অরুণিমা
আমার বাবা যৌবনে দুর্দান্ত প্রেমিক ছিলো। সুদর্শন হওয়াতে প্রেম করাটা তার জন্য ছিলো সহজ। তবে সে শুদ্ধ প্রেমিক ছিলো না, ছিলো অশুদ্ধ প্রেমিক। একাধিক মেয়ের মন ভেঙেছে। যৌবনের অপকর্মের দরুন অপরাধ বোধ থেকে সে এখন ধর্মীয় জীবন যাপন করে। দান খয়রাত করে উজাড় ভাবে। আমি জানি না বাবার প্রেমিকারা তাকে কোনোদিন ক্ষমা করবে কিনা। বাবার জীবনের এ-অন্ধকার গল্পগুলো জানতে পারি কিছুটা মায়ের কাছ থেকে তবে অধিকাংশ বাবার কাছ থেকে। বাবা দীর্ঘদিন তার এই কালো অধ্যায়ের কথা আমাকে বলে নি। হয়তো কোনোদিন বলতো না। জীবনের একটা সময় হঠাৎ নিজেকে প্রচণ্ড ভাঙতে শুরু করি, পোড়াতে শুরু করি – আমি তোমাকে সে-বিবর্ণ অতীতের কথা বলেছি – বাবা বুঝতে পারলো বিষয়টি। আর তখন থেকেই সে আমাকে বলতে লাগলো তার অশুদ্ধ যৌবনের বৃত্তান্ত। বলার সময় চোখ দিয়ে পানি পড়তো তার। আমি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করতাম না।
তার কান্না আমার কাছে প্রয়োজনীয় বলে মনে হতো। এভাবেই হয়তো তার প্রেমিকারা একদিন কেঁদেছিলো। যাদের সে সুখদ মাংস ছাড়া আর কিছু ভাবে নি। তার কালো আখ্যান শেষে প্রতিবার একটি কথা বলতো,”জীবদ্দশায় আমি অবশ্যই আমার পাপের শাস্তি ভোগ করবো – প্রভু যদি ক্ষমা না-করেন তাহলে পরকালেও ভোগ করবো। কিন্তু…” এই অবধি এসে সে একটু থামতো, তারপর বলতো,”কিন্তু আমার অপরাধের নিঃশ্বাস যদি আমার প্রিয়জনের ওপর পড়ে তা মেনে নেয়া কঠিন হবে।
” তার অদম্য আতঙ্ক হলো তার কুকর্মের সাজা হয়তো ভোগ করতে হতে পারে তার আপনজনদেরও। তার আতঙ্ক কোনোদিন সত্যে পরিণত হবে কিনা কিংবা নিজেকে অকস্মাৎ ভাঙার পেছনে তার নষ্ট যৌবনের হাত ছিলো কিনা জানি না। তবে বাবা কোথায় যেন মিল খুঁজে পেতো। ফলে তার কান্না আরো বাড়তো। তার দীর্ঘ দাড়ি বেয়ে ঝরতো অবিরত অশ্রু।
আমি প্রায় সময় বাবার অদেখা প্রেমিকাদের স্বপ্ন দেখি। তাদের যন্ত্রণাকাতর চোখগুলো দেখি।
অরুণিমা, তোমার চিঠি পড়ে বাবার মতো কাঁদলাম। ভালোবাসার যে-ডালি সাজিয়ে তোমার স্বজনরা প্রতীক্ষা করছে আমার, কোনোদিন সে-ভালোবাসা ছুঁয়ে দেখার পরম ভাগ্য আমার হবে না।
বাস ছুটে চলেছে অন্য এক গন্তব্যে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি ফাগুন রাতের দিকে। আমার চোখ ভিজছে ভিজুক, গাল ভিজছে ভিজুক। আর মুছবো না। কোনোদিন না।
ভালো থেকো।
ইতি
রুদ্র