বাস্তব জীবনের গল্প

বাস্তব জীবনের গল্প – পিপড়ের আইল্যান্ড

বাস্তব জীবনের গল্প – পিপড়ের আইল্যান্ড: জীবন বলতে আমরা বেশিরভাগ সময় মানুষের জীবনকেই ভাবি! আমরা ভুলেই যাই যে আমরা মানুষ বাদেও আরও শত শত জীবন আছে, পরিবার আছে, ভালোবাসা আছে, মায়া আছে, স্বপ্ন আছে। অথচ আমরা এগুলোকে মূল্যায়ন করি না। আসলে আমরা কত বড় অন্যায় প্রতিনিয়ত করছি তা এই গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক।

পর্বঃ ১

এই শুনছিস, আমি সুগন্ধি পাচ্ছি খাদ্যের। কিন্তু আমি সেখান থেকে সেই খাদ্য নিয়ে আসতে পারছিনা। সেখানে এতই খাদ্য মজুদ আছে যে আমাদের নিউ টু গ্রুপের সকলের পেট দারুণভাবে ভরে যাবে। (বলল লরা)

হুম বুঝলাম। কিন্তু কোন জায়গায় সেটা? (নিউ টু গ্রুপের রাজা বা কিং বলা যায়, তিনি বললেন)

আইল্যান্ড পেড়িয়ে ওপাড়ে একটা বড় বাড়িতে।

আচ্ছা আজ কি যথেষ্ট খাবার আছে?

আজ খাবার আছে যথেষ্ট, কিন্তু এই খাবার শুধু দু দিন যাবে। আর এর মধ্যে খাবার জোগার না হলে সৈন্যরা না খেয়ে মারা যাবে ঠিক আগেরবার এর মত।

আচ্ছা তুমিতো খাবার আনতে পাড়বেনা। তাহলে কে পাড়বে আইল্যান্ড পেড়িয়ে খাদ্যগুলো আনতে? আইল্যান্ড এ অনেক প্রানের ঝুঁকি আছে। আর কেউ চায়না নিজের প্রানের ঝুঁকি নিয়ে আইল্যান্ড এর ওপাড়ে গিয়ে খাদ্য সঞ্চয় করে নিয়ে আসতে।

কিন্তু খাদ্য না পেলেতো আমাদের সেনারা মারা যাবে রাজা মহাশয়।

হুম। চিন্তার বিষয়। আচ্ছা লরা,তুমি এখন যাও আমি খানিকবাদে তোমায় ডেকে পাঠাবো।

আপনি যা বলেন রাজা মহাশয়।

মহারানী! কি করবো তুমিই বলো? কে এমন সাহসী যোদ্ধা আছে যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেনাদের জন্য খাদ্য নিয়ে আসবে আইল্যান্ড এর ওপাড় থেকে?
(চিন্তিত হয়ে মহারানীকে বললে রাজা)

চিন্তিত হবেন না প্রিয় স্বামী। আমার জানা মতে একজন পাড়বে হয়তবা।

কে সে? আমাদের নিউ টু এরই কেউ নাকি?

হুম সে আমাদের নিউ টু গ্রুপের একজন। আর তার নাম হলো প্লিক।

প্লিক!

হ্যা প্লিক। সেই পাড়বে এই কাজ করতে। সে সবকিছু করার ক্ষমতা রাখে। আপনি যখন কাজের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন তখন পাতার নিচে আমিসহ আরো অনেকে বন্দি হয়ে যাই। তারপর প্লিক সেখান থেকে আমাদের রক্ষা করে জীবনের বাজী রেখে।

বাহ! খুশি হলাম। আচ্ছা ডাকা হোক প্লিককে।

একজন সৈন্য পুরো গর্তে এলার্ম করে দিলো প্লিক থাকলে সে যেন রাজা রাণীর দরবারে উপস্থিত হয়।

রাজা নিজ প্রাসাদে বসে আছে। একজন সৈন্য এসে রাজাকে প্লিক এর আসার খবর দিলো।

কিছুক্ষণ পর গুটি গুটি পায়ে দৌড়ে আসলো একটি ছোট আকারের পিঁপড়ে। সে এসে রাজার সামনে দাঁড়িয়ে রাজাকে উল্ল্যেখ করে বলল, মহারাজাকে সালাম! প্লিক হাজীর।

তুমিই প্লিক

জ্বী আজ্ঞে হ্যা। আমিই প্লিক। বলুন মহারাজা আমায় কি করতে হবে?

যা করতে বলব করতে পাড়বে?

আগে বলুন মহারাজ! কি করতে হবে। আমার মাঝে সেটা করার শক্তি থাকলে অবশ্যই আমি করবো। আর আমার সে শক্তি না থাকলে আমি কিভাবে পারবো মহারাজা?

তুমিতো দেখছি আমাকেই প্রশ্ন করে বসলে।

ভুল ক্ষমা করবেন। আপনার প্রশ্ন বলুন।

তুমি নিশ্চই জানো আমাদের গ্রুপে ৩৫০০ পিঁপড়ে বসবাস করে।

জ্বী এটা নতুন কিছু না। কিছুদিন আগেই ৭০০০ ছিলো। শহর থেকে খাবার আনার কাজে যখন তারা জায় তখন এক মানুষ হলুদ বিষ ছিটিয়ে পিষে মেরে ফেলে। সেখানে আমাদের ৩৫০০ পিঁপড়ে মারা পরে। যাঁদের অস্তিত্ব আমরা খুজে পাইনি। সেখানে আমার বাবা আর দাদাও ছিলো। (কথাটি বলে প্লিক নিজের পা দিয়ে তার চোখ স্পর্শ করতে লাগলো।)

হ্যাঁ! আমাদের জন্য সেটা খুব বাজে একটা দিন।

জ্বী। এখন আমায় কি করতে হবে বলুন।

তোমাকেও ঠিক তাই করতে হবে যা তোমার বাবা আর দাদারা করেছে।

বুঝে আসলোনা মহারাজা। (মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বলল প্লিক)

খাবার খুব কম। ১০০০ চিনি আমাদের কাছে আছে। যা সুধু ২দিনের খাবার। আর আমরা খবর পেয়েছি যে আইল্যান্ড পেড়িয়ে এক বাড়িতে খাবার আছে। তোমাকে সেখান থেকেই খাবার আনতে হবে। পাড়বেতো?

প্লিক উদাসিন চেহারা নিয়ে রাজপ্রাসাদ থেকে ঘুরে বের হতে যাবে এমন সময় দুজন বড় বড় পিঁপড়ে সৈনিক প্লিকের রাস্তার বাধা হয়ে দাঁড়াল।

কোথায় জাচ্ছো। রাজার উত্তর না দিয়ে।

প্লিক এবার আবার রাজার সামনে এসে বলতে লাগলো
আইল্যান্ড এর ওপাড়ে,বড় একটা বাড়িতে খাবার আছে। এটা নিশ্চই শয়তান লরা আপনাকে বলেছে রাজা মহাশয়?

হুম লরাই বলেছে।

আমাকেও বলেছে। কিন্তু আমি এতটাই বোকা নই যে নিজের জীবন বাজী রেখে খাবার আনতে জাবো।

দেখো প্লিক! আমি জানি, আমরা সবাই জানি তুমি আনতে পাড়বে। আর তুমি নিজেও জানো তুমি আনতে পাড়বে। তাহলে কেন ভয় করছো?
তোমার বাবা এবং দাদা যেটা করতে পারেননি, তুমিকি সেটা করে দেখাতে চাওনা।

উত্তেজিত করবেন না আমায় মহারাজ। আমি এই বিষয় নিয়ে ভাব্বো। তারপর আপনাকে জানাবো। আমি কি তাহলে এখন আসতে পারি?

আচ্ছা জাও। ভাবা শেষ হলে কোন অনুমতি ছাড়াই চলে আসবে। আমার দরজা তোমার জন্য খোলা রইলো।

আমি সবসময় অনুমতি ছাড়াই আসি মহারাজা। আমার অনুমতি লাগেনা। আসি মহারাজ।

রাজপ্রাসাদ থেকে জাওয়ার সময় হঠাত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো প্লিক।
দুপাশে তাকিয়ে দেখলো দুজন সৈন্য দাঁড়িয়ে আছে যারা তার পথ আটকেছিলো।

তাদের উদ্দেশ্যে প্লিক বলল,

বড় হইছো দেইখা এত্ত ভাব লস ক্যান তোরা? তোরাতো পিঁপড়ে নামের কলঙ্ক। হুদাই সাড়াদিন মূর্তির মতন দারায়া থাকিস। ভালো হবে আমার সাথে কাজ করিস। মায়নে দিবো। কেমন?

প্লিকের কথা শুনে পিঁপড়ে দুটো প্লিক এর দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
যেন গিলে খাবে।

এক মাড়বো, জীবনে দেখিসনাই আমাকে? ভাবছিলাম আমার রাস্তায় আসবি। কিন্তু তোরা যে পাথর। চান্সেই নাই।
থাক এখন।

প্লিক সেখান থেকে চলে গেল তার সুইমিংপুলে। সুইমিংপুলটা একটা কাঠাল গাছের পাতায় সুন্দর করে বেধে সেখানে পানি রাখা আছে। সেটাই প্লিক এর সুইমিংপুল।

ভাবনা চিন্তার সময় প্লিক সুইমিংপুল এর উপরে বসে থাকে।

এটা তার ভালো লাগার একটা।

বসে বসে ভাবছে প্লিক। কি করবে সে? বাবা দাদা যেটা করতে পারেনি সেটা করবে নাকি নিজের জীবন বাচাতে এখানেই থেকে যাবে। চিন্তা যেন তার মাথা খেয়ে ফেলছে।
রাগের কারণে নিজের মাথায় থাপড়ানো শুরু করলো প্লিক।

সময় জাচ্ছে প্লিক ভেবেই চলছে কি করবে।
ইতিমধ্যে সে পুলে নামলো শরীর পরিস্কার করার জন্য।

লরা এসে হাজীর। সে এসেই দেখলো প্লিক পুলে সাতার কাটছে।

কিরে কি করছিস তোর সুইমিংপুল এ?

তুই কি অন্ধ? দেখতেই পাচ্ছিস শরীরটা পরিস্কার করছি।

হুম তাইতো দেখছি। তো কিছু ভাবলি?

তোর সাথে আমার কোন ডিল হয়েছিলো নাকি?

তোর মতন চিটার এর সাথে আমি ডিল করবো?

তাহলে বলিস কেনরে লুলা পিঁপড়ে?

এই আমার নাম লরা। নো লুলা। বুঝলি?

না তুই লুলা পিঁপড়ে। আচ্ছা বাদ দে। তোর সাথে আমার কোন ডিল হয়নি অথচ তুই বলছিস কিসের কথা?

আইল্যান্ড পেড়িয়ে খাবার আনার কথা। মহারাজা যে তোকেই বেছে নিয়েছে এই কাজের জন্য।

পুল থেকে উঠে আসতে আসতে প্লিক বলল
তুইতো রাজাকে বলেছিস খাবারের কথা তাইনা?

হুম আমি সুভাষ পেয়েছি দেখেই বলেছি। জানিস না যে খাবারের সংকট খুব।

আমার ভাবা শেষ! আমি জাবোনা। বুঝলি?

না গেলে খাবি কি?

আমার যথেষ্ট খাবার আছে। কেন মনে নেই চিনিগুলো যে গায়েব হয়েছিলো সেটা আমিই করেছিলাম। লরার কানের কাছে গিয়ে বলল প্লিক।

কিহ? তুই! আমি জানতাম তুই নিয়েছিস কিন্তু প্রমান না থাকায় বলতে পাড়িনি।

আর বলতে পারবিওনা। আর হ্যা আমার ভাবা শেষ। আমি আইল্যান্ড এর ওপাড়ে জাচ্ছি না।
আর এখন এই কথা গিয়ে রাজাকে জানাবো। বুঝতে পেরেছিস নিশ্চই!
লুলা পিঁপড়ে।

লরা রাগে তার পা দিয়ে প্লিককে এক লাথি মেরে দৌড়ে পালালো। প্লিকও তাকে ধরার জন্য পিছু নিলো। কিন্তু থেমে গিয়ে বলল

দাড়া! আগে রাজাকে আমার মতামত দিয়ে আসি। তারপর তোর ব্যাবস্থা করবো লুলা কথাকার।

কিছুক্ষণ পর
ঝিম মেড়ে রাজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্লিক।
ওপাড় থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে লরা।

মহারাজা প্লিককে উদ্দ্যেশ্য করে বলে উঠলো
প্লিক। কি ভাবলে বলোদেখি তোমার মতামত

প্লিজ একবার লরার দিকে তাকিয়ে আবার রাজার দিকে তাকালো আর বলল

পর্বঃ ২

আমি জাবো মহারাজ। আমার বাবা দাদারা যেটা করতে পাড়েনি আমি তা করে দেখাবো। হ্যা আমি নিশ্চই যাবো।

আমি জানতাম প্লিক। তুমি নিশ্চই যাবে। কিন্তু তুমিকি একাই যাবে?

নাহ আমার সাথে আরো ৩/৪ জন লাগবে। আর আমরা সফল হলে আপনাদের জানিয়ে দিবো তখন আপনি সৈন্য পাঠিয়ে দিবেন।

হ্যাঁ, বলো তুমি কাদেরকে নিয়ে জেতে চাও?

আমি চাই।

লরার দিকে একবার তাকালো প্লিক। লরা কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে প্লিকের দিকে তাকিয়ে ইশারা করছে ক্ষমা চাওয়ার। কিন্তু প্লিক তাকে ছাড়লোনা।

আমি প্রথমেই লরাকে চাই মহারাজা। সে আমার পিছনে এসে দারাক।

লরা! প্লিক এর পেছনে গিয়ে দারাও।

নাহ মানে মহারাজ আমি জেতে পাড়বোনা। (ইতস্তত করে বলতে লাগলো লরা)

কেন কোন সমস্যা আছে তোমার? বলতে পারো।

জ্বী,ইয়ে মানে, নাহ আরকি

বুঝেছি কোন সমস্যা নেই। জাও প্লিকের পিছনে গিয়ে দারাও।

মাথা নিচু করে প্লিকের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো লরা।
প্লিক হাসি মুখে লরাকে বলল
কিরে লুলা! জাবিনা নাকি? এখন কি হলো? নিজের জ্বালে নিজেই পা দিলি।

চুপ থাক। (এই বলে প্লিকের পেছনের দিকে এক কিক মারলো লরা)

ইয়াউখাইসেরে(প্লিক চেঁচিয়ে উঠলো)

কি হলো প্লিক?

নাহ মহারাজা কিছুনা। এমনি

আচ্ছা এবার বলো আর কাকে চাও।

এবার প্লিক চারপাশে তাকাতে লাগলো আর কাকে নেয়া জায় এই খাদ্য মিশনে। হঠাত চোখ পড়লো দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা দুইজন পাহারাদারি পিঁপড়ের উপর।
”””-এই দুইটাই আমায় নিয়ে হাসাহাসি করলো তখন। তারমানে তোরাই জাবি আমার সাথে।””

আমি অন্য কাউকে চাইনা মহারাজ। আমি আপনার ওইজে দুজন পাহারাদারি সৈনিক,তাদেরকেই আমার দরকার।

আচ্ছা তাদেরকেই নিয়ে জাও।

তাদের বলুন আমার পিছনে এসে দাঁড়াতে।

হুম! এই রিক আর মিক, দরজা ছেড়ে এদিকে আয় দেখি।

জ্বী রাজা সাহেব!। রিক বলে উঠলো।

তোরা তো সাড়াদিন দরজায় দাঁড়িয়ে থাকিস। আজ তোরা প্লিকের সাথে জাবি খাদ্য সঞ্চয় করতে।

এইডা কি কন রাজা সাহেব। আমরা ক্যামনে জামু? আমরা গেছি কখনো?

জাসনাই জাবি আজ। আর প্লিক আছে তোদের সাথে। ভয় এর কিছু নেই।

জ্বী মহারাজ আমি আছিই।
প্লিক রিক আর মিক এর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলল।

রিক আর মিক লরার পিছনে এসে দাঁড়াল।

তোমাদের দল কি সম্পন্ন হয়েছে প্লিক?

নাহ! দল এখনো সম্পন্ন হয়নি। রাজার পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো। আস্তে আস্তে আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলো সে।

কথাটি বলল রাজার একমাত্র কন্যা মিকি।
সে এবার রাজার সামনে এসে বলল
আমি জাবো মহারাজ। আমিও খাদ্য সঞ্চয় এর কাজে জাবো প্লিক এর সাথে।

একি রাজকুমারী! তুমি কেন যাবে?

আমিও সবার জন্য কিছু করতে চাই। তাই আমিও জাচ্ছি। আশা করি আপনি বাধা দিবেন না।

কিন্তু তুমি

কোন কিন্তু নেই মহারাজ। সে যখন জেতে চাইছে জাকনা।ভেতর থেকে রাণী বেড়িয়ে এসে বলল

এপাশে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে লরা, প্লিক,রিক আর মিক। কিছুই বুঝছেনা তারা।

আচ্ছা রাজকুমারী! তুমি জাইতে চাইলে আমি বাধা দিবোনা। কিন্তু আমি তোমার ফিরে আসার অপেক্ষা করবো।

জ্বী আজ্ঞে মহারাজ! আমি সর্বচ্চো চেষ্টা করবো।

জাও গিয়ে লাইনে দাড়াও।

রাজকুমারী লাইনের কাছে গিয়ে লরাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে প্লিকের পেছনে দাঁড়াল। লরা মাটিতে পরে গেলো। খুব দাপট এই রাজকুমারীর। ব্যাপারটা রাজাও দেখলো অথচ কিছুই বললনা।

প্লিক এর চোখে বিষয়টা বাধলো। লরাকে এভাবে অপমান করাটা মোটেও রাজকুমারী মিকির ঠিক করেনি।

লরা উঠে পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। প্লিক রাজার সামনে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে নিয়ে চলতে লাগলো। পেছন পেছন আছে রাজকুমারী মিকি,লরা,রিক আর মিক।

তারা রওয়ানা দিলো আইল্যান্ড এর দিকে।
এক কিলোমিটার পথ। পুরো জাগাটাই বালুচর। বালুচর পেড়িয়ে এক লম্বা বিষাল মাঠ পাড়ি দিতে পারলেই সেই বাড়িতে পৌছবে তারা।

শুনশান রাস্তা। এক মনে হাটছে সবাই। হঠাত মিকি প্লিককে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
এই প্লিক আর কতদূর? আমি হাটতে পাড়ছিনা আর।

দেখো মিকি! আমরা সবেমাত্র মিশন এ নেমেছি। এখনি যদি তুমি হাটতে না পাড়ো তাহলে কিভাবে আমরা পুরো আইল্যান্ড পার হবো। আর আমরাতো লাইনও ভাঙতে পাড়বোনা।

কিন্তু আমিতো হাটতে পারছিনা। আর আমার যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে নিশ্চই বুঝতে পাড়ছো তোমাদের কি করবে আমার বাবা।

:-কেন যে এই মেয়ে পিঁপড়েটা আসলো? আমাদের মিশনটাই বৃথা করতে আসছে এটা। রাজার কন্যা বলে এভাবে টর্চার করাটাকি ঠিক। ফিসফিসিয়ে বলল প্লিক।
:-ঢং একটা। আমায় তখন ধাক্কা মেরে সামনে ঢুকেছিলি না। বুঝ এখন। আর প্লিককে খালি একা পাই! তখন বোঝাবো। রাজকুমারীকে সাথে পেয়ে আমাকে পাত্তাই দিচ্ছেনা লুচুটা। মনে মনে ভাবলো লরা।

তাহলে তুমি এখন কি করতে চাইছো?
রাজকুমারীর উদ্দেশ্যে বলল প্লিক।

আমি বিশ্রাম চাই।

কিন্তু

কোন কিন্তু না। হতে পারো তুমি দলের অধিনায়ক। কিন্তু আমি রাজকুমারী। আমি জা বলবো তোমায় তাই শুনতে হবে। বুঝলে

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। কিছুক্ষণ পর সূর্য ডুবে যাবে। আমরা আরেকটু এগোই। তারপর একটা ভালো জায়গা দেখে রাতটা কাটিয়ে দেবো। আরেকটু হাটো শুধু প্লিজ

:-এত অনুরোধ করার কি আছে? আমি কতদিন থেকে তোর সাথে আছি কখনোতো আমাকে এভাবে অনুরোধ করলিনা। আজ রাজকুমারী পেয়েছিস বলে। তুই আসলেই একটা লুচু পিঁপড়ে। মনের কথাগুলো প্রকাশ করতে পারছেনা লরা। নিজেই নিজের মনের সাথে কথা বলছে সে।

আচ্ছা তুমি যেহেতু বলছো তাহলে আরেকটু কষ্ট করি। শুধু তোমার জন্য। মাথায় রেখো

আমি সব মাথায় রাখি রাজকুমারী। থাকবে মাথায় অবশ্যই।

:-শয়তান। তোর এই লুচ্চামি আমার আর সহ্য হচ্ছেনা। মন চাইছে এখনি তোকে ধরে কামড়ে গিলে খাই। লরা আবার মনে মনে বলল।

আচ্ছা পিলিক! আমরা এত্ত খাবার ৫জন আনুম ক্যামনে(পাহারাদার রিক)

কিহ! কি বললি হাদারাম! আমার নাম পিলিক?
আমার নাম প্লিক বুঝলি। মূর্খ গুলা।

আচ্ছা যাই হোক। আমরা কেমনে আনুম এত্তু খাবার?

ক্যান? তোরা দুইটারে আনছিই এই জন্যে। যা খাবার পাবো সব তোদের মাথায় দিবো। বুঝলি এইবার।

হাছা কথা? বলে উঠলো মিক।

তোর মাথা শালা!! মাথায় এক রাশ রাগ নিয়ে বলল প্লিক।

প্লিকের ধমকে সবাই চুপ।

সবাই আবার হাটতে লাগলো।
জতখানি হেটেছে,সবাই কথা বলেছে কিন্তু লরা বাদে।

এই জায়গাটা আজকের রাতের জন্য সুন্দর। এখানেই রাত কাটানো যাবে। যার যার মুখে খাবার আছে জতখানি খেয়ে ফেলো।
আমরা আজ এখানেই রাত কাটাবো।

বালুচরে পড়ে থাকা এক শামুককে দেখিয়ে বলল প্লিক।
সবাই সেখানে এসে দাঁড়ালো । এখন লাইনটা ভাঙতে হবে। তবে এলোমেলো ভাবে নয়। ধীরে ধীরে

সবার পেছনে থাকা মিক তার লাইনের জায়গা থেকে সরে সাইডে এসে দাঁড়ালো।
এরপর রিক,এরপর লরা,এরপর রাজকুমারী মিকি আর তারপর প্লিক।

লাইন ভাঙা হয়েছে। এখন যার যার মুখে খাদ্য আছে তারা খাবার খেয়ে এখানে শুয়ে পড়ো। ভোরবেলা সূর্যাস্ত হতেই আমরা আবার বেড়িয়ে পড়বো। নাহলে এই আইল্যান্ড এ বিপদ কম নেই।

আমিতো মুখে করে খাবার আনিনি। আমি কি খাবো?
রাজকুমারী মিকি বলল কথাটি।

তোমাকে কি কেউ খাবার আনতে না করেছিলো? কেন খাবার আনোনি তুমি? এখন না খেয়ে থাকো। কেউ তোমাকে খাদ্যের ভাগ দিচ্ছেনা এটা জেনে রাখো। বুঝলে রাজকুমারী মিকি!
:-এতক্ষণ পর কিছু বলল লরা। তবে সেটাও খোঁচামারা কথা।

কথাটা মিকির শরীরে কাটার মত আটকালো মনে হচ্ছে।
সে মুহূর্তেই রাগান্বিত হয়ে গেলো।
আর তার অহংকারী কন্ঠে লরাকে হুমকি দিয়ে বসলো
তুই আমার মুখের উপর কথা বললি? এতটা বেয়াদবি আমিতো সহ্য করবোনা ।

:-এই বলে রাজকুমারী মিকি লরার দিকে এগিয়ে জেতে লাগলো।

কিন্তু এবার প্লিক এসে তাকে বাধা দিয়ে নিজের মুখে থাকা খাবার রাজকুমারী মিকির মুখে তুলে দিলো।

এটা দেখে লরা আর এক মুহূর্তও সেখানে থাকলোনা।
লরা শামুকের উপরে গিয়ে বসে রইলো।

প্লিক মিকিকে শান্ত করতে পেরেছে।

সন্ধ্যা হয়ে এলো
সবাই শামুকের ভেতরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

এখনো শামুকের উপড়ে বসে বসে আকাশের তারা আর চাঁদ দেখছে লরা। আর মনে ভাবছে↓

:-আমার ভাগ্যটাই খারাপ।কখনো না পেলাম বাবা মাকে। না পেলান ভাই বোন। পেয়েছিলাম শুধু একটা বন্ধু, আর সেও আজ আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো।

হঠাত প্লিক কোথা থেকে এসে লরার পাশে বসলো।
কিরে কি করছিস একা একা?। :লরাকে উদ্দেশ্য করে বলল প্লিক।

নাহ! কিছুনা। আকাশ দেখছি।

খেয়েছিস?

না খাইনিতো

কেন?

তুইতো এখন রাজকুমারীর সাথে থাকার কথা। কিন্তু তুই আমার সাথে যে?

আরে আমি কি নিজ ইচ্ছায় অগুলো করছি? আমি রাজার ভয়ে এগুলা করছি। আর তুই ক্ষেপছিস কেন? তুই না আমার শত্রু

শত্রুতো অবশ্যই! কিন্তু তার চেয়ে ভালো বন্ধু। তোকে খুব ভালো বন্ধু মনে করেছিলাম রে। কিন্তু তুই আমার সাথে এটা করতে পাড়লি?

কি করলাম?

তুই আমার সামনেই মিকির মুখে খাবার তুলে দিলি।

আরে এটা কোন বিষয় না। ও হলো রাজকুমারী। তার কথামতো আমাদের চলতে হবে। নইলে রাজা আমাদের ছাড়বেনা। তাই আমি ওটা করেছি।

হুম বুঝলাম। কিন্তু এরপর থেকে আর করবিনাতো

হুম আচ্ছা করবোনা। এখন খেয়ে নেতারপর ঘুমা।

তুইওতো খাসনি। আয় তোর মুখে খাবার তুলে দেই

এরপর লরা প্লিক এর মুখে খাবার তুলে দিয়ে নিজেও খেলো আর তারা শামুক এর উপরেই ঘুমিয়ে পড়লো।

অনেক্ষণ পর বাতাসের কারণে একটা বড় পাতা সেই শামুকের উপরে এসে শামুকটাকে ঢাকা দিয়ে দিলো

তারপর

পর্বঃ ৩

পাতাটি সরাসরি শামুক এর উপরে পড়লো আর সাথে সাথেই প্লিক আর লরার ঘুম ভেঙে গেলো।
করুণ কণ্ঠে লরা প্লিককে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

প্লিক এখন কি হবে? আমরাতো বন্দি হয়ে গেলাম।

কি হবে তা আমিও সঠিক বুঝতে পাড়ছিনা। কিন্তু মনে হচ্ছে আমাদেরকে এখান থেকে মুক্ত করতে পারে কোন এক ঝর বা তুফান।

একি বলছিস তুই? ঝর তুফান এ আমরা বাঁঁচবো কিভাবে? আমরাওতো উড়ে যাবো।

আর আমি সেটাই চাই!

মানে ?

ভেবে দেখ আমরা এখন বন্দি আছি। আর এটা একটা আইল্যান্ড। গাছের পাতা পরেছে মানে অবশ্যই বাতাস বা ঝর তুফান হয়েছে। আর আমরা রাতেও দেখেছি আকাশে তারার সংখ্যা খুব কম ছিলো। তারমানে এইযে আকাশে মেঘ জমাট ছিলো। আর তা আস্তে আস্তে বড় আকারের রুপ ধারণ করে আর বড় কিছুরি ইংগিত দেয়। যেমন-বৃষ্টি,ঝর,তুফান এইসবের। তারমানে আবার ঝর বৃষ্টি আসতে চলেছে। অপেক্ষা কর আমরা মুক্ত হবো।

তুই এতো ইন্টেলিজেন্ট।
অবাক হয়ে বলল লরা।

এখন আর কিছু বলিসনা। চুপ করে থাক দেখি কি হয়।

ছোট্ট শামুকের ভেতর গভীর ঘুমে মগ্ন রাজকুমারী মিকি।

অন্যপাশে ঘুমুচ্ছে রিক আর মিক। হঠাত রাজকুমারী চিৎকার করে উঠলো
এই উঠ তোরা

রাজকুমারীর চিৎকার শুনে চমকে উঠলো দুইজন প্রহরী।

কি অইছে রাজকুমারী। চিল্লানি মারেন ক্যান?

প্লিক কোথায়?

আমরা কি জানি পিলিক কোথায়?

জানিনা মানে কি জানিশ?

আমরা হাছাই জানিনা হেই পিলিক কোথায়।

তারা আমাদের এই ফাকা আইল্যান্ড এ রেখে পালিয়ে জায়নিতো?

হইতেও পাড়ে। আমাগোর ওপর তার এমনি রাগ আছে। আর আমাগো এইহানে রাইখা সে লরাকে নিয়া ভাগছে

সে যদি এমনটাই করে থাকে তাহলে তার প্রাপ্য শাস্তি হবে মৃত্যু।
তাকিয়ে কি আমার চেহারা দর্ষণ করবি নাকি ওদের দুজনকে খুঁজবি?

আচ্ছা রাজকুমারী যাচ্ছি

প্লিক আর লরাকে খুঁজবার জন্য শামুকের ভেতর থেকে বের হলো সেই দুইজন প্রহরী।
কিন্তু তারা জানেনা যে প্লিক আর লরা উপরেই বন্দি।
হঠাত তারা মাথার ওপর তাকাতেই দেখলো একটা বড় পাতা শামুককে ঢেকে দিয়েছে। কিন্ত তারা এটা দেখেও সেখানে গেলোনা।

রাজকুমারী মিকি বেড়িয়ে আসলো। সেও দেখলো পাতাটিকে। প্রথমে ভাবলো সাধারণ ব্যাপার কিন্তু যখন প্লিকের গন্ধ পেলো তখন সে শামুকের উপরে উঠতে লাগলো।
উপরে উঠে দেখলো যে প্লিক আর লরা সেখানে একজন আরেকজনের উপরে ভারসাম্যহীন অবস্থায় পরে আছে। এটা দেখে রাজকুমারী মিকি তাদের দুজনকেই বেড় করে আনলো শামুকের ভিতর।

জ্ঞান হারানো অবস্থায় শুয়ে আছে প্লিক আর লরা। প্লিকের পাশে বসে আছে মিকি। প্লিকের চোখ খুলতে দেখে জিজ্ঞেস করলো মিকি

প্লিক!

হু

তুমি ঠিক আছো?

হুমকিন্তু আমরা কিভাবে বের হলাম?

আমি তোমাদেরকে উপর থেকে নিচে এনেছি

ধন্যবাদ মিকি। লরা কোথায়?

লরাআছে।

কিন্তু কোথায়?

আছে আশেপাশেই

ও ঠিক আছে?

হুম ঠিক আছে(মুখ মলিন করে বলল মিকি)

আমাদের মিশনকে এখনো সাক্সেসফুল করতে পাড়িনি। আমাদের জেতে হবে। জলদি চলো। এখানে আর নয়

-হঠাত শামুকের ভেতরে প্রবেশ করলো লরা।
কিরেঠিক আছিস এখন?

হুম কই ছিলি?

ছিলাম আশেপাশেইরাস্তার সন্ধান করতে গেসিলাম।

ওহ কোনপাশে জেতে হবে?

উত্তর দিকেপ্রায় অনেকদূর আরো

আমাদের থেমে থাকা জাবেনা। বের হও সবাই

শামুক ছেড়ে সবাই বেড়িয়ে পড়লো নিজেদের গন্তব্যে খাদ্য সঞ্চয় এর জন্য।
সবার সামনে লরা, তারপর প্লিক তারপর মিকি এভাবে হেটেই জাচ্ছে তারা। হঠাত মাঝ রাস্তায় থেমে দাড়ালো লরা।
আচমকা থামার কারণে বলে উঠলো প্লিক
কিরে কি হলো? থামলি কেন?

সামনে তাকিয়ে দেখ।

কেন কি সামনে?

একটা বড় মৌমাছি এগিয়ে আসছে তাদের দিকে। ভয় পেতে লাগলো সবাই। আচমকা মৌমাছি তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। এবং প্লিককে উদ্দেশ্য করে বলল
তোমরা কারা? এই আইল্যান্ড এ কি?

কাপা কাপা গলায় বলে উঠলো প্লিক
আমরা খাদ্য সঞ্চয় করবার জন্য শহরে যাচ্ছি

ওহ। শহর আরো অনেকদূর। এক কাজ করো তোমরা সবাই আমার পিঠে ওঠো। আমি তোমাদের পৌছে দেবো শহরে।

সত্যিইই?

হ্যারে বাবা সত্যি। এখন তাড়াতাড়ি উঠে পড়োতো। এই আইল্যান্ড এ অনেক বিপদ। চলো।

৫জন পিঁপড়ে মৌমাছির উপরে উঠে বসতেই মৌমাছি উড়তে লাগলো শহরের উদ্দেশ্যে।

অনেক্ষণ উড়বার পর এক মাঠে তাদের নামিয়ে দিয়ে মৌমাছি বলল
আমি আর সামনে জেতে পাড়বোনা। সামনে গেলেই আমার বিপদ।

ধন্যবাদ মাছি ভাই। আমাদের সাহাজ্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।।

আরে ধন্যবাদের কিচ্ছু নেই। আমারা এভাবেই অন্যের সাহায্য করি।
আচ্ছা আসি তাহলে জাও তোমরা।

আচ্ছা

এই বলে মৌমাছিটা আবার উড়াল দিয়ে চলে গেলো।

বিরাট আকৃতির মাঠ একটা। শহরে এসে পৌঁছেছে পিঁপড়েবাহিনী।
কিন্তু খাদ্য কোথায় কেউ অনুমান করতে পাড়ছেনা। এমন সময় প্লিক লরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
কোথায় খাদ্য

লরা একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে গন্ধ শুকতে লাগলো।
কিছুক্ষণ এই প্রক্রিয়া করবার পর লরা বাকিদেরকেও সামনে এগোতে বলল।

লরা কোথায় আছে খাদ্য? কিছু পেলি?

ওইযে সামনে বাড়ি দেখা যাচ্ছে ওই বাড়িতেই।

ওহ আচ্ছা চল জাওয়া জাক।

অনেক্ষণ হাটার পর সেই বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো পিঁপড়ে বাহিনী। প্লিক এবার দরজার নিচ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। সাথে লরা, মিকি,রিক আর মিক।

ভেতরে ঢুকে তারা দেখলো এত্ত বড় বাড়ি। কোথায় খাদ্য। খুঁজতে লাগলো সবাই আলাদা আলাদা হয়ে।

অনেক্ষণ খোঁজার পরও কিচ্ছু পেলোনা তারা কেউইহঠাত একটা ঘরে চোখ পড়লো প্লিকের। সে বললআমার ধারনা যদি সঠিক হয় তাহলে এই ঘরটাতেই আমরা খাদ্য পাবো। চলো সবাই

সবাই মিলে ঘরটায় প্রবেশ করলো। ঘরে প্রবেশ করেই তারা দেখতে পেলো একটি প্লেটে ৫/৬ পিস মিষ্টি পড়ে আছে। আর তাতে আছে অনেক মিষ্টির শিরা।

সবাই সেদিকে এগিয়ে জাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। কিন্তু বাধা দিলো প্লিক
দাড়াও। আমরা আগে রাজ্যে সিগন্যাল পাঠাবো তারপর উড়ন্ত সৈনিকরা আসলেই এগুলো নিয়ে যাবো।

সবাই প্লিক এর কোথায় আচ্ছা সম্মতি দিলো। এরপর ৫জনেই তাদের মুখ দিয়ে একসাথে চিৎকার করে উঠলো। আর এই শব্দ গিয়ে পৌঁছালো সরাসরি পিঁপড়েদের রাজ্যে।

রাজা সিগন্যাল বুঝতে পেরে উড়ন্ত পিঁপড়েদের সাথে আরো অনেক সৈনিক পাঠিয়ে দিলেন সেই শব্দ অনুসরণ করে শহরে জাওয়ার জন্য। রওয়ানা হলো ১০০০ পিঁপড়ে।

কিছুক্ষণ এর মাঝেই সেই বাড়িতে পিঁপড়েদের ভীর শুরু হয়ে গেলো।
প্লিককে দেখে অনেক খুশি হলো বাকি পিঁপড়েগুলো।

অনেকগুলো পিঁপড়ে মিলে একটি করে মিষ্টি ধরলো আর তাদের উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বেশ কজন উড়ন্ত পিঁপড়ে।

এভাবে মিষ্টিগুলো নিয়ে জায় উড়ন্ত পিঁপড়েগুলি
শেষমেশ খাদ্য সঞ্চয় মিষনে সাক্সেসফুল হতে পেরে খুবই খুশি প্লিক। সবাইকে নিজের সাথে নিয়ে সেই বাড়ি থেকে বের হলেন। কিন্তু বের হতেই একটা ফুটবল খুব দুরন্ত গতিতে এসে লরাকে লাগে। এটা দেখে সাথে সাথে সবাই থমকে যায়। কি হলো কারো যেন সেদিকে নজ্বর নেই। মুহূর্তেই এক ছেলে এসে বলটি উঠিয়ে নিয়ে গেলো। পিঁপড়েরা দেখলো লরার বডিডা নেতিয়ে পড়ে আছে ফ্লোরেমাথাটা ছুটে পড়ে আছে অন্য পাশে।

দেহটা লেপটে আছে মাটির সাথেপ্লিক এগিয়ে গিয়ে তার মুখ দিয়ে লরার শরীরটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। কিন্তু দেখা গেলো সে মৃত। সাথে সাথেই সেখানে আশেপাশের হাজারো পিঁপড়ে সেখানে ভীর শুরু করে দিলো।

প্লিক লরার আশেপাশে দৌড়চ্ছে বারবার। তাকে বাচানোর জন্য বহু চেষ্টা করছে সে । ঠিক সে সময় বাড়ির মানুষের চোখে এই কাহিনী পরে । এত পিঁপড়ে বাড়ির দরজায় দেখে যে কারো মাথা গরম হয়ে যাবে। সাথে সাথে রুম থেকে হলুদ এর গুরো এনে সেখানে ঢালতে লাগলো। সেই সময় প্লিক এর রাজ্যের কিছু উড়ন্ত পিঁপড়ে এসে প্লিককে এবং বাকি সদস্যদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে উড়ে জেতে লাগলো
প্লিক তাকিয়ে আছে লরার নিথর হয়ে থাকা বডিটার দিকে। চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছেই

পর্বঃ ৪ (শেষ পর্ব)

রাজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্লিক, মিকি, রিক এবং মিক।

রাজা খুব খুশি প্লিকের উপর। খুশিতে সে তার মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে প্লিকের উদ্দেশ্যে বলল

তুমি করে দেখিয়েছো প্লিক। তুমি পেরেছো। শাবাশ!

মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্লিক। তার মুখের ভাষা আজ যেন মরে গেছে লরার সাথে।

রাজা অবাক হয়ে বলল
প্লিক লরার জন্য কষ্ট হচ্ছে তোমার আমি জানি। কিন্তু ভেবে দেখো কতজন পিঁপড়ের জন্য সে তার জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। তুমি নিজেকে সামলে নাও।

এবারো প্লিক কিছু বললনা। মনে হচ্ছে তার দেহটা শুধু উপস্থিত। কিন্তু তার আত্মা যেন এখনো সেই লরার মৃত্যুর শহরে।

এবার রাজা বলে উঠলো
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তোমার সাথে আমার মেয়ের জোড়া বেধে দিবো। তুমিকি এতে রাজী?

এবার রাজাকে অবাক করে প্লিক বলে উঠলো
ক্ষমা করবেন রাজা মহাশয়। আমি এই ধরনের কোন কিচ্ছুকে সাপোর্ট করিনা। আমার একমাত্র জোড়া ছিলো লরা।আর সে আজ নেই। আর আমি চাইনা তার জাগায় অন্য কারো আবির্ভাব ঘটুক।

কিন্তু প্লিক লরা এখন আর নেই।

আমি চাই রাজপ্রাসাদ থেকে আমাকে কিছুদিনের জন্য ছুটি দেয়া হোক। আমি একা থাকতে চাই। আপনি হয়তো আমাকে না বলবেন না।

তুমি যখন চাও তাহলে তোমার কথাই রাখা হলো। তুমি একা থাকতে পাড়ো।

ধন্যবাদ।

প্লিক রাজপ্রাসাদ থেকে বেড়িয়ে নিজের শান্তির জায়গা সুইমিংপুল এ গিয়ে বসলো। একমনে লরার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ভাবতে লাগলো। তার চোখ দিয়ে পানি পরছে। সে বুঝতে পারছে সবার জীবনেই কষ্ট আছে। হোক সেটা বিভিন্ন প্রাণি।

কিছুক্ষণ চুপচাপ সময় কাটানোর পর প্লিক নিজেকে বলতে লাগলো

আমাদের জীবন কত রিস্কের! তাইনা?
এইযে প্রথমে বাচার জন্য খাদ্য সঞ্চয় করো,তারপর অপরদের জন্যও খাদ্য সঞ্চয় করো। আর এই খাদ্য সঞ্চয় করাটা কত কষ্টের। হাজারো বিপদ পেড়িয়ে জীবন ঝুঁকিতে ফেলে এই কাজ করতে হয়। কারণ নিজেকেতো বাচাতে হবে।অপরকেও বাঁচাতে হবে।

আমরা যখন কোন মানুষের বাসায় বা তাদের আশেপাশ দিয়ে জাওয়ার সময় আমাদের দেখলেই তারা আমাদের মারার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। পিষে দেয় আমাদের। কোন অস্তিত্বই রাখেনা। কারণ কি? আমারা তাদের সামনে দিয়ে বা তাদের শরীরের উপড়ে উঠলে।

কিন্তু আমরা কেন তাদের শরীরে জাই?
কারণ যখন তারা আমাদের ঘর/রাজ্যে পা দিয়ে পিষে ফেলে হাজারো জুটি হাজারো পরিবার নষ্ট করে দেয়। তখনই আমরা তাদের শরীরে উঠে একবার কামড় দিতে পারি শুধু। কিন্তু আফসোস তাদের বিন্দুমাত্রও ক্ষতি আমরা করতে পাড়িনা।

কিন্তু তারা আমাদের তখনি ধরে পিষে ফেলে। তারাই স্বাধীন। আমরাতো সিমীত।

কোন মানুষের সামনে দিয়ে জাওয়ার সময় আমরা যখন লাইন হয়ে খাদ্য একজনের থেকে আরেকজনের মুখে দিয়ে সে খাবার রাজ্যে পৌঁছাই। তখন তারা এটা দেখে আমাদের ওপর বিষ(হলুদ) ছিটিয়ে মাড়তে চায়।

একবারো ভাবেনা আমাদেরও জীবন আছে। আমাদেরও প্রান আছে,পেট আছে। আমাদেরও বাচার অধিকার আছে। না বুঝেই আমাদের মেরে ফেলে বা হত্যা করে।

আমাদের দোষ কি?
আমরা ছোট হয়ে জন্মেছি? এটাই আমাদের দোষ। জানিনা কেন সৃষ্টিকর্তা আমাদের এভাবে বানালেন! নিশ্চই ভালো কিছুর জন্যেই।

কষ্ট লাগে তখন যখন আমাদের ঘর-বাড়ি সব শেষ হয়ে জায় নিমিষেই।
হাজারো বাবা মা,হাজারো সহকর্মী, হাজারো বন্ধু এবং হাজারো জুটি শেষ হয়ে জায়।
আর ভাগ্যের দায়ে বেচে জাই আমরা। নিজের চোখে দেখতে হয় তাদের মৃত্যু। কি কষ্ট সেই মুহূর্তটার।

আর বেশি কষ্ট লাগে তখন যখন খাদ্য সঞ্চয় করতে গিয়ে খুন(মানুষ মেরে ফেলে) হয়। কিন্তু সেই খবর জানতে পাড়েনা রাজ্যে থাকা পিঁপড়েগুলো। তারা আশা নিয়ে থাকে যে খাদ্য সঞ্চয় এর সৈনিকরা এই বুঝি খাদ্য নিয়ে আসলো। কিন্তু তারা যখন ফিরতে পাড়েনা। তখন রাজ্যে থাকা পিঁপড়েগুলোও মাড়া জায় খাদ্যের অভাবে। সেখানে থাকে কত গর্ভবতী পিঁপড়ে। যাদের পেটে থাকে ছোট্ট ছোট্ট ডিম। যেখানে তৈরী হয় আরো পিঁপড়ে। কিন্ত তাদের দূরভাগ্য! তারা আর আসতে পাড়েনা পৃথিবীতে। মারা জায় মায়ের গর্ভেই।

এইসব কিছু হওয়ার পরও আমরা নিজেদের এবং ওপরের বেচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করি মৃত্যুর সাথে এই খাদ্য সঞ্চয় এর জন্য।

কারণ আমরাইতো “পিপড়ে”। আমাদেরকে রিস্ক নিতেই হয়।

কথাগুলো নিজেকে বলে সেখান থেকে উঠে অজানার দিকে হাটতে হাটতে চলে গেলো প্লিক।

সমাপ্ত

বিঃদ্রঃ জানিনা কতটুকু আপনাদের বুঝাতে পেরেছি। কিন্তু এতটুকু নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে তাদের মারাটা ঠিক না। কোন ছোট প্রাণী মারাই ঠিক না। কারণ তাদেরও জীবন আছে। বেচে থাকার অধিকার তাদেরও আছে।

লরাকে কেন মাড়লামঃ এই নিয়ে অনেকে অবাক লরাকে কেন মাড়লাম?
এখন দেখুন লরাকে যদি না মাড়তাম তাহলে আপনজনকে হাড়ানোর বেদনাটা যে পিঁপড়েদেরও আছে সেটা বোঝাতে পাড়তাম না। তাই লরাকে মারা। তাদের ফিলিংসটুকু বোঝানোর জন্যই এটা করা।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন

তাদেরও জীবন আছে,পরিবার আছে,বন্ধু/বান্ধব আছে,প্রিয়জন আছে। আমরা এটা না বুঝেই তাদের পিষে দেই মাটির সাথে।
অসমাপ্তই রয়ে জায় তাদের ইচ্ছে, আশা, কামনাগুলো।

মূলত এইজন্যেই এই গল্পটা লিখা। না জানি আরো কত কষ্ট এই পিঁপড়েদের। আমি যা জানি তাই লিখতে পেরেছি। কিন্তু তাদের আরো অনেক অজানা বিপদও থাকতে পাড়ে যা আমাদের অজানা।

আশা করি সবাই বুঝতে পেড়েছেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

এই গল্পটি শেয়ার করার অনুরোধ রইল, কারণ আপনার এই শেয়ারের মাধ্যমে অনেকে তাদের ভুল বুজতে পারবে। জীবের প্রতি দয়াশীল হবে। তাই এই মহৎ কাজ করতে ভুলবেন না।

আরো পড়ুন- এলিয়েন রহস্য

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *