যদি তুমি জানতে (১ম খণ্ড) – বাংলা প্রেমের গল্প কাহিনী: সারাটা রাত আমি ঘুমুতে পারিনি। বারবার ওর কথা মনে পড়ছিলো। আর মনে পড়ছিলো সেই হঠাৎ ঘটে যাওয়া মুহূর্ত গুলা। এসব কেন হলো। আমার তো এখনো পর্যন্ত লজ্জা করছে।
পর্ব ১
বসে বসে টিভি দেখছিলাম আর বাদাম খাচ্ছিলাম।
বাসার ফোনে রিং বাজতে লাগলো।
আম্মু কিচেন থেকে চিৎকার করে বলছে।
সানাত ফোনটা রিসিভ কর।
কখন থেকে ফোন বাজছে কানে ঢুকে না।
আমি বিরক্তি ভাব নিয়ে।
নাহ কানে ঢুকে না।
তোমার ফোন তুমিই না ধরবে।
আমি কেন ধরবো।
আমার সিরিয়ালটা মিস হয়ে যাবে তো।
আম্মু এবার ঝাড়ি দিয়ে বললো,
ফোনটা ধরবি নাকি এসে টিভির রিমোট আচাড় দিবো।
আমি কি এখানে নাচতেছি।
কাজ করছি তাই আসতে পারছি না।
জলদি ফোন ধর।
কি অসভ্য মেয়ে।
একটুও কথা শুনেনা।
বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।
তবে আমি হল রুম থেকে স্পষ্ট সব শুনতে পাচ্ছি।
আম্মুটা এমনি সবসময় শুধু ঝাড়ি দেয়।
নিজের ফোন নিজের সাথে রাখতে পারে না।
যখনই আমার সিরিয়াল শুরু হবে আম্মুটা তখনই শুধু কাজ আর কাজ দিবে।
একটু আগেই না সোহা আপুনির রুমের সব জিনিস গুছিয়ে রাখলাম।
হবু জামাইর সাথে ঘুরতে গেছে আর আমার উপর সব কাজ দিয়ে গেছে।
কাপড় চোপড় সব বের করে অগুছালো করে রেখেছিলো।
বাসায় এসে দেখি রুমের কি অবস্হা।
আমিও বকবক করতে করতে ফোনটা রিসিভ করলাম।
নাম্বারটা পর্যন্ত ভালো করে দেখিনি।
কিন্তু ওপাশ থেকে যা শুনলাম আমার তো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্হা।
মুখ দিয়ে কোনো কথাও বের হচ্ছে না।
সো।সো।সোহা আপুনি।
আম্মুমুমুমুমমমমমমমুমমমমু
মাথাটা ভারী হয়ে আসছিলো।
চিৎকারটা দিয়েই অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
যখন চোখ খুলি দেখি আমার পাশে অনেক মানুষ।
ফুফি।মামি।খালা মণি।ভাবী।নানু।
ফুফি আমার মাথায় পানি ঢালছিলো।
সবাই সাদা পোশাক পড়ে আছে।
সবাইকে দেখে কেমন যেনো মরা মরা মনে হচ্ছে।
আমি এক ঝটকায় উঠে পড়ি।
নানু বললো,
সানাত তোর এখন কেমন লাগছে?
কেমন লাগছে মানে।
আম্মু কই?
আর তোমরা সবাই এখানে কেনো?
সবাই এমন কাপড় পড়ে আছো কেনো?
সেকেন্ডের মধ্যেই মনে পড়ে গেলো সেই ফোনের কথা।
আপুনি।
আমার আপুনি কই?
আমি নেমে আসতে চাইলে ফুফি আমাকে টেনে ধরে রাখে।
চোখের পানি মুচতে মুচতে বলে।
সানাত রে।
সোহা আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে ওপারে।
আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
এদিকে সবাই কাদছে।
আমি ফুফিকে ধাক্কা দিয়ে আপুনি বলে দৌড়ে হল রুমে চলে এলাম।
অনেক মানুষ জন একানে।
মধ্যখানে পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
আমার দিকে সবাই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
আমি কাদতে কাদতে আপুনি।
আপুনিরেেে কই তুই।
পর্দা সরিয়ে দিতেই আমার হৃদস্পন্দন এক মুহূর্তের জন্যে থমকে গেলো।
আমার কলিজার টুকরা আমার নয়নের মণি আমার ভালোবাসার প্রিয় আপুনিটা সাদা কাপড়ে মুড়ানো শুয়ে আছে।
ওর চারপাশে আগরবাতি জ্বালানো।
কাজিনরা কোরআন পড়ছে।
আম্মু কাদতে কাদতে অজ্ঞান হচ্ছে।
একবার জ্ঞান আসলে আবারো কাদতে কাদতে একই অবস্হা।
আমাদের সুখের পৃথিবীটা মুহূূর্তেই শোকের ছায়ায় ভরে গেলো।
যে আপুনিকে ছাড়া আমি রাতে ঘুমাতাম না।
আমার কোনো কথা হজম হতো না আপুনিকে না বলা পর্যন্ত।
মনের সব সব কথা আপুনির সাথে শেয়ার করতাম।
ঝগড়া করতাম।
আপুনির থেকে চুরি করে টাকা নিয়ে নিতাম।
পরে অবশ্য বলে দিতাম।
পাঁচটা দিন পরেই তো আপুনির বিয়ে হবার কথা ছিলো নিভরাজ জিজুর সাথে।
তাদের চারটা বছরের রিলেশন ছিলো।
নিভরাজ জিজু প্রতিষ্টিত একজন পারফেক্ট মানুষ ছিলো।
আর তার পরিবার যথেষ্ট সুনাম ধন্য।
সেই কারণে আব্বু অমত করেনি।
আর নিভরাজ জিজু অসম্ভব হ্যান্ডসাম।
চেহেরাটা মাসাআল্লাহ খুব মায়াবী।
কত খুশির আমেজ ছিলো পুরো ঘর জুড়ে।
আপুনি আর জিজু প্রতিটা দিন বের হতো।
বিয়ের শপিং।
তারপর ঘুরাঘুরি এইসব আরকি।
মাঝখানে কয়েকবার আমাকেও নিয়ে গেছিলো।
কিন্তু হঠাৎ এসব কি হয়ে গেলো।
আজ বিকেলেই তো বের হলো দুজনে বাণিজ্য মেলায় যাবে বলে। অবশ্য তখন আমি ভার্সিটি ছিলাম।
এক্সট্রা ক্লাস থাকায় যাবোনা বলে দিয়েছিলাম।
আপুনির সাথে তো শেষ দেখাটাও করতে পারিনি।
আমার আপুনিটার মুখটা কেমন যেনো হয়ে গেছে।
চোখের নিচে সেলাইয়ের চিহ্ন।
ঠোটেঁর পাশে কাটা দাগ তরতাজা এখনো।
বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার।
বাইরে থেকে আসার সাথে সাথে আপুনি, সানাত দেখ, তোর জন্যে কি এনেছি জলদি আয় বলেই চিৎকার দিয়ে ডাকতো আমায়।
আর আমি এক দৌড়ে যেতাম।
দেখতাম কি কি এনেছে আমার জন্যে।
এখন কে ডাকবে আমায় সানু বুড়ি।
কে সকালে আমায় পানি ঢেলে দিয়ে ঘুম থেকে জাগাবে।
রাতে যে একা থাকতে আমার ভয় করে।
এখন কে থাকবে আমার সাথে।
কে জড়িয়ে ধরে আমায় ঘুম পাড়িয়ে দিবে।
আমি কার সাথে ঝগড়া করবো।
বুক ফেটে কান্না আসছে আমার।
আপুনি বলে চিৎকার দিয়ে আপুকে জড়িয়ে ধরলাম।
আপুনিরে।
তুই আমাকে ছেড়ে চলে গেলি কেনো।
আমি যে একা হয়ে গেলাম।
আমি কাকে আপুনি ডাকবো।
আমাকে কে শান্তনা দিবে।
কে আমাকে সানু বুড়ি বলে ডাকবে।
আপুকে পাগলের মতো চুমু দিচ্ছি।
আমাকে সবাই টেনে আপুর থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে।
যখন আমি আপুনির কাছে যাবার জন্যে পাগলামী করছি নানু আমাকে থাপ্পর দিয়ে বললো,
এসব করার মানে কি।
মৃত মানুষকে এমন করে না।
ওকে স্পর্শ করতে পারেনা।
ওর কষ্ট হবে।
তোরা এভাবে ভেঙ্গে পড়িস না।
দেখছিস না তোর মা পাগল পাগল হয়ে যাচ্ছে।
তোরা ছিলিস দুইজন।
এখন তো একজন চলে গেছে।
এখন তুই ও যদি এমন করিস।
তোর মা বাবার এখন তুই ছাড়া আর কেউ নেইরে সানাত।
নানু আমাকে আম্মুর কাছে নিয়ে গেলো।
আম্মু হাউমাউ করে কাদছে।
আমার সোহা রে।
আমার কলিজার টুকরা।
তুই কেনো আমার আগে চলে গেলি।
এখন আমি কি নিয়ে বাচবো রে মা।
আল্লাহ আমার সোহারে কেনো নিয়া গেলো।
নানু আম্মুকে টেনে আমার দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বললো,
কি নিয়ে বাচবি মানে।
এটা কি।
এটাকে নিয়ে বাচবি।
এটার জন্যে বাচতে হবে তোকে।
আম্মু আমাকে ঝাপটে ধরে কাদতে লাগলো।
আমিও অঝোরে কাদছি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে।
যখন আপুনিকে কবর দিতে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন নিভরাজ জিজু পাগলের মতো আচরণ করছিলো।
নিতেই দিচ্ছিলোনা আপুনিকে।
আপনারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমার সোহাকে।
আমি কোথাও যেতে দিবোনা সোহাকে।
জিজুকে তিন চারজন মিলেও আটকে রাখতে পারছিলো না।
ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে জিজুও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
পরে সবার কাছ থেকে জানতে পারলাম।
জিজু আর আপুনি দুজনেই বাণিজ্য মেলায় যাবার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো।
মাঝপথে আপুনি আইসক্রিম খাবার বাহানা ধরলে জিজু আইসক্রিম আনতে যায় রাস্তার ওপারের একটা আইসক্রিম পার্লারে।
আর আপুনিও গাড়ি থেকে বের হয়ে সেলফি তুলতে তুলতে অসাবধানতা বশত একটা স্পিড বেগে আসা ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে ওকানেই আমার কলিজার টুকরা আপুনিটার জান পাখিটা উড়াল দেয়।
জিজু এই দৃশ্যটা দেখেই তার হাত থেকে আইসক্রিম পড়ে যায় আর আপুনিকে এমন দেখে সেও সেকানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
জিজুকে আংকেল আন্টিরা বাসায় নিয়ে গেছেন।আমাদের দুই বিল্ডিং পরেই ওদের বাসা।
রাত এগারোটার ভিতর সব শেষ।
বাইরের সব মানুষ চলে গেছে।
আত্নীয় স্বজনরাও অনেকে আছেন আর অনেকে চলে যাচ্ছেন।
সবাই শুধু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
আমরা দুই বোন ছিলাম।
আমাদের কোনো ভাই ছিলোনা।
এখন তো আমি একা।
রুমে যেতেও পারছিনা।
সব সব আপুনির জিনিস।
আপুনির বিয়ের শপিং সব রুমে রাখা।
আমার কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে।
এত কষ্ট কেনো আপনজন হারানোর।
পারছিনা আমি আর।
খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে আমার।
ইশশশ।
যদি আমিও যেতাম আপুনির সাথে।
তখন দুজনে একসাথে মরতে পারতাম।
এত কষ্ট তো আর পেতাম না।
বড্ড কষ্ট হচ্ছে।
চিৎকার করে কাদতে মন চাইছে।
কিন্তু পারছিনা।
আমার দুপাশে আব্বু আর আম্মু।
তারাও আমাকে বুঝতে দিচ্ছে না যে তাদের ভেতর কি ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাচ্ছে।
ফুফি ভাতের প্লেট এনে আম্মুকে দিচ্ছিলো।
কিন্তু আম্মু খাবেনা বললো,
জোর করলেও খেতে চাইছে না।
আব্বু ও কিছু খেলো না।
এবার ফুফি আমার কাছে এসে জোর করে আমাকে খাইয়ে দিতে চাইলো।
আমি খেতে না চাইলে আম্মু নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে দেয়।
এই টাইমে আপুনি থাকলে আম্মু আপুনিকে খাইয়ে দিতো।
আর আমি হিংসে করে বলতাম।
আম্মুটা আমাকে একটুও ভালোবাসে না।
ভালোবাসে শুধু আপুনিকে।
তুই চলে গেলে যখন আমি একা থাকবো তখন আর কেউ আমার আদরের ভাগটা নিতে পারবে না।
আমি সব একা পাবো।
তোর সব জিনিস আমি নিয়ে নিবো দেখিস তুই।
কথাটা মনে পড়তেই কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে আমার।
মনে হচ্ছে কেউ তীর ঢুকিয়ে দিচ্ছে কলিজায়।
আমিতো এভাবে বলিনি।
তুই শশুর বাড়িতে চলে গেলে সেইটা মিন করেছিলাম রে আপুনি।
কিন্তু তুই যে এভাবে সারাজিবনের জন্যে চলে যাবি আমি সেটা কখনো চাইনি।
তোকে অনেক ভালোবাসি রে আপুনি অনেক বেশি ভালোবাসি।
পরদিন আন্টি আংকেল আবারো আমাদের বাসায় আসলো।
আব্বু আংকেলকে জড়িয়ে ধরে কাদছে আর আন্টি আম্মুকে।
আংকেল আন্টি আপুনিকে অনেক পছন্দ করতো।
তাদের একমাত্র ছেলের বউ হবে।তাই আপুনিকে অনেক ভালোবাসতো।
একদিন পর পর এসে দেখে যেতো।
আন্টি আম্মুকে বলছে জিজু নাকি আপুনির কবরের পাশে বসে আছে সকাল থেকে।
গতকাল থেকে নাকি কিচ্ছু মুখে দেয়নি।
আন্টি আমাকেও অনেক শান্তনা দিচ্ছেন।
আন্টি আম্মুকে বলছেন।
উপর ওয়ালার ইচ্ছা সব ভাবী।
এমনটা যে হবে কেউ আশা করিনি আমরা।
নিজেকে সামলান ভাবী।
আপনারা এভাবে ভেঙ্গে পড়লে কি চলবে।
আপনার আরেকটা মেয়ে আছে ওর দিকে দেখেন।
আম্মু নিরবে চোখের জল ফেলছে।
আমাদের বাসাটা ফাকা ফাকা হয়ে গেছে।
যে বাসা থেকে আমার আর আপুনির চিল্লানি শুনা যেতো।
এমন কি আমাদের খুনসুটি ঝগড়ার জন্যে পাশের বাসা থেকে কত বার যে নোটিশ এসেছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই।
আজ সে বাসা যেনো মরে গেছে।
কেমন চুপচাপ। নিস্তব্ধ ছেয়ে গেছে।
এভাবে শোকের ভেতর কেটে গেলো দুই সপ্তাহ।
শোকের ছায়াটা অনেকটা কেটে গেছে।
তবে বাইরে থেকে।
ভেতরের ক্ষতটা কখনো পরিপূর্ণ হবার মতো না।
আন্টি আংকেল বাসায় এলো।
আব্বু আম্মুর সাথে কি যেনো কথা বলছে আমি সালাম দিয়ে বসতে চাইলে আম্মু আমাকে ভেতরে চলে যেতে বলে।
এতোক্ষণ ধরে কিসের কথা বলছে তার
পর্ব ২
আন্টি আংকেল বাসায় এলো।
আব্বু আম্মুর সাথে কি যেনো কথা বলছে আমি সালাম দিয়ে বসতে চাইলে আম্মু আমাকে ভেতরে চলে যেতে বলে।
এতোক্ষণ ধরে কিসের কথা বলছে তারা।
আমার কিচ্ছু ভালো লাগছিলো না।
রুম থেকে আপুনির সব কাপড় আম্মু একটা বড় ব্যাগে গুছিয়ে রেখেছে যাতে আমার চোখে না পড়ে।
পুরো রুম জুড়েই সব আপুনির আর আমার জিনিস।
সব জিনিস সরিয়ে ফেলা হয়েছে তবে একটা জিনিস রয়ে গেছে।
আলমারির নিচের কর্ণারে একটা বক্স রাখা ছিলো।
বক্সটাতে একটা ছোট্ট তালা আছে।
বক্সটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছিলো।
আপুনির কাছে চাইছিলাম তখন আপুনি দেয়নি।
বলেছিলো সময় হলে ওটা আমাকে দিয়ে দিবে।
ওটার চাবিটা যেখানে রেখেছিলো সেখানে এখনো পড়ে আছে।
আমি কখনো বক্সটা খুলে দেখিনি।
আপুনি বলেছিলো।
বক্সটাতে আপুর প্রাণ রয়েছে।
বললো পরে খুলে দেখিস।
তুইতো আমার বোন।
বোনের কাছে লুকোতে নেই।
চোখের পানিটা ধরে রাখতে পারছি না।
এমন সময় আম্মুর কানে ভেসে এলো।
আংকেল আন্টিকে নাস্তা দিতে।
আমি চায়ের ট্রে নিয়ে রুমে ঢুকতেই তাদের কিছু কথা আমার কানে এলো।
হাত থেকে ট্রে টা পড়ে গিয়ে।
কাপ ভেঙ্গে গেলো।
আন্টি আম্মু। আমার দিকে তাকালো।
আমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললাম।
আম্মু।আন্টি তোমরা এসব কি বলছো।
মা।মানে কি এসবের।
আম্মু চুপ করে আছে আর আন্টি আমাকে বিছানায় নিয়ে বসালেন আর পাশে তিনিও বসলেন।
দেখো মা। যা হবার তাতো হয়ে গেছে।
এতে আমাদের কারো হাত নেই।
আমরা তো সোহাকে বউ হিসাবে না নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতাম।
আমি ভালোবাসতাম মানে।
তাহলে এখন কি ভালোবাসেন না?
আন্টি আমার মাথায় হাত রেখে।
অবশ্যই এখনো ভালোবাসি মা।
আর তোমাকেও ভালোবাসি।
ইনফ্যাক্ট তোমাদের পরিবারটাকে আমরা অনেক ভালোবাসি।
তোমাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে চাইনা তাইতো চেয়েছিলাম সোহাকে আমাদের ঘর তুলতে।
কিন্তু তা আর হলোনা।
আমার ছেলের ভাগ্যটা এতটা নির্মম কেনো।
ভালোবাসার মানুষটাকেই পেলোনা।
ছেলেটার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
আন্টি আমাকে ওনার দিকে ঘুরিয়ে।
তাইতো মা আমি চাই সোহার পরিবর্তে তুমি আমাদের মেয়ে আসবা।
আমি আন্টির হাত সরিয়ে দিয়ে।
কিন্তু এটা হতে পারেনা।
কেমনে সম্ভব এটা।
আমার আপুর স্বপ্নের সাজানো সংসার আমি করবো।
না আন্টি এটা আমি কখনো পারবো না।
আন্টি দেখো মা সানাত।
ভাগ্যের লিখন খন্ডানো যায় না।
চারটা দিন পরেই বিয়ে হবার কথা ছিলো।
আত্নীয় স্বজন সবাইকে জানানো হয়েছিলো।
হঠাৎ যে এমনটা হবে আমরা কেউ আশা করিনি।
কিন্তু মারে আমরা তো আর থেমে থাকতে পারবো না।
সামনের দিকে তো বাড়তেই হবে।
সব কিছুকে মানিয়ে চলার নামই তো জিবন।
আন্টির চোখ ছলছল করছে।
সোহাকে তো আর কখনো পাবোনা।
তুমি সোহার বোন।
সোহার ছায়া তোমার অস্তিত্ব বহন করে।
তাই আমি চাই তুমি নিভরাজের বউ হয়ে আসো।
আমি তোমাকে হারাতে চাইনা মা।
প্লিজ মা তুই মানা করিস না।
কিন্তু আন্টি।
এবার আম্মু আমার কাধে হাত রেখে।
তোর আন্টি ঠিকিই বলেছে মা।
তোর আব্বুও অমত করছে না।
তুইও অমত করিস না।
আম্মু তুমিও।
কিন্তু নিভরাজ জিজু কি মানবে?
আন্টি চোখের পানি মুছে হালকা মৃদূ হাসি দিয়ে।
নিভরাজকে মানানোর দায়িত্ব আমার।
তুই শুধু হ্যা বললেই চলবে।
আন্টি নিজের গলা থেকে চেইন আর হাত থেকে চুড়ি খুলে আমাকে পড়িয়ে দিলেন।
কপালে চুমু একে দিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলেন।
জানিনা কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে সব।
বিয়ে হবার কথা ছিলো আমার আপুনির।কিন্তু এখন হচ্ছেটা কি।
জিবনের মোড কোন দিকে ঘুরে যাচ্ছে আমি নিজেও জানিনা।
রাতে আব্বু আর আম্মু খাবার টেবিলে আমাকে বললো,
আব্বু: সানাত তুমিকি সব শুনেছো?
নিভরাজের বাবা মা চাই সোহার পরিবর্তে তোমার সাথেই বিয়েটা হোক।
ওরা ক্যান্সেল করতে চাইছে না।
আজিজ সাহেব তো আমার হাত ধরে কান্না করে দিয়েছেন।
আমি আর না করতে পারলাম না।
আম্মু: নিনা আপাও একই অবস্হা।
উনি নাচোড়বান্দা।
খুব কাকুতি মিনুতি করছিলো।
দেখো তোমার মেয়েকে চুড়ি আর চেইন নিজের হাত আর গলা থেকে খুলে পড়িয়ে দিয়ে গেছেন।
আব্বু দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললেন।
তোমার কি কিছু বলার আছে?
