রোমান্টিক লাভ স্টোরি – সিনিয়র আপু যখন বউ – পর্ব ৫: আমার আর রুমঝুম আপুর বেশ ভালই আগাচ্ছিল কিন্তু কোথা থেকে রনি নামে এক ভিলেন আমাদের সম্পর্কে ঢুকে গেল। তবে কি আমার ভালবাসা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে? চলুন দেখি কি হয়?
ভিলেন ও হিরো
তুমি জানো না, রিমঝিম আর আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আমাদের পরীক্ষা শেষ হলে বিয়ে দেওয়া হবে।
রনির কথাটা শুনে বুকের ভেতরটা কেমন যেনো করতে লাগলো। চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে গেলো জানতাম এমন কিছু হবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি হবে তা বুঝতে পারি নি। খুব খারাপ লাগছিলো। কি করবো বুঝতে পারছি না! এক নিমেষে মনে হয় সব শেষ হয়ে গেলো। মনে হয় রনির কথাগুলো কোনো স্বপ্ন।
রনিঃ কি হলো রিয়াদ? তুমি ঠিক আছ তো। এমন অস্থির লাগছে কেনো তোমাকে?
আমিঃ কই, আমি তো ঠিক আছি।
রনিঃ না, মনে হচ্ছে খুব অস্থির হয়ে আছো।
আমিঃ আসলে বাসায় যেতে হবে তাড়াতাড়ি। তাই একটু তাড়াহুড়োই আছি।
রনিঃ ও আচ্ছা।
আমিঃ আচ্ছা, আমি চলে যাই। রিমঝিম আপু আসলে বলে দিয়েন আমি চলে গেছি।
রনিঃ এখুনি চলে যাবে, রিমঝিম আসুক যেও।
আমিঃ না, একটা বড় ক্লাইন্ট নক দেওয়ার কথা আছে। আমাকে যেতেই হবে।
রনিঃ আচ্ছা, তাহলে যাও।
আমি ওখান থেকে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে আব্বু আম্মুর ছবিটা হাতে নিয়ে বসে পরলাম। খুব মিস করছি তাদেরকে আজ।
কেনো তোমরা আমাকে এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে চলে গেলে। আমার মতো অভাগা হয়তো খুব কমই আছে।
ভালবাসার হাহাকার
ভালোবাসার মানুষগুলো সব একে একে ছেড়ে চলে যায়। প্রথমে তোমরা চলে গেলে। এখন রিমঝিম আপু। আম্মু জানো, আমি না রিমঝিম আপুকে খুব ভালোবাসি।
রিমঝিম আপুর সাথে থাকলে তোমার কথা খুব মনে পরে। রিমঝিম আপু একদম তোমার মতো শাসন করে। তুমি যেমন আমাকে খাইয়ে দিতে রিমঝিম আপুও আমাকে মাঝে মাঝে খাইয়ে দিতো। কোনো ভুল করলে বকা দিতো।
তুমি যেমন আমাকে একা করে ছেড়ে গেলে সেও চলে যাবে একদিন। কিন্তু আম্মু জানো কি আমি না ওকে ভুলতে পারবো না।
তোমাদের যেমন আমি কোনোদিন ভূলতে পারবো না তেমনি তাকেও আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। আমি কি করবো তোমরাই বলো খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। বুকের ভেতরটা পুরে ছারকার হয়ে যাচ্ছে। শুধু তার কথাই মনে পরছে।
আম্মু আব্বুর ছবি জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পরলাম। মাঝ রাতে ঘুম ভাংলো।
ঘুম ভাংগার পরে মনে হলো ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো স্বপ্ন ছিল। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম কিছুই মিথ্যে না শুধু আজ আমার ভালোবাসাটা মিথ্যে হয়ে গেলো। চাপা পরে গেলো কষ্টের ভাজে। ঘুম থেকে উঠে যখন বুঝতে পারেন যে প্রিয় মানুষটা আর আপনার জীবনের অংশ হবে না তখন যন্ত্রণার সিমানা থাকে না। তখন ইচ্ছে করে হয়তো আর ঘুম হয় না!
সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে জানালার পাশে গিয়ে বসলাম। আজ চাঁদের আলোটাও কেমন যেন ফ্যাকাশে মনে হচ্ছে। যে করেই হোক, এই কষ্ট থেকে আমাকে সামলে উঠতে হবে। জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছি আর কষ্ট নিতে পারবো না।
সিগারেট ধরিয়ে বসে রইলাম। এক সময় লক্ষ্য করলাম সিগারেট এর ফিলটার টা ভিজে গেছে।
তারপর চোখে হাত দিয়ে দেখি চোখ দিয়ে পানি পরছে। হাতটা কাপছে , জোরে জোরে কান্না করতে লাগলাম। আম্মু বলতো, কান্না করলে বুকটা হালকা লাগে। আজ খুব একা লাগছে।
সারা রাত কান্না করলাম। কিছুটা হলেও বুঝতে পারলাম যে দুনিয়ায় কেউ কারো নয়। একা থাকাটাই ভালো যত কারো প্রতি মায়া বারাবেন ততো কষ্ট পেতে হবে (রিয়েল লাইফেও আমি এটাই ভাবি )
কষ্টের ভালবাসা
প্রায় এক সপ্তাহ লাগলো। রিমঝিম আপুর মায়াটা কিছুটা কাটিয়ে উটতে। তারপরেও তার সামনে গেলে নিজেকে আটকে রাখতে পারব কি না জানিনা। তাই আর কলেজে যাব না, ঠিক করলাম। এভাবে দশ দিন কেটে গেলো।
ফোনটাও অফ করে রেখে দিছি যাতে কেউ ফোন দিতে না পারে। এখনো রাতে ঘুমাতে পারি না। তাই ঘুমের ওষুধ কিনে রাখছি। ঘুমের ওষুধ খেয়ে রাতটা পার হয়ে যায় আর দিনের বেলা সিগারেট তো আছেই। এই দশ দিনে সিগারেট খাওয়াটা একটু বেরে গেছে। সকাল ঘুম থেকে উঠে একটা সিগারেট ধরিয়ে শেটা শেষ করে ব্রাশ করে বাইরে বের হলাম। নাস্তা করে বাসায় গেলাম। গিয়ে কাজ করতে লাগলাম।
এই দশ দিনে কাজ একদম করা হয়নি। নিজের এক বছর চলার মতো যথেষ্ট টাকা আছে আর আব্বু আম্মু চলে যাওয়ার আগে যা রেখে গেছে তাতে আমার সারাজীবন চলে যাবে। তারপরেও ফ্রিল্যান্সিং করি। সিগারেট খেতে খেতে কাজ করতে লাগলাম।
একটু পর দরজার বেল কে জেনো বাজালো।
দরজা খুলে দিতেই সামনে দেখি রিমঝিম আপু দাঁড়িয়ে। হাত উঠালো মারার জন্য। তারপর কি যেন ভেবে হাতটা নামিয়ে নিলো। চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে।
রিমঝিম আপুঃ কেমন আছিস? (শুকনো কন্ঠে আপু)
আমিঃ ভালো আপু, তুমি?
