মিষ্টি প্রেমের গল্প পর্ব ২: গত পর্ব আমরা দেখেছি কিভাবে মিষ্টি স্যারের সাথে নাটকীয়ভাবে পরিচয় হয়েছিল। দূরন্ত মিষ্টি কিছুটা শান্ত আর ভীত হয়েছিল। মনের গোপন কোণে ভালবাসা নামক একটা চারা গাছ উঁকি দিয়েছে তার। কিন্তু সে কনফিউজড এবং খেয়ালি, দেখি এই পর্বে কি হয় তার?
মিষ্টি প্রেমের গল্প লিখছে মন অল্প অল্প
সেদিন মিষ্টি এবং মুন স্যারের সাথে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটা নিয়ে বেশ আলোচনায় মজেছে। মুন সুযোগ পেয়েছে মিষ্টিকে নিয়ে মজা করার। দেখি কি বলে তারা-
মুনঃ তুই না ভয় পাস না।
মিষ্টিঃ হ্যা! পাই না তো ভয়। আমি কি বলছি আমি ভয় পাচ্ছি!
স্যারের দিকে ক্লাসের সব মেয়েরাই হা করে তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সবাই স্যারের উপর ক্রাশ খাইছে। কিন্তু সবাই এই খাম্বাটার কি দেইখা ক্রাশ খাইলো বুজতাছি না আমি।
মুনঃ স্যারটা কি হ্যান্ডসাম তাই নারে? আমিতো পুরাই ফিদা। (ফিসফিস করে)
মিষ্টিঃ তোর চোখ আছে নাকি গেছে রে?
মুনঃ মানে কি বলতে চাস তুই?
মিষ্টিঃ তোর কোনদিক দিয়ে এইটারে হ্যান্ডসাম মনে হয় রে? আমার কাছেতো খাম্বার মতো লম্বা লাগে। মূলার মতো সাদা লাগতাছে। চোখ গুলা ট্যাড়া ট্যাড়া লাগতাছে। তোর কি দেইখা এইটারে ভালো লাগলো। (অবাক হয়ে)
মুনঃ তুই সত্যি কানা রে। কতো সুন্দর স্যারটারে, তুই কি বানাইয়া দিলি।
মিষ্টিঃ চুপ করতো তুই। যে যেমন তারে তেমনই বললাম, বুঝলি।
স্যারের সাথে সিনেমাটিক পরিচয় পর্ব
তারপর স্যার তার পরিচয় দিলো। স্যারের নাম রোদ চৌধুরি। আরো অনেক কিছুই বলল। এরপর স্যার একে একে সবার সাথে কথা বলছে আর পরিচয় নিচ্ছে। এবার আমার পালা। আমি বই খুলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। স্যার আমাকে ডাকছে তা আমি শুনেও না শুনার ভান করে বসে আছি। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকক্ষণ ডাকার পর আমি দাঁড়াই।
আমি দাঁড়িয়েই আছি। আমার পরিচয় বলাতো দূর একটু মুখও খুলছি না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। আর বাইরের দিকে তাকিয়েই আছি। স্যার তা দেখে রাগে ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু আমার ডোন্ট কেয়ার ভাব।
এরপর স্যার আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে আমার পাশে মুনকে নাম বলতে বললে আমি মুনকে ইশারা করে চুপ থাকতে বললাম। বেচারি মুন জানে আমার কথার বাইরে কথা বললে আমি আর ওর কি অবস্থা করবো। তাই ও চুপ করে আছে। স্যার তা দেখে আরো রেগে আমাদের দুইটারেই ক্লাস থেকেই বের করে দিয়ে বাইরে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে বলল।
আমার মাথা এবার সত্যিই গরম হইয়া গেছে। জীবনে কোনদিন দাঁড়ায় থাকিনাই। আর আজকে আমাকে সোজা কানে ধইরা দাঁড়ায় থাকতে বলল। তাও আবার ক্লাসের বাইরে। আমি সবসময় সবাইরে কানে ধরাইয়া রাখছি আর আজকে আমি কানে ধরলাম। খাম্বার মতো লম্বা তোরে আমি দেইখা নিমু। মেজাজটা চরম হয়ে আছে।
মুনঃ কিরে কি ভাবছোস? সব তোর জন্য হইছে। তুই যদি প্রথমেই স্যার কি বলছে তা বলতি আর আমারেও বলতে দিতি, তাহলে আর আমাগো দুইটারে এভাবে বাইরে দাঁড়ায় থাকতে হইতো না।
মিষ্টিঃ চুপ করতো, বা-ল। একদম কানের সামনে প্যানপ্যান করবি না। প্যান প্যান করলে আমার ভালো লাগে না।
প্রেমের গল্প চারায় পানি ঢালা
তখনই পাশ দিয়ে থার্ড ইয়ারের একটা ছেলে আসলো। ওর নাম রাকিব। ও আমাকে ভার্সিটির শুরু থেকেই আমার পিছে পইরা আছে। প্রপোজও করছে আরকি, কিন্তু আমি কি ওই হাবলা রাকিবরে ভালোবাসমু! হু, দেখতে কেমন হাবলা হাবলা দেখায়। ওরে আমি একদম সহ্য করতে পারিনা। ও তবুও আমার পিছেই পইরা আছে। তারপরও আমাকে বলল-
রাকিবঃ ঐ মিষ্টি তুমি এভাবে দাঁড়ায় আছো কেন?
মিষ্টিঃ ইচ্ছা হইছে তাই (বিরক্তি নিয়ে)।
রাকিবঃ ইচ্ছা হইলে কেউ এভাবে কানে ধইরা দাঁড়ায় থাকে নাকি?
মিষ্টিঃ হ থাকে। তোর সমস্যা কিরে! আমার ইচ্ছা হইছে, তাই আমি কানে ধইরা দাঁড়ায় আছি। আবার আমার ইচ্ছা হইলে নাচঁবো। বুঝছোস! (জোড়ে চিল্লিয়ে)।
তখনই খাম্বায় চলে আসে আর বলে-
রোদঃ কি হচ্ছেটাকি এখানে? তো চিল্লাচিল্লি হচ্ছে কেন?
মিষ্টিঃ আপনি বাইরে কান ধরে থাকতে বলছেন, আমি কান ধরেইতো আছি। তাহলে আবার আপনি এইখানে আসছেন কেন?
রোদঃ কান ধরে থাকতে বলছি কথা বলতে না। তাই চুপ চাপ কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকো। (রেগে বলে চলে যায়। )
রাকিবঃ ও আচ্ছা! তাহলে এই ব্যাপার।
মিষ্টিঃ তুই যাবি নাকি আমি তোরে পিটামু। (রেগে)
রাকিবঃ ওকে যাচ্ছি।
তারপর ও চলে যায়।
মিষ্টিঃ দাঁড়া খাম্বার মতো লম্বা, তোরে আমি যে কি করমু! তা আমি নিজেও জানি না। তুই আমারে অপমান করছিস। আমাকে জীবনে কেউ অপমান করার সাহস পায়নি। কিন্তু তুই করছিস! এবার বুঝবি মজা। বজ্জাত খাম্বা। (রেগে মনে মনে)
প্রেমের গল্প চারায় অক্সিজেন
আর এদিকে রোদ মনে মনে রেগে বোম হয়ে আছে। যেকোন সময় ফেটে যাবে। কারণ আজকে তারেও মিষ্টি ক্লাসে অপমান করছে তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে।
এরপর ক্লাস শেষ হইলে আমি আর মুন দুইজন মিলে ক্যান্টিনে গিয়ে কিছু খেয়ে নেই। তারপর আর কিছু ক্লাস করে বাড়ি গিয়ে রুমে এসে এক ঘণ্টা শাওয়ার নিয়ে বাইরে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। কারণ আমার মাথা এখন প্রচুর ব্যথা করছে।
রাতে আব্বু বাসায় আসলে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে।
আব্বুঃ মামনি, উঠো। সন্ধ্যা হয়ে রাত হয়ে গেছেতো।
মিষ্টিঃ আব্বু, তুমি কখন আসছো? (আব্বুকে জড়িয়ে)
আব্বুঃ একটু আগে মামনি! তুমি নাকি আজকে ভার্সিটি থেকে এসেই ঘুমিয়ে পড়ছো।
মিষ্টিঃ হুম।
আব্বুঃ কেনো?আজকে কি ওখানে কোন ঝামেলা করছো তুমি?
মিষ্টিঃ নাহ, ঝামেলা করবো কেন। কোন ঝামেলা হয়নি আব্বু।
আব্বুঃ আমি তোমাকে চিনি মামনি। কি হইছে বলো আব্বুকে?
মিষ্টিঃ কিছুনা বাবা। আচ্ছা বাদ দাওতো। তুমি আমার জন্য চকলেট আননোনি?
আব্বুঃ আমার মামনির জন্য চকলেট আনতে কি আমি ভুলে গেছি কখনো! হুম, এই নাও। (চকোলেট গুলা দিয়ে)
মিষ্টিঃ থ্যাংক ইউ আব্বু। উম্মাহ!
স্যারকে নিয়ে একটু একটু ভাবনা
তারপর আমি চকলেট খেতে শুরু করি। চকলেট আমার খুব প্রিয়। আব্বু ছোটবেলা থেকেই অফিস থেকে ফিরার সময় আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসে। কখনো মিস হয়না। বলা যায়, এটা আব্বুর প্রতিদিনের অভ্যাস।
ওইদিকে রোদ মাথা গরম করে বাসায় গিয়ে বসে আছে। তখন রোদের মা রুমে এসে বলে-
রোদের মাঃ কিরে রোদ বাবা! তুই এতো রেগে আছিস কেন?
রোদঃ কই মা? আমি রেগে নেই। (হেসে)
রোদের মাঃ তুই আমার কাছে লুকাচ্ছিস কেন? আমি কিন্তু তোকে চিনি।
রোদঃ এমনি মা। সত্যি কিছু হয়নি। প্লিজ আমায় খেতে দাও। আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে?
রোদের মাঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিচ্ছি। তুই যখন বলতে চাইছিস না তখন বলিস না। এখন যা তুই ফ্রেশ হয়ে আস। আমি খাবার বাড়ছি।
রোদ (স্যার) একটু চুপ করে আছে।
২য় পর্ব এখানেই শেষ, চলবে…
পরের পর্ব- মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ৩ | স্যারের সাথে প্রেম
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প