তুমি কি রাজি?
আম্মু আগ বাড়িয়ে বললো,
ও আর কি বলবে।
তুমি আমরা যা বলবো তাই ওর মতামত।
কথা তো দিয়ে ফেলেছি।
এখন আর না বলবো কেমনে।
এমনিতেই ওরা সব ঠিকটাক করে ফেলেছিলো।
কিন্তু আমার মেয়েটা।
বলেই আম্মু কেদে দিলো।
আব্বু খাবার টা রেখেই হাত ধুয়ে চলে গেলো।
চোখের পানিটা যে লুকোতে হবে।
আমিও আর খেতে পারলাম না।
গলা দিয়ে নামতে কষ্ট হয়।
আম্মু আব্বু না খেলেও আমাকে জোর করে খাইয়ে দিবেই।
তাদের তো এখন আমি ছাড়া কেউ নেই।
রাতে ঘুম আসছিলো না।
ছাদে চলে গেলাম।
আগে আপুনির সাথে আসতাম রাতে।
আপুনি জিজুর সাথে কথা বলতো আর আমি দুষ্টুমি করতাম।
যেখানেই যাচ্ছি বারবার আপুনির কথাই মনে পড়ছে।
ছাদের কর্ণারে বসলাম।
পুরোনো কিছু স্মৃতিতে হারিয়ে যাচ্ছি।
আপুনির আর জিজুর তিন বছর আট মাস রিলেশনের পরেই আমাদের পরিবারে জানিয়েছে।
এর আগে আমরা জানতাম না।
তবে জিজুকে প্রথম দেখে আমি সেই লেভেলের ক্রাশ খেয়েছিলাম।
ব্লাক কালারের শার্ট এন্ড কোড।ব্ল্যাক প্যান্ট।চোখে সানগ্লাসটা আর খোচা খোচা নিউ স্টাইলের কাটিংটাতে পুরো হিরো হিরো ভাব নিয়ে এসেছে।
এমনকি আব্বু আম্মুও জাস্ট জিজুকে দেখে রাজি হয়ে যান।
জিজু হবে এটা জানা সত্তেও উনাকে অনেকটা ভালো লেগে যায় আমার।
আপুর প্রতি কেয়ারিংটা দেখলে এমন ছেলের জন্যে যে কোনো মেয়েই পাগল হয়ে যাবে।
এমন ড্যাশিং লুক আর কেয়ারিং। স্টাব্লিশিড ছেলে অমতের কিছু নেই।
আর নিভরাজ জিজুর পরিবার আপুনিকে পছন্দ করতো আগে থেকে।
আজ থেকে দু’মাস আগে আপুনির সাথে জিজুর এনগেইজমেন্ট হয়।
জিজুর বিসনেজের কাজের জন্যে দেশের বাইরে যেতে হয়।
কাজ সেরে তারপর বিয়ের ডেট ফাইনাল হয়েছিলো।
জিজুর একেকটা সারপ্রাইজ দেখে আমিও মনে মনে ভাবতাম এমন একজন যেনো আমার লাইফেও আসে।
যে আমার এতো কেয়ার করবে আর সারপ্রাইজ দিবে।
আপুনির গোলাপ পছন্দ তাই জিজু সকালে ভ্যান ভর্তি গোলাপ এনে দরজার সামনে রাখে।
আপুনিকে ফোন দিলে ঘুম থেকে উঠে বেলকুনিতে বের হলে দেখে জিজুটা গোলাপ দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে সবকানে।
আমিও উঠে পড়ি।
এসব দেখে অবাক হয়ে যায়।
আর আপুনির বার্থডেতে জিজু কি একটা অবস্হা করেছিলো।
প্রায় বয়স অনুযায়ী প্রায় ২২টা কেক এনে সবাইকে চরম বিষ্মিত করেছিলো।
একেকটা কেক একেক ফ্লেবারের।
আর আপুনির জন্যে তো টেডি বিয়ার আছেই।
বড় বড় সাতটা আছে আমাদের বাসায়।
তারপর আবার আপুনির কাছে শুনেছিলাম জিজু নাকি তার রুমেও অনেক টেডি বিয়ার সাজিয়ে রেখেছে।
আপুনির যা যা পছন্দ জিজু সে সব কিনে রেখেছে আগে থেকে।
একবার আপুর এক্সিডেন্ট হলে রক্তের প্রয়োজন হয়।
আর জিজু তার নিজের থেকে এতো রক্ত দিতে প্রস্তুত।
কিন্তু ডাক্তার একটা মানুষ থেকে এত বেশি রক্ত নেয় না।
তখন জিজু পাগলের মতো করছিলো।
চিৎকার করছিলো।
সোহার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি আমার জান দিয়ে দিবো।
আর এর জন্যে দায়ী থাকবেন ডাক্তার সাহেব আপনি।
পরে রক্তের ব্যবস্হা হয়ে যায় আর আপুনি সুস্হ।
জিজুর থেকে বাইকও ছিলো।
কিন্তু জিজু কখনো আপুনিকে বাইকে বসতে দিতো না।
কিন্তু আপুনির বাইকে চড়ার খুব শখ।
তখন আপুনি খুব রাগ করতো।
জিজু বলতো।
বাইকে খুব রিস্কি।
যদি কিছু একটা হয়ে যায় তখন দুজনেই ফুড়ুৎ।
মরলে আমি একা মরবো তুমি কেন।
তোমাকে বাইকে নিতে আমার বড্ড ভয় করে।
জিজুর এসব কেয়ারিং।ভালোবাসা।
বাড়াবাড়ি সব কিছুই আমার ভালোলাগতো।
মনে মনে তাকে খুব পছন্দ করে ফেলি।
তার মতোই কেউ একজনকে খুব করে চাইতাম।
আপুনি অনেক লাকি। যে নিভরাজ জিজুর মতো একজন কমরেড পেয়েছেন।
একদিন তো কথায় কথায় আপুনিকে বলেই দিলাম।
আপুনি তোর কাছে একটা জিনিস চাইবো দিবি?
আপুনি ভ্রু কুচকে।
কি বল।
আমি আমতা আমতা করে।
না মানে বলবো।
দিবি তুই?
আপুনি এতো ঢং না করে কি বলবি জলদি বল।
আমি হুট করে বলে দিলাম।
আপুনি। নিভরাজ জিজুকে আমার খুব পছন্দ।
জিজুকে আমায় দিয়ে দে।
আপুনি প্রথমে আমার দিকে বাকা চোখে থাকালো।
তারপর হো হো করে হেসেঁ দিয়ে বললো,
আমার লক্ষী বোনটার যখন এত পছন্দ হয়ছে।
তাহলে তাই হবে।
হুম দিয়ে দিবো তোকে।
আমার আপুনিটা কথাটা কেনো বললো সেদিন আমি বুঝতে পারিনি।
তবে আমি মজা করে বলেছিলাম।
তাই বলে এত অভিমান করে সত্যি সত্যি নিভরাজ জিজুকে আমাকে দিয়ে দিলো।
নিজের অজান্তে চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।
কিন্তু আমি তো এটা চাইনি।
তোর জিনিস আমি নিতে চাইনি।
কেনো তুই অভিমান করে দূরে চলে গেলি।
জানিস আমার বড্ড কষ্ট হয়।
তোকে ছাড়া ভালো লাগেনা।
বলেছিলাম তোর সব জিনিস আমি নিয়ে নিবো।
তাই বলে কি সব আমায় দিয়ে দিলি।
আপুনি রে।
অনেক কথা ছিলো তোকে বলার।
কিন্তু বলা হলো না।
পরদিনই আংকেল আন্টি আর আব্বু আম্মু মিলে নিভরাজ জিজুর সাথে আমার এনগেইজমেন্টটা করিয়ে দিলো।
জিজুকে তো চেনাই যাচ্ছিলো না।
পুরো মুখটা খোচা খোচা দাড়িতে ভরে গেছে।
মনে হয় অনেকদিন শেইভ করে না।
চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।
মুখটা কেমন শুকনো শুকনো হয়ে গেছে।
জিজু আংটি পড়ানোর সময় ও আমার দিকে তাকায়নি।
এমনকি যতক্ষণ ছিলো বাসায় আমার দিকে চোখ তুলেও দেখেনি।
জিজুরাও ভাই বোন দুজন।
এক ভাই এক বোন।
জিজু আর জিজুর বোন নেভা।
আমার সমবয়সী।
নেভা আর আমি ফ্রেন্ড।
দুজনে একসাথে পড়ি।
তাই ওর সাথে আমার বন্ডিংটা বেশ ভালো।
জিজু আমার সাথে একটা কথাও বললো না।
এমনকি কিচ্ছু মুখে দিচ্ছে না।
কিন্তু আন্টি জোর করে জিজুকে পায়েস খাইয়ে দিলো।
জিজু দুচামচ মুখে দিয়েই আব্বু আম্মুকে সালাম করে সোজা বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
আমি জিজুর হাবভাব দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি। যে আমাকে বিয়ে করতে মেবি উনার মত নেই।
কিন্তু উনাকে এখানে এনগেইজমেন্টের জন্যে আনলো কিভাবে?
আমি ভাবনার সাগরে ভাসছিলাম এমন সময় নেভা এসে আমাকে ভয় পাইয়ে দেয় পিছন থেকে।
পর্ব ৩
আমি জিজুর হাবভাব দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি। যে আমাকে বিয়ে করতে মেবি উনার মত নেই।
কিন্তু উনাকে এখানে এনগেইজমেন্টের জন্যে আনলো কিভাবে?
আমি ভাবনার সাগরে ভাসছিলাম এমন সময় নেভা এসে আমাকে ভয় পাইয়ে দেয় পিছন থেকে।
আরে নেভা তুই।
আমাকে তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিস।
নেভা মুচকি হেসেঁ আমার পাশে বসলো।
সত্যিই কি ভয় পেয়েছিস নাকি ভান করছিস?
আর তোর মন কোথায় হুমমমম?
আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে।
মন আবার কোথায় থাকবে। মন মনের জায়গায় আছে।
তারপর তোর কি খবর।
একথা সেকথা অনেক কথা বলার পর নেভা থেকে জানতে পারলাম নিভরাজের রাজি হবার কথাটা।
আন্টি নাকি অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছেন নিভরাজকে।
এমনকি খাওয়া দাওয়া সহ ছেড়ে দিয়েছিলেন শুধু উনাকে রাজি করাতে।
ওয়াদা করিয়েছেন যেনো আমাকে উনি বিয়ে করেন তারপর আর কি।
মায়ের বাধ্য ছেলে তাই বাধ্য হয়েই রাজি হয়েছেন।
তবে এতে আমারও যে কিছু করার নেই।
আমার আব্বু আম্মু যেখানে বলবে আমি সেখানে রাজি।
কিন্তু কি হবার ছিলো আর হচ্ছেটা কি?
আপুনির সব আমাকে করতে হবে?
আপুনির কথা মনে পড়লে সব উলোট পালোট হয়ে যায়।
হয়তো আপুনি এসব দেখে বলবে।
সানাত রে। তুই সত্যি সত্যিই আমার নিভরাজকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলি।
আপুনিরে আমি কখনো চাইনি তোর নিভরাজকে নিজের করে পেতে।
কখনো না।
নিভরাজ জিজু আমার সাথে একটুও কথা বলেনি।
এমনকি যাবার সময়ও বলে গেলোনা।
আমি শুধু জিজুর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
কি যে মায়া হচ্ছিলো তার প্রতি।
তেমন কিছুই মুখে দেয়নি সে।
আম্মু জোর করাতে অল্প ভাত খেয়ে উঠে গেলো।
ওরা যাবার সময় আন্টি আমাকে একপাশে ডেকে নিয়ে বললেন।
একটু দৈর্য ধর সব ঠিক হয়ে যাবে সময়ের সাথে সাথে।
একটু সময় তো দিতেই হবে নাকি।
মুচকি হাঁসি দিয়ে বললো,
সবসময় যেনো আল্লাহ তোদের একসাথে আর সুখে রাখেন এই প্রার্থনা করি।
তুই মনে কষ্ট নিস না মা।
আমি মৃদু হাঁসি ফুটিয়ে। ইটস ওকে আন্টি।
জড়িয়ে ধরে বললাম।
আবার আসবেন কিন্তু।
যতক্ষণ পর্যন্ত ওদের দেখা যায় আমি দেখে ছিলাম।
নিভরাজ জিজু যখন আমায় রিং পড়িয়ে দিচ্ছিলো জিজুর হাতে সেই ওয়াচটা দেখেছি।
যেটা আপুনি জিজুর বার্থডেতে গিফট করেছিলো।
ওয়াচটা কিনতে আমি আর আপুনি একসাথে শপিংয়ে গিয়েছিলাম।
আপুনি পছন্দ করতে পারছিলোনা তাই আমি পছন্দ করে দিয়েছিলাম।
পরে আপুনির কাছে শুনেছি।
জিজু নাকি ওয়াচটা খুব পছন্দ করেছে আর অলওয়েজ ওয়াচটা পড়ে থাকে।
ওয়াচটা জিজুর হাতে বেশ মানিয়েছে।
এভাবে কয়েকটা দিন কেটে গেলো।
আমার সাথে নিভরাজ জিজুর কোনো দেখা হয়নি।
হঠাৎ নেভা ফোন দিয়ে বললো ভার্সিটি যাবে ওদের বাসায় যেতে।
আমি জানতাম এমন সময় জিজু অফিসে থাকে তাই বাসায় আন্টি আর নেভা ছাড়া কেউ নেই।তারপরও নেভার কাছে জিঙ্গেস করলে বলে তার ভাইয়া নাকি বাসায় নেই।
আমি রেডি হয়ে নেভাদের বাসায় চলে গেলাম।
আন্টিকে সালাম করে নেভার রুমের দিকে যেতে জিজুর রুমটা সামনে পড়লো।
উনিতো এখন বাসায় নেই।
কেনো জানি খুব ঢুকতে মন চাইছিলো।
যদি এখন এটা না করি পরে মনটা খুশখুশ করবে।
আমি আগে কখনো জিজুর রুমে ঢুকিনি।
আজ প্রথম।
একপা দুপা করে ঢুকে গেলাম।
জিজুর স্মাইল করা অনেক বড় একটা ছবি ওয়ালের একপাশে টাঙ্গানো।
পুরো ওয়াল জুড়ে উনার ছবিটা।
আর অন্য অন্য পাশে সব ছোট ছোট ছবি তাও উনার।
আর চারোদিকে সব বড় বড় টেডি বিয়ার।
ঠিক আপুনি যেমনটা পছন্দ করতো ঠিক তেমন ভাবেই রুমটা সাজানো।
যেতে যেতো জিজুর ছবিটার কাছে চলে এলাম।
ছবিটাতে জিজুকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।
এটা বছর খানেক আগের ছবি।
তারপরও কিচ্ছু বদলাইনি।
শুধু বদলে গেছে জিজুর সেই চাহনীটা।
উনার ছবিটা ছুঁইতে যাবো ঠিক তখনি খুট করে শব্দ হলো দরজা খোলার।
আমি সেদিকে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আমার।
পুরো শরীরটা কাপুনি দিয়ে উঠলো।
একি জিজু বাসায়।
মানে অফিসে যাইনি।
টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছিলো।
আমাকে দেখে নেও চমকে যায়।
উনার পড়নে কিছু ছিলোনা জাস্ট একটা টাউজার ছাড়া।
উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে থাকালো।
আমি ঢোক গিলে ইয়ে মানে।
মানে।
এমন বলতে বলতে দৌড় দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
সোজা নেভার রুমে এসে হাপাতে লাগলাম।
নেভা শুয়ে শুয়ে কার সাথে কথা বলছিলো।
আমাকে দেখে ছুটে এসে বললো,
সানাত কি হয়েছে তোর?
এভাবে হাপাচ্ছিস কেনো?
আমি নেভাকে ইশারা দিয়ে বললাম পানি খাবো।
নেভা পানির গ্লাস আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে আবারো প্রশ্ন ছুড়ে।
হয়েছেটা কি তোর সেটা বলবি প্লিজ।
আমি ঢকঢক করে এক নিঃশ্বাসে পুরো পানিটা শেষ করলাম।
একটু দম নেবার টাইমও কি দিবিনা?
আগে একটু বসি।
নেভার খাটে বসলে সেও আমার পাশে বসলো।
হুম এবার বল।
হয়েছেটা কি জানিস।
এদিকে আসতে জিজুর রুমে ঢুকলাম।
নেভা বিষ্মিত চোখে।
হুম তারপর কি হলো।
তারপর জিজু।
নেভা আমার বাহুতে থাপ্পর দিয়ে বললো,
এই গাধী এখনো জিজু ডাকবি ভাইয়ারে।
এখন না সে তোর।
জিজু ডাকবি না গাধী।
আচ্ছা আগে শোন।
তারপর হলো কি।
নেভা আরো উৎফুল্ল হয়ে।
তারপর কি হলো বলনারে।
ইয়ে মানে।
তোরা তো এখন ইনগেইজড।
সো।
আমি মুখে হাঁসি আনার ভান করে।
হুম ইনগেইজড তো।
নেভা চোখ টিপ মেরে।
মানে রোমান্স টোমান্স হয়ে যায়না।
সেটা আরকি।
এবার আমি নেভার কান ধরে।
শয়তানি।
শাকচুন্নি।
মিথ্যেবাদী।
মিথ্যে বলেছিস কেন হ্রামী।
তোর ভাইয়া অফিসে গেছে তাইনা।
আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন।
নেভা আমাকে কাতুকুতু দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে অন্যপাশে গিয়ে বললো,
সত্যি কথা বললে তো তুই আসতি না।
আর শোন সানাত।
তুই সম্পর্কে যদিওবা আমার ভাবি হবি।
তারপরও কিন্তু মনে রাখিস আমি তোর একটাই ননদ।
সো আমার সাথে এসব চলবে না।
আন্টি আমাকে আর নেভাকে নিচে আসতে বললো,
সিড়ি দিয়ে নামতে দেখলাম জিজু ব্রেকফাস্ট করছে।
উনি চুপচাপ খেয়েই যাচ্ছে আমাকে দেখে কোনো রিয়েক্ট করলো না।
আন্টি: তুই বস মা।
নেভা তুই ও খেয়ে নে।
তোরা নাকি আজ ভার্সিটি যাবি।
নেভা চেয়ার টেনে আমাকে বসতে ইশারা করে নিজেও বসতে বসতে বললো,
হ্যা মা।
আজ যেতে হবে।
আরে সানাত কি হলো বসছিস না কেনো?
আন্টি: এখনো দাড়িয়ে আছে মেয়েটা।
কি হয়েছে?
বসতে বলেছি না।
আমি জানি আন্টি ইচ্ছে করেই আমাকে বসতে বলছে জিজুর সাথে।
আমি বসতে না চাইলেও ওদের জোরা জুরিতে বসলাম।
এমা আমি বসার সাথে সাথে জিজু উঠে গেলো।
আন্টি আবার তুই উঠলি কেন।
আমার খাওয়া শেষ মা।
আমি যাচ্ছি।
আন্টি ও দাড়িয়ে গেলো।
এখনি না খেতে বসলি।
অন্তত খাওয়াটা পুরো শেষ করে যা।
জিজু টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো,
যেটুকু খেয়েছি এনাফ।
ওকে বাই মা।
নেভা চিল্লিয়ে বললো,
ভাইয়া।
জিজু পেছনে ফিরলে হঠাৎ উনার সাথে আমার চোখাচোখি হয়ে যায়।
আমার খুব লজ্জা লাগে।
সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলি।
নিভরাজ হাম বল।
নেভা:: ভাইয়া আমরা ভার্সিটি যাবো তো।
তুই আমাদের নামিয়ে দিয়ে তারপর যাইস।
নিভরাজ আমার টাইম নেই।
লেইট হয়ে যাবে। নয়তো গাড়ি রেখে যাচ্ছি ড্রাইভার দিয়ে আসবে।
নেভা না না ভাইয়া।
তুই নামিয়ে দিস প্লিজজজজজ।
প্লিজজজজ ভাইয়া।
এদিকে আমার বুকের ভিতর ধুকপুক করছে।
নেভা এসব কি বলছে।
যার সামনা সামনি আমি স্হির থাকতে পারিনা তার সাথে নাকি ভার্সিটি যাবো।
আন্টি:: এত করে যখন বলছে নামিয়ে দিয়ে আয় না।
নিভরাজ কিন্তু মা।
আন্টি:: কোন কিন্তু টিন্তু না।
তোরা জলদি কর।
জিজু বাইরে ওয়েট করতে লাগলো।
তবে যাবার আগে বলে গেছে।
নেভা যদি তোদের আসতে লেইট হয় তাহলে তোদের রেখেই চলে যাবো কিন্তু।
আপুনি ঠিকিই বলেছিলো।
জিজু অনেক রাগী পারসন।
কথায় কথায় নাকি রেগে যায়।
আমার আপুনিটা তার রাগটা হজম করতো।
পাঁচ মিনিটের মধ্যেই নেভা রেডি হয়ে এলো।
আন্টি কি যেনো বললো নেভাকে ফিসফিসিয়ে।
নেভা হেসেঁ মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।
চল চল সানাত দেরী হয়ে যাচ্ছে।
নেভার পিছন পিছন আমিও গেলাম।
বাহ জিজুতো ড্রাইভিং সিটে বসে আছে।
নেভা সামনের ডোর খুলে আমাকে বললো,
সানাত তুই সামনে বয়।
আমি চোখ বড় বড় করে।
সা।সামনে কেন?
নেভা: কারণ সামনে থেকে রাহিনাকে পিক করতে হবে।
একটু আগে ফোন দিয়েছিলো।
ওয়েট করছে।
আমি: ফিসফিসিয়ে।
তুই সামনে বয় আমি পিছনে বসি।
নেভা আমাকে কোমড় দিয়ে ধাক্কা দিলে আমি ধপ করে সিটে পড়ে যায়।
তারপর নেভা না জানার ভান ধরে।
আরে ঠিক করে বয় না।
এভাবে কেউ তাড়াহুড়ো করে বসে।
আমি ঠিক করে বসলে নেভা ডোর অফ করে পিছনের সিটে গিয়ে বসলো।
নিভরাজ ::::::: এত লেইট কেনো?
জানিসনা আমি ওয়েট করছিলাম।
পাঁচ মিনিট বলে পাঁচ ঘন্টা কাটিয়েছিস।
রাগী মুডে বলছে।
নেভা ডোর অফ করলে গাড়ী স্টার্ট দেয়।
ভাইয়া লেইট কি আমি করেছি।
সানাত ভাবীই তো লেইট করলো।
আমার তো সেই কখন শেষ হয়েছিলো।
আমি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে নেভার দিকে তাকালাম।
এতবড় মিথ্যেকথা কিভাবে বললো মেয়েটা।
নিজে লেইট করে নাম দিচ্ছে আমার।
মিথ্যে কথা বলছে বলছে আবার চোখ টিপও মারছে।
জিজু জাস্ট একটা কথাই বললো,
সময় অপচয় করা ঠিক না।
অনেক প্রিয় জিনিস হারাতে হয়।
জিজু আমাদের ভার্সিটি নামিয়ে দিলে নেভা ফুচকা খেতে বাহানা ধরে।
জিজু টাকা দিলে নেয়না।
বলে ভাইয়া তুই ও আয়।
একা একা খেতে ভাল্লাগে না।
নেভার জোরাজুরির এক পর্যায়ে জিজু বাধ্য হয়।
রাস্তার ওপাশে গিয়ে ফুচকা খেলাম তিন জন দুই প্লেট।
নেভা আমার প্লেট থেকে নিয়ে জিজুকে খাইয়ে দিলো।
ভাই বোনের কত ভালোবাসা চোখ ভরে দেখছি।
আমার তো কোনো ভাই নেই।
আর যাও একটা বোন ছিল তাকেও আল্লাহ নিয়ে গেছে।
তাদের ভালোবাসা দেখে খুশিতে চোখে পানি চলে আসছে।
পর্ব ৪
আমার তো কোনো ভাই নেই।
আর যাও একটা বোন ছিল তাকেও আল্লাহ নিয়ে গেছে।
তাদের ভালোবাসা দেখে খুশিতে চোখে পানি চলে আসছে।
ফুচকা খাওয়া শেষ হলে আমরা আমরা আবারো রাস্তা পার হই।
হঠাৎ মোবাইলে রিং বেজে উঠলে আমি ব্যাগ থেকে ফোন নিতেই আমার ডান পাশ থেকে বড় একটা গাড়ি খুব স্পিডে আসছিলো।
আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকি।
গাড়ি আসছে আমি যে সরে যাবো তার সামান্য পরিমাণ খেয়াল টুকুও আমার নেই।
গাড়িটা এভাবে ছুটে আসতে দেখেই আমি হতভম্ব হয়ে গেছি।
হঠাৎ হাতে জোরে টান পড়লো।
আর আমি সাইডে চলে আসি।
জোরে টান পড়াতে হাত থেকে মোবাইলটাও পড়ে গেছে।
নিজেকে সামলাতে পারিনি আর অমনি জিজু টাশ করে আমাকে থাপ্পড় দিলো।
আমি নেভার গায়ের সাথে লেগে সোজা নিচে পড়ে যায়।
খুব জোরে মেরেছে থাপ্পড়টা।
জিজুর দিকে তাকাতেই দেখি চোখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
খুব রাগি কন্ঠে বললো,
রাস্তা পার হবার সময় দেখে শুনে পার হতে পারোনা।
আল্লাহ তো চোখ দিয়েছেন দেখে চলার জন্যে।
চোখ তো ঠিকিই আছে।
তাহলে।
যত্তসব ইডিয়েট।
আরো অনেক গুলো বকা দিয়ে উনি হনহন করে গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন।
আশে পাশের সব মানুষ আমাদের তামাশা দেখছিলো।
একটু আসলো না।
একটা মেয়েকে যে এভাবে থাপ্পড় দিলো সবাই শুধু দেখেই ছিলো।
নেভা আমাকে উঠিয়ে কাপড় ঝেরে দিচ্ছে আর আমি গালে হাত দিয়ে মোবাইলটা কোথায় পড়লো তা দেখছি।
আল্লাহহহ গো
আমার মোবাইলের কোনো অস্তিত্ব নেই।
এদিকে নেভা কি বলছে কিছুই আমার কানে ঢুকছে না।
দৌড়ে গিয়ে মোবাইলের লাশটা হাতে নিলাম।
পুরো পিষে দিয়েছে গাড়িটা।
ইশরে আমার সাধের মোবাইল।
মেমোরি তে যে কত সেলফি ছিলো তার ইয়াক্তা নেই।
তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে আপুনির সাথে আমার অনেক সেলফি ছিলো যা আমরা দুষ্টুমি করে দুইবোন মিলে উঠিয়ে ছিলাম।
সব নষ্ট হয়ে গেলো ফোনটার সাথে।
আর ফোনটাও দিয়েছিলো আমার আপুনিটা।
নেভা আমাকে টেনে টেনে ভার্সিটির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো।
সানাত।
এই সানাত।
কি হলো।
এসব কেন নিয়েছিস।
মানুষে দেখলে কি বলবে।
এই সানাত।
তুই কাদঁছিস কেনো?
আমার চোখ দিয়ে আপনা আপনিই পানি চলে এলো।
তুই জানিস না বুঝি।
ফোনটা আমার কত প্রিয় ছিলো।
আপুনি দিয়েছিলো ফোনটা।
কত স্মৃতি ছিলো দুজনের।
কত সেলফি।
সব শেষ হয়ে গেলো।
নেভা টিস্যু দিয়ে আমার চোখ মুছে দিলো।
তোর চেয়েও কি ফোনটা বড়?
ফোনটার জায়গায় কিন্তু তুই হইতি।
রাস্তা পারাপার হবার সময় কি কেউ ফোন নিয়ে বিজি হয়ে যায়।
আমি নেভার হাত সরিয়ে দিয়ে।
ভাই মেরেছে আর বোন চোখের পানি মুছে দিচ্ছে।
কি পেয়েছিস তোরা আমায়।
এতগুলা মানুষের সামনে কেনো আমায় থাপ্পর মারলো।
মেরেছে তো মেরেছে তাও এতো জোরে।
নিচে পড়ে গেছি আমি।
এই দেখ হাতের পাঁচ আঙ্গুল বসিয়ে দিয়েছে তোর ভাইটা।
নেভা আমার মুখ দেখে।
আহারে।
কি জোরে মারলো।
তা নাহলে কি চুমু দিবে তোকে।
আজ যা করেছিস না তুই।
যদি আন্টিকে বলি তাহলে তো তোর রক্ষে নেই।
আমি চোখ বড় বড় করে।
প্লিজ নেভা। আম্মুকে কিছু বলিস না।
নয়তো আমায় আর ভার্সিটি আসতে দিবে না।
নেভা:: আচ্ছা বলবো না।
তবে একটা কথা।
আমি ব্যাগ থেকে মেকাপ বের করে আয়না দেখছি।
গালটা লাল হয়ে গেছে।
হালকা মেকাপ করতে করতে।
হ্যা বল।
নেভা দুষ্টুমির হাঁসি হেসেঁ।
বাই দা রাস্তা।
থাপ্পরটাতে কিন্তু অনেক গুলা ভালোবাসা ছিলো।
আমি রেগে নেভার দিকে তাকালে।
আমায় চোখ টিপ দিলো।
হা হা করে হাসতে লাগলো।
ভালো বাসা রা ছাই।
এদিকে আয় তোকে একটা দিই তারপর বুঝবি আমার ভালোবাসাটা কেমন।
সব ফ্রেন্ডরা কিভাবে কিভাবে যেনো জেনে গেলো যে আপুনি যাবার পর নেভার ভাইয়ের সাথে আমার এনগেইজমেন্ট হয়েছে।
সবাই আমাকে ভাবী ভাবী বলে ক্ষেপাচ্ছে।
আর নেভাকে জব্দ করেছে ট্রিট দিতে হবে।
নেভা আমাকে ড্রপ করে ও নিজে বাসায় চলে গেলো।
বাসায় এসে যে রুমে ঢুকলাম আর বেরও হলাম না।
আম্মু এতো করে খেতে ডাকছে আমি গেলাম না।
ক্ষিধে থাকা সত্তেও খেতে যায়নি।
মনটা খুব খারাপ আমার।
একে তো ফেবারিট ফোন হারিয়েছি তার উপর প্রিয় মানুষটা থাপ্পড়।
সে এমনিতে আমার দিকে তাকায় না আমার সাথে কথা বলেনা।
তাহলে থাপ্পর কেন মারলো এতো জোরে।
আমার খুব কষ্ট লেগেছে।
চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি চলে এসেছিলো।
সাথে সাথে মুছেও ফেলেছিলাম।
আবার ঝাড়িও দিলো কতগুলা।
আপুনির সাথে কত সুন্দর করে কথা বলতো।
কত কেয়ার করতো আর আমার সাথে।
আমিকি এতটাই ঘৃর্ণার পাত্রী যে কথা বলাও যায়না।
আম্মু খাবার রুমে নিয়ে এলো।
আমার মুখ দেখে জিঙ্গেস করলো।
কিরে মা কি হয়েছে তোর?
মন খারাপ?
আমি ওপাশ ফিরে।
কেনো এসেছো আম্মু।
বললাম না আমি খাবোনা।
আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
আম্মু :::::::: খাবোনা বললে কি হবে।
সেই সকালে একটা রুটি খেয়ে বের হয়েছিলি।
সারাটা দিন উপোস।
দেখি উঠ
খেয়ে নে।
আমি: বললাম তো আম্মু খাবোনা।
আমার ক্ষিধে নেই।
আম্মু এবার ঝাড়ি দিয়ে বললো,
জলদি উঠ।
আমি খাবার নিয়ে এসেছি।
উঠ তুই আমি খাইয়ে দিই।
মুখের উপর কথা বলবি না একদম।
কি হলো এখনো উঠছিস না কেনো।
আমি বাধ্য হয়ে উঠে বসলাম।
আম্মু এক লোকমা খাইয়ে দিলো।
চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে।
তোমরা কেউ আমায় ভালোবাসোনা।
সবাই শুধু আমাকে ঝাড়ি দেয়।
কেউ আমার সাথে আপুনির মতো মিষ্টি করে কথা বলেনা।
আম্মু খাবারের প্লেট পাশে রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তোর মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি কিছু একটাতো হয়েছে।
তোকে সবাই ভালোবাসে রে মা।
এমন ভেবে মন ছোট করিস না।
সোহা তোকে যতোটা ভালোবাসে আমরা ও তোকে ততোটা ভালোবাসি।
আমি ফুপাতে ফুপাতে।
কিন্তু এমন কেন হলো আম্মু।
আমাদের প্রিয়জন গুলা আমাদের ছেড়ে চলে যায় কেনো?
কেনো তারা আমাদের বুঝেনা।
আম্মু ও নিরবে চোখের জল ফেলছে। কারণ আমার কপালে পানির ফোটা পড়ছে টপ টপ করে।
তারপরও আম্মু আমাকে জোর করে খাওয়ালো।
রাতে আব্বু এলে তারা দুজনে আমার সাথে খুব গল্প করলো।
আব্বু আম্মুর বিয়ের গল্প আপুনি আসার গল্প এমনকি আমার আর আপুনির দুষ্টুমির সব গল্প।
অনেকদিন পর আমরা আজ মন খুলে হাসলাম।
আপুনি থাকলে আমরা এমন গল্প করতাম সপ্তাহে দুই দিন।
পরের দিন খুব লেইট পর্যন্ত আমি ঘুমে ছিলাম।
রাতে যে গল্প চলেছিলো তাই আর কি।
তাও উঠতামনা আরো কিছুক্ষণ ঘুমাতাম।
নেভার ডাকে ঘুমটা ভেঙ্গেছে।
নেভাকে আমাদের বাসায় দেখে কিছুটা অবাক হলাম।
নেভা আমার পাশে বসে ফোন টিপছিলো।
আমি চোখ খুললে মুচকি হাঁসি দিয়ে বললো,
গুড মর্নিং ওড বি ভাবী।
আমি চোখ কচলাতে কচলাতে।
মর্নিং টু।
তুই হঠাৎ এখানে?
নেভা আমি এখানে মানে?
আমার এখানে আসা নিষেধ নাকি?
আমি: কম্বলটা আরো জড়িয়ে নিয়ে।
না তা বলিনি আমি।
তবে এই সময়ে।
বলেছিলাম না আজ যাবো না।
নেভা::: যাবো না মানে।
আজ তো অফকোর্স যাবো।
এই দেখ।
বলে নেভা ওর ব্যাগ থেকে হাজারের অনেক গুলা নোট দেখালো আমায়।
আমি এতো টাকা।
কি শপিং টপিং করবি নাকি।
নেভা:: ভাইয়ার থেকে নিলাম।
শপিং নাতো।
ঐ যে বলেছিলাম না।
রিদিদের সবাইকে ট্রিট দিবো তার জন্যে।
আমি: ওহহ হ্যা।
তাহলে তো আজ খুব মজা হবে।
নেভা আমার হাতে কিছু টাকা গুজে দিয়ে বললো,
এগুলা তোর।
আমি টাকাটা ওকে দিতে চাইলে ও নেয়না।
বলে আন্টি নাকি নিভরাজকে বলেছে আমাকে শপিং করার জন্যে কিছু দিতে তাই পাঁচ হাজার টাকা এক্সট্রা দিয়েছে।
সেদিন আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে খুব খুব মজা করলাম।
নেভার সব টাকা শেষ করে দিলো সবাই মিলে।
পার্কে গোল করে সবাই ঘাসের উপর বসে বাদাম খাচ্ছিলাম।
হঠাৎ একটা পঁচা বাদাম আমার মুখে পড়লে আমার কেমন জানি বমি পায়।
দৌড়ে একপাশে আসতে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নিয়ে চলে আসি।
বমি করে আমি প্রায় ক্লান্ত হয়ে গেছি।
পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে নিলাম একটু খেলামও।
কিন্তু টিস্যু তো আনিনি ব্যাগটা ওদের কাছে।
ওরনা নিয়ে মুছতে যাবো ঠিক তখন পাশ থেকে কেউ একজন টিস্যু এগিয়ে দিলে আমি সেদিকে তাকায়।
আরে উনিতো সেই লোক যার সাথে ধাক্কা লেগেছিলো।
আমি ইটস ওকে বলে ওটা না নিয়ে চলে আসছিলামম।
কিন্তু লোকটা এক্সকিউজমি বলে আমার সামনে চলে এলো।
আমি:: বললামতো ভাই লাগবে না আমার।
লোকটা টিস্যুটা আবারো এগিয়ে দিয়ে বললো,
আরে নেন।
আপনার কাছে নেই তা দেখতেই পাচ্ছি।
তো নামটা কি আপনার?
আমি বিরক্তি ভাব নিয়ে।
নাম দিয়ে কি করবেন?
দেখি সামনে থেকে সরেন।
আমি যেতে চাইলে লোকটা আরো চেপে আসে আমার দিকে।
এত তাড়া কিসের আপনার।
আজব তো।
আপনি গায়ে পড়ে কথা বলতে চাইছেন কেনো?
লোকটা হেসেঁ চোখ বাকা করে বললো,
কথা বলতে চাইলে বুঝি গায়ে পড়া হয়ে যায়।
আচ্ছা নাম না বলেন ভালো কথা বাসাটা কোথায় অন্তত বলে যান।
আমি লোকটার পাশ কাটিয়ে লম্বা লম্বা কদম দিয়ে নেভাদের কাছে চলে এলাম।
ওরা আমাকে খুজছিলো।
চলে আসতে নেভার মুখোমুখি হলে নেভা অগ্নি দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে আমাকে বললো,
ছেলেটা তোর সাথে কিসের কথা বলছিলো রে।
আমি একবার নেভার দিকে আবার লোকটার দিকে তাকালাম।
ওরা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে।
কিন্তু নেভার চোখে মুখে রাগ আর লোকটার ঠোটেঁ বাকা হাঁসি।
নেভা উচ্ছস্বরে।
সানাত চুপ করে আছিস কেনো।
বল ছেলেটা তোর সাথে কি মিসবিহেভ করেছে।
দাড়া ছেলেটাকে আজ দেখাচ্ছি মজা বলেই ছেলেটার দিকে তেড়ে যাচ্ছিলো।
আমি নেভাকে টেনে ধরলাম।
আরে শান্ত হো।
কি করছিস তুই।
নেভা চিৎকার করে ছেলেটাকে বললো,
তোকে তো আমি দেখে নিবো।
বদমাইশ কোথাকার।
ঔদিকে ছেলেটা ফোনে কথা বলতে বলতে কোথায় যেনো তাড়া হুড়ো করে চলে যাচ্ছিলো।
কিন্তু যেতে যেতেও সে আমাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।
নেভা সেদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেনো বলছিলো।
আমি নেভাকে হালকা ঝাকুনি দিয়ে।
তুই ভদ্রলোকটাকে চিনিস নাকি?
নেভা মুখ বাকিয়ে।
এই ছেলেকে তুই ভদ্র বলছিস?
তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?
মাথা ঠিকাছে তোর?
আমি ভ্রু কুচকে।
কই অভদ্রের মতো তো কিছু করেনি।
কাহিনিটা কি একটু বলবি?
নেভা আর বলিস না।
সেদিন ভাইয়া খালামনির বাসায় দিয়ে এসেছিলো কিন্তু আনতে যেতে পারেনি বিজি ছিলো তার কারণে।
সো আমাকে একা আসতে হয় কোনো গাড়িও পাচ্ছিলাম না।
যাও একটা পেলাম কোথা থেকে এই ছেলেটা এসে গাড়িটাতে চড়ে বসলো।
তারপর।
এবার নেভা নিঃশ্বাস ছেড়ে।
আর আমি উৎফুল্ল হয়ে।
তারপর কি বল।
প্লিজ নেভা।নেভা বলনা।
নেভা আবার বলতে শুরু করলো।
তারপর আমি বাধিয়ে দিলাম ঝগড়া।
ছেলেটার মুখ দেখে তো প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম।
কারণ এর ঘন্টা খানেক আগেই তো খালা মণির বাসা থেকে নামার সময় ছেলেটার সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম সিড়িতে।
এতো অভদ্র যে কি বলবো।
সোজা আমার কোমড়ে হাত দিলো।
পর্ব ৫
নেভা আবার বলতে শুরু করলো।
তারপর আমি বাধিয়ে দিলাম ঝগড়া।
ছেলেটার মুখ দেখে তো প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম।
কারণ এর ঘন্টা খানেক আগেই তো খালা মণির বাসা থেকে নামার সময় ছেলেটার সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম সিড়িতে।
এতো অভদ্র যে কি বলবো।
সোজা আমার কোমড়ে হাত দিলো।
আমি চোখ বড় বড় করে প্রচন্ড রকমের বিষম খেয়ে বললাম।
সোজা কোমড়ে হাত দিলো।
আর তুই কিছু বললি না।
আর কোথায় কোথায় হাত দিয়েছে?
কেন হাত দিয়েছে?
তোর কেমন লেগেছে?
নেভা ভ্রু কুচকে।
তুই চুপ করলে তো বলবো নাকি।
আমি ঠোটেঁ আঙ্গুল চেপে।
হুম আমি চুপ এবার বল।
নেভা:: ছেলেটা কোমড়ে হাত দিয়েছে এজন্য যে।
যদি সে আমায় না ধরতো তাহলে আমি সিড়ি বেয়ে নিচে পড়ে যেতাম।
আমি হাফ ছেড়ে।
ওহ আচ্ছা তাই বল।
নেভা কিন্তু তারপরও কেনো কোমড়ে হাত দিবে?
তাই তাকে ধাক্কা দিয়ে অনেক গুলো বকে দিলাম।
এতো বকছিলাম ছেলেটাকে তারপরও গাধাটা আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
শেষে কি বললো জানিস?
আমি নেভার অনেকটা কাছে গিয়ে।
কি বললো রে।
বললো,
তোমার বাসা কোথায়?
তোমার নাম কি?
আমি অবাক হয়ে শুধু সব শুনছি।
হুম তারপর।
নেভা: তারপর।
পরে সেই ছেলেটাই আবার আমার ডাকা গাড়িতে চড়ে বসলো।
বলতো কেমনটা লাগে।
আমি: হুম তাইতো।
নেভা: তারপর কি করলাম জানিস।
ছেলেটাকে আরো কত গুলা বকা দিয়ে আবারো ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে বের করে দিলাম।
আর সে নিচে পড়ে গেলো।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তারপরও সে আমার থেকে চোখ সরালো না।
আবার বললো,
তোমার বাসা কোথায়?
নামটাতো বলো প্লিজ?
এবার আমি হাসিতে ফেটে পড়লাম।
আস্ত গাধা একটা।
সত্যিই তো বলেছিস তুই।
নেভা: হুম।শুধু গাধা না।
আস্ত একটা বলদ ও বটে।
তারপর দুজনেই হাসছি।
আমি মেবি ছেলেটা তোকে পছন্দ করে ফেলছে।
নেভা: ধ্যাৎ।
কি যা তা বলছিস।
আমি: তবে ছেলেটা দেখতে সেই হ্যান্ডসাম।
তোর সাথে খুব মানাবে।
নেভা চোখ বড় বড় করে।
সানাত তুই কিন্তু বেশি বেশি বলছিস।
তারপর আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আমি আর নেভা বাসার দিকে আসছিলাম।
তবে
নেভা অনেক জোর করলো আমায় শপিংয়ে যেতে কিন্তু আমি গেলাম না।
বাসায় চলে এলাম।
আরো সপ্তাহ খানেক পর হঠাৎ করে নেভারা সবাই আমাদের বাসায় এলো কোনো খবরা খবর না দিয়ে।
আন্টি আংকেল সহ।
নেভা আমার হাতে অনেক গুলো প্যাকেট দিয়ে বললো রেডি হতে।
কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
নেভার কাছে জিঙ্গেস করলেও ও কিছু বলছে না।
আমাকে রেডি করানো হলো।
ইয়া ভারী একটা শাড়ি পড়ানো হয়েছে।
নেভা নিজের হাতে আমায় সাজিয়ে দিয়েছে।
ঐদিকে আম্মু।আন্টি আর রাজিয়া খালা মিলে রান্না বান্না করছে।
আমি নেভাকে ধরলাম।
জোর করে সব জেনে নিলাম।
আজকেই নাকি কাবিন করিয়ে ফেলবে।
আর আমি কিছুই জানিনা।
কেমন জানি লাগছে আমার।
কাবিন মানেই তো আমি তার হয়ে যাবো পুরোপুরি।
ভাবতেই পুরো শরীরটা কেপে উঠলো।
রাত দশটা।
অতঃপর নিভরাজ জিজুর কয়েকজন কাজিন সহ উনি আমাদের বাসায় আসলো।
আমাকে নেভা হল রুমে নিয়ে গেলো।
নিভরাজ জিজুকে দেখার সাথে সাথে বুকের ধুকপুকানিটা শুরু হয়ে গেলো।
নিচের দিকেই তাকিয়ে আছি।
নিভরাজ জিজু আমার দিকে সেই আগের মতোই একবারও তাকায়নি।
তবে ওনার কাজিনরা শুধু আমাকেই দেখছে।
নিভরাজ জিজু গোল্ডেন কালার এন্ড ব্লু কালারের পান্জাবী পড়েছে আর আমার শাড়িটাও ব্লু কালারের উপর গোল্ডেন পাড়।
পুরোপুরি ম্যাচ করা।
নিভরাজ জিজুকে বরাবরের মতোই সুন্দর লাগছে।
আপুনির পছন্দ করা জিনিস কখনো অসুন্দর হয়না।
আমাকে জিজুর পাশে বসিয়ে দিলো নেভা।
পরে কাজী এসে আমাদের কাবিনটা করিয়ে দিলো।
উনার কাজিনরা অনেক পিক নিলো।
উনাকে আমার হাতে হাত রাখতে বললে উনি কেমন জানি ইস্তত বোধ করছিলো।
উনার কাজিনরা এতো করে বলছিলো তারপরও উনি হাত ধরতে চাইছে না।
ওদের সামনে আমার খুব শেইম ফিল হচ্ছিলো।
আব্বু আম্মু।আংকেল আন্টিরা সবাই অন্যপাশে কথা বলছে।
আর আমরা অন্যপাশে।
নেভা এসে জিজুর হাতের উপর আমার হাতটা দিয়ে জিজুর আরেক হাত দিয়ে চেপে দিয়ে বললো,
আহিন ভাইয়া এবার পিক তোলা শুরু কর।
দুইটাই লজ্জাবতী।
সবাই হাসছে।
উনার স্পর্শ পেয়ে এদিকে আমার ভেতর আমি নেই।
খুব স্পিডে হার্টবিট চলছিলো।
আবার যখন আহিন ভাইয়া একটু কাছাকাছি হতে বললো উনি আমার কাছে এলে মুহূর্তের মধ্যে আমার হার্টবিট থমকে গেলো।
পুরো শরীরটা কাপাঁকাপি শুরু করে দিলো।
মেবি জিজু বুঝতে পেরেছেন।
শুধু একটা কথাই বললেন আমার দিকে তাকিয়ে।
তুমি ঠিকাছো তো?
আমি চুপ করে শুধু মাথাটা নাড়ালাম।
মানে ঠিক আছি।
উনি এই প্রথম আমার দিকে তাকিয়েছেন।
কিন্তু চোখাচোখি হতেই আমি চোখ সরিয়ে ফেলি।
ভীষণ সংকোচবোধ করছিলাম।
একটু পর সবাই ডিনার করবে।
আমি খুব আন ইজি ফিল করছিলাম।
এত অর্নামেন্টস প্লাস ভারী শাড়িতে।
আন্টি আমার মনের কথাটা বুঝতে পেরেছেন।
বললেন চেন্জ করে নিতে।
ডিনারে আরেকটু দেরী আছে।
আমি রুমে এসে চেন্জ করলাম।
ফ্রেশ হয়ে দেখি নেভা বিছানায় বসে আছে।
আরে নেভা তুই এখানে কেনো?
নেভা বাকা হাঁসি দিয়ে।
কাজ ছাড়া নেভা যেখানে সেখানে যায় না।
আমি ভ্রু নাচিয়ে।
মানে কি?
নেভা আমাকে টেনে ওর পাশে বসিয়ে কানে কানে বললো,
তুই রেডি থাক ভাইয়াকে রুমে পাঠাচ্ছি।
আমি চোখ বড় বড় করে মুখে হাত দিয়ে।
মানে কি?
জিজুকে রুমে পাঠাবি মানে?
নেভা: তওবা তওবা।নিজের জামাইকে তুই জিজু বলছিস।
গাধী কোথাকার।
জামাইকে কেউ জিজু বলে।
কথা গুলো বলে নেভা হাসছিলো।
দরজার পাশ থেকে কিছু হাসিঁর শব্দ শুনে সেদিকে তাকায় আমি আর নেভা।
নেভার কাজিনরা চুপি চুপি আমাদের কথা শুনছিলো।
নেভার ফুফাতো বোন জারিন আর খালাতো বোন আয়রা।
ওরা আমার মুখে জিজু ডাকটা শুনে হাসছে।
জারিন কিরে নেভা তোর ভাবির মাথায় প্রবলেম আছে নাকি?
আয়রা ::::::: ভাবিদের এলাকায় বুঝি জামাইকে জিজু বলে ডাকে তাইনা?
আমি চুপ করে আছি আর একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি।
নেভা: আমার দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে।
আমার ভাইয়ের নাম নিভরাজ।
আর পুরো নাম নিভরাজ সাদমান তালুকদার।
আর আমার পুরো নাম। সৈয়দা আশফা জাহান নেভা তালুকদার আমরা তালুকদার বংশ।
মনে থাকবে তো।
সো ভাইয়াকে নিভরাজ বলে ডাকবি।
নট জিজু।
আমি মাথা নাড়িয়ে।
হুম।
জারিন: তো ভাইয়াকে পাঠাবো।
একটু প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করতে।
আমি সাথে সাথে চোখ বড় বড় করে।
না না জিজুকে পাঠাতে হবে না।
যখন নেভার দিকে তাকায় নেভা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালে আমি আবারো বলি।
না মানে নি।নিভরাজকে।
তারপর জারিন।নেভা আর আয়রা তিনজনই হেসেঁ দিলো।
সাথে আমিও।
নেভা আর জারিন নিভরাজকে আনতে চেয়েছিলো আমার রুমে।
কিন্তু সে আসেনি।
তারপর আন্টিও বললো আমার সাথে একটু কথা বলতে। নিভরাজ তাও বলেনি।
আমার খুব কষ্ট লাগছিলো।
ডিনারের সময় পানির গ্লাস হাতে নিতে গিয়ে আমিও গ্লাসে হাত দিই আর নিভরাজ ও ভুল বশত আমার হাতের উপর হাত রাখে তখন দুজনের চোখ দুজনের দিকে।
উনি চটজলদি হাত সরিয়ে নিলে গ্লাসটা পড়ে যায়।
তখনও আমার খানিকটা কষ্ট চেপে বসে।
কিন্তু উনি যতই দূরে দূরে থাকছেন আমি ততই উনার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছি।
ডিনার শেষে উনারা চলে যান আর আমি ডুবে যায় উনার ভাবনাতে।
কেনো জানিনা উনার প্রতি ভালো লাগাটা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
না চাওয়া সত্তেও বার বার উনার কথাই
মনে পড়ছে।
কতোটা ভালোবেসে ফেলেছি উনাকে আমি নিজেও জানিনা।
আপুনি যে এত বড় একটা গিফট আমাকে দিয়ে যাবে কখনো ভাবতেই পারিনি।
আপুনি বলেছিলো।
এবার বার্থডে তে খুব এসপেনসিব একটা গিফট আমায় দেবে।
অনেক ভালোবাসি আপুনি তোকে।
অনেক মিস করি।
ভালো থাকিস বোন।
আল্লাহ আমার আপুনিকে খুব বেশি ভালো রাখবেন।
পরদিন সকাল সকাল আংকেল আন্টি ফোন দিয়ে জিঙ্গেস করলো নিভরাজ আমাদের বাসায় এসেছে কি না?
কিন্তু উনি তো আমাদের বাসায় আসেন নি।
আংকেল আন্টিরা কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলো।
নেভাও আমায় কল দিয়ে উনার কথা জিঙ্গেস করলো।
আজব।
উনার সাথে আমার কথা পর্যন্ত হয়না তাইলে আমি কি করে জানবো উনি কোথায়।
একটু পরই কলিং বেলের শব্দ পেয়ে নিছে এসে দেখি আংকেল আন্টি এসেছেন।
আর তাদের মুখে এক পাহাড় চিন্তার রেশ।
শুনলাম কাল রাতে উনাদের সাথে বাসায় গিয়েছিলো।
কিন্তু সকাল থেকেই উনার কোনো সাড়া শব্দ নেই।
উনার অনেক ফ্রেন্ডকে কল দিয়েছে আংকেল কিন্তু কেউ জানেনা।
উনি উনার মা বাবাকে না বলে এক পাও বাসা থেকে বের হয়না।
তো চিন্তা তো করার কথাই।
কোনো খোজ খবরও পাওয়া যাচ্ছে না।
উনার ফোন দুটোই সুইচড অফ বলছে।
আজব তো।
একটা মানুষ এভাবে না বলে কয়ে হঠাৎ কোথায় চলে গেলো?
আংকেল টেনশন করতে করতে পাগল প্রায়।
আন্টি কিছুই মুখে দিচ্ছে না।
শুধু কেদেই যাচ্ছে।
আম্মু আর আমি অনেক চেষ্টার পরও আন্টিকে কিছুই খাওয়াতে পারলাম না।
আংকেল আর আব্বু একসাথে বেরিয়েছেন।
সব হসপিটালেও চেক করে দেখেছেন।
আত্নীয় স্বজনদের কাছেও গিয়েছেন।
কিন্তু উনাকে কোথাও পেলেন না।
এদিকে রাত প্রায় এগারোটার কাছাকাছি।
সবাই চিন্তার ভাবনায় ডুবে আছে।
আব্বু আংকেল ও বাসায় চলে এলেন।
এদিকে টেনশনের জ্বালায় আমার মাথাটা ফেটে যাচ্ছে।
কোথায় উনি।
এভাবে কিছু না বলে কোথায় চলে গেলেন।
আংকেল আব্বু বাসায় ঢুকতেই আন্টি হুড়মুড়িয়ে আংকেলের কাছে গিয়ে বলেন।
অরবিন কোথায় আমার ছেলে?
তুমি একা কেনো?
ভাই সাহেব আমার ছেলেটা কোথায়?
অরবিন চুপ করে আছে কেনো?
বলো আমার ছেলে কোথায়।
আন্টি চিৎকার করে কেদে দিলেন।
আমার ছেলেটা কোথায়?
কেমন আছে?
কিভাবে আছে?
কোথায় আছে?
কিছু খেয়েছে নাকি খায়নি?
আমার ভেতরটা ছিড়ে যাচ্ছে আমার নিভরাজকে দেখার জন্যে।
আমার নিভরাজকে এনে দাও আমার কাছে।
আংকেল অসহায়ের দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকাচ্ছেন।
আমার দিকে তাকাতেই আমার আমার বুকের ভিতরটা হু হু করে উঠলো।
হাতটা নিজের অজান্তেই চোখের কাছে চলে এলো।
একি আমার চোখে পানি কেনো।
দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
মনের ভেতর থেকে অস্পষ্ট কিছু ধ্বনি আসছে।
আপনি কোথায়?
আমাদের সবাইকে এভাবে দেখতে কি আপনার খুব খুশি লাগছে।
হঠাৎ আন্টির ফোন বেজে উঠলে আন্টি তাড়াহুড়ো করে দৌড়ে ফোন নিতে আসলে অসাবধানতা বশত আরেকটুর জন্যে পড়ে যেতে চাইলে আমি ধরে ফেলি।
এতে আন্টির কোনো খেয়ালই নেই।
আমাকে সড়িয়ে দিয়ে ফোনটা রিসিভ করলেন।
পর্ব ৬
হঠাৎ আন্টির ফোন বেজে উঠলে আন্টি তাড়াহুড়ো করে দৌড়ে ফোন নিতে আসলে অসাবধানতা বশত আরেকটুর জন্যে পড়ে যেতে চাইলে আমি ধরে ফেলি।
এতে আন্টির কোনো খেয়ালই নেই।
আমাকে সড়িয়ে দিয়ে ফোনটা রিসিভ করলেন।
হ্যালো বলার আগেই আন্টির মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
আন্টির হাসি দেখেই সবার আর বুঝতে বাকি রইলো না কার ফোন।
কিছুক্ষণ কথা বলার পর আন্টি আংকেলকে ফোন দিয়ে আমাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
সানাত জানিস পাগলটা ফোন দিয়েছে।
ওর ফোনে নাকি চার্জ ছিলো না।
ফ্রেন্ডের কাছ থেকে দিয়েছে।
পাগলটা আমাদের কিছু না জানিয়ে টুরে চলে গেছে ওর বন্ধুদের সাথে।
আমরা নাকি যেতে দেবোনা তাই বলেনি।
আংকেলের সাথে কথা বলার পর আব্বু আর আম্মুর সাথে কথা বলে নেভাকে দিতে বললো,
নেভা কথা বলার পর আমাকে ডাকলো কথা বলতে।
আমি প্রথমে মাথা নাড়িয়ে না করে দিই।
তারপর আন্টি চোখ বড় করে ধমকের সুরে বললো,
জলদি গিয়ে ফোনটা ধরো।
আমি কাছে যেতেই নেভা বললো,
ভাইয়া ধর ভাবীর সাথে কথা বলো বলেই ফোনটা আমার হাতে দিলো।
আমি ইসতত বোধ করতে করতে ফোনটা হাতে নিলাম।
বুকটা ধুক ধুক শুরু করে দিলো।
ধীরে ধীরে ফোনটা কানে দিতেই যে কথাটা শুনলাম আমার বুকটা এখন প্রচন্ড রকমের চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছে।
বোধহয় কথাটা উনি নেভাকেই বলছেন। ফোনটা যে এখন আমার হাতে উনি বুঝতে পারেননি।
উনি বলছেন।
নেভা কথা শুন।
আমার এখন কারো সাথে কথা বলার সময় নেই রাখছি আমি বলেই ততক্ষণাৎ ফোনটা কেটে দিলো।
আমার সাথে কথাও বললো না।
হ্যালো বলার সুযোগটাও দিলো না।
আমি ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেলেও মুখের হাসিটা ঠিকিই রেখে দিলাম।
ভালোবাসার মানুষরা কষ্ট দিলে বুঝি এমনি লাগে।
বুকের চিনচিন ব্যাথাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
এতো কষ্ট হবার পরও একটা কথা ভেবে অনেকটা সুখ লাগছে অন্তত উনার কন্ঠস্বর টাতো শুনতে পেয়েছি।
উনি ভালো আছে এটাই অনেক।
আন্টি আম্মুকে বলতে শুনেছি উনি নাকি তার কয়েকটা ফ্রেন্ডের সাথে কক্সবাজার টুরে গেছেন আর উনার ফ্রেন্ড গুলোর নাম্বার আমাদের কাছে ছিলোনা।
যাক অবশেষে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
তার দুদিন পর শুক্রুবার ছিলো।
আব্বু আর আমি দুপুরের দিকে একসাথে বসে টিভি দেখছিলাম।
আম্মু কিচেন থেকে ডাক দিলো।
সানাত তোর আব্বুর চা টা নিয়ে যা তো মা।
আমি কিচেনে গেলাম আব্বুর জন্যে চা আনতে।
কেন জানি হঠাৎ আম্মু আমার কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।
সানাত।
নিভরাজ তোর সাথে কথা বলেনি?
বা ফোন করেনা?
আমি অবাক চোখে আম্মুর দিকে তাকালাম।
আ।আআম্মু।তুমি হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলে যে।
আম্মু আমার হাতের উপর হাত রেখে।
না এমনিতে।
ইচ্ছে হলো তাই জিঙ্গেস করলাম।
উত্তর দিলি নাতো।
আমি ইসতত বোধ করে।
আম্মু আগে চা টা দাও তো আব্বুকে দিয়ে আসি।
আম্মু চা টা অন্য দিকে সরিয়ে নিলো যেনো আমি নিতে না পারি।
আগে উত্তর দে তারপর নিয়ে যাবি।
আমি কি উত্তর দিবো বুঝে উঠতে পারছি না।
আম্মুর সাথে কখনো মিথ্যে বলনি।
আম্মু ছোটবেলা থেকেই আমাদের সাথে ফ্রেন্ডলী ভাবে মিশে।
তাই সবকিছুই শেয়ার করি।
এখন যদি আমি সত্যিটা বলে দিই তখন আম্মু কষ্ট পাবে।
কিছু একটাতো বলতে হবেই।
হ্যা আম্মু।
সেদিন দেখলে না কথা বললো,
কেনো বলবে না।
এখন না আমি তার বউ তাহলে।
এখন দাওতো চা টা বোধহয় ঠান্ডা হয়ে গেলো।
আম্মু আমার কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে বললো,
সব যেনো ভালোই ভালোই হয়।
ধর নে বলে চা টা আমার হাতে দিলো।
আমি চা টা নিয়ে আব্বুর কাছে আসছিলাম হঠাৎ টিভির একটা নিউজ কানে আসতেই চোখটা টিভির দিকে গেলো।
আর আমার হাতটা কাপতে কাপতে চা টা পড়ে গেলো।
গাড়ী এক্সিডেন্টের খবর।
সাজেক যাবার পথে গাড়িটি এক্সিডেন্ট করে।
ভেতরে তিনজন ছিলো।
তিনজনই নিহত।
সাথে সাথে মারা গেছে।
আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে গাড়িটির প্লেট নাম্বার দেখে আমি অজ্ঞান হবার অবস্হা।
মাথাটা ভো ভো করে ঘুরছে নাকি বাসাটা ঘুরছে বুঝতে পারছি না।
এই গাড়ি তো নিভরাজের।
আর গতকাল নেভার কাছে শুনেছিলাম আজ উনারা কক্সবাজার থেকে সাজেক যাবেন।
তাহলে উনার বুঝি নাহ আর ভাবতে পারছি না।
ধপ করে পড়ে গেলাম।
একটা অন্ধকার বদ্ধরুমে আমি বসে আছি।
কোনো জানালা নেই। নেই কোনো আলো।
আমি বের হতেও পারছি না।
চিৎকার করে আম্মু আব্বুকে ডাকছি।
আর সোহা আপুনিকেও ডাকছি।
আম্মু আব্বু কারো সাড়া শব্দ পাচ্ছি না।
হঠাৎ দেখি কেউ একজন অন্ধকারের আবছায়া থেকে ভেসে উঠলো।
প্রথমে ধোয়ার মতো তারপর আস্তে আস্তে
মানুষের রুপে পরিণত হলো।
সাদা কাপড় পরিহিতা সোহা আপুনি।
আপুনিকে দেখে আমার চোখে মুখে খুশির রেখা ফুটে উঠলো।
আজ আপুনিকে বড্ড সুন্দর লাগছে।
আপুনি তুই এতদিন কই ছিলি।
জানিস তোকে কতটা মিস করি আমি?
তোকে ছাড়া বড্ড একা একা লাগে আমার?
আপুনি আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
কেমন আছিসরে আমার বোনটা?
তোর বোনটা তোকে ছাড়া একটুও সুখে নেই।
তুই আমার কাছে ফিরে আয়।
সোহা আপুনি মাথা নেড়ে বললো,
পাগলী একটা।
আমি যেখানে এসেছি এখান থেকে কেউ ফিরে যেতে পারেনা।
আমিও পারবো না।
আমি কিছু বলতে চাইলে আপুনি আবার বললো,
নিজের খেয়াল রাখবি।
আব্বু আম্মুর খেয়াল রাখবি আর আমার নিভরাজকে অনেক সুখে রাখবি।
জানি সে এখনো অভিমানে আর শোকের মধ্যে আছে তবে তুই ভালোবাসা দিয়ে ওকে ভুলিয়ে দিবি আমার কথা।
সে অনেক ভালো মানুষরে তবে রাগটা একটু বেশি।
আমার সব প্রিয় মানুষ গুলোকে তোর কাছে দিয়ে গেলাম সবাইকে আগলে রাখিস।
হঠাৎ আমার পাশে নিভরাজকে দেখি।
সে কোথা থেকে যেনো চলে এলো আমার পাশে।
আপুনি নিভরাজের হাতটা নিয়ে আমার হাতের উপর দিয়ে বললো,
নিভরাজ তোর।
তোকে দিয়ে দিলাম।
দেখে রাখিস কিন্তু।
আমি চলে যাচ্ছি।
আপুনি পেছাতে লাগলো।
আমি কাদতে কাদতে বলছি। আপুনি যাসনা তুই আমায় ছেড়ে।
আপুনি ফিরে আয়।
দেখলাম আপুনি তারপর ও চলে যাচ্ছে।
অন্ধকারের সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে।
আপুনি বলে চিৎকার দিলাম।
একি রুমে তো লাইট জ্বলছে।
পাশে আব্বু আম্মু নেভা আমার কাজিন আর ফুফি।
আম্মু আমাকে বললো,
সানাত তুই এভাবে চিৎকার দিলি কেনো।
সোহাকে স্বপ্নে দেখেছিস?
আমার পুরো মুখটা ঘেমে গেছে।
তাহলে কি এতক্ষণ আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।
আমার কাজিন ইফরা বললো,
সানাত রে তোকে এতো পানির ছিটা দিলাম তারপরও কোনো হুশ নেই।
এতক্ষণ পর তোর সেন্স ফিরলো।
মামা মামি কত টেনশন করছিলো।
আমি নেভার দিকে তাকিয়ে।
নিভরাজ কোথায়?
উনি কি ভালো আছেন?
নেভা চুপ করে বাইরে বেরিয়ে গেলো।
ইফরা বললো হে ভালো আছে।
আগে তুই একটু রেস্ট নে তারপর অন্যদের কথা।
আমার এতোটা উইক লাগছিলো যে আমি দুদিন বিছানা থেকে উঠতে পারিনি।
কিন্তু আন্টির কান্না আমি দেখেছি।
আন্টি দুদিন ধরে পাগলের মতো করছিলো।
এবার আন্টিকে হসপিটালেও ভর্তি করতে হলো।
ঘরটাতে কেমন যেনো আবার শোকের ছায়া নেমে এলো।
আমার তো পুরো নিঃস্ব মনে হচ্ছে।
প্রচন্ড এক যন্ত্রনায় ভুগছি আমি।
এসব কি হচ্ছে আমার সাথে।
যাকে ভালোবাসছি সেই দূরে চলে যাচ্ছে।
আব্বু আর আংকেল তো সেখানে গেছেন যেখানে এক্সিডেন্ট টা হয়েছিলো।
পুলিশরা তদন্ত করছেন।
চারটা দিন কেটে গেলো।
নিভরাজের ফ্রেন্ডের পরিবার গুলোও আমাদের সাথে যোগাযোগ করলো।
পরে জানা গেলো।
গাড়িতে ছিলো দুজন মিস্ত্রি আর অন্যজন গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে নিহত হয়।
এদের কারো মধ্যে নিভরাজ বা তার ফ্রেন্ডরা ছিলো না।
তাহলে উনারা সবাই কোথায়?
খবরটা আন্টি শুনে কিছুটা ঠিক হলো।
বাসায় নিয়ে আসা হলো উনাকে।
আমি উনাদের বাসায় গিয়ে আন্টির যত্ন নিতে থাকি।
আন্টি আমাকে নিয়ে নিভরাজের রুমে গেলেন।
নিভরাজের আলমারী খুললে আমরা দুজনেই অবাক হয়ে যায়।
আলমারী তো খালি।
আন্টি চট জলদি ড্রয়ার খুলে মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়েন।
আমি আন্টির কাছে জিঙ্গেস করলে বললো,
নিভরাজের পাসপোর্ট নেই।
ততক্ষণাৎ আন্টি আংকেলকে ফোন করলে আংকেল আমার আব্বু আম্মুকে সহ বাসায় নিয়ে আসেন।
তারপর বলেন।
এবার বুঝতে পেরেছি আসল কাহিনীটা কি।
নিভরাজ সাজেক যাবার নাম করে দেশের বাইরে চলে গেছে ফ্রেন্ডদের নিয়ে।
আর গাড়িটা খারাপ হয়ে যাওয়াতে ঠিক করাতে ফোন করলে মিস্ত্রী আসে গাড়ি নিতে।
গাড়িতে শুধু মিস্ত্রী দুজন ছিলো।
ওরা তো তার আগেই দেশ ছেড়ে চলে গেছে।
আংকেল ফ্রান্সে থাকা নিভরাজের মামার কাছে ফোন দিয়ে জানলো নিভরাজ দুদিন আগেই গিয়েছে তার দুইটা ফ্রেন্ড সহ।
নিভরাজ নিষেধ করেছে আংকেল আন্টিকে না জানাতে।
আংকেল আন্টি তো ছেলের এমন কান্ডে লজ্জায় পড়ে গেলেন।
উনি নাকি মামাকে বলেছেন আংকেল আন্টি জোর করে উনাকে বিয়ে করিয়ে দিয়েছেন তাই উনি রাগের বশে এমনটা করেছেন।
আন্টি কত করে বুঝালো চার পাঁচদিন বেড়িয়ে যেনো দেশে চলে আসে তারপর আমাকে সহ যেনো নিয়ে যায়।
কিন্তু না উনার এক কথা।
উনি দেশে আসবে না।
আন্টি আবারো বললো,
নতুন বউ রেখে এভাবে কেউ পালিয়ে যায়?
কিন্তু উনি কোনো জবাব দিলেন না শুধু বললেন।
যখন সময় হবে আমি নিজেই চলে আসবো তারপর টুট টুট করে লাইনটা কেটে গেলো।
আমার বুকের ভিতরে তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করছি।
উনি আমাকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছেন।
তার মানে আমাকে সে পছন্দ করে না।
চোখ দিয়ে আপনা আপনিই পানি গড়িয়ে পড়লো।
উনি দেশের বাইরে গেছেন আজ প্রায় দুমাস হলো কিন্তু একটা বারও আমার সাথে কথা বললেন না।
আম্মু আব্বুর সাথে মাঝে মাঝে ইমুতে ভিডিও কলে কথা বলে।
এখন আমি জানালার গ্রিল ধরে আনমনে বসে আছি।
আর চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে টপ টপ করে পড়ছে।
সেদিন নেভাদের বাসায় গিয়েছিলাম আন্টির অসুস্হের খবর শুনে।
আর একটু পরেই নিভরাজ ফোন দিলো।
আন্টি কথা বলার পর যখন আমার কথা বললো উনি বার বার অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছিলেন।
তারপর আন্টি আমাকে পানি আনতে বললে আমি পানি আনতে কিচেনে যায় কিন্তু আড়াল থেকে সব শুনে ফেলি।
আন্টি:: নিভরাজ তুই এসব কি শুরু করেছিস।
সানাতের সাথে নাকি একবারও কথা বলিসনি নেভার কাছ থেকে শুনলাম।
নিভরাজ চুপ।
আন্টি ধমকের সুরে।
কি হলো চুপ করে আছিস কেনো।
নিভরাজ একটা কথা মনে রাখিস।
সানাত তোর বিয়ে করা বউ।
সো ওর সাথে।
নিভরাজ ::::::: ওফ মা।
আর কতবার এসব বলবে তুমি।
আমি জানিনা কিছু।
আর বিয়ের কথা বলছো।
তাতো তোমরা জোর করে আমায় করিয়েছো।
জোর করে ওকে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছো।
আন্টি রাগি কন্ঠে আবারো বললো,
কি যা তা বলছিস তুই।
শুন নিভরাজ এসব বলে কোনো লাভ নেই।
তোকে তো এখন মেনে নিতেই হবে যে সানাত তোর বউ।
আর তোকে ওর সাথে কথা বলতে হবে।
আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই না।
নিভরাজ ফোনটা কেটে দিলো।
হঠাৎ বুকটা হাহাকার করে উঠলো উনিকি আমাকে পছন্দ করেন না?
আমাকে বাধ্য হয়েছে বিয়ে করতে।
কিন্তু তারপরও কেনো। কেনো আমি উনাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি।
কেনো প্রতিটা মুহূর্তে শুধু উনাকেই ভাবি।
সেদিন আন্টির সাথে দেখা না করেই বাসায় চলে আসি।
বালিশে মুখ গুজে সারাটা রাত কেদে ছিলাম।
আম্মু অনেকবার খেতে ডেকেছিলো।
কিন্তু দরজাটাও খুলিনি।
এখনো বুকের ভিতরটা ব্যাথা করছে।
পেছন থেকে কেউ এসে ভয় পাইয়ে দিলো।
আরে নেভা তুই।
নেভা সারপ্রাইজ বলে ফোন আমার দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বললো,
ভাইয়া দেখ ভাবিকে কেমন লাগছে।
নেভা হাসছে।
উনাকে ভিডিও কলে দেখে বুকটা ধুক করে উঠলো।
চুল ভেজা আর উদাম দেহে শুয়ে শুয়ে কথা বলছে।
বোধহয় উনিও বুঝতে পারেনি নেভা হঠাৎ এমনটা করবে।
উনি তো নেভার সাথে কথা বলছিলেন।
আমাকে দেখার সাথে সাথে উনি নেভা নেভা বলে চিল্লাচ্ছেন।
আর আমি মুখ ঘুরিয়ে নেভাকে বকতে থাকি।
যে আমায় দেখতে চাই না তাকে কেনো জোর করে আমাকে দেখাতে হবে।
নেভা সবসময় এমন করে।
যখন ও আমাদের বাসায় আসে গল্প করতে।
নিভরাজ ফোন দিলেই ও আমাকে ধরিয়ে দেয় জোর করে।
আমি ফোন না নিলে ব্যাকসাইডে ক্যামেরা দিয়ে আমাকে দেখায়।
এভাবে কেটে গেলো প্রায় দুটো বছর।
কিন্তু এর ভিতরে নিভরাজের জন্যে আমার ভালোবাসাটুকু একটুও কমেনি বরং বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে।
আগামী সপ্তাহে নেভার বিয়ে ঠিক হয়েছে সেই ছেলেটার সাথে।
ছেলেটার নাম তাওহীদ।
বাবার সাথে বিজনেস করে।
খুব ভালো ছেলে ভদ্র শান্ত।
আংকেল আন্টির খুব পছন্দ হয়েছে।
বিয়ের পর তাওহীদ নেভাকে নিয়ে ফ্রান্সে চলে যাবে।
তাই বিয়েটা একটু তারাতারি সেরে ফেলতে হচ্ছে।
পর্ব ৭
আগামী সপ্তাহে নেভার বিয়ে ঠিক হয়েছে সেই ছেলেটার সাথে।
ছেলেটার নাম তাওহীদ।
বাবার সাথে বিজনেস করে।
খুব ভালো ছেলে ভদ্র শান্ত।
আংকেল আন্টির খুব পছন্দ হয়েছে।
বিয়ের পর তাওহীদ নেভাকে নিয়ে ফ্রান্সে চলে যাবে।
তাই বিয়েটা একটু তারাতারি সেরে ফেলতে হচ্ছে।
আগে বাগে কাবিনটা হয়ে গেলো।
এখন বিয়ের কদিন আগেই বেধে গেলো বড় ঝামেলাটা।
তাওহীদের দাদী হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। উনাকে নিয়ে সবাই দৌড়াদৌড়িতে পড়ে যায়।
রাতদিন হসপিটালে সবার ভীড় লেগেই থাকে।
এদিকে নেভার বিয়েটাও পিছিয়ে দেওয়া হলো।
এভাবে বারোটা দিন যাবার পর তাওহীদের দাদী মারা গেলো।
আর শোকের ভিতর নেভার বিয়েটা বছর খানেক পিছিয়ে দেওয়া হলো।
কারণ তাওহীদের ওখানে কোনো আত্নীয় মারা গেলে এক বছরের মধ্যে কেউ বিয়ে করতে পারে না।
তাই বিয়েটা বছর খানেকের জন্যে পিছিয়ে গেলো।
চুল আচড়াচ্ছিলাম হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।
কয়েকবার বেল বাজার পরও কেউ দরজাটা খুলে দিচ্ছে না তাই আমাকেই যেতে হলো।
দরজা খুলে দিতেই দুজন বোরকা পড়া। স্টাইলিশ হিজাব পড়া মেয়ে প্রথমে মুচকি হেসেঁ সালাম দিলো।
আমি হতভম্ব হয়ে মাথায় কাপড় টানতে টানতে জ্বি ওয়ালাইকুমুস সালাম।
আপনাদের তো।
আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তারা বললো,
তুমি আমাদের চিনবে না কিন্তু আমরা তোমায় চিনি।
এখানে দাড় করিয়ে রাখবে বুঝি ভেতরে আসতে বলবে না?
ওহ হ্যা ভেতরে আসুন।
উনাদের সোফায় বসতে দিয়ে আমি ও বসতে যাচ্ছিলাম এমন সময় আম্মু এলো।
সানাত কে এসেছে রে মা।
ওদের দেখে আম্মু তব্দা খেয়ে গেলো।
উনারা আম্মুকেও সালাম দিলো।
তারপর আম্মুকে বসতে বলে কথা বলতে শুরু করলেন।
বাসায় নতুন মেহমান এসেছেন তাই কিছু নাস্তা রেডী করতে কিচেনে গেলাম।
নাস্তা এনে টেবিলে রাখলাম উনাদের নাস্তা নিতে বললাম কিন্তু উনারা বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছিলো।
আর অন্য মেয়েটা কাকে ফোন দিচ্ছিলো।
একটু পর কলিং বেল বেজে উঠলো আর মেয়েটা অন্য মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো এসে গেছে তারপর আমাকে ইশারা করে বললো সানাত প্লিজ দরজাটা একটু খুলে দিবা?
দরজা খুলে দিতেই একজন সুদর্শন যুবককে দেখতে পেলাম। উনি আমার দিকে কেমন ভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মেয়ে একজন এসে মুচকি হেসেঁ বললো সানাত ও আমার ভাই আরাভ।
আমিও মৃদু হেসেঁ বললাম। ওহ আচ্ছা।
ভেতরে আসুন।
তারপর তাদের কথা শুনে আমি আর আম্মু বড্ড বেশী আশ্চর্য হলাম।
একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলাম এসব কি বলছে উনারা।
আমার জন্যে বিয়ের প্রপোজাল এসেছে তাও আবার সরাসরি।
ছেলেটা বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো।
আমাকে আর আম্মুকে চুপ থাকতে দেখে মেয়ে গুলা বললো আপনারা এভাবে চুপ করে আছেন যে।
কিছু বলেন আন্টি।
আমার ভাইকে কি আপনাদের পছন্দ হয়নি?
নিশ্চয় আপনারা অবাক হচ্ছেন এজন্য যে।
আমরা কোনো ঘটক দিয়ে কেনো প্রপোজাল পাঠাইনি।
একচুয়েলী আন্টি আমরা সব কিছু সরাসরি বলতে পছন্দ করি।
আমার কাজিনের বিয়েতে সানাতকে দেখে আরাভের পছন্দ হয়।
এতদিন অনেক মেয়ে দেখানোর পরও ওর পছন্দ হচ্ছিলো না।
হঠাৎ কাউকে পছন্দ হয়েছে শুনে আর দেরী করলাম না।
অনেক কষ্টের পর বাসার এড্রেসটা পেয়েছি।
আপনারা যদি অমত না করেন তো আজই পাকা কথাবার্তা সেরে ফেলতে চাই।
আম্মু নেভার কাজিন মানে?
এবার অন্য মেয়েটা বললো,
আমরা নেভার দুর সম্পর্কের মামাতো বোন আর অন্যদিকে সানাতের ফ্রেন্ড আনিকার বোন।
আমি মুখে হাত দিয়ে ইয়া আল্লাহ।
তাইতো বলি এমন চেহেরা কোথায় যেনো দেখেছি।
খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছিলো।
মেয়েগুলোর না জাস্ট ছেলেটার।
পুরাই আনিকার ডুবলিকেট।
কেন জানিনা আমার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছিলো।
মুখ চেপে হাসছিলাম আর ছেলেটা অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
কিন্তু আম্মুর দিকে চোখ পড়তেই হাসি বন্ধ করলাম কোনো ভাবে।
এমন লাল লাল চোখ দেখলে তো বন্ধ করতেই হবে।
জানি নিভরাজের সাথে আমার কাবিন পারিবারিক ভাবেই হয়েছিলো তাই তাদের আত্নীয়রা তেমন একটা জানে না।
কিন্তু আনিকা তো জানে তাহলে?
আনিকা নেভার কাজিন তার উপর অন্য দিকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
সেই সুবাদে আমার অনেক কথাই আনিকা জানে।
আমি আমতা আমতা করে বললাম।
আনিকা আপনাদের কিছু বলেনি?
মেয়ে দুজন আমার দিকে তাকালো।
আম্মু আর ছেলেটাও।
মনে মনে ভাবছি। এভাবে কেউ কারো দিকে তাকিয়ে থাকে নাকি।
রামছাগল একটা।
একটু বড় টাইপের মেয়েটা বললো,
আনিকাই তো তোমার কথা বললো,
কিন্তু ও নিজেও তোমাদের বাসা চিনে না।
আনিকাও তোমাকে অনেক পছন্দ করে।
আমি তব্দা মেরে গেলাম।
মেয়েটা পাগল হয়ে গেছে নাকি।
এবার আম্মু তাদের সব খুলে বললো,
বেচারা ছেলেটার মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
খুব একটা বড় ছ্যাখা খেয়েছে মনে হয়।
তারা সব জানার পর কতোটা যে অনুশোচনা করছিলো।
বারবার সরি বলছিলো।
তারা যাবার পর আমি হাসতে হাসতে শেষ।
প্রথমে আম্মু চোখ লাল লাল করে তাকিয়ে ছিলো একটু পর আমাকে হাসতে দেখে আম্মুও হেসেঁ দিলো।
আম্মু হঠাৎ বলে উঠলো। ছেলেটাকে আমার বড্ড পছন্দ হয়েছে।
ফ্যামিলিও বেশ ভালো হবে দেখতেই বুঝা যায়।
আমি হাসি থামিয়ে চোখ বড় বড় করে।
আম্মুুু কি বলছো।
তার মানে কি তুমি আমাকে আবার বিয়ে দিবে?
আম্মু আমার বাহুতে হালকা থাবা মেরে।
চুপ করতো শয়তান মেয়ে কোথাকার।
পছন্দ হয়েছে বলে কি শুধু তোর জন্যে।
আমি তো ভাবছি বড় আপার মেয়ে আইরিন এর জন্যে।
দুজনকে কিন্তু বেশ মানাবে।
বড় আপাও এমন সুন্দর পাত্র খুজছিলো আইরিনের জন্যে।
আমি এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে আম্মুর সাথে সায় দিলাম।
একদম মানাবে।
মানাবে মানে।একচের মানাবে।
আম্মু তুমি বড় খালামনির সাথে কথা বলে দেখো।
আম্মু ::::::: তাহলে তুই তোর ফ্রেন্ড কে যেনো ওদের এখানে পাঠিয়েছিলো।
আমি আনিকা।
আম্মু হ্যা হ্যা আনিকা।
ওর সাথে কথা বল।
আমি যাই বড় আপাকে খবরটা দিই।
পরদিন আনিকার সাথে দেখা করলাম সাথে নেভাও ছিলো।
কেনো জানিনা আনিকা বার বার আমাকে ইশারা করছিলো নেভার পাশ থেকে সরে আসতে কিছু পারসোনাল কথা বলতে চাই নাকি।
কিন্তু নেভাকে কিভাবে বলি।
কি না কি মনে করে।আনিকা ইচ্ছে করেই নেভার গায়ে পানি ফেললো আর নেভা পরিস্কার করতে ওয়াশরুমে গেলো।
এবার আনিকা বলা শুরু করলো।
আনিকা: দেখ সানাত।
আমি চোখ বাকা করে কি দেখবো বলতো।
কি দেখাতে চাস তুই।
আনিকা: একটু উচ্ছস্বরে।
সানাত এটা ফান করার টাইম না যা বলছি তারাতারি শোন।
আমি নেভার সামনে তোকে এসব কথা বলতে পারতাম না তাই এমনটা করতে হলো।
আরাভ ভাইয়াকে আমিই তোর বাসার এড্রেসটা দিয়েছিলাম।
ভাইয়া অনেক ভালো রে।
তোকে অনেক সুখে রাখবে।
আমার দৃষ্টিতে ভাইয়ার জন্যে তুই পারফেক্ট ছিলি তাই আমি অমত করিনি।
আমি অবাক হয়ে।
আনিকা। তুই কি পাগল হয়ে গেছিস। মাথা ঠিক ছিলো না বুঝি তোর।
আমি কি আনম্যারিড নাকি?
আমি যে ম্যারিড তুই জানিস না।
তারপরও তুই।
আনিকা: হ্যা জানি জানি।
এটাকে ম্যারেজ বলে না।
কিসের ম্যারিড তুই।
যে তোকে একটুও ভালোবাসে না।
যাকে তুই এত ভালোবাসিস। এত কষ্টের পরও তুই তাকে বিয়ে করতে রাজি হলি আর সে কিনা তোকে ছেড়ে চলে গেলো।
আজ তিনটা বছর পার হয়ে গেছে।
তোর কাছে ফোন করেছে একটা বারও।
কার অপেক্ষায় আছিস তুই সানাত।
তোর জায়গায় অন্য কেউ হলে এতক্ষণ বিয়ে করে বাচ্ছার মা হয়ে যেতো।
কেনো শুধু শুধু তুই নিভরাজের জন্যে নিজের জিবনটা শেষ করে দিচ্ছিস।
আমি বুঝতে পারছি না আংকেল আন্টি আজও কেনো চুপ করে আছে।
তুই আর কত কষ্ট পাবি।
কেনো নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস।
নিভরাজ তোকে ভালোবাসেনা।
আনিকার কথা গুলো ঠিক আমার মনে তীরের মতো বিধছে।
বুকে চিন চিন ব্যাথাটা প্রচন্ড ঝাপটা দিচ্ছে।
আনিকার কথাগুলো সত্যি হলেও কিছু করার নেই।
আমি যে নিভরাজকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
চোখ দিয়ে টপ টপ করে অঝোর ধারায় পানি গড়িয়ে পড়ছে।
আনিকা আমি পারবো না ওকে ছাড়তে।
ও আমাকে ভালোবাসুক আর না বাসুক তারপরও আমি ওকেই ভালোবেসে যাবো।
ও আমার স্বামি।
ইসলামের বিধি অনুযায়ী আমরা স্বামি স্ত্রী। আমাদের বিয়ে হয়েছে তাহলে কিভাবে আমি ওকে ছাড়বো।
এটা কখনো হয় না আনিকা।
আনিকা আমার হাত ধরে খুব করে বললো,
সানাত তোর জিবনটা এভাবে শেষ করে দিসনা।
এখনো সময় আছে জিবনটাকে গুছিয়ে নেওয়ার।
আনিকা এটা কখনো হবার নয়।
আমি পারবো না।
আর তোকে আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করতে হবে না।
বরং তুই আম্মুর সাথে কথা বল এই নে আম্মুর ফোন নাম্বার।
নেভাও চলে এলো।
নেভা তোরা এখনো শুরু করিস নি।
আমি:: তোকে ছাড়া কিভাবে শুরু করি।
আনিকা: চাইলে তো অবশ্যই পারবি।
সময়টা থেমে থাকেনা মনে রাখিস।
আনিকা যে কি উদ্দেশ্যে কথাটা বলেছে আমি বুঝতে পেরেছি।
কফিটা শেষ করে আমরা বাসায় চলে আসি।
বাসায় দেখি আংকেল আন্টি এসেছে।
শুনলাম আগামী সপ্তাহে নেভার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
নেভার মুখ ঝকঝক করছে।
আমি নেভাকে হালকা ঝাকুনি দিয়ে।
বাহ বিয়ের কথা শুনে তো মেয়ের মুখ একেবারে ফকফকা হয়ে গেছে।
নেভা লজ্জা পেয়ে যায়।
এতদিন দুজনে চুকিয়ে প্রেম করে নিয়েছে।
খুব রোমান্টিক নাকি তাওহীদ।
সবসময় নেভাকে হাসি খুশি রাখার চেস্টা করে।
পর্ব ৮
বাসায় দেখি আংকেল আন্টি এসেছে।
শুনলাম আগামী সপ্তাহে নেভার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
নেভার মুখ ঝকঝক করছে।
আমি নেভাকে হালকা ঝাকুনি দিয়ে।
বাহ বিয়ের কথা শুনে তো মেয়ের মুখ একেবারে ফকফকা হয়ে গেছে।
নেভা লজ্জা পেয়ে যায়।
এতদিন দুজনে চুকিয়ে প্রেম করে নিয়েছে।
খুব রোমান্টিক নাকি তাওহীদ।
সবসময় নেভাকে হাসি খুশি রাখার চেস্টা করে।
অনেক ভালো ছেলে তাওহীদ।
আংকেল আন্টির একমাত্র মেয়ে নেভা।
বিয়েটা খুব ধুমধামের সাথেই হবে।
তাওহীদের বাবা মা পবিত্র ওমরাহতে গিয়েছিলো।
বিয়ের আগেই তারা চলে আসবে।
এই নেভাটা বিয়ের সব শপিং করতে আমাকে সাথে নিবেই নিবে।
না যেতে চাইলেও জোর করে নিয়ে যাবো।
তার নাকি তাওহীদের সাথে একা যেতে লজ্জা করে।
আমি নেভা তুই এত ঢং করিস কেনো।রাতে তো দুজনের প্রেম জমে উঠে।
আবার একা যেতে নাকি লজ্জা করে।
তোকে কি সে খেয়ে ফেলবে।
সে মানুষ।
বাঘ। সিংহ না।
নেভা: ব্যস।আর বলিস না।
ফোনে কথা বলা আর সামনে থেকে কথা বলা দুইটাই পুরোপুরি ভিন্ন ব্যাপার।
জানিস ওকে দেখলে না আমার বুকটা ধুকপুক করে উঠে।
উতাল পাতাল হয়ে যায় ভিতরটা।
চোখে চোখ রাখতে পারিনা।
ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যায় আমি।
বাসার নিচে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম তাওহীদের জন্যে।
আর নেভার সাথে কথা বলছিলাম।
রাস্তার অন্য পাশে বখাটে ছেলেগুলোর দিকে চোখ পড়তেই দেখি কেমন বাজে দৃষ্টিতে আমাদের দুজনকে দেখছে।
শিষ বাজাচ্ছে আর গানও করছে।
তু চিজ বাড়ি হে মাস্ত মাস্ত তু চিজ বাড়ি হে মাস্ত।
আমি এসব দেখেও পাত্তা দিচ্ছি না।
বখাটে গুলা সবসময় এমন করে।
সব মেয়েদের ইভটিজিং করে।
পুলিশ কি এগুলারে দেখেনা।
আর দেখবেইবা কেমন করে।
পুলিশ আসতে দেখলে তারা তাড়াহুড়ো করে পালিয়ে যায়।
নেভা আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে ওদের দিকে তাকিয়ে।
জানোয়ার গুলোর কি মা বোন নেই।
দাড়া আজ এগুলারে উচিৎ শিক্ষা দিবো।
নেভা রেগে ওদের দিকে যেতে চাইলে আমি ওর হাত ধরে রাখি।
নেভা বাদ দে তো এসব।
কুকুর কামড়ালে কি তুইও কুকুরকে কামড় দিবি।
নেভা শান্ত হলো।
এমনিতেও বখাটে গুলোকে আমার প্রচন্ড ভয় লাগে।
ওদের তিন জনের মধ্যে একজন রেপিস্ট ছিলো।
বছর খানেক জেল খেটেও এর শিক্ষা হয়নি।
বস্তির মূর্খ ছেলে নয় সে।
আমাদের সামনের সাত তলা বিল্ডিংয়ের জমিদারের একমাত্র ছেলে।
শিক্ষিত আর বড় লোকের ছেলে।
তাই তো এত অর্ধপতন।
এলাকার সব মেয়েদের সে ডিস্টার্ব করে।
একটু পর তাওহীদ এলো গাড়ি নিয়ে।
তাওহীদ গাড়ি থেকে নেমে আমাকে বললো,
সরি ভাবী।
রাস্তায় খুব জ্যাম ছিলো তাই লেইট হয়েছে।
আপনাদের অনেক্ষণ দাড় করিয়ে রেখেছি।
সত্যি অনেক গুলা সরি।
ভাবি উঠেন এমনিতেই লেইট হয়ে গেছে।
আমি পিছনের ডোর খুলে বসতে গেলে দেখি নেভাও পিছনের সিটে বসার জন্যে ডোর খুলছে।
আমি নেভাকে ইশারা করে বললাম।
সামনের সিটে বসতে।
কিন্তু না সে বসবে না।
তার নাকি লজ্জা করছে।
আমি গিয়ে জোর করে নেভাকে সামনের সিটে বসিয়ে দিলাম।
বেচারী আমার হাতটা কিভাবে যে চেপে ধরেছিলো।
আমি বুঝতে পেরেছি।
প্রথম প্রথম দেখায় এমন হয়।
এমন অনুভুতি গুলো সত্যিই অন্যরকম।
গাড়িতে তাওহীদের সাথে আমার টুকটাক কথা হলো।
কিন্তু গাধীটা একটুও কথা বললো না।
শপিং করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো।
আমাকে ও অনেক শপিং করে দিলো তাওহীদ।
নিতে না চাইলেও জোর করে নিয়ে দিলো।
তাওহীদ জোর করে আমাদের বাইরে ডিনার করালো।
তারপর বাসায় পৌছে দিলো।
আমি বুদ্ধি করে বললাম।
আমাকে যেনো প্রথমে নামিয়ে দেয়।
গেইটের সামনে গাড়ি থামালে আমি নেমে পড়ি।
দেখি আমার সাথে সাথে নেভাও নেমে পড়ে।
একি গাধীটা কেনো নামলো।
তাদের দুজনকে একা টাইম স্পেন্ড করার জন্যই তো আমি আগে নেমে পড়েছি।
নেভা: সানাত আমি আজ তোদের বাসায় থাকবো।
আমি: চোখ বাকা করে।
আরে কি বলছিস।
আন্টি আংকেল বাসায় একা। তার উপর তাওহীদের সাথে সাক্ষাৎ ও করিয়ে দিবি।
যা যা বাসায় চলে যা।
ভাইয়া নেভাকে বাসায় দিয়ে আসেন।
বেচারী আমাকে চোখ রাঙ্গিয়ে গাড়িতে বসলো।
আমাকে বাই বলে চলে গেলো।
আমি মুচকি হেসেঁ গেইট দিয়ে ঢুকতে যাবো অমনি কারো শিষ বাজানোর আওয়াজ পেলাম।
থমকে গেলাম আমি।
পিছন ফিরে তাকাতেই ভয়ে আমার লোমকূপ খাড়া হয়ে গেলো।
মনে হচ্ছে এখনি দম বন্ধ হয়ে যাবে।
সেই জমিদারের ছেলেটা রাস্তার ওপাশে দাড়িয়ে সিগারেট টানতে টানতে এক পা একপা করে আমার দিকেই আসছে।
অনেকটা অন্ধকার হলেও ল্যাম্পপোস্টের আলোয় তার বাকা হাসি দেওয়া মুখটা দেখা যাচ্ছে।
আমার পুরো শরীর ভয়ে কেপে উঠলো।
তাড়িগড়ি করে দৌড় দিলাম।
কিন্তু হিলের জন্যে দৌড়াতে পারছি না।
হিল খুলে হাতে নিয়ে যত শক্তি আছে সব জড় করে আল্লাহর নাম নিয়ে এমন ভাবে দৌড় দিলাম দরজার সামনে এসে ধপধপ করে দরজায় আঘাত করতেই আম্মু দরজা খুলে দিলো।
আমি শপিং ব্যাগ গুলো ফ্লোরে ফেলে হিল গুলো ছুড়ে ফেলে নিজেও বসে হাপাতে লাগলাম।
আম্মু বারবার জিঙ্গেস করছিলো।
কি হয়েছে এমন করছিস কেনো।
গ্লাস ভর্তি পানি এনে দিলে আমি এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে সব পানি নিমিষেই শেষ করে দিলাম।
এতটা ভয় আমি আমার জিবনেও পাইনি।
এই ছেলেকে আমি ভিষণ ভয় পাই।
খুব বাজে ছেলে।
চোখ দেকলেই গা ঘিন ঘিন করে।
আম্মুকে আর কিছু বলিনি।
বলেছি তো মিথ্যে কথা।
কুকুর দেখে ভয় পেয়েছি।
তবে এতটাও মিথ্যে না।
কুকুরের চাইতে কম কিসে শয়তানটা।
রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আম্মুকে দেখালাম তাওহীদ যা যা কিনে দিয়েছিলো।
ঘুমানোর আগে বেলকুনিতে বাতাস খেতে গিয়েছিলাম।
কিন্তু যা দেখলাম ভিতরটা আবারো কেপে উঠলো।
অন্ধকারের মাঝে ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলোয় এখন তিনটা আবছায়া দেখা যাচ্ছে।
আর তিনটার ঠোটেঁর কাছে লাল কি যেনো জ্বলে উঠছে।
রুমে চলে এলাম।
খুব অস্বস্হি লাগছিলো।
কেনো জানি ছটপট ছটপট করছিলো মনটা।
কেনো জানি বার বার নিভরাজের কথা মনে পড়ছিলো।
আর আনিকার বলা কথা গুলো।
কিভাবে যে আমি তিনটা বছর পার করে দিয়েছি।
তারপরও নিভরাজের জন্যে আমার ভালোবাসা একটুও কমেনি।
আপন মনেই নিভরাজের সাথে কথা বলছি ফোনে ওর ছবির দিকে তাকিয়ে।
যেটা কিছুদিন আগে ও ফেসবুকে আপলোড দিয়েছিলো।
আর আমি সেইভ করে রেখেছিলাম।
প্রতি রাতে ছবিটা দেখে তারপর ঘুমায় আমি।
নিভরাজের সাথে কথা বলতে পারিনা তো কি হয়েছে।
ওর ছবির সাথেই কথা বলি।
যদি তুমি জানতে। তোমায় কতোটা ভালোবাসি আমি।
যদি তুমি জানতে তুমি আছো আমার হৃদয়ের প্রান্তে।
তোমাকে ভালোবাসি আমি তোমার অজান্তে।
যদি তুমি জানতে।
তুমি আমায় ভালোবাসো বা না বাসো।
আমি সারাটাজিবন তোমায় ভালোবেসে যাবো।
এমন সময় রিং বেজে উঠলো।
আর আমি চমকে গেলাম।
নেভা ফোন করেছে।
রিসিভ করেই শুরু করলাম দুষ্টুমি।
হ্যা হ্যা কিরে। কি হলো রে।
কি কি করলি রে তোরা।
নেভা ওপাশ থেকে।
সানাত বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
কি করবো আমরা হ্যা।
বাসায় এসেছি। তারপর।
নেভার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে।
তারপর তারপর কি।
কেমন রোমান্স করলি রে।
নেভা প্লিজ প্লিজ বলনা।
তুই তো আমার বেস্টি।
বলবি না আমায়।
নেভা: কি বলবো আমি। কিসের রোমান্স হ্যা।
আমি এত ন্যাকা সাজিস না।
কি কি করেছিস দুজন সেইটা বল।
নেভা হালকা নাস্তা করেছি তারপর আব্বু আম্মৃর সাথে কথা বলেছে তারপর চলে গেছে।
আমি দেক নেভা এত ঢং করিস নাতো।
বুঝেও না বুঝার ভান করিস না।
বললে বল না বললে রাখছি।
নেভা আচ্ছা আচ্ছা শোন।
রাগ করিস কেনো বলছি তো।
তবে একটা শর্ত আছে।
আমি শর্ত।আবার কি শর্ত।
নেভা আমি তোকে আমার গুলা বলবো আর তুই আমাকে তোর আর ভাইয়ার গুলা বলবি।
মানে ভাইয়া তোকে কি কি করলো হেন তেন এসব আরকি।
আমি যাহহ এসব কি বলছিস তুই।
তার মানে তোরটা বলবি না তো।
আচ্ছা আমি রাখছি।
বলা লাগবেনা। আমি নিজেই তো তোদের সুযোগ দিয়েছি।
নেভা: ওহ মাই খাট। তাহলে তুই এসব ইচ্ছে করে করেছিস যাতে আমরা একা হয়ে যায়।
শয়তানি দাড়া তোকে কাল মজা দেখাবো।
আমি: আচ্ছা সেটা কাল দেখাস।
এখন বল।চুমু হাগ।তারপর আর কি কি হুমমমমমম।
নেভা তারপর আর কি কি মানে।
জাস্ট হাগ আর হালকা একটা চুমু ব্যস আর কিছুনা।
আমি মুখে হাত দিয়ে।
ইয়া আল্লাহ।
কি চুমু।নেভা তোর কি একটুও লজ্জা শরম নেই।
হাগ করেছিস আবার চুমুও খেয়েছিস।
ছি ছি।
নেভা আমার জায়গায় তুই আমার ভাইয়া হলে আরো বেশি কিছু করতি।
হুহহহ নিজে কত সাধু আমি খুব ভালো করেই জানি।
জানি আমার ভাইটা সাধু।
কিন্তু তুই।
তুই তো একা পাইলে ভাইরে ছাড়বি না। আমি জানি তো।
হায় আল্লাহ না জানি কি হবে আমার সহজ সরল ভাইটার।
আমি: টাশ করে দিবো দুইটা।
বিয়াদপ মেয়ে।
তুই একটা বদ।
বদের হাড্ডি।
আমি এতটা বেহায়া না।
আমি খুব ভদ্র একটা মেয়ে।
নেভা:: সেটা তো সময় হলে দেখা যাবে।
তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলাম।
ছি ছি নেভা এসব কি বললো,
এসব কি আমি করবো নাকি।
ভালো মেয়েরা এসব করেনা।
তারপর নিভরাজের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
বিকেলে ছাদে হাটতে গেলাম।
সাথে কফির মগ তো আছেই।
ব্ল্যাক কফি আমার ফেবারিট।
ছাদের কর্ণারে রেলিংয়ের উপর বসে কফিতে চুমুক দিলাম।
একটু পর চারোদিকটা অন্ধকারে ঢেকে যাবে।
হঠাৎ সামনের বিল্ডিংয়ের তিন তলার জেরিন আপুর বেলকুনিতে চোখ গেলো।
ওয়াও কি সুন্দর বেবীটা।
নিশ্চয় জেরিন আপুর বেবী।
আপু কখন এলো।
অনেক দিন হয় আপুর সাথে দেখা হয়নি প্রায় বছর খানেক হবে।
আমাদের সাথে অনেক বছরের সম্পর্ক।
উনি এলে তো আমাদের বাসায় আসেন।
জেরিন আপুর বিয়ের পাঁচ বছরেও ওনার কোনো বেবী হয়নি।
কত ডাক্তার। কবিরাজ এমন কি মানুষের নানা কথা শুনে স্বপ্নের ঔষুধ ও খেয়েছেন তাতেও কিছু হয়নি।
তাই উনার হাজবেন্ড নিলয় ভাইয়া দেশের বাইরে নিয়ে যান ট্রিটমেন্ট করাতে।
বেবীটা আমার দিকে তাকিয়ে খুব হাসছে।
আবার হাতের ইশারায় আমাকে ডাকছে।
এমনিতেই বাচ্ছাদের প্রতি আমার দূর্বলতা আছে আগে থেকেই।
কোলে না নিয়ে থাকতেই পারি না।
বেবীটার চেহেরাটা এত্ত মায়াবী।
একদম জেরিন আপুর মতো দেখতে।
বড্ড সুন্দরী জেরিন আপুটা।
ঠিক সোহা আপুনির মতো।
আমার খুব ইচ্ছে করছে বেবীটাকে কোলে নিতে।
আদর করতে চুমু খেতে।
নাহ পারবো না আমি নিজেকে আটকাতে।
বেবীটাকেও আদর করে আসি আর জেরিন আপুর সাথেও দেখাটা করে আসি।
কফির মগটা ওখানেই রেখে দৌড়ে নিচে এলাম।
পর্ব ৯
আমার খুব ইচ্ছে করছে বেবীটাকে কোলে নিতে।
আদর করতে চুমু খেতে।
নাহ পারবো না আমি নিজেকে আটকাতে।
বেবীটাকেও আদর করে আসি আর জেরিন আপুর সাথেও দেখাটা করে আসি।
কফির মগটা ওখানেই রেখে দৌড়ে নিচে এলাম।
নিচে আসতেই আম্মু টেবিলে কি যেনো করছিলো।
এই সানাত কোথায় যাচ্ছিস।
তোর জন্যে আলুর পরোটা বানিয়েছি।
খেয়ে যা।
সানাত।
সানাত।
কে শোনে কার কথা।
তাড়াহুড়া করে আসতে আসতে আম্মুকে জবাব দিলাম।
আমি জেরিন আপুদের বাসায় যাচ্ছি।
আপু এসেছে বেবী নিয়ে।
আসি মা আমি।
আম্মুর আর কোনো কথা শুনতে পেলাম না।
সোজা জেরিন আপুদের বাসায়।
কলিং বেল চাপ দিতেই আন্টি এসে দরজা খুলে দিলেন।
আরে সানাত তুমি।
কেমন আছিস রে মা।
অনেক দিন পর এলি আমাদের বাসায়।
কেমনে আসতে ইচ্ছে হলো।
তারপর জামাইর।
আরে আন্টি আর কতক্ষণ দাড় করিয়ে রাখবে।
বাসায় কি আসতে বলবে না।
আন্টি: ওহ ভেতরে আয়।
জেরিন এসেছে গতকাল রাতে।
আমি: আন্টি আপু এসেছে।
ওয়াও।
আপুর নাকি বেবী হয়েছে।
আন্টি তুই কেমনে জানলি?
আমি ঐ যে ছাদে গেলাম।
দেখলাম বেলকুনিতে বেবী একটা ঠিক দেখতে জেরিন আপুর মতোই হয়েছে।
কই জেরিন আপু।
আন্টি রুমে আছে।
তুই যা আমি তোর জন্যে নাস্তা নিয়ে আসছি।
আমি: নাহ আন্টি আমি কিছু খাবো না।
আম্মু বাসায় অলরেডি নাস্তা বানিয়ে রেখেছে।
তুমি পারলে বরং একটু চা দাও।
জেরিন আপুর রুমে ঢুকে জেরিন আপুকে দেখলাম না।
তবে চুপি চুপি বেবীর কাজ দেখছি।
সারা রুমে উল্টা পাল্টা করে রেখেছে।
ফুলদানী থেকে সব ফুল মাটিতে তারপর দেওয়ালর লিপিস্টিক দিয়ে আকিবুকি করছে।
এমনকি বিছানার ছাদরটাও আস্ত রাখেনি।
ড্রয়ার থেকে সব কসমেটিকস বের করে নিজের মুখে তো ইচ্ছে মতো ঘষেছে তারপর সেগুলো ভেঙ্গে চারোপাশে ছড়িয়ে চিটিয়ে রেখেছে।
সব এক্সক্লুসিব ব্যান্ডের কসমেটিকস।
চুপি চুপি গিয়ে বেবীর পাশে বসতেই সে আমায় দেখে ফেলে।
সে কি সব চাইনিজ ভাষায় কথা বলে যা আমি বুঝতে পারছিনা।
তবে হালকা একটু বুঝেছি তার আকার ইঙ্গিতে।
মানে সে বলতে চাইছে আমাকে লিপিস্টিক লাগিয়ে দিবে।
আমার মুখটা তার কাছে নেওয়ার জন্যে ইঙ্গিত করলে আমি মুখটা কাছে নিয়ে যায় আর সে আমাকে লিপিস্টিক লাগিয়ে দিচ্ছে তার ইচ্ছে মতো।
ওয়াশরুম থেকে জেরিন আপু বের হলো।
ওহ গড।
এসব কি।
সানাত তুই কখন এলি?
তারপর আমি যখন আপুর দিকে তাকালাম।
আরে সানাত তোর এসব কি করে হলো।
আপু হাসতে লাগলো।
জাফরা তুমিও।
আমি আর আপু হাসতে লাগলাম আর জাফরা আমাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল।
আন্টি চা নিয়ে এসে এসব আর আমাকে দেখে ফিক করে হেসে দিলো।
সানাত তুই না কি।
তারপর আমি নিজেই জাফরা কে ফ্রেশ করে দিলাম।
এক বছর সাত মাস জাফরার।
কিন্তু এত দুষ্টুমি করে যা বলার বাইরে।
চা খেতে আন্টি বললো,
হ্যা রে সানাত।
জামাইর কি খবর।
আইমিন নিভরাজের আর কি।
কখন আসবে সে দেশে।
শুনলাম নেভার বিয়ে আগামী সপ্তাহে।
তাহলে তোরটা কখন?
আমি জাফরাকে আদর করতে করতে।
হবে আর কি।
আসলটা তো হয়ে গেছে এবার নকলটা আর কি।
তারপর আপু ভাইয়া আসেনি?
জেরিন আপু ::::::: নাহ। আমরা মাস খানেক থেকে আবার চলে যাবো।
এরি মধ্যে তোর বিয়েটা যদি খেয়ে যেতো পারতাম।
আমি জাফরাকে এত্ত এত্ত আদর করছি এসব দেখে জেরিন আপু বললো,
নিভরাজটা দেশে আসলেই হলো।
এমন একটা বেবী তুই নিয়ে নিবি কিন্তু।
আমার মতো আবার লেইট করিস না।
নয়তো অনেক কষ্ট পাবি।
আন্টির সামনে আপু কথা গুলো বলছিলো।
আমার খুব লজ্জা লাগছিলো।
জাফরার সাথে খেলতে খেলতে কখন যে
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেলো আমি টেরই পাইনি।
এবার যাবার পালা।
আন্টি আর আপু ডিনার না করে আসতেই দিচ্ছিলনা।
তারপর ও আমি বাহানা বানিয়ে বাসায় চলে আসতে চাইছি।
তিন তলার লাইট জ্বলছিলো সিড়িতে বাট দুতলায় নামতেই পুরো অন্ধকার।
মানে লাইটের পাওয়ার কম।
আবছা আবছা আলোয় একটু একটু দেখা যাচ্ছে সিড়ি গুলো।
আমি তো তাড়াহুড়ো বশত ফোনটাও সাথে আনিনি।
আমি নিচে নামছি আর কে যেনো উপরে উঠছে।
আমার সামনা সামনি হয়ে গেলো।
সামনের জনকে দেখে আমার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
পুরো শরীর কেপে কেপে উঠছে ভয়ে।
লোমকূপ খাড়া হয়ে যাচ্ছে।
কারণ আমার সামনে সেই মানুষটা হচ্ছে জমিদারের লম্পট ছেলেটা।
আমি পাশ কাটাতে চাইলে সেও আবার সামনে চলে আসে আর অন্য হাত দিয়ে সিড়ির দেওয়াল আটকিয়ে ফেলে যাতে আমি যেতে না পারি।
আমার তো ভয়ে মরে যাবার অবস্হা।
আবছা আলোয় তার মুখটা দেখা যাচ্ছে।
মুখে বাকা হাঁসি সাথে বাজে রকমের একটু চাহনী।
যা দেখে আমার গা ঘিন ঘিন করছে।
আমি আমতা আমতা করে।
পপপ।পথ আটকালেন কেনো।
সামনে থেকে সরেন।
সে তার হাতটা আমার আরেকটু পাশ ঘেষে।
এত তাড়া কিসের।
একটু থাকোনা।
তোমার সাথে কথা ছিলো।
আমি এবার কিছুটা সাহস যুগিয়ে।
নয়তো এভাবে আমাকে বিপদে পড়তে হবে।
যা হবার হবে কিছু একটাতো করতে হবেই।
আপনার সাথে আমার কোনো কথা বলার ইচ্ছে নেই।
পথ ছাড়ুন আমি যাবো।
সে এবার অন্য ভঙ্গিমায়।
ইচ্ছে নেই কেনো।
আমাদের বাসার সামনেই থাকো।
সেই সুবাধে তো আমাদের প্রতিবেশি তাইনা।
তো পরিচিত হওয়া দরকার।
কথা বলা দরকার।
চেনা জানা হওয়া দরকার।
তোমার নাম সানাত ঠিক বলেছি না।
তারপর তোমার নাকি বিয়ে হয়েছে।
আর স্বামি নাকি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
আমি বুঝিনা মানুষ এতটা নিষ্টুর হয় কেমনে।
এত সুন্দর।
এত মায়াবী চেহেরা।
এমন সুন্দরী বউ রেখে কেউ পালিয়ে যায়।
আমি হলে তো সবসময় বউকে রুমে আটকিয়ে রাখতাম।
এবার হাঁসিটা তার ঠোটেঁর মাঝবরাবর ফুঠে উঠেছে।
আমি একের পর এক ঢোক গিলছি।
ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে।
ভাইয়া প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
লেইট হলে আম্মু বকবে।
আরে তুমি কাদছো কেনো।
এত ভয় পাও কেনো আমায়।
আরেকটু কথা বলিনা তারপর যেও।
উনি কথা বলতে বলতে অনেকটা আমার গায়ে হেলে পড়ছেন।
প্লিজ ভাইয়া আমায় যেতে দিন।
ভাইয়া সরুন বলছি উনাকে সামনে থেকে ধাক্কা দিলেও উনি এক বিন্দুও সরলো না।
এবার উনি চোখ বড় বড় করে।
ভদ্র ভাবে কথা বললে কি বুঝোনা।
ছেড়ে দিবো তোমায় জাস্ট একটা হাগ আর কিস দাও।
কেউ নেই এখানে।
কেউ দেখবেনা।
কেউ জানবে না।
শুধু তুমি আর আমি।
আসোনা দাও।
লজ্জা পাচ্ছো বুঝি।
আচ্ছা তাহলে আমিই দিই।বলেই উনি আমাকে জোর করে আমার কাছে আসছেন।
আমি যত পারছি উনাকে সরিয়ে রেখে প্রাণপণে আল্লাহকে ডাকছি।
এক পর্যায়ে কেউ টর্চ জ্বালিয়ে উপরে আসতেই ছেলেটা সরে গেলো।
উনিই তো সেই জমিদার।
আমাকে কাদতে দেখে উনার বুঝতে বাকি রইলো না এখানে তার ছেলে কি করতে চলছিলো।
উনি উনার ছেলেকে ধমক দিয়ে বললেন।
শয়তান তুই আবারো এসব করছিস।
দূর হয়ে যেতে পারিস না এখান থেকে।
তারপর আমাকে বললো,
মা তুমি বাসায় যাও।
আমি খুব দুঃখিত মা এই অসভ্যের অসভ্যতামীর জন্যে।
তুই এখনো দূর হসনি একান থেকে।
লম্পট একটা।
যদি আর কখনো দেখি মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতে তাহলে তোর হাত পা কেটে সাগরে ভাসিয়ে দিবে।
জানোয়ার ছেলে কোথাকার।
আংকেলটা নিজেই আমাকে আমাদের বাসায় পৌছে দিলো।
কিন্তু সেই অসভ্যের রাগী চাহনীটা দেখে আমার তো প্রাণ যায় যায় অবস্হা।
কি রাগী ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আংকেলটা খুব বেশি ভালো ছেলেকে একটু্ও পশ্রয় দেয় না কিন্তু সমস্যা হলো আন্টি।
উনি তো ছেলের কোনো দোষ দিবেই না উল্টো হ্যারেজমেন্ট হওয়া সেই মেয়েকেই দোষ দিবেন।
এই কাহিনীটা শুনলে আন্টি বলবেন।
মেয়ের দোষ।
এত রাতে কেউ বাড়ির বাইরে বের হয়।
ছেলেরা তো এমনি।
মেয়ের সাবধান হওয়ার দরকার ছিলো।
এসব বলে বলে ছেলেকে মাথার উপর তুলে ফেলে যার ধরণ ছেলেটা এমন হয়েছে।
আজ যদি আংকেল ঠিক সময় না আসতো তাহলে যে আমার কি হতো আল্লাহই ভালো জানেন।
কি লম্পট বদমাইশ ছেলে।
ছেলেদের থাপ্পড় মারার সাহস আমার নেই।
শুনেছি থাপ্পড় দিলে নাকি তারা আরো রেগে গিয়ে উল্টা পাল্টা করে বসে।
যদি কিছু একটা হয়ে যায় পুরো লাইফটা আমারই তো নষ্ট হয়ে যাবে।
কার কি যাবে আসবে।
সাহস তো পরের কথা।
নিজের ইজ্জত সম্মান হচ্ছে বড় কথা।
এটা ঠিক থাকলেই হলো।
কি দরকার শুধু শুধু বদনাম হওয়ার।
পরদিন সকালে আম্মু খুব ভোরে ঘুম থেকে ডেকে দিলো।
কিন্তু রাতে যে এত্ত এত্ত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখেছি যা বলার বাইরে।
মনটা আমার খুব ফ্রেশ হয়ে গেলো।
কেমন যেনো খুশি খুশি লাগছে আমার।
নাস্তা করার পর পরই নেভার ফোন।
চারদিন পরেই তো নেভার বিয়ে তাই সে আজ পার্লারে যাবে ফেসিয়াল তারপর আরো কি কি যেনো করবে।
এসব নেভা সবসময় করে বাট আমি কখনো করিনি।
আইরিন আপুও করে।
আমি আম্মুকে যখনি বলতাম পার্লারে যাবো ফেসিয়াল করবো কিন্তু না আম্মু মানতো না।
বলতো যাবা সুন্দর তারা পার্লারে যায় না। অসুন্দর মেয়েরা যায় পার্লারে সুন্দর হতে।
তুই তো সুন্দর তাহলে তুই কেন যাবি।
আর আমি খুব খুশি হয়ে যেতাম তারপর আবার ভাবতাম।
আইরিন আপু।নেভা ওরা তো কম সুন্দর না তাহলে ওরা কেন যায় পার্লারে।
থাক আব্বু আম্মুর অপছন্দ তাই আমি যাবোনা।
নেভা রেডি হয়ে বাসায় চলে এলো।
সকাল সকাল ওর সাথে পার্লারে গেলাম।
নিজে তো করছে করছে সাথে আমাকেও জোর করে করানো হচ্ছে।
আজ নাকি সারপ্রাইজ আছে আমার জন্যে।
পর্ব ১০
তুই তো সুন্দর তাহলে তুই কেন যাবি।
আর আমি খুব খুশি হয়ে যেতাম তারপর আবার ভাবতাম।
আইরিন আপু।নেভা ওরা তো কম সুন্দর না তাহলে ওরা কেন যায় পার্লারে।
থাক আব্বু আম্মুর অপছন্দ তাই আমি যাবোনা।
নেভা রেডি হয়ে বাসায় চলে এলো।
সকাল সকাল ওর সাথে পার্লারে গেলাম।
নিজে তো করছে করছে সাথে আমাকেও জোর করে করানো হচ্ছে।
আজ নাকি সারপ্রাইজ আছে আমার জন্যে।
মেয়েটা মিথ্যে কথা বলেছে কোনো সারপ্রাইজ টারপ্রাইজ দেয়নি।
দুপুরের ভিতর তার সব শেষ হলে আমরা বাসায় চলে আসি।
আর নেভা ওদের বাসায় চলে যায়।
আম্মু আমাকে দেখে চোখ ছানাবড়া করে বললো,
সানাত তুই এসব কি করেছিস।
ভ্রু চিকন করে ফেলেছিস।
ইয়া আল্লাহ। চুলও কেটে ছোট করে ফেলেছিস।
এসবের মানে কি?
আমি বিরক্তি ভঙ্গিতে।
আমার কি দোষ। তুমিই না বললে নেভার সাথে যা কি হয়েছে পার্লারে গেলে।
এবার বুঝো ঠেলা।
সব নেভা করেছে।
আমি এত মানা করা সত্তেও তারা আমায় জোর করে এসব করে দিলো।
খুব গরম লাগছে শাওয়ার নিয়ে তারপর আসছি।
তুমি আমার জন্যে লেবু বেশি আর চিনি কম দিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে শরবত করে রাখো।
এসে খাবো কিন্তু।
রুমে এসে নিজেকে কিছুক্ষণ আয়নায় পর্যাবেক্ষণ করলাম।
কেমন চেইন্জ চেইন্জ লাগছে আমাকে।
শাওয়ার শেষে চুল শুকাতে শুকাতে আম্মুকে চিৎকার করে বললাম শরবত রুমে দিয়ে যেতে।
আম্মু এসে আবারো আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমি কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো।
কিছু বলবা?
শরবত দাও দেখি।
এবার আম্মু আমার পাশে বসলো।
আমি ঢকঢক করে শরবত খেতে লাগলাম।
আম্মু হঠাৎ আমাকে জাপটে ধরে হেসেঁ দিলো।
কি আজব।
আম্মু কি হয়েছে।
তোমাকে আজ এত খুশি খুশি লাগছে কেন।
আম্মু কিছু না বলে জাস্ট আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো।
বিকেলে ড্রেসিংয়ের সামনে বসে চুল ঠিক করছি। চোখে হালকা কাজল দিলাম।
কেনো জানিনা আজ একটু সাজতে মন চাইলো।
নীল কামিজটার সাথে মিলিয়ে নীল আর সাদা কাঁচের চুড়িগুলো পড়লাম।
ঠোটেঁর নিচে ছোট্ট তিলটার দিকে চোখ পড়লো।
এই একটা জিনিসই সোহা আপুনি বেশি পছন্দ করতো।
ও সবসময় চাইতো কেনো ওর এমন তিল ছিলোনা।
তাই আমার টা বড্ড পছন্দ করতো।
তারপর বলতো এটা আমাকে দিয়ে দে।
হঠাৎ রুমে হুড়মুড় করে নেভা এলো।
একি নেভা তুই কোথায় যাচ্ছিস।
এভাবে রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমাকে টেনে নিতে নিতে বললো,
যেখানে যাচ্ছি বা যাবো সেখানে তোকেও নিয়ে যাবো।
আরে নেভা আস্তে।
এভাবে টানছিস কেনো।
আর কোথায় যাচ্ছি আমরা?
নেভা: চুপচাপ দেখে থাক।
আর চল আমার সাথে দেখি তোকে নিয়ে কোথায় যেতে পারি।
আমি মনে মনে ভাবছি হয়তো তাওহীদের সাথে কোথায় বের হবে তাই আমাকেও সাথে নিচ্ছে।
আমাকে গাড়িতে পিছনে বসিয়ে দিলে দেখি আন্টি আর সামনে আংকেল আর তাওহীদ।
তাওহীদ ড্রাইভ করবে।
আংকেল আন্টিকে সালাম দিলাম।
আন্টি আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
অনেক সুখী হও মা।
আল্লাহ যেনো তোমাদের খুব সুখে রাখে।
নেভা: মা এই সানাতই তোমার সব বুঝি এখন আমি কেউ না?
এই সানাত এটা কিন্তু আমারও মা বুঝেছিস।
আন্টি: নেভার দিকে তাকিয়ে।এসব কি হ্যা।
ভাবিকে কেউ তুই তুই করে বলে।
বড্ড বেড়ে গেছিস তুই নেভা।
আমি ইশারা করে বললাম।
হ্যা আন্টি নেভা সমসময় আমার সাথে ঝগড়া করে।
দেখেন না আজ আমায় কি করেছে।
আমি মানা করা সত্তেও আমার কথা শুনলো না।
আন্টি এবার রেগে নেভাকে ঝাড়ি দিলো।
এদিকে আমি আর তাওহীদ মিটিমিটি হাসছি।
অনেক্ষণ চলার পর গাড়ি একটা জায়গায় এসে থামলো।
আমি অবাক হয়ে আন্টিকে বললাম।
আন্টি আমরা এয়ারপোর্টে কেনো এসেছি?
আন্টি কিছু বলতে চাইলে নেভা আন্টিকে চুপ করিয়ে দিয়ে আমায় বললো,
স্পেশাল কেউ আসছে।
সবাইকে খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছে।
আমরা অনেক্ষণ অপেক্ষা করছি।
আমি ভাবছি নিশ্চয় তাওহীদের বাবা মা আসছেন।
কদিন পরেই তো বিয়ে।
আসার তো কথা।
নেভা আমাকে কানে কানে বললো,
বাহ মেয়ে তো দেখি খুব সুন্দর ভাবে সেজেগুজে এসেছে।
অনেক সুন্দর লাগছে কিন্তু ভাবিজান আপনাকে।
নেভা হঠাৎ এভাবে বললো কেনো?
আমিতো এমনিতে সেজেছি।
কোনো কারণ ছাড়াই।
নেভার হাবভাব ভালো ঠিকছে না।
অবশেষে ফ্লাইট নামলে একে একে সবাই আসতে থাকে।
অনেক এসেছেন তাদের আপনজনদের রিসিভ করতে।
নেভা আবারো আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
বুকের ভিতর কি ধুকপুক করছে?
হার্টবিট কি থমকে গেছে?
আজব।
আমার যে বুকে ধুকপুক করছে সেটা নেভা কেমনে জানলো?
আর ও হঠাৎ এসব বলছে কেনো?
আমি চোখ বড় বড় করে নেভার দিকে তাকিয়ে নেভা তুইইইই।
নেভা আমার মুখটা সামনে ঘুরিয়ে দিলো।
এবার আমার হার্টবিট খুব স্পিডে চলতে লাগলো।
শরীরে একটা শকড় লাগলো।
আমি কাকে দেখছি।
এটা কি স্বপ্ন নাকি সত্যি।
আপনাআপনিই মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো সেই নামটা।
নিভরাজ।
আগের চাইতে অনেক হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং লাগছে।
মুখে কাটিং করা চাপ দাড়ি গুলো মুখের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাদা শার্টের উপর ব্লাক কোট পড়েছে।
সব মিলিয়ে কি বলবো একেবারে বুরাকের মতো লাগছে।
আমার অপেক্ষা বুঝি সার্থক হলো।
আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না।
আজ আমার কাছে নিভরাজকে পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর মানুষ মনে হচ্ছে।
এত সুন্দর একটা মানুষ আমার স্বামি।
নিভরাজ মুচকি হাসি দিতে দিতে আমাদের দিকে আসছে।
ওর দুই হাতে দুইটা ট্রলি।
একটু দূরে থমকে দাড়ালো।
আমার চোখে চোখ পড়তেই আমার কি হলো জানিনা আমি দৌড়ে গিয়ে নিভরাজকে জাপটে ঝড়িয়ে ধরলাম।
আহহহ কি যে শান্তি লাগছে আমার নিভরাজের বুকে নিজেকে রাখতে পেরে।
খুব খুব বেশি স্পিডে চলছে আমার হার্টবিট।
মরে যাবো নাকি আমি।
নিভরাজের শরীর থেকে কেমন মাতাল করানো স্মেল আমার নাকে ঢুকছে সুরসুর করে।
পুরো পাগল করে দিচ্ছে আমায়।
কয়েক সেকেন্ডের মতো ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম আমার মনে নেই তবে একটু পরেই আমার সেন্স হলো।
সানাত কি করছিস তুই এসব সবার সামনে।
তোর শশুর।শাশুড়ি।নেভা আর তাওহীদ এমনকি পুরো এয়ারপোর্টের সব মানুষ তোকে দেখছে।
এবার ছেড়ে দে বেচারা কে।
অনেক দূর থেকে এসেছে। অনেক জার্নি করতে হয়েছে তাকে।
এবার একটু রেহায় দে।
হায় খোদা এটা আমি কি করে বসলাম।
লজ্জায় আমি কারো সাথে চোখ মিলাতে পারবো না।
ধীরে ধীরে নিভরাজ থেকে নিজেকে হালকা করে নিচ্ছি।
ওর দিকে তাকানোর মতো দুঃসাহস আমার আর নেই।
সব হারিয়ে ফেলেছি।
আমার লিপিস্টিক বেচারার সাদা শার্টকে আহত করে দিয়েছে।
পিছনে দেখি সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
এমনকি পাবলিক অনেকে আমাদের এসব বেহায়াপনা কান্ড দেখছে।
দেখলে দেখুক তাতে কি।
তিনটা বছর পর জামাইটারে কাছে পেলাম।
তো কি হয়ছে।
জাস্ট হাগ তো করলাম। কিস টিস তো করিনি।
নেভার দিকে চোখ পড়তেই নেভা শয়তানি হাসি দিচ্ছে।
একে একে আন্টি আংকেল নেভা আর তাওহীদ সবাই নিভরাজের সাথে মিট করলো।
নেভা তো তার ভাইকে ছাড়ছেই না।
এখন বাসায় যাওয়ার পালা।
যেহেতু গাড়ি একটা তাহলে সবাই একসাথে কেমনে যাবো?
আংকেল আন্টি তাওহীদ আর নেভা এক গাড়িতে আমাকে আর নিভরাজকে এক গাড়িতে।
হায় আল্লাহ আমিতো মরে যাবো।
নেভাকে চুপিচুপি বললাম।
তুই আমার সাথে চলনা প্লিজ।
আমার একা যেতে ভয় করছে।
নেভা আমার মাথায় বাড়ি দিয়ে।
হুহহ কত্ত ঢং।
সবার সামনে এভাবে এত্ত জোড়ে কেউ জড়িয়ে ধরে।
নিজে তো সব করে আবার বলে কিনা ভয় করে।
আমার তো ভয় হয় ভাইয়ার জন্যে।
না জানি আমার সহজ সরল ভাইটাকে কি করে ফেলে।
একটু দেখে রাখিস।
কেমন?
ওরা জোর করে আমাকে আর নিভরাজকে একসাথে দিলো।
আমরা দুজনেই পিছনের সিটে বসেছি।
আমি তো শেষ হয়ে যাচ্ছি।
মাঝে মাঝে স্পিড ব্রেকার আমাদের দুজনের ব্রেকটাও ভেঙ্গে দিয়ে আমাকে নিভরাজের উপর ফেলছে।
নিভরাজ তো শুধু ফোনেই কথা বলছে।
ঝাকুনিতে হাত থেকে নিভরাজের ফোনটা পড়ে গেলে আমি ও নিতে যায় আর সাথে নিভরাজও দুজনে দুজনের মাথার সাথে বাড়ি খেলাম।
আহহহহহ।মাগো।
আমি ব্যাথা পেয়েছি।
নিভরাজ ঠিক হয়ে নিজের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে।
সরি সানাত।
আমি খেয়াল করিনি।
বেশি লেগেছে নাকি?
আমি ভদ্রতার খাতিরে।
না না একটু।
এদিকে ব্যাথায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।
মাথাটা কি তার লোহা দিয়ে বানানো।
আহহহ।
আমি: আমি পানি খাবো খুব।তৃষ্টা পেয়েছে।
নিভরাজ ::::::: ড্রাইভার একটু থামেন।
ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে ড্রাইভারকে দিয়ে বললো,
একটা পানি নিয়ে আসেন।
ঠান্ডা আনবেন না।
আমি ঠান্ডা বলতে চেয়েও বললাম না।
কি মধুমার্কা।
একটু জিঙ্গেস করতে পারলো না।
সানাত তোমার কি ক্ষুধা লেগেছে?
কিছু খাবে?
মনে হয় কিপ্টা একটা।
ড্রাইভার পানি এনে আমার হাতে দিলো।
আর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
পানি খেতে গিয়ে আমার গায়ে মুখে সবখানে পড়লো।
আমার খাওয়া শেষে যখন বোতলের ছিপি বন্দ করছি অমনি নিভরাজ হাত বাড়ালো।
আর তখনি আমার বুকটা ধুক করে উঠলো।
আমি ধীরে ধীরে নিজের হাত ওর দিকে বাড়াতেই ওর বললো পানিটা দাও।
ছি ছি।
কি লজ্জা পেলাম রে বাবা।
আমিতো ভাবছি আরো রোমান্স টোমান্স করবে বোধহয়।
হাতের উপর হাত রাখবো।
একটা দারুণ রোমান্টিক মোমেন্ট শুরু হবে।
বাট তার আগেই সব শেষ।
পানির বোতল নিভরাজের হাতে দিতে গিয়ে ওর হাতের সাথে আমার হাত স্পর্শ হলে আমি কেঁপে উঠলাম।
যেনো শকড খেয়েছি।
আমি প্রচন্ড লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছি।
ড্রাইভার গাড়ি এত স্পিডে নিচ্ছিলো সব বড় বড় গাড়িকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে।
হঠাৎ বড় একটা গাড়ির সামনে যেতে গিয়ে দেখে সামনে আরো একটা বড় গাড়ি আসছে।
ড্রাইভার তাল সামলাতে গাড়িকে পাশের একটা ছোট খাট খাদে ফেললে আমি বেসামাল হয়ে পুরো নিভরাজের উপর পড়ি।
কিভাবে জানি ওর ঠোটেঁর সাথে আমার ঠোটেঁ ছুয়ে যায় আর আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি।
এদিকে সেকেন্ডের মধ্যেই গাড়ি আবারো ঠিক ভাবে রাস্তায় চলে আসে আর আপন গতিতেই চলতে থাকে।
আমি তারাতারি নিজেকে সামলে নিয়ে এপাশে ফিরে গেলাম।
এতক্ষণ মনে হয় অন্য জগতে চলে গেছিলাম।
কি হয়ে গেলো এটা।
বুকের ভেতরটা তোলপাড় করছে আমার।
আজ এসব হচ্ছে কি আমার সাথে।
নাহ আমি পারবোনা।
এবার একটু বেশিই হয়ে গেছে।
আর তাকানো যাবে না ওর দিকে।
নয়তো নির্ঘাত মরে যাবো।
পুরোটা রাস্তায় আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম কিছুক্ষণ আর বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
বাসার সামনে গাড়ি আসতেই আমি ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললে ড্রাইভার গাড়ি থামালো।
আর আমি গাড়ির ডোর খুলে দৌড়ে দৌড়ে বাসায় চলে এলাম।
নিভরাজকে বাসায়ও আসতে বললাম না।
পর্ব ১১
পুরোটা রাস্তায় আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম কিছুক্ষণ আর বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
বাসার সামনে গাড়ি আসতেই আমি ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললে ড্রাইভার গাড়ি থামালো।
আর আমি গাড়ির ডোর খুলে দৌড়ে দৌড়ে বাসায় চলে এলাম।
নিভরাজকে বাসায়ও আসতে বললাম না।
কি ভাববে জানিনা। যা ইচ্ছে তাই ভাবুক তাতে আমার কি যায় আসে।
সারাটা রাত আমি ঘুমুতে পারিনি। বারবার ওর কথা মনে পড়ছিলো। আর মনে পড়ছিলো সেই হঠাৎ ঘটে যাওয়া মুহূর্ত গুলা। এসব কেন হলো। আমার তো এখনো পর্যন্ত লজ্জা করছে।
আয়নায় নিজের মুখটাও দেখতে পারছি না।
আর এদিকে শাকচুন্নি নেভাটা কি শুরু করলো।
একটু পর পর ফোন দিয়ে বলে।
সানাত কিছু কি হলো তোদের?
ভাইয়া কিছু করেছে নাকি তুই করেছিস?
বলনা জানু প্লিজজজ।
এই মেয়েটাও আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না মেবি।
ও তো আমাকে সব বলে তাই ওর কাছ থেকে লুকানোটা ঠিক হবেনা।
বলেই ফেলি।
না নেভা তেমন কিছু হয়নি।
তবে।
নেভা খুব আগ্রহের সাথে।
তবে কি বল সানাত।
আমি আমতা আমতা করে।
তবে গাড়ির ঝাকুনিতে আমি কয়েকবার তোর ভাইয়ের গায়ের উপর পড়েছি।
আর যখন গাড়ি খাদে পড়লো।
তখন।
নেভা: হুম তখন।
তারপর
তখন কেমনে জানি আমার ঠোটেঁর সাথে তোর ভাইয়ার ঠোটঁ ছুয়ে গেছে।
নেভা চরম জয়ের হাসি হেসে।
বাহ সানাত সাহেবা।
চুমুও আদায় করে নিলেন।
দেখ নেভা। এসব কিন্তু ইচ্ছে করে হয়নি।
আনফরচুনেটলি হয়ে গেছে।
আমিতো বুঝতেও পারিনি এমনটা হবে।
তারপরও নেভা অসভ্যটা বিন্দু পরিমাণ বুঝার চেষ্টা করছে না।
মজা করেই যাচ্ছে আর আমার ইজ্জতের ফালুদা বানাচ্ছে।
সকালে খুব দেরীতে ঘুম থেকে উঠলাম।
ফ্রেশ হয়ে নাশতা করতে করতে দুপুর প্রায়।
নিভরাজের পিক দেখতে দেখতে আবারো ঘুমিয়ে পড়লাম।
রাতে যে ঘুম হয়নি।
সেই ঘুমটা ভাঙ্গলো বিকেল চারটায়।
আম্মুটাও আমাকে একটু ডাকলো না।
শাওয়ারটা নেয়া হয়নি।
তাছাড়া খুব গরম লাগছে।
শাওয়াটা নিয়ে নিলাম।
আজ চুলে শ্যাম্পু দিয়েছি।
চুলের ঘ্রাণে নিজেই পাগল হয়ে যাচ্ছি।
চুল ছেড়ে দিয়ে বিছানায় আবারো গা এলিয়ে দিলাম।
নাহ ভাল্লাগছে না।
হঠাৎ বেল বেজে উঠলো।
তিনবার।চারবার। পাচঁ। ছয়বার তারপরও কেউ দরজা খুলছে না।
আজব দেখি সবাই কোথায় গেছে।
আমাকে গিয়েই দরজা খুলতে হলো।
দরজা খুলেই সামনে যাকে দেখলাম।
এক সেকেন্ডের জন্যে আমার হার্টবিট স্টপ হয়ে আবারো স্পিডে চলতে শুরু করলো।
নিভরাজ দাড়িয়ে আছে।
ব্লাক কালারের শার্ট ইন করা আর ব্লাক জিন্স।
হাতে ব্ল্যাক কালারের ওয়াচটা ওকে দারুণ মানিয়েছে।
নিভরাজ আমার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে।
আর আমি লাজুক ভাবে নিচের দিকে।
দুজনেই চুপচাপ।
ওকে ভিতরে আসতেও বলছি না আমি।
পিছন থেকে আম্মু এসে বললো,
কিরে সানাত কি হলো তোর।
নিভরাজ যে এসে এতক্ষণ বাইরে দাড়িয়ে আছে তোর কি কোনো খবর আছে।
এবার নিভরাজ আমার থেকে চোখ সরালো।
আম্মু নিভরাজ ভেতরে আসো বাবা।
নিভরাজ আমাকে ক্রস করে আম্মুকে সালাম জানিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
আমি দরজা লক করে রুম চলে গেলাম।
মিনিট কয়েক পর আম্মু ডাকলো আমায়।
আমি হল রুমে গেলে দেখি নিভরাজ আর আম্মু কথা বলছে।
আম্মু আমাকে দেখে।
সানাত তোর কি দিন দিন অর্ধপতন হচ্ছে।
দেখেছিস যে নিভরাজ এসেছে আমি ওর সাথে কথা বলছি।
ওর জন্যে নাস্তা টেবিলে দিবি আর তা না করে তুই রুমে কি করছিস?
সারাটা দিন মোবাইল। টিভি আর ঘুম তাইনা।
যা আমাদের জন্যে নাশতা নিয়ে আয়।
আমি মনে মনে আম্মুর উপর রেগে গেছি।
এসবের কোনো মানে হয় নাকি।
নিভরাজের সামনে আমার বদনাম।
যদি একদিন সে এসব আমায় দেখিয়ে দেয়।
তখন কি হবে।
নাশতা সাজিয়ে আমি চলে আসতে চাইলে আম্মু আমাকেও বসতে বললো,
আমি যা যা খাবো তা নিয়ে খেতে শুরু করলাম।
আম্মু আমার দিকে বড় বড় চোখ করে।
সানাত নিভরাজকে কিছু নিয়ে না দিয়ে নিজেই খাওয়া শুরু করে দিলি।
নিভরাজ ::::::: আন্টি থাক। আমি যা যা খাবো নিজে নিয়েই খাবো।
আমি মনে মনে আম্মুকে বকছি।
আগে তো আমি জান প্রাণ ছিলাম।
এখন এই নিভরাজের সামনে আমাকে বারবার অপমান করা হচ্ছে।
ইচ্ছে করছে এখনি উঠে চলে যায় নয়তো টেবিল থেকে সব ফেলে দিই।
উনি কত ভালো। নিজে নিয়ে খাবে বলছে।
তাহলে এত ঢং করার কি আছে।
আম্মুটাও না একটু বেশি করে।
আব্বুকে ফোন করে আম্মু তারাতারি বাসায় চলে আসতে বলে আর নিভরাজকে ডিনার এখানে করতে বলে।
আম্মু আন্টি আর নেভাদের সবাইকে এখানে ডিনারের জন্যে চলে আসতে বলেন এমনকি সাথে তাওহীদকেও নিয়ে আসতে বললেন।
রাতে খুব জমজমাট একটা আসর হলো।
আব্বু আংকেল। তাওহীদ আর নিভরাজ হল রুমে গল্প করছে। কিচেনে আম্মু আর আন্টি তারপর শিউলীর মা।
উনি আমাদের এলাকার কলোনিতে থাকে।
বেশী কাজকর্ম হলে আম্মু উনাকে ডাকে।
উপরে আমার রুমে নেভা আর আমি।
নেভা তো আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।
একটু পর পর বলে ভাইয়াকে এখানে নিয়ে আসি।
তোদের একটু প্রাইভেসি দেই কি বলিস?
চোখ টিপ মেরে কথাটা বললো,
তাই আমিও বললাম।
তোর ভাইয়ার কথা রাখ।
তাওহীদকে আনলে কেমন হয় বলতো?
নেভা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে গলা চেপে ধরে বললো,
আমিকি তোর মতো বেহায়া নাকি।
তুইতো নিজেই রোমান্স করতে চাইছিলি।
এখন সব আমার উপর তাইনা।
আরে নেভা কি করছিস।
আমাকে মেরে ফেলবি বুঝি।
এবার নেভা আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার পাশেই ধপ করে শুয়ে পড়লো।
জানিস সানাত।
এটা কেমন যেনো একটা অনুভুতি।
প্রিয় মানুষটা কাছে এলে।
তার ছোয়া পেলে কেমন জানি অন্যরকম লাগে।
মানে খুব একটা ভালো লাগা কাজ করে।
সবসময় তার কথা ভাবতে ভালো লাগে।
তাকে চোখের আড়াল হতে দিতে ইচ্ছে করেনা।
ইচ্ছে করে সবসময় তাকে নিজের সাথে বেধে রাখি।
হা রে নেভা।একদম ঠিক বলছিস।
কেমন যেনো একটা ভালো লাগা কাজ করে সেটা প্রকাশ করার মতো না।
আমার নিজের মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
সেদিন তো ঐ অসভ্য ইমরাজ আমাকে সিড়িতে টাচ করেছিলো।
কিন্তু আমার প্রচন্ড বিরক্তি আর ঘৃন্না ছাড়া কোনো কিছু ফিল হচ্ছিলো না।
এমনকি কত ছেলে রাস্তায় দেখি কোনো অনুভূতি নেই।
আর ঐ যে আরাভ যে আমার জন্যে বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে এসেছিলো তাকে দেখেও আমার এমনটা কখনো হয়নি যেমনটা জাস্ট নিভরাজকে দেখে ফিল হয়।
নিভরাজ কাছে এলে বা আকষ্মিক ওর ছোয়া লাগলে আমি কেমন যেনো পাগল হয়ে যায়।
প্রচন্ড ভালো লাগা কাজ করে আমার মধ্যে।
হঠাৎ নেভা ধাক্কা দিয়ে বললো,
এই সানাত। তুই আবার কি ভাবছিস।
জানিস তাওহীদ কত ভালো।
আমাকে একা পেয়েও সে অন্য ভাবে স্পর্শ করতে চাই না।
জাস্ট একটু হাতে হাত রাখতে চায়।
সানাত শোন। তুই কিন্তু খুব তারাতারি বেবি নিয়ে নিবি।
তখন আর অন্যদের বেবির প্রতি এত টান থাকবে না।
নিজেরটাকে আর শাশুড়ী মায়ের টাকে সামলাতে সামলাতে তোর দিন চলে যাবে।
লজ্জায় আমার মুখটা লাল। বেগুনী হয়ে যাচ্ছে।
আমি আগে তুই নিবি বেবি।
আমি এসব পারবোনা বাবা।
আমার ভীষণ লজ্জা করে।
এবার নেভা ওর হাতের ডায়মন্ডের রিংটা আমাকে দেখালো।
গোল্ডের রিংয়ের উপর ডায়মন্ডের একটা বড় পাথর বসানো।
ডিজাইনটা ইউনিক।
আমি: ওয়াও খুব সুন্দর তো।
তোকে খুব সুন্দর মানিয়েছে।
কে দিয়েছে?
তাওহীদ বুঝি?
নেভা রিংটা খুলে আমার আংগুলে পড়িয়ে দিয়ে বললো,
আমার থেকে তো তোর হাতেই বেশ মানিয়েছে।
এটা ভাইয়া এনেছে আমার জন্যে।
জানিস আরো কত কি এনেছে সবার জন্যে।
আব্বুর জন্যে। আম্মুর জন্যে।এমনকি আংকেল আন্টির জন্যেও এনেছে।
হঠাৎ আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
উনি সবার জন্যে কিছু না কিছু এনেছেন। শুধু আমার জন্যই আনেনি।
ভেতর থেকে খুব বড় একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো।
মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে নেভাকে বললাম।
খুব ভালো হয়েছে।
চল কিচেনে গিয়ে দেখি ওদের হলো কিনা।
তারপর সবাই একসাথে ডিনার করলাম।
কাল তো নেভার গায়ে হলুদ। তাই আন্টি আমাকে আজই তাদের বাসায় নিয়ে যেতে চাইছে।
আম্মু আব্বু রাজী হয়ে গেলো।
আম্মু আমার ব্যাগ গুছিয়ে দিলো।
আমি আন্টিদের সাথে নেভাদের বাসায় চলে এলাম।
গাড়ি নিভরাজ ড্রাইভ করছিলো।
আমি একপাশে বসি।মধ্যখানে নেভা।
নিভরাজের সাথে আমার মোট তিনবার চোখাচোখি হলো।
সবাই খুব টায়ার্ড।তাই যে যার যার রুমে ঘুমুতে চলে গেলো।
আর নেভা আমাকে ওর রুমে ঢুকতে দিচ্ছে না বের করে দিচ্ছে।
বলছে নিভরাজের রুম নাকি আমার রুম।
নেভা: দেখ সানাত।আমার রুমে তুই থাকতে পারবি না।
তোর রুমে তুই যা।
আমি অবাক হয়ে।
পাগল হয়ে গেছিস নাকি।
আমার রুমে যাবো মানে।
নেভা তুই এমন করছিস কেনো?
নেভা মুখ টিপে টিপে হেসেঁ বললো,
রোমান্স করার জন্যে সুযোগ দিচ্ছি আর কি।
সবাই ঘুমে।
যা না তুই ভাইয়ার কাছে।
কেউ দেখবে নাতো।
আর আমিও কাউকে বলবো না।
ছি নেভা। এসব কি বলছিস।
মাথা ঠিকাছে তোর।
আসল কাহিনীটা কি বলতো।
নাকি তাওহীদের সাথে ফোনে ইটিস পিটিস করতে পারবি না আমার সামনে তাই আমাকে তাড়াতে চাইছিস।
এবার বুঝতে পেরেছি আমি।
আমাকে এক টানে রুমে ঢুকিয়ে নেভা বললো,
ব্যস আর বলিস নারে।
এমনিতেই আমি শেষ।
জানিস ডিনারের পর যখন তাওহীদকে এগিয়ে দিতে গিয়েছিলাম।
আমাকে হুট করে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
আমিতো তখন মরেই যাচ্ছিলাম।
আমি ভ্রু কুচকে।
ওহ তাহলে এই ব্যাপার।
তলে তলে বাস চলে আর আমি বললে কারপিউ।
তাইনা ননদিনী।
হা রে সব এবার। না জানি কাল কত কাজ আমায় করতে হয়।
এখন বড্ড ক্লান্ত লাগছে আমি ঘুমাবো।
বলেই ধপ করে শুয়ে পড়লাম।
আর কখন যে চোখ লেগে এলো বুঝতেও পারিনি।
হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।এটা আমি কি স্বপ্ন দেখলাম।
নিভরাজ আমাকে জোর করে ছি ছি না না।
ও এমন ছেলে না।
ওয়েট কয়টা বাজে দেখি।
একি রাত দুটো।
মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি রাতের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়।
তাহলে কি নিভরাজ আমাকে একা পেলে সত্যি সত্যি ওমম করে দিবে।
মানে কিস আর কি।
ও জোর করে আমায় কিস করলো এটা স্বপ্নে দেখেছি।
না না এটা হতে পারেনা।
প্রচন্ড পিপাসায় আমার গলাটা শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে।
পাশের টেবিলে জগ রাখা ছিলো কিন্তু সেটা খালি।
যাই কিচেন থেকে গিয়ে পানি খেয়ে আসি।
পা টিপে টিপে কিচেনে গেলাম।
এবাড়ির সব কিছু আমার জানা।তবে নিভরাজের রুম ছাড়া। ওটা লকড ছিলো যেটা ওর পারসোনাল বেড রুম।
মানে যেটা আপুনির হবার কথা ছিলো।
ঐ রুমে নাকি কাউকে ঢুকতে দেয়নি।
লেখা – লাভলী খানম
চলবে
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “যদি তুমি জানতে – বাংলা প্রেমের গল্প কাহিনী” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – যদি তুমি জানতে (শেষ খণ্ড) – বাংলা প্রেমের গল্প কাহিনী