রিমঝিম আপুঃ ভালো। কেমন শুকিয়ে গেছিস খাওয়া দাওয়া করিস কি না?
আমিঃ আসলে কাজের চাপে খাওয়ার কথা মনেই থাকে না।
রিমঝিম আপুঃ ও আমি তো ভাবছিলাম।
আমিঃ কি ভাবছিলা?
রিমঝিম আপুঃ কিছু না। ভিতরে আসতে বলবি না।
আমিঃ হ্যা, আসো।
না বলা ভালবাসা
রিমঝিম আপু ভিতরে এসে চারদিকে তাকালো।
রিমঝিম আপুঃ এটা বাসা নাকি সিগারেটের দোকান। যেখানে সেখানে সিগারেটের প্যাকেট আর এত গন্ধ কেন?
আমিঃ আসলে অনেকদিন ধরে পরিষ্কার করা হয় নি তো।
রিমঝিম আপুঃ ওহহ আজকেই এগুলো ছাপ করবো চল।
আমিঃ কি বলছ আপু? তোমার হবু বর দেখলে আমাকে মেরে ফেলবে। (শুকনো হাসি দিয়ে আমি)
রিমঝিম আপুঃ হবু বর মানে?
আমিঃ রনি ভাই আমাকে সব বলেছেন, তোমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।
রিমঝিম আপুঃ তুই কথাটা শুনে খুব খুশি হয়েছিস না।
আমিঃ অবশ্যই। কাজের চাপে তোমাকে শুভেচ্ছা জানানোর কথাতো মনেই নেই। এখন বলছি অনেক অনেক শুভেচ্ছা। রনি ভাইয়ের মতো একজন মানুষ জীবন সাথি হিসেবে পাওয়া খুব ভাগ্যের ব্যাপার।
রিমঝিম আপুঃ হুম। চল আমার সাথে আজ কলেজে যাবি।
আমিঃ আমি কলেজে গিয়ে কি করবো? কলেজে গিয়ে আমার কেউ নেই কার সাথে আড্ডা দিবো, বলো?
রিমঝিম আপুঃ কেউ নেই।
আমিঃ আমার জানা মতে তো কেউ নেই। তুমি যাও রনি ভাই হয়তো তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে কলেজে। দেরি করে গেলে হয়তো অভিমান করতে পারে।
আমার কথাটা শুনে রিমঝিম আপুর মুখটা শুকিয়ে গেলো। কিছু না বলেই চলে গেলো।
আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে ওখানে বসে পরলাম। মাথাটা খুব ব্যথা করতিছে।
হটাৎ বান্ধবীর আগমন
সন্ধ্যার দিকে ব্রিজে গিয়ে বসলাম। ব্রিজের রেলিং এ বসে আছি। তখন সামনের দিক থেকে কেউ একজন ডাক দিলো। গাড়ি চলাচল করায় ভালো ভাবে দেখতে পারছিলাম না।
গাড়িগুলো সরে যাওয়ার পর দেখলাম।
একটা মেয়ে আমার দিকে আসছে।
মেয়েটিঃ কেমন আছো?
আমিঃ ভালো কিন্তু আপনাকে চিনলাম না।
মেয়েটিঃ কিন্তু আমি তোমাকে চিনি।
আমিঃ কেমন করে?
মেয়েটিঃ তুমি আমার ক্লাসমেট, তোমাকে চিনবো না।
আমিঃ ওহহ কিন্তু আমি আপনাকে চিনলাম না।
মেয়েটিঃ আমি দিশা (হাত বাড়িয়ে)
আমিঃ ওহহ!
দিশাঃ কলেজে আসো না কেন আর?
আমিঃ ভালো লাগে না।
দিশাঃ কাল থেকে আসবে মনে থাকে যেন।
আমিঃ দেখি।
দিশাঃ দেখি না, আসতেই হবে। তোমার নাম্বারটা দাও।
আমিঃ কেন?
দিশাঃ দিতে বলছি, দাও।
ফোন বের করার সাথে সাথে রিমঝিম আপুর ফোন! চলবে..
পরের পর্ব- রোমান্টিক লাভ স্টোরি – সিনিয়র আপু যখন বউ – পর্ব ৬