স্বামী স্ত্রীর ঝগড়াটে ভালোবাসার গল্প

স্বামী স্ত্রীর ঝগড়াটে ভালোবাসার গল্প – স্বামীর ঘর

স্বামী স্ত্রীর ঝগড়াটে ভালোবাসার গল্প – স্বামীর ঘর: স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার মাঝে বাঁধা হল ভুল বোঝাবুঝি। যত সম্পর্ক ভেঙ্গেছে তার প্রায় সবটাই এই অন্ধ বিশ্বাস ও ভুল বোঝার কারন। আজকে আমরা এমনি একটি ঝগড়াটে মিষ্টি ভালোবাসার গল্প শুনব। চলুন তবে শুরু করা যাক।

পর্ব- ১

‘বিয়ে’ শব্দটা ছোট হলেও এর দায়িত্ব কিন্তু অনেক। কিছু বুঝে না উঠতেই হঠাৎই আমার বিয়ে হয়ে গেল। আর আজকে আমার বিয়ের ২য় দিন।

জানতে পারলাম, আমার স্বামী অন্য নারীদের প্রতি আসক্ত। কথাটা অন্য কেউ না বরং আমার শাশুড়ী নিজেই আমাকে বললেন।

বিয়েটা আমি আম্মু আব্বুর পছন্দ মতোই করেছি। ছেলে নাকি আমাকে দেখে অনেক পছন্দও করেছিলো। সবাই বলে মা বাবার পছন্দের বিয়েতে নাকি সুখ হয়।

২দিন ধরে নতুন ঘর, নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষের মাঝে এসেছি কিছুই খারাপ লাগেনি। সবাই ভালো, বিশেষ করে আমার স্বামী। যদিও মাত্র ২দিনে একজন মানুষকে ভালো মতো চেনা যায় না। তবে যতটুকু বুঝা গেলো, তাতেই আমি বলতে পারি উনি বেশ ভালো মানুষ। বিয়ের কথা যখন চলছিলো তখন আম্মু, চাচিরা সবাই বলেছিলো ছেলে যেহেতু আর্মি অফিসার তাহলে নিশ্চয়ই রাগ একটু বেশি হবে। আমি যেন মানিয়ে নিয়ে চলি। ভেবেছিলাম, এমন কিছুই দেখবো এখানে এসে। কিন্তু এখানকার চিত্র তো একদম ভিন্ন।

উনার মতো ভালো, হাসিখুশি আর ঠান্ডা মেজাজের মানুষ আমি নিজেই খুব কম দেখেছি। ২ দিনে আমার বন্ধু হয়ে গিয়েছে উনি।

কেমন যেন একটা ঘোর কাজ করছে। এসব আমার একদমই বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছেনা। আমি উনার স্ত্রী হওয়া স্বত্তেও উনি এখন পর্যন্ত আমাকে স্পর্শ করেননি। আমার পুরোপুরি মনে আছে।

ফুলসজ্জার সময়ে আমার ঘোমটা তুলার পর তিনি সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলেছিলেন,

স্বামীঃ আপনি আমার বন্ধু হবেন?

আমি তখন কিছু বলিনি। শুধু তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

তিনি আবারও বললেন,

স্বামীঃ একটা সম্পর্ক শুরু করার আগে দুইজন মানুষের দুইজন কে জানা খুব বেশি প্রয়োজন। আর একজন মানুষকে চেনার জন্য বোঝার জন্য বন্ধু হওয়া আরো আগে প্রয়োজন। আমাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হলেও আপনাকে আমি আর আমাকে আপনি গ্রহণ করার আগে আমি আমাদের মধ্যে একটা মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।

সে রাতে আমরা যেন অনেক বেশি ভালো বন্ধু হয়ে যাই। আমার মধ্যে কিছুটা জরতা কাজ করলেও উনি আমাকে খুব বেশি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন সব সময়।
এসব দেখার পরে একদম যেন মেনে নিতে পারছিনা মায়ের কথা গুলো।

মা কে কি যে বলবো তাই বুঝে পাচ্ছিনা। এমন সময়…..

স্বামীঃ মারিয়া, মারিয়া! কোথায় তুমি? শাশুড়ী আম্মা কল দিয়েছেন আমার, আর তুমি তোমার শাশুড়ীর সাথে আড্ডা দিচ্ছো। এই নাও কথা বলো।

মারিয়াঃ হুম দাও।

হ্যাঁ ফোনটা আমাকে রোহিত এনে দিয়েছে এখন, উনিই আমার স্বামী।

রোহিত ফোন দেওয়ার পরে মা চলে গেলেন। আমার আম্মু ফোন দিয়েছে জিজ্ঞেস করতে কেমন আছি? নতুন পরিবেশে কি করছি? এসব এর জন্য।

কি থেকে কি বললাম ঠিক বুঝতে পারলাম না নিজেই, কারন আমার মাথায় সব রেখে একটা জিনিসই ঘুরছে। আমার শাশুড়ি কেন এই কথা বললো তার নিজের ছেলেকে নিয়ে।

একটু সময় করে মায়ের সাথে ঠিকমত কথা বলতে হবে।

কোন মতে আম্মুর সাথে কথা শেষ করলাম এসব ভাবতে ভাবতে। এখন মায়ের কাছে যেয়ে পুরো কথাটা জানা লাগবে।

মায়ের কাছে যেই যাবো ওমনি পেছন থেকে রোহিত আমার হাত ধরলো। হাতটা ধরে নিজের দিকে আস্তে করে টান দিলো। রোহিতের চেহারা অনেক বেশি সুন্দর আর খুব বেশি নিষ্পাপ।

কেমন যেন একটা সিমু লাগে তার দিকে তাকালেই। সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে দেখে কে বলবে, যে এই লোকের অন্য কোনো নারীদের প্রতি বাজে আসক্তি থাকতে পারে?
কেমন যেন একটা অনুভুতি কাজ করছে।

আসল কথা হলো তার ছবি যখন প্রথম আমি দেখেছিলাম সেদিনই তার প্রতি ভালো লাগা শুরু হয়ে গিয়েছিলো। বিয়ের এই দুইদিনেই আমি তাকে অনেক বেশি ভালোবাসতে শুরু করেছি। তাই তার দিকে তাকিয়ে যেমন একটা সিমু কাজ করছে, তেমনি বুকের ভেতর একটা ব্যাথা কাজ করছে। যেই মানুষকে আমি এতো ভালোবেসে ফেললাম। সে কি ভুল মানুষ নয় তো?

ঘোর ভাংলো রোহিতের কথা তে।

রোহিতঃ কোথায় যাচ্ছো, মারিয়া? তোমার জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে।

মারিয়াঃ মায়ের সাথে একটু কথা বলতে যাচ্ছি। এটা বলার সাথে সাথে রোহিতের মুখটা একদম শুকিয়ে গেলো।

আমি সেদিকে খেয়াল না করে তাকে আবারো বললাম,

মারিয়াঃ আমি একটু কথা বলে তারপর আসছি।

রোহিতঃ মারিয়া দাঁড়াও।

মারিয়াঃ জি বলুন।

রোহিতঃ তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি। বিয়ের দুই দিন হয়ে গেল। তাই ভাবছি আজ বলে দিই। আমরা কিন্তু কাল সকালে আমাদের নতুন বাসায় চলে যাব।

মারিয়াঃ নতুন বাসা বলতে? আমি ঠিক বুঝলাম না।

রোহিতঃ মানে হচ্ছে এ পরিবারের তো সবাই জয়েন ফ্যারিয়া। আমরা সবার সাথে থাকবো না। আমরা আলাদা থাকবো।

মারিয়াঃ কিন্তু আলাদা কেন থাকবো?

রোহিতঃ ওমা একি একালের মেয়ে হয়ে তুমি এই কথা কি বলছো? এখন তো সবাই আলাদা থাকতে চায়। মেয়েদের ধারণা এটা যে শ্বশুর শাশুড়ির সাথে থাকা মানেই তো ঝামেলা।

মারিয়াঃ কিন্তু আমি মোটেও এরকম ভাবি না। আমার সবার সঙ্গে থাকতে ভালো লাগে। আর আপনার পরিবারের সবাই অনেক ভালো। আমার তাদের সবাইকে ভালো লাগে। এজন্য আমি তাদের সাথে থাকতে চাই।

রোহিতঃ আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি বুঝলাম, কিন্তু তারপরও আমাদের আলাদা থাকতেই হবে। এটাই ফাঈশাল। তুমি প্লিজ তোমার ব্যাগ গুলো আনপ্যাক করো না। আমিও আমার ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছি।

মারিয়াঃ আচ্ছা, তাহলে আমি এখন মায়ের কাছে যাই তার সাথে একটু কথা আছে।

রোহিতঃ আচ্ছা, ঠিক আছে। চলো, আমারও বাবার সাথে কিছু কথা আছে।

মারিয়াঃ আচ্ছা, ঠিক আছে। এখন চলুন।

কিন্তু মনে মনে আমি ভাবছি, রোহিত আমার সাথে গেলে তার সামনে আমি তো মাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারব না।

আর আজকে প্রায় রাত হয়ে গিয়েছে কাল সকালে যদি আমাদের চলে যাওয়া লাগে তাহলে আমি পুরো কথা জানব কি করে? আমি বুঝতেই পারছি না।

মায়ের রুমে যাওয়ার পরে দেখলাম, মা শুধু একাই আছেন। বাবা নেই ঘরে।

মারিয়াঃ মা আসতে পারি?

মাঃ মারিয়া ভিতরে আসো, মা।

মারিয়াঃ মা, বাবা কোথায়?

মাঃ উনি একটু বাইরে গিয়েছেন।

আমি দুইদিন একটা জিনিস বেশ লক্ষ্য করেছি, রোহিত মার সাথে তেমন একটা কথা বলেন না। আর মা ও তার সাথে তেমন একটা কথা বলেন না। মা দেখতে বেশ সুন্দরী একজন মহিলা। আর খুব সুন্দর করে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। রোহিতরা তিন ভাই-বোন। রোহিতই তার পরিবারের বড় ছেলে বড় বোন ডক্টর, ঈশা এবং ছোটটা ৭ এ পরে, তুলি।

বড় ছেলে হিসেবে রোহিতকে তার পরিবারের সবাই অনেক ভালবাসে। কিন্তু রোহিত কেন যেন মায়ের কাছ থেকে একটু বেশি দূরে দূরে থাকে এবং রোহিত এটাও চায় না যে আমি মায়ের সঙ্গে খুব একটা মেলামেশা করি।

আমি দেখেছি যতবারই মায়ের সঙ্গে খুব মেলামেশা করি। ততবারই কোন না কোন অজুহাত দিয়ে রোহিত আমায় দূরে নিয়ে যায়। অথবা মায়ের সাথে কথা বলতে দেয় না।
তাদের দুজনের মধ্যে কি কোন সমস্যা? নাকি রোহিতে সত্যিটা আমায় জানতে দিবেন না। মূলত এটা লুকানোর জন্য রোহিত এমন করে আমি আসলে কিছু বুঝতে পারছি না।
তবে সত্যিটা আমার বের করতেই হবে।

আমি এজন্যই রোহিতকে বললাম,

মারিয়াঃ বাবা তো বাইরে আছেন আপনি ঘরে যেয়ে বসুন। বাবা যখন আসবেন তখন আমি আপনাকে ডাক দিব। বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্য।

সে আমার কথা শুনে বলল,

রোহিতঃ আচ্ছা ঠিক আছে, তবে তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো।

মারিয়াঃ জি, ঠিক আচ্ছা।

রোহিত যাওয়ার পরে আমি মাকে বললাম,

মারিয়াঃ মা আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে ।

শাশুড়ীঃ আমি বুঝতে পেরেছি তুমি কি বলবে। হ্যাঁ বৌমা রোহিত এর চরিত্র খারাপ। ওর মদেরনেশা আছে এবং মা হয়ে কথাটা বলতে আমার খুবই লজ্জা হচ্ছে কিন্তু ও একেক দিন একেক নারীর কাছে যায়।

ওর স্বভাবের জন্য আমরা অনেক অপমানিত হয়ে ছিলাম। তাই ওর বাবা চাননি বিয়ের আগে তোমাদের কাছে এই কথাটা জানান। কিন্তু এখন আমি ভাবলাম তুমি একজন নারী তোমার অধিকার আছে তোমার স্বামীর চরিত্র কি রকম সেটা জানার। তাই আমি তোমায় এটা জানিয়ে দিলাম। তবে রোহিত অন্য দিক দিয়ে খারাপ না। সব দিকেই ঠিক আছে। সবার সাথে ভালোভাবে মিলেমিশে।

এখন সে তোমায় ভালবাসে হয়ত বা তার চরিত্রটা ঠিক হয়ে যাবে। পরিবারের অন্য কারো সাথে এই ব্যাপারে কথা বলে কিছুই হবে না।

কারণ সবাই এটা জানে জেনেও সবাই না জানার মত ভান করে সবাই ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখতে চায় আর রোহিতের কাজকর্মে তুমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে।

আমাদের বাড়ি থেকে ঠিক দুই বাড়ি পড়ে একটা মেয়ে থাকে মায়া নামের। সেই মেয়েটার সঙ্গে রোহিতে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক হয়তো রোহিতের একটা বাচ্চাও আছে। যদিও রোহিত কখনো সেই স্বীকৃতি দেয়নি এবং মায়া ও স্বীকৃতি চাইনি। কারণটা আমরা জানিনা। জিজ্ঞাসা ও করেছিলাম সিমুকে বিয়ে করবে কিনা সে না বলে দিয়েছিলো। তবে আমার মনে হয় বাচ্চাটা রোহিতের।

তুমি ভাবতে পারো এত বড় সত্যি তোমার কাছ থেকে কেন লুকানো হয়েছে। তবে আমি একটা কথাই বলবো পুরুষ মানুষ একটু এমন হয়। আর তাছাড়া এত বড় ঘরে তোমার বিয়ে হত না যদিও তুমি দেখতে অনেক সুন্দরী। কিন্তু তারপরেও আমাদের রোহিতের মত বর এবং এই ধরনের উচ্চবংশীয় ও ধনাঢ্য পরিবার খুব কম আছে। আর এজন্য আমি তোমাকে ভাগ্যবতী মনে করি।

তাই আমি কিছু জানায়নি। আচ্ছা বৌমা তুমি এখন আসতে পারো। আর এই ব্যাপারটা তেমন কোনো সমস্যা কি করবে না, আমি আশা করি। তুমি এদিকে তেমন গুরুত্ব দিওনা। পুরুষ মানুষ ঘুরে ফিরে তো বউয়ের কাছেই আসবে।

মায়ের রুম থেকে মনে হচ্ছে বের হতে পারছি না পা চলছে না।

খুব কষ্ট করে বের হয়ে রান্না ঘরে আসলাম। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে, শুধু মনে হচ্ছে এই কিসের মধ্যে চলে আসলাম। আমি আমি তো জীবনে বেশি কিছু চাইনি আমি শুধু চেয়েছিলাম ছোট একটা সংসার হবে। ভালো একটা স্বামী হবে, যে আমাকে অনেক বেশি ভালবাসবে। আমার চাওয়াতে এর থেকে বেশি কিছু ছিল না। তাহলে কি রোহিত চরিত্রহীন একজন লোক? আমি এর সঙ্গে সারাটা জীবন কি করে কাটাবো?

এসব ভাবতে ভাবতেই পেছন থেকে কে যেন এসে জড়িয়ে ধরলো। মনে হচ্ছে, আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।

চলবে….

(কেমন লাগলো জানাবেন)

পর্ব- ২

রোহিত যখন সর্বপ্রথম আমাকে দেখতে আসলো আমাদের বিয়ের জন্য।

আমার অনেক বেশি ভয় লাগছিল। এর আগে কোনদিন কোন ছেলেপক্ষ আমায় দেখতে আসেনি। এই ভয়ে তো আমি তার ছবিটা ও দেখি নি। সকাল থেকে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল।

রিয়া আপা আমাকে কিভাবে সান্তনা দিবে, কিভাবে বুঝাবে তা নিয়ে উনি ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

কারণ আমি ছোটবেলা থেকেই তো একটু ভীতু টাইপের ছিলাম। অল্পতেই ঘাবড়ে যেতাম আর আজ প্রথম ছেলেপক্ষ আমায় দেখতে আসবে। কি যে করব বুঝতে পারছিলাম না।
মা-বাবার অনেক আশা এই ঘরটাতে বিয়ে দেবার জন্য। আর ছেলেদেরও অনেক আগ্রহ সব রিয়ায়ে আমি নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম।

বিকেলের দিকে রিয়া আপা আমায় গোলাপী একটা শাড়ি পড়ালেন। গোলাপী কাচের চুড়ি মাথায় বেলী ফুল এবং ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। আমার তেমন একটা সাজসজ্জার প্রতি নেশা ছিল না। টুকটাক সাজতে পারতাম। এজন্য আমায় সাজানোর দায়িত্ব পুরোপুরি রিয়া আপা নিজেই নিয়েছিলেন।

রোহিতরা সন্ধ্যায় বাসায় আসলো। তাদের সামনে আমি যাবার আগে আম্মু আর চাচি খুব ভালোমতো আমাকে বুঝিয়ে দিলেন। সুন্দর মতো যেন কথা বলি আর কোনো ভুল না করি।
আব্বু এসে আমাকে ডাক দিলেন, চায়ের ট্রে দেওয়া হলো হাতে। কিন্তু হাত এমন ভাবে কাপছিলো যে তাদের সামনেই আমি চায়ের ট্রে হাত থেকে ফেলে দেই।

মা তো একদম মাথায় হাত দিয়ে দিলেন। হয়তো তার ভাবনা হচ্ছিলো এই বুঝি বিয়ে টা ভাংলো। আমিও তাই ভাবছিলাম, কিন্তু ঈশা আপু আর বাবা মানে রোহিতের আব্বু হাসতে শুরু করে দিলেন। আমি তাদের হাসি শুনে তাদের দিকে তাকালাম। এর আগে খুব লজ্জা লাগছিলো তাকাতে। তখনই দেখলাম ঈশা আপুর পাশে নীল পাঞ্জাবি পরে একদম সুদর্শন যুবক বসে মুচকি হাসছেন। ইনিই হচ্ছেন রোহিত। যে কেউ দেখে প্রেমে পরে যাওয়ার উপায়। ইরাক কি আমার এতই বেশি ভালো লাগলো যে তার থেকে চোখ সরাতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু আশেপাশে এত মানুষ, যদি তার দিকে তাকিয়ে থাকি সবাই আমায় নির্লজ্জ ভাববে। এর জন্য কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আবার নিচের দিকে তাকিয়ে ফেললাম।

ঈশা আপু আমায় তার পাশে নিয়ে বসালেন বললেন,

ঈশা আপুঃ তুমি নিশ্চয়ই অনেক নার্ভাস তাই না? ইটস ওকে, ইজি হও।

রোহিতের মা-বাবা আমায় কিছু প্রশ্ন করলেন, আমি তাদের উত্তর দিলাম।

তারা বললেন আমাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে। এখন আপনারা আমাদের ছেলের কাছে কিছু জানতে চাইলে জিজ্ঞেস করতে পারেন আমরা সবাই রাজি।

আম্মু আমার ভিতর নিয়ে গেল। মা জিজ্ঞেস করল আমার ছেলে পছন্দ হয়েছে কিনা?

আমিও হ্যাঁ বললাম,

ব্যাস বাসায় সবাই মিষ্টি খাওয়া দাওয়া শুরু করল। সবাই অনেক বেশি খুশি সেই দিনে বিয়ের ডেট ফিক্স হয়ে গেল। যে তিন মাস পরে আমাদের বিয়ে হবে।

এবং ঠিক ১৫ দিন পরে আমাদের এনগেজমেন্ট হলো। এঙ্গেজমেন্ট থেকে নিয়ে বিয়ে পর্যন্ত সবকিছুর মধ্যেই মা এবং ঈশা আপু তারা বারবার এসেছেন বাসায়। সবকিছু করেছেন। কিন্তু এর মাঝে শুধু এংগেজমেন্টের দিনই রোহিতের সাথে দেখা হয়েছে।

তার নাকি খুব কাজছিল। কি কি নাকি গুছানোর ছিল। এজন্য সে সময় করে উঠতে পারছিলেন না এবং বিয়ের আগেই তার এগুলো করার কথা ছিল।

সবশেষে বিয়ের পাঁচদিন আগে রোহিত আমায় ফোন দিলেন মোবাইল স্ক্রিনে রোহিতের নাম টা দেখতে কেমন যেন কলিজা ধুকপুক করতে শুরু করলো।

ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিলাম। রোহিত সালামের জবাব নিয়েই সরি বল্লেন। তার ব্যাস্ততার জন্যে।

জিজ্ঞেস করলেন সবকিছু আমার পছন্দ মতো হচ্ছে কিনা, কোন কিছুর কমতি আছে কিনা। আমি হ্যাঁ না উত্তর দিলাম কেমন যেন লাগছিল। কিন্তু খুব বেশি ফ্রেন্ডলি বিহেভ করলেন উনি। খুব ভাল লেগেছিল যে মানুষটা যে রকম সুন্দর তার মনটাও ঠিক তেমনি সুন্দর। দেখতে দেখতে বিয়ে পড়ানো হলো বিয়ে হলো নতুন ঘর নতুন পরিবেশ নতুন সংসারে আসলাম।

আমাদের বাসর রাতটা ছিল আমাদের বন্ধু হওয়ার রাত। এক রাতেই রোহিত আমার খুব কাছে আর বিশ্বস্ত একজন বন্ধু হয়ে গেল। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, আমি গোসল করে রোহিতকে ডাক দিলাম দুইজনে নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর রোহিত আবার ঘুমিয়ে পড়ল আর আমি ব্যস্ত হয়ে গেলাম শাড়ি পড়তে। কিন্তু বিপত্তি তখন ঘটল যখন পুরো এক ঘণ্টা লাগিয়ে শাড়ি পরার পরে দেখলাম আমি উল্টো শাড়ি পড়েছি।

আমি আয়নায় দাঁড়িয়ে আমায় দেখছি। আর রোহিত পিছন থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম,

মারিয়াঃ হাসছো কেন?

রোহিত বলল,

রোহিতঃ তুমি ঠিকমত শাড়ি পরতে পেরেছ?

আমি বললাম,

মারিয়াঃ হ্যা, দেখনা কত সুন্দর করে শাড়িটা পড়েছি।

রোহিত তখন আরো হাসতে শুরু করল এবং বলল,

রোহিতঃ আগে কখনো নিজ হাতে শাড়ি পরনি, তাঈশা?

আমি বললাম,

মারিয়াঃ সব সময় রিয়া আপা আমার রেডি করে দিত কোন প্রোগ্রামে গেলে। আজকে তো শাড়ি পড়া লাগবে তাই নিজে প্রথমে চেষ্টা করলাম। এর আগে কখনো নিজ হাতে শাড়ি পরিনি।

রোহিত বলল,

রোহিতঃ আচ্ছা ঠিক আছে, সমস্যা নেই। ঈশার শাড়ি পরার সময় অনেক দিন আমার কাছে হেল্প নিয়েছে। ওর শাড়ি পরা দেখতে দেখতে আমি নিজেই এখন বুঝি শাড়ি কিভাবে পরতে হয়।

তুমি আমার কাছে আসো আমি তোমায় পরিয়ে দিচ্ছি। যদিও আমার খুব লজ্জা লাগছিল যখন ও আমায় আস্তে আস্তে শাড়িটা পরিয়ে দিচ্ছিল। একদম শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে আসছিলো, ওর হাতের স্পর্শ যখন লাগছিলো। কেমন যেন অনুভূতি হচ্ছিল লজ্জায় যেন আমি তার দিকে তাকাতেই পারছিলাম না।

পরে মনে মনে ভাবলাম এত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। সে তো আমার স্বামী হয়। নিজের মন কে লজ্জা থেকে বাচানোর একটা বৃথা চেষ্টা করছিলাম আর কি।
শাড়ি পড়ানো সময় আমি এক নজর রোহিতকে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম,

কিভাবে এত তাড়াতাড়ি একটা মানুষের প্রেমে পড়ে গেলাম?

আল্লাহপাক আমায় কত সৌভাগ্যশালী করেছেন। যে এত সুন্দর এবং এত ভালো মনের একটা স্বামী পেয়েছি।

শাড়ি পড়ানো শেষ করার পরে রোহিত নিজ হাতে আমায় সাজিয়ে দিলেন। যদিও বিয়ের তিন মাসে আমি সাজ শিখার জন্য পার্লারে একটা কোর্স করে নিয়েছিলাম।

কিন্তু দেখলাম আমি কোর্স করলেই রোহিত একজন পুরুষ মানুষ হয়েও অনেক সুন্দর কালার কনট্রাস্ট করতে পারেন এবং খুব সুন্দর মেকআপ আইডিয়া আছে।

তারপর কি যে সুন্দর বিয়ের দুইটা দিন কাটল। তা আসলে কাউকে বলে বোঝানোর না।

কিন্তু যখনি কয়েক ঘন্টা আগের কথাগুলো মনে করি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।

পিছন ফিরে দেখলাম।

রিয়া আপু আমায় জড়িয়ে ধরে আছে। মা বাবা আর আম্মু আব্বু সবাই নাকি ড্রইংরুমে বসে আছে। কাল যেহেতু আমি নতুন বাসায় চলে যাব তাই এই বাসা থেকে বিদায় দেওয়ার জন্য আম্মু আব্বু এসেছেন এবং মা-বাবার নাকি কি জানো কথা আছে। তাদের সাথে আমার কোন খুশিতেই আসলে খুশি লাগছে না। রোহিতের বাচ্চা আছে বাইরে সম্পর্ক আছে। এই ধরনের সত্যি, নিজের স্বামীর চরিত্র নিয়ে শোনার পরে নিশ্চয়ই কোনো নারীর আর কিছুই ভালো লাগবে না।

তাই আমি ভাবলাম, বাসা থেকে আজকে আম্মু আব্বু রিয়া আপা সবাই যাওয়ার পরে রোহিতের সাথে আমি এই ব্যাপারটা আলাপ করব।

সব সত্যি কথাই রোহিতকে আমার জিজ্ঞেস করতেই হবে।

যথারীতি রাতে খাওয়া-দাওয়া হলো সবার গল্প গুজব হল। এর পরে সবাই চলে গেলেন।

প্রায় রাত ১১ টার দিকে আমি আমাদের রুমে গেলাম। গিয়ে দেখলাম রোহিত তার অফিসের কিছু কাজ করছেন।

রোহিতঃ আমাদের ব্যাগ গোছানো শেষ?

মারিয়াঃ হ্যাঁ, তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।

রোহিতঃ বলো।

তোমার কি বিয়ের আগে কোন সম্পর্ক ছিল বা আছে? আর মায়া কে?

রোহিতঃ তোমাকে এগুলো কে বলেছে?

মারিয়াঃ আমি সত্যিটা জানতে চাই। আমাকে প্লিজ বলো, তুমি কি অন্য কাউকে ভালবাসো? আর মায়া মেয়েটা কে?

রোহিতঃ দেখো মারিয়া অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। আমি এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাচ্ছি না।

আর হ্যাঁ মায়ার প্রসঙ্গে আমি তোমার সঙ্গে কোনো কথাই বলতে চাই না। আশা করি, তুমি বুঝতে পারবে আর এই ব্যাপারটা নিয়ে কোন প্রশ্ন আমায় করবে না। অন্তত পক্ষে এখন।
যখন সময় হবে আমি নিজেই তোমায় সব বলব। এখন প্লিজ নিজেও ঘুমিয়ে পড়ো। আর আমায় একটু কাজ করতে দাও।

চলবে…

পর্ব- ৩

রোহিতের আজকের ব্যবহার আর প্রতিদিনের ব্যবহারের মধ্যে আসমান-জমিনের পার্থক্য। এতটা রাগ আর বিরক্তি নিয়ে সে কখনো আমার সাথে কথা বলেনি।

আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পরলাম। ঘুম নেই চোখে, প্রায় আধা ঘন্টা পরে বুঝলাম তার ফোন বাজছে। সে বাইরে গেল ঘর থেকে ফোনটা নিয়ে আস্তে আস্তে। তার যে চিন্তা মাখা মুখ ছিলো তা মুহুর্তেই চলে গেলো। চোখে মুখে হাসি দেখতে পেলাম। খুব কষ্ট হল এবং মায়ের বলা কথা গুলো বার বার মনে পড়তে লাগলো। সে কথা গুলো বিশ্বাস করতে মোটেই ইচ্ছা করেনি আমার। এখনো করছেনা কিন্তু উনার এরকম আচরণ দেখে আর কিছু বলার নেই। নিজের মনকে শান্তনা দেবার মত কোন কারণই সে দেয়নি আমাকে।

ঘড়ির কাটায় সময় বেড়েই চলছে। দুইটা বাজলো, ৩টা বাজলো। এরকম করতে করতে ফজরের আজান শুরু হয়ে গেল। রোহিতের ঘরে আসার কোনো নাম নেই। আমি উঠে অজু করে ঘর থেকে বের হলাম। রোহিতকে নামাজের জন্য ডাক দিতে। দেখি সে ড্রইংরুম বসে আছে এবং ফোনে এখনো কথা বলছে।

আমি একটু আড়াল হয়ে কথাগুলো শোনার চেষ্টা করলাম। যা শুনতে পেলাম তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

রোহিত বলছে, আচ্ছা।

রোহিতঃ বাবু এখন রাখি,নামাজ পড়তে হবে। আই লাভ ইউ এবং একদম ভয় পাবেনা আমি সবসময় আছি তোমার পাশে। এই কথাগুলো শুনে আমি আর কিছু শোনার মতো অবস্থায় ছিলাম না।

দৌড়ে নিজের ঘরে চলে আসলাম। এসেই নামাজে বসে পরলাম।

আমার সব স্বপ্ন, সব স্বাদ সবকিছুই এক নিমিষেই যেন শেষ হয়ে গেল।

মোনাজাতে আল্লাহকে বললাম,

মারিয়াঃ আল্লাহপাক আমি কি দোষ করেছি? আমার কেন এরকম পরীক্ষা নিচ্ছেন? আমার পরিবারে কি দোষ? প্রথমে রিয়া আপা আর এখন আমি?

আমাদের জীবনটা কত সুন্দর ছিল। আপা কত ভাল ছাত্রী ছিল, ভালো একটা চাকরি করতেন। কিন্তু তার বিয়ে হলো একটা fraud লোকের সাথে। এমন হতো না নিজের পছন্দে বিয়ে করেছিলেন, বাবা-মায়ের পছন্দসই ছেলেকেই করেছিলেন বিয়ে কিন্তু তার কপালে সুখ সইলো না। লোকেটার আগে থেকেই একটা বউ ছিল। এজন্য আমরা তাকে ছাড়িয়ে নিয়েছিলাম।

এরপর বাবা মা আমায় দিলেন বিয়ে। কিন্তু একি দেখলাম আমার স্বামী অন্য নারীর প্রতি আসক্ত? এই সবকিছু সহ্য করে থাকার ক্ষমতা আমার নেই আল্লাহপাক।

এখন যদি বাড়ি ফিরে যাই, সবাই বাবা-মা কি কথা শোনাবে যে ২ মেয়ের বিয়ে হলো। আর একজন ও সংসার করে থাকতে পারল না। দোষটা কার ছিল সেটা দেখবে না। সমাজ সবসময় দোষ দেয় মেয়েদের দেয়। যেমন দিয়েছিল রিয়া আপাকে। এমনি দিবে আমাকে বাবা-মাকে। সবার থেকে রিয়া আপার জন্য অনেক কথা শুনতে হয়েছে। এখন আমি যদি ঘরে ফিরে যাই। আমার জন্য বাবা-মা নানান ধরনের কথা শুনতে হবে।

আমার জন্য তারা অসুস্থ হয়ে পরবে।

কিন্তু এরকম লোকের সংসার কিভাবে করবো? সে একজন ভন্ডলোক সে একজন প্রতারক। ভদ্রতার বেসে কিভাবে প্রতারণা করতে হয় তা মনে হয় তার থেকে ভালো করে আর কেউ জানে না।

আজ খুব কষ্ট হচ্ছে আর নিজের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে। যে রকম একজন কে কেন আমি ভালোবাসছি? কেন তার সঙ্গে আমার বিয়ে হলো? আল্লাহ আপনি আমাকে পথ দেখান। আপনি নাকি যা করেন ভালোর জন্য করেন এখানে ভালো কি হচ্ছে আল্লাহ পাক? আপনি আমাকে পথ দেখান, আপনি আমার সাহায্য করুন।

নামাজ শেষ করতেই দেখলাম রোহিত ঘরে প্রবেশ করল।

রোহিতঃ ঘরে প্রবেশ করেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলছে। কি আমার বউটা উঠে গেছো?

আমি বললাম,

মারিয়াঃ হ্যাঁ।

রোহিতঃ ঘুম কেমন হয়েছে?

তার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলাম,

মারিয়াঃ ভালো।

তার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না একদমই। সে যেন ভুলেই গিয়েছে রাতে তার সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছিল।

বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে রোহিত বলল,

রোহিতঃ তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। আমরা কিন্তু নাস্তা করে আমাদের বাসার জন্য রওনা হয়ে যাবো। আমি আর কিছু বললাম না। ব্যাগ গুলো চেক করলাম সব ঠিক ভাবে নিয়েছে কিনা?

দেখলাম, হ্যাঁ সব ঠিকঠাক ভাবে গোছানো হয়েছে।

সাড়ে ছয়টার দিকে আম্মু ফোন দিলেন। তিনি বললেন আমি যেন বেগুনি আর হলুদ হলুদ একটা শাড়ি পড়ি। নতুন ঘর, নতুন সংসারে পা রাখে হলুদ আর বেগুনি রাশ নাকি ভালো।

আরো কিছু টুকটাক কথা বলে আমার সাথে ফোনটা রেখে দিলাম। আর মনে মনে হাসলাম যার স্বামী তার নিজের না তার আবার কিসের সংসার? কিসের ঘর?

আটটার দিকে একসাথে সবাই নাস্তা করে। সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম আমরা দুইজন। এর মাঝে রোহিতের দিকে একবার ও তাকানো হয়নি।

বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে আবহাওয়াটা বেশ সুন্দর আমিন্র সে একা। এরকম একটা মুহুর্তের জন্যে কত অপেক্ষা করেছি সারা জীবন।

অন্য সময় হলে আমি অনেক বেশি খুশি হতাম। এরকম রোমান্টিক একটা আবহাওয়া এবং ভালোবাসার মানুষটা পাশে কি অদ্ভুত একটা ভালোলাগা কাজ করত।

কিন্তু এখন এরকম কিছুই হচ্ছে না। নিজের প্রতি একটা ঘৃণা কাজ করছে কেন এই লোকটার প্রতি দুর্বলতা কাজ করে? এখন পর্যন্ত আমি তার দিকে একবারও তাকাচ্ছি না।
কিন্তু আড় চোখে দেখছি সে তাকাচ্ছে আমার দিকে। কাচের গ্লাস টা খুলে দিলাম ঝির ঝির বৃষ্টি এসে আমার মুখে পরছে কিছুটা শান্তি পাচ্ছি। হঠাৎ সে বাংলা পুরনো গান ছাড়লো

যে টুকু সময় তুমি থাকো পাশে মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে। বাকিটা সময় যেন মরণ আমার, হৃদয় জুড়ে নামে অথৈই আঁধার।

রোহিতঃ জানো মারিয়া এই গানটা পুরো আমার মনের কথা বলেছে। যত টুকু সময় তুমি পাশে থাকো মনে হয় আমার দুনিয়াটা জান্নাত। আর তুমি না থাকলে কিছুই ভালো লাগেনা। তোমায় যখন প্রথম দেখেছিলাম?

সেদিনই আমি তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।

তার এই কথাগুলো শুনে আমার ভালো লাগছেনা। কেমন যেন অস্থিরতা বেড়েই যাচ্ছে। সে আবারো বলল,

রোহিতঃ মারিয়া একটা জিনিস খেয়াল করেছো? তুমি আর আমি ম্যাচ করে ড্রেস পড়েছি?

তখনই তাকিয়ে দেখলাম, হ্যাঁ সে বেগুনি কালারের একটা শার্ট পরেছে। আর আমি বেগুনি আর হলুদ একটা শাড়ি।

রাস্তার মাঝে একটা ফুলের দোকানের সামনে রোহিত গাড়ি থামালো এবং বলল,

রোহিতঃ তুমি বসো আমি আসছি দুই মিনিট।

আমি মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দিলাম। কিছুক্ষণ পরে সে ফিরে এল হাতে কতগুলো বেলি ফুল নিয়ে আমাকে বলল,

রোহিতঃ তুমি এগুলো তোমার মাথায় পরো। তোমাকে বেলিফুল পড়লে অনেক সুন্দর দেখা যায়।

ফুল গুলো পড়লাম।

সে আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে। যেমন নতুন দেখছে অথবা তার আমার প্রতি খুব ভালোবাসা।

তার এই চাহনি দেখে মনে মনে বলছি, এত নাটক কিভাবে করো তুমি? এত নাটক আসে কিভাবে রোহিত?

চলবে…..

পর্ব- ৪

একটু পর পর রোহিত আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে। আমি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে, একবার বাইরে দিকে তাকাই না হয় গান পাল্টাই। এভাবেই প্রায় আধা ঘণ্টা কেটে গেল।

রোহিতঃ মারিয়া, তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

মারিয়া কিছু না বলে চুপ করে আছে। তখন রোহিত বলল,

রোহিতঃ জিজ্ঞেস করবে না কি সারপ্রাইজ?

(যা দেবার তো সকালেই দিয়ে দিয়েছো মনে মনে বললাম)

মারিয়াঃ কি সারপ্রাইজ?

রোহিতঃ একটু পরেই দেখতে পাবে।

(তাহলে বলারই বা কি দরকার ছিল)

রোহিতঃ কিছু বললে?

মারিয়াঃ না, কিছুনা।

রোহিত মিটিমিটি হাসছেন।

কিছুক্ষণ পর আমরা ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পৌঁছে গেলাম। একটা সুন্দর বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো। ওয়াচম্যান এসে রোহিতকে সালাম দিলো। বুঝলাম, হয়তো এখানেই আমরা থাকবো।

বাড়ির নেমপ্লেটটা তাকিয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

বাড়িটার নাম “মারিয়া ম্যানশন” মানেটা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। অনেকগুলো প্রশ্ন মনের ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছিল।

রোহিতের দিকে প্রশ্নবোধক চাওনি নিয়ে তাকালাম।

রোহিতঃ বাসর রাতে বউকে গিফট দিতে হয়। আমি তোমায় কোন গিফট দেয়নি। তুমি ও কিছু চাওনি, সেদিন তোমাকে গিফট এই জন্য দেইনি। কারণ বাড়িটা আমি প্যাকেট করে তো তোমার হাতে দিতে পারব না, তাই।

এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? ম্যাডাম এটা আপনার বাড়ি। এই যে নিন কাগজপত্র এবং আপনার গেটের চাবি।

মারিয়াঃ আমি? বাড়ি? কেন?

রোহিতঃ তুমি বাড়ি না, বাড়িটা তোমার। এখন আমার বউটা যদি আমাকে পারমিশন দেয়, তাহলে কি আমরা ভেতরে যেতে পারি? তার হাত থেকে কাগজ আর চাবি নিয়ে বললাম।

মারিয়াঃ জি, ভিতরে চলুন।

রোহিতঃ রহিম ব্যাগগুলো ভিতর নিয়ে রাখ।

রহিমঃ আচ্ছা, স্যার নিতাছি।

রোহিতঃ মারিয়া এক মিনিট দাড়াও। তুমি এভাবে ভেতরে যেতে পারবে না চোখটা বন্ধ করো।

মারিয়াঃ কেন?

রোহিতঃ আহা করো তো আগে। চোখটা বন্ধ করো।

আমি চোখ বন্ধ করতেই রোহিত আমায় কোলে তুলে নিল।

মারিয়াঃ আল্লাহ, আল্লাহ, কি করছো? ছাড়ো।

রোহিতঃ ছাড়বো কেন? ছাড়ার জন্য তো বিয়ে করিনি। আমি চাঈশা আমার বউটা কষ্ট করে হেটে হেটে ভিতরে যাবে। তাই কোলে নিয়েছি। আর আমার বউ নিজের বাড়িতে প্রথম যাবে এজন্য তাকে হেঁটে যেতে দিব না। সে নিজের বাড়ী এসেছে ,তাই সে রানীদের মতোই ভিতরে যাবে।

মারিয়াঃ আমি হেঁটে যেতে পারব, ছাড়ো।

রোহিতঃ হ্যাঁ পারবে, তবুও আমি তো দিব না। ম্যাম আপনাকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার। আর আমার দায়িত্ব আমি যথেষ্ট অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করি। তাই কোন কথা হবে না।

রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে তার নাটক দেখে। আর ভালো লাগছে না। বিরক্ত লাগছে। বাড়ির ভিতরে এক এক করে ও আমায় নিয়ে প্রবেশ করছে। আর আমি যেন আমার ডাইরির পাতায় লিখা প্রতিটা স্বপ্নকে সত্যি হতে দেখছি। অর্থাৎ বাড়িটা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেমনটা আমি আমার স্বপ্ন দেখতাম। যেমনটা আমি সবসময় ভাবতাম। বাড়িটা একদম আমার মন মত হয়েছে। নিজের অজান্তেই বলে উঠলাম,

মারিয়াঃ তুমি কিভাবে জানলে আমার পছন্দ? আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা।

রোহিতঃ সব ক্রেডিট রিয়া আপার, রিয়া আপা আমাকে সাহায্য করেছে। আপনার ডাইরি দিয়ে। এখন এসব বাদ দিয়ে বলুন আপনার কি পছন্দ হয়েছে নাকি ডেকোরেশন এ কোন চেঞ্জ করাবো?

মারিয়াঃ না সব অনেক সুন্দর হয়েছে, ভালো লেগেছে আমার ধন্যবাদ। এখন নামি?

রোহিতঃ নামবে? কোথা থেকে ?

মারিয়াঃ তোমার কোলের থেকে নামাও।

রোহিতঃ ও হ্যাঁ, মারিয়া তোমার তো কোন ওজনই লাগলো না আমার কাছে। আজ থেকে খাওয়া দাওয়া বাড়িয়ে দিতে হবে তোমার।

মারিয়াঃ আমার ওজন কি কম মনে হয়?

রোহিতঃ হ্যাঁ অনেক কম।

এর সাথে কথা বাড়ানোর ইচ্ছে আমার হচ্ছে না তাই চুপ করে রইলাম। যতসব ঢং।

মারিয়াঃ আচ্ছা আমার রান্না করতে হবে, রান্নার জিনিসপাতি আনা লাগবে, আনিয়ে দিন।

রোহিতঃ জ্বি ম্যাডাম আপনার সব জিনিসপত্র হয়তো এক বা দুই ঘন্টার ভিতরে চলে আসবে। আমি আগে কল করে দিছি। কিন্তু আজকে লাঞ্চ আর ডিনার বাইরে থেকে করব।
কোন কাজ করার দরকার নেই তোমার। এমনিতে পুরো এক সপ্তাহ জুড়ে অনেক ধকল গেছে তোমার উপর দিয়ে। আজকে শুধু রেস্ট করবে।

যোহরের আযান দিচ্ছে আমি তাহলে নামাজটা পড়ি নেই। তুমিও পরে আসো।

মারিয়াঃ হ্যাঁ, আমিও যাচ্ছি।

আমি ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়লাম। তারপর ঘরগুলো আবার ঘুরে ঘুরে দেখলাম। খুব ভালো লাগছে একটা শান্তি অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার স্বামী শুধুই আমার এতটা কেয়ার, এতটা ভালোবাসা সব কি বানোয়াট হয়। নাকি? তাই বুঝতে পারছিনা, রোহিত চলে আসলো নামাজ পড়ে।

হঠাৎ করেই খুব মাথা ব্যথা আর ঘুম আসতে শুরু করলো। বুঝলাম না, এমনটা কেন হচ্ছে? কিন্তু মনে হচ্ছে যে তাকাতে পারবো না। রোহিত তো আমাকে দেখে বুঝতে পারল আমার বোধহয় ঘুম পাচ্ছে।

সে আমাকে বলল,

রোহিতঃ মারিয়া, তুমি একটু ঘুমাও। খাবার তো এখনো আসেনি। তুমি একটু রেস্ট করো, ভালো লাগবে।

মারিয়াঃ আমি মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বললাম।

সোজা বিছানায় গিয়ে ঘুম। দেখলাম রোহিতও বেডরুমে বসল, হাতে পেপার নিয়ে এসেছিল। বোধহয় পেপার পড়বে। আমার তো চোখে এক রাজ্যের ঘুম ধরেছে, এজন্য গভীর ঘুমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চলে গেলাম।

ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ এ। হাতে মোবাইলটা নিলাম। দেখে একদম চুপ থেকে এক নিমিষে ঘুম সব উড়ে গেল। ওপাশ ফিরে দেখি রোহিত আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

মারিয়াঃ সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে, আমাকে ডাকো নি কেন?

রোহিতঃ পুতুলের মত বউটা আমার। ঘুমালে অনেক বেশি সুন্দর লাগে, তাহলে উঠাবো কেন?

মারিয়াঃ আচ্ছা, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। এসে নামাজ পড়ি। দেখলাম রোহিত ও নামাজ পড়তে বাইরে গিয়েছে।

আমি হেটে হেটে ব্যালকনিতে গেলাম। আশেপাশে বিল্ডিংয়ে ভরপুর, কিন্তু পশ্চিমে একটা খোলা মাঠ আছে। আর আমাদের ব্যালকনিতে ভর্তি বেলী, রজনীগন্ধা, সন্ধ্যামালতী আর গোলাপ গাছ। ফুলগুলো সব আমার অনেক বেশি পছন্দের। রোহিত ছোট থেকে বড় প্রত্যেকটা জিনিস আমার পছন্দ মত করে সাজিয়েছ।

মানুষের মনে একটা আর বাহিরে একটা হয় শুনেছিলাম। কিছু কিছু মানুষ তো দেখেছিলাম ও। কিন্তু রোহিতের মত এরকম আগে দেখিনি।এসব ভাবতে ভাবতেই গাছগুলোতে পানি দিলাম।

রোহিতঃ এহে, এহে,শুধু গাছ গুলো কে খাবার দিবেন ম্যাডাম? নিজে খাবেন না?

পিছন ফিরে দেখলাম রোহিত এসে পড়েছে

মারিয়াঃ জি একটু পরে খাচ্ছি।

রোহিতঃ পরে মানে কি? একদম না। সেই সকালে খেয়েছো, আবার বলতেছো পরে খাবা। এখন চলো আমি খাবার ওভেনে দিয়ে আসছি।

টেবিলে গিয়ে দেখলাম, খাবার একটা ও আনপ্যাক করা হয়নি রোহিতের দিকে তাকালাম,

মারিয়াঃ তুমি খাওনি?

রোহিতঃ না আমি আসলে, একা একা খেতে পারিনা। আর তুমিও ঘুমাচ্ছিলে এজন্য আর খাইনি।

মারিয়াঃ আমাকে ডাক দিলেই তো পারতে।

রোহিতঃ আচ্ছা থাক হয়েছে এখন। ওগুলো বাদ দাও। আসো খেয়ে নিই,খুব ক্ষুদা লেগেছে আমার।

খাবার সময় ইরাক টুকটাক কথা বলল ও আমি হ্যা না তে জবাব দিলাম। তারপর খাওয়া শেষে।

আমি বললাম,

মারিয়াঃ তুমি রেস্ট নাও, আমি একটু কিচেনে থেকে টুকটাক কাজ সেরে আসি।

ও বোধহয়, রুমে চলে গেল। আমি টুকটাক কাজ শেষ করে রুমে যাবো। তখন দেখি রোহিত সোফার ঘরে বসে টম এন্ড জেরী দেখছে আর হাসছে। আমি দূর থেকে দারিয়ে ওকে দেখছি নিজের অজান্তেই ভালো লাগছে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে। এমন সময়, ওর ফোন বাজছে আমাদের বেডরুমে। আমি গিয়ে দেখলাম স্ক্রিনে নাম লেখা মায়া। মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল।

আবার কিচেন রুমে চলে গেলাম।

প্রায় দশ মিনিট পর রোহিত আমায় বলল,

রোহিতঃ আমি একটু বের হচ্ছি, নিজের খেয়াল রেখো ঠিক আছে। চাবিটা বেডরুমে আছে আমি দরজা লক করে গেলাম।

সে আমার জবাবের অপেক্ষা না করেই বের হয়ে গেল। এভাবেই দিন কাটতে থাকলো। রোহিত একজন আদর্শ স্বামী হবার অনেক চেষ্টা করেন। মাঝে মধ্যে আমাদের সম্পর্কটা আগে বাড়াতে চেষ্টা করেন। কিন্তু আমি আমার দিক থেকে অনেকটা দূরত্ব রাখার চেষ্টা করি। প্রায় চার মাস পার হয়ে গেছে আমাদের বিয়ের। মাঝে মাঝে প্রায় রাতে মায়া ফোন করে। জিনিসটা আমার একদম ভালো লাগে না।

যখনই মায়া ফোন করে রোহিত সারা রাত কথা বলে অন্য ঘরে গিয়ে। আমি অনেক কান্না করি।

কেউ দেখেনা,কেউ জানে না, শুধু আমার মনের কষ্ট ,আমি জানি আর আল্লাহ জানে। আমার কাছে বিয়ের পরবর্তী এই সময় গুলোর অনেক মূল্য ছিল। এই মূল্যবান সময়গুলো আমি অনেক সুন্দর করে কাটাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এমন স্বামীর সঙ্গে কিবা সুখ পাব?

রোহিত আমার অনেক যত্ন করে। মাসে দুইবার পার্লারে যাওয়া, শুক্রবারে নিজের হাতে রান্না, আমার কাজে সহযোগিতা করা সবই করে। শুধু আমার মনে শান্তি নেই। কারণ স্বামীটা তো আমার একার না।

মাঝে মাঝে অনেক ইচ্ছা হয়। আর দশটা কাপলের মত একসাথে ঘুরতে বেরোয়, সবার মত করে মনের দুইটা কথা বলি। একসাথে আকাশের চাঁদ দেখি, রোহিতের আচরণ আমার প্রতি এত সুন্দর, মনে হয় সব ভুলে যায় কিন্তু পরক্ষণেই মায়ার কথা। মায়ার করা ফোনগুলি, মায়া যখন ডাকে তখন তার হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে যাওয়া, এসব কিছুই যখন মনে পড়ে। তখন এসবের ইচ্ছা মরে যায়। মনে হয় নিজেই মরে যায়। এজন্যই তো প্রয়োজন ছাড়া বিয়ের চার মাস চলে তারপরেও তার সাথে কোন কথা বলি না।

অনেকদিন বাবার মায়ের সাথে দেখা হয়না। রিয়া আপার সাথে ও না। সবার কথা খুব মনে পড়ছে। দেখি রোহিতকে বলব,যে দুইদিন বাবার বাড়ি হয়ে আসি।

রোহিত ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। দেখো, সোনা, তুমি সুস্থ হয়ে গেছো, এটাই আমার জন্য অনেক। আমি পারলে তোমার সাথে প্রতিদিন থাকতাম। কিন্তু এখন সেটা সম্ভব না। আমাকে কিছুদিন সময় দাও, তুমি তো সুস্থ হয়ে গিয়েছো। আমি কালকে তোমার সাথে দেখা করতে আসবো, লাভ ইউ। আর মারিয়ার সাথে এই ব্যাপারটা আমি তাড়াতাড়ি শেয়ার করব।

তুমি চিন্তা করোনা। আমাকে ছাড়া আর বেশি দিন তোমার থাকা লাগবে না। মারিয়াকে পাঠানোর ব্যবস্থা আমি করছি।

কথা শোনার পর আমার মাথাটা একদম চক্কর দিয়ে উঠলো। তাহলে কি রোহিত আমাকে ডিভোর্স দিবে?

চলবে…

পর্ব- ৫

রোহিত কি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে?

আমি তো তার জীবনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করি না। নিজের মতো থাকি তার প্রতিটা প্রয়োজনের খেয়াল রাখার চেষ্টা করি। এক প্রকার তার সবকিছুই মেনে নিয়েছি। কারণ মা-বাবাকে আর কষ্ট দেয়া যাবে না। একবার অনেক বেশি কষ্ট পেয়ে গিয়েছে। এখন যদি আবার আমার জন্য একই কষ্ট পায়? তারা তো এটা মেনে নিতে পারবে না। সহ্য করতে পারবেনা। ছোট মেয়ে ডিভোর্স কিভাবে তারা সহ্য করবে?

আমি এখন কি করবো? আল্লাহপাক আমাকে পথ দেখান।

একটু পরেই রোহিত ঘরে আসলো।

রোহিতঃ মারিয়া, অনেকদিন হলো তুমি তোমার বাবার বাড়ি যাও না। একটা কাজ করো কালকে বাবার বাড়ি চলে যাও, কিছুদিন বেরিয়ে আসো।

মারিয়াঃ কেন? কোথাও যাবে তুমি?

রোহিতঃ হ্যাঁ, একটু কাজ আছে। তুমি ৪-৫দিনের জন্য যাও, আমি ফিরে তোমাকে বাড়ি নিয়ে আসবো।

মারিয়াঃ আচ্ছা।

রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করার পর রুমে আসলাম। দেখি রোহিত সব প্যাকিং অলরেডি করে ফেলেছে। আমি কিছু বললাম না। নিজের প্যাকিং গুলো আস্তে আস্তে করতে শুরু করলাম।

রোহিত পারতো এখনি আমাকে বলে দিতে কথাগুলো। সে আসলে কি চাচ্ছে?

বারোটার দিকে রোহিতের ফোনে, যথারীতি কল আসলো। সে ফোনটা নিয়ে, বেলকনিতে চলে গেলো। আমিও তার পিছন পিছন গেলাম।
দেখি সে বলছে।

রোহিতঃ হ্যাঁ, দোস্ত এই দিনটার জন্য আমি যে কত বেশি অপেক্ষা করেছি। তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা। ফাঈশালি মায়া কালকে বউ সাজবে। আমি মায়াকে বউয়ের সাজে দেখবো।

তুবা সমাজে স্বীকৃতি পাবে। বাবার পরিচয় বড় হবে।

হ্যাঁ, মারিয়াকে এসব জানানো হয়নি এখনো। কিন্তু জানিয়ে দিব আগে বিয়েটা হোক এরপরে না হলে এসব মেনে নাও নিতে পারে। ওর জন্য অনেক বড় একটা ধাক্কা ও হতে পারে। তাই সব ঠিকঠাক হবার পরেই ওকে জানাবো আমি। আচ্ছা দোস্ত এখন ঘুমাতে যাই আজকে অনেক ঘুম পাচ্ছে।

সব রিয়ায়ে রোহিতের কথাগুলো একত্রিত করে বুঝতে পারলাম। ইরাক কালকে মায়াকে বিয়ে করে নিয়ে আসবে। আর আমাকে বাবার বাড়ি এজন্যই পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছে।
না আর না,এভাবে আসলে কারো সাথে থাকা যাবেনা। আমি এক ঘরে সতীনের সংসার করতে পারব না। যা হবার হবে, রোহিতকে ডিভোর্স দিয়ে দিব।

রোহিত আজকে একটার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লেন। তার চোখেমুখে খুব প্রশান্তি দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, অনেকদিন পরে এরকম শান্তির ঘুম, টেনশনমুক্ত ঘুম দিতে পেরেছে।
আর আমার আজকে আবারো ঘুম নেই।

ঠিক চার মাস আগে যেমন একটা ভয়াবহ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছিলাম। আজ ঠিক তেমন আর একটা রাত কাটছে। পাহাড়ের মত কি যেন মনে হচ্ছে। আমার বুকের ভিতর চাপা দিয়ে আছে।

নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার। এই চার মাসের সংসার জীবনের সমাপ্তি আজকে ঘটতে যাচ্ছে। কাল থেকে আমি আর রোহিতকে পাবো না। আর রোহিতকে কখনো এত কাছ থেকে দেখা হবে না।

আমি মানি রোহিতকে মন থেকে গ্রহণ করে নিতে পারিনি কখনো। কিন্তু শত হলেও ও তো আমার স্বামী। কেমন যেন একটা অজানা বাঁধনে বেঁধে গেছে মনটা। কাল থেকে হয়তো এই বাঁধনটা ছুটে যাবে। কিছুদিন পরে হয়তো ডিভোর্স হয়ে যাবে। সারা রাত জাগলাম। চোখ দিয়ে পানি পরছে, ঘরগুলো ঘুরে দেখলাম। রোহিতের কিছু ছবি তুললাম, আর আমাদের বিয়ের অ্যালবাম টা সাথে করে নিয়ে নিলাম। ভোরের আলো ফুটল চারিদিকে।

আজান দিচ্ছে। অজু করে শেষবারের মতো আমাদের ঘরে নামাজ পড়ে নিলাম। বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে এরপর থেকে এই ঘরটায় হয়তো মায়া থাকবে। রোহিতের দায়িত্বে ছিলাম আমি।

ভালোবাসায় তো ছিল মায়া। আমি তো, কখনই তার ভালোবাসায় ছিলাম না। হয়তো কয়েক দিন পরে ও আমাকে একদম ভুলে যাবে। রোহিত এই কয়েক মাসে একজন ভালো স্বামী হবার অনেক চেষ্টা করেছে।

এজন্য আমি তাকে যথেষ্ট সম্মান করি। আর প্রত্যেকের জীবনে একটা আলাদা সুখের সন্ধান থাকে। আলাদা আলাদা হয়তো রোহিতের আছে সিমুর মধ্যে, আমার মধ্যে নেই।
এজন্য হাজার চেষ্টা করার পরেও সে আমার হয়নি।

রোহিতের পছন্দের খিচুড়ি আর ডিম ভাজি করলাম শেষবারের মত। আমার হাতের রান্নাইতো খাবে আজকে। তাই তার পছন্দের খাবার তৈরি করলাম।
দেখি সাতটা বাজে রোহিত ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে।

রোহিতঃ আরে মারিয়া তুমি কষ্ট করে নাস্তা কেন বানালে?আমি তো ভেবেছিলাম যে কিছু কিনে খেয়ে নিব। তুমি তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও।

মারিয়াঃ হুম।

মনে মনে বললাম, এত তারা আমাকে বিদায় করার জন্য? যাক, তুমি যেভাবে সুখী আমিও সেভাবেই সুখী।

রোহিত প্রায় এক সপ্তাহ আগে আমায় একটা লাল শাড়ি এনে দিয়েছিল। আজকে সেই লাল বেনারসিটাই পড়লাম। শেষবারের মতো বউ সাজে সেজে নেই।

মনে মনে হাসলাম আজ নিজের ঘর থেকে শেষবারের মতো চলে যাচ্ছি। আমার স্বামী আমায় বিদায় দিতে যাচ্ছে। অথচ সে সত্যিটা আমাকে বলছেন না এখন পর্যন্ত।
কেন রোহিত সত্যিটা বলছো না?

আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কি সত্যি বলার সাহস তোমার নেই? নাকি নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাবে এজন্য কথাগুলো বলছো না।

রোহিতঃ আচ্ছা, মারিয়া আজকে আমি তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেই?

মারিয়াঃ আমি খেতে পারব।

রোহিতঃ আমি খাইয়ে দেই না? প্লিজ।

মারিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

রোহিতঃ জানো মারিয়া , তোমার হাতে জাদু আছে। তোমার হাতের রান্না ছাড়া এখন মনে হয় আমি কিছু খেতেই পারি না।

একটা স্বাভাবিক হাসি দিলাম,কারন কিছু বলার নেই। খাওয়া-দাওয়া শেষে বের হয়ে যাবো এমনি সময় রোহিত বলল,

রোহিতঃ দাড়াও। তুমি হেঁটে হেঁটে কেন বের হবা আমি থাকতে? আমি তোমায় কোলে করে নিয়ে গাড়ি পর্যন্ত যাব।

মারিয়াঃ আমি হেঁটে যেতে পারব। আমাকে কোলে নিতে হবে না।

রোহিতঃ কিন্তু আমিতো তোমায় হেঁটে যেতে দিব না। প্লিজ না করো না।

মারিয়াঃ আচ্ছা, ঠিক আছে।

যে যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে একত্রে বের হলাম। রোহিত আমায় বাড়ি পৌঁছে দিলেন। গেইটের সামনে রিয়া আপা, আব্বা দাঁড়িয়ে আছে আমাদের ভেতরে নিয়ে যাবার জন্য। রোহিত কে তারা ভেতরে আসতে অনেক করে বললেন। কিন্তু রোহিত বললেন, যে তার জরুরী কাজ আছে। এজন্য সে আসতে পারবে না। এরপরের বার ইনশাআল্লাহ আসবেন।

বাড়ির ভিতরে ঢুকছি, চাচি মামি সবাই চলে এসেছে আমাকে দেখার জন্য। কেমন আছি? এসব কিছু জানার জন্য। সবাইকে হাসিমুখে বললাম ভালো আছি। সবাই খুব খুশি হলেন।

সবাই বললেন, খুব ভালো একটা স্বামী পেয়েছি। আমার ভাগ্যটা খুব বেশি ভালো। আমি যেন জামাইটা সামলে রাখি, ভালো থাকি। এসব কথাগুলো শুনলাম। মনের ভেতরটা আরো খারাপ হয়ে গেল। বুকের ভিতর চিন চিন ব্যাথা করতে লাগলো। কারণ আমার স্বামী আজ অন্যের স্বামী হয়ে যাবে। সারাদিন পর আত্মীয়স্বজন সবাই চলে গেলে আমি রাতের বেলা ফ্রেশ হয়ে ঘরে বসে আছি। এমন সময় রিয়া আপা পিছন থেকে এসে আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বললেন।

রিয়া আপাঃ এই যে আমার ছোট বোনটা। কেমন আছিস তুই? সত্যি করে বলতো?

আমি আসলে আর কিছু বলতে না পেরে কান্না করে দিলাম।

মারিয়াঃ রিয়া আপা, রোহিততো আমায় ভালোবাসে না। রোহিত অন্য কাউকে ভালোবাসে। সে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে।
এই কথাটা শুনে রিয়ায়া আপা দাঁড়ানো থেকে মাটিতে বসে পরলো।

রিয়া আপাঃ তুই এটা কি বলছিস? আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছিনা। রোহিত তো এই ধরনের ছেলে না। ওতো অনেক ভালো ছেলে।

মারিয়াঃ না আপা, তুমি বিশ্বাস করো এটাই সত্যি। আমি এটা আরও চার মাস আগেই জানতে পেরেছি। বিয়ে ঠিক দুই দিন পর।

কিন্তু আমি চাইনি যে, কেউ এই সম্পর্কে জানো। বাবা মা একবার কষ্ট পেয়েছে, আর এসব সহ্য করতে পারবেনা।

আমার কান্না দেখে, রিয়া আপা জিজ্ঞেস করলেন। পুরো কাহিনী আমিও বলে ফেলতে বাধ্য হলাম। কারণ আপা থেকে কখনো কোনো কথা লুকায়নি। আর এখন লুকিয়ে কিবা লাভ?

কয়েকদিন পরে তো সব জানতেই হবে। তাই আপাকে আজকে বলে দিলাম আমার কথাগুলো শুনে আপনার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।

রিয়া আপাঃ এত কিছু কিভাবে সহ্য করেছে আমার ছোট বোন? তুই আর কান্না করিস না প্লিজ। মারিয়া আমার মনে হয় কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। রোহিত এরকম কিছু করতে পারে না। কারণ রোহিত তোকে অনেক বেশি ভালোবাসে। ও নিজে আমাকে অনেকবার বলেছে যে ও তোকে অনেক বেশি ভালোবাসে রে। তুই ভুল বুঝতেছিস।

রিয়া আপাঃ রোহিতকে একবার ফোন দে।

মারিয়াঃ আপা থাক।

রিয়া আপাঃ কেন থাক?একবার ফোন দে। আমি কথা বলবো। মুখে বললেই তো ডিভোর্স হয়ে যায় না। আর তাছাড়া ও এই রকম কিছু করতে পারেনা। মগের মুল্লুক পেয়েছে নাকি, আমার বোনকে? তুই ফোন দে। আর আমি যতটুকু বিশ্বাস করি,এখানে কোথাও না কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। তাই যে কোন ভুল তাড়াতাড়ি মিটিয়ে ফেলাই সবথেকে বেশি বুদ্ধিমানের কাজ। তুই তোর জীবনের অনেক গুলো মূল্যবান সময় নষ্ট করে ফেলেছিস। অনেক বড় ভুল করে ফেলেছিস। তোর আগেই কথাবার্তা ক্লিয়ার করা দরকার ছিল। তাই এখন আর দেরি করিস না প্লিজ বোন আমার একটা ফোন কর।

রোহিতকে ফোন দিলাম রোহিতের ফোন বারবার বন্ধ। এরকম করে একদিন দুইদিন না। প্রতিদিন আমি ফোন করি সকাল-বিকেল কিন্তু কখনো তার ফোন খোলা পাঈশা। আমার শ্বশুরবাড়িতে আব্বা-আম্মা গেলেন খোঁজ নিতে। তারা বলেন রোহিত বাসায় নেই। আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি একই টেনশনে পড়ে আছে। যে রোহিত কোথায় গেল? ওর কোনো খোঁজখবর নেই। আমি আমার শাশুড়িকে বললাম।

মারিয়াঃ মা সিমুর কোনো খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন কি?

মা খোঁজখবর নিয়ে দেখল, মায়া পুরোনো বাড়িতে থাকে না। নতুন বাড়িতে থাকে। তার নাকি বিয়ে হয়েছে। কিন্তু তার নতুন বাড়ির কোন খোঁজখবর কারো কাছে নেই। সবাই চিন্তা করে। রোহিত কোথায় গিয়েছে? রোহিতের কি হলো?

কিন্তু আমি জানি। রোহিত নিশ্চয়ই সিমুকে নিয়ে আলাদা কোথাও চলে গিয়েছে।

এভাবে করে প্রায় দুই মাস কেটে গিয়েছে। আমি একটা নতুন চাকরি নিয়েছি। কারণ মা বাবার উপর এই ভাবে বোঝা হয়ে থাকতে আমার ভালো লাগছে ।

আর তাছাড়া তারা, আমায় শিক্ষিত করেছে পড়ালেখা করিয়েছেন। এজন্য ভাবলাম, অন্ততপক্ষে নিজের খরচটুকু নিজেকে সামলানো উচিত।

রিয়া আপাঃ আজকে অফিসে যাবিনা?

মারিয়াঃ না, আজকে অফিসে যাব না।

রিয়া আপাঃ কেন?

মারিয়াঃ ছুটি নিয়েছি, শরীরটা খারাপ লাগছে।

রিয়া আপাঃ আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে, তুই রেস্টনে, আমি অফিসে যাই। আর মা-বাবা আজকে একটু ফুপির বাসায় যাবে সাবরিনাকে ছেলেদের পক্ষ দেখতে আসবে।

মারিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তোমরা সবাই হয়ে আসো।

রিয়া আপাঃ হ্যাঁ আমরা সবাই সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসব।

দুপুরের পরে খাওয়া-দাওয়া করে উঠেছি। তখন দেখলাম যে, একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। ফোনটা তিনবার বাজার পরে আমি রিসিভ করলাম।
কারণ, আচেনা নাম্বার সাধারণত আমি রিসিভ করি না।

ফোনটা রিসিভ করার পরে দেখলাম যে, একটা মেয়ে কন্ঠ আমাকে সালাম দিল।

অচেনা মেয়েঃ হ্যালো, আসসালামুয়ালাইকুম। মারিয়া বলছেন?

মারিয়াঃ জ্বি, আমি মারিয়া। আপনি কে?

সিমুঃ আমি মায়া, আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

কলিজার ভিতর একদম ধক করে উঠলো। মায়া আমাকে কেন ফোন দিল? হঠাৎ করে অনেক ইচ্ছে করছে রোহিতের ব্যাপারে জানতে তাই আমিও ফোনটা রাখলাম না।
বললাম,

মারিয়াঃ জ্বি বলুন, কি বলবেন?

সিমুঃ যে আপনি আসুন আপনার সাথে দেখা করে কিছু কথা বলতে হবে। আর, আচ্ছা থাক আপনি আসুন আসার পর এসব কথা হবে।

মারিয়াঃ কোথায় আসবো?

সিমুঃ আপনি স্কয়ার হসপিটালে চলে আসেন। আমি রুম নাম্বার মেসেজ করে দিচ্ছি। আর হসপিটালে তাড়াতাড়ি আসুন প্লিজ।

আমি তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে চলে গেলাম। হসপিটালে যেয়ে দেখি খুব সুন্দরী একটা মেয়ে তার কোলে বাচ্চা একটা রুমের বাইরে দাড়িয়ে আছে।
আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,

সিমুঃ আপনি মারিয়া না?

মারিয়াঃ আমি বললাম যে, আমি মারিয়া।

সিমুঃ আমি মায়া।

মারিয়াঃ জি বলুন, আপনি আমাকে হসপিটালে কেন ডেকেছেন?

সিমুঃ রোহিত অ্যাকসিডেন্ট করেছে। পুরো দুই মাস আগে।

আমার তো শুনে সাথে সাথে কলিজার পানি শুকিয়ে গেল। খুব বেশি খারাপ লাগতে থাকলো।

মারিয়াঃ অ্যাকসিডেন্ট করেছে মানে?

সিমুঃ হ্যাঁ, দুই মাস আগে একসিডেন্ট করেছে, যেদিন আমার বিয়ে ছিল।

মারিয়াঃ তাহলে রোহিত আর আপনার বিয়ে হয়নি?

সিমুঃ আমার বিয়ে রোহিতের সাথে? আমার কেন বিয়ে হবে রোহিতের সাথে? ও তো আমার ভালো বন্ধু। ও আমাকে যদি সাপোর্ট না করত, আজকে আমি একটা সাধারন সুখী জীবনে ফিরে যেতে পারতাম না।

আমার বাচ্চাটা একটা বাবার নাম পেতনা।

মারিয়াঃ আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা। আপনি কি আমাকে সব খুলে বলবেন প্লিজ?

সিমুঃ হ্যাঁ, আমি আপনাকে সব খুলে বলছি। তার আগে আপনি রোহিতের কাছে চলুন। রোহিতের পুরো দুই মাস কোন জ্ঞান ছিলনা। এজন্য আমি কাউকেই কিছু জানাতে পারিনি। আর তাছাড়া আমার মনে হয়নি, আপনার শ্বশুর বাড়িতে এ ব্যাপারটা জানানো ঠিক হবে।

আমার মাথায় তো সব তালগোল পাকাচ্ছে ।আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। যে মায়া কি বলছে।
আমি বললাম,

মারিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে আগে রোহিতের সঙ্গে দেখা করি।

সিমুঃ আর হ্যাঁ, মারিয়া একটা কথা জানেন ও আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। আপনি এই ভুল ধারণা রাখবেন না। যে রোহিতের মনে আপনি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে ছিলো বা থাকতে পারে। কথাটা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল।

চলবে…

পর্ব- ৬- অন্তীম পর্ব

কেবিনে ঢুকে দেখি ডক্টর রোহিতকে এক্সামিন করছে। কিন্তু সে অচেতন।

কান্না এসে গেল রোহিতের অবস্থায় দেখে। নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।

সিমুঃ অবস্থা কেমন এখন?

ডক্টরঃ ইম্প্রভিং, তবে উনি বারবার মারিয়া বলে যাচ্ছে। অচেতন অবস্থা থেকেই আমার মনে হয় উনার এখন তার পাশে থাকা উচিত।

মারিয়াঃ আমি মারিয়া, উনার ওয়াইফ।

ডক্টরঃ এখানেই থাকেন। তাহলে উনি জলদি সুস্থ হয়ে যাবে।

রোহিতের হাতটা ধরে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। কেমন যেন একটা অজানা ভয় কাজ করছে। রোহিতের হাতটা ধরে প্রায় ৫ বা ৭ মিনিটের মত বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পরে একটা ছেলে আসলো কেবিনে। এসে আমাকে সালাম দিল। সিমুকে বলল ভাবিকে সব জানিয়েছ?

সিমুঃ পুরোটা না।

ছেলেটাঃ তাহলে চলো এখন, ভাবির সব জানা দরকার।

সিমুঃ হ্যাঁ মারিয়া, একটু আসো আমাদের সাথে বাইরে।

আমরা হাসপাতালে ক্যান্টিনে বসলাম।

শোভনঃ ভাবি, আমি শোভন। সিমুর হাজবেন্ড আর রোহিতে ছোটবেলার ফ্রেন্ড। আপনাদের বিয়ের সময় আমি জার্মানিতে ছিলাম। তাই বিয়েতে আসতে পারিনি।

সিমুঃ মারিয়া, তুমি কেন মনে করেছিলে। আমি রোহিতকে বিয়ে করবো?

আমি ওদের দুইজনকে প্রথম থেকে সব বললাম।

সিমুঃ মারিয়া তাহলে শুনো। নিজের পছন্দের একটা ভন্ড প্রতারক ছেলেকে বিয়ে করেছিলাম। চার বছর আগে। তার ব্যবসায়ই ছিল ভালো ঘরের মেয়েদের বিয়ে করে তাদের থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়া। এসব যখন জানতে পারলাম। তখন আমার বিয়ের এক বছর পার হয়ে গেছে, আর আমার বাবুর এক মাস বয়স তখন। এসব কথা শুনে বাবা সহ্য করতে পারলেন না। উনি হার্ট স্ট্রোক করে মারা গেলেন।ওই প্রতারককে আমি এসব জানার পরে ডিভোর্স দিয়ে দিলাম। এবং শুনতে পারলাম তোমার আপা নাকি তাকে জেলে পাঠিয়েছে।

মারিয়াঃ রিয়া আপা? কেন?

সিমুঃ তার কারণ। রিয়া আর আমার এক্স হাজবেন। একজন তাকে টাকা পয়সা সব দেবার কারণে আমার অনেক কষ্ট হয়ে গেল। আমার বাবার ভিটে বাড়ী ছাড়া বাকি যা যা ছিল সব ব্যবসায় লাগাব বলে এই ভন্ডলোক যা নিয়েছিলো তা আসলে কিছুই লাগায়নি। আমাদের টাকা-পয়সা নিয়ে পুরো নিঃস্ব করে দেয় আমায়। এখন ছোট একটা বাচ্চা আর আমি। আমার বাবা-মা একজনও নেই এই অবস্থায় চলতে খুব বেশি কষ্ট হয়ে গেল। তারপরেও কোন রকমে চলে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বলে না যার কপালে সুখ নেই তার কপালে কখনো সুখ আসেনা। আমার বাচ্চাটা ক্যান্সার ধরা পরলো। না পেরেই রোহিতকে সব বললাম।

রোহিত আমার ভাইয়ের মত সাপোর্ট করল। আমার বাচ্চাটার ট্রিটমেন্ট করালো। আর রোহিত রাত্রে কথা বলতো আমার বাচ্চাটার সাথে। বাচ্চা ওকে মামা বলতো আর বলবেই না কেন? আমি জানিনা আমার আপন ভাই থাকলে আমার জন্য কতটুকু করত। কিন্তু রোহিত যা করেছে তা আসলে বলে শেষ করার মতো নয়।

শোভনঃ আর ভাবি। আমি আগে থেকে মায়াকে পছন্দ করতাম। মায়ের সাথেই দুর্ঘটনা ঘটার পরে, আমি মায়াকে বিয়ে করার কথা ভাবলাম। তখনই রোহিত আমাকে বলল আর মায়া কে বলল বিয়েটা করে নেওয়ার জন্য। এইটাই আমাদের জন্য ভাল হবে। তারপর মায়া ডিসিশন নিলে, সে আমাকে বিয়ে করবে এবং বিয়েটা হয়ে গেলো আল্লাহর রহমতে।

সিমুঃ আর তোমার শাশুড়ি আমাকে ভুল বুঝে সব সময়। উনি চেয়েছিলে উনার মামাতো ভাইয়ের মেয়েকে দিয়ে রোহিতকে বিয়ে করাবে। কিন্তু রোহিত তোমাকে দেখে পছন্দ করেছিল। আর তাই উনি সব উল্টাপাল্টা কথা বানিয়ে বলেছিলেন। উনি ভালোমতোই জানতে রোহিত আর আমি ছোটবেলার বন্ধু। তারপরেও সব ধরনের উল্টাপাল্টা কথা বানিয়ে বলেছিলেন।

শোভনঃ আর ভাবি। উনি কিন্তু রোহিতের আপন মা না ওর সৎমা। রোহিতের আম্মু মারা গিয়েছিলেন। তারপর রোহিতের আম্মু বেস্ট ফ্রেন্ড অর্থাৎ বর্তমান আন্টি আঙ্কেলকে বিয়ে করে। রোহিতের কাছে জিনিসটা খুব খারাপ লাগত। সে মেনে নিতে পারেনি ব্যাপারটা। আর আন্টিও কখনো এজন্য রোহিতকে খুব একটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি। সবাইকে দেখাতে উনি রোহিতকে খুব ভালবাসে। কিন্তু আসলে সবটাই বানোয়াট ছিল।

সিমুঃ আর এজন্যই রোহিতের অসুস্থতার কথা। আমি আপনাকে আগে জানালাম। অন্য কাউকে জানাইনি।

শোভনঃ রোহিত আমাদের বিয়ে দিল। সেদিন রাতেই ও ব্যাক করতে চেয়েছিল আপনার কাছে। কিন্তু আমি আর মায়া ওকে যেতে দেয়নি। বললাম একটা রাতই তো থেকে যা।
পরদিন সকালবেলা রেডি হয়ে যে গাড়ি নিয়ে বের হল ঠিক তখনই একটা বড় বাস এসে ওর গাড়িকে ধাক্কা দিল এবং আজকে এই অবস্থা হয়ে গেল।

সবকিছু শোনার পর আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আমি এমন একজন মানুষকে ভুল বুঝেছি। কষ্টে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। যেখানে আমার স্বামী আমার জন্য এত কিছু করল। এত ভাল একজন মানুষ আর আমি। আমি কি করলাম? তাকে এভাবে সন্দেহ করলাম। ভুল বুঝলাম। আমার তো উচিত ছিল একটাবার অন্ততপক্ষে ভেবে দেখা। এসব ভাবতে ভাবতেই খুব বেশি খারাপ লাগছে।

মারিয়াঃ কিন্তু আমাকে রোহিত একবারও জানায়নি।

সিমুঃ আমি বলেছিলাম না জানাতে। কারণ রিয়া আর আমার ব্যাপারটা নিয়ে যদি কোন ঝামেলা হতো। তাই রোহিতকে বলেছিলাম আগে সব ঠিক হোক তারপর তোমাকে সব জানাতে।

তুমি যেদিন রাতে আমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলে রোহিত। সেদিনই তোমাকে সব বলতে চেয়েছিল। আমি রোহিতকে বলেছিলাম, যে এখন কোন দরকার নেই। ঝামেলাগুলো শেষ হলে তোর বউকে আমি সব বুঝিয়ে বলবো।

রিয়া আপা এতোক্ষনে চলে এসেছে। এখানে পৌঁছানোর আগে রিয়া আপাকে মেসেজে বলেছিলাম, যে সিমু আমাকে এখানে আসতে বলেছে। রিয়া আপা পেছন থেকে সামনে এসে বল।

রিয়া- মায়া তোমার কোন দোষ নেই সব ভুলে যাও। আমিও ভূলে গেছি। আর মারিয়া দেখ, বলেছিলাম না কোথাও ভুল হচ্ছে।
আমি কাঁদতে কাঁদতে আপাকে জরিয়ে ধরলা।

সিমুঃ অনেক হয়েছে আমাদের জন্য রোহিত আর মারিয়ার অনেক মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট হয়েছে। বিয়ের পরে সময় গুলো খুব সুন্দর হয়। সুন্দর ভাবে কাটাতে হয়। এগুলোতো আজীবনের স্মৃতি হয়ে রয়ে যায়।

কিন্তু আমাদের জন্য রোহিত মারিয়ার মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট হয়ে গেল। রুহু আমাকে প্লিজ মাফ করে দিও?

মারিয়াঃ না এতে তোমার কোন দোষ নেই মায়া। মাফ চাইবে না।

শোভনঃ আচ্ছা আমরা এখন রোহিতের কাছে যাই। বেশ অনেকক্ষণ হলো ভাবি এসেছে। তার এখন রোহিতের কাছেই বসা দরকার। কেবিনে যে দেখি রোহিত জেগে গেছে। আমাকে দেখে উঠে বসতে চেষ্টা করছে।

মারিয়া- তুমি উঠনা রিলাক্স কর।

রোহিতঃ কিছু কথা বলব।

মারিয়াঃ আমি সব শুনেছি, সব জানি।

রোহিতঃ আমাকে মাফ করে দাও।

মারিয়াঃ তুমি কেন মাফ চাচ্ছ?

রোহিতঃ তুমি আমাকে মাফ করে দাও? আজকে যদি না থাকতাম তাহলে তোমার কাছে হয়তো মাফটা চাইতে পারতাম না। হয়তো তোমার কাছে মাফ চাওয়ার জন্যই আমি এখন পর্যন্ত বেঁচে আছি। জানো মারিয়া মৃত্যুকে অনেক কাছ থেকে দেখে এসেছি। মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখার পরে শুধুমাত্র তোমার কথাই মনে পড়তো। শুধু মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে পেরেছে তোমার জন্য। তুমি আমাকে সাহস দিয়েছো আর আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। আমি ভাবছিলাম, শুধু একটা জিনিসই আমার বউটাকে তো আমি ঠিক মত ভালবাসতে পারলাম না। আমার বউটাকে আমি কোন সুখ দিতে পারলাম না। আমার নিজের ঝামেলার কারণে আমার বউ হয়তো কষ্ট পাচ্ছে। মারিয়া আল্লাহ হয়তো তোমার জন্য আমাকে ফিরিয়ে এনেছেন। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।

রোহিতে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কথাগুলো বলতে গিয়ে।

মারিয়াঃ আমিও তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।

পুরো ১৮ দিন লাগলো রোহিতে সুস্থ হতে। এই ১৮ দিনের মধ্যে একটা তো এমন যায়নি যে, মারিয়া ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। রোহিতের প্রায় সুস্থ হয়ে যাবার পরেও মারিয়া নির্ঘুম রাত কাটাত।
অনেক টেনশন করতো।

সিমুঃ তুই এখন সুস্থ হয়ে গিয়েছিস। এবার বাড়ি যা। মারিয়া তিনদিন এর জন্য আমার সাথে যাচ্ছে।

মারিয়াঃ কোথায় যাব? এই যে ম্যাডাম চেহারার এই অবস্থা বানিয়েছেন আপনাকে ঠিক করতে হবে না?

মারিয়াঃ না ও কিছু না। এমনি ঠিক হয়ে যাব।

সিমুঃ বললেই হলো? রোহিত আমার জন্য অনেক করেছে। এজন্য এবার আমাদের পালা তোমাদের জন্য কিছু করার।

মারিয়াঃ মায়া থাক লাগবে না।

সিমুঃ আরে লাগবে চুপচাপ আমার সাথে চলো। তিনদিন পর তোমাকে তোমার জামাই কাছে ফিরিয়ে দিব। কোন টেনশন নেই।

মায়ার কথা এত বেশী লজ্জা লাগল। আমি তো আশেপাশে একদম তাকাতেও পারছিলাম না। বেশ পড়ে রোহিতের দিকে।

রোহিতঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আমার বউকে নিয়ে যা।তিন দিনের জন্য দিলাম।

তিনদিন পরে আমাকে একদম লাল টুকটুকে বউ এর মতো সাজানো হলো। আমাদের বাড়িটা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। এক ভাবে বলা যায় আজকে আমাদের বাসর রাত। খুব লজ্জা অনুভব করছি।

মনে হচ্ছে অনেক দিন প্রেম করার পর আজ আমাদের বিয়ে হল। সারাদিন নাকি শোভন মায়া আর রিয়া আপা মিলে আমাদের ঘরটা সাজিয়েছে। আমাকে ঘরে এনে বসানো হয়েছে যদিও এখন পর্যন্ত রোহিতের দেখা পাইনি। তবে এখন সবাই আমাকে ঘড় এ দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে গিয়েছে। কি সুন্দর লাগছে আমার ঘরটা অদ্ভুত রকমের সুন্দর। বেলী আর রজনীগন্ধা দিয়ে আমার ঘরটা পুরো সাজানো হয়েছে। আর আরো কিছু গোলাপি গোলাপ। এত ভালো লাগছে মনে হচ্ছে একটা ঘোরের মধ্যে আছি। এত সুন্দর হবে জীবনটা কখনো ভাবি নি। আল্লাহ আমার সহায় হয়েছেন।

আল্লাহ আমাকে আসলেই অনেক সৌভাগ্যবতী বানিয়েছে। আমি অবশ্য ঘোমটা দিয়ে বসে আছি। এটা মায়ের বুদ্ধি যে আমার ঘুমটা দিয়ে বসে থাকতে হবে।
রোহিত নববধূর মত আমাকে আজকে বরণ করে নিবে।মেয়েটা একদম পাগল। কি যে করব প্রায়।

১০ মিনিট পরে রোহিত আসলো।

রোহিতঃ এহে এহে। আমি কি চাঁদ মুখখানা দেখতে পারি?

ঘুমটার আড়ালে দেখা যাচ্ছে রোহিত কে? এত সুন্দর লাগছে যা বলার মত না। আমি আসলেই অনেক ভাগ্যবান। এত সুন্দর মন আর সুন্দর চরিত্রের স্বামী পেয়েছি।

আমার বউটা আমাকে কিছু বলবে না?

মারিয়াঃ যার দেখতে ইচ্ছা করে, সে যেন নিজেই দেখে নেয়।

রোহিত আস্তে করে আমার ঘোমটা তুল্লো।

রোহিতঃ মাশাল্লাহ, আমার বউটা অনেক অনেক বেশি সুন্দর। এই আংটিটা আপনার জন্য। আজীবন এটা পরে থেকো মারিয়া। মনে হবে আমি সব সময় তোমার পাশে আছি। আমাকে কোনো দিন ছেড়ে যেও না। মারিয়া আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। তুমি না থাকলে আমি বেচে হয়তো থাকবো না। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।

মারিয়াঃ বাজে কথা বলবা না। আমি এসব শুনতে চাঈশা। আর চলে যাওয়ার হলে তো আগেই যেতাম। আমি নিজেও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারিনা। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আর আংটি তুমিই পরিয়ে দাও।

আমি বিছানায় বসা আর রোহিত হাটু গেরে মাটিতে বসে আমাকে আংটিটা পরিয়ে দিলো।

আমাদের বেলকনিটা খোলা ঘরে ঠান্ডা বাতাস আসছে। শীত পরে গেছে। ঘরে মৃদু আলো। সব রিয়ায়ে যেন একটা স্বপ্ন সত্যি হলো আমার।

রোহিত আমাকে জড়িয়ে ধরলো হঠাৎ আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলে।

রোহিতঃ সরি মারিয়া,তুমি টাইম নিতে পারো। যখন তুমি ইজি হবে তখনই না হয়। আমরা পুরো কথা আর শেষ করতে দিলাম না। তার আগেই তার ঠোঁট আমার ঠোঁটের মাঝে নিয়ে হারিয়ে গেলাম। একটা নতুন পৃথিবীতে।

(ভুল বোঝাবুঝি একটা সুন্দর ভালোবাসাময় সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে। শুধু মাত্র কিছু সময়ের ব্যাপার। নিজের আর নিজের ভালোবাসার মানুষের মধ্যে এই ভুল বোঝাবুঝিটাকে ঘর করতে দিয়েন না। ভালোবাসার মূল্য দেয়া যায়না কখনোই। আর ভালোবাসার মানুষের সাথে কাটানো সুন্দর প্রতিটা সময়ই হয় মূল্যবান। একটু একটু করে দুইজন মানুষ যদি দুইজন কে বুঝে প্রতিটা দিন তাহলে হয়ে উঠবে মূল্যবান। আপনার প্রিয়জনের মূল্যায়ন করুন। একত্রে সুখে থাকুন।

গল্পটা কেমন লাগলো জানাবেন।

লিখা: Sidratul Jannat

আরো পড়ুন- বিয়ের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *