় খেয়েছিলাম সে। আর তার নাম হচ্ছে শিপ্রা। এই নামেই ট্রেনে বাড়ি ফেরার পথে আমার সাথে একটা মেয়ের পরিচয় হয়েছিলো। কিন্তু বুঝতে পারছিনা এটাই কি সে?
ভেবে কিছুই পেলাম না। অবশেষে অনুষ্ঠান শেষ হলো। সবাইকে বিদায় দিয়ে রুমে আসলাম। বাসার ঘর না শোবার ঘর।
রুমে দেখি শিপ্রা সব কিছু খুটিয়ে দেখছে।
আমিঃ ওই কি করছো এসব?
শিপ্রাঃ দেখছি প্রেমপত্র পাওয়া যায় কিনা।
আমিঃ আমার ঘরে প্রেমপত্র থাকতে যাবে কেনো?
শিপ্রাঃ তোমার মত লুচ্ছাকে বিশ্বাস করা যায়?
আমিঃ আমি লুচ্চা মানে?
শিপ্রাঃ যে বউ থাকতে অন্য মেয়েকে প্রপোজ করে তাকে লুচ্চা ছাড়া কি বলে?
আমিঃ ওটাতো আমি বাজি ধরে করেছিলাম। কিন্তুতুমি কিভাবে জানতে আমি বিবাহিত ছিলাম?
শিপ্রাঃ কারন আমি জানতাম তোমার সাথেই আমার বিয়ে হইছে।
আমিঃ তাহলে বলো নাই কেনো? আমিঃ তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে আগে কোথাও দেখছি।
শিপ্রাঃ হুম দেখেছোতো।
আমিঃ কোথায়?
শিপ্রাঃ 3বছর আগে ট্রেনে।
আমিঃ ওহ তুমিই তাহলে সে?
শিপ্রাঃ হুম।
সারারাত দুজনে গল্প করলাম।
সকালে শিপ্রা ডাক দিলো। আজ নাকি বিশেষ ক্লাস আছে কলেজে যেতে হবে।
এরপরের কাহিনি আপনারা আগেই জেনেছেন।
এবার কলেজে যাওয়ার জন্য বাইক নিয়ে বের হলাম। পেছনে বউ বসে আছে তাই একটু জোরেই চালাচ্ছি। শিপ্রা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে ভয় পাচ্ছে হয়ত।
শিপ্রাঃ এই এত স্পিডে চালাচ্ছো কেনো?
আমিঃ কেনো ভয় করছে?
শিপ্রাঃ হুম স্পিড কমাও।
আমিঃ আমার বাইকেতো দুইটা গিয়ার 1stআর 5th।
শিপ্রাঃ তাহলে 1stগিয়ার ধরো।
আমিঃ তুমি আমাকে ধরো আমি 1stগিয়ার ধরি।
শিপ্রাঃ কেনো?
আমিঃ না আমি 1stগিয়ার ধরলে তুমি পিছনে জমে যেতে পারো। তাই ধরে বসো।
শিপ্রাঃ যা শয়তাম। চলো।
আমিঃ এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো। তুমি বলতো?
শিপ্রাঃ ভালই হতো।
আমিঃ তাহলে চলো হারিয়ে যাই?
শিপ্রাঃ না কলেছে যাই।
আমিঃ হুম চলো।
এভাবেই চলতে থাকুক তাদের নতুন জীবনের পথচলা। মেতে থাকুক তাদের জীবন হাজারো দুষ্টুমি আর ভালোবাসাতে।
সমাপ্ত
সমবয়সী বউ
লেখকঃ Chayon Samadder
আরো পড়ুন – বাস্তব জীবনের গল